মুসলিম উম্মাহর জন্য ঐক্যের চেয়ে বড় আর কোনো কল্যাণ নেই: হজ্জ পালন প্রসঙ্গ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
পোস্ট হয়েছে: মে ৫, ২০২৫

ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা হজ্জের ফরজ নির্ধারণে আল্লাহর উদ্দেশ্যকে মানবজাতির পরিচালনার জন্য একটি সম্পূর্ণ এবং পথপ্রদর্শক মডেল বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন: এই ফরজটির গঠন এবং বাহ্যিক রূপ সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক এবং এর উপাদানগুলোর বিষয়বস্তু সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক ও ভক্তিমূলক যাতে সমগ্র মানবতার স্বার্থ নিশ্চিত করা যায়। আজ মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমাধানের জন্য মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় কল্যাণ হল ঐক্য এবং সমন্বয়। যদি এই ঐক্য থাকত, তাহলে গাজা এবং ইয়েমেনের মতো সমস্যাগুলো ঘটত না।
রোববার, হজ কর্মকর্তা এবং একদল হজ্জযাত্রীর সাথে এক বৈঠকে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ওই মন্তব্য করেন। সর্বোচ্চ নেতা তাঁর বক্তব্য শুরু করেন বন্দর আব্বাসের ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে। তিনি এই স্বদেশীদের এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের জন্য ধৈর্য ও শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন: বিভিন্ন ঘটনায় বান্দা ধৈর্য প্রদর্শন করলে আল্লাহ তাকে হাজার গুণ বেশি মূল্যবান পুরস্কার দান করেন।
তিনি প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেষ্টা এবং সক্ষমতার সাহায্যে পূরণযোগ্য বলে মনে করেন। সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন: ‘হারানো প্রিয় পরিবারগুলো’ মানুষের হৃদয়কে পুড়িয়ে দিয়েছে। দুর্ঘটনায় তাদের চলে যাওয়া আমাদের এবং সকলের জন্যই ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে।
বিপ্লবী নেতা বলেন: আল্লাহর ঘরের হাজীদের জন্য হজের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যসহ বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান এবং বোধগম্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। হজ্জ পালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও করণীয়গুলো সঠিকভাবে পালনের জন্য জ্ঞান খুবই প্রয়োজন। পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি আরও বলেন: হজ্জ সম্পর্কিত অনেক আয়াতে ‘মানুষ’ শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ কেবল মুসলমানদের নয়, সকল মানুষের জন্যই হজ্জ পালনের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কাজেই সঠিকভাবে হজ পরিচালনা করার মানে হলো মানবতার সেবা করা।
হজ পালনের ক্ষেত্রে করণীয় দিকগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি হজকে এমন একটি বাধ্যতামূলক ইবাদত বলে অভিহিত করেছেন যার রূপ এবং গঠন শতকরা এক শ ভাগই রাজনৈতিক। কারণ এটি প্রতি বছর নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে মানুষকে এক জায়গায় এবং এক সময়ে সমবেত করে, যা সহজাতভাবেই রাজনৈতিক প্রকৃতির। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেন: হজের রাজনৈতিক রূপ ও গঠনের পাশাপাশি এর উপাদানগুলোও পুরোপুরি আধ্যাত্মিক এবং ভক্তিমূলক। এগুলোর প্রতিটি কর্মই মানব জীবনের বিভিন্ন বিষয় এবং প্রয়োজনীয়তার জন্য প্রতীকী এবং শিক্ষণীয় দিকগুলোর উল্লেখ রয়েছে।
এই প্রতীকগুলোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ‘তাওয়াফ’ এর শিক্ষাকে তৌহিদবাদের কেন্দ্রবিন্দু এবং তার চারপাশে আবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন: তাওয়াফ মানবতাকে শিক্ষা দেয় যে সরকার, জীবন, অর্থনীতি, পরিবার এবং জীবনের সমস্ত বিষয় তৌহিদবাদের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে, কোনও নৃশংসতা, শিশুহত্যা কিংবা বাড়াবাড়ি থাকবে না। এই পৃথিবী তখন জান্নাতে পরিণত হবে।
বিপ্লবের নেতা ‘সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী সায়ি’ করাকে একজন ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয়তার প্রতীকি ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি বলেন এই সায়ি করার মানে হলো তাকে বোঝানো যে প্রতিনিয়ত কষ্টের পাহাড়ের মধ্যে চেষ্টা করতে হবে কিন্তু কখনও থেমে যাওয়া যাবে না, দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া যাবে না বা বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ‘আরাফাত, মাশ’আর এবং মিনার দিকে অগ্রসর হওয়া’ কে অবিরাম চলাচল এবং স্থবিরতা এড়ানোর একটি শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করে আরও বলেন: ‘কোরবানী এই সত্যের প্রতীকি ইঙ্গিত দেয় যে, একজন ব্যক্তিকে কখনও কখনও তার প্রিয়তম কাউকে ত্যাগ করতে হয়, ত্যাগ স্বীকার করতে হয় এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।’
তিনি ‘জামারাতের পাথর নিক্ষেপ’ করার ঘটনাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিষয়টি শেখানো হয়েছে তা হলো-মানুষের উচিত সবসময় জিন ও মানব শয়তানদের চেনা এবং যেখানেই তাদের পাবে সেখানেই তাদের আক্রমণ করে ধ্বংস করা। বিপ্লবের নেতা ‘ইহরামের পোশাক পরিধান করা’কে বিনয় এবং আল্লাহর সামনে মানুষের ঐক্যের লক্ষণ বলে মনে করেন। তিনি আরও বলেন: এইসব কর্মকাণ্ড মানব জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা।
পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে বিপ্লবের নেতা হজের সামাজিক লক্ষ্য সম্পর্কে বলেন: বিভিন্ন মানবিক কল্যাণকে বোঝা এবং অর্জন করা হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি বলেন: আজ মুসলিম উম্মাহর জন্য ঐক্যের চেয়ে বড় কল্যাণ আর কিছু নেই। যদি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি এবং সংহতি থাকত, তাহলে গাজা ও ফিলিস্তিনের বর্তমান ট্র্যাজেডি ঘটত না এবং ইয়েমেনকে এভাবে চাপের মুখে পড়তে হত না।
তিনি ইসলামী উম্মাহর বিচ্ছিন্নতা ও বিভাজনকে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ অন্যান্য বলদর্পি শক্তিগুলোর স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিভিন্ন জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী হাতিয়ার বলে মনে করেন। সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন: উম্মাহর ঐক্যের মাধ্যমে ইসলামী দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমন্বয়ের পাশাপাশি পরস্পরের প্রতি সহায়তার সুযোগ তৈরি হয় হজের শিক্ষার মাধ্যমে। পবিত্র হজ পালনকে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী হজের সত্যতা ও লক্ষ্য ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে মুসলিম সরকারগুলোর, বিশেষ করে আয়োজক সরকারের ভূমিকা ও কর্তব্যকে মহান এবং বিশিষ্ট বলে মনে করেন। তিনি বলেন: দেশের কর্মকর্তা, পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবী, লেখক এবং জনমতের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্বদের উচিত হজের বাস্তবতা জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করা।
ইরান থেকে এ বছর ৮৬ হাজার হজযাত্রী পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে ওহীর দেশে ভ্রমণ করবেন বলে ইরানের হজ অফিস জানিয়েছে। পার্সটুডে/