সম্পাদকীয়


ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বয়ে আনুক মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্য ও সংহতি
রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে, বিশেষ করে নিউজ লেটারের পাঠক-পাঠিকাগণকে জানাচ্ছি অভিনন্দন ও মোবারকবাদ।
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ্ তা‘আলার প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর মাধ্যমে মানব জাতির উদ্দেশে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পরিপূর্ণ বাণী পৌঁছে দিয়েছেন এবং এ বাণীকে যে কোনো বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে সংরক্ষিত রেখেছেন। কোরআন মজীদ সম্পর্কে সঠিক ধারণার অধিকারী যে কেউ জানেন যে, এ মহাগ্রন্থ হচ্ছে মানব জাতির মুুক্তির পথপ্রদর্শক। তাই এ মহাগ্রন্থ ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানব জাতির জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার শ্রেষ্ঠতম নে‘আমত। আর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) স্বীয় চরিত্র, আচরণ, শিক্ষা, বিচার ও শাসন ইত্যাদি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআন মজীদের শিক্ষা ও পথনির্দেশের বাস্তব প্রদর্শনী করেছেনÑ যা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, কোরআন মজীদ কোনো বাস্তবে কার্যকর-অযোগ্য কাল্পনিক (ইউটোপিয়ান) আদর্শ উপস্থাপন করে নি, বরং মানুষের জন্য তা পুরোপুরি অনুসরণ ও বাস্তবায়নযোগ্য। এ কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে ‘রাহ্মাতুল্লিল ‘আলামীন’ (সমগ্র জগৎবাসীর জন্য অনুগ্রহস্বরূপ) হিসেবে অভিহিত করেছেন।
রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবনাদর্শ ইসলাম সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে এসেছে বিধায় তা ভারসাম্যপূর্ণ ও সুবিচারের পতাকাবাহী। তাই এ দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে জবরদস্তির কোনো স্থান নেই। এর বিস্তারের পন্থা সুস্থ বিচারবুদ্ধির কাছে আবেদন এবং এর প্রতিষ্ঠার পথ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু ইসলামের দুশমনরা এ দ্বীনের ওপরে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের কলঙ্ক লেপনের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে, আর তা সম্ভব হচ্ছে এ দ্বীন ও রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষার সাথে সঠিক পরিচিতির অভাবে। তাই এ পরিচিতি অর্জন অপরিহার্য।
আল্লাহ্ তা‘আলা যেসব উদ্দেশ্যে দ্বীন ইসলামকে পাঠিয়েছেন সেসবের অন্যতম হচ্ছে মানবতার ঐক্য গড়ে তোলা এবং এ লক্ষ্যে ইসলামী উম্মাহ্র ঐক্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কোরআন মজীদে ন্যূনতম অভিন্ন ‘আক্বায়েদী সূত্র তাওহীদ ও আখেরাতের ভিত্তিতে নাজাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে আহ্লে কিতাবের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামের দুশমনদের ও মুসলিম নামধারী মুনাফিক্বদের ষড়যন্ত্রের ফলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য ও হানাহানি চলে আসছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর এ বিপ্লবের মহান নায়ক হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে ইসলামী ঐক্য গড়ে তোলার চালিকাশক্তিতে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যেহেতু রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্মতারিখ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য আছে এবং বেশির ভাগ মুসলমানই ১২ বা ১৭ই রাবী‘উল্ আউয়াল্কে তাঁর জন্মবার্ষিকী হিসেবে গণ্য করে থাকে সেহেতু ইসলামী ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়াসকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তিনি উভয় তারিখকে সমন্বিত করে ১২ থেকে ১৭ই রাবী‘উল্ আউয়াল্কে ‘ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ্’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ইসলামী ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে যথাযথ মর্যাদায় এ সপ্তাহ্ উদ্যাপনের জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি আহ্বান জানান। তখন থেকে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ, বিশেষ করে ইরানী মুসলমানগণ প্রতি বছর যথাযথ মর্যাদায় এ সপ্তাহ্টি উদ্যাপন করে আসছে।
ইসলামের সুমহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাশ্চাত্য জগতের জনগণের মধ্যে যখন ইসলামী আদর্শের সাথে সঠিকভাবে পরিচিত হওয়ার প্রবণতা ও ইসলাম গ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে তখন ইসলামের দুশমনদের ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে সেখানকার অনেক তরুণ মুসলমান বিভিন্ন সন্ত্রাসী দলে যোগদান করায় এবং মাঝে মাঝে পাশ্চাত্য জগতে কিছু সন্ত্রাসী কর্মকা- সংঘটিত হওয়ায় ইতিমধ্যেই পাশ্চাত্যে মুসলমানদের প্রতি সন্দেহ ও চাপ সৃষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সেখানে ইসলামের প্রচার-প্রসারের বিরুদ্ধে চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে সম্প্রতি ফ্রান্সে এক সন্ত্রাসী ঘটনায় বহু বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পাশ্চাত্যে ইসলামবিদ্বেষ তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান রার্হ্বা হযরত আয়াতুল্লাহ্ ‘উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী পাশ্চাত্যের যুবসমাজের উদ্দেশে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে তাদেরকে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদী ও তাকফীরী গোষ্ঠীসমূহের উত্থানের পিছনে নিহিত ষড়যন্ত্রের ওপর থেকে আবরণ উন্মোচন করে দিয়েছেন এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ইসলামের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
সব শেষে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ্ ইসলামী উম্মাহ্র ঐক্য ও সংহতির চালিকা শক্তিতে পরিণত হোকÑ আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে এ কামনা করছি।