মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

খাদ্য দেয়ার লাইনে কম খরচে ফিলিস্তিনিদের হত্যার মার্কিন-ইসরায়েলি কৌশল

পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১৫, ২০২৫ 

news-image

ইহুদিবাদী ইসরায়েল খুব কম খরচে ফিলিস্তিনিদের উপর গণহত্যা চালানোর কৌশল আবিষ্কার করেছে। একটানা প্রায় ২৩ মাস ধরে ফিলিস্তিনিদের উপর চলছে ইসরাইলের নানা ধরনের নৃশংস নিপীড়ন ও গণহত্যা অভিযান। আর এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ক্ষুধাকে হত্যার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা।

গাজার মানবিক ফাউন্ডেশন (GHF) নামের একটি সংস্থার ত্রাণ সহায়তার ব্যানারের আওতায় এই হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল ও তার মদদদাতা মার্কিন সরকার। কথিত এই কর্মসূচির আওতায় ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে খাদ্য, পানি ও জ্বালানিসহ নানা ধরনের ত্রান সাহায্য নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ এখন এক নিয়মিত ও স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর এভাবে নিরপরাধ ও অসহায় ফিলিস্তিনিদেরকে সাহায্যের দীর্ঘ লাইনের ফাঁদে ফেলে হত্যা করাটা সুপরিকল্পিত কৌশলেরই অংশ যাতে হত্যাযজ্ঞের জন্য বেশি অর্থ খরচ করার দরকার না হয়।

দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার জন্য এ পর্যন্ত বাংকার ব্লাস্টার বোমা ও গাইডেড মিসাইলসহ অত্যন্ত ব্যয়বহুল নানা ধরনের সামরিক সাজ সরঞ্জাম, বোমা ও অস্ত্র ব্যবহার করেছে। গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গণহত্যা অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। আর সেই সময় থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামল শেষ হওয়া তথা ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিক পর্যন্ত ইসরায়েলকে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি ডলার মূল্যের সামরিক ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও ইসরাইলকে মার্কিন অস্ত্র সাহায্য দেয়ার এই জোয়ার অব্যাহত থাকে। ট্রাম্পের দেয়া এইসব অস্ত্রের মধ্যে ছিল ২০০০ টি শক্তিশালী বাংকার ব্লাস্টার বোমা। ফলে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা অব্যাহত রাখতে বিপুল অংকের অর্থ ও দামি অস্ত্র খরচ করতে হয়েছে ইসরাইলকে।

এ অবস্থায় ইসরায়েলের নরঘাতক ও যুদ্ধবাজ শাসকরা আরো কম খরচে বা খুবই সস্তায় গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের উপর গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার কৌশল অনুসন্ধান করছিল। ওই শাসকরা শেষ পর্যন্ত ত্রান সাহায্যের ফাঁদে ফেলে হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখার কৌশল বেছে নেয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে ইসরায়েল ও মার্কিন মদদে গাজায় কথিত ত্রাণকেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার পর থেকে কেবল গত ২৭ মে থেকে সাত জুলাই সময়ে কমপক্ষে ৭৯৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয় ত্রাণ সরবরাহের লাইনের মধ্যে ও এসব লাইনের আশপাশে।

জি এইচ এফ মার্কিন সামরিক কোম্পানিগুলোর অন্যতম। এই কোম্পানির নেতৃত্বে গাজায় কথিত ত্রাণ তৎপরতা চালু করা হয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ করার লক্ষ্যে। এই কোম্পানির ত্রাণ কেন্দ্রগুলো এমন সব জায়গায় রয়েছে যেখানে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ইসরায়েলি সেনারা। ফলে ত্রাণ আনতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন শত শত ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা মার্কিন এই ত্রাণ সংস্থাটিকে পুরোপুরি অনিরাপদ ও ইসরাইলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করেছে।

যেসব প্রামাণ্য ভিডিও প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা গেছে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি ছুঁড়ছে ইসরায়েলি সেনারা ও কথিত গাজা ত্রাণ ফাউন্ডেশনের মার্কিন কর্মীরা। ভিডিওগুলো দেখলে স্পষ্টই বোঝা যায় অসহায়, ক্ষুধার্ত, নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর পরিকল্পিতভাবেই গুলি বর্ষন করা হয়েছে। কারণ এভাবে গণহত্যা চালানোর খরচ খুবই কম। সম্প্রতি ইসরায়েলি দৈনিক হারেতজ জানিয়েছে ইজরায়েল গাজা বাসীদের ঘরবাড়িগুলো ধ্বংসের জন্য প্রাইভেট কোম্পানির ঠিকাদারদের নিয়োগ করেছে। প্রতিটি ঘর ধ্বংসের জন্য তারা পায় প্রায় ১৫০০ মার্কিন ডলার। আর এইসব ঘরবাড়ি ধ্বংসের প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবেই কম সময়ে বেশি অর্থ আয়ের লক্ষ্যে ফিলিস্তিনিদের উপর ত্রাণ সাহায্য দেয়ার নামে গণহত্যা চালাচ্ছে ওই ঠিকাদাররা যাতে ওইসব বাড়িঘর ধ্বংসের জন্য সাজ-সরঞ্জাম নেয়ার পথে কোন বাধা না থাকে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি গত চার জুন বলেছিলেন, ‘মানুষের কাছে এটা অবিশ্বাস্য ছিল যে এরা এরকম নৃশংস বা পৈশাচিক অপরাধযজ্ঞের ষড়যন্ত্র করতে পারে। দেখুন এর আগে এরা একটি বোমা ফেললে একটি বাড়ি বা দুটি বাড়ি ধ্বংস হতো, এতে ১০ জন বা ১৫ জন শহীদ হতেন। ওরা যখন দেখল যে না এতো যথেষ্ট নয়, অনেক কম। তাই এখন কি করা দরকার? এখন তারা কথিত খাদ্য বিতরণের কেন্দ্র তৈরি করল। গাজায় যেহেতু খাদ্য সরবরাহ নেই তাই কোথাও খাবার এসেছে শুনলে জনগণ সেখানে ছুটে গিয়ে ভিড় জমায়। এ অবস্থায় এরা তথা দখলদার ইসরায়েলি সেনারা একটি মেশিনগান নিয়ে আগে যতজনকে হত্যা করত তার চেয়ে দশ গুণ বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে। আগে তাদের গণহত্যা চালানোটা ছিল বেশ ব্যয়বহুল এখন তার খরচ কমে গেল, সস্তা হয়ে গেল! এখন তারা কেবল গুলি খরচ করছে। বিষয়টি খুবই চাঞ্চল্যকর।’

পার্স টুডে/