ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আর্কাইভ ও জাতীয় গ্রন্থাগার হচ্ছে প্রশিক্ষণ, জ্ঞানার্জন, গবেষণা ও সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান।
১৩১৬ ফারসি সালে (১৮৯৫) আনুষ্ঠানিকভাবে এ গ্রন্থাগার যাত্রা শুরু করে। এটি ১৩৫৮ ফারসি সালে (১৯৭৯) তৎকালীন ‘পাহলভী গ্রন্থাগার’, ১৩৬২ ফারসি সালে (১৯৮৩) ‘মারকাজে খাদামাতে কেতাবদারী’ (বই সংরক্ষণ ও সেবা কেন্দ্র) ও ১৩৭৮ ফারসি সালে (১৯৯৯) ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিপ্লবের সাংস্কৃতিক আর্কাইভ কেন্দ্র ‘জাতীয় গ্রন্থাগার’-এর সাথে একীভূত হয়। ১৩৮১ সালে (২০০২) সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে ‘জাতীয় আর্কাইভও জাতীয় গ্রন্থাগারের সাথে একীভূত হয় এবং বর্তমানত কাঠামো লাভ করে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগারটি ‘ইরানের জাতীয় পাঠাগার’ ও ‘ইরানের জাতীয় দলিলাদির ভাণ্ডার’ নামক দু’টি সংযুক্ত ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব পালনের ভিত্তিতে জাতীয় গ্রন্থাগার বইপত্র সংগ্রহ ও তথ্যসূত্র সংরক্ষণ করে থাকে। দেশের ভেতরে প্রকাশিত সকল বই ও বই ব্যতীত অন্যান্য প্রকাশনা সংগ্রহ করা হয়। বই ছাড়া ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, পোস্টার, ছবি, অডিও-ভিডিও ক্যাসেট, ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল তথ্যাবলি এবং এগুলোর কপি উপহার প্রাপ্তি বা খরিদ সূত্রে সংগ্রহ করা হয়। ইরানের বাইরে ইরানের তথ্যকেন্দ্র বা ইসলামী কেন্দ্র থেকে ফারসি বহির্ভূত বিশেষ করে ইংরেজি ও আরবি ভাষায় ছাপানো প্রকাশনাসহ ফারসি ভাষায় প্রকাশিত সকল প্রকাশনা সংগ্রহ করা হয় ও ফারসি বহির্ভূত ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি ও আরবি ভাষায় প্রকাশিত নির্ভরযোগ্য সূত্রের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়।
আন্তর্জাতিক সংস্থার সিদ্ধান্তক্রমে যে স্ট্যান্ডার্ড তুলে ধরা হয় তা হল সকল বই এ ওঝইঘ নম্বর থাকবে। একইভাবে প্রতিটি জিনিসেই একটি নম্বর থাকবে যাতে পাঠাগারে তা সহজেই চেনা যায় ও পাওয়া যায়। যে কোন দেশের পাঠাগারে সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য এরকম পদক্ষেপ নেয়া হয়। জাতীয় গ্রন্থাগার ওঝইঘ ও ওঝওখ এর জাতীয় কেন্দ্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে বই এবং পত্র-পত্রিকার জন্য নম্বর বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ফলে জাতীয় গ্রন্থাগার শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার সগর্ব উপস্থিতিই ঘোষণা করেনি; বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সকল প্রকার বিনিময় বা সহযোগিতার দ্বারও উন্মুক্ত করেছে।
ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১১ মে ১৯৯৯ সাল থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক নিদর্শন সংরক্ষণ করে আসছে এবং ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১৩৮৫ বাহমান) পর্যন্ত এতে প্রায় ১০৫০০টি নিদর্শন সংরক্ষিত হয়েছে।
জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রকাশনা বিভাগ গবেষণা, ব্যবহারিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক মৌলিক বই ছাপানো ও প্রকাশ করার দায়িত্বে নিয়োজিত। এছাড়াও প্রতি বছর যেসব বই প্রকাশিত হয় তার তালিকাও এ বিভাগে প্রকাশ করা হয়।
সারাদেশে বইপত্র সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত তৎপরতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে জাতীয় গ্রন্থাগারে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ গ্রন্থাগারের জন্য ৬০টিরও বেশি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের পদ অনুমোদিত বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার গবেষণা কার্যক্রমগুলো হলো বিভিন্ন প্রকার তথ্যকেন্দ্র ও পাঠাগারের জন্য প্রয়োজনীয় আদর্শ ও নির্দেশনা অনুমোদন; সারাদেশে বইপত্র সংরক্ষণ ও তথ্য পৌঁছানোর কর্মতৎপরতা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করা, সারা দেশে পুস্তক সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান উন্নয়ন ও সমৃদ্ধকরণে পদক্ষেপ নেয়া এবং জ্ঞান বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশের চেষ্টা চালানো; সাময়িকী প্রকাশ, পুস্তক সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান সম্পর্কিত বিশ্বকোষ সংকলন, ইরান ও ইসলাম বিষয়ে ম্যাগাজিন ছাপানো, ইরানী পত্রপত্রিকার জন্য নির্দেশনা প্রকাশ, বিশেষজ্ঞ ও অনুসন্ধানী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পেশাগত সমৃদ্ধি আরও বৃদ্ধির জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের এ শাখায় বইপত্র প্রকাশ এবং মৌলিক ও ব্যবহারিক গবেষণা আয়োজন।
সংগ্রহ
১. ছাপানো বইপত্র : বর্তমানে গ্রন্থাগারে ফারসি, আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মানি, রুশ ও অন্যান্য ভাষায় প্রায় ১৫ লক্ষ বই রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রচুর বইপত্র রয়েছে, তবে ‘ইরান পরিচিতি’ ও ‘ইসলাম পরিচিতি’ ও ‘বই সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান’ সংক্রান্ত যত বই রয়েছে তা নজিরবিহীন।
২. দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি : এ বিভাগে ফারসি ও আরবি ভাষায় প্রায় ২৫ হাজার পাণ্ডুলিপি রয়েছে; লিথোগ্রাফিক পদ্ধতিতে ছাপা বই রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৩৫ প্রকার বই অত্যন্ত আড়ম্বরপূণ সুদৃশ্য। জাতীয় গ্রন্থাগার এখন পর্যন্ত ২৩ খণ্ডে ঐ পাণ্ডুলিপিগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে।
৩. ইরান পরিচিতি ও ইসলাম পরিচিতি : জাতীয় গ্রন্থাগারের একটি মূল দায়িত্ব হচ্ছে ফারসি বহির্ভূত ভাষায় লেখা ইরান ও ইসলাম সম্পর্কিত বইপত্র সংগ্রহ করা। এভাবে ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও রুশ ভাষায় লেখা প্রায় ৪০ হাজার বই সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই সাজ-সজ্জা অলংকারে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। জাতীয় গ্রন্থাগার পুস্তক পরিচিতি সংক্রান্ত তথ্যাবলি প্রকাশে তৎপর যা শিগগিরই আগ্রহী গবেষকবৃন্দের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।
৪. পত্র-পত্রিকা : কাজার শাসনামল থেকে আজ পর্যন্ত ইরানে প্রকাশিত ম্যাগাজিন, সাময়িকী, দৈনিকপত্র, বুলেটিন, সংবাদপত্র ইত্যাদি এ গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া বিদেশী পত্র-পত্রিকাও সংরক্ষণ করা হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ সংগ্রহশালায় ১৩ হাজার শিরোনামের মোট ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি খ- বাঁধাইকৃত পত্র-পত্রিকা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে প্রকাশনা অব্যাহত আছে এমন ১৮০০ শিরোনামের সাময়িকী, ৭০টি দৈনিক পত্র ও ৫৫০ সাপ্তাহিকী যা সারাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সংগ্রহ। জাতীয় গ্রন্থাগারে ইরান পরিচিতি ও ইসলাম পরিচিতি বিষয়ক পত্র-পত্রিকার সমাবেশও চোখে পড়ার মতো।
৫. পুস্তক বহির্ভূত সম্পদ : বইয়ের বাইরেও বিভিন্ন সম্পদ এখানে সংরক্ষিত আছে। যেমন : ডিজিটাল, ভিডিও, অডিও, ব্রোশিওর, পোস্টার, ম্যাপ, ছবি, পোস্টকার্ড, প্রতিকৃতি, টিকিট, পঞ্জিকা ইত্যাদি। মোটামুটি ৪৭ প্রকারের মোট দশ লক্ষ নমুনা সংগৃহীত আছে।
জাতীয় গ্রন্থাগারটি ৯৭০০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি আটতলা ভবনে অবস্থিত। গ্রন্থাগরের বিভিন্ন হলগুলো হলো- খাজা নাসিরুদ্দিন তূসি হল (প্রামাণ্য দলিলাদি ও দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি), দেহখোদা হল (পত্রপত্রিকা), কামালউদ্দীন বেহযাদ হল (পুস্তক বহির্ভূত সম্পদ), ইবনে নাদিম হল (সংগ্রহশালা ও বই পরিচিতি), খারীজমী হল (বিজ্ঞান ও কারিগর বিদ্যা), শিশু ও তরুণদের জন্য বিশেষ হল, হাফেজ ও সাদী হল (সাধারণ পাঠাগার), রুদাকী হল (বিশেষজ্ঞ তরুণদের জন্য), ইবনে সিনা হল (মানববিজ্ঞান), ফারাবী হল (সমাজবিজ্ঞান), শহীদ মোতাহহারী হল (ইরান পরিচিতি ও ইসলাম পরিচিতি তথ্যকেন্দ্র), শেখ তুসী হল (ইসলামদ পরিচিতি), আবু রাইহান বিরূনী হল (ইরান পরিচিতি)।
-ইমেইল : [email protected]
-ইন্টারনেট :www.nlai.ir
-ঠিকানা : শহীদ হাক্কানী হাইওয়ে, (মেট্রো মীর দামাদের পর)
বুলোভারে কেতাবখনে মেল্লীয়ে ইরান।
পোস্ট কোড : ১৫৩৭৬১৪১১১
অনুবাদ : শাহ নওয়াজ তাবীব
All posts by pavel
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম বীর নায়ক শহীদ ড. মোফাত্তেহ্
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যেসব শীর্ষস্থানীয় আলেম ও বুদ্ধিজীবী এ বিপ্লবের অনুকূলে জনমত গঠন ও জনগণকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং এ কারণে বিপ্লবের বিজয়ের অব্যবহিত পরে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন গোষ্ঠীর হাতে শহীদ হন তাঁদের মধ্যে প্রথম কাতারের ব্যক্তিত্ববর্গের অন্যতম ছিলেন শহীদ ড. মোহাম্মাদ মোফাত্তেহ্। তিনি মাত্র ৫১ বছর বয়সে শাহাদাতের অমৃত পেয়ালা পান করেন।
মোহাম্মাদ মোফাত্তেহ্ ১৩০৭ ইরানী সালের ২৮শে খোরদাদ (মোতাবেক ১৮ই জুন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ) ইরানের হামেদান প্রদেশের ফামেতীন জিলার কালের সার নামক গ্রামের এক আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩৫৮ ইরানী সালের ২৭শে অযার (মোতাবেক ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ) রাজধানী তেহরানে ইসলামের দুশমনদের হাতে শহাদাত বরণ করেন। তাঁর পিতা মাহমূদ মোফাত্তেহ্ হামেদানের একজন স্বনামখ্যাত আলেম ছিলেন।
মোহাম্মাদ মোফাত্তেহ্ হামেদানে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি সেখানে অখুন্দ মোল্লা আলীর ন্যায় স্বনামখ্যাত ওলামায়ে কেরামের কাছে ফিকাহ্শাস্ত্রের ওপর প্রাথমিক পর্যায়ের অধ্যয়ন সমাপন করেন। এরপর মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি উচ্চতর পর্যায়ের দ্বীনী ইল্ম অর্জনের লক্ষ্যে ইরানের প্রধান দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত ধর্মীয় নগরী কোমে গমন করেন।
কোমে তিনি বরেণ্য ওলামায়ে কেরামের নিকট জ্ঞানার্জন করেন। তাঁর উস্তাদগণের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ববর্গ ছিলেন আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ রূহুল্লাহ্ খোমেইনী (রহ্.) [পরে যিনি হযরত ইমাম খোমেইনী হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত হন], আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ হোসাইন তাবাতাবাঈ, বুরুজেরদী (রহ্.), আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ রেযা গোলপায়গনী (রহ্.), স্বনামখ্যাত মুফাস্সিরে কোরআন আল্লামা সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ হোসাইন তাবাতাবাঈ (রহ্.), স্বনামখ্যাত দার্শনিক মীর দামাদ (রহ্.) ও হাজ অগা রাহীম আরবাব (রহ্.)। তিনি এসব মহান উস্তাদের র্দাসের মজলিসগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। তবে তিনি মানবিক জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। দ্বীনী ইল্মে ব্যাপক দখলের কারণে অচিরেই তিনি কোমের দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্রের অন্যতম উস্তাদ্-এর মর্যাদা লাভ করেন। তবে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্বীয় জ্ঞানভাণ্ডারকে অধিকতর সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় তিনি দর্শনশাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলেও শিক্ষকতা করেন।
মোহাম্মাদ মোফাত্তেহ্ জ্ঞানার্জন ও শিক্ষকতার পাশাপাশি ইল্মী বিতর্কেও অংশগ্রহণ করতেন এবং জনগণকে দ্বীনী ও রাজনৈতিক বিষয়ে পথনির্দেশ প্রদানের লক্ষ্যে বক্তৃতা করতেন। একই সাথে তিনি লেখালেখিও করতেন এবং বিভিন্ন দৈনিক ও ইসলামী সাময়িকীতে তৎকালীন শাহী সরকারের সমালোচনা করে প্রবন্ধ লিখতেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের নিকট তাঁর লেখা খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ফলে ইরানের বিভিন্ন শহর থেকে বক্তৃতার জন্য তাঁকে দাওআত করা হতো। এসব দাওআতে সাড়া দিয়ে তিনি বিভিন্ন শহরে, বিশেষত আবাদান, আহ্ওয়ায, খোররাম শাহ্র, কেরমান, ইসফাহান, ইয়ায্দ ও শীরাযে সফর করতেন। তিনি যেসব সভা ও মাহ্ফিলে বক্তৃতা করতেন সেসব সভা ও মাহ্ফিলে তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য, বিশেষ করে তিনি পাহ্লাভী সরকারের সমালোচনা করে যেসব বক্তৃতা করতেন সেগুলোতে হাজার হাজার লোকের সমাবেশ ঘটতো।
মোফাত্তেহ্ শাহী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বক্তৃতা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করায় সরকার তাঁর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে এবং তাঁকে গ্রেফতার করে পূর্ব ইরানের যাহেদানে নির্বাসিত করে। এছাড়া, বিশেষভাবে পশ্চিম ইরানের খুযেস্তান প্রদেশে তাঁর সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করে সরকার তাঁর জন্য খুযেস্তান প্রদেশে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
নির্বাসিত জীবনে তাঁর অনেকগুলো বছর অতিক্রান্ত হবার পর ১৩৪৮ ইরানী সালে (১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর ওপর থেকে নির্বাসনের আদেশ তুলে নেয়া হয়। তখন তিনি যাহেদান থেকে রাজধানী তেহরানে চলে আসেন এবং তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলাহীয়্যাত (স্রষ্টাতত্ত্ব) ও ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টিতে অধ্যাপক হিসেবে বরিত হন এবং তিনি শহীদ অধ্যাপক আয়াতুল্লাহ্ র্মোতাযা মোতাহ্হারীর পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরকে দ্বীনী জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
মোফাত্তেহ্ তেহরানে দ্বিনী শিক্ষার নিবেদিত অনুসারীদের বিখ্যাত দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্র ও মিলনায়তন হোসাইনীয়ায়ে এরশাদ-এ নিয়মিত বক্তব্য রাখতেন। সরকার হোসাইনীয়ায়ে এরশাদ বন্ধ করে দিলে মোফাত্তেহ্ তেহরানের মসজিদে জাভীদ-এ প্রাণচঞ্চল দ্বীনদার যুবকদের একটি গ্রুপ গঠন করেন এবং স্বয়ং তার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। বহুদর্শী মোফাত্তেহ্ এ মসজিদে নিয়মিত অর্থনীতি, দর্শন ও সমাজতত্ত্বের ওপরে বক্তৃতা করতেন এবং আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর বাণী ও ভাষণের সংকলন নাহজুল বালাগাহ্-এর ব্যাখ্যা করতেন। এছাড়া তিনি এখানে কোরআন মজীদের তাফসীর করতেন। এভাবে তিনি যুব সমাজকে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরকে মসজিদের প্রতি আকৃষ্ট করেন।
ড. মোফাত্তেহ্র এ কর্মকাণ্ডে পাহ্লাভী সরকার প্রমাদ গণে, ফলে ১৩৫৪ ইরানী সালে (১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ) মসজিদে জাভীদ বন্ধ করে দেয় এবং মোফাত্তেহ্কে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। তবে বছর খানেকের মধ্যেই তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।
কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর মোফাত্তেহ্ অনেকটা আধা গোপনীয় আন্দোলন সংগঠনের কর্মসূচি বেছে নেন এবং আরো কতক আলেমের সাথে মিলে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে থাকেন। এ সময় (১৩৫৫ ইরানী সাল মোতাবেক ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ) তেহরানের মসজিদে কাবা-র ইমামতীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৩৫৬ ইরানী সালের মাঝামাঝি সময়ে (১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ) মোফাত্তেহ্ প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। এ সময় তেহরানের কাইতারীয়াহ্ নামক স্থানে তিনি কয়েক লক্ষ লোকের সমাবেশে ঈদের নামাযে ইমামতী করেন এবং সেখানকার একটি টীলার ওপর দাঁড়িয়ে জনগণের উদ্দেশে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন। নামায শেষে তিনি এ দ্বীনদার জনতার বিরাট মিছিলে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া তিনি ১৬ই শাহ্রীভার (৫ই সেপ্টেম্বর) পরবর্তী বিক্ষোভ মিছিলের তারিখ নির্ধারণ করে ঘোষণা দেন।
শাহী সরকারের কুখ্যাত পুলিশ ও গুপ্ত পুলিশ বাহিনী সাভাক্-এর সদস্যরা ১৬ই শাহ্রীভারের মিছিলের ওপর হামলা চালায়। তারা বিশেষ করে মোফাত্তেহ্কে নির্মমভাবে প্রহার করে এবং এরপর তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। অবশ্য বিপ্লবী জনতার সর্বাত্মক রাজনৈতিক তৎপরতার ফলে বিপ্লবের বিজয় আসন্ন হয়ে উঠলে গ্রেফতার করার দুই মাসের মাথায় তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।
এরপর ১৩৫৭ ইরানী সালের শেষ দিকে (১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে) ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলে বিপ্লবের মহান নায়ক হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বিপ্লবের অন্য নেতৃবৃন্দ তাঁকে অভ্যর্থনা করার জন্য যে কমিটি গঠন করেন মোফাত্তেহ্ সে কমিটির অন্যতম পরিচালক সদস্য ছিলেন। আর বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয়ের পরে ইসলামী বিপ্লবী কমিটিসমূহ গঠিত হলে ড. মোফাত্তেহ্ ৪ নং কমিটির প্রধান নিয়োজিত হন। এছাড়া তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলাহীয়্যাত ও ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন।
ড. মোফাত্তেহ্ ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে ১৩৫৮ ইরানী সালের ২৭শে অযার (১৮ই ডিসেম্বর ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ) ফোরকান নামক একটি বিভ্রান্ত গোষ্ঠীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি যখন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলাহীয়্যাত ফ্যাকাল্টিতে প্রবেশ করছিলেন তখন এ গোষ্ঠীর কয়েক জন সদস্য তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। তাঁর সাথে তাঁর দু’জন দেহরক্ষীও শহীদ হন। ঘাতকরা অবশ্য ধরা পড়ে। তারা আদালতে স্বীকার করে যে, এর আগেও তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য কয়েক দফা প্রচেষ্টা নিয়েছিল, কিন্তু সুবিধাজনক অবস্থায় না পাওয়ার কারণে তখন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারে নি।
শহীদ মোফাত্তেহ্র লাশ ধর্মীয় নগরী কোমে হযরত মাসুমাহ্ (সালামুল্লাহি ‘আলাইহা)-এর মাযারের আঙ্গিনায় দাফন করা হয়।
ইসলামী বিপ্লবের মহান নায়ক হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.), দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্রের শিক্ষক ও শিক্ষার্থিগণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থিগণের কাছে সমভাবে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ড. মোফাত্তেহ্র শাহাদাতকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ইরানী সালের ২৭শে অযার (১৮ই ডিসেম্বর)-কে ‘রূযে ওয়াহ্দাতে হাওযাহ্ ও দানেশগাহ্’ (দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐক্য দিবস) নামকরণ করেন এবং এর ভিত্তিতে প্রতি বছরই ইরানী জনগণ এ দিনটিকে এ নামে পালন করে থাকে।
শহীদ ড. মোফাত্তেহ্ কেবল বাগ্মীই ছিলেন না, একজন সুলেখকও ছিলেন। তিনি তাঁর ৫১ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে বহু ব্যস্ততার মধ্যেও বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইসলাম বার সারে দোরাহী (দুই পথের/ দুই ধারার মাঝখানে ইসলাম), যিয়ারাতে খোরাফেয়ে হাকীকাত (প্রকৃত সত্যের কুসংস্কারাচ্ছন্ন যিয়ারাত), কুদাকে নীল ইয়া র্মাদে ইনকিলাব (নীল শিশু বা বিপ্লবী ব্যক্তি), রাহ্ অভার্দহয়ে এস্তে‘মার (উপনিবেশবাদের উপহার), রাভেশে আন্দিশে (চিন্তার পদ্ধতি) ও দো‘আ ‘আমেলে পিশ্রাফ্ত ইয়া রুকূদ্ (দো‘আ উন্নতির বা স্থবিরতার কারণ)।
ইরান সরকার ২০০৯ সালে ড. মোফাত্তেহ্র ছবি সম্বলিত একটি ডাকটিকেট প্রকাশ করে। হামেদান প্রদেশের একটি গ্রামের নামকরণ করা হয় ড. মোফাত্তেহ্র নামে। এছাড়াও হামেদান প্রদেশে একটি ১০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ১৫০০০ দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি ফুটবল স্টেডিয়াম, মাশহাদের একটি হাইওয়ে, তেহরান মেট্রোর একটি স্টেশন প্রভৃতির নামকরণ করা হয় ড. মোফাত্তেহ্র নামে। ফামেনীন গ্রামে শহীদ মোফাত্তেহ্র বাড়িকে ইরানের জাতীয় স্মৃতিচিহ্নগুলোর অন্যতম হিসাবে রেজিস্ট্রিভুক্ত করা হয়।
(সূত্র : ইন্টারনেট)
সংকলন ও অনুবাদ: নূর হোসেন মজিদী
‘মহান আহলে বাইতের আত্মত্যাগের আদর্শ আমাকে মুগ্ধ করেছে’
-মার্কিন নও মুসলিম তাহেরা
‘তাহেরা’র জন্ম হয়েছিল নিউইয়র্কে এক খ্রিস্টান পরিবারে। তিনি ২০০৭ সালে মুসলমান হন। বর্তমানে তিনি হাফিজ নামের এক ছেলে ও সাবেরাহ নামের এক মেয়ের মা। তাহেরা আমেরিকার স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরির সুবাদে নানা মহাদেশ সফর করেছেন। ইসলামের সঙ্গে পরিচয় সম্পর্কে তিনি বলেন : ‘আমেরিকার শিক্ষা বিভাগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোর পরিচয় শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেছে। তারা ইসলামের মূল নীতির নামে আমাকে যা শিখিয়েছে আমার কাছে তা খুবই কষ্টসাধ্য মনে হয়েছে। আমি ছিলাম গোঁড়া খ্রিস্টান। বাবা আমাকে খ্রিস্টধর্মের সব বিধি-বিধান শিখিয়েছিলেন। আমি ২০০৭ সালে উত্তর আফ্রিকা সফরে যাই। সেই সময়টা ছিল রোযার মাস এবং আমি সোমালিয়া, জিবুতি ও ইরিত্রিয়ায় স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করতাম। ইসলামী বিশ্বাসের প্রতি এইসব দরিদ্র দেশের মুসলমানদের গভীর অঙ্গীকার ও দৃঢ়তা আমাকে অভিভূত করত। এই দেশগুলোর আবহাওয়া বেশ গরম ও আর্দ্র হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা পুরো রমযান মাসেই রোযা রাখত ও নামায আদায় করত। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও ইসলামের মূল নীতির প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা দেখে আমি এই ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই।’
মার্কিন নওমুসলিম তাহেরা আরো বলেন : ‘ইসলামের ব্যাপারে মুসলমানদের নিষ্ঠা ও গভীর মমত্ববোধে প্রভাবিত হওয়ার কারণে আমেরিকায় ফিরে এসে ইসলাম সম্পর্কিত বই-পুস্তক পড়া শুরু করি। এ সময় একজন মুসলমানের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় ইসলামী বিধি-বিধান ও শিক্ষা সম্পর্কে বেশ ধারণা অর্জনে সক্ষম হই। ইসলাম ও এর শিক্ষাগুলো আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। এ ধর্মের মধ্যে পাচ্ছিলাম আমার মনের অনেক প্রশ্নের জবাব। আমি মসজিদে যেতাম ও আরবি এতটা শেখার চেষ্টা করতাম যাতে কুরআন পড়া আমার জন্য সহজ হয়। এইসব গবেষণা ও অনুসন্ধানের ফলে আমি ইসলামের দিকে আরো আকৃষ্ট হচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যে, ইসলামই শ্রেষ্ঠ ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। তাই মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।’
তাহেরা আরো বলেন : ‘ইবাদতের বিধি-বিধানগুলো লিখে রাখতাম ও সেসব মুখস্থ রাখার চেষ্টা করতাম। অবশ্য কর্মস্থলে ইসলামী ইবাদত-বন্দেগি করতাম মানুষের দৃষ্টির আড়ালে। নামাযের কিবলার জন্য সব সময়ই দিগদর্শন যন্ত্র ব্যবহার করতাম। দীর্ঘ দিন ধরে আমার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার মুসলমান হওয়ার ও ইবাদতে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি টের পাননি। এরপর যখন জানতে পারলেন যে, আমি মুসলমান হয়েছি তখন খুবই বিস্মিত হলেন। কারণ, একজন শ্বেতাঙ্গ মার্কিন নারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে- এটা ছিল তাঁর ধারণাতীত বিষয়। তিনি ভুলবশত মনে করতেন যে, ইসলাম এমন এক ধর্ম যেখানে পুরুষরা নারীদের কোনো কারণ ছাড়াই মারধোর করে। তাই তিনি আমার ইবাদত-বন্দেগির বিরোধিতা করতেন। সৌভাগ্যবশত এরপর এমন এক ব্যক্তি আমার বিভাগের প্রধান হন যিনি ছিলেন যুক্তির প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল। আর তিনি আমার অবস্থা বুঝতে সক্ষম হন। ফলে তিনি আমাকে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য সময় দিতেন।’
তাহেরা বলেন : ‘আমি বহুদিন হিজাবও করিনি। কারণ, আমি যে পেশায় ছিলাম সেই পেশার কাজের সুবিধার জন্য চুল ঢাকার সুযোগ ছিল না। এছাড়াও আমার ইউনিফর্মের জামার হাতা ছিল সংক্ষিপ্ত। কিন্তু যখন হিজাব পরার মূল কারণ ও লক্ষ্য বুঝতে পারলাম তখন এ দিকে আকৃষ্ট হলাম ও হিজাব করতে লাগলাম।’
পবিত্র কুরআন ও বিশ্বনবী (সা.) ইসলামের দুই প্রধান আকর্ষণ। বিশ্বনবীর মহত্ত্ব যেন এমন এক সমৃদ্ধ ছায়াপথ যাতে রয়েছে লক্ষ-কোটি গ্রহ-তারা। যেমন, মহানবীর মধ্যে ছিল নৈতিকতায় ভরপুর জ্ঞান, তাঁর রাষ্ট্রীয় ও শাসন-দক্ষতার মধ্যে ছিল ন্যায়বিচার ও প্রজ্ঞার মিশ্রণ এবং মর্যাদার সঙ্গে বিনম্রতার সমন্বয়ের মতো অসংখ্য মহতি দিক। আর এ জন্যই যুগে যুগে সত্যসন্ধানীরা ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন বিশ্বনবী (সা.)-এর অতুল মহত্ত্বের কারণে।
তাহেরা এ প্রসঙ্গে বলেন : ‘বিশ্বনবী (সা.)-এর আদর্শ ব্যক্তিত্ব আমাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করেছে। তাঁর মহামহিম ব্যক্তিত্বের পরতে পরতে রয়েছে মানবজাতির জন্য অমূল্য শিক্ষা। তৎকালীন ইহুদিদের প্রতি মহানবীর ন্যায়বিচার আমাকে খুবই প্রভাবিত করে। তিনি প্রতি বছর এক মাস হেরা গুহায় ইবাদত করেছেন।’
তাহেরার দৃষ্টিতে ইসলামী চিন্তাধারার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এ ধর্মের আরেকটি বড় আকর্ষণ। তাঁর মতে পাশ্চাত্য যে বিষয়ে জানে না সে বিষয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে এবং অন্যদের আদর্শকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নিজ মতবাদকেই শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরে। অবশ্য পাশ্চাত্যের সকলেই এমন নন বলে তাহেরা মনে করেন। চাকরির দায়িত্ব পালন উপলক্ষে ইউরোপে সফরের সময় তাহেরা সেখানে বসবাসরত তুর্কি, ইরাকি ও মরক্কোর মুসলমানদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং এ সময় তিনি তাদের ধর্মীয় আচার-আচরণ ও ইসলামের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ হন। তাহেরার মতে পশ্চিমাদের জীবনধারা থেকে যা হারিয়ে গেছে তা হলো নিজের সম্পর্কে আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্ব।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তাহেরা একজন মুসলমানকে বিয়ে করেন এবং ইসলাম সম্পর্কে দিন দিন তাঁর তথ্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তোলেন। তিনি বিশ্বনবী (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইতের সমৃদ্ধ শিক্ষা সঙ্গে পরিচিত হন ও আহলে বাইতের জীবনধারাকে ইসলামী আদর্শের জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখতে পান।
তিনি হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্য আয়োজিত শোকের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা স্মরণ করে বলেন : ‘আমার জীবনে আর কখনও এমন মধুর অভিজ্ঞতা ছিল না। আহলে বাইতের সদস্যদের জীবন-ধারা ও তাঁদের আচার-আচরণ আমার জন্য শ্রেষ্ঠ আদর্শ। তাঁদের জীবনী পড়ে আমি ইসলামের বাস্তবতা সম্পর্কে আরো বেশি বুঝতে সক্ষম হই এবং আমার সিদ্ধান্তে আরো অবিচল হই। আত্মত্যাগের সংস্কৃতিই আমাকে এই দিকে বেশি আকৃষ্ট করে। ইমামগণ ছিলেন এই সংস্কৃতির অলঙ্কার। শাহাদাতের সংস্কৃতি হচ্ছে স্বার্থপরতা ও লোভের সম্পূর্ণ বিপরীত।’
মার্কিন নওমুসলিম নারী তাহেরা ইসলামের প্রধান নীতিমালা, বিশ্বাস, নৈতিকতা, আইন ও ইতিহাস এবং কোরআনের জ্ঞান অর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। আর এ লক্ষ্যেই সংগ্রহ করেন আয়াতুল্লাহ সিস্তানির লেখা বই ‘ইসলামী বিধানমালা’, ইমাম গাজ্জালির বই ‘ধর্মীয় জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন’, আয়াতুল্লাহ আমিনির লেখা ‘আত্মগঠন’ শীর্ষক বই, আহলে বাইতের জীবনী সংক্রান্ত শেখ মুফিদের লেখা বই ‘কিতাবুল ইরশাদ’ ইত্যাদি। তাহেরা মুসলমান হওয়ার আগেই মাওলানা রুমী, ফরিদুদ্দীন আত্তার, হাফেজ ও সাদী’র কবিতা পড়েছিলেন। তাঁদের লেখা ফারসি কবিতার আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য তাহেরাকে অভিভূত করে। আর এরই প্রভাবে তিনি নিজ সন্তানের নাম রাখেন ‘হাফিজ’।
(সংক্ষেপিত; রেডিও তেহরানের সৌজন্যে)
ইমাম আলী ইবনুল হোসাইন যায়নুল আবেদীন (আ.)
সংকলন : মোঃ আশিফুর রহমান
সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইমাম আলী ইবনুল হোসাইন (আ.) ৩৮ হিজরির ৫ শাবান বৃহস্পতিবার পবিত্র মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। এ শুভ সংবাদ হযরত আলী (আ.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সিজদা করেন। তিনি এই নবজাতকের নাম রাখেন ‘আলী’। পরবর্তীকালে ইবাদত-বন্দেগির কারণে তাঁর প্রকৃত নামের পাশাপাশি সকলের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন দু’টি মহান উপাধি দ্বারা। একটি হলো ‘যায়নুল আবেদীন’ (ইবাদতকারীদের সৌন্দর্য) আর অপরটি হলো ‘সাইয়্যেদুস সাজেদীন’ (সিজদাকারীদের নেতা)। ইসলামের এই মহান ব্যক্তিই হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইতের ধারার চতুর্থ ইমাম; পরবর্তী ইমামগণ তাঁরই বংশধারায় এই পৃথিবীতে জন্মলাভ করেছেন। ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর কুনিয়াত বা ডাক নাম হলো আবু মুহাম্মাদ।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) শৈশবের প্রথম কয়েক বছর অতিবাহিত করেন পিতামহ আলী ইবনে আবু তালিবের স্নেহক্রোড়ে এবং পরবর্তীকালে চাচা ইমাম হাসান ও পিতা ইমাম হুসাইনের কাছে লালিত-পালিত হন । তাঁদের কাছ থেকেই তিনি লাভ করেন ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা এবং সেই শিক্ষা নিয়েই নিজেকে তিনি গড়ে তোলেন মহান আল্লাহর প্রতি নিবেদিত একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসাবে।
শৈশব থেকেই তিনি আহলে বাইতের ও তাঁদের অনুসারীদের ওপর বনু উমাইয়্যার অত্যাচার-নির্যাতন প্রত্যক্ষ করছিলেন এবং নবী পরিবারের সদস্য হিসাবে তিনি নিজেও এই নিপীড়ন সহ্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এর মধ্যেই ৫০ হিজরিতে ইমাম হাসান (আ.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাতের ব্যথাও তাঁকে বহন করতে হয়। এরপর কেটে যায় আরো দশটি বছর। অবশেষে ৬১ হিজরির কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা যেন তাঁর ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসাবে দেখা দেয়।
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার সময় ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনায় তিনি তাঁর পিতা ইমাম হুসাইন (আ.), চাচা হযরত আব্বাস (আ.), তাঁর ভাই হযরত আলী আকবার ও আলী আসগারসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং ইমামবংশের অনুসারীদের শাহাদাত প্রত্যক্ষ করেন। অসুস্থতার কারণে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সেই কারণে নিহত হওয়া থেকে রেহাই পান।
শাহাদাতের আগে ইমাম হোসাইন (আ.) শেষ বারের মতো যখন নিজ তাঁবুতে পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে বিদায় নিতে আসেন তখনও হযরত যায়নুল আবেদীন রোগশয্যায় শায়িত। এই অবস্থাতেই ইমাম হোসাইন তাঁর এই পুত্রকে পরবর্তী ইমাম হিসাবে স্থলাভিষিক্ত করে যান।
কারবালার ঘটনার পর ইয়াযীদের বর্বর বাহিনীর হাতে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) লাঞ্ছনার শিকার ও বন্দি হন। নারীদের সাথে তাঁকেও বন্দি করে দামেশকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ইয়াযীদের রাজপ্রাসাদে হযরত যায়নাব (সা. আ.) ও হযরত যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় জনমত বিগড়ে যাবার ভয়ে ইয়াযীদ তাঁদেরকে সসম্মানে মদীনায় পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
মদীনায় ফিরেও ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) চরম নির্যাতনের মধ্যে দিন অতিবাহিত করেন। তাঁর চলাফেরার ওপর আরোপ করা হয় কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং কোন ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। ইমাম যায়নুল আবেদীনকে তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দিয়েছিলেন : ‘আমাদের অবস্থা ফিরআউন বংশীয়দের মাঝে বনু ইসরাইলের ন্যায়- তারা তাদের শিশুদের হত্যা করত এবং তাদের নারীদের ছেড়ে দিত।’
উমাইয়্যা গভর্নর আহলে বাইতের প্রতি অনুগত ও শ্রদ্ধাশীল লোকদেরকে সবসময় হুমকির মধ্যে রাখত। তাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়েছিল। তারা প্রতিটি বাড়িতে তল্লাশি চালাত। আহলে বাইতের প্রতি অনুরক্ত হওয়ার কারণে লোকদেরকে বন্দি করা হতো এবং তাদের অনেককে হত্যা করা হতো।
অন্যদিকে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) কিছুদিন নিজেকে সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। নিভৃতে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) অধিক পরিমাণে নামায পড়তেন, দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকতেন আর ইমাম হোসাইন (আ.)-এর স্মরণে সবসময় চোখের পানি ফেলতেন। ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর নিভৃতে অবস্থান করার পেছনে কিছু কারণও ছিল। যেমন :
১. ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) কোন গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নন- এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে প্রতিষ্ঠা করা। ইয়াযীদের অনুচররা সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল এবং তারা সব সময় ইমামের সাথে দেখা করতে আসা লোকদের প্রতি নজরদারি করত। আর এটাও যাচাই করত যে, ইমাম যায়নুল আবেদীন ইয়াযীদের বিরুদ্ধে কোনরকম গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিনা। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তারা ইমাম কর্তৃক এমন কোন কর্মকাণ্ডের অস্তিত্ব খুঁজে পায় নি।
২. নিভৃতে অবস্থান ও রাজনীতি থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে তিনি ইয়াযীদ ও বনু উমাইয়্যাকে এ ধারণা দেন যে, বর্তমান অবস্থায় রাজনীতির বিষয়ে তাঁর কোন আগ্রহ নেই।
৩. উম্মতের সামনে মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে আদর্শ উপস্থাপন।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর আন্দোলন
কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনার পর ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) তাঁর আন্দোলন শুরু করেন। বনু উমাইয়্যা ও তাদের অনুসারীরা মুসলমানদের দৃষ্টিতে ইমাম হোসাইন ও আহলে বাইতের মর্যাদা এবং ইমাম হোসাইনের আন্দোলনের কারণ সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই অবগত ছিল। তাই তারা ইমাম হোসাইনের আন্দোলনের কারণ সম্পর্কে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করতে চেষ্টা করল যাতে যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা এড়াতে পারে, বিশেষ করে তাদের প্রধান অবস্থান সিরিয়ায়। তারা ইমাম হোসাইনকে একজন বৈধ খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসাবে দেখাতে প্রয়াস পায়। যদি ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এর বিরোধিতা না করেই ছেড়ে দিতেন তাহলে উমাইয়্যাদের অপপ্রচারটাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। আর তাই ইমাম যায়নুল আবেদীন প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি ইমাম হোসাইনের আন্দোলনের কারণ স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন। হযরত যায়নাব, হযরত উম্মে কুলসুমও বনু উমাইয়্যার কুৎসিত রাজনীতির মুখোশ উন্মোচন করে দেয়ার পদ্ধতি গ্রহণ করেন।
বন্দি অবস্থায় সিরিয়ায় উপনীত হলে এক বৃদ্ধ তাঁদের পরাজয় ও ইয়াযীদের বিজয় লাভের জন্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কিন্তু ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) পবিত্র কুরআনের কতিপয় আয়াত থেকে আহলে বাইত তথা নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেন এবং ইয়াযীদের অপকর্মকে প্রকাশ করে দেন। একইভাবে ইয়াযীদের দরবারে ও সিরিয়ার মসজিদেও তিনি নিজের পরিচয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন এবং এতে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
মদীনায় প্রত্যাবর্তনের পর
মদীনায় প্রত্যাবর্তনের পর ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ভিন্ন পদ্ধতিতে তাঁর আন্দোলন কর্মকা- অব্যাহত রাখেন। তিনি এক্ষেত্রে যেসব কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেন সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :
১. জ্ঞানকেন্দ্র স্থাপন : ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) মদীনার মসজিদে নববী ও তাঁর ঘরকে জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত করেন। তাঁর নিকট আগত লোকদেরকে তিনি সত্যিকার ইসলামের জ্ঞান বিতরণ করতে থাকেন।
২. জাল হাদীস ও জাহেলি রীতির পুনঃপ্রচলন রোধ : তিনি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (আ.) এবং আলী (আ.)-এর নিকট থেকে প্রাপ্ত মহানবী (সা.)-এর সহীহ হাদীসগুলো প্রচার করতেন। বনু উমাইয়্যা যেসব জাহেলী রীতির পুনঃপ্রচলন ঘটাতে চাচ্ছিল সেগুলোকে তিনি প্রকাশ করে দেন।
৩. কারবালার ঘটনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা : যেহেতু কারবালার ঘটনা ছিল ইয়াযীদ ও বনু উমাইয়্যার চরিত্র উন্মোচনকারী, অত্যাচারীদের মোকাবিলায় দাঁড়ানোর ভিত্তি এবং ধর্মের পুনরুজ্জীবন, আর এটাই ছিল ইসলামী চরিত্রের মানদণ্ড সেহেতু ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) কারবালার ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করতেন।
৪. ইমাম হোসাইনের স্মরণকে জাগরুক রাখা :
ক. ক্রন্দন করা : ইমাম হোসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীসাথিদের স্মরণ ও তাঁদের জন্য ক্রন্দন করার মাধ্যমে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) মানুষের স্মৃতিতে ইমাম হোসাইনকে জাগরুক রাখেন। তিনি মানুষের মনে ইমাম হোসাইনের জন্য বেদনাবোধ সৃষ্টি করতেন এবং তাদেরকে অন্তর দিয়ে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করতেন। তিনি তাঁর বাড়ির সন্নিকটে একটি জায়গাকে বেছে নেন ইমাম হোসাইনকে স্মরণ করার জন্য।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) কারবালার স্মরণে প্রতিনিয়ত ক্রন্দন করতেন। চোখের পানিতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। যখন তিনি খাবার খেতেন ও পানি পান করতেন তখন কাঁদতেন। নানা উপলক্ষেও। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে তিনি ক্রন্দন করতেন। যখনই মুহররম মাস আসত ইমামের চেহারায় বিষাদের ছায়া আরো ঘনীভূত হতো। যখন তিনি দেখতেন, কোন কসাই পশুকে জবাইয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছে তখন তিনি জিজ্ঞেস করতেন যে, সেটাকে পানি খাওয়ানো হয়েছে কিনা। কসাই ইতিবাচক জবাব দিলে তিনি বলতেন : ‘কিন্তু আমার পিতাকে, আমার পরিবার-পরিজনকে পানি না দিয়ে পিপাসার্ত অবস্থায় শহীদ করা হয়েছে।’ এরপর তিনি ভীষণভাবে ক্রন্দন করতেন।
ইবনে আসাকির তাঁর সূত্রে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-কে প্রশ্ন করা হলো : ‘কেন আপনি ইমাম হুসাইনের জন্য এত অধিক কান্নাকাটি করেন?’ তিনি জবাবে বলেন : ‘আমাকে এজন্য সমালোচনা কর না। কারণ, ইয়াকুব (আ.) তাঁর এক সন্তান নিখোঁজ হওয়াতে এতটা ক্রন্দন করেন যে, তাঁর চোখ সাদা হয়ে যায়। অথচ তিনি জানতেন তাঁর সন্তান জীবিত আছেন। আর আমি আমার চোখের সামনে আমার পরিবারের চৌদ্দজন সদস্যকে জবেহ করে হত্যা করতে দেখেছি। তোমরা কি এ চরম দুঃখ-কষ্টের বিষয়টি আমার মন থেকে মুছে ফেলতে চাও?’ (তারীখে দামেশ্ক, ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) জীবনী অধ্যায়, পৃ. ৫৬)
তবে তিনি এজন্যও কাঁদতেন যেন মুসলমানদের মধ্যে ইমাম হোসাইনের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। লোকজনও তাঁর সাথে ক্রন্দন করে তাঁর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করত এবং ইয়াযীদ ও বনু উমাইয়্যার নিষ্ঠুরতাকে স্মরণ করত। আর এভাবে ইমাম হোসাইনের স্মরণের মধ্য দিয়ে প্রকৃত দ্বীনকে ফিরে পাওয়া ও আনুগত্যের আবহ সৃষ্টির প্রয়াস পেতেন। ইমাম যায়নুল আবেদীন সারা জীবন কারবালার শোকে ক্রন্দন করেছিলেন। আর তাঁর সাথে ক্রন্দনকারীদের সংখ্যাও দিনে দিনে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল।
খ. কারবালায় যিয়ারত : ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) প্রতি বছর কারবালায় যেতেন। তিনি সকলকে কারবালায় যিয়ারত করার জন্য আহ্বান জানাতেন। সফরের জন্য সময় বের করা, সফরের কষ্ট সহ্য করা এবং অর্থ ও শারীরিক শক্তি ব্যয় করার প্রয়োজন হতো। এভাবে তিনি মুসলমানদেরকে কারবালার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করতে চাইতেন।
গ. আশুরার দিবস পালন : ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) প্রতি বছর আশুরার দিবস পালনের জন্য লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি লোকদেরকে এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও বক্তব্য শোনার জন্য উৎসাহিত করতেন যাতে তারা আশুরার ঘটনাকে স্মরণ করে ইসলামের পথে যে কোন প্রকার ত্যাগের জন্য নিজেদেরকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করতে পারে।
৫. সর্বসাধারণের সাথে সংযোগ স্থাপন : পূর্ববর্তী ইমামগণের ন্যায় ইমাম যায়নুল আবেদীন ও উম্মাহর প্রতি ভীষণভাবে মনোযোগী ছিলেন। তাদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে তিনি তাঁদের নিকট একজন দয়ার্দ্র পিতা, একজন জ্ঞানী নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন যিনি উম্মাহর দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম বাকের (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম আস-সাজ্জাদ মদীনার ১০০টি দরিদ্র পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি অনাথ, অভাবী, দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ব্যক্তি এবং যাদের কোন সহায় নেই এমন ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতেন। তিনি নিজেই তাদের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। যাদের স্ত্রী-পরিজন ছিল তারাও ইমামের কাছ থেকে খাবার পেত। শারীরিকভাবে দুর্বল প্রতিবেশীদের জন্য তিনি রাতের বেলা পানি বহন করে আনতেন এবং ক্রীতদাস ক্রয় করে মুক্ত করে দিতেন।
৬. ইমামতের ব্যাখ্যা : ইমামত ও ইমামগণের নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়টি এবং ঐশীভাবে মনোনীত হিসাবে ইসলাম ধর্মে তাঁদের আবশ্যকীয় ভূমিকা ব্যাখ্যা করতেন ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.)। যেমন একটি দোয়ায় তিনি বলেন : ‘হে প্রভু! তোমার আহলে বাইতের ওপর রহমত বর্ষণ কর, যাদেরকে তুমি তোমার (পথে) কর্ম সম্পাদনের জন্য পছন্দ করেছ এবং তাদেরকে তোমার জ্ঞানের সংরক্ষক ও তোমার ধর্মের অভিভাবক করেছ; পৃথিবীর বুকে তোমার খলিফা নিযুক্ত করেছ এবং তোমার জান্নাত লাভের পথ করেছ।’ (হোসাইন বাকের প্রণীত আল-সাজ্জাদ, পৃ. ৫০)
উমাইয়্যাদের প্রতিক্রিয়া ও ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর শাহাদাত
উমাইয়্যা খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান আহলে বাইতের অনুসারীদের দমন-পীড়নের চিন্তা করতে থাকে। এজন্য সে কুখ্যাত হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে কুফার গভর্নর হিসাবে নিয়োগ করে। সে কুফায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, কঠোর হস্তে আহলে বাইতের অনুসারীদের দমন করে, সামান্য সন্দেহের বশবর্তী হয়ে অনেক লোককে সে হত্যা করে।
ইমাম বাকের (আ.) বলেন : ‘তারপর আগমন ঘটে হাজ্জাজের। সে তাদেরকে (আহলে বাইতের অনুসারীদের) নৃশংস পন্থায় হত্যা করত। বিন্দুমাত্র সন্দেহের বশে সে তাদেরকে নির্যাতন করত। অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে, কোন ব্যক্তি হযরত আলীর অনুসারী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দেয়ার চেয়ে নাস্তিক অথবা কাফির বলে পরিচয় দেয়াকে নিজের জন্য উত্তম বলে মনে করত।’
অনেক ঐতিহাসিক লিখেছেন যে, হাজ্জাজ ৯৫ হিজরিতে ইরাকের ওয়াসিত নামক স্থানে মারা যায়। সে ১২০০০০ মুসলমানকে হত্যা করেছিল, ৫০০০০ পুরুষ ও ৩০০০০ নারীকে বন্দি করেছিল। সে পুরুষ ও নারী বন্দিদেরকে একটি জায়গায় বন্দি করে রাখত।
ইমামগণের উপস্থিতিকে বনু উমাইয়্যা নিজেদের জন্য হুমকি হিসাবে মনে করত। তারা এজন্য ভীত-সন্ত্রস্ত থাকত যে, ইমামগণের প্রভাবে একদিন জনগণ তাঁদের নেতৃত্বে সংগঠিত হবে এবং বনু উমাইয়্যার শাসনক্ষমতার পতন ঘটাবে।
আবদুল মালিকের মৃত্যুর পর তার পুত্র ওয়ালিদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। সে ইমাম যয়নুল আবেদীনের সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে ভীত হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারে ইমামকে কেবল ভয়-ভীতি দেখিয়ে এ কাজ থেকে বিরত রাখা যাবে না। তখন সে ইমামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই ষড়যন্ত্রের ফলেই অবশেষে পঁয়ত্রিশ বছর পবিত্র ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর চতুর্থ ইমাম হযরত যায়নুল আবেদীন (আ.) ৯৫ হিজরিতে (৭১২ খ্রিস্টাব্দে) শাহাদাত বরণ করেন। ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান তাঁকে বিষ প্রয়োগ করে শহীদ করে। মদীনার জান্নাতুল বাকী করবস্থানে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-কে সমাহিত করা হয়।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
মুসলিম লেখকগণ প্রতিভা, জ্ঞান এবং ধার্মিকতার জন্য ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ইমাম যুহরী বলেন : ‘আমি এই (মহানবীর) পরিবারের মধ্য থেকে আলী ইবনুল হোসাইনের চেয়ে অধিক জ্ঞানী ও প্রতিভাবান কোন ব্যক্তিকে দেখার সুযোগ পাইনি।’
ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর ‘সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ’ গ্রন্থে বলেন : ‘যায়নুল আবেদীন হলেন এমন ব্যক্তি যিনি তাঁর পিতার জ্ঞান, দুনিয়াবিমুখতা ও ইবাদত উত্তরাধিকার হিসাবে পেয়েছিলেন।’
আস-সহীফা আস-সাজ্জাদিয়া
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর ওপর অধিক কঠোরতা আরোপ করা হলে তিনি আন্দোলনের বিকল্প পন্থা বেছে নিয়েছিলেন। আর সেটা হলো আল্লাহর কাছে নিবেদন পেশ করার জন্য মোনাজাত করা। ‘আস-সাহীফা আল-কামিলাহ’ বা ‘আস-সাহীফা আস-সাজ্জাদীয়া’ বলে খ্যাত তাঁর মোনাজাতের এসব মূল্যবান সংগ্রহ ‘আলে মুহাম্মাদের যাবুর’ বলেও পরিচিত। ‘আস-সহীফা আস-সাজ্জাদীয়া’ গ্রন্থে ৫৭টি দোয়া রয়েছে। এসব দোয়ার মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহর প্রশংসা, মহানবী (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর দরুদ, ফেরেশতাদের প্রতি দরুদ, নবিগণের অনুসারীদের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ চাওয়া, আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাওয়া, অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, শত্রুদের শত্রুতাকে প্রতিহত করার দোয়া ইত্যাদি। এসব মোনাজাতের মাধ্যমে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) মুসলমান ও বিশ্ববাসীর জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
‘রিসালাতুল হুকুক’ (অধিকার পত্র)
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর অন্যতম প্রসিদ্ধ গ্রন্থের নাম হলো ‘রিসালাতুল হুকুক’ (অধিকার পত্র)। এটি অধিকার সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ। এই গ্রন্থে মহান আল্লাহর অধিকার, নিজের প্রতি অধিকার, নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকার, আত্মীয়-স্বজনের অধিকার, প্রতিবেশীর প্রতি অধিকার এভাবে ৫০টি অধিকারের প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) বলেন : ‘তোমার কাঁধে এই পঞ্চাশটি অধিকার রয়েছে যা থেকে তুমি বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না এবং সেগুলো মেনে চলা ও পালন করার চেষ্টা করা আর এ কাজে মহামহিম আল্লাহর সাহায্য চাওয়া তোমার ওপর আবশ্যক।’
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর প্রজ্ঞা ও উপদেশমূলক বাণীসমূহ থেকে
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) তাঁর এক পুত্রকে বলেন : প্রিয় পুত্র আমার ! পাঁচ ব্যক্তি থেকে বিরত থাকবে, তাদের সাথে ওঠা বসা করবে না, তাদেরকে আলাপের সাথি ও পথের সাথি করবে না। সে বলল : হে পিতা! তারা কারা? ইমাম বললেন : কখনই মিথ্যাবাদীর সাথে ওঠাবসা করবে না। কারণ, সে হলো মরীচিকাসদৃশ, দূরকে নিকট এবং নিকটকে তোমার কাছে দূর করে দিবে। কখনই ফাসেক ও খারাপ ব্যক্তির সাথে চলাফেরা করবে না। কেননা, সে তোমাকে এক লোকমা কিংবা তার চেয়েও কম মূল্যে বিক্রি করে দিবে। কৃপণ লোকের সহচর হবে না। কেননা, তার প্রতি তোমার চরম প্রয়োজনের দিনে সে তোমাকে ত্যাগ করবে। কোনো বোকার বন্ধু হয়ো না। সে তোমার উপকার করতে গিয়ে ক্ষতি করে বসবে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথেও বন্ধুত্ব কর না। কারণ, আমি তাকে কোরআনে অভিশপ্ত পেয়েছি।
সম্পাদকীয়
সঠিক শিক্ষা ও উন্নয়নই মুসলিম উম্মাহর পথ
বর্তমানে বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ্ বিরাট জনসংখ্যার এবং বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বিশাল ভূখ-ের অধিকারী। কিন্তু এতদসত্ত্বেও মুসলমানরা একদিকে যেমন দারিদ্র্য ও অশিক্ষায় জর্জরিত অন্যদিকে তারা রাজনৈতিক ও চিন্তাগত দিক থেকে অসংখ্য দল-উপদল ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত। শুধু তা-ই নয়, আল্লাহ তা‘আলা যেখানে মুসলমানদেরকে পরস্পরের ভাই-ভাই হবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে তাদের এ বিভক্তি অনেক ক্ষেত্রেই পারস্পরিক দুশমনিতে পর্যবসিত হয়েছে। এর পিছনে নিহিত মূল কারণ হচ্ছে সঠিক শিক্ষা ও দ্বীনী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব। এর ফলেই একদিকে যেমন মুসলমানদের একাংশ দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে পার্থিবতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, আরেক অংশ পার্থিব শিক্ষা ও প্রয়োজনের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছে, যদিও ইসলাম হচ্ছে এমন একটি দ্বীন যা মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জগতের প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লবকে বিজয়ী করার পিছনে ইসলামের এ সঠিক শিক্ষা অনুযায়ী ইহ-পরকালীন সৌভাগ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যই ছিল চালিকাশক্তি। তাই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান শুরু থেকেই এ লক্ষ্যে স্বীয় অভিযাত্রা অব্যাহত রেখেছে, আর সারা দুনিয়ার ইসলামবিরোধী শক্তির দুশমনি ও তাদের সৃষ্ট বহুবিধ দুরূহ বাধা-বিঘœ সত্ত্বেও স্বীয় সঠিক লক্ষ্যের কারণে এতে যে বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছে তা সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে সুস্পষ্ট।
আল্লাহ্ তা‘আলা কেবল তাওহীদে ঈমানের অভিন্নতার ভিত্তিতে আহ্লে কিতাবের প্রতি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আহ্বান জনানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এমতাবস্থায় তাওহীদ, আখেরাত, খাৎমে নবুওয়াত ও কোরআনে ঈমান, অভিন্ন কিবলা এবং ফরয ও হারাম সংক্রান্ত প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিন্নতার অধিকারী মুসলমানদের বিভিন্ন মায্হাব ও ফিরকার জন্য স্বল্পসংখ্যক বিষয়ে মতপার্থক্য সত্ত্বেও কোরআন মজীদের নির্দেশে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং বিভক্তি ও দুশমনি পরিহার করা যে কত বেশি অপরিহার্য তা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। এ কারণেই হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর নেতৃত্বে ইসলামী ইরান শুরু থেকেই সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে আসছে এবং এ জন্য সম্ভব সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেÑ যে লক্ষ্যে গৃহীত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ পালন। আর বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর অনুসৃত পথে অভিযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন।
অন্যদিকে ইসলাম চায় যে, মুসলমানরা পার্থিব দিক থেকেও সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হোক, আর অনস্বীকার্য যে, অশিক্ষা ও ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি সাধন ব্যতীত কোনো জাতিই পার্থিব দিক থেকে সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতে পারে না। এ কারণেই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এ লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য সম্ভব সমস্ত শক্তি ও সামর্থ্য বিনিয়োগ করে এ ক্ষেত্রে মওজূদ শক্তি-সামর্থ্য অনুপাতে সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক উন্নতি সাধন করেছে- যে সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান সারা দুনিয়ার মানুষেরই কমবেশি জানা আছে।
কিন্তু ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কেবল ইরানী জাতিরই নয়, বরং অভিন্ন ইসলামী উম্মাহ্র অংশ হিসেবে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র ইহ-পরকালীন উন্নতি ও সৌভাগ্য কামনা করে এবং সব সময়ই এ লক্ষ্যে সম্ভব সকল সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রস্তুত ছিল ও রয়েছে। বিশেষ করে হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী মুসলিম জাতিসমূহ এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীসমূহের প্রতি সঠিক দ্বীনী শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নতির দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
এ ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই যে, সঠিক দ্বীনী শিক্ষা ও ইসলামী ঐক্যের জন্যে মাযহাব ও র্ফিক্বাহ্ নির্বিশেষে মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যকার অভিন্ন বিষয়গুলোকে ভিত্তি করতে হবে এবং বিতর্কিত ও গৌণ বিষয়াদির ক্ষেত্রে উন্মুক্ত ‘ইল্মী আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক দূরত্ব হ্রাস করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, কোরআন মজীদে যেখানে কেবল তাওহীদের ভিত্তিতে আহলে কিতাবের সাথে শান্তি ও সমঝোতার আহ্বান জানানো হয়েছে সেখানে মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যকার কতক র্ফিক্বাহ্ ও গোষ্ঠী মুসলমানদের মধ্যে বিদ্যমান ইসলামী ঐক্যের মৌলিক ভিত্তিসমূহের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে কেবল বিতর্কিত বিষয়াদিতে ভিন্ন মতের কারণে অন্যদের বিরুদ্ধে কুফ্রী ফতওয়া জারি করছে, এমনকি হত্যাযোগ্য বলেও রায় দিচ্ছে, আর প্রকৃত দ্বীনী জ্ঞানহীন যুবকদেরকে উস্কে দিয়ে মুসলমানদের রক্তপাত ও তাদের ধনসম্পদের ধ্বংসসাধনের কাজে ব্যবহার করছে এবং কোরআন মজীদে লোকদের ওপর আধিপত্য চাপিয়ে দিতে নিষেধ করা সত্ত্বেও অস্ত্রের জোরে অনিচ্ছুক জনগোষ্ঠীর ওপর ইসলামের নামে স্বীয় শাসন-কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আর কোনো কোনো মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশের সরকার এ কাজে তাদেরকে সহায়তা দিচ্ছে।
আমরা আশা করবো, মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশসমূহের সরকারগুলো এবং সকল মুসলিম গোষ্ঠী ও ফিরকা কোরআন মজীদের নির্দেশন অনুযায়ী সব ধরনের চরম ও প্রান্তিক পন্থা পরিহার করে সঠিক দ্বীনী ও পার্থিব শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং উম্মাহ্র ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল শক্তি-সামর্থ্য বিনিয়োগ করবে।
স্মরণীয় বাণী
মহানবী (সা.) বলেন : আমি মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাকার নির্দেশের পরে মানুষের সাথে বিবাদ থেকে দূরে থাকার মতো আর কোন বিষয়ে এত অধিক নির্দেশিত হই নি।
মহানবী (সা.) বলেন : মানুষের সাথে মানিয়ে চলা ঈমানের অর্ধাংশ। আর তাদের প্রতি নরম ব্যবহার হলো সুখী জীবনের অর্ধাংশ।
মহানবী (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি না জেনে জনগণের মধ্যে ফতোয়া প্রদান করে তার ওপরে আসমান ও জমিনের ফেরেশতারা অভিসম্পাত বর্ষণ করেন।
ইমাম আলী (আ.) তাঁর পুত্র ইমাম হোসাইন (আ.)-কে উপদেশ দেন : প্রিয় পুত্র আমার! প্রত্যেকটি দুর্দশা যার পশ্চাতে বেহেশত থাকে, সেটা দুর্দশা নয়। আর প্রত্যেকটি আনন্দ যার পশ্চাতে দোযখ থাকে, তা আনন্দ নয়। বেহেশতের বিপরীতে যে কোনো নেয়ামতই নগণ্য। আর দোযখের বিপরীতে যে কোনো বিপদই হলো মুক্তি।
ইমাম আলী (আ.) বলেন : দুনিয়ায় নিরাসক্ত হলো সেই ব্যক্তি, হারাম যার ধৈর্যকে লুটে নিতে পারে না আর হালাল তাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে পারে না।
ইমাম হাসান (আ.) বলেন : দোযখে যাওয়ার চেয়ে পৃথিবীতে অপমান বয়ে বেড়ানো সহজতর।
জনৈক ব্যক্তি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছে আল্লাহ্্র এ বাণীটির অর্থ জানতে চাইল : ‘আর তোমার প্রতিপালকের নেয়ামত নিয়ে কথা বল।’ ইমাম তাকে বললেন : আল্লাহ্্ তাঁকে দীনের যে নেয়ামত দান করেছেন সে বিষয়ে বর্ণনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) বলেন : মিথ্যা ছোট হোক আর বড় হোক তা পরিহার করবে, রসিকতার ছলে হোক আর সত্যিকারেই হোক। কারণ, যে ছোট মিথ্যা বলে সে বড় মিথ্যা বলায় সাহসী হয়ে ওঠে।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) বলেন : মহৎ ও বিনয়ী হওয়া ব্যতীত শুধু কুরাইশ বংশীয় বা আরব হওয়ার মধ্যে কোনো মর্যাদা নেই, তাকওয়ার অধিকারী হওয়া ব্যতীত কোনো সম্মান নেই, আর (সঠিক) নিয়ত ব্যতীত কোনো কর্মেরই মূল্য নেই, আর নিগুঢ় জ্ঞান ব্যতীত কোনো ইবাদত নেই। সাবধান! আল্লাহ্্র কাছে সবচেয়ে বিরাগভাজন ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি যে নিজেকে কোনো ইমামের অনুসারী বলে মনে করে, অথচ তাঁর কর্মের অনুসরণ করে না।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : কন্যারা হলো সৎকর্ম আর পুত্ররা হলো নেয়ামত। সৎকর্মের বিপরীতে সওয়াব দেওয়া হয় আর নেয়ামতের বিপরীতে জবাবদিহি করতে হয়।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : মুমিন হলো দুনিয়ায় প্রবাসী, এর লাঞ্ছনায় হতবিহ্বল হয় না আর এর সম্মানের জন্য লোকদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না।
ইমাম আলী ইবনে মূসা আর-রেযা (আ.) বলেন : কোনো বান্দাই প্রকৃতপক্ষে ঈমানের পূর্ণতায় পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ না তিনটি গুণের অধিকারী হবে : দীনে গভীর জ্ঞান, জীবন-জীবিকায় পরিমিতি এবং বিপদে ধৈর্যধারণ।
ইমাম রেযা (আ.)-কে বলা হলো : কেমনভাবে রাত কাটিয়েছেন? তিনি বললেন : প্রভাতে এ অবস্থায় প্রবেশ করেছি যখন আয়ু কমে গেছে, কৃতকর্ম লিপিবদ্ধ হয়েছে, মৃত্যু কাছে আর দোযখ আমাদের পশ্চাতে, যখন জানি না আমাদের কী হবে।
ইমাম হাসান আল-আসকারী (আ.) বলেন : যেসব গোনাহ ক্ষমা করা হয় না তার মধ্যে একটি হলো এরূপ বলা : ‘ইস্! যদি শুধু এটা (গুনাহ) সম্পর্কে জবাবদিহি না করতে হতো।’ অতঃপর ইমাম (আ.) বলেন : লোকদের মাঝে র্শিকের বিচরণ অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে কালো আবরণের ওপরে পিঁপড়ার নিঃশব্দ বিচরণের চাইতেও গোপনতর।
ইরানী প্রবাদবাক্য
ران ملخ پیش سلیمان بردن.
উচ্চারণ : রা’নে মালাখ পীশে সুলাইমা’ন বোরদান
অর্থ : পঙ্গপালের রান সুলায়মানের কাছে নিয়ে যাওয়া।
মর্ম : নিজের উপহার-উপঢৌকন তুচ্ছ জ্ঞান করা। অনুরূপ বলা হয় : “যীরে বে কেরমা’ন বোরদান”- ‘জিরাসমৃদ্ধ কেরমানে জিরা উপহার নিয়ে যাওয়া।’
راه از چاه دانستن.
উচ্চারণ : রা’হ আয চা’হ না দা’নেস্তান
অর্থ : রাস্তা কোন্টা কুয়া কোন্টা চিনতে পারা।
মর্ম : সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অধিকারী হওয়া।
راه باز و جاده دراز.
উচ্চারণ : রা’হ বা’য ও জা’দ্দে দারা’য
অর্থ : রাস্তা খোলা আর সড়ক দীর্ঘ।
মর্ম : কথাটি এ রকম : রাস্তা একেবারে খোলা, মন চাইলে চলে যেতে পারেন, বাধা দেব না।
رسش را درآوردن.
উচ্চারণ : রাসাশ রা’ দার অ’ওয়ার্দান
মর্ম : প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে কারো কাছ থেকে কাজ আদায় করা। কারো জান বের করে ফেলা।
رسم عاشق نیست با یک دل دو دلبر داشتن.
উচ্চারণ : রাস্মে অ’শেক নীস্ত বা’ য়্যক দেল দো দেল্বার দা’শতান
অর্থ : প্রেমিকের নিয়ম নয় এক অন্তরে দুই প্রেমাস্পদ পোষণ করা।
মর্ম : দুই দিকে মন দিলে একটিও হবে না। যে কোনো ব্যাপারে একাগ্রচিত্ত হওয়া চাই, বুঝাতে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
رسوایی به بار آوردن.
উচ্চারণ : রুসওয়া’য়ী বে বা’র অ’ওয়ার্দান
অর্থ : অপমান বয়ে আনা।
মর্ম : কোনো লজ্জাজনক কাজে লিপ্ত হওয়া। মান-সম্মান গোল্লায় যাওয়া।
رشته را پنبه کردن.
উচ্চারণ : রেশতে রা’ পাম্বে কারদান
অর্থ : রশিকে তুলা করা।
মর্ম : সম্পূর্ণ হয়ে গেছে এমন কাজ নষ্ট করে দেয়া। নিজের পরিশ্রমের ফল বিনষ্ট করা। বাড়া ভাতে বালি দেয়া।
رفت ابروش را درست کند چشمش را هم کور کرد.
উচ্চারণ : রাফ্ত অ’বরুশ রা’ দোরোস্ত কোনাদ চাশ্মাশ রা’ হাম কূর কার্দ
অর্থ : গিয়েছিল মান-সম্মান ঠিক করবে, নিজের চোখটাও অন্ধ করেছে।
মর্ম : চেয়েছিল ভালো কাজ করবে, কিন্তু তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। হিতে বিপরীত হওয়া।
সংবাদ বিচিত্রা (বিদেশী সংবাদ)
‘ইরানীরা কখনোই ইসলাম থেকে সরে যাওয়ার শর্ত মেনে নেবে না’-রাহবার
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইরানীরা কখনোই ইসলাম ধর্ম, স্বাধীনতা ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের পথ থেকে সরে আসার শর্ত মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ইসলাম, স্বাধীনতা ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের মতো মৌলিক ইস্যুগুলো থেকে সরে আসার শর্ত ইরানের জনগণ ও কর্মকর্তারা কখনোই মেনে নেবে না। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলায় নিজেদেরকে সুরক্ষিত করতে হবে। এটিই একমাত্র পথ। গত ৭ জানুয়ারি রাজধানী তেহরানে হাজার হাজার মানুষের এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমাদের এমন প্রস্তুতি থাকতে হবে যে, শত্রুরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলেও যাতে আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত না হয়। ইরানের পরমাণু ইস্যু এবং নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন সর্বোচ্চ নেতা। তবে তিনি চলমান পরমাণু আলোচনার বিরোধী নন বলেও ঘোষণা করেন। সম্প্রতি কয়েক জন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইরান পরমাণু ক্ষেত্রে ছাড় দিলেও সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না।
নিউ ইয়র্কে রাহ্বারের প্রবন্ধ ও ভাষণের সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ দ্বীনী ও রাজনৈতিক নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ্ উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর ভাষণ ও তাঁর লেখা প্রবন্ধসমূহের সংকলন গ্রন্থাকারে নিউ ইয়র্ক থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। অুধঃড়ষষধয অষর কযধসবহবর’ং ঠরংরড়হ ড়ভ ওংষধসরপ চযরষড়ংড়ঢ়যরপধষ ঞযবড়ষড়মু ধহফ চৎধীরং ড়ভ এষড়নধষ চবধপব শিরোনামের ২০৪ পৃষ্ঠা আয়তনের এ গ্রন্থটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আমেরিকাস্থ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং নিউ ইয়র্কের অন্যতম গবেষণা ও প্রকাশনা সংস্থা এষড়নধষ ঝপযড়ষধৎষু চঁনষরপধঃরড়হং কর্তৃক যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের ওল্ড্ ওয়েস্ট্বারী ইউনিভার্সিটিতে দর্শনশাস্ত্রের সার্বক্ষণিক শিক্ষক প্রফেসর পারভীয মোরাভেযী এ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন। উল্লেখ্য, প্রফেসর মোরাভেযী নিজে একজন সুপ্রতিষ্ঠিত গ্রন্থকার এবং তিনি ‘দর্শন ও ইসলাম’ ও পাশ্চাত্য দর্শন বিষয়ে অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি বিগত প্রায় ছয় দশক যাবৎ শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত আছেন।
উল্লেখ্য, এষড়নধষ ঝপযড়ষধৎষু চঁনষরপধঃরড়হং একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং এ প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত বিরল ধরনের গ্রন্থাবলি প্রকাশ করে থাকে।
গ্রন্থটি সম্বন্ধে প্রফেসর পারভীয মোরাভেযী বলেন, এ গ্রন্থটি এমন এক সময় প্রকাশিত হচ্ছে যখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা সম্বন্ধে পাশ্চাত্য জগতে যথাযথ ধারণার অভাব রয়েছে। তাই পাশ্চাত্যের সাধারণ লোকদেরকে এ সম্বন্ধে জানানো প-িত ব্যক্তিদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব।
প্রফেসর মোরাভেযী আশা প্রকাশ করেন যে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী সহ মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ এ গ্রন্থটি অধ্যয়নের জন্য সময় ব্যয় করবেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যখন আলোচনা চলছে এমন এক সংবেদনশীল সময়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার চিন্তা-চেতনার সাথে তাঁদের পরিচিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
‘শত্রুর আঁচলের নিচে আশ্রয় নেবেন না’- হুজ্জাতুল ইসলাম কাজিম সিদ্দিকি
ইরানের বিশিষ্ট আলেম হুজ্জাতুল ইসলাম কাজিম সিদ্দিকি বাহরাইনের জমিয়ত আল-ওয়াফাক দলের নেতাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁকে গ্রেফতারের ঘটনা অবৈধ ও অনৈতিক। গত ২ জানুয়ারি তেহরানের জুমআ নামাযের খুতবায় তিনি এই মন্তব্য করেন। সম্প্রতি বাহরাইনের স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ওয়াফাক দলের মহাসচিব শেখ আলী সালমানকে গ্রেফতার করায় সেদেশে গণ-অসন্তোষ আগের চেয়েও জোরদার হয়েছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম কাজিম সিদ্দিকি বলেন, এটা বলা যাবে না যে, বাহরাইনের সংখ্যালঘু সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায় দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, কারণ, দেশটির সরকার শিয়াও নয়, সুন্নিও নয়; বরং এরা হলো পরাশক্তির দালাল। এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে ও মসজিদ ধ্বংস করে বাহরাইনের জনগণের বিপ্লবকে থামানো যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কাজিম সিদ্দিকি ‘মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’ শীর্ষক ইরানের সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া প্রসঙ্গে বলেন, এ মহড়ায় শত্রুদের মোকাবেলায় ইরানের বিধ্বংসী ক্ষমতার নমুনা প্রদর্শিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের প্রতিবেশীদের এ বার্তা দেয়া হয়েছে যে, এতো ব্যাপক মাত্রায় বিজাতীয় শক্তিগুলোর আঁচলের নিচে আশ্রয় নেয়া ঠিক নয়; এ অঞ্চলেরই যথেষ্ট শক্তি রয়েছে; ইসলামী ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এ অঞ্চলে যে কোনো অশুভ তৎপরতাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে সক্ষম।
ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ; নিন্দা করলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
গত ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিন্দা জানান ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেকোন অংশে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ চলুক না কেন তার বিরুদ্ধে আমরা নিন্দা জানাই- তা হোক ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া অথবা ফ্রান্স কিংবা আমেরিকা।’
‘ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ’ উপলক্ষে রাজধানী তেহরানে আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধিদল এ সম্মেলনে অংশ নেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, যারা অন্যায়ভাবে ধর্ম, জিহাদ কিংবা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করে এবং চরমপন্থা ও সহিংসতার মতো ভুল পথে পরিচালিত হয় তারা মূলত ইসলামভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে; পাশাপাশি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এ সময় তিনি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইরানের অবস্থানের কথা ঘোষণা করে বলেন, যেসব দেশ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করছে ইরান তাদের পাশে থাকবে।
ড. রুহানি বলেন, ইরাক, সিরিয়া, লেবাবন, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের জনগণ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করছে। তবে সুখের বিষয় হলো প্রতিদিন তারা এর বিরুদ্ধে সফলতা লাভ করছে।
ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামী বিপ্লবের ৩৬তম বার্ষিকী উদ্যাপন
১১ ফেব্রয়ারি ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৩৬তম বার্ষিকী। ১৯৭৯ সালের এই দিনে মরহুম ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছিল ইসলামী বিপ্লবের ঐতিহাসিক বিজয়। অপরদিকে অবসান ঘটেছিল আমেরিকার মদদপুষ্ট পাহলভি শাসকদের আড়াই হাজার বছরের শাহী স্বৈরশাসনের। ইসলামী মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক নীতিমালার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নতুন এক শাসনব্যবস্থার। ইরানের মুক্তিকামী জনগণ প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের দুই পরাশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাণ বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছিল নিজেদের স্বাধীনতা ও মুক্তি।
প্রতি বছর এই বিপ্লব বার্ষিকীতে সমগ্র ইরানজুড়ে কোটি কোটি মানুষ বিপ্লবের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে। ইরান ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক দেশে ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বাধীন এ বিপ্লবের বার্ষিকী পালিত হয়। এবার ৩৬তম বিপ্লব বার্ষিকীতেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তেহরানের বৃষ্টিঝরা আবহাওয়া উপেক্ষা করে বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশ নিতে রাস্তায় নেমে আসে বিপ্লবপ্রিয় দেশপ্রেমিক লক্ষ লক্ষ জনতা। রাজধানীর আজাদি স্কয়ার পরিণত হয়েছে জনতার মহাসমুদ্রে। বিপ্লবের দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং ইসরাইল-আমেরিকার পতন চেয়ে দেওয়া বিপ্লবী জনতার মুহুর্মুহু স্লোগানে স্লোগানে তেহরানসহ সমগ্র ইরানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। সমবেত জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় নানা স্লোগান : ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক, ইসরাইল নিপাত যাক’, ‘ইসলামী বিপ্লব জিন্দাবাদ, সর্বোচ্চ নেতা জিন্দাবাদ’- এ ধরনের আরও নানা স্লোগান। অনেকের হাতেই ছিল আমেরিকা ও ইসরাইলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড।
বিপ্লব বার্ষিকীতে দেশের সর্বস্তরের জনগণ বিজয় র্যালিতে যোগ দিয়ে বারবার প্রমাণ করেছে তারা বলদর্পী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। যেমনটি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন : ‘ঐক্যবদ্ধ ইরানী জাতি তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্রের যথাযোগ্য জবাব দেবে এবং এই মিছিলে শত্রুদের জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট বার্তা।’ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেন, ‘এক সময় আমরা যুদ্ধের ময়দানে স্বাধীনতা রক্ষা করেছি এবং এখন আলোচনার টেবিলে একই কাজ করছি।’ ড. রুহানি বলেন, ইসলামী বিপ্লবের আদর্শ ও মূলনীতি অপরিবর্তিত থাকবে, যদি বাহ্যিক কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনতে হয় তা হতে হবে ইসলামী শাসনব্যবস্থার আওতায় এবং নির্বাচনী কাঠামোর মধ্যে। তিনি আরো বলেন, ৩৬ বছর আগে বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের জনগণ স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল যা আজ পর্যন্ত অপরিবর্তিত রয়েছে।
ইরানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ইরানের রাজধানী তেহরানের মিলাদ টাওয়ারের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে গত ১-৪ জানুয়ারি ২০১৫ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য পঞ্চম আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াত ও হেফ্য। ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বের ৪৭টি দেশের ৬৬ জন প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন কারী শহীদুল ইসলাম ও হাফেয মোরশেদ আলম।
উভয় বিভাগ থেকে পাঁচজন প্রতিযোগীকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচন করা হয়। প্রতি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারীকে ৩০টি স্বর্ণ মুদ্রা অথবা তার সমপরিমাণ অর্থ পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়।
হেফ্য প্রতিযোগিতায় মিশরের হাফেয মোহাম্মদ আবদুল আযীয নিয়াজী প্রথম স্থান অধিকার করেন। ইরানের হাফেয মোহাম্মাদ জাওয়াদ মোহাম্মাদী মায্দ দ্বিতীয় এবং লেবাননের মাহমুদ আল-কোফরী তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। বাংলাদেশের হাফেয জনাব মোরশেদ আলম চতুর্থ স্থান অধিকার করেন।
তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় ইরানের কারী ওয়াহিদ খাযায়ী প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং মিশর ও ইরাকের কারী যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতা প্রতি দুই বছরে একবার করে অনুষ্ঠিত হয়।
ইরানে শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের যৌথ হাদিসের সমন্বয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া প্রকাশ
গত ৭ জানুয়ারি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত ২৮তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের যৌথ হাদিসের সমন্বয়ে এনসাইক্লোপিডিয়ার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উক্ত সম্মেলন ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি উপস্থিত ছিলেন।
‘মুউসুয়াতুল আহাদিসুল মুশতারাকাতু বাইনাস সুন্নাতি ওয়াশ শিয়াতি’ নামের এনসাইক্লোপিডিয়াটি মুসলিম উম্মাহর বিশ্ব পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসলামিক স্টাডিজ ইন্সটিটিউটে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে সংকলন করা হয়। উক্ত এনসাইক্লোপিডিয়ায় ৫০টিও অধিক তাফসীর এবং অন্যান্য বিষয়, যেমন আকায়েদ, ফিকাহ, রাজনীতি, অর্থনীকি, আখলাক, ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয় সংকলিত হয়েছে যা মোট ৬২ খ-ে মুদ্রিত হয়েছে।
ইরানে মুসলিম-বৌদ্ধ সংলাপে মিয়ানমারের শীর্ষ ধর্মগুরু
বিশ্বে সহিংসতা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তেহরানে অনুষ্ঠিত হয় ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক একটি সংলাপ। এ বৈঠকে যোগ দেন মিয়ানমারের প্রধান বৌদ্ধ ধর্মগুরু অশিন নিয়ানসারা। তিনি বলেন, বিশ্বের সমস্ত সমস্যা ও সহিংসতার উৎস হলো মানুষের অজ্ঞতা। মানুষ যদি অন্য ধর্মগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয় তাহলে তারা সুযোগসন্ধানিদের হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হবে না এবং এর ফলে ধর্মগুলোর মধ্যে সহিংসতাও কমে যাবে।
মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধদের পরিকল্পিত গণহত্যার প্রেক্ষাপটে ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে বহুপাক্ষিক সংলাপের এই আয়োজনকে স্বাগত জানান মিয়ানমারের প্রধান বৌদ্ধ-ভিক্ষু। এ ধরনের সংলাপ ধর্মগুলোর মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি জোরদার এবং উগ্রবাদীদের হাতে ধর্মের অপব্যবহারও রোধ করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তেহরানে ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক সংলাপের আয়োজন করে ইরানের ইসলামী সংস্কৃতি ও দিকনির্দেশনা বিষয়ক সংস্থা। বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার এবং সহিংসতা ও উগ্রবাদ ঠেকানো ছিল এই সংলাপের লক্ষ্য। ইরানের এই সংস্থা ধর্মগুলোর শিক্ষার আলোকে বিশ্বকে সন্ত্রাস ও সহিংসতামুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
তেহরানে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে যোগ দেন মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের সিনিয়র বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ এবং ইরানের মুসলিম চিন্তাবিদরা।
ইরানের ইসলামী সংস্কৃতি ও দিকনির্দেশনা বিষয়ক সংস্থার প্রধান মিয়ানমার ছাড়াও ইরাক ও সিরিয়ায় মুসলমানদের ওপর তাকফিরি-ওয়াহাবীদের সহিংসতার কথাও তুলে ধরেন। তাঁর মতে ধর্ম সম্পর্কে ভ্রান্ত বিশ্বাসই বিশ্বে সহিংসতা ও উগ্রবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর ধর্মের নামে এইসব সহিংসতা চালানো হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতি ঠেকাতে বিশ্বের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে চিন্তাগত ঐক্য প্রতিষ্ঠা জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষ যখন শান্তি বিস্তারের আশায় ধর্মগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছিল তখন বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী চক্রগুলো ধর্মের অপব্যবহার শুরু করে। তারা ধর্মগুলোর মধ্যে বিচ্যুতি ঘটিয়ে ধর্মীয় ফেরকাবাজির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থানে নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।
বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা বিশ্বে অত্যন্ত বেশি। তাই এ দু’টি ধর্মের প্রভাব কমানোর জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেছে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব। ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি আমেরিকা ও ব্রিটেনের একটি পুরনো কৌশল। এ ধরনের বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে মিয়ানমারে বহু সংখ্যক মুসলমানকে হত্যা এবং অনেককে শরণার্থিতে পরিণত করা হয়েছে। মিয়ানমারের মুসলমানদেরকে সেদেশের নাগরিকত্ব দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। এর বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশ মিয়ানমারের মুসলমানদেরকে সেদেশের নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানায়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মুসলমানদেরকে বৌদ্ধদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়ারও দাবি জানান তাঁরা।
উগ্র বৌদ্ধদের দ্বারা পশ্চিম মিয়ানমারে গত দুই বছরে বহু রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়। এই দেশটিতে পশ্চিমা পুঁজিবাদী কোম্পানিগুলোর প্রবেশের পরই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে মিয়ানমারের পুঁজি লুটেরা চক্রের গোপন হাত রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
শার্লি হেবদো সন্ত্রাসবাদের উস্কানি দিচ্ছে : ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বলেছে, ফ্রান্সের ব্যঙ্গ ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো সন্ত্রাসবাদের সমর্থনে কাজ করছে এবং তাদের তৎপরতা নিতান্তই সন্ত্রাসবাদ উস্কে দিচ্ছে। ম্যাগাজিনটিতে নতুন করে মহানবী (সা.)-এর কার্টুন ছাপানোর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারজিয়েহ আফখাম এ কথা বলেন।
গত ১৪ জানুয়ারি সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ম্যাগাজিনটি বার বার মহানবীর কার্টুন ও ইসলামবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে চলেছে। এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করতে এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে তিনি ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।
মারজিয়েহ আফখাম বলেন, ‘ফ্রান্সে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার নিন্দা জানিয়েছে তেহরান; একইসঙ্গে ম্যাগাজিনটির বার বার উস্কানিমূলক কাজও বন্ধ করতে হবে বলে আমরা মনে করি।’ তিনি আরো বলেন, ঐশী ধর্মগুলোর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা এবং নবী-রাসূলদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে মৌলনীতি; ইউরোপের সরকারগুলো এসব বিষয়ে বিশেষ নজর রাখবে বলে ইসলামী ইরান আশা করে। সে কারণে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেয় এমন নীতি সমর্থন করা থেকে সরে এসে ইউরোপীয় সরকারগুলোর উচিত ঐশী ধর্মগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করার নীতি গ্রহণ করা। মারজিয়েহ আফখাম বলেন, ইউরোপীয় সরকারগুলোর ভুল নীতির জন্য বিশ্বের বহু দেশকে খেসারত দিতে হচ্ছে এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তারা তা স্বীকারও করেন।
বার্লিনে ইসলাম-ভীতি সম্পর্কে সম্মেলন অনুষ্ঠিত
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে গত ৬ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) তারিখে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ইসলাম-ভীতি সম্পর্কে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইরানী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও জার্মানির ইসলামিক স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘ইসলাম, ইসলামোফোবিয়া ও চরম পন্থা’ শীর্ষক এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সম্মেলনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইরানের বেশ কয়েক জন মনীষী ও বিশ্লেষক এবং একদল জার্মান ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী অংশগ্রহণ করেন। বার্লিনের হোটেল স্টেগ্লিয্ ইন্টারন্যাশনাল-এ অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ‘চরমপন্থার সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণসমূহ এবং এর ফলাফল’, ‘প্রচারমাধ্যম ও তার একদেশদর্শী নীতি’, ‘পাশ্চাত্যসমাজের ইসলাম-ভীতি ও ফ্যান্টাসি’, ‘ইসলাম ও তার সঠিক অনুধাবন’ প্রভৃতি বিষয়কে কেন্দ্র করে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সম্মেলনে বার্লিনের ইসলামিক স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহ্দী ঈমানীপুর বলেন যে, প্যারিসে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পর লিবারাল এলিটদের মধ্যে ইসলামবিরোধী মনোভাব বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই যে, বেশির ভাগ অমুসলিমেরই ইসলাম ও মুসলিমসমাজ সম্পর্কে খুব সামান্যই ধারণা আছে বা আদৌ কোনো ধারণা নেই। এ কারণেই ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার যুবসমাজের উদ্দেশে লিখিত তাঁর খোলা চিঠিতে ইসলামবিরোধী অপপ্রচারের গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলাম সম্পর্কে ইসলামের মূল তথ্যসূত্র থেকে জানার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জনাব ঈমানীপুর বলেন, যেসব লোক ইসলামের পবিত্র সূত্রের বক্তব্যের অযৌক্তিক ও অমানবিক ব্যাখ্যা করে থাকে তারা সমগ্র মুসলিম জনগণের মধ্যকার অত্যন্ত ক্ষুদ্র কয়েকটি গোষ্ঠী এবং অনেক ক্ষেত্রেই এসব গোষ্ঠী কোনো কোনো দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, গত জানুয়ারি মাসে হাজার হাজার জার্মান নাগরিক ও ধর্মীয় নেতা ইসলাম-ভীতিবিরোধী এক র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন; এদের মধ্যে ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও প্রেসিডেন্ট জোয়াচিম্ গাউক্। এ র্যালিতে প্রদত্ত বক্তব্যে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জার্মানিতে ইসলামবিরোধী তৎপরতার নিন্দা করেন এবং মুসলমানদেরকে বা অন্য কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য জার্মানদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বিশেষভাবে চরমপন্থি পেগিডা (চঊএওউঅ) গ্রুপের ইসলামবিরোধী তৎপরতার নিন্দা করেন।
উল্লেখ্য, পেগিডা গ্রুপ, গ্রুপটির নিজের ভাষায়, পাশ্চাত্যের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করছে। পেগিডা হচ্ছে এ গোষ্ঠীটির জার্মান নামের সংক্ষেপণÑ যার ইংরেজি অনুবাদ হচ্ছে চধঃৎরড়ঃরপ ঊঁৎড়ঢ়বধহং ধমধরহংঃ ঃযব ওংষধসরুধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ডবংঃ.
ডি-৮ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আহ্বান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ডি-৮ গ্রুপের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
সম্প্রতি তেহরানে অনুষ্ঠিত ডি-৮ শিল্পমন্ত্রীদের চতুর্থ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের শিল্প, খনিজ সম্পদ ও বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ রেযা নে‘আমত্যাদেহ্ এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ডি-৮ সদস্যদেশগুলোর মধ্যকার শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পর্কের স্তর আরো উন্নীত করার লক্ষ্যে পরস্পরের মধ্যে নিহিত সম্ভাবনাকে চিহ্নিত করা ও তা কাজে লাগানো এক অপরিহার্য প্রয়োজন।
জনাব নে‘আমত্যাদেহ্ স্মরণ করিয়ে দেন যে, ডি-৮ গ্রুপের সদস্য দেশসমূহের সরকারগুলো পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ঐক্যের ভিত্তিতে আট দেশের এ গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
জনাব নে‘আমত্যাদেহ্ আরো বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের অধিকারী হওয়া ও তা ধরে রাখার বিষয়টি হচ্ছে একটি বহুমুখী বিষয়Ñ কেবল শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমেই যাতে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা (ইসিও) ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ ক্ষেত্রে একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। তিনি আরো বলেন, এ প্রেক্ষাপটে ডি-৮ সদস্যদেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিই হচ্ছে সদস্যেেদশগুলোর মধ্যকার বৈঠক ও সম্মেলন সমূহের লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে তিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ইসলামী ইরান বিগত কয়েক বছরে পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞাসহ বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের বিশেষজ্ঞগণ, গবেষকগণ ও ইঞ্জিনিয়ারদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং আকর্ষণীয় পুঁজি বিনিয়োগের কারণে দেশ পেট্রো-রসায়ন উৎপাদন বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তর, যন্ত্রপাতির উৎপাদন বৃদ্ধি ও নির্মাণ খাতের উন্নয়ন সহ সকল ক্ষেত্রেই বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছে।
উল্লেখ্য, ডি-৮ গ্রুপ হচ্ছে বিরাট জনসংখ্যা অধ্যুষিত আটটি মুসলিমপ্রধান উন্নয়নশীল দেশকে নিয়ে গঠিত একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক সহযোগিতা সংস্থা। বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক এ সংস্থার সদস্য। অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা ডি-৮-এর লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর সদস্যদেশগুলোর অবস্থানের উন্নয়ন, বাণিজ্যিক সম্পর্কের বহুমুখীকরণ ও এ জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে অংশগ্রহণের দ্রুতায়ন ও জীবন মানের উন্নয়ন। বস্তুত ডি-৮ গ্রুপ যেসব দেশকে নিয়ে গঠিত সেদিকে দৃষ্টি দিলে এটা সুস্পষ্ট যে, এটি কোনো আঞ্চলিক সংগঠন নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী জনাব আমির হোসেন আমু বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বিনা ভিসায় প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদের ভ্রমণের সুযোগ দেবে ইরান
ইরান বলেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদের বিনা ভিসায় ইরান ভ্রমণ করতে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে তেহরান। প্রতিবেশী দেশগুলো ভ্রমণে ইরানী নাগরিকদের ভিসার প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাহার করা হলেই একই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ইরান।
ইরানের কনস্যুলার, সংসদ এবং প্রবাসী ইরানী নাগরিক বিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান কাশকাভি এ ঘোষণা দেন। গত ৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য, পর্যটন বা চিকিৎসার জন্য ইরানে সফর সংক্রান্ত এক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে কুয়েতের উদাহরণ তুলে ধরেন ইরানের শীর্ষস্থানীয় এই কর্মকর্তা। কুয়েত সফরের জন্য ইরানী নাগরিকদের ভিসার আর প্রয়োজন হয় না; এ প্রেক্ষাপটে কুয়েতি নাগরিকদের বিনা ভিসায় ইরান সফরের সুযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কাশকাভি আরো জানান, সাধারণ ভিসার জন্য যে পরিমাণ ফি দিতে হয়, স্বাস্থ্য ও পর্যটন ভিসার ফি’র পরিমাণ তার প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে ইরান। আর এর মধ্য দিয়ে বিদেশীদের তেহরান সফরে ইরানের সহযোগিতার মনোভাবের বিষয়টি ফুটে উঠেছে বলে তিনি জানান।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লেবাননের পাশে থাকবে ইরান : ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরান সবসময় লেবাননের পাশে থাকবে বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ ঘোষণা করেছেন। গত ৮ জানুয়ারি ইরানের রাজধানী তেহরানে লেবাননের ধর্মীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন। জাওয়াদ জারিফ বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি লেবাননের অভ্যন্তরে ঐক্য ও সংহতি জোরদারের প্রতি ইরান সমর্থন দিয়ে আসছে।
তিনি আরো বলেন, ইরানের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হলো প্রকৃত ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা এবং সাম্প্রদায়িক বিভক্তির ঊর্ধ্বে উঠে ফিলিস্তিনীদের পাশে থাকা। এ সময় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা শেখ আহমাদ আল-জেইন বলেন, লেবাননের ধর্মীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা সব সময় মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনীদের অধিকার আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
লেবাননের প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্টের মহাসচিব শেখ জাহির আল-জায়িদ। লেবানন ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য ইরানের প্রশংসা করেন তিনি।
‘ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চাপের মুখে পশ্চিমারা’- হেইন্জ গার্টনার
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে চাপের মুখে পড়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের সঙ্গে কাজ করতে চায়। সে কারণে পশ্চিমাদের ওপর এই চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
অস্ট্রিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হেইন্জ গার্টনার এ কথা বলেন। গত ৪ জানুয়ারি ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গার্টনার বলেন, বহু পশ্চিমা কোম্পানি ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এসব কোম্পানি অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে লাভবান হতে পারবে।
অধ্যাপক গার্টনার সম্প্রতি তেহরানে অনুষ্ঠিত উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন। ইরানের উন্নয়নশীল অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, তেহরানের সামনে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসার।
‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ইরাককে সাধ্যমতো সহায়তা করবে ইরান’- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন সালামি
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র সেকেন্ড ইন কমান্ড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ইরাককে সাধ্যমতো সহায়তা করবে ইরান। গত ১ জানুয়ারি ইরাকের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালেদ আল-ওবেদির সঙ্গে তেহরানে বৈঠকের সময় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সংহতি, জাতীয় নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারকে সহায়তার অংশ হিসেবে বাগদাদকে প্রশিক্ষণ এবং উপদেষ্টামূলক সহযোগিতা করা হবে। এ কাজে ইরান সাধ্যমতো সবই করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একই সঙ্গে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাও হস্তান্তর করবে তেহরান।
তাকফিরি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ইরাকের সেনাবাহিনী ও জনগণের সাম্প্রতিক বিজয় অর্জনকে প্রতিশ্রুতিশীল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইরাকের অগ্রগতি এবং প্রবৃদ্ধির বৃহৎ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বে ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব থাকায় আঞ্চলিক এবং বহিঃশক্তিগুলো দেশটির ওপর নজর রাখছে।
এ সময়ে ইরাকের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালেদ আল-ওবেদি বলেন, মুসলিম বিশ্বের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে আইএসআইএল। মুসলিম বিশ্বের পক্ষ হয়ে ইরাক এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে লড়ছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া আইএসআইএল’র বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কথিত জোটের দুর্বল ভূমিকা এবং তৎপরতারও নিন্দা করেন ওবেদি।
সন্ত্রাস নির্মূলে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানালো ইরান ও ইরাক
ইরান ও ইরাক সবক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো বিস্তারের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং গোলযোগপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসের হুমকি মোকাবেলায় ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। ১৩ জানুয়ারি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তেহরান সফরে আসা ইরাকি তেলমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদি আল-মুনতাফিকি। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সম্পর্ক আরো জোরদারের বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে দু’পক্ষ বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে এ অঞ্চলের সব দেশকে একযোগে কাজ করা জরুরি হয়ে উঠেছে।
ইরানের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক কখনই ছিন্ন হয় নি : মারজুক
ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পলিট ব্যুরোর সদস্য আবু মারজুক বলেন, ইরানের সঙ্গে তাঁর সংগঠনের সম্পর্ক কখনই চ্ছিন্ন হয় নি। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাতোলিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে হামাসের নাম বাদ দেয়া, গাযা উপত্যকার পুনর্গঠন এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের অমানবিক আগ্রাসনের বিষয়ে কথা বলেন।
আবু মারজুক জানান, হামাসের প্রতিনিধিদল সবসময় ইরান সফর করে থাকে এবং ইরানের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কখনই ছিন্ন হয় নি। ফিলিস্তিনী আদর্শের প্রতি ইরানের সবসময়ের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে হামাস নেতা বলেন, তেহরান সবসময় ফিলিস্তিনী জনগণকে সমর্থন করে এসেছে এবং সবসময় মনে করে ফিলিস্তিনীদের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আবু মারজুক বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় ফেলে মূলত হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সবুজ সংকেত দিয়েছিল। যাহোক, এখন যে তারা হামাসকে কালো তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে তাদের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমেরিকারও উচিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ আদর্শ অনুসরণ করা।’
গাযার পুনর্গঠন সম্পর্কে হামাসের এ নেতা বলেন, খুবই সীমিত সংখ্যক ঘরবাড়ি ঠিক করা সম্ভব হয়েছে। ফিলিস্তিনী অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাযাকে তাঁদের কাঁধে বিরাট বোঝা বলে মনে করেন।
পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যায় ইসরাইলি চেষ্টা ব্যর্থ করেছে ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে গুপ্ত হত্যার বিষয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। গত ৩ জানুয়ারি এ কথা জানান আইআরজিসি’র প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল বাকেরি।
তিনি জানান, ইহুদিবাদী ইসরাইল গত দুই বছরের মধ্যে একজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে গোপনে হত্যার চেষ্টা চালায়, কিন্তু আইআরজিসি’র নিরাপত্তা কর্মীরা সময়মতো উপস্থিত হওয়ায় সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এর আগে ইরানের যেসব পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে তাঁদের সবাই ইহুদিবাদী ইসরাইলের নিয়োগ করা গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়। ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে সিবিএস নিউজের ড্যান রাভিব এবং ইসরাইলের সাংবাদিক ইয়োসি মেলম্যান বলেন, ইসরাইলের গুপ্তচরেরা ইরানের অন্তত চারজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে।
আইএইএ’র সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে ইরান : আলী আকবর সালেহি
গত ১১ জানুয়ারি ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা বা এইওআই’এর প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেছেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে ইরান।
তিনি বলেন, আইএইএ’র কারিগরি ১৮টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছে ইরান, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের পরমাণু ইস্যুর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসকে যুক্ত করেছে।
পরমাণু ইস্যুকে রাজনীতিকরণের কারণে ছয় জাতিগোষ্ঠী এখনো এ সংক্রান্ত ইরানের জবাবের প্রত্যাশা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছয় জাতিগোষ্ঠী বলেছে, দু’টি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার অবকাশ এখনো আছে, কিন্তু আইএইএ ইরানের প্রায় সব জবাব গ্রহণ করেছে।
আলী আকবর সালেহি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার মধ্য দিয়েই কেবল ইরানের পরমাণু ইস্যুর সুরাহা হতে পারে। তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু ইস্যু মোটেও কারিগরি কোনো বিষয় নয়। কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছার মধ্য দিয়ে তা নিষ্পন্ন হতে পারে।
জার্মানি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে নিয়ে ছয় জাতিগোষ্ঠী গঠিত।
আরো ২টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে ইরান : রুহানি
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, তাঁর দেশ আরো দু’টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী বুশেহরে এ দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। গত ১৪ জানুয়ারি বুশেহর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনকালে এ ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট রুহানি।
ড. হাসান রুহানি বলেন, অন্যান্য দেশের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের থেকে বুশেহর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পার্থক্য রয়েছে। কারণ, এটি হলো ইরানী জনগণের প্রতিরোধের প্রতীক। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও চালু করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, কোনো লক্ষ্য অর্জনে যদি জাতির ইচ্ছা থাকে, তবে জাতি সে অনুযায়ী কাজ করবে এবং তার অধিকার রক্ষা ও লক্ষ্য অর্জনে রুখে দাঁড়াবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, ইরান পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং পরমাণু শক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় তারই উদাহরণ হয়ে উঠেছে এ কেন্দ্র।
বুশেহর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এবং বাড়তি আরো ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা এ কেন্দ্রের রয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উৎপাদনে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষে
বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অঙ্গনে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। ইরান সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আবদুল হোসাইন ফেরেইদুন্ ‘প্রতিরোধমূলক অর্থনীতিতে বিজ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিসমূহের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে এ তথ্য জানান।
তেহরানের ফার্স বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ড. আবদুল হোসাইন ফেরেইদুন্ উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চল্লিশ লাখ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা অধ্যয়ন ও শিক্ষাদানে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মানগত ও সংখ্যাগত উভয় ধরনের উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
নতুন নতুন আইডিয়া উদ্ভাবনে সক্ষম ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ প্রদানে ও বিনিয়োগ উদ্যোগ সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে ড. ফেরেইদুন্ উল্লেখ করেন যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজ নিজ পলিসিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করে এ অগ্রাধিকার বাস্তবায়নের পলিসি গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেন।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই যুগের চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বর্তমান চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রধান অ্যাকাডেমিক বিষয় সমূহ, অভিসন্দর্ভ সমূহ ও গবেষণা প্রকল্প সমূহের অবশ্যই মানোন্নয়ন করতে হবে।
বিপ্লব-পরবর্তীকালে ইরানে সাক্ষরতার হার বেড়েছে শতভাগ
ইরানের সাক্ষরতা আন্দোলনের প্রধান আলি বাকেরযাদে বলেছেন, ইসলামী বিপ্লব পরবর্তীকালে দেশে সাক্ষরতার হার শতকরা একশ’ ভাগ বেড়েছে। গত ২ জানুয়ারি রেডিও তেহরানের সংবাদদাতার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ইরানে সাক্ষরতার উন্নয়নের গতি উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
ইরানে ‘জাতীয় সাক্ষরতা সপ্তাহ’ উপলক্ষে আলি বাকেরযাদে আরও বলেন, নিরক্ষরদেরকে সাক্ষর করে তোলার লক্ষ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণামূলক বিচিত্র কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
বিদেশী ৪০ কোম্পানি ইরানের গ্যাস শিল্পে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গ্যাস শিল্প খাতে অন্তত ৪০টি বিদেশী কোম্পানি পুঁজি বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছে। গত ৭ জানুয়ারি এ কথা জানান ইরানের জাতীয় গ্যাস কোম্পানির প্রধান আসগার সোহেলিপুরি।
ইরানের এ কর্মকর্তা জানান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, চীন ও রাশিয়ার এসব কোম্পানি ইরানে বিনিয়োগের বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহী। তিনি আরো জানান, ইরানের গ্যাস খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে এসব কোম্পানি ইরানী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি বৈঠক করেছে।
আসগার সোহেলিপুরি বলেন, এসব কোম্পানি মূলত পাইপ তৈরি এবং শোধনাগারের উন্নয়ন ও গ্যাস প্রেসার বুস্টার স্টেশন তৈরি করে থাকে। তিনি জানান, ইরান অন্তত চারটি গ্যাস ট্রাংকলাইনে বিনিয়োগ আনার চিন্তা করছে।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের অধিকারী দেশ।
ইরানে পাওয়া গেল নতুন সোনার খনি
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদ প্রদেশে আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন সোনার খনি। ইরানের শিল্প, খনি ও বাণিজ্য সংস্থার প্রাদেশিক প্রধান রাজিয়েহ আলী রেযায়ি গত ৬ জানুয়ারি এ তথ্য জানান। এটি হচ্ছে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত পঞ্চম সোনার খনি।
নতুন এ সোনার খনির অবস্থান হচ্ছে মাশহাদ প্রদেশের রাজধানী থেকে ২১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে কাশমার শহরের কাছে। সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী নতুন এ খনিতে ৮৮৯ হাজার টন স্বর্ণপাথর রয়েছে।
খনিটি আবিষ্কারের জন্য ইরান স্থানীয় মুদ্রায় ১৪০ কোটি রিয়াল খরচ করেছে। শিগগিরি সেখান থেকে উৎপাদনের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পারস্য উপসাগরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর নতুন র্পামিডা ক্রু-বোটের যাত্রা শুরু
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী পারস্য উপসাগরে তার নতুন র্পামিডা ক্রু-বোট নামিয়েছে। নতুন মডেলে দেশের অভ্যন্তরে নির্মিত এ বোটটি গত ২৯ জানুয়ারি (২০১৫) তারিখে পারস্য উপসাগরে যাত্রা শুরু করে। ইসলামী বিপ্লবের রক্ষী বাহিনী (আইআরজিসি)-এর নৌবাহিনীর অধিনায়ক রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভী-র উপস্থিতিতে দক্ষিণ ইরানের বন্দর নগরী বুশেহ্র থেকে এটিকে পারস্য উপসাগরের পানিতে নামানো হয়।
বার্তা সংস্থা সেপাহ্ নিউজ পরিবেশিত সংবাদ অনুযায়ী র্পামিডা-৬ নামক এ হাল্কা নৌযানটি যাত্রী ও সরঞ্জাম পরিবহণের উপযোগী করে তৈরি একটি বিশেষ ধরনের নৌযান। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল গতির অধিকারী এ নৌযানটি একবারে ৭৩ জন যাত্রী ও আট জন ক্রু বহনে সক্ষম।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান র্পামিডা সিরিজের প্রথম নৌযান র্পামিডা-১ নির্মাণ করে ২০১০ সালে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামী ইরান দেশের অভ্যন্তরে নির্মিত বেশ কয়েকটি সাবমেরিন, জাহায ও ‘জামারান’ নামক ডেস্ট্রয়ার সহ কয়েকটি যুদ্ধজাহায চালু করে। উল্লেখ্য, জামারান ডেস্ট্রয়ার হচ্ছে তরঙ্গবিক্ষুব্ধ সমুদ্রে চলতে সক্ষম একটি য্দ্ধুজাহায। ইরানী বিশেষজ্ঞগণ এ যুদ্ধ জাহাযটির ডিজাইন তৈরি করেন ও এটি নির্মাণ করেন এবং এটি হচ্ছে স্টেট্ অব্ দি আর্ট নেভিগেশন যন্ত্রপাতি ও জটিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুসজ্জিত একটি যুদ্ধজাহায।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এ পর্যন্ত ফাতেহ্, গার্দী, কায়েম, নহাঙ্গ, তারেক ও সীনা নামক সাবমেরিনসহ দেশের অভ্যন্তরে নির্মিত বিভিন্ন শ্রেণির বহু উন্নত মানের সাবমেরিন সমুদ্রে নামিয়েছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কর্তৃক ‘সায়েকা’ জঙ্গী জেট বিমানের ব্যাপক উৎপাদন শুরু
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে ডিজাইনকৃত ও নির্মিত ‘সায়েকা’ নামক জঙ্গী জেট বিমানের ব্যাপক উৎপাদন শুরু করেছে। ইরানী বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসাইন চিত্ফোরূশ গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেন যে, সায়েকা জঙ্গী জেট বিমানের ব্যাপক উৎপাদন ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ইরানী বিমান বাহিনী স্বীয় বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক স্কোয়াড্রন সায়েকা জঙ্গী জেট বিমান উৎপাদন করেছে। তিনি জানান যে, এ বিমানগুলো ইতিমধ্যেই দেশের আকাশ সীমানায় অনবরত তথ্য সংগ্রহ মিশনের কাজ করে যাচ্ছে।
জেনারেল চিত্ফোরূশ বলেন, ইরানী বিমান বাহিনীতে এ নতুন জঙ্গী জেটগুলো যুক্ত হওয়ার ফলে এগুলো ইরানকে এ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তিনি আরো বলেন, দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনে ভবিষ্যতে পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে ইরানী বিমান বাহিনী এ বোম্বার বিমানের আরো মানোন্নয়ন করবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে একান্তই প্রাথমিক পর্যায়ের এক ধরনের জঙ্গী বিমান হিসেবে সায়েকা বিমান নির্মাণের তথ্য প্রকাশ করা হয়। পরে ২০০৬ সাল নাগাদ এটি অভিযানে ব্যবহারযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত হয়। সায়েকা হচ্ছে ইরানের অভ্যন্তরে নির্মিত জঙ্গী বিমানগুলোর মধ্যকার দ্বিতীয় ধরনের জঙ্গী বিমানÑ যাকে অনেকে ইরানী এফ-১৮ জঙ্গী বিমান বলেও উল্লেখ করে থাকেন।
এ বোম্বার বিমানটি আকাশে শত্রু পক্ষের বিমান ও ভূমিতে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারূদ বহন করতে সক্ষম।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অনেকগুলো বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অধিকারী হয়েছে। তবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার বহু বার ঘোষণা করেছে যে, তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে হুমকি সৃষ্টি করা নয়, বরং পুরোপুরি নিরোধমূলক।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রেকর্ড পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ঘোষণা করেছে যে, গত ২০১৩ সালের জুন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ইরান তার দক্ষিণ র্পাস্ গ্যাস উৎপাদন এলাকার পাঁচটি অগ্রাধিকারভিত্তিক গ্যাস প্রকল্প থেকে গড়ে দৈনিক মোট দশ কোটি পঞ্চাশ লাখ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করেছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি (এনআইওসি)-এর পক্ষ থেকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) তারিখে এ তথ্য ঘোষণা করা হয়। এনআইওসির ঘোষণায় আরো উল্লেখ করা হয় যে, উক্ত প্রকল্পসমূহের ১২, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ফেস্-এর উৎপাদন আগামী এপ্রিল (২০১৫)-এর আগেই শুরু হবে এবং এর ফলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের দৈনিক গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ আরো দেড় কোটি ঘনফুট বৃদ্ধি পাবে। এনআইওসি-র এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়ে একে ইরানের তেলশিল্পের ইতিহাসের এক নযিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করা হয়।
কোম্পানি আরো জানায় যে, গত বছর শীতকালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান প্রায় ১৬ কোটি ঘনমিটার গ্যাস ঘাটতির সম্মুখীন হয়। দক্ষিণ র্পাস্-এর পাঁচটি অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদিত হওয়ার ফলে চলতি শীত মওসূমে ইরানে গ্যাসের কোনো ঘাটতি দেখা দেবে না।
এনআইওসি-র বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় যে, এ কোম্পানি আগামী এপ্রিল (২০১৫)-এর আগেই আরো সাতটি নতুন তেল-গ্যাস প্লাটফর্ম চালু করবে; এগুলোর মধ্যে তিনটি হবে ১২ নং ফেস-এর প্লাটফর্ম ও বাকি চারটি হবে ১৫ ও ১৮ নং ফেস্-এর প্লাটফর্ম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয় যে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মোট প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১০ কোটি ঘনমিটার বৃদ্ধি পাবে। এরপর ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের আগে দৈনিক গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ আরো ১০ কোটি ঘনমিটার বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পারস্য উপসাগরে অবস্থিত দক্ষিণ র্পাস্ গ্যাসক্ষেত্রের আয়তন ৯ হাজার ৭০০ বর্গ কিলোমিটার এবং এর মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উপকূলীয় পানিসীমায় এবং বাকি ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা কাতারের উপকূলীয় পানিসীমায় অবস্থিত। প্রাক্কলিত হয়েছে যে, এ গ্যাসক্ষেত্রটিতে বিপুল পরিমাণ প্রকৃতিক গ্যাস মওজূদ রয়েছে যা বিশ্বের মোট গ্যাস মওজূদের শতকরা আট ভাগ এবং আনুমানিক এক হাজার আটশ’ কোটি ব্যারেল কন্ডেন্সেট্।
লাইট্ থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর উৎপাদনে ন্যানোফাইবার ব্যবহারে ইরানী বিজ্ঞানীদের সাফল্য
তেহরানের আমীর কাবীর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ইরানী বিজ্ঞানিগণ থার্মাল্ ইন্স্যুলেটরের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এর উৎপাদন ব্যয় ও চূড়ান্ত মূল্য হ্রাসের লক্ষ্যে এর কাঠামোতে ন্যানোফাইবার ব্যবহারের গবেষণায় সাফল্যের অধিকারী হয়েছেন।
ইরানী বিজ্ঞানীদের এ গবেষণার ফলে একদিকে যেমন এ ধরনের ইন্স্যুলেটরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে এর ঘনত্ব ও ওজন হ্রাস পেয়েছে। ফলে এ দ্রব্যটি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যাবে।
উল্লেখ্য, সাধারণভাবে যেসব থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে নিম্ন কার্য ক্ষমতা, বেশি ওজন ও পুরুত্ব, বড় আকার ও উচ্চ উৎপাদন ব্যয় সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও দুর্বল দিক রয়েছে। এ সব সমস্যা ও দুর্বল দিকের কথা বিবেচনা করে ইরানী গবেষকগণ এতে ন্যানো দ্রব্যাদি ব্যবহার করে এর মধ্য থেকে অন্তত কতগুলো সমস্যা ও দুর্বল দিকের নিরসনের জন্য চেষ্টা চালান এবং তাতে সাফল্যের অধিকারী হন।
এ দ্রব্যটি প্রধানত ভবন নির্মাণ শিল্পে মেঝেতে থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর হিসেবে, বিশেষ করে বিল্ডিং ভাল্বে ও এনার্জি লস্ হ্রাস করণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এটি হাসপাতালে ব্যবহার্য স্থানান্তরযোগ্য টেম্পারেচার কন্ট্রোলিং বক্সেও ব্যবহার করা যাবে।
পূর্ব থেকে প্রচলিত একই ধরনের গবেষণাসমূহে সাধারণত ন্যানো-ক্লে ও এয়ারোজেল্ ন্যানো-কম্পোজিট্স্ সমৃদ্ধ থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর ব্যবহার করা হয়। এ সব দ্রব্য ব্যবহার করে যথাযথ থার্মাল্ ইন্স্যুলেটর উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে ইন্স্যুলেটরের ওজন ও পুরুত্ব হ্রাসের বিষয়টি চিন্তা করা হয় নি। এ কারণে এ পণ্যটির পক্ষে বাজারে বিদ্যমান থার্মাল ইন্স্যুলেটরের সাথে প্রতিযোগিতা করা সম্ভবপর হয় নি। কিন্তু আবিষ্কৃত এ সর্বশেষ ধরনের ইন্স্যুলেটরের পক্ষে খুব সহজেই বাজারে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব হবে।
যদিও এ গবেষণার ফলে উৎপাদিত নমুনাসমূহের কার্যক্ষমতা প্রচলিত থার্মাল্ ইন্স্যুলেটরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি এবং এর মূল্যও কম তথাপি সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ এখানেই থেমে যেতে প্রস্তুত নন, বরং তাঁরা এটির কার্য ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি এবং এটির উৎপাদন ব্যয় ও চূড়ান্ত মূল্য আরো হ্রাস করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
এ গবেষণার ফলাফল অফাধহপবং রহ চড়ষুসবৎ ঞবপযহড়ষড়মু-এর ৩৩তম ভলিউমের ২০১৪ ক্রমিক সংখ্যার ২১৪৪০-১ থেকে ২১৪৪০-৮ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে।
পেট্রো-রসায়নের কাঁচামাল হিসেবে শিল্পবর্জ্য ব্যবহারে ইরানী গবেষকদের সাফল্য
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গবেষকগণ ক্ষতিকর ও বিষাক্ত শিল্পবর্জ্যকে পেট্রো-রসায়ন শিল্পে ব্যবহার্য অন্যতম মূল্যবান কাঁচামালে পরিণত করার ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছেন।
এতদসংক্রান্ত গবেষণা প্রকল্পের প্রধান হামীদরেযা বোযোর্গযাদেহ্ বলেন, ‘আমাদের গবেষকগণ শিল্পবর্জ্যরে জন্য একটি প্লাস্মা গ্যাসিফিকেশন প্রকল্প পরিচালনা করছিলেন এবং আমরা ইতিমধ্যেই একটি রিঅ্যাক্টরের সাহায্যে বিপজ্জনক বর্জ্য থেকে সিন্থেসিস্ গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি। এ গ্যাস পেট্রো-রসায়ন শিল্পে ডিজেল ও পেট্রোল উৎপাদনের কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’
তিনি বলেন, ইরানী গবেষকদের উদ্ভাবিত প্রক্রিয়ার সাহায্যে শহর এলাকার সব ধরনের কঠিন বর্জ্য এবং শিল্পবর্জ্য, চিকিৎসাবর্জ্য, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অন্য যে কোনো ধরনের বর্জ্য এবং ধাতব ও কাচের বর্জ্যকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর (২০১৪) তারিখে সমাপ্ত চলতি ইরানী বছরের প্রথম ছয় মাসে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ৫১০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের ৭৮ লাখ টন প্রেট্রো-রসায়ন সামগ্রী রফতানি করেছে। ২০ মার্চ ২০১৪ তারিখে সমাপ্ত বিগত ইরানী বছরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মোট চার কোটি টন প্রেট্রো-রসায়ন সামগ্রী উৎপাদন করে যা থেকে ৯০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করা হয়।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বিশ্বের প্রধান তেল রফতানিকারক দেশসমূহের অন্যতম এবং চলতি ইরানী বছরে পেট্রো-রসায়ন সামগ্রী রফতানি আয় এক হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান স্বীয় প্রেট্রো-রসায়ন সামগ্রী রফতানির আওতা ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের অবসান ঘটালো ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গবেষকগণ প্রোস্টেট ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন করে এ ময়দানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত ওষুধের একাধিপত্যের অবসান ঘটালো। ইরানের পলিমার অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ এ ওষুধ উদ্ভাবন করেন।
পলিমার অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রধান মেহ্দী নিকুমানেশ লিউপ্রোলাইড্ এসিলেট্ প্রক্রিয়ার সংবাদ প্রকাশ করে বলেন, এটি হচ্ছে প্রোস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসায় এক মাসের জন্য ইনজেক্ট্ করে ব্যবহারোপযোগী ওষুধÑ যার ব্যবহার এ রোগের জন্য ব্যবহার্য আমেরিকান ওষুধের অনুরূপ।
নিকুমানেশ আরো উল্লেখ করেন যে, ইরানে তৈরি এ ওষুধটি প্রোস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার ছাড়াও নারীদের ইউটেরাইন্ ফিব্রয়ড্ ও বন্ধ্যাত্ব সংশ্লিষ্ট রোগসমূহের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘এ ওষুধটি ইতিপূর্বে কেবল আমেরিকায় উৎপাদিত হতো এবং এটির দাম প্রায় চারশ’ ইউরো; এখন আমরা আমাদের দেশে তৈরি এ ওষুধ দ্বারা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ইয়েমেন ও সিরিয়ার ন্যায় অন্যান্য দেশেও রফতানি করতে পারব।’
তিনি বলেন, এ ধরনের ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ এবং ইরানে নব উৎপাদিত এ ওষুধটি গুণ ও মানের দিক থেকে আমেরিকায় উৎপাদিত এ ধরনের ওষুধের অনুরূপ।
ইরানী বিজ্ঞানী কর্তৃক কম খরচে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন
ইরানী বিজ্ঞানী রেযা আসাদপুর তাঁর সহকর্মীদের সহযোগিতায় কম খরচে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় পেরোভ্স্কাইট্ ক্রিস্ট্যাল্ থেকে উন্নত মানের সোলার সেল তৈরি করা সম্ভব হবে। আসাদপুর ও তাঁর সহকর্মিগণ লস্ আলামোস্ ন্যাশন্যাল ল্যাবোরেটরিতে গবেষণা চালিয়ে এ প্রক্রিয়াটি উদ্ভাবন করেন।
উক্ত গবেষকগণ এমন একটি নতুন সলিউশন্-বেস্ড্ হট্-কাস্টিং টেকনিক উদ্ভাবন করেছেন যার ফলে বড় আয়তনের পেরোভ্স্কাইট্ ক্রিস্ট্যাল্ থেকে উন্নত মানের পুনঃউৎপাদনকারী সোলার সেল তৈরি করা সম্ভব হবে।
লস্ আলামোস্-এর এ প্রকল্পের পরিচালক বিজ্ঞানী আদিত্য মোহিত্ বলেন, এ পেরোভ্স্কাইট্ ক্রিস্ট্যাল্সমূহ ভবিষ্যতে কম ব্যয়সম্পন্ন সোলার-বেস্ড্ ক্লিন গ্লোবাল এনার্জি উৎপাদনের জন্য আশা ব্যঞ্জক পথ তৈরি করে দেবে।
উল্লেখ্য, উন্নত মানের উচ্চ তাপমাত্রাবিশিষ্ট ক্রিস্ট্যাল্-গ্রোথ্ প্রক্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত হাই-পিউরিটি, লার্জ-এরিয়া ওয়ার্ফে-স্কেল্ সিঙ্গল্ ক্রিস্ট্যালাইন্ সেমিকন্ডাক্টরের সাহায্যে স্টেট্-অব্-দি-আর্ট ফটোভোল্টাইক্স্-কে ভবিষ্যৎ কার্যকর সোলার প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। জৈব ও অজৈব পেরোভ্স্কাইট্ দ্বারা তৈরি সোলার সেল সিলিকনের অনুরূপ এফিসিয়েন্সি প্রদান করবে, কিন্তু এতে কতক উল্লেখযোগ্য ঘাটতি আছেÑ যা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক উৎপাদনের সুযোগকে সীমিত করে দেয়। লস্ আলামোসের আবিষ্কৃত টেকনিক এ ব্যর্থতাকে সাফল্যের সাথে দূরীভূত করে দিয়েছে।
উক্ত গবেষকগণ বড় আকারের ক্রিস্ট্যাল্ গ্রেইন্ সহ পেরোভ্স্কাইট্ উপাদান দ্বারা প্ল্যানার সোলার সেল তৈরি করেছেন যা পেরোভ্স্কাইট্-বেস্ড্ লাইট্-টু-এনার্জি কনভার্সন্ ডিভাইস্ সমূহের অঙ্গনে শতকরা ১৮ ভাগ কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।
ইরানী বিজ্ঞানিগণ প্রাণিদেহে ড্রাগ্ ডিস্ট্রিবিউশনের ইমেজ তৈরির থ্রি-ডি ডিভাইস্ তৈরি করেছেন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একদল বিজ্ঞানী প্রাণিদেহে ড্রাগ্ ডিস্ট্রিবিউশনের ইমেজ তৈরির থ্রি-ডি ডিভাইস্ উদ্ভাবন করেছেন। তাঁরা আশা করছেন যে, ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেট্ লাভ করার পর এ ডিভাইস্টি ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা হবে।
উক্ত প্রকল্পের পরিচালক ড. সাদীকাহ্ হেজাযী বলেন, ফ্লুরেসেন্স্ মলিকুর্লা টোমোগ্রাফি কোড্-নাম বিশিষ্ট এ ডিভাইস্টি পাণিদেহে ড্রাগ্ ও মেডিসিন্ ডিস্ট্রিবিউশন সম্বন্ধে অনুসন্ধান চালানোর কাজে ব্যবহার করা হবে এবং এর ফলে প্রাণিদেহে ক্যান্সার অনুসন্ধানে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।
মিসেস সাদীক্বাহ্ হেজাযী জানান, বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক্ ও মেক্যানিক্যাল্ পার্ট্স্ দ্বারা এ ডিভাইস্টি তৈরি করা হয়েছে। যে প্রাণির দেহে অনুসন্ধান চালানো হবে সেটির শরীরে অ্যানেস্থেসিয়া ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগের পর সেটিকে এ ডিভাইস্টির মাঝে রাখা হবে। এরপর ডিভাইস্টির রোটেটিং ফির্ল্টা প্রাণিটির শরীরের চারদিকে ঘুরতে থাকবে এবং উক্ত প্রাণিদেহে বিদ্যমান ড্রাগ ডিস্ট্রিবিউশনের থ্রি-ডি চিত্র গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, এ ডিভাইস্টির ইমেজিং সিস্টেম্টি ৪৭৩, ৫৩২ ও ৭৬৯ ন্যানোমিটার দীর্ঘ ডিওড্ লের্সা দ্বারা তৈরি করা হয়েছে এবং এর আউট্পুট্ হচ্ছে ২০ এম্এম্।
ডিভাইস্টি লেসার ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট প্রাণিদেহের প্রতিটি লেয়ারের স্ক্যান্ করবে ও ইমেজ তৈরি করবে। ফান্ডামেন্টাল্ সায়েন্স্, বায়োকেমিস্ট্রি ও ইমিউনোলোজি নিয়ে গবেষণারত গবেষকগণ তাঁদের গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনার কাজে এ ডিভাইস্টি ব্যবহার করতে পারবেন।
ডিভাইস্টি কেবল ইঁদুর সহ ছোট প্রাণিদেহের ড্রাগ্ ডিস্ট্রিবিউশন নির্ণয়ের কাজে ব্যবহার করা যাবে এবং খরগোশ বা তার চেয়ে বড় প্রাণির জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এটিকে ইউরোপীয় সার্টিফিকেট্ লাভের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।
ইরানী বিজ্ঞানীদের সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষতি সম্ভাবনা চিহ্নিতকারী নিজস্ব শেকিং ট্যাব্ল্ উদ্ভাবন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজ্ঞানিগণ সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষতি সম্ভাবনা চিহ্নিতকারী নিজস্ব শেকিং ট্যাব্ল্ উদ্ভাবন করেছেন। সম্প্রতি তেহরানের আমীর কাবীর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষকগণ এ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এ যন্ত্রটি ব্যবহার করে যে কোনো স্থানে কোনো ভবন নির্মাণের আগেই সেখানে সম্ভাব্য ভূমিকম্পে পরিকল্পিত ভবনটির সর্বোচ্চ ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে যার ফলে ভবনটিকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্প রোধক করে নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ইরান হচ্ছে সেইস্মিক্ ফল্ট্ লাইনে অবস্থিত একটি দেশ যেখানে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং মাঝে মাঝে বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়া ছাড়াও দেশের কোথাও না কোথাও গড়ে প্রতিদিন কম পক্ষে একটি করে হাল্কা ধরনের ভূকম্পন সংঘটিত হয়ে থাকে।
সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষতি-সম্ভাবনা চিহ্নিতকারী এ নিজস্ব শেকিং ট্যাব্ল্ উদ্ভাবনকারী গবেষক র্ফাযাদ্ হাতামী বলেন, এ যন্ত্রটি কোনো ভবন কার্যত নির্মাণের আগে ব্যবহার করা হয় এবং এর ফলে ভবনটির ডিজাইন্ খুব সূক্ষ্মভাবে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়; এভাবে সংশ্লিষ্ট ভবনটিকে উঁচু মানের ভূমিকম্প রোধক ভবন হিসেবে নির্মাণ করা সম্ভবপর হয়।
আমীর কাবীর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জনাব হাতামী জানান, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার হাতে শেকিং ট্যাব্ল্ প্রযুক্তি রয়েছে। বর্তমানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে শেকিং ট্যাব্ল্-এর তিনটি মডেল রয়েছে যেগুলো বিদেশে তৈরি। আর তিনি যে যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন এটি হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে নির্মতব্য প্রথম শেকিং ট্যাব্ল্ মডেল।
তিনি বলেন, এ শেকিং ট্যাব্ল্-এর সাহায্যে কোনো এলাকায় পূর্ব থেকে বিদ্যমান ভবনসমূহের মধ্য থেকে যে কোনো পুরো ভবনকে সেইস্মিক্ ওয়েভের আওতায় এনে সম্ভাব্য প্রকৃত ভূমিকম্পে ভবনটির সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায় এবং এ তথ্য ব্যবহার করে সেখানে নির্মিতব্য নতুন ভবনসমূহকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্প রোধক করে নির্মাণ করা সম্ভব।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ‘টাইপ্-২ ডায়াবেটিস্’ চিকিৎসার ওষুধের ক্ষেত্রে জার্মানির একাধিপত্যের অবসান ঘটালো
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একটি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি ‘টাইপ্-২ ডায়াবেটিস্’ রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ উৎপাদনে সাফল্যের অধিকারী হয়ে এ ক্ষেত্রে জার্মানির এ পর্যন্তকার একাধিপত্যের অবসান ঘটালো। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে একমাত্র জার্মানিতেই এ রোগের চিকিৎসার ওষুধ উৎপাদিত হতো।
ওষুধটির আবিষ্কারক ও উৎপাদনকারী আবীদী ফার্মাসিউটিক্যাল্ কোম্পানির সেল্স্ ম্যানেজার মিসেস্ রেইহানেহ্ রূহানী টাইপ্-২ ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য উদ্ভাবিত তরঢ়ঃরহ ব্রান্ডনেম্-এর এ ওষুধটির উৎপাদনের কথা জানাতে গিয়ে বলেন যে, বর্তমানে তরঢ়ঃরহ ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি জার্মান কোম্পানির যে একাধিপত্য রয়েছে এ ওষুধটি উদ্ভাবন ও উৎপাদনের ফলে অচিরেই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান জার্মানির সে একাধিপত্যের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বর্তমানে জার্মানিতে উৎপাদিত প্রতি প্যাকেট তরঢ়ঃরহ ৭৭ ডলারে বিক্রি হয়ে থাকে। অবশ্য এ ওষুধটি কোনো সুনির্দিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে ইরানে আমদানি করা হয় না। অন্যদিকে ইরানে উৎপাদিত এ ওষুধটি বর্তমানে প্রতি প্যাকেট মাত্র ৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
মিসেস্ রেইহানেহ্ রূহানী বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অভ্যন্তরে তরঢ়ঃরহ উৎপাদিত হওয়ার ফলে দেশের বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। তিনি আরো বলেন, দেশে এ ওষুধটির প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে তার ভিত্তিতে আপাতত অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের লক্ষ্যে দেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এ ওষুধটি উৎপাদিত হবে।
ইরানী কুস্তিগীর হামীদ সুরীয়ান কুস্তিতে পুনরায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন
কুস্তিতে সর্বশেষ বিশ্বর্যাঙ্কিং-এ ইরানী কুস্তিগীর হামীদ সুরীয়ান পুনরায় প্রথম স্থানের অধিকারী হয়েছেন। তিনি গ্রেকো-রোমান সম্মিলিত বৈশ্বিক কুস্তির র্যাঙ্কিং তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন। গ্রেকো-রোমান কুস্তি প্রতিযোগিতায় তিনি এবারও ৫৯ কেজি ওজনের গ্রুপে শ্রেষ্ঠতম কুস্তিগীরের পদ ধরে রাখতে সক্ষম হলেন। একই গ্রুপে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে রাশিয়ান কুস্তিগীর মিঙ্গিয়ান সেমেনোভ্ ও উয্বেকিস্তানের কুস্তিগীর এল্-মুরাদ্ তাস্মুরাদোভ্। আরেক জন ইরানী কুস্তিগীর উমিদ নওরোযী ৬৬ কেজি গ্রুপে আগের বারের মতোই দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী হয়েছেন।
এছাড়াও এবারের প্রতিযোগিতায় আরো কয়েক জন ইরানী কুস্তিগীর প্রতিটি গ্রুপের ২০ জন শীর্ষ কুস্তিগীরের তালিকায় স্থানলাভ করেছেন। তাঁরা হলেন ; ফ্রিস্টাইল্ কুস্তিগীর হাসান রাহীমী, মাসুদ ইসমাঈলপুর, ঈমান্ সাদেকী, মোস্তাফা হোসাইনখানী, হাসান ইয়ায্দানী, সাইয়্যেদ দাদাশ্পুর, ইয্যাতুল্লাহ্ আকবারী, মোহাম্মাদ হোসাইন মোহাম্মাদীয়ান, মেইসাম্ মোস্তাফা জোকার, আলীরেযা কারীমী, রেযা ইয়ায্দানী, কোমেইল্ কাসেমী ও পারভীয্ হাদী এবং গ্রেকো-রোমান কুস্তিগীর আফ্শান্ বিয়াবানগার্দ্, স‘ঈদ্ আব্দে ওয়াালী, হাবীবুল্লাহ্ আখ্লাকী, সামান্ তাহ্মাসেভী, মোজতাবা কারীর্ন্ফা, কাসেম্ রেযায়ী, মেহ্দী আলীয়ারী, বেহ্নাম্ মেহ্দীযাদেহ্ ও বার্শী বাবাজান্যাদেহ্।
তৃতীয় পশ্চিম এশিয়া উশু চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় ইরানের শিরোপা বিজয়
দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশে অনুষ্ঠিত তৃতীয় পশ্চিম এশিয়া উশু চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ক্রীড়াবিদগণ তেরোটি স্বর্ণপদক জয় করে শিরোপা অর্জন করেছেন। গত ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) তারিখে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় ইরানী ক্রীড়াবিদগণ তেরোটি স্বর্ণ পদক ছাড়াও চারটি রৌপ্য পদক ও দুইটি ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। উল্লেখ্য, উশু প্রতিযোগিতা একটি চীনা মার্শাল আর্ট।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হচ্ছে ইরান, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উযবেকিস্তান, কাযাকিস্তান, তাজিকিস্তান ও সিরিয়া। এ প্রতিযোগিতায় দু’টি স্বর্ণপদক, দু’টি রৌপ্যপদক ও দু’টি ব্রোঞ্জপদক জয় করে উযবেকিস্তান দ্বিতীয় স্থান দখল করে। এছাড়া আফগানিস্তান, লেবানন ও পাকিস্তান যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকার করে।
৩৫তম এশীয় বাইসাইকেল চালনা প্রতিযোগিতায় ইরানের তিনটি পদক লাভ
সম্প্রতি থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৩৫তম এশীয় বাইসাইকেল চালনা চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের তিনজন বাইসাইকেল চালনাকারী তিনটি পদক জয় করেছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) এ প্রতিযোগিতা শুরু হয় ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।
এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইরানী প্রতিযোগী বেহ্নাম খসরুশাহী স্বর্ণপদক, মোহাম্মাদ গান্জ্খান্লু রৌপ্যপদক ও এহ্সান খাদেমী ব্রোঞ্জপদক লাভ করেন।
বিজাতীয়দের প্রতি আশার দৃষ্টিতে তাকাবেন না
–হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের ও সরকারের প্রতি বিজাতীয়দের প্রতি আশার দৃষ্টিতে না তাকানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গত ৭ই জানুয়ারি (২০১৫) ইরানের অন্যতম ধর্মীয় নগরী কোমে এক বিশাল জনসমাবেশে প্রদত্ত ভাষণে এ আহ্বান জানান।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী উল্লেখ করেন যে, বিজাতীয়রা ১৯৭৮ সালের ৯ই জানুয়ারির ঘটনাসহ ইসলামী বিপ্লব চলাকালীন ঘটনাবলি এবং ২০০০ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের ঘটনাসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর বাস্তবতাকে বিকৃত করা ও সেগুলোকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বিজাতীয়দের এ ধরনের অপচেষ্টাকে অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, ইরানী জাতির সাথে বলদর্পী শক্তিবর্গের দুশমনির কোনো শেষ নেই। এমতাবস্থায় দেশের দায়িত্বশীলদের ও সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তির সহায়তায় আস্থার অযোগ্য শত্রুর চাপিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত করা। তিনি বলেন, তাদেরকে প্রকৃতই যে বিষয়গুলো সুস্পষ্ট সেগুলোর প্রতি আশা পোষণ করতে হবে এবং ইসলামী বিপ্লবের ও ইরানী জাতির প্রোজ্জ্বল আশা-আকাক্সক্ষাগুলো বাস্তবায়নের জন্য স্বীয় দায়িত্ব-কর্তব্যসমূহ পালন করে যেতে হবে।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.)-এর জন্মদিবস উপলক্ষে সকলকে অভিনন্দন জানান এবং ১৯৭৮ সালের ৯ই জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থানকে একটি বিরাট ও ভাগ্য নির্ধারণী ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ইসলামী বিপ্লবের ও বিগত তিন দশকের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো ও বড় বড় ভাগ্যনির্ধারণী ঘটনাগুলো ভুলিয়ে দেয়ার জন্য যে অপচেষ্টা চলছে তার পেছনে দুশমনদের বিরাট অসদুদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। কিন্তু এ জাতি যতদিন জীবিত আছে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার অধিকারী হৃদয়ের ও সত্যভাষী যবানের অধিকারী মুমিন জনগণ যতক্ষণ ময়দানে হাযির আছেন ততক্ষণ এ ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হবে না।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ১৯৭৮ সালের ৯ই জানুয়ারির ঘটনা, ১৯৭৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিপ্লবের বিজয় ও ইসলামী বিপ্লব চলাকালীন অন্যান্য ঘটনা এবং এবং ২০০০ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের ঘটনাকে ইরানী জাতির জন্য ক্রান্তিকালীন ও ভাগ্য নির্ধারণী ঘটনাবলি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এসব ঘটনায় জনগণের অংশগ্রহণকে জিহাদস্বরূপ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ইসলামী বিপ্লবের প্রতিপক্ষ ফ্রন্ট বিপ্লবের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের প্রতি আশার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল এবং ধারণা করেছিল যে, তাদেরকে বিপ্লবের প্রতি বিমুখ করে তুলতে পারবে। কিন্তু ইসলামী বিপ্লবের এই তৃতীয় প্রজন্মের যুবকরাই ২০০০ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের বিরাট ঘটনা সংঘটিত করেছিল এবং যারা ইসলামী বিপ্লবের চলার পথকে বিভ্রান্ত করতে ও বিপথে নিয়ে যেতে চাচ্ছিল তাদের চেহারার ওপরে দৃঢ় মুষ্টাঘাত হেনেছিল।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার ১৯৭৮ সালের ৯ই জানুয়ারি তারিখে কোম নগরীতে সংঘটিত ঘটনার ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ৯ই জানুয়ারির ঘটনা ছিল দেশব্যাপী এক বিরাট আন্দোলনের সূচনাÑ যার ফলে গোটা ইরানী জাতি তাগূতী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত যালেমশাহী এ দেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়।
তৎকালীন পাহ্লাভী সরকারের আমলের বাস্তবতা ও ঘটনাবলিকে পরিবর্তিত রূপে তুলে ধরার জন্য যারা অপচেষ্টা চালাচ্ছে এর পেছনে তাদের যেসব অসদুদ্দেশ্য রয়েছে সে সম্পর্কে উল্লেখ করে হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী পাহ্লাভী সরকারের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন। এরপর তিনি বলেন, পাহ্লাভী সরকার ছিল একটি কলঙ্কিত একনায়কতান্ত্রিক সরকার, আর তার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল নিষ্ঠুরতম কর্মপন্থার অনুসরণ এবং শ্বাসরুদ্ধকর কারাগারগুলোতে রাজবন্দিদের ওপর পৈশাচিকতম যুলুম-নির্যাতন ও নিপীড়নের আশ্রয় গ্রহণ। কিন্তু এতদসত্ত্বেও, আজকের দিনে যারা নিজেদেরকে মানবাধিকারের পতাকাবাহী বলে দাবি করে তারা সেদিন সর্বশক্তি দিয়ে পাহ্লাভী সরকারের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছিল।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার ধ্বংসপ্রাপ্ত শাহী সরকারের জাহান্নামতুল্য গুপ্ত পুলিশী সংস্থা সাভাক্-এর প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং সারা দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরির ক্ষেত্রে যায়নবাদী ইসরাঈল সরকারের ও আমেরিকানদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রতিককালে আমেরিকায় সেখানকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র গোপন কারাগারসমূহের অস্তিত্ব ও সেগুলোতে নির্যাতনের যেসব ঘটনা ফাঁস হয়েছে তা থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে, আমেরিকানরা যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থক বলে নিজেদেরকে দাবি করে থাকে বাস্তবতার সাথে তার সামান্যতমও মিল নেই।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বাইরের শক্তিসমূহের প্রতি লজ্জাজনক নির্ভরতাকে প্রাক্তন পাহ্লাভী সরকারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, সে যুগে বিজাতীয় শক্তিসমূহের স্বার্থ, বিশেষ করে আমেরিকার স্বার্থ যা কিছু দাবি করত পাহ্লাভী সরকার তার অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নীতি ও আচরণে তা-ই বাস্তবায়ন করতÑ যার ফলে ইরানী জাতি গুরুতরভাবে লাঞ্ছিত ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হতো।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার আরো বলেন, আমেরিকানরা যে ইরানী জাতি ও ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে সীমাহীন আক্রোশ, হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষা ও দুশমনি পোষণ করছে তার কারণ এই যে, ইরানের মতো বিভিন্ন কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও অবস্থানের অধিকারী একটি দেশ ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের মধ্য দিয়ে তাদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বিগত পাহ্লাভী সরকারের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেন যে, ঐ সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের লোকেরা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের যৌন অনাচার এবং রাজনৈতিক ও নৈতিক-চারিত্রিক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ঐ নোংরা ও দুর্নীতিবাজ সরকার দেশের জনগণকে মোটেই হিসাব করত না এবং জনগণের রায় ও মতামতকে আদৌ কোনো গুরুত্ব দিত না। বস্তুত তখন জনগণ ও সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতি দৃষ্টি না দেয়া, জনগণের মধ্যে নিজ জাতিকে ছোট করে দেখার মানসিকতা গড়ে তোলার অপচেষ্টা, পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে বড় ও মহান করে দেখানো, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পুনরুজ্জীবনের পরিবর্তে জনগণের মধ্যে আমদানিকৃত পণ্য ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং দেশের কৃষিব্যবস্থা ও জাতীয় শিল্প ধ্বংসকরণকে পাহ্লাভী সরকারের কালো আমলনামার অন্যান্য দিক হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ইরানের সচেতন জনগণ যখন নিজেদের প্রতি এ ধরনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য, লাঞ্ছনা, যুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়ন এবং অনাচার-দুর্নীতি প্রত্যক্ষ করে তখন তারা একজন আল্লাহ্ওয়ালা মানুষের অর্থাৎ হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়ের অধিকারী হয়।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী জোর দিয়ে বলেন, ইরানী জাতি যে বর্তমানে বিরাট উন্নতি-অগ্রগতি ও সাফল্যের অধিকারী হয়েছে এবং সচেতনতার অধিকারী হয়েছে, আর সেই সাথে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে শ্রেষ্ঠতম অবস্থানের অধিকারী হয়েছে তার সবকিছুই কেবল যালেম, নিপীড়ক ও দুর্নীতিগ্রস্ত পাহ্লাভী সরকারের ন্যায় বিরাট বাধা অপসারিত হওয়ার কারণে সম্ভব হয়েছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর বলদর্পী দাম্ভিক শক্তিবর্গের ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ইরানী জাতির বিরুদ্ধে দুশমনি শুরু হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ দুশমনরা ইরানী জনগণের বিরুদ্ধে যে নোংরামি ও দুশমনি শুরু করেছে তা থেকে হাত গুটিয়ে নেবে বলে যেন কেউ মনে না করেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে বলেন, আপনারা যদি কখনো দুশমনের মোকাবিলায় উদাসীন হন এবং তার ওপরে আস্থা স্থাপন করেন তাহলে দুশমন এ দেশে তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালিয়ে যাবার জন্য সুযোগ ও অবকাশ পেয়ে যাবে। কিন্তু আপনারা যদি শক্তিশালী হন ও প্রস্তুত থাকেন এবং দুশমনকে ঠিকভাবে চিনতে পারেন তাহলে দাম্ভিক বলদর্পী শক্তি নিরুপায় হয়েই ইরানী জাতির বিরুদ্ধে তার দুশমনি থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
বর্তমানে বিশ্বের বলদর্পী শক্তিগুলোর সম্মিলিত ফ্রন্ট ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে যে চাপ সৃষ্টি করছে সে সম্পর্কে ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, এ হচ্ছে এমন এক ধরনের দুশমনি থেকে উদ্ভূত যা কখনো শেষ হবার নয়। এরপর তিনি বলেন, যদিও সামাজিক সুবিচার ও ইসলামী চরিত্র ইত্যাদি ইসলামী বিপ্লবের আশা-আকাক্সক্ষাসমূহের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনো আমাদেরকে আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তবে ইরানী জাতির অসামর্থ্য সম্বন্ধে কিছু লোক যে কোনোরূপ হিসাব-নিকাশ ব্যতিরেকেই ভ্রান্ত কথাবার্তা বলে থাকে তাদের ধারণার বিপরীতে এ জাতি স্বীয় আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের পথে অভিযাত্রায় অনেক ক্ষেত্রেই বিরাট সাফল্যর অধিকারী হয়েছে।
যেসব লোক বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাফল্যসমূহ দেখেও না দেখার ভান করে তাদের সমালোচনা করে ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের যেসব সাফল্যকে বিশ্বের বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রসমূহও স্বীকৃতি দিয়েছে কেন তোমরা সেগুলো অস্বীকার করছ এবং দেশের জনগণ যে গৌরবময় চলার পথ অতিক্রম করেছে- এমনকি দুশমনরাও যেসব সাফল্যের প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে- কেন তোমরা তোমাদের নির্বুদ্ধিতামূলক ও ভ্রান্ত কথাবর্তার দ্বারা সে পথে চলার ক্ষেত্রে জনমনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছ?
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইসলামের প্রথম যুগের কথা উল্লেখ করে বলেন, সে যুগেও সকল আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নি, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে, লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পথে অভিযাত্রা ও তৎপরতা অব্যাহত ছিল। আর আজকেও, ইরানী জাতি গৌরব, শক্তিমত্তা ও আপোসহীনতা সহকারে সে পথে স্বীয় অভিযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার তাঁর বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় দেশের ও সমাজের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং জাতীয় ঐক্য ও মতৈক্যকে আজকের দিনের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, যে কোনো বাহানায় বা যে কোনো যুক্তিতেই হোক, জনগণের মধ্যে অনৈক্য ও দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি জাতীয় স্বার্থের বিরোধী এবং জাতির আশা-আকাক্সক্ষারও বিরোধী।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী সরকার ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে সহায়তা করাকে সকলের দায়িত্ব বলে অভিহিত করেন। তিনি ভিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করার জন্য পুনরায় গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদেরও জেনে রাখা দরকার যে, একমাত্র যা তাঁদেরকে তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষম করতে পারে তা হচ্ছে জনগণ ও অভ্যন্তরীণ শক্তি।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ওপর চাপিয়ে দেয়া যুলুমমূলক নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বলেন, এতে সন্দেহ নেই যে, নিষেধাজ্ঞাসমূহ দেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে, কিন্তু দুশমন যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য ইসলাম, স্বাধীনতা ও বৈজ্ঞানিক উন্নতিসহ বিভিন্ন মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার সাথে জড়িত বিষয় থেকে হাত গুটিয়ে নেয়ার শর্ত আরোপ করে, তাহলে নিঃসন্দেহে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির আত্মমর্যাদাই তা গ্রহণ করতে পারে না।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী আরো বলেন, অবশ্য দুশমন আপাতত সুস্পষ্ট ভাষায় আমাদের জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলছে না। কিন্তু পশ্চাদপসরণ করা হলে পরে তারা আমাদের জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষাসমূহের দিকেও হাত বাড়াবে। সুতরাং আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দুশমনদের প্রস্তাবসমূহ, কথাবার্তা ও পদক্ষেপসমূহ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করতে হবে। তিনি নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় ইরানকে নিরাপদ করাকে দুশমনের শক্তির মহড়াকে সীমিত করে ফেলার একমাত্র পন্থা বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, প্রতিরোধমূলক অর্থনীতির প্রকৃত তাৎপর্য এটাই। আর এ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের বাস্তবায়নই হচ্ছে দেশের সরকারের ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আসল দায়িত্ব।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার ইতিপূর্বেও যে দেশকে তেল বিক্রির আয়ের ওপর নির্ভরতা থেকে বের করে আনার ওপর বার বার গুরুত্ব আরোপ করেছেন তার উল্লেখ করে বলেন, দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও সরকার যেন বিজাতীয়দের প্রতি আশার দৃষ্টিতে না তাকান; তাঁদেরকে মনে রাখতে হবে যে, তাঁরা যদি এমনকি এক কদমও পশ্চাদপসরণ করেন তাহলে তার ফলে তা দুশমনকে এগিয়ে আসতে সাহায্য করবে। সুতরাং মৌলিক চিন্তা করতে হবে এবং জাতি ও অভ্যন্তরীণ শক্তির ওপর নির্ভর করে এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে দুশমন নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলেও উন্নয়ন, অগ্রগতি, দীপ্তি ও জনগণের কল্যাণের ওপর কোনো আঘাত না আসে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী এ ব্যাপারে আরো বলেন, দুশমনের হাত থেকে নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রকে কেড়ে নিতে হবে। কারণ, আপনারা যদি দুশমনদের প্রতি আশার দৃষ্টিতে তাকান তাহলে নিষেধাজ্ঞা একইভাবে বহাল থাকবে, ঠিক যেভাবে আমেরিকানরা এখন পুরোপুরি নির্লজ্জতার সাথে বলছে যে, ইরান যদি পারমাণবিক ইস্যুতে নতি স্বীকার করে তথাপি সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে না এবং যেগুলো তুলে নেয়া হবে তা-ও একবারে তুলে নেয়া হবে না। তিনি প্রশ্ন করেন, বাস্তব অবস্থা যেখানে এই, এমতাবস্থায় এ ধরনের দুশমনের ওপর কি আদৌ আস্থা রাখা সম্ভব?
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার আরো বলেন, আমি আলোচনার বিরোধী নই। কিন্তু আমি মনে করি যে, প্রকৃতই যেসব বিষয় আশার সঞ্চারকারী কেবল সেসব বিষয়ের প্রতিই আশার দৃষ্টিতে তাকাতে হবে, কাল্পনিক বিষয়াদির প্রতি নয়।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী তাঁর এ ভাষণের সমাপ্তি পর্যায়ে বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ তাঁদের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন এবং সকলেরই কর্তব্য হচ্ছে সরকারকে সাহায্য করা। কিন্তু সরকারে যাঁরা আছেন তাঁদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে। তাঁরা যেন কোনো ক্ষেত্রেই দায়িত্বহীনতার পরিচয় না দেন এবং এবং অপ্রয়োজনীয় কথা বলা ও তার মাধ্যমে বিভক্তি সৃষ্টির কারণ ঘটানো থেকে বিরত থাকেন; তাঁরা যেন জাতির ঐক্য, ঈমান ও হিম্মতকে সঠিকভাবে কাজে লাগান।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ভবিষ্যৎ প্রোজ্জ্বল বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহে ইসলামী বিপ্লবের ও ইরানী জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার গৌরবময় পথে অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং দেশের যুবসমাজ এমন একটি দিনের দেখা পাবে যখন উদ্ধত বলদর্পী ও যালেম দুশমন তাদের সামনে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হবে।
অনুবাদ : নূর হোসেন মজিদী
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে বায়োটেকনোলজি*
ভূমিকা
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এর সাথে স¤পৃক্ত অন্যান্য কৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে ইরানে বিগত ২ দশকে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে লক্ষণীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। ফলে মানব সমাজের সমস্যা সমাধানে আশা দেখা যাচ্ছে। ইরানে উদ্ভিদভিত্তিক বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে বিকল্প রক্ত এবং অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। পরিবেশ দূষণ রোধের জন্য বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব কৌশল এবং যন্ত্রাদি তৈরির মাধ্যমে আয়বর্ধক নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইরান এখন থেকে সত্তর বছর আগে জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষণার মাধ্যমে মানুষ ও প্রাণীর ভ্যাকসীন তৈরির জন্য ‘রাযি’ এবং পাস্তুর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে।
১.১ ইরানে বর্তমান বায়োটেকনলজি গবেষণার চিত্র
ইরান ১৯৯০ সালে আধুনিক বায়োটেকনোলজি গবেষণায় আত্মনিয়োগ করে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ব্যাপক সাফল্য লাভের যোগ্যতা দেখিয়েছে। বর্তমানে ইরানে ১৬০টি সরকারি গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ২১৮টি বেসরকারি সেন্টার ও কো¤পানি বায়োটেকনোলজি গবেষণা এবং উৎপাদন খাতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বায়োটেকনোলজি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশনার সংখ্যার দিক থেকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে ১ম স্থানে এবং এশিয়ায় ১ম সারির পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে (সারণী-১)।
বায়োটেকনোলজি খাতে বিশ্বে ইরানের অবস্থান
- প্রকাশিত নিবন্ধের সংখ্যায় বিশ্বে ইরানের অবস্থান ১৪তম
- বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন এশিয়ায় ১ম সারির ৫টি দেশের অন্যতম
- বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন মধ্যপ্রাচ্যে ১ম
- ভ্যাকসীন উৎপাদন মধ্যপ্রাচ্যে ১ম
- বর্তমানে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ২৮টি বায়োফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদিত হচ্ছে।
১.২ ইরানে বায়োটেকনোলজি গবেষণা এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকার
জাতীয় বায়োটেকনোলজি কর্মসূচি বিবেচনায় নিয়ে বায়োটেকনোলজি কমিশন গবেষণা ও উন্নয়নের অগ্রাধিকার খাত চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রে ইউনেস্কো ঘোষিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে বায়োটেকনোলজি গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য কৃষি এবং চিকিৎসা খাতকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসাবে নির্ধারণ করেছে। ইরানে স্বাস্থ্য খাতে বায়োটেকনোলজি কার্যক্রমের মধ্যে বায়োফার্মাসিউটিক্যাল্স উৎপাদন, রোগ নির্ণয়, কোষ থেরাপি এবং পুন উৎপাদনক্ষম ঔষধ অন্যতম। কৃষি খাতে বায়োটেকনোলজি কার্যক্রমের মধ্যে বায়োফার্টিলাইজার, বায়োপেস্টিসাইড, টিস্যু কালচার। পরিবেশ খাতে ইরানের অগ্রাধিকার হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বায়োটেকনোলজির ব্যবহার।
১.৩ ইরানের বায়োটেকনোলজি সেন্টারসমূহ
বায়োটেকনোলজি কাউন্সিল : এ কাউন্সিলের সদস্যগণ হচ্ছেন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ, বায়োটেকনোলজি সেন্টারসমূহের পরিচালকবৃন্দ এবং বায়োটেকনোলজি খাতে ৫ জন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী। এ কমিশনের প্রধান কাজ হচ্ছে বায়োটেকনোলজি সেন্টারসমূহের কাজের সমন্বয় এবং গবেষণা অগ্রাধিকার নির্ণয়।
সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড টেকনোলজি কোঅপারেশন (সিআইসিটি) : এই সেন্টার বহির্বিশ্বের সর্বাধুনিক বায়োটেকনোলজি আহরণে সাহায্য করে। সিআইসিটি-র জীববিজ্ঞান বিভাগ বায়োটেকনোলজি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল্স খাতে প্রযুক্তি হস্তান্তরে সাহায্য করে।
ন্যাশনাল কমিটি ফর পলিসি মেকিং ইন মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি : স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ কমিটি মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি খাতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে থাকে। মন্ত্রণালয়ের গবেষণা সচিববৃন্দ, বায়োটেকনোলজি সেন্টারসমূহের পরিচালকবৃন্দ এবং বায়োটেকনোলজি খাতে ৫ জন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী এ কমিটির সদস্য।
১.৪ মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি
এ বিভাগে ইরানের পাস্তুর ইনস্টিটিউট-এর সাফল্যসমূহ তুলে ধরা হলো।
১.৪.১ পাস্তুর ইনস্টিটিউট, ইরান
ইরানে বায়োটেকনোলজি সংস্থাসমূহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পাস্তুর ইনস্টিটিউট যেখানে প্রধানত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা এবং বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা হয়।
রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য তেহরানের কেন্দ্রস্থলে প্রায় ৮০ বছর পূর্বে এ ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়। ইরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাস্তুর ইনস্টিটিউট একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যেমন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, পাস্তুর ইনস্টিটিউট-এর আন্তর্জাতিক শাখাসমূহের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে এবং সক্রিয় সহযোগিতা নিয়ে থাকে। পাস্তুর ইনস্টিটিউট প্রধানত জৈব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সংক্রামক রোগ নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণের প্রায়োগিক এবং মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে আসছে।
১.৪.২ মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি খাতে প্রধান প্রধান উদ্ভাবন
অ্যানজিপারস (ANGIPARS ™) : ডায়াবেটিক ফুট আলসার নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কার্যকর ঔষধ। এটি প্রয়োগের ফলে ডায়াবেটিক ফুট আলসারজনিত অঙ্গচ্ছেদ থেকে রোগীরা রেহাই পাচ্ছে।
ইমোড (IMOD ™) : এইচআইভি/এইড্স রোগের চিকিৎসায় এ ঔষধ ব্যবহার করা হয়। ২০০১ সালে রাশিয়ায় এইড্স রোগের চিকিৎসার জন্য একটি ঔষধ আবিষ্কারের জন্য মহতি উদ্যোগ নেয়া হয়। রাশিয়া এবং ইরানের একদল বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে ইরানে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় যার ফসল হলো এই হার্বাল ঔষধ।
সিন্নোভেক্স (CinnoVex ™) : সিন্নোভেক্স হলো রিকম্বিনেন্ট ইন্টারফেরন বিটা ১-এ-র ট্রেড নাম যা রিল্যাপসিং মাল্টিপল স্কেরোসিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধের ১ গ্রামের মূল্য ২.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। উল্লেখ্য, বিশ্বে সিন্নোভেক্স উৎপাদনকারী তিনটি দেশের অন্যতম হলো ইরান।
গামা-ইমোনেক্স (GAMA-IMMUNEX ™) : ইন্টারফেরন গামা-১ বি মানব দেহের প্রোটিন হতে তৈরি এবং এটি ভাইরাল ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। একই জাতীয় বিদেশী ঔষধ এবং গামা-ইমিউনেক্স সমমানের এবং অধিক কার্যকরী। যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির পাশাপাশি তৃতীয় গামা-ইমিউনেক্স প্রস্তুতকারী দেশ হচ্ছে ইরান। মূল্য এবং মানের দিক থেকে এটি অন্য বিদেশী ঔষধের সমতুল্য।
কোষ থেরাপি : কোষ থেরাপির জন্য হেমাটোপইটিক কোষ ব্যবহার করে মাল্টিপল ট্রমা, ক্যান্সার, পুকেন সিনড্রোম, ডায়াবেটিস এবং এমএস রোগের চিকিৎসা করা হয়।
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসীন : হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসীন এইচবিভি সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং তীব্র ও মারাত্মক হেপাটাইটিস, সিরোসিস, লিভার ফেইলর এবং প্রাথমিক লিভার কারসিনোমা চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়।
১.৫ মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট
ইরানে মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট তৈরিতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট তৈরিতে ইরানের অগ্রগতি এ পর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
১.৫.১ ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স্ড মেডিক্যাল টেকনোলজিস (IMAT) : এটি ইরানে মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট তৈরির অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত প্রকল্পসমূহ অনেক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনগুলো হলো পারেস সার্জিক্যাল নেভিগেশন সিস্টেম, রোবোলেন্স, অটো অ্যাকাউস্টিক এমিশন ফর ইনফ্যান্ট্স হিয়ারিং স্ক্রিনিং ইত্যাদি।
এ ইনস্টিটিউটের তিনটি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে- ১. বায়োমেডিক্যাল অ্যান্ড রোবোটিক্স টেকনোলজি, ২. মলিকিউলার ইমেজিং এবং ৩. টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টেম সেল রিসার্চ।
ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স্ড মেডিক্যাল টেকনোলজিস-এ ১৬-এর অধিক বিজ্ঞানী রয়েছেন যাঁরা আরো ৭০ জন গবেষক এবং ৩০ জন প্রশাসনিক ও সহযোগী স্টাফের সহায়তায় নতুন নতুন মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট তৈরিতে নিয়োজিত। এ ইনস্টিটিউটের অত্যাধুনিক যন্ত্রাদির মধ্যে রয়েছে ন্যানো-স্কোপ, পারেস সার্জিক্যাল নেভিগেশন সিস্টেম, ইমেজিং সিস্টেম ফর অ্যানিমেল্স, সার্জিক্যাল রিট্রেক্টর, অটো-অ্যাকাউস্টিক এমিশন, সার্জিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট রোবট এবং ইলেকট্রোরিস।
১.৬ এগ্রিকালচারাল টেকনোলজিস
এ পর্যায়ে ইরানের কৃষিতে বায়োটেকনোলজি উদ্ভাবনের সাথে জড়িত ২টি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি ক্ষেত্রে ইরানে উদ্ভাবিত বায়োটেকনোলজি পণ্য নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি দু’টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এগ্রিকালচারাল বায়োটেনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ইরান (ABRII) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (NIGEB) অ্যাডভান্স্ড প্ল্যান্ট মলিকিউলার বায়োলজি এবং বায়োটেকনোলজি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে নিবিড় সহযোগিতায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা এবং যন্ত্রাদি উদ্ভাবন করছে। ইরানে উদ্ভাবিত বায়োটেকনোলজি পণ্যসমূহ হলো- Seed Potato Roytube ™, Phosphate, Biofertilizer BARVAR ™, AzotoBarvar-1 ™, Biofertilizer Nitro Kara ™, Biofertilizer, Tissue culture plant ইত্যাদি। প্রাণিস¤পদের জন্য পণ্যসমূহ হলো- Vaccine, Antisera, Diagnostic Kits, ইত্যাদি।
এছাড়াও ইরানে কৃষিতে বায়োটেনোলজি প্রয়োগ করে স্টেম বোরার প্রতিরোধী ধান, পোকা প্রতিরোধী তুলা, রাইজোমেনিয়া প্রতিরোধী সুগার বিট উদ্ভাবন করা হয়েছে। অনেক উদ্ভিদের মাইক্রো প্রপাগেশন প্রটোকল তৈরিসহ উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ শনাক্ত করার জন্য কিট তৈরি করা হয়েছে। উদ্ভিদ ও মানব দেহে বায়োফার্মাসিউটিক্যাল্স তৈরির প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।
১.৬.১ এগ্রিকালচারাল বায়োটেনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ইরান (ABRII) : অইজওও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন এগ্রিকালচারাল রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন অর্গানাইজেশন (AREO)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৮৩ সালে সিড অ্যান্ড প্ল্যান্ট ইমপ্রুভমেন্ট ইনস্টিটিউট-এর অধীন প্ল্যান্ট বায়োটেনোলজি ডিপার্টমেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় যা ১৯৯৯ সালে ABRII-তে উন্নীত হয়। এখানে অ্যাডভান্স্ড প্ল্যান্ট মলিকিউলার বায়োলজি এবং বায়োটেকনোলজি বিষয়ে গবেষণা পরিচালিত হয়। ABRII-তে উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনা এবং এগ্রিকালচারাল বায়োটেনোলজি বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ABRII-তে ৬টি গবেষণা বিভাগ রয়েছে, যথা- জেনোমিক্স : টিস্যু কালচার অ্যান্ড জিন ট্রান্সফরমেশন; মাইক্রোঅর্গানিজম অ্যান্ড বায়োসেফটি; ফিজিওলজি অ্যান্ড প্রুটিওমিক্স; টিকনিক্যাল সার্ভিস অ্যান্ড রিসার্চ সাপোর্ট; জেনেটিক্স, সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি।
ABRII-তে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত গবেষণা খামার, লাইসিমিটার, গ্রীণ হাউজ এবং নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, ১০টি ফাইটোট্রন্স, কোল্ড রুম, টিস্যু কালচার সুবিধাদি রয়েছে। এখানে ১০০-এর বেশি গবেষক নিয়োজিত রয়েছেন।
১.৬.২ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (NIGEB) : বিজ্ঞান, গবেষণা এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রতিষ্ঠান ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানে ৫টি খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যথা- মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি, প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজি, অ্যানিম্যাল অ্যান্ড মেরিন বায়োটেকনোলজি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল বায়োটেকনোলজি এবং বেসিক সায়েন্স। এখানে গবেষণার একটি বিষয় হলো প্রতিকূল পরিবেশের উপযোগী ফসল, যেমন- ফসফরাস ঘাটতি এবং লবণাক্ততা সহনশীল ফসল উদ্ভাবন করা। এখানে গবেষকগণ রাইজোমুনিয়া এবং রাইজোটনিয়া রোগ প্রতিরোধী সুগার বিট এবং আগাছানাশক প্রতিরোধী ফসল উদ্ভাবন করেছেন।
১.৬.৩ প্রধান প্রধান এগ্রিকালচারাল বায়োটেকনোলজি পণ্য/উদ্ভাবনসমূহ
Seed Potato Roytuber ™: রোয়ান টিউবার কো¤পানি স্বাস্থ্যকর এবং ভাইরাসমুক্ত আলু বীজ উদ্ভাবন করেছে যা Potato Roytuber ™: নামে পরিচিত।
Source: Determination of a Nation : Scientific and Technological Achievements of the Islamic Revolution in Iran. Embassy of the Islamic Republic of Iran, New Delhi.