সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

উপসাগর থেকে মহাসাগর পর্যন্ত ইরানের নৌশক্তির বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ১, ২০২৫ 

news-image

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নৌবাহিনী উন্নত দেশীয় প্রযুক্তি, সমুদ্রগামী বহর এবং আধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে আজ বৈশ্বিক সামুদ্রিক অঙ্গনে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

২৮ নভেম্বর ইরানের নৌবাহিনী দিবস। দিনটি শুধু ১৯৮০ সালের ঐতিহাসিক মুক্তা অপারেশন-এর কথাই স্মরণ করায় না; বরং এটি ইরানের নৌশক্তির অসাধারণ পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। একসময় যে বাহিনী কেবল উপকূল রক্ষা করত, আজ সেই বাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী জলসীমায় ইরানের পতাকা উড়াচ্ছে।

কৌশলগত রূপান্তর: উপকূল প্রতিরক্ষা থেকে বৈশ্বিক উপস্থিতি

গত চার দশকে ইরানের নৌবাহিনী অভূতপূর্ব উন্নতির মধ্য দিয়ে গেছে। ১৯৮০–এর দশকে সীমিত আকারের ক্ষেপণাস্ত্রবাহী নৌযান দিয়ে যে বাহিনী কেবল উপকূল রক্ষায় নিয়োজিত ছিল, আজ সেই বাহিনীর বহর পৌঁছে যাচ্ছে চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, এমনকি লাতিন আমেরিকার বন্দরগুলোতেও।

এই সক্ষমতার প্রতীক ছিল নৌবহর ৮৬–এর সমুদ্রযাত্রা। ডেস্ট্রয়ার ডেনা ও ভাসমান ঘাঁটি–সদৃশ সমর্থন জাহাজ মাকরান–এর ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো বন্দরে নোঙর করার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। এটি ইরানের নৌ–ক্ষমতা ও দীর্ঘপথে সমুদ্রযাত্রার সক্ষমতার এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

ইরানের নৌশক্তির অতুলনীয় অর্জনসমূহ

  • ভারী দেশীয় নৌবহর: মাকরান সাপোর্ট জাহাজ ১০০,০০০ টন পণ্য, ৫টি হেলিকপ্টার ও যুদ্ধ ড্রোন বহন করতে সক্ষম। এটি একটি ভাসমান ফরওয়ার্ড বেস হিসেবে কাজ করে এবং ইরানের সীমানা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে অপারেশন চালাতে পারে।
  • উন্নত ডেস্ট্রয়ার: মোজ শ্রেণির ডেনা ও দামাভান্দ ফেজড-অ্যারে রাডার ও ভার্টিক্যাল লঞ্চ সিস্টেমে সজ্জিত। একই সাথে ১০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে।
  • আধুনিক সাবমেরিন: ফাতেহ ও গাদির ক্লাসের সাবমেরিন ২,০০০ কিমি পাল্লার জাসক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত। এরা অঞ্চলের বিমানবাহী রণতরীদের জন্য গুরুতর হুমকি।
  • হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র: কাদের-২ (১৪ মাখ গতি) ও পারস্য উপসাগর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (১০ মিটারের কম বিচ্যুতি) বিশাল এলাকার যেকোনো লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
  • নৌ-ড্রোন: প্রথমবারের মতো জামারান ডেস্ট্রয়ারের ডেক থেকে পেলিকান-২ ভিটোল ড্রোন উড্ডয়ন করে সফলভাবে সাজিল ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে—যা ইরানি নৌবাহিনীর ড্রোন–সমন্বিত যুদ্ধক্ষমতার নতুন ধাপ নির্দেশ করে।

তিন মহাসাগরে প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কার্যক্রম

বর্তমানে ইরানের নৌবাহিনী পারস্য উপসাগর, ভারত মহাসাগর, লোহিত সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরেও সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রাখছে। গত বছর ইরানি নৌবাহিনী ৭,৫০০–এর বেশি বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপত্তা দিয়ে এসকর্ট করেছে, সোমালীয় দস্যুবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে এবং চীন–রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ মহড়া ‘মেরিটাইম সিকিউরিটি বেল্ট ২০২৫’–এ অংশ নিয়েছে।

নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহরাম ইরানি জানান, ইরানের নৌশক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে দেশের স্বার্থবিরোধী হুমকির প্রতি ‘দৃঢ়, সুনির্দিষ্ট ও বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া’ জানানো সম্ভব।

বন্ধু ও শত্রুদের প্রতি কৌশলগত বার্তা

২৮ নভেম্বর তারিখটি ইরানের নৌবাহিনীর ঐতিহাসিক স্থিতিশীলতা ও উদ্ভাবনের প্রতীক। ১৯৮০ সালের মুক্তা অপারেশনে ইরাকের নৌবাহিনী ধ্বংসের দিন থেকে আজকের দিন পর্যন্ত যেদিন স্বদেশি নৌবহর বিশ্বের দূরতম জলসীমায় পৌঁছেছে।

ইরানের কৌশলগত নৌবাহিনী আজ বিশ্বের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—

হরমুজ প্রণালি থেকে মহাসাগরের গভীর পর্যন্ত নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত এবং সক্ষম এক শক্তিশালী সাগরশক্তিতে পরিণত হয়েছে ইরান। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক মার্কিন থিঙ্ক–ট্যাংকও এই বাস্তবতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।#

পার্সটুডে