বৃহস্পতিবার, ১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

ঢাকায় ‘কুরআন মজীদে নৃতত্ব ’  ও  ‘ইসলামের পথ-পরিক্রমা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১১, ২০২৪ 

news-image

বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে আজ বিকেলে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে  ‘কোরআন মজীদে নৃতত্ব’  ও  ‘ইসলামের পথ-পরিক্রমা’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সবুর খান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক ড. আনোয়ারুল কবির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক ও  ‘ইসলামের পথ-পরিক্রমা’ শীর্ষক বইয়ের অনুবাদক তানজিনা বিনতে নূর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মির মুহাম্মদী।

অনুষ্ঠানে মানারাত ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সবুর খান বলেন, বাংলা সাহিত্যে অনুবাদ গ্রন্থগুলোর শতকরা আশি শতাংশই ফারসি সাহিত্য পূরণ করেছে৷ ইসলামী দর্শন,  ধর্মতত্ত্ব ও ঐতিহ্য এসব ধারার ফারসি বইগুলো ধারাবাহিকভাবে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে অনুদিত হয়ে আসছে৷ তিনি বলেন, আজকে আমরা যেদুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে  উপস্থিত হয়েছি তার একটি হলো ‘কোরআন মজীদে নৃতত্ব’ এবং অপরটি হলো ‘ ইসলামের পথ-পরিক্রমা’।‘কোরআন মজীদে নৃতত্ব’ বইটি লিখেছেন ইরানের খ্যাতিমান লেখক আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ তাক্বী মেছবাহ ইয়াযদী। তিনি তার এই বইটিতে পবিত্র কুরআন এর আলোকে মানবজাতির ইতিহাস ও মানবিক চিন্তাধারায় নৃতত্ব চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।

‘ইসলামের পথ-পরিক্রমা’ শীর্ষক বই প্রসঙ্গে প্রফেসর ড. আব্দুস সবুর খান বলেন, বইটি খুবই আলোচিত একটি বই।বইটির লেখক আবদুল হোসাইন জাররিনকুব ইরানের বড় মাপের একজন লেখক, সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। খ্যাতিমান এই লেখক ‘ ইসলামের পথ-পরিক্রমা’ শীর্ষক তার এই বইতে ইসলামের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও আধ্যাত্মবাদসহ ইসলামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তিনি এই মূল্যবান দুটি বই  বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করার জন্য  ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বই দুটি বাংলা সাহিত্যে  নতুন সংযোজন হল।

অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মির মুহাম্মদী  বলেন, বই প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো বইয়ের বিষয়বস্তু এবং অপরটি হলো এর লেখক। আর এই উভয়দিক বিবেচনায় রেখেই আমরা বইদুটির বিষয়বস্তু নির্বাচন করি।এরমধ্যে একটি হলো ‘ কুরআন মজীদে নৃতত্ব ’   এবং অপরটি হলো ‘ ইসলামের পথ-পরিক্রমা ’। দুটি বিষয়ই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের খ্যতনামা দুজন লেখক এই বই দুটি লিখেছেন। এরমধ্যে ইসলামের পথ পরিক্রমা বইয়ের লেখক ড. আব্দুল হোসাইন জাররিনকুব হলেন ইরানের একজন বিখ্যাত  ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। যদি আমি ইরানের সেরা ৫ জন লেখকের নাম উল্লেখ করি তাহলে ড. আব্দুল হোসাইন জাররিনকুব হবেন তাদের অন্যতম। আর আয়াতুল্লাহ মোহামমদ তাকী মেছবা ইয়াযদি হলেন ইরানের একজন বিখ্যাত লেখক ও দার্শনিক। আমি আশাকরছি ইরানের খ্যাতিমান এই দুজন লেখকের বইদুটি বাংলাভাষাভাষী পাঠকদের ইসলামের পথ-পরিক্রমা এবং কুরআন মজীদে নৃতত্ব  সম্পর্কে জানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক ড. আনোয়ারুল কবির বলেন,  ইরানের প্রখ্যাত দুই লেখক আবদুল হোসাইন জাররিনকুব ও আয়াতুল্লাহ মোহাম্মাদ তাক্বী মেছবাহ ইয়াযদী এর চিন্তাধারা বাংলা ভাষায় নিয়ে আসার উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয়। ‘কোরআন মজীদে নৃতত্’ বই এর  আলোচনায় তিনি বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন স্কলার ও চিন্তাবিদদের দৃষ্টিভঙ্গিতে আদি মানব পরিচয় তুলে ধরেন। তবে তিনি এই বই এর আলোকে ইরানের চিন্তাবিদদের কোরআন ভিত্তিক মানব পরিচিতি ও নৃতত্ত্ব এর যৌক্তিকতা সমথর্ন করে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমাবিশ্বের গবেষকদের মানব নৃতত্ত্বের বিষয়ে গবেষনা অসম্পূর্ণ এবং এই অসম্পূর্ণ গবেষণার প্রভাবও পশ্চিমা বিশ্বে কীভাবে কাজ করছে সেটা ব্যখ্যা করেন।তিনি বলেন, তাদের মধ্যে খোদা ও আখিরাতের বিষয়াদি না থাকার কারণেই আত্মত্যাগ বা স্বার্থত্যাগ করার গুনাবলী কমে গেছে। ‘কোরআন মজীদে নৃতত্ব’  বই এর লেখক এই অসম্পূর্ণতা থেকে মানবজাতিকে বের করে আনার চেষ্টা করেছেন৷

তিনি বলেন,  আমি মনে করি ‘কোরআন মজীদে নৃতত্’ ও  ‘ইসলামের পথ-পরিক্রমা’বইয়ের মতো  ইরানের খ্যাতিমান লেখকদের বইগুলোর বাংলা অনুবাদ বাংলাদেশের মানুষেরর জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। বই গুলো বাংলাভাষাভাষীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় তিনি ঢাকাস্থ ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক ও  ‘ইসলামের পথ-পরিক্রমা’ শীর্ষক বইয়ের অনুবাদক তানজিনা বিনতে নূর বলেন, আধুনিক যুগের ফারসি ইতিহাস লেখক ও সমালোচনামূলক সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন আব্দুল হোসাইন জাররিনকুব। ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও অর্জনকে তুলে ধরেছেন তিনি তার বিখ্যাত “কারনামেয়ে ইসলাম” বইটিতে, যার বাংলা অনুবাদ “ইসলামের পথ-পরিক্রমা” বইটি। বিশ্ব ইতিহাস, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিনির্মানে ইসলাম ও মুসলিমদের যে অবদান, তা ইউরোপীয় গবেষকদের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখিত বইগুলোতে ঠিক সেভাবে উঠে আসে না, যেভাবে আসা উচিত। সেই জায়গাতেই এই বইটির স্বার্থকতা ও অনন্যতা যে বইটি ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত তার পথচলার ইতিহাসকে তুলে ধরেছে। মানবসভ্যতার বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্র, যেমন- দর্শন, ইতিহাস, চিকিৎসা, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ সকল  ক্ষেত্রে ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির যে অনন্য অবদান, তাই গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই বইটিতে। বাংলাদেশে যারা ইসলাম ও বিশ্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করেন, তাদের জন্য বাংলা ভাষায় এই বইটির সংস্করণ অন্যতম একটি রিসোর্স হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য  বিভাগের  ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. মাজিদ পুইয়ান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহসানুল হাদি ও কবি মাহমুদুল হক নিজামী।