মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

ইরানে ইসলামী বিপ্লব, লক্ষ্য ও অর্জন

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ২৫, ২০১৬ 

রাশিদুল ইসলাম
দেখতে দেখতে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের ৩৬ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। কিন্তু আজো এ বিপ্লব কতটা সফল হয়েছে কিংবা লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে তার বিরাট অংশই বিশ্ববাসীর কাছে অজানা রয়ে গেছে এবং তা পর্যাপ্ত পরিমাণে উন্মোচিত হয়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পশ্চিমা ও পশ্চিমা ভাবধারার মিডিয়ায় ইরান নিয়ে অব্যাহত অপপ্রচার। ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে বা করেছে এমন মিথ্যা অপবাদে দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা টিকিয়ে রাখা হয়েছে, যদিও তা শেষ পর্যন্ত অপসারিত হবার বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করছে। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হল যখন বিশ্ব পরাশক্তি একদিকে আর অন্যদিকে ইরান, তখন বলতেই হয় ইরানের ইসলামী বিপ্লব এধরনের বিরাট অর্জনের পেছনে অবশ্যই চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। কিভাবে করেছে তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
এ বিশ্লেষণ এজন্য জরুরি যে, ইরানে ইসলামী বিপ্লব থেকে দেশটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সক্ষমতা অর্জন করলেও অধিকাংশ মুসলিম দেশই এ সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল নয়। বরং মুসলিম দেশগুলোতে ভুল ধারণা আছে। আর পশ্চিমা অপপ্রচারের ফলে শিয়া ও সুন্নির মধ্যে এক কাল্পনিক বিভেদের বিষয়টি তাদেরকে এমনভাবে বিভ্রান্তিতে ফেলে যা থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারে না। অথচ ইরানে ইসলামী জাগরণের বহুমাত্রিকতা রয়েছে যা এই আধুনিক বিশ্বে অন্যান্য মতবাদের তুলনায় গুণগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছে। আর এটা নীতি ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা ছাড়াও সুশাসন কায়েমের মধ্য দিয়ে কার্যকর জীবনযাপনে সক্ষমতা অর্জনে ভিত্তি গড়ে দেয়। যাঁরা এতদিন ভাবতেন ইরানে তথাকথিত মোল্লাতন্ত্র চলছে তাঁরাই এখন নড়েচড়ে বসছেন এবং অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন বিপ্লবের অপার সৌন্দর্যÑ যা তাঁদেরকে বিমোহিত না করে পারছে না।
এজন্যই ইরানের ইসলামী বিপ্লব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে একধরনের সৌন্দর্যের আরাধনা করতে হয় যা জীবনযাত্রাকে পবিত্রতম করে তোলে। বিশুদ্ধ এক জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে শত্রুকে বন্ধু করে তোলা এবং ভুল ভাঙ্গিয়ে চারপাশের মানুষকে কাছে টেনে আনার এ কৌশলকে আগ্রাসন কিংবা হুমকি দিয়ে স্তব্ধ করে দেয়ার হুঙ্কার দেয়া যায় বটে, কিন্তু তা কোনো কাজে আসে না। কারণ, জ্ঞাননির্ভর সমাজে অস্ত্র নয়, মেধা ও ধীশক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী। ইরানের ইসলামী বিপ্লব সেই চর্চার পথ খুলে দিয়েছে। উম্মাহ্র জন্য ভোগবিলাস ও নতজানু জীবন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর এক মেধাবি পথ রচনা করতে পারে এ বিপ্লব। কারণ, বিপ্লবের মূল মর্মবাণী ছিল, এস্তেগলল, অযদী, জমহুরিয়ে ইসলামী, যার অর্থ হলো স্বাধীনতা, মুক্তি, ইসলামী প্রজাতন্ত্র। লালন শাহ যেমন এই বাংলার মাঠে ঘাটে গেয়ে বেরিয়েছেন, ‘সত্য বল সুপথে চল, ওরে আমার মন’, ইরানের মহান নেতা আয়াতুল্লাহ ইমাম খোমেইনি দেখিয়ে গেছেন সেই সত্যের পথে যে বাধা বিপত্তি আছে তার সাথে লড়াই করে কিরূপে অবিচলভাবে টিকে থাকতে হয়। এজন্য বিপ্লবের মূল মন্ত্রই হচ্ছে সত্য, এর প্রতিষ্ঠা ও কিভাবে সবধরনের ঝুঁকি মোকাবেলা করে আপোসহীন থাকতে হয়, সেই ধরনের পথরচনা। বিন্দু যত ছোটই হোক একটি বৃত্ত রচনায় বা পরিধি নির্দেশনায় তা জরুরি বটে তেমনি ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্য ও অর্জন বুঝতে ইসলাম সম্পর্কে কার্যকরভাবে জানা ও বুঝে ওঠা জরুরি। ইসলামোফোবিয়া কখন ইরানোফোবিয়ায় পরিণত হয়েছে কিংবা প্রাচ্য, পাশ্চাত্য ও পুঁজিবাদ কিভাবে শোষণের রকমফের পরিবর্তন করছে তা জানতে ও এর মোকাবেলায় নিবিড়ভাবে সত্য তথ্য সংগ্রহ ও ইসলামী জ্ঞানই অন্যতম অস্ত্র। ইতিহাস, বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিবেচনায় ইসলামী জ্ঞান থেকে ইরানের ইসলামী বিপ্লব রসদ সংগ্রহের অন্যতম কৌশল শিখিয়েছে। তাই তাকে প্রকৃতি ও চারপাশ সম্পর্কে গভীর ভাবতে ও চিন্তাশীল হতে হয়। আর এর নিরিখে ইসলামের মর্মবাণী কী তা নিরূপণ করতে হয়।
দ্বিতীয়ত, বিপ্লব সম্পর্কে যে বিশ্বাস তা খুবই যৌক্তিক। তৃতীয়ত একজন বিশ্বাসীর আবেগ তার বিশ্বাস দিয়েই পরিপূর্ণ। তার আবেগ ও অনুভূতি সম্পূর্ণভাবে বিপ্লবের উপাদানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চতুর্থত ইসলাম একজন বিপ্লবীর জীবনের যেসব বাস্তব ও ব্যক্তিগত দিক রয়েছে তাকে উদ্ভাসিত করে তোলে। একজন অনুসারী তার ধর্মীয় নেতা বা ইসলামী শাসকের কাছ থেকে জীবন সংগ্রামের যেসব রসদ পায় তা তাকে এতটাই সমৃদ্ধ করে তোলে যে, কোনো আগ্রাসী শক্তিকেই সে ভয় পায় না। তার উপলব্ধি অটুট থাকে। কারণ, সে তার লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জনের পথগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান অর্জন করে। ইমাম খোমেইনি তাঁর অনুসারীদের কাছে ইসলামী জাগরণের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা দিতে সক্ষম হন যা তাদের মধ্যে বিশ্বাসে পরিণত হয়েছিল।
এভাবেই এক ধরনের দৃঢ় আস্থা নিয়ে ইসলামী বিপ্লবের অনুসারীরা একের পর এক বাধা অতিক্রম করতে পেরেছে। তৎকালীন ইরাকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ, পরাশক্তিগুলোর অবরোধ কিংবা বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের মানুষ কঠিন মনোবল নিয়ে বছরের পর বছর লক্ষ্য অর্জনে ধাবিত হতে পেরেছে।
ইরানে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। অন্যদিকে দেশটি ভৌগোলিক নিরাপত্তা অর্থাৎ নিজস্ব নিরাপত্তা বলয় ও প্রতিরক্ষা শক্তি এমনভাবে গড়ে তুলেছে যে, আশেপাশের অধিকাংশ দেশে রক্তপাত হলেও ইরানে তা অনুপস্থিত। ন্যানো টেকনোলজি থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ও প্র্রযুক্তিগত উন্নতিতে ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরা সমান পাল্লা দিচ্ছে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক আবহের ইরানী চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ্যতার সঙ্গেই বিবেচিত হচ্ছে এবং অ্যাওয়ার্ড লাভ করছে। এত বাধা ও অবরোধের মধ্যেও দেশটির স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং তাদেরদের আত্মবিশ্বাস বিশ্বব্যাপী আজ এক মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এখন যখন অবরোধ উঠে যাচ্ছে তখন ইরানে অন্তত চারশ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ সম্ভাবনার আভাস দিচ্ছে দি গার্ডিয়ান, রয়টার্স, ইন্ডিপেন্ডডেন্ট, ব্লুম বার্গের মতো পশ্চিমা মিডিয়াগুলো। বাস্তবে ইসলামী বিপ্লবের ধারায় এধরনের বিনিয়োগ আহরণ করার মত দক্ষ জনবল, পরিবেশ, নিরাপত্তা সহ সার্বিক সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলেছে ইরানের জনগণ। তাদের উপলব্ধি ছিল পারমাণবিক বোমা বানানো যে তাদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী নিষিদ্ধ এবং তাদের ধর্মীয় নেতা সে পথ থেকে তাদের যথাযথ অভিভাবকের মতই দূরে সরিয়ে রেখেছেন সে সম্পর্কে বিশ্বের ভুল একদিন ভাঙবেই। ভেঙেছেও তাই। সস্তায় জ্বালানি শক্তি অর্জন ছাড়াও প্রযুক্তিগতভাবে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্যই ইরান এতদিন পারমাণবিক গবেষণা চালিয়ে আসছিল দরকষাকষির মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে দেশটি। তাই বলে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে কোনো ছাড় দেবে না তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। এধরনের দৃঢ় মনোবল ও আপোসহীন মনোভাব ইরান কোত্থেকে পায়? প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জানা ও সঠিকভাবে তা বুঝে ওঠা যে কত জরুরি এখান থেকে তা সহজেই উপলব্ধ হয়ে ওঠে। কারণ, ইসলামী বিপ্লব ইরানের জাতিগত বৈশিষ্ট্যকে সেভাবেই গঠন করতে সাহায্য করছে যে, পরাশক্তির হুমকিতে সে থাকবে নির্বিকার এবং লক্ষ্য অর্জনে সে কখনোই পিছপা হবে না।
ইসলামী জাগরণ যে কত বাস্তব ও মননচর্চার একটি ব্যাপার তা ইমাম খোমেইনী বিশ্ববাসীর সামনে কীভাবে তুলে ধরেছেন! বিপ্লব সম্পর্কে যে আশাবাদ তিনি জাগিয়েছিলেন তা আড়াই হাজার বছরের রাজতন্ত্রকে তুচ্ছ খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে; তা এখন ইতিহাসের জাদুঘরের বিষয়বস্তু বটে। এজন্য যে ত্যাগ করতে হয়েছে, তা অবলীলায় স্বীকার করে নেয়ার দীক্ষাও তিনি দিয়েছেন। এভাবে প্রাকৃতিকভাবেই বিপ্লবের প্রতি আশা ইমামের অনুসারীদের ধাবিত করেছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যপানের দিকেÑ যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
সেই কবে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করে ইমাম খোমেইনী বিশাল সা¤্রাজ্যের অধিপতি গরবাচেভকে চিঠি দিয়েছিলেন যখন অন্যান্য বিশ্বনেতা তা কল্পনাও করতে পারেননি। সেই চিঠিতে ইমাম খোমেইনী লেখেন, কমিউনিজম নিয়ে বরং ভালো গবেষণা হতে পারে এবং তা বিশ্বের কোনো জাদুঘরে রেখে দেয়ার মতো বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধ্যাত্মিক নেতৃবর্গ এভাবেই আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিচ্ছবি দেখতে পান।
ইমাম বলেছিলেন, মুসলিম দেশগুলো যদি এক হয়ে এক বালতি করে পানি ঢালে তাতে ইসরাইল ভেসে যাবে। দুর্ভাগ্য সেই ঐক্য এখনো সোনার হরিণ হয়ে ধরা দেয়নি। কিন্তু ইসলামোফোবিয়ার কারণে কারা মহান ইসলাম ধর্মকে হেয় করতে তালেবান থেকে শুরু করে হালে আইএস জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, অস্ত্র দিচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনে কী করছে, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তা দশক পেরিয়ে গেলেও কেন দমন করা সম্ভব হচ্ছে না সেটি বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামরিক আগ্রাসনের পরিবর্তে আলোচনার পথে পারমাণবিক ইস্যুতে একটি ফয়সালার পথ রচনায় ইরানের কূটনীতিকরা দরকষাকষি করে যে সফলতার পথ দেখিয়েছেন নিঃসন্দেহে তা ইসলামী বিপ্লবের শিক্ষা থেকেই অনুসারিত। মুসলিম দেশ থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিক নিগড়ে বাধাপড়া দেশগুলো এ থেকে শিক্ষা নিবে কি না তা তাদের ব্যাপার। তবে পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরই ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে অস্বীকার করে আসছে। এর কারণ হচ্ছে বৈষম্যপূর্ণ সমাজে কী ঘটছে তা জীবন্ত হয়ে ধরা পড়ে যখন তার কাছে সত্যিকার তথ্য উপস্থাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠে। সুতরাং আদতেই আমাদের চারপাশে কী ঘটছে তা জানা জরুরি এবং ইসলামী বিপ্লব সেই শিক্ষাই দেয়।
মানবধর্মের মতো ইসলাম ইরানীদের মাঝে উৎসারিত হয়েছে, উপলব্ধ হয়ে উঠেছে কঠিন সংকল্পের যেখানে পশ্চিমা অবরোধ কিংবা বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা বরং শাপে বর হয়ে দেখা গেছে। কারণ, সবধরনের বাধার মধ্যে নিরলস সংগ্রামের মধ্য দিয়েই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে ইরান। প্রায় সত্তর হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি বিদ্যুৎ উৎপাদন, প্রতিরক্ষায় ব্যালেস্টিক মিসাইল তৈরি, পর্যটন থেকে শুরু করে তেল ও গ্যাস সম্পদের ভোগবাদি ব্যবহারের পরিবর্তে উৎপাদনশীল ব্যবহার, চীন থেকে ইউরোপে রেলপথ নির্মাণ, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয়ের বদলে নিজেরাই উৎপাদনে চলে যাওয়া, প্রযুক্তি ও পুঁজির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি ইসলামী বিপ্লবের শিক্ষা থেকে রস সংগ্রহ করেছে, যেমন একটি উদ্ভিদ মাটি থেকে সংগ্রহ করে বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়।
এখন কারো ইসলামী বিপ্লব ভালো লাগুক আর না-ই লাগুক সেটি ব্যাপার নয়; বরং লাতিন আমেরিকা থেকে শুরু করে ভারত, চীন, আফ্রিকা, ইউরোপ, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র সবাই ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়তে পাল্লা দিচ্ছে। কারণ, এধরনের বিজয়ের জন্য প্রতিশ্রুতিবান কৃতি নারী-পুরুষ গড়ে তুলেছে ইসলামী বিপ্লবের ধারা। যা অন্য কোনো দেশ পছন্দ না করলেও তা গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক হয়ে উঠছে। এখানে মযলুমের শক্তি বরং আগ্রাসী শক্তির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আগ্রাসী শক্তি যখন মযলুমকে ভয় দেখিয়ে নিষ্পেষণ করতে চায় তখন ইসলাম মযলুমকে শক্তভাবে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং বিজয়ের প্রান্তরে নিয়ে যায়। এখানে ইসলামী বিপ্লবের নেতারা মযলুমদের সত্যিকারের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মেধা ও মননকে এমনভাবে গড়ে তুলেছেন যে, তারা নিঃশঙ্ক চিত্ত হয়ে ওঠে। সে ইতিমধ্যে তার শিক্ষা-প্রশিক্ষণকে আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এক অপূর্ব শক্তি অর্জন করে ফেলেছে যা আগ্রাসী শক্তিকে ভ্রুক্ষেপই করে না।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে অনেক রাষ্ট্রই হেয় করতে চায় যাদের জবাব দিতে গিয়ে সম্প্রতি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ টুইটারে লিখেন, ‘কূটনীতি হচ্ছে পরিপক্বদের কর্মক্ষেত্র; বলদর্পী নব্য-ধনীদের নয়।’
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ে পর মানুষের মধ্যে যে তীব্র আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা জেগে ওঠে বিপ্লবের নেতৃবৃন্দের জন্য তা পূরণ করা বেশ সময়সাপেক্ষ ও কঠিন দায়িত্ব হয়ে পড়ে। এখানেই নেতৃত্ব দ্বিতীয় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তাকে যেমন চোরাগোপ্তা হামলা সামলাতে হয়, বিজ্ঞানীদের হেফাজত করতে হয় তেমনি সম্পদের সুষম বণ্টনের পাশাপাশি অপচয়ের পথ বন্ধ করে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্যোক্তার বিকাশ ঘটাতে হয়। বিপ্লব-পরবর্তী ইরানের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে আপনি তা টের পেতে পারেন। একদিকে পরাশক্তির ইন্ধনে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ সামলানো, দেশ পুনর্গঠনের কাজ, ভর্তুকি দিয়ে বাজার ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে পড়তে না দেয়া, ভোগবাদে সক্রিয় হয়ে যাতে দুর্নীতির আশ্রয় কেউ না নেয় সেদিকে নজর রাখা এবং সর্বোপরি দারুণ এক পরিশীলিত সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়া চাট্টি খানি কথা নয়। এপর্যায়ে প্রতিপক্ষ শক্তি ও বিদেশি শক্তি আপনাকে পরখ করতে থাকে, ফাঁদ পেতে দেয় যাতে আপনি সহজে পা ফেলতে পারেন, লোভনীয় আবেদন জানাতে থাকে এবং চাটুকারদের কোনো অভাব হয় না। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার অপপ্রচার মোকাবেলা করতে হয় নির্মোহভাবে।
এভাবে বিপ্লবের পর ইরানের নেতৃত্ব অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা, ঘষামাজা করে শাসনব্যবস্থা সৃষ্টি করেছেন যাতে ফাঁকফোকর গলে বিপ্লবের অস্তিত্ব বিপন্ন না হয়ে পড়ে। কারণ, আন্তর্জাতিক রীতিনীতির অনেক কিছুই ইরানের জাতীয় স্বার্থবিরোধী ছিল যা ইরানের নেতৃত্ব পরখ করে সাবধানতার সঙ্গে এড়িয়ে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেননি; বরং তার চেয়ে টেকসই ও উন্নত অবস্থান নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। নির্বাচন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের আস্থা রয়েছে। যারা নির্বাচিত হন, তারাও স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছেন। জনগণের জন্যে নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের হয়ে কাজ করতে পারছেন। প্রকৃত অর্থে ইরান তা অর্জন করেছে। ৩৭ বছরে ৩২টি নির্বাচন হয়েছে। স্থানীয়, পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে সরাসরি জনগণের ভোটে। ইরান আজ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন।
এজন্যে তাদের অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। একটা সময় পর্যন্ত বিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় ইরানে কিছু বিমান উড়তে পারেনি। কিন্তু সক্ষমতা যখন অর্জন হয়ে গেছে তখন শত শত বিমান ক্রয়ের জন্য চুক্তি করতে ইরানের অর্থনীতিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিরাট এক পর্যায়ে বিপ্লবের পরও ত্যাগ ও তীতিক্ষার বিনিময়ে ইরানের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দিন গুণেছেন। রাতে অপেক্ষা করেছেন কবে নতুন সূর্য উদিত হবে। হ্যাঁ রাত পোহাবার অনেক বিলম্ব ছিল, কিন্তু জনগণকে ইরানি নেতৃত্ব পুনরায় হতাশার চোরাগলিতে ঠেলে দেননি। পাখি যেমন তার বাচ্চাকে পালক দিয়ে আগলে রাখে, দিনভর খাদ্য অন্বেষণের পর ছানাটির মুখে তুলে খাইয়ে দেয় তেমনি ইরানের নতুন প্রজন্ম এখন সঠিক নেতৃত্বের কারণে গড়ে উঠেছে মর্যাদার সঙ্গে নিত্যনতুন আবিষ্কার আর কঠিন লড়াইয়ে জয়ের তৃপ্তি নিয়ে। তা যে মোটেই সহজ ছিল না এটি সত্যি। অবরোধ ছিল বলে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের অভাবে হাসপাতালে রোগীদের কখনো কখনো কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। তবু পরাশক্তিদের ধংসাত্মক সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি ইরানের শাসকরা। কারণ, তারা যদি বিদেশি চাপ মেনে নিতেন তাহলে হয়ত অনেক সস্তায় দেশের তেল ও গ্যাস সম্পদ তুলে দিতে হত অন্যদেশের হাতে এবং তা বিক্রি করে যে প্রচুর অর্থ পেতেন তা খরচ করতে হত তাদেরই তৈরি অস্ত্র সম্ভার ক্রয়ে। এভাবেই বানরের পিঠা ভাগের মত উন্নয়ন তত্ত্ব কখনোই মেনে নেননি ইরানের শাসকরা। কারণ, বিপ্লবের কাছে তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, ছিল কঠিন সংকল্প। তাদের নিজের খেয়াল-খুশি কখনই প্রাধান্য পায়নি। বিশ্বজুড়ে যে ক্ষমতা ও প্রভাবের খপ্পড়ে পড়ে জঙ্গলের আইনকে মেনে নেয়া থেকে বেরিয়ে আসতে মুক্তিপাগল ইরানি জনগণ অনেক রক্ত দিয়েছে। দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতেই নতুন কাঠামো বিনির্মাণ করতে হয়েছে। কারণ, বিপ্লবের চাওয়া ছিল একটি আদর্শ ভবিষ্যৎ ও স্থিতিশীল পরিবেশ যা দেখে কেবল বিদেশি বিনিয়োগকারীরাই নয়, পর্যটকরাও ছুটে আসবে সেই বিস্ময়কর অনুসন্ধানের জন্য। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সেই আভাসই দিচ্ছে। এবছর ইরান হবে বিশ্বপর্যটকদের দ্বিতীয় গন্তব্য।
ইরান দাঁড়িয়ে আছে এমন সব দৃঢ় কৌশলের ওপর যার ভিত্তিমূল হচ্ছে ইসলামী বিপ্লব। এজন্য সারা বিশ্বে ইরান অন্য ধরনের বিশেষ মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ কৌশলের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণু শক্তি বিষয়ে সম্পর্ক গড়ে উঠছে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রে ভারী পানি রপ্তানি করতে যাচ্ছে। অথচ পশ্চিমাশক্তি একদিন ইরানের দিক থেকে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিল। ইসলামোফোবিয়া ও ইরানোফোবিয়াকে এক করে ফেলেছিল। আড়াই হাজার বছরের রাজতন্ত্র কিন্তু কম শক্তিশালী ছিল না কিংবা তার পক্ষে পরাশক্তির নেক নজরে ছিল না, তা নয়। কিন্তু জনগণের ইচ্ছা ও মানুষের শক্তি সেখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিফলিত হয়নি। ইসলামী বিপ্লব সে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। কি রাজনৈতিক কি সামরিক কি অর্থনৈতিক কি সামাজিক সবদিক থেকেই ইরান এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে অন্যদেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করছে। এজন্যে সন্ত্রাস থেকে শুরু করে সকল ধরনের আন্তর্জাতিক অপকৌশল মোকাবেলা করতে হয়েছে দেশটিকে। ইউরোপের দ্বারপ্রান্তে থেকে মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী হয়ে ইরান এখন এশিয়া ও ইউরেশিয়াকে যোগাযোগের সেতু বন্ধনে মিলিত হতে উদ্যোগ নিয়েছে। এখন চীন থেকে এগিয়ে আসছে মনতুন সিল্ক রেল পথ দিয়ে প্রথম ট্রেনটি। দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে ট্রেনটি কাজাকস্তান ও তুর্কমেনিস্তান হয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানে এসে পৌঁচেছে ১৪ দিনে ১০ হাজার ৩৯৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে রেলপথে চীনের এ যোগাযোগ পথে যোগ দিতে যাচ্ছে জার্মানির ডুইসবার্গ ও স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এভাবেই নতুন রেলপথে যুক্ত হয়ে বিকল্প অর্থনীতির খোঁজ দিচ্ছে।
২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নতুন ‘সিল্ক রোড ইকনোমিক বেল্ট এবং ২১তম সমুদ্র সিল্ক রোড’ উদ্বোধন করেন যাতে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থায় মহাসড়ক, রেলপথ ও বিমানবন্দর নির্মাণ হচ্ছে। খরচ হচ্ছে ১৪ হাজার কোটি ডলার। মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইরানের সঙ্গে ১৫টি দেশের স্থল ও জলসীমা রয়েছে। স্বভাবতই নতুন সিল্ক রোড প্রকল্পে ইরান মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরেশিয়ার সঙ্গে চীনের যোগাযোগ করিয়ে দিতে আগামী ছয় বছরে ইরান নতুন সিল্ক রোডে ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
হ্যাঁ, এ হচ্ছে এমন একটি দেশ যার আগামী বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। এজন্যে প্রয়োজন ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। ইতিমধ্যে ইতালির সঙ্গে ১৭ ও ফ্রান্স এর সঙ্গে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি সই করেছে ইরান। পশ্চিমা অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা এ বিনিয়োগের পরিমাণ আগামী কয়েক মাসে চার’শ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। একদিকে ১২ বছরের অর্থনৈতিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আলোচনার টেবিলে মীমাংসায় কূটনৈতিক ধীশক্তির ব্যবহার করে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া এবং আরেকটি হচ্ছে সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান সহ মধ্যপ্রাচ্যের সংকটগুলোকে সামরিক শক্তি ব্যবহারের পরিবর্তে আলোচনার টেবিলে এনে মীমাংসার পথে এগিয়ে নেয়ার একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি করা। জাতিসংঘ, পরাশক্তিগুলো এখন ইরানের এ দুটি পথকে অনুসরণ করবে বলেই মনে হচ্ছে। ইসলামী ইরানের বিপ্লব এমন এক অর্থনৈতিক ভিত গড়ে দিয়েছে যে দেশটিতে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে চীন, ভারত, লাতিন আমেরিকা, এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বহুজাতিক ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমান তৈরির কোম্পানিগুলো ধেয়ে আসছে। অর্থনৈতিক অবরোধ ছিল কোথায়? ইরানের কাছ থেকে তেল গ্যাস না কিনে উৎপাদনশীলতা বিনষ্ট হওয়ায় ইউরোপ নিশ্চিত হয়েছে যে মন্দা থেকে বের হতে হলে তার ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বের কোনো বিকল্প নেই।
আশির দশক থেকে ইসরাইল বলছে ইরান পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলল, দেশটির ওপর আক্রমণ করা উচিত ইত্যাদি। এতদিনে এটা পরিষ্কার যে, এধরনের হুঙ্কার দিয়ে বিশ্বের নজর অন্যদিকে সরিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর কি না ধংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইল। তখন মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের জঙ্গি বিমান ওই আগ্রাসন ঠেকাতে আকাশে উড়েনি। কিন্তু ইয়েমেনে ঠিকই নিরস্ত্র জনগণের ওপর হামলে পড়েছে বিমানগুলো। পরাশক্তির চোখ রাঙ্গানি ও সামরিক বৈভবের মোকাবেলায় যুক্তি দিয়ে ইরানের বিদগ্ধ আলোচকরা শুধু সমঝোতায় নিয়ে আসেননি; বরং সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী তাই এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যে সব দেশ এতদিন ইরানের বিরুদ্ধে ছিল তারা অচিরেই ইরানের বন্ধু দেশে পরিণত হবে।
ইরান আসলে যা করেছে তা হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ, সুশাসনের চর্চা, রাজতন্ত্রের পথ পরিহার, প্রযুক্তি ও সম্পদ সৃষ্টির কৌশল আয়ত্ত। ইরান যদি পারমাণবিক বোমা বানাতে অগ্রসর হত তাহলে । বরং দেশটি অর্থনীতিতে সংকট এড়িয়ে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করে কিভাবে বেকারত্ব দূর করতে বিনিয়োগ কৌশল সফল করে তোলা যায় সেখানেই মনোযোগ দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রুহানি সম্প্রতি ইউরোপ সফরে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে নিরাপদ এবং স্থিতিশীল দেশ ইরান। রুহানি আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘উগ্রপন্থা মোকাবিলার জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে একমাত্র উপায়। বেকারত্ব সন্ত্রাসবাদের জন্ম দেয়।’ রুহানি বলেন, ইরানের মত একটি স্থিতিশীল ও অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত গতিশীল একটি দেশের এখন প্রয়োজন বিশাল ও ব্যাপক বিনিয়োগ। শুধু বিনিয়োগ নয় প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাই এবং সৃষ্টিশীল নতুন রপ্তানি বাজার তৈরি করতে চাই।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলছে, শুধু ইতালি কিংবা ফ্রান্স নয়, চীন, ভারত, জার্মানি, গ্রিস, ওমান, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ব্রিটেনের বিনিয়োগকারীরা গভীর আগ্রহের সঙ্গে ইরানে বিনিয়োগে অপেক্ষা করছে।
ইরানের জন্য আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কেন পশ্চিমা ধাঁচের অর্থনীতি মার খাচ্ছে তা লক্ষ্য রেখে বিকল্প ধাঁচের অর্থনীতি সৃষ্টি করা যেখানে বৈষম্য হ্রাস পাবে, বিনিয়োগে বেকারত্ব কমলেও বিনিয়োগে জনগণের সঞ্চয় স্ফীত হয়ে তা সমাজকে ভোগবাদিতায় নিমজ্জিত করবে না। একটা আর্থসামাজিক ভারসাম্য সৃষ্টি হলে ইরানের বিনিয়োগে উল্টো অন্যান্য দেশে যেতে শুরু করবে। একটি কল্যাণময় অর্থনৈতিক গতিধারা সৃষ্টি ইরানের অথনীতির জন্যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করবে। কারণ, বিশ্বঅর্থনীতি তেলনির্ভরতা কমাতে ব্যাপক বিকল্প প্রযুক্তিভিত্তিক হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেইনি ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা সত্যে পরিণত হয়েছে। এক ধর্ম ও রাজনীতির সঙ্গে এক চমৎকার বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে মতাদর্শগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিপ্লবের উত্তরণ ঘটেছে। দুই, কোনো রাজতন্ত্র বা পরাশক্তির সঙ্গে এ বিপ্লব আপোস করেনি। তিন, নিবিড় অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে ইজতেহাদের বিশুদ্ধতা ও গতিময়তাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি ও সমাজকে পরিশুদ্ধ করে তুলছে এ বিপ্লব। চার. সর্বোপরি স্বৈরশাসন ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে এ বিপ্লব অনুশীলনের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ হয়ে ইরানের জনগণকে এমন এক মুক্তির স্বাদ দিয়েছে যা দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে।
ইরানে ইসলামী বিপ্লবের ৩৭তম বিজয়বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কর্তৃক গত ৫ ফেব্রুয়ারী, বিএমএ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রবন্ধটি পঠিত হয়।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক