সংবাদ বিচিত্রা (বিদেশী সংবাদ)
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ২৬, ২০১৬
নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকা যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার লঙ্ঘন : রাহ্বার
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকা নির্দেশ করে এমন যে কোনো মন্তব্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে ইরান ও ৫+১ জাতির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। তিনি গত ২১শে অক্টোবর (২০১৫) তারিখে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে লেখা পথনির্দেশক একটি পত্রে এ কথা বলেন।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার তাঁর এ পত্রে বলেন, যে কোনো স্তর থেকে বা যে কোনো বাহানায় যদি এমন কোনো মন্তব্য করা হয় যাতে এরূপ ইঙ্গিত থাকে যে, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে বা নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে তাহলে তা হবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ)-র লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ই জুলাই (২০১৫) তারিখে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এক পক্ষে ৫+১ জাতি গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া এবং জার্মানি, আর অপর পক্ষে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ)-এর পাঠ (ঃবীঃ) চূড়ান্ত করা হয়।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী তাঁর এ পত্রে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অপসারণের পর্যায় এলে সে ক্ষেত্রে অপর পক্ষ যাতে কোনোভাবেই তা লঙ্ঘন করতে না পারে সে ব্যাপারে যথেষ্ট নিশ্চয়তার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী প্রেসিডেন্ট রুহানির উদ্দেশে লিখিত তাঁর এ পত্রে আরাকের পারমাণবিক চুল্লির উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন এবং বলেন, ইরানের মওজূদ উন্নয়নকৃত ইউরেনিয়াম বিক্রির প্রক্রিয়া কেবল ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্ভাব্য সামরিক দিকসমূহ (পিএমডি)’ শীর্ষক ফাইল বন্ধ হবার এবং যথেষ্ট গ্যারান্টিসহ চুক্তি সম্পাদনের পর শুরু করতে হবে।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মোকাবিলায় আমেরিকা একটি শত্রুতামূলক ও বিঘœ সৃষ্টিকারী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল এবং ভবিষ্যতেও এ ব্যাপারে দেশটির মনোভাবে পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী আরো বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে ইরান ও ৫+১ শক্তির মধ্যকার দীর্ঘ আলোচনায় আমেরিকা যে অবস্থান গ্রহণ করে ও যে ধরনের আচরণ করে তা প্রমাণ করে যে, তাদের কাছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি ছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে শত্রুতা চরিতার্থ করারই অংশবিশেষ।
বিশ্বের ছয়টি বড় শক্তির সাথে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত আলোচনায় ইরানী আলোচকগণ যে দৃঢ় ও অটল ভূমিকা পালন করেন সে জন্য তাঁদের প্রশংসা করে ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাঁরা দেশের অনেক বড় বড় ক্ষতি প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকারি কর্মকর্তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইরানী কর্মকর্তাগণ যদি সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের প্রতি অনবরত সূক্ষ্ম ও গভীরভাবে দৃষ্টি না রাখেন তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনার যে কোনো অস্পষ্টতা বর্তমানে ও ভবিষ্যতে দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইরান বর্তমানে যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে প্রতিরোধের অর্থনীতির বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার জন্য ইরান সরকারের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী প্রেসিডেন্ট রুহানীকে লেখা তাঁর এ পত্রে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, পরিপূর্ণ দৃঢ়তা সহকারে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা চালানো অব্যাহত থাকবে এবং জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করা হবে।
অভিভাবক পরিষদ কর্তৃক যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিলে অনুমোদন প্রদান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধানের অভিভাবক পরিষদ একটি বিলে অনুমোদন প্রদান করে দেশের সরকারকে ইতিপূর্বে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে ইরান সরকার ও ছয় জাতির দ্বারা গৃহীত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অনুমতি দিয়েছে। মজলিসে শূরায়ে ইসলামী (ইরানী পার্লামেন্ট) কর্তৃক গত ১৩ই অক্টোবর (২০১৫) তারিখে পাশকৃত এ বিলে পরদিন ১৪ই অক্টোবর অভিভাবক পরিষদের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেয়া হয়।
এ বিলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারকে কতগুলো শর্ত সাপেক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) বাস্তবায়নের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এর আগে ১২ই অক্টোবর তারিখে মজলিসে শূরায়ে ইসলামী বিলটির রূপরেখায় অনুমোদন প্রদান করে।
বিলটিতে যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের প্রশাসনের ওপর কতগুলো দায়িত্ব ও শর্ত নির্ধারণ করে দেয়া হয়। বিলটির প্রথম ধারায় ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর ফতওয়ার আলোকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রশাসনের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এ ধরনের অস্ত্রের হুমকির মোকাবিলার উদ্দেশ্যে যে কোনো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিলটির অন্যান্য ধারায় যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে, চুক্তির দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে, ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে অপর পক্ষের সম্ভাব্য ব্যর্থতা বা সম্ভাব্য পুনঃ নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতি ইরানী প্রশাসনকে পরিপূর্ণরূপে মনোযোগী হতে হবে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এসএনএসসি)-এর অনুমতি ব্যতীত আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কর্তৃক ইরানের যে কোনো সামরিক এলাকায় প্রবেশের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ভিয়েনায় গৃহীত উক্ত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) অনুযায়ী, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে কতগুলো সীমাবদ্ধতা মেনে নেবে এবং তার বিনিময়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আরোপিত সব ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।
অবশ্য ইরানী কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে, ৫+১ জাতির সদস্য কোনো দেশ যদি চুক্তি লঙ্ঘন করে তাহলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান স্বীয় শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মতৎপরতার ক্ষেত্রে উক্ত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাবার অধিকার সংরক্ষণ করে।
আয়াতুল্লাহ খাজ-আলীর ইন্তেকালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার শোক প্রকাশ
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বিশিষ্ট আলেম আয়াতুল্লাহ আবুল কাসেম খাজ-আলীর ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করে বার্তা দেন। তিনি ইরানের প্রভাবশালী জাতীয় সংস্থা অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞ পরিষদের সাবেক এই সদস্যকে খোদাভীরু এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব বলে প্রশংসা করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আবুল কাসেম খাজ-আলীর পরিবারের কাছে পাঠানো শোক-বার্তায় শাহের স্বৈরশাসন চলাকালীন জনাব খাজ-আলীর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার এবং ইসলামী বিপ্লবের পর গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে তাঁর দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করেন।
ইসলামী বিপ্লবের আগে শাহের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে আয়াতুল্লাহ খাজ-আলীকে কয়েকবার কারাগারে নেয়া হয়েছিল।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ আয়াতুল্লাহ খাজ-আলী ৯০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আয়াতুল্লাহ আবুল কাসেম খাজ-আলী ছিলেন আন্তর্জাতিক গাদির ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও পবিত্র কোমের ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষা কেন্দ্রের একজন খ্যাতিমান শিক্ষক।
মক্কা দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ইরানের মহাকাশ বিজ্ঞানী
ইরানের যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মাহমুদ ওয়ায়েজি গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ জানান, মক্কায় যে ইরানী হাজীরা নিহত হয়েছেন তার মধ্যে রয়েছেন ইরানের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের বোর্ড মেম্বার অধ্যাপক ড. আহমাদ হাতামি। তাঁর মৃত্যুতে মন্ত্রী মাহমুদ ওয়ায়েজি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
মিনা দুর্ঘটনায় ইরানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিস¤পন্ন ক্বারীর শাহাদাত
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ মিনায় পদদলিত হয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার হাজী প্রাণ হারান। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ইরানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিস¤পন্ন ক্বারী মুহসেন হাজি হাসানি কারগারও ছিলেন। তিনি চলতি বছরে মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
ঢাকা-তেহরান শক্তিশালী স¤পর্ক গড়বে : ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকা সফরকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী স¤পর্ক গড়তে চায় ইরান। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের জন্য ইরান অন্যতম উৎস হতে পারে। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, ধর্মসহ সার্বিক বিষয়ে ঢাকা-তেহরান শক্তিশালী স¤পর্ক গড়বে।
গত ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে সফরের শুরুতে তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য স¤পর্কে জাওয়াদ জারিফ বলেন, গত জুলাইয়ে রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু চুক্তি স¤পর্কে বাংলাদেশকে অবহিত করতে তিনি এ সফরে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উদার মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের এই সংগ্রামে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ আমাদের পাশে থেকেছে। তাই সমস্যা সমাধানের পর কীভাবে এই অর্জন হলো, সেটি বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণ ও সরকারকে জানাতে এসেছি। সেই সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের স¤পর্ক কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়ে কথা বলতে এসেছি।’
জাওয়াদ জারিফ জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ এবং কর্মী নিয়োগ বিষয়ে অচিরেই দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। এ ছাড়া শীঘ্রই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইরান সফর করবেন। ওই সফরে বেসরকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিও থাকবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জ্বালানি, টেক্সটাইল, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
ইরান থেকে পাকিস্তান হয়ে ভারত পর্যন্ত যে গ্যাস পাইপলাইন হবে তা থেকে বাংলাদেশ কোনোভাবে উপকৃত হতে পারে কিনা গণমাধ্যম কর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেন, ত্রি-দেশীয় গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ইরান পাকিস্তান এবং ভারতে গ্যাস রপ্তানি করবে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশও উপকৃত হতে পারে। ওই পাইপলাইন বাংলাদেশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে। এ জন্য দুই দেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয় আলাপ-আলোচনা করবে। দুই দেশের মধ্যে এই বিষয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে।
ইরানের প্রশংসায় রাশিয়ার গ্রান্ড মুফ্তি
রাশিয়ান ফেডারেশনের মুফ্তি পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রান্ড মুফ্তি রাভীল আইনুদ্দীন আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে পথপ্রদর্শকের ও ইসলামের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালনের কারণে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রশংসা করেছেন।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামী নির্দেশনাবিষয়ক মন্ত্রী আলী জান্নাতী মস্কোয় আয়োজিত আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে রাশিয়া গেলে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর (২০১৫) মস্কোতে তাঁর সাথে সাক্ষাতে গ্রান্ড মুফ্তি আইনুদ্দীন ইরান সরকারের এ ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার মুসলিম জাহানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে তার সমস্ত প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত করেছে।
রাশিয়ান গ্রান্ড মুফ্তি প্রসঙ্গক্রমে তাকফিরি সন্ত্রাসীদের হুমকির বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ইসলামের ওপরে গুরুতর ধরনের আঘাত হেনেছে এবং তারা মহান দ্বীন ইসলামের চেহারাকে কলঙ্কিত করেছে। তিনি বিশালায়তন গ্রান্ড মসজিদ নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন এবং এ মসজিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য মন্ত্রী জান্নাতীকে এবং তাঁর মাধ্যমে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ্ উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীকে এবং প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানিকে দাওআত করেন। তিনি বলেন, এ মসজিদ শিয়া ও সুন্নি নির্বিশেষে রাশিয়ার তিন কোটি মুসলমানের, বিশেষ করে মস্কো শহরে বসবাসরত তিরিশ লক্ষ মুসলমানের ঐক্যের প্রতীক।
রাশিয়ায় সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে গ্রান্ড মুফ্তি আইনুদ্দীন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সে কারণে জনাব জান্নাতী তাঁর প্রশংসা করেন।
ছাত্র বিনিময় কর্মসূচি গ্রহণের জন্য ইরান ও তুরস্কের শিক্ষাবিদগণের আহ্বান
তুরস্ক ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের শিক্ষাবিদগণ দু’দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ছাত্র বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং এ লক্ষ্যে একটি কর্মসূচি গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৭ই সেপ্টেম্বর (২০১৫) তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণের একটি প্রতিনিধিদল ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সফরে এলে ঐতিহাসিক শীরায নগরীতে ইসলামী সংস্কৃতি ও নির্দেশনাবিষয়ক প্রাদেশিক দফতর তাঁদের সম্মানে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে ইরান ও তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ এ আহ্বান জানান।
তুরস্ক থেকে আগত প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে তুর্কি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক সেভিম্ য়িল্মায্ বলেন, তুরস্কের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইরান সফরের ক্ষেত্রে এবং তারা যা শিখেছে প্রকৃত পরিবেশে তা চর্চা করার লক্ষ্যে ফারসি ভাষা শিক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ইরান ও তুরস্কÑ এ দুই প্রতিবেশী দেশের সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তুরস্ক ও ইরানের শিক্ষাবিদগণ উল্লেখ করেন যে, ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্কের ইতিহাস অনেক পুরনো এবং এ সম্পর্ক এখনো শক্তিশালী ও টেকসই।
অনুষ্ঠানে শীরায বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষার অধ্যাপক জনাব মোহাম্মাদ ইউসুফ নায়েরী তাঁর বক্তৃতায় ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার সুদীর্ঘকালীন ও ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্পর্কের প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও তুরস্ক বিগত দুই দশক যাবত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান হচ্ছে তুরস্কের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী দেশ, অন্যদিকে তুরস্ক ইরানে মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া তুরস্কের পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইরান, অন্যদিকে ইরানী পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যস্থল হচ্ছে তুরস্ক। দুই দেশই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যিক বিনিময় বহু গুণ বৃদ্ধি করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, গত ৭ই এপ্রিল (২০১৫) তেহরানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি সম্পর্কে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে আটটি সহযোগিতা চুক্তি ও একটি যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিগণ ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণ এসব সহযোগিতা চুক্তি ও যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে ইরান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরো বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইরান ও জার্মানির মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও জার্মানি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। গত ৮ই সেপ্টেম্বর তেহরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামী নির্দেশনাবিষয়ক মন্ত্রী আলী জান্নাতী ও ইরানে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত মিখায়েল ফ্রেইহার ভন উঙ্গার্ন-স্টার্ন্্বার্গের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
বৈঠকে জনাব জান্নাতী বলেন, ইরানী ও জার্মান এ দুই জাতির মধ্যে দূর অতীত কাল থেকে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান এবং যেহেতু টেকসই সাংস্কৃতিক বন্ধন দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গ্যারান্টি হিসেবে কাজ করতে সক্ষম সেহেতু আমাদেরকে এই দুই জাতির মধ্যকার সাংস্কৃতিক বন্ধন শক্তিশালী করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া তিনি জার্মানিতে ইরানী সাংস্কৃতিক সপ্তাহ অনুষ্ঠান পুনরায় চালু করার জন্য আহ্বান জানান যাতে জার্মানিতে বিভিন্ন ইরানী চলচ্চিত্র ও যন্ত্রসংগীত দল প্রেরিত হবে।
জার্মান রাষ্ট্রদূত উঙ্গার্ন-স্টার্ন্্বার্গ্ তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন যে, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সঙ্কট নিরসনে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ব্যতিরেকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক টেকসই হতে পারে না, সুতরাং আমাদেরকে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো বেশি সম্প্রসারিত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে গত ১৪ই জুলাই (২০১৫) তারিখে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে ৫+১ জাতি ও ইরানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইরান ও জার্মানি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা পর্যায়ে সফর বিনিময় অব্যাহত রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসউদ সুলতানীফার- যিনি একই সাথে তাঁর দেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, হস্তশিল্প ও পর্যটন বিষয়ক সংস্থা (আইসিএইচএইচটিও)-এরও প্রধানÑ গত মার্চ মাসে জার্মানি সফর করেন। এ সময় তিনি বার্লিনে অনুষ্ঠিত ৪৯তম আইটিবি পর্যটন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন এবং জার্মান পার্লামেন্টের পর্যটন কমিটির সদস্যদের ও শীর্ষস্থানীয় আইটিবি কর্মকর্তাগণসহ জার্মান সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।
জান্নাতীর সাথে রুশ সাংস্কৃতিক উপমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
রাশিয়ার সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী গ্রিগোরি পেত্রোভিচ্ ইভ্লিয়েভ্ গত ৫ই সেপ্টেম্বর তেহরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামী নির্দেশনাবিষয়ক মন্ত্রী আলী জান্নাতীর সাথে সাক্ষাতে সকল ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
উক্ত সাক্ষাতে জনাব জান্নাতী ও মি. ইভ্লিয়েভ্ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে, বিশেষ করে দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ ও কমপক্ষে দশটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানী সাহিত্য কর্ম রুশ ভাষায় অনুবাদকরণ সম্পর্কে আলোচনা করেন।
এ সাক্ষাতে জনাব জান্নাতী উল্লেখ করেন যে, ১৯৬০-এর দশকে মহাকবি ফেরদৌসীর মহাকাব্য শাহ্নমে রুশ ভাষায় অনূদিত হয় এবং সম্প্রতি মাওলানা জালালুদ্দীন রূমীর মাস্নাভী রুশ ভাষায় অনূদিত ও দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে এবং তা রুশভাষী পাঠকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এসব গ্রন্থ এমনই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে যে, এমনকি মস্কোর মেট্রো স্টেশনগুলোতেও এগুলো বিক্রি হচ্ছে এবং মেট্রোর যাত্রীরা তা সংগ্রহ করছে।
বৈঠক শেষে জনাব জান্নাতী সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আমরা অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্পর্কেও আলোচনা করেছি এবং এ ব্যাপারে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছি।
রাশিয়ার সাংস্কৃতিক উপমন্ত্রী বলেন যে, তাঁর দেশ ইরানী বিশেষজ্ঞ ও অনুবাদকদেরকে স্বাগত জানাবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মি. ইভ্লিয়েভ্ আরো বলেন, ইতিমধ্যেই অনেক ইরানী লেখক রাশিয়া সফর করেছেন এবং সেখানে তাঁদের সাহিত্যকর্মকে পরিচিত করে তুলেছেন।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও রাশিয়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। ইতিপূর্বে ২০১২ সালের জুন মাসে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামী যোগাযোগ সংস্থার প্রধান মোহাম্মাদ্ বাক্বের র্খোরামশদ রাশিয়া সফর করেন এবং উক্ত সফরে তিনি মস্কোতে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক উপমন্ত্রী আন্দ্রেই বুসিগীন্-এর সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। এ বৈঠকে উভয় পক্ষ দু’দেশের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও শিল্পকলার প্রতি পারস্পরিক আগ্রহের কথা উল্লেখ করে এসব ক্ষেত্রে ব্যাপকতর সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করে।
ইরান ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ষষ্ঠ দফা ধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও অস্ট্রিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে গত ২৯শে সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ষষ্ঠ দফা আন্তঃধর্ম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতদসংক্রান্ত বৈঠকে ভিয়েনাস্থ ইরান দূতাবাসের কালচারাল অ্যাটাচে এবং অস্ট্রিয়া সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তঃধর্ম সংলাপবিষয়ক মহাপরিচালকের মধ্যে ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির পন্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়।
অস্ট্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে আন্তঃধর্ম সংলাপের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আন্তঃসভ্যতা সংলাপবিষয়ক কেন্দ্রের সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে গত মার্চ মাসে (২০১৫) তেহরানে অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রদূত ফ্রিয়েডরিক স্টিফ্ট ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ইসলামী সংস্কৃতি ও যোগাযোগ সংস্থার প্রধান আলী মোহাম্মাদ হেলমী অস্ট্রিয়া ও ইরানের মধ্যে ধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা ও মত বিনিময় করেন।
এ বৈঠকে অস্ট্রিয় রাষ্ট্রদূত দু’দেশের মধ্যে ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত পাঁচ দফা আন্তঃধর্ম সংলাপকে সফল হিসেবে অভিহিত করেন এবং আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, দু’দেশের মধ্যে আন্তঃধর্ম সংলাপ অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন যে, অস্ট্রিয়ায় অনেক মুসলমান বসবাস করেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, অস্ট্রিয়া এক শতাব্দীরও বেশিকাল পূর্বে ইসলামকে অস্ট্রিয়দের অন্যতম ধর্ম হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
অস্ট্রিয় রাষ্ট্রদূত আরো উল্লেখ করেন যে, অস্ট্রিয়ার পার্লামেন্টে সাত জন মুসলিম এমপি রয়েছেন।
এ বৈঠকে জনাব আলী মোহাম্মাদ হেলমী আন্তঃধর্ম সংলাপের ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও অস্ট্রিয়ার পারস্পরিক সম্পর্কের প্রশংসা করেন।
ইরানী ও অস্ট্রীয় প্রতœতত্ত্ববিদগণ পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও অস্ট্রিয়ার প্রত্বতত্ত্ববিদগণের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে একটি প্রতœতাত্ত্বিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ৯ই সেপ্টেম্বর (২০১৫) তারিখে ইরানের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান মোহাম্মাদ বেহেশতী ও অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির প্রধান অ্যান্টন যেইলিঙ্গার তেহরানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিতে বিশেষ করে দু’দেশের মিউজিয়াম ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনাদিসমৃদ্ধ স্থান সমূহের সংরক্ষণ ও মেরামতের ক্ষেত্রে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপরে জোর দেয়া হয়।
এছাড়াও ইরান ও অস্ট্রিয়া এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিনিময় এবং গবেষণা সহযোগিতার ব্যাপারে সম্মত হয়।
উল্লেখ্য যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে গত ১৪ই জুলাই (২০১৫) তারিখে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরান ও ছয় জাতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর অস্ট্রিয়া সরকার ইরানের সাথে তার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক ডজনেরও বেশি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে যার আর্থিক পরিমাণ কয়েক কোটি ডলার।
এ পরিপ্রেক্ষিতেই দু’দেশের মধ্যকার সকল সম্পর্কের সর্বাত্মক সম্প্রসারণ সম্পর্কে আলোচনার উদ্দেশ্যে গত ৭ই সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট হেইন্য ফিশার-এর নেতৃত্বে সে দেশের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল তেহরান সফরে আসেন।
ইরানের সা‘দী ফাউন্ডেশন ও দক্ষিণ কোরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বোনিঅদে সা‘দী (সা‘দী ফাউন্ডেশন) ও দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান ইউনিভার্সিটি অব্ ফরেন স্টাডিজ (বিইউএফএস)-এর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিইউএফএস-এ ফারসি ভাষার কোর্সের উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ১২ই সেপ্টেম্বর তেহরানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিইউএফএস-এর প্রতিনিধি ইউন ইয়ং ও সা‘দী ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপপরিচালক মোহাম্মাদ রেযা দারবান্দী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
পাঁচ বছর মেয়াদি এ চুক্তি অনুযায়ী দুই পক্ষ যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বিইউএফএস-এ ফারসি ভাষা শিক্ষাদান সম্প্রসারণের পন্থা উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা করবে এবং পরস্পরের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্র ও গবেষণা প্রতিনিধিদল বিনিময় করবে।
উল্লেখ্য, বিইউএফএস হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বেসরকারি খ্রিস্টান বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি ভাষাসমূহে বিশেষজ্ঞ গড়ে তোলা হয়। অন্যদিকে সা‘দী ফাউন্ডেশনের প্রধান কাজ হচ্ছে ফারসি ভাষার সম্প্রসারণ ও শিক্ষাদান।
ইতিপূর্বে গত মার্চ মাসে (২০১৫) ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ফারসি ভাষা শিক্ষাদানের কোর্সসমূহের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতালি সরকারের সাথে একটি সমঝোতা স্মরক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মহাশূন্য সহযোগিতা সম্পর্কে পাঁচটি দেশের সাথে আলোচনা করবে
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মহাশূন্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আন্তঃক্রিয়া সম্প্রসারণের লক্ষ্যে রাশিয়া, ফ্রান্স ও জাপানসহ পাঁচটি দেশের সাথে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছে। ইরানের মহাশূন্য সংস্থার উপপ্রধান জনাব জাফার রোওশানীয়ান গত ২১শে অক্টোবর (২০১৫) তারিখে সংস্থার এ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন।
জনাব রেওশানীয়ান বলেন, মহাশূন্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মহাশূন্য সংস্থা রাশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও চীনের সাথে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছে।
জনাব রোওশানীয়ান আরো জানান যে, ইতিপূর্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মহাশূন্য সংস্থা নিজস্ব প্রযুক্তিতে ‘মেসবাহ’ (প্রদীপ) নামে যে কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করেছিল এবং ২০০৩ সালে চূড়ান্ত গবেষণামূলক পর্যালোচনার জন্য ইতালিতে পাঠানোর পর যা নিষেধাজ্ঞার কারণে বাযেয়াপ্ত করা হয়েছিল ইরান সরকার তা ফেরত পাবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান যে, সেটি ফেরত আনার পর মহাশূন্যে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত করতে তিন মাস সময় লাগবে।
জনাব রোওশানীয়ান জানান যে, ইরানের মহাশূন্য সংস্থা আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে জিইও যোগাযোগ উপগ্রহসমূহের ডিজাইনকরণ ও মহাশূন্যে মানুষ পাঠানো। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, দেশের অভ্যন্তরে তৈরি করে মহাশূন্যে উৎক্ষেপণের জন্য একেকটি কৃত্রিম উপগ্রহের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, ইরানী মহাশূন্য সংস্থার হাতে বর্তমানে যে প্রকল্পগুলো রয়েছে তা ২০২৫ সালের মধ্যে সমাপ্ত হবে।
ইউনেস্কোর ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারবিষয়ক প্রাথমিক তালিকায় ইরানের ১৫০টি উত্তরাধিকারের নাম
ইউনেস্কোর ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারবিষয়ক প্রাথমিক তালিকায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ১৫০টি উত্তরাধিকারের নাম স্থানলাভ করেছে। ইরানের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থা (আইসিএইচটিও)-র রেজিস্ট্রেশন অফিসের জেনারেল ম্যানেজার জনাব র্ফাহাদ নাযারী গত ২১শে অক্টোবর (২০১৫) তারিখে এ খবর দিয়ে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে এ প্রাথমিক তালিকা থেকে বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদিত তালিকা প্রস্তুত করা হবে এবং তাতে চল্লিশটিরও বেশি স্থানের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারবিষয়ক ইউনেস্কোর প্রাথমিক তালিকা অনেক দিন যাবত হালনাগাদ করা হয় নি এবং এতদসংক্রান্ত রেজিস্ট্রেশন কমিটিতে ইরানের ১৫০টি স্থানের নাম পুনঃপরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে ইরানের ৪০টি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারের নাম ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে।
জনাব র্ফাহাদ নাযারী বলেন, ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার ও প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে ইউনেস্কোর মাত্র একটি প্রাথমিক তালিকা রয়েছে এবং প্রতি বছর এ লিস্টে উভয় ধরনের উত্তরাধিকার মিলিয়ে মাত্র দু’টি রেকর্ড রেজিস্ট্রেশন করা যেতে পারে। কারণ, একটিমাত্র কনভেনশনের ভিত্তিতে এ উভয় ক্যাটেগরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং তা একটিমাত্র বৈঠকে পরীক্ষা করা হবে। তবে ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশন্যাল কাউন্সিল অন মনুমেন্ট্স অ্যান্ড সাইট্স (আইসিওএমওএস)-এর বিশেষজ্ঞগণ ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে থাকেন, অন্যদিকে ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিয়ন ফর কন্জারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন)-এর বিশেষজ্ঞগণ প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন, এরপর উভয় কমিটির আলোচনার ফলাফল চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জুরি-র কাছে সরবরাহ করা হয়।
জনাব নাযারী আরো বলেন, ওহঃধহমরনষব ঐবৎরঃধমব-এর ক্ষেত্রে কতক সুনির্দিষ্ট আইটেম কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে বহুজাতিক পন্থায় রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে থাকে এবং ঞধহমরনষব ঐবৎরঃধমব-এর তালিকায়ও কতক রেকর্ডে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো ঐতিহাসিক সৌধ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ, ইরানের নয়টি বাগানের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যেগুলো যুগপৎভাবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
জনাব নাযারী বলেন, ইউনেস্কোর জন্য ইরান স্বীয় ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার সমূহের যে তালিকা তৈরি করছে তা সমাপ্ত হতে যাচ্ছে এবং অচিরেই এ সম্পর্কিত চূড়ান্ত তালিকা ইউনেস্কোকে সরবরাহ করা হবে।
রুশদীকে দাওআতের প্রতিবাদে ফ্রাঙ্কফুর্ট গ্রন্থমেলা বর্জনের জন্য মুসলিম দেশসমূহের প্রতি ইরানের আহ্বান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামী নির্দেশনাবিষয়ক মন্ত্রী আলী জান্নাতী ১৪ থেকে ১৮ই অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলায় দ্বীন ইসলামের জন্য অবমাননাকর ঘৃণ্য গ্রন্থ স্যাটানিক ভার্সেস্-এর লেখক কুখ্যাত সালমান রুশদীকে দাওআত ও উক্ত মেলায় তার পরিকল্পিত উপস্থিতির বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর ও জার্মান সরকার আয়োজিত উক্ত গ্রন্থমেলা বর্জনের জন্য মুসলিম দেশসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।
জনাব জান্নাতী গত ৯ই অক্টোবর (২০১৫) জানান যে, তিনি এ বিষয়ে মুসলিম দেশ সমূহের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রি ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার মহাসচিব বরাবরে পত্র পাঠিয়েছেন। এ পত্রে তিনি রুশদীকে উক্ত গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণের জন্য দাওআত করে জার্মান সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর জন্য মুসলিম দেশ সমূহের প্রতি আহ্বান জানান।
জনাব জান্নাতী বলেন, রুশদী কেবল ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকেই অবমাননা করে নি, বরং সে ইসলামের পবিত্রতার ও পবিত্র ব্যক্তিত্বগণের এবং সকল ঐশী ধর্মের অবমাননা করেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৬ই অক্টোবর তারিখে প্রায় এক ডজন ইরানী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও পরিচালকগণ ফ্রাঙ্কফুর্ট গ্রন্থমেলার পরিচালক বরাবরে একটি পত্র লিখে উক্ত গ্রন্থমেলায় সালমান রুশদীকে দাওআত ও এতে তার পরিকল্পিত উপস্থিতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন। তাঁরা উক্ত গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য রুশদীকে যে দাওআত করা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফ্রাঙ্কফুর্ট গ্রন্থমেলার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া ঐ দিনই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের সংস্কৃতি ও ইসলামী নির্দেশনা মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে গৃহীত কঠোর অবস্থানের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় যে, সালমান রুশদী লিখিত ইসলামের জন্য অবমাননাকর স্যাটানিক ভার্সেস্ বইটি প্রকাশিত হবার পর ১৯৮৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের মহান স্থপতি হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) রুশদীকে হত্যা করার জন্য মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে একটি ফতওয়া জারি করেন; এ ফতওয়া সব সময়ই জীবন্ত ও বহাল থাকবে, সুতরাং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কিছুতেই ফ্রাঙ্কফুর্ট গ্রন্থমেলায় রুশদীর উপস্থিতিকে মেনে নিতে ও তার উপস্থিতিতে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
উল্লেখ্য, সালমান রুশদীর স্যাটানিক্ ভার্সেস্ বইটি প্রথম বারের মতো ১৯৮৮ সালে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশিত হবার পর মুসলিম পাঠক-পাঠিকাগণ অভিযোগ করেন যে, এতে ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে ও রুশদী সুস্পষ্টতঃই মুরতাদ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগের যথার্থতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হবার পর ১৯৮৯ সালে হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) রুশদীকে হত্যার জন্য মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে একটি ফতওয়া জারি করেন। তখন থেকে রুশদী প্রাণের ভয়ে ভীত অবস্থায় কড়া নিরাপত্তাধীনে ও প্রধানত গোপন জীবন যাপন করে আসছে।
ইরানী গবেষকগণের সাফল্য আলযেইমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন আশাবাদ সৃষ্টি করেছে
ইরানের আমীর কাবীর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ইরানী গবেষকগণের গবেষণার সাফল্য আলযেইমার রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। তাঁরা আলযেইমারসহ স্নায়বিক রোগসমূহের চিকিৎসার লক্ষ্যে হাড়ের মজ্জার কোষকে স্নায়ুর কোষে রূপান্তরিত করার একটি ননটক্সিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তাঁরা এক ধরনের পলিমার ও কার্বন ন্যানোটিউব ব্যবহার করে এ পন্থা উদ্ভাবন করেন।
উক্ত গবেষণা প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মারইয়াম মেহ্দীযাদে জানান, এতদসংক্রান্ত গবেষণায় কার্বন ন্যানোটিউবকে পলি-এপ্সিলোন-ক্যাপরোল্যাপ্টোন (পিসিএল) নামক এক ধরনের নরড়ফবমৎধফধনষব পলিমার দ্বারা আবৃত (পড়ধঃবফ) করা হয় এবং এরপর তা প্লাস্মা-এন্হ্যান্স্ড্ কেমিক্যাল ভ্যাপোর ডিপোজিশন প্রক্রিয়া (পিইসিভিডি)-এর মাধ্যমে সিলিকন-এর স্তর সমূহের (ষধুবৎং) ওপরে খাড়াভাবে বৃদ্ধি করা হয় ও সুসমন্বিত করা হয়।
তিনি বলেন যে, এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল মস্তিষ্কের নিউরন উৎপাদন করা। তিনি আরো বলেন, যেহেতু আলযেইমার ও এ ধরনের অন্যান্য রোগে মস্তিষ্কের নিউরন ধ্বংস হয়ে যায় সেহেতু আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিজের শরীর থেকে এ ধরনের কোষ উৎপাদন করার ও ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষের পরিবর্তে তা প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে উপায় উদ্ভাবনের জন্য চেষ্টা করছিলাম।
মারইয়াম মেহ্দীযদে আরো জানান যে, এ ব্যাপারে গবেষণার জন্য হাড়ের মজ্জার কোষ ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, তাছাড়া এ ধরনের কোষকে খুব সহজেই অন্য ধরনের কোষে রূপান্তরিত করা সম্ভব; আমরা সংশ্লিষ্ট যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ও প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল ফ্যাক্টরসমূহ ব্যবহার করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাড়ের মজ্জার কোষকে মস্তিষ্কের নিউরন কোষে রূপান্তরিত করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, এ প্রক্রিয়ার বিকাশ ঘটানোর পর তা স্নায়বিক ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত নিউরন পরিবর্তন করার কাজে এবং সেই সাথে আলযেইমার রোগের চিকিৎসার কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
লিভার প্রতিস্থাপনে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে ইরান
মহাকবি হাফিয ও শেখ সাদীর স্মৃতিধন্য ইরানের শিরাজ শহর যকৃত বা লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিশ্বের শীর্ষ শহরে পরিণত হয়েছে।
২০১৪ সালে এই শহরের সার্জনরা ৫০০ লিভার প্রতিস্থাপন করেন এবং চলতি বছর এই সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে ইরানের হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট কাউন্সিল জানিয়েছে।
কাউন্সিলের সদস্য আলী মালেক হোসাইনি জানিয়েছেন, গড়ে প্রতি বছর শিরাজে ৩০০ লিভার প্রতিস্থাপন হচ্ছে। এ ছাড়াও চিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষার জন্য বিখ্যাত এই শহরে প্রতি বছর অগ্নাশয় অস্ত্রোপচার এবং অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনও করা হচ্ছে। ফলে শিরাজ শহর ও এর চিকিৎসকরা এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন।
শিরাজ চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান মালেক হোসাইনি জানান, শিরাজে এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশের ছাত্র এবং বিশেষ করে সুদান, তাজিকিস্তান, লেবানন, ইরাক ও সিরিয়ার ছাত্ররা শিরাজে এসে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।