মহানবী (সা.) বলেন : কোনো ব্যক্তি তোমাদেরকে উপকার করলে তাকে তার বিনিময় দিবে। আর যদি তোমাদের কিছু না থাকে তাহলে প্রশংসা কর। কেননা, নিশ্চয় প্রশংসা হলো প্রতিদান।
মহানবী (সা.) বলেন : হতভাগ্যের লক্ষণ চারটি : চোখের শুষ্কতা (পাপের পরও অনুশোচিত না হওয়া), অন্তরের পাষাণত্ব, দুনিয়া কামনায় অতিশয় লোভ আর পাপকর্ম অব্যাহত রাখা।
মহানবী (সা.) বলেন : শেষ জামানায় সবচেয়ে কম যে জিনিস থাকবে তা হলো বিশ্বস্ত ভাই আর হালাল অর্থ।
মহানবী (সা.) বলেন : যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন কোনো বান্দারই পা সরবে না যতক্ষণ না তাকে চারটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে : তার আয়ুষ্কাল সম্পর্কে- তা কোন্ পথে নিঃশেষ করেছে, তার যৌবন সম্পর্কে- তা কোন্ কাজে ব্যবহার করেছে, তার আয়-উপার্জন সম্পর্কে- তা কোন্ পথে অর্জন করেছে এবং কোন্ কাজে ব্যয় করেছে আর আমার আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা সম্পর্কে।
মহানবী (সা.) বলেন : লজ্জা দু’টি : বুদ্ধিমত্তার লজ্জা আর বোকামিপ্রসূত লজ্জা। বুদ্ধিমত্তার লজ্জা জ্ঞানের পরিচয় বহন করে আর বোকামিপ্রসূত লজ্জা মূর্খতার পরিচায়ক।
মহানবী (সা.) বলেন : সদাচার তার অধিকারীকে সারাদিন রোযা রাখা ও সারারাত জেগে ইবাদত করা ব্যক্তির সমান মর্যাদায় পৌঁছে দেয়। তখন তাঁকে বলা হলো : বান্দার প্রতি সবচেয়ে উত্তম দান কী? তিনি বললেন : উত্তম চরিত্র।
ইমাম আলী (আ.) বলেন : আল্লাহর নিকট প্রিয়তম পথ হলো দুই ঢোক। একটি হলো ক্রোধকে তিতিক্ষা দ্বারা গিলে ফেলবে। আরেকটি হলো দুঃখকে ধৈর্য দ্বারা গিলে ফেলবে। আর আল্লাহর নিকট প্রিয়তম পথ হলো দুই ফোঁটা। রাতের আঁধারে (আল্লাহর ভয়ে) এক ফোঁটা অশ্রু আর আল্লাহর রাহে এক ফোঁটা রক্ত। আর আল্লাহর নিকট প্রিয়তম পদক্ষেপ হলো দুটি। কোনো মুসলমান ব্যক্তির এমন পদক্ষেপ যা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সারিকে মজবুত করে। আরেকটি পদক্ষেপ হলো রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তাকে জোড়া লাগানো। আর এই দ্বিতীয় পদক্ষেপটি জিহাদের জন্য পদক্ষেপের চেয়ে উত্তম।
ইমাম আলী (আ.)-কে প্রশ্ন করা হলো : আল্লাহর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম কী? ইমাম বললেন : কথা বলা। প্রশ্ন করা হলো : আল্লাহ্ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে নিকৃষ্ট কী? ইমাম পুনরায় বললেন : কথা বলা। অতঃপর বললেন : কথার দ্বারাই মুখ উজ্জ্বল হবে আর কথার দ্বারাই মুখ কৃষ্ণবর্ণ হবে।
ইমাম আলী (আ.) বলেন : হে মানুষ! দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থেক। কারণ, এটাই হলো সকল বিচ্যুতির কারণ, সকল বিপদের দরজা এবং সকল ফেতনার (বিশৃঙ্খলার) সঙ্গী এবং সকল ভোগান্তির কারণ।
ইমাম আলী (আ.) বলেন : দীনদারদের কিছু চিহ্ন রয়েছে যা দ্বারা তাদের চেনা যায়। যথা : সত্যবাদিতা, আমানত রক্ষা, প্রতিশ্রুতি পালন, স্বজনদের মধ্যে সম্পর্ক জোড়া লাগানো, অক্ষমদের প্রতি দয়াবান হওয়া, নারীদের সাথে কম মেলামেশা করা, সৎ স্বভাবী হওয়া, ধৈর্যশীল হওয়া এবং জ্ঞান ও যা কিছু আল্লাহ্ নিকটবর্তী করে তার অনুসরণ করা। অতএব, ধন্য হোক তারা এবং তাদের উত্তম প্রত্যাবর্তন।
ইমাম মুহাম্মাদ আল বাকের (আ.) বলেন : ইমাম (আ.) বলেন : নিশ্চয় যে ব্যক্তি কোনো নতুন ধনী লোকের মুখাপেক্ষী হয় তার উপমা হলো ঐ দেরহামের ন্যায় যা কোনো বিষধর সাপের মুখে রয়েছে, যা একদিকে তোমার প্রয়োজন অপরদিকে সমূহ বিপজ্জনক।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : নিশ্চয় মুমিন ব্যক্তি যখন সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ শোনে তখন তা পালন করে আর যে মূর্খ সে শেখে, কিন্তু যে চাবুক ও তলোয়ারের অধিকারী সে তা গ্রহণ করে না।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : তোমাদের পিতাদের সাথে সুন্দর আচরণ কর যাতে তোমাদের পুত্ররা তোমাদের সাথে সুন্দর আচরণ করে। আর লোকের স্ত্রীদের থেকে পবিত্র থেক যাতে তোমাদের স্ত্রীরা পবিত্রা থাকে।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : সুখের সময় আল্লাহ্র নেয়ামত হলো অনুগ্রহ আর কষ্টের মধ্যে তাঁর নেয়ামত হলো (গুনাহ থেকে) পবিত্র হওয়া।
ইমাম আলী ইবনে মূসা আর রেযা (আ.) বলেন : কোনো বান্দাই প্রকৃতপক্ষে ঈমানের পূর্ণতায় পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ না তিনটি গুণের অধিকারী হবে : দীনে গভীর জ্ঞান, জীবন-জীবিকায় পরিমিতি এবং বিপদে ধৈর্যধারণ।
(তুহাফুল উকূল থেকে সংকলিত)
অনুবাদ : আব্দুল কুদ্দুস বাদশা
All posts by dreamboy
সংবাদ বিচিত্রা
নওরোয উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট রুহানির অভিনন্দনবার্তা : নতুন ইরানি বছরে বিশ্ব হোক শান্তি ও সুবিচারে পরিপূর্ণ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. হাসান রুহানি ইরানি নতুন বছরের প্রথম দিন নওরোয উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন।
গত ২১শে মার্চ (২০১৮) ইরানি জনগণের মধ্যে হিজরি সৌরবর্ষ হিসেবে সমধিক পরিচিত ইরানি নতুন বছর ১৩৯৭ শুরু হয়। এ উপলক্ষে ২০শে মার্চ প্রেসিডেন্ট রুহানি বিশেষভাবে নওরোয উৎসব পালনকারী দেশ আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আর্মেনিয়া, তুরস্ক, কাযাকিস্তান, ভারত, কিরগিযিস্তান, ইরাক ও উযবেকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানগণ বরাবরে আলাদাভাবে প্রেরিত একটি বাণীতে তাঁদেরকে ও তাঁদের নিজ নিজ দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর এ বাণীতে বলেন, নওরোযের আগমন শান্তি ও বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। তিনি বলেন, আমি আশা করি যে, সৌন্দর্য ও সম্ভারে পরিপূর্ণ নওরোয উৎসব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিশ্ব সকল জনগণের জন্য শান্তিপূর্ণ হবে এবং সহিংসতা, চরমপন্থা ও যুদ্ধ থেকে দূরে থাকবে, সেই সাথে আমাদের সরকারগুলো ও রাজনীতিবিদগণ আমাদের জনগণের জন্য শান্তি, ঐক্য ও সুবিচার নিয়ে আসার লক্ষ্যে দৃঢ়তার সাথে কাজ করতে সক্ষম হবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর এ বাণীতে বলেন, সুপ্রাচীন ও গূঢ় তাৎপর্যবহ নওরোয উৎসব হচ্ছে আমাদের সুসভ্য পূর্বপুরুষদের সুগভীর চিন্তা-চেতনা, সমৃদ্ধ সভ্যতা ও সমুন্নত সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত আনন্দ ও সুখ-শান্তিতে পরিপূর্ণ একটি বিরাট উপলক্ষ- যাঁরা আমাদের জন্য এ ধরনের একটি মুল্যবান উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছেন।
ড. রুহানি তাঁর বাণীতে আরো বলেন, রং ও সুগন্ধ নিয়ে বসন্ত ও নওরোযের আগমন- যা আমাদের কাছে সৌন্দর্য ও আনন্দের বাণী, সতেজ প্রকৃতি এবং শান্তি ও বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বসন্তের আগমনের সাথে সাথে বিশ্ব সাধারণভাবে সকল মানুষের জন্য ও বিশেষভাবে এতদঞ্চলের জনগণের জন্য ঐক্য, সংহতি ও সততা নিয়ে আসবে, সমস্ত রকমের জাতিগত ও ধর্মীয় বিরোধের অবসান ঘটাবে, আর বিশ্ব হবে শান্তিপূর্ণ এবং যে কোনো ধরনের সহিংসতা, চরমপন্থা ও যুদ্ধ থেকে মুক্ত।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর বাণীর শেষে নতুন হিজরি সৌরবর্ষ ১৩৯৭ সংশ্লিষ্ট সকল দেশের জনগণের জন্য একটি শুভ নতুন বছর হোক- এই কামনা করেন।
এছাড়া জাতির উদ্দেশে দেয়া নওরোযের ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট ডক্টর হাসান রুহানি বলেন, শত্রুদের নানা ষড়যন্ত্র ও তৎপরতা সত্ত্বেও গত ফারসি বছরে ইরানি জাতি নানা বিজয় ও সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ইরানি জাতির ঐক্য দেখে শত্রুরা বিস্মিত হয়েছে এবং তারা এই মহান জাতির পরাক্রমের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।
ভূমিক¤েপ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কেরমানশাহ শহরে এক সমাবেশে ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইরানি জাতি ইরাকি, সিরীয় ও লেবাননি জাতির পাশে থেকে এ অঞ্চলে আগের চেয়েও বেশি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে।
ড. রুহানি আরও বলেন, যেমনটি সর্বোচ্চ নেতা নওরোজ-বার্তায় বলেছেন, নতুন ফারসি বছর হবে জাতীয় উৎপাদন, ইরানি পণ্যের প্রতি সহায়তা, কর্মসংস্থান ও সমৃদ্ধির বছর।
ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত
গত ১ এপ্রিল ইরানে নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস। ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের মাত্র দুই মাস পর ১৯৭৯ সালের এই দিনে এক ঐতিহাসিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ওই গণভোটের মাধ্যমে ইরানের জনগণ ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেন। জনগণ ইসলামি প্রজাতন্ত্র চায় কি না জানতে চেয়ে এই গণভোটের আয়োজন করা হয়। প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী-আইআরজিসি এক বিবৃতিতে বলেছে, শত্রুদের প্রত্যাশার বিপরীতে ইসলামি বিপ্লবের চল্লিশতম বছরটি হবে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সাফল্যমণ্ডিত। নানা ক্ষেত্রে ইরানের অব্যাহত সাফল্যের কারণেই ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি শত্রুতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আইআরজিসি প্রধান মন্তব্য করেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রশ্নে ঐতিহাসিক গণভোটের প্রাক্কালে ইসলামি ইরানের অবিসংবাদিত নেতা ও ইসলামি বিপ্লবের মহান রূপকার মরহুম ইমাম খোমেইনী (রহ.) বলেছিলেন, ‘এই গণভোট আমাদের জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করবে। এ গণভোট হয় আপনাদের স্বাধীনতা ও মুক্তি দেবে তথা ইসলামি গণতান্ত্রিক শাসন উপহার দেবে অথবা অতীতের মতোই পরাধীনতা এবং রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসন বজায় থাকবে। আপনারা এ দুই পথের যে কোনো একটি পথ বেছে নিতে পারেন। এটা এখন আপনাদের স্বাধীন ইচ্ছার বিষয়।’
বিপ্লবের সময় ইরানি জনগণ শাহ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিত। এরকম একটি স্লোগান ছিল ‘মুক্তি, স্বাধীনতা এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র।’
বিপ্লব বিজয়ের পর অনুষ্ঠিত ওই গণভোটে জনগণের এ দাবির পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটে। এতে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ৯৮.২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এরপর ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিলকে (ফারসি ১২ ফারভারদিন) ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ঐতিহাসিক ওই গণরায়ের মধ্য দিয়ে ইরানে রাজতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়া হয় এবং ইরানের জনগণ রাজতন্ত্রকে চিরদিনের জন্য প্রত্যাখ্যান করে। এ ছাড়াও এর ফলে ইরানে নিষিদ্ধ হয় মানবরচিত মতাদর্শভিত্তিক সব ধরনের শাসনব্যবস্থা। সেই থেকে প্রতি বছরের ১ এপ্রিল ইরানে পালিত হচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস।
প্রথম ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবসে ইমাম খোমেইনী (রহ.) এক বাণীতে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন বলে সূরা আল কাসাসের ৫ নম্বর আয়াতসহ কুরআনের নানা আয়াতে ওয়াদা করেছেন। মহান ইরানি জাতির প্রতি আমার আন্তরিক অভিনন্দন যারা রাজতন্ত্রের যুগে শাসকগোষ্ঠী ও রাজাদের জুলুমের কারণে অপমানিত হয়েছেন এবং দুর্ভোগ সহ্য করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সম্মানিত করেছেন, তাঁর শক্তিশালী হাত দিয়ে জালিম শাসককে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আল্লাহর শক্তিই বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেণি তথা মুস্তাদআফদের শক্তি।
তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র কায়েম করে দিয়ে ইরানি জাতিকে তাদের ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকার দান করেছেন।’
ক্রীড়া দৃঢ়তা ও সুস্বাস্থ্য এবং জাতিসমূহের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সহায়ক : প্রেসিডেন্ট রুহানি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল্-মুসলিমীন ড. হাসান রুহানি ক্রীড়ার প্রতি তাঁর দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ক্রীড়া দৃঢ়তা ও সুস্বাস্থ্য এবং জাতি সমূহের মধ্যে ঐক্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক। তিনি গত ১ মার্চ (২০১৮) ফেডারেশন অব্ ইর্ন্টান্যাশন্যাল্ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন্স্ (ফিফা)-এর প্রেসিডেন্ট গিযান্নী ইন্ফ্যান্তিনোকে তেহরানে প্রদত্ত সাক্ষাতে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, জাতি সমূহের জন্য, বিশেষ করে তরুণদের জন্য ফুটবলের বিশেষ আবেদন রয়েছে। এ কারণে ফিফা জাতি সমূহকে পরস্পরের সাথে ঘনিষ্ঠতর করে তোলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, সৌভাগ্যবশত ইরানি জনগণ, বিশেষ করে কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম ক্রীড়ার প্রতি, বিশেষ করে ফুটবলের প্রতি খুবই আগ্রহী। তিনি বলেন, ইরানিদের কাছে ক্রীড়ার ইভেন্টসমূহ খুবই আবেগ-উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাসের বিষয়; আর এটা আপনি তেহরানের সর্বাধিক জনপ্রিয় দু’টি ফুটবল ক্লাবের মধ্যে প্রতিযোগিতার সময় ভালোভাবে দেখতে পাবেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি উল্লেখ করেন যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ক্রীড়া ক্ষেত্রের জন্য উত্তরোত্তর বেশি সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে চেষ্টা করে আসছে। তিনি বলেন, এর ফলে আমাদের দেশে আজ সাধারণ জনগণের মধ্যে ও পেশাদার ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ক্রীড়া তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় টীমসমূহ বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করছে, বিশেষ করে ইরানের জাতীয় ফুটবল টীমগুলো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের সবগুলো ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে।
ড. রুহানি বিশেষ করে ইরানি নারীদের বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ক্ষেত্রে, বিশেষত ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রতি ফিফা-র প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ইরানি নারীরা অধিকতর প্রাণবন্তভাবে ক্রীড়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করছেন, বিশেষ করে ফুটবলের ক্ষেত্রে ইরানে নারী ক্রীড়াবিদের সংখ্যা বর্তমানে ২৩ হাজার।
ইরানি প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসমূহের ও ক্রীড়া টীমসমূহের জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান একটি নিরাপদ দেশ। তিনি উল্লেখ করেন যে, আঞ্চলিক ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর জাতি সমূহের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, সব দেশের জনগণ যাতে তাদের নিজ নিজ দেশের স্টেডিয়ামসমূহে তাদের প্রিয় টীমসমূহের খেলা দেখার অধিকার ভোগ করতে পারে সে লক্ষ্যে ফিফার পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো প্রয়োজন।
ফেডারেশন অব্ ইর্ন্টান্যাশন্যাল্ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন্স্ (ফিফা)-এর প্রেসিডেন্ট গিযান্নী ইন্ফ্যান্তিনো তাঁর বক্তব্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ফুটবলের বিশ্বব্যাপী একটি ভূমিকা রয়েছে এবং নিঃসন্দেহে ইরানি জনগণ বিশ্বের মধ্যে ফুটবলের সর্বাধিক আবেগময় ভক্ত।
গিযান্নী ইন্ফ্যান্তিনো আরো বলেন, ফিফা সব সময়ই ক্রীড়ার মাধ্যমে বিশ্বের অবস্থাকে উন্নততর করার জন্য চেষ্টা করে আসছে এবং ইরানে ফুটবলের মান উন্নততর করণে সহায়তা দানের ক্ষেত্রে ফিফা মোটেই দ্বিধা করবে না।
তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় ফুটবল টীমকে একটি শক্তিশালী টীম বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, অন্যান্য দেশের জনগণের ন্যায় ইরানি জনগণেরও স্টেডিয়ামসমূহে তাদের টীমের সপক্ষে আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রকাশের ও স্বীয় টীমকে উৎসাহ প্রদানের অধিকার রয়েছে এবং আমরা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনসমূহের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন হিসেবে তাদের এ অধিকারের প্রতিরক্ষা করে যাব।
৮০ লাখ দর্শনার্থীর পদচারণায় শেষ হলো নওরোজ উৎসব
ইরানে টানা দুই সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে গত ২ এপ্রিল শেষ হলো নওরোজ উৎসব তথা ফারসি নববর্ষ। এবারের নওরোজের ছুটিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী জাদুঘর ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে ভ্রমণ করেছেন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী। সরকারি তথ্য মতে, উল্লিখিত সময়ে প্রায় ৮০ লাখ দর্শনার্থী দেশটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জাদুঘর ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে ঘুরাঘুরি করেছেন।
শনিবার ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থার (সিএইচএইচটিও) মিউজিয়াম ও ঐতিহাসিক স¤পত্তি বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মাদ রেজা কারজার এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ইরানের জাদুঘর ও অন্য স্থাপনাগুলোতে প্রায় ৮০ লাখ লোখ ভ্রমণ করেছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থার আওতাধীন এসব জায়গাতে ঘুরাঘুরি করতে প্রবেশ ফি দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
রেজা কারজার বলেন, আগের বছরের তুলনায় এবারে দর্শনার্থীর সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেশি ছিল। ফারস প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ সংখ্যক মিউজিয়াম থাকায় সেখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।
এছাড়া রাজধানী তেহরানের ল্যুভর প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল রেকর্ড সংখ্যক। একদিনের প্রদর্শনীতে এসেছে ১৫ হাজার ৬শ’ ভ্রমণাকারী। ইরানের জাতীয় জাদুঘরে চলমান ল্যুভর শো চলবে আগামী ৮ জুন পর্যন্ত।
ইরান জুড়ে পালিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রকৃতি দিবস
ইসলামি প্রজাতন্ত্রে ইরানে গত ২ এপ্রিল উদ্যাপিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রকৃতি দিবস। ইরানি পঞ্জিকায় বছরের প্রথম মাস ফারভারদিনের ১৩ তারিখ প্রকৃতি দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। সরকারি ছুটির এই দিনটি ইরানি নওরোজের শ্রেষ্ঠতম দিনগুলোর একটি।
নওরোজের প্রথম ১২ দিন অতিক্রান্ত হবার পর ইরানিরা অন্যদের সঙ্গে আনন্দ ও প্রফুল্লতা প্রকাশের জন্য এইদিন সপরিবারে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটায়।
প্রকৃতির নবজাগরণ দেখে তারা আল্লাহর সর্বশক্তিমান ক্ষমতা এবং পুনরুজ্জীবনের কথা স্মরণ করে।
ইরানে পালিত হলো পরমাণু প্রযুক্তি দিবস; উন্মোচিত হলো ৮৩ সাফল্য
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে গত ৯ এপ্রিল জাতীয় পরমাণু প্রযুক্তি দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী তেহরানসহ বড় শহরগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত বিজ্ঞানীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল রাজধানী তেহরানে। সেখানে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট সরাসরি চারটি সাফল্য উন্মোচন করেন। এছাড়া ৭৯টি সাফল্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উন্মোচন করা হয়।
২০০৬ সালের এ দিনে ইরান নিজস্ব সক্ষমতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পরমাণু জ্বালানি চক্র সংক্রান্ত প্রযুক্তি পুরোপুরি আয়ত্ব করার বিষয়টি ঘোষণা করেন। এরপর থেকে ইরানে ফারসি ২০ ফারভারদিন জাতীয় পরমাণু প্রযুক্তি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইরানের ওপর পাশ্চাত্যের কয়েক দশকের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তেহরান নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই অত্যাধুনিক ও জটিল প্রযুক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
পরমাণু ক্ষেত্রে এ সাফল্য ইরানের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কারণ, নানা ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। এ জন্যই আজকাল বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের উন্নয়ন কর্মসূচিতে পরমাণু প্রযুক্তি অর্জনের বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে।
ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সদস্য হয়েছিল ১৯৫৮ সালে এবং ১৯৬৮ সালে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) সই করে। ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা গঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। আর ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর ইরান পরমাণু ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন এবং পরমাণু জ্বালানি চক্র পুরোপুরি আয়ত্ব করার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয়। এরপরই বিদ্যুৎ উৎপাদন, চিকিৎসা, শিল্প ও কৃষিকাজে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে।
বাংলাদেশ ও ইরানের বন্ধন আরও মজবুত করতে হবে : আয়াতুল্লাহ আ’রাফি
‘বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিধি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ইরান এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’ গত ২৯ মার্চ ঢাকায় বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সাথে বৈঠকের সময় ইরানের আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর এবং জাতীয় মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান আয়াতুল্লাহ আলি রেজা আ’রাফি এ মন্তব্য করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। তবে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিনিময়ের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় ও উন্নত করা সম্ভব। এ বিষয়ে দুই দেশকে এগিয়ে আসতে হবে। ধর্মমন্ত্রী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ইরানের শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এছাড়া ইরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন এবং ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি শিক্ষা খাতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এর আগে গত ২৭ মার্চ আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সাথে বৈঠক করেন। এ সময় তাঁরা দ্বিপক্ষীয় স¤পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে পৃথক কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি মাদ্রাসার পাঠাগারের উন্নয়নের জন্য ইরানের আল-মোস্তফা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুই হাজার ইউরো প্রদান করেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তিনি ২০ হাজার ডলার অনুদান প্রদান করেন।
ইরান ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যে ১৩টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত
সম্প্রতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও মধ্য এশীয় প্রতিবেশী দেশ তুর্কমেনিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৩টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির তুর্কমেনিস্তান সফরের সময় তাঁর ও তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট ক্বোরবান আলী র্বাদী মোহাম্মাদভ্-এর উপস্থিতিতে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এ সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট রুহানি একটি উচ্চপদস্থ ইরানি প্রতিনিধিদলসহ দুই দিনের সফরে গত ২৭শে মার্চ (২০১৮) তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশকাবাদে উপনীত হন এবং পরদিন ২৮শে মার্চ সেখান থেকে আযারবাইজান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাকু গমন করেন।
ইরান ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত এসব সমঝোতা স্মারকে দু’দেশের মধ্যে সংস্কৃতি, চিত্রকলা, বিজ্ঞান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিনিময়, বিমান চলাচল বিনিময় এবং বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও প্রেসিডেন্ট রুহানির তুর্কমেনিস্তান সফর শেষে যুগপৎভাবে তেহরান ও আশ্কাবাদ্ থেকে একটি যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়।
ইরান ও আযারবাইজান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে ৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও প্রতিবেশী দেশ আযারবাইজান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৮টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির আযারবাইজান সফরকালে গত ২৮শে মার্চ (২০১৮) আযারবাইজান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ইল্হাম্ আলীয়েভ্-এর উপস্থিতিতে এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
ইরান ও আযারবাইজানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকসমূহে পরিবার, নারী, যুব, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, স্বাস্থ্য, তেলশিল্প ও অর্থনীতি বিষয়ক পরস্পরিক সহযোগিতা এবং রাশ্ত্-আস্তারা যৌথ রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সমঝোতা স্মারক সমূহ স্বাক্ষর শেষে দুই দেশের প্রেসিডেন্টদ্বয় একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মিলিত হন। এ সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ মর্মে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও আযারবাইজান প্রজাতন্ত্রের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতার ফলে কেবল এ দু’টি দেশই লাভবান হবে না, বরং আঞ্চলিক দেশ সমূহ ও সমগ্র বিশ্ব লাভবান হবে।
ইরান ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে ওষুধবিজ্ঞান বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে গত ৭ই এপ্রিল ওষুধ বিজ্ঞান ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি সমন্বিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ড. সাইয়্যেদ হাসান গ্গাযীযাদে ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ র্আরিয়াযা মর্ন্ত্সেরাত্-এর উপস্থিতিতে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ সমঝোতা স্মারকে ইরান থেকে ভেনেজুয়েলায় ওষুধ রফতানি ও সে দেশে ইরানি ওষুধের রেজিস্ট্রেশন ও উৎপাদন এবং ওষুধ বিজ্ঞান ক্ষেত্রে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণসেবা প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ড. গ্গাযীযাদে বলেন, ওষুধবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বর্তমান সক্ষমতা ও বিরাট সম্ভাবনার বিষয়টি সকলেরই জানা আছে। তিনি বলেন, অনেক বছর যাবতই ওষুধ ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান শীর্ষ অবস্থানের অধিকারী। তিনি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও ভেনেজুয়েলা ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণাদির ক্ষেত্রে পরস্পরের সাথে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করতে পারে।
ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের সমাপ্তিতে ভেনেজুয়েলায় ইরানের স্বাস্থ্য ও ওষুধ উৎপাদন ক্ষেত্রে সক্ষমতা বিষয়ক প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করি যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ড্রাগ, ভ্যাকসিন্ ও ওষুধ উৎপাদন ক্ষেত্রে ভেনেজুয়েলাকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে।
ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ র্আরিয়াযা মর্ন্ত্সেরাত্ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইরানের সাথে আমাদের সহযোগিতার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুফল অর্জন করা। ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাথে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহযোগিতা শক্তিশালী করার ওপর ভেনেজুয়েলা বিরাট গুরুত্ব আরোপ করে।
তিনি আরো বলেন, ইরান ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ওষুধ ও ড্রাগ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
চারটি ইউরোপীয় প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরের সাথে ইরানের সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর
সম্প্রতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় যান্জন্ প্রদেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থা এবং চারটি ইউরোপীয় প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
উক্ত সংস্থার প্রধান জনাব ইয়াহ্ইয়া রাহ্মাতী জানান যে, যান্জনের বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চেহ্রাবাদ্ লবণ খনি সংক্রান্ত চতুর্থ প্রত্নতাত্ত্বিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা গবেষণার আওতায় যান্জন্ প্রদেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থা এবং পশ্চিম জার্মানির বচুম্ শহরস্থ জার্মান মাইনিং মিউজিয়াম, পশ্চিম জার্মানির মেইন্য্ শহরস্থ সেন্ট্রাল মিউজিয়াম অব্ রোমান্ জার্মান, ফ্রাঙ্ক্ফুর্টের আর্কিওলোজক্যিাল মিউজিয়াম ও অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাস্থ ন্যাচার্যাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও জার্মানিতে একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রদর্শনী আয়োজনের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে গত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তেহরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আলী জান্নাতী ও ইরানস্থ তৎকালীন জার্মান রাষ্ট্রদূত মাইকেল ফ্রেইর্হা ভন্ উন্গ্রেন্ স্টার্নবুর্গ-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দু’দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক সহযোগিতা অধিকতর সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। উক্ত বৈঠকে জনাব জান্নাতী উল্লেখ করেন যে, ইরান ও জার্মানির মধ্যে দূর অতীত কাল থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, এর ভিত্তিতে আমাদের দু’দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য চেষ্টা চালানো প্রয়োজন এবং টেকসই সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দু’দেশের মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের হেফাযতের নিশ্চয়তা বিধান করতে সক্ষম হবে।
ইরানে বাড়ি পেল সাড়ে ৩ হাজার প্রতিবন্ধী পরিবার
ইরানে সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকে বাড়ি দেয়া হয়েছে যাদের অন্তত এক বা একাধিক প্রতিবন্ধী সদস্য রয়েছেন। ইরানের ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের পরিচালক আনোউশিরভান মোহসেনি-বান্দপেয় গত ১৭ মার্চ এ তথ্য জানান। তেহরান টাইমসকে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী সদস্যদের কল্যাণের দিকটি বিবেচনা করেই এসব পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এধরনের আবাসন প্রকল্পে ১১ হাজার পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের এক বা একাধিক প্রতিবন্ধী সদস্য রয়েছে। আর বাসস্থানের জন্য পরিবার পিছু তাদের দেয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার মার্কিন ডলার।
গত জানুয়ারি মাসে ইরানের সংসদে প্রতিবন্ধী রয়েছে এমন পরিবারের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে এধরনের সহায়তার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের বিনামূল্যে যাতায়াত সুবিধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিমা, গৃহ ঋণ, অপেক্ষাকৃত কম সময়ের কর্মঘণ্টা সহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
ইস্পাত রফতানিতে ইরানের আয় ৬.৯ বিলিয়ন ডলার
গত ফারসি বছরে ইরান ইস্পাত রফতানি করে আয় করেছে ৬.৯ বিলিয়ন ডলার। দেশটির শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদন প্রতিষ্ঠান মোবারাকেহ স্টিল কোম্পানি একাই রফতানি করেছে ৩.১৬ বিলিয়ন ডলার। ইরানের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের পর এবং বিশ্ব বাজারে ইরানি ইস্পাতের চাহিদা বৃদ্ধিতে এধরনের সহায়ক ইস্পাত বাজার পেয়েছে দেশটি। ইরানের সাতটি ইস্পাত রফতানি প্রতিষ্ঠান গত ফারসি বছরে ১৯.২৫ মিলিয়ন টন ইস্পাত রফতানি করে। যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইরানের ট্রানজিট রাজস্ব বেড়েছে ২০ শতাংশ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ট্রানজিট থেকে রাজস্ব বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত ২০ মার্চ শেষ হওয়া ইরানি অর্থ বছরে এই ট্রানজিট রাজস্ব প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে।
ট্রেন্ড নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা (টিপিও) জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২০ মার্চ থেকে এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ মাসে ইরানের ট্রানজিট রাজস্বের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৮১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
এর আগে টিপিও এর ট্রানজিট দপ্তরের প্রধান মোহসেন রাহিমি বলেছিলেন, ইরাকের কুর্দি অঞ্চল থেকে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইমাম খোমেইনী বন্দরে ফুয়েল (জ্বালানি) ট্রানজিটের পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়াই ট্রানজিট রাজস্ব বৃদ্ধির মূল কারণ। তিনি জানান, ফুয়েল ট্রানজিটের পাশাপাশি আফগানিস্তানে কার্গো ট্রানজিট ইরানি বন্দরগুলোতে তেল পণ্যের লোড-আনলোড বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। সেই সাথে সামুদ্রিক ট্রানজিটও বেড়েছে।
সড়ক ট্রানজিট থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির। যার পরিমাণ ছিল ৭৭ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে এয়ার ট্রান্সপোরটেশন। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মেরিন ও রেল ট্রানজিট।
গাড়ি ও যন্ত্রাংশ রফতানিতে ইরানের আয় ৯৮ মিলিয়ন ডলার
গাড়ি ও যন্ত্রাংশ রফতানি করে ইরান আয় করেছে ৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ১১ ফারসি মাসে এ ধরনের গাড়ি ও যন্ত্রাংশের মধ্যে কৃষি যন্ত্রাংশ ছিল উল্লেখযোগ্য। একই সময়ে ইরাকে এধরনের পণ্য রফতানি হয় ৬২ মিলিয়ন ডলারের। আফগানিস্তানে ৯.৯ মিলিয়ন ডলারের গাড়ি ও যন্ত্রাংশ রফতানি করে দেশটি। রাশিয়াতে রফতানি করে ২.৬ মিলিয়ন ডলার পণ্য।
ইরানে বিমানের জন্য উন্নততর হাইড্রোলিক সিস্টেম তৈরি হচ্ছে
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজ্ঞান গবেষকগণ বিভিন্ন ধরনের বিমানে ব্যবহারোপযোগী হাইড্রোলিক সিস্টেম নির্মাণ করেছেন। এ ধরনের হাইড্রোলিক সিস্টেম ব্যবহারের ফলে বিমানের, বিশেষত ট্যুরিস্ট হেলিকপ্টারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অধিকতর শক্তিশালী হবে।
হাইড্রোলিক সিস্টেম এবং নিউম্যাটিক পার্ট্স্ ও ইকুইপমেন্ট উৎপাদন ক্ষেত্রে কর্মরত ইরানি গবেষকগণ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফিল্টারেশন সিস্টেম ও হাইেেড্রালিক সার্কিট কন্ট্রোলের বাণিজ্যিক ভিত্তিক উৎপাদনযোগ্য ডিজাইন করতে সক্ষম হয়েছেন।
এ প্রকল্পে কর্মরত অন্যতম ইরানি গবেষক রেযা আবিদী বলেন, বর্তমানে সমস্ত হেলিকপ্টার ও বিমানই উন্নততর মানের হাইড্রোলিক সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে- যা বিমান ও হেলিকপ্টারের এতদসংক্রান্ত প্রয়োজনের সিংহ ভাগই পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আর বর্তমানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান শিল্প উন্নততর হাইড্রোলিক সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে।
তিনি বলেন, এ সিস্টেম বিভিন্ন উচ্চতায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়া প্রতিরোধ করে- যা এ সিস্টেমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তিনি জানান যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে উদ্ভাবিত এ উন্নততর হাইড্রোলিক সিস্টেম বর্তমানে ইরানের বিভিন্ন ধরনের বিমানে ব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্পে কর্মরত দুই জন ইরানি গবেষক রেযা আবিদী ও মোহম্মাদ হেম্মাতী ৩১তম আন্তর্জাতিক খাওয়ারিয্মী পুরস্কার (আইকেএ)-এর জন্য শীর্ষ গবেষক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
আরো উল্লেখ্য যে, বিজ্ঞান সামগ্রী নির্মাণকারী সংশ্লিষ্ট ইরানি কোম্পানিটি হেলিকপ্টারের জন্য হাইড্রোলিক ফিল্টারেশন মডিউল্ সহ বিমান শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ২০টি বৈজ্ঞানিক সামগ্রী উৎপাদন করছে।
ইরানি বিজ্ঞান গবেষক কেএফএএস্ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অন্যতম বিজ্ঞান গবেষক মোহাম্মাদ ইবরাহীম খামসেহ্ ৯ম কুয়েত ফাউন্ডেশন র্ফ দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব্ সায়েন্স (কেএফএএস) অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ইবরাহীম খামসেহ্ ইরান ইউনিভার্সিটি অব্ মেডিক্যাল্ সায়েন্সেস্-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট্ অব্ এন্ডোক্রিনোলোজি অ্যান্ড্ মেটাবোলিজম্ (আইইএম)-এর প্রধান। ডায়াবেটিস্-এর ক্ষেত্রে এন্ডোক্রিনোলোজি ও মেটাবোলিজম্ বিষয়ক গবেষণায় অসামান্য অবদান রাখার কারণে তাঁকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর আঞ্চলিক কমিটির ৬৪তম অধিবেশনের সাইড্লাইনে ইবরাহীম খামসেহ্-কে কেএফএএস অ্যওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হয়। তাঁকে আগামী ১৫ থেকে ১৮ই অক্টোবর পর্যন্ত সুদানে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৬৫তম অধিবেশনে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।
ফ্রান্সে ক্বাজার আমলের ইরানি চিত্রকর্মের প্রদর্শনী
সম্প্রতি উত্তর ফ্রান্সের লুভ্র্ লেন্স্-এর জাদুঘরে ইরানের ক্বাজার শাসনামলের (১৭৮৬ – ১৯২৫) চিত্রকর্মের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তেহরানের গোলেস্তান্ প্যালেস্ ওয়ার্ল্ড্ হেরিটেজ্ সাইট্-এর ব্যবস্থাপক জনাব মাসউদ নুসরাতী বলেন, ফ্রান্সের লুভ্র্ লেন্স্ মিউজিয়ামে ‘দ্য রোজ্ এম্পার্য়া : মাস্টারপিসেস অব পার্সিয়ান আর্ট্ ফ্রম দ্য নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি’ শিরোনামে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে ইরানের ক্বার্জা শাসনামলের এ চিত্রকর্মগুলোর প্রদর্শনী একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ, এ গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকর্মগুলোর প্রতি ইতিপূর্বে যথাযথ দৃষ্টি দেয়া হয় নি।
গত ২৮শে মার্চ এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে এবং আগামী ২৩শে জুলাই শেষ হবে। এ প্রদর্শনীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পক্ষ থেকে ক্বাজার আমলের ১৯টি চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্বাজার আমলের যেসব চিত্রকর্ম রয়েছে সেগুলোও এ প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, গত ৫ই মার্চ (২০১৮) থেকে বহু সংখ্যক ইরানি ও ফরাসি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে তেহরানস্থ ইরান জাতীয় জাদুঘরে ফ্রান্সের লুভ্র্ মিউজিয়ামের ৫০টি চিত্রকর্মের একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়- যা আগামী ৩রা জুন পর্যন্ত চলবে। ইতিপূর্বে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সংশ্লিষ্ট ইরানি কর্তৃপক্ষ ও লুভ্র্ মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান ও ফ্রান্সে কতগুলো পারস্পরিক প্রদর্শনী আয়োজন ও কতগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তেহরানের ইরান জাতীয় জাদুঘরে ফ্রান্সের লুভ্র্ মিউজিয়ামের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও উক্ত মিউজিয়ামে ক্বাজার আমলের ইরানি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন উক্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতারই অংশবিশেষ।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটার পর লুভ্র্ মিউজিয়াম আয়োজিত এ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী হচ্ছে সর্বপ্রথম ইউরোপের একটি শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত ইরানি শিল্পকর্মের প্রদর্শনী।
এছাড়াও চুক্তির আওতায় লুভ্র্ ইসলামিক ডিপার্টমেন্ট পূর্ব ইরানে অবস্থিত প্রাচীন সিল্ক রোডের একটি এলাকার খননকার্য পরিদর্শনের জন্য ইরানে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রতিনিধিদল পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইরানে চালু হল নতুন চ্যানেল ‘আইফিল্ম-২’
‘আইফিল্ম-২’ নামে ইরানে নতুন একটি টেলিভিশন চ্যানেল উদ্বোধন করা হয়েছে। চ্যানেলটি ইরান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের ফার্সি ভাষাভাষীদের জন্য চালু করা হয়েছে।
গত ১৭ মার্চ ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবি’র প্রধান ড. আলী আসকারি এ নতুন চ্যানেলের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইআরআইবি বিশ্বকার্যক্রমের প্রধান ড. পেয়মান জেবেলি। চ্যানেলটি ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইরানে আইফিল্ম টিভি চ্যানেল চালু হয়।
ইরানি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক পুরসস্কার লাভ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘বফান্দেগনে খিঅল্’ (কল্পনার বয়নকারীরা) সম্প্রতি পর্তুগালের ভিলা রিয়া-য় অনুষ্ঠিত ৪র্থ ইন্টারন্যাশন্যাল ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভাল অ্যান্ড্ ট্রান্সমেডিয়া (আরআইওএস)-এ অংশগ্রহণ করে গ্র্যান্ড প্রিক্স পুরস্কার লাভ করেছে। গত ২১ থেকে ২৪শে মার্চ (২০১৮) পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মাদ সাদেক্ব জা‘ফারী কর্তৃক পরিচালিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘কল্পনার বয়নকারীরা’ উক্ত উৎসবে অংশগ্রহণকারী আরো ২৪টি চলচ্চিত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে গ্র্যান্ড্ প্রিক্স পুরস্কার জয় করতে সক্ষম হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অপর চলচ্চিত্রগুলো ছিলো স্পেন, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, পেরু, মিসর, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, ব্রাজিল, পোল্যান্ড ও রাশিয়ায় নির্মিত।
‘কল্পনার বয়নকারীরা’ চলচ্চিত্রে এমন একদল লোকের জীবনধারা তুলে ধরা হয়েছে দৃশ্যত যাদের জীবনধারার মধ্যে পারস্পরিক মিল নেই, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা একত্রিত হয়ে কার্পেট বয়ন করছেন। ‘কল্পনার বয়নকারীরা’ চলচ্চিত্রে এ সহজ-সরল বাস্তবতাটির প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে যে, একত্রে কাজ করার কারণে কীভাবে তাদের সকলের অন্তঃকরণ এক বিরাট সুখানুভূতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, সাদেক্ব জা‘ফারীর চলচ্চিত্র ‘কল্পনার বয়নকারীরা’ ইতিপূর্বে ভারতে অনুষ্ঠিত এক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায়ও শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া এটি ২০১৭ সালে ব্রিটেনের ওয়েল্সে অনুষ্ঠিত কার্ডলিফ্ ইন্টারন্যাশন্যাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করে শ্রেষ্ঠতম বিদেশী চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
ইরানি ফিচার ফিল্মের আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে নির্মিত ফিচার ফিল্ম ‘একুশ দিন পর’ (বিস্তো ইয়েক্ রুয্ বাদ্) সম্প্রতি জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ২৫তম কির্ন্ডা কিনো ফেস্টিভাল্ (কিকিফে)-এ অংশগ্রহণ করে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার লাভ করেছে। গত ১৯ থেকে ২৫শে মার্চ (২০১৮) পর্যন্ত দক্ষিণ জার্মানির স্কোয়াবিচ্গ্মুন্দ শহরে এ চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মাদ রেযা খেরাদ্মান্দা পরিচালিত ‘একুশ দিন পর’ চলচ্চিত্রের গল্পটি মোরতাযা নামক একটি কিশোরের জীবনসংগ্রামকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে যাকে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বহু রকমের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।
উল্লেখ্য, কির্ন্ডা কিনো ফেস্টিভাল্ (কিকিফে) দক্ষিণ জার্মানির শ্রেষ্ঠ শিশু-কিশোর চলচ্চিত্র উৎসব। উক্ত উৎসবের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত সংবাদ অনুযায়ী তিনটি প্রধান ক্যাটেগরিতে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ ক্যাটেগরিগুলো হচ্ছে : (১) শিশু ও কিশোরদের পারফরম্যান্স বিশিষ্ট দেশী ও বিদেশী চলচ্চিত্র- যা প্রতিযোগিতা, প্যানোরামা ও রেট্রোসপেকটিভ্ নামে তিনটি সেকশনে বিভক্ত; (২) চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মিডিয়া শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিশু ও কিশোরদের দ্বারা নির্মিত শর্ট ও অ্যানিমেটেড্ ফিল্ম; (৩) কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা আনন্দজনক ও তথ্যবহুল সহযোগী প্রোগ্রাম এবং কতক নির্বাচিত ফিল্মের শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও বাস্তবায়ন।
ফজর ফিল্ম ফেস্টিভালে দুই বাংলাদেশি তরুণ নির্মাতা
ইরান তথা মধ্যপ্রাচ্যের সব থেকে বড় চলচ্চিত্র উৎসব ‘ফজর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল’। প্রতি বছর তেহরানে সাত দিনব্যাপী চলে এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় পঞ্চাশটি দেশ থেকে ক্যাম্পাস ভিত্তিতে ট্যালেন্ট খোঁজে ‘ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস’ ক্যাটাগরির আওতায়। এই ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় যারা নির্বাচিত হন তাদের জন্যে ‘ফজর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল’ এর পক্ষ থেকে করানো হয় বিশেষ কর্মশালা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো চলতি মাসের ১৭ তারিখ শুরু হয়ে ২৩ তারিখ শেষ হয় ‘ফজর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল-২০১৮’ এর ৩৬তম আসর। এই চলচ্চিত্র উৎসবে এবারের ‘ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস’ ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের দুই স্বাধীন সিনেমা নির্মাতা কাজী মাহাদী মুনতাসির ও জোসেফ মেহেদী।
এই চলচ্চিত্র উৎসবে পঞ্চাশটি দেশ থেকে ‘ট্যালেন্ট ক্যম্পাস’ এর আওতায় যাঁরা যোগদান করেন তাঁদের জন্যে বিশেষ বৃত্তির ব্যাবস্থা রাখে ‘ফজর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল’। এই বৃত্তির আওতায় দুই তরুণ নির্মাতা কাজী মাহাদী মুনতাসির ও মেহেদী পাচ্ছেন ইরানের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স ক্লাস ও কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ।
তেহরানে অনুষ্ঠিত এই চলচ্চিত্র উৎসবের ‘ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস’ বৃত্তি প্রদানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মূলত ইরানের চলচ্চিত্র উন্নয়ন ও নতুন ধারার চলচ্চিত্রের সঙ্গে বিশ্বের তরুণ চলচ্চিত্রকারদের পরিচয় ঘটানো।
মাহাদী মুনতাসির পেশায় একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন। ইতিপূর্বে কাজী মাহাদী মুনতাসির নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মিসিং’ দেশে-বিদেশে বেশ ক’টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এবং সেই সাথে সুনামও কুড়িয়েছেন তিনি।
একই ক্যাটাগরিতে এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন জোসেফ মেহেদী। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগে। তার প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘পোস্টার’। এই তরুণ নির্মাতা প্রথম কোন সাফল্য পান ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে। ২০১১ সাল থেকে মিডিয়াতে একজন ক্যামেরা ম্যান হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে স্বাধীন এই নির্মাতা ব্যস্ত আছেন ‘প্রতিবন্ধী শিশু’ ও ‘সাকরাইন’ এর ওপর বিশেষ ডকুমেন্টারি নির্মাণে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩৫তম আসরেও বাংলাদেশ থেকে একই ক্যাটাগরিতে মধ্যপ্র্যাচ্যের এই বৃহৎ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের (এমসিটি) শিক্ষার্থী সৈয়দ মিনহাজ হোসেন।
মূলত ফজর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল (এফআইএফএফ) এমন একটি অনুষ্ঠান, যেখানে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি বিনিময় করা হয় এবং ইরানও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে। প্রতি বছর খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালকদের পাশাপাশি নবীন চলচ্চিত্র পরিচালকরা তাঁদের নির্মিত চলচ্চিত্র এ উৎসবে প্রদর্শন করেন। বরাবরের মতো এবারোও ৩৬তম এফআইএফএফ উৎসব তত্ত্বাবধান করছেন ইরানের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা মিরকারিমি।
বিশ্ব তাইকোয়ান্দো যুব চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল ইরান
বিশ্ব তাইকোয়ান্দো যুব চ্যাম্পিয়নশিপে নয়টি পদক পেয়ে শিরোপ জিতেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। ইরানি তাইকোয়ান্দো টিম এ প্রতিযোগিতায় সাতটি স্বর্ণ ও দু’টি ব্রোঞ্জপদক জিতেছে। ইরানের অর্জিত মোট পয়েন্ট ১০৭। এর মধ্য দিয়ে ইরান দীর্ঘ সাত বছর পর যুব চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল।
তিউনিশিয়ার হাম্মামেত শহরে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে ১৩ এপ্রিল তা শেষ হয়।
এ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্স-আপ হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি একটি স্বর্ণ, একটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জপদক জিতেছে। দ্বিতীয় রানার্স-আপ হয়েছে তুরস্ক। তুরস্ক জিতেছে একটি স্বর্ণ ও দু’টি রৌপ্যপদক।
ইউএসএ কারাতে ওপেনে সোনা জয় আহমাদির
ইউএসএ কারাতে ওপেনে সোনা জিতেছেন ইরানি অ্যাথলেট সাইদ আহমাদি। জয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টে দারুণভাবে ইতি টানতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
গত ১ এপ্রিল আহমাদি পুরুষদের ৭৫ কেজি ওজনশ্রেণির কারাতে প্রতিযোগিতায় ইরানের পক্ষে অংশ নেন। টুর্নামেন্টের ফাইনালে আমেরিকান কারাতে টম স্কটকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে সোনা জয় লাভ করেন তিনি।
ফাইনাল পর্বে আসার আগে আহমাদিকে বেশ কয়েকটি ধাপ পাড়ি দিতে হয়। তিনি পানামার প্রতিপক্ষকে ৬-১ পয়েন্টের ব্যবধানে, ইকুয়েডরের প্রতিপক্ষকে ৭-২ পয়েন্টের ব্যবধানে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষকে ৪-১ ব্যবধানে পরাজিত করেন। পরে সেমিফাইনালে চিলির প্রতিপক্ষকে ৩-১ পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেন আহমাদি।
যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাস অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত এবারের (২০১৮) কারাতে ওপেনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সহস্রাধিক অ্যাথলেট অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতা ৩০ মার্চ শুরু হয়ে শেষ হয় ১ এপ্রিল।
বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় ইরানের নারী শুটার-এর স্বর্ণপদক জয়
সম্প্রতি সম্মিলিত আরব আমীরাত (ইউএই)-এর আল-‘আইন শহরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড্ শুটিং প্যারা স্পোর্ট্স্ ওয়ার্ল্ড্ কাপ প্রতিযোগিতা ২০১৮-এ অংশগ্রহণ করে ইরানি মহিলা শুটার সারাহ্ জাভার্ন্মাদী একটি স্বর্ণ পদক জয় করেছেন।
৫০ মিটার দূরত্বের রাইফেল ক্যাটেগরির এ শুটিং প্রতিযোগিতায় ইরানি শুটার সারাহ্ জাভার্ন্মাদী ও মাহ্দী যামানী প্রথমে সর্বশীর্ষ ৮ জন শুটারের মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে সক্ষম হন এবং ফাইনালে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেন। ফাইনাল ম্যাচে সারাহ্ জাভার্ন্মাদী ২২০.৬ পয়েন্ট লাভ করে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং তাঁর দু’জন চীনা প্রতিযোগী যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করেন।
এর পাশাপাশি ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি স্পোর্ট্স্ ফেডারেশন (এফআইএস্আই) আয়োজিত ওয়ার্ল্ড্ ইউনিভার্সিটি শুটিং চ্যাম্পিয়নশীপ ২০১৮ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আরেক জন ইরানি নারী শুটার নাজ্মাহ্ খেদ্মাতী চমৎকার দক্ষতা প্রদর্শন করেন এবং একটি ব্রোঞ্জপদক জয় করেন।
ইয়ুথ অলিম্পিক গেমসের সাঁতারে ইরানের ১৪ মেডেল
ইয়ুথ অলিম্পিক গেমস ২০১৮ এর সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দারুণ পারফরমেন্স করেছেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাঁতারুরা। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ১৪টি মেডেল জয় করেছে ইরানি অ্যাথলেটরা।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ১১ এপ্রিল টুর্নামেন্টের ফাইনালে অংশ নেন ইরানের আলী জাফরি। তিনি ৫২.৭২ সেকেন্ড সময় নিয়ে পুরুষদের ১শ’ মিটারের ফ্রি স্টাইল বিভাগে রৌপ্যপদক লাভ করেন।
এছাড়া ইরানি অ্যাথলেট আলি সারাভান্দ পুরুষদের ৫০ মিটারের ইভেন্টে অংশ নিয়ে রৌপ্যপদক জয় করেন। তিনি ৫০ মিটার সাঁতারে সময় নেন ২৯.৭৭ সেকেন্ড।
অন্যদিকে, পুরষদের ৫০ মিটারের বাটারফ্লাই সেকশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্বর্ণপদক ঘরে তুলেছেন ইরানের মেহদি আনসারি। এর আগে টুর্নামেন্টে পুরুষদের ১০০ মিটারের ফ্রি স্টাইল বিভাগে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন ইরানি অ্যাথলেট সিনা গোলামপুর। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী পুরুষদের ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন জাফরি, ছিনিয়ে নেন রুপার মেডেল।
পুরুষদের ৫০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক ইভেন্টে সোনার মেডেল জয় লাভ করেন আলি ফাথি। পুরুষদের ৫০ মিটারের ব্রেস্টস্ট্রোক বিভাগে অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জপদক ঘরে তোলেন আনসারি।
থাইল্যান্ডে ২০১৮ ইয়ুথ অলিম্পিক গেমসের সাঁতার প্রতিযোগিতা ৭ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হয় ১১ এপ্রিল।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় পারমাণবিক প্রযুক্তিবিষয়ক দ্বাদশ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির ভাষণের পূর্ণ বিবরণ
পারমাণবিক অর্জনসমূহের পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে একাদশ ও দ্বাদশ সরকারের আমলে পরমাণু শিল্পে দ্রুততর ও আধিকতর সূক্ষ্ম উত্তরণ/ জাতীয় প্রযুক্তিতে আমরা পিছপা হই নি, হবও না/ আত্মমর্যাদাবোধে উজ্জীবিত তরুণ বিজ্ঞানীদের গবেষণাকর্মের জন্য কারো কাছ থেকে অনুমতি নেব না/ পারমাণবিক সমঝোতার পরে ১২০টির বেশি বড় আকারের পরমাণু অর্জন আমাদের হস্তগত হয়েছে/ পরমাণু চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, আমেরিকার সহকারে বা আমেরিকা ব্যতিরেকে পরমাণূ চুক্তির যে কোনো পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত এবং নিজস্ব পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে/ তারা যদি চুক্তি ভঙ্গ করে অবশ্যই অনুতপ্ত হবে, এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া তারা দেখতে পাবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ইরানে প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন ড. হাসান রুহানী তাঁর ভাষণে এ কথার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যে, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার নিজস্ব পথ ধরে অগ্রসর হবে। তিনি পারমাণবিক প্রযুক্তির অঙ্গনে দেশের মূল্যবান অর্জনের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে ইরানি জাতিকে সম্বোধন করে বলেন, পারমাণবিক অর্জনসমূহের পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে একাদশ ও দ্বাদশ সরকারের আমলে আমাদের পরমাণু শিল্পে দ্রুত ও অতি সূক্ষ্ম উত্তরণ ঘটেছে।
ড. হাসান রুহানি পরমাণু প্রযুক্তির জাতীয় দিবসে প্রদত্ত ভাষণে ইরানি জাতির প্রতি, বিশেষ করে দেশের বিজ্ঞানীবৃন্দ এবং শহীদ পরমাণু বিজ্ঞানীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান এবং বলেন, পরমাণু বিজ্ঞানীরা জাতীয় গৌরবের জন্য তাঁদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারের আমলে ও জাতীয় জীবনের ধাপে ধাপে পরমাণু প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য যাঁরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি মোবারকবাদ জানান।
ড. রুহানি বলেন, আমি পরিষ্কার ভাষায় এবং অতি স্পষ্ট ও স্বচ্ছতার সাথে মহান ইরানি জাতির উদ্দেশে ঘোষণা করতে চাই যে, আমাদের পরামাণু প্রযুক্তি অতীতের দিনগুলোর তুলনায় অধিক শক্তি সহকারে, আরো সূক্ষ্ম হিসাব নিকাশের ভিত্তিতে এবং অধিকতর গতিশীলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা পারমাণবিক খাতে গত বছর ৪৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। তার অর্জনগুলোও আমরা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। এ বছর ৮৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি এ কথার প্রমাণ যে, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির পথে আমরা আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি এবং ভবিষ্যতেও রাখব।
প্রেসিডেন্ট স্মরণ করিয়ে দেন, এটি সরকার ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের দায়িত্ব যে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, আজকের দিনে আমাদের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা জ্ঞানভিত্তিক, আমাদের শ্রম ও উপার্জনও ক্রমান্বয়ে জ্ঞানভিত্তিক হয়ে যাবে। তিন হাজারের অধিক জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি বিগত কয়েক বছরে তাদের কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রচুর আয় করছে। আমাদের গবেষণা কেন্দ্রসমূহ, জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি ও প্রজেক্টগুলো প্রশংসনীয়ভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা এবং দেশকে শক্তিশালী করার পথে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ড, রুহানি বলেন, আমাদের মানে রাখতে হবে, আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে বৈধ শক্তিমত্তা ও সক্ষমতা অর্থাৎ জাতীয় কর্তৃত্ব অর্জন করা। আমরা দেশ ও সমাজের জন্য বৈধ ও উপকারী শক্তিমত্তা ও সক্ষমতা চাই। যে শক্তিমত্তার ভিত্তি ক্ষমতার দাপট, হুমকি-ধমকি ও আগ্রাসন হবে না। বরং এমন বৈধ শক্তিমত্তা যা জাতীয় স্বার্থ, এতদঞ্চল ও বিশ^ শান্তির জন্য স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। এই জাতীয় কর্তৃত্ব অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের প্রয়োজন রয়েছে সফ্ট ও হার্ড শক্তি। এই দুটি শক্তির সমন্বয়ে আমরা আমাদের জন্য স্মার্র্ট শক্তি নির্মাণ করতে সক্ষম হব।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট তাঁর ভাষণে আরো বলেন, আমাদের কূটনীতি ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের তৎপরতা একটি মুুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। আমরা একদিক থেকে চেষ্টা করছি, যাতে আমরা এমন পরমাণু প্রযুক্তি হস্তগত করতে পারি, যা জ্বালানি, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যরক্ষা, কৃষি, খনিজ সম্পদ, শিল্প, খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। এই পথে আমাদের প্রচেষ্টাকে লাগাতারভাবে অব্যাহত রেখেছি, যাতে এই অব্যাহত চেষ্টার পথ ধরে আমাদের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিমত্তা অর্জিত হয়। তবে অপর দিকে এই শক্তিমত্তার পাশাপাশি কূটনৈতিক শক্তিরও আমাদের প্রয়োজন রয়েছে।
ড. রুহানি তাঁর ভাষণে আরো বলেন, কূটনৈতিক শক্তি এমন শিল্প, যা আমাদের শক্তি ও অধিকারকে প্রমাণিত করে, যে অধিকারের বিষয়টিকে বিদ্বেষীরা নড়বড়ে করে দিতে অথবা আমাদের হাত থেকে কেড়ে নিতে চায়। কিংবা কোনো কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের অধিকারকে অবৈধ বলে প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। কূটনীতি আমাদের অধিকারকে সপ্রমাণিত করে এবং এ সত্যটি দেখিয়ে দেয় যে, ইরানি জাতি এমন কোনো জাতি নয়, যে শুধু পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের ময়দানে অগ্রণী হয়েছে এবং দেশের প্রতিরক্ষা করতে সক্ষম, কিংবা কেবল অর্থনৈতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী ও কার্যকর ভূমিক গ্রহণ করতে পেরেছে; বরং আলোচনার টেবিলে কথা বলার মতো যথেষ্ট যুক্তি ও সাক্ষ্য-প্রমাণ তার হাতে রয়েছে এবং প্রযুক্তি, রাজনীতি ও অধিকারের বিষয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর দেশগুলোর সাথে আলোচনা করার, কথা বলার ও নিজের অধিকার প্রমাণ করার ক্ষমতা তার রয়েছে। আর এমন এক চুক্তিতে পৌঁছতে সক্ষম, যে চুক্তি জনগণের ওপর থেকে বোঝার মাত্রা কমাতে পারে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, কূটনীতি জনগণের জন্য অগ্রগতির পথ প্রস্তুত করেছে। আমাদের যাত্রাপথকে গতিশীল করে এবং আমাদের ব্যয়ভারও লাঘব করে। কূটনীতি ছাড়াও কাজ করা যায়, তবে তা হবে অনেক মূল্য পরিশোধ করে। কূটনীতি বাধা-বিপত্তিগুলো অপসারিত করে। আমাদের গতিশীলতাকে আরো দ্রুততর করে, আমাদের ব্যায়ভার লাঘব করে আর জাতীয় স্বার্থসমূহ অর্জনের পথপরিক্রমাকে সংক্ষিপ্ত করে।
ড. রুহানি আরো ব্যাখ্যা দেন যে, আমাদের সব ধরনের শক্তির প্রয়োজন। সামরিক শক্তি লাগবে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম থাকতে হবে। অর্থনৈতিক সক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক শক্তির অধিকারী হতে হবে। এতদঞ্চল ও বিশ^ব্যাপী আমাদের বৈধ শক্তিমত্তা থাকতে হবে। কিন্তু কিছুলোক কেবল মুদ্রার একটি পিঠ দেখেন। এই লোকেরা খুব সহজে মুদ্রার অপর পিঠটিও দেখে নিতে পরেন। তবে মুদ্রার পেছন দিকটা দেখার সাহস তাঁদের নেই। তাঁরা কেবলই মুদ্রার ওপরের পিঠটা দেখেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, কিছুসংখ্যক লোক চায় যে, আমরা আত্মসমর্পিত ও অনুগত হয়ে থাকি। তিনি বলেন, কিছুসংখ্যক লোক যাদের মধ্যে হয়ত আমাদের দুশমনরাও শামিল রয়েছে, তারা চায় যে, আমাদের অধিকার ও দাবি আমরা ছেড়ে দেই। কিন্তু আমরা কিছুতেই কোনো অবস্থাতেই আমাদের অমঙ্গল চায় এমন লোকদের খুশি করা ও সন্তুষ্ট করার চিন্তায় ছিলাম না, এখনো নেই।
ড. রুহানি আরো বলেন, আমাদের কাছে সর্বপ্রথমে আল্লাহর রেযামন্দি, তার পরে ইরানি জাতির সন্তুষ্টির গুরুত্ব রয়েছে। আমরা দুনিয়ার সকল জাতির জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করি এবং তাদেরকে সাহায্য করব। যেমনটি গোটা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা বিভিন্ন জাতির প্রতি সহায়তার মনোভাব নিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। সন্ত্রাসবাদ এবং যারা এসব সন্ত্রাসীদের প্রতিপালন করেছে, যারা এতদঞ্চলে এসব সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের রাস্তায় ব্যবহার করতে চেয়েছে তাদের মেরুদ- আমরা ভেঙ্গে দিয়েছি।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, এ কথা জানাই আছে যে, দুশমন আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। আমাদের সমাজে যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকে বড় করে দেখায়। তারা মনে করে যে, আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের হাতে কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমরা আমাদের গতকালের ও আজকের সব সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমস্যা ও সংকট উত্তরণের কর্মপন্থা আমাদের হাতে আছে এবং তার জন্য আমাদের পরিকল্পনা করা আছে। সবাই জেনে রাখুক যে, আমাদের দেশে যে কোনো সমস্যাই সৃষ্টি হোক আমাদের জাতি সে সমস্যার চেয়ে অনেক বড় এবং মহান আল্লাহর ক্ষমতা ও শক্তি সীমাহীন ও অনন্ত।
ড. হাসান রুহানি এ কথার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যে, আমাদের নির্ভরতা আল্লাহর প্রতি। আমরা আমাদের ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত জাতির প্রতি আস্থাভাজন। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে ইরানি জাতির শত্রু ও হিংসুকরা দুনিয়ার সামনে এরূপ দেখাতে চেয়েছিল যে, ইরান অবৈধ ও অন্যায় লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় রয়েছে। আর ইরানি জাতি ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের চিন্তা ও কাজের মধ্যে দূরত্ব আছে। তারা চেয়েছিল তাদের অন্যায় অন্যায্য প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে এই দেশ ও জাতিকে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি করে রাখবে। অন্যায় অমানবিক ও ভুল অবরোধ আরোপ করে আমাদের জাতিকে চাপের মধ্যে কোণঠাসা করে রাখবে।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, তারা মনে করেছিল যে, যদি আলোচনার টেবিলের এক পাশে ছয়টি পরাশক্তি থাকে তাহলে আমাদের বক্তব্য প্রমাণিত করার শক্তি আমাদের থাকবে না এবং তারা তাদের অবরোধ অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। ড. রুহানি বলেন, আমাদের আত্মত্যাগী প্রাণ-উৎসর্গী তরুণ বিজ্ঞানীরা দেশের বিজ্ঞান ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে বিরাট রকমের অর্জন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, পরমাণু চুক্তি সম্পাদনের পর বিগত দুই বছরের মধ্যে পরমাণু খাতে আমরা ১২০ এর অধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হস্তগত করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রেসিডেন্ট ড. রুহানি আরো বলেন, পরমাণু চুক্তি আমাদের গতিকে শিথিল করে না; বরং আমরা পরমাণু চুক্তির মাধ্যমে অন্যদের সাথে আমাদের সহযোগিতার সম্ভাবনাকেও কজে লাগাতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে বহু প্রজেক্টে কতক ইউরোপীয় দেশ, রাশিয়া ও চীনের সাথে ভালো সহযোগিতার সম্পর্ক আমাদের রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, অন্যান্য দেশের সাথে পরমাণু সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা নতুন পথ আরম্ভ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমানে বুশেহরে রিঅ্যাক্টর স্থাপনের ব্যাপারে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি। এই কাজ সামনে অগ্রসর হবে।
ড. রুহানি বলেন, আমরা প্রযুক্তি হস্তগত করার ক্ষেত্রে পিছপা হই নি এবং হবও না। তিনি বলেন, ইরানি জাতির জেনে রাখা উচিত যে, দেশের আত্মমর্যাদাশীল যুবকরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্জন হস্তগত করার জন্য এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে রাজি নয়।
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, প্রযুক্তিও গবেষণার জন্য আমরা কারো কাছ থেকে অনুমতি নেব না। তবে সবার সাথে সহযোগিতা ও লেনদেন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, শুরু থেকেই বর্তমান সরকারের কর্মনীতির একটি ভিত্তি ছিল বিশে^র সাথে গঠনমূলক বোঝাপড়া ও লেনদেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বিগত বছরগুলোতে পরমাণু শিল্পের অঙ্গনে যারাই অবদান রেখেছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতির জন্যে আমাদের পরমাণু প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। কেননা, পরমাণু প্রযুক্তি হচ্ছে প্রাগ্রসর বিজ্ঞানের অংশবিশেষ। একই সময়ে আমরা যেহেতু প্রগতি অর্জন করতে চাই সেহেতু বিশে^র সাথে গঠনমূলক সহযোগিতাকে আমাদের কর্মসূচির আওতায় রাখব।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর বক্তৃতায় আরো বলেন, আজকের দিনে আমরা বিশ্ব জনমতের কাছে একটি নতুন অর্জন হস্তগত করতে সক্ষম হয়েছি। আর তা হলো, আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমরা নিজেদের প্রতিজ্ঞার প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল। আমরা এমন এক জাতি, যাদেরকে আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি এ কথা শিক্ষা দিয়েছে যে, কারো সাথে যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছি তাহলে সেই প্রতিশ্রুতির প্রথম ভঙ্গকারী আমরা হব না।
ড. রুহানি আরো বলেন, পরমাণু চুক্তির পর গত দুই বছরে বহু উস্কানিমূলক তৎপরতা সংঘটিত হয়েছে। যাতে আমরা নিজেরাই পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করি। কিন্তু এটি ছিল তাদের বোকামি। তারা জানত না যে, ইরানি জাতি এর চেয়ে অনেক বিচক্ষণ ও অধিকতর জাগ্রত।
প্রেসিডেন্ট রুহানি ইরানি জাতির শত্রুদের লক্ষ্য করে বলেন, যদি তোমরা চুক্তি ভঙ্গ করতে চাও, তাহলে তার মূল্য তোমাদেরকেই পরিশোধ করতে হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, এ পর্যন্ত ১৫ মাস অতিক্রান্ত হল যে, আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট বহু দাবি ও বুলি উচ্চারণ করেছেন। তাঁর কথাবার্তা ও কাজের মধ্যে উত্থান-পতন অনেক কিছু লক্ষ্য করা যায়। তিনি পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য ছুতা খুঁজছেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি এ সম্পর্কে বলেন, ১৫ মাস গত হওয়ার পর তাঁরা বলছেন যে, আমরা বুঝতে পেরেছি, এই পরমাণু চুক্তি আমাদের জন্য লাভজনক নয়। তবে তাঁদের এই দাবি যথার্থ ও সঠিক নয়। কেননা, শুরু থেকেই দুই পক্ষই লাভবান হওয়ার এবং হার বা হারার নীতির পেছনে ছিলাম।
প্রেসিডেন্ট বলেন, পরমাণু চুক্তির দালানটি এতখানি মজবুত ছিল যে, গত ১৫ মাসে নানা মাত্রায় যত রকমের চাপ তার ওপর পড়েছে, এই দালান তার মোকাবিলায় প্রতিরোধ দেখিয়েছে। এটি এমন একটি বিষয়, যেটি ইরানি জাতির প্রতিনিধিরা বিশ^ পরাশক্তিগুলোর সাথে আলোচনার টেবিলে সবসময় বিবেচনায় রেখেছিল।
ড. রুহানি বলেন, দুশমনরা কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে, যাতে পরমাণু চুক্তির দেয়ালটি ভাঙা যায়। এ ব্যাপারে বহু টুইট তারা প্রচার করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত এই লক্ষ্যে পৌঁছতে তারা সক্ষম হয় নি। যদি কোনোদিন পরমাণু চুক্তি ভেঙ্গে যায় সেদিন আমরা যেহেতু চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল জাতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছি সেহেতু আমরাই জয়ী হব। তারা যদি পশ্চাদপসরণ করে তাহলে তা প্রমাণ করবে যে, চুক্তি ও প্রতিজ্ঞার প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিশীল নয়। তারাই বিশ^ সভায় নিজেদের মান সম্মান হারাবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, পরমাণু চুক্তির সকল অবস্থার জন্য আমরা চিন্তা করে রেখেছি এবং তার জন্য পরিকল্পনা আমাদের আছে। চুক্তিতে যদি কোনো রকম আঘাত আসে তাহলে জাতির জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তিগত প্রয়োজনের জন্য কোনো রকম সমস্যা হবে না। প্রেসিডেন্ট রুহানী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, পরমাণু চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, আমেরিকা সহকারে বা আমেরিকা ব্যতিরেকে পরমাণু চুক্তির আমরা সকল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি এবং আমাদের হাতে পরিকল্পনা রয়েছে। তারা মনে করে যে, প্রচার-প্রপাগান্ডার মাধ্যমে ইরানি জাতিকে স্বাধীনতা, মুক্তি ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব-এর ব্যাপারে অনুতপ্ত করতে পারবে। কিন্তু এই জাতি কোনো অবস্থাতেই বিপ্লবের পথ ও সত্য-ন্যায়ের রাস্তা হতে বিরত হবে না।
ড. রুহানি জোর দিয়ে বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কোনো অবস্থাতেই প্রথম চুক্তি ভঙ্গকারী হবে না। তবে এই জাতির শত্রুদের এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এমন কাজ করে তারা অবশ্যই অনুতপ্ত হবে। তারা দেখতে পাবে যে, এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তার ফলাফল ও প্রভাব প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
ড. রুহানি বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে ইরানের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হবে। তিনি বলেন, যাঁরা উল্টা-পাল্টা কথা বলেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন যে, এ জাতীয় কথার মধ্যে তাঁদের জন্য কোনো সুফল নেই। কেননা, ইরানি জাতি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আমেরিকায় বহু সরকার দেখেছে। বর্তমান সরকারও তাদেরই একটি।
আমেরিকার প্রচার-প্রচাগান্ডা ও স্লোগানের প্রতি প্রলুব্ধ কোনো কোনো সরকারকে উদ্দেশ্য করে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, এ রকম একটি সরকারের প্রতি মোটেও আস্থাশীল হবেন না। বরং আপন জাতি ও এতদঞ্চলের জাতিগুলোর প্রতি আস্থাশীল হোন।
তিনি বলেন, আমরা একটি বড় জাতি, আমরা সব সময় নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য। দেশের প্রতিরক্ষার জন্য যত ধরনের অস্ত্রের প্রয়োজন হবে আমরা তা বানাব। যাতে এই অশান্ত অঞ্চলে আমাদের শান্তি নিশ্চিত করতে পারি।
প্রসিডেন্ট রুহানি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের অস্ত্র তার প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে এবং কোনো দেশে আগ্রাসনের জন্য নয়। তিনি বলেন, আমাদের কামনা হলো, এতদঞ্চলের সকল জাতি যেন একত্রে পরস্পরের পাশে থাকে। তাদের সমস্যাবলির যাতে নিজেরাই সমাধান করে।
ড. রুহানি বলেন, ইরানি জাতির যাত্রাপথ রচিত হয়েছে দেশের জাতীয় সংহতি, কল্যাণচিন্তা ও নিরাপত্তার নিরিখে। আমরা নিশ্চিত যে, ভবিষ্যতে আমাদের পারমাণবিক অর্জন হবে অধিকতর, বিশ^ জনমতের কাছে ইরানি জাতির মর্যাদা হবে উন্নত এবং প্রগতির পথে ইরানি জাতি অধিকতর মজবুত ও প্রাগ্রসরভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, ইরানি জাতি অবশ্যই তাদের সমস্যা ও সংকট অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, আমাদের জ্ঞানী, মনীষী ও বিজ্ঞানীদের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা জাতীয় স্বার্থের বাস্তবায়ন ও দেশের উন্নতি অগ্রগতির পথে নিবেদিত। প্রযুক্তিগত উন্নতি ও উন্নয়ন বলতে যা বুঝায় তা এমন জিনিস, যার জন্য ইরানি জাতি তার যাত্রাপথ অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।
১৩৯৭ ফারসি সালের আগমন উপলক্ষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে মহামান্য রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ আল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর বাণী
بسماللهالرّحمنالرّحیم
یا مقلّب القلوب و الابصار، یا مدبّر اللّیل و النّهار، یا محوّل الحول و الاحوال، حوّل حالنا الی احسن الحال. اللّهُمَّ اهدِنا هُدَی المُهتَدین وَارزُقنَا اجتِهادَ المُجتَهِدین.
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। হে অন্তরসমূহ ও দৃষ্টিসমূহের পরিবর্তনকারী! হে রাত ও দিনের সর্বব্যবস্থাপক! হে বছর ও অবস্থাসমূহের বিবর্তন সাধনকারী! আমাদের অবস্থাকে সর্বোত্তম অবস্থার দিকে পরিবর্তিত কর। ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের মতো করে হেদায়াত দান কর এবং চেষ্টা সাধনাকারীদের মতো করে সাধনা করার তাওফীক আমাদেরকে দান করো। (পবিত্র রজব মাসের দোয়া হতে সংকলিত)
আমি প্রিয় দেশবাসী সকলের প্রতি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, যাঁরা দেশের আনাচে-কানাচে এবং সমগ্র বিশে^ ছড়িয়ে আছেন। একইভাবে ঐসব জাতির প্রতিও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, যাঁরা নওরোয পালন করে থাকেন। বিশেষ করে সম্মানিত শহীদ পরিবার, প্রিয় যুদ্ধাহত ও তাঁদের পরিবারবর্গের প্রতি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এর সাথে দেশের অরুণ প্রজন্ম, যারা জাতির সামনে আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক এবং জাতির গতিপথকে ত্বরান্বিত করার কারিগর, আশা করি সবার জন্য নওরোজ হবে আনন্দময় ও মধুময়। আশা করি এই নতুন বছর জাতির জন্য বরকতময় ও সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হবে। এ বছর বিশ্ব প্রকৃতির যে বসন্তকাল তা আধ্যাত্মিক বসন্তকালের একই সময়ে হয়েছে। অর্থাৎ বছরের প্রথম তিন মাস ফারভারদিন, ওর্দিবেহেশত ও খোরদাদ মাস রজব, শাবান ও রমজানের একই সময়ে হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ, প্রকৃতির সমৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিক প্রবৃদ্ধি উভয়কে এ বছর আমরা দেশ ও জাতির জন্য একত্রে লাভ করতে সক্ষম হব। এই আশা আমাদের মনে সঞ্চারিত হচ্ছে যে, ইনশাআল্লাহ বস্তুগত পদ্ধতির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াগুলো এই দেশ ও এই জাতির আগামী দিনগুলোর জন্য সঞ্চয় হয়ে থাকবে। আমি সালাম আরজ করছি, হযরত বাকিয়াতুল্লাহ ইমাম মাহদী (আ.) -(তাঁর জন্য আমাদের প্রাণ উৎসর্গিত)-এর খেদমতে। আর আমাদের মরহুম ইমাম (খোমেইনী র.)-এর রূহের উদ্দেশ্যে দোয়া ও সালাম আরজ করছি।
দু’একটি বাক্য বিগত ১৯৯৬ সাল সম্পর্কে আরজ করব, আর দু’একটি বাক্য নতুন বছর সম্পর্কে বলতে চাই। ৯৬ সাল ছিল অন্যান্য সব বছরের মতো চড়াই-উৎরাইপূর্ণ, তিক্ততা ও মধুরতায় বিশিষ্ট। জীবনের অন্য সব অধ্যায়ের মতোই। ৯৬ সালের মিষ্টিমধুরতা ছিল জাতির পক্ষ হতে শক্তিমত্তার প্রদর্শনী এবং বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে ময়দানে জাতির শক্তিশালী উপস্থিতি।
বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনগুলোতে জাতির বিশাল উপস্থিতি ছিল চোখধাঁধাঁনো। চার কোটির বেশি মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এই উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সুন্দরতম। কুদ্স দিবসের মিছিল ছিল পবিত্র রমজান মাসে, আর বছরের শেষভাগে ছিল ৯ই দেই মাসের মিছিল। সবচেয়ে বড় ও দর্শনীয় ছিল এ বছরের ২২ বাহমানের বিপ্লব বার্ষিকীর মিছিল। গত বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মিষ্টিমধুর বিষয় ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আঞ্চলিক হুমকিসমূহ- যেসব হুমকির লক্ষ্য, অন্ততপক্ষে একটি হুমকির লক্ষ্য ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র এর ওপর আঘাত হানা। এই হুমকিকে ইরান একটি সুযোগে রূপান্তরিত করতে পেরেছে। যে কারণে তা শুধু যে দেশের ওপর কোনো আঘাত করতে পারে নি, তা নয়; বরং তা একটি সুযোগে রূপান্তরিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত যে কোনো লোকই বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।
আরেকটি ইতিবাচক দিক ছিল, গত বছরের স্লোগান অর্থাৎ ‘প্রতিরোধের অর্থনীতি’-এর ছায়াতলে জাতীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান শিরোনামের স্লোগানটি জীবন্ত করা ও তার বাস্তবায়ন। দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এর দ্বারা বেশ ভালো কাজ হয়েছে। অবশ্য আরো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে, যা বাস্তবায়িত হতে হবে। এই স্লোগানটি দেশে অনেকাংশে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আরো কাজ করতে হবে। যাতে ইনশাআল্লাহ এই স্লোগানটি পূর্ণাঙ্গ ও বাস্তবে রূপায়িত হয়।
১৩৯৬ ফারসি সালে কিছু তিক্ততাও আমাদের জন্য ছিল। ভূমিকম্প, বন্যা, বিমান দুর্ঘটনা, জাহাজ দুর্ঘটনা প্রভৃতির মতো বিষয়, যাতে আমাদের অনেক প্রিয়জন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এসব দুর্ঘটনা ছিল আমদের জন্য তিক্ততাপূর্ণ অভিজ্ঞতা। এ ছাড়াও দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে খরা ছিল, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আশা করি আল্লাহ পাকের দয়ায় এবছরের বসন্তে তা পুষিয়ে যাবে। বিভিন্ন শ্রেণির লোকদের মাঝে জীবন যাত্রার কিছু কিছু সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এখনো অব্যাহত রয়েছে। এগুলো দূর করার জন্য চেষ্টা করতে হবে, সবাইকে এই চেষ্টায় অংশীদার হতে হবে। এ সম্পর্কে কিছু কথা আমি উল্লেখ করব। আশা করি ইনশাআল্লাহ এসব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। অবশ্য বছরের শেষের মাসগুলোতে ইরানি জাতির শত্রুদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ও নীলনকশামাফিক দেশে বেশ কিছু গোলযোগ হয়েছে। তাতে ইরানি জাতি মাঠে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে। তারা গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য এই যে দুর্ঘটনা সামনে এসেছে, তাতে ইরানি জাতির মাহাত্ম্যের প্রমাণ প্রকাশিত হয়েছে।
১৩৯৭ সাল সম্পর্কে, যে নতুন সালটি এখন থেকে শুরু হচ্ছে তাতে যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমি বিভিন্ন বছরকেন্দ্রিক স্লোগানগুলোতে সাধারণত রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সামনে রেখে কথা বলি। এ বছর আমার বক্তব্যের সম্বোধিত শ্রেণি জাতির বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। তার মধ্যে রাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। ভূমিকাস্বরূপ আরজ করতে চাই যে, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও অন্যান্য সব বিষয় এই স্লোগানের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে এ বছর আমাদের আসল বিষয় হচ্ছে, জনগণের অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার সমস্যা। সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। এই চেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুও হবে জাতীয় উৎপাদন। অর্থাৎ যদি সবাই মিলে জাতীয় উৎপাদনকে ইনশাআল্লাহ আমার বক্তৃতায় যে সম্পর্কে আরজ করব, যদি সবাই মিলে এই লক্ষের পেছনে কাজ করেন, তাহলে অর্থনৈতিক ও মানুষের জীবন যাত্রার সমস্যা, যেমন কর্মসংস্থানের বিষয়, পুঁজি বিনিয়োগের বিষয় এবং আরো অন্যান্য বিষয়ের সমস্যার অনেকাংশে সমাধান ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে। সামাজিক ক্ষতগুলো বিরাট পরিমাণে হ্রাস পাবে। অর্থাৎ মূল বিষয় হচ্ছে জাতীয় উৎপাদন। কাজেই জাতীয় উৎপাদন যদি গতিশীল হয় তাহলে এমনিতেই বহু সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি এটিকেই এ বছরের স্লোগানরূপে নির্ধারণ করেছি। এ বছরের স্লোগান হবে ‘ইরানি পণ্যের প্রতি সমর্থন’ এর স্লোগান। নতুন বছর হবে ইরানি পণ্যের প্রতি সমর্থন যোগানোর বছর। এই স্লোগান ও লক্ষমাত্রা কেবল রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের জন্য নয়; বরং জাতির সর্বস্তরের সবাইকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে হবে। প্রকৃতপ্রস্তাবে তারা সবাই ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। অবশ্য এই যে সমর্থন যোগানোর কথা বললাম, পাঁচ ছয় দিক থেকে এর বিভিন্ন আঙ্গিক রয়েছে। ইনশাআল্লাহ এই আঙ্গিকের বিষয়টি আমি আমার বক্তৃতায় তুলে ধরব, ব্যাখ্যা করব। তাতে বৃহত্তর জনগণের বিভিন্ন শ্রেণি এবং দেশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের যা আঞ্জাম দিতে হবে তা ইনশাআল্লাহ ব্যাখ্যা করব।
আশাকরি আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সাহায্য করবেন। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সাহায্য করবেন, জনসাধারণকেও সাহায্য করবেন, যাতে সবাই তাঁদের নিজ নিজ দায়িত্ব সর্বোত্তম পন্থায় আঞ্জাম দিতে পারেন। আর এ বছর এই স্লোগান অর্থাৎ নতুন বছর ইরানি পণ্যের প্রতি সমর্থন যোগানোর বছর, প্রকৃত অর্থে তা বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবে।
ওয়াস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
টীকা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মাননীয় রাহবার নববর্ষের অপর এক ভাষণের (২১ মার্চ, মাশাদ) শুরুতে সমালোচকদের একটি দৃষ্টিকোণ নাকচ করে দেন যে, বছরের জন্য স্লোগান নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়টি দায়িত্বশীলবর্গ তা বাস্তবায়ন না করার কারণে একটি নিষ্ফল প্রয়াসমাত্র। তার জবাবে রাহবার বলেন, দুটি লক্ষকে সামনে রেখে বছরের স্লোগান নির্ধারণ করে দেয়া হয়। একটি হলো দেশের নির্বাহী নীতিমালার সামনে এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি দিকনির্দেশনার ছক এঁকে দেয়া। আরেকটি হলো, দেশের আপামর জনসাধারণকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি এবং প্রকৃত চাহিদা সম্পর্র্কে অবহিত করা।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী উল্লেখ করেন যে, অবশ্য রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারাও তাঁদের সাধ্য ও সামর্থ্যরে আওতায় চেষ্টা ও পরিশ্রম করেন। তবে এসব চেষ্টা যদি আরো বেশি করেন, তার ফলাফলও নিশ্চয়ই অনেক বেশি ও উত্তম হবে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাহবার বলেন, ইরানি উৎপাদিত পণ্যসমূহ এদিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এগুলো সুষ্ঠু পরিকল্পনা, পুঁজি বিনিয়োগ, বিভিন্ন শ্রেণির জনগণ ও কর্মকতাদের উদ্যোগ ও গৃহীত পদক্ষেপের চূড়ান্ত অর্জন। মাননীয় রাহবার বলেন, অর্থনৈতিক অঙ্গনের কর্মীবৃন্দ, উৎপাদনকারীরা পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে, কর্মকর্তারা পরিকল্পনা গ্রহণের আওতায়, যুবকরা উদ্ভাবনী শক্তি ও পরিকল্পনা আর শ্রমিকরা তাঁদের কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সমাজের সামনে উপস্থাপন করেন। জনসাধারণের উচিত উৎপাদনে যথাযথ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি আত্মমর্যাদাবোধ ও জাতীয় চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ইরানি পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে পরিশ্রম ও চেষ্টার এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়া ও সমর্থন যোগানো।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মাননীয় রাহবার ইরানি পণ্যের প্রতি সমর্থন যোগানোর কার্যকর কিছু পন্থা সম্বন্ধে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, পণ্যের মানোন্নয়ন, যুগের চাহিদা ও জনগণের রুচির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া, বিদেশী পণ্যের সাথে দামে ও মানে প্রতিযোগিতায় উতরে যাওয়ার মতো হওয়া প্রভৃতি হচ্ছে এই সমর্থন যোগানোর কয়েকটি দিক।
তিনি রফতানি পণ্যের বাজার খুঁজে বের করাকে ইরানি পণ্যের প্রতি সমর্থন দানের অন্যতম কর্মপন্থা বলে অভিহিত করেন। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ও অর্থনৈতিক কর্মীদের গুরুদায়িত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা যদি ইরানের ১৫টি প্রতিবেশীর চাহিদার শতকরা ২০ ভাগ আকর্ষণীয় ইরানি পণ্যের মাধ্যমে পূরণ করতে পারি তাহলে তা কর্মসংস্থান ও জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিতে আমাদের বিরাট পদক্ষেপ বলে গণ্য হবে।
ইসলামি ইরানের রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানি পণ্যের প্রতি সমর্থন দানের বিভিন্ন কর্মপন্থা ও এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বছরের স্লোগান বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, ক্ষেত্র ও বাধ্যবাধকতার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, আমদানি পণ্যের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব রয়েছে, এই আমদানি সরকারি ক্ষেত্রে হোক বা বেসরকারি খাতের হোক তাতে সরকারকে দৃঢ়তার সাথে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনুরূপভাবে যেসব পণ্য দেশের ভেতরে উৎপাদিত হয় বা উৎপাদিত হওয়া সম্ভব তা আমদানি হতে বিরত থাকতে হবে। মাননীয় রাহবার তাঁর ভাষণে এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, দেশীয় উৎপাদনের ওপর আমদানি পণ্যের প্রভাব মৌলিক ও অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, আমরা যখন দেশে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় এমন পন্য আমদানি করি আর বেকার সমস্যার সমালোচনা করি, তখন বিষয়টি অর্থহীন হয়ে য্য়া। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করাকে ইরানি পণ্যের প্রতি সমর্থন দানের দ্বিতীয় পদক্ষেপ বলে মূল্যায়ন করেন। রাহবার বলেন, জনগণেরও উচিত পুরোপুরি আত্মমর্যাদাবোধে উজ্জীবিত হয়ে চোরাচালানে আমদানিকৃত পণ্যের ভোগ-ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। যাতে চোরাচালান কারো জন্য লাভজনক না হয়।
অর্থনৈতিক কর্মীদের পক্ষ হতে উৎপাদন খাতে পুঁজি বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে মাননীয় রাহবার বলেন, এই পূঁজিবিনিয়োগে মুনাফা যেমন অর্জিত হবে তেমনি এর দ্বারা দেশের উন্নয়নও সাধিত হবে। কাজেই বিষয়টির প্রতি যত্নবান হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বছরের স্লোগান সম্পর্কে ইসলামি বিপ্লবের রাহবারের উপসংহার ছিল, আমরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলরা, অর্থনৈতিক কর্মীরা, বিক্রেতারা ও ভোক্তারা সবাই আত্মমর্যাদাবোধ ও জাতীয় চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ইরানি পণ্যের প্রতি সমর্থন দানে এগিয়ে যাব।
ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সাদী দিবস উদযাপন ও ৬৮তম ফারসি ভাষা শিক্ষা কোর্সের উদ্বোধন
বিশ্বখ্যাত ইরানি কবি শেখ সাদীর স্মরণে গত ২৩ এপ্রিল ২০১৮ রাজধানী ঢাকায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিচালিত ৬৮তম ফারসি ভাষা শিক্ষা কোর্সের উদ্বোধন ও ৬৭তম কোর্সের সনদপত্র ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আবুল কালাম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ বলেন, ইরানের বিখ্যাত কবি শেখ সাদী সম্পর্কে আমরা বাংলা ভাষাভাষীরা কমবেশি সবাই পরিচিত। বিশ্বসাহিত্যের অমর এই প্রতিভার চিরন্তন কাব্যদ্যুতি, শিল্পসুষমা, মরমী ও শাশ্বত আবেদনমনস্ক ও বোদ্ধা পাঠকের হৃদয় খুব সহজেই ছুঁয়ে যায়। আবিষ্ট ও আপ্লুত করে। তিনি বলেন, ফারসি সাহিত্যে প্রচলিত একটি প্রবাদ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। ওই প্রবাদে বলা হয়েছে ‘সাত জন কবির সাহিত্যকর্ম রেখে যদি বাকি সাহিত্য দুনিয়া থেকে মুছে ফেলা হয়, তবু ফারসি সাহিত্য টিকে থাকবে। এই সাত জন কবি হচ্ছেন মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী, ফেরদৌসী, হাফেজ, নিজামী, শেখ সাদী, রুদাকি এবং জামি।’
কবি হাসান হাফিজ বলেন, মহাকবি শেখ সাদীর অনন্য গ্রন্থ ‘গুলিস্তান’ লিখিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাত শ’ বছর আগে। পদ্য ও গদ্যের সংমিশ্রণে লিখিত গ্রন্থ ‘গুলিস্তান’ এ বিধৃত সৌন্দর্যসুষমা, নৈতিকতা, অলঙ্কার উপমা আভরণ যেভাবে শৈল্পিক বিন্যাসে শোভিত ও আয়ুষ্মান, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি নিবেদিত অমর উজ্জ্বল পঙ্ক্তিমালার অনুরণন, শিহরণ বিশ্বমানবের প্রিয়তা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে। শেখ সাদী তাঁর গুলিস্তান গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন :
বালাগাল উলা বিকামা’লিহি
কাশাফাদ দুজা বি’জামালিহি
হাসুনাত জামিয়ু খিসালিহি
সাল্লু আলাইহি ওয়া আ’লিহি।
শাশ্বত আবেদনঋদ্ধ এসব পঙ্ক্তিমালার বাংলা অনুবাদ বেশ কয়েকজন করেছেন। বলা হয়, এর যথার্থ ও সঠিক অনুবাদ করা সম্ভবপর হয় নি।
তিনি বলেন, ‘গুলিস্তান’ এর ভূমিকায় বিধৃত এই পঙ্ক্তিমালা শত শত বছর ধরে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় মাহফিলগুলোতে রাসূলে পাকের আশেকগণ ভক্তি ও শ্রদ্ধায় অবনত কণ্ঠে সমস্বরে পাঠ করে অনাবিল তৃপ্তি ও নির্মল আনন্দ পান।
কবি হাসান হাফিজ বলেন, মহাকবি শেখ সাদীর শ্রেষ্ঠ কীর্তি হচ্ছে ‘বুস্তান’ ও ‘গুলিস্তান’। ‘বুস্তান’ লেখা সম্পূর্ণ হয় ১২৫৭ খ্রিস্টাব্দে। আর ‘গুলিস্তান’ রচনাকাল হচ্ছে তার পরের বছর ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন তেহরান সফরে গিয়ে বলেছিলেন, জাতিসংঘ সদর দফতরের প্রবেশপথে রয়েছে জমকালো দৃষ্টিনন্দন একটি কার্পেট। আমার মনে হয় জাতিসংঘের যত কার্পেট আছে, তার মধ্যে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড়। এটি জাতিসংঘের দেয়ালকে সুশোভিত করে রেখেছে। কার্পেটটি ইরানের জনগণের দেয়া প্রীতি ভালোবাসার উপহার। ওই কার্পেটের পাশেই উৎকীর্ণ রয়েছে ফারসি সাহিত্যের মহান কবি শেখ সাদীর চমৎকার নান্দনিক একটি কবিতার বর্ণোজ্জ্বল পঙ্ক্তিসমূহ –
All human beings are members of one frame,
Since all, at first from the same essence came.
When time afflicts a limb with pain
The other limbs at rest cannot remain.
If thou feel not for other’s misery
A human being is no name for thee.
তিনি আরো বলেন, শেখ সাদীর রচনা বাংলায় আরো বেশিমাত্রায় অনুবাদ হওয়া দরকার। মহান এই কবির জীবনদর্শনও সম্যকভাবে জানা প্রয়োজন। চিরন্তন এই সাহিত্যের রস আস্বাদনের সুযোগ আমাদের উপকৃত, আনন্দিত করবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্ব ক্ল্যাসিক রচনা সব কালে সব সময়েই মানবসমাজকে উদ্দীপিত, অনুপ্রাণিত, আলোকিত করে।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী বলেন, এমন এক মহান কবির স্মরণ অনুষ্ঠানে আজ আমরা উপস্থিত হয়েছি যাঁর নাম জানে না উপ-মহাদেশে এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। ফারসি সাহিত্যে যত কবি, সাহিত্যিক রয়েছেন তাঁদের মধ্যে সাদী উপমহাদেশের মানুষের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় কবি। তাঁর বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম ‘গুলিস্তান’ রচনার সমাপ্তির দিনকে সাদী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সাদী এমন একজন কবি যিনি গদ্যে ও পদ্যে সমান পারদর্শী ছিলেন। তাঁর রচিত গদ্যে-পদ্যে রয়েছে শব্দে শব্দে ঝঙ্কার, ভাবের তরঙ্গ, আনন্দের উচ্ছলতা, তত্ত্বের সমাহার। তাঁর কাব্যের বাচনভঙ্গি অপূর্ব, প্রাঞ্জল, গতিময়। আপনি যখন গদ্যের মাঝে শ্লোক, খণ্ড কবিতা প্রভৃতি পদ্যের সুন্দর সংযোজন দেখবেন, মনে হবে গদ্য-পদ্যের সকল সীমা চুরমার করে দিয়েছে ‘গুলিস্তান’। প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি শ্লোক মুখস্ত রাখার মতো। অফুরন্ত জ্ঞান, তত্ত্ব ও উপদেশ উপচে পড়ে ‘গুলিস্তান’ এর প্রতিটি বাক্য বিন্যাসে। তিনি অত্যন্ত মোহনীয়ভাবে কোরআন, হাদিসের শিক্ষা ও শব্দ সম্ভারের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন ফারসিতে। ফলে মহান আল্লাহর তাওহীদের বাণী ও শিক্ষা বুকে ধারণ করায় ফারসি হয়েছে অপরিবর্তনীয়, অক্ষয়। তিনি বলেন, ফারসি সাহিত্যের এই মহান কবি শেখ সাদীর চমৎকার নান্দনিক একটি কবিতার বর্ণোজ্জ্বল পঙ্ক্তিসমূহ শোভা পাচ্ছে জাতিসংঘের প্রধান ফটকে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, যদি কেউ কোনো ভাষা ও সাহিত্যে সমৃদ্ধ হতে চায় তাহলে এর প্রতি যেমন আগ্রহ থাকতে হবে তেমনি সেই ভাষার কবি ও সাহিত্যকদের প্রতিও ভালোবাসা থাকতে হবে। কবি, সাহিত্যিকদের প্রতি ভালোবাসা আমি ইরানিদের কাছে দেখেছি। সম্প্রতি আমি ইরান সফরকালে নিশাপুরে ফারসি সাহিত্যের অন্যতম কবি ফরিদুদ্দিন আত্তারের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেদিন অনেক বৃষ্টি ছিল। কিন্তু বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত মানুষ যেভাবে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিল তাতেই বুঝা যায় দেশটির মানুষ কবি সাহিত্যিকদের প্রতি কতটা ভক্ত! তিনি বলেন, আমি সাদী ফাউন্ডেশনে গিয়ে দেখেছি, ইরানিরা তাদের মাতৃভাষাকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কতটা তৎপর। আর ঢাকার ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যে এক্ষেত্রে অনেকটা সফল আজকের এই অনুষ্ঠানই তার প্রমাণ। এখানে যারা ফারসি ভাষা শিক্ষার কোর্স সম্পন্ন করেছেন তাঁদের দুই একজনের ফারসি কথা থেকেই প্রমাণিত হয় এখানে কত যতœসহকারে ফারসি শেখানো হয়। এখানকার ফারসি ভাষা শিক্ষা কোর্সের সফলতা থেকে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে কবি শেখ সাদী রচিত একটি গান পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক মেহেদী হাসান। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে এবছর ইরানি নওরোয ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র প্রদান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
ইরানি প্রবাদ বাক্য
سزای گرانفروشی نخریدن است.
উচ্চারণ : সাযা’য়ে গেরা’নফুরুশী নাখারীদান আস্ত
অর্থ : অতিরিক্ত দামে মাল বিক্রির শাস্তি হলো ক্রয় না করা।
মর্মার্থ : যে ব্যক্তি তার প্রাপ্য হক নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না, তার সাথে কোনো লেনদেন করা উচিত নয় বুঝাতে এই প্রবাদের ব্যবহার সর্বজনবিদিত।
سعدیا مرد نکو نام نمیرد هرگز
مرده آنست که نامش به نکویی نبرند.
উচ্চারণ : সা‘দিয়া’ মার্দে নেকূ না’ম নামীরাদ হারগেজ
মোরদে অ’নাস্ত কে না’মাশ বে নেকূয়ী নাবারান্দ
অর্থ : হে সাদী! সুনামের অধিকারী কেউ কখনো মরে না
মৃত তো সে, সুনামের সাথে যার নাম নেয়া হয় না।
سفت کن و شل کن در آوردن.
উচ্চারণ : সেফত কোন ও শোল কোন দার অ’ওয়ার্দান
অর্থ : বাঁধন শক্ত করো আর ঢিলা করো জাতীয় বাহানা তালাশ করা।
মর্মার্থ : প্রতি মুহূর্তে একেক ধরনের আদেশ দেয়, নিজের কাজকর্মে সন্দেহপ্রবণ বুঝাতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
سفره اش همیشه پهن است.
উচ্চারণ : সোফরেআশ হামীশে পাহ্ন আস্ত
অর্থ : তার দস্তরখান সব সময় প্রসারিত আছে।
মর্মার্থ : লোকটি অতিথিপরায়ণ, খুব দানশীল ও উদারদিল বুঝাতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
سفره دلش را پیش همه پهن می کند.
উচ্চারণ : সোফরেয়ে দেলাশ রা’ পীশে হামে পাহ্ন মী কোনাদ
অর্থ : তার দিলের দস্তরখানা সবার সামনে মেলে ধরেছে।
মর্মার্থ : এই প্রবাদের মর্মার্থ, লোকটি নিজের ও পরিবারের গোপন খবরাখবর মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়।
سقش را با بوق حمام برداشته اند.
উচ্চারণ : সাক্কাশ রা’ বা’ বূকে হাম্মা’ম বারদা’শতে আন্দ
মর্মার্থ : এই প্রবাদের দ্বারা লোকটি খুব উচ্চৈঃস্বরে চেঁচামেচি করে বা তার আওয়াজ কর্কশ কিংবা কান ফাটিয়ে ফেলে কথা বলে, বুঝানো হয়।
سقف آسمان سوراخ شده همین یکی افتاد.
উচ্চারণ : সাকফে আসেমা’ন সূরা’খ শোদে হামীন য়্যাকী উফতা’দ
অর্থ : আসমানের ছাদ ফুটো হয়ে এই একটা মালই পড়ে গেছে।
মর্মার্থ : তিনি কিনা অতুলনীয়, একেবারে নজিরবিহীন, একটাই মাল প্রভৃতি ব্যাঙ্গার্থে এই প্রবাদের ব্যবহার।
سکه شاه ولایت هرجا رود پس آید.
উচ্চারণ : সিক্কেয়ে শা’হে বেলা’য়াত হারজা’ রাওয়াদ পাস অ’য়াদ
অর্থ : দেশের রাজা, তার মুদ্রা যেখানে যায় ফেরত আসে।
মর্মার্থ : কোথাও তার পাত্তা নেই, গায়ে মানে না আপনি মোড়ল বুঝাতে এই প্রবাদের ব্যবহার রসাত্মক।
অনুবাদ : আবু আব্দুল্লাহ
ইরানের বর্ষসেরা বই পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু
ইরানের বর্ষসেরা বই পুরস্কার ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর বুক অব দ্যা ইয়ার অব দ্য ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান’ এর জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। আগামী ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরানের ২৬তম বর্ষসেরা বই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিশ্বের যে কোনো দেশের আগ্রহী লেখক, প্রকাশকদের কাছে আবেদন পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে আয়োজকেরা।
জানা যায়, বর্ষসেরা এই বই অ্যাওয়ার্ডে অংশ গ্রহণের জন্য যে কোনো ভাষার বই পাঠানো যাবে। তবে বইয়ের বিষয়বস্তু হতে হবে ইসলামিক স্টাডিজ অথবা ইরানিয়ান স্টাডিজ- এই দুই শিরোনামের মধ্যে। এসব বইয়ের প্রথম সংস্করণ অবশ্যই ইরানের বাইরে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হতে হবে।
উল্লিখিত দুই বিষয়ের বইয়ের প্রতিটির আবার অসংখ্য অংশ ও অধ্যায় থাকবে। নিচে তার মধ্য থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো-
১। ইসলামিক স্টাডিজ: ইসলামের ইতিহাস, ইসলামি সভ্যতা, কুরআন ও হাদিস অধ্যায়ন, ইসলামি প্রযুক্তি ও দর্শন, ইসলামি রহস্যবাদ, ইসলামি আইন ও আইনশাস্ত্র, ক্লাসিক ইসলামি পাঠ্যের অনুবাদ, ইসলামি অর্থনীতি, সমসাময়িক ইসলামি অধ্যায়ন, ইসলামি শিল্প ও স্থাপত্য, বিজ্ঞানের ইতিহাস ইত্যাদি।
২। ইরানিয়ান স্টাডিজ: ইরানের ইতিহাস, ইরানি ভাষা, ইরানি ভূগোল, প্রাচীন ইরানি ধর্ম, সভ্যতা এবং ইতিহাস, ফারসি সাহিত্য, ইরানি শিল্প ও স্থাপত্য, ইরানে বিজ্ঞানের ইতিহাস, ইরানি নৃবিজ্ঞান, ও ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের অনুবাদ।
চলতি বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আগ্রহী স্কলার, লেখক, অনুবাদক ও প্রকাশককে বর্ষসেরা বই অ্যাওয়ার্ডে অংশগ্রহণের মনোনয়নের জন্য আবেদন পাঠানোর আাহ্বান জানিয়েছে বুক অ্যাওয়ার্ড কমিটি।
আবেদনকারীকে তার বইয়ের জন্য মনোনয়ন চেয়ে প্রথমে বই অ্যাওয়ার্ড কমিটির এই [email protected] ই-মেইলে আবেদন পাঠাতে হবে। তারপর- দ্যা বুক অ্যাওয়ার্ড সেক্রেটারিয়েট, পিও বক্স ১৪১৫৫-১৪৩৭, তেহরান, ইরান, টেলি: +৯৮ ২১ ৮৮৮৬১৩২০- ঠিকানায় আবেদনে উল্লিখিত বইটি পাঠাতে হবে। আরও তথ্য জানতে [email protected] এই ই-মেইলে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নিউজ লেটার
আসুন পারস্পরিক সহযোগিতায় নতুন বিশ^ গড়ি প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি
আসুন পারস্পরিক সহযোগিতায় নতুন বিশ^ গড়ি
প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন ড. হাসান রুহানি গত ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ১৩তম সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সকল দেশের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তার প্রতি সম্মান পোষণ করে। ইরান মনে করে যে, ইসলামি উম্মাহর যাবতীয় সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে সকল ইসলামি দেশের মাঝে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা। ড. হাসান রুহানির ভাষণের পূর্ণ বিবরণ নি¤েœ প্রদত্ত হলো :
بسمالله الرّحمن الرّحیم
و المؤمنون و المؤمنات بعضهم اولیاء بعض یأمرون بالمعروف و ینهون عن المنکر و یقیمون الصلاة و یوتون الزکاة و یطیعون الله و رسوله اولئک سیرحمهم الله ان الله عزیز حکیم
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী তারা একে অপরের বন্ধু। তারা সৎ ও ন্যায়ের আদেশ দেয় আর অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে বাধা দেয়। আর তারা নামায কায়েম করে। যাকাত দেয়। এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে। তাদের প্রতিই আল্লাহ অতি শীঘ্র রহমত নাযিল করবেন। আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-৭১)
জনাব ড. লারিজানী
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মজলিসে শুরার মাননীয় স্পীকার!
ইসলামি দেশসমূহের পার্লামেন্টের স্পিকার মহোদয়গণ!
উপস্থিত ভদ্র মহোদয় ও ভদ্র মহিলাগণ!
প্রথমেই আমি ইসলামি উম্মাহর পার্লামেন্ট সদস্যদের এই মহতী বৈঠকে আপনাদের উপস্থিতির জন্য আমার পক্ষ হতে আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে সব সম্মানিত মেহমানকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করি ইরানে আপনাদের অবস্থানকাল আনন্দময় হবে। আমি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ১৩তম বৈঠকে উত্থাপিত আলোচ্য বিষয়গুলো সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনাদের তাওফিক ও সাফল্যের জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে ফরিয়াদ জানাচ্ছি।
ইসলামি জাহানের বর্তমান অত্যন্ত স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে ইসলামি দেশগুলোর সমস্যা ও সংকটের বিরাট অংশের সমাধান সন্দেহাতীতভাবে বিভিন্ন দেশের চলতি বিষয়াদির ক্ষেত্রে জনগণের সত্যিকার সম্পৃক্ততা ও ইনসাফপূর্ণ অংশগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়টি আইন প্রণয়নকারী পার্লামেন্টের ভূমিকাকে অতি পরিষ্কাররূপে প্রতিভাত করে, যে পার্লামেন্ট মূলত প্রত্যেক দেশের নিজস্ব বিষয়াদি উপস্থাপনে জনগণের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের বাস্তব প্রতীক। এরই প্রেক্ষাপটে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য সুসংহত করার ক্ষেত্রে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের মূল্যবান ভূমিকাকে কোনোভাবে অস্বীকার করা যাবে না। সন্দেহ নেই যে, এ ধরনের বৈঠক ইসলামি জাহানে ভ্রাতৃত্বের চেতনা শক্তিশালী ও উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামি উম্মাহর মাঝে সমন্বয় ও সংহতি স্থাপনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কল্যাণকর ও ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।
আজকের দিনে ইসলামি জাহান বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়াদিতে নাক গলানো এবং তাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ উৎসের ওপর বিদেশী শক্তিগুলোর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, দারিদ্র্য, বঞ্চনা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাবলি, অনুন্নতি, ইসলামি দেশগুলোর মাঝে মতবিরোধ প্রভৃতি হচ্ছে এমন সব সংকট ও চ্যালেঞ্জের নমুনা, আমরা যেগুলোর মুখোমুখি হয়ে রয়েছি। এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার পথ বিদেশী শক্তিগুলোর প্রতি তাকিয়ে থাকা ও তাদের ওপর নির্ভরশীলতা নয়।
সমকালীন ইতিহাসের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে, এসব শক্তি শুধু নিজেদের স্বার্থের চিন্তায় থাকে। আর তাও অন্যদের খরচের ওপর নির্ভর করে। তারা অন্যদের ব্যথা-বেদনা হ্রাস করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না। অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি প্রয়োগ, যেমন প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ অথবা সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে বলে হুমকি প্রদান, বিভিন্ন দেশ মারণাস্ত্র বিক্রি, যার ফলে হত্যা, ধংসাযজ্ঞ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়, অনুরূপভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে আধিপত্যবাদ, শ্রেষ্ঠত্ব লিপ্সা ও ক্ষমতাচ্যুত করার নীতি অব্যাহত রাখার জন্য ইসলামি উম্মাহর মাঝে অনৈক্য ও মতবিরোধ সৃষ্টি প্রভৃতি হচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরোনো সা¤্রাজ্যবাদী ও শোষণ নীতি অব্যাহত রাখার বহুমুখি প্রয়াসের একেকটি নমুনা।
উপস্থিত সমস্যা ও সংকট এবং চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে পর্যালোচনা এবং এগুলোর মোকাবিলার পথ বের করার জন্য আমাদের দৃষ্টি অভ্যন্তরের দিকে দিতে হবে, বাইরের দিকে নয়। আমাদেরকে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা ও শক্তির ওপর নির্ভর করে আমাদের সমাজের সমস্যা ও সংকটগুলো আমাদের সম্মুখ থেকে অপসারণ করতে হবে, অন্যদের দিকে আশার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকার মাধ্যমে নয়। যাতে আমাদের সমস্যবলি আমরা নিজেরা সমাধান করতে পারি। এর অর্থ একঘরে থাকার মনোভাব নয়; বরং তার বিপরীত। আমরা গঠনমূলক আদান প্রদান, বোঝাপড়া এবং অন্যদের সাথে ইসলামি দেশগুলোর সমকক্ষ নীতি অবস্থানের পক্ষপাতি। এমনভাবে যে, তাতে ইসলামি দেশগুলোর অভ্যন্তরে নাক গলানো এবং শোষণ লুণ্ঠনের কোনো অবকাশ থাকবে না।
আমরা বিশ^াস করি যে, যদি পারস্পরিক সম্পর্ক সুস্থ বোঝাপোড়া এবং আন্তর্জাতিক অধিকারের মূলনীতির ভিত্তিতে গড়ে উঠে তাহলে আজকের বিশে^র অধিকাংশ সমস্যা ও সংকটের সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। সমস্যা এখান থেকে শুরু হয় যে, কোনো কোনো দেশ অন্যদের সাথে সমান ও গঠনমূলক সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নয়। অন্যদের প্রতি তাদের দৃষ্টি হচ্ছে ওপর থেকে নিচের দিকে দৃষ্টিপাত করার মতো। তারা সব সময় একতরফা সম্পর্কের পক্ষপাতি আর তাও তাদের স্বার্থের অনুকূলে। আমাদের কর্তব্য হলো, আমাদের মতবিরোধগুলো দূর করে, নিজেদের মধ্যে সমন্বয় ও অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে নিজস্ব জনশক্তি ও সামাজিক সম্পদ এবং সমৃদ্ধ উৎসগুলোকে কাজে লাগিয়ে বিজাতীয়দের প্রতি নির্ভরশীলতা হ্রাস করব এবং ইসলামি জাহানের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও উন্নতশির হওয়ার লক্ষে এগিয়ে যাব। আমাদেরকে নিজেদের মধ্যে এই বিশ^াস শক্তিশালী করতে হবে যে, কেবল বিজাতীয়দের প্রতি নির্ভরশীল না হওয়া ও ইসলামি উম্মাহর মাঝে অধিকতর সংহতির মাধ্যমে আমরা ইসলামি জাহানের সমস্যা ও সংকটগুলো সমাধান করতে সফলকাম হব।
সম্মানিত উপস্থিতি!
ইসলামি জাহান কখনোই নিজেকে ফিরে পাবে না, যতদিন না মুসলিম দেশের জাতিসমূহ জনগণের ক্ষমতা অর্জন ও তাকে উন্নত করার ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা ও যথার্থতা প্রমাণ করতে না পারবে, যতদিন সামাজিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তার ছায়াতলে সব শ্রেণি ও মানুষের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সওগাত বয়ে আনতে সক্ষম না হবে। এই লক্ষ্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটি হবে এতদঞ্চল শান্ত থাকা এবং শান্তিপূর্ণ বৈদেশিক সম্পর্কের অধিকারী হওয়া। যতদিন বৈদেশিক ঝগড়া ও টানাপোড়েনে জড়িয়ে থাকবে ততদিন পর্যন্ত কোনো দেশই নিজস্ব অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে না। কোনো দেশই বিদেশী সেনা অভিযানের মাধ্যমে তার অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ ও হত্যাকা- চালানোর মাধ্যমে কখনোই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভবপর নয়। নিজস্ব সীমানার বাইরে সহিংসতা চালানো এবং নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যাবলি বাইরে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে দেশের ভেতরকার উগ্রবাদ ও সহিংসতার অবসান কেউ ঘটাতে পারবে না। তার বিপরীতে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মোকাবিলা, বর্ণ বা লিঙ্গভেদ, জাতীয়তা, ধর্মীয় তারতম্যের ঊর্ধ্বে উঠে সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করার মাধ্যমেই উগ্রবাদ ও সহিংসতার অবসান ঘটানো সম্ভবপর হতে পারে। এটি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য, যা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের পার্লামেন্টসমূহ জনপ্রতিনিধিদের ফোরাম হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এই লক্ষেই আমি প্রস্তাব করতে চাই যে, ইসলামি পার্লামেন্টারি ইউনিয়নগুলোর সদস্যদের মাঝে সহযোগিতা, চিন্তার বিনিময় ও সহমর্মিতাকে অধিকতর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। যাতে পার্লামেন্ট সদস্যরা শুধু এই ফোরামে নয়; বরং বিশেষায়িত কমিশনগুলোতে মেয়াদি ফ্রেমে ও সুবিন্যস্ত আকারে তাদের প্রতিপক্ষের সাথে সমস্যাবলি ও তার সমাধান নিয়ে সম্মিলিত আকারে আলাপ আলোচনা করতে পারে।
মাননীয় সভাপতি!
অন্য যে কোনো সময়ের চাইতে অধিক মাত্রায় ইসলামি দেশগুলোতে জনশাসনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ ও তা কার্যকর করা একান্ত প্রয়োজন। পশ্চিমা বিশ^ মনে করে যে, ইসলামি চিন্তা-চেতনা ও জনশাসনের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এতদুভয়ের মাঝে সম্পর্ক বিপরীতমুখি। তারা এই অজুহাতেই সা¤্রাজ্যবাদের নতুন নতুন সংস্করণ ইসলামি দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দিতে ও তার প্রস্তাবনা পেশ করতে নিজেদের অধিকার আছে বলে মনে করে।
মুসলমান হিসেবে আইনশাস্ত্র ফিকাহ, শরীয়া ও ইতিহাসের যে বিশাল উত্তরাধিকার আমাদের আছে তার যথাযথ সংরক্ষণ আমাদের করতে হবে। দ্বীনের সাথে সংগতিপূর্ণ গণভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা একদিকে দ্বীনের রাজনৈতিক ও সামাজিক উপস্থিতির কারণ হবে এবং তা আইনগত ও জন সমর্থিত রূপ লাভ করবে, অন্যদিকে ধর্মীয় তথা ইসলামি ঐতিহ্যকে অত্যন্ত সুন্দর অবয়বে প্রতিষ্ঠিত ও অবিচল রাখা সম্ভব হবে।
আমাদের শাসন ব্যবস্থাকে জনভিত্তিক রাখার জন্য সর্বোত্তম মডেল হলো মহানবী (সা.)-এর শাসন পদ্ধতি। নবী করিম (সা.)-এর শাসন ব্যবস্থার সুমহান আদর্শের মধ্যে-যদিও তিনি ওহী ও নিষ্পাপতার সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন এবং সব মুসলমানই সেই রহমতের নবীর প্রতি আসক্ত ছিলেন এবং তাঁর বাণীসমূহ আল্লাহর অহী থেকে উৎসারিত বলে জানতেন এবং এখনো সবাই সেভাবে জানেন; তবুও তিনি একজন শাসকের অবস্থান থেকে জনগণের সাথে পরামর্শ করতেন। তিনি তাদের প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসাসমূহ, এমনকি তাদের আপত্তিগুলোও খুশি মুখে শ্রবণ করতেন ও তার জবাব দিতেন। হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর বিশ^জনীন হুকুমতেও- যদিও তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে হেদায়াত ও নিষ্পাপতার উৎসস্বরূপ, কিন্তু তাঁর দিকে মানুষের এগিয়ে আসা ও সাদরে বরণ করে নেয়ার মাধ্যমেই সেই শাসন ব্যবস্থা বলবৎ হবে। আমরাও যেখানে নবী করিম (সা.)-এর রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছি, সেখানে আমাদেরকেও ওহীলব্ধ শিক্ষাগুলোর প্রতি গভীর বিশ^াস নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে জনভিত্তিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ লক্ষে জনগণের মতামত ও প্রতিবাদসমূহের প্রতি আমাদের বক্ষ খুলে দিয়ে মজবুতভাবে তা সুসম্পন্ন করতে হবে।
জনভিত্তিক শাসন এবং জনগণের মতামতের প্রতি মনোযোগ প্রদান হবে পশ্চিমা বিশে^র মোকাবিলায় আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকৌশল। আমরা আমাদের ভোটের বাক্স, পার্লামেন্টের ট্রিবিউন, স্বাধীন সংবাদপত্র, সংবাদ মাধ্যম ও চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, তোমাদের হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। ইসলাম হচ্ছে জন শাসনের ধর্ম। শান্তির ধর্ম। যুদ্ধের ধর্ম নয়। ‘ইসলাম’ পরিভাষার মূল উৎস ‘সিল্ম’। বস্তুত ইসলামি জাহানের বাইরে বা ভিতরে সবখানে আমাদেরকে শান্তি, সন্ধি ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এই পথেই আমাদের সমস্যাসমূহ সমাধান করতে হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সকল দেশের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তার প্রতি সম্মান পোষণ করে। ইরান মনে করে যে, ইসলামি উম্মাহর যাবতীয় সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে সকল ইসলামি দেশের মাঝে সৌহার্দ্র ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ইসলামি দেশগুলোর সাথে তার সহযোগিতাকে ইসলামি সহমর্মিতা ও ভালোবাসার বন্ধনে ব্যাখ্যা করতে বিশ^াসী। আমরা কোনো ইসলামি দেশকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবি না। আমরা বিশ^াস করি, এমনকি যেসব দেশের সাথে আমাদের মতপার্থক্য আছে, তাদের সাথেও পারস্পরিক সম্মানবোধের মূলনীতিতে আলাপ-আলোচনা ও সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি। দুঃখজনকভাবে কোনো কোনো দেশ রাস্তা ভুলে ভুলপথে চালিত হচ্ছে। তারা আমেরিকা ও যায়নবাদী সরকারের প্ররোচনার শিকার হয়ে ইসলামি উম্মাহর মাঝে ফাটল সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমাদের মতে যেসব শক্তি নিজেরা বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহ চাপিয়ে দেয়া, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ ও ইসলামি জাহানে উদ্ভূত সংকটগুলোর জন্য দায়ী এবং এসবের উৎস ও অনুঘটকের কাজ করছে আর রক্তপাত ঘটানো, অনৈক্য সৃষ্টি, সহিংসতার বিস্তার ও উগ্রবাদের প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বের চাহিদা পূরণ করছে, তারা কোনো ক্রমেই চায় না এবং এমন অবস্থায় তারা নেই যে, মজলুম ও নির্যাতিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে।
মাননীয় সভাপতি!
সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ!
এই বৈঠক এমন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে উগ্রবাদী আইএস থেকে সৃষ্ট ধ্বংসাত্মক ও মারাত্মক হুমকির মাত্রা প্রচ-ভাবে হ্রাস পেয়েছে। যে আইএস পবিত্র ইসলামি শরীয়ার একটি বিকৃত ব্যাখ্যা অবলম্বন করে ইসলাম সম্পর্কে আগাগোড়া ভুল, অশুভ ও মারাত্মক একটি ধারণা বিশ^বাসীর সামনে উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছিল। ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই আমরা এই সন্ত্রাসী দল এবং এ জাতীয় অন্যান্য দলের বিলুপ্তির দৃশ্য দেখতে পাব। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এই বিভ্রান্ত গ্রুপটির জন্মের শুরু থেকেই তাকে মোকাবিলা করার শুরুর কাতারে ছিল এবং সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় নিজস্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্যদেরকেও এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে।
আমরা ইরাক ও সিরিয়ার সরকারসমূহের আহ্বানে আমাদের সামরিক উপদেষ্টাদের ঐ দুই দেশে প্রেরণ করেছি। যাতে ঐ দুই দেশের জনগণের পাশে থেকে তাকফিরি সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে পারেন এবং অন্যান্য দেশে তাদের অপতৎপরতা রোধ করতে সক্ষম হন। আমরা আশা করি অপরাপর সব মুসলিম দেশের সহযোগিতায় ইসলামি জাহানে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদের পুরোপুরি মূলোৎপাটন হয়ে যাবে এবং ইসলামি উম্মাহর সম্পদ ও শক্তি-সামর্থ্য এ ধরনের ধ্বংসাত্মক হুমকির মোকাবিলায় ব্যয় হওয়ার পরিবর্তে মুসলিম জনগনের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথে ব্যয় করা সম্ভবপর হবে। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংঘটিত করা, যা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব হিসেবে এবং ‘বিশ^ সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমরা (ডঅঠঊ) শিরোনামে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে সমর্থিত ও সর্বজনীন সম্মতি লাভ করেছে, তা ইসলামি উম্মাহর লক্ষসমূহ এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদ্যমান সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আইএস এর সহিংস, বিকৃত ও বিচ্যুত তৎপরতা ব্যর্থ ও পরাজিত হওয়ার একটি মূল অর্জন হচ্ছে ফিলিস্তিন ইস্যু ইসলামি উম্মাহর সর্বাধিক অগ্রাধিকারযোগ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে তার আসল অবস্থানে ফিরে আসা। আমরা বিশ^াস করি যে, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে ফিলিস্তিনে জবরদখল অব্যাহত থাকা এবং যায়নবাদী সরকারের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বমূলক ও অবারিত সমর্থন ও সাহায্য আব্যাহত থাকা। একই সাথে ফিলিস্তিনের মজলুম জাতি কুদ্স শরীফকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন সরকারের গঠনের ক্ষেত্রে তাদের ন্যূনতম অধিকার হতে বঞ্চিত হওয়া। কুদ্স শরীফে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের যে অশুভ অলক্ষুণে সিদ্ধান্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্রহণ করেছেন, তা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ইসলামি জাহানের বলিষ্ঠ নীতি-অবস্থান অব্যাহত থাকা উচিত। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ জাতিসংঘের প্রস্তাবের এতখানি প্রকাশ্য লঙ্ঘন যে, পশ্চিমা বিশে^ মার্কিন প্রেসিডেন্টের নীতি ও কৌশলের ঘোর সমর্থকরাও তাঁর সমালোচনা করেছে। তার এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিন ও কুদস ইস্যুতে মুসলমানদেরকে অধিকতর সুসংহত করেছে।
কুদ্স ইস্যু- যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতদঞ্চলে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা জোরালো হওয়ার প্রেক্ষিতে অনেক ক্ষেত্রে তার অগ্রাধিকার অবস্থান থেকে সরে গিয়েছিল, তা এখন তার আসল অবস্থানে ফিরে এসেছে। এ কারণেই যায়নবাদী সরকার ফিলিস্তিন ইস্যু পুনরায় ইসলামি জাহানের প্রধান ইস্যুতে পরিণত হওয়ায় বেজায় বেজার হয়েছে। সে চেষ্টা করছে, কতক কাল্পনিক বিষয় উত্থাপন করে ইসলামি জাহানের প্রধানতম ইস্যু ফিলিস্তিন ও আল কুদ্স আশ শরীফকে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দিতে। এরই মধ্যে আমেরিকাও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন উপায়ে যায়নবাদী ইসরাইলের এই চক্রান্তের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিন, আল কুদ্স ও ইসলামি জাহানের বিরুদ্ধে নতুন চক্রান্ত এ পর্যন্ত এসবের চক্রান্তকারীদের জন্য উল্টা ফল বয়ে এনেছে। এ কারণে যায়নবাদী সরকার ও তার মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জাতির নতুন আন্দোলন ও ইন্তিফাদার অভ্যুদয় আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমি নিশ্চিত যে, ইসলামি উম্মাহ ও ইসলামি সরকারগুলো মুসলমানদের প্রথম কেবলা হিসেবে আল কুদ্সের বিষয়টিকে কখনোই ভুলবেন না। একইভাবে এই লক্ষ্যের ব্যাপারে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সব ধরনের অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা হতে দূরে থাকবেন এবং নিজেদের সামগ্রিক প্রচেষ্টাকে সুসমন্বিত করে মাঠে অবতীর্ণ হবেন আর সকল ফিলিস্তিনির তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া এবং আল কুদ্স আশ শরীফকে কেন্দ্র করে সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখ-ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করার জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন।
জনাব সভাপতি
হাজেরানে মজলিস!
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে মূল প্রশ্নটি হলো, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামি দেশগুলোর আইন প্রণয়নের সংসদগুলোর মুসলিম জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়? এর পরিষ্কার জবাব হচ্ছে, ইসলামি জাহানে ভ্রাতৃত্বের মনোভাব শক্তিশালী করা এবং সংহতি ও ঐক্যকে জোরদার করার লক্ষ্যে নিজ নিজ সরকার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃবৃন্দকে তাদের সমর্থন যোগানো এবং সাহায্য ও সহযোগিতা করে যাওয়া। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইসলামি দেশগুলোর আইন প্রণেতা সংসদসমূহকে সমস্যা ও সংকটের মূল শিকড় ও ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। অবিচল প্রত্যয় ও সুদৃঢ় মনোবল নিয়ে সমস্যাদির মোকাবিলার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে, পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
আপনাদেরকে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে, যাতে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের নীতিমালার ক্ষেত্রে বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা, দলাদলি, অনৈক্যের বিষবাষ্প ছড়ানো, যুদ্ধংদেহী মনোভাব, ঘৃণার বিস্তার ঘটানো, আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থ অন্বেষণ, গোঁড়ামি ও মূর্খতা প্রভৃতি উপাদানের পরিবর্তন হয় এবং আত্মনির্ভরতা, সহাবস্থান, উদারতা, অন্যের প্রতি সম্মানবোধ. ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব, ঐক্য, জ্ঞান-নির্ভরতা ও যুক্তি ও বুদ্ধিমতা তার স্থলাভিষিক্ত ও প্রতিস্থাপিত হয়।
এই লক্ষ্যপথে আমি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনাদের-সকল প্রিয়জনের-প্রতি, যারা আমার দৃষ্টিতে নিজ নিজ সমাজের গতিপথ নির্ণয়ের নেতৃত্বের ভূমিকায় আছেন, আমাদের সহযোগিতা ও সাহায্যের হাত প্রসারিত করছি। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনাদের নিজের এবং ইসলামি উম্মাহর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নততর ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষে এসব সমুন্নত মানবিক মূল্যবোধ ও ভাবধারার প্রবর্তক ও সমর্থকের ভূমিকা পালন করবেন। এসব ভাবধারা যদি ইসলামি সমাজে বিস্তার লাভ করে তাহলে আমাদের সৃষ্টিস্বভাবের সঙ্গে সংগতিশীল ও সঠিক পথ রচনায় আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হব।
পরিশেষে আমার প্রত্যাশা হলো, কুরআনুল করিম ও ইসলামের মহান পয়গাম্বরের সুন্দর সুন্নাতের মূল্যবান শিক্ষাসমূহের আলোকে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যবান নীতির ওপর নির্ভর করে শান্তি, ইনসাফ, ভ্রাতৃত্ব, সংলাপ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিশে^র সকল মানুষ বিশেষ করে পরম সম্মানিত ইসলামি উম্মাহর জন্য এমন একটি জগৎ গড়তে পারব, যা হবে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা, সম্মান ও মানব কল্যাণে আকীর্ণ এবং বৈষম্য, শোষণ ও সহিংসতা হতে মুক্ত।
ওয়াস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
বিমান বাহিনীর অধিনায়ক ও সদস্যদেরকে দেয়া সাক্ষাতে রাহ্বার
বিমান বাহিনীর অধিনায়ক ও সদস্যদেরকে দেয়া সাক্ষাতে রাহ্বার
ইসলামি বিপ্লব এক জীবন্ত বাস্তবতা- যা প্রথম দিককার তুলনায় আজ অনেক বেশি সুদৃঢ়
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা এবং ইসলামি বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়েী বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব এক জীবন্ত বাস্তবতা; এ বিপ্লব বিজয়োত্তর প্রথম দিককার দিনগুলোর তুলনায় আজ অনেক বেশি সুদৃঢ় ও স্থিতিশীল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি (২০১৮) ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনী ও বিমান হামলা প্রতিরোধ বাহিনীর অধিনায়কগণ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ও একদল সদস্য রাহ্বারের সাথে সাক্ষাৎ করলে তাঁদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের অব্যবহিত পূর্বে ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ইরানের বিমান বাহিনীর অধিনায়ক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সদস্যগণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর বিমান হামলা প্রতিরোধ ইউনিটসমূহের সদস্যগণ ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর অনুকূলে বাই‘আত্ (আনুগত্য শপথ) করেন- যা বিপ্লবের বিজয়কে ত্বরান্বিত করে। এ যুগান্তকারী ঘটনার বার্ষিকী উপলক্ষে রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর সাথে এ সাক্ষাতের আয়োজন করা হয়।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ৮ ফেব্রুয়ারি ও ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি সহ বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির দিনগুলোকে আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য নিবেদিত দিনসমূহ (আইয়ামুল্লাহ্) বলে অভিহিত করেন এবং এ দিবসগুলোকে ইরানের ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্থিতি ও দৃঢ়তার উৎস বলে উল্লেখ করেন।
রাহ্বার বলেন, ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনা ও ১১ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের বিজয়সহ বিপ্লবের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির দিনগুলোর স্মৃতি কেবল গৌরবময় স্মৃতিই নয়; বরং তার চেয়েও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ইসলামি বিপ্লবের বিকাশ ও বিজয়ের যুগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির দিনগুলো ও বিপ্লবের বিজয় পরবর্তী বিগত ৩৯ বছরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির দিনগুলো নির্বিশেষে-যার সবগুলোই আইয়ামুল্লাহ্-এ দিনগুলো ছিল ইসলামি বিপ্লবের সঞ্চয় ও পুঁজি বৃদ্ধির উৎস এবং এ দিনগুলো ইসলামি বিপ্লবের ভিত্তি সমূহকে আরো বেশি সুদৃঢ় করবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়েী বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব এক জীবন্ত বাস্তবতা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ বিপ্লব বিজয়ের পরবর্তী প্রথম দিককার দিনগুলোর তুলনায় আজ অনেক বেশি সুদৃঢ় ও অনেক বেশি স্থিতিশীল। তিনি বলেন, আজকের বিপ্লবীরা ইসলামি বিপ্লবের প্রথম দিককার দিনগুলোর বিপ্লবীদের তুলনায় অধিকতর অটল, অধিকতর সচেতন ও অধিকতর দূরদৃষ্টির অধিকারী, আর এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই ইসলামি বিপ্লব অগ্রগতি লাভ করেছে ও পূর্ণতার অধিকারী হয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার বলেন যে, অন্য সমস্ত প্রাণশীল অস্তিত্বে যেভাবে পরিবর্তন ও বিবর্তন সংঘটিত হয়ে থাকে ঠিক সেভাবেই বিপ্লবের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ও বিবর্তন স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, ইসলামি বিপ্লব এখন এমন এক অবস্থায় চল্লিশতম বছরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যখন এ বিপ্লব স্বীয় মূলনীতিমালা ও মৌলিক ভিত্তি সমূহের ওপর স্থিতিশীল ও সুদৃঢ় রয়েছে, কিন্তু সেই সাথে সুগভীর মজবূত মূলবিশিষ্ট বিশাল ফলদাতা মহীরুহের ন্যায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফল প্রদান করে চলেছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়েী বলেন, ইসলামি বিপ্লবের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে এ বিপ্লবের দুশমনরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তা হচ্ছে এ বিপ্লবের নতুন ফলাফলের প্রকাশকে রোধ করা এবং বিপ্লবের অব্যাহত থাকাকে ও সুদৃঢ়তাকে প্রতিহত করা। তিনি বলেন, ইসলামি বিপ্লবের দুশমন হচ্ছে তারা যারা ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের ফলে সংবেদনশীল মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যাদের হাতের পুতুল ও অনুগত একটি সরকারের পতন ঘটেছিলো; এ দুশমনদের শীর্ষে রয়েছে আমেরিকার সরকার।
ইসলামি বিপ্লবের মোকাবিলা করার লক্ষ্যে বিপ্লবের দুশমন পক্ষ যেসব বিচিত্র ও ব্যাপকভিত্তিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে তার উল্লেখ করে রাহ্বার বলেন, তারা ইরানি জনগণের ওপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে চিন্তাবিদ সাজা ব্যক্তিদেরকে, ভুয়া বিশ্লেষক ও ভাষ্যকার, ভাড়াটে সাংবাদিকদেরকে ও একদল ভাঁড়কে এবং ভার্চুয়াল জগতের সমস্ত রকমের উপায়-উপকরণ ব্যবহার করছে। কিন্তু ২০০৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ও ৩০ ডিসেম্বর এবং বিগত ৩০ ডিসেম্বর (২০১৭)-এর ন্যায় কতক আইয়ামুল্লায় ও এর পরবর্তীকালে যেসব স্বতঃস্ফূর্ত ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনাপূর্ণ গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয় জনগণ প্লাবনের ন্যায় রাস্তায় নেমে এসে সেসব গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেন এবং অভিন্ন স্লোগান দিয়ে দুশমনদের সমস্ত হিসাব-নিকাশকে এলোমেলো করে দেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়েী বলেন, ইরানি জনগণের অকল্যাণকামীরা যেসব অপচেষ্টা চালিয়েছে তা কেবল ভার্চুয়াল জগতে গৃহীত তাদের পদক্ষেপ সমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন, তারা ইরানে অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞাকে কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু এই জনগণ ইসলামি বিপ্লবের প্রতি তাঁদের ভালোবাসার কারণে ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসছেন এবং এভাবে তাঁরা বিপ্লবকে মজবূত ও সুদৃঢ় করছেন।
রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইসলামি বিপ্লবের প্রতি ইরানি জনগণের ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতার প্রশংসা করেন এবং বিপ্লবের সমর্থনে গণমিছিল সমূহে জনগণের অংশগ্রহণকে বিপ্লবের প্রতি তাঁদের এ ভালোবাসার প্রমাণ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও অপর কয়েকটি সরকারের কতক কর্তাব্যক্তির আবোল-তাবোল প্রলাপ বকার কারণে ইরানি জনগণ অনুভব করছেন যে, ইরান ও ইসলামের দুশমনরা দুশমনি চরিতার্থ করার লক্ষ্যে ওঁৎ পেতে আছে এবং এ কারণে ইরানি জনগণ অধিকতর উচ্ছ্বাসের সাথে গণমিছিল সমূহে অংশগ্রহণ করছেন।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেসব আদর্শিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো ইসলামি বিপ্লব থেকেই উৎসারিত হয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আদর্শিক মূলনীতিসমূহের অন্যতম হচ্ছে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, মুক্তি এবং সর্বাত্মক বস্তুগত ও আত্মিক উন্নতি-অগ্রগতি- যেগুলোর মধ্য থেকে কতগুলো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে খুবই উন্নতি সাধিত হয়েছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী সামাজিক সুবিচারকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার আদর্শিক নীতিমালার অন্যতম বলে উল্লেখ করে বলেন, সামাজিক সুবিচারের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের মধ্যে ব্যবধান হ্রাস করা- যে ক্ষেত্রে অবশ্য প্রয়োজনের তুলনায় কম কাজ হয়েছে এবং পশ্চাদপদতা রয়েছে। তবে সকলেরই জানা আছে যে, আমরা এ আদর্শিক নীতি পরিত্যাগ করি নি, বরং এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার যুলুম, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে সামাজিক সুবিচার বাস্তবায়নের পন্থাসমূহের অন্যতম বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, যুলুম, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ এবং কয়েক বছর আগে যেমন আমি বলেছিলাম, দুর্নীতি ও অনাচার হচ্ছে রূপকথার সাত মাথাওয়ালা অজগরের ন্যায় যাকে নির্মূল করা খুব সহজে সম্ভব নয়, কিন্তু অবশ্যই এ কাজ সম্পাদন করতে হবে। তিনি বলেন, যুলুম, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অন্য যে কোনো কাজের তুলনায় অধিকতর দৃঢ়তার সাথে কঠোরতরভাবে হতে হবে এবং সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরকে ও দেশের পরিচালকদেরকে অবশ্যই এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুলুম, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও তাকে লাঞ্ছিত করাকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার আদর্শিক নীতিসমূহের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, আজকের দিনে বিশ্বের বুকে সবচেয়ে বড় যালেম ও নিষ্ঠুর সংস্থা সমূহের অন্যতম হচ্ছে আমেরিকান সরকার- যে এমনকি জংলী দা‘এশ (আইএস্)-এর চেয়েও নিকৃষ্টতর।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, দা‘এশ্-কে আমেরিকানরাই তৈরি করেছিল এবং আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাঁর নির্বাচনী প্রচার অভিযানে বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। রাহ্বার বলেন, আমেরিকানরা দা‘এশ্-কে কেবল তৈরিই করে নি, বরং তাকে পৃষ্ঠপোষকতাও প্রদান করে এবং সম্ভবত আমেরিকার পৈশাচিক সংস্থাগুলো- যেমন : ব্লাক্ ওয়ার্টা- দা‘এশ্-কে কতক নৃশংস ও পৈশাচিক কর্মপন্থার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকবে। কিন্তু আমেরিকান সরকার তার এতো সব নির্মমতা ও পাষাণহৃদয়তা সত্ত্বেও নিজেকে মানবাধিকার, মযলূমদের অধিকার ও প্রাণীদের অধিকারের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার করে চলেছে। তাই সত্য ও প্রকৃত বিষয় সমূহ তুলে ধরার মাধ্যমে তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে হবে।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার যুলুমের প্রতি আমেরিকার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত হিসেবে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর বিগত দীর্ঘ সত্তর বছর যাবত যায়নবাদীদের যুলুমের প্রতি এবং একইভাবে ইয়ামানের জনগণকে হত্যা ও তাদের ওপর পরিচালিত যুলুমের প্রতি আমেরিকান সরকারের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইয়ামানের অবকাঠামোসমূহের ওপর ও দেশটির মযলূম জনগণের ওপর প্রতিদিনই আমেরিকার বিমানের সাহায্যে আমেরিকান বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে, অথচ আমেরিকান সরকার এর বিরুদ্ধে কোনোই আপত্তি করছে না এবং বিষয়টির প্রতি মোটেই ভ্রƒক্ষেপ করছে না, কিন্তু অত্যন্ত নির্লজ্জতার সাথে কয়েক টুকরা লোহা দেখিয়ে ইরান সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে বলে অযৌক্তিক দাবি করছে। তিনি বলেন, কিন্তু ইয়ামানের জনগণ যখন অবরুদ্ধ হয়ে আছেন তখন কী করে সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো সম্ভব?
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেন, অবশ্য ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশ অনুযায়ী যুলুমের মোকাবিলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং মযলূমদেরকে সাহায্য করতে হবে। তিনি এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ঘটনাবলিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্পৃক্ত হওয়া ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের প্রতিরোধের ঘটনায় আমেরিকানরা প্রতিরোধ নির্মূল করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা সেখানে রুখে দাঁড়াই এবং বলি যে, আমরা তা করতে দেব না। আর আজ সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, আমেরিকানরা যা চেয়েছিল তারা তা করতে পারে নি, অন্যদিকে আমরা যা চেয়েছিলাম তা করতে পেরেছি।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার উল্লেখ করেন যে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি একটি গণবিপ্লব এবং এ বিপ্লবের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি একটি দ্বীনী গণবিপ্লব। তিনি বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব জনগণের বিপ্লব এবং এ জনগণ ইসলামে ঈমান পোষণকারী জনগণ, এ কারণে তাঁরা পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধ ও তাতে তাঁদের সন্তানদের শাহাদাত বরণসহ প্রতিটি পর্যায়েই ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। কারণ, এ প্রতিরক্ষা ও শাহাদাত ছিল আল্লাহ্র পথে ও হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) প্রদর্শিত পথে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিটি পরিকল্পনায়ই জনগণকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের কথা অনবরত উল্লেখ করা হয়; অবশ্য সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তাঁদের বক্তৃতা-ভাষণসমূহে জনগণের কথা পুনঃপুন উল্লেখ করা ও জনগণের ওপর তাঁদের নির্ভরশীলতা ভালো, কিন্তু তাঁদেরকে জনগণকে চিনতে হবে; আমাদেরকে জনগণকে চিনতে হবে।
তিনি ত্বাগ¦ূতী শাসনামলে বুদ্ধিজীবীদের কর্মতৎপরতা ও তাদের পক্ষ থেকে যে জনগণের নামে গালভরা বুলি আওড়ানো হতো তার উল্লেখ করে বলেন, ত্বাগ¦ূতী সরকার ঐ সব বুদ্ধিজীবী ও তাঁদের গ্রন্থাবলি ও লেখালেখির মোকাবিলায় খুব একটা কঠোরতার আশ্রয় নিতো না। কারণ, তখন না বুদ্ধিজীবীরা জনগণের কথা বুঝতেন, না জনগণ তাঁদের কথা বুঝতেন। কিন্তু মহান ইমাম যখন সংগ্রামের ময়দানে পদার্পণ করেন তখন তিনিও জনগণকে চিনতেন এবং জনগণও তাঁর কথা বুঝতেন, আর এ কারণে তাঁরা তাঁদের সমস্ত অস্তিত্ব সহকারে সংগ্রামের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, আপনারা জনগণকে জানুন। তিনি বলেন, জনগণ কারা? জনগণ হচ্ছেন তাঁরা যাঁরা প্রতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারিকে প্রাণবন্ত করে তোলেন, জনগণ হচ্ছেন তাঁরা যাঁরা-এমনকি তাঁদের মনে অসন্তোষ থাকলেও-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা মাঠে নামার পর তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে নেন, কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর (২০১৭) তারিখে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরাই হচ্ছেন জনগণ। আপনারা যেন তাঁদেরকে ভুল বুঝেন। আপনারা জনগণকে জানুন এবং আন্তরিকতার সাথে ও আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য জনগণের জন্য কাজ করুন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের অর্থাৎ দায়িত্বশীলদের কাছে এটাই চেয়েছেন যে, আমরা যেন জনগণের সেবক হই এবং তাঁদের সেবা করি।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের শেষ পর্যায়ে দেশের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সকল পর্যায়ের অধিনায়ক ও সদস্যদের প্রতি গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য উপদেশ দেন। তিনি বলেন, গঠনমূলক কাজের মানে সর্বাগ্রে আত্মগঠন; সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সদস্যদেরকে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার মানদ-ে অর্থাৎ ঈমানদার, সাহসী, আত্মোৎসর্গ পরায়ণ ও দূরদৃষ্টির অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা- যারা দুশমনদের মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়ায়, কিন্তু বন্ধুদের সামনে বিন্দুমাত্র অহঙ্কার করে না।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার উল্লেখ করেন যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনীসমূহ, বিশেষ করে বিমান বাহিনী স্বনির্ভরতা অর্জনের জিহাদ এবং যুদ্ধোপকরণাদি উদ্ভাবন ও নির্মাণের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল অতীতের অধিকারী। তিনি বলেন, কোনো কোনো দেশ একমাত্র যে জিনিসটির অধিকারী তা হচ্ছে অর্থ, কিন্তু তারা দ্বীন, নৈতিক চরিত্র, বিচারবুদ্ধি, সক্ষমতা ও দক্ষতার অধিকারী নয়। কিন্তু আপনারা জওয়ানরা মেধা-প্রতিভা, চৈন্তিক সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। তাই আপনারা আপনাদের বাহিনীর প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাামাদি নতুন করে তৈরি করতে এবং এ বাহিনীর কাঠামোকে নতুন করে বিন্যস্ত করতে সক্ষম হবেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহে বিগত বছরগুলোতে সকল ঘটনায়ই ইসলামি বিপ্লবী বাহিনী বিজয়ের অধিকারী হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দুশমনদের চোখকে অন্ধ করে দিয়ে বিজয় হবে আপনাদের ও ইরানি জনগণের।
রাহ্বারের সাথে এ সাক্ষাতের অনুষ্ঠানে তাঁর ভাষণের আগে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহ্ ছ¡াফী তাঁর সূচনা বক্তব্যে বিমান বাহিনীতে স্বনির্ভরতার জিহাদ প্রবর্তনকে রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর দূরদর্শিতার ফসল বলে উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনীর যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধোপকরণাদি তৈরির ক্ষেত্রে সক্ষমতা এবং একই সাথে এ বাহিনীর প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধ সক্ষমতা সম্পর্কে রাহ্বারের সমীপে সংক্ষিপ্ত মৌখিক প্রতিবেদন পেশ করেন। তিনি বলেন, বিমান বাহিনীর সদস্যরা এ ছাড়াও কেরমানশাহ্ এলাকার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সাহায্যের কাজে, তেমনি মযলূম মুসলমানদের ও প্রতিরোধ ফ্রন্টের মুসলমানদের সাহায্যের কাজে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত রয়েছে এবং আমরা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল থেকে যায়নবাদী সরকারের ও তাকফিরিদের ঘৃণ্য ও নোংরা কলঙ্ক মুছে ফেলার লক্ষ্যে স্বীয় সৈনিক শপথ অনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।
ফারসি থেকে অনুবাদ : নূর হোসেন মজিদী