All posts by dreamboy

হযরত আলী (আ.)-এর বাণী- নাহজুল বালাগা থেকে

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘লজ্জা যার ভূষণ, লোকেরা তার দোষ দেখতে পায় না।’- নাহজুল বালাগা, বাণী নং ২১৪

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘অধিক মৌনতা দ্বারা ভয়-ভীতি সঞ্চারিত হয়ে থাকে। ন্যায়পরায়ণতা দ্বারা লোকের সাথে অধিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর অনুগ্রহ প্রদর্শনে সম্মান বদ্ধি পায়। নম্রতা দ্বারা পরিপূর্ণ নেয়ামত অর্জিত হয়ে থাকে। ক্লেশের মাধ্যমে প্রাধান্য বিস্তার নিশ্চিত হয়। ইনসাফপৃর্ণ আচরণ শত্রুকে পরাভূত করে। জ্ঞানহীনের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শিত হলে তার বিরুদ্ধে সাহায্যকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়।’-নাহজুল বালাগা, বাণী নং ২১৫

হযরত আলী (আ.) বলেন : ‘আজব ব্যাপার এই যে, হিংসুকরা শরীরের সুস্থতা সম্পর্কে অন্যমনস্ক থাকে।’-নাহজুল বালাগা, বাণী নং ২১৬

হযরত আলী (আঃ) বলেছেন : ‘লোভী ব্যক্তি অপমানের হাতে বন্দি থাকে।’- নাহজুল বালাগা, বাণী নং ২১৭

হযরত আলী (আ.)-কে ঈমান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন : ‘ঈমান হলো অন্তর দ্বারা উপলব্ধি, মৌখিকভাবে স্বীকৃতি এবং ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলা।’- নাহজুল বালাগা, বাণী নং ২১৯

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘যে দুনিয়ার ব্যাপারে অনুতাপ করে, সে আল্লাহর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অসন্তুষ্ট। যে সংঘটিত বিপদ সম্পর্কে অনুযোগ করে, সে তার প্রতিপালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। যে ধনী ব্যক্তির দ্বারস্থ হয়ে মিনতি করে, সে ধর্মের এক তৃতীয়াংশ হাতছাড়া করল। যে কুরআন পাঠ করার পর মৃত্যুবরণ করে এবং এরপর দোযখে প্রবেশ করে, সে আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টাচ্ছলে গ্রহণ করেছে বলে মনে করতে হবে। যার অন্তর দুনিয়ার মহব্বতে ব্যাকুল, তার অন্তর দুনিয়ার তিনটি বিষয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত : অনবরত দুশ্চিন্তা, অপরিত্যাজ্য লোভ ও দুরাশা।’- নাহজুল বালাগা, বাণী নং ২১৯

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘অল্পে তুষ্টি দ্বারা রাজকীয় জীবন উপভোগ করা যায়। আর উত্তম চরিত্র দ্বারা সুখকর জীবন অর্জিত হয়।’- নাহজুল বালাগা, বাণী নং ২২০

হযরত আলী (আ.)-কে আল্লাহর এ বাণী- ‘অতঃপর অবশ্যই তাকে সুখকর জীবন দান করব’- সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন : ‘অল্পে তুষ্ট থাকার জীবনের কথাই বলা হয়েছে।’- নাহজুল বালাগা, বাণী নং ২২১

(নিউজেলটার, মার্চ ১৯৯১)

হযরত আসমা- ইসলামের ইতিহাসের একজন আত্মত্যাগী মহিলা

ইসলামের শুরুতে মহানবী (সা.) যখন তাঁর নিকট আত্মীয়দের সত্যধর্ম ইসলামের দিকে আহ্বানের জন্য আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হন তখন তাঁর আত্মীয়দের মধ্যে অনেকে এই দাওয়াত গ্রহণ করেন। তবে প্রকাশ্যভাবে রাসূলের অনুসারী হওয়া তখন ছিল বিপজ্জনক। কারণ, কেউ এ নতুন বিপ্লবী মতাদর্শ গ্রহণ করলে মক্কার প্রবীণ লোকেরা তাঁর প্রতি যে নির্দয় আচরণ করবে এটা ছিল পরিষ্কার ব্যাপার। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বলা যায় যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসারিগণ এ বাধা অতিক্রম করেছিলেন।

প্রথম পর্যায়ে যাঁরা তাঁর অনুসারী হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেক সাহসী মহিলাও ছিলেন যাঁরা মূর্তিপূজা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে আমরা আসমা বিনতে আমিসের নাম গভীর শ্রদ্ধার সংগে স্মরণ করতে পারি। আসমা ইসলাম গ্রহণের প্রারম্ভ থেকেই একজন সম্মানিতা মহিলা হিসেবে সমাদৃত হয়ে এসেছেন। ইসলামের আদর্শ বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি কৃতিত্বের পরিচয় প্রদান করেন। তাঁর এই নিরলস এবং বিরামহীন কর্মতৎপরতা বিশ্বাসীদের অন্তর জয় করেছিল এবং তিনি বিপুল শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম হন।

তাঁর স্বামী ছিলেন আবু তালিবের পুত্র জাফর। আর তিনি হযরত (সা.)-এর একজন অকৃত্রিম এবং আত্মত্যাগী অনুসারী ছিলেন। ইসলামের প্রথম যুগে তিনি অন্য মুমিনদের সংগে ইথিওপিয়ায় হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন। মক্কায় যেহেতু মুসলমানদের ওপর নির্মম অত্যাচার চলছিল তাই ইথিওপিয়ার খ্রিস্টান বাদশার নিকট সেখানে বসবাসের অনুমতি প্রার্থনা করা হয়েছিল। আসমা তাঁর স্বামীকে সাথে করে অন্যান্য বিশ্বাসী মুসলমানের সংগে বিদেশের পথে যাত্রা করেন। আসমা জন্মভূমি ত্যাগের এই কঠিন দুঃখ-কষ্ট সহজেই গ্রহণ করে নেন। এই ছোট্ট কাফেলাটি আবু সুফিয়ানের লোকদের আসন্ন হামলার কথা চিন্তা করে শংকিত। কাফেলাটি অবশ্য নিরাপদেই ইথিওপিয়া পৌঁছতে সক্ষম হয় এবং ইথিওপিয়ার রাজার সংগে আলাপ আলোচনার পর তাঁরা সেখানে অবস্থানের অনুমতি লাভ করেন এবং এতদসত্ত্বেও ইসলাম প্রচারে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

কয়েক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। তাদের প্রত্যাবর্তনের কিছুদিনের মধ্যেই আসমার স্বামী শাহাদাত বরণ করেন।

মহানবী (সা.) জাফরকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন। তাই তিনি এ ঘটনার পর আসমার গৃহে আগমন করেন। তিনি শিশুসন্তানদের তাঁর নিকট হাজির করতেন বলেন। অতঃপর তিনি কাঁদতে আরম্ভ করেন। আসমা বলেন যে, ক্রন্দনে নবী করিম (সা.)-এর গ-দেশ বেয়ে যে অশ্রু বর্ষিত হয়েছিল তা ছিল শুভ্র মুক্তা কণার মতো। আসমা মহানবীকে জিজ্ঞাসা করেন যে, তাঁর স্বামীর কোন সংবাদ আছে কিনা। মহানবী (সা.)

(নিউজলেটার, মার্চ ১৯৯১)

বৈদেশিক নীতি প্রশ্নে ইমাম খোমেইনী (র.)-এর দৃষ্টিভঙ্গি

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেখা যায়, যখন বিদেশী শক্তির ভাড়াটেরা দুর্বল হয়ে পড়ে তখন বিরোধী নেতৃবৃন্দ সবসময় বিদেশের সঙ্গে আঁতাত ও সম্পর্ক গড়ে তোলার বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনের ওপর জোর দেন। কিন্তু এ নেতৃবৃন্দের হাতে যখন নিজ নিজ দেশের কর্তৃত্ব ও শাসন ক্ষমতা চলে আসে তখন তাঁরা তাঁদের লক্ষ্য ভুলে যান এবং তাঁদের ক্ষমতা যে কত সীমাবদ্ধ তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অধিকাংশ নেতাই প্রথমে জোটনিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির ঘোষণা দেন। কিন্তু ক্ষমতা লাভের পর ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাঁরা সেই আন্তর্জাতিক শক্তির শিকার হয়ে যান যারা বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থ রক্ষায় নিবেদিত।

ইমাম খোমেইনী (র.) তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের সকল পর্যায়ে এবং ইসলামী বিপ্লবের বিজয় ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকালে এ প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যে, তিনি রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহ সব ধরনের বিদেশী আধিপত্যের বিরোধী। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় মুসলমান ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষে ভূমিকা পালনের লক্ষ্যেই তাঁর বৈদেশিক নীতি আবর্তিত হয়েছে, তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে এর প্রমাণ দিয়েছেন। শাহের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রামেও তিনি একই নীতি অবলম্বন করেছেন।

ইসলামী বিপ্লব বিজয়ী হওয়ার পর ইরানের বৈদেশিক নীতি এবং বিভিন্ন দেশের সাথে ইরানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ও পরিবর্তন বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এর কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে :

এক : ইরানের ওপর চাপিয়ে দেয়া সব ধরনের সমঝোতা ও চুক্তি বাতিল করা। যেমন, ১৯৫৯ সালে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পাদিত চুক্তিতে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদান করা হয় এবং ১৯২১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পন্ন সমঝোতায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে ইরানে সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ দেয়া হয়। বিপ্লবের পরই এ সকল চুক্তি বাতিল বলে ঘোষিত হয়।

দুই : সেন্টো প্যাক্ট থেকে বেরিয়ে আসা।

তিন : যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, মিশরের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা।

চার : যে সকল দেশ ইসরাইলকে সমর্থন করে সেগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং অবৈধ ইসরাইল সরকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত সকল কোম্পানির প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

পাঁচ : আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা করা এবং আফগান মুজাহিদদের প্রতি সমর্থন প্রদান।

ছয় : বিশ্বের সকল মুক্তি আন্দোলন এবং ইসলামী মুক্তি আন্দোলনগুলোর প্রতি সমর্থন প্রদান।

সাত : ওয়ার্ল্ড পেট্রোলিয়াম কনসোর্টিয়ামের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং এর সাথে সংশিষ্ট কর্মচারীদের দেশ থেকে বের করে দেয়া।

আট : জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সাথে জড়িত হওয়া।

নয় : ইমাম খোমেইনী (র.)-এর বৈদেশিক নীতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো তাঁর ‘পূর্বও নয়, পশ্চিমও নয়’ নীতি। তিনি এক বক্তৃতায় বলেন : ‘রাজনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ইরানকে আমাদের এমন স্বাধীনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনের মতো আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর ওপর আর নির্ভরশীল থাকতে না হয়।’ (১৯৭৯ খ্রি.)

দশ : চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে জড়িত থেকেও ইরান তার নীতির প্রশ্নে অটল থাকে।

এগার : ইমাম সব সময় বৃহৎ শক্তি এবং তাদের ভাড়াটেদের মোকাবিলা করে গেছেন। বিশেষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিনি অত্যন্ত কঠোর ভূমিকা পালন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শয়তানে বুজুর্গ’ বা ‘বড় শয়তান’ বলে আখ্যায়িত করেন। ইমাম যখন অসুস্থ ছিলেন তখনও তিনি বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রাম থেকে বিরত হননি। তিনি তখন বলেন : ‘বিশ্বের মজলুম জাতিগুলোকে অহংকারী বিশ্বশক্তির ব্যাপারে আমি হাসপাতাল থেকে সাবধান করে দিচ্ছি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দাম্ভিক শক্তির আধিপত্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সকল শক্তি দিয়ে আমরা এ সকল অশুভ শক্তির মোকাবিলা করব।’ (১৯৮০ খ্রি.)

ইসলামী দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইমাম খোমেইনী (র.) ক্ষমতাসীন শক্তির চেয়ে জাতির ইচ্ছা-আকাক্সক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা ছিল বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তাঁর গৃহীত একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন : ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতা করে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি বলে কেউ কেউ চিন্তা করেন। কিন্তু তাঁদের সে চিন্তা সঠিক নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে। বিপ্লব সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে আমরা ছিলাম বিচ্ছিন্ন। কেননা, তখন অন্যান্য দেশ আমাদের প্রতি দৃষ্টিই দেয়নি। আমাদের জাতীয় ঐক্য এবং মিলিত সংগ্রামের ফলে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী উৎখাত হয়েছে। ইসলামী বিপ্লব বিজয়ী হওয়ার পর অমুসলমানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্যাতিত জনগণ আমাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে।’

(নিউজলেটার, মার্চ ১৯৯১)

হযরত আলী (আ.)-এর কতিপয় বাণী- নাহজুল বালাগা থেকে

আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘যার স্বভাব বিনম্র তার বন্ধু-বান্ধব বৃদ্ধি পায়।’- নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী নং ২০৫

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘যে কৃতকার্য হয়, সে উচ্চশির হয়ে থাকে।’- নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী নং ২০৭

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে মানুষের প্রকৃত রূপ ধরা পড়ে।’- নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী নং ২০৮

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘লোভ তীব্র হলে অধিকাংশ জ্ঞান লোপ পেয়ে থাকে।’- নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী নং ২১০

আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘মানুষের উপর অত্যাচার করা পরকালের নিকৃষ্ট পাথেয়।’- নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী নং ২১২

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘সম্মানিত ব্যক্তির উত্তম আচরণ হলো তার জানা বিষয়ে নির্লিপ্ততা প্রদর্শন।’- নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী নং ২১৩

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘লজ্জা যার ভূষণ লোক তার ত্রুটি দেখে না।’- নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী নং ২১৪

(নিউজলেটার, ফেব্রুয়ারি ১৯৯১)

চলতি বছর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উৎপাদনে ২০তম স্থানে ইরান

চলতি বছর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উৎপাদন ও গবেষণায় বিশ্বে ২০তম স্থান অধিকার করেছে ইসালামি প্রজাতন্ত্র ইরান। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘থমসন রয়টার্সে’র সর্বশেষ জরিপে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, চলতি বছর আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে ২১ হাজার গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে ইরান। পাশাপাশি, চলতি বছর ১.৫৭ শতাংশ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উতপাদন করেছে তেহরান।

এর আগে, ২০০০ সালে চিকিতসা বিষয়ক গবেষণাপত্র প্রকাশের দিক বিবেচনায় বিশ্বে ৫৩তম স্থান অধিকার করেছিল দেশটি। ২০১১ সালে এসে ইরান অর্জন করে ২৩তম স্থান।

ইন্সটিটিউট অব সায়েন্টিফিক ইনফরমেশন- আইএসআই জানিয়েছে, ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে ইরান ৬০,৯৭৯টি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। এছাড়া, ওয়ার্ল্ড সায়েন্স সাইটেশন সেন্টারের প্রধান জাফর মেহরাদ জানান, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উৎপাদনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরান ১ম স্থান অর্জন করেছে।

এদিকে, ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ক গবেষণা কাজে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ও বিশ্বে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান।

রেডিও তেহরান, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

মহাকাশে ইরানের দ্বিতীয় বানর

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান আবারো মহাকাশে সাফল্যের সঙ্গে বানর পাঠিয়েছে। মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি হিসেবে ‘ফারগাম’ নামের বানরটি বায়ো-ক্যাপসুলে করে মহাকাশে পাঠানো হয়। বানরটি মাত্র ১৫

মিনিটে পূর্ব-নির্ধারিত গতিতে নির্দিষ্ট উচ্চতায় (১২০ কিলোমিটার) পৌঁছার পর জীবন্ত অবস্থায় আবার ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে এসেছে। বানরটি বর্তমানে পরিপূর্ণ সুস্থ আছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি পিশগাম বা অভিযাত্রী নামের বায়ো-ক্যাপসুলে করে মহাকাশে প্রথমবারের মতো বানর পাঠায় ইরান।

প্রথম বাণিজ্যিক বিমান নির্মাণের কাজ শুরু করেছে ইসলামি ইরান

ইরান প্রথম যাত্রীবাহী বিমান নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ইরানের ইংরেজি নিউজ চ্যানেল প্রেস টিভি জানিয়েছে, দুই ইঞ্জিনের টার্বোজেট বিমানটি দেড়শ’ যাত্রী বহন করতে পারবে।

ইরানের বিমান শিল্প সংস্থা (আইএআইও) এবং ইরানের বেসামরিক বিমান নকশা কেন্দ্র (সিএডিসি) যৌথভাবে এ বিমান নির্মাণ করছে। তিন পর্বের এ প্রকল্পের প্রথম পর্ব আগামী বছরের মার্চে শেষ করা হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আইএআইও’র নির্বাহী পরিচালক মানুচেহের মানতেকি বলেন, বিশ্বের চারটি মহাদেশের কয়েকটি দেশ এ বিমান নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আগামী দশকে ইরান এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক বিমান রফতানিকারক দেশে পরিণত হবে বলেও জানান তিনি। ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শরীফ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্পাহান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমির কবির প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলীরা এ প্রকল্পে কাজ করছেন।

নির্মাণাধীন বিমানটির পাল্লা হবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। এতে পশ্চিমে ইউরোপ ও পূর্বে ভারত উপমহাদেশের বেশিরভাগ এলাকা পাড়ি দেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সিএডিসি’র নির্বাহী পরিচালক আলীরেজা জাহাঙ্গেরিয়ান।

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান সংস্থার (আইসিএও) হিসাবের ভিত্তিতে বিমান  প্রকৌশলীরা বলেন, প্রতিটি বাণিজ্যিক নির্মাণ ও পরিদর্শনে ব্যয় হবে দেড়শ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকে বেসামরিক বিমান শিল্প খাতে  কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের বেসামরিক বিমান বহরের সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে।

রেডিও তেহরান, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

ইরানের নৌবাহিনীতে নতুন যুদ্ধজাহাজ ও হেলিকপ্টার

ইরানের নৌবাহিনীতে একটি নতুন যুদ্ধজাহাজ ও একটি হেলিকপ্টার গানশিপ যুক্ত করা হয়েছে। ইরানি সামরিক বাহিনীর সরঞ্জাম  উন্নয়নের পদক্ষেপ হিসেবে এই যুদ্ধজাহাজ ও হেলিকপ্টার পুরোপুরি সংস্কার করা হয়েছে।

ইরানি নৌবাহিনীর কারিগরি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল আব্বাস জামিনি জানিয়েছেন, লাভান শ্রেণীর এই যুদ্ধজাহাজ দিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে বোমা হামলা চালানো এবং হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান বহন করা যাবে।  ৩,০০০ টন ওজনের এ যুদ্ধজাহাজটির সংস্কার কাজ ৩৩ মাসে সম্পন্ন হয়েছে।

সুলতান নামে পরিচিত এসএইচ৩ডি জঙ্গী হেলিকপ্টারটির সংস্কার সম্পর্কে জানাতে গিয়ে অ্যাডমিরাল জামিনি বলেন, এটি ডুবোজাহাজ ধ্বংস করতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও টর্পেডো বহন করতে পারে।

রেডিও তেহরান, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন ধরনের সাবমেরিন নির্মাণ করছে ইরান

ইরান আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নিজ বিশেষজ্ঞদের তৈরি নতুন ধরনের সাবমেরিন প্রদর্শন  করবে। দেশটির একদল উচ্চ-পদস্থ সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইরান এই সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ তৈরি করবে এবং তা হবে আধাআধি ভারী বা সেমি-হেভি সাবমেরিন।

ইরানের নৌ-বাহিনীর শিল্প-গবেষণা ও স্বনির্ভর-জিহাদ সংস্থার প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল আলি গোলামজাদেহ বলেছেন, চলতি ফার্সি বছরের শেষের দিকে এই সাবমেরিন প্রদর্শন করা হবে। আগামী মার্চের ২০ তারিখে শেষ হচ্ছে চলতি ফার্সি বছর। তিনি জানান, ইরান বর্তমানে নানা মডেলের বহু হাল্কা সাবমেরিন নির্মাণ করছে।

গোলামজাদেহ বলেছেন, ইরানের এইসব সাবমেরিনের মান সেইসব দেশের সাবমেরিনের চেয়েও উন্নত যে দেশগুলো এই শিল্পে ও বিশেষ করে, আধাআধি ভারী সাবমেরিন নির্মাণ ও এমনকি সংস্কারের জন্যও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করছে।

ফ’তেহ, গ্বাদির, কায়েম ও নাহাং- ইরানের নির্মিত কয়েকটি অত্যাধুনিক মডেলের সাবমেরিন। ইরানের নৌ বাহিনী ‘জামারান’সহ নানা ধরনের আধুনিক মডেলের ডেস্ট্রয়ারও নির্মাণ করছে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

রেডিও তেহরান, ৩০ নভেম্বর, ২০১৩

নতুন রাডার ব্যবস্থা উন্মোচন করল ইরানের নৌবাহিনী

ইরানের নৌবাহিনী আজ (বুধবার) দেশে প্রস্তুত একটি অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থা উন্মোচন করেছে। ‘আসর’ বা যুগ নামের এ রাডার দিয়ে দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করা যাবে।

ইরানের নৌবাহিনী দিবসের আগে এ রাডার উন্মোচন করা হল। এ অনুষ্ঠানে ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল হাবিবুল্লাহ সাইয়্যারি এবং ডেপুটি আর্মি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল রহিম মুসাভিসহ সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

ব্রিগেডিয়ার মুসাভি জানান,এ রাডারকে নৌবাহিনীর যেকোনো জাহাজে স্থাপন করা যাবে এবং তাতে নৌবাহিনীর যুদ্ধ ক্ষমতা আরো বাড়বে।

এ ছাড়া, অ্যাডমিরাল হাবিবুল্লাহ সাইয়্যারি জানান,এ রাডার দিয়ে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ ১১০ মাইল দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু নির্ণয় করা যাবে।

রেডিও তেহরান, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩