নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বিশ্বে ইরানের অবস্থান কী?
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২০, ২০২৫

কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরানি গবেষক ও বিজ্ঞানীরা ব্যাপক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি অর্জন করেছেন এবং কিছু জটিল প্রযুক্তি দেশের ভেতরেই উন্নয়ন করতে পেরেছেন।
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে এবং বহু বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষ অবস্থান দখল করেছে। চিকিৎসা, মহাকাশ, ন্যানোপ্রযুক্তি, পারমাণবিক শক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স হল এমন কিছু ক্ষেত্র যেখানে ইরান উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। নিচে গত চার দশকে ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অর্জন তুলে ধরা হলো:
১. জ্ঞান উৎপাদন ও বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশে অগ্রগতি
বিশ্বখ্যাত ডাটাবেস যেমন আইএসআই এবং স্কোপাস অনুযায়ী- ইরান বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশের ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি করেছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় বিজ্ঞান উৎপাদনের দিক থেকে ইরান প্রথম স্থানে রয়েছে।
২. ন্যানোপ্রযুক্তিতে বিশ্বসেরাদের মধ্যে ইরান
ন্যানোপ্রযুক্তি গবেষণায় ইরান বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের একটি, এমনকি চতুর্থ স্থানেও রয়েছে। ন্যানোপ্রযুক্তির মাধ্যমে ইরানে উৎপাদিত কিছু উদ্ভাবনী পণ্য হলো- ক্যানসার ও বিরল রোগের চিকিৎসায় ন্যানো-ওষুধ, পানি ও বায়ু পরিশোধনের জন্য ন্যানোফিল্টার, দীর্ঘস্থায়ী ন্যানো রং এবং গাড়ি ও চিকিৎসা শিল্পে ব্যবহৃত ন্যানো কোটিংস
৩. চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে সাফল্য
দেশীয় ওষুধ উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা: বর্তমানে ইরান তার প্রায় ৯৭ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদন করে।
বায়োটেকনোলজিতে অগ্রগতি: ইরান বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের একটি যারা ক্যানসার, বিরল রোগ ও হরমোন সংক্রান্ত জটিল বায়োটেক ওষুধ উৎপাদন করে।
অঙ্গ প্রতিস্থাপন: কিডনি, লিভার, হার্ট ও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে ইরান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ।
দেশীয় ভ্যাকসিন তৈরি: ইরান ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড-১৯ (বারাকাত ভ্যাকসিন) ও এইচপিভি ভ্যাকসিনসহ মানব ও প্রাণী উভয় খাতে বিভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরি করেছে।
উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম: ইরানি প্রকৌশলীরা স্থানীয়ভাবে এমআরআই, আল্ট্রাসাউন্ড ও ডিজিটাল রেডিওলজি যন্ত্র তৈরি করেছেন।
৪. মহাকাশ শিল্প ও বায়ু-অভিযান প্রযুক্তিতে উন্নতি
ইরান বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যারা নিজস্বভাবে উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাতে সক্ষম।
গুরুত্বপূর্ণ ইরানি উপগ্রহসমূহ:
ওমিদ (আশা)– ২০০৯ সালে ইরানের প্রথম উপগ্রহ
নূর-১ ও নূর-২– দেশের প্রথম সামরিক উপগ্রহ
জাফর ও পায়াম– গবেষণা ও যোগাযোগ উপগ্রহ
এছাড়া ইরান নিজস্ব স্যাটেলাইট বাহক রকেট যেমন সাফির, সিমোরগ ও কাসেদ তৈরি করেছে।
ড্রোন প্রযুক্তি: সামরিক ও বাণিজ্যিক ড্রোন নির্মাণে ইরান এখন বিশ্বপরিচিত, এর অনেক ড্রোন আন্তর্জাতিক বাজারেও স্বীকৃতি পেয়েছে।
৫. পারমাণবিক শক্তিতে অগ্রগতি
ইরান সফলভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জ্ঞান অর্জন করেছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন, চিকিৎসা ও কৃষি খাতে ব্যবহার হচ্ছে।
রেডিও-ওষুধ উৎপাদন: ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ইরান নিজস্বভাবে পারমাণবিক রেডিও-ওষুধ উৎপাদন করে।
৬. ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় উন্নতি
স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান: ইরানে শত শত জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান চিত্র প্রক্রিয়াকরণ, মেশিন লার্নিং ও বিগ ডেটা বিশ্লেষণে কাজ করছে।
সুপারকম্পিউটার: দেশটি ‘সিমোর্গ’ ও ‘মারিয়ম’ নামের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সুপারকম্পিউটার তৈরি করেছে, যা বৈজ্ঞানিক ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রোবোটিক্স ও এআই: তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি ‘সুরেনা’ রোবট মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম উন্নতমানের মানবাকৃতি রোবট হিসেবে স্বীকৃত।
বহুমুখী নিষেধাজ্ঞা ও প্রযুক্তিগত অবরোধের মধ্যেও ইরান বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই টেকসই অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই অর্জন শুধু আত্মনির্ভরতার প্রতীক নয়, বরং প্রমাণ করে যে জ্ঞান ও গবেষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপও অতিক্রম করা সম্ভব।#
পার্সটুডে