মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

পরমাণু ইস্যুতে ইরানের প্রধান দাবি, আইএইএকে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ১৭, ২০২৫ 

news-image

জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেছেন: এই ধরনের প্রতিবেদন সর্বদা পেশাদার, তথ্যভিত্তিক এবং যেকোনো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে।

জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি “আমির সাঈদ ইরাভানি” আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিবেদনের ব্যাপারে সাধারণ পরিষদের সভায় বলেছেন: যদিও কিছু দেশ শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তিতে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রবেশাধিকার পদ্ধতিগতভাবে সীমিত করতে চায়, একই সাথে তারাই ইসরায়েলকে অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা প্রদান করছে, যে কিনা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির সদস্য নয় এবং গোপন গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে।

ইরাভানি আরও বলেন: পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির ৪ নম্বর ধারা এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা পারমাণবিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তর অন্তর্নিহিত এবং অবিচ্ছেদ্য অধিকার।

জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত এবং স্থায়ী প্রতিনিধি উল্লেখ করেছেন: ২০২৫ সালের জুনে বিশ্ব ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসন প্রত্যক্ষ করেছে। বোর্ড অফ গভর্নরসে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে, ইহুদিবাদী ইসরায়েল ইরানের সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলির বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং ভারী আক্রমণ শুরু করে, যা আইএইএর পূর্ণ তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই অপরাধমূলক আক্রমণগুলি ইরানি বিজ্ঞানী এবং তাদের পরিবারকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে এবং অনেক অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে।

ইরাভানি আরও বলেন: “নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং এনপিটির বিশ্বস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২২ জুন ইরানের বিরুদ্ধে ওই আগ্রাসনে যোগ দেয় এবং সরাসরি আইএইএর তত্ত্বাবধানে থাকা পরমাণু স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের সনদ, আইএইএর নীতিমালা এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ৪৮৭ (১৯৮১) এর স্পষ্ট লঙ্ঘন; এই প্রস্তাবের অধীনে পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে যে কোনও আক্রমণকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইরান সবসময় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিবেদনগুলিকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ স্বাধীন দেশগুলির বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহার করছে এবং প্রযুক্তিগত বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে, প্রতিবেদনগুলিকে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং কূটনৈতিক চাপ আরোপের হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

ইরান বারবার সতর্ক করে দিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ত্রয়ী (ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি) আইএইএর নির্বাহী বোর্ডে ইরান-বিরোধী প্রস্তাব জমা দিয়ে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার পরিবর্তে ইরানের ব্যাপারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কাজ করছে।  বিশেষ করে ইরানের সাথে পরমাণু সমঝোতা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহারের পর আইএইএ রিপোর্টগুলিকে তারা ইরানের উপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ তীব্র করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।

ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন যে আইএইএ তার প্রতিবেদনে ইরানের ব্যাপক সহযোগিতার বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। অথচ ইরান বারবার বলেছে যে তাদের পরমাণু কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ এবং এই সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ইরান আইএইএর প্রতিবেদনের নিরপেক্ষতার উপর জোর দেয় কারণ প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৈধতা কেবল তখনই বজায় রাখা যেতে পারে যখন প্রতিবেদনগুলি পেশাদার, তথ্য-ভিত্তিক এবং রাজনৈতিক চাপমুক্ত থাকে। #

পার্সটুডে