All posts by dreamboy

সাঁতার

 

শিশু-কিশোরদের জন্য সুস্থ, স্বাস্থ্যবান ও সক্রিয় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সাঁতার কাটা হলো শিশুদের সুস্থ ও সক্রিয় থাকার একটি চমৎকার উপায়। চার বছর বয়সেই শিশুরা সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিতে পারে। সাঁতার এমন একটি উত্তম ব্যায়াম ও ক্রীড়া যা থেকে মানুষ আজীবন উপকৃত হতে পারে। সকল বয়সের লোক সাঁতারের উপকারিতা লাভ করতে পারেন। সাঁতার এমন একটি খেলা যেটা তুমি খুবই অল্প বয়স থেকে শুরু করে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পার। অন্যান্য খেলাধুলার চেয়ে সাঁতারে আঘাত প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। আর শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য এটি একটি চমৎকার খেলা। এটি তোমার স্টেমিনা, শরীরের নমনীয়তা ও ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
তা হলে কেন সাঁতারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে পানিতে নামছ না ? এখনও সাঁতারের উপকারিতাগুলো পাওয়ার জন্য খুব বেশি দেরি হয়ে যায় নি। সাঁতার তোমার শরীরের জন্য যেমন উপকারী, ঠিক তেমনি তোমার মনের জন্যও উপকারী। এটি সত্যিই একটি উপযুক্ত খেলা। নিচে এ খেলার ১০টি অসাধারণ উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হলো :
১. সামাজিক হয়ে গড়ে ওঠা
সাঁতারকে খুব বেশি মাত্রায় সামাজিক খেলা বলা যেতে পারে। সকল বয়সের সাঁতারু এক সাথে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেন, একই সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণ অথবা সুইমিং পুলে একজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সাঁতার শিখতে পারেন। যদি তোমার বাড়িতে কোন সুইমিং পুল থাকে, তা হলে সেখানেও তুমি তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সাথে একত্রিত হতে পার। একটি গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্যায়াম এবং এ রকম সামাজিক মিলন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, যারা এ ধরনের খেলাধুলার সাথে জড়িত তারা তাদের অন্যান্য সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবের তুলনায় মানসিকভাবে প্রফুল্ল ও নিরুদ্বিগ্ন থাকে।
২. লক্ষ্যের পানে ধাবিত হওয়ার শিক্ষা
সাঁতারুরা তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাদারী জীবনে লক্ষ্য অর্জনের দিকে বেশি ঝোঁকপ্রবণ হয়ে থাকে। সাঁতার সকল বয়সের মানুষকে লক্ষ্যপানে চলার ব্যাপারে প্রেরণা যোগায়। টাইমিংয়ের উন্নতির জন্য পুলের কিকবোর্ডে কিক করা অথবা কোন আঘাত থেকে সেরে ওঠার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনে সাঁতার অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। সাঁতারুরা সুইমিং পুলে যে কৌশল ও দক্ষতা শিক্ষা লাভ করে তা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাকে দারুনভাবে সহযোগিতা করে।
৩. সক্রিয় কর্মী হয়ে গড়ে ওঠা
সাঁতার শিশু-কিশোরদের স্থূলতা মোকাবিলায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং এটি তাদের জন্য একটি আনন্দদায়ক খেলাও বটে। শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যে তিনটি শারীরিক কর্মকা-ের উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে অর্থাৎ সহ্যক্ষমতা, শক্তি এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি, তার সবই সাঁতারে রয়েছে। সাঁতার শিশু-কিশোরদেরকে দক্ষ এবং স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে উঠতে উদ্দীপনা যোগায়।
৪. আরো বেশি স্মার্ট করে তোলা
প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করা, যেমন সাঁতার কাটা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রিয়া ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি শুধু শ্রেণিকক্ষ বা কাজের ক্ষেত্রে নয়, এটি বয়স বৃদ্ধির পরও উপকারী। সাঁতার উদ্বিগ্নতা এবং দুশ্চিন্তা দূরীকরণে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের যথার্থভাবে চিন্তা করার সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়।
৫. দল গঠনের দক্ষতা শিক্ষা
সাঁতার এমন একটি খেলা যেখানে দল গঠনের দক্ষতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। সাঁতারুরা একত্রে কাজ করতে শেখে, একে অপরকে সাহস যোগাতে, পরস্পরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে শেখে এবং এভাবে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার দক্ষতা অর্জন করে। বয়োপ্রাপ্ত হলে এ সকল দক্ষতা একজন কার্যকরী নেতা হতে সাহায্য করে। দল গঠনের দক্ষতা সহযোগিতা বৃদ্ধি, লক্ষ্য অর্জনের দিকে ঝোঁক, উদ্দীপনা, কৌশলগত উন্নয়ন ও সমন্বয় সাধনে উদ্বুদ্ধ করে যা সফল পেশা এবং পেশাদারী সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
৬. জগিং এর তুলনায় বেশি ক্যালোরি ব্যয়
যখন তুমি সাঁতারের সাথে দৌড়ানোর তুলনা করবে, তখন দেখতে পাবে যে, তুমি সাঁতারের সময় পুলের প্রতি পাকে এক ঘণ্টা দৌড়ানোর তুলনায় বেশি ক্যালরি ব্যয় করছ। সবলে এক ঘণ্টা পুকুরে সাঁতার কাটলে ৭১৫ ক্যালরি খরচ হয়। একই পরিমাণ সময় ঘণ্টায় ৫ মাইল বেগে দৌড়ালে ৬০৬ ক্যালরি খরচ হয়।
৭. বার্ধক্যের আগমন হয় বিলম্বিত
এমন কোন গোপন ঔষধ নেই যার মাধ্যমে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যাবে, কিন্তু সুইমিং পুল হলো যৌবনের ঝরনাস্বরূপ। নিয়মিত সাঁতার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাংসের ঘনত্ব বৃদ্ধি, ব্রেনে অক্সিজেন ও রক্ত চলাচল সহজকরণ এবং হৃদপি- ও রক্তনালি সংক্রান্ত অন্ত্রসমূহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বার্ধক্যের আগমনকে বিলম্বিত করে। সাঁতারের মাধ্যমে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। বয়স্ক ব্যক্তি যারা বাতের ব্যথায় আক্রান্ত তারা পুকুরে সাঁতারের মাধ্যমে নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে পারেন ও অস্থিসন্ধির জ্বালাপোড়া বা ব্যথা কমাতে পারেন। সর্বোপরি, এই খেলা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৮. হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে উত্তম একটি ব্যায়াম
যাদের ফুসফুসের জটিল সমস্যা, যেমন হাঁপানি আছে, তাদের জন্য সাঁতার উত্তম ও কার্যকরী ক্রীড়া। হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বিশেষ করে খেলার সময় তাদের হাঁপানি শুরু হয়। তারা সমস্যায় পড়ে এজন্য যে, এসময়ে শ্বাসনালি তাপ ও আর্দ্রতা হারানোর ফলে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। আর এটি তখনই ঘটে যখন বাতাস আর্দ্র বা ঠা-া থাকে সে সময়। সাঁতার হাঁপানি রোগীদের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা। কারণ, যে আর্দ্রতা শরীর থেকে বের হয়ে যায় তা পানির আর্দ্রতায় মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়।
৯. আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা
সাঁতার আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার একটি খেলা। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিন বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছে যে, তরুণ সাঁতারুরা তাদের অসাঁতারু বন্ধুদের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়। এটি প্রতিযোগী ও অপ্রতিযোগী উভয় ধরনের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই সত্য। সাঁতার পুলের ভেতরে বা উন্মুক্ত পানিতে যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, তেমনি স্থলেও আত্মবিশ্বাস জোগায়।
১০. স্বল্প উপকরণের খেলা
সাঁতার পৃথিবীর সর্বোত্তম খেলাগুলোর অন্যতম এবং এ খেলার জন্য খুব কম জিনিসের প্রয়োজন হয়। তুমি শুধু একটি সাঁতারের পোশাক ও একটি গগল্স নিয়েই সাঁতার কাটতে পারবে।
প্রকৃতপক্ষে সাঁতারের মাধ্যমে তুমি অনেক ধরনের উপকারিতা লাভ করতে পার। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাঁতার কাটা শুরু কর। পানিতে ঝাঁপিয়ে পড় এবং এর মজা উপভোগ কর। তোমার জীবন, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার অনেক কিছুই এর ওপর নির্ভর করছে।

অনুবাদ : সরকার ওয়াসি আহম্মেদ

কথার মূল্য মাহদী অযার ইয়াযদী

অনুবাদ : কামাল মাহমুদ –
সে অনেক দিন আগের কথা। সুলতান মাহমুদ একদিন তার অমাত্য, ভৃত্য, সেনাপতি ও সৈন্যদের নিয়ে মরুভূমিতে শিকারে বের হলেন। টিলার পাশে সবুজ গাছ-গাছালি বেষ্টিত একটি খোলা জায়গা দেখতে পেলেন এবং সেখানে বিশ্রামের জন্য মনস্থির করলেন। ভৃত্যরা দুপুরের খাবার প্রস্তুতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সৈন্যরা চারদিকে পাহারা দিতে লাগলো। অমাত্যগণ সুলতানের নির্দেশে আশেপাশে শিকারে বের হলেন। স্বয়ং সুলতান মাহমুদও ঘোড়ার পিঠে চড়ে সঙ্গীদের সাথে শিকারে বের হলেন।
তিনি একটি টিলার কাছে পৌঁছতেই এক বৃদ্ধ লোকের মুখোমুখি হলেন যাঁর পেশা হলো আগাছা পরিষ্কার করা ও জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা। তিনি জ্বালানি কাঠ একত্র করে আঁটি বেঁধে মাথায় তোলার চেষ্টা করছিলেন; কিন্তু উঠাতে পারছিলেন না। এভাবে জ্বালানি কাঠ মাথায় উঠানোর চেষ্টা করতে করতে তিনি অসহায় বোধ করছিলেন। সুলতান মাহমুদ তাঁর সামনে গিয়ে বললেন : ‘আপনি চাইলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।’
বৃদ্ধ ব্যক্তি বললেন : ‘এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে যে, এতে আমার বোঝা বহন করা সম্ভব হবে আর আপনারও সওয়াব হবে। আর এতে আপনার কোন ক্ষতি নেই। এখানে তো আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না যে আমাকে সাহায্য করতে পারে। আপনি শক্ত-সামর্থ্যবান যুবক। আপনার দ্বারা এমন ভালো কাজ করা অসম্ভব কিছু নয়।’
সুলতান মাহমুদ ঘোড়া থেকে নেমে বৃদ্ধ লোকটির বোঝা বহনে সাহায্য করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন : ‘এই মরুভূমিতে একা একা এত কষ্ট করে কাজ করছেন কেন?’
বৃদ্ধ লোকটি বললেন : ‘হ্যাঁ। আমার তো আর কেউ নেই।’
সুলতান মাহমুদ বললেন : ‘তা হলে এর আগে কিভাবে এই ভারী বোঝা বহন ও উত্তোলন করেছেন যেটা এখন পারছেন না?’
বৃদ্ধ লোকটি জবাব দিলেন : ‘আমি প্রতিদিনই এই কাজ করি। প্রথমে চিন্তা করেছিলাম এই জ¦ালানিগুলোকে টিলার উপরে জমা করবো এবং বাঁধবো। এরপর টিলার পাদদেশে নিচু হয়ে ধাক্কা দিয়ে মাথায় তুলে নেবো; কিন্তু এখানে পাথরে পা ফসকে বোঝাটা নিচে পড়ে গেছে; তাই আর তুলতে পারছি না।’
সুলতান মাহমুদ বললেন : ‘ঠিক আছে। সব কাজই এরকম। প্রথমে মানুষ হিসাব করে একরকম, কিন্তু পরে পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে সে হিসাব পাল্টে যায়।’
বৃদ্ধ লোকটি এবার বললেন : ‘পরিস্থিতির চিন্তা সবাই করে, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা জানি না। হয়ত এখানে আপনার কাছে একটা সুযোগ এসেছে সাহায্যের মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করার। অসহায় মানুষের সাহায্য করা খুবই সওয়াবের কাজ।’
সুলতান বললেন : ‘তাই নাকি! আপনার চিন্তা-বিশ্বাস তো খুবই ভালো।’
বৃদ্ধ লোকটি বললেন : ‘আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আপনি যদি সময় মতো না পৌঁছতেন তা হলে আমার বোঝা বহন করা মুশকিল হয়ে যেতো। হে যুবক! খোদা আপনাকে সৌভাগ্যবান করুন।’
বৃদ্ধের কথায় সুলতান মাহমুদ খুশি হলেন। বৃদ্ধ লোকটি যখন তাঁর গাধা নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলেন তখন সুলতান মাহমুদ তাঁর সাথে আরো কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করতে মনস্থির করলেন। তিনি তাঁর তাঁবুর পাশের সৈন্যদের বললেন : ‘একজন বৃদ্ধ লোক বোঝা ও গাধা নিয়ে ঐদিকে যাচ্ছেন। সবদিক থেকে তাঁর পথ রুদ্ধ করে দেবে যাতে তিনি এ দিক দিয়ে অর্থাৎ আমার সামনে দিয়ে যেতে বাধ্য হন।’
সৈন্যরা গিয়ে তাঁর সবগুলো পথ আগলে রাখলো। বৃদ্ধ লোকটি সৈন্যদের এর কারণ জিজ্ঞেস করলে একজন সৈন্য বললো : ‘এ দিক দিয়ে যাওয়া যাবে না, রাস্তা বন্ধ। আপনি অন্য রাস্তা দিয়ে যান।’
বৃদ্ধ লোকটি তার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে অন্য পথ ধরলেন। কিছুদূর যাবার পর একজন সৈন্য তাঁর সামনে এসে বললো : ‘এ রাস্তায় যাওয়া যাবে না। এদিকে যাওয়া নিষেধ।’ বৃদ্ধ লোকটি পথ বদল করলেন। একটু পথ যেতেই আবার আর একজন সৈন্য একই কথা বললো।
বৃদ্ধ লোকটি বিরক্ত হয়ে বললেন : ‘আজকে এমন কী হলো যে, সব রাস্তাই বন্ধ। তা হলে আমি কোন দিক দিয়ে যাবো?’
সর্বশেষ যার সাথে কথা বলেছিলেন সেই সৈন্য সুলতান মাহমুদের তাঁবুর দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললো : ‘ঐ দিক খোলা আছে। ঐ দিক দিয়ে যান। আপনি তো শহরের দিকে যেতে চান। ঐ দিক দিয়ে দ্রুত শহরে পৌঁছে যাবেন।’
বৃদ্ধ লোকটি বিড়বিড় করে বললেন : ‘আমাকে দূরের পথ দেখিয়ে দিয়ে বলে কি না দ্রুত পৌঁছে যাবেন! ঠিক আছে হয়ত দ্রুতই পৌঁছবো, কী জানি বাপু!’
বৃদ্ধ লোকটি সৈন্যের দেখানো পথে তাঁর গাধা হাঁকিয়ে যেতেই একটু দূরে এমন একজনকে দেখতে পেলেন যাকে তিনি পূর্ব থেকেই চিনতেন। যেহেতু তাঁর কাছে কোন কাজ নেই তাই তার সাথে কথা না বলেই চলে যেতে উদ্যত হলেন এবং নিরুপায় হয়ে সুলতান মাহমুদের তাঁবুর সামনে দিয়ে যেতে লাগলেন। বৃদ্ধ লোকটি চিন্তা করলেনÑ ‘সৈন্যরা এতই অত্যাচারী যে আমার এই দুর্বল গাধাটিকে নিয়ে এই শক্তিশালী ঘোড়াগুলোর মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য করলো!’
একটু সামনে আসতেই সুলতান মাহমুদের সামনে এসে পৌঁছলেন এবং একটু ভয় পেয়ে গেলেন; কিন্তু আর তো কোন উপায় ছিলো না। এছাড়া আর কোন রাস্তা তো তাঁর জন্য খোলা ছিলো না। বাধ্য হয়ে সুলতান মাহমুদের তাঁবুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সুলতানকে তাঁবুর কাছে একটি ছাতার নিচে চেয়ারে বসে থাকতে দেখলেন। সুলতানকে দেখে তিনি চিনতে পারলেন এবং বুঝতে পারলেন তিনিই তাঁকে বোঝা তোলার ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন। তিনি আর কেউ নন, সুলতান মাহমুদ নিজেই। মনে মনে বললেনÑ ‘আমি তাঁকে কষ্ট দিয়েছি।’ তাই তিনি লজ্জিত হয়ে কাঁচুমাচু হয়ে সুলতান মাহমুদের কাছে গেলেন। সুলতান মাহমুদের কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলেন। লজ্জায় তাঁর দিকে তাকাতে পারছিলেন না। তাই আবার আস্তে করে তাঁর গাধার দিকে ফিরে যেতে উদ্যত হলেন।
সুলতান মাহমুদ সালামের জবাব দিয়ে বললেন : ‘হে সম্মানিত ব্যক্তি! মরুভূমিতে আপনি কী করেন?’
জ্বালানি কাঠ সংগ্রহকারী বৃদ্ধ লোকটি বললেন : ‘আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত করুন। আপনি নিজেই তো জানেন যে, আমি মরুভূমিতে কী করি? আমি কপর্দকহীন বৃদ্ধ মানুষ। মরুভূমিতে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে আঁটি বেঁধে তা নিয়ে শহরে বিক্রি করি। এভাবে জীবনযাপন করে খোদার শুকরিয়া আদায় করি।’
সুলতান বললেন : ‘আপনি বোঝা বহন করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করবেন কেন, এখানেই বিক্রি করবেন কি?’
বৃদ্ধ লোকটি জবাব দিলেন : ‘কেন বিক্রি করবো না; কিন্তু ক্রেতা কোথায়?’ বৃদ্ধ লোকটি নিজে নিজে চিন্তা করলেনÑ ‘নিশ্চয়ই সুলতান এ জ্বালানি কিনবেন। তাঁর কেনার সামর্থ্য এবং অর্থ দুটিই আছে। তিনি ওখানে আমাকে সাহায্য করেছেন, আর এখানে আমার সময় নষ্ট করে আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।’
সুলতান বললেন : ‘আপনি বিক্রি করলে আমি আপনার জ্বালানি কাঠ কিনতে পারি।’
বৃদ্ধ লোকটি বললেন : ‘আমি জানি যে, এখানে জ্বালানি কাঠ আপনার কোন কাজে আসবে না। তারপরও যদি আপনি নিতে চান, আমি আপনার জন্য এগুলো উৎসর্গ করতে চাই।’
সুলতান বললেন : ‘আমি কিনতে চাই। এবার দাম বলে মূল্য নিয়ে নিন।’
বৃদ্ধ লোকটি বললেন : ‘বেশ তো। এর দাম এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা।’
সেখানে উপস্থিত একজন সেনা কমান্ডার বৃদ্ধের কথার জবাবে বললেন: ‘হাজার স্বর্ণমুদ্রা! এই মরুভূমিতে কি এই কাঠ এতই দুষ্প্রাপ্য ও দামী?’
বৃদ্ধ লোকটি বললেন : ‘এই মরুভূমিতে এগুলো দুষ্প্রাপ্য নয় আর এত দামীও নয়, কিন্তু এখানে এমন দামী ক্রেতা পাওয়া দুষ্প্রাপ্য, খুবই বিরল।’
সুলতান মাহমুদ এ জবাব শুনে খুব খুশি হয়ে বললেন : ‘যদি তাই হয় তা হলে আমি দু’হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়েই এই জ্বালানি কিনলাম।’
সুলতান মাহমুদের কাছ থেকে স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে লোকটি চলে যেতে উদ্যত হলেন। সুলতান মাহমুদ তাঁকে দুপুরের খাবারের জন্য দাওয়াত করলেন। বৃদ্ধ লোকটি দুপুরের খাবার খেয়ে বিদায় নিয়ে চলে যেতে চাইলেন। এমন সময় সেনাপতি তাঁকে বললেন : ‘খুব তো চালাকি করে চাটুকারি করে অনেক দামে জ্বালানি বিক্রি করলেন, যদিও এখানে এগুলোর কোন অভাব নেই।’
বৃদ্ধ লোকটি জবাব দিলেন : ‘আরে ভাই! আমি তো অভাবী মানুষ। তাই এগুলো সস্তায় বিক্রি করেছি। কেননা, এই জ্বালানির সাথে অন্যান্য জ্বালানির পার্থক্য আছে। আমি চল্লিশ বছর ধরে এই মরুভূমিতে জ্বালানি সংগ্রহ করে বিক্রি করি। কোনদিন কোন জ্বালানি কাঠ সুলতান মাহমুদের স্পর্শ পায় নাই। আমি অভাবী না হলে দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রার কমে এ জ্বালানি বিক্রি করতাম না।’
সুলতান মাহমুদ এ কথা শুনে অত্যধিক খুশি হলেন এবং দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা ঐ বৃদ্ধকে প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং বললেন : ‘আপনার মুখের মিষ্টি কথার দাম এর চেয়ে আরো অনেক বেশি মূল্যবান।’
বৃদ্ধ লোকটির উপস্থিত জবাবে সেনাপতি আশ্চর্যান্বিত হলেন আর বৃদ্ধ লোকটি স্বর্ণমুদ্রার থলি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন।

ভাষার গল্প

বিএম বরকতউল্লাহ্ :

‘তোমাদের ভাষা আমরা ঠিক বুঝি না। এখন থেকে আমাদের ভাষায় কথা বলতে হবে তোমাদের’, বললো রাজাপাখিটি।
‘না, না, না। তা হবে না রাজা মশাই! আপনি রাজা বলে আমরা আপনার অনেক কথাই মেনে চলেছি। কিন্তু এ কথা তো আমরা মেনে নিতে পারব না। আমরা কথা বলব আমাদের ভাষায়। আমাদের মায়ের ভাষায়।’ বললো বনের ছোট ছোট প্রজাপাখিরা।
‘রাজার ভাষাই হবে প্রজার ভাষা। তোমাদের তাই মেনে নিতে হবে রাজা যা বলেন। রাজার কথায় রাজ্য চলে; ভাষা চলবে না কেনো?’ রাজা আরো শক্তভাবে বলে দিলো, ‘আমরা যা বলব তা-ই হবে আর সেটা যতো তেতোই হোক। রাজার কথা না শুনলে প্রজাদের কপালে কত রকমের দুঃখ আর দুর্গতি নেমে আসতে পারে সেটা কি তোমরা আন্দাজ করতে পারছ?’
‘খুব পারছি। তবে যত দুঃখ আর কষ্টই আসুক না কেনো, আমরা আমাদের মুখের ভাষা ছাড়ব না। এটা আমাদের মায়ের ভাষা। আমরা কথা বলব আমাদের ভাষায়। আমরা লিখব আমাদের ভাষায় আর পড়ব আমাদের ভাষায়। আমাদের ভাষা যদি কেউ বুঝতে না পারে তবে সেটা তার সমস্যাÑ আমাদের না।’ খুব তেজ দেখিয়ে রাজাকে শুনিয়ে দিলো রাজ্যের প্রজাপাখিরা।
গর্জে উঠলো রাজা। ‘এত বড় দুঃসাহস! মুখে মুখে কথা! মুখ থাকলে তো মুখের ভাষা থাকবে!’ এ কথা বলেই রাজা তার সৈন্যদের লেলিয়ে দিলো নিরীহ প্রজাদের ওপর।
শুরু হলো লড়াই।
নিষ্ঠুর রাজার সৈন্যরা প্রতিবাদকারী কয়েকজন প্রজাকে ঠুকরে ঠুকরে আর খামচিয়ে মেরে ফেললো। দমল না প্রজারা। তারা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠলো। সবাই এক হয়ে গেলো। তাদের কিচির-মিচির শব্দ আরো তীব্র হলো, কেঁপে উঠলো বন। মনে হলো বনের মাটি, গাছপালারাও প্রতিবাদ করছে।
প্রজাদের পক্ষে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে কালো রঙ্গের লম্বা লেজওয়ালা দুঃসাহসী ফিঙ্গে। তার ভাষণে, নেতৃত্বে, লড়াইয়ে সারা বন উথাল-পাথাল। বনের সব প্রজা এক হয়ে গেলো। ভাষার দাবিতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল আন্দোলনে। চলছে তুমুল আন্দোলন।
‘প্রজারা অকাতরে জীবন দিয়ে দিচ্ছে, তবু ভাষার দাবি ছাড়ে না। কি আশ্চর্য ব্যাপার!’ একা একা বললো রাজা।
ভাষার দাবিতে আন্দোলন দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠলো। ভাষার দাবি এতো ভয়ানক হতে পারে তা ভাবতেই পারে নি রাজা! কোনো কিছুতেই দমাতে পারছে না প্রজাদের! তারা জীবন দেবে, কিন্তু ভাষা দেবে না!
কেঁপে উঠল রাজা। রাজা বাধ্য হয়ে মেনে নিলো প্রজাদের দাবি।
প্রজাদের ভাষা কেড়ে নিতে পারলো না রাজা। সে ভাষা রক্তে রাঙানো মায়ের ভাষা!

আল্লাহ চিরঞ্জীব

 

‘তুমি তাঁর ওপর নির্ভর কর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই।’ (সূরা কুরকান, আয়াত নং ৫৮)
আল্লাহও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবেন?
যদি একটি ফুল গাছে পানি না দেওয়া হয়, তা হলে আস্তে আস্তে তা শুকিয়ে যায়, পাপড়িগুলো আস্তে আস্তে ঝরে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ফুলগাছটি মারা যায়।
যখন একটি মোমবাতি জ্বলতে থাকে, আস্তে আস্তে তা গলে যায় এবং এক পর্যায়ে নিভে গিয়ে তার জীবন শেষ হয়ে যায়।
যখন একটি কবুতরের গায়ে তীর বিঁধে তখন তার দেহ থেকে রক্ত ঝরতে থাকে এবং এক পর্যায়ে কবুতরটির মৃত্যু হয়।
যখন একজন মানুষের কঠিন কোন রোগ হয় এবং তার চিকিৎসায় ডাক্তারদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় তখন এক সময় তার মৃত্যু হয়।
এ উদাহরণগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে তুমি সহজেই বুঝতে পারবে যে, মৃত্যুর কারণ হলো শুকিয়ে যাওয়া, রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, আহত ও জখম হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহর ক্ষেত্রে এগুলোর কোনোটিরই অর্থ হয় না যে আমরা বলব, তিনিও মৃত্যুবরণ করবেন।
আল্লাহ একটি ফুলগাছের মতো নন যে, পানির দরকার হবে। আর পানি দেওয়া না হলে শুকিয়ে মারা যাবেন।
আল্লাহ একটি মোমবাতির মতো নন যে, জ্বলতে জ্বলতে তার অস্তিত্ব ফুরিয়ে আসবে এবং এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবেন।
আল্লাহ একটি কবুতরের মতো নন যে, জখম হবেন এবং সে কারণে মারা যাবেন।
তদ্রƒপ আল্লাহ একজন মানুষের মতো নন যে, পীড়াগ্রস্ত হয়ে পড়বেন এবং সে পীড়ার কারণে মৃত্যুবরণ করবেন।
আল্লাহ হলেন অভাবমুক্ত, শক্তিশালী, চিরস্থায়ী, ক্ষয়ক্ষতি ও আঘাতমুক্ত এক চিরন্তন অস্তিত্ব। এ কারণে তিনি কখনোই মৃত্যুবরণ করবেন না। পবিত্র কুরআন আল্লাহ সম্পর্কে বলে : ‘তুমি তাঁর ওপর নির্ভর কর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই।’
ইরানের দু’জন বিখ্যাত কবি খজাভি কেরমানি এবং নিজামিও আল্লাহকে চিরঞ্জীব বলে পরিচয় তুলে ধরেছেন। খজাভি কেরমানি আল্লাহ সম্পর্কে বলেছেন : ‘যিনি কখনো মরেন নি এবং মরবেন না তিনিই তো আল্লাহ।’ আর নিজামিও এরূপ বলেছেন : ‘যিনি কখনো মরেন নি এবং মরবেন না, তো তুমিই।’
আল্লাহ হলেন এমন চিরস্থায়ী যে কালের ঘটনাবলি তাঁর কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তিনি এমন শক্তিশালী যে মৃত্যু তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। বিশ্বজগৎ আল্লাহর ক্ষমতাবলেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তিনি কখনোই মৃত্যুবরণ করবেন না। তিনি চিরস্থায়ী, চিরঞ্জীব।

বই পরিচিতি

যেসব মুসলিম মনীষী বদলে দিয়েছেন পৃথিবী
রচনা : মুনীর তৌসিফ
প্রকাশক : সাঈদ বারী
সূচীপত্র, ৩৮/২ ক বাংলাবাজার, ঢাকা
প্রচ্ছদ : সাঈদ বারী
স্বত্ব : গ্রন্থকার
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৫
মূল্য : ১৫০ টাকা।
কবি বলেন, ‘দেখ একবার ইতিহাস খুলি/কত উচ্চে তোরা অধিষ্ঠিত ছিলি।’ সত্যি তাই, সারা দুনিয়ায় জ্ঞান-গরীমায়, সৌর্যে, বীরত্বে একদিন মুসলমানরাই সেরা ছিল। অর্ধ পৃথিবী ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের শাসনব্যবস্থা। কিন্তু সেটা কিভাবে? শুধু তলোয়ারের জোরে আর বাহুবলে? তা কি করে হয়? তলোয়ারের জোরে, হত্যার ভয় দেখিয়ে, মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে কিছুুদিন দুর্বল করে রাখা যায়। মানুষের হৃদয় জয় করা যায় না। মানুষকে প্রভাবিত করা যায় না। যদি তাই হতো তবে হালাকু, তাতার চেঙ্গিস, মঙ্গোলরা ইতিহাসে সুখ্যাত হয়ে থাকতে পারত। কিন্তু তারা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে অত্যাচারী হিসেবে, মানবতার বন্ধু হিসেবে নয়। আজকের দুনিয়ায়ও যারা মানুষ হত্যা করে, বোমাবাজি করে, আত্মঘাতী হামলা করে, বলপ্রয়োগে কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বল প্রয়োগে কোন আদর্শকে নির্মূল করতে চায় তারাও অত্যাচারী হিসেবে চিহ্নিত হবে। কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি প্রকৃত মুসলমানরা দুুনিয়ার যে স্থানেই গিয়েছে সেখানে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও মানবতা-মহানুভবতার আলো সাথে করে নিয়ে গেছে ও তা দিয়ে বিশ্বমানবতাকে আলোকিত করেছে। তাদের তলোয়ার মাঝে-মাঝে যদিও উত্তোলিত হয়েছে তবে তা অত্যাচার করতে নয়, অত্যাচারীকে প্রতিহত করতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের মুসলিম সমাজের অনেকেই আজকে জানে না জ্ঞান- বিজ্ঞানে মুসলমানদের বিরাট অবদানের কথা। সেজন্য তারা হীনমন্যতায় ভোগে এই ভেবে যে, এই বিশ্বসভ্যতা নির্মাণে বোধ হয় মুসলমানদের কোন ভূমিকাই নেই। অপরদিকে এটাও দুঃখের বিষয়, একদা জ্ঞান-বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ জাতি আজ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ছেড়ে দিয়েছে। আরেক কবি তাই দুঃখ করে তাঁর কবিতায় বলেছেন, ‘জ্ঞানের বিজয় চাইতে হলে মনের বিজয় চাই/জ্ঞান যেখানে বোবা বধির হৃদয় সেথা নাই//আমরা যে ভাই জ্ঞানের কাঙ্গাল তাই এতো দুঃখ/ঘরে বাইরে তাইতো মোদের সমান দুর্ভিক্ষ’। অথচ একদা মুসলমানরা ছিল আধুনিক রসায়ন, বীজগণিত, আধুনিক সার্জারি, ফলিত প্রকৌশলী, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, সৌরবিজ্ঞান ও মহাকাশবিজ্ঞান, জ্যামিতি, চক্ষুবিজ্ঞান, ত্রিকোণমিতির জনক। শত শত ওষধি গাছের আবিষ্কারক, গণিতের শূন্যের আবিষ্কারক, চিকিৎসাক্ষেত্রে এনেসথেশিয়ার আবিষ্কারক। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প, ভাস্কর্য, আঁকিবুকি, নির্মাণশৈলীতেও তারা রেখেছিল বিরাট অবদান। অবদান ছিল তাদের ধর্ম-দর্শনে, আধ্যাত্মিকতায় বা সুফিজমে অর্থাৎ আত্মোন্নয়নে। এই সব মহান জ্ঞানীগুণীর প্রতিনিধিত্বশীল প্রভাবের কারণেই ইসলাম সম্পর্কে মনোযোগী হয় বিশ্বের মানুষ। দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে যে এতো মুসলমান তা জ্ঞানী, গুণী, সুফি, দরবেশ, অলি-আল্লাহদের কারণেই। সেজন্যই বলা হয় ‘অসিতে (তলোয়ার) নয়, মসিতে (কলম) বিজয়।’
মুুসলমানরা যে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সেরা ছিল তা পৃথিবীর ইতিহাস পাঠ ছাড়াও কিছু কিছু ঘটনা দ্বারাও প্রমাণ মেলে। মূর্খ ডাকু হালাকু খানরা বাগদাদ ধ্বংস করে যখন বড় বড় লাইব্রেরির লক্ষ লক্ষ বই ফেলে দিয়েছিল টাইগ্রিস নদীতে তখন দীর্ঘদিন টাইগ্রিস নদীতে কালিগোরা জল প্রবাহিত হচ্ছিলে। এতেই অনুমান করা যায় বইয়ের সংখ্যা কত ছিল!
জ্ঞান-বিজ্ঞান হচ্ছে মুসলমানদের হারানো সম্পদ। তা যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকেই কুড়িয়ে নিতে হবে। মহামনীষীদের জীবনের গল্প কোন রূপকথা নয়। বাস্তবতাযুক্ত সত্য ঘটনা। মহামানবদের জীবনী শিশু-কিশোরদের চরিত্র গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাদের জীবনের উজ্জ¦ল দিকগুলো শিশু-কিশোরদের চিন্তা চেতনাকেও উজ্জ্বল করে।
লেখক মুনীর তৌসিফ রচিত আলোচ্য বইটিতে মুসলিম জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, কবি, সুফি, দার্শনিকদের মোট চব্বিশজনের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশিত হয়েছে। বইটির প্রকাশক জনাব সাইদ বারীও সৃজনশীল মানুষ। বইটির প্রচ্ছদ পরিকল্পনাটিও তাঁরই। বইটি শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী পাঠকেরই ভালো লাগবে আশা করি।
□ আমিন আল ্আসাদ

তাবরিজ ফিরুজেহ ফটো ফেস্টিভ্যাল

তাবরিজ ফিরুজেহ ফটো ফেস্টিভ্যাল

 

মে মাসে তাবরিজ ফটো উৎসব, আবেদন গ্রহণ শুরু

মে মাসে তাবরিজ ফটো উৎসব, আবেদন গ্রহণ শুরুআগামী মে মাসে ইরানে শুরু হচ্ছে চিত্র প্রদর্শনীর আসর ‘তাবরিজ ফিরুজেহ ফটো ফেস্টিভ্যাল’। ইতোমধ্যে এই উৎসবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে ফটোগ্রাফ জমা নেওয়া শুরু হয়েছে।  ইরানের তাবরিজ শহরের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সক্ষমতাকে পরিচয় করিয়ে দিতে এই ফটো প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আর্ট অ্যান্ড কালচারাল অরগানাইজেশন অব তাবরিজ মিউনিসিপালি। পাশপাশি এই উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে শহরটির সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা হবে।

 

অন্যদিকে, তাবরিজ শহর ইসলামি পর্যটনের রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায়  ‘তাবরিজ ২০১৮’ নামে একটি ইভেন্টও চালু করা হবে একইভাবে।

 

এবারের উৎসবের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ইসলামিক ওয়ার্ল্ড আরকিটেকচার’। ফটো প্রদর্শনীতে মূলত ইসলামি সব নির্মাণশৈলি ও স্থাপত্য ফিচারের প্রামাণ্য ফটোগ্রাফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুষ্ঠিত হবে।

 

আয়োজকরা জানিয়েছেন, বিশ্বের যে কোনো দেশের চিত্রশিল্পীরা বিনা এন্ট্রি ফিতে এই ফটো উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। উৎসবে অংশ নিতে একজন চিত্রশিল্পীকে ন্যূনতম ৫টি জিপিইজি ফরমেটের ডিজিটাল ফটোগ্রাফ পাঠাতে হবে। ফটোর সর্বোচ্চ সাইজ হবে ২৫শ পিক্সেল।

 

ফটো উৎসবে অংশগ্রহণে আগ্রহীদের এন্ট্রি ফর্ম পূরণ করে তা উৎসবের ইমেইল অ্যাড্রেস [email protected] তে পাঠাতে হবে। সঙ্গে তদের ফটোগুলিও পাঠাতে হবে।

 

ইমেইলে ফটো পাঠানোর শেষ দিন ৫ মে। জমাকৃত ফটোর বাছ-বিচার ১২ মে। ফলাফলের প্রজ্ঞাপন ঘোষণা ও সমাপনী অনুষ্ঠান ১৩ মে।

 

উৎসবের নির্বাচিত ছবিগুলো থেকে প্রথম থেকে ৫ম স্থান অধিকার করা ফটোগুলিকে পুরস্কার দেওয়া হবে।

Download the following files for more details :

farakhan

firoozeh photo festival

Registeration

Sabtnam Avalieh

ইসলামি ঐক্য সম্মেলনের মেহমানদের উদ্দেশে প্রদত্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মাননীয় রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ আল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। এবং দরুদ ও সালাম আমাদের সর্দার ও আমাদের নবী আবুল কাসেম মুস্তাফা মুহাম্মাদ এর প্রতি; তাঁর পূতঃপবিত্র বংশধর ও সম্ভ্রান্ত সাহাবীদের এবং কিয়ামত দিবস পর্যন্ত যারা তাদের অনুসরণ করবে সবার প্রতি পেশ করছি।
ইসলামের মহান সম্মানিত পয়গাম্বর হযরত নবী করিম এর বরকতপূর্ণ ও সৌভাগ্যম-িত জন্মদিন, একই সাথে তাঁর সম্মানিত সন্তান (বংশধর) হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদেক (তাঁর ও তাঁর পিতৃপুরুষদের প্রতি আমাদের সালাম) এর জন্মদিবস উপলক্ষে সম্মানিত উপস্থিতি, মান্যবর মেহমানবৃন্দ, উপস্থিত ইসলামি দেশসমূহের রাষ্ট্রদূতবর্গ, ইসলামি ঐক্য সপ্তাহের মেহমানগণ, সমগ্র ইরানি জাতি, সকল মুসলিম উম্মাহ এবং বিশে^র সকল স্বাধীনচেতা মানুষের প্রতি মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আমি আশা করি এই দিন এই জন্মতিথি আমাদের সবার মধ্যে নতুন আত্মসচেতনতা জন্ম হওয়ার উপলক্ষ হবে। পয়গাম্বর (সা.)-এর পবিত্র জন্মগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে যে পথ উন্মুক্ত হয়েছে এবং যে দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তেছে সে ব্যাপারে এই উপলক্ষ আশা করি আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করবে। আমাদের অবশ্যই সেই পথ ধরে অগ্রসর হতে হবে।
পয়গাম্বর (সা.)-এর পবিত্র অস্তিত্ব হচ্ছে রহমত, অনুগ্রহ, ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’, এই রহমত সমগ্র জগতবাসীর জন্য। এই রহমত তাদের জন্য অবারিত যারা মহান পয়গাম্বরের অনুসারী, অনুরূপভাবে (আরো) যারা তাঁর পথ ও তাঁর প্রদর্শিত হেদায়াতকে মেনে নিয়েছে তাদের প্রতিও এই রহমত প্রসারিত হয়। তারাও রহমতপ্রাপ্ত, আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে তারা আশ্রিত। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন : ‘শীঘ্রই আমি তা বরাদ্দ করব ঐসব লোকের জন্য যারা সংযমী জীবন অবলম্বন করে, যাকাত আদায় করে ও আয়াত (আমার বিধান ও নিদর্শনসমূহ) এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে। যারা সেই নবীকে অনুসরণ করে, যিনি উম্মী, যাঁর সম্পর্কে তারা তাদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিপিবদ্ধ পায়।’Ñ সূরা আরাফ, আয়াত ১৫৬ ও ১৫৭ এর অংশবিশেষ।
যারা এমন মহান নবীর অনুসরণ করে, তাঁকে অনুকরণ করে চলে, তাঁর পথনির্দেশনা ও হেদায়াত মেনে চলে তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে শামিল। এটি আল্লাহরই কৃত ওয়াদা। এই ওয়াদার অন্যথা নেই, ফেরত যায় না। ইসলামি জাহান ও ইসলামি উম্মাহ বহু চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করেছে। তবে তারা ঠিক ঐ সময়ই আল্লাহর পক্ষ হতে দুনিয়াবি ও পরকালীন রহমতের ভাগী হয়েছে যখন সেই নবীর অনুসরণ ও অনুকরণ করেছে।
‘যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে, তাঁকে শক্তি যুগিয়েছে এবং তাঁকে সাহায্য করেছে আর তাঁর সাথে যে নূর (আলোকবর্তিকা) নাযিল করা হয়েছে, তার অনুসরণ করেছে তারাই প্রকৃত সফলকাম।’Ñ সূরা আরাফ, আয়াত ১৫৭ এর অংশবিশেষ)
এখানে তাদের কথা বলা হয়েছে যারা তাঁকে অনুসরণ করে চলেছে।
পয়গাম্বর (সা.) সর্বস্তরের সকল মানুষের জন্য সুবাসিত সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন। সবার জন্য বন্দিদশা হতে মুক্তির সওগাত বয়ে এনেছেন। পয়গাম্বর (সা.) মানবজাতিকে যা উপহার দিয়েছেন তা একদলকে বাদ দিয়ে আরেকদলকে দেয়া হয়েছে এমন বিষয় নয়। গোটা মানবজাতির জন্য দেয়া হয়েছে এই উপহার। তবে এর দ্বারা সে ব্যক্তিই লাভবান হয় যে তা অনুসরণ করে, নিজের জীবনে তা কার্যকরী করে। যেসব জিঞ্জির-বেড়ি মানুষের গলায় ও হাতে পায়ে জড়ানো হয়, তার দ্বারা মানুষ নড়াচড়া করতে পারে না, যা তাদেরকে উড়াল দিতে দেয় না, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা হতে দূরে সরিয়ে দেয়, তাতে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। পয়গাম্বর (সা.) এই বন্ধনকে মানুষের গলদেশ ও হাত-পা থেকে খুলে দিয়েছেন। এসব বন্দিদশা বা বন্ধন বলতে কী বুঝায়? এসব বন্দিদশা হচ্ছে বৃহৎ শক্তিগুলোর জুলুমের বন্দিদশা, শক্তিমদমত্তদের ক্ষমতার দাপট, শ্রেণিবৈষম্য অব্যাহত থাকা। জুলুমপূর্ণ ও শক্তির দাপটের আভিজাত্য বলবৎ থাকা। এগুলোই হচ্ছে বন্দিদশা। আল্লাহর নবী এগুলোর মোকাবিলা করেন। এসবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালান। বিভিন্ন জাতি এই পথটি ধরে চলতে পারে, তবে শর্ত হল এ পথে অবিচলতা প্রদর্শন করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে তাদেরকে। তাহলে বৃহৎ শক্তিগুলোর ওপর বিজয়ী হতে পারবে। হ্যাঁ, আজকের দিনে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিশ^শক্তিগুলোর পক্ষ হতে বড় বড় চক্রান্ত চালানো হচ্ছে। তবে এসব চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব। এগুলো ব্যর্থ করে দেয়ার শক্তি তারা রাখে। হযরত মূসা (আমাদের নবী ও তাঁর প্রতি সালাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে আবেদন করেন যে, ‘হে আল্লাহ! তুমি ফিরআউন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দুনিয়ার জীবনে ভোগ বিলাসিতার সামগ্রী এবং ধন-সম্পদ দিয়েছ যাতে তারা তোমার পথ থেকে মানুষকে গোমরাহ করতে পারে। হে আল্লাহ! তুমি তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও, তাদের অন্তরকে কঠিন করে দাও, যাতে তারা ঈমান না আনে, মর্মন্তুদ শাস্তি ভোগ করে।’Ñ সূরা ইউনূস এর ৮৮ নং আয়াতের অংশবিশেষ।
এভাবে তিনি বদদোয়া করেন। মূসা (আ.)-এর মোকাবিলায় ফিরআউন এক বিরাট শক্তি ছিল। শান-শওকত, শৌর্যবীর্য, অস্ত্র, সৈন্যসামন্ত, অর্থবিত্ত, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি সব তার করায়ত্বে ছিল। মূসা (আ.)-এর হাত ছিল খালি। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, সাহায্য চাইলেন। আল্লাহ তা‘আলা জবাবে বললেন : ‘তোমাদের দুজনের (মূসা ও হারুন) দোয়া কবুল করা হয়েছে।’ তোমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছি। তবে শর্ত আছে। শর্ত হলো ‘তোমরা উভয়ে অবিচল থাকবে এবং যারা মূর্খ তাদের পথ তোমরা অবলম্বন করবে না।’ লড়াইয়ের ময়দানে ইস্তিকামাত বা অবিচলতা এক ধরনের আর রাজনীতির ময়দানে অবিচলতা এক ধরনের। যুদ্ধের ময়দানে মানুষের ইচ্ছা ও মনোভাব থাকে এক রকম। আর রাজনীতির ক্ষেত্রেও অবিচলতা অবশ্যই থাকতে হবে। যদি জাতিসমূহ, জ্ঞানী-গুণীরা অবিচলতা প্রদর্শন করেন তাহলে নিশ্চয়ই তাঁদের বিজয় অর্জিত হবে।
হ্যাঁ, আজ ইসলামি উম্মাহর বিরুদ্ধে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা, বিশ^পরাশক্তি, তাদের পশ্চাতে যায়নবাদ, যায়নবাদী সরকার, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী, বিশে^র অর্থপূজারিরা, এসব শক্তির পদলেহী মুসলমানদের মধ্যকার ভোগবাদীরা। এরা সবাই ইসলামের মোকাবিলায়, পয়গাম্বরের পথের মোকাবিলায় সারিবদ্ধ হয়েছে।
‘তুমি ফিরআউন ও তার সভাসদদের দুনিয়ার জীবনে ভোগের সামগ্রী ও ধন-সম্পদ দিয়েছ।’ হ্যাঁ, এরাই আজকের দিনের ফিরআউন। আজকের ফিরআউন যায়নাবাদী সরকার। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে তাদের পদলেহীরাই আজকের ফিরআউন। তারা ক্রমান্বয়ে চাচ্ছে যে, মুসলমানরা একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়–ক। তারা এতদঞ্চলে যুদ্ধ বাঁধাতে চায়। এ বিষয়টি সবাইকে বুঝতে হবে। সবাইকে জেনে রাখতে হবে যে, আমেরিকান রাজনীতিকরা তাঁদের পর্যালোচনায়, কথাবার্তায় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এ কথা স্বীকার করেছেন যে, এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে আমাদেরকে যুদ্ধ বাঁধাতে হবে। অনৈক্য সৃষ্টি করতে হবে। এদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে হবে। যাতে যায়নবাদী সরকার নিরাপদ বেষ্টনীতে থাকতে পারে। আরামে থাকতে পারে। এই সুযোগে তারা যেন অগ্রগতি অর্জন করতে পারে। ইসলামি উম্মাহর দেহ থেকে যেন এতখানি রক্তপাত ঘটে, যাতে তারা সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে যায়। দুর্বলতার শিকার হয়। রুখে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলে। এসবের মোকাবিলায় কী করতে হবে। পথ হলো : ‘তোমরা উভয়ে অবিচলতার প্রদর্শন কর এবং মূর্খদের পথ অনুসরণ করো না।’
আমরা ঐক্যে বিশ্বাস করি। আমরা একতাবদ্ধ থাকার ব্যাপারে আগ্রহী। বর্তমান সময়টি, এই দিনগুলো হচ্ছে ঐক্য সপ্তাহের উপলক্ষ। আমাদের মরহুম ইমামই ঐক্য সপ্তাহের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঐক্য ইসলামি মাযহাবগুলোর মধ্যে। আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং ইরানি জাতি বাস্তবে নিজেদের মধ্যে এবং বিভিন্ন মুসলিম মাযহাবের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনোরূপ সমস্যা ও অসুবিধা নেই। কিন্তু এই ঐক্য প্রয়াস, ঐক্যের লক্ষ্য অভিমুখী তৎপরতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের বিরুদ্ধে এমন কতিপয় লোক আছে, যাদের সিদ্ধান্ত হলো, তারা অনৈক্য সৃষ্টি করবে এবং যুদ্ধ বাঁধাবে। তাদের পলিসি এটাই। এই লক্ষ্যেই তারা চেষ্টা চালাচ্ছে।
আমাদের এতদঞ্চলের অভ্যন্তরে এই তাকফিরি গোষ্ঠীকে তারা সৃষ্টি করেছে, যাতে তাদের ধারণায় মাযহাবী যুদ্ধ লাগিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদের মুখে প্রচ- আঘাত করেছেন, মাযহাবী যুদ্ধ সংঘটিত হয় নি। ভবিষ্যতেও সংঘটিত হবে না। যারা দুশমনের উস্কানির শিকার হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। রুখে দিয়েছি। ইনশা আল্লাহ সফলকামও হয়েছি।
তবে তাদের আসল ব্যাপার ছিল দুশমনের পক্ষে মজদুরী করা। উদ্দেশ্য মাযহাবী যুদ্ধ ছিল না, গোত্রীয় যুদ্ধ ছিল না, ফেরকাগত যুদ্ধ ছিল না, দুশমন চেয়েছিল সুন্নি আর শিয়ার মাঝে যুদ্ধ বাঁধাবে। আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি জাআলা আ‘দাআনা মিনাল হুমকা। (আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি আহমকদের মধ্য হতে আমাদের দুশমন বানিয়েছেন। )
আইএস এই অঞ্চলে যত সুন্নিকে হত্যা করেছে তাদের সংখ্যা যে পরিমাণ শিয়াকে হত্যা করেছে তার চেয়ে বেশি ছিল। এরা চেয়েছিল শিয়া-সুন্নির মাঝে যুদ্ধ বাঁধাবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য করেছেন। তাকফিরি গোষ্ঠীর সাথে আমরা যে মোকাবিলা করেছি তা ছিল যুলুমের বিরুদ্ধে মোকাবিলা। ইসলামকে বিক্রিত করার বিরুদ্ধে মোকাবিলা। যে বন্য গোষ্ঠী ইসলামি চরিত্র, ইসলামি সভ্যতা ও ইসলামের হাকিকত থেকে দূরে ছিল আমরা তাদের মোকাবিলা করেছি। যারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারছিল, জীবিত অবস্থায় মানুষের চামড়া খুলে নিচ্ছিল, মুসলিম পরিবারবর্গকে ধরে ধরে বন্দি করছিল, রাজনৈতিক দুর্নীতি, যৌন অনাচার, আর্থিক দুর্নীতি ও কাজে কর্মে দুর্নীতি এবং সব ধরনের ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় তাদের পেয়ে বসেছিল। যায়নবাদীদের অনুচর ছিল এরা। এএটি একটি বাস্তবতা। আমরা এদের মোকাবিলায় রুখে দাঁড়িয়েছি। ইসলামি দুনিয়া যদি চায় যে, মর্যাদা নিয়ে থাকবে তা হলে ঐক্য, একতা ও সংহতি অবশ্যই হাতছাড়া করবে না। ইসলামি জাহান যদি সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চায় তাহলে অবশ্যই তাদেরকে যায়নবাদী ইসরাইলের মোকাবিলায় রুখে দাঁড়াতে হবে।
আজ ইসলামি দুনিয়া ও ইসলামি উম্মাহর যাবতীয় রাজনৈতিক সমস্যার শিরোভাগে রয়েছে ফিলিস্তিন ইস্যু। ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও ফিলিস্তিনি জাতির মুক্তির পক্ষে কাজ করার ব্যাপারে প্রত্যেকের ওপর দায়িত্ব রয়েছে। তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, কাজ করতে হবে। অবশ্য দুশমন এ ক্ষেত্রেও ব্যর্থ মনোরথ হয়েছে। প্রত্যেকে জেনে রাখবেন যে, এখন যে এরা দাবি করছে, বলছে যে, বায়তুল মুকাদ্দাসকে যায়নবাদী সরকারের রাজধানী করবে, এটা তাদের চরম দুর্বলতার পরিচায়ক। তাদের অক্ষমতার কারণে এ কথা বলছে। ফিলিস্তিন বিষয়ে তাদের হাতসমূহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কাজের ফলেও নিঃসন্দেহে এক বড় আঘাত তারা পাবে। ইসলামি জাহান তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। নিশ্চিতভাবেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে দুশমন তার কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। ফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই। ফিলিস্তিন যে স্বাধীন হবে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। হয়ত খানিকটা দেরি হতে পারে বা কিছুটা আগে হবে। কিন্তু নিশ্চয়ই তা ঘটবে। ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য ইসলামি উম্মাহর সংগ্রাম ইনশা আল্লাহ সফলকাম হবেই।
আলহামদু লিল্লাহ! ইরানি জাতি তার বীরত্ব দিয়ে, তার দূরদর্শিতা দিয়ে, তার অবিচলতার মাধ্যমে কঠিন রাস্তা পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছে। বহু কঠিন গিরিসংকট অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে। সবার জানা উচিত, সারা দুনিয়ায় আমাদের বন্ধুদের জানা উচিত, আমাদের দুশমনরাও জেনে রাখুক যে, বিপ্লব বিজয়ের পরবর্তী এই ৩৮ বছরে আমরা যেসব পথ পাড়ি দিয়েছি তাতে এমন সব সমস্যা ছিল যেগুলো বিভিন্ন জাতিকে অচল ও বিপর্র্যস্ত করে ফেলত। কিন্তু এসব সমস্যা ইরানি জাতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে নি। আর এরপরও আমাদের সামনে যেসব সমস্যা সৃষ্টি করা হবে নিশ্চয়ই সেগুলো আমাদের আগের সমস্যার চেয়ে অবশ্যই কম এবং ছোট আকারের হবে। আর সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য ইরানি জাতির সামর্থ্য ও শক্তি পূর্বের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি। আমরা এসব সমস্যাকে পরাস্ত করবইÑ আল্লাহর দেয়া তাওফিকের বলে। দুশমন ইরানি জাতিকে ব্যর্থতা ও পরাজয়ের সম্মুখীন করতে এবং তাদেরকে পশ্চাদপসরণে বাধ্য করতে পারবে না। আর আমরা ইনশা আল্লাহ সব সমস্যার উত্তরণ ঘটাতে এবং সকল মুসলিম জাতির কাছে ইসলামের ইজ্জত ও মর্যাদা তুলে ধরতে সক্ষম হব। আর ইসলামের মর্যাদার ঝা-াকে এখন যা আছে তার চেয়ে উচ্চে ও আরো ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে সমর্থ হব।
ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
(সংক্ষেপিত)

ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে মুসলিম জাতিসমূহের প্রতি প্রেসিডেন্ট রুহানির আহ্বান

কুদ্সের প্রতিরক্ষা ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের লক্ষ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য পরিহার করুন
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. হাসান রুহানি ইসলামের প্রথম কিবলা আল্-কুদ্সের প্রতিরক্ষা ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য পরিহার করার জন্য মুসলিম জাতি সমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি গত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-র শীর্ষ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে এ আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর ভাষণে বলেন, আমরা মুসলিম উম্মাহ্র এমন একটি হৃদয় বিদারক বিয়োগান্তক ঘটনা ও পুরনো ক্ষত সম্পর্কে মত বিনিময়ের জন্য সমবেত হয়েছি যা একশ’ বছর আগে বেলর্ফো ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে পবিত্র কুদ্স্ নগরীতে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ভ্রান্ত ও অবৈধ প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের অভিজ্ঞতার অধিকারী হচ্ছে।
ড. রুহানি বলেন, আজকে আমরা পবিত্র কুদ্স্ নিয়ে কথা বলছি যা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম শহর এবং যা ফিলিস্তিনের পরিচিতি ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, সৌভাগ্যবশত পবিত্র কুদ্স্ নগরী সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের এ ভূমিকা সম্পর্কে মুসলিম রাষ্ট্র সমূহ দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আর এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠান মুসলমানদের পক্ষ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভুল কাজের সঠিক ব্যাখ্যারই নিদর্শন বহন করছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদেরকে পরস্পর হাতে হাত মিলিয়ে সম্ভাব্য যে কোনো উপায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের নির্বুদ্ধিতামূলক কাজের বাস্তবায়ন প্রতিহত করতে হবে। অবশ্য সেই সাথে আমাদেরকে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে যে, কোন্ কোন্ কারক ও কোন্ কোন্ কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ ধরনের একটি রূঢ় ও অবমাননাকর সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করেছে।
ড. হাসান রুহানি বলেন, আমার মনে হয় যে, অন্য সকল কারণের চেয়ে বড় যে কারণটি এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণকে উস্কে দিয়েছে তা হচ্ছে কতক দেশ কর্তৃক যায়নবাদী সরকারের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার, এমনকি তার সাথে আলোচনা ও সমন্বয়ের প্রচেষ্টা চালানো।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, আজ এটা আর কোনো গোপন বিষয় নয় যে, মুসলমানরা ও আরবরা ইহুদিদের সবচেয়ে বড় দুশমন নয়, বরং যায়নবাদের বিপজ্জনক পরিকল্পনাই হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় দুশমন। তিনি বলেন, আমরা মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিরা এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক মালিক। অন্যদিকে যায়নবাদীরা হচ্ছে এখানে বহিরাগত এবং তারা নিজেদেরকে এ অঞ্চলের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিগত শতাব্দীর প্রথম দিককার বছরগুলো থেকেই যায়নবাদীরা এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার বীজ বপন করে আসছে। বিশেষ করে বিগত কয়েক দশক যাবত ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা ও তাদের ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদের জন্য যায়নবাদী সরকারই দায়ী এবং সেই সাথে তারা ফিলিস্তিনে ইসলামের দৃষ্টিতে যা কিছু পবিত্র সেসবের অবমাননা করে আসছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্বীয় ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে হত্যাসহ এসব অপরাধ সংঘটনে যায়নবাদীদেরকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যায়নবাদী সরকারকে সকল ধরনের মারণাস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো প্রচেষ্টা থেকেই বিরত থাকে নি। তিনি বলেন, কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, এতদসত্ত্বেও বহু বছর যাবত এতদসংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে অথবা এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া হয়েছে এবং মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে তার ওপরে নির্ভর করা হয়েছে।
জনাব রুহানি বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করছিলেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন প্রশাসন তাঁদের সামনে একটি বিষয় সুস্পষ্ট করে দিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু যায়নবাদীদের জন্য সর্বোচ্চ স্বার্থ আদায় করতে চাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ দাবি সমূহের প্রতি কোনো ধরনের সম্মানবোধই পোষণ করে না।
মার্কিন প্রশাসন কুদ্স্কে যায়নবাদী সরকারের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এবং তার দূতাবাস কুদ্সে স্থানান্তরিত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পক্ষ থেকে তার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মুসলিম জাহানের জন্য যায়নবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। তিনি বলেন, কতগুলো সমস্যার ব্যাপারে যদি আমাদের মধ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য থেকেও থাকে তথাপি পবিত্র কুদ্সের প্রতিরক্ষা ও ফিলিস্তিন সমস্যার ক্ষেত্রে আমাদের কিছুতেই বিভক্ত থাকা উচিত হবে না।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, মুসলিম জাহানের সমস্ত সমস্যাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু ইসলামি উম্মাহ্র অধিকার সমূহের প্রতি এবং পবিত্র আল্-কুদ্সের প্রতি কেবল ইসলামি ঐক্যের মাধ্যমেই সর্বোত্তম সহায়তা প্রদান করা সম্ভবপর।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেন, মার্কিন প্রশাসনের এ বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার যে, ফিলিস্তিন ও পবিত্র কুদ্সের ভাগ্যের ব্যাপারে ইসলামি জাহান মোটেই উদাসীন থাকবে না। তেমনি ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থনের ও প্রায় সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতের প্রতি বিদ্রƒপ করা হলে সে জন্য যথাযথ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে এবং মূল্য দিতে হবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর ভাষণে কুদ্সে দূতাবাস স্থানান্তর সংক্রান্ত মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের মোকাবিলায় মুসলিম দেশসমূহের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, আমেরিকার অংশীদারদের সাথে, বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে মুসলিম দেশ সমূহের যে কোনো আলোচনায় সাম্প্রতিক মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিবাদ জানানো এবং এ ধরনের একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা অপরিহার্য। তিনি বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যাকে পুনরায় মুসলিম জাহানের সমস্যাবলির ও আলোচ্য বিষয়াদির সর্বশীর্ষে স্থান দিতে হবে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জনাব রুহানি বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশের পরাজয় এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কারণে আমাদের জন্য যায়নবাদী সরকাররূপ বিপদের কথা, বিশেষ করে তার কাছে যেসব পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছেÑ যা সারা দুনিয়ার জন্য হুমকি, তার কথা ভুলে যাওয়া কিছুতেই উচিত হবে না।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে এর নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে নিজ নিজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত। এছাড়া মুসলিম দেশ সমূহের জাতিসংঘস্থ মিশনগুলোর জন্য আলোচনায় অংশগ্রহণ করাও জরুরি।
ড. রুহানি তাঁর ভাষণের শেষ পর্যায়ে বলেন, যায়নবাদী সরকারের সকল তৎপরতার প্রতি অনবরত দৃষ্টি রাখতে হবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে যে কোনো উপযোগী স্থানে মন্ত্রী পর্যায়ে বা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পর্যায়ে ওআইসি-র অধিবেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. হাসান রুহানি পবিত্র কুদ্সের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ব্যতিরেকে যে কোনো মুসলিম দেশের সাথে নিঃশর্তভাবে সহযোগিতার জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রস্তুতি ঘোষণার মাধ্যমে স্বীয় ভাষণের সমাপ্তি টানেন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে সেমিনার

মহানবী (সা.) মুসলিম ঐক্যের প্রতীক এবং আমাদেরকে তাঁর পথেই ফিরে আসতে হবেÑ আবুল কালাম আজাদ এমপি

গত ২ ডিসেম্বর ২০১৭ বিএমএ মিলনায়তনে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুসলমানদের বর্তমান সমস্যা ও মুসলিম ঐক্য’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যন জনাব আবুল কালাম আজাদ এমপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মারুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম ড. জাওয়াদ মাজলুমী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জনাব এ কে এম বদরুদ্দোজা। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ইরান সাংস্কতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিশিষ্ট কারী এ কে এম ফিরোজ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব আবুল কালাম আজাদ এমপি বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (র.) মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিবসকে কেন্দ্র করে বারো থেকে সতেরই রবিউল আউয়াল যে ঐক্য সপ্তাহের ঘোষণা দেন সেটি ছিল একটি সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত। মহানবী (সা.) মুসলিম ঐক্যের প্রতীক এবং আমাদেরকে তাঁর পথেই ফিরে আসতে হবে। মুসলমানদের মাঝে আজ নানা বিভক্তি বিরাজমান। তারা আজ সারা বিশ্বে মার খাচ্ছে। তারা নানামুখী চক্রান্তের শিকার। মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে বিভক্ত করেছে তাদের শত্রুরা। শিয়া-সুন্নি ভেদাভেদ ও জাতিগত ভেদাভেদ ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের মাঝে বিদ্বেষ উস্কে দেয়া হচ্ছে। মুসলমানদেরকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য তাদের ভেতর নানা উগ্র মতবাদ ঢুকিয়ে দিয়ে হত্যা ও ধ্বংসের কাজে প্ররোচিত করছে। মহানবী (সা.) কখনো সন্ত্রাসের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন নি। মানুষকে বল প্রয়োগে ধর্মান্তরিত করেন নি। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ নবী, বিশ্বনবী, মানবতার নবী। তিনি সত্যের দিকে মানুষকে আহ্বান করেছিলেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন । দেশ থেকে হিজরত করেছেন। আক্রান্ত হয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু আক্রমণ করে মানুষ হত্যা করেন নি। তিনি মক্কা বিজয় করতে পেরেছেন প্রায় বিনা রক্তপাতে। তিনি মানবতার অতুলনীয় আদর্শ ছিলেন। আমাদেরকে আল্লাহর নবীর কাছ থেকেই শিখতে হবে। আরবের এমন এক বর্বর জাতিকে সভ্যতার আলো প্রদান করেছিলেন মহানবী (সা.) যে জাতি কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। তিনি নারীদের মর্যাদা দিয়েছেন। বলেছেন ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ ধর্মে কোন জবরদস্তি নেইÑ এটি আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) থেকেই শিখেছি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নিবিশেষে ইসলাম সবার জন্যই নিরাপত্তা বিধান করে। এই আদর্শ থেকেই সকল ধর্মমতের মানুষ মিলে মিশে আমরা বাংলাদেশে বসবাস করছি। এই উদারতা আমরা রাসূল (সা.) থেকে শিখেছি। সহিংসতার পথ ইসলামের পথ নয় এবং তা রাসূলের দেখানো পথ নয়। রাসূল (সা.) বিধর্মীদের প্রতিও কোন খারাপ আচরণ করেন নি। তিনি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করেন। ক্রীতদাসদের মানবিক মর্যাদা দেন। রাসূল (সা.)-এর প্রতিটি বক্তব্যই গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ও সূদুরপ্রসারী।
তিনি উপস্থাপিত প্রবন্ধের সূত্র ধরে বলেন যে, তিনি সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে যে নির্যাতন হয়েছে এবং এখনো যে দেশে দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে এর একটি সমীক্ষা তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীটা আজ বড় অশান্ত। ব্যক্তি পরিবার, রাষ্ট্র, বিশ্ব কোথাও শান্তি নেই। সমাজে সৃষ্টি হয়েছে অবক্ষয়। এমতাবস্থা থেকে রেহাই পেতে আমাদেরকে মুহাম্মাদ (সা.)-এর পথেই ফিরে আসতে হবে এবং তাঁকে ঐক্যের প্রতীক ধরে মুসলিম উম্মহকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।
ইরান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্রধান অতিথি বলেন, ইরান একটি ঐতিহ্যশালী, ঐশ্বর্যশালী ও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ধর্মবিশ্বাসে সমৃদ্ধশালী দেশ। ইরানের জনগণ দেশপ্রেমিক।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মারূফ বলেন, মুসলমানদেরকে বিভক্ত করার জন্য. তাদের ভেতর থেকে সত্যিকার ইসলামের রূপকে বিদূরিত করে উগ্র, গোড়া, একদেশদর্শী মনোভাব মুসলমানদের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের ভেতর থেকে নবী (সা.)-এর ভালোবাসা উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে ও হচ্ছে। তাসাউফকে অস্বীকার করা হচ্ছে। মুসলমানদেরকে ইতিহাসশূন্য করে দেয়ার জন্য ইহুদি চক্রান্ত ও হামফ্রের পরিকল্পনা মোতাবেক নিরস মতবাদের মাধ্যমে মুসলমানদের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সা¤্রাজ্যবাদীরা ইসলাম ও মুসলমানদের মাঝে দ্বৈত চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। একদিকে তারা সরাসরি মুসলমানের প্রতি ও মুসলিম দেশসমূহের প্রতি অত্যাচার করে চলেছে। অপর দিকে মুসলমানদের ভেতর নানা বিতর্কিত উগ্র মতবাদ ঢুকিয়ে দিয়ে ইসলামের চিরন্তন বৈপ্লবিক প্রচার-প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করছে। মুসলমানদের ভাব অবয়বের ক্ষতি সাধন করছে। ইসলামের শত্রুরা আমাদেরকে বিভিন্ন নামে বিভক্ত করে আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। আমাদের ওপর খবরদারি করছে এবং মুসলমান দিয়ে মুসলমানকে ধ্বংস করে চলেছে। এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী বলেন, মুসলমানদের দুর্দশার প্রধান কারণ হলো মুসলমানরা কোরআন থেকে দূরে সরে গিয়েছে। তারা শিক্ষা গ্রহণ করছে পাশ্চাত্যের চিন্তা-চেতনা থেকে। অথচ কোরআনের শিক্ষাই মুসলমানের মূল পাথেয় হওয়ার কথা ছিল। কোরআন সবসময় ঈমানদারদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছে। বলেছে, ‘তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরো, কখনো বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ কোরআন বলেছে, ‘এসো সেই কথায় যা তোমাদের ও আমাদের মাঝে অভিন্ন।’ শিয়া ও সুন্নি মাজহাবের মুসলমানদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। তাদের মধ্যে বিরাজমান সমস্যার সমাধানকল্পে সেইসব মিলের ভিত্তিতেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মুসলমানরা কোরআন থেকে দূরে সরে গেছে তার প্রমাণ হলো কোরআনের শিক্ষাকে তারা ঐক্য ও সংহতির পক্ষে কাজে লাগাচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে কোরআন থেকে পথ অন্বেষণ করছে না। কোরআন বলছে, ‘তোমাদের মাঝে দুটি দলে যদি দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তবে তা মীমাংসা করে দাও’, কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা এ আয়াতের বাস্তবায়ন দেখতে পাই না। সারা বিশ্বে মুসলমানরা আজ মজলুম। মুসলিম বিশ্ব আজ ক্ষতবিক্ষত। ফিলিস্তিনে মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখছি ইসরাইলের অপকর্মের বিরুদ্ধে আরব রাজা-বাদশাহরা নীরব। আর মুসলমানদের দুর্বল আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইসির ভূমিকা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ইসরাইলের সাথে যারা সম্পর্ক স্থাপন করে তারা ইসলামের পক্ষ নয়। মুসলমানদের সমস্যা সমাধানে তারা আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। রহস্যজনক তাদের নীরবতা। মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (র) নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-কুদস মুক্তি বা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে এক মেরুতে আনার জন্য রমযান মাসের শেষ শুক্রবারকে ‘আল-কুদ্স দিবস’ ঘোষণা। অপরটি হলো পবিত্র মিলাদুন্নবী (সা.)-কে কেন্দ্র করে ‘ঐক্য সপ্তাহ’ ঘোষণা করা। তিনি শিয়া ও সুন্নি মাজহাবের মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সবসময় আন্তরিক ছিলেন। তাছাড়া বিপ্লবের পূর্বেও ইরানের মহান আলেমগণ বিশেষ করে আয়াতুল্লাহ বোরুজারদি (রহ.) আল-আযহারের আলেমদের সাথে নানা বিষয়ে মাজহাবী ঐক্যের ব্যাপারে কথাবার্তা বলেছেন।
তিনি বলেন, মুসলিম তরুণ সমাজকে সঠিকপথে পরিচালিত করার জন্য অভিভাবকের মতো দ্বীনের আলেম সমাজেরও বিশেষ ভূমিকা থাকে। প্রতিটি মুসলিম দেশের আলেম সমাজের উচিত তাদের দেশের জনগণকে ও তরুণ সমাজকে প্রকৃত দ্বীনের ওপর সচেতন করা। ইসলামি জীবনব্যবস্থার মর্মার্থকে তাদের অন্তরে প্রবিষ্ট করানো আর ইসলামি ঐক্যের পথে কাজ করা। বিভেদবাদকে পরিত্যাগ করা।
হুজ্জাতুল ইসলাম ড. জাওয়াদ মাজলুমী বলেন, সমগ্র মুসলমান এক জাতি। তাদের লক্ষ্য এক। মুসলমানদেরকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য মুসলমানদের শত্রুরা মুসলমানদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে। কোরআনে মুসলমানদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, ‘তোমরা পরস্পর বিবাদ করো না। তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে।’ ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদেরকে শিয়া-সুন্নি, আরব-অনারব ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত করেছে। আবার আরবকেও বিভক্ত করেছে নানা ভৌগোলিক পরিচয়ে। কিন্তু এই বিভক্তি সমীচীন নয়। মুসলমানরা পরস্পর ভাই। ইসলাম মানবজাতিকে ঐক্যের চাদরে আবৃত করতে চায়। ইসলাম যেমন ঈমানদার মুসলমানের ঐক্য চায় তেমনি মানবতার ঐক্য চায়। ইসলামে আর মানবতাবাদে কোন পার্থক্য নেই। মহানবী (সা.) সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। সারা বিশ্বের জন্য তিনি রহমতস্বরূপ। এমনকি প্রাণীকুল উদ্ভীদকুলের জন্যও তিনি রহমতস্বরূপ।
মুসলমানদের ঐক্য প্রসঙ্গে এই ধর্মীয় নেতা বলেন, মহানবী (সা.) সকলের নবী। তিনি ঐক্যের প্রতীক। প্রশান্তি ও রহমতের প্রতীক। আল্লাহকে পাওয়ার পথ হচ্ছে রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথ। যিনি রাসূল (সা.)-কে পাবেন বা রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসা পাবেন তিনি আল্লাহকে পাবেন বা আল্লাহর ভালোবাসা পাবেন। সকল মত ও মাজহাবের মুসলমানদের আল্লাহ এক, রাসূল (সা.) এক, কলেমা এক, কিতাব এক এবং কিবলাও এক। তাহলে তারা বিভক্ত হবে কেন? আমাদেরকে এসব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলামি জীবনদর্শনকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই এবং মহানবী (সা.)-এর নির্দেশিত পথ তাঁর চিন্তা ও কর্মকে আত্মস্থ করতে পারলেই তাঁর জন্মদিন পালন সার্থক হবে। সার্থক হবে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ।
স্বাগত ভাষণে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর শুভেচ্ছা জানিয়ে কালচারাল কাউন্সেলর জনাব মূসা হোসেইনী বলেন, হাদিসে আছে, বিশ্বের গোটা ঈমানদার মানবসমাজ হলো একটি দেহের মতো। এর এক স্থানে ব্যথা হলে সমগ্র শরীরে তা অনুভূত হয়।’ এই বাণীটিকে কেন্দ্র করে মহাকবি শেখ সাদী (র.)-এর কবিতার দুটি বিখ্যাত লাইনও আছে। শেখ সাদী (র.) উক্ত লাইন দুটিতে বিশ্বমানবতার ঐক্য চেয়েছেন। বিশাল বিশ্ব মানবসমাজের কোথাও অন্যায় অবিচার হলে সমগ্র মানবসমাজেই এর প্রভাব পড়বে। যদি না পড়ে তবে বুঝতে হবে মানবতার শরীরে কোন চেতনা নেই। মুসলমানদের ঈমানের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথা। মুসলমানদেরকে আজ মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে ইসলামের দুশমনরা। তারা যে বিভেদের জাল তৈরি করেছে তা ছিন্ন করতে হবে এবং মুসলমানদেরকে পারস্পরিক ঐক্য ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়তে হবে।
তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহ এমন এক সময় রহমতের নবী ও ঐক্যের প্রতীক মহানবী (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করছে যখন তারা সবচেয়ে জটিল ও কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। মুসলিম বিশ্বের মধ্যকার ঐক্য ও সহানুভূতি এবং ইসলামি উম্মাহর সম্মান ও মর্যাদা এখন দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তের কবলে নিমজ্জিত। মুসলমানরা তাদের গৌরবান্বিত ইতিহাসের প্রায় সমস্ত সময় ধরেই বড় বড় সফলতার পাশাপাশি কোনো না কোনো সমস্যাও অতিক্রম করেছে। বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ যখন তাদের পরিচয় ও ভাগ্য সম্পর্কে আরো সচেতন ও জাগ্রত হচ্ছে তখন ইসলামের শত্রুরা গোপনে ও প্রকাশ্যে ইসলাম আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি ইসলামি উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করে এই ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেয়া এবং মুসলমানদের মধ্যে মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব তীব্রতর করার মতো বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে ইসলামি উম্মাহর বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক শক্তিকে দুর্বল ও ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। এই অবস্থার স্পষ্ট নমুনা আজ আমরা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই নয়; বরং বিশ্বের নানা প্রান্তের বিভিন্ন মুসলিম ও অমুসলিম দেশগুলোতেও প্রত্যক্ষ করছি।
তিনি আরো বলেন, অতীতে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি গোপনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। কিন্তু আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা প্রকাশ্যে ইসলামি দেশগুলোতে তাদের এজেন্ট ও অনুসারীদের ব্যবহার করে মুসলমানদের মধ্যে মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব তীব্রতর করার পাশাপাশি এই জাতির মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে তাদের মানবতাবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু মহান আল্লাহর অসীম কৃপায় ও ইসলামি উম্মাহর সচেতনতা ও প্রতিরোধের ফলশ্রুতিতে শত্রুরা অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের ফাঁদে নিজেরাই আটকা পড়ছে।
প্রবন্ধকার অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা তাঁর প্রবন্ধে সমসাময়িক দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিম বিশ্বের করুণ চিত্র তুলে ধরেন। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, মিয়ামনার, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান সহ সারা বিশ্বে নির্যাতিত মুসলিম জনতার অবর্ননীয় দুঃখ-দুর্দশার কথা এবং মুসলমানদের প্রতি আমেরিকা-ইসরাইলের নানামুখি চক্রান্তের কথা করেন। তিনি সমসাময়িক পরিস্থিতিতে মুসলিম ঐক্যকে দৃঢ় করার আহ্বান জানান।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিশ্বব্যাপী যুগের পর যুগ ধরে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি ব্যাপক ষড়যন্ত্রের পরও মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ না হওয়া এবং শত্রুদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকেবহাল না হওয়াটা একেবারেই অনভিপ্রেত ও ভীষণ দুঃখজনক। পরিশেষে তিনি বলেন, মুসলিম জনতার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজন সচেতন মুসলিম উম্মাহ।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী সালাউদ্দীন আহমেদ ও তাঁর দল কর্তৃক মহানবী (সা.)-এর শানে রচিত বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর বিখ্যাত নাতে রাসূলের সুমধুর পরিবেশনা। মহানবী (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহকে ঘিরে উক্ত সংগীত সন্ধ্যাটি সুধীমহলের কাছে একটি হাম্দ-নাতের জলসায় রূপান্তরিত হয়।
আমিন আল ্আসাদ

বগুড়া শেখ সা’দী কালচারাল সেন্টারে
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উদ্যাপন
১২ই রবিউল আউয়াল ১৪৩৪ হিজরি মোতাবেক গত ২ নভেম্বর ২০১৭ শেখ সা’দী কালচারাল সেন্টারের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উদ্যাপন করা হয়।
ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু জাফর মন্ডলের সভাপতিত্বে এবং শেখ সা’দী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক মোঃ শাহীনুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ টিপু সুলতান। সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখেন বগুড়া আল-মাহদী শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষা বিভাগের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ আনিসুর রহমান। মূল আলোচনা উপস্থাপন করেন বগুড়া আল-মাহদী শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ মোজাফফর হোসেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি এবং রাজশাহী সুগার মিল্্স লিঃ এর সাবেক মহাব্যবস্থাপক কৃষিবিদ আলহাজ্ব মীর সিদ্দিকুর রহমান।
আলোচকগণ প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্মের পূর্বে আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়াত ও জন্মকালীন ঘটনাবলি এবং মহানবী (সা.)-এর চিরস্মরণীয় অবদান ও শিক্ষামালা হতে আলোচনা করেন।
তাঁরা বলেন, মহানবী (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়া আমাদের জন্য অতীব জরুরি। আলোচকগণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনচরিত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানান।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান স্থপতি মরহুম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী (র.) কর্তৃক ঘোষিত ১২ই রবিউল আউয়াল থেকে ১৭ই রবিউল আউয়াল পর্যন্ত ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ ঘোষণা প্রসঙ্গে বিশ্বে মুসলিম উম্মার ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্য স্থাপন করতে হবে।
ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে
লালকুঠি সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে কবিতা পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত

পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে লালকুঠি সাহিত্য পরিষদ-এর উদ্যোগে মীরপুর লালকুঠি দরবার শরীফ মিলনায়তনে উক্ত দরবার শরীফের পীর সাহেব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আহসানুল হাদীর সভাপতিত্বে মহানবী (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও নজরুল গবেষক কবি আবদুল হাই শিকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজকের ভোলা সম্পাদক জনাব মুহাম্মদ শওকত হোসেন ও ইতিহাসবিদ মুহাম্মাদ আশরাফুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন মাসিক অর্থবীমা পত্রিকার সম্পাদক কবি আতিক হেলাল, মেরিন সানন্দ পত্রিকার সম্পাদক ও অনলাইন টেলিভিশন আদ দাওয়া’র ইসলাম ও নারী বিষয়ক অনুষ্ঠান সুন্দর জীবনের জন্য-এর নিয়মিত ভাষ্যকার কবি উম্মূল খায়ের, মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক, কবি আমিন আল আসাদ, কবি রোকন জহুর, সাংবাদিক মুহাম্মদ আবু হানিফ ও জনাব আসাদুজ্জামান। পবিত্র কালামে পাক থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ ক্বারী মুহাম্মদ ইবরাহিম। কবিতা পাঠ করেন কবি আতিক হেলাল, কবি দেলোয়ার হোসেন, কবি জামশেদ ওয়াজেদ, কবি জাফর পাঠান, কবি আমিন আল আসাদ, কবি রোকন জহুর, কবি তাজ ইসলাম, কবি ক্বারী ওবায়দুল্লাহ, মর্সিয়া লেখক কবি শাহনেওয়াজ তাবীব, কবি ইবনে আবদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কবি মুহাম্মদ রফিক মিয়া, কবি শেখ জাহিদ, কবি আলমগীর হোসেন জোয়ারদার, হাফেজ ক্বাল মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও কবি সুজন।
সভাপতির বক্তব্যে লালকুঠি দরবার শরীফের পীর সাহেব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আহসানুল হাদী বলেন, মহানবী (সা.)-এর জন্মদিনে সব মুসলমানই আনন্দিত হবে এবং এটাই স্বাভাবিক। তাঁর জন্মমাত্রই আরবের এক গোলম আযাদ হয়ে গিয়েছিল। মুক্ত বাতাসে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল। অর্থাৎ তিনি পৃথিবীতে এসেই মানুষকে মানুষের গোলামি থেকে মুক্তির সূচনাটি করেছিলেন। মহানবী (সা.)-এর পবিত্র মিলাদ ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। মতপার্থক্যকে মতপার্থক্যের জায়গায় রেখে অন্তত মৌলিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে হলেও মুসলমানদের এক হওয়া দরকার। কারণ, বিশ্বে মুসলমানদের এখন ভয়াবহ দুর্দিন চলছে। মুসলমানদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা দরকার।
তিনি বলেন, রাসূলের সীরাত ও মিলাদকে কেন্দ্র করে সীরাতুন্নবী (সা.) ও মিলাদুন্নবী (সা.) এই দুইভাবে বিভক্ত হয়েছে জাতি। অথচ দুটিই সঠিক। দুটিই একটির ভেতরে অন্তর্লীন। রাসূল (সা.)-এর মিলাদ বা জন্ম না হলে তাঁর সীরাত কি করে চর্চা করবেন? আর সীরাতচর্চা করতে গেলে তাঁর মিলাদও এসে পড়ে। কাজেই এই দুই জিনিস নিয়ে আমাদের দেশে অহেতুক বিতর্ক হয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ইতিহাসের এক বর্বর যুগে আরবে মহানবী (সা.) পৃথিবীতে এসেছেন; মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ইতিহাসচর্চার জন্য মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে, অথচ মুসলমানদেরকে ইতিহাসশূন্য করে দেয়ার জন্যই ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্রে ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যার নামে এসব নিদর্শন ধ্বংস করা হয়েছে ও হচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজকের ভোলা পত্রিকার সম্পাদক জনাব মুহাম্মদ শওকাত হোসেন বলেন, ইমাম খোমেইনী (র.)-এর জীবিতাবস্থায় আমরা ইরানে গিয়েছিলাম। তিনি ইসলামি ঐক্যের আহ্বান সব সময় জানাতেন। তিনি একটি মাত্র উদাহরণ দিয়ে আমাদেরকে সেদিন বুঝিয়েছিলেন ঐক্যের গুরুত্ব। তিনি লেবানন প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে লেবাননের জনগণকে ব্রিটিশরা তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছে। খ্রিস্টান, শিয়া ও সুন্নি। দেখুন, খ্রিস্টানদের মাঝে নানা ভাগ আছে, অথচ তাদেরকে শুধু খ্রিস্টান হিসেবে দেখানো হলো। আর মুসলমানদেরকে বিভক্ত করে শিয়া ও সুন্নি হিসেবে দেখানো হলো। সেখানে সংবিধান তৈরি করা হলো : খ্রিস্টানদের মধ্য থেকে প্রেসিডেন্ট, শিয়া বা সুন্নিদের মধ্য থেকে প্রধান মন্ত্রী ও স্পিকার নির্বাচিত হবে। অথচ আমরা মুসলমানরা যদি সেখানে শিয়া বা সুন্নি না হয়ে মুসলমান হতাম তাহলে আমরাই হতাম সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাহলে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার তিনটি পদই আমাদের হতো। ইমামের ওই বক্তব্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনিই মুসলিম ঐক্যের জন্য পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, আজকের তরুণ সমাজ ইসলামের ইতিহাস জানে না। তারা জানে না ইসলামের জ্ঞান-গরিমা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে। তাদেরকে সেসব জানাতে হবে তবেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মিলাদ বা সীরাতচর্চা সফল হবে।
ইতিহাস গবেষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এর রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত রূপ। একে খ-িতভাবে দেখার বা খ-িতভাবে চর্চা করার কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ইসলাম গোঁড়াদের ধর্ম নয়। এখানে আছে উন্নততর সংস্কৃতি। আল্লাহর রাসূল (সা.) কবিদের মর্যাদা দিয়েছেন। ইসলাম সংস্কৃতিবিমুখ নয়। আল্লাহর রাসূল কবিতার মর্যাদা দিয়েছেন, এমনকি সংগীতেরও মর্যাদা দিয়েছেন। আরবের উটের কাফেলা দূরদূরান্ত অতিক্রম করার সময় এক ধরনের আরবি গান ধরতো। সেটা রাসূলের যুগেও ছিল। ঈদের দিনে দফ বাজিয়ে শিশু-কিশোররা গান গেয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে। আমাদের গ্রামে-গঞ্জে যেমন গীতের মজলিশ হয় তেমনি আরবেও হতো। মদীনায় হিজরতের সময় মহানবী (সা.)-কে স্বাগত জানিয়ে মদিনাবাসী গেয়েছিল বিখ্যাত ‘ত্বালাআল বাদরু আলাইনা’ গানটি। রাসূল (সা.) আরবের এক বৃদ্ধা মহিলা কবি খানছা থেকেও কবিতা বা গান শুনেছেন। কবি খানসা তাঁর প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকের কাসিদা রচনা করে নগরে ঘুরে ঘুরে গাইতেন। রাসূল (সা) তাঁর কাছ থেকে কাসিদা শুনেছেন। সেযুগের দফই আজকের আধুনিক মিউজিকাল ইনুস্ট্রুমেন্ট। অথচ আজকে আমরা দফ পর্যন্তও যেতে চাইছি না। তাহলে সংস্কৃতিসেবীরা কি করে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হবে?
কবি আমিন আল আসাদ বলেন, মানুষ একটি সাংস্কৃতিক জীব। মানুষ সংস্কৃতিবিমুখ হতে পারে না। আপনি যদি তাকে সুস্থ সংস্কৃতি না দেন তবে কিন্তু আপনার জন্য মাঠ খালি পড়ে থাকবে না। সেখানে অন্য সংস্কৃতি এসে বাসা বাঁধবে।
ইসলামি ঐক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ধর্মীয় নেতা রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেছেন, শিয়া ইসলামের ব্রিটিশ ভার্সন এবং সুন্নি ইসলামের মার্কিন ভার্সন তৈরি করে মুসলমানদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এ দুটি হচ্ছে একই ছুরির দুই ধার। আর মরহুম ইমাম খোমেইনী (র.) বলেছিলেন, ‘যারা শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করে তারা শিয়াও নয়, সুন্নিও নয়; বরং তারা সা¤্রাজ্যবাদের দালাল। যারা চায় মুসলিম দেশসমূহকে আমাদের হাত থেকে কেড়ে নিতে।’’ এ দুটি কথা আজ বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
কবি উম্মূল খায়ের বলেন, ইসলাম নারীদেরকে মর্যাদা দিয়েছে। দিয়েছে তাকে জ্ঞানার্জন, চরিত্র গঠন, কর্মসংস্থান ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অধিকার। দিয়েছে সম্পদে অধিকার। কিন্তু আমাদের সমাজে দেখা যায় ইসলামের এক ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে নারীদেরকে এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। অপরপক্ষে আরেকদল আছে নারীদেরকে বিজ্ঞাপনের মডেল বানিয়ে আধুনিকতার নামে পণ্য হিসেবে অশ্লীলতার পথে ধাবিত করে। তিনি উভয় ধারাকেই চরমপন্থা হিসেবে অভিহিত করেন।
কবি আতিক হেলাল বলেন, মহানবী (সা.)-এর জীবন ও কর্মকে আত্মস্থ করতে পারলেই মহানবী (সা.)-এর মিলাদ ও সীরাত পালন তাৎপর্যপূর্ণ হবে। অন্যথায় সবই হবে কেবল আনুষ্ঠানিকতা।
মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, রাসূল (সা.)-এর জীবনদর্শনের মধ্যে সবকিছুই আছে, সেজন্য আলাদাভাবে কোন বাদ-মতবাদের কাছে আমাদের যাওয়ার দরকার নেই।
মাওলানা আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি মহানবী (সা.)-কে ধারণ করেছেন আমাদের দেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আর ফারসি সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি মহানবী (সা.)-কে আত্মস্থ করেছেন মহাকবি শেখ সা’দী (র.) ও আল্লামা রুমী (র.)।
কবি রোকন জহুর বলেন, ভারতে গরু খাওয়ার অপরাধে যখন মুসলমানদেরকে পুড়িয়ে মারা হয়, যখন আরাকানে মুসলমানরা গণহত্যার শিকার হয়, যখন ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, ইরাক, সিরিয়া, লেবাননে মুসলিমরা হত্যা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয় তখন সত্যিই দুঃখ লাগে যে, মহানবী (সা.) যে সত্য ও মানবতার কথা বলেছিলেন এর ভিত্তিতে মুসলমান ও মানবতা একাতাবদ্ধ নয়।
আখলাকুল আম্বীয়া

যশোরে ইনকিলাব-এ-মাহ্দী মিশনের উদ্যোগে
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপিত

যশোরে ইনকিলাব-এ-মাহ্দী মিশন এর উদ্যোগে নলডাঙ্গা, আর. এন. রোড এ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে মাহফিলের আয়োজন করা হয়। উক্ত মাহফিলে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ওস্তাদ মল্লিক আব্দুর রউফ এর সভাপতিত্বে রাসূল (সা.)-এর জীবনীর ওপর আলোচনা রাখেন ঐতিহাসিক দানবীর হাজী মোহাম্মাদ মহ্সিন মুড়লী ইমাম বাড়ীর পেশ ইমাম জনাব ইকবাল হুসাইন, মিশনের পরিচালক জনাব সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে রাসূল (সা.)-এর মিলাদ পাঠ করেন জনাব ইরশাদ আহ্ম্মেদ। অনুষ্ঠানে রাসূল (সা.)-এর শানে নাত ও গজল পরিবেশন করা হয়।

বাংলাদেশে ফারসি চর্চার জীবন্ত উদারহরণ মোসাম্মাৎ জামিলা খাতুন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে ফারসিচর্চার জীবন্ত উদাহরণ হচ্ছেন ৯৭ বছর বয়স্কা স্মৃতিমান মহীয়সী নারী মোসাম্মাৎ জামিলা খাতুন। গত ২০ অক্টোবর ২০১৭ ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে জাতীয় আধ্যাত্মিক কবিতা পরিষদের উদ্যোগে ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে মোসাম্মাৎ জামিলা খাতুনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সাবেক সচিব ড কামালউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, লালকুঠি দরবার শরীফের পীর আহসানুল হাদী, সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার (সিএনসি)-এর নির্বাহী পরিচালক, শিশু কিশোর মাসিক ফুলকুঁড়ির সম্পাদক শিশু সাহিত্যিক মাহবুবুল হক, পেট্রোবাংলার ডিজিএম মাওলানা বোরহান উদ্দিন, কালান্তর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জনাব সাঈদ আহমদ আনিস, লেখক-গবেষক ড. হালিমদাদ খান, জনাব এহতেসাম আহমেদ পারওয়েজ প্রমুখ। সভায় কবিতা পাঠ করেন কবি আতিক হেলাল, কবি আমিন আল আসাদ, কবি জাফর পাঠান, কবি ইবনে আবদুর রহমান ও শিশু আবৃত্তিশিল্পী আঞ্জুম ইসলাম। জাতীয় আধ্যাত্মিক কবিতা পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিশুসাহিত্যিক, ছড়াকার কবি মহিউদ্দিন আকবর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
মোসাম্মাৎ জামিলা খাতুন আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি, নাগরী ও বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিতে সক্ষম। তিনি বিভিন্ন ফারসি কবিতার লাইন আবৃত্তি করেন এবং আল্লাহর নিরানব্বই নামসহ মোনাজাতের একটি দীর্ঘ কবিতা মুখস্ত পাঠ করে শোনান।
জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী বলেন, এই মহীয়সী নারী প্রখর স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ও ধীমান। তিনি যেভাবে অনর্গল ফারসি কবিতার লাইনগুলো বলে যাচ্ছেন সেই সাথে পবিত্র কোরআন, হাদিস, দোয়া-মোনাজাত করছেন তাতে আমি সত্যিই অভিভূত। এই মা-কে দেখেই বোঝা যায়, ইরানের সাথে বাংলাদেশের জনগণের কী রকম গভীর সম্পর্ক ছিল আর কী রকম গভীর সম্পর্ক ছিল বাংলা ভাষার সাথে ফারসি ভাষার। এই সম্পর্ক যত না বাহ্যিক দিক থেকে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি ছিল অন্তরগত দিক থেকে। হাফিজ, সা’দী, রুমী, ফরিদউদ্দিন আত্তার যে বাংলার মানুষের অন্তরে কতটা নিবিঢ়ভাবে মিশে গিয়েছিলেন তা বোঝা যায় এই মহিয়সী নারীকে দেখে।
অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের জাতিসত্তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইরানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, ইসলামের আধ্যাত্মিকতার সুশীতল ও প্রাণখোলা চরিত্রটি গৃহীত হয়েছিল তা এই মাকে দেখে বোঝা যায়। তিনি আরো বলেন, ফারসি ছিল এদেশে আগত অগণিত অলি-আওলিয়ার ভাষা। আমাদের দেশে একসময় ফারসি রাজভাষা ছিল। ইংরেজরা ক্ষমতা দখল করার পরও আরো পঞ্চাশ বছর এদেশে ফারসি ভাষাতেই সকল কার্যক্রম চলেছে। ইংরেজরা সহসাই ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি চাপিয়ে দিতে পারে নি। সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ফারর্সির স্থানে ইংরেজিকে প্রতিস্থাপিত করেছে। তারপরও দীর্ঘদিন মাদ্রাসাগুলোতে ফারসির চর্চা ছিল।
ড. কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, শিক্ষিত ও সচেতন মা সচেতন সমাজ গঠনের সহায়ক। অনুষ্ঠানের এই প্রায় শত বছর বয়সী মানুষের স্মরণশক্তি সত্যিই সকলকে বিস্ময়াভিভূত করে। এই ধরনের মানুষ হচ্ছেন জীবন্ত কিংবদন্তির মতো এবং চলমান ঐতিহাসিক নিদর্শনের মতো যা আমাদেরকে আমাদের অতীতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
জনাব আহসানুল হাদী বলেন, এই মহীয়সী নারী মোসাম্মাৎ জামিলা খাতুনের সময়ে শিক্ষার এমন আধুনিক পরিবেশ ছিল না এবং নানা প্রতিবন্ধকতাও ছিল। কিন্তু তিনি সেসব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন।
জনাব মাহবুবুল হক বলেন, আমরা ছোটবেলায় ফারসি পড়েছি। ফারসি শুনেছি। আজ এ অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান নারী মোসাম্মাৎ জামিলা খাতুনের কণ্ঠে ফারসি শোনাকে আমি উপভোগ করেছি।
এহতেশাম আহমেদ পারভেজ বলেন, আজকের এই মুরব্বি মাতার কাছ থেকে আমরা আমাদের জাতিসত্তা ও জাতীয় সংস্কৃতির সুমধুর অতীত সৌরভ পেলাম। ফারসি ভাষা সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও সুমিষ্ট। সেকারণেই এদেশে খুব সহজেই এটি গৃহীত হয়েছে। তিনি বলেন, ফারসি ভাষা কীভাবে আমাদের বাংলা ভাষায় ও বাংলাদেশের বিশেষ অঞ্চলে চেতনার গভীরে মিশে গেছে এ নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার।
সভায় উক্ত মহীয়সী নারীকে জাতীয় আধ্যাত্মিক কবিতা পরিষদ-এর পক্ষ থেকে মানপত্র ও সম্মাননা ক্রেস্ট, সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার (সিএনসি)-এর পক্ষ থেকে সম্মাননা পত্র এবং রিয়েল পিকচার ইউনিট-এর পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় এবং কবি আমিন আল আসাদ তাঁর কাব্য মানপত্রটি সম্মাননা হিসেবে প্রদান করেন।