দেশজুড়ে বাড়ছে শীতের তীব্রতা, যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস
পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫
পৌষের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বাড়ছিল শীতের দাপট। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দেশজুড়ে যেন জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো আকাশে ক্ষণিকের সূর্য এসেও থাকছে নিভুনিভু। কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। এর সঙ্গে কয়েকদিন ধরে হিমালয় থেকে আসা শীতল বাতাস শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়। কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশা স্বাভাবিক জনজীবনেও প্রভাব ফেলেছে। আগামী জানুয়ারি মাসে শীতের এ প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সোমবার এবং মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও সামান্য কমতে পারে। এছাড়া চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহের আওতা বাড়তে পারে বলেও আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা ছিল। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা দেখা গেছে। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সকালের দিকে হালকা ও মাঝারি ধরনের কুয়াশা দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিললেও দুপুরের পরই তা আবার আড়াল হয়ে যায়। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যশোরে। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাঠানো পূর্বাভাসে বলা হয়, আজ সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এদিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। শনিবার রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে রংপুর অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝ নদীতে আটকে পড়েছে শত শত নৌযান। ১৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
যশোর: টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। শনিবার জেলায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যশোর শহরের লালদীঘি পাড়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ মানুষ শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হয়ে থাকেন। প্রচণ্ড শীতে সেই সংখ্যা অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে তারপরও কাজ না পাওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কিছু মানুষ অনেক বেলা অবধি অপেক্ষা করছেন কাজের আশায়। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্বর, হাঁচি, কাশিসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
রাজশাহী: রাজশাহীসহ আশপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে উত্তর থেকে আসা হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। রাজশাহী আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এটাই প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। শীতের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলার মানুষ। শনিবার সকালে সূর্যের আলো এক ঝলক উঁকি দিলেও ৩০ মিনিটের মধ্যেই তা উধাও হয়ে যায়। রাজশাহীতে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুর: রংপুরে এক সপ্তাহ ধরে তীব্র শীত ঘন কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে হাড় কাঁপানো শীত। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৈরী আবহাওয়ায় কর্মজীবী পরিবারগুলো কাজে বের হতে পারছে না। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। রংপুরের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুর অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রংপুরে ঘন কুয়াশা পড়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫০ এবং সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৫-এর মধ্যে রয়েছে। আজ থেকে কুয়াশার প্রকোপ কমবে, সেই সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের দিকে যাবে আবহাওয়া পরিস্থিতি।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম): ফুলবাড়ীতে কয়েকদিনে শীত ও ঠান্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে করে সাধারণ মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বৃহস্পতিবার জেলায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক .২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
বরিশাল: ঘন কুয়াশায় মাঝ নদীতে আটকা পড়েছে শত শত নৌযান। এতে করে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা পরে গন্তব্যে পৌঁছায় যাত্রীরা। শুক্রবার রাত প্রায় ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের উপপরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা) বাবু লাল বৈদ্য। তিনি জানান, নদীতে কুয়াশার ঘনত্ব হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ঢাকা, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশালসহ দেশের সব নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলাচলরত লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযানকে যে যেখানে রয়েছে, সেখানেই নিরাপদভাবে নদীর তীরে নোঙর করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুয়াশা কেটে গেলে পরিস্থিতি বিবেচনায় নৌযান চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক করা হবে।
রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ: ঘন কুয়াশার কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার ১৪ ঘণ্টা পর চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। অতিমাত্রায় কুয়াশায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে বিআইডব্লিউটিসি শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং রাত সোয়া ৮টা থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে রাত ৮টা থেকে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ।
যুগান্তর