All posts by pavel

স্মরণীয় দিবস

১ জুলাই : বিশ্ব আল-কুদ্্স দিবস।

২ জুলাই : ১৯৮৮ সালের এ দিনে পারস্য উপসাগরে মার্কিন রণতরী থেকে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানি এয়ারবাসের তিন শতাধিক যাত্রী শহীদ হন।

৪ জুলাই : বিশ্ব কলম দিবস।

৭ জুলাই : পবিত্র ঈদুল ফিত্র।

৮ জুলাই : বিশ্ব শিশু-কিশোর সাহিত্য দিবস।

১১ জুলাই : ইরানে হিযাব ও সতিত্ব দিবস।

২২ জুলাই : ইরানে খেলাধুলা ও পাহলোয়ানি সংস্কৃতি দিবস।

৩০ জুলাই : আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।

৪ আগস্ট : হযরত মাসুমাহ (আ.)-এর জন্মদিবস। ইরানে কন্যাদিবস ও ইসলামি মানবাধিকার ও মানবতা দিবস।

৬ আগস্ট : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী।

৭ আগস্ট : ইরানে সাংবাদিক দিবস।

১৪ আগস্ট : আহলে বাইতের অষ্টম ইমাম রেযা (আ.)-এর জন্মদিবস।

১৫ আগস্ট : বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সপরিবারে শাহাদাতবরণ করেন।

২১ আগস্ট : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কর্তৃক ঘোষিত বিশ্ব মসজিদ দিবস।

২৩ আগস্ট : বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বু-আলী সীনা স্মরণে দিবস, ইরানে এ দিনটি চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালিত হয়।

২৬ আগস্ট : বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী যাকারিয়া রাযী স্মরণে দিবস। ইরানে এ দিনটি ওষুধ শিল্প দিবস হিসেবে পালিত হয়।

২৭ আগস্ট : বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী।

২৯ আগস্ট : ১৯৮১ সালের ৩০ আগস্ট প্রেসিডেন্ট ভবনে গুপ্তঘাতকের পাতা বোমা বিস্ফোরণে শহীদ হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ আলী রাজাই ও প্রধানমন্ত্রী হুজ্জাতুল ইসলাম ড. জাভাদ বাহোনার। দিবসটি সন্ত্রাসবিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হয়।

ইরানি প্রবাদ বাক্য

زیر پا کشیدن از کسی
উচ্চারণ : যীরে পা’ কাশীদান আয কেসী
অর্থ: কারো কাছ থেকে পায়ের নিচে নিয়ে আসা।
মর্মার্থ : প্রতারণা ও কৌশল করে কারো মুখ থেকে কোন কথা বের করে আনা।
زیر پای کسی پوست خربزه گذاشتن
উচ্চারণ : যীরে পা’য়ে কেসী পুস্তে খরবুযে গোযা’শতান
অর্থ : কারো পায়ের নিচে খরবুজার খোসা রেখে দেয়া।
মর্মার্থ : কারো জন্য মাথাব্যথার কারণ সৃষ্টি করা, কাউকে দিশেহারা করে দেয়া।
زیر جلی کار کردن
উচ্চারণ : যীরে জালী কা’র কারদান
অর্থ : উজ্জ্বলতার নিচে কাজ করা।
মর্মার্থ : লুকোচুরি করা, গোপনে কাজ করা।
زیر دمش سست است.
উচ্চারণ : যীরে দুমেশ সুস্ত আস্ত
অর্থ : তার জুটির নিচে ঢিলা।
মর্মার্থ : বেকার ও আত্মভোলা লোক, যার কোনো কর্মক্ষমতা নেই, অক্ষম ও ব্যক্তিত্বহীন।
زیر سبیلی در کردن
উচ্চারণ : যীরে সিবিলী দার কারদান
অর্থ : গোঁফের নিচ দিয়ে বের করা।
মর্মার্থ : কারো কথা বা অনুরোধ না শোনার ভান করা, কারো খারাপ কথা পুনরায় উচ্চারণ না করা।
زیر سرش بلند شدن.
উচ্চারণ : যীরে সারাশ বোলান্দ শোদান
অর্থ : কারো মাথার নিচে উঠে দাঁড়ানো।
মর্মার্থ : এদিক ওদিক থেকে কোন কিছুর আশ্বাস পেয়ে খুব তৎপরতা দেখানো, কোনো ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে পড়া।
زیر سر گذاشتن
উচ্চারণ : যীরে সার গুযা’শতান
অর্থ : মাথার নিচে রাখা।
মর্মার্থ : আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা, মনের দিক দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া।

زیر قول خود زدن.
উচ্চারণ : যীরে কওলে খোদ যাদান
অর্থ : নিজের কথার নিচে চাপা দেয়া।
মর্মার্থ : কথা দিয়ে কথা না রাখা, ওয়াদা অনুযায়ী কাজ না করা।
زیر کاسه نیم کاسه¬ای هست..
উচ্চারণ : যীরে কা’সে নিম কা’সেয়ী হাস্ত
অর্থ : বাটির নিচে হাফ বাটি একটি আছে।
মর্মার্থ : এ কাজের পেছনে রহস্য আছে, নিশ্চয়ই ভেতরে কোনো চক্রান্ত আছেÑ এ কথা বোঝানোর জন্য এ প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
زیر نگین داشتن.
উচ্চারণ : যীরে নাগীন দা’শতান
অর্থ : আংটির নিচে রাখা
মর্মার্থ : কোনো কিছুর অনুগত বা প্রভাবাধীন থাকা, কারো আজ্ঞাবহ হওয়া।
زیره به کرمان بردن.
উচ্চারণ : যীরে বে কেরমা’ন বোরদান
অর্থ: জিরা কেরমান নিয়ে যাওয়া, (ইরানের কেরমান প্রদেশ জিরা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত)।
মর্মার্থ : কোনো জ্ঞানী লোকের সামনে নিজের বিদ্যার বড়াই করা, একই অর্থে বলা হয়, সুলায়মান বাদশাহর কাছে পঙ্গপালের রান নিয়ে যাওয়া। বাংলায় বলে, মায়ের কাছে মামার বাড়ির গল্প বলা।
زینب ستم کش.
উচ্চারণ : যেইনাবে সেতামকাশ
অর্থ: কষ্টের ঘানিটানা যায়নাব।
মর্মার্থ : যে মহিলা বাড়িঘরের সমস্ত কাজ মাথা পেতে নেয়, পরিশ্রমী মহিলা। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় সহমর্মিতা দেখায় এমন মহিলা।

অনুবাদ : আবু আব্দুল্লাহ

ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁচ ধাপ প্রসঙ্গে রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী

ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস সেন্টারের সদস্যদেরকে দেয়া এক সাক্ষাতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রাহবার আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেন, ইসলামি বিপ্লবের লক্ষ্য হচ্ছে, ইসলামি সভ্যতার বাস্তবায়ন। তিনি উন্নয়ন মডেল সম্পর্কে বর্তমান বিশ্বে বিদ্যমান ভুল ও অকার্যকর মূলনীতিসমূহের কথা উল্লেখ করে নতুন প্রগতির ইসলামি ও ইরানি মডেল উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, জিহাদী ও বিপ্লবী কর্মকা-, ইসলামি উৎসসমূহ ও মাদ্রাসাসমূহের সমৃদ্ধ ও মজবুত ভিত্তিসমূহের সঠিক ব্যবহার, বিজ্ঞানের শক্তিতে বলিয়ান হওয়া প্রভৃতি হচ্ছে ইরানি ও ইসলামি মডেল প্রনয়ণের আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ।
রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইসলামি বিপ্লবী লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পাঁচটি ধাপ এবং প্রগতির মডেলের সাথে এর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটি হচ্ছে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হওয়া। এরপর সাথে সাথে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। ইমাম খোমেইনী (র.)-এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্বও ছিল ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা নতুন প্রগতি ইসলামি মডেলের তৃতীয় ধাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা এখন সেই ধাপে আছি। অর্থাৎ ইসলামি সরকার গঠন করা। তার মানে সম্পূর্ণ ইসলামি মডেল ও মানদ-ের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করা। রাহবার খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, এই ধাপটি পূর্ণ বাস্তবায়ন হওয়া ব্যতিরেকে ইসলামি সমাজ গঠনের পালা আসবে না। এমতাবস্থায় ইসলামি জীবনযাপন পদ্ধতি সমাজজীবনে আলোচনা-পর্যালোচনা পর্যায়েই থেকে যাবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ইসলামি সরকার গঠনের ব্যাপারটি যতক্ষণ না পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে ততক্ষণ ইসলামি সমাজ গঠনের পর্যায়টি আসবে না। ইসলামি বিপ্লবী লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পাঁচ ধাপের চূড়ান্ত পদক্ষেপটি হচ্ছে, ইসলামি তাহযিব-তামাদ্দুনের (সভ্যতার) বাস্তবায়ন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইসলামি সভ্যতা বলতে অন্য দেশ জয় করা বুঝায় না। বরং এর অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন জাতির ইসলামের কাছ থেকে চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিগত প্রভাব গ্রহণ করা।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেন, একটি আদর্শ ইসলামি সমাজ বিনির্মাণের ইরানি মডেল এর ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস তৈরির জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ইসলামি সভ্যতার বাস্তবায়ন। তিনি এই প্রশ্নের জবাব দেন যে, কেন দুনিয়ার বুকে বিদ্যমান ও পরীক্ষিত মডেলগুলো আমাদের জন্য কাক্সিক্ষত মডেল হতে পারবে না? রাহবার বলেন, উন্নয়নের প্রচলিত মডেলগুলো মূলনীতির দিক থেকে ভুল এবং মানবিক ও ঐশী নয় এমন নীতিমালার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর ফলাফল ও প্রতিক্রিয়ার দিক থেকেও স্বাধীনতা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা জাতীয় মূল্যবোধের ব্যাপারে যেসব ওয়াদা করেছিল, তা বাস্তবায়ন করতে পারে নি।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা বলেন, এসব মডেল যেসব দেশ অনুসরণ করছে তাদের মধ্যে কোন কোন দেশে তাদের সরকারগুলোর বিরাট অঙ্কের ঋণ, বেকারত্ব, দারিদ্র ও প্রচ- শ্রেণি বৈষম্য প্রভৃতি সূচকে যে প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করছে তা প্রচলিত এসব মডেলের অকার্যকরিতা ও ব্যর্থতার প্রমাণ। তিনি বলেন, এসব সমাজ যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রগতির অধিকারীও হয়েছে, কিন্তু তাদের অগ্রগতিগুলো সেই সমাজের গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করে নি এবং নৈতিক চরিত্র, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তায় গিয়ে শেষ হয় নি। কাজেই আমাদেরকে ইসলামি মূলনীতি ও ইরানি সংস্কৃতিনির্ভর আমাদের নিজস্ব স্থানীয় অগ্রগতির মডেলকে পরিচিত ও উপস্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রগতির মডেলের ভিত্তি অবশ্যই ইসলামি হতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে হলে গভীর ইসলামি জ্ঞান-গবেষণা, দর্শন, কালামশাস্ত্রীয় ও ফিকাহ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ তথা মাদ্রাসা ও প-িত চিন্তাবিদ মহলের সাথে লাগাতার ও মজবুত সম্পর্কের আওতায় কাজ করতে হবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস এর ক্ষেত্রে ইরানি অনুষঙ্গকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ইরান হচ্ছে এই মডেল বাস্তবায়নের ক্ষেত্র। যদি সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, দেশীয় পরিম-ল, চালচলন, আচার-ব্যবহার, রসম-রেওয়াজ, মানবিক ও প্রাকৃৃতিক পুঁজি ও সঞ্চয় প্রভৃতিকে বিবেচনায় না নেয়া হয় তাহলে প্রগতির মডেল হবে বাস্তবায়ন অযোগ্য ও অকার্যকর।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে একে গড়ে তোলার আবশ্যকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করেন।
তিনি উক্ত মডেলের বিজ্ঞানভিত্তিক বিন্যাস ও প্রনয়ণ, বিভিন্ন মতামতের মধ্যে বিতর্ক, বিশ্বের বুকে বিদ্যমান নানা মডেলের সাথে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য ও সীমারেখা নির্ণয়, আশা-আকাক্সক্ষা ও বাস্তবতাকে বিবেচনায় রাখা, মডেলটি কার্যকর উপযোগী হওয়া, বিভিন্ন বিরোধী ও প্রতিপক্ষ মতামতের মোকাবিলায় টিকে থাকার মতো বৈজ্ঞানিক ও জ্ঞানগত শক্তি ও প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রভৃতি ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস বাস্তবায়নের আবশ্যকীয় উপাদান বলে বর্ণনা করেন।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস কেন্দ্রের সদস্যদের উদ্দেশে আরো যেসব উপদেশ দান করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, মডেল নির্মাণে তাড়াহুড়া না করা, কেন্দ্রের পাঁচ বছরের কার্র্যক্রমের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা, বিশ্বের প্রচলিত উন্নয়ন মডেলগুলোর শক্তিশালী ও কার্যকর সমালোচনা করা, সিরিয়াস হয়ে জিহাদী মনোভাব নিয়ে বিপ্লবী চেতনায় কাজ করা এবং তরুণ, উন্নত চিন্তার অধিকারী, মজবুত ঈমানদার ও বিপ্লবীদের নিরবচ্ছিন্ন কাজ আর দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ও সর্বমহলে পর্যালোচনাভিত্তিক কার্য সম্পাদন ।
হযরত আযাতুল্লাহ খামেনেয়ী মডেলটি সর্বস্তরে আলোচ্য বিষয়ে পরিণত করার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাকে আলোচনা-পর্যালোচনার এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে, যাতে তা তরুণদের মন-মগজে বিরাজমান অর্থাৎ দেশ পরিচালনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সার্বক্ষণিক ধ্যান ধারণায় রূপান্তরিত হয়।
মহামান্য রাহবারের ভাষণের পূর্বে ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস এর সর্বোচ্চ পরিষদের চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েজ যাদে কেন্দ্রের কর্মকা- ও ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস এর কেন্দ্র ও বিভিন্ন ধাপের গৃহীত কর্মসূচি ও তৎপরতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট তুলে ধরেন।

বিশ্ব সিনেমার অগ্রদূত আব্বাস কিয়ারোস্তামি

সাইদুল ইসলাম
আব্বাস কিয়ারোস্তামি। বিশ্ব সিনেমার স্বনামধন্য এক নক্ষত্রের নাম। যিনি সত্যিকার অর্থেই গত চার দশকের বেশি সময় ধরে রাজত্ব করে গেছেন বিশ্ব সিনেমাজুড়ে। তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, চিত্রগ্রাহক ও আলোকচিত্রশিল্পী।
১৯৭০ সাল থেকে নিয়মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্য এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য সব ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করে গেছেন তিনি। ‘কোকের ত্রয়ী’, ‘টেস্ট অব চেরি’ এবং ‘দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস’ এর মতো সিনেমার জন্য আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি অর্জন করেন; এর মধ্যে ‘টেস্ট অব চেরি’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘পাম দো ওর’ অর্জন করে।
শিল্পের সাথে তাঁর প্রথম পরিচয় চিত্রকলার মাধ্যমে। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা শুরু করেন যার ফলশ্রুতিতেই ১৮ বছর বয়সে লাভ করেন প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। এর কিছুদিন পরই বাড়ি ছেড়ে তেহরান চলে যান ইউনিভার্সিটি অব তেহরানে চারুকলায় পড়ার জন্য। চিত্রকলার প্রবেশিকা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে যোগ দেন ট্রাফিক পুলিশের চাকরিতে। কিন্তু তিনি দমে যান নি। কিছুদিন পর আবার পরীক্ষা দিয়ে চিত্রকলায় উত্তীর্ণ হন। যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। চিত্রকর, নকশাবিদ ও অংকনবিদ হিসেবে ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করেন।
এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বখ্যাত এই চলচ্চিত্রকার বলেছিলেন : ‘১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সালের মধ্যে বোধহয় ১৫০টিরও বেশি বিজ্ঞাপন বানিয়েছিলাম। সেগুলো খুব উপভোগ করতাম। কাজটা আসলেই বেশ মজার; মাত্র এক মিনিটের মধ্যে ভূমিকা, পুরো গল্প এবং আপনি দর্শকদেরকে যা জানাতে চান তা তুলে ধরতে হয়। এর জন্য প্রথমেই একটা ভালো গল্প বানাতে হয়, এরপর খুব দ্রুত সেটা দর্শকদেরকে বোঝাতে হয় এবং অবশ্যই এমনভাবে বোঝাতে হয় যাতে বিজ্ঞাপন দেখার পর তারা পণ্যটা কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কমার্শিয়াল আর গ্রাফিক আর্ট থেকেই আমি সিনেমা সম্পর্কে জেনেছি। গ্রাফিক প্রকল্পগুলোতে একটা পৃষ্ঠা, কলাম বা ইনসার্ট থাকে; এই ছোট্ট পরিসরেই এমন কিছু আঁকতে হয় যাতে দেখামাত্রই সবাই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আমার তো মনে হয়, গ্রাফিক্সই সব শিল্পের জনক।
সীমাবদ্ধ পরিসর এবং বাণিজ্যিক চাপের কারণে এখানে শিল্পীরা তাঁদের কল্পনাশক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হন। বিজ্ঞাপনে কাজ করার শেষ কয় বছরে আমি বেশ কিছু ইরানি সিনেমার ক্রেডিট সিকোয়েন্সও ডিজাইন করেছিলাম। সে সময়ই আমার কর্মজীবনের মোড় ঘুরে যায়, বাণিজ্যিক গ্রাফিক শিল্প থেকে অবাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ি। আসলে ক্রেডিট সিকোয়েন্স ডিজাইন করার সময়ই আমি আমার ক্যামেরা খুঁজে পেয়েছিলাম।’
সিনেমার ভেতর দিয়ে জীবনের অর্থ খুঁজে বেড়ানো, কিংবা কখনো জীবনকে স্থূল আর সমস্ত অর্থহীনতার সামনে দাঁড় করিয়ে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছেই নিয়ে যাওয়ার কারিগর ছিলেন কিয়ারোস্তামি।
বিষয়-বৈচিত্র্য গল্পভাবনা কিংবা ক্যামেরার কলাকৌশল আর নতুন উদ্ভাবনের দিকে তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর চলচ্চিত্র সম্পর্কে বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, চলচ্চিত্র সম্পর্কে দর্শকদের নতুন মাত্রায় ভাবতে শিখিয়েছেন কিয়ারোস্তামি। সিনেমা সম্পর্কে দর্শকদের চিন্তার জগতে নিয়ে যেতে হবে বলেই তিনি হয়তো তাঁর চলচ্চিত্রে কোন উপসংহার টানতেন না। যেকারণে দর্শকরা তাঁদের ভাবনার মধ্য দিয়ে একেকজন তাঁর চলচ্চিত্র সম্পর্কে একেক রকম উপসংহার টানার চেষ্টা করতেন। অর্থাৎ চলচ্চিত্র সম্পর্কে দর্শকদের চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগানোর এই কৌশলটা তিনি দেখিয়ে গেছেন।
বিশিষ্ট চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ফাহমিদুল হক বলেন, ইরানি চলচ্চিত্র বলতেই বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে একটা শ্রদ্ধামিশ্রিত ভালোবাসা রয়েছে। যার পেছনের কারিগর কিয়ারোস্তামিদের মতো নির্মাতারা। কিয়ারোস্তামি ক্যামেরাকে সৃজনশীল অভিপ্রকাশের উন্নত মাধ্যম মনে করতেন। একটা বিষাদময় মুহূর্তে একটা মৃদুমন্দ বাতাস কীভাবে একজন মানুষের জীবন পাল্টাতে পারে এটাও তিনি তাঁর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেখিয়ে গেছেন।
কিয়ারোস্তামি সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই যখন বর্বরোচিত হামলার এক ভয়াবহ চিত্র প্রত্যক্ষ করছিলাম তখন নিজেকেও নিরাপত্তাহীন মনে হচ্ছিল। কোন কিছুই ভালো লাগছিল না। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এমন সময় কিয়ারোস্তামির একটি ছবি আমার মনের বিষণœতাকে দূর করে দেয়। একমাত্র শিল্পই যে পারে সকল প্রকার হিংসা দূর করে মানুষকে ভালোবাসার চাদরে আবৃত করতে তা কিয়ারোস্তামিই তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে আমাদের দেখিয়ে গেছেন।
সিনেমার পরতে পরতে স্বাভাবিকতা চাইতেন কিয়ারোস্তামি। ছবিটাকে যতভাবে পারা যায় বাস্তবতায় মুড়িয়ে দিতেন তিনি। তাঁর চরিত্ররা কখনোই অভিনয় করেনি। অলিভ ট্রি, উইন্ড উইল ক্যারি আস, টেস্ট অব চেরি কিংবা শিরিন সিনেমার সেই দর্শকদের অভিব্যক্তি যেভাবে প্রাণবন্ত করে তিনি নির্মাণ করলেন যেকেউ হয়তো ছবিগুলোকে চরিত্রের আড়ালে লুকিয়ে দৃশ্যধারণ করা বলে ভেবে বসতে পারে।
কিয়ারোস্তামির সিনেমায় প্রধান সুবিধাটা হচ্ছে, একজন কবি যখন কিয়ারোস্তামির সিনেমা দেখেন তখন তিনি কাব্যরসসমৃদ্ধ সমস্ত ব্যাপারই তাঁর সিনেমায় খুঁজে পাবেন। একইভাবে নির্মাতা এবং ভিন্ন ধাঁচের গল্প বলতে চাওয়া কোনো স্টোরি টেলারও।
যে উঠতি সিনেমা নির্মাতা ভিন্ন স্বাদের গল্প বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি যখন আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমায় মগ্ন হবেন তখন তো তাঁর নেশা পেয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, সিনেমা দিয়ে সম্মোহন করার যে অভূতপূর্ব ক্ষমতা, তিনি তার পুরোটাই দেখিয়ে গেছেন জীবনভর।
১৯৭৯ সালের যুগ পরির্বতনকারী ইরানি বিপ্লবের পর যে সকল সফল চলচ্চিত্রকার ইরানে থেকে গিয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম আব্বাস কিয়ারোস্তামি। বিপ্লব-পরবর্তীকালে কিছুসংখ্যক নির্মাতা পশ্চিমা দেশগুলোতে চলে যান। কিন্তু আব্বাস বিশ্বাস করেন দেশে থাকাটাই তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি নিজেই বলেছেন, ইরানে থেকে নিজের জাতীয় পরিচয় ও সত্তা আঁকড়ে থাকার কারণে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন মহিমান্বিত হয়েছে।
‘মূলোৎপাটিত করে একটি গাছকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেলে সে আর ফল দেবে না। অন্তত আপন স্থানে সে যত ভালো ফল দিত নতুন স্থানে তত ভালো ফল দেবে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আমি মনে করি দেশ ছেড়ে গেলে আমার অবস্থা হতো সেই গাছের মতো।’
বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই কারিগর গত ৪ জুলাই ২০১৬ হাজারো ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি যে কতটা মানুষের হৃদয় জুড়ে ছিলেন তারও কিছুটা আঁচ পাওয়া গেল তাঁর মৃত্যুর পর। টুইটার, ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে আব্বাস কিয়ারোস্তামির স্মৃতি নিয়ে চলছে মানুষের রোমন্থন। আফসোস আর চোখের জলে শোকে কাতর তাঁর অনুসারি ও ভক্তশ্রেণি। যেকোনো ধরনের ইগো ঝেড়ে ফেলে তাঁর সমসাময়িক আর পরবর্তী প্রজন্মের নির্মাতা বা আর্টিস্টরা অনায়াস ভঙ্গিতে গুরুর আসনে রেখে কথা বলছেন আব্বাস সম্পর্কে।
তাইতো এমন শোকের দিনেও ইরানি সিনেমার জন্য আফসোস করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলে ওঠেনÑ ‘বিশ্ব সিনেমা অঙ্গনে কা-ারিকে হারালো ইরান।’ এমনকি তাঁকে ইরানি সিনেমার ওস্তাদ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো শোকে পাথর সংস্কৃতিমন্ত্রী আলী জান্নাতিও। আব্বাস কিয়ারোস্তামিকে একজন মানবতাবাদী আখ্যা দিয়ে বিশ্ব সিনেমার অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এমনকি আব্বাস যে নতুন ধরনের সিনেমা ইরানে শুরু করেছেন তা বিশ্বজুড়ে আজ ছড়িয়ে গেছে বলেও আব্বাস কিয়ারোস্তামির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
২০১১ সালে ‘এ সেপারেশন’ নির্মাণ করে বিশ্বজুড়ে শোরগোল ফেলে দেয়া অস্কারজয়ী নির্মাতা আলি আসগর ফারহাদি। তিনি কোনো ধরনের রাখঢাক না রেখেই বলতে পারেন, আব্বাসের জন্যই আজ ইরানি সিনেমা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তাঁর জন্য তিনি নিজেও আজ নির্মাতা হিসেবে সম্মানিত।
বিশ্বখ্যাত হলিউড নির্মাতা ও অভিনেতা মার্টিন বলেন, আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমা মানেই ওভার ফ্লো। সৌন্দর্য আর শৈল্পিকতায় মোড়ানো।
নিউইয়র্কের চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন ‘দ্য ফিল্ম স্টেজ’ (ঞযব ঋরষস ঝঃধমব) কিয়ারোস্তামির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে লিখেছে, বিশ্ব সম্ভবত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে হারালো।
জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ মানুষদের জীবনের সন্ধান দিয়ে, বেঁচে থাকার মোমেন্ট তৈরি করে দিয়ে নিজেই হারিয়ে গেলেন কোন অজানায়, সেই মানুষটাকে আর যাই হোক অন্তত শোক জানানো শোভন হবে না। কেননা, ‘টেস্ট অব চেরি’র মতো তাঁর মহান এই সৃষ্টিকর্মগুলো যত দিন বিশ্বের মানুষকে ছুঁয়ে যাবে তত দিন পর্যন্ত জীবনের আরেক নাম হয়ে থাকবেন আব্বাস কিয়ারোস্তামি।
আর্ট ফিল্মের অন্যতম কিংবদন্তী ও দিকপাল কিয়ারোস্তামি ৪০ বছরে ৪০টিরও বেশি প্রামাণ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য ছায়াছবি উপহার দিয়ে গেছেন। কয়েক ডজনেরও বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

ইধির সঙ্গে দেখা, জীবনের প্রতিটি দিনই ছিল যার সেরা

রাশিদুল ইসলাম

পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী ও একই সঙ্গে গরীব ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত তিনি। আবার গরীব দুঃখীদের সেবায় যার তার দানকে তিনি গ্রহণ করেন নি। যাঁরা তাঁকে দিয়েছেন তা ইধি অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন অন্যের প্রয়োজেন। ভারত থেকে হিজরত করে পাকিস্তানে যান গরীবদরদি আবদুল সাত্তার ইধি। গত ৮ জুলাই, ২০১৬, শুক্রবার রাতে চলে গেলেন তিনি না ফেরার দেশে। ১৯২৮ সালের পয়লা জানুয়ারি ইধি ভারতে জন্মগ্রহণ করেন।
গত কয়েক বছর ধরেই তিনি কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ সরকার চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোরও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সবিনয়ে সেই প্রস্তাব বরাবরের মতই ফিরিয়ে দেন আবদুল সাত্তার ইধি। নিজের দেশের সরকারি হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা করাতে চান তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই ফেরেশতাতুল্য এই মানুষটি ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য। ভারতের মাদার টেরেজার সঙ্গেও বারবার তুলনা হয়েছে ছোটখাটো চেহারার এই মানুষটির। কিন্তু ইধির কর্মপরিধি মাদার তেরেজার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। বিশেষত তাঁর সাহায্যসেবা কার্যক্রমের বিরাট অংশ ছিল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যাপক। জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য-বিলাস সবকিছুকে অনেক আগেই বিসর্জন দিয়ে তিনি অর্জন করেছিলেন লাখো কোটি মানুষের আস্থা আর ভালোবাসা। স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন ‘ফকিরি জীবন’। বিশ্বমানবের সেবাই ছিল তাঁর ধর্ম। আবদুল সাত্তার ইধি পাকিস্তানের করাচিতে গড়ে তোলেন তাঁর এতিমখানা আর মানবসেবার প্রাণকেন্দ্র।
শুধু পাকিস্তান কেন, দুনিয়ার যেখানে মানুষ বিপদে পড়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিকম্প, সুনামি, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশ হোক ইধি তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। দেশ, স্থান, কাল ও পাত্রের সীমানা অতিক্রম করেছেন। তাই ইধির কোনো দেশ ছিল না, বর্ণ ছিল না, কালকেও অতিক্রম করেছেন তিনি। ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে যখন একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দল পাকিস্তান ভ্রমণ করে তখন ওই প্রতিনিধি দলের সদস্য হবার সুযোগ হয়েছিল আমার। করাচিতে আমরা ইধির হোমে একটি বেলা কাটিয়েছিলাম। জীবনের অসাধারণ এক মুহূর্ত হয়ে আছে সেই স্মৃতিটি। আমরা সাংবাদিকরা তাঁর হোমের নানা কার্যক্রম দেখে দুপুরে ইধির চারপাশে গোল হয়ে বসলাম। সাংবাদিক সম্মেলন পরিণত হয়েছিল পরম মমতার এক চেনা মানুষের অভূতপূর্ব সান্নিধ্যে।
ছোটখাটো চেহারা, একমুখ বড় সাদা দাড়ি। কখনও-সখনও পরতেন ইসলামের ঐতিহ্যবাহী টুপি। গরীবদরদি এই মানুষটির হাত ধরেই গড়ে উঠেছে পাকিস্তানের সব চাইতে বড় সমাজকল্যাণ সংস্থা ইধি ফাউন্ডেশন। অনাথদের জন্য হোম, গরীবদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল ক্লিনিক, অ্যাম্বুলেন্স, আরও অনেক পরিসেবা দিয়ে যাচ্ছে এই ফাউন্ডেশন।
এত সাদাসিধে জীবন খবু কম দেখা যায়। হোমে আমরা জানলাম, তাঁর দুটি মাত্র পোশাক। একটি ধুয়ে দেন। সেটি শুকালে গায়েরটি পবিরর্তন করেন। কালো রঙের পোশাক পড়েছিলেন তিনি। খুবই কম কথা বলেন। মুখে এক চিলতে হাসি লেগে থাকে। তাঁর হোমে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, সেলাইকাজ, নানা ধরনের হোম ওয়ার্কের মধ্য দিয়ে জীবনে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পরিশ্রমলব্ধ প্রচেষ্টা নিজের চোখে দেখেছিলাম।
অবাক হয়েছিলাম আমরা অর্থাৎ বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলটি। যখন আমাদের কেউ কেউ ইধি ফাউন্ডেশনের জন্য অল্প কিছু টাকা দান করতে চাইলাম, আমাদের জানানো হলো, বিদেশিদের দান ইধি ফাউন্ডেশন নেয় না। ভেবেছিলাম আমরা অতিথি তাই হয়ত দান গ্রহণযোগ্য নয়। পরে জানলাম, পাকিস্তানের নাগরিকদের কাছ থেকেই শুধু ইধি ফাউন্ডেশন দান গ্রহণ করে থাকে। আমরা এও জানলাম বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার তিনি এসেছেন।
ইধির হোম থেকে যখন ফিরলাম তখন আমাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেয়া হয় তেহমিনা দুররানির লেখা ‘আবদুল সাত্তার ইধি, অ্যান অটোবায়োগ্রাফি, এ মিরর টু দি ব্লাইন্ড’ নামের বইটি। বইটিতে ইধির অটোগ্রাফও রয়েছে।
ইধি ছিলেন স্পষ্টবাদী। কখনও কাউকে তোয়াজ করেননি। জঙ্গি হামলার জন্য তেহরিক-ই-তালিবানকে যেমন আক্রমণ করেছেন, আবার দুর্নীতির জন্য দুষেছেন সরকারকে। সমাজের সর্বস্তরের, সবধর্মের মানুষ তাঁকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন। নিজের সেবা দিয়েই তিনি সম্মান আদায় করে নিয়েছেন। মানবসেবায় জাতপাত তিনি কখনই বিবেচনায় আনতেন না। বছর তিনেক আগে এক সাক্ষাৎকারে প্রবীণ এই মানুষটি বলেছিলেন, যন্ত্রণাকাতর মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে আমার অ্যাম্বুলেন্স যখন হাসপাতালে পৌঁছে দেয়, তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, তখন আমি পরম শান্তি পাই। কারণ, মানুষের সেবাই আমার মিশন। বলতেন, ‘আমার জীবনের প্রতিটা দিনই আমার কাছে সেরা দিন।’
মানুষের জন্য মানুষÑ যা নিয়ে প্রচলিত ধারণা আমাদের সমাজে আছে তার একটা অগ্রসরমান ধারণা পোষণ করতেন ইধি। এজন্য তাঁর এ চেতনা দেশ ও সীমানা অতিক্রম করে গেছে। পাকিস্তান থেকে এ কারণেই ইধি দুর্যোগের সময় চলে গেছেন অন্য দেশে। ইরানের বাম শহরে যখন ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় তখন ইধি সেখানেও ছুটে যান মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ত্রাণ পৌঁছে দেন। তেমনি তিনি ছুটে গিয়েছিলেন সুনামি কবলিত দেশগুলোতে। তাঁকে দেখা গেছে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতায়। মানুষকে পুনর্বাসন ছাড়াও পীড়িতকে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা, খাবার সরবরাহ, শীতার্তদের কাপড় দেয়াসহ দুস্থদের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি ইধি ফাউ-েশন করে আসছে। পাকিস্তান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, দুবাই, আফগানিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, ইয়েমেন ও রাশিয়ায় ইধি ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে।
ইধি তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন, যখন তিনি শিশু ছিলেন তখন তাঁর মা তাঁকে স্কুলে যাওয়ার সময় দু’টি পয়সা দিতেন। একটি পয়সা তাঁর জন্য এবং আরেকটি পয়সা অপরের জন্য খরচ করতে। ইধি অনেক সময় অন্য কারো জন্য পয়সাটি খরচ না করতে পারলে তাঁর মা তাঁকে তিরস্কার করতেন। মা বলতেন, ইধি তুমি কেমন করে অন্যের প্রয়োজনের কোনো তালাশ না করে থাকতে পার? এভাবে অন্যের প্রয়োজনের দিকে নজর না দিয়ে শুধু নিজের প্রয়োজন মেটানো এক ধরনের স্বার্থপরতা এবং লোভী হিসেবে নিজেকে সংকীর্ণতায় সঁপে দেয়া বলেও ইধিকে তাঁর মা সাবধান করে দিতেন। ইধির বাবা একজন বিধবা মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন।
ইধি তাঁর এই মা-কে সারাজীবন শুধু সেবা করার সুযোগ পাননি, কীভাবে মানুষের জন্য সেবা করে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে হয় তার শিক্ষাও পেয়েছেন। ইধি ছোটবেলা থেকেই অবসরে দুঃস্থ মানুষের জন্য কী প্রয়োজন তার খোঁজে ও প্রয়োজন মেটাতে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতেন। ইধির মা নিজে মহিলাদের জন্য সমিতির মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতেন। প্যারালাইসিস ও ডায়বেটিসের রোগী হয়েও ইধির মা অন্যের জন্য নিজের সময় যেভাবে ব্যয় করতেন তা দেখে শৈশব থেকেই ইধি পরোপকারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। আগে থেকেই রেকি করে আসতেন কার ঘরে খাবার নেই, ওষুধ কিনতে পারছে না কোন পরিবার। তারপর কিশোর ইধি খাবার কিংবা ওষুধের প্যাকেট কিংবা টাকার ইনভেলাপটি ওই বাড়ির জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতেন দৌড়, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যাবার সময় পাকিস্তান ও ভারতে লাখ লাখ শরণার্থী অভিবাসী হিসেবে দেশ পরিবর্তন করেন। নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানের করাচিতে ইধির পরিবার চলে আসে। ইধির বয়স তখন কুড়ি বছর। তখন থেকেই ইধি শরণার্থীদের দেখভাল করতেন। প্রথমে পেন্সিল, ছোট ছোট তোয়ালে, ব্লেড ফেরি করে রাস্তায় রাস্তায় বেচতেন ইধি। এরপর পানের দোকান, ক্রোকারিজের দোকান, পত্রিকার হকারি অর্থাৎ একের পর এক জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য লড়াইয়ের পাশাপাশি শরণার্থীদের দেখভাল করতে সমিতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। এধরনের সামাজিক কাজ করতে গিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়েছে, তবু মানুষের সেবা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি ইধি।
মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো নিয়ে যে প্রচলিত ধারণা আছে আমাদের সমাজে, তার সঙ্গে বেশ বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে ইধির। তিনি মনে করেন মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা শুধু দায়িত্ব নয়, কঠিন কর্তব্য শুধু নয়, এ হচ্ছে ঝড়ো হাওয়াময় উত্তাল সাগরে নিজেকে সঁপে দিয়ে মানুষের কল্যাণে স্বর্গসুখ অনুভব করা। তিনি বলেন, ধামাধরা কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের সেবা করা সম্ভব নয়। যতক্ষণ না মানুষের দুর্ভোগ নিজের অনুভবে সম্পৃক্ত করা না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দুর্দশা দূর করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ধরনের অনুভবের অভাবই বরং এক ধরনের নৃশংস ব্যাপার হয়ে সমাজে বিরাজ করে। যা অনেকেই বুঝতে চান না।
১৯৫৭ সালে করাচিতে ভয়াবহ ধরনের ফ্লুতে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তখন ইধি তাঁবুর ব্যবস্থা করে, ওষুধ সংগ্রহ করে চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। পাকিস্তানে অন্তত ৩শ’ ক্লিনিক, কয়েক হাজার অ্যাম্বুলেন্স, অসংখ্য ভ্রাম্যমান ক্লিনিক, ৮টি হাসপাতাল, একটি ক্যান্সার হাসপাতাল, আইনি সহায়তা, কুড়ি হাজার পরিত্যক্ত শিশুকে শিক্ষাদীক্ষায় মানুষ করে তোলা, এতিমখানাগুলোতে ৫০ হাজার ছেলেমেয়েকে প্রতিপালন এবং অন্তত ৪০ হাজার নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বছরের পর বছর অন্ধকারে আলোর যে প্রদীপ জ্বালিয়ে গেলেন ইধি তা মানুষকে মহৎ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে আজীবন। কত বিনিদ্র রাত ও দিন ইধির কেটেছে মানুষের কল্যাণে তার খোঁজ কে রাখে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইয়েমেন যেখানেই বোমা বিস্ফোরণে নিরীহ মানুষ আহত হয়ে কাতরায় সেখানেই ইধির অ্যাম্বুলেন্স ছুটে যায় তাদের জীবন বাঁচাতে। কয়েক বছর আগে করাচিতে প্রচ- তাপদাহে অন্তত ১ হাজার মানুষ মারা যায়। তখন ইধির অ্যাম্বুলেন্সগুলো দিনরাত ছোটাছুটি করে মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে। আর এসব আয়োজনের জন্য ইধি রাস্তায় রাস্তায় মানুষের কাছে হাত পেতেছেন।
অসাধারণ এক সাদাসিধা জীবন ছিল ইধির। সামান্য সব্জি কিংবা ডাল রুটি পেলেই খাওয়া হয়ে যেত তাঁর। কলকাতায় মাদার টেরেজার মতো মানবকল্যাণে নিবেদিত ইধিকে দেখতেন ভারতের মানুষ। গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ইউনেস্কো মদনজিত সিং পুরস্কার, লন্ডন পিস অ্যাওয়ার্ড, সিওল পিস অ্যাওয়ার্ড, হামদান অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার পিছু নিয়েছে ইধির। কিন্তু ইধি মানুষের জন্য সারাজীবন ছোটাছুটি করেছেন। খ্যাতির পেছনে তাঁর কোনো ফুরসত ছিল না। ইধির ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁকে তাঁর গ্রামে দাফন করা হয়। তিনি তাঁর চোখ দু’টি দান করে গেছেন। এ ব্যাপারে ইধির বক্তব্য ছিল, ‘কেন আমরা আমাদের মৃতদেহের অপচয় করব; বরং কবরে যাওয়ার আগে যদি কারো জন্য উপকারে লাগতে পারি এবং একজন অভিভাবক হিসেবে তাই করা উচিত।’
একবার রোম রেলস্টেশনে ইধি তাঁর পায়ের চপ্পল জোড়া হারিয়ে ফেলেন। কি আর করা, খালি পায়ে ইধি ঘরে ফিরলেন। পরদিন তাঁকে এক জোড়া গামবুট দেন এক বৃদ্ধা। তা পায়ে বড় হলেও সেটাই পড়ে তিনি চলতে শুরু করেন তাঁর গন্তব্যে। কারণ, তাঁর গন্তব্য ছিল লক্ষ্যভেদি ও স্থির। ব্রিটিশ সরকার একবার তাঁকে লন্ডনে থেকে যেতে অনুরোধ করেছিল। চাকরিও জুটেছিল। কিন্তু তা সম্মানের সাথে প্রত্যাখ্যান করে ইধি বলেছিলেন, পাকিস্তানের মানুষের জন্য আমাকে কিছু কাজ করতে হবে। অথচ পাকিস্তান ইধিকে পাওয়ার আগে কল্যাণময়ী রাষ্ট্র ছিল না। ইধি এ অভাব অনেকটাই পূরণ করেছেন। এজন্য তাঁকে অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। জীবনে প্রথম এক রেলভ্রমণে তুরস্কের এক নারীকে তাঁর ভালো লেগেছিল। ব্যস ওইটুকু পর্যন্তই। এরপর অন্তত সাতজন নারীর বিয়ের প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন ইধির কখনই ছিল না। তিনি তাঁর সময় ও শক্তিকে ব্যয় করেছেন মানুষের অসময় ও শক্তিহীনের মাঝে। মৃতদেহ সংগ্রহ করা, থানায় পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া করে অসহায় মানুষের মুক্তির ব্যবস্থা, ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষা, কেউ যদি কোনো মৃতদেহের দাবি না করে তাহলে তাকে নিজের স্বজন হিসেবে দাফন করার মতো সময়ের ঘাটতি যাঁকে পীড়া দিত তাঁর প্রিয়তমাকে দেয়ার মতো মধুর সময় কি করে হতে পারত!
ইধি নিজেও আত্মজীবনীতে লিখেছেন, আমি বুঝি মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা। তারা সেবার পর তাঁদের হাত ধুয়ে ফেলেন। কাপড় ধুয়ে ফেলেন। শুঁকে দেখেন কোনো দুর্গন্ধ অবশিষ্ট আছে কি না। তাঁরা ঘরে দৌড়ে যান গোসল করার জন্য। আমি তখন ফুলে ফেঁপে ওঠা অসহায় মৃতদেহগুলো সাগর থেকে তুলে আনি। কালো মানুষের শরীর ভেসে যায় নদীতে। আমি তাকে কোলে তুলে আনি। গর্ত থেকে কাউকে উদ্ধারের জন্য ছুটি। ম্যানহোলের ভেতর থেকে আর্তনাদ শুনে তাকে উদ্ধারের জন্য দৌড়ে যাই। আগ্নিদগ্ধ কাউকে বাঁচাতে, সেতুর নিচে নিমজ্জিত কাউকে তুলতে, রেল সেতু ভেঙে যে বগিতে আটকে আছে মৃতদেহ হয়ে তাকে, নর্দমায় কোনো শিশুকে, রাস্তায় কোনো অসহায় ব্যক্তিকে, কারণ, কোনো কর্তৃপক্ষ কিংবা তার স্বজন তাকে অস্বীকার করেছে, না হয় দূরে ছুঁড়ে ফেলেছে।
পাকিস্তান ভ্রমণের সময় করাচিতে ইধি ফাউ-েশন থেকে বের হতে মন চাইছিল না। আমাদের হাতে তুলে দেয়া ইধির আত্মজীবনীটি নাড়াচাড়া করছিলাম। বইটিতে ইধির একটি ফটোগ্রাফ দেয়া আছে। সাদা ধবধবে দাড়ি আর তার মুখম-লের একপাশে অন্ধকার ভর করেছে। অনেকটা আবছা। মনে হয় আমাদের সমাজে যে অন্ধকার রয়েছে তা দূর করেই আলো হয়ে ইধি ওই ছবিতে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তার ছবি দেখে কবি বা বিপ্লবী মনে হয়েছে। কিন্তু কেন? জীবনকাব্যের মহানায়ক ছিলেন ইধি। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। পাকিস্তানের মতো দেশে অনেক নারীকে বিয়ে বহির্ভূত সন্তান জন্মদানের জন্য হত্যা করা হতো। এটি শুনে ইধি একবার এক মসজিদের সামনে গিয়ে দেখেন সদ্যভূমিষ্ঠ একটি শিশুকে পাথর ছুঁড়ে মেরে হত্যার জন্য জড়ো হয়েছে কিছুসংখ্যক মানুষ। তথাকথিত ধর্মীয় নেতারা এ আদেশ দিয়েছেন। ইধি তাঁদের সামনে গিয়ে প্রশ্ন তুললেন, কে এই সদ্যজাত মানুষকে পাপী হিসেবে হত্যার ফতোয়া দিয়েছে, যখন নিরপরাধ কোনো মানুষকে হত্যার কোনো আদেশ দেয়া হয়নি? তাই পিতৃপরিচয়হীন সন্তানকে হত্যা করে আরেকটি জঘন্য পাপ করার আগে তাদের ইধি ফাউ-েশনে দিয়ে দিতে আহবান জানাতেন তিনি। এভাবে অন্তত ৩৫ হাজার পিতৃ পরিচয়হীন সন্তানকে মানুষ করেছেন যাদের পরিত্যক্ত হিসেবে তার অভিভাবক বা স্বজনরা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। এ নিয়ে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ইধির কম মনোমালিন্য হয়নি। তাঁরা বলতেন, এসব সন্তান কখনো তাদের পিতার পরিচয় পেলেও তার সম্পদের অধিকার পাবে না। ইধি তাঁদের বলতেন, আল্লাহর নির্দেশকে যারা তুচ্ছ বিবেচনা করে থাকেন তাদের সাবধান হওয়া উচিত।
দুর্নীতির জন্য সাধারণ মানুষ যে চরম বৈষম্যের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছিল তাদের সম্পর্কে ইধি একাধিকবার বিভিন্ন সমাবেশে শাসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এভাবে দুর্নীতি চলতে থাকলে বঞ্চিত মানুষ একদিন পাগলের মতো উঠে আসবে এবং ক্ষমতার তখতে তাউস ভেঙে ফেলবে। দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করে তিনি অনেক সময় তাদের স্বঘোষিত ডাকাত বলেও অভিহিত করতেন। অনেক সময় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের বন্দুক যুদ্ধের মধ্যে ইধির অ্যাম্বুলেন্স আটকে যেত আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময়। ইধি বলতেন পুলিশের উচিত বন্দুক যুদ্ধের সাময়িক বিরতি দেয়া। কারণ, যতক্ষণ না আহত মানুষকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে রওয়ানা না দেয়া যায় ততক্ষণ ক্ষণিকের জন্য হলেও গোলাগুলি বন্ধ করা উচিত।
একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি হচ্ছেন ইধির সহধর্মিনী বিলকিস। ইধির দিনভর আর্তের জন্য ছোটাছুটি ও ব্যক্তিগত কঠোরতা বিবাহিত জীবনের জন্য সহায়ক ছিল না। আবার তাঁর ভাই আজিজ, যাঁকে তিনি গড়ে তুলেছেন, শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন এসবই পাওয়া যায় তাঁর আত্মজীবনীতে। ইধির পরিবার যখন হজে যায়, তখন অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকায় তাঁর স্ত্রী বিলকিস অতিরিক্ত কাপড় সঙ্গে নিতে পারেননি। একবার কোয়েটায় যখন তীব্র গরম পড়ে, তখন ইধি তাঁর স্ত্রীর জন্য রাশিয়ার সৈনিকদের ব্যবহৃত একটি ওভারকোট কিনে দেন। ইধির মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত থাকার মতো সময় তাঁর হয়নি। কিন্তু ইধির স্ত্রী বিলকিস এসব ঝামেলা সহজেই সামলিয়েছেন। কারণ, তিনি জানতেন তাঁর স্বামীকে যে কোনো আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক দুর্যোগের সময়Ñ তা লেবাননের গৃহযুদ্ধ থেকে এমনকি বাংলাদেশের সাইক্লোনে দুর্গতদের সাহায্যের জন্য ছুটতে হয়।
কোনো আতঙ্কই ইধির অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, সাহসী সৈনিকদের মতোই তাঁরা দুর্গতদের তুলে হাসপাতালে পৌঁছে দেন, তা দুর্যোগ কিংবা গোলাগুলির মধ্যেই হোক না কেন। ইসলামে যে মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতার কথা বলা হয়েছে তারই মূর্তমান প্রতীক ছিলেন ইধি। তিনি নিজেও বলতেন, যতক্ষণ না আর্তের আর্তনাদ না থামবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়াতে তিনি ছুটে যাবেন এবং এই ছুটে যাওয়ার মধ্যেই তিনি কল্যাণ দেখতে পেতেন।
নির্বাহী সম্পাদক, আমাদের সময় ডটকম

‘ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র ও মুসলিম বিশ্বের অনৈক্যই আল-কুদস মুক্তির প্রধান অন্তরায়’

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন: ইসলামের প্রথম কিবলা পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস বা আল-কুদ্স আশ-শরিফ। হযরত ইয়াকুব (আ.) এ পবিত্র মসজিদের প্রথম নির্মাতা। পরবর্তীকালে হযরত দাউদ (আ.) ও তদপুত্র সুলাইমান (আ.) এ মসজিদের পুনঃনির্মাণ করেন। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) ‘মসজিদুল হারাম’ থেকে ‘মসজিদুল আকসা’ হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে পবিত্র মেরাজ শরিফ সম্পন্ন করেন। এই মসজিদুল আকসাই মুসলমানের প্রথম কিবলা। ইসলামের পবিত্র তিনটি মসজিদের একটি। বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানদের অন্তরের অন্তস্থলে এ মসজিদের জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রয়েছে। শত শত বছরব্যাপী ইহুদি-খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল সৃষ্টি করে এ মসজিদটিকে দখল করে নেয়া হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি এক দিকে ইহুদিবাদের বিষাক্ত ষড়যন্ত্র অন্যদিকে ‘আল-কুদস’ মুক্ত করা ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রাম সমান ভাবে চলছে। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী আল-কুদ্স মুক্ত করার লক্ষে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের ডাক দেন। এ লক্ষে তিনি পবিত্র রমযান মাসের শেষ জুমআ বারকে বিশ্বব্যাপী ‘আল-কুদ্স দিবস’ হিসেবে পালনের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমদেরকে ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের সঙ্গে আল-কুদ্স মুক্তি সংগ্রামে একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানান।
এরই ফলশ্রুতিতে আল-কুদ্স ও ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ হয়। তিন তিন বার ইসরাইলি হানাদাররা ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের কাছে পরাজিত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। শুরু হয় ষড়যন্ত্রের নতুন ইতিহাস। কারণ, যায়নবাদী ইসরাইল এবং তাদের অবৈধ জনক বৃহৎ শক্তিবর্গ ষড়যন্ত্রের নতুন ছক তৈরি করে। উদ্দেশ্য একটাই। শান্তির ধর্ম ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে অবৈধ দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এরই ধারাবাহিকতায় রাতারাতি আফগানিস্তানে সৃষ্টি হলো তালেবান। নাটকের দ্বিতীয় পর্যায়ে সৃষ্টি করা হলো ‘আল-কায়েদা এবং সবশেষে চলছে ইসলামিক স্টেট তথা আইএস এর বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকা-। এসব নাটকের পেছনে রয়েছে ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র ও তার সুদক্ষ পরিচালনা। ওদের হাতের পুতুল হয়ে মুসলিম দেশগুলোর বিভিন্ন গ্রুপ শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন মাযহাবি বিতর্ক সৃষ্টি করে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির মতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে আজকের দিনে আল-কুদ্স মুক্তির সংগ্রাম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা মাজহাবী বিতর্কে জড়িয়ে আত্ম ধ্বংসে লিপ্ত হচ্ছে। ইসরাইলের নিরাপত্তা ও সাম্রাজ্যবাদীদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে। বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ইসলামি শক্তির উত্থানরোধে যায়নবাদী ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আমির-ওমরাগণ শিয়া-সুন্নিসহ বিভিন্ন মাযহাবি দ্বন্দ্ব বাধিয়ে নিকৃষ্ট সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটাই এ সময়ের মুসলিম বিশ্বের করুণ ট্রাজেডি।
ইহুদিবাদের ইতিহাস ষড়যন্ত্র, মোনাফেকী আর শয়তানীর ইতিহাস। এদের হাতে শত শত নবী-রাসূল প্রাণ হারিয়েছেন। এসব কারণে এরা বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর হাতে বহুবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। একমাত্র ইসলামের ও মুসলমানদের শাসনামলে এরা শান্তিতে ছিল। মসজিদুল আকসাকে কেন্দ্র করে ২৭ হাজার বর্গফুট নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) ফিলিস্তিনে বিনা রক্তপাতে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেন।
১০৬৯ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে। ১১৮৬ সালে কুর্দী বীর গাজী সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী খ্রিস্টান শক্তির হাত থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসসহ ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধার করেন। এর পর থেকেই ইহুদিবাদীরা ও তাদের দোসর ও খ্রিস্টানরা নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় এ পবিত্র ভূমি দখল করার জন্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাতে ইহুদিরা তুরস্কের খলিফা আবদুল হামিদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনে জমি কেনার প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। ১ম মহাযুদ্ধের সময় মিত্র শক্তির পক্ষে গোয়েন্দাগিরি সহ বিভিন্ন সার্ভিস দিয়ে তারা ব্রিটিশ সরকারের সান্নিধ্য পায়। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। ব্রিটিশরা একজন ইহুদিকে ফিলিস্তিনের গভর্নর হিসেবে বসালে তাদের নীল নকশা বাস্তবায়ন সফল হয়। ইহুদিবাদের সাথে গোপন চুক্তি মোতাবেক ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এক সময় আফ্রিকার উগান্ডায় অথবা অস্ট্রেলিয়ার কিছু দ্বীপ নিয়ে ও এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ওঠে। কিন্তু তা না করে ইহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলমানদের দুর্বল করা ও ঐক্য ধ্বংসের জন্য তাদের বুকের উপর অর্থাৎ ফিলিস্তিনে ইসরাইল নামের অবৈধ রাষ্ট্র বিষফোঁড়া হিসেবে চাপিয়ে দেয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ ফিলিস্তিনের ৫৪% খাস ভূমির উপর ইসরাইল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রস্তাব পাশ করে। এর সূত্র ধরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোর ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ‘বেলফোর ঘোষণা’র মাধ্যমে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের জন্ম দেয়। এর পর থেকে শুরু হয় ফিলিস্তিনের জনগণের উপর নির্মম নির্যাতনের পালা। লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরবাড়ি ফেলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় লেবানন, সিরিয়া জর্ডান সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে। সারা বিশ্ব থেকে ইহুদিদের এনে মুসলমানদের ঘর-বাড়িতে বসিয়ে দেয় ব্রিটিশ আমেরিকার মদদপুষ্ট যায়নবাদী ইসরাইল সরকার। ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলো যুদ্ধে হেরে গেলে জর্ডান, সিরিয়া ও মিশরের বিস্তীর্ণ ভূমি চলে যায় ইসরাইলি দখলে। ওদের নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়তেই থাকে। প্রতিনিয়ত ওরা হত্যা করে ফিলিস্তিনের নারী-শিশু বৃদ্ধ তথা গণ মানুষদের। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধেও আরবরা প্রকারান্তরে পরাজয় বরণ করে। ১৯৮২ সালে ইসরাইল লেবানন দখল করে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা কর। ১৯৬৯ সালে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ওআইসিÑ ইসলামি সম্মেলন সংস্থা। ১৯৭৪ সালে ইসরাইল আল-আকসা মসজিদে খনন কাজ শুরু করে। ১৯৭৯ সালে ন্যাক্কারজনকভাবে মিসরের প্রেসিডেন্ট ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে কাম্প ডেভিড চুক্তি করেন। ১৯৬৪ সালের ৮ মে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লক্ষ্যে পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) গঠিত হয়। ইয়াসির আরাফাত ছিলেন এর নেতা। তিনিও এক সময় ইসরাইলের সঙ্গে আপোসের পথ ধরেন। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর আল-কুদ্স মুক্তি আন্দোলন নতুন পথের সন্ধান পায়। ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (র.) আল-কুদ্স মুক্ত করার জন্য বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি রমযানের শেষ জুমআ বারকে ‘আল-কুদ্স’ দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এ দিনে সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা ঘোষণার আহ্বান জানান। তিনি আল-কুদ্স মুক্তির লক্ষে ‘তারিকুল কুদ্স’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিবর্গ ও ইসরাইল নতুন পরিকল্পনা করে। তারা ইসরাইলকে রক্ষার লক্ষে সাদ্দামকে দিয়ে ইরান আক্রমণ করিয়ে ৮ বছরের ইরান ইরাক যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। আবার এক সময় তারা সাদ্দামকে মরা ইদুরের মতো ফেলে দিয়ে ইরাক দখল করে নেয়। এত কিছুর মধ্যেও আল-কুদ্স মুক্তির লক্ষে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের আপোষকামী নেতৃত্বের বুক চিরে বেড়িয়ে আসে প্রতিরোধ আন্দোলন ‘হামাস’। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের সংগ্রামী শিশু-কিশোররা ইসরাইলি সশস্ত্র হানাদার বাহিনীর উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের মাধ্যমে ‘ইন্তিফাদা’ আন্দোলনের জন্ম দেয়। হামাস এবং ইন্তিফাদাহর ফলশ্রুতিতে তিন তিন বার ইসরাইলি পরাশক্তি সংগ্রামী ফিলিস্তিনী জনগণের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হয়।
২০০৬ সালে লেবাননে হিজবুল্লাহর সাথে ৩৩ দিনের যুদ্ধে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির স্বীকার করে ইসরাইল পরাজিত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ২০০৯ সালে ইসরাইল ফিলিস্তিন আক্রমণ করলে হামাসের সঙ্গে ২২ দিনের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইসরাইল পিছু হটে আসে। ২০১২ সালে পুনরায় ফিলিস্তিন আক্রমণ করে ইসরাইল। হামাসের সঙ্গে ৮ দিনের যুদ্ধে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে ফিরে আসতে হয় ইসরাইলকে। ২০১৪ সালে হঠাৎ হামলা চালিয়ে একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে ইসরাইলকে। এবার ৭০০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে ইসরাইলদের হাতে। আজো চলছে ইসরাইলি হানাদারদের নৃশংসতার মুখে রক্তে লেখা ফিলিস্তিনি জনগণের নিরলস সংগ্রাম। এ সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেয়াই হচ্ছে ইহুদিবাদী চক্রের সকল ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী চলছে ইহুদিবাদের নেপথ্যে পরিচালনার সাম্রাজ্যবাদীদের মহা নাটক। এ নাটকের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। মাঝেমধ্যেই ইউরোপ আমেরিকায়ও এর কিছুটা আঁচ লাগে। নাটকের উদ্দ্যেশ্য একটাই। মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রস্থলে বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং শান্তির ধর্ম ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বিতর্কিত করা। ধারণা করা হচ্ছে আল-কায়েদার পরে ইসরাইল ও সাম্রাজ্যবাদীদের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে ‘আইএস’Ñ যারা ইসলাম ও খিলাফতের নাম ভাঙ্গিয়ে শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করছে। মজার ব্যাপার আইএস এর একটি গুলিও ইসরাইলের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়নি। সিরিয়ার শাসকদের উচ্ছেদের জন্য আইএস সহ একাধিক গ্রুপ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কার্যত সিরিয়া এখন বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। ইরাকের অবস্থাও একই। ইরাকের সরকারের বিরুদ্ধে আইএস কুর্দী সহ বিভিন্ন গ্রুপ যুদ্ধ করছে। ওদের টার্গেট ইরাককে টুকরা টুকরা করা। ইয়েমেনে হুতিদের উত্থানে শংকিত হয়ে বহুজাতিক বাহিনীর নামে ইয়েমেন দখলের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। নির্বিচারে গণহত্যার শিকার হচ্ছে ইয়েমেনের মুসলমানরা। আর এসব চলছে ইসলামের বিভিন্ন গ্রুপ তথা শিয়া-সুন্নি, ওয়াহাবি, নুসাইরিসহ বিভিন্ন মাযহাবি গ্রুপের নামে। অর্থাৎ তারা মাযহাবি বিতর্ক উসকে দিয়ে মুলমানদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো বর্তমানে প্রতিটি মুসলিম দেশই কোন না কোন ভাবে বিশেষ গ্রুপভুক্ত হয়ে ওদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে। এক কথায় ইসরাইল ও তার দোসরদের ষড়যন্ত্রে গোটা মুসলিম বিশ্ব এখন ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তারক্তি সংঘর্ষে লিপ্ত। পেছনে থেকে তালি বাজাচ্ছে ইসরাইল ও তার অভিভাবকরা।
প্রায় তিন যুগ ধরে আমরা বিশ্বব্যাপী রমযানের শেষ জুমআর দিনে আল-কুদ্স দিবস পালন করে আল-কুদ্স মুক্তি ও ফিলিস্তিনের মজলুম জনতার সংগ্রামের প্রতি আমাদের একাত্মতা প্রকাশ করে আসছি। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি অনেক হয়েছে ঠিকই, যার ফলে ইসরাইলকে বার বার পিছু হটতে হয়েছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি তাদের ষড়যন্ত্র আর সা¤্রাজ্যবাদের দোসরদের স্বার্থে ফিলিস্তিন ও আল-কুদ্স মুক্তির পথে বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। ওদের ষড়যন্ত্রে সকল মুসলিম রাষ্ট্রই এখন আত্মঘাতি অসুস্থ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এই ধারায় মাজহাবী বিতর্ক চলতে থাকলে আল-কুদ্স মুক্তি কিংবা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দূরে থাক মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব ও মানচিত্র ধরে রাখাটাই কঠিন হয়ে যাবে। ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র রুখতে এবং আল-কুদ্স মুক্ত করার লক্ষে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, বিশ্বের সকল মুসলমানের ঐক্য। সকল মাজহাবী বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে এক আল্লাহ, এক নবী (সা.) ও এক কালেমার ভিত্তিতে সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ‘আমি এবং আমার গ্রুপ ছাড়া বাকি সবাই কাফের, তাদেরকে হত্যা করতে হবে’ এ মানসিকতা পোষণকারীরা ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু। পরস্পরের মতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা নিয়ে বিভিন্ন মত পথের হয়েও মুসলমান হিসেবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল-কুদ্স মুক্তি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য ডাক দিলে বিশ্বের সকল মুক্তিকামী ও শুভবুদ্ধির মানুষরাও সে ডাকে সাড়া দেবে। তাই আজ আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের নীল নকশাটি সকলের মাঝে স্পষ্ট করে প্রকাশ করে দেয়া। ওদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে সচেতন করা। দেশে দেশে মুসলিম বিশ্বের জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। যাতে তাদের সরকার এ ষড়যন্ত্রে পা না দেয়। ইমাম খোমেইনী ৩৭ বছর আগে এলক্ষ্যেই সেদিন বিশ্বব্যাপী শিয়া-সুন্নি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে আল-কুদ্স মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করার ডাক দিয়েছিলেন। তাই আজকের দিনে আমরাও সকল রকম মাজহাবী বিতর্কের ঊর্ধ্বে আল-কুদ্স মুক্তি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা প্রকাশে এবং বিশ্বব্যাপী কালেমাধারী মুসলমানদের ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।
[গত ১ জুলাই, ২০১৬, শুক্রবার আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে ঢাকাস্থ বিএমএ মিলনায়তনে আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রবন্ধটি পঠিত হয়।]
লেখক : সম্পাদক, দৈনিক আজকের ভোলা
সহ-সভাপতি, আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ

সংবাদ বিচিত্রা (বিদেশি সংবাদ)

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পরামর্শ দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গত ৩ জুলাই ২০১৬ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের এক সমাবেশে ছাত্রদের নানা সমস্যা এবং বর্তমান আর্থ-রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন। তিনি ঈমান ও পবিত্র কুরআনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ স¤পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ইরানি জাতির সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা যখন থেকে স্বাধীনতা ও উন্নতির পথে যাত্রা শুরু করেছি তখন থেকেই এ সংগ্রাম শুরু হয়েছে। কারণ, আমাদের এ সংগ্রাম বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তিনি তাঁর বক্তব্যে শত্রুদের চাপ ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা স¤পর্কে বলেন, ইসলামি বিপ্লবের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে শত্রুদের ষড়যন্ত্র আরো জটিল হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত ইরানি জাতি শত্রুদের আগ্রাসী ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে ততদিন পর্যন্ত লড়াই চলবে। এ লড়াইয়ের অবসান ঘটানোর ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যেমনটি বলেছেন, শত্রুদের দাবি অনুযায়ী হয় ইরানকে তার অর্জিত শক্তি সামর্থ্যকে ত্যাগ করে প্রতিরোধের পথ থেকে সরে আসতে হবে অথবা শুধু নামে মাত্র ইরানে এমন এক ইসলামি সরকার থাকবে যার কোনো সত্যিকারের ইসলামি পরিচিতি থাকবে না। তবেই শত্রুরা খুশি থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শত্রুদের এ ধরণের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রয়োজন নিজস্ব শক্তি ও কঠিন ঈমান। শত্রুরা অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে শুরু করে সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো। আর এ ক্ষেত্রে যুবকরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, যদি চোখ খোলা রাখা না হয় তাহলে সরলমনা ছাত্ররা শত্রু ও বন্ধু চিনতে ভুল করবে কিংবা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে ভুল করে বসতে পারে।
হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ছাত্ররাই শত্রুদের টার্গেট এ কথা উল্লেখ করে বলেন, ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য শত্রুরা বিপুল অর্থ ব্যয় করার পাশাপাশি বিষাক্ত প্রচারণা যুদ্ধে নেমেছে যাতে ইরানের শক্তি-সামর্থ্যকে আড়াল করার পাশাপাশি দেশটির জনগণ ও যুব সমাজের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করা যায়। তিনি অতীতের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ইরানের জনগণের ওপর পাহলাভি রাজবংশের স্বৈরশাসন চাপিয়ে দেয়া, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনপ্রিয় সরকারের পতন ঘটানো, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহযোগিতা
করা, অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া ও সাদ্দামের প্রতি পাশ্চাত্যের সমর্থন, ইরানের যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করা, পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি প্রভৃতি ইরানের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে ইরানের বিরুদ্ধে শত্রুদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

ইরান, রাশিয়া ও আজারবাইযানের ত্রিপক্ষীয় সম্মেলন
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ইরানের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান অন্যতম দিক। এরই ভিত্তিতে ইরান সবার সঙ্গে সুস¤পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। গত ৮ আগস্ট ২০১৬ আজারবাইযানের রাজধানী বাকুতে ইরান, আজারবাইজান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলন অভিন্ন স্বার্থ ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স¤পর্ক উন্নয়নের যে কোনো উদ্যোগকে ইরান শুধু যে স্বাগত জানায় তাই নয়, জাতিগুলোর অধিকার রক্ষা এবং বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য তেহরান বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ সহিংসতামুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মোকাবেলা এবং জাতিগুলোর মানবিয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার জন্য ইরান জাতিসংঘে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছে।
বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আজারবাইযানে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সম্মেলনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সম্মেলনে দেয়া ভাষণে বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে একটি দেশের পক্ষে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এবং বিরাজমান সুযোগ-সুবিধাগুলো ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সব দেশের জনগণের উন্নয়ন, সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ও শান্তির জন্য প্রয়োজন প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার পার¯পরিক সহযোগিতা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাকু সম্মেলন বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সঙ্গে এ অঞ্চলের সব দেশের ভাগ্য ও উন্নয়ন জড়িত। প্রথমত, এই সম্মেলন আঞ্চলিক সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদীর্ঘকাল ধরে যা কিনা বহুপক্ষীয় স¤পর্ক উন্নয়নের সুযোগ এনে দিয়েছে। যেমন ইরান ও আজারবাইযানের মধ্যে রেল যোগাযোগ, উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে পণ্য পরিবহন করিডোর, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমঝোতার কথা উল্লেখ করা যায়। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, নানা ক্ষেত্রে এই তিন দেশের সহযোগিতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এমন সময় বাকু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের বিস্তার, মাদকের ছড়াছড়ি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ কারণে কোনো দেশের একার পক্ষে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
ইরান কাজেকর্মে এটা প্রমাণ করেছে, দ্বিপক্ষীয় কিংবা বহুপক্ষীয় স¤পর্কের মাধ্যমে তারা প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে আর্থ-রাজনৈতিক স¤পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। যেখানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার দরকার সেখানেই ইরান তার আন্তরিকতা দেখিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরমাণু সংকট থেকে শুরু করে সিরিয়া সংকট পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই ইরান রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক স¤পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রেখেছে। বাকু সম্মেলন ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা বিস্তারের সুযোগ এনে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান, রাশিয়া ও আজারবাইযানের প্রেসিডেন্টদের বৈঠক এ তিন দেশের মধ্যে আর্থ-রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স¤পর্ক বিস্তারে বিরাট ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে বিরাজমান আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত স¤পর্ক উন্নয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দেশ দুটির প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ও ভ¬াদিমির পুতিন। গত ৮ আগস্ট রাতে আজারবাইযানের রাজধানী বাকুতে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রুহানির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় এবং সেখানে তারা এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পশ্চিম আফ্রিকা সফর
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব মাহ্মূদ্ জাভাদ যারীফ্-এর নেতৃত্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদল গত ২৪ থেকে ২৯ জুলাই (২০১৬) পশ্চিম আফ্রিকার চারটি দেশ সফর করেন। এ সফরকালে প্রতিনিধিদলটি নাইজেরিয়া, ঘানা, গিনি ও মালী সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। সফর শেষে প্রতিনিধিদলটি গত ২৯ জুলাই তেহরানে প্রত্যাবর্তন করেন।
পশ্চিম আফ্রিকা সফরকারী ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট ইরানি প্রতিনিধিদলে ছিলেন ইরানি ব্যবসায়ী ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিত্ববর্গ। তাঁরা তাঁদের সফরের প্রথম ধাপে গত ২৪ জুলাই নাইজেরিয়ার রাজধানী আবূজায় পৌঁছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব জাভাদ যারীফ্ তাঁর নাইজেরিয়ায় অবস্থানকালে নাইজেরিয়া সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের সাথে আলোচনা করেন। এছাড়া তিনি নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জনাব মুহাম্মাদ বুহারীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।
জনাব জাভাদ যারীফ্ তাঁর পশ্চিম আফ্রিকা সফরের দ্বিতীয় ধাপে গত ২৬ জুলাই ঘানার রাজধানী আক্রা-য় উপনীত হন। সেখানে তিনি ঘানার বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশেষত ঘানা পার্লামেন্টের স্পিকার জনাব এডওয়ার্ড ডোয় আদ্জাহো ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব হান্না তেত্তেহ্র সাথে সাক্ষাৎ ও আলোচনায় মিলিত হন। এছাড়া তিনি ঘানার প্রেসিডেন্ট জন দ্রামানী মাহামা-র সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।
আক্রা-য় অবস্থানকালে জনাব জাভাদ যারীফ্ ‘ইরান-ঘানা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক এক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতায় তিনি ইরান ও ঘানার মধ্যকার সম্পর্কের ওপর খুবই গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ইরান ও ঘানা দু’টি উন্নয়নশীল দেশ এবং উভয় দেশই দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
পরদিন ২৭ জুলাই জনাব জাভাদ যারীফের নেতৃত্বাধীন ইরানি প্রতিনিধিদলটি গিনি-র রাজধানী কোনাক্রি পৌঁছেন। সেখানে অবস্থানকালে জনাব জাভাদ যারীফ্ গিনির প্রেসিডেন্ট আল্ফা কোন্ডে, প্রধানমন্ত্রী মামাদী ইউলা, জাতীয় পরিষদের স্পিকার ক্লাউডে কোরি কন্ডিয়ানো ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাকালে ট্রাওরে-র সাথে সাক্ষাৎ ও উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন।
একদিন পর এ সফরের শেষ ধাপে জনাব জাভাদ যারীফ্ গত ২৮ জুলাই মালীর রাজধানী বামাকো-য় উপনীত হন। সেখানে তিনি দেশটির বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করেন এবং বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদিবো কেইতা ও মালীর জাতীয় পার্লামেন্টের স্পীকার ইস্সাকা সিদিবে-র সাথে সাক্ষাৎ করেন।

পর্যটন মন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় ইরানি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্টদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী গত ৪ আগস্ট ২০১৬ সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ঢাকা ও তেহরানের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ও পর্যটন বিকাশে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
ভ্রাতৃপ্রতিম দুই রাষ্ট্রের স¤পর্ক আগামী দিনে আরো জোরদার হবে বলে বৈঠকে দু’পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করে। বৈঠকে মুসলিম দেশগুলোতে বিরাজমান অনৈক্য, গোষ্ঠীগত সংঘাত, সন্ত্রাসবাদ এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি’র ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
রাষ্ট্রদূত ইরানের তাবরিজে আগামী ২৯ ও ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠেয় ‘১ংঃ অংরধ ঈড়-ড়ঢ়বৎধঃরড়হ উরধষড়মঁব গরহরংঃবৎরধষ গববঃরহম ড়হ ঞড়ঁৎরংস’ এ বাংলাদেশের মন্ত্রীর সফরসূচির বিষয়ে আলোচনা করেন।
ইরান ও বাংলাদেশের মধ্যে ধর্মীয় মিল ছাড়াও রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, অভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য যা দু’দেশের মধ্যে নতুন নতুন যোগাযোগের ক্ষেত্র উন্মোচন করতে পারে। মুসলিম দেশগুলোতে হালাল ট্যুরিজমের যে ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে দু’দেশ লাভবান হতে পারে। দু’দেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে প্যাকেজ ট্যুর এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগার কোরআন মজীদের দু’টি বিরল হস্তলিখিত কপি লাভ করেছে
জার্মানির মিউনিখে অবস্থিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কন্সুলেট্ জেনারেল মিউনিখ পুলিশের কাছ থেকে কোরআন মজীদের দু’টি বিরল হস্তলিখিত কপি গ্রহণ করেছে। একটি ব্যক্তিগত ইরানি সংগ্রহশালা থেকে হারিয়ে যাওয়া এবং মিউনিখ পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত এক উদ্ধার অভিয়ানের ফলে উদ্ধারকৃত কোরআন মজীদের এ বিরল কপি দু’টি গত ২৩ জুলাই (২০১৬) এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে মিউনিখস্থ ইরানি কন্সুলেট জেনারেলকে হস্তান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সাল থেকে মিউনিখে বসবাসকারী জনৈক ইরানি নাগরিক গৌরবময় প্রাচীন ইরানি সভ্যতার নিদর্শনবাহী ইরানি পা-ুলিপি খুবই পছন্দ করতেন এবং এ ধরনের অনেক পা-ুলিপি সংগ্রহ করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে ৮৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তিনি তাঁর সংগ্রহসমূহ তাঁর উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে যান। তাঁর উত্তরাধিকারীরা দেখতে পান যে, এর কিছু সংখ্যক সংগ্রহ হারিয়ে গিয়েছে। তখন তাঁরা এ বিষয়ে একজন বেসরকারি গোয়েন্দার সাথে আলাপ করেন এবং তাঁকে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের দায়িত্ব প্রদান করেন। তখন উক্ত বেসরকারি গোয়েন্দা ও পরে ব্যাভেরিয়ান্ পুলিশের জনৈক ক্রিমিন্যাল্ ইনভেস্টিগেশন অফিসার উক্ত সংগ্রহের মরহূম মালিকের জনৈক বিশ্বস্ত লোককে এ ব্যাপারে সন্দেহ করেন এবং দেখতে পান যে, ঐ ব্যক্তিই সংগ্রাহকের হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারসমূহ সরিয়ে ফেলেছে।
ব্যাভেরিয়ান পুলিশ ২০১১ সালে ঐ সন্দেহভাজন ব্যক্তির গৃহে অনুসন্ধান চালায়। তখন তাঁরা ঐ গৃহ থেকে ১৭৪টি প্রাচীন দ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হনÑ ঐ সময় যেগুলোর মূল্য ছিল মোটামুটি ৩০ লক্ষ ইউরোর মতো।
মরহূম সংগ্রাহকের কৃত অসিয়তনামায় দেখা যায় যে, তিনি কোরআন মজীদের উক্ত প্রাচীন হস্তলিখিত কপি দু’টি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগারে দান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে মিউনিখের পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোরআন মজীদের এ কপি দু’টি ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগারে পৌঁছে দেয়ার জন্য মিউনিখস্থ ইরানি কন্স্যুলেট জেনারেলে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর পুলিশ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি কোরআন মজীদের উক্ত কপি দু’িট মিউনিখস্থ ইরানি কন্স্যুর্লা জেনারেল জনাব আবদুল্লাহ্ নিকুনামের কাছে হাস্তান্তর করেন।
কোরআন মজীদের এ বিরল হস্তলিখিত কপি দু’টি উদ্ধার ও ইরানের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কারণে কন্স্যুর্লা জেনারেল জনাব আবদুল্লাহ্ নিকুনাম ব্যাভেরিয়ান রাজ্য পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ইরান ও আযারবাইজানের মধ্যে মহাশূন্য ও উপগ্রহ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও তার প্রতিবেশী দেশ আযারবাইজান পরস্পর মহাশূন্য ব্যবহার ও কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির ৮ই আগস্ট (২০১৬) আযারবাইজানে রাষ্ট্রীয় সফরের প্রস্তুতি পর্বে ইসলামি ইরানের আইসিটি বিষয়ক মন্ত্রী ও ইরান-আযারবাইজান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব মাহ্মূদ ওয়ায়েযী গত ৩রা আগস্ট আযারবাইজানের রাজধানী বাকু সফরকালে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
এ সফর কালে জনাব ওয়ায়েযী তাঁর আযারবাইজানী সমপক্ষ জনাব রামিন নামিগোগ্লূর সাথে আলোচনায় মিলিত হন। এ বৈঠকে উভয় পক্ষ দু’দেশের মধ্যে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুুক্তি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকে জনাব ওয়ায়েযী বলেন, দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক মোবাইল ফোন যোগাযোগকারীদের যোগাযোগ ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে ডাটা ট্রান্সফার রুটসমূহের যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং দু’দেশের সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে ফ্রিকোয়েন্সী স্পেকট্রাম স্থাপনের ক্ষেত্রে যে যৌথ সমন্বয় রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ খুবই সন্তোষজনক।
এছাড়া তিনি মহাশূন্য ও কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণের ক্ষেত্রে আযারবাইজানের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করার জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন যে, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ উপকরণ ও যন্ত্রপাতি এবং সফ্ট্ওয়্যার উৎপাদনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য যথাযথ ক্ষেত্র প্রস্তুত রয়েছে।
এ বৈঠকে উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ ও কমিউনিটিসমূহে, যেমন : ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিসি) ও ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ)-এ দু’দেশের মধ্যে অধিকতর ঘনিষ্ঠ সহযোািগতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

জাপান ইরানে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তেল মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপমন্ত্রী জনাব আর্মী হোসেইন্ যামানীনীয়া জানান যে, জাপান ইরানি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। তিনি বলেন, এ বিনিয়োগ খুব শীগগীরই কার্যকর করা হবে।
তিনি বলেন, জাপান বিশেষভাবে ইরানের তেল শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তিনি আরো বলেন, জাপান সব সময়ই ইরানের জন্য একটি ভালো বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার পরবর্তী সময়ে জাপান ইরানি অর্থনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য পরিকল্পনা করেছে।
জনাব আর্মী হোসেইন্ যামানীনীয়া আরো বলেন, জাপানিরা ইরানের তেল শিল্পের বিভিন্ন দিকে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। এসব দিকের মধ্যে রয়েছে পেট্রো-কেমিক্যাল, শোধনাগার ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। তিনি আরো জানান যে, জাপান বর্তমানে ইরানে বিনিয়োগের লক্ষ্যে তেল শিল্পের বিভিন্ন দিকের বাজারের অবস্থা পর্যালোচনা করছে।
উল্লেখ্য, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবার আগে জাপান ছিল ইরানি তেলের প্রধান ক্রেতাদের অন্যতম। তখন জাপান প্রতিদিন ইরান থেকে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করত। যদিও জাপান প্রধানত লাইট অয়েল ও গ্যাস কন্ডেন্সেট্ ক্রয়ে আগ্রহী, তথাপি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ার পর ইরান থেকে জাপানের তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্ব হেরিটেজ সাইটের তালিকায় ক্বেশ্ম্ জিও-পার্কের অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ক্বেশ্ম দ্বীপের জিও-পার্ককে তার বিশ্ব হেরিটেজ সাইটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে ক্বেশ্ম্ দ্বীপ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সহায়ক ডকুমেন্ট হিসেবে দাখিলকৃত ক্রেডেন্সিয়াল্স্ পরীক্ষা করে দেখার লক্ষ্যে ইউনেস্কোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ চলতি আগস্ট মাসে এ দ্বীপে সফরে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
ক্বেশ্ম্ জিও-পার্কের প্রধানের সিনিয়র অ্যাডভাইজার জনাব আলীরেযা আমরী কাযেমী বার্তা সংস্থা মেহ্র নিউজ-এর স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধিকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে জানান যে, ইউনেস্কোর যে সব কর্মকর্তা এখানে আসবেন তাঁরা এ দ্বীপের বিভিন্ন ম্যাটারিয়াল এভিডেন্স্ পর্যালোচনা করবেন। তিনি বলেন, ইউনেস্কো কর্মকর্তাগণ এখানে অবস্থানকালে ক্বেশ্ম্ দ্বীপের জিও-পার্ককে ইউনেস্কোর বিশ্ব হেরিটেজ সাইটে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এর ডকুমেন্টেশেনের কাজ আঞ্জাম দেবেন। এরপর আগামী অক্টোবরে (২০১৬) ব্রিটেনে ইউনেস্কোর উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল জিও-পার্ক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ক্বেশ্ম্ দ্বীপের জিও-পার্ককে উক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

ইন্দোনেশিয়া ইরানের সাথে স্বীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার আশা করছে
ইন্দোনেশিয়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাথে স্বীয় বাণিজ্যের পরিমাণ চলতি বছরে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি পরিমাণে উন্নীত করার আশা করছে। গত ৪ আগস্ট (২০১৬) ‘ইরান চেম্বার অব্ কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইন্স্ অ্যান্ড্ এগ্রিকালচার’ (আইসিসিআইএমএ)-এর সদস্য জনাব জামাল রায্যাক্বী ও ইরানে নিয়োজিত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত জনাব অক্ট্যাভিয়ানো আলীমুদ্দীনের পারস্পরিক সাক্ষাতে ইন্দোনেশীয় রাষ্ট্রদূত এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সাক্ষাতের পর জনাব রায্যাক্বী ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনাকালে বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে যেসব ক্ষেত্রে সম্পর্ক প্রশস্ততর করা প্রয়োজন তার মধ্যে প্রযুক্তি অন্যতম। তিনি ইরানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ইরানের জন্য তেল রফতানিকারক দেশসমূহের সংস্থা (ওপেক)-এর সদস্য দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন এবং দু’দেশের মধ্যকার বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলারেরও বেশিতে উন্নীত করার আহ্বান জানান।
জনাব রায্যাক্বী বলেন, যেহেতু ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ, সেহেতু ইন্দোনেশিয়ার এনার্জি খাতে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও প্রকৌশলী সেবা রফতানি করার ক্ষেত্র অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
জনাব রায্যাক্বী জানান যে, তাঁর সাথে বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত জনাব অক্ট্যাভিয়ানো আলীমুদ্দীন দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং বলেছেন যে, তাঁর দেশ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান থেকে খেজুর আমদানি করতে আগ্রহী।
জনাব অক্ট্যাভিয়ানো আলীমুদ্দীন এ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ায় মেরিন সামগ্রী উৎপাদন, উষ্ণ ম-লীয় ফল উৎপাদন ও টেক্স্টাইল্ সামগ্রী উৎপাদনের যে বিরাট সামর্থ্য ও সম্ভাবনা আছে তার সাথে পরিচিত হবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগকারী বিনিময়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট ফিরোজা পাথরের খনি ইরানের নিশাবুরে
ফিরোজা পাথর বেশ মূল্যবান একটি পাথর। বলা হয়ে থাকে, খ্রিস্ট জন্মের ৩৪০০ বছর আগে মিশরের ফেরআউন সীনা মরু প্রান্তরের খনি থেকে ফিরোজা পাথর উত্তোলন করে এবং সাজসজ্জার অলঙ্কার হিসেবে এসব পাথর ব্যবহার করে।
ইরানে সাসানী যুগে ফিরোজা পাথর উত্তোলন এবং তা অলঙ্কারে ব্যবহার করার উপযোগী করার প্রচলন গড়ে ওঠে। তখন আংটিতে এবং বাদশাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন তৈজস অলঙ্করণের কাজেই এই পাথর ব্যবহার করা হতো।
খনি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট ফিরোজা পাথর হলো- ইরানের নিশাবুরী ফিরোজা পাথর। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নিশাবুরের ফিরোজা পাথর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফিরোজা পাথর হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পাথর এত বেশি রপ্তানি হয়েছে এবং হচ্ছে যে, নিশাবুর আর ফিরোজা যেন সমার্থক হয়ে পড়েছে।
ফিরোজা পাথর অবশ্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া যায়। নিউ মেক্সিকো, নেভাদা, কলোরাডো, তিব্বত, চিলি এবং সীনা উপদ্বীপ প্রভৃতি জায়গায় ফিরোজা পাথর পাওয়া যায়।
নিশাবুরের ফিরোজা পাথরের খনিটি নিশাবুর থেকে ৫৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। অঞ্চলটি তুলনামূলকভাবে উঁচু। ফিরোজা পাথরের খনিটিতে খনন করতে করতে যে বিশাল গুহার সৃষ্টি হয়েছে, তা দেখলে সহজেই বোঝা যায় যে, বহুকাল আগে থেকেই এ খনি থেকে পাথর উত্তোলনের কাজ চলে আসছে।
ইরানের নিশাবুরে প্রাপ্ত ফিরোজা পাথরের চমৎকার রং, এর শ্রেষ্ঠত্ব এবং এর খনির প্রাচীনত্বের কারণে এই পণ্যটি কোনো রকম প্রচার বা বিজ্ঞাপন ছাড়াই বিশ্বের বাজারগুলোতে সমাদৃত হয়েছে।
প্রাচীনকালে নিশাবুরের ফিরোজা পাথরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার ছিল ভারত এবং চীন। ইউরোপীয় দেশগুলোও ইরানি ফিরোজা পাথরের প্রাচীন ক্রেতা ছিল। তুরস্ক হয়ে ইরানি ফিরোজা পাথর ইউরোপের বাজারে যেত।

ইরানের নৌবাহিনী স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সক্ষম
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নৌবাহিনীর অধিনায়ক রিয়ার এডমিরাল হাবীবুল্লাহ্ সাইয়ারী বলেন, ইরানের নৌবাহিনী অত্যন্ত সুদক্ষ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বাহিনী যা দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের সাহায্যে স্বীয় সকল প্রয়োজন পূরণ করে থাকে।
রিয়ার এডমিরাল সাইয়ারী গত ৩রা আগস্ট (২০১৬) ইরানের নৌবাহিনী ও ইরানিয়ান একাডেমিক সেন্টার ফর এডুকেশন, কালচার অ্যান্ড রিসার্চ (এসিইসিআর)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, ইরানের নৌবাহিনী যথোপযুক্ত উপায়-উপকরণসহ বৈশ্বিক জলসীমায় স্বীয় শক্তিশালী উপস্থিতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম।
রিয়ার এডমিরাল সাইয়ারী ইরানী নৌবাহিনীর ফ্যাসিলিটিজ-এর সর্বশেষ প্রযুক্তিতে করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ কারণেই দেশের একাডেমিক ও শিল্প কেন্দ্রসমূহের সক্ষমতা সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের লক্ষ্যে নৌবাহিনী কর্তৃক দেশের বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে।
রিয়ার এডমিরাল সাইয়ারী এ প্রসঙ্গে রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর বক্তব্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যমান স্থাপনাসমূহের উৎপাদন ও কার্যক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, রাহ্বারের নির্দেশনা অনুসরণে আমরা দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকগণের সাথে মত বিনিময় করে এবং বেশ কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

ইরানের মাশ্হাদ্ ও লালেজিনের মণিমুক্তা ও মৃৎপাত্রের জন্য বৈশ্বিক খ্যাতির অধিকারী শহরের স্বীকৃতি
ওয়ার্লড্ ক্রাফ্ট্স্ কাউন্সিলের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল শাখা (ডব্লিউসিসি-এপির্আ)-এর জুরি প্যানেল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শহর মাশ্হাদ্ ও লালেজিন্- কে যথাক্রমে মণিমুক্তা ও মৃৎপাত্রের জন্য বৈশ্বিক খ্যাতির শহর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, হস্তশিল্প ও পর্যটন বিষয়ক সংস্থার উপপ্রধান জনাব বাহ্মান নাম্ওয়ার মোত্বলাক্ব গত ৯ জুলাই (২০১৬) এ খবর জানান।
জনাব নাম্ওয়ার মোত্বলাক্ব বলেন, ওয়ার্লড্ ক্রাফ্ট্স্ কাউন্সিলের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল শাখা (ডব্লিউসিসি-এপির্আ)-এর জুরি প্যানেল্ গত এপ্রিল মাসে (২০১৬) মাশ্হাদ্ ও লালেজিন্ সফর করেন এবং এ সফরের পর তাঁরা উক্ত কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে তাঁদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পেশ করেন। তিনি আরো বলেন, ওয়ার্লড্ ক্রাফ্ট্স্ কাউন্সিলের ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধানগণ এ বিষয়ে তাঁদের চূড়ান্ত মতামত ঘোষণা করার পর ডব্লিউসিসি-এপির্আ-এর প্রেসিডেন্ট জনাব ক্বাযা হিজ্জাভী ক্বাদ্দূমী উক্ত শহর দু’টি সম্বন্ধে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন।
জনাব বাহ্মান নাম্ওয়ার মোত্বলাক্ব বলেন, মাশ্হাদ্ ও লালেজিন্ শহরের এ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে হস্তশিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে এবং সেই সাথে দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিকাশেও সহায়তা করবে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসে (২০১৬) একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত শহর দু’টির এ বৈশ্বিক স্বীকৃতি উদ্যাপন করার কথা।
জনাব বাহ্মান নাম্ওয়ার মোত্বলাক্ব বলেন, মাশ্হাদ্ ও লালেজিন্ শহরের এ বৈশ্বিক স্বীকৃতির ফলে এ ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ভারত ও চীনকে ছাড়িয়ে গিয়ে এ ধরনের সর্বাধিক সংখ্যক শহরের অধিকারী দেশের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হলো। কারণ, ইতিপূর্বে ২০১৫ সালেই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ইস্ফাহান্ ও তাব্রীয্ শহর হস্তশিল্প ও হাতে-বোনা কার্পেটের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক খ্যাতির অধিকারী শহর হিসেবে ওয়ার্লড্ ক্রাফ্ট্স্ কাউন্সিলের স্বীকৃতি লাভ করে।

রাশিয়া রিমোট সেন্সিং কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণের ক্ষেত্রে ইরানকে সহযোগিতা দেবে
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী জনাব মাহ্মূদ্ ওয়ায়েযী জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে; এ চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ইরানের ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেবে।
জনাব ওয়ায়েযী ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করার লক্ষ্যে সম্প্রতি মস্কো সফর শেষে তেহরানে প্রত্যাবর্তনের পর সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি জানান যে, তাঁর এ সফরে যেসব বিষয়ে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট নামে যে কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাশিয়া সংশ্লিষ্ট ইরানি শিল্পপ্রকল্পসমূহের সাথে কাজ করবেÑ এ মর্মে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু এ প্রকল্পটি জটিল ধরনের তাই এর কাজ শেষ করতে দুই বছর সময় লাগবে।
রাশিয়ান সার্চ ইঞ্জিন ইয়ান্দেক্স প্রসঙ্গে জনাব ওয়ায়েযী বলেন যে, ইরান বৈদেশিক বিনিয়োগকে স্বাগতম জানিয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়ান কর্মকর্তাগণ ইরানে তাদের সার্চ ইঞ্জিনকে অ্যাকটিভ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে এবং এ সার্চ ইঞ্জিনটি কোনো সীমাবদ্ধতার মুখোমুখী হবে না। প্রাথমিক কাজ ও কতক প্রযুক্তিগত কাজ সমাপ্ত হবার পর সার্চ ইঞ্জিনটি ইরানে তার কাজ শুরু করবে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, সমস্ত সার্চ ইঞ্জিনেরই বাজারে প্রবেশের জন্য তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা উচিত এবং জনগণকে সেগুলোর মধ্য থেকে স্বাধীনভাবে যে কোনোটি কাজে লাগাবার জন্য সুযোগ দিতে হবে।

ইরানে পঙ্গুদের চিকিৎসায় সহায়ক যন্ত্র আবিষ্কার
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজ্ঞানী জাভাদ আলভানী এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন যা শারীরিকভাবে পঙ্গু লোকদের সুস্থকরণে সহায়ক হবে।
জনাব আল্ভানী বার্তা সংস্থা মেহ্র্ নিউজকে বলেন, যাঁরা পার্কিন্সন্স রোগে ভুগছেন, বা স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পেয়েছেন অথবা মাল্টিপ্ল্ সেলেরোসিস্-এ ভুগছেন তাঁদের জন্য ‘স্পোার্টস্ থেরাপি ডিভাইস’ নামক এ যন্ত্রটি উপকারে আসবে। তিনি বলেন, এছাড়া এ যন্ত্রটি একটি পরিবারের সকল সদস্যের জন্য স্পোর্টিং উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
এ যন্ত্রটি যেমন বাড়িতে ব্যবহার করা যাবে, তেমনি এটি ফিজিওথেরাপি ক্লিনিকেও ব্যবহার করা যাবে। জনাব আল্ভানী জানান, স্পোর্ট্স্ থেরাপি ডিভাইসটিতে একটি বহুমুখী ব্যবহারোপযোগী বেড্ রয়েছে যাতে সংশ্লিষ্ট রোগীদের নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি রয়েছে, তেমনি এটি রোগীদের হাত, পা, পিঠের নি¤œাংশ ও হাঁটুর পেশীকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। একই সাথে এটিতে সার্কুলেটরি ও ডাইজেস্টিভ্ সিস্টেমও রয়েছে।
জনাব আল্ভানী আরো বলেন, স্পোর্ট্স্ থেরাপি ডিভাইস রোগীদেরকে তাদের হাত ব্যবহার করতে সহায়তা করে এবং তাদেরকে তাদের পায়ের পেশী শক্তিশালী করার জন্য ব্যায়ামেও সহায়তা করে।
তিনি আরো বলেন, ডিভাইসটি ব্যয়বহুল নয় এবং এটিকে সকল বয়সের লোকের ব্যবহারের উপযোগী করার লক্ষ্যে কাক্সিক্ষত পরিমাপে সমন্বিত করা যাবে। অন্যদিকে কেবল একটি সুনির্দিষ্ট বয়সের উপযোগী করে এটির একটি বৈদেশিক ভার্সনের ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে।
ইরানে ন্যাশনাল ব্রেন্ ম্যাপিং ল্যাবরেটরি উদ্বোধন
গত পয়লা আগস্ট (২০১৬) ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ও তেহরান প্রদেশের গভর্নরের উপস্থিতিতে ইউনিভার্সিটি অব তেহরানের টেক্নোলোজিক্যাল ফ্যাকাল্টি ক্যাম্পাসে ন্যাশনাল ব্রেন্ ম্যাপিং ল্যাবরেটরি উদ্বোধন করা হয়।
উল্লেখ্য, এ ল্যাবরেটরিটি কগ্নিশন্ স্টাডিজ-এর লক্ষ্যে মস্তিষ্কের ইমেজিং ও স্টিমুলেশনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবে। এটি ডাটা প্রসেসিং, ইমেজ ও সিগন্যালের জন্য এবং সেই সাথে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি অ্যান্ড কগ্নিটিভ্ ইভ্যালুয়েশন ল্যাবরেটরিজ্-এর ক্ষেত্রে অ্যাড্ভান্স্ড্ ফির্চাস্ দ্বারা সুসজ্জিত।
উল্লেখ্য, এ ল্যাবরেটরিটিতে বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগের মধ্যে রয়েছে একটি এমআরএল ম্যাগ্নেটিং ব্রেন্ স্টিমুলেশন, ফাংশনাল্ ইন্ফ্রারেড্ স্পেক্ট্রোস্কোপি, ম্যাগ্নেটোএন্সেফালোগ্রাফি, ইমেজ্ প্রসেসিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস্ ও ব্রেন্ স্টিমুলেশন্ উইথ্ আল্ট্রাসাউন্ড্।
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল্ ব্রেন্ ম্যাপিং ল্যাবরেটরি হচ্ছে বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত একটি সংস্থা- যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করে থাকে এবং দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ই এটি থেকে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ ও এখানে কাজ করতে পারে।

ইরানের ন্যানো প্রযুক্তি অর্থনীতি চার বছরে বিশ গুণ বেড়েছে
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ন্যানোটেকনোলজি ইনিশিয়েটিভ্ কাউন্সিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত চার বছরে দেশের ন্যানো প্রযুক্তি অর্থনীতি বিশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ভাইস প্রেসিডেন্ট সোরেনা সাত্তারী গত ৩১ জুলাই এ কথা বলেন।
সোরেনা সাত্তারী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার নানাবিধ অসুবিধা সত্ত্বেও গত চার বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ন্যানো প্রযুক্তি অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রতি বছর শতকরা ১২০ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তিনি আরো বলেন যে, ইরানি কোম্পানিগুলো কর্তৃক বিক্রয়কৃত ন্যানো প্রযুক্তি সামগ্রীর মূল্য ২০১১ সালে যেখানে ৫৪ লক্ষ ডলার ছিল সেখানে ২০১৫ সালে ১০ কোটি ডলারের ওপরে ন্যানো প্রযুক্তি সামগ্রী বিক্রি হয়।
ভাইস প্রেসিডেন্ট সোরেনা সাত্তারীর বক্তব্য অনুযায়ী ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ন্যানো প্রযুক্তি অর্থনীতির মোট পরিমাণ নির্ধারণে দেশের ন্যানো উৎপাদনের মোট মূল্যকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছেÑ যার প্রধান খাত হচ্ছে ন্যানো বস্তু ও ন্যানো প্রসেস।
ভাইস প্রেসিডেন্ট সাত্তারী আরো জানান যে, ২০১৫ সালে দেশের মোট ন্যানো সামগ্রী উৎপাদনের শতকরা ৩৫ ভাগ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট শতকরা ৬৫ ভাগ সামগ্রী দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, দেশের বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। তিনি এ শিল্পের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রসমূহের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে ১৫৭টি কোম্পানি কর্তৃক উৎপাদিত ৩৩০টিরও অধিক ন্যানো সামগ্রী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে টেক্সটাইল শিল্প, পলিমার ও কম্পোজিট্স্, স্বাস্থ্য ও ওষুধ শিল্প, নির্মাণ শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্প ইত্যাদি।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ১৫টি বিজ্ঞান সংক্রান্ত সামগ্রী উৎপাদন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত সামগ্রী ইরাক, উযবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিশ্বের ২০টি দেশে রপ্তানি করেছে।

রেডিও-ড্রাগ-এর ডেলিভারি উন্নয়নে ইরানি গবেষকগণের সাফল্য
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নিউক্লিয়ার সায়েন্স্ অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (এনএসটিআরআই)-এ কর্মরত গবেষকগণ বিভিন্ন ধরনের ন্যানোস্ট্রার্ক্চাড্ উপাদান ব্যবহার করে ক্যান্সার নিরোধক রেডিও-ড্রাগ-এর ডেলিভারি উন্নয়নে সফল হয়েছেন।
ইরান ন্যানোটেক্নোলজি ইনিশিয়েটিভ কাউন্সিল (আইএনআইসি)-র বক্তব্য অনুযায়ী এ গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ক্যান্সারের ডায়োগ্নসিস ও নিরাময় করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ন্যানোস্ট্রার্ক্চাড্ উপাদান ব্যবহার করে ক্যান্সার-টিউমারে রেডিও ড্রাগসমূহের ডেলিভারি পর্যালোচনা করা। এ গবেষণার ফলাফল অনেক বেশি দক্ষতার সাথে কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাহায্য করতে সক্ষম হবে। ন্যানোড্রাগকে স্থিতিশীল করার এবং একে ক্যান্সারের টিউমারে বয়ে নিয়ে যাবার জন্য এতে পোরাস (ঢ়ড়ৎড়ঁং) সিলিকা ব্যবহার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পোরাস্ সিলিকার সুনির্দিষ্ট এরিয়া এবং এর ন্যানোস্কেল্ড্ র্পো (ঢ়ড়ৎবং) অত্যন্ত বেশি (যরময), এ কারণে তা ড্রাগ স্টাবিলাইজেশনের কার্যকরতা বৃদ্ধি করে থাকে। এর ফলে অধিকতর কার্যকরভাবে ড্রাগ ডেলিভারি প্রক্রিয়া আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হয়।
টিউমারে এমসিএম-৪১ ন্যানোপোরাস্ সিলিকার ওপর জটিল স্থিতিশীল অ্যাকুমুলেশন, কুইক রিপেলিং, কপার-৬৪-এর স্বল্পকালীন টিকে থাকা এবং রোগীদের জন্য লোয়ার রেডিয়েশন পর্যবেক্ষণ করা হয়Ñ যা এই রেডিও ড্রাগকে ইমেজিং-এর জন্য ও পিইটি ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য ব্যবহার্য একটি যথাযথ অপশনে পরিণত করেছে।
এ গবেষণার ফলাফল অঢ়ঢ়ষরবফ জধফরধঃরড়হ ধহফ ওংড়ঃড়ঢ়বং-এ (াড়ষ. ১১২, ২০১৬, ঢ়ঢ়. ১৩-১৯)-এ প্রকাশিত হয়েছে।

বহুজাতিক প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতায় ইরানি ছাত্রের পুরস্কার লাভ
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বহু জাতি, এক বিশ্ব’ (‘গধহু খধহমঁধমবং, ঙহব ডড়ৎষফ’) শীর্ষক বহুজাতিক প্রবন্ধ লিখন প্রতিযোগিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের একজন পিএইচডি ছাত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। ইরানি ছাত্র পুইয়া নাদেরী ছিলেন এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীর অন্যতম।
উল্লেখ্য, এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের রচনায় বৈশ্বিক নাগরিকতা, সাংস্কৃতিক সমঝোতা ও বহুভাষিক সক্ষমতা কতখানি প্রতিফলিত হয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। ইএল্এস্ এডুকেশনাল সার্ভিসেস ও ইউনাইটেড নেশন্স্ একাডেমিক্ ইম্প্যাক্ট (ইউএন্এআই) এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিন হাজার ছয়শ’ প্রতিযোগী এতে অংশগ্রহণ করে।
এ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষিত হওয়ার পর পুইয়া নাদেরী সহ ৬০ জন বিজয়ীকে নিউ ইয়র্কের হেম্প্স্টিড্স্থ হফ্স্ট্রা ইউনিভার্সিটির ‘ওয়ান্ ওয়ার্ল্ড্ বৈশ্বিক যুব ফোরাম’ (ঙহব ডড়ৎষফ এষড়নধষ ণড়ঁঃয ঋড়ৎঁস)-এ অংশগ্রহণের জন্য দাওআত করা হয়।
দাওআতপ্রাপ্ত উক্ত ৬০ জন মেহমানের নিউ ইয়র্ক সফরের সমস্ত ব্যয় উক্ত ফোরাম বহন করছে। তাঁদের জন্য নিউ ইয়র্ক সিটির গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানসমূহ দর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও তাঁদেরকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা করার সুযোগ দেয়া হবে। এ মেধাবী ছাত্রগণ তাঁদের বক্তৃতায় ‘জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক এজেন্ডা ২০৩০’ (টহরঃবফ ঘধঃরড়হং ২০৩০ অমবহফধ ভড়ৎ ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ) সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে স্বীয় অ্যাকশন্ প্লান্ উপস্থাপন করবেন।
উল্লেখ্য, ‘বহু জাতি, এক বিশ্ব’ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্বের ১৬৫টি দেশ থেকে নয় হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অন্যতম শর্ত ছিল এই যে, প্রতিযোগীর প্রবন্ধের ভাষা হবে জাতিসংঘের ছয়টি অফিসিয়াল ভাষার মধ্য থেকে স্বীয় দেশের এক নম্বর ভাষা ও তার প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম ভাষাÑ এ দু’টি ভাষা Ñ ব্যতীত অন্য যে কোনো ভাষা। জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হচ্ছে : ইংরেজি, আরবি, চীনা, ফরাসি, রাশিয়ান্ ও স্প্যানিশ।
এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের অন্যতম ইরানি পিএইচডি ছাত্র পুইয়া নাদেরীর জন্ম ইরানের ঐতিহাসিক গরুত্বপূর্ণ নগরী ইস্ফাহানে এবং তিনি সেখানেই বড় হন। তিনি ফ্রান্স থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের অ্যামিয়েন্স্-এ অবস্থিত পির্কাদি জুলে র্ভেন্ বিশ্ববিদ্যালয়ে [টহরাবৎংরঃল্ক ফব চরপধৎফরব ঔঁষবং ঠবৎহব (টচঔঠ)] পিএইচডি-র জন্য অধ্যয়নরত আছেন।

বিশ্ব তরুণ দাবা অলিম্পিয়াডে ইরানের শিরোপা জয়
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় দাবা টীম ‘২০১৬ ওয়ার্ল্ড্স্ অনুর্ধ¦ ১৬ চেস অলিম্পিয়াড’-এ তাদের রোমানিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে ফাইনাল রাউন্ডে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মতো বৈশ্বিক শিরোপা জয় করেছে।
ইরানের জাতীয় দাবা টীম তাদের রোমানিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ১.৫ পয়েন্টের মোকাবিলায় ২.৫ পয়েন্ট লাভ করে শিরোপা অর্জন করলো। সেøাভাকিয়ার পোর্পাদ্-এ গত ২১ থেকে ৩০ জুলাই এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৪০টি দেশ থেকে ২৬১ জন দাবা খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেন।
এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ইরানী টীমের সদস্যগণ ছিলেন : আলীরেযা ফীরুয্যা, অরাশ্ তাহ্বায্ ও র্পাহাম্ মাক্বছূদ্লূ। আলীরেযা ফীরুয্যা ও অরাশ্ তাহ্বায্ উভয়ই চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় নিজ নিজ প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। অন্যদিকে র্পাহাম্ মাক্বছূদ্লূ ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা টাই হয়ে সমাপ্ত হয়।
ফেডারেশন্ ইার্ন্টান্যাসিওনেল্ দেস্ এচেস্ (এফ্আইডিই)-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্ট ৯ রাউন্ড সুইস্ সিস্টেম অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে টীমসমূহের মধ্যকার প্রতিটি ম্যাচ ৪ বোর্ডের ওপর অনুষ্ঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক পদার্থ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ইরানের দু’টি স্বর্ণপদক লাভ
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৪৭তম আন্তর্জাতিক পদার্থ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (ওচযঙ ২০১৬)-এ অংশগ্রহণ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ছাত্ররা দু’টি স্বর্ণপদক লাভ করে।
উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ইরানি টীমের অন্তর্ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ছিল : আমীর হোসেইন্ ইস্তিরী, মোহাম্মাদ মাহ্দী সাব্বাক্বী নাদুশান্, সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ হোসেইন্ শারীফী কেলাহ্রূদী, আমীন মোর্হারামীর্পূ ও আমীর রেযা নেগারী। এদের মধ্যে আমীর হোসেইন্ ইস্তিরী ও মোহাম্মাদ মাহ্দী সাব্বাক্বী নাদুশান্ Ñ এদের প্রত্যেকে আলাদাভাবে Ñ স্বর্ণপদক জয় করে এবং শারীফী কেলাহ্রূদী রৌপ্যপদক লাভ করে। এছাড়া আমীন মোর্হারামীর্পূ ও আমীর রেযা নেগারী আলাদাভাবে ব্রোঞ্জপদক লাভ করে।
উল্লেখ্য, এ প্রতিযোগিতায় চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়া যথক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
সুইজারল্যান্ডের জুরিখে আয়োজিত এ ৪৭তম আন্তর্জাতিক পদার্থ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড গত ১১ থেকে ১৭ জুলাই (২০১৬) অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে।

আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ইরানি টীমের ৪টি পদক লাভ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তরুণ জীববিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ভিয়েতনামের হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (আইবিও)-এর ২৭তম রাউন্ডে অংশগ্রহণ করে একটি রৌপ্যপদক ও তিনটি ব্রোঞ্জপদক লাভ করেছেন। গত ১৭ থেকে ২৪ জুলাই (২০১৬) এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ইরানি টীমের সদস্যদের মধ্যে জনাব কিয়ান্ নিযামী রৌপ্যপদক জয় করেন এবং জনাব মোহাম্মাদ সাদেকী ও জনাবা মাহ্দীয়াহ্ হামেদী ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত ২৬তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ইরানি টীম একটি স্বর্ণপদক ও একটি ব্রোঞ্জপদক জয় করে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিল।
উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য ২৯তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (আইবিও) একটি বার্ষিক প্রতিযোগিতাÑ যাতে সারা বিশ্বের সব দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে জীববিজ্ঞানের জ্ঞানে তাদের পারদর্শিতা ও উদ্ভাবনী শক্তি প্রদর্শন করেন। এ প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ১৯ বছর বয়স্ক স্কুল ছাত্র-ছাত্রিগণ অংশগ্রহণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী, এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবার আগে প্রত্যেক দেশে জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে প্রথম থেকে চতুর্থ স্থানের অধিকারীকে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়।

বিশ্বসেরা ফ্রিস্টাইল কুস্তিগীরের তালিকায় ইরানের রাহীমী ও হাদী
গত জুলাই মাসে (২০১৬) ইউডব্লিউডব্লিউ প্রি-অলিম্পিক ফ্রিস্টাইল্ র‌্যাঙ্কিং এ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ফ্রিস্টাইর্লা হাসান্ রাহীমী ও র্পাভীয্ হাদী দুই ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে যথাক্রমে বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেষ্ঠ অ্যাথ্লেট্ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।
২৬ বছর বয়স্ক ইরানি ফ্রিস্টাইল্ কুস্তির্গী হাসান্ রাহীমী ৫৭ কেজি ওজনের শ্রেণিতে জর্জিয়ার ভøাদিমির খিন্চেগাশ্ভিলী-র পরে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। অন্যদিকে ইরানের র্পাভীয্ হাদী ১২৫ কেজি ওজন বিভাগে সর্বসাম্প্রতিক বৈশ্বিক র‌্যাঙ্ক্ংি-এ প্রথম স্থান অধিকারকারী জর্জিয়ার জেনো পেত্রিয়াশ্ভিলী ও দ্বিতীয় স্থান দখলকারী রাশিয়ার বিলীয়াল্ মাখোভ্-এর পরে তৃতীয় স্থান লাভ করেন।

এশীয় জুনিয়র ওয়াটার পোলো চ্যাম্পিয়নশীপে ইরানের তৃতীয় স্থান অধিকার
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ৫ম এশীয় জুনিয়র ওয়াটার পোলো চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জুনিয়র ওয়াটার পেলো টীম ৫ম স্থান অধিকার করেছে। ইরানি টীম এ প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্বে ৯ পয়েন্টের মোকাবিলায় ১৫ পয়েন্ট পেয়ে উযবেকিস্তানের টীমকে পরাজিত করে এ বিজয় অর্জন করে। ফলে ইরানি টীম এ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় বিজয়ী হিসেবে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে। উল্লেখ্য, এ প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে যথাক্রমে জাপান ও চীন।
৫ম এশীয় জুনিয়র ওয়াটার পোলো চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা গত ২১ জুলাই (২০১৬) শুরু হয় এবং ২৭ জুলাই সমাপ্ত হয়।

আন্তর্জাতিক রসায়ন অলিম্পিয়াডে ইরানের ষষ্ঠ স্থান অধিকার
জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসে অনুষ্ঠিত ৪৮তম আন্তর্জাতিক রসায়ন অলিম্পিয়াডে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। উল্লেখ্য, এ অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে ইরানি তরুণ রসায়নবিদগণ দু’টি স্বর্ণ পদক ও দু’টি রৌপ্যপদক লাভ করেছে।
গত ২৩শে জুলাই থেকে ১লা আগস্ট (২০১৬) পর্যন্ত তিবিলিসে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের পাঁচ মহাদেশের ৬৭টি দেশ থেকে তরুণ রসায়নবিদগণ অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় ইরানের আমীর আলী কারীমী ও পেইমন্ র্মীক্বাদেরী স্বর্ণপদক এবং ঈমান মাম্বারী ওসগুয়েঈ ও যাহ্রা কাযেমী রৌপ্যপদক লাভ করেন।
এ প্রতিযোগিতায় চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, রোমানিয়া ও তাইওয়ান যথাক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম স্থান অধিকার করে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে আযারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ৪৭তম আন্তর্জাতিক রসায়ন অলিম্পিয়াডে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিল।

তেহরানে আইএস্এফ্সি এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে
তেহরানে চলতি ২০১৬ সালের আইএস্এফ্সি এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। গত ৬ই আগস্ট (২০১৬) ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মাউন্টেনীয়ারিং ও স্পোর্টস ক্লাইম্বিং ফেডারেশনের প্রধান জনাব রেযা যরেঈ এ খবর প্রকাশ করেন।
জনাব রেযা যরেঈ জানান যে, এ পর্যন্ত জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর আগামী ২৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তেহরানে অনুষ্ঠিতব্য এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে স্বীয় প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, এ প্রতিযোগিতায় মোটামুটি ১৫টির মতো টীম অংশগ্রহণ করবে। তিনি আরো বলেন, এ প্রতিযোগিতা যাতে অত্যন্ত উচ্চ মানসম্পন্ন হয় সে লক্ষ্যে আমরা যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
এছাড়া ঐ সময় চীনে অনুষ্ঠানরত ‘এশিয়ান্ চ্যাম্পিয়নশীফ দুয়ুন’ সম্পর্কে জনাব রেযা যরেঈ আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, চীনের দুয়ুনে অনুষ্ঠানরত এ ইভেন্টে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের দল আশাব্যঞ্জক ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবে।
তিনি আরো জানান যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় পর্বতারোহী দল অচিরেই জর্জিয়ার গিরিশৃঙ্গসমূহে আরোহণের জন্য বর্তমানে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

ইরানি বাস্কেটবল খেলোয়াড়গণ পুনরায় ‘এশিয়ান অনুর্ধ¦ ১৮’ খেতাব অর্জন করেছেন
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তরুণ বাস্কেটবল খেলোয়াড়গণ ‘২০১৬ ফিবা (এফআইবিএ) এশিয়া অনুর্ধ¦ ১৮ শিরোপা’ প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে পুনরায় ‘এশিয়া অনুর্ধ¦ ১৮’ খেতাব অর্জন করেছেন। ইরানি খেলোয়াড়গণ এ প্রতিযোগিতার ফাইনালে ৬৫ পয়েন্টের মোকাবিলায় ৭১ পয়েন্ট লাভ করে জাপানকে পরাজিত করে এ শিরোপা জয় করেন।
এ প্রতিযোগিতায় ইরানের পক্ষে মেহেরান রেযায়ী ১৮ পয়েন্ট ও মোহাম্মাদ জা‘ফারী ১৬ পয়েন্ট লাভ করেন। এছাড়া আমীর হোসেইন রেযায়ীফার ১০ পয়েন্ট অর্জন করেন। আর তাঁরা ১২টি রিবাউন্ড লাভ করেন।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ২০০৮ সালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান প্রথম বারের মতো ‘এশিয়া ইউ ১৮’ খেতাব অর্জন করে। এই নিয়ে ইরান তিন বার এ খেতাব লাভ করলো।
১৯৯০ সালের পর থেকে এ প্রতিযোগিতায় জাপান এবার প্রথম বারের মতো ফাইনালে উন্নীত হয়, কিন্তু দ্বিতীয় বার শিরোপা অর্জনে ব্যর্থ হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের পর এবার জাপান দ্বিতীয় বারের মতো রানার্স-আপ অবস্থান লাভ করেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ৬৩ পয়েন্টের মোকাবিলায় ৮৬ পয়েন্ট লাভ করে তৃতীয় স্থান দখল করেছে।

প্রেসিডেন্ট রুহানির সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর এক নযর

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে ২০১৩ সালের ১৪ই জুন তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল্-মুসলিমিন ড. হাসান রুহানি দেশের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। এরপর ঐ সালের ৩রা আগস্ট তারিখে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ ও সরকার গঠন করেন। প্রেসিডেন্ট রুহানির সরকার বিগত তিন বছরে দেশে যেসব উন্নয়ন ও সেবামূলক এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তার অংশবিশেষ সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরা হলো :

বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
০ প্রথম বারের মতো ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিজ্ঞানবিষয়ক উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হারের বিচারে বিশ্বের বুকে প্রথম স্থান অধিকার করে এবং প্রথম বারের মতো ইরানের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাসংস্থা বিশ্বের শতকরা এক ভাগ শেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাসংস্থার তালিকায় স্থানলাভ করেছে।
০ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে Ñ যার ফলে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ ১৩৯৪ ইরানি সালে (২১শে মার্চ ২০১৫ থেকে ২০শে মার্চ ২০১৬) বিশ্বের এক হাজার ৪৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ লাভ করেন এবং অন্যান্য দেশের সাথে যৌথভাবে ১৪১টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ ও ৩টি অত্যন্ত বড় আকারের প্রকল্পের কাজ আঞ্জাম দেন। এর ফলে ইরান মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান গবেষণাকারী দেশ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
০ ইরানের জ্ঞান-বিজ্ঞান উৎপাদনসমূহ রফতানির মূল্য বার্ষিক ৫০ লক্ষ ডলার থেকে বেড়ে এক কোটি বিশ লক্ষ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
০ ১৩৯৪ ইরানি সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকারের সেবা গুণগত ও পরিমাণগত উভয় দিক দিয়ে শতকরা ১১০ ভাগ প্রবৃদ্ধির অধিকারী হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণ তহবিলের আয়ের পরিমাণ শতকরা ৭৮ ভাগ বৃদ্ধি পায়।

তেল মন্ত্রণালয়
০ দক্ষিণ পর্স্ যৌথ গ্যাস ক্ষেত্রে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
০ দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্রের ১২, ১৫, ১৬ ও ১৭ নং ফেসের উৎপাদন ক্ষমতা পরিপূর্ণরূপে কাজে লাগানো হয় এবং এর ফলে দৈনিক তেল শোধন ক্ষমতা ১৬ কোটি ঘন মিটার বৃদ্ধি পায়। এছাড়া দেশের গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতাও দৈনিক ১৪ কোটি ঘন মিটার বৃদ্ধি পায়।
০ দেশের বার্ষিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে ১৩৯১ ইরানি সালে (২১শে মার্চ ২০১২ থেকে ২০শে মার্চ ২০১৩) ৬২ কোটি ২০ লাখ ঘন মিটার ছিল সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে (২১শে মার্চ ২০১৫ থেকে ২০শে মার্চ ২০১৬) তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭১ কোটি ৪০ লক্ষ ঘন মিটারে দাঁড়ায়।
০ দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্রে ঘনীভূত গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ যেখানে ১৩৯১ ইরানি সালে ২৪ কোটি ১০ লক্ষ ঘন মিটার ছিল সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ কোটি ৬০ লক্ষ ঘন মিটারে দাঁড়ায়।
০ দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ যেখানে ১৩৯১ ইরানি সালে শতকরা ৩৭ দশমিক ৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছিল সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
০ প্রধান প্রধান শিল্প-কারখানাসমূহে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ যেখানে ১৩৯২ ইরানি সালে (২১শে মার্চ ২০১৩ থেকে ২০শে মার্চ ২০১৪) দৈনিক ৮ কোটি ১৫ লাখ ঘন মিটার ছিল সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক ৯ কোটি ৮ লাখ ঘন মিটারে দাঁড়ায়।
০ দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঐসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেলজাত তরল দ্রব্যাদির ব্যবহার হ্রাস পায় এবং এ পদক্ষেপ দেশে বায়ূ দূষণের মাত্রা হ্রাসের ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে।
০ ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির মধ্যে তরল জ্বালানির পরিমাণ ছিল শতকরা ৪৩ ভাগ, সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা হ্রাস পেয়ে শতকরা ১৮ ভাগে দাঁড়ায়। পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে যে, চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালে (২১শে মার্চ ২০১৬ থেকে ২০শে মার্চ ২০১৭) দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে তরল জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ আরো হ্রাস পেয়ে মোট ব্যবহৃত জ্বালানির শতকরা ৯ ভাগে দাঁড়াবে এবং এর ফলে তা বায়ূ দূষণ রোধের ক্ষেত্রে আরো উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করবে।
০ দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে ৩ হাজার ৬২০ কোটি ঘন মিটার ছিল সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ৮০০ কোটি ঘন মিটারে দাঁড়ায়। পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে যে, চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালে এর পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৬ হাজার ৮৫০ কোটি ঘন মিটারে দাঁড়াবে, আর এ পরিমাণ ১৩৯১ ইরানি সালের তুলনায় শতকরা ৯০ ভাগ বেশিতে দাঁড়াবে।
০ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দেশের যানবাহনে তেল ও গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ শতকরা ৯ দশমিক ৫ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।

অশোধিত তেল ও তরল গ্যাসজাত দ্রব্যাদির উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি
০ ১৩৯২ ইরানি সালের প্রথম পাঁচ মাসের গড় অনুযায়ী ঐ সময় দেশে দৈনিক অশোধিত তেল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৭ লক্ষ ব্যারেল, আর চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালের খোরদাদ মাসের (২২শে মে থেকে ২১শে জুন ২০১৬) উৎপাদনের গড় অনুযায়ী তা বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক ৩৮ লক্ষ ব্যারেলে দাঁড়িয়েছে- যা দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার আগেকার উৎপাদনের পরিমাণের কাছাকাছি।
০ ১৩৯২ ইরানি সালের প্রথম ছয় মাসের গড় অনুযায়ী দেশে মোট তরল গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল দৈনিক ৩ লাখ ৮৬ হাজার ব্যারেল এবং ১৩৯৪ ইরানি সালে গড়ে দৈনিক এর উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ২৮ হাজার ব্যারেল, আর একই সালের (১৩৯৪) ইসফান্দ্ মাসে (বছরের শেষ মাসে) গড়ে এর দৈনিক উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৯৬ হাজার ব্যারেল।
০ ১৩৯২ ইরানি সালের প্রথম পাঁচ মাসের গড় অনুযায়ী দেশের অশোধিত তেল রফতানির পরিমাণ যেখানে গড়ে দৈনিক ৯ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল ছিল সেখানে চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালের খোরদাদ মাসে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে গড়ে দৈনিক ২০ লক্ষ ব্যারেলে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, ১৩৯৪ ইরানি সালের প্রথম দশ মাসে অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আগে দেশের অশোধিত তেল রফতানির পরিমাণ ছিল গড়ে দৈনিক ১০ লক্ষ ৮০ হাজার ব্যারেল।
০ কারূন্ নদীর পশ্চিম তীরবর্তী যৌধ তেল ক্ষেত্রসমূহকে কেন্দ্রীভূত করার ফলে দেশের তেল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ তেল ক্ষেত্রে যেখানে ১৩৯২ ইরানি সালের খোরদাদ মাসে গড়ে দৈনিক ৭০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদিত হয় সেখানে চলতি ১৩৯৫ সালের খোরদাদ মাসে এখানে গড়ে দৈনিক তেল উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ১০ হাজার ব্যারেল। পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে যে, চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালের শেষ নাগাদ এখানে তেল উৎপাদনের পরিমাণ গড়ে দৈনিক ২ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলে দাঁড়াবে।

পেট্রো-রসায়ন দ্রব্যাদির উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি
০ দেশে পেট্রো-রসায়ন দ্রব্যাদির উৎপাদন ও রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে পেট্রো-রসায়ন দ্রব্যাদি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৬ লাখ টন সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে এর উৎপাদন শতকরা ১৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৬৩ লক্ষ টনে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে পেট্রো-রসায়ন দ্রব্যাদি রফতানির পরিমাণ ছিল এক কোটি ২৮ লক্ষ টন সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে এর রফতানি শতকরা ৪৬ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে এক কোটি ৮৭ লক্ষ টনে দাঁড়ায়।
০ পেট্রো-রসায়ন সংস্থাসমূহে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ১৩৯২ ইরানি সালে দৈনিক গড়ে ৩ কোটি ৫৬ লক্ষ ঘন মিটার ছিল এবং চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক গড়ে ৪ কোটি ২৬ লক্ষ ঘন মিটারে দাঁড়িয়েছে।
০ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত নতুন পাঁচটি পেট্রো-রসায়ন প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলোতে চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালের খোরদাদ মাস (২২শে মে থেকে ২১শে জুন) নাগাদ যে হারে উৎপাদন হয়েছে সে হিসেবে বছরের শেষ নাগাদ এ প্রকল্পগুলোতে (১৩৯০ ইরানি সালের শেষের মূল্যের হিসেবে) ১৩৪ কোটি ডলার মূল্যের পেট্রো-রসায়ন দ্রব্যাদি উৎপাদিত হবে।
০ ৫৫০ কোটি ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করে নির্মিত আরো ১৪টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী বছর (১৩৯৬ ইরানি সাল)-এর মাঝামাঝি নাগাদ এ সব প্রকল্পে উৎপাদনের পরিমাণ (১৩৯০ ইরানি সালের শেষের মূল্যের হিসেবে) ৫৭০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
০ দেশে উৎপাদিত পেট্রোল ও অয়েল গ্যাসের মান উন্নত করা হয়েছে এবং এর ফলে জীব পরিবেশে উন্নততর হয়েছে।
০ দেশে ব্যবহার্য পেট্রোলের সাথে মেশানোর জন্য স্ট্যান্ডার্ড বহির্ভূত হাইড্রোকার্বন উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং এর পরিবর্তে এ কাজে ব্যবহারের জন্য আমদানিকৃত ইউরো-প্রেট্রোল সরবরাহ করা হচ্ছে Ñ যা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও কম ব্যয় সাপেক্ষ। দেশে এ পণ্যের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ইউরো-প্রেট্রোল আমদানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও ইউরো-পেট্রোল উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ৭টি বড় শহরে এ ধরনের পেট্রোল সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে ঐসব শহরের জীব পরিবেশের উন্নতি হয়েছে।
০ দেশে পেট্রোল উৎপাদনের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমান সরকারের আমলে দেশের তেল শোধনাগারসমূহে সুর্পা ফুয়েল উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। ফলে, বর্তমান সরকার দায়িত্বে আসার আগেকার ছয় মাসে (১৩৯২ ইরানি সালের প্রথম ছয় মাসে) যেখানে সুপার ফুয়েল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল গড়ে দৈনিক ২১ লক্ষ লিটার, সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক উৎপাদনের পরিমাণ গড়ে ২ কোটি ৫০ লক্ষ লিটারে উন্নীত হয়েছে।

তেল ও গ্যাস শোধন বৃদ্ধি
০ পরিচালনা, শেয়ার-হোল্ডার, ও আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সেতারেহ্ খালীজে ফারস্’ (পারস্য উপসাগরের নক্ষত্র) শোধনাগার প্রকল্পের কাঠামো সংশোধন করা হয়েছে এবং এ শোধনাগার থেকে যত শীঘ্র সম্ভব উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্যে এর বাস্তবায়নে অধিকতর গতি সঞ্চার করা হয়েছে। ১৩৯২ ইরানি সালের মেহ্র্ মাস (২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ২২শে অক্টোবর ২০১৩) পর্যন্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজের আনুমানিক সর্বোচ্চ শতকরা ৬৯ দশমিক ৫ ভাগ অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল এবং এটির ফিজিক্যাল প্রগ্রেসের কাজ এ পর্যন্ত মোটামুটি শতকরা ৮৮ ভাগ অর্জিত হয়েছে; চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালে এ শোধনাগারের ১ নম্বর ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু হবে।
০ আস্লাভীয়াহ্ এলাকায় মোট প্রায় তিনশ’ কোটি ডলার পুঁজি বিনিয়োগ সাপেক্ষ প্রতিটি ৬০ হাজার ব্যারেল শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন ছোট আকারের ৮টি তরল গ্যাস উৎপাদনের শোধনাগার নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয় এবং এতে অংশগ্রহণকারী বেসরকারি কোম্পানিসমূহের মধ্য থেকে আটটি কোম্পানিকে নির্বাচন করা হয়েছে। এই প্রথম বারের মতো এ ধরনের প্রকল্পে কোনোরূপ সরকারি পুঁজি বিনিয়োগ ছাড়াই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্তভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছেÑ যাতে নির্বাচিত কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই তাদের কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য জমি বুঝে পেয়েছে এবং এ প্রকল্পের বেসিক ডিজাইন পর্যালোচনার কাজও সমাপ্তির পথে। এ প্রকল্পে উৎপাদিত সমস্ত তরল গ্যাস দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করা হবে। এটা হবে অশোধিত গ্যাস বিক্রি প্রতিরোধ করার নীতি বাস্তবায়নের পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। তেমনি এটা প্রতিরোধের অর্থনীতির নীতি বাস্তবায়নের পথেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
০ প্রতিযোগিতামূলকভাবে উৎপাদনের পথে বিদ্যমান বাধাসমূহ অপসারণের লক্ষ্যে প্রণীত আইনের ১২ নম্বর ধারার আওতায় গ্রামাঞ্চলে গ্যাস পৌঁছানোর প্রকল্পের ডিজাইন প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে এবং তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
০ ১৩৯২ ইরানি সালের খোরদাদ মাস (২২শে মে থেকে ২১শে জুন ২০১৩) পর্যন্ত যেখানে দেশের শতকরা ৫৫ ভাগ গ্রামে গ্যাস পৌঁছানো সম্ভব হয়েছিল সেখানে চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালের উর্দিবেহেশত্ মাস (২১শে এপ্রিল থেকে ২১শে মে ২০১৬) পর্যন্ত দেশের প্রায় শতকরা ৬৭ ভাগ গ্রামকে গ্যাস পৌঁছানোর আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ জনগণ প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ লাভ করছেন। দেশের গ্রাম এলাকায় গ্যাস পৌঁছানোর জন্য যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে আগামী ১৩৯৬ ইরানি সালের মাঝামাঝি (২২শে সেপ্টেম্বর ২০১৭) নাগাদ দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ জনগণ গ্যাস সরবরাহ নেটওয়ার্কের আওতায় আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে দেশের মরুময় ‘সিস্তান ও বেলুচিস্তান’ প্রদশেও গ্যাস পৌঁছানোর প্রকল্পের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে।
০ ১৩৯২ ইরানি সালের শুরু (২১শে মার্চ ২০১৩) থেকে ১৩৯৪ ইরানি সালের শেষ (২০শে মার্চ ২০১৬) পর্যন্ত নতুন ৬ হাজার ২০০ গ্রামে ও নতুন ৬০টি শহরে গ্যাস পৌঁছানোর কাজ আঞ্জাম দেয়া হয়েছে।

জীব পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা
০ দেশের বড় বড় শহরের- যাতে তিন কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করছেন- বায়ুর মানোন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। এসব শহরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী দূষণ উপাদানসমূহের পরিমাণ স্ট্যান্ডার্ড মানের চেয়েও শতকরা ৮০০ ভাগ কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ইস্ফাহানে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন দিবস পালনের সংখ্যা ১৩৯২ ইরানি সালের তুলনায় তিন গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অধিকন্তু দেশের শিল্প-কারখানাসমূহের জন্য নতুন বায়ুমান নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নযরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও চিকিৎসা শিক্ষা মন্ত্রণালয়
০ দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রসমূহে চিকিৎসার জন্য আগত রোগীদের কাছ থেকে ফী গ্রহণের পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগ হ্রাস করা হয়েছে। সেই সাথে এসব হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে বেডের সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ১০ হাজার ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়ে দেশের সর্বত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
০ দেশের এক কোটি দশ লাখ কম আয়ের অধিকারী লোকের জন্য স্বাস্থ্যিিবমার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং শহরগুলোতে অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী অপেক্ষাকৃত নিম্ন মানের জীবনযাপনকারী এক কোটি লোকের জন্য চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
০ দেশের সুবিধাবঞ্চিত জায়গাগুলোর জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আড়াই হাজার ডিসপেন্সারী ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
০ দেশের ৫৭০টি হাসপাতালের প্রতিটিতে দুই হাজার বর্গ মিটার আয়তনের উন্মুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন করা হয়েছে। দেশের পরিসংখ্যান সংস্থা কর্তৃক যে জনমত জরীপ করা হয়েছে তাতে দেখা যায় যে, এতে জনগণ খুবই সন্তুষ্ট।
০ দেশে ওষুধশিল্পের অধিকতর প্রসার ও ওষুধ উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে ওষুধ আমদানির ব্যয় বছরে ৪০ কোটি ডলার হ্রাস পেয়েছে, অধিকন্তু বিদেশে ওষুধ রফতানির পরিমাণ দুই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

শহীদ ও যুদ্ধাহতদের সংক্রান্ত ফাউন্ডেশনের কর্ম তৎপরতা
০ দীর্ঘ নয় বছর স্থগিত থাকার পর যুদ্ধাহতদের প্রতি সেবা প্রদান সংক্রান্ত আইনের বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
০ ১৩৭৬ থেকে ১৩৯০ ইরানি সাল পর্যন্ত যুদ্ধাহতদের যে ভাতা প্রদান বাকি পড়েছিল তা প্রদান করা হয়েছে।
০ যুদ্ধাহতদের প্রায় ৩০ হাজার সন্তানের জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
০ দেশের প্রাদেশিক রাজধানী সমূহে যুদ্ধাহতদের জন্য ১৬টি ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত ও সেগুলোর উদ্বোধন করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
০ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশসমূহে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নিরাপত্তাবিরোধী সভা-সমাবেশের অপচেষ্টা বানচাল করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া যায়নবাদী ইসরাঈলের ইরান-আতঙ্ক সৃষ্টিকারী প্রকল্পকে অকেজো করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববাসীর পক্ষে ওয়াহাবি চরমপন্থীদেরসহ মানবতার জন্য প্রকৃত বিপজ্জনক গোষ্ঠী সমূহকে চিনতে পারা সম্ভব হয়েছে।
০ বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর শুরু থেকেই আলোচনার মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের সমস্ত পারমাণবিক সাফল্যের হেফাযত করা সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয়া সম্ভব হয়েছে এবং একই সাথে, ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবসমূহের ও অন্যায়ভাবে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসমূহের সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
০ যথাযথ ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপের ফলে এনার্জি, যোগাযোগ ও পরিবহন এবং বিমার ওপরকার নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়েছে এবং আর্থিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাবলির নিরসনের পথে যাত্রা শুরু হয়েছে। তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের নিষেধাজ্ঞাসমূহের অবসান ঘটানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত চাপ সৃষ্টির পদক্ষেপ এগিয়ে চলেছে।
০ বিভিন্ন দেশের সাথে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের সকল এলাকা ও অঞ্চল থেকে বহু রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, মন্ত্রী এবং বহু রাজনৈতিক, সংসদীয় ও বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল ইরান সফর করেছেন।

সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, হস্ত শিল্প ও পর্যটন সংস্থা
০ ইতিপূর্বে বিদেশিদের দ্বারা ইরান থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দ্রব্যের চারটি চালান প্রথম বারের মতো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এসব দ্রব্য বেলজিয়াম, আমেরিকা ও ইতালি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তিনটি নতুন নিদর্শন ইউনেস্কো কর্তৃক বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
০ বর্তমান সরকারের সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনার ফলে দেশে বিদেশি পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পাচ্ছে- যার ফলে সরকারের মেয়াদের প্রথম তিন বছরে দেশে বিদেশি পর্যটক আগমন বৃদ্ধির হার বার্ষিক শতকরা ৯ ভাগে দাঁড়িয়েছে- যা বিশ্বের সকল দেশে গড়ে বার্ষিক বিদেশি পর্যটক আগমন বৃদ্ধির হারের দ্বিগুণ; এটি দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য বিরাট আশাবাদ সৃষ্টির কারণ হয়েছে।
০ জাতীয় উন্নয়ন তহবিল থেকে ৭০টি অসমাপ্ত প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য যথাযথ প্রযোজন অনুযায়ী ৮ হাজার কোটি তুমান বরাদ্দ প্রদানের ফলে বিগত তিন বছরে ৩৪টি ৪ তারকা ও ৫ তারকা হোটেলের নির্মাণকাজ সমাপ্ত ও সেগুলোকে চালু করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে দেশে ৪ তারকা ও ৫ তারকা হোটেলের সংখ্যা ১২৫টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৯টিতে দাঁড়িয়েছে।
০ দেশে হস্তশিল্পের অধিকতর প্রসার ঘটানো হয়েছে এবং এর মান ও আকর্ষণ বৃদ্ধি করা হয়েছে; এ ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যসমূহ হচ্ছে :
(ক) নতুন ২ হাজার ৮০০টি উৎপাদনকারী কারখানা প্রতিষ্ঠা ও চালু করা হয়েছে।
(খ) বিগত দুই বছরে হস্তশিল্প সামগ্রী রফতানির পরিমাণ শতকরা ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
(গ) দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রয়ের মার্কেট সম্প্রসারণের মাধ্যমে হস্তশিল্পের বাজারজাতকরণ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
০ নিম্নলিখিত পদক্ষেপ সমূহের মাধ্যমে দেশের পর্যটন র্শিল্পে নতুন সামর্থ্য সৃষ্টি করা হয়েছে :
০ প্রাকৃতিক নিদর্শনাদি দর্শনকারী পর্যটকদের অবস্থানের সুবিধার্থে আগে যেখানে মাত্র ৪০টি রেস্ট হাউস ছিল, বিগত তিন বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৮০টিতে দাঁড়িয়েছে।
০ বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সৌধ সমূহের মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজকে দ্রুতায়ন করা হয়েছে।
০ দেশে পর্যটকদের জন্য ভিসা সুবিধার সম্প্রসারণ করা হয়েছে, বিশেষ করে বিমান বন্দর থেকে ইস্যুকৃত ভিসায় ইরানে প্রবেশের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
০ বেসরকারি খাতের সহায়তা কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০টিরও বেশি তথ্য সরবরাহ ও পর্যটক আকর্ষণকারী দফতর খোলা হয়েছে।

বিদ্যুত ও জ্বালানি
০ দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৬ হাজার মেগাওয়াট পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে, ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৬৯ হাজার মেগাওয়াট ছিল সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা ৭৫ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের মধ্যে এক নম্বরে ও সারা বিশ্বের মধ্যে ১৪ নম্বরে উন্নীত হয়েছে।
০ ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে দেশে বিদ্যুৎ বিতরণজনিত সিস্টেম লসের হার ছিল শতকরা ১৫ দশমিক ৫ ভাগ, সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা হ্রাস পেয়ে শতকরা ১১ ভাগে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ থেকে সুবিধা লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশে এনার্জি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিরাট সাশ্রয় হয়েছে।
০ দেশের ১৫টি প্রদেশে প্রতিটি ৪০০ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৪টি বিদ্যুৎ টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে ও ব্যবহার করা হচ্ছেÑ যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৭ হাজার ৮৪০ মেগাভোল্ট এমপিআর।
০ দেশের ১৯টি প্রদেশে প্রতিটি ২৩০ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৯টি বিদ্যুৎ টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে ও ব্যবহার করা হচ্ছেÑ যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৭ হাজার ৮ মেগাভোল্ট এমপিআর।
০ দেশের ১৩টি প্রদেশে প্রতিটি ১৩২ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৭টি বিদ্যুৎ টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে ও ব্যবহার করা হচ্ছেÑ যেগুলোর মোট ক্ষমতা ২ হাজার ৫৪৩ মেগাভোল্ট এমপিআর।
০ দেশের ২৪টি প্রদেশে প্রতিটি ৬৩ থেকে ৬৬ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ৮৫টি বিদ্যুৎ টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে ও ব্যবহার করা হচ্ছেÑ যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৫ হাজার ৬০৪ মেগাভোল্ট এমপিআর।
০ দেশে প্রতিটি ৫৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৯টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে।

পানি সংরক্ষণ, শোধন ও সরবরাহ এবং সুয়ারেজের পানি শোধন ও অপসারণ
০ প্রায় ৪৭৫ কোটি ঘন মিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ১৯টি বাঁধকে পানি ধারণ পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে এবং সেগুলো উদ্বোধনের পর সেগুলোতে সঞ্চিত পানি কাজে লাগানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
০ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সেচন ও পানি অপসারণ মেইন নেটওয়ার্ক এবং ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে শাখা নেটওয়ার্ক ব্যবহার শুরু করা সম্ভব হয়েছে।
০ দৈনিক মোট ৮ লাখ ১৪ হাজার ঘন মিটার পানি শোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন ১৪টি পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেগুলোতে পানি শোধনের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া শহরাঞ্চলের সুয়ারেজের পানি শোধনের লক্ষ্যে দৈনিক মোট ৭ লাখ ১০ হাজার ঘন মিটারেরও বেশি পানি শোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন আরো ২৬টি শোধনাগার নির্মাণ ও চালু করা হয়েছে।
০ দেশের ৯টি প্রদেশে বছরে সর্বমোট ১৫ কোটি ৪০ লক্ষ ঘন মিটার সরবরাহক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
০ সর্বমোট ৪১ হাজার ঘন মিটার উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন ১১টি মিঠা পানি উৎপাদনের প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
০ ২ হাজার ৫০০ গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের নেটওয়ার্ক পৌঁছানো হয়েছে।
দেশজ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ
দেশজ প্রযুক্তি সম্পর্কিত গবেষণা এবং তার ব্যবহার ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ আঞ্জাম দেয়া হয়েছে :
০ দেশের অভ্যন্তরে প্রথম বারের মতো পানির টারবাইনের ডিজাইনিং ও তা তৈরি করা হয়েছে।
০ দেশের অভ্যন্তরে প্রথম বারের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রের গভর্নর যন্ত্র ডিজাইনিং ও তৈরি করা হয়েছে।
০ দেশের অভ্যন্তরে প্রথম বারের মতো স্মার্ট মিটার ডিজাইনিং ও তৈরি করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ এবং ‘পানি ও বিদ্যুৎ’ শিল্পের সরঞ্জাম রফতানি
দেশ থেকে বিদেশে বিদ্যুৎ, ‘পানি ও বিদ্যুৎ’ শিল্পের সরঞ্জামাদি এবং এসব ক্ষেত্রে কারিগরি ও প্রকৌশল সেবা রফতানির ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সাফল্য সমূহ অর্জিত হয়েছে :
০ ২ লাখ ৭৩ হাজার গিগাওয়াট ঘণ্টা পরিমাণ বিদ্যুৎ রফতানি করা হয়েছে।
০ ৮৬৩ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের ‘পানি ও বিদ্যুৎ’ শিল্পের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি এবং এতদসংশ্লিষ্ট কারিগরি ও প্রকৌশল সেবা রফতানি; এ রফতানি অংশত সম্পন্ন হয়েছে ও অংশত বাস্তবায়নের পথে।

কৃষি জিহাদ মন্ত্রণালয়
বর্তমান সরকারের আমলে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের কৃষি জিহাদ মন্ত্রণালয়ের সাফল্যসমূহ (প্রধান প্রধান খাতে) নিম্নোক্ত চার্ট থেকে (যা মিলিয়ন টনের হিসাবে দেখানো হয়েছে) সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাবে :

খাত ১৩৯২-এ উৎপাদন ১৩৯৩-এ উৎপাদন ১৩৯৪-এ উৎপাদন ১৩৯২-র তুলনায় ১৩৯৪-এ প্রবৃদ্ধি
কৃষি ক্ষেতের উৎপাদন ৬৮.৭ মিঃ টন ৭৪ মিঃ টন ৮১ মিঃ টন ১৮%
ফল ১৬ মিঃ টন ১৬.৫ মিঃ টন ১৭ মিঃ টন ৬%
পশু ও পাখি সম্পদ ১২ মিঃ টন ১২.৫ মিঃ টন ১৩ মিঃ টন ৮%
মৎস্য সম্পদ ০.৯ মিঃ টন ০.৯৫ মিঃ টন ১ মিঃ টন ১১%
মোট কৃষিজাত উৎপাদন ৯৭ মিঃ টন ১০৪ মিঃ টন ১১২ মিঃ টন ১৫.৫%

০ ওপরের চার্টে দেখা যাচ্ছে যে, ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে মোট কৃষিজাত দ্রব্যাদির উৎপাদন ছিল ৯ কোটি ৭০ লক্ষ টন সেখানে বর্তমান সরকারের আমলে গত ইরানি সালে (১৩৯৪) কৃষিজাত দ্রব্যাদির উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ কোটি ২০ লক্ষ টনে। অর্থাৎ ১৩৯২ ইরানি সালের তুলনায় ১৩৯৪ ইরানি সালে দেশে কৃষিজাত দ্রব্যাদির উৎপাদন শতকরা ১৫ দশমিক ৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
০ কৃষকদের স্বার্থের হেফাযতের লক্ষ্যে ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের কাছ থেকে ৪৮ লক্ষ টন গম ক্রয় করা হয়েছিল সেখানে উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে ১৩৯৪ ইরানি সালে তাঁদের কাছ থেকে গম ক্রয়ের পরিমাণ শতকরা ৬৮ দশমিক ৭৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৮১ লক্ষ টনে দাঁড়ায়।
০ আশা করা হচ্ছে যে, চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালে দেশের কৃষকদের কাছ থেকে গম ক্রয়ের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেয়ে এক কোটি টনে দাঁড়াবে। দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে আশা করা হচ্ছে যে, চলতি ইরানি সালের শেষে দেশ গমের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সাবলম্বী হতে সক্ষম হবে।
০ দেশে ১৩৯২ ইরানি সালে মোট ১১ লক্ষ ৩০ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হয়; ১৩৯৪ সালে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ শতকরা ৩৩ ভাগ (৩ লাখ ৮০ হাজার টন) বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ লক্ষ টনে দাঁড়ায়।
০ ১৩৯২ ইরানি সালে যেখানে দেশে ২৮ লক্ষ টন যব উৎপাদিত হয় সেখানে ১৩৯৪ ইরানি সালে তা শতকরা ১৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২ লক্ষ টনে দাঁড়ায়।
০ জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা কর্তৃক স্থায়ী মূল্যের ভিত্তিতে যে হিসাব করা হয়েছে তাতে দেখা যায় যে, দেশে কৃষি খাতে মোট উৎপাদনের পরিমাণ মূল্যের বিচারে শতকরা ৫ দশমিক ৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
০ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধিতে (বর্তমান মূল্যের ভিত্তিতে) কৃষি খাতের বর্ধিত আয় ১৩৯৩ ইরানি সালে ছিল শতকরা ৩২ দশমিক ৫ ভাগ।
১৩৯২ থেকে ১৩৯৪ ইরানি সাল পর্যন্ত দেশের কৃষিজাত দ্রব্যাদির (খাদ্যশস্য) মূল্য ভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যালেন্স নিম্নরূপ :
০ ১৩৯২ ইরানি সালে কৃষিজাত খাদ্যশস্য আমদানি-রফতানির ভারসাম্য : Ñ ৮১০ কোটি ডলার (ঘাটতি)।
০ ১৩৯৩ ইরানি সালে কৃষিজাত খাদ্যশস্য আমদানি-রফতানির ভারসাম্য : Ñ ৫৪৫ কোটি ডলার (ঘাটতি)।
০ চলতি বাজার দরের হিসাবে ও দেশি মুদ্রার মূল্যে ১৩৯২ ইরানি সালে দেশে উৎপাদিত কৃষিজাত দ্রব্যাদির মোট মূল্য ছিল এক লক্ষ ৫১ হাজার বিলিয়ন তুমান, আর ১৩৯৪ ইরানি সালে দেশে উৎপাদিত কৃষিজাত দ্রব্যাদির মোট মূল্য দাঁড়ায় ২ লক্ষ ১০ হাজার বিলিয়ন তুমান অর্থাৎ ২ বছরের ব্যবধানে দেশে ৫৯ হাজার বিলিয়ন তুমান মূল্যের কৃষিজাত দ্রব্যাদির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
০ মূল্যের হিসাবে ১৩৯৪ ইরানি সালে দেশে কৃষিজাত দ্রব্যাদি ও খাদ্য উপাদান আমদানির পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় শতকরা ১০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।
০ যথাক্রমে ১৩৯২ ও চলতি ১৩৯৫ ইরানি সালের শুরুতে দেশে মোট খাদ্যদ্রব্যের মওজুদের পরিমাণ (হাজার টনের হিসাবে) নিচের চার্টে দেয়া হলো :
খাদ্যদ্রব্যের নাম ১৩৯২ ১৩৯৫
গম ১৭০০ ৫৯৬০
চাল ৬৬ ২১০
ভোজ্য তেল ২৪২ ১৭০
চিনি ৪৪০ ২৪০
মুরগী ৪২ ৭৮

কৃষি অবকাঠামো নির্মাণ তৎপরতা
০ ১৩৯২ ইরানি সালে নতুন ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সেচ ও জলাভূমির পানি নিষ্কাশনের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করা হয়, অন্যদিকে ১৩৯৪ ইরানি সালে নতুন ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে এ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করা হয়; এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিমাণ শতকরা ১১২ দশমিক ৫ ভাগ।
০ ১৩৯২ ইরানি সালে সেচের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক উপায়-উপকরণ ব্যবহার ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে সম্প্রসারিত করা হয়। ১৩৯৪ ইরানি সালে এক লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে এ ধরনের উপায়-উপকরণ ব্যবহার সম্প্রসারিত করা হয় Ñ যা ১৩৯২ ইরানি সালের তুলনায় শতকরা ১৬৮ দশমিক ৫ ভাগ বেশি।
০ ১৩৯২ ইরানি সালে ৩ লাখ ৯১ জাজার হেক্টর জমিতে পানি ব্যবস্থাপনা তৎপরতা চালানো হয়; ১৩৯৪ ইরানি সালে ৫ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে এ তৎপরতা চালানো হয়Ñ যা ১৩৯২ ইরানি সালের তুলনায় শতকরা ৪৩ ভাগ বেশি।

স্থল পথ ও নগরায়ন মন্ত্রণালয়
স্থল পথ ও নগরায়ন মন্ত্রণালয় অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব কাজ আঞ্জাম দিয়েছে তার চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো :
০ ৪৫৭ কিলোমিটার রেল-লাইন সম্প্রসারণ এবং ৭০০ কিলোমিটারেরও বেশি রেল-লাইনের ট্র্যাক্ তৈরির কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
০ তুর্কমানিস্তান ও কাজাকিস্তান থেকে পণ্য ট্রানজিটের রেল-লাইনের বাইরে র্গোগান থেকে ইন্জেহ্ পর্যন্ত রেলা-লাইন নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
০ ১০ হাজার ৬৪২ কিলোমিটার মহাসড়ক অবকাঠামো ব্যবহার করা হচ্ছে; এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : ২১৭ কিলোমিটার ফ্রি-ওয়ে, ২ হাজার ৭৯২ কিলোমিটার মহাসড়ক, এক হাজার ৭৮৩ কিলোমিটারের বেশি মেইন রোড এবং নব নির্মিত ৫ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার গ্রাম্য রাস্তা।
০ দেশের বাণিজ্যিক বন্দরগুলোতে জাহাযে পণ্য উত্তোলন ও খালাসের ক্ষমতা শতকরা ১৬ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ২০ কোটি ৯০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।
০ দেশের বাণিজ্যিক বন্দরগুলোর যাত্রী স্থানান্তর ক্ষমতা শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে এক কোটি ৮২ লাখ জন স্থানান্তর ক্ষমতায় উপনীত হয়েছে।
০ বন্দর সম্প্রসারণ এবং বন্দরসমূহের যন্ত্রপাতি ও উপায়-উপকরণ সম্প্রসারণ সম্পর্কিত ৪৮০ বিলিয়ন তুমান ব্যয় সাপেক্ষ ৬৩টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে সেগুলো থেকে উপকারিতা হাসিল করা হচ্ছে এবং বন্দরসমূহে ১৭৫০ বিলিয়ন তুমান বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগের লক্ষ্যে ৪৬টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
০ দেশের বিমান বন্দরগুলোতে মোট ৫৪ হাজার বর্গ মিটার আয়তনবিশিষ্ট প্রান্ত নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে মোট ৮ হাজার ৫০০ বর্গ মিটার আয়তনবিশিষ্ট বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
০ দেশের গ্রামাঞ্চলে মোট ১১ হাজার ২৬৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন ও পীচ ঢালাই করা হয়েছে।

ট্রানজিট সুবিধার সম্প্রসারণ
০ ১৩৯২ ইরানি সালের শেষ ছয় মাস থেকে শুরু করে ১৩৯৪ ইরানি সালের শেষ পর্যন্ত দেশের রেল-লাইনসমূহের মাধ্যমে মোট ২৪ লক্ষ টন ট্রানজিট পণ্য স্থানান্তর করা হয়েছে এবং রেল-লাইনের মাধ্যমে ট্রানজিট পণ্য স্থানান্তর আরো বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নয়টি স্থল বন্দর থেকে সম্মতিপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।
০ ১৩৯২ ইরানি সালের শেষ ছয় মাস থেকে শুরু করে ১৩৯৪ ইরানি সালের শেষ পর্যন্ত দেশের মহাসড়কসমূহের মাধ্যমে মোট ২ কোটি ৮৮ লক্ষ টন ট্রানজিট পণ্য স্থানান্তর করা হয়েছে।

পরিবহণ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার পরিমাণগত ও মানগত উন্নয়ন কর্মসূচি
০ ৮৯৭ কিলোমিটার রেল-লাইনের মানোন্নয়ন ও পুননির্মাণ করা হয়েছে।
০ বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে মহাসড়ক সমূহে দুর্ঘটনার ফলে গড়ে বছরে যে পরিমাণ জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি হতো সে তুলনায় বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ১৩৯৪ ইরানি সালের শেষ নাগাদ তার পরিমাণ শতকরা ১০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।
০ যেসব জায়গায় অনেক বেশি দুর্ঘটনা সংঘটিত হতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহের এমন এক হাজার ৬৯১টি অংশ ও চৌরাস্তা বিলুপ্ত বা সংশোধন করা হয়েছে।

বেসরকারি খাতের অংশীদারীসহ যোগাযোগ ও পরিবহন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আর্থিক সংস্থান
০ ৫২০ কোটি ডলার ব্যয়সাপেক্ষ তেহরান-ক্বোম-ইস্ফাহান দ্রতগামী ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে ৪১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল-লাইন নির্মাণের জন্য এল.সি. খোলা হয়েছে এবং বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে।
০ ইঙঞ পদ্ধতিতে ৩ হাজার বিলিয়ন তুমান ব্যয় সাপেক্ষ তাব্রীয্-মারান্দ্-বর্যাগণ্ ২৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রি-ওয়ে নির্মাণের জন্য চুক্তি সম্পাদনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।

সাধারণ পরিবহণ খাতে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ বৃদ্ধি
০ এক বছরে সমুদ্র পথে এক কোটি ৭০ লক্ষ যাত্রী বহন করা হয়েছে- যা শতকরা ৪৫ ভাগ বৃদ্ধি নির্দেশ করছে।
০ দেশের বিমান বন্দরসমূহের যাত্রী স্থানান্তর ক্ষমতা শতকরা ৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৮ কোটি ৮০ লক্ষে দাঁড়িয়েছে।
০ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করে বিমান ট্রানজিট ফ্লাইটের সংখ্যা শতকরা ৯১ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে (১৬৫ ফ্লাইটের স্থলে ৩১৫ ফ্লাইটে দাঁড়িয়েছে)।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল্ ইসলাম ওয়াল্-মুসলিমিন্ ড. হাসান রুহানি দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম আঞ্জাম দিয়েছেন ওপরে পরিসংখ্যানের দৃষ্টিকোণ থেকে তার অংশবিশেষ তুলে ধরা হয়েছে। স্মর্তব্য যে, বর্তমান সরকারের সমস্ত উন্নয়ন কার্যক্রমের বর্ণনা দিতে গেলে তার আয়তন অনেক দীর্ঘ হবে বিধায় এখানে তার অংশবিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে- যা থেকে এখানে অনুল্লিখিত খাত সমূহেও যে ব্যাপক উন্নয়ন তৎপরতা চালানো হয়েছে সে সম্পর্কে ধাারণা করা যেতে পারে।
* * *

ইরান পরিচিতি : উরুমিয়েহ

-কামাল মাহমুদ

অবস্থান ও জনসংখ্যা : ইরানের পশ্চিম আজারবাইযান প্রদেশের প্রসিদ্ধ শহর উরুমিয়েহ। ২০১২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উরুমিয়েহ’র লোকসংখ্যা ৬,৮০,২২৮ জন এবং পরিবার সংখ্যা ১,৯৭,৭৪৯টি। এর মধ্যে ৪,৮৬,,৪৪৫ জন পুরুষ, এবং ৪,৭৭,২৯৩ জন নারী। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ইরানের ১০ম স্থানের অধিকারী। আজারবাইজানি উচ্চারণে এটি ‘উরমু’, ‘উরামিয়ে’, ফারসি উচ্চারণে ‘উরুমিয়েহ’ এবং কুর্দি উচ্চারণে ‘উর্মি’ বলে অভিহিত হয়ে থাকে। এটি পশ্চিম আজারবাইজানের রাজধানী শহর। এটি সমুদ্র উপকূল থেকে ১,৩৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসী আজারবাইজানি আঞ্চলিক ফারসি উচ্চারণে কথা বলে। এ শহর মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্রিক। এখানকার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এখানে বিখ্যাত সব আপেল ও আঙুরের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া আখরোট, হোলু, নাশপতি, কমলা, মালটা প্রভৃতি ফলের ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। সবুজ বন-বনানীতে ভরা একটি নয়নাভিরাম শহরের নাম উরুমিয়েহ। তেহরান থেকে এ শহরের দূরত্ব প্রায় ৭৮০ কিলোমিটার এবং তাবরীয় থেকে ১৩৫ কিলোমিটার।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর সল্টলেক এখানে অবস্থিত- যা উরামিয়েহ লেক নামে সুপরিচিত। শহরের পশ্চিম দিকে এ লেকের অবস্থান। পশ্চিমে তুরস্ক সীমানা ঘেঁষা এ লেক। এ লেকের দৈর্ঘ্য ১৪০ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫৫ কিলোমিটার, গভীরতা ১৬ মিটার বা ৫২ ফুট। এটি ইরানের পশ্চিম ও পূর্ব আজারবাইজানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এবং কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এটি মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম লবনাক্ত জলাধার। এ লেকে প্রায় ১০২টি দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপের নাম ‘শাহী আইল্যান্ড’। হালাকু খান ও তার পুত্র আবাকা-কে এখানে সমাধিস্থ করা হয়েছে। এ দ্বীপগুলোর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রয়েছে ইরানের পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর। বর্তমানে এটি উরুমিয়েহ লেক হিসেবে পরিচিত হলেও এর পূর্ব নাম ছিল ‘লেকে রেযায়িয়ে’। মধ্যযুগে এর নাম ছিল ‘লেকে কাবুদা’। এর ল্যাটিন নাম ছিল ‘লাকুস মাটিয়ানাস’। ২০০০ সালে এ লেকের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং ২০০৮ সালে এটি সম্পন্ন হয়। প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু। ২০০৪ সালে এ সেতুতে রেল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ইরান সরকার এ লেকে একটি টানেল নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। এ লেক থেকে ১৩টি শাখা নদী প্রবাহিত হয়েছে। যথা: আজি চাই, আলামলু রিভার, বারান্দুজ রিভার, গাদার রিভার, ঘায়ী রিভার, লেলান রিভার, মাহাবাদ রিভার, নাজলু রিভার, রোযে রিভার, শাহার রিভার, সীমীনে রিভার, যারীনে রিভার, যাররীনে রুদ, জোলা রিভার প্রভৃতি। এ লেক নিয়ে একাধিক ফিল্মও সম্প্রচারিত হয়েছে। যেমন ‘হোয়াইট মেডুস’ (২০০৯)। এ লেক নিয়ে রয়েছে অনেক জনপ্রিয় সংগীত। যেমন ‘উরমু গোলু লে লে’।
ইতিহাস : ভøাদিমির মিনরস্কি এর বর্ণনা মতে খ্রিস্টপূর্ব থেকেই এখানে জনবসতি ছিল। তাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ভান সা¤্রাজ্যকে ঘিরে। উরুমিয়ের পশ্চিম দিকের ‘গিলজান’ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে নবম শতাব্দীতে স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে। যা পরবর্তীকালে উরারতু বা মান সা¤্রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে আরুস সা¤্রাজের অন্তর্ভুক্ত হয়। অটোমানদের দ্বারা উরুমিয়েহ বিভিন্ন সময়ে আক্রান্ত হয়। পরবর্তীকালে সাফাবীরা এ অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করে। সর্বপ্রথম সার্বভৌম সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন কাজাররা। আগা মোহাম্মাদ খান ১৭৯৫ সালে এখানকার শাসনভার গ্রহণ করেন।
নবম শতাব্দী থেকে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর। ১০৮৪ সালে এটি সালজুকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে অটোমানরা উরুমিয়ের শাসনভার গ্রহণ করে। এ শহরের বৈচিত্র্য হলো এখানে নানা ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, গোত্রের লোকেরা বসবাস করে। এখানে মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, বাহায়ী এবং সুফি সম্প্রদায়ের লোকেরা মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে। অধিকাংশ অধিবাসীর ভাষা ফারসি, তবে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় কথা বলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানকার জনসংখ্যা ছিল ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার)। এ সময় হাজার হাজার আসেরিয়ান ও আর্মেনিয়ান আনাতোলিয়া থেকে উরুমিয়েহতে আসে। এ শহর রাশিয়া ও কুর্দীদের দ্বারা বেশ কয়েকবার আক্রান্ত হয়।
নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে এখানে অনেক জাতি-গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। ইসলাম-পূর্ব সময়ে উরুমিয়ের অধিকাংশ লোক ছিল খ্রিস্টান। বর্তমানে জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলিম।

বিনোদন : পর্যটকদের কাছে উরুমিয়েহ অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। বিনোদনের জন্য কী নেই উরুমিয়েহয়। এখানে রয়েছে পার্ক, নদী, পর্যটন পল্লি প্রভৃতি। উরুমিয়ের সবচেয়ে প্রাচীন পার্ক হলো ‘পার্কে সাত’, যার গোড়াপত্তন হয় পাহলভী আমলে। অন্যান্য পার্কের মধ্যে ‘ইলার বাগী পার্ক’, শাহর সায়ী, সিটি রিভার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পার্কে জাঙ্গালি, পার্কে শাহর, পার্কে সাহেলি, পার্কে সাগহাইয়ে, আল-গাদীর পার্ক, তোখমে মোরগ পার্ক, গায়ীম পার্ক প্রভৃতি। পর্যটন পল্লির মধ্যে রয়েছে চিচেস্ট, বারী, সিয়ের, বান্দ, খোশাকো প্রভৃতি। জনপ্রিয়

খাবার : স্থানীয়দের জনপ্রিয় খাবরের মধ্যে রয়েছে পোলাও, অবগুশত, চেলো কাবাব, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, কোপ্তা, দোলমা, ভাত, লাপ্পে ও বিভিন্ন প্রকৃতির সবজি।
দর্শনীয় স্থান : দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশেম লু ভ্যালী, কাজেম দাশী, কাশতীবান ভিলেজ, ইমামযাদে ভিলেজ, সিলভানা, রাশেখান থেকে দাশআকল, নাজলু, দালামপার, কাবদান আইল্যান্ড প্রভৃতি। জাদুঘরসমূহের মধ্যে রয়েছে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, উরুমিয়েহ চারু ও কারুকলা মিউজিয়াম, উরুমিয়েহ মিউজিয়াম অব অ্যানথ্রোপোলজি প্রভৃতি। এছাড়া উরুমিয়েহ নৃতাত্ত্বিক মিউজিয়াম যা শহীদ বেহেশতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।

আবহাওয়া : উরুমিয়েহর আবহাওয়া নানা প্রকৃতির। এখানে শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা, বসন্তকালে নাতিশীতোষ্ণ, গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড উষ্ণতা এবং শরৎকালে সামান্য উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে উরুমিয়েহর খ্যাতি শত বছরেরও বেশি সময় ধরে। আমেরিকার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জোসেফ কোরবান্দ ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব উরুমিয়েহ’। এটি ইরানের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সরকারি, বেসরকারি অনেক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে রয়েছে উরুমিয়েহ বিশ্ববিদ্যালয়, মালেক আশতার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, উরুমিয়েহ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সাইন্সেস, উরুমিয়েহ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ইসলামিক আযাদ ইউনিভার্সিটি অব উরুমিয়েহ, পায়ামে নূর ইউনিভার্সিটি অব উরুমিয়েহ, ইলমে কারবোরদি ইউনিভার্সিটি অব উরুমিয়েহ, ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সাবা, ইউনিভার্সিটি কলেজ অব আজারবাইযান, ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ইল্ম ও ফান্ন, ইউনিভার্সিটি অব কামাল, ইউনিভার্সিটি কলেজ অব আফাগ প্রভৃতি। বিখ্যাত স্কুলসমূহের মধ্যে রয়েছে শহীদ বেহেশতী টেকনিক্যাল স্কুল, গাজী তাবাতাবায়ী টেকনিক্যাল স্কুল অব উরুমিয়েহ, নাজান্দ ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন প্রভৃতি। গ্রন্থাগারসমূহের মধ্যে রয়েছে আল্লামা তাবাতাবায়ী লাইব্রেরি, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অব উরুমিয়েহ, লাইব্রেরি অব গায়ীম, লাইব্রেরি অব ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান এডুকেশন মিনিস্ট্রি, লাইব্রেরি অব কানুন পারভারেস ফেকরি, লাইব্রেরি অব খানে-ই-জাভান, লাইব্রেরি অব শহীদ মোতাহহারী, লাইব্রেরি অব শহীদ বাহোনার, লাইব্রেরি অব উরুমিয়েহ কালচারাল অ্যান্ড আরটিসটিক সেন্টার প্রভৃতি।

মিডিয়া : মিডিয়ার ক্ষেত্রে উরুমিয়েহ অঞ্চলের নিজস্ব রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। টিভি চ্যানেলের নাম আজারবাইযান টিভি। এটি আন্তর্জাতিকভাবে সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। এটি আজারবাইযানি এবং ফারসি দু’ভাষাতে সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। এর স্যাটেলাইট ইনটেলসেট নম্বর ৯০২। রেডিও চ্যানেলের নাম চিকেস্ট। এটিও আজারবাইযানি ও ফারসি দু’ভাষাতে সম্প্রচারিত হয়ে থাকে।

যাতায়াত : যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা ভাড়ায় প্রাইভেট কার ও ট্যাক্সি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে অনেক পাবলিক বাসও রয়েছে। এখানে ‘ফোন-ট্যাক্সি’ নামে অনেকগুলো সার্ভিস আছে। যাদেরকে ফোন করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যাত্রীর কাক্সিক্ষত স্থানে এসে হাজির হয়। এখানে মেট্রো রেল স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তুরস্কের মধ্য হয়ে ইউরোপের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে উরুমিয়েহর। ১৯৬৪ সালে উরুমিয়েহ বিমান বন্দর চালু হয়। দক্ষিণ আজারবাইযান অঞ্চলে এটি প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও বটে। ২০১৫ সাল থেকে এখানে অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াতের জন্য ভিন্ন বিমানবন্দর চালু করা হয়েছে।

চিকিৎসালয় : স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উরুমিয়েহ বেশ অগ্রসর। এখানে সরকারি বেসরকারি অনেকগুলো হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। বিখ্যাত হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে ইমাম রেযা হাসপাতাল, ইমাম খোমেইনী হাসপাতাল, মোতাহহারী হাসপাতাল, বেহেশতী হাসপাতাল, তেলেগানী হাসপাতাল, ফাতেমিয়া প্রো মেডিকেল ক্লিনিক, সাফা হাসপাতাল, সোলাতি হাসপাতাল, সাইয়্যেদোশ শোহাদা হার্ট প্রো-হাসপাতাল, গোলিপুর চিলড্রেন প্রো হাসপাতাল, রাজি সাইক্রিয়াট্রিক প্রো হাসপাতাল, ৫০৪ আরতেশ হাসপাতাল, আরেফিয়ান হাসপাতাল, আজারবাইযান হাসপাতাল, মিলাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল, অমিদ ক্যান্সার প্রো-ক্লিনিক প্রভৃতি।

খেলাধুলা : খেলাধুলার ক্ষেত্রে উরুমিয়েহর ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ভলিবল। উরুমিয়েহকে ইরানে ‘ভলিবলের রাজধানী’ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এখানকার ‘শাহরদারী উরুমিয়েহ ভলিবল ক্লাব’ বেশ কয়েকবার ‘ইরান সুপার লীগ’ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। উরুমিয়েহর অনেক খেলোয়াড় ইরানের জাতীয় ভলিবল দলে খেলে থাকেন। যেমন সাইয়্যেদ মারুফ, আবদুর রেযা আলীযাদে, মিলাদী এবাদীপুর প্রমুখ। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ভলিবল ফেডারেশন এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে উরুমিয়েহকে ‘ভলিবল প্রেমিকের শহর’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে পুরুষ ভলিবল চ্যাম্পিয়ানশীপ এবং ২০১২ সালে জুনিয়র পুরুষ ভলিবল চ্যাম্পিয়নশীপ উরুমিয়েতে অনুষ্ঠিত হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইরানের সাফল্য

সাইদুল ইসলাম

১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞানে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে ইরান। বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গত ৩৭ বছরে দেশটির সাফল্য চোখে পড়ার মতো। বিপ্লবের আগে যে দেশটির অনেক শহরে ইরানি ডাক্তার খুঁজে পাওয়া দুরূহ ব্যাপার ছিল সে ইরানের নাম এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত থমসন রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সেরা ১ ভাগ চিকিৎসা গবেষকদের মধ্যে অন্তত ৩৬ জন ইরানি গবেষক স্থান করে নিয়েছেন। থমসন রয়টার্স প্রতিনিয়ত বিশ্বের চিকিৎসা গবেষকদের একটি তালিকা আপডেট করে থাকে। গত ১০ বছরের চিকিৎসা গবেষণার কর্ম থেকে গবেষকদের এ ধরনের তালিকা করা হয়েছে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষকরা ইরানের হয়ে এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তার মধ্যে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন, ইসফাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন, তাবরিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ জন, সিরাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ জন, মাশহাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ জন, তেহরান বাকিয়াতাল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ জন, ইরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ জন ও জানজান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন গবেষক।
বার্তা সংস্থা ইরনার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরান বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ওষুধ উৎপাদনকারী দেশের একটি। দেশটি বর্তমানে বিশ্বের ৪৪টি দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম রপ্তানি করছে। সম্প্রতি ইরানের চিকিৎসা সরঞ্জাম রপ্তানিকারকদের ইউনিয়নের সচিব মোহাম্মাদ রেযা জানিয়েছেন, প্রতি বছর বিশ্বের ৪৪টি দেশে তিন কোটি ডলারের চিকিৎসা সরঞ্জাম ইরান থেকে রপ্তানি হয়। রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়ানোর ইচ্ছে রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ইরানের চিকিৎসা সরঞ্জাম জার্মানি ও ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। এসব সরঞ্জাম ইউরোপীয় মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিই-র অনুমোদনপ্রাপ্ত।
এদিকে, ইরানের চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত জৈব পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি সংস্থার পরিচালক আমির হোসেইন কারাগাহ্ জানিয়েছেন, ইরান কেবল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে তাই নয় একই সাথে দেশটি জৈব ওষুধ প্রস্তুত সংক্রান্ত প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতাও রপ্তানি করছে। তিনি বলেন, এ জাতীয় প্রযুক্তি রপ্তানির মধ্য দিয়ে ইরানের জৈব ওষুধ উৎপাদনের উচ্চ সক্ষমতাই ফুটে উঠেছে। বর্তমানে ইরান এ জাতীয় ওষুধ ও ওষুধ নির্মাণের প্রযুক্তি তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরাক, আর্মেনিয়া, কাযাকস্তান এবং রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ রপ্তানি করছে।
গত কয়েক বছরে ইরান প্রায় এক ডজনের বেশি জৈব ওষুধ উৎপাদন করেছে। এতে ইরান প্রায় ৭০ কোটি ডলারের বেশি পরিমাণে অর্থ বিদেশে যাওয়া থেকে সাশ্রয় করতে পেরেছে।
এ ছাড়াও ইরানি বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী মৌলিক কোষ তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় ইরান এ ক্ষেত্রে বিশ্বের ৫টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী মৌলিক কোষ নির্মাণে ইরানের সাফল্যের কথা স্বীকার করেছে। ফলে ইরান এক্ষেত্রে বিশ্ব অঙ্গনে জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও চীনের পরই নিজের বিজয় পতাকা উড্ডীন করতে সক্ষম হয়।
শক্তিশালী মৌলিক কোষ থেকে মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গের কোষই তৈরি করা যায়। আর এর মাধ্যমে মৌলিক ভ্রুণ কোষগুলোকে কার্যক্ষম করা সংক্রান্ত অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এ ছাড়াও মৌলিক কোষের মাধ্যমে জেনিটিক চিকিৎসা, ওষুধের মান উন্নয়ন, ভ্রুণের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করা ও বংশগতি বা জিন সংক্রান্ত গবেষণা করা যায়।
মৌলিক কোষ ও শক্তিশালী মৌলিক কোষ নির্মাণ গবেষণা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে জটিল বা অত্যাধুনিক ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই প্রযুক্তি গত কয়েক দশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে, বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের নষ্ট হয়ে-যাওয়া কাঠামো মেরামত ও বিভিন্ন অঙ্গের জোড়া লাগানোর কাজে বড় ধরনের বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। ভ্রুণের মৌলিক কোষ এমন কিছু প্রাথমিক কোষ যেগুলো বিভিন্ন কোষে রূপান্তরিত হবার ক্ষমতা রাখে। গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা গেছে ভ্রুণের মৌলিক কোষ শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত অংশের কাঠামোয় জোড়া লেগে যায়। জোড়া লেগে যাবার পর কোষগুলো ঐ বিশেষ অঙ্গের কোষে পরিণত হয়। এ ছাড়াও এই কোষগুলো থেকে নতুন অনেক কোষ তৈরি করা যায় এবং নতুন এই কোষগুলোকে শরীরের বিভিন্ন অংশের কাঠামোয় ব্যবহার করা যায়। মৌলিক কোষগুলো এত শক্তিশালী যে, সেগুলো সংখ্যা বৃদ্ধির সময় ও বিভিন্ন অঙ্গে বা স্থানে প্রতিস্থাপনের সময় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
ক্যান্সার চিকিৎসায়ও ইরানি বিজ্ঞানীরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তেহরানের কে এন তূসি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন একটি যৌগ আবিষ্কার করেছেন যার সাহায্যে মানবদেহে ক্যান্সার চিহ্নিত করা যাবে। এধরনের যৌগ উৎপাদন করা যাবে বেশ সস্তায় এবং এতে অপেক্ষাকৃত কম খরচে ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা স¤পন্ন করা যাবে। ইরানের ন্যানোটেকনোলজি ইনিশিয়েটিভ কাউন্সিল এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়,ক্যান্সার রোগীর দেহে আবিষ্কৃত এ যৌগটি ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
আবিষ্কৃত যৌগটির উচ্চ পরিশোষণ ক্ষমতার কারণে মানবদেহের কোষ থেকে তা সহজেই ক্যান্সার জীবাণুকে চিহ্নিত করতে পারে। যা এধরনের চিকিৎসাকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন ইরানের বিজ্ঞানীরা। হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও ইরানি চিকিৎসকদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। ইরান বছরে প্রায় ১০০ হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার করে থাকে। পঞ্চম আন্তর্জাতিক ইরানি হার্ট ফেইলিউর সামিট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ইরান ডেইলিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বাবাক শারিফ-কাশানি এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরান হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন ও হৃদরোগ চিকিৎসায় শীর্ষে অবস্থান করছে। তিনি বলেন, ইরানে ৭৫ ভাগ হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন সফল হচ্ছে। এধরনের অস্ত্রোপচার করার পর রোগীরা পুনরায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।
বাবাক শারিফ-কাশানি বলেন, তেহরানের মাসিহ দানেশভারি হাসপাতাল, ইমাম খোমেইনী হাসপাতাল, আয়াতুল্লাহ তালেঘানি হাসপাতাল ও শারিয়তি হাসপাতালে এধরনের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন ও হৃদরোগের বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার স¤পন্ন হচ্ছে। ইরানের বিভিন্ন প্রদেশের হাসপাতালগুলোতে এধরনের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি ইরানের হৃদরোগ সার্জনদের বিশ্বের অন্যতম সেরা চিকিৎসক হিসেবে দাবি করেন।
এদিকে, ইরানে গত বছরে ৩৩শ’ মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে দেশটির চিকিৎসকরা বেশ পারদর্শী হওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিস্থাপন ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ কাজেমেইনি বলেছেন, ইরানের চিকিৎসকরা এধরনের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন।
গত বছর আড়াই হাজার মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ৭১৬ জনের যকৃত ও ১০২ জনের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়েছে একই সময়ে। তবে ৫৭ ভাগ কিডনিদাতাই ছিলেন মৃত ব্যক্তি। এই মাত্র মারা গেছেন বা ক্লিনিক্যালি ডেথ এমন ৮শ’ রোগীর কাছ থেকে অন্তত ২৩শ’ প্রত্যঙ্গ জীবন্ত মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে কিডনি ছিল ১৪শ’। ইরানে বর্তমানে ২৯টি কিডনি প্রতিস্থাপন কেন্দ্র, যকৃত প্রতিস্থাপনে ৭টি কেন্দ্র, ৮টি হৃদযন্ত্র ও ২টি ফুসফুস প্রতিস্থাপন কেন্দ্র কাজ করছে।
নিঃসন্তান দম্পতিদের চিকিৎসার জন্যও ইরান হয়ে উঠতে পারে সঠিক গন্তব্য। এধরনের চিকিৎসায় ইরানের চিকিৎসকরা বেশ সফলতা অর্জন করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে ইরান ডেইলিকে প্রখ্যাত চিকিৎসক সাঘার সালেপুর জানান, বিশ্বের অত্যাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে ইরানে। বিশ্বের আধুনিক ইনফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট মেথড অনুসরণ করা হচ্ছে। পারস্য উপসাগরের দেশগুলো থেকে অনেক নিঃসন্তান দম্পত্তি ইরানে চিকিৎসা নিতে আসছেন। আজারবাইযান ও ইরাক থেকে প্রচুর রোগী আসছে। চিকিৎসা খরচ মোটামুটি কম হওয়ায় অনেকে এ সুযোগ গ্রহণ করছেন।
সাঘার সালেপুর শুধু যে একজন নারী গায়নোকোলজিস্ট তাই নয়, তিনি একই সঙ্গে মিডিল ইস্ট ফার্টিলিটি সোসাইটির একজন স্বনামধন্য সদস্য। তিনি জানান, বিশ্বে অন্তত ১৫ ভাগ দম্পতি সন্তান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইরানে এধরনের দম্পতির হার ১৩ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি ৬টি দম্পতির মধ্যে একটি দম্পতি এধরনের সমস্যায় রয়েছে। আর সন্তান না হওয়ার মতো সমস্যার জন্য ৪০ ভাগ নারী ও ৬০ ভাগ পুরুষ দায়ী। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ কেউ দায়ী নন, পরিবেশ দূষণসহ অন্য কোনো কারণেও তাঁরা সন্তান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ধুমপান, বায়ু দূষণ, খাদ্যে বিষক্রিয়া, রাসায়নিক মিশ্রণ, অতিরিক্ত মদ্যপান, কীটনাশকের মতো প্রভাবেও এধরনের সমস্যা হতে পারে।
মেডিক্যাল ট্যুরিজম শিল্পে ইরান এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাতারে রয়েছে। এখন সারা বছর জুড়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য ইরানে আসছেন। বেশিরভাগ রোগী হলেন ব্রিটেন, সুইডেনসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য নীতিতে চিকিৎসা ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ কারণে ইরানে যে-কোনো অপারেশনের ব্যয় তুরস্ক, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক চতুর্থাংশের মতো। তবে চিকিৎসার গুণগত অবস্থা বিশ্বমানের। সেজন্যেই বিদেশি রোগীরা ইরানের চিকিৎসার মানের ব্যাপারে সন্তুষ্ট। এছাড়া ইরানি অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক এবং সাধারণ চিকিৎসকগণ বেশ দক্ষ। বিদেশি সহযোগীরা সবসময়ই তাঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে মেডিক্যাল ট্যুরিজম ক্ষেত্রে কঠোর প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতায় ইরানের অবস্থান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিক্যাল ট্যুরিজম ক্ষেত্রে এশীয় দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরও করেছে। বর্তমানে বছরে প্রায় ২ লাখ রোগী মেডিক্যাল ট্যুরিজমের লক্ষ্যে ইরান সফরে আসে এবং ইরানের উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছে। ইরানের অন্তত ষাটটি হার্ট অপারেশোন কেন্দ্রে ওপেন হার্ট সার্জারি হচ্ছে। ইরানের এই চিকিৎসা সেবা বিশ্বের চিকিৎসকগণকে আকৃষ্ট করছে। কেবল ওপেন হার্ট সার্জারিই নয় আরো বহু জটিল ও মারাত্মক রোগের চিকিৎসা এখন বেশ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হচ্ছে।