বুধবার, ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

ইরান কেন এই দিনটিকে (১৩ অবন) সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে?

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ৫, ২০২৫ 

news-image

ফার্সি ১৩ অবন (৪ নভেম্বর)- এই দিনটি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ক্যালেন্ডারে কেবল একটি তারিখ নয়, বরং আধিপত্যের বিরুদ্ধে ইরানি জাতির পবিত্র ক্ষোভ এবং অবমাননার বিরুদ্ধে গণজাগরণের প্রতীক।

ইরানের ফার্সি ১৩ অবন তিন প্রজন্মের প্রতিরোধের কাহিনি বহন করছে —
প্রথম প্রজন্ম, যারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.)’র নির্বাসন প্রত্যক্ষ করেছিল;

দ্বিতীয় প্রজন্ম, যারা তেহরানের রাস্তায় ছাত্রদের রক্ত ঝরতে দেখেছিল;
আর তৃতীয় প্রজন্ম, যারা মার্কিন দূতাবাস দখলের মাধ্যমে বিশ্ববসীর কাছে স্বাধীনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল।

পার্সটুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৩ অবনের প্রথম ঘটনা ঘটে ১৯৬৪ সালের ৪ নভেম্বর যখন শাহের শাসনব্যবস্থা “ক্যাপিটুলেশন আইন” অনুমোদনের মাধ্যমে মার্কিন উপদেষ্টাদের বিচারিক দায়মুক্তি দেয়। এর প্রতিবাদ করায় ইমাম খোমেনী (রহ.)’কে তুরস্কে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

এই নির্বাসন ছিল ইরানে মার্কিন রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে আলেম সমাজ ও জনগণের প্রথম প্রকাশ্য আন্দোলনের সূচনা, যা বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে জাতির সংগ্রামের সূচনাবিন্দু হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়।

১৪ বছর পর ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর যখন শাহের শাসন পতনের দ্বারপ্রান্তে, তখন তেহরানের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ইমাম খোমেনী (রহ.)’র আন্দোলনের সমর্থনে এবং স্বৈরাচারের প্রতিবাদে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সমবেত হয়। শাহের নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়, ফলে বহু ছাত্র শহীদ হয়। সেই দিন থেকে ইরানি কিশোরদের রক্ত ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে।

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ১৯৭৯ সালে, যার প্রভাব সীমান্ত ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে। ইমাম খোমেনীর অনুসারী বিপ্লবী ছাত্ররা তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখল করে। ইমাম খোমেনী (রহ.) এই ঘটনাকে “দ্বিতীয় বিপ্লব” বলে আখ্যা দেন। দূতাবাস থেকে উদ্ধারকৃত নথিগুলোতে আমেরিকার গুপ্তচরবৃত্তি ও ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রমাণ সুস্পষ্ট। এই পদক্ষেপ ইরান-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচনা করে এবং ১৩ অবনকে “বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় সংগ্রামের দিন” হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়।

এরপর থেকে ১৩ অবন শুধু ইতিহাসের একটি তারিখ নয়, বরং ইরানি জাতির স্বাধীনতাকামী চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে- এটি এমন এক দিন হয়ে উঠেছে, যেদিন নয়া প্রজন্মও তাদের জাতীয় মর্যাদা, প্রতিরোধ ও আত্মমর্যাদার ইতিহাস নতুনভাবে স্মরণ করে।#

পার্সটুডে