All posts by dreamboy

ইমাম খোমেইনী (র.)-এর তুরস্কে নির্বাসিত জীবন

কোম আবার অবরুদ্ধ হলো। ১৩৪৩ ইরানী সালের ১৩ই আবান (১৯৬৪ সালের ৪ নভেম্বর) শাহের সেনারা কোম ঘেরাও করে ইমাম খোমেইনীকে গ্রেফতার করে। ইমামকে সরাসরি মেহরাবাদ বিমানবন্দরে নিয়ে সেখান থেকে তাঁকে তুরস্কের ইজমিরে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সকল বেলা কোমের অধিবাসীদের ঘর থেকে বের হতে দেয়া হলো না। সৈন্যরা ধর্মীয় নেতাদের বাড়িও ঘেরাও করল। ইমামের জ্যেষ্ঠপুত্র মোস্তফা খোমেইনীও গ্রেফতার হলেন। তাঁকে তেহরানের কারাগারে বন্দি করা হলো। প্রায় দুমাস পর তিনিও তুরস্কে নির্বাসিত হলেন।

তেহরানের তুর্কী দূতাবাসে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থনে তারাবার্তা আসতে লাগল। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী হাসান আলী মনসুরকে ইসলামী কোয়ালিশন আন্দোলনের জনৈক সদস্য হত্যা করল। উল্লেখ্য, আলী মনসুরই ক্যাপিটিউলেশন আইন প্রণয়ন ও ইমাম খোমেইনীর নির্বাসনের জন্য দায়ী ছিল। ইরানের মুসলিম জনগণ ইমাম খোমেইনীর নির্বাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির কাছে নিম্নোক্ত চিঠি পাঠাল : আমরা ইরান সরকারের মানবাধিকারবিরোধী কার্যকলাপের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা আশা করি, জাতিসংঘ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ব্যাপারে ৫ নভেম্বরের নিউইয়র্ক টাইমস, লন্ডন টাইমস এবং লা মন্ডে পত্রিকায়ও খবর বের হয়- সাভাকের পরামর্শ অনুযায়ী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ইরানের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে নির্বাসনে প্রেরণ করা হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এখন জেলখানায় এবং অন্য নেতারা নিজ নিজ বাড়িতে পুলিশ কর্তৃক নজরবন্দি।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, তুরস্কের ইজমিরে ইমাম খোমেইনীর নির্বাসন। ইরানী সংবিধানের ১৪ নং ধারা লঙ্ঘন করে এটা করা হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, আইনানুগ বিধান ছাড়া কোন ইরানী নাগরিককে নির্বাসিত করা যাবে না অথবা জোর-জবরদস্তি করে বাড়ি থেকে অন্যত্র বসবাস করার জন্য বহিষ্কার করা যাবে না। ১৯৬২ সাল থেকে ইমাম খোমেইনী বিদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কোমে পুলিশের হাতে নজরবন্দি ছিলেন। কাজেই পরবর্তীকালে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য তিনি কি করে দায়ী হতে পারেন?

আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, তুরস্ক সরকার এ ধরনের এক মহান ধর্মীয় নেতাকে নিজ দেশে গ্রহণ করে তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছে। এ দিকেও আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী আপনারা এ বিষয়ে যথারীতি তদন্ত চালিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা রাখি। তারিখ ১৫ এপ্রিল, ১৯৭৫।

তুরস্ক সরকার চাপের মুখে ইমাম খোমেইনীকে ইরানী শাসকগোষ্ঠীর সহায়তার ইরাকে পাঠিয়ে দেয়। ইরাকী সরকার শর্তাধীনে তাঁকে গ্রহণ করতে রাজি হয়। শর্তগুলো ছিল, ইমাম খোমেইনী কতদিন ইরাকে নির্বাসনে থাকবেন, সে দেশে তাঁর ভবিষ্যৎ কী হবে সে সম্পর্কেও ইরান সরকারের নাক গলাবার কোন অধিকার থাকবে না। তাছাড়া ইরাকে তাঁর কার্যকলাপ সম্পর্কে ইরান কোন  হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

(নিউজলেটার, নভেম্বর ১৯৯১)

হযরত আলী (আ.)-এর বাণী : নাহজুল বালাগা থেকে

হযরত আলী (আ.) বলেন : ‘নিশ্চয়ই মনের কতকগুলো তীব্র চাহিদা বা কামনা রয়েছে। মনের গতি ও অধোগতি রয়েছে। কাজেই মনের চাহিদা ও গতি লক্ষ্য করে তাকে কাজে লাগাও। কারণ, মনকে জোরপূর্বক কর্মে প্রবৃত্ত করলে মন অন্ধ হয়ে যায়।- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৮৪

হযরত আলী (আ.) বলতেন : ‘রাগের অবস্থায় কখন আমি স্বীয় রোষ দমন করব? যখন প্রতিশোধ গ্রহণে অপারগ হই আর আমাকে বলা হয় : ‘যদি ধৈর্যধারণ করতে’, তখন অথবা যখন আমি প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম হই এবং আমাকে বলা হয় : ‘যদি তুমি ক্ষমাশীল হতে’, তখন?’ (অর্থাৎ রোষ বা রাগ দমন করা সর্ব অবস্থায়ই একটি উত্তম কর্ম হিসাবে পরিগণিত, চাই রাগান্বিত ব্যক্তি কোন বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণে অক্ষম হউক কিংবা সক্ষম।) নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৮৫

দুনিয়াকে ভর্ৎসনা করে হযরত আলী (আ.) বলেন : ‘মানুষ হলো দুনিয়ার সন্তান। আর মাকে ভালোবাসে বলেই কাউকে তিরস্কার করা যায় না।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৯৫

হযরত আলী (আ.) বলেন : ‘মিসকিন হলো আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত ব্যক্তি। যে তাকে বঞ্চিত করল, সে যেন আল্লাহ তাআলাকে বঞ্চিত করল। আর যে তাকে কিছু দান করল, সে যেন আল্লাহ তাআলাকেই দান করল।’ (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার বিধান হচ্ছে এই যে, যারা অর্থশালী তারা অবশ্যই দরিদ্র ও সম্পদহীন লোকদের জন্য সম্পদ ব্যয় করে তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করবে। যদি এরূপ করে তাহলে তা যেন আল্লাহকেই দান করা হলো আর তা দিতে অস্বীকার করা মানে আল্লাহকেই কিছু দিতে অস্বীকার করা।)- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৯৬

হযরত আলী (আ.) ব্যভিচার সম্পর্কে বলেছেন : ‘সম্ভ্রমশীল ব্যক্তি কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৯৭

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘মৃত্যুর নির্ধারিত লগ্ন বা সময় মানুষের পাহারাদার হিসাবে যথেষ্ট।’ (অর্থাৎ মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় (আজল) উপস্থিত না হওয়ার পূর্বে কোন ব্যক্তিই মৃত্যুমুখে পতিত হবে না। তাই মৃত্যুর সে সময় বা ক্ষণটিই হচ্ছে তার জীবনের পাহারাদার তুল্য।)- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৯৮

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘আপনজনের বিয়োগ-ব্যথায় শোক করেও মানুষ নিদ্রা যায়। কিন্তু সম্পদ হারালে ঘুমাতে পারে না।’ (অর্থাৎ মানুষের প্রবৃত্তি এই যে, নিজের সন্তান-সন্ততি নিহত বা মৃত্যুবরণ করলেও মানুষ সে ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করে, কিন্তু সম্পদ অপহৃত বা হাতছাড়া হলে সে ধৈর্য রক্ষা করতে পারে না।)- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৯৯

(নিউজলেটার, নভেম্বর ১৯৯১)

ইরানের তেল বহির্ভূত পণ্য রপ্তানি ২৪০০ কোটি ডলার

আমেরিকাসহ পশ্চিমা গোষ্ঠীর অবরোধের পরও  গত আট মাসে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তেলখাত বহির্ভূত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ দুই হাজার চারশ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি বছর ২১ মার্চ থেকে ইরানের নতুন বছর শুরু হয়।ইরানের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আট মাসে দেশটি প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার মূল্যের তেল বহির্ভূত পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করেছে। এর পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৬৮ লাখ ৪৪ হাজার টন।

পাশাপাশি, বহির্বিশ্ব থেকে ১ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার টন ওজনের দুই হাজার ৮২৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে ইরান। রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে ৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার মূল্যের লোহা, ৭২ কোটি ৮০ লাখ ডলার মূল্যের মিথানল বা মিথাইল এ্যালকোহল ও ‌৭১ কোটি ৯০ লাখ ডলার মূল্যের বিটুমিন রয়েছে।গ্যাস ও তেলজাত পণ্যের বাইরে এ তিনটিই হল ইরানের প্রধান রপ্তানি সামগ্রী।

চীন, ইরাক, আরব আমিরাত ও আফগানিস্তান ইরানের তেল বহির্ভূত পণ্যের প্রধান গ্রাহক। প্রতি বছর দেশগুলো ইরান থেকে শত শত কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে থাকে।

রেডিও তেহরান, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

দ্বিতীয় প্রজন্মের এক হাজার সেন্ট্রিফিউজ বসিয়েছে ইরান

ইরান দ্বিতীয় প্রজন্মের আরো এক হাজার সেন্ট্রিফিউজ বসিয়েছে। দেশটির পরমাণু শক্তি সংস্থা-এইওআই’র প্রধান আলী আকবর সালেহি এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নতুন প্রজন্মের সেন্ট্রিফিউজ বসানো হলেও সেগুলোতে ইউএফ-সিক্স গ্যাস প্রবেশ করানো হয়নি। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে জেনেভা চুক্তির কারণে এসব সেন্ট্রিফিউজে গ্যাস প্রবেশ করানো স্থগিত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় প্রজন্মের সেন্ট্রিফিউজের জন্য স্থান ও অবকাঠামো বেশি প্রয়োজন হয়।  এ কারণে দ্বিতীয় প্রজন্মের আর কোন সেন্ট্রিফিউজ বসানো হবে না। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের সেন্ট্রিফিউজ পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। সালেহি বলেন, নতুন প্রজন্মের সেন্ট্রিফিউজ বানানো ইরানের জন্য কঠিন নয়। কারণ দেশটি এরইমধ্যে এ ক্ষেত্রে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেছে। ইরানে বর্তমানে ১৯ হাজার সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে।

গত ২৪ নভেম্বর ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বল্প মেয়াদি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। ওই চুক্তিতে পাশ্চাত্য ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইরানও ছয় মাসের মধ্যে নতুন সেন্ট্রিফিউজ চালু না করতে সম্মত হয়েছে। রাশিয়া,চীন,আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানিকে নিয়ে ছয় জাতিগোষ্ঠী গঠিত। ছয় জাতিগোষ্ঠী ৫+১ গ্রুপ নামেও পরিচিত।

তেহরান রেডিও, ১ জানুয়ারি, ২০১৩

দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তির জন্য একাধিক ভাষার গুরুত্ব

জানুয়ারী ৯, ২০১৪ স্বাস্থ্য সংবাদ ২১৫ বার পঠিত মন্তব্য করুন

যাঁরা অন্তত দুটি ভাষা জানেন, তাঁদের বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতিধ্বংসের প্রবণতা একটিমাত্র ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের চেয়ে কম। সম্প্রতি ভারতের একদল বিজ্ঞানী এক গবেষণার পর এই তথ্য দিয়েছেন। স্মৃতিধ্বংস বা ডিমেনশিয়ার প্রবণতা নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয় ভারতের হায়দরাবাদে, যেখানে বেশির ভাগ লোক একের অধিক ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত। সেখানে তেলেগু, উর্দু, দক্ষিণী এবং ইংরেজি—এই ভাষাগুলো কম-বেশি সবাই জানে। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত দুই ধরনের মানুষের ওপর গবেষণায় দেখা যায়, একাধিক ভাষায় দক্ষ মানুষদের স্মৃতিধ্বংসের প্রবণতা শুরু হচ্ছে গড়ে ৬৫ দশমিক ৬ বছর বয়সে, আর যাঁরা একটি মাত্র ভাষা জানেন, তাঁদের ৬১ দশমিক ১ বছর বয়সে। ভাষা ও নতুন শব্দ শিক্ষা এবং চর্চা মস্তিষ্কের ব্যায়াম ও শ্রম উৎপাদন করে, যা স্মৃতিধারণ ক্ষমতার জন্য ভালো।

ইতিপূর্বে কানাডার অন্টারিওতে একই ধরনের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে বহু ভাষাবিদের অ্যালজেইমারস রোগ হওয়ার প্রবণতা কম। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি নিউরোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

ইউএসএ টুডে।

চিকিতসা বিজ্ঞানে বিশ্বে ১৮তম অবস্থানে ইরান

চিকিতসা সংক্রান্ত জ্ঞান উতপাদনে বিশ্বে ১৮তম অবস্থানে রয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। কয়েকটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বিষয়ক উপ-ব্যবস্থাপক আমির মোহসেন জিয়ায়ি বলেছেন, বিশ্বের ২৩৮টি দেশের মধ্যে ইরান ১৮তম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে চিকিতসা সংক্রান্ত জ্ঞান তথা উঁচু মানের গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে বিশ্বে ইরান ২৩তম স্থান অধিকার করেছিল। তবে ২০০০ সালেও এ ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান ছিল ৫৩। গত কয়েক বছরে ইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে।

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘থমসন রয়টার্সে’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উৎপাদন ও গবেষণায় ইরান বিশ্বে ২০তম স্থান অধিকার করেছে।

ইন্সটিটিউট অব সায়েন্টিফিক ইনফরমেশন- আইএসআই জানিয়েছে, ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে ইরান ৬০,৯৭৯টি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উতপাদনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান সবার শীর্ষে। এছাড়া এর আগে ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ক গবেষণা কাজে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ও বিশ্বে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান।

তেহরান রেডিও, ৬ জানুয়ারি, ২০১৩

মর্দে মুমিন

মুহাম্মাদ ঈসা শাহেদী

মর্দে মুমিন জাগিল আজ ইসলামের ঐ ঝাণ্ডা নিয়ে

মরণ আঘাত হানিছে দেখ শয়তানের ঐ বক্ষে গিয়ে।

উদিল আজ ইসলামেরই সূর্য পুনঃ দুনিয়া জুড়ে,

নয়া জাহেলী অন্ধকারের বক্ষ চিরে তারই নূরে।

নমরূদের ঐ তখত ভাঙলো , ভাঙলো আশা ফেরাউনের

ইব্রাহীমের বজ্র নিনাদ হাঁকছে দেখো বীর ইরানের।

ডাকে আজ মুসলিম জাগো ইরান থেকে বীর খোমেনী,

ক্রেমলিনে শ্বেত প্রাসাদে কাঁপন এলো ঐ যে শুনি।

জাগল আজি দেখ ইরানে ইমাম মেহদীর বীর সেনারা,

ঝড়ের বেগে যায় এগিয়ে নিপাত যাবে দাজ্জালেরা।

রুশ-আমেরিকা ধ্বংস হউক নিপাত যাক ইসরাঈল,

মজলুম যারা, হোক মুক্ত, হাঁকে আজাদ সিংহদিল।

মোরা মুসলিম, মসজিদে আকসায় পড়ব নামাজ বিজয় বেশে,

দলিয়া মথিয়া ইসরাঈল নাপাক যেতে হবে সেই তীর্থ দেশে।

হবে আফগান মুক্ত মুসলিম হাঁকিতে আজান কণ্ঠ মেলে,

হবে খান খান রুশ-ক্রেমলিন বুখারার যাবে দুয়ার খুলে।

জাগে লেবানন ত্যাগী মুসলিম হানে আঘাত ইহুদী বক্ষে,

শহীদের লহুতে জাগে লাখ গাজী, আল্লাহ আছেন শহীদ পক্ষে।

ফিলিস্তিন ফের হবে মুক্ত, ইসরাঈল সে যাবে নিপাত,

মার্কিন তিলিষ্মা হবে নিঃশেষ হয়ে বীরের বুলেট পাত।

জাগো মুসলিম, ধরো অস্ত্র, পরো রণসাজ, যাও এগিয়ে,

দেখো দুশমন শংকায় তোর কাঁপে ঘনঘন যায় পালিয়ে।

তুমি বীর উন্নত তব শির, আল্লাহর আশীস তোমার পরে,

দেখো ঊর্ধ্বে ফেরেশতা গগনে সাজে রণসাজ তোমার তরে।

এক আল্লাহর সৈনিক তুমি, তোমার বক্ষে পাক কুরআন,

মুখে কলেমা হাতে অস্ত্র, তোমার রক্তে মিশা ঈমান।

বাতিলের যত ঝড়ের মোচড় আছড়ে পড়বে তোমার পায়ে,

বাজায় ডংকা মুক্তি আজান মজলুমেরা ঐ তোমায় পেয়ে।

ওহে মুসলিম ওহে রণবীর ওহুদ বদর তবুকের বীর,

আজি কারবালা খুঁজিছে তোমায়, ডাকে কলকলে ফোরাতের তীর।

(রচনাকাল : ১৯৮৪,  পুনর্মুদ্রিত)

(নিউজলেটার, সেপ্টেম্বর ১৯৯১)

ইসলামী ঐক্য ও ইমাম খোমেইনী

ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব এই যে, তিনি মুসলমানদের ঐক্য সাধনে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছেন। মুসলমানদের মাঝে সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদিবাদের গড়া বিভেদপ্রাচীর চুরমার করে তিনি আরব-অনারব, শিয়া-সুন্নি ইত্যাদি নামে বিভক্ত মুসলিম জাতিকে ঐক্যের দিশা দিয়েছেন। ইসলাম ও মানবতার স্বার্থে ইমাম সর্বদাই বিতর্কিত বিষয়কে পরিহার করতেন। তাই তাঁর বাণীতে শোনা যেত, শুধু মুসলমানদেরকেই নয়, বরং প্রতিটি আল্লাহ-বিশ্বাসী মানুষকে শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান। মুসলমানদের সাধারণ স্বার্থে সকলকে উজ্জীবিত করা এবং অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করা- এটাই ছিল ইমাম খোমেইনীর জীবনের বৈশিষ্ট্য।

এ দৃষ্টিতে ইমামের নিম্নোক্ত বাণীগুলো অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য : ‘…আমি সবাইকে বলছি : একটা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো, সুন্নি-শিয়া, আরব-অনারব, তুর্কি-অতুর্কি কেউ কারো ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে শুধু ন্যায়পরায়ণতা ও খোদাভীতির (তাকওয়া) কারণে। খোদাভীরু ও সৎ স্বভাবসম্পন্ন লোকেরা রাষ্ট্রে ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত থাকলে সকল সুবিধাবাদ ও কায়েমী স্বার্থ নির্মূল হতে বাধ্য। কেউ কারো চেয়ে বড় নয়। সবাইকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। ইসলাম তাদেরকে সম্মান দিয়েছে। ইসলাম সকল শ্রেণি ও গোত্রকে মর্যাদা দিয়েছে। কুর্দিসহ অন্যান্য ভাষাভাষী সকলেই আমাদের ভাই। আমরা তাদের সাথে আছি এবং তারাও আমাদের সাথে রয়েছে। আমরা সকলে একই ঈমানের সূত্রে বাঁধা একজাতি।’ (ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত বাণী : ৩-৪-৭৯ ইং)

মুসলমানদের এক সম্প্রদায় শিয়া এবং অপর এক সম্প্রদায় সুন্নি নামে পরিচিত। এছাড়া হানাফী, হাম্বলী ইত্যাদি নামেও মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায় দেখা যায়। গোড়া থেকেই এভাবে মুসলমানদের বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত করা ঠিক হয়নি। যে জাতির (উম্মাহ) প্রতিটি মানুষই ইসলামের খেদমত করতে চায় এবং সকলেই যেখানে ইসলামের অনুসারী, সেক্ষেত্রে মুসলিম জাতিকে বিভক্ত করার কোন পরিকল্পনাই গ্রহণ করা উচিত নয়। আমরা সকলে ভাই ভাই এবং সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি। এটা ঠিক যে, আপনাদের আলেম সমাজ কোন কোন বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছেন, আপনারা সে ফতোয়া জেনে নিয়েছেন এবং হানাফী (ইমাম আবু হানিফার অনুসারী) হয়েছেন। অন্যেরা ইমাম শাফেয়ীকে মেনে চলেছেন, আবার কেউ কেউ হযরত ইমাম জাফর আস-সাদিকের ফিকাহ অনুসরণ করে শিয়া মতাবলম্বী হয়েছেন। এসব কিছু আসলে কোন বিরোধের প্রমাণ নয়। আমাদের অবশ্যই একে অপরের সাথে কোন বিরোধ বা বৈপরীত্য থাকা উচিত নয়। আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের ভাই। শিয়া ও সুন্নি মুসলিম ভাইদেরকে অবশ্যই পারস্পরিক বিরোধিতা ও মতদ্বৈধতা পরিহার করতে হবে। শুধু শিয়া মতবাদের অবিশ্বাসীদের সাথেই নয়; বরং যারা হানাফী মাযহাব বা অন্য কোন মাযহাব মানতে অস্বীকার করে, এমন ধরনের সকল লোকের সাথেই বর্তমানে আমাদের মতবিরোধ রয়েছে। এসব লোক এপথেও চলতে চায় না বা অন্য কোন পথে যেতেও রাজি নয়। তারা আমাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের অবশ্যই হুঁশিয়ার থাকতে হবে। কারণ, আমরা সবাই মুসলমান, আল-কুরআনের অনুসারী, তাওহীদের অনুসারী। পবিত্র কুরআন ও তাওহীদের জন্য আমাদের অবশ্যই কাজ করে যেতে হবে এবং সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে।’ (কুর্দিস্তানের নওশাদ থেকে আগত একটি মুসলিম প্রতিনিধিদলের প্রতি)।

ঐক্য হচ্ছে এমন একটি আদর্শ যার দিকে পবিত্র কুরআন মানুষকে নির্দেশনা দিয়েছে এবং মহান ইমামগণও মুসলিমদের ঐক্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মূলত ইসলামের প্রতি আহ্বান মানেই হচ্ছে ঐক্যের প্রতি আহ্বান, জনগণকে ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান। আপনারা জানেন যে, তারা (ইসলামের দুশমনরা) এ ধরনের ঐক্যকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলোতে তারা কঠোরভাবে চেষ্টা করেছে যাতে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য ও বিরোধের আগুন প্রজ্বলিত হয়, কেননা, তাদের বিশেষজ্ঞগণ বুঝতে পেরেছে যে, যদি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ সংহত ও ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে কোন শক্তিই তাদের মোকাবিলা করতে ও তাদের ওপর শাসন চালাতে সক্ষম হবে না। তাই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য তাদের সামনে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে বিভিন্ন ইসলামী দল ও গোষ্ঠীর মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করা।’ (গিলান প্রদেশ ও রাস্ত শহরের জুমআর ইমামদের উদ্দেশে প্রেরিত বাণী থেকে)

‘…ইসলাম আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্ত জাতি- তা আরব হোক, তুর্কি, ইরানী বা যা-ই হোক না কেন, সবাইকে নিয়ে দুনিয়ার এক মহান সম্প্রদায় গড়ে তোলা যার নাম মুসলিম উম্মাহ। তাদের সংখ্যা-শক্তির কারণে ইসলামী কেন্দ্র ও সরকারসমূহ এবং মুসলিম দেশসমূহে তাদের সেবাদাসরা মুসলিম জনগণকে বিভক্ত করার ও তাদের প্রতি মহান আল্লাহর নির্দেশিত ভ্রাতৃত্বকে বিনষ্ট করার পরিকল্পনা করে আসছে। এ সমস্ত পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে তুর্কি জাতি, কুর্দি জাতি, আরব জাতি ও ইরানী জাতি প্রতিষ্ঠার ছদ্মাবরণে প্রকৃতপক্ষে মুসলিম জাতিকে বিভক্ত করা। তারা মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করছে যা মূলত ইসলাম ও মহান গ্রন্থ কুরআন নির্দেশিত পথের সম্পূর্ণ বিপরীত। সমস্ত মুসলমানই ভাই ভাই ও সমান এবং কেউই একে অন্য থেকে পৃথক নয়। সমস্ত মুসলমানকেই ইসলাম ও তাওহীদের পতাকাতলে সংঘবদ্ধ হতে হবে।’ (খুজিস্তান প্রদেশের আরব গোত্রপ্রধানদের উদ্দেশে বাণী)

‘…ইসলামের অভ্যুদয়ের পর থেকেই মুসলিম পণ্ডিত ও চিন্তাবিদগণ মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালিয়ে আসছেন যাতে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। একজন মুসলমান তিনি যেখানেই বসবাস করুন না কেন, তাঁর উচিত অন্য মুসলমানদের সাথে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি করা। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ মানুষকে সেই পথে ধাবিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) এবং ইমামগণ (আ.)ও এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এসব নির্দেশ ও উপদেশের প্রেক্ষিতে সচেতন আলেমগণ মুসলমানদেরকে তাওহীদ ও ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’ (পাকিস্তানী অভ্যাগতদের উদ্দেশে প্রদত্ত বক্তব্য থেকে, ৭-১১-৮১ ইং)

‘…প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিশ্বশোষকদের জন্য প্রধান ভীতির কারণ হচ্ছে ইসলাম। কেননা, ইসলামই হচ্ছে এমন শক্তি যা দুনিয়ার মুসলমানদেরকে তাওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম। ইসলামই পারে মুসলিম দেশসমূহ ও দুনিয়ার বঞ্চিত মানুষের ওপর থেকে বিশ্বঅপরাধীদের হস্তকে ধ্বংস করতে। ইসলামই পারে বর্তমান পৃথিবীর সামনে এক ঐশী প্রগতিশীল ও উচ্চতর চিন্তাধারা  ও ব্যবস্থা উপস্থাপন করতে।’ (হজযাত্রীদের প্রতি প্রদত্ত বাণী, ৬-৯-৮১)

‘…আমাদের বিরোধীরা মযলুম জনগণের মধ্যে, ইসলামী বা অনৈসলামী দেশ যাই হোক না কেন, অনৈক্যের বীজ ছড়ানোর চেষ্টা করছে এবং তারা চায় মুসলিম জাতিসমূহকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে। এজন্যই তাদের মুসলিম নামধারী মুখপাত্ররা, যারা প্রকৃতপক্ষে ইহুদিবাদের সঙ্গে গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ তারা চেষ্টা চালাচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করতে। এসব হচ্ছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও কৌশল, যা পরাশক্তিবর্গ উদ্ভাবন করছে যাতে মুসলিম দেশগুলোতে তাদের সেবাদাসরা তা প্রয়োগ করতে পারে।’ (দেশ গড়ার অভিযানের সদস্যগণের উদ্দেশে প্রদত্ত বাণী)

‘… মুসলমানদের মধ্যে যেসব বিরোধ ও জটিলতা রয়েছে সেগুলোরে উৎস সম্পর্কে আমরা স্বীকার করি যে, এসব ব্যাপারে গোপন হাত রয়েছে। শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে কাফের ও মুশরিকদের মোকাবিলায় যে পরিমাণ ঐক্য থাকা প্রয়োজন তা নেই। এ সমস্ত হাত এখনও সক্রিয় রয়েছে। কেননা, এখনও অনেক বিরোধ পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ ও অন্যান্য অঞ্চলে বিরাজমান। একথা স্পষ্ট যে, এসব বিরোধও মুসলমানদের দুর্বল করছে এবং আধিপত্যবাদীদেরকে শক্তিশালী করছে। আমরা আশা করি, তাঁরা (ঐ সমস্ত দেশের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ) তাঁদের নিজ নিজ দেশে ও পার্শ্ববতী সরকারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ দূর করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালাবেন যাতে মুসলমানরা কাফের ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।

বিশ্বজোড়া যালেম সম্প্রদায় চায় ইসলামকে ধ্বংস করতে যাতে আমাদের ইসলামী গুণাবলি বিনষ্ট হয়ে যায়। এখন আমাদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করা উচিত নয়, যেখানে মুসলমানদেরকে কাফের, মুশরিক ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হচ্ছে। যদি একশকোটি মুসলমান তাদের বিরাট এলাকাসহ রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয় এবং একই ফ্রণ্টে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে উপনিবেশবাদীর পক্ষেও নিশ্চিতভাবে কোন মুসলিম দেশ আক্রমণ করা সম্ভব নয়।’ (বাংলাদেশী কয়েকজন মুসলিম নেতার উদ্দেশে বাণী, ১-৯-৮২ ইং)

ইসলামী দেশসমূহে যেসব নাপাক লোকজন শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, তারা শিয়াও নয়, সুন্নিও নয়; বরং তারা হলো সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল, যারা ইসলামী দেশসমূহকে আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিতে চায়।

(নিউজলেটার, সেপ্টেম্বর ১৯৯১)

হযরত আলী (আ.)-এর বাণী- নাহজুল বালাগা থেকে

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘দুনিয়াতে দু’ধরনের কার্য স¤পাদনকারী মানুষ রয়েছে : এক শ্রেণির মানুষ দুনিয়া হাসিল করার জন্য দুনিয়াতে কাজ করে। তাদেরকে দুনিয়ার ভাবনা আখিরাতের বিষয়ে গাফেল করে ফেলেছে। এরা পরবর্তী সন্তান-সন্ততির দরিদ্র হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কাগ্রস্ত। নিজের ক্ষতি সাধন করে এরা পরবর্তীগণকে নিরাপদ করে। ফলে এরা অন্যের স্বার্থে নিজের জীবন নিঃশেষ করে দেয়। আর অন্য এক প্রকার কার্য সম্পাদনকারী দুনিয়াতে থেকে পরকালের জন্য কাজ করে। এদের নিকট কর্ম প্রেরণা ছাড়াই দুনিয়ার যেটুকু এদের জন্য নির্ধারিত তা পৌঁছে যায়। ফলে এরা এক সঙ্গে দুটি হিস্যা পেয়ে যায়। আর ইহ ও পরকালের মালিক হয়ে যায়। এরা আল্লাহ তাআলার নিকট সম্মান পায়। এরা আল্লাহর নিকট যে কোন প্রয়োজনের জন্য কিছু চাইলে তিনি তা অবশ্যই পূরণ করে দেন।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৬১

এরূপ বর্ণিত আছে যে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাবের আমলে কাবা গৃহে সঞ্চিত মালামাল (অলংকারাদি) অধিক হয়েছে বলে তাঁর নিকট আলোচনা করা হয়। কিছুসংখ্যক  লোক হযরত উমরকে বলে : ‘এ মালামাল নিয়ে যদি আপনি মুসলমানদের সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন তাহলে অধিক পুণ্যের কাজ হবে। অলংকার দিয়ে কাবা ঘর কি করবে?’ তখন হযরত উমর তা-ই করতে ইচ্ছা করেন। আর এ ব্যাপারে হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-কে তিনি জিজ্ঞাসা করেন। আমীরুল মুমিনীন তাঁকে বলেন : ‘নবী করিম (সা.)-এর প্রতি কুরআন নাযিল হওয়ার কালে চার প্রকার মাল ছিল : (১) মুসলমানদের ব্যক্তিগত মাল; তা তিনি ওয়ারিসগণের মাঝে ফারায়েযের (উত্তরাধিকার) আইন মোতাবেক বণ্টন করেছেন। (২) যুদ্ধলব্ধ মালামাল। এ মাল তিনি প্রাপকগণের মধ্যে বিতরণ করেছেন। (৩) যুদ্ধলব্ধ মালামালের পঞ্চমাংশ। আল্লাহ এ মাল যে খাতের জন্য রেখেছেন তিনি সে খাতেই তা ব্যয় করেছেন। (৪) সাদাকাত। আল্লাহ সাদাকাতকে যে খাতে রাখার ইচ্ছা করেছেন সে খাতেই রেখেছেন। তখনও কাবাগৃহে অলংকার মজুদ ছিল। আল্লাহ তাআলা এ সম্পদ যথা অবস্থায় রেখেছেন। তিনি ভুল করে এরূপ করেননি। আর আল্লাহর জন্য কোন স্থানই অজানা থাকে না। তাই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যে অবস্থায় এই মাল রেখেছেন আপনিও তা-ই করুন।’ তখন হযরত উমর বললেন : ‘আপনার উপস্থিতি না হলে আমরা লজ্জা পেয়ে যেতাম।’ অতঃপর তিনি এই মালামাল পূর্বাবস্থায় রেখে দেন।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৬২

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘যুদ্ধের এ পিচ্ছিল অবস্থানে আমার পদযুগল টিকে গেলে বহু (বিকৃত) বিষয় আমি পরিবর্তন করে ফেলব।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৬৬

হযরত আলী (আ.) আত্মপ্রীতির অনিষ্ট সম্পর্কে বলেছেন : ‘নিজেকে উত্তম বলে ধারণা করলে অগ্রগতি ব্যাহত হয়।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৫৮

দুনিয়া এবং দুনিয়াবাসীদের মায়ামমতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে না যাওয়ার জন্য হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘পরলোক গমনের নির্দেশ অতীব নিকটে। আর বন্ধু-বান্ধবের সাহচর্য হচ্ছে ক্ষণিকের ব্যাপার।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৫৯

হযরত আলী (আ.) আরও বলেছেন : ‘চক্ষুষ্মান ব্যক্তির জন্য ঊষা আলোকময়।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৬০

(অর্থাৎ একজন চক্ষুষ্মান জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট সত্যিকারের দীন এবং সঠিক পথ দিবালোকের মতো উজ্জ্বল এবং সে কখনো অন্ধের মতো সে ব্যাপারে সন্দিগ্ধ ও কপটাচারী হবে না)

হযরত আলী (আ.) আরো বলেছেন : ‘লোকেরা যে বিষয়ে জানে না অর্থাৎ অবগত নয়, তার প্রতি বৈরীভাব পোষণ করে থাকে।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৬৩

(অর্থাৎ সাধারণত কোন জিনিস যদি লোকদের হস্তগত না হয় তাহলে তারা তা অস্বীকার করে থাকে)।

হযরত আলী (আ.) আরো বলেছেন : ‘সত্যের (হক) পরিচয় লাভের পর সে বিষয়ে আমার সন্দেহ সৃষ্টি হয়নি।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৭৫

(অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়সমূহ ও শাখা-প্রশাখার ক্ষেত্রে জ্ঞান লাভের পর সে বিষয়ে আমার আর কোন সংশয় সৃষ্টি হয়নি।)

(নিউজলেটার, সেপ্টেম্বর ১৯৯১)

ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর দুটি বাণী

ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আস-সাদিক (আ.) বলেছেন : ‘যার মধ্যে পাঁচটি পর্যায় রয়েছে সে সর্বোত্তম ব্যক্তি : ভালো কিছু করে আনন্দ পাওয়া, খারাপ কিছু করলে কষ্ট পাওয়া, আল্লাহর তরফ থেকে কিছু পেয়ে কৃতজ্ঞ হওয়া, আল্লাহর পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করা এবং অন্যায় বা ভুল করে ক্ষমা প্রার্থনা করা।’

‘খাঁটি ঈমানদার উত্তেজিত হয়ে তাকাওয়ার সীমা লঙ্ঘন করে না, কারো স্বার্থে বা অনুকূলে অন্যায় কিছু করে না এবং ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিজের প্রাপ্য অংশের বেশি নেয় না।’

(নিউজলেটার, সেপ্টেম্বর ১৯৯১)