All posts by dreamboy

রাহবার আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর বাণী থেকে

আমাকে এবং আপনাদের সকলকে এই বিরাট খোদায়ী দায়িত্ব উপলব্ধি ও অনুধাবন করতে হবে। আমরা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ। পবিত্র কোরআনের ভাষায় : তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবে।’ (সূরা বাকারা : ১৪৩)। আপনারা হচ্ছেন সেই মানব সমাজ যাদের কর্মকা- প্রত্যক্ষ করছে গোটা বিশ্ব। আমাদের দায়িত্ব হলো বিগত বছরগুলো ধরে ইরানী জনগণ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের অন্তরে ও দৃষ্টিতে যে আসন অর্জন করেছে তা সংরক্ষণ করা। আমাদেরকে অবশ্যই নির্যাতিত মানুষের অন্তরে সৃষ্ট আশা এবং শত্রুর অন্তরে সৃষ্ট ভীতি বজায় রাখতে হবে।

আমরা কাউকেই বিপ্লবের মূল্যবোধকে ব্যর্থ ও হেয় করতে দেব না। বিপ্লবী মূল্যবোধ, বিপ্লবের সাফল্য এবং সমাজের ইসলামী পরিবেশ সকল মানুষের সম্পদ, তাকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। যৌন অনাচার, আর্থিক ও নৈতিক দুর্নীতি বিস্তারের মাধ্যমে ভেতর থেকে আমাদের বিপ্লবকে দূষিত করার জন্য শত্রুরা কোন চেষ্টা চালালে তা ব্যর্থ করে দিতে হবে। নারী-পুরুষ, নির্বিশেষে আপনাদের প্রতিটি লোককে আপনাদের বিপ্লব, আপনাদের ইসলাম, আপনাদের কর্মকর্তাদের, আপনাদের সাফল্য এবং আপনাদের বিশ্বাসকে হামলাকারীদের মোকাবিলায় রক্ষা করতে হবে, সাহসী সেবাকর্মীর মানসিকতা নিয়ে নিজেদের বাড়ি ও পরিবারকে হেফাজত করার মতো করে।

সমাজে ইসলাম যদি এমন অবস্থায় থাকে যে তা তাদের (শত্রুদের) স্বার্থ বিঘ্নিত করছে না তাহলে তারা তার বিরোধিতা করবে না। শয়তানি শক্তি, জুলুম-নির্যাতন ও বঞ্চনা-বৈষম্যের মোকাবিলা যে ইসলাম করে না, তার বিরোধিতা কেউই করে না। তারা (ইসলামের দুশমরা) বিরোধিতা করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু-এর ইসলামকে। যে ইসলাম মানবতাকে সমর্থন করে তারা (শত্রুরা) সেই ইসলামের বিরোধিতা করে।

আমরা ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করা, মুসলিম জনগণকে রক্ষা করা, ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করা, সমাজ থেকে অত্যাচারের মূলোৎপাটন, তদস্থলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ইনসাফ থেকে বঞ্চিত জনগণকে সাহায্য করার লক্ষ্যে এই পথকে বেছে নিয়েছি।

(নিউজলেটার, ফেব্রুয়ারি ১৯৯২)

ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর বাণী থেকে

‘…আমি সবাইকে বলছি : একটা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো, সুন্নি-শিয়া, আরব-অনারব, তুর্কি-অতুর্কি কেউ কারো উপর অগ্রাধিকার পাবে না। পবিত্র কুরআন কাউকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে শুধু ন্যায়পরায়ণতা, খোদাভীতির (তাকওয়া) কারণে। খোদাভীরু ও সৎ স্বভাবসম্পন্ন লোকেরা রাষ্ট্রে ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত থাকলে সকল সুবিধাবাদ ও কায়েমী স্বার্থ নির্মূল হতে বাধ্য। কেউ কারো চেয়ে বড় নয়। সবাইকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। ইসলাম তাদেরকে সম্মান দিয়েছে। ইসলাম সকল শ্রেণি ও গোত্রকে মর্যাদা দিয়েছে। কুর্দিসহ অন্যান্য ভাষাভাষী সকলেই আমাদের ভাই। আমরা তাদের সাথে আছি এবং তারাও আমাদের সাথে রয়েছে। আমরা সকলে একই ঈমানের সূত্রে বাঁধা এক জাতি।’ (ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বাণী : ৩ -৪-৭৯ ইং)

ঐক্য হচ্ছে এমন একটি আদর্শ যার দিকে পবিত্র কুরআন মানুষকে নির্দেশনা দিয়েছে এবং মহান ইমামগণও মুসলিমদের ঐক্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মূলত ইসলামের প্রতি আহ্বান মানেই হচ্ছে ঐক্যের প্রতি আহ্বান, জনগণকে ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান। আপনারা জানেন যে, তারা (ইসলামের দুশমনরা) এ ধরনের ঐক্যকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলোতে তারা কঠোরভাবে চেষ্টা করেছে যাতে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য ও বিরোধের আগুন প্রজ্বলিত হয়; কেননা, তাদের বিশেষজ্ঞগণ বুঝতে পেরেছে যে, যদি বিশ্ব-মুসলিম উম্মাহ সংহত ও ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, তাহলে কোন শক্তিই তাদের মোকাবিলা করতে ও তাদের উপর শাসন চালাতে সক্ষম হবে না। তাই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য তাদের সামনে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করা।’ (গিলান প্রদেশ ও রাসত শহরের জুমআর ইমামদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত বাণী থেকে)

‘…. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিশ্ব শোষকদের জন্য প্রধান ভীতির কারণ হচ্ছে ইসলাম। কেননা, ইসলামই হচ্ছে এমন শক্তি যা দুনিয়ার মুসলমানদেরকে তাওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম। ইসলামই পারে মুসলিম দেশসমূহ ও দুনিয়ার বঞ্চিত মানুষের উপর থেকে বিশ্ব অপরাধীদের হস্তকে ধ্বংস করতে। ইসলামই পারে বর্তমান পৃথিবীর সামনে এক ঐশী প্রগতিশীল ও উচ্চতর চিন্তাধারা ও ব্যবস্থা উপস্থাপন করতে।’ (হজ যাত্রীদের প্রতি প্রদত্ত বাণী, ৬-৯-৮১ ইং)

বিশ্বজোড়া জালেম সম্প্রদায় চায় ইসলামকে ধ্বংস করতে যাতে আমাদের ইসলামী গুণাবলি বিনষ্ট হয়ে যায়। এখন আমাদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করা উচিত নয়, যেখানে মুসলমানদেরকে কাফের, মুশরিক ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হচ্ছে। যদি একশকোটি মুসলমান তাদের বিরাট এলাকাসহ রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয় এবং একই ফ্রন্টে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে উপনিবেশবাদের দোসর কিছুসংখ্যক ইহুদি তো দূরের কথা, বিশাল ক্ষমতাধর উপনিবেশবাদীর পক্ষেও নিশ্চিতভাবে কোন মুসলিম দেশ আক্রমণ করা সম্ভব নয়।’ (বাংলাদেশী কতিপয় নেতার উদ্দেশ্যে বাণী : ১-৯-৮২ ইং)

এটা আজ সবার নিকট স্পষ্ট যে, এখন থেকে সমাজবাদ বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের যাদুঘরগুলোতে তালাবদ্ধ হয়ে থাকবে, কেননা, মানব সন্তানদের সত্যিকারের প্রয়োজনের ব্যাপারে কোন উত্তর মার্কসবাদে নেই। কারণ, এটি একটি বস্তুবাদী মতবাদ এবং বস্তুবাদ দ্বারা বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতাবাদের অনুপস্থিতির সমস্যা থেকে মানবজাতি মুক্তি পেতে পারে না। অথচ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মানব সমাজেরও এটিই মৌলিক সমস্যা… যে ধর্ম ইসলামী ও অনৈসলামী দেশগুলোর বস্তুগত ও আধাত্মিক সম্পদসমূহ পরাশক্তিদ্বয় ও অন্যান্য শক্তির পকেটস্থ করার মাধ্যম হয় এবং গলাবাজি সহকারে এইটি বলে যে, ধর্ম রাজনীতি থেকে পৃথক- সেটা আফিম। তবে এটা কিন্তু সত্যিকারের ধর্ম নয়। এটা এমন এক ধর্ম যেটাকে আমাদের জনতা মার্কিনী ধর্মবলে আখ্যায়িত করে।’ (সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভের কাছে প্রেরিত চিঠি থেকে)

(নিউজলেটার, ফেব্রুয়ারি ১৯৯২)

আমেরিকা ইসলাম ও মানবতার দুশমন- রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী

ইসলামী বিপ্লবের রাহবার আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী মহান ও বিপ্লবী ইরানী জাতিকে শয়তানী শক্তির মোকাবিলায় জেহাদের পতাকা সমুন্নত রাখতে সজাগ, ঐক্যবদ্ধ ও স্থিরসংকল্প হতে আহ্বান জানিয়েছেন। আহবান জানিয়েছেন আত্মশুদ্ধি অর্জনের।

ইরানের বিভিন্ন শহর থেকে আগত বিপুল সংখ্যক আল্লাহ-প্রেমিক লোকদের সাথে এক বৈঠকে (১৯৯১ সালের ডিসেম্বর বা ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে) তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসলামের এক চতুর ও বিপদজনক শত্রু এবং চরম সীমা লঙ্ঘনকারী।

সাক্ষাৎকারীরা খামেনেয়ী! আমরা সবাই আপনার সৈনিক, আপনার আদেশের অপেক্ষায়এবং খামেনেয়ী রাহবার, নবীর উত্তরাধিকারস্লোগান দেন।

ইরানী জাতিকে একটি নমুনা হিসাবে আখ্যায়িত করে ইসলামী বিপ্লবের রাহবার বলেন, বেইনসাফী ও দুর্নীতির প্রাধান্যের যুগে যখন শয়তানি শক্তিসমূহ বিভিন্ন উপায়ে বিশ্বের মানুষের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, উপনিবেশিকতা ও বিভ্রান্তি চাপিয়ে দিয়েছিল সেই সময় মহান, সম্মানিত ও গৌরবদীপ্ত ইরানী জাতি কুরআন ও খোদায়ী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে আল্লাহর নামে রুখে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সামনে এক আদর্শ নমুনা হিসাবে আবির্ভূত হয়।

ইসলামী বিপ্লবের রাহবার ধর্ম ও মানবীয় নীতিবোধ পুনরুজ্জীবন, জাতিসমূহকে সজাগ করে তোলা এবং মানবতার সেবার জন্য ইরানের মুসলিম জাতিকে আধ্যাত্মিকতার পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইসলামী বিপ্লব সাফল্য লাভের পরবর্তী দিনগুলোতে ইরানী জাতি যে দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়েছে, তার জন্য তাদেরকে মোবারকবাদ। আজকে বড় বড় শয়তানি শক্তি এ জাতির আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মীয় মনোভাবকে ভয় পায়। কেননা, তারা মনে করে নিয়েছে যে, জাতিসমূহের আধ্যাত্মিক ও ইসলামী চেতনাই কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবিলা করার অটুট শক্তি। ইরানী জাতি সে প্রতিরোধ প্রচেষ্টা চালিয়েও যাচ্ছে।

রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানী জাতির ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় আখ্যায়িত করে বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই আত্মপ্রবৃত্তি, ঔদ্ধত্য ও স্বার্থপরতা মোকাবিলা করার শক্তি ও সাহস রাখতে হবে। কেননা, যাদের অভ্যন্তরীণ শয়তানি স্বার্থপরতা ও বিলাসপ্রিয়তা মোকাবিলার শক্তি নেই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এ যুগের তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না। রাহবার খামেনেয়ী পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি সম্পর্কে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় এই অঞ্চলটি দখল করতে চায়, এমনকি সে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গোটা বিশ্বের উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকে যখন মানবাধিকার রক্ষা, ইরান ও এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্ব এবং ইসলামের বিরোধিতা না করার ভান করছে তখনও মিথ্যা বলছে। তারা ইসলাম, ইরানী জাতি ও মানবাধিকারের বিপজ্জনক শত্রু। তিনি আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের দেশগুলোকে বন্দিত্ব ও দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায় এবং সে মোতাবেক ইরানের উপর সর্বাগ্রে প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়, কিন্তু এই জাতি ইসলাম দ্বারা জেগে উঠেছে এবং যখন ও যেখানেই প্রয়োজন হবে খোদায়ী শক্তির উপর নির্ভর করে শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

পরিশেষে আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ফিলিস্তিনী জাতির বিরুদ্ধে চক্রান্তের কথা উল্লেখ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সমর্থনের দাবিকে নির্মম উপহাস বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সজাগ ও জাগ্রত শক্তিসমূহ শয়তানি শক্তির মোকাবিলায় সংগ্রামের পতাকাকে সমুন্নত দেখতে চায় এবং ইরানী জাতি রক্তপিপাসু শয়তানি শক্তি ও বিশ্ব গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ইসলামী বিপ্লবের পথে বিপ্লবী পতাকা নিয়ে অটল ও অনড়ভাবে রুখে দাঁড়াবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

(নিউজলেটার, জানুয়ারি ১৯৯২)

হযরত আলী (আ.)-এর বাণী- নাহজুল বালাগা থেকে

হযরত আলী (আ.) বলেন : যাবতীয় পাত্র তাতে রাখা বস্তু দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায় তবে ব্যতিক্রম শুধু জ্ঞানের পাত্র। কারণ, জ্ঞানের পাত্র প্রশস্ত হয়ে যায়।

নাহজুল বালাগা, উক্তি ২০৫

হযরত আলী (আ.) বলেন : সহিষ্ণু ব্যক্তি সহিষ্ণুতার ফলে প্রথম যে জিনিসটি (পুরস্কার হিসেবে) লাভ করে তা হচ্ছে এই যে, অজ্ঞ লোকদের বিপক্ষে লোকেরা তার সমর্থক ও সাহায্যকারী হয়ে যায়।

নাহজুল বালাগা, উক্তি ২০৬

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : তুমি ধৈর্যশীল হতে না পারলেও ধৈর্যধারণকারীদের ন্যায় হওয়ার চেষ্টা কর। কারণ, যে কোন লোক অন্য কারো মতো (সদৃশ) হওয়ার চেষ্টা করে সে অচিরেই তাদের মধ্যে গণ্য হবে।

নাহজুল বালাগা, উক্তি ২০৭

হযরত আলী (আ.) বলেন : যে ব্যক্তি নিজের হিসাব নিজে নেয় সে লাভবান হয়। সে নিজেকে ভুলে থাকে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে ভয় পায় সে নিরাপদ হতে পারে। যে উপদেশ গ্রহণ করে সে বিচক্ষণ হয়। আর যে বিচক্ষণ হয় সে বোধ লাভ করে। আর যে বোধশক্তি লাভ করে সে জ্ঞানের অধিকারী হয়।

নাহজুল বালাগা, উক্তি ২০৮

হযরত আলী (আ.) বলেন : আবদ্ধ ঘোটকী যেরূপ দয়াপরবশে স্বীয় বাচ্চার প্রতি আকৃষ্ট হয়, তেমনিভাবে দুনিয়া রুষ্ট হয়ে যাবার পর আবার আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে।এ উক্তিটি করার পর তিনি পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করেন : আমি ইচ্ছা করলাম, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে ও দেশের অধিকারী করতে।’-সূরা কাসাস : ২০৯

নাহজুল বালাগা, উক্তি ২০৯

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : হে লোকসকল! যে ব্যক্তি বসন গুছিয়ে নিয়ে ভালোভাবে দৌড়ায়, সম্মুখে অগ্রসর হতে গিয়ে ভেবে-চিন্তে এগোয়, ভীতগ্রস্ত হওয়ার পূর্বেই ব্যবস্থা নেয়, গন্তব্যের দিক থেকে কোন পাল্টা হামলার প্রতি নজর রাখে, উৎসের পরিণামের দিকে লক্ষ্য করে এবং মৃত্যুর পর কী পরিণতি হবে সে দিকে দৃষ্টি রাখে- তার ন্যায় আল্লাহকে ভয় কর।

নাহাজুল বালাগা, উক্তি ২১০

হযরত আলী (আ.)  বলেছেন : মানুষের জ্ঞানের একটি হিংসাত্মক কাজ হলো আত্মম্ভরিতা।

নাহজুল বালাগা, উক্তি ২১২

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : মতবিরোধ সুষ্ঠু ধারণা বা সিদ্ধান্ত বরবাদ করে দেয়।

নাহজুল বালাগা, উক্তি ২১৫

(নিউজলেটার, জানুয়ারি ১৯৯২)

ইসলাম ও পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে নারীর সম অধিকার ও কর্মসংস্থান

চাকরি করা বা চুক্তিভিত্তিক কাজ করা মানুষের অন্যতম অধিকার।

বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণার ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে মানুষের কাজ করার অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদে এটাও বলা হয়েছে যে, মানুষ তার কাজ বা পেশা বেছে নেয়ার ব্যাপারে স্বাধীন।

 নারীর কর্মসংস্থানের বিষয়টি আধুনিক যুগের বিষয়। গত দুই শতকে নানা ধরনের ঘটনা ও পরিবর্তনের ফলে নারীর কর্মসংস্থানের ঝোঁক এবং প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।

 শিল্প বিপ্লবের পর কল-কারখানাসহ নানা ধরনের কর্মক্ষেত্রের সংখ্যা বহু গুণ বেড়েছে। পুঁজিপতিরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন ও উতপাদন-ব্যয় কম রাখার জন্য তাদের কারখানায় সস্তা শ্রম শক্তি নিয়োগের পথ খুঁজছিলেন। আর নারীকেই তারা বেছে নিয়েছেন এ জন্য।

 নানা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে এখনও নারী কর্মী ও শ্রমিকরা অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিক পাচ্ছে।

 আধুনিক যুগেও নারী কর্মী ও শ্রমিকরা শোষণের শিকার হচ্ছে। নারীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে কঠিন ও ব্যাপক শ্রম-সাধ্য কাজ। ফলে অসুস্থ হচ্ছে তারা।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীকে এমন কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা হচ্ছে যেখানে তারা কাজ করতে পারছেন না স্বচ্ছন্দে। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে নারীর নানা কর্মক্ষেত্রে যে অনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে তা তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অথচ পশ্চিমা সরকারগুলো নারী অধিকারের রক্ষক বলে দাবি করছে এবং তারা নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার দাবি করে আসছে!

নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের নামে নারীবাদীরা ঘরের বাইরে নানা কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে একসঙ্গে কাজ করতে উতসাহ যুগিয়ে থাকে। পশ্চিমা শিল্প-সমাজের কর্তারাও নারীবাদীদের ওই লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে নারীকে টেনে এনেছে। নারী ও পুরুষের স্বাভাবিক শক্তি-সামর্থ্য, মানসিক অবস্থা ও শারীরিক গঠনের বা আকর্ষণের  পার্থক্যকেও তারা বিবেচনায় আনেননি এক্ষেত্রে। ফলে কর্মক্ষেত্রে ভারসাম্য নারীর অনুকূল না হয়ে পুরুষের অনুকূল হয়ে পড়েছে। অর্থাত এই পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী। কর্মক্ষেত্রে শক্তিমান পুরুষের কুদৃষ্টি ও যৌন নির্যাতনের হাত থেকে সুদর্শনা ও  দুর্বল নারীর আত্মরক্ষার কোনো উপায় রইল না।

 পশ্চিমা নারীবাদীদের দৃষ্টিতে সমান অধিকারের অন্যতম অর্থ হল ঘরের বাইরে নারী ও পুরুষের জন্য চাকরির অধিকার নিশ্চিত করা। যে নারী কেবলই গৃহবধূ তাকে পশ্চাদপদ বলে মনে করে নারীবাদীরা। এভাবে পাশ্চাত্য নারীকে কেবলই সামাজিক ভূমিকায় ব্যস্ত রেখে তাদের মাতৃত্ব ও স্ত্রীর ভূমিকাকে বিলুপ্ত করছে।  পশ্চিমে নারী ও মায়েদের ওপর মানসিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

অন্যদিকে মানুষের জীবনের জন্য পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ বিধানের ব্যবস্থা করেছে ইসলাম।

এই ধর্ম অধিকারের দিক থেকে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলে।

 ইসলাম নারীর মালিকানা ও অর্থনৈতিক ততপরতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো পূরণ করা স্বামীর দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেছে যাতে নারী কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই তার সাংসারিক দায়িত্বগুলো পালন করতে পারে। এরই আলোকে ঘরের বাইরে কাজ করার কোনো প্রয়োজন নেই নারীর। বাইরে চাকরি করা নারীর জন্য বাধ্যতামূলক কোনো বিষয় নয় বরং তা তাদের ইচ্ছাধীন বিষয়। তারা ঘরের বাইরে যে কোনো বৈধ পেশা বেছে নিতে পারেন।

 ইসলামের দৃষ্টিতে নারী সাংসারিক বা পারিবারিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও সামাজিক ও অর্থনৈতিক ততপরতায় জড়িত হতে পারেন। তবে তাদেরকে এই দায়িত্ব এমনভাবে পালন করতে হবে যাতে স্বামী ও সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনের কাজটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নারীর সবচেয়ে বড় ও আসল কাজ হল সন্তানের প্রশিক্ষণ এবং পরিবার রক্ষা করা। এই দায়িত্ব বা মিশনের ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত নারীর যে কোনো বাড়তি কাজ বা ভূমিকাকে ইসলাম সমর্থন করে।

  মোটকথা, ইসলাম নারীর কাজ বা চাকরিকে মর্যাদা দেয়। পুরুষ বা স্বামী নারীকে ঘরে ও বাইরে কাজ করতে বাধ্য করার অধিকার রাখে না। অর্থাত নারী ঘরেও বিনা পারিশ্রমিকে  ঘর-কন্না ও সংসারের কাজ করতে বাধ্য নয়। নারী  স্বামীর সহযোগী হিসেবেই বা জীবন-সঙ্গী হিসেবে ঘরের কাজে স্বেচ্ছায় সহায়তা করে মাত্র।

 ইসলামও নারী ও পুরুষের সমান অধিকারকেও সমর্থন করে। তবে তা পশ্চিমাদের কথিত সমান অধিকারের অর্থে নয়। বরং নারীর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের আলোকে তাকে কাজ দেয়ার কথা বলে ইসলাম। কারণ, খুব কঠিন কায়িক শ্রমের কাজ নারীর পক্ষে করা সম্ভব নয় এবং তা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের স্বার্থেরও অনুকূল নয়।

মার্কিন লেখিকা মিসেস ন্যান্সি লিইঘ ডি-মস  লিখেছেন,

 “নারীদেরকে ঘর-সংসারের কাজের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হতে উতসাহ দেয়া এবং তাদের বেশি আনন্দ দেয়ার জন্য ঘর থেকে বের করে আনা –এসবই নারীর জন্য মাত্রাতিরিক্ত টেনশন বা উদ্বেগ ছাড়া অন্য কোনো ফল বয়ে আনেনি। বিপুল সংখ্যক নারী আজ মানসিক চিকিতসক ও নানা ধরনের ওষুধের সাহায্য ছাড়া জীবন যাপন করতে পারছেন না। যেসব নারী সব সময় এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাচ্ছে ও এক পেশা ছেড়ে অন্য পেশা ধরছে তাদের বেশিরভাগই অনৈতিক সম্পর্কের শিকার হয়েছেন ও হচ্ছেন।”

 ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের পেশাগত পার্থক্য এবং তাদের অধিকারের পার্থক্য এক কথা নয়।  তাদের অধিকার সমান। যেমন, আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা (সা.)-উভয়ই উচ্চতর আধ্যাত্মিক মর্যাদার অধিকারী। কিন্তু ঘরের বাইরের কাজগুলো ছিল আলী (আ.)’র পেশা, আর ঘরের বা ঘরোয়া কাজগুলো করা ছিল বেহেশতি নারীকুলের নেত্রী ফাতিমা (সা.)’র পেশা।

 জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রতিভা ও শারীরিক শক্তির দিক থেকে মানুষে মানুষে রয়েছে পার্থক্য। তাই মহান আল্লাহ সবার জন্য তার উপযোগী কাজ নির্ধারণ করেছেন। নারী-পুরুষও এর ব্যতিক্রম নয়। যেসব পার্থক্য প্রকৃতিগত তা পরিবর্তন করা যায় না।

 শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় দয়াময় মায়ের স্নেহের আচলে। কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজ নারীকে চাকরি দেয়ার অজুহাতে নারীকে তার মূল কাজ থেকে দূরে রাখছে যাতে তাদেরকে পুঁজিবাদের সেবায় বেশি ব্যবহার করা যায়।

 কানাডীয় লেখক উইলিয়াম গার্ডনার এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কর্মজীবী মায়েরা শিশুদেরকে যে ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে যান তা কখনও শিশুর জন্য পরিবারের মত উত্তম নয়। ফেমিনিস্ট বা নারীবাদীরা আজও এ প্রশ্নের জবাব দেননি।

 উইলিয়াম গার্ডনারের মতে নারীবাদ গড়ে উঠেছে  কাজের ব্যাপারে বিপুল সংখ্যক পশ্চিমা নারীর ক্লান্তি, শ্রান্তি ও হতাশার মত বাস্তবতা থেকে। এইসব নারীই তাদের সন্তানকে ডে-কেয়ার সেন্টারে পাঠান ও কম বেতনের চাকরি পেলেও তা আঁকড়ে ধরেন। অথচ এ ধরনের চাকরির প্রতি তাদের কোনো আগ্রহই নেই।

 ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে শিশুদেরকে স্নেহের ছায়াতলে যথাযথ শিক্ষা দেয়া মায়েদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এ শিক্ষা নিয়ে তারা যখন বড় হবে তখন তারা হবে সঠিক পথে চলা সুস্থ মন-মানসিকতাসম্পন্ন  মানুষ।  তারা হবে কুসংস্কার, গোঁড়ামি, কলুষতা ও হীনমন্যতামুক্ত। পাশ্চাত্যের যুব প্রজন্ম আজ এইসব সংকটেই আক্রান্ত।

সূত্র: রেডিও তেহরান

ফরমালিনমুক্ত আম চেনার ৮ উপায়

দোকানে দোকানে হাজার ফলের সমাহার জানান দিচ্ছে শুরু হয়েছে মধুমাস। তাল, বাঙ্গি, তরমুজ, জাম, কাঁঠাল কোনো কিছুই বাদ নেই এর থেকে। তবে এ সময় বেশি দেখা মিলছে কাঁচা-পাকা, ছোট-বড় বিভিন্ন আমের। আর মানুষ কিনছেও সমানতালে। কিন্তু এত আমের ভিড়ে বুঝবেন কিভাবে কোন আমটি ভালো? কোনটিতে দেয়া নেই কোনো ফরমালিন বা কার্বাইড?

এর জন্য আপনাকে জানতে হবে নিচের দেয়া তথ্যগুলো-

১. প্রথমেই লক্ষ্য করুন যে, আমের গায়ে মাছি বসছে কিনা। কারণ ফরমালিন যুক্ত আমে মাছি বসবে না।

২. আম গাছে থাকা অবস্থায় বা গাছ পাকা আম হলে লক্ষ্য করে দেখবেন যে, আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর।

৩. কারবাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা আমগুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফেলে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। গাছ পাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই।

৪. গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবে। গোঁড়ার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কারবাইড দেয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়ে যায়, কখনো কখনো বেশি দেয়া হলে সাদাটেও হয়ে যায়।

৫. হিমসাগর ছাড়াও আরো নানান জাতের আম আছে যারা পাকলেও সবুজ থাকে, কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি হয়। গাছপাকা হলে এইসব আমের ত্বকে বিচ্ছিরি দাগ পড়ে। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।

৬. আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে কিনুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেয়া আম হলে কোনও গন্ধ থাকবে না, কিংবা বিচ্ছিরি বাজে গন্ধ থাকবে।

৭. আম মুখে দেয়ার পর যদি দেখেন যে কোনো সৌরভ নেই, কিংবা আমে টক/ মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই, বুঝবেন যে আমে ওষুধ দেয়া।

৮. আম কেনা হলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছ পাকা আম হলে গন্ধে মৌ মৌ করবে চারপাশ। ওষুধ দেয়া আমে এই মিষ্টি গন্ধ হবেই না।

সূত্র : নতুনবার্তা

সাত ব্যক্তি নিজের কাজকর্ম বিনাশ করে

ইয়াহইয়া ইবনে ইমরান, ইমাম সাদিক (আ.)-কে বলতে শুনেছেন : সাত ব্যক্তি আপন কর্মবিনাশী হয় :

১.   অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি- যাকে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলে লোকেরা জানে না । জ্ঞানী বলে তার নাম  প্রসিদ্ধ হয় না।

২.   দার্শনিক- যিনি তাঁর সঞ্চিত দর্শনকে এমন মিথ্যুক ব্যক্তির নিকট রেখে যান, যে তার নিকট রেখে যাওয়া দর্শনে বিশ্বাসী নয়।

৩.   যে শঠ ও প্রবঞ্চনাকারী ব্যক্তিকে বিশ্বাস করে।

৪.   কঠোর হৃদয়ের অধিকারী জাতীয় নেতা।

৫.   যে মা নিজের সন্তানের গোমর ফাঁস করে দেয়। গোপন করে রাখে না।

৬.   যে ব্যক্তি ঘটনার খবর না নিয়েই নিজের মতাদর্শী ব্যক্তিদের সমালোচনায় তাড়াহুড়া করে। তাদেরকে তিরস্কার করে।

৭.   যে স্বধর্মীয় ভাইদের সাথে বৈরিতা পোষণ করে।

কিছু মূল্যবান কথা

১.   যে বুঝে শুনে কথা বলে না, সে তদুত্তরে মর্মাহত হয়।

২.   জীবনকে সুখী করার জন্য সম্পদের প্রয়োজন। সম্পদ সঞ্চয়ের জন্য জীবন নয়।

৩.   কেন বললাম- এ অনুতাপ করার পূর্বে কী বলা উচিত, তা ভেবে দেখা উত্তম।

৪.   যে ব্যক্তি অসাধু হয়, সে হিসাব দিতে ভয় পায়।

৫.   বিদ্বানগণ বলেছেন : কিছু বিষয়ের স্থায়িত্ব নেই : ভাসমান মেঘের ছায়া, অসৎ লোকের বন্ধুত্ব, মিথ্যা প্রশংসা, অধিক সম্পদ, মূর্খদের খোশামোদ, যুবকের সৌদর্য, লোকদেখানো ইবাদত।

(নিউজলেটার, এপ্রিল ১৯৮৯)

নবী করীম (সা.)-এর দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালি ও ব্যক্তিত্বের কিছু দিক

বাইলামী ইরশাদুল কুলুব গ্রন্থে বর্ণনা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম পরিধানের বস্ত্র নিজ হাতে সেলাই করতেন, নিজের পাদুকা সেলাই করতেন, বকরীর দুধ দোহন করতেন, ক্রীতদাসদের সাথে বসে আহার করতেন । তিনি মাটিতে বসতেন, গাধায় আরোহণ করতেন, অন্যকে সাথে আরোহণ করিয়েছেন, কোনোরূপ লজ্জাবোধ না করে পরিবারের প্রয়োজনী দ্রব্যাদি বিপনি হতে ক্রয় করে বহন করে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের সাথে হাত মিলিয়ে মুসাফাহা করতেন- মুসাফাহাকারী তার হাত সরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর হাত সরাতেন না। যার সাথে দেখা হতো তাকেই তিনি সালাম করতেন- ধনবান, নিঃস্ব, ছোট, বড়, সকলের সাথে তাঁর এ আচরণ ছিল। কোনো খাবার গ্রহণের ডাক আসলে তিনি তা নিতান্ত  নিম্নমানের খুরমা হলেও তুচ্ছ মনে করতেন না। তাঁর জীবনযাপনের উপকরণাদি মামুলি ছিল। তিনি বিরাট ব্যক্তিত্বের অধিকারী, সহনশীল ও হাস্যমুখ ছিলেন- না হাসলেও তাঁর মুখে যেন হাসি লেগেই থাকত। মুখশ্রী কুঞ্চিত করে না রাখলেও তাঁকে চিন্তাযুক্ত মনে হতো। তাঁকে সর্বদা সবিনয়-ব্যক্তি বলে মনে হতো। তিনি আপব্যয়ী না হয়েও দানশীল ছিলেন । কোমল অন্তরের অধিকারী মুসলমানদের প্রতি অতি দয়ালু ছিলেন। তিনি অতি ভোজনের দরুন ঢেকুর তুলতেন না। লোভের বশীভূত হয়ে কোনো কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হতেন না ।

(নিউজলেটার, এপ্রিল ১৯৮৯)

ইরানে হস্তশিল্প

বর্তমানে আমাদের গোটা জীবনটাই যেন অনেকটা যন্ত্রনির্ভর। যন্ত্র উদ্ভাবিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মানুষকে তার পরিবেশের ওপর নির্ভরতার একটা সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে হতো। তখন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং এই সম্পর্কের প্রতি মানুষের যথেষ্ট শ্রদ্ধা ছিল। মানুষের চোখে তখন প্রকৃতিকে মনে হয়েছে যেন একটা ক্যালিডাস্কোপ বা খেলনা দূরবিন-যার ভিতরে তাকালে সতত পরিবর্তনশীল সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়-যা বিস্ময়ের সৃষ্টি করলেও স্থায়ী হতে পারে না-মানুষের মনে একটা রেখাপাত করেই যার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।

প্রকৃতির সুন্দর সুন্দর অস্থায়ী দৃশ্যগুলোকে স্থায়ীভাবে ধরে রাখার প্রেরণা থেকেই সম্ভবত মানুষ এমন একটা সৃজনী শক্তিকে আয়ত্ত করেছে যাকে আমরা এখন ‘চারুকলা’ বলে অভিহিত করি। প্রাচীনকালের নিআন ডারটাল উপত্যকার মানুষ তাদের গুহার দেয়ালে দেয়ালে যেসব অতি সাধারণ চিত্র অঙ্কন করেছে সেগুলো থেকে শুরু করে দ্যা ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’ সহ আজ পর্যন্ত যত শিল্পী যত চিত্র অঙ্কন করেছেন তাঁদের সকল সৃষ্টির পশ্চাতে একটা উদ্দেশ্যই কাজ করেছে। তা হচ্ছে কোনো দুর্লভ বস্তুকে অথবা মোহিনী মুহূর্তকে স্থায়ীভাবে ধরে রাখা। এ ক্ষেত্রে রুচির পার্থক্য মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

মানুষের মননশীলতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে চারুকলার প্রতি তার আগ্রহ ক্রমশ সম্প্রসারিত ও এর মর্মোপলব্ধি গভীরতর হতে থাকে। এক পর্যায়ে এসে মানুষের মনে দর্শনের উপলব্ধিও বিকাশ লাভ করে এবং তা থেকেই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। তখন থেকেই মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি তার উপলব্ধির মূল্যায়ন ও ব্যাখ্যা করতে শুরু করে। তাই দেখা যায় বিশ্বের এক অংশের শিল্পকলায় প্রকৃতির সহজাত সাদৃশ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং অপর অংশে প্রাকৃতিক দৃশ্যের সারল্যের মধ্যে নিহিত যে সৌন্দর্য তাকেই বড় করে দেখা হয়েছে। কালক্রমে মানুষ তার নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র, এমনকি, বাসন-কোসনেও চিত্রাঙ্কন শুরু করে। চিত্রশোভিত একটি ছুরি দিয়ে কোনো জিনিস কাটার সুবিধা হবে এবং চিত্রশোভিত না হলে সে সুবিধা নষ্ট হয়ে যাবে- এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। চামড়ার একটা বেল্টে নকশা থাকলে যেভাবে তা ব্যবহার করা যাবে, নকশা না থাকলেও তেমনি ব্যবহারে কোনো সমস্যাই দেখা দেবে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধরে রাখার জন্য মানুষের প্রয়োজন সেই সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ দৃষ্টি এবং সেই সঙ্গে তার সাংস্কৃতিক ও মানসিক পটভূমি- যা সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল্যায়নে তাকে প্রভাবিত করেছে এবং যার দ্বারা সৌন্দর্যের চিত্রায়নে তার কারিগরি কৌশল ও দক্ষতা প্রয়োগ করেছে, এর সবকিছু মিলে চিত্রকলার একটা স্বতন্ত্র শাখার সৃষ্টি হয়েছে যা ‘হস্তশিল্প’ নামে পরিচিত। বলা যেতে পারে, এসব হস্তশিল্পে শিল্পী হাত দিয়ে তাঁর প্রতিভা ও মননশীলতাকেই ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস পান।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ মাত্রই প্রতিটি হস্তশিল্পের মধ্যে শিল্পীর ব্যক্তিসত্তার পর্যাপ্ত পরিচয় খুঁজে পাবেন। প্রকৃতপক্ষে, আজকাল হস্তশিল্প বলতে শিল্পকর্মের সেই শাখাটিকেই বুঝায় যার উৎপাদন প্রক্রিয়ার সর্বাংশ অথবা অংশবিশেষে মানুষের সংস্কৃতি, দর্শন এবং তার জাতিগত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শৈল্পিক রুচিবোধ বিধৃত থাকে। হস্তশিল্প যখন একটা জাতির অথবা জাতিগত গ্রুপের সহজাত প্রতিভার ধারক হিসেবে এবং তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও রীতি-নীতির বাস্তব প্রতীক হিসেবে স্থায়িত্ব লাভ করে তখন তা শুধু উন্নয়নশীল জাতির ক্ষেত্রেই নয়, উন্নত জাতির ক্ষেত্রেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

ইরানে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে হস্তশিল্পজাত বাসন-কোসন ও অন্যান্য সামগ্রী এক বিরাট স্থান দখল করে রয়েছে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই এটা চলে আসছে। ইরানের গ্রাম-গঞ্জে ও উপজাতি অঞ্চলে বহু হস্তশিল্পী ঐতিহ্যগতভাবেই সস্তা কাঁচামাল ও অতি সাধারণ যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিচিত্র কারুকার্য খচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি প্রস্তুত করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। ইরানে বিভিন্ন উপজাতির এক বিরাট অংশ এবং বহু গ্রামীণ মানুষ তাদের জাতিগত ঐতিহ্য ও রীতিনীতির ওপর এখনও সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। বহুবিধ অভাব-অভিযোগ, শহরের বিলাসী জীবনের হাতছানি এবং কৃষি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রের সকল তৎপরতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য বিপ্লবপূর্ব সাবেক সরকারের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ইরানে প্রায় ১৫ লাখ লোক বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ইরানের হস্তশিল্প উন্নয়নের বহু ক্ষেত্র রয়েছে এবং এর সম্ভাবনাও বিরাট। হস্তশিল্পে যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তার একটা বিরাট অংশ কৃষিজাত পণ্য থেকেই সংগৃহীত হয়, অথবা বলা যেতে পারে, গ্রামাঞ্চল থেকেই এর যাবতীয় কাঁচামাল সরবরাহ করা সম্ভব। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে হস্তশিল্পে যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তার মূল্য দাঁড়ায় গোটা শিল্প সামগ্রীটির বিক্রয় মূল্যের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। অপর দিকে হস্তশিল্পের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ জনশক্তি ইরানে যথেষ্টই রয়েছে।

ইরানে হস্তশিল্পের পুনরুদ্ধার এবং এর বাজারজাতকরণ ইরানীদের এক বিরাট অংশের কর্মসংস্থানই শুধু করবে না, পাশ্চাত্যের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার অবসানেও বিরাট ভূমিকা পালন করবে। কারণ, ইরানের হস্তশিল্প দেশের অর্থনীতিকে অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। যে মওসুমে কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের কোনো কাজ থাকে না তাদের তখনকার অবসর মুহূর্তগুলোতেও হস্তশিল্প কর্মমুখর করে তুলতে পারে।

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান একে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। ইরানের ইতিহাস এবং এর জাতিগত বৈশিষ্ট্য ইরানের হস্তশিল্পকে করেছে বৈচিত্র্যময় এবং সুশোভন। গত ৫০ বছরেও ইরানি হস্তশিল্পের এই রূপ কিছুমাত্র ক্ষুণ্ন হয়নি, এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে সমুজ্জ্বল; বরং অনেক ক্ষেত্রে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তা উন্নীত ও পরিবর্তিত হয়েছে।

ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর ‘ইরানের হস্তশিল্প কেন্দ্র’ এবং ‘হস্তশিল্প কেন্দ্র স্টোর্‌স লি.’ নামক সংস্থা দুটিকে একত্র করে ‘ইরানের হস্তশিল্প সংস্থা’ নাম দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হস্তশিল্প কারখানাগুলোকে একটি মাত্র শিল্প ইউনিটে সমন্বিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৬৪ সালে ‘ইরানের হস্তশিল্প কেন্দ্র’ নামক সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে গঠিত ‘ইরানের হস্তশিল্প সংস্থা’ একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হিসেবে সরকারি নিয়মকানুন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে :

  • পল্লি এবং শহর এলাকার গুণগত মান ও সংখ্যা উভয় দিক থেকে হস্তশিল্পের উন্নয়ন এবং এর পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের জন্য যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা সাহায্য-সহায়তা দান।
  • ইরানি হস্তশিল্পের উৎপাদন, ক্রয়, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানিকরণ।
  • জনশক্তিকে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দান এবং ইরানি হস্তশিল্পের মূল ডিজাইন, জাতিগত বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে উন্নত নির্মাণ কৌশলের ব্যাপক প্রয়োগে সহায়তা।
  • উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আর্থিক, কারিগরি ও ঋণ সহায়তা প্রদান এবং কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে সমবায় প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা এবং জোরদার করা।
  • হস্তশিল্প এবং সেই সঙ্গে দেশের সাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ করা, পরিসংখ্যান তৈরি করা ও গবেষণার ব্যবস্থা করা।

(নিউজলেটার, জানুয়ারি ১৯৮৬)

ইসলামে সামাজিক ন্যায়বিচার

উত্তম ইসলামি সমাজে নারী-পুরুষ সবাই কাজ করে

(হুজ্জাতুল ইসলাম হাশেমী রাফসানজানির শুক্রবারের জুমার নামাজের খুতবা থেকে)

 মহিলাদের চাকরি

মহিলাদের আর্থিক নিরাপত্তার একটি উৎস হচ্ছে চাকরি। আমাদের এই যুগে মহিলাদের চাকরির ব্যাপারটি একটি সমস্যা হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক প্রশ্ন হচ্ছে : মহিলাদের কাজ করা উচিত, না উচিত নয়? ইসলাম বলে, মহিলারা কাজ করতে পারে এবং তাদের কাজ করা উচিত। ইসলামে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই শ্রমবিমুখতা ও আলস্য নিষিদ্ধ। বেশ কিছুসংখ্যক হাদিসে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, মহিলাদেরও কাজ করা উচিত। আমি এমন কয়েকটি হাদীসের উল্লেখ করছি যা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘সত্তর ধরনের ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে সৎভাবে জীবনযাপনের জন্য পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা।’

এখানে নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি। আবার রাসুলুল্লাহ বলেছেন : ‘যারা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তারা আল্লাহর ক্ষমা লাভের যোগ্যতা অর্জন করে।’ এখানেও নারী বা পুরুষ কারো জন্যই বিশেষভাবে কথাটি বলা হয়নি- উভয়ের ক্ষেত্রেই সাধারণভাবে কথাটি প্রযোজ্য।

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : আল্লাহ সৎ, পরিশ্রমী মানুষকে ভালোবাসেন। এখানেও মানুষ কথাটি দ্বারা নারী ও পুরুষ উভয়কেই বোঝানো হয়েছে। হযরত শুয়াইব (আ.)-এর কন্যারা মেষ পালন করতেন। একদিন তাঁরা যখন মেষগুলোর জন্য একটি কূপ থেকে পানি আনতে যান তখনই হযরত মূসার সঙ্গে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। ইমাম কাযেম (আ.) বলেছেন : আল্লাহ তাঁর নিদ্রাকাতর ও আলস্যপরায়ণ বান্দাদের অপছন্দ করেন। এখানে বান্দা বলতে নারী-পুরুষ উভয়কেই বোঝানো হয়েছে।

নিশ্চিতই এমন অনেক হাদীস রয়েছে যেখানে শুধু পুরুষদের কথাই বলা হয়েছে। তবে তা এই কারণে যে, যে সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নির্দেশগুলো এসেছে সে সময়ে পুরুষদের ওপরই পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল এবং এখনও পুরুষরাই সে দায়িত্ব পালন করে আসছে। সাধারণভাবে, স্মরণ রাখা দরকার যে, সময় নষ্ট করাকে ইসলাম অত্যন্ত ঘৃণা করে। প্রতিদিনের সময়কে আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা নিদ্রা ও বাকি আট ঘণ্টা ইবাদত, বিনোদন ও বিশ্রামের জন্য বিভক্ত করা একটি উত্তম ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য। কিন্তু যারা কেবল আলসেমি করে সময় কাটায় তারা আল্লাহর সৎ বান্দা নয়।

এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, একটি উৎকৃষ্ট মুসলিম সমাজ হচ্ছে এমন একটি সমাজ যেখানে নারী-পুরুষ সবাই কাজ করে। তবে, উভয়ের মধ্যে যথাযথ শ্রমবিভাগের একটি প্রশ্ন রয়েছে। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই দৈহিক, মানসিক, হৃদয়বৃত্তিমূলক ও সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ বেছে নিতে হবে।

যেসব ক্ষেত্রে মহিলাদের নিয়োগ নিষিদ্ধ

আমি যতটা জানি, দুই বা তিন ধরনের কাজে যোগদানের পথ মহিলাদের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। তবে, এগুলো চাকরির ক্ষেত্রে নয়। এগুলো হচ্ছে, কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে- যেখানে পারিশ্রমিকের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই ধরনের একটি ক্ষেত্র হচ্ছে বিচারকের কাজ। ইসলাম একে একটি পালনীয় কর্তব্য হিসেবে গণ্য করে, গ্রহণযোগ্য পেশা হিসেবে বিবেচনা করে না। যারা বিচার করেন এবং লোকজনদের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করেন তাঁদের এই দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করা উচিত নয়। এ কাজের জন্য তাঁদের যে অর্থ ব্যয় হবে তা মুসলিম ট্রেজারি (বায়তুল মাল) থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু অ্যাটর্নী ও আইন উপদেষ্টা হতে মহিলাদের কোনো বাধা নেই।

দ্বিতীয় যে ক্ষেত্রটিতে মহিলাদের প্রবেশে বাধা রয়েছে তা হচ্ছে, মৌলিক জেহাদে অংশগ্রহণ (অস্ত্রধারণ করা এবং যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেওয়া)। এটাও একটা ধর্মীয় কর্তব্য, কোনো পেশা নয়। তবে, আত্মরক্ষামূলক জেহাদে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ নয়। কারণ, পুরুষের মতো মহিলাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। সমরকৌশল আয়ত্ত করাতেও মহিলাদের বাধা নেই, কিন্তু আত্মরক্ষামূলক না হলে মহিলাদের যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ অনুমোদিত নয়। ইসলাম মহিলাদেরকে এই গুরুদায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে।

মহিলাদের প্রবেশের অনুমতিহীন তৃতীয় ক্ষেত্রটি হচ্ছে ধর্মীয় বিধান জারির (ফতোয়া) অধিকার। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে সিদ্ধান্ত দিতে হলে ধর্মীয় অনুশাসন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হতে হয়। কেননা, তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং অবশ্যপালনীয় বলে গণ্য হয়। এ কাজটিও একটি ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের কাজ মাত্র, পেশা বা বৃত্তি নয়। ধর্মতত্ত্ব শিক্ষা করে মহিলারা ধর্মতত্ত্ববিদ হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর মতামত শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করা হবে, কিন্তু তিনি ধর্মীয় অনুশাসনের উৎস হতে পারেন না।

কাজেই দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের কয়েকটি মাত্র দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কাজের অধিকার হরণ নয়- অন্য বিষয়। এছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রেই মহিলাদের কাজে নিযুক্তির অধিকার রয়েছে। তাঁরা উকিল হতে পারেন, অ্যাটর্নী হতে পারেন, মন্ত্রী হতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা হতে পারেন, মেকানিক হতে পারেন অথবা অপর যেকোনো পেশা বা ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন। মহিলাদের কাজের ব্যাপারে ইসলাম গত ১৪০০ বছর ধরেই এই অভিমত ব্যক্ত করে আসছে।

সমাজে মহিলাদের কাজের আওতা

কাজ বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত ইসলামি নীতিমালা অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন। এসব নীতির ভিত্তি হচ্ছে নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক স্বার্থ এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্ন। এসব বিষয়ের ওপর ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইসলাম মনে করে, প্রতিটি পরিবারেরই নিরাপত্তা থাকতে হবে, পরিবারের প্রতিটি ছেলেমেয়েকেই আল্লাহর নির্দেশিত পরিবেশে গড়ে তুলতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রীকে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

সমাজে এমন কিছু অবস্থা বিদ্যমান থাকে যাতে মহিলাদেরকে কোনো কোনো কাজে নিয়োগ করা যায় এবং কোনো কোনো কাজে নিয়োগ করা যায় না। তাছাড়া নৈতিকতা ও সতীত্বের প্রশ্নও বিবেচনা করতে হবে।

আমি দেশের বাইরে অনেকের সঙ্গেই মেয়েদের কাজের ব্যাপারে আলোচনা করেছি। আমি তাদের বলেছি যে, আমাদের পথ ও তাদের পথের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, তাদের পরিবেশে মেয়েদের জন্যে নৈতিকতা বর্জনের প্ররোচনা থাকে, যেখানে পুরুষরা মহিলাদের সঙ্গে অসঙ্গত আচরণ করে। কিন্তু আমরা মনে করি, মহিলাদের মর্যাদার নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। ইসলাম মেয়েদের জন্য কাজের সকল দরজাই খোলা রেখেছে। কিন্তু কিছু শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে এবং কিছু নীতিমালা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

পাশ্চাত্যের পরিবার-কাঠামো

আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন যে, পরিবারের অস্থিতিশীল অবস্থা ও বন্ধনহীন সম্পর্কের জন্য প্রতি বছর দশ লক্ষাধিক আমেরিকান যুবক-যুবতী বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মাত্র সেদিন আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি যে, জার্মানিতে পায় পাঁচ লাখ পরিত্যক্ত ছেলে-মেয়েকে সরকারি হেফাযতে রাখা হয়েছে। তাছাড়া সে দেশে প্রায় ত্রিশ লাখ মহিলাকে পৌরসভাগুলোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। পাশ্চাত্য সমাজে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা এবং ইসলামি সমাজের পারিবারিক বন্ধনের তুলনা করলেই ইসলামি জীবনপদ্ধতির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করা যায়।

ঘৃণ্য পাহলভী শাসনামলে পাশ্চাত্যের অনুকরণে আমাদের মহিলাদেরও কাজের নামে এমন এক পরিবেশে টেনে আনা হয়েছিল যেখানে তাদের জন্য শুধু পাপ আর অনাচারই অপেক্ষা করছিল। সৌভাগ্যক্রমে, ইসলামি বিপ্লবের সাথে সাথে এই প্রবণতা বন্ধ হয়েছে। ইসলামি উপদেষ্টা পরিষদ পার্টটাইম কাজের যে বিল প্রণয়ন করেছেন তার ফলে মহিলারা এখন পরিবারের প্রতি তাঁদের প্রাথমিক দায়িত্ব পালনের পরে চাকরি করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

সম্প্রতি বিবিসি’র একজন আমেরিকান মহিলা রিপোর্টার আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এর আগে তিনি শুক্রবারের এক জুমা সমাবেশে আমার খুতবা শুনেছিলেন। তাতে আমি আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজে মহিলাদের দুরবস্থার কথা বলেছিলাম। মহিলা রিপোর্টার আমাকে বললেন : ‘আমি তো চাদর পরি না। তাই বলে কি আমি একজন দুর্দশাগ্রস্ত মহিলা?’ জবাবে আমি বলেছি : ‘আমি আপনার ব্যক্তিগত অবস্থার কথা জানি না। আমি লাখ লাখ আশ্রয়হীনা জার্মান মহিলার কথাই বলেছি যারা রাষ্ট্রীয় আশ্রয়ে রয়েছে। তাদের এমন কেউ নেই যার কাছে তারা আশ্রয় পেতে পারে। এরা কি ভাগ্যহত নয়? এরা কি সুখী? আমি আপনার নিজের দেশের কথাও বলতে পারি। মাত্র কয়েকদিন আগে আমি আপনাদের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরেই দেখেছি, সেখানে হাইস্কুলে অধ্যয়নরত প্রায় পাঁচ লাখ ছেলেমেয়ে মাদকাশক্তির মতো অস্বাস্থ্যকর ও নৈতিকতাহীন কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। পাশ্চাত্যের সব দেশেই এখন এই ধরনের পরিস্থিতি বিদ্যমান। আমরা মনে করি, এটা সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয়েরই দঃখজনক পরিণতি। ইসলামি সমাজে মহিলাদেরকে এমন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয় না।’

ঐ খুতবার উপসংহারে আমি মহিলাদের সতীত্বের প্রশ্ন তুলে বলেছিলাম যে, চাকরিরত মহিলাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নটি এভাবে পেশ করা যেতে পারে : চাকরি করেও কি মহিলাদের পক্ষে শালীনতা ও সতীত্ব রক্ষা করা সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবে আমি বলব, হ্যাঁ, অবশ্যই। আমাদের নারী ও পুরুষ- উভয় শ্রেণির লোকেই যদি শালীনতা ও সতীত্বের শর্তগুলো পালন করে চলতে পারেন তাহলে মেয়েদের মাঠে কাজ করতে কোনো বাধা থাকতে পারে না।

শালীনতা ও সতীত্ব রক্ষার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের কর্তৃপক্ষের জন্য একটি গুরুদায়িত্ব। যে পরিবারে সতীত্বের কোনো মূল্য নেই, সে পরিবার থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। সতীত্বের প্রতি শ্রদ্ধাহীন কঠোর আইন-কানুন সমাজ সংস্কারের সহায়ক হতে পারে না। আইন-কানুনের শিথিলতা নিয়েও সৎ ও পুণ্যবান সমাজ অনায়াসে এগিয়ে যেতে পারে। কাজেই, মহিলাদের সতীত্বের প্রতি দৃষ্টি রেখেই মহিলাদের কাজের ব্যাপারে আমাদের নীতি নির্ধারণ করতে হবে এবং নারী ও পুরুষের মধ্যে কাজ বণ্টন করতে হবে।

(নিউজলেটার, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬)