গাজামুখী ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ দখল করেছে ইসরায়েলি বাহিনী
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ২৭, ২০২৫

ইতালি থেকে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ জবরদখল করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জাহাজের কর্মীরা জানান, ইসরায়েলি নৌজাহাজ কাছে আসার আগে তারা একটি ড্রোনকে জাহাজের উপর ঘুরতে দেখেন। ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজ দেখে তারা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাননি বলে জানান জাহাজে থাকা হুয়াইদা আরাফ। পরে জাহাজে থাকা ইউরোপীয় সংসদের ফরাসি সদস্য এমা ফুরো জানান, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের জাহাজটি দখল করেছে।
জাহাজটিতে ১০টি দেশের মোট ২১ জন ছিলেন বলে জানিয়েছে এফএফসি। তাঁদের মধ্যে সংসদ সদস্য, চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকসহ ১৯ জন অধিকারকর্মী। অন্য দুজন আল–জাজিরার সাংবাদিক। ইসরায়েলি হামলায় ১১ জন আহত হয়েছেন।
এক বিবৃতিতে এফএফসি জানিয়েছে, অপহরণে সময় জাহাজটি গাজা উপকূল থেকে প্রায় ৪০ নটিক্যাল বা ৪৭ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল। ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজটিতে থাকা সব ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছে এবং জাহাজটির আরোহীদের ‘অপহরণ’ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হান্দালা নামের জাহাজটি গাজাবাসীর জন্য ‘জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী’ নিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে শিশুখাদ্য, ডায়াপার, খাবার, ওষুধ ছিল। ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজটির আরোহীদের অপহরণ করে নিয়ে গেছে। জব্দ করা হয়েছে জাহাজে থাকা মালপত্র। গাজা উপকূল তথা ফিলিস্তিনের জলসীমার বাইরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
হানদালা জাহাজের ২১ অধিকারকর্মী
অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, জাহাজের কর্মীরা নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট পরে একসাথে জড়ো হয়েছেন এবং সংঘর্ষ এড়াতে হাত উপরে তুলে ধরেছেন। ফুরো গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, “গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।”
এদিকে, গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজে হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এ ঘটনাকে ‘জলদস্যুতা’ হিসেবে উল্লেখ করে এ জন্য নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘আমরা জাহাজে থাকা অধিকারকর্মীদের নিরাপত্তাহীনতার জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে দায়ী করি। সেই সঙ্গে গাজায় অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত এসব ত্রাণবাহী জাহাজের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দিতে আহ্বান জানাই।’
আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মীদের সাহসের প্রশংসা করে বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘ইহুদিবাদীদের হুমকি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের (অধিকারকর্মীদের) বার্তা আমাদের জনগণ ও বিশ্বের কাছে পৌঁছেছে।’
গত মাসেও ইসরায়েল গাজায় সাহায্য পাঠানোর জন্য যাত্রা করা একটি জাহাজ দখল করেছিল। মে মাসে মাল্টার উপকূলের কাছে ইসরায়েলি ড্রোন সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ অন্য কর্মীদের থাকা জাহাজে ‘ম্যাডলিন’-এ হামলা চালিয়েছিল।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গাজাবাসীর কাছে সাহায্য পৌঁছানো ঠেকাতে ইসরায়েল বারবার জাহাজ দখল ও হামলা চালাচ্ছে। ২০১০ সালে গাজায় সাহায্য পাঠানো একটি তুর্কি জাহাজে ইসরায়েলের হামলায় কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছিলেন।
পার্সটুডে/