All posts by dreamboy

পশ্চিমা বেতারের প্রকৃত চরিত্র

নিজেদের ভবিষ্যৎ লাভের আশায় পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমগুলো মাঝে মধ্যে অথবা বিশ্বের কোনো বিশেষ ঘটনার পাশাপাশি বিশেষ সংবাদ রিপোর্ট পরিবেশন করে। অতঃপর পরবর্তী ফল লাভের জন্য সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে শুরু করে শোরগোল। মূলত এ মায়াকান্না বা গলাবাজি তারাই প্রদর্শন করে যারা পরিস্থিতিকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায়। সম্প্রতি (মার্চ ১৯৮৬) ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্বন্ধে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এবং এটি বিশ্বাস করার কারণ আছে যে, তা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত হবে। দুনিয়ার উদ্ধত শক্তিগুলো যখন কোনো আঞ্চলিক বা বিশ্বসমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয় তখন প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, তারা বহু পরীক্ষিত ব্যর্থ বাহানাগুলোকেই ব্যবহার করে।

সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন বিষয় ও ঘটনাবলি যা আমেরিকা, ব্রিটেন ও মিসরের পারস্পরিক সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে, যেমন মাল্টা বিমান ঘাঁটিতে ষাটজন নিরপরাধ যাত্রী হত্যা, আমেরিকা ও ব্রিটেনের দালালদের দ্বারা দক্ষিণ আফ্রিকার বঞ্চিত কালো মানুষদের ব্যাপকভাবে হত্যা এবং পরাশক্তিদ্বয় কর্তৃক আফগানিস্তান, চিলি, সালভাদার ও ফিলিপাইনে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যান্য অপরাধ- এসবের কারণে বিশ্বজনমতে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই তারা আর একবার ইরানে মানবাধিকার অস্ত্র প্রয়োগ করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের অপরাধগুলো ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সংবাদণ্ডআবরণ সৃষ্টি করা এবং ইসলামি ইরানকে চাপের মধ্যে রাখা।

এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পশ্চিমা মাধ্যমগুলোয় ব্রিটেনের ভূমিকা, বিশেষ করে বেতার কেন্দ্রগুলোর অপপ্রচার। ব্রিটেনের প্রচারসংস্থা বিবিসি এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ বেতার কেন্দ্রের এক ফরাসি অনুষ্ঠানে ঘোষিত হয় : সম্প্রতি প্রকাশিত ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এর এক বিবৃতিতে ইরানি জেলখানায় বন্দিদের হত্যা, তাদের ওপর অত্যাচার ও দুর্ব্যবহার সংক্রান্ত শত  শত ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বন্দি শুধু ধর্মীয় অথবা রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জন্যই গ্রেফতার হয়েছিল।

উক্ত বেতারকেন্দ্র আরও ঘোষণা করে : এ রিপোর্ট অনুযায়ী ১৩ জন প্রত্যক্ষদর্শী যাদের মধ্যে ইরানের একটি বিরুদ্ধবাদী দলের কিছুসংখ্যক সদস্যও রয়েছে তাঁরা বলেছেন যে, আজও পরিকল্পিত উপায়ে ইরানে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, জেলখানায় কয়েদিদের অবস্থাও অসহনীয়।

প্রথমত বিবিসি প্রচার করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে হত্যা ও অত্যাচারের শত শত ঘটনার উল্লেখ আছে। পরবর্তী পর্যায়ে এসে বলে যে, এ রিপোর্টের ভিত্তি হচ্ছে তেরজন বিরোধী প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য। শেষ পর্যায় বলে : এ ছাড়া জাতিসংঘের একজন বিশেষ প্রতিনিধির লক্ষ্য ছিল এ বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করার। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তাঁকে ইরানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

স্ববিরোধী ও চাতুর্যপূর্ণ বিবৃতির এটাই প্রথম ঘটনা নয়। ১৯৮২ সালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের উদ্যোগে জাতিসংঘ থেকে ইহুদিবাদীদের উৎখাতের যে চেষ্টা চলছিল তার পাশাপাশি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত এক ব্যাপক রিপোর্ট প্রচার করে এবং বর্ধিত ফল লাভের জন্য ভয়েস অব আমেরিকা ও বিবিসি’র সাথে সাথে ইসরাইল বেতারও তাদের প্রোগ্রামসমূহের অর্ধেকটাই দীর্ঘ কয়েকদিনের জন্য এ প্রসঙ্গটির মধ্যেই সীমিত রেখেছিল।

সে সময়ে পশ্চিম জার্মানিস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত তথাকার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডিরেক্টর জেনারেল হেলমুট ফোর্টিজকে এ বিষয়ে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য আবেদন রেখে এক পত্র লিখেন। মি. হেলমুট ফোর্টিজ তিন মাস বিলম্বের পর শেষাবধি এক সংক্ষিপ্ত উত্তরে ইরানি দূতাবাসকে লিখেন : ইরানের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং হত্যা সম্পর্কে আমি কোনো তথ্য বা দলিল পাইনি। আমি আশা করি, উত্তর দিতে পারব; ভবিষ্যৎ কোনো এক সময়ে যোগাযোগ করুন। অতঃপর দীর্ঘ তিন বছর অতিক্রম হওয়ার পরও তিনি তাঁর আশা পূর্ণ করতে পারেননি এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও গ্রহণযোগ্য কোনো দলিল পেশ করেনি; বরং তারা ইরানের বাইরে অবস্থানরত কিছুসংখ্যক ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরোধীর কিছু বক্তব্যকেই উপস্থাপিত করেছে।

আমরা অবশ্য এ ধরনের সংস্থাগুলোর প্রকৃতি এবং পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমগুলোর প্রচারণার লক্ষ্য সম্বন্ধে অবহিত। পিটার নিসন নামক জনৈক ব্যক্তির সহায়তায় ১৯৬১ সালে লন্ডনে এ সংস্থার জন্ম। এ সংস্থা ঘোষণা করে যে, নির্যাতন, হত্যা, বেআইনি গ্রেফতার, গুম ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো এর লক্ষ্য। কিন্তু সংস্থাটির তৎপরতা প্রমাণ করে যে, এটি দুনিয়ার বঞ্চিত মানুষের বিপ্লবী তৎপরতার বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করার যন্ত্র হিসেবেই কাজ করে। পরাশক্তিকে সমর্থনদান এবং তাদের অপরাধকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করাই এর লক্ষ্য। পরাশক্তিসমূহের অপরাধী নোংরামুখ এ সংস্থার শান্তি ও মানবতার স্লোগানের অন্তরালে লুকিয়ে থাকে।

বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর এ ধরনের স্ববিরোধী বিবৃতিকে তাদের প্রচারণার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। এভাবে তারা ইরানে মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্বন্ধে মিথা ছড়াচ্ছে। বিবিসি তার আরবি প্রোগ্রামেই এ বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

এ সংস্থার মানবাধিকার কমিটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যে রিপোর্ট পেশ করেছে সেখানে উল্লেখ আছে, ১৯৮৪-৮৫ সালে ৩০০ ইরানিকে হত্যা করা হয়েছে।

এবারের রিপোর্ট তারা কিন্তু নিজেদের দাবির যথার্থতা প্রমাণের জন্য কোনো দলিলের কথা উল্লেখ করেনি। রিপোর্টে শুধু বলা হয়েছে যে, জাতিসংঘ প্রতিনিধি ইরানের বাইরে অবস্থানরত তের জন বিরুদ্ধবাদী ইরানির সঙ্গে আলাপ করেছেন। শত শত হত্যা ও হাজার হাজার অত্যাচারের ঘটনার অস্তিত্ব কিভাবে বোঝা গেল, কেনই বা সরকারবিরোধী ১৩ জনের সাক্ষ্যকেই তাঁরা নির্ভরযোগ্য বলে মনে করলেন? অথচ ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে যখন ইরিক, স্পিথ ও ব্রীচ নামক তিনজন জেলার ব্রিটেনের উইংগ্রিন জেলখানায় ব্যারী প্যারাসো নামক একজন বন্দিকে করুণভাবে হত্যা করে তার তলপেট টুকরো টুকরো করে ফেলে তখন তারা টু শব্দও করেনি। যাক, লন্ডনে অবস্থিত যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সে সংস্থাটিও এ ব্যাপারে একটি ক্ষুদ্র বিবৃতিও প্রচার করেনি এবং বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও রেডিও ইসরাইল এ প্রসঙ্গে কোনো কথাই বলেনি।

উক্ত ঘটনা ঘটছে ১৯৮০ সালে যখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী এল-সালভাদরে বিনাবিচার চৌদ্দ সহস্র লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করা হয়। এল-সালভাদরের অপরাধের কথা বলা হলেও কোনো মানবাধিকারের প্রবক্তাই ব্রিটেনের ঘটনার ব্যাপারে কোনো কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেনি। ১৯৭০ সালের প্রথমদিকে মার্কিন ভাড়াটিয়াদের দ্বারা হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হলো নাইজেরিয়ার বায়াফ্রাতে। অথচ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং মানবাধিকারের সমর্থকদের মানবতাবোধ এ ব্যাপারে আদৌ জাগ্রত হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, চিলি, এল-সালভাদর এবং নিকারাগুয়ায় হাজার হাজার বঞ্চিত মানুষ নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে, কিন্তু এ সংস্থা কর্তৃক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সে সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট প্রেরিত হয়নি। আসলে যখন আফগানিস্তানে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেনের অপরাধ বিশ্ববিবেককে স্পর্শ করেছে, তখনই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অন্য কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে হৈচৈ শুরু করেছে। আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গটি হচ্ছে পশ্চিমা বেতার কেন্দ্রগুলোর একান্ত উপযোগী উপকরণ। এ সকল বেতার কেন্দ্র ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন করে, কিন্তু ইরাকে গণহত্যার বিষয়ে নীরব থাকে। কিছুদিন আগে দুনিয়ার মুসলিম জনতার অভিমতের চাপে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইরাকে বন্দিদের অবস্থা ও নির্যাতন সম্বন্ধে একটি অসম্পূর্ণ রিপোর্ট তৈরি করেছিল। ১৯৬৮ সালের অভ্যুত্থানের পর এটাই ছিল ইরাকের ব্যাপারে বিশ্ববাসীর দাবির প্রথম প্রতিফলন। আজকে বিশ্বসমাজকে অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে যে, দুনিয়ার গর্বিত শক্তিগুলো আবার কোন উদ্দেশ্যে সেই পুরাতন অস্ত্র ইসলামি ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য টেনে আনছে!

(সূত্র : নিউজলেটার, এপ্রিল ১৯৮৬)

মুসলিম কালো আদমি ও মার্কিন মুল্লুকে ইসলাম

চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমেরিকার কালো আদমি সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইসলামের পরিচয় ঘটে এমন এক পরিবেশে, যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামকে একটি পশ্চাৎপদ ধর্ম প্রমাণের জন্য বিকৃতভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছিল। কারণ, শয়তান জানত যে, পশ্চিমাজগতেও সত্যধর্ম ইসলামের অভ্যুদয় ঘটবে। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যজগতে এর প্রবেশের পূর্বেই ইসলামকে বিকৃত করে বিতর্কিত আবেদনহীন বানাবার চেষ্টা করা হয়। এতদ্ভিন্ন ইউরোপীয়রা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কালো আদমিদের বুঝাতে চেষ্টা করে যে, যিশুখ্রিস্ট একজন কোকেশিয়ান ছিলেন, তাঁর আঁখিযুগল ছিল নীল, ঈষৎ স্বর্ণাভ রং-এর ছিল কেশদাম। মার্কিন কালো আদমিদের প্রভাবান্বিত করার জন্য তারা যে পন্থা উদ্ভাবন করেছিল তা হচ্ছে এমনি প্রচারণা যে, ঈশ্বর হচ্ছেন একজন উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মানুষ, যাঁর চোখদ্বয় ছিল সবুজাভ নীল রঙের এবং যিনি নিজেকে ‘আল্লাহ্’ বলে পরিচয় দেন এবং নিজেকে কালো আদমিদের শ্রেণিভুক্ত মনে করেন।

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কোকেশিয়ান জালিমরা একজন উজ্জ্বল বর্ণের সবুজাভ নীল চোখের মাস্টার র্ফ্দা মুহাম্মাদকে অনুমতি দিল ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার নামে ইসলামের একটি বিকৃত রূপ উপস্থাপনের জন্য- যে নিজেকে আমেরিকায় ‘আল্লাহ্’ বলে দাবি করত। তাদের আশা ছিল কালো আদমিদের মধ্যে একটি বিভেদের নীতি, একটি আশঙ্কা ও একটি গোপন জুলুম বিরাজমান রাখা, লক্ষ্য ছিল অন্যান্য দেশ থেকে আগত মুসলমানদের সঙ্গে আগত ইসলামের স্বীকৃতি যেন কালো আদমিরা না দেয়।

এ ইষৎ তামাটে বর্ণের লোকটি যুক্তরাষ্ট্রে এলেন এবং বুঝালেন যে, তিনি কালো আদমি এবং তিনিই আল্লাহ্। এলিজা পুল যিনি পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন এলিজা মুহাম্মাদ, তাঁকে নবী হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এলিজা এ ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করলেন এবং এমন অনেক অনুসারী সংঘবদ্ধ করলেন, যাদের ধারণা হলো তারা মুসলমান। কেননা, তারা তো ইসলামেরই দর্শন গ্রহণ করেছে। কালো আদমিরা, বিশেষ করে সে যুগ থেকেই মাস্টার ফার্‌দ মুহাম্মাদ, এলিজা মুহাম্মাদ, এমনকি মন্ত্রী লুই ফারাখানের শিক্ষানুযায়ী এই ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে নিপতিত হয়ে আছে যে, মনুষ্য সমাজের এবং বিশ্বজগতের অধিপতি হচ্ছেন কালো আদমি।

একটি সমস্যা সৃষ্টি হলো। খ্রিস্টান কালো আদমিদের পক্ষে যেখানে পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল সত্যিকার ইসলাম গ্রহণের সেখানে তারা তথাকথিত ইসলাম ত্যাগ করল এবং মুসলমান হওয়ার চিন্তাও তাদের মধ্য থেকে উঠে গেল। যার ফলে বিকৃত খ্রিস্টবাদের মধ্যেই তাদের তৃপ্ত থাকতে হলো।

কালো আদমিদের নবতর চেতনার ফলে অনেক তথাকথিত মুসলমান ভাবতে শুরু করল যে, খোদা ও যিশুখ্রিস্ট হচ্ছেন কালো আদমিদের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বর্গ ও নরক পৃথিবীতেই ঘটে থাকবে।

অর্থনৈতিক মুনাফার জন্য ইউরোপীয়রা ও ইহুদিরা আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞতাবশত যে ভ্রান্তির সমাবেশ ঘটিয়েছে তাদের তথাকথিত ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে সেটিও ভুল ধারণা ও অসামঞ্জস্য সৃষ্টিতে যথার্থ ভূমিকা পালন করেছে। স্বার্থপ্রণোদিত ও বিকৃত তথ্যের ভিত্তিতে রচিত এ সকল বিকৃত পুস্তক ছাত্রদেরকে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে এবং প্রকৃত ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে তাদেরকে অজ্ঞ রাখার জন্য আজও কলেজের এবং পাঠাগারের তাকের মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রকৃত ইসলামের দুশমনদের দ্বারা ইসলামের এ ধরনের বিকৃত উপস্থাপনার নিদর্শন আজও দেখা যায়।

ইসলামের সত্যতার যে নিদর্শন কোরআনে ও বিভিন্ন ইসলামি পুস্তকে রয়েছে, যেগুলোর অনুবাদ মুসলমানরাই করছে সেগুলো আজও সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে। আর অমুসলমান, ইসলামের শত্রু এবং অজ্ঞ লোকদের দ্বারাই ইসলামের ঘটনাবলি বিকৃত হয়েছে। বিষয়টির অবনতি ঘটাবার জন্য আমেরিকার কালো আদমি এলিজা মুহাম্মাদ একজন প্রতারক খ্রিস্টান ধর্মগুরুর সহায়তায় মাস্টার ফার্‌দ মুহাম্মাদ এর তথাকথিত ‘ইসলাম’-এর ভ্রমাত্মক তত্ত্ব কালো আদমিদেরকে শিক্ষাদানের সুযোগ গ্রহণ করেন, যার ফলশ্রুতি হচ্ছে কালো আদমিদের জাগৃতি সংস্থার উদ্ভব। সেটিকে সাধারণত ইসলামি জাতির প্রথম পুনরুত্থান বলে অভিহিত করা হয়।

কালো আদমিরা পূর্ব হতেই শোষিত হয়ে আসছিল এবং কোকেশিয়ান জালিমদের বর্ণবাদ, জুলুম ও বৈষম্যের মোকাবিলা করার একটি পথ তারা খুঁজছিল। এ কারণে এ দুই ব্যক্তি এমন অনেক অনুসারী পেল যারা নিজেদের জন্য নতুন পরিচিতি অম্বেষণ করছিল এবং সাদা আদমিদের থেকে নিজেদেরকে একটি পৃথক জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত মনে করছিল। এ নতুন সংস্থার কর্মকর্তাগণ এবং এর বেশ কিছু সমর্থক জানতেন যে, এলিজা এবং মাস্টার ফারদের লোভী প্রশংসাকারী অনুসারী লুই ফারাখান, যিনি নেশন অব ইসলাম অর্গানাইজেশন-এর বিখ্যাত কর্মকর্তা, তাঁর হাতেই ইসলামের মুনাফার চাবিকাঠি।

উপরিউক্ত সব কারণে দি নেশন অব ইসলাম তখনও যেমন কোনো ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করত না, আজও তা করে না। এটা এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার ভিত্তি হচ্ছে বাইবেল ও কোরআনের চিন্তাধারা। এদের কোরআনের ব্যাখ্যার লক্ষ্য ছিল আমেরিকান কালো আদমিদের জাগৃতি। বিপরীত পক্ষে, সত্যিকারের ইসলাম হচ্ছে এমন একটি ধর্ম পবিত্র কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক যে এটি শিখে এবং জীবনে বাস্তবায়িত করে সে যেই হোক না কেন, কালো হোক বা অন্য কিছু, সবার জন্যই এটি কল্যাণ বয়ে আনে।

হযরত ঈসা (আ.)-এর মিশন শেষ হওয়ায় প্রায় ৬০০ বছর পর হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমন ঘটে। তিনি ছিলেন শেষ পয়গম্বর, আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে যাঁর ওপর কোরআন নাযিল হয়েছে। কিন্তু সে কোরআনে বর্ণিত প্রকৃত ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে দি নেশন অব ইসলামের আদর্শের রয়েছে বিরাট বৈপরীত্য। ইসলামের আর্বিভাব পূর্বেকার তথা মূসা (আ.)-এর কিতাব ও ঈসা (আ.) বর্ণিত শিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘোষণা এবং সেগুলোর সত্যতা প্রমাণ করে। আদম, নূহ, ইবরাহীম, লূত, ইউসুফ, ইয়াকুব এমনি হাজার হাজার নবী ও আল্লাহ্‌র পছন্দনীয় ব্যক্তির মাধ্যমেই যে আল্লাহ্্র সব শিক্ষা এসেছে সে বিষয়টি নিশ্চিত করে।

ঈসা (আ.)-এর জন্মের বহু পূর্বে মনুষ্য সমাজের জন্মলগ্ন থেকেই ইসলামের অভ্যুদয় ঘটেছে যা হচ্ছে মানুষের আদি ধর্ম। ইসলামের অর্থ হচ্ছে একজনের ‘ইচ্ছাশক্তিকে’ পূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র সমীপে সমর্পণ করা। আর আল্লাহ্ তো অদৃশ্য- না তিনি মনুষ্যজীব, না তার সন্তান। প্রথম মানব, আল্লাহ্‌র নবী আদম (আ.)-এর বিশ্বাস ছিল এটাই। আল্লাহ্‌র কাছ থেকে হযরত আদমের কাছে যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে সে তো ইসলামই। নবিগণের সামনে সকল বিশ্ববাসীর তরে একই ধর্মীয় নির্দেশ প্রেরিত হয়েছে আর ধরণির বুকে মানুষের মিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেটা চলবে। আল্লাহর নবীরা সবাই সে মহা ঐশী শক্তির আধার কর্তৃকই অনুমোদিত। তাঁদের কেউই পশ্চিম গোলার্ধ থেকে আবির্ভূত হননি, এমনকি তাঁরা পশ্চিম গোলার্ধ ভ্রমণও করেননি। অথচ তাঁদের বাণী সারা জাহানে সকল মানুষের জন্য প্রচারার্থে নির্দিষ্ট হয়েছে। আল্লাহ্‌র সকল নবীই প্রাচ্যে পদার্পণ করেছেন।

মাস্টার ফার্‌দ মুহাম্মাদ এলিজা মুহাম্মাদকে যে দর্শন শিক্ষা দিয়েছিলেন তা হচ্ছে কালো আদমিদের জাগরণ সম্পর্কিত। আমেরিকায় কালো আদমিদের সেই সংকটকালে তৎকালীন প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যে দার্শনিক ব্যাখ্যা তাদের সম্মুখে উপস্থাপন করা প্রয়োজন ছিল সেটাই উপস্থাপন করা হয়েছিল। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য যে, ম্যালকম এক্স, যিনি শাহাদাতের পূর্বে সত্যিকারের ইসলামকে বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর মাধ্যমে এবং বিগত কয়েক দশকে আমেরিকায় বহিরাগত মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে এখন কালো আদমিরা ইসলামের সত্যিকারের শিক্ষা এবং প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে উচ্চতর ধারণা লাভ করেছে। এতসবের পরেও একটি শিক্ষা তথা ব্যক্তিসত্তাকে জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করার বিষয়টি বরাবর ভাবনার অন্তরালে থেকে যাচ্ছে।

অনেক মুসলমান যারা প্রথম পুনরুত্থানের সঙ্গে জড়িত তারা ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলে যে, শয়তান গোরা (সাদা) আদমিভুক্ত এবং তারা তাকে আজও সম্বোধন করে, ‘নীল নয়না শয়তান’ বলে। এই যে বিশ্বাস, এটা আজও অনেকে সমুন্নত করে রাখছে। কারণ, ইতিহাসের সারাটি সময়ে সাদা আদমিরা এমন সব কাজ করেছে যেটা শয়তানিরই নামান্তর। এদদ্ভিন্ন এ জাগরণ এমন একটা সচেতনতা সৃষ্টি করেছিল যা সামাজিক বিভিন্ন খারাবি থেকে কালো আদমিদের ব্যক্তিসত্তাকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল। যাক, এটা সত্য যে, আধ্যাত্মিক জ্ঞানী ও ইসলামের সত্যিকারের শিক্ষা তাদের জন্য অদ্যাবধি প্রয়োজন।

এলিজা মুহাম্মাদ নিজের এবং দি নেশন অব ইসলামের সমর্থনে এসকল বিকৃত ইসলামি বক্তব্য ব্যবহার করতেন, উদ্দেশ্য ছিল ভয়াবহ নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য কালো আদমিদের সচেতন করা। তাঁর অনেক আত্মনিবেদিত অনুসারী ছিলেন। যেমন শাহাদাত লাভের পূর্বে ম্যালকম এক্স, ফারাখান, এলিজার পুত্র ওয়ালেক দীন মুহাম্মাদ- যিনি পরবর্তী পর্যায়ে নাম পরিবর্তন করে নামধারণ করেছিলেন ওয়ারিস (যার অর্থ হচ্ছে উত্তরাধিকারী)। মৃত্যুর পূর্বে ম্যাকলম এক্স কোরআনভিত্তিক ইসলামের সত্যিকার শিক্ষার বিষয়ে কঠোর অধ্যাবসায় নিয়ে অধ্যয়ন করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হন। আল্লাহ্‌র অপার কৃপায় গুপ্তঘাকতের হাতে নিহত হওয়ার পূর্বে তিনি সত্যিকারের ইসলামকে চিনতে পেরেছিলেন এবং ভুল পথে পরিচালিত মুসলমানদেরকে জাগাতে চেষ্টা করেছিলেন। এটি ছিল এমনি এক জাগতিক প্রচেষ্টা যা তাঁর জন্য শাহাদাত ডেকে আনে। ধূলি-ধূসরিত বসুন্ধরা ত্যাগের পূর্বে মুসলমান হিসেবে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্ব হজ সমাপনের জন্য আরবের মক্কায় গমনের সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন প্রকৃত ইসলামের পরিচয়।

তাঁর এ সত্য উপলব্ধি সমসাময়িক মুসলিম কালো আদমিদের সংস্থার জন্য বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত হলো। কিছু কিছু লোক ভাবল ম্যালকম এক্স ক্ষমতালাভের প্রত্যাশী ছিলেন। তারা ভেবেছিল যে, তিনি নেতা হতে চাইছেন। অন্যরা সরলতার সঙ্গে বিশ্বাস করছিল যে, তিনি উন্মত্ততায় ভুগছিলেন। কারণ, তিনি এলিজার শিক্ষা অনুসরণে বিরত হয়েছিলেন। তবে কিছু কিছু লোক এটা বুঝতে পেরেছিল যে, যা সত্য সেটাই তিনি আবিষ্কার করতে পেরেছেন, কিন্তু তারা চাচ্ছিল না যে, মুসলিম কালো আদমিরা সেটা জ্ঞাত হোক। হকের বিরোধী শক্তির লালসা চরিতার্থ করার জন্য কালো আদমিদের অজ্ঞতার অন্ধকারে রেখে তাদের শোষণ করার হীন অভিপ্রায়ে রচিত এটা ছিল আর এক ধরনের ষড়যন্ত্র।

জুলুম এবং জাহেলিয়াতের মোকাবিলায় ইসলাম সচেতন করে তোলে। ইসলাম মানবসন্তানদের সত্যের আলো ও আধ্যাত্মিক চেতনার দিকে ঐক্যবদ্ধ করে। আর সে আলো সে চেতনা তো আল্লাহ্‌র নূরের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়।

এলিজার মৃত্যুর পর মুসলিম কালো আদমিরা শতধাবিভক্ত হলো। সঠিক হোক আর না হোক কেউ কেউ এলিজার শিক্ষায় দৃঢ় রইল, কেননা, তারা তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে বুঝতে পেরেছিল যে, কালো আদমিদের জাগরণ ও স্ব-সহায়তার মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যাক এটা অবশ্যই হৃদয়ঙ্গম করতে হবে, মুসলমানদের প্রথম পুনরুত্থানের দর্শন ‘চক্ষু উন্মোচন’ মাত্র, সেটা কোনো ধর্ম নয়, যদিও সেটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইসলাম’ এবং তার অনুসারীদের বলা হয় ‘মুসলমান’। কোরআনের স্পষ্ট জ্ঞান না থাকার দরুন ভবিষ্যতেও তারা নিজেদেরকে ইসলামের অনুসারী এবং মুসলমান বলে ভাববে। কিন্তু প্রথম পুনরুত্থান-এর সমর্থকগণ ম্যালকম এক্স-এর নেতৃত্ব নতুন ধ্যান-ধারণা গ্রহণ করল।

কিছু কিছু অনুসারী আবার বিভ্রান্ত  হলো। তারা তাদের অনেক ধর্মীয় এবং আচার-অনুষ্ঠানই ত্যাগ করল এবং গাফেল থাকল সত্যিকার ইসলাম থেকে, অথচ এরপরও তারা মুসলমানত্বেরই দাবিদার। অপর পক্ষে, অনেকেই হেদায়াত লাভের জন্য প্রার্থনা করছিল এবং সঠিক ইসলামি পথও তারা পেয়েছিল। ম্যালকম এক্স-এর শাহাদাতপ্রাপ্তির পর অনেকেই নিজেদের ঈমান ও কোরআনি শিক্ষার ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকল। এটা সম্ভব হয়েছিল কোরআনে গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণার ফলেই। বিদ্যার্জন ও ব্যবসায়িক কারণে অনবরত যারা আমেরিকায় পদার্পণ করছিল তাদের সংস্পর্শে এসে মুসলিম কালো আদমিদের অনেকের মধ্যকার বিভ্রান্তি ও গলদ দূর হয়ে যায়।

ম্যালকম ও এলিজার তিরোধানের পর মুসলিম কালো আদমিদের অধিকাংশ এলিজার পুত্র ওয়ারিস দি মুহাম্মাদের নেতৃত্বাধীনে চলে যায়। এটা ছিল ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দের প্রারম্ভ। যাক, তিনি ছিলেন পশ্চাৎপদ ইসলামের অনুসারী। সাম্প্রতিককালে তাঁর অনেক অনুসারী মার্কিন জাতীয়তাবাদের মোকাবিলায় টিকতে পারছে না এবং ইসলামি পরিচয় সমুন্নত রাখতেও চাইছে না, অনেক অঞ্চলে তারা ইসলামের অটল অনড় জীবনপ্রণালি থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এটা এজন্য হতে পারে যে, ওয়ারিস উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর পিতার কাছ থেকে নেতৃত্ব লাভ করেছেন। তাই আপোসের পথ ধরেছেন যা একজন জন্মগত নেতৃপ্রতিভাধর ব্যক্তির প্রকৃতির বিপরীত স্বভাব। কিন্তু এটা অন্ধ আনুগত্যের দোষ থেকে কাউকে রেহাই দিচ্ছে না।

ম্যালকম এক্সের শিক্ষা এবং প্রায় প্রত্যহ আগত মুসলিম অভ্যাগত ও ইসলামি পুস্তকাদি থেকে অধিকাংশ লোক প্রকৃত ইসলামকে জানতে পারে। বিভেদ এবং অনৈক্যের কারণে ওয়ারিস দি মুহাম্মাদের অনেক অনুসারী মার্কিন জাতীয়তাবাদের শিকারে পরিণত হলো এবং এর ফলশ্রুতিতে শয়তানের ওয়াসওয়াসায় প্রতারিত হলো। এভাবে আজও কোনো লোক ফারাখানের শিক্ষার এবং তথাকথিত প্রথম পুনরুত্থানের অনুসারী। আবার কেউ বা ওয়ারিস দি মুহাম্মাদের দ্বিতীয় পুনরুত্থান দর্শনের সমর্থক। এমন অনেক আমেরিকান মুসলমান আছে যারা এ দুদলের কোনোটির অন্তর্ভুক্ত নয়। এ সকল মুসলমান আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে নিজেদের অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে ইসলামের মধ্যে সত্যতা খুঁজে পেয়েছে এবং এটিকে তাদের জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করেছে।

প্রথম পুনরুত্থানের শিক্ষা কালো আদমিদের মধ্যে অধিকতর আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করেছে এবং এর ফলে তারা বুঝতে পেরেছিল যে, তারা ছিল অত্যাচারিত। তখন তারা এর বিরুদ্ধে গঠনমূলক কিছু করা শুরু করল। এটা একটা সৌভাগ্য, কেননা, তখনও অগণিত কালো আদমি নৈরাশ্যের শিকার হয়ে অত্যাচারিতের জীবনকেই বরণ করে নিয়ে চলছে। তারা না নিজেরা কিছু করেছে, না তাদের সন্তানদেরকে সে শিক্ষা দিয়েছে- যে শিক্ষার বলে উত্তর আমেরিকার কালো আদমিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জুলুম থেকে তারা রেহাই পেতে পারে।

ইসলামকে জানতে হলে অবশ্যই পবিত্র কোরআনের শব্দরাজি অধ্যয়ন ও হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। তিনি পুরুষ হোন আর নারীই হোন, সত্যিকারের মুসলমান হতে গেলে কোরআনের শিক্ষাকে তাঁর জীবনে বাস্তবায়িত করতে হবে। এটা ফারাখান অথবা ওয়ারিস দি মুহাম্মাদের মধ্যস্থতা ছাড়াও সম্ভব। কেউ যদি ইসলাম সম্বন্ধে অধ্যয়ন করেন তবে সে অবশ্যই অধুনা প্রচলিত বাইবেলের মিথ্যা ও ভুল-ত্রুটিগুলো আবিষ্কার করতে পারবেন। এখন সেটার শিক্ষাও কিছু নির্দিষ্ট শোষকের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বিকৃত করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআন আল্লাহ্‌র প্রেরিত সর্বশেষ গ্রন্থ। এর আদি ভাষা পরিবর্তিত হয়নি। যার জন্য এতেই রয়েছে প্রভুর স্পষ্ট পথনির্দেশ।

বিশেষ করে হযরত ঈসা (আ.)-এর পরবর্তীকালে, অন্ধকার যুগে যখন কোনো পথনির্দেশ ছিল না তখন সকল খ্রিস্টান ও তথাকথিত আনুগত্যশীলদের জন্য খ্রিস্টপূর্ব এবং পরবর্তীকালীন প্রত্যাদেশসমূহের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ব্যাপারে এ কিতাব ছিল একমাত্র নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। ইহুদিগণ এ সময়টিতে নিজেদের দুষ্ট স্বভাবের দরুন যিশুখ্রিস্টের বাণীসমূহ গোপন করে ফেলে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের কিতাবের বাণীই সমাজে প্রচলন ও প্রচার করবে এবং আজও তারা তাই করছে। এ জন্য আজ ৯৫ ধরনেরও বেশি বাইবেলের অনুবাদ দৃষ্ট হয়, কিন্তু পবিত্র কোরআন একটিই এবং মনুষ্যসমাজের সম্মুখে একটি নিদর্শন রাখার জন্য পবিত্র কোরআনে কোনো বিকৃতি ঘটতে দিবেন না আল্লাহ্ তাআলা। এটা হচ্ছে শেষ অবতীর্ণ কিতাব। আর কোনো কিতাবও আসবে না, অন্য কোনো নবীরও আগমন ঘটবে না।

মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন ইসলামের বিধান ও মৌল বিষয়গুলোর অনুসরণ এবং ঈমান, ইসলামি চেতনাবোধ বৃদ্ধি করা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করা। তিনি যে ব্যক্তিই হোন না কেন, যদি ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা না দেন তবে তাঁকে অনুসরণের কোনো প্রয়োজন নেই। আর সে ব্যাখ্যা তো হবে শেষ ঐশী বাণীসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল যা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে।

আজ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে মুসলমানদের নেতা হিসেবে ইমাম খোমেইনীর অভ্যুদয় ঘটেছে। তিনি পবিত্র কোরআন মুতাবিকই নির্দেশ দিচ্ছেন, যদিও অনেকের পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু তিনি ইরানবাসী এবং কালো আদমিদের অন্তর্ভুক্ত নন (এখানে যে নেতৃত্বের কথা বলা হচ্ছে তা হচ্ছে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার মুক্তি ও কল্যাণের পথনির্দেশ দেওয়ার নেতৃত্ব, কোনো বিশেষ ইসলামি দেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে ইরানের সঙ্গে একদেহে লীন হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে না), অতএব, তিনি কালো আদমিদের নেতা হতে পারেন না। কিন্তু এ ধরনের মন্তব্য অজ্ঞতা থেকেই উদ্ভূত।

এটা ভেবে দেখলে অনেকের জন্য সহায়ক হতে পারে যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিনিধি ৪ কোটি আমেরিকাবাসীর দুরবস্থার বিষয়টির স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং মার্কিন সমাজে এ জুলুম ও বৈষম্যের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করেছেন। ইনসাফকামী ইরানি জনতা যারা নিজেরাই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত, এরপরও তারা অপর মজলুম ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, যে ভাইয়েরা আশায় বুক বেঁধে আত্মসাহায্যের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

উপসংহারে বলতে চাই, বিচারের দিনে আমরা অবলোকন করব কে অপরাধী ছিল। আল্লাহ্ তো আমাদের স্বেচ্ছাকৃত পাপের জন্যই শাস্তি বিধান করবেন, অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য নয়। এখন যেহেতু আমরা ইসলাম সম্বন্ধে অবহিত, এজন্য অবশ্যই আমাদেরকে কোরআন পাক অধ্যয়ন করতে হবে, এর নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে এবং সাবধান থাকতে হবে যে, শয়তান যেন আমাদের ওয়াসওয়াসা দিতে না পারে। আল্লাহ্‌র কাছে পথনির্দেশ প্রার্থনা করুন। তিনি হচ্ছেন রাহমানুর রাহীম। সর্বশ্রেষ্ঠ মার্জনাকারী আমাদেরকে সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন।

(সূত্র : নিউজলেটার, এপ্রিল ১৯৮৬)

কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান

ইসলাম ধর্মে জ্ঞানার্জনের উপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ব্যাপারে নানা দিক নির্দেশনা রয়েছে। চিকিৎসা বিষয়ে কোরআনে উল্লেখিত বিষয়াদির ব্যাপক গুরুত্বের কারণে এ পর্যন্ত এ ইস্যুতে বহু সেমিনার ও সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ইরানের রাজধানী তেহরানে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি ‘কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সেমিনারে কোরআন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেছেন।

জ্ঞানার্জন বিশেষকরে চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর ইসলাম ধর্ম গুরুত্বারোপ করার কারণে মুসলমানরা ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এর ফলে মুসলমানরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হন। আবু আলী সিনা, জাকারিয়া ও ইবনে রূশদসহ আরও বহু মুসলিম মনীষী চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তারা চিকিৎসার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন। ইসলামের প্রথম শতাব্দিতেই মুসলিম বিশ্বের নানা প্রান্তে বহু সমৃদ্ধ হাসপাতাল গড়ে ওঠেছিল। এসব হাসপাতালে বিশেষ বিশেষ রোগের চিকিৎসার জন্য আলাদা আলাদা ইউনিটও ছিল। ফ্রান্সের বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ পিয়েরে রুসো তার বিজ্ঞানের ইতিহাস বইয়ে চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অগ্রগতি সম্পর্কে লিখেছেন, একবার স্পেনের এক বাদশা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে উপায়ান্তর না দেখে কর্ডোভা শহরে মুসলমানদের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন।

চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনার আগে এটা বলে রাখছি যে, কোরআনে চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দিকনির্দেশনা থাকলেও তা চিকিৎসা শাস্ত্রের বই হিসেবে বিবেচিত হয়না। আল্লাহতায়ালা নিজেই বলেছেন, কোরআন হচ্ছে মানুষের জন্য সরল ও সঠিক পথের নির্দেশক এবং তা পারলৌকিক ও পার্থিব জীবনের কল্যাণ নিশ্চিতকারী গ্রন্থ। কোরআনে চিকিৎসা শাস্ত্রের কথা উল্লেখ করার অর্থ হলো মানুষের কল্যাণে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বকে তুলে ধরা। ‘কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান’ শীর্ষক সেমিনারের সচিব মোহাম্মদ আব্বাসি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কোরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক দিকগুলোর একটি হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞান, যা বিশ্বের গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা যদি মনোযোগের সাথে কোরআনের আয়াতগুলো লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই, আসমানী এ গ্রন্থে মানুষের দৈহিক ও মানসিক রোগ নিরাময়ের বিষয়টি একইসঙ্গে রয়েছে। সুরা রা’দের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, জেনে রাখুন, কেবলমাত্র আল্লাহকে স্মরণের মাধ্যমেই আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।

অন্যদিকে, আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যাবার কারণে মানুষ দুরবস্থায় পতিত হয় বলেও এই মহাগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সংকট ও সমস্যার মুহুর্তে ধৈর্য্য ধারণ করতে বলা হয়েছে। ধৈর্য্য ধারণের পাশাপাশি আল্লাহর স্মরণ মানুষকে আত্মিক প্রশান্তি দেয়। পাশাপাশি এর ফলে মানুষের কঠিন পরিস্থিতি ও সমস্যা মোকাবেলার শক্তিও বৃদ্ধি পায়। ইসলাম মুসলমানদেরকে এ শিক্ষা দেয় যে, আনন্দ এবং দু:খ-কষ্ট উভয়ই ক্ষণস্থায়ী। কাজেই মানুষকে যে কোন কঠিন পরিস্থিতির জন্যও সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে এবং দুঃখ-কষ্টকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরনের পরীক্ষা হিসেবে গণ্য করতে হবে। আল্লাহতায়ালা নানা ভাবে মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। আর এর ফলে ঈমান আরও দৃঢ় হয়।

পবিত্র কোরআনে এমন সব দিক-নির্দেশনা রয়েছে, যা মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা থেকে মানুষকে দূরে রাখে। যেমন ইসলামে তরুণদের বিয়ে এবং পরিবার গঠনের ওপর অপরিসীম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুরা রূমের ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন,যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতি সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’

ইসলাম ধর্ম পারিবাবিক ও আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় রাখার উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। সকল আত্মীয়-স্বজন বিশেষ করে পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বারবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পারস্পরিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক, মানুষকে মানসিক দিক থেকে সুস্থ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ থাকতে সহায়তা করে। মুসলমানদেরকে পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন, নামাজ আদায়, দোয়া করা এবং অন্যান্য এবাদতের মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এর ফলে মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত হবে। মানুষ যদি মনপ্রাণ দিয়ে আন্তরিকতার সাথে তার সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে তাহলে অবশ্যই সে তার ফল পাবে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আমাকে ডাক,আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।

পবিত্র কোরআন, মানষিক ও আত্মিক সমস্যার সমাধানসূত্রের পাশাপাশি দেহের নানা রোগ নিরাময়েরও পথ বাতলে দিয়েছে। ইসলাম ধর্ম রোগ প্রতিরোধের ওপরই সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। কোরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং হাদিসে এমন সব দিকনির্দেশনা রয়েছে,যা রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। যেমন বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ক্ষুধার্ত না হলে খেতে বসনা এবং পেট পরিপূর্ণ হবার আগেই খাওয়া শেষ কর। রাসূল (সাঃ) ও ইমামগণ এমন সব খাদ্যদ্রব্যের নাম উল্লেখ করেছেন,যা ব্যাথা উপশমসহ নানা রোগ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখে। একই সাথে কোরআনে অনেক খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়েছে। মানুষের মন-মানষিকতার ওপর খাদ্যের প্রভাবের কথাও কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সূরা বাকারার ১৬৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে মানব-জাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্য আছে, তা হতে তোমরা খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু । মহাগ্রন্থ আল কোরআনে কিছু কিছু খাদ্য ও পানীয়কে হারাম বা অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।এসব খাদ্য ও পাণীয় মানুষের শরীর ও মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে মদ, শুকরের গুশত ও মৃত প্রাণীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

কোরআনে রোগ নিরাময়কারী কিছু খাদ্যের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে,যা আল্লাহতায়ালার শক্তি ও সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশও বটে। এছাড়া পবিত্র কোরআনে কিছু ওষুধের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের একটি সূরার নাম নহল বা মৌমাছি। ফুলের মধু আহরণ ও চাক তৈরীসহ মৌমাছির বিভিন্ন কর্মপ্রণালী সম্পর্কে বর্ণনা তুলে ধরে সূরা নহলের ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,” ওদের উদর হতে বিবিধ বর্ণ-বিশিষ্ট পানীয় নির্গত হয়ে থাকে, এতে মানুষের জন্য ব্যাধির প্রতিকার আছে।” এই আয়াতে মধুর গুণাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে মধুর মতো এত বেশী কার্যকর আর কোন উপাদান নেই। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, মধুর নানা বিশেষত্ব রয়েছে এবং তা রোগ নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকর।

পবিত্র কোরআনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আরেকটি দিক সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে। শুক্রানু থেকে ভ্রুণ গঠন ও ভ্রুণের বেড়ে ওঠার যে পর্যায়গুলো কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে,তা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। চৌদ্দ’শ বছরেরও বেশি সময় আগে যখন তৎকালীন সমাজে এ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা বিরাজ করছিল, তখন পবিত্র কোরআন স্পষ্ট ভাবেই ঘোষণা করে যে, শুক্রাণু জরায়ুতে স্থাপিত হয়। পবিত্র কোরাণে ভ্রুণের পূর্ণতালাভের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে।সূরা মো’মেনুনের ১২ থেকে ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় আমি মানুষকে মৃত্তিকার উপাদান হতে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে স্থাপন করি। পরে আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করি, অত:পর জমাট রক্তকে মাংস পিন্ডে পরিণত করি এবং মাংস পিন্ডকে অস্থি-পঞ্জরে, অত:পর অস্থি-পঞ্জরকে মাংস দ্বারা ঢেকে দেই। অবশেষে আমি তাকে চরম সৃষ্টিতে পরিণত করি, অতএব আল্লাহ মহান,যিনি শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টিকর্তা।”

এছাড়া পবিত্র কোরআনে মানুষের সুস্থতার প্রতি ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রোজার বিধান অন্যতম। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রোজা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, রোজা রাখুন তাহলে সুস্থ্য থাকবেন। চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর নীতিশাস্ত্র। তেহরানে অনুষ্ঠিত কোরআন ও চিকিৎসা শীর্ষক সেমিনারে এ সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের নীতিমালার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী, একজন মুসলিম চিকিৎসক, রোগীর সাথে সুন্দর আচরণ করতে বাধ্য। বলা হয়ে থাকে, ডাক্তারের আচার-ব্যবহার, রোগীকে অর্ধেক সুস্থ্য করে তোলে। কোরআনে সদাচরণের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সেমিনারে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়- শিক্ষক ও ভ্রুণ বিশেষজ্ঞ কেইথ মোর বলেছেন, গবেষকরা নতুন নতুন বিষয় আবিস্কার করছে আর এটা বুঝতে পারছে যে, কোরআনে এ সম্পর্কে আগেই বলা হয়েছে।

রেডিও তেহরান

মায়ের মর্যাদা

১) রাসূলে খোদা (সা) বলেছেনঃ বেহেশ্‌ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৫৪৩৯, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )

২) ইমাম সাদেক (আ) বলেছেনঃ এক লোক রাসূলের খেদমাতে এসে আরজ করলো-হে রাসুল! খেদমত করবো কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর? রাসূল বললেন-তোমার মায়ের। লোকটি আবারো জিজ্ঞেস করলো তারপর কার? নবীজী বললেন-তোমার বাবার। ( আল-কাফিঃ ৯/১৫৯/২,মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )

৩) রাসূলে কারিম (সা) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর,আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪ )

রেডিও তেহরান

বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিস

হাদিসে সাকালাইন: মুসলমানরদের প্রতি বিশ্বনবী (সা.)’র অতি জরুরি বাণী

এক. মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) একদিন মদিনা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থলে “খুম” নামক একটি জলাশয়ের কাছে খোতবা দান করেন। উক্ত খোতবায় তিনি আল্লাহর প্রশংসার পর লোকদেরকে নসিহত করে বলেন:

ألا أيّها الناس، فانّما أنا بشرٌ يوشک أن يأتی رسول ربّی فأجيب، و أنا تارکت فيکم ثقلين: أولهما کتاب الله فيه الهدی و النور، فخذوا بکتاب الله و استمسکوا به -فحث علی کتاب الله و رغّب فيه ثم قال: – و أهل بيتی، أذکرکم الله في أهل بيتی، أذکرکم الله فی اهل بيتی، أذکرکم الله فی اهل بيتی

হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। খুব শিগগিরি আমার প্রভুর নিযুক্ত ব্যক্তি (তথা মৃত্যুর ফেরেশতা) আমার কাছে আসবে এবং আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (স.) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮০৩।

দারেমি এই টেক্সট বা মাতন তথা হাদিসের মূলপাঠটি নিজ ‘সুনান’-শীর্ষক বইয়ে বর্ণনা করেছেন। সূত্র:সুনানে দারেমী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২।

দুই. তিরমিযি এই হাদিসটিতে ((وعترتی أهل بيتی)) শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। মূল হাদিসটি হলো:

إنی تارکت فيکم الثقلين ما ان تمسکتم به لن تضلّوا بعدی؛ أحدهما أعظم من الآخر: کتاب الله حبل ممدود من السماء إلی الأرض و عترتی اهل بيتی، لن يفترقا حتی يردا عليَّ الحوض، فانظروا کيف تخلفونی فيها.

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (মূল্যবান) জিনিস (আমানত হিসেবে) রেখে যাচ্ছি। যদি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো একটি অপরটির উপর প্রধান্য রাখে। ( সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত (রহমতের) ঝুলন্ত রশির ন্যায় এবং অপরটি হলো আমার বংশধর; আমার আহলে বাইত। এরা হাউযে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও একে অপর হতে আলাদা হবে না। অতএব, তোমরা লক্ষ্য রেখ যে, আমার (ছেড়ে যাওয়া) আমানতের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করো।” (সূত্র: সুনানে তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬৩।)

 

বিভিন্ন বিষয়ে আরো কয়েকটি হাদিস:

১) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষের অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা দূরীভূত হয়।

২) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য হালাল পথে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করবে সে যেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী ব্যক্তির সমতুল্য ।
৩) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন: যখন কিছু লোক এক জায়গায় একত্রিত হবে তখন যদি সেখানে আল্লাহর স্মরণ এবং তার রাসুলের প্রতি দরুদ শরিফ পাঠ করা না হয়, সে বৈঠক তখন দুঃখ ও পরিতাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
৪) নবী করিম (সা.) এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের উপর গুরুত্ব দেবে। এই পাঁচটি জিনিস হচ্ছে, বার্ধ্যকের আগে যৌবনের, রোগের আগে সুস্হতার, দারিদ্র্যের পূর্বে সচ্ছলতার, ব্যস্ততার আগে অবসরকালের এবং মৃত্যূর আগে জীবনের।
৫) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহর জন্যই ভালবাসলো,আল্লাহর জন্যই কারো সাথে শত্রুতা করলো, আল্লাহর জন্যই কাউকে কিছু দান করলো এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকলো, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করল।
৬) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, কোন মাতা-পিতা তার সন্তানদেরকে উত্তম চরিত্র শিক্ষাদানের চেয়ে আর ভাল কোন জিনিসই দিতে পারে না।
৭) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করার মধ্যে অশেষ কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
৮) নবী করিম (সা:) বলেছেন, বুদ্ধিমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে আত্মসমালোচনা ও আত্মযাচাই করতে অভ্যস্ত এবং মৃত্যূর পরের জীবনের জন্য কাজ করে। পক্ষান্তরে দুর্বল ও সাহসহীন সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে প্রবৃত্তির লালসার দাস করে ফেলেছে এবং তা সত্বেও সে আল্লার কাছ থেকে অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে।
৯) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, আল্লাহ’তালা যাকে কল্যাণ দান করতে চান,তাকে তিনি দ্বীন সন্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান দান করেন।
১০) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মরে যায়, তখন তার যাবতীয় কাজ-কর্মের সময় ও সুযোগ শেষ হয়ে যায়। অবশ্য তখনও তিন প্রকার কাজের ফল সে পেতে পারে। ১) সদকায়ে জারিয়া ২) এমন ইলম বা বিদ্যা, যার ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে ৩) সচ্চরিত্রবান সন্তান, যারা তার জন্য দোয়া করতে পারে।

১১) নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোক হচ্ছে তারা, যাদের চরিত্র তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।

১২) হযরত আলী (আ.) বলেছেন : যে ব্যক্তি তার অন্তরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার জন্য সচেষ্ট হবে, মহান আল্লাহ তার বাহ্যিক দিককে পরিশীলিত করবেন। যে ব্যক্তি ধর্মের মূল নীতি মেনে চলবে, মহান স্রষ্টা তার পার্থিব বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন আর যে ব্যক্তি তার স্রষ্টা ও মাবুদের সাথে নৈকট্য প্রতিষ্ঠা করবে, মহান আল্লাহ তার সঙ্গে অন্যদের সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে দেবেন।

১৩) হযরত আলী (আ.) বলেছেন, অপরের ধন-সম্পদের ব্যাপারে নিরাসক্ততা ও নিস্পৃহতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঐশ্বর্য্য বা সন্পদ।

৪) হযরত আলী (আ.) বলেছেন, নম্র ও ভদ্র আচরণের অধিকারী ব্যক্তি সহজেই মানুষের ভালবাসা অর্জন করে।

১৫) হযরত আলী (আ.) বলেছেন, নির্বোধ ও অজ্ঞ লোকদের সাহচর্য মানুষের নৈতিকতা ও আচার -ব্যবহারকে ধ্বংস করে দেয়।

১৬) হযরত আলী (আ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মহত্বপূর্ন ও উদার চরিত্রের অধিকারি তার জিবিকা এবং রুজি বৃদ্ধি পায়।

১৭) হযরত ফাতেমা (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ইবাদত এবং অন্যান্য সব কাজ কেবলমাত্র আল্লার সন্তুষ্টির জন্য করবে মহান আল্লাহ তার প্রতি বিশেষ রহমত ও অনু গ্রহের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবেন।

১৮) ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, কৃপণ ব্যক্তি মহান আল্লাহ, বেহেশত এবং মানুষের কাছ থেকে বহু দূরে আর দোযখের কাছাকাছি অবস্থান করে।

১৯) ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, কৃপন ব্যক্তি মহান আল্লাহ ,বেহেশত এবং মানুষের কাছ থেকে বহু দূরে আর দোযখের কাছাকাছি অবস্থান করে।

২০) ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন, অলসতা এবং অসহিষ্ণুতা থেকে দূরে থাক কেননা এ দুটো তোমাকে দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করবে।

রেডিও তেহরান

হযরত ইউসুফ (আ.)-এর গল্প

কোরআনে বর্ণিত সুন্দরতম গল্পগুলোর একটি হলো হযরত ইউসূফ (আ) এর গল্প। এই গল্পটি বিশ্লেষণার্থে আমরা কোরআনের গল্পের শিল্পপ্রকরণ নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো।একটা গল্পকে আকর্ষণীয় ও পাঠকগ্রাহ্য করে তোলার জন্যে যেসব উপাদান প্রয়োজনীয়,নিঃসন্দেহে ইউসূফ (আ) এর কাহিনীতে সে সব মৌলিক উপাদানের সবটাই রয়েছে। সূরা ইউসূফে মোট ১১১ টি আয়াত রয়েছে। প্রথম তিনটি আয়াত এবং শেষের দশটি আয়াত কাহিনী বহির্ভুত। বাকি আয়াতগুলোতে ইউসূফ (আ) এর জীবন কাহিনী একটানা বর্ণিত হয়েছে। ইউসূফ (আ) এর কাহিনীটির গুরুত্ব হলো-এটা বেশ আকর্ষণীয় এবং উত্তেজনাকর। কেননা এই গল্পটি মানুষের দৈহিক একটি স্বাভাবিক চাহিদাকে কেন্দ্র করে অগ্রসর হয়েছে। ঈর্ষাপরায়নতাও এই গল্পের আরেকটি মূল উপাদান। ইউসূফের ভাইদের ঈর্ষাপরায়নতার মধ্য দিয়ে গল্পটি শুরু হয়েছে।
একটি স্বপ্ন দিয়ে গল্পের শুরু। স্বপ্নটির কথা ইউসূফ (আ) তাঁর বাবাকে বলেন। বলেন যে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন চাঁদ এবং সূর্য আর এগারোটি নক্ষত্র তাঁকে সিজদা করছে। তাঁর বাবা হযরত ইয়াকুব (আ) বললেনঃ স্বপ্নের কথাটি তোমার অন্য ভাইদেরকে বলো না! তাতে শয়তান তোমাদের মাঝে ফাটল সৃষ্টির সুযোগ পাবে। মানবীয় গল্পে স্বপ্ন একটা প্রভাবশালী উপাদান। গল্পকারগণ এই উপাদানটিকে একটি টেকনিক হিসেবে কাজে লাগিয়ে থাকেন। স্বপ্ন নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে,আমরা সেই বিশ্লেষণে না গিয়ে বরং বলতে পারি স্বপ্ন যে বাস্তব একটি ব্যাপার প্রতিটি সুস্থ-সবল স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষই তার প্রমাণ। স্বপ্নের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও আধুনিক মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গল্পকারগণ সেজন্যেই বহু গল্পে স্বপ্নের ব্যবহার করেছেন। ইউসূফ (আ) এর গল্পেরও বহুলাংশ জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন। তিনি স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা করেছেন তার বাস্তব ফলাফল দিয়েই গল্পের বিকাশ ঘটেছে। আধুনিক গল্প বিকশিত হয় বৃত্তের পর বৃত্তের মধ্য দিয়ে। ইউসূফ (আ) এর গল্পেও কাহিনী বিকশিত হয়েছে বিচিত্র বৃত্তের মাধ্যমে। বিভিন্ন ব্যক্তির স্বপ্ন এই বৃত্তগুলো তৈরি করেছে।
ইউসূফ (আ) কে তাঁর ভাইয়েরা গর্তে ফেলে দিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে গল্পে টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে গল্প এগিয়ে যায়। একটি কাফেলা তাঁকে খুঁজে পেয়ে মিশরে নিয়ে যায়। আজিজে মেস্র ইউসূফ (আ) কে দাস হিসেবে কিনে নেয়। আজিজে মেস্রের স্ত্রী যোলাইখা ইউসূফের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং স্বামীর অধিকারের খেয়ানত করার পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু ইউসূফ (আ) যোলাইখার প্ররোচনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে শেষ পর্যন্ত কারাবাস করতে হয়। কারাগারে তিনি দুই বন্দীর স্বপ্নের যথার্থ ব্যাখ্যা করেন। তারপর মিশরের রাজারও যথার্থ ব্যাখ্যা দিয়ে কারামুক্ত হন। তিনি মিশরের মন্ত্রীত্বের পদেও আসীন হন। তিনি ভাইদেরকে ক্ষমা করে তাঁর বাবা-মাকেও মিশরে আমন্ত্রণ জানান। কোরআনের এই অসাধারণ গল্পটি ইউসূফ (আ) এবং তাঁর পূর্ববর্তীদের কাহিনী থেকে শিক্ষা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়ে শেষ হয়েছে।
গল্পের শিল্পগত আঙ্গিক বা প্রকরণ বিচার করলে আমরা লক্ষ্য করবো যে অত্যন্ত চমৎকার একটি গতি রয়েছে এর কাহিনীর বুননে। সেইসাথে প্রতিটি ঘটনার সাথে রয়েছে পারস্পরিক সম্পর্ক।অর্থাৎ কোনো একটি ঘটনাও আরোপিত কিংবা অপ্রাসঙ্গিক নয়। ঘটনাগুলো কখনো সমান্তরালভাবে এগিয়েছে আবার কখনো শাখানদীর মতো স্বতন্ত্রভাবে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পুনরায় মূল নদীতে এসে মিশেছে। প্রতিটি গল্পই একটা নির্দিষ্ট বিষয় বা চিন্তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। তবে কখনো আবার মূল চিন্তাকে ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজনে অন্য উপাদানও ব্যবহার করা হয়েছে। ইউসূফ (আ) এর গল্পের মূল উপজীব্য হলো এ বিষয়টি বোঝানো যে,আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর মনোনীত বান্দা এবং ঈমানদার বান্দাদেরকে তাদের দুর্দিনে একাকী ছেড়ে যান না বরং তাদেরকে পর্যায়ক্রমে হেদায়াত করেন এবং বিপদ-আপদে সাহায্য করেন। আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল মানুষ যদি অতল গহ্বরেও নিপতিত হয়,কিংবা কারাগার অথবা প্রাসাদেও নীত হয়,সে সবই আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে থাকে বলে মনে করতে হবে এবং সেগুলো ঘটে নিজেদের পূর্ণতা ও বিকাশের জন্যেই।
ইউসূফ (আ) এর গল্পের মূল বিষয়ের বাইরেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্যান্য বিষয়েরও অবতারণা হয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে : মানুষের সাথে শয়তানের সুস্পষ্ট শত্রুতা, প্রতারকের আপন জালে আটকা পড়া,মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর মনোযোগ,আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে হতাশ না হওয়া এবং জালেমদের পরাজয় ও ব্যর্থতার অবশ্যম্ভাবিতা। গল্পে সাধারণত মূল চরিত্রের চিন্তাদর্শের সাথে অন্যদের চিন্তা ও কর্মের একটা বিরোধ থাকে,যার মধ্য দিয়ে কাহিনী পরিনতির দিকে অগ্রসর হয়। এই গল্পেও তিন ধরনের বিরোধ বা সংঘাত আমরা লক্ষ্য করবো। মানুষের সাথে মানুষের সংঘাত,প্রকৃতির শক্তির সাথে মানুষের সংঘাত এবং মানুষের আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের সাথে তার নিজস্ব বিরোধ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিরোধটি ছিলো আজিজে মেসরের স্ত্রীর সাথে ইউসূফ (আ) এর দ্বন্দ্ব। যোলায়খা ইউসূফ (আ) কে দিয়ে আপন কামনা চরিতার্থ করতে চায় কিন্তু ইউসূফ (আ) ঈমানী শক্তির বলে খোদাভীতির কারণে যোলায়খার ডাকে সাড়া দেওয়া থেকে বিরত থাকে।যারফলে পরবর্তী ঘটনাপঞ্জীর জন্ম হয়। এই বিরোধ যতোই চরমে ওঠে ততোই কাহিনী হয়ে ওঠে গতিময় ও রহস্যময়। একটার পর একটা গ্রন্থির মধ্য দিয়ে জটিল হয়ে ওঠে কাহিনীর বুনন। যার ফলে পুরো গল্পটাই পাঠকদেরকে রহস্যের কৌতূহলে উদ্দীপ্ত করে রাখতে সক্ষম হয়।
কথা সাহিত্যিকগণ গল্পের ভেতর চরিত্র সৃষ্টি বা চরিত্রায়নের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। সেজন্যে গল্পের ভেতর বিচিত্র বর্ণনার মাধ্যমে মূল চরিত্রের ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন। কথাশিল্পের পরিভাষায় এটাকে কারেক্টারাইজেশান বলে। কখনো সংলাপের মাধ্যমে আবার কখনো তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়। তাই গল্পের মূল চরিত্রটিকে খুব সহজেই একজনন পাঠক আবিষ্কার করতে পারে কেননা মূল চরিত্রের শারিরীক,মানসিক বৈশিষ্ট্য,তার স্বাভাবিক প্রবণতা,নীতি-নৈতিকতা এমনকি তার সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি সকল বিষয় গল্পে উঠে আসে। ইউসূফ (আ) এর গল্পে আমরা লক্ষ্য করবো পুরো কাহিনীটিই বৃত্তায়িত হয়েছে ইউসূফকে কেন্দ্র করে। ঘটনার মূলে প্রধান ভূমিকাটাই হলো ইউসূফের। ইউসূফকে পাঠকরা খুব সহজেই আবিষ্কার করতে পারে। তাঁর পূত-পবিত্র আত্মা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই ধাবিত হয় এবং তিনি তাঁর সক্ষমতাকে বা সামর্থকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়ে কাজে লাগিয়েছেন।
রেডিও তেহরান

বাংলা নববর্ষের ইতিহাস

‘সন’ ও ‘তারিখ’ দুটিই আরবী শব্দ। প্রথমটির অর্থ হল ‘বর্ষ’ বা ‘বর্ষপঞ্জী’ এবং অন্যটির অর্থ ‘দিন’। ‘তারিখ’ বলতে আবার ইতিহাসও বোঝায়। ‘সাল’ হচ্ছে একটি ফারসী শব্দ, যার অর্থ হল বৎসর। বাংলা সনের সূত্রপাত হয় আরবী হিজরী সনের ওপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ ইসলামী সনের ওপর ভিত্তি করেই একজন মুসলমান বাদশাহ কর্তৃক বাংলা সনের প্রবর্তন। স্বভাবতই, যারা ইতিহাসকে স্বীকার করেন না বা যারা ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ, তারাই মনে করেন যে, বাংলা সন অমুসলিমদের দ্বারা প্রবর্তিত একটি বর্ষপঞ্জী।

‘ইংরেজি’ তথা ‘গ্রেগরীয়ান’ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মক্কা থেকে মদীনায় ঐতিহাসিক হিজরত অবলম্বন করে প্রবর্তিত, এই হিজরী সন শুরু হয় ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৬৫ জুলাই তারিখ থেকে। বাংলা সনের মূলে হিজরী সন বিদ্যমান বিধায় হিজরী সালকেই সুকৌশলে বাংলা সনে রূপান্তরিত করা হয়।

মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে তারই নির্দেশে ৯৯৮ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের প্রবর্তন হয়। বাদশাহ আকবর ৯৬৩ হিজরীতে অথাৎ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে (১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে) দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনা চিরন্তরণীয়  করে রাখার জন্য ৯৬৩ হিজরী অবলম্বন করেই বাংলা সন চালু করা হয়। অর্থাৎ ১, ২, ৩-এভাবে হিসেব না করে মূল হিজরী সনের চলতি বছর থেকেই বাংলা সনের গণনা শুরু হয়। ফলে জন্ম বছরেই বাংলা সন ৯৬৩ বৎসর বয়স নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

হিজরী সনের ক্ষেত্রে যে রকম হিজরতের দিন ও মাস (১২ রবিউল আউয়াল) সুনির্দিষ্টভাবে অবলম্বন না করে শুধুমাত্র সালটিকেই (৬২২ খ্রিস্টাব্দে) সংরক্ষণ করা হয়, বাংলা সনের ক্ষেত্রেও তেমনি সম্রাট আকবরের রাজ্যভিষেকের দিন ও মাস (১৪ইং ফেব্রুয়ারি) অবলম্বন না করে শুধুমাত্র বৎসরটি (৯৬৩ হিজরী) সংরক্ষিত হয়।

হিজরী সনের প্রথমদিন হল পহেলা মহররম। বাংলা সনে তা পরিবর্তন করে পহেলা বৈশাখ করা হয়। ৯৬৩ হিজরীতে মহররম মাস ও বৈশাখ মাস একই সঙ্গে আসে। ফলে, তদানীন্তন শকাব্দের প্রথম মাসটি গ্রহণ না করে হিজরী সনের প্রথম মাস  মহররমের অর্থাৎ বৈশাখ মাসকেই বাংলা সনের মাস হিসাবে পরিচিহ্নিত করা হয়।

বাংলা সনের সৃষ্টি হয় ফসল তোলার সময় লক্ষ্য করে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে সৌর বৎসর অবলম্বনে এই নতুন সন গণনা শুরু হয়। তাই, প্রাথমিক পর্যায়ে এটি ‘ফসলী সন’ নামে অভিহিত হতো। ‘বাংলা’র জন্য উদ্ভাবিত বলে এটি পরবর্তী পর্যায়ে ‘বাংলা সন’ নামে পরিচিহ্নিত হয়। উল্লেখ্য, একইভাবে ভারতের উড়িষ্যা ও মহারাষ্ট্র প্রদেশে যথাক্রমে ‘বিলায়তী’ ও ‘সুরসান’ নামে আঞ্চলিক সনের সৃষ্টি হয়। এসব সনেরও উৎস-সন হিসেবে হিজরী সনকেই গ্রহণ করা হয়।

সম্রাট আকবরের আমলে সুবা-এ-বাংলা (বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা) মোগল শাসনের আওতাভুক্ত হয়। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এক জটিল সমস্যা দেখা দেয়। প্রজাদের দেয় খাজনা ফসলের মাধ্যমে আদায় করতে হলে বছরে একটি সময় নির্দিষ্ট থাকা আবশ্যক। কিন্তু সে কালের রাজকীয় সন অর্থাৎ হিজরী সন চন্দ্র সন হওয়ার প্রতি বছর একই মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না। ফলে, সম্রাট আকবর একটি সৌরভিত্তিক সন প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। উল্লেখ্য, চান্দ্র বৎসর ৩৬৫ দিনের না হয়ে ৩৫৪ দিনের হয়ে থাকে। ফলে, চান্দ্রভিত্তিক আরবী মাস বৎসরের সৌরভিত্তিক ঋতুর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোন সামঞ্জস্য বহন করে না। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, বাংলাদেশে পবিত্র রমযান এখন পুরোপুরি না হলেও প্রায় শীতকালে উদযাপিত হয়। কিন্তু ১৫-১৬ বৎসর পূর্বে এটি প্রচণ্ড ও দুর্বিষহ গ্রীষ্মের সময় উদযাপিত হতো।

সম্রাট আকবরের নির্দেশে প্রচলিত হিজরী সনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজ-জ্যোতিষী আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী বহু ভাবনা-চিন্তার পর সনসমূহের উদ্ভাবন করেন তাদেরই একটি হচ্ছে “ফসলী সন’’ বা ‘বাংলা সন’। পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে যে, ফসলের মওসুমের কথা বিবেচনায় রেখে এই নতুন সনের প্রবর্তন হয় বলে এর নাম ‘ফসলী সন’ হয়। পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলের নাম অনুযায়ী ‘ফসলী সন’ পরিবর্তিত রূপ ধারণ করে এবং বাংলাদেশে তা ‘বাংলা সন’ নামে অভিহিত হয়।

বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণঃ
বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছেঃ
• বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• জ্যৈষ্ঠ – জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• আষাঢ় – উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• শ্রাবণ – শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• ভাদ্র -উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• আশ্বিন – অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• কার্তিক – কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) – মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• পৌষ – পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• মাঘ – মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• ফাল্গুন – উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• চৈত্র – চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।

বাংলা দিনের নামকরণঃ
বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।
• সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে
• মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে
• বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে
• বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে
• শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে
• শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে
• রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে
বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে ।

উইকিপিডিয়া /টেকটুইটস  থেকে সংক্ষেপিত