All posts by pavel

স্মরণীয় বাণী

মহানবী (সা.) বলেন : দুনিয়ার সংযমশীলতা হলো আশাকে খাটো করা এবং প্রতিটি নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আর আল্লাহ্ যা নিষিদ্ধ করেছেন তার সবকিছু থেকে বিরত থাকা।

মহানবী (সা.) বলেন : এমন যেন না হয় যে, মুনাফিকের ন্যায় বিনয় প্রদর্শন করবে। আর সেটা হলো যখন শরীর বিনয়ী হয়, কিন্তু অন্তরে বিনয় নেই।মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে বলেন : হে আলী! নিশ্চয় মুমিনের তিনটি চি‎হ্ন রয়েছে : রোযা, নামায ও যাকাত। আর আত্মকেন্দ্রিক মানুষের তিনটি চি‎‎হ্ন রয়েছে : সামনে তোষামোদী করে, পেছনে বদনাম করে আর বিপদে গালি-গালাজ করে।

মহানবী (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে রাগান্বিত করার মাধ্যমে শাসককে সন্তুষ্ট করে সে আল্লাহর দীনের বহির্ভূত।

মহানবী (সা.) বলেন : মানুষের জন্য এমন এক সময় আসবে যখন তার দীনে কতটা ক্ষতি হলো এ বিষয়ে সে কোনো পরোয়া করবে না যদি তার দুনিয়া ঠিক থাকে।

ইমাম আলী (আ.) বলেন : দুনিয়া চারটি জিনিসের ওপর প্রতিষ্ঠিত : সেই আলেমের ওপর, যে তার ইল্ম ব্যবহার করে। সেই সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর, যে পরোপকার করে। সেই মূর্খের ওপর, যে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে অহংকারী হয় না। আর সেই অভাবীর ওপর, যে তার পরকালকে অন্যের দুনিয়ার লাভের জন্য বিক্রয় করে না। আর যখন আলেম তার ইল্ম কাজে লাগায় না এবং সামর্থ্যবান পরোপকার করে না আর মূর্খ শিক্ষা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় আর অভাবী তার পরকালকে অন্যের দুনিয়ার লাভের জন্য বিক্রয় করে দেয়, তখন সর্বনাশ সবার জন্য!ইমাম

আলী (আ.) বলেন : যার মধ্যে কোনো একটি ভালো গুণ শক্তিশালী হয় তখন তার অন্য ভালো গুণ থেকে ছাড় দেওয়া যায়। কিন্তু বুদ্ধিহীনতা ও দীনহীনতাকে ছাড় দেওয়া যায় না। কারণ, দীনহীনতা হলো নিরাপত্তাহীনতা এবং নিরাপত্তাহীনতার ভয় নিয়ে জীবন হয় না। আর বুদ্ধিহীনতাও মৃত্যুর নামান্তর। যাকে মৃতদের মধ্যে ছাড়া গণ্য করা হয় না।

ইমাম আলী (আ.) বলেন : বন্ধু বন্ধু নয় যতক্ষণ না নিজের বন্ধুকে রক্ষা করে কষ্টের সময়ে, তার অনুপস্থিতিতে এবং তার মৃত্যুর পরে।

ইমাম আলী (আ.) বলেন : আল্লাহ ছয় জনকে ছয় কারণে শাস্তি দেবেন : আরবকে সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামির কারণে, জমিদার ও মাতবরদেরকে অহংকারের কারণে, রাষ্ট্রনেতাদেরকে স্বেচ্ছাচারের কারণে, আলেম ও ফকীহদেরকে হিংসার কারণে, বণিকদেরকে খেয়ানতের কারণে আর গ্রাম্য লোকদেরকে মূর্খতার কারণে।

ইমাম হাসান (আ.) বলেন : হে লোকসকল! নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হবে এবং তাঁর বাণীকে নিজের পথনির্দেশক হিসাবে গ্রহণ করবে সে সঠিক পন্থায় পরিচালিত হবে। আর আল্লাহ তার উৎকর্ষের পথে সহায় হবেন এবং সুপরিণতি লাভে সাহায্য করবেন। কারণ, আল্লাহর কাছে আশ্রয় গ্রহণকারী নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকে। আর তার শত্রু ভীত ও সহায়হীন থাকে। কাজেই আল্লাহর প্রহরার আওতায় চলে এস তার বেশি বেশি যিকিরের মাধ্যমে।

ইমাম ইবনুল হোসাইন যায়নুল আবেদীন (আ.) বলেন : তিনটি জিনিস যে কোনো মুমিনের মধ্যে থাকলে সে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকে এবং কিয়ামতের দিনে আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তাকে সেই বড় ভয়ের দিনে নিরাপদ রাখবেন। যে ব্যক্তি মানুষকে সেটাই দেয় যা সে তাদের থেকে প্রত্যাশা করে, যে ব্যক্তি কোনো পদক্ষেপেই অগ্রসর হয় না কিংবা পশ্চাতে আসে না যতক্ষণ না জানবে যে, তার এ পদক্ষেপ আল্লাহর আনুগত্যে নাকি তার অবাধ্যতায়, আর যে ব্যক্তি তার ভাইকে কোনো দোষে অভিযুক্ত করে না যতক্ষণ না নিজেকে সে দোষ থেকে মুক্ত করে। আর ব্যক্তির জন্য এটাই যথেষ্ট যে, নিজের দোষত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং অন্যের দোষত্রুটি থেকে চোখ ফিরিয়ে নিবে।

(তুহাফুল উকূল থেকে সংকলিত)অনুবাদ : আব্দুল কুদ্দুস বাদশা

স্মরণীয় দিবস

৮ মার্চ : বিশ্বনন্দিত ইসলামি ব্যক্তিত্ব জামালুদ্দিন আফগানী (আসাদাবাদী) স্মরণে দিবস।

১২ মার্চ : ইরানে ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনীর নির্দেশে এই দিনে শহীদ-পরিবারের কল্যাণে শহীদকল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়।

১৫ মার্চ : ইরানের সমকালীন বিখ্যাত কবি পারভীন এহতেসামী স্মরণে দিবস।

১৯ মার্চ : নবীকন্যা হযরত ফাতেমা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস। বিশ্ব নারী ও মা দিবস।
* হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর জন্মদিবস।

২১ মার্চ : নওরোয। ইরানি বর্ষ ১৩৯৬ এর শুরু।

২২ মার্চ : বিশ্ব পানি দিবস।

২৩ মার্চ : বিশ্ব আবহাওয়া দিবস।

৩০ এপ্রিল : নবীবংশের পঞ্চম ইমাম বাকের (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস।

১ এপ্রিল : নবীবংশের ১০ম ইমাম আলী নাকী (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
*ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস। এ দিনে ৯৮ শতাংশ জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

২ এপ্রিল : বিশ্ব প্রকৃতি বা পরিবেশ দিবস।

৭ এপ্রিল : বিশ্ব স্বাস্থ্য সচেতনতা দিবস।

৮ এপ্রিল : * নবীবংশের নবম ইমাম তাকী (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস।

৯ এপ্রিল : পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনে ইরানের জাতীয় দিবস।

১১ এপ্রিল : আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস।

১৩ এপ্রিল : মহানবী (সা.)-এর নাতনী হযরত যায়নাব (আ.)-এর ওফাতবার্ষিকী।
*কিবলা পরিবর্তন দিবস। এ দিনে আল্লাহর নির্দেশে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে কাবা শরীফের দিকে কিবলা পরিবর্তন করা হয়।

১৪ এপ্রিল : মরমি কবি ও দার্শনিক আত্তার নিশাবুরী স্মরণে দিবস।
* পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ।

১৮ এপ্রিল : ইরানের সশস্ত্রবাহিনী ও সেনাবাহিনী দিবস।

২১ এপ্রিল : বিশ্ববিখ্যাত কবি শেখ সাদী স্মরণে দিবস।

২২ এপ্রিল : ইসলামি বিপ্লবের পর সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘোষণা দিবস।

২৩ এপ্রিল : নবীবংশের সপ্তম ইমাম মূসা কাযেম (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
*বিখ্যাত কালামশাস্ত্রবিদ শেখ বাহায়ী স্মরণে দিবস।
*ইরানে বিপ্লবী গার্ডবাহিনী প্রতিষ্ঠ দিবস।

২৩-২৭ এপ্রিল : আন্তর্জাতিক সবার জন্য শিক্ষা সপ্তাহ।

২৫ এপ্রিল : ১৯৮০ সালের এই দিনে ইরানের তাবাস মরুভূমিতে আমেরিকার কমান্ডো বাহিনী অনুপ্রবেশ করে, কিন্তু আল্লাহর অসীম কুদরতে বিমানগুলো মরুঝড়ে বিধ্বস্ত হয়।

৩০ এপ্রিল : মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান (আ.)-এর পবিত্র জন্ম দিবস।
* পারস্যোপসাগর দিবস।

বাংলা ভাষায় ফারসি শব্দের ব্যবহার

বাংলা রূপ  ফারসি রূপ আধুনিক ফারসি উচ্চারণ
দিলপছন্দ دليسند দেলপাছান্দ
দিলরুবা دلربا দেল্-রোব
দিলদার دلدار দেলদ-র
দম دم দাম্
দমাদম دما دم দামাদাম্
দেমাগী دما غى দিমক্বী
দামামা (যুদ্ধের দামামা) دمامه দামমে
দোযখ دوزح দূ-যাখ্
দুস্তি دوستى দূস্তি
দীদার ديدار দী-দ-র
দ্বীনদার ديندار দীন-দর্-
দেও ديو দীভ্
দীওয়ানা (পাগল) ديوانه দী-ভনেহ্
রদ (বাতিল) رد রাদ্
রসিদ (রিসিপ) رسيد রাসীত্
রিফু (সেলাই জাতীয় কাজ) رفو রফু
রওযা اوضه রৌকে
জং (লোহার মরিচা) زنگ যাংগ
যঙ্গী زنگى যাংগী
জোর زور যু-র
জোরাজুরি زورا زورى যু-র-যু-রী
যিয়ারত زيارت যীয়-রাত্
জিরা زيره যীরেহ্
জীন (ঘোড়ার জীন) زين যীন্
জেওর (অলংকার) زيور যী-র্ব
সাবেক
(পূর্ববর্তী) سابق স-বেক্
সাদা (সাধারণ) ساده স-দেহ্
সাদাদিল ساده دل স-দেহ্দেল্
সাজ (সাজ্জা) ساز স-য্
সাকিন (গ্রাম/বাড়ি) ساكن স-কেন্

ইরানী প্রবাদ বাক্য

سر درآوردن.
উচ্চারণ : সার দারঅ’ওয়ার্দান
অর্থ : মাথা বের করে আনা।
মর্মার্থ : কোন বিষয় ভালোভাবে বুঝতে পারা। কোনো বিষয়ের গভীর ও সূক্ষ্ম দিকগুলো উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হওয়া বলতে এ প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
سر در گم بودن.
উচ্চারণ : সার দার গোম বূদান
অর্থ : মাথা গুম হয়ে থাকা।
মর্মার্থ : কাজের আগাগোড়া বুঝতে না পারা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়া।
سر دستی کاری را کردن (سر دستی گرفتن).
উচ্চারণ : সারে দাস্তী কা’রী রা’ কার্দান (সারে দসতী গেরেফতান)
মর্মার্থ : হাতের মাথায় কোনো কাজ করা (হাতের মাথায় নেওয়া)।
মর্মার্থ : ভাসাভাসাভাবে কোনো কাজ করা। অবহেলা ও অমনোযোগিতায় কোনো কাজ করা বুঝাতে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
سر دماغ بودن.
উচ্চারণ : সারে দেমা’গ বূদান
অর্থ : দেমাগের মাথার উপর থাকা।
মর্মার্থ : আনন্দিত, উৎফুল্ল এবং বেশ খোশমেজাজে থাকা বলতে প্রবাটি ব্যবহৃত হয়।
سرد و گرم روزگار چشیده بودن.
উচ্চারণ : সার্দো গার্মে রূযেগা’র চাশীদে বূদান
অর্থ : দিনকালের ঠা-া ও গরম এর স্বাদ নিয়েছে এমন হওয়া।
মর্মার্থ : অতীত থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং পুরোপুরি ঝানু ও পাকা হয়েছে এমন।
سر رشته داشتن.
উচ্চারণ : সারে রেশতে দা’শতান
অর্থ : রশির মাথা হাতে থাকা।
মর্মার্থ : খবরাখবর অবহিত থাকা। কোনো একটি বিষয়ে তৎপর হওয়া। কোনো বিষয়ে তথ্যাদি জানা থাকা।
سر رشته را گم کردن.
উচ্চারণ : সারে রেশতে রা’ গোম কার্দান
অর্থ : রশির মাথা হারিয়ে ফেলা।
মর্মার্থ : নিজের কাজে দিশেহারা হয়ে পড়া। কোনো দিকে হদিস না পাওয়া বুঝাতে এর ব্যবহার ব্যাপক।
سر زبانها افتادن.
উচ্চারণ : সারে যাবা’নহা’ ওফতা’দান
অর্থ : মুখেমুখেপড়ে যাওয়া।
মর্মার্থ : বদনাম ছড়িয়ে পড়া। অপমানিত হওয়া।
অনুবাদ : আবু আব্দুল্লাহ

বই পরিচিতি

গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁ
রচনা : মহাকবি শেখ সাদী
অনুবাদ : কবি মাহমুদুল হাসান নিযামী
প্রকাশক : রিয়াজ খান
রোদেলা প্রকাশনী
রুমী মার্কেট (২য় তলা) ৬৮-৬৯, প্যারিদাস রোড
৩৫ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০
প্রচ্ছদ : সজিব খান ও মোবারক হোসেন লিটন
প্রকাশকাল : প্রথম প্রকাশ একুশে বইমেলা, ২০১৭
মূল্য : গুলিস্তাঁ-৩০০ টাকা ও বোস্তাঁ ২০০ টাকা ।

মহাকবি শেখ সাদী (র) ছিলেন বিখ্যাত পারস্যপ্রতিভা। ইসলামের ইতিহাসে যে সকল জ্ঞানী গুণী সাধক পুরুষ জন্মেছিলেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই জন্মেছিলেন ইরানে। ইরানের বিখ্যাত কবি শেখ সাদী (রহ)-এর দুটি অমর কাব্যগ্রন্থ গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁ। এই অমর গ্রন্থ দুটির পাঠ ও মূল্যায়ন হয়েছে যুগ যুগ ধরে। বাংলা ভাষায়ও এর অনুবাদ হয়েছে বহুবার। অনেকেই এর অনুবাদ করেছেন। তবে সেসব অনুবাদ ছিল গদ্যানুবাদ। কাব্যানুবাদ চোখে পড়ে নি বললেই চলে। পদ্য আকারে আংশিক অনুবাদ করেছেন কেউ কেউ। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় (২০১৭) রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবিতা মঞ্চ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি মাহমুদুল হাসান নিযামীর অনুদিত মহাকবি শেখ সাদীর অমর কাব্য গ্রন্থ গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁ।
শেখ সাদী (র)-এর উক্ত গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁ গ্রন্থ দুটি একসময় আমাদের দেশে মাদ্রাসাসমূহে পাঠ্য ছিল। এখন মাদ্রাসাগুলো থেকে ফারসিচর্চা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায়। তারপরও কোন কোন মাদ্রাসায় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ফারসি চর্চার অংশ হিসেবে গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁর অংশবিশেষ পাঠ্য রয়েছে। এছাড়া স্কুল-কলেজের সাহিত্য পুস্তকেও একসময় আমরা শেখ সাদীর জীবনের গল্প অথবা শেখ সাদীর গুলিস্তাঁ বোস্তাঁর নীতিগল্প আমরা পড়েছি।
শেখ সাদী (র)-এর সাহিত্য শুধু ইরান বা ফারসি সাহিত্যেরই সম্পদ নয়, তা বিশ্ব সাহিত্যের সম্পদ। বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে তা এক অমুল্য স্থান দখল করে আছে। অনুদিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। সেই কল্যাণ চিন্তা থেকেই কবি মাহমুদুল হাসন নিযামী উক্ত গ্রন্থ দুটি অনুবাদ করেন। তাঁর অনুদিত গুলিস্তাঁ গ্রন্থে রয়েছে নয়টি অধ্যায় এবং বোস্তাঁ গ্রন্থে রয়েছে এগারোটি অধ্যায়। উভয় গ্রন্থে একটি সাধারণ অধ্যায় হিসেবে রয়েছে মহাকবি শেখ সাদী (র)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী। সে জীবনীতে উল্লেখ আছে তাঁর জন্ম, বংশ পরিচয়, শৈশব, কৈশোর, শিক্ষাজীবন, ধর্মীয় জ্ঞান লাভ, আধ্যাত্মিক সাধনা, কাব্য সাধনা, দেশভ্রমণ ও আধ্যাত্মিক গুরুর বাইয়াত লাভ ইত্যাদি বিষয়। গুলিস্তাঁ গ্রন্থটি প্রথম শুরু হয়েছে নাতে রাসূল (সা.) দিয়ে। এতে প্রথম স্থান পেয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ও কালোত্তীর্ণ সেই নাত যা সর্বজনবিদিত। ‘বালাগাল উলা বি কামালিহি/ কাশাফাদ দুজা বি জামালিহি// হাসুনাত জামিও খিসালিহি/ সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি।’ এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি নাত।
দ্বিতীয় অধ্যায় বাদশাহদের কাহিনীতে রয়েছে রাজা-বাদশাহদের সাধারণ চরিত্র, ভোগবিলাস, লোভ-লালসা, ফখর বা আত্মম্ভরিতা, যুলুম, আগ্রাসন ইত্যাদি। বাদশাহদের বাদশাহিও একদিন শেষ হয়ে যায়। মাটিতে বিলীন হয়ে যায় তাদের বিলাসি ও আয়েসি শরীর। কিন্তু ন্যায় বিচারক ও মহান শাসকরা বেঁচে থাকেন, যেমন ইরানের শাসক নওশিরওয়ানের কথা শেখ সাদী উল্লেখ করেছেন। এভাবে অন্য অধ্যায়গুলোতে রয়েছে দরবেশ ও ধার্মিকদের চরিত্র, ধৈর্যের ফলাফল, নীরবতা অবলম্বনের উপকারিতা, যৌবনকাল ও ভালোবাসা, দুর্বলতা ও বার্ধক্য, শিক্ষা এবং দীক্ষা ও সাহচর্যের অনুষঙ্গ।
বোস্তাঁ গ্রন্থটি শুরু হয়েছে হাম্দ বা আল্লাহর প্রশংসা সংগীত দিয়ে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ন্যায় বিচার ও রাজ্য চালনার পদ্ধতি ছন্দে ছন্দে শেখ সাদী (র) ব্যক্ত করেছেন।
ইসলাম ও মানবতার অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে ইহসান। এটি এক মানবীয় গুণ। এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে ‘ইহসান’ শীর্ষক অধ্যায়ে। এছাড়া ‘প্রেম-ভালোবাসা’ অধ্যায়ে ব্যক্ত হয়েছে জাগতিক, মানবিক প্রেমের বৈশিষ্ট্যের সাথে আধ্যাত্মিক প্রেমের পার্থক্য ও সামঞ্জস্য। ‘বিনয়’ অধ্যায়ে বেশ কিছু ঐতিহাসিক কাহিনী ও গল্প বর্ণনার মাধ্যমে বিনয়ের মাহাত্ম্য প্রচার করা হয়েছে। ‘আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা’ একটি চিরন্তন বক্তব্য। যিনি আল্লাহর ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকতে পারেন তিনিই সফল। কিন্তু আমাদের ঈমানের দুর্বলতা হেতু অনেক সময় তা হয়ে ওঠে না। জীবন ভরে ওঠে আফসোস আর হাহাকারে। ‘অল্পতে তুষ্ট থাকা একটি মহৎ গুণ’Ñ ‘চরিত্র সংশোধন’ অধ্যায়ে মানব চরিত্র গঠনের নানা বক্তব্য এসেছে ছন্দোবদ্ধ গল্পের মাধ্যমে। ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তওবা’ অধ্যায়টিও মানব জীবনের আরেকটি অমূল্য অধ্যায় যা ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বোস্তাঁর শেষ অধ্যায়ে রয়েছে একটি মোনাজাত। হাম্দ ও নাত দিয়ে যে গ্রন্থ দুটি শুরু হয়েছিল মুনাজাত দিয়ে এর অন্ত হয়েছে।
কবি মাহমুদুল হাসান নিযামীর উক্ত অনুবাদ দুটি নুতন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর অনুবাদের ভাষাও স্বতন্ত্র। কারণ, মাহমুদ হাসান নিযামী যেহেতু নিজেই একজন কবি সেকারণে গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁর কাব্যভাষা সম্পর্কে ছিলেন সচেতন। উক্ত গ্রন্থ দুটি বাংলা ও ফারসি সাহিত্য গবেষকদের, ফারসি সাহিত্যানুরাগীদের কাজে লাগবে। উপকৃত হবে ধর্মীয় মহল। ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়ক গ্রন্থ হিসেবেও পাঠযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
বই দুইটির প্রচ্ছদ চমৎকার এবং মূদ্রণও ভালো। আমরা উক্ত অনুবাদ গ্রন্থ দুটির ব্যাপক পঠন ও পর্যালোচার দাবি রাখছি।

□ আমিন আল আসাদ

মানবতার কবি শেখ সা‘দী

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

দামেশকের জামে মসজিদে হযরত ইয়াহয়া আলাইহিস সালামের কবরের শিয়রে এতকাফে ছিলাম (শেখ সা‘দীর কথা)। ঘটনাচক্রে আরবের তামীম গোত্রের এক বাদশাহ, যে জুলুম ও স্বৈরাচারের জন্য কুখ্যাত ছিল, সেখানে যিয়ারত করতে আসে। সে সেখানে নামায আদায় করে। তারপর দোয়া করে আর নিজের অভাব অভিযোগের কথা জানিয়ে মোনাজাত করে। (সত্যিই)
‘ফকির ও ধনী এ দরবারের ভিখারি সবাই
যারা অধিক ধনী অধিক ভিখারি তারাই।’
এ সময় সে আমাকে বলল, ‘যেহেতু দরবেশদের মনোবল মজবুত এবং সততার ওপর তাদের জীবন চলে, সেহেতু আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। কারণ, শক্ত একজন শত্রুর পক্ষ হতে পেরেশানিতে আছি।’ আমি তাকে বললাম, ‘আপনি দুর্র্বল প্রজাদের প্রতি দয়া দেখাবেন, তাহলে সবল দুশমনের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকবেন।’
‘সবল বাহু আর শক্তিশালী হাতের পাঞ্জায়
নিরীহ দুর্বলের হাত ভাঙা বড় অন্যায়।
পতিতের প্রতি দয়া দেখায় না, সে কি ভয় পায় না
নিজে পতিত হলে কেউ যে এগিয়ে আসবে না?
মন্দের দানা বুনে যে দিন কাটে ভালোর আশায়
ভ্রান্ত চিন্তায় ঘুরপাক খায় বেভুল বাতিল কল্পনায়।
কানের তুলা বের করো, শোধ কর মানুষের প্রাপ্য
যদি আজ না দাও, সেদিন ফেরত দিবে অবশ্যই।
আদমসন্তান পরস্পরে এক দেহের অঙ্গ
সৃষ্টির উৎসে তাদের উপাদান যে অভিন্ন
কালের দুর্বিপাকে ব্যথিত হয় যদি একটি অঙ্গ
স্বস্তিতে থাকতে পারে না, বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
অন্যদের দুঃখ-কষ্টে তুমি যে নির্বিকার
তোমাকে মানুষ বলা অনুচিত, অবিচার।’ (গুলিস্তান, ১ম অধ্যায়, হেকায়াত নং ১০)
ফারসিসাহিত্যের কিংবদন্তি পুরুষ কবি শেখ সা‘দী তাঁর সাহিত্যকর্মের সর্বত্র মানবতার জয়গান গেয়েছেন। বর্ণনা শৈলীর চমৎকারিত্ব, ভাষার লালিত্য ও মাধুর্য এবং মানবীয় গুণাবলির উৎকর্ষ সাধনে তাঁর অবদান বিশ্বসভ্যতায় অবিস্মরণীয়। উপরিউক্ত বাণী দুর্বল মানুষের অধিকার আদায়ের যে চমৎকার আবেদন তিনি রেখেছেন তা অতুলনীয়। শেষ কয়েকটি পঙ্ক্তিতে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন মানবপ্রেমের এক বিশ্বজনীন আবেদন। সহজ সরল ভাষায় অতি সংক্ষেপে, কাব্যশৈলীর অসাধারণ নৈপুণ্যে ও যুক্তির মানদ-ে উপস্থাপিত মানবপ্রেমের এই আবেদন যেকোনো মানুষের অন্তর ছুঁয়ে যায়। মানুষের চিন্তাকে মুহূর্তে নিয়ে যায় আপন সৃষ্টিতত্ত্ব, সমজাত মানুষের প্রতি দায়িত্ব চেতনা, বিশেষ করে মানুষে মানুষে সাম্য ও সম্প্রীতির বিস্তৃত নিলীমায়।
আজকের দিনে কালো সাদা, ধর্ম, বংশ ও জাত-পাতের বিভিন্নতায় মানুষ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। শেখ সা‘দী কবিতার অলঙ্কারে মানবজাতির সামনে যে সত্যটি উপস্থাপন করেছে, তা হলো সব মানুষ এক আদমের সন্তান, সৃষ্টির মূলে সবার অভিন্ন উপাদান। কাজেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক হওয়া চাই একটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের অন্তর্গত সম্পর্কের মতো। দেহের কোনো অঙ্গে আঘাত হলে অন্য অঙ্গগুলো যেমন স্বস্তিতে থাকতে পারে না, তেমনি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে কোনো আদমসন্তান ব্যথায় কাতর হলে কোনো মানুষ তার প্রতি সমব্যথী না হয়ে পারে না। এই দায়িত্ব যে ভুলে যায়, অন্যের দুঃখ-দুর্দশা দেখেও যে নির্বিকার থাকে, সে মানুষ নয়, শেখ সা‘দীর ভাষায় তাকে ‘মানুষ’ নামে আখ্যায়িত করা অন্যায়।
শেখ সা‘দীর এই বিশ্বজনীন বাণীতে সাহিত্যের অলঙ্কারে ইসলামের শাশ্বত শিক্ষাই প্রস্ফুটিত হয়েছে। কোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মানবম-লী! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে। আর আমি তোমাদেরকে পারস্পরিক পরিচয়ের সুবিধার্থে বিভিন্ন গোত্র ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছি। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত হলো সে, যে তোমাদের মাঝে সবচেয়ে আল্লাহভীরু ও সংযমী।’ (সূরা হুজুরাত : আয়াত ১৩)
অনুরূপভাবে মহানবী (সা.)-এর বাণীতে উচ্চারিত একটি হাদিসের আবেদন বাঙ্ময় হয়েছে শেখ সা‘দীর এ রচনায়। আল্লাহর নবী বলেছেন, ‘তুমি মুমিনদেরকে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতায় দেখবে যে, তারা একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ যখন ব্যথায় কাতর হয়, তখন অন্য অঙ্গগুলো জ্বর ও রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে তার প্রতি সমবেদনা জানায়।’Ñ বুখারী : ৫৬৬৫; মুসলিম : ২৫৮৬
মানবসমাজকে পরস্পর সৌহার্দ্রপূর্ণ ও শান্তিময় করার আদর্শ ও শিক্ষা শেখ সা‘দী কোরআন ও হাদিস থেকে চয়ন করে বিশ্বসাহিত্যে উপস্থাপন করেছেন। তিনি মানুষের চেতনার দুয়ারে করাঘাত করেছেন। চিন্তার পরিশুদ্ধির সূত্রে সুন্দর চরিত্র ও আচরণে আদর্শ সমাজ নির্মাণের উপাদান জোগান দিয়েছেন।
পারস্যের রাজধানী সিরাজের রাজ দরবারের কবি ছিলেন শেখ সা‘দী। তাঁর কবিনাম সা‘দী গ্রহণ করেন শিরাজের শাসক সাদ ইবনে আবু বকর ইবনে সাদ (৫৯৯-৬২৩ হিজরি) এর নাম অনুসারে। কিন্তু তখনকার দিনের সভাকবিদের মতো ক্ষমতাসীনদের তোষণ ও স্তুতিগানের সাহিত্যচর্চা তিনি করেন নি। তিনি পূর্ববর্তী রাজা-বাদশাহদের জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন নানা কাহিনীর অবতারণা করে। তার মাধ্যমে বর্তমান শাসকশ্রেণিকে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করেছেন আর মন্দ কাজ হতে বিরত থাকার তাগিদ দিয়েছেন। তাঁর অমর দু‘টি গ্রন্থের একটির নাম ‘গুলিস্তান’, অপরটি ‘বূস্তান’। গুলিস্তান মানে ফুলের স্থান আর বুস্তান মানে সুবাসের স্থান। ‘গুলিস্তান’ এ যেসব কাহিনী দিয়ে তিনি মানবমনের চিরন্তন বাগানে ফুল ফুটিয়েছেন তা অনেকটা দৃশ্যমান। কিন্তু ‘বূস্তান’ এর ফুলগুলো দৃশ্যমান নয়, কাছে গেলে তার সুবাস মন-মস্তিষ্ককে বিমোহিত করে। ‘গুলিস্তান’ গদ্যের ফাঁকে ফাঁকে কবিতা দিয়ে রচিত। তবে গদ্যও এতই ছন্দময় যে, তার মতো রচনা অনেক কবি-সাহিত্যিক চেষ্টা করেও সৃষ্টি করতে পারেন নি। ‘বূস্তান’ সম্পূর্ণটাই কাব্য।
মানবসমাজকে সুপথে বা বিপথে পরিচালিত করার অন্যতম চালিকাশক্তি রাজা-বাদশাহরা। তাই তিনি আট বেহেশতের সংখ্যায় রচিত ‘গুলিস্তান’ এর আট অধ্যায়ের প্রথম অধ্যায়টি বরাদ্দ করেছেন রাজা-বাদশাহদের জীবনচরিত আলোচনায়। বর্তমান গণতন্ত্রের সেøাগানের যুগেও ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করার ঝুঁকি আমরা কমবেশি বুঝি। সে যুগের রাজা-বাদশাহদের সমালোচনা ও সংশোধনের অভিনব পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা করলে শেখ সা‘দীকে একজন দূরদর্শী সমাজ সংস্কারক হিসেবে দেখা যায়। যাঁর লেখনির প্রভাব সভ্যতা ও সমাজকে পথ দেখাবে যুগ যুগ ধরে। শেখ সা‘দী বর্ণনা করেন :
খোরাসানের জনৈক বাদশাহ একবার সুলতান মাহমুদ সাবুকতাগীনকে স্বপ্নে দেখেন, তার গোটা দেহ খসে পড়েছে, মাটির সাথে মিশে একাকার হয়েছে। কিন্তু তার চোখ দুটি চোখের কোটরিতে তখনো ঘুরছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে। দরবারের জ্ঞানী-গুণিরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে যখন অপারগ, এক দরবেশ যথানিয়মে সম্মান জানিয়ে এগিয়ে এলেন। বললেন, ‘তিনি এখনো চিন্তিত, কারণ, অন্যের হাতে তাঁর রাজত্ব।’
‘বহু খ্যাতিমান দাফন হয়েছেন নরম মাটির নিচে
যাদের অস্তিত্বের কোনো চিহ্ন নাই মাটির উপরে।
জরাজীর্ণ লাশ রাখা হয়েছিল মাটির কবরে পুঁতে
তাদের অস্থিমজ্জাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে মাটির গ্রাসে।
সনামখ্যাত আনুশিরওয়াঁ অমর তাঁর সুনাম নিয়ে
যদিও বহুকাল চলে গেল, আনুশিরওয়ান গত হয়েছেন।
মানুষের কল্যাণে কিছু করে যাও, হায়াতের এই সুযোগে।
অমুক ব্যক্তি আর নাই, একদিন এই ঘোষণা আসার আগে।’ (গুলিস্তান, ১ম অধ্যায়, ২য় হেকায়াত)
সুলতান মাহমুদ ইতিহাসে সোমনাত বিজয়ী ও ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের গোড়া পত্তনকারী হিসেবে খ্যাত। তাঁর পুরো নাম আবুল কাসেম আমীন আদ্দৌলা। ৩৮৭ হিজরিতে খোরাসানের সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ৪২১ হিজরিতে ইন্তিকাল করেন। তাঁর দরবারে কবি-সাহিত্যিক ও জ্ঞানী প-িতদের বিশেষ কদর ছিল। তাঁর সফরসঙ্গী আলবিরুনীর লেখা কিতাব ‘মা লিল হিন্দ’ (ভারততত্ত্ব) ইতিহাসে বিখ্যাত। তাঁর পিতা নাসিরুদ্দীন সাবুকতাগীন ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত খোরাসানের বাদশাহ। পিতার নামের সাথে মিলিয়ে তাঁর নাম সুলতান মাহমুদ সাবুকতাগীন। আনুশিরওয়ান বা নওশিরওয়ান ইরানের প্রাচীন সাসানি যুগের বাদশাহ। তিনি ন্যায়বিচারক ও প্রজাবৎসল হিসেবে ফারসি সাহিত্যে বিশেষভাবে প্রশংসিত।
মানুষ যখন জগৎ ও জীবনের রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারে তখন নিজ থেকে সুপথগামী হয়। তার কথা ও কাজে মানবীয় সৌন্দর্যের ফুল ফুটে। শেখ সা‘দী তাঁর রচনার ভাঁজে ভাঁজে জীবন ও জগতের রহস্যের পানে মানুষের অন্তর্চক্ষু খুলে দিয়েছেন নানা উপমা উৎপ্রেক্ষায়। তিনি বলেন,
‘এ জগৎ হে ভাই! কারো জন্য থাকবে না স্থায়ী
অন্তর বাঁধ তাঁর সাথে, জগৎ সৃষ্টি করেছেন যিনি
দুনিয়ার রাজত্ব, সম্পদ, পদের ভরসা করো না, মিছে
তোমার মতো অনেককে সে লালন করে হত্যা করেছে
পূত প্রাণ যখন মনস্থ করে এ জগৎ ছেড়ে চলে যাওয়ার
তখতের পরে মরণ কিবা মাটির উপর, কি পার্থক্য তার।’ (গুলিস্তান, ১ম অধ্যায়, ১ম হেকায়াত)
যারা ক্ষমতার মোহে অন্ধ তাদের চক্ষু খুলে দিয়েছেন শেখ সা‘দী নানা উপাখ্যানের অবতারণা করে। যাতে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মনে না করেন। এক রাজা ও দরবেশের সংলাপে তিনি বিষয়টির বিশ্লেষণ করেছেন মানবসভ্যতার সামনে। তিনি বলেন :
সংসার বিরাগী এক দরবেশ এক মরু অঞ্চলে বসা ছিলেন আপন ভুবনে। সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক বাদশাহ। অল্পে তুষ্টির রাজত্বে দরবেশ ছিলেন প্রশান্ত চিত্তে, তাই তিনি মাথা তুললেন না, তাকিয়ে দেখলেন না বাদশাহর দিকে। রাজা-বাদশাহর প্রতাপের কাছে বড্ড বেমানান মনে হলো ব্যাপারটি। মনে কষ্ট পেয়ে তিনি বলে ফেললেন, ‘আলখেল্লা পরা এই গোষ্ঠীটা আসলেই জানোয়ারের মতো। মান-সম্মান, মনুষ্যত্ব এরা চেনে না।’ মন্ত্রী তখন কথা বললেন, ‘ওহে ভালো মানুষ! মহামান্য সুলতান তোমার পাশ দিয়ে চলে গেলেন, অথচ তুমি সম্মান দেখালে না? আদবের লেহায দেখালে না যে?’ দরবেশ বলল, ‘বাদশাহকে গিয়ে বলেন, সম্মান পাওয়ার আবদার যেন এমন কারো কাছে করেন, যে বাদশাহর কাছে কিছুর আশায় থাকে। আরেকটি কথা মনে রাখবেন, প্রজার যতেœর জন্যই রাজা। রাজাকে সম্মান করার জন্য প্রজা নয়।’
বাদশাহ হলেন অনাথ মানুষের প্রহরী
যদিও দয়া অনুগ্রহে পুষ্ট হয় তার সম্পদে
রাখালের খেদমতের জন্য নয় তো ভেড়া
বরং রাখালের কাজ ভেড়ার সেবাযতœ করা।
একজনকে আজকে দেখছ সৌভাগ্যবান
আরেকজন কৃচ্ছ্র সাধনায় করে প্রাণপাত।
কয়েকটা দিন সবর কর, যেন খেয়ে যায়
কল্পনা বিলাসীর মস্তিষ্ক, কবরের মাটি।
বাদশাহ বা প্রজার ফারাক উঠে যাবে
যখন নিয়তির ফয়সালা উপস্থিত হবে।
কেউ যদি কবরের মাটি খুঁড়ে দেখে ভেতরে
চিনবে না কে ধনী, কে গরীব আলাদা করে।
দরবেশের কথাগুলো বাদশাহর বেশ ভালো লাগল। তিনি বললেন, ‘আমার কাছে কিছু চান।’ দরবেশ বললেন, ‘আমি চাই, আপনি যেন আর আমাকে বিরক্ত না করেন।’ বাদশাহ বললেন, ‘আমাকে উপদেশ দিন।’ দরবেশ বললেন,
‘বর্তমানকে মূল্যায়ন কর, এই যে নেয়ামত তোমার হাতে
এই নেয়ামত, রাজত্ব হাত বদলে যাবে অন্যের হাতে।’ (গুলিস্তান, ১ম অধ্যায়, ২৮ম হেকায়াত)
সংসার, সম্পদ, রাজত্ব, প্রতিপত্তি ক্ষণস্থায়ী, যেন কচুপাতার পানি। এসবের মোহ ত্যাগ করতে হবে। মনকে এসবের বাঁধন থেকে মুক্ত করতে হবে। ফারসি সাহিত্যের কিংবদন্তি পুরুষগণ এ কথাই বলেছেন নানাভাবে মানবজীবনকে সুন্দর ও সার্থক করার লক্ষে। তাতে মনে হতে পারে, দুনিয়ার প্রতি উদাসীন হয়ে ঘর সংসার ছেড়ে যাওয়ার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা নিহিত। কিন্তু শেখ সা‘দী বা ফারসি সাহিত্যের মহাপুরুষদের রচনার আবেদন তা নয়। তাঁরা দুনিয়ার ধন-সম্পদকে নয়, দুনিয়ার আর ধন-সম্পদের লোভ-মোহ ত্যাগ করতে বলেছেন। শেখ সা‘দী ‘বূস্তান’ এর এক অনবদ্য কাহিনীতে এই জীবনদর্শনটি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই কবিতার দু‘টি ছত্র খ্যাতির এমন শীর্ষে উঠে গেছে, যা গোটা ইসলামি জীবনবোধের প্রতিনিধিত্ব করছে। শেখ সা‘দী বলেন,
‘আগেকার দিনের বাদশাহদের কাহিনীতে আছে,
পারস্য-রাজ তাক্লা যখন বসলেন সিংহাসনে।
শান্তিতে জনগণ কারো ক্ষতি কেউ করে না দেশে,
সবাইকে ছাড়িয়ে অগ্রণি তিনি একা এই কীর্তিতে।
এক দরবেশের কাছে গিয়ে একদিন বললেন রাজা,
আমার এ জীবন কেটে গেল নিষ্ফল, অযথা।
আমি চাই নিমগ্ন হব ইবাদত-বন্দেগিতে একাগ্রভাবে,
জীবনের বাকি কয়দিন কাটে যেন সৎভাবে।
এই প্রতিপত্তি, রাজত্ব ও সিংহাসন যখন চলে যাবে
জগতের সম্পদ যাবে না সাথে, নিঃস্বই যেতে হবে।
আলোকিত-হৃদয় দরবেশ শুনে তাঁর কথা
তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বললেন, থামো তাক্লা।
‘তরীকত বজুয খেদমতে খাল্ক নীস্ত
বে তসবীহ ও সাজ্জাদা ও দাল্ক নীস্ত’
সৃষ্টির সেবা ছাড়া তরীকত নয় অন্যথা
তসবীহ, জানামায ও নয় আলখেল্লা।
তুমি সমাসীন থাক তোমার রাজ সিংহাসনে
তবে পূত চরিত্রে সজ্জিত হও দরবেশি গুণে।
সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় উদ্যোগী হও,
বড়বড় বুলি, আস্ফালন ছাড়, মুখ সামলাও।
তরিকত সাধনায় চেষ্টাই চাই, বুলি নয়,
সাধনা চেষ্টা, এখানে আস্ফালনের মূল্য নাই।
বুযুর্গগণ, যাঁরা সজ্জিত ছিলেন স্বচ্ছতার সম্পদে
এমনই উত্তরীয় ছিল তাঁদের আচকানের নিচে।’
(বূস্তান, ১ম অধ্যায়, হেকায়াত নং ৯)

নারী ও বিশ্বায়ন

ড. মাহদী গোলজান

বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী যে প্রচার ও প্রসার চলছে তা নারীকে তার স্বকীয় সত্তা থেকে সামাজিক সত্তায় পরিণত করেছে। তবে এ পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতপক্ষে একজন নারী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিণত হচ্ছে যৌন-সর্বস্ব সত্তা হিসেবে। নারীর মর্যাদাপূর্ণ মানবীয় সত্তা কি বিশ্বায়নের ফসল? বিশ্বায়নের এই প্রক্রিয়া কি নারীকে এ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে? বিশ্বায়নের ধারা নারীকে সমাজে মানুষ হিসেবে গণ্য করে নাকি পণ্য হিসেবে? বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় গ্লোবাল সোসাইটিতে নারীর প্রতি মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির উপস্থিতি আমরা কতটুকু দেখি?
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় নারীকে sex-oriented পণ্য হিসেবে গণ্য করে নারীর সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে নারীর সামাজিক অবস্থা প্রতিটি ক্ষেত্রে দিনকে দিন এ অবস্থার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটছে। আজ আধুনিকতা এবং বিশ্বায়নের স্রোতে ‘ওমেন অফ দি ইয়ার’ জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এখানে সেরা প্রতিযোগী বাছাই করা হয় কিভাবে? বিশ্বায়নের এ ধারায় কোন নারীকে বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন প্রপঞ্চকে বা কোন মানদ-কে গুরুত্ব দেওয়া হয়? তার পরিবার, তার সম্ভ্রম, তার সত্তা বা পরিচিতি, নাকি তার শারীরিক ইতিবৃত্ত?
‘বছরের শ্রেষ্ঠ নারী’ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যতগুলো প্যারামিটার (parameter) ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে নারীর ব্যক্তিসত্তার চেয়ে প্রাধান্য পায় তার দৈহিক গঠন। বিশ্বায়নের এই প্রেক্ষিতে এসে নারী পরিণত হয় fluid identity-তে (পরিবর্তনশীল সত্তা- one kind of concept- যেন নারীকে যেভাবে চিহ্নিত করতে চাওয়া হবে সেভাবেই চিহ্নিত হবে)। নারী তার সত্তাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য বা তার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখান থেকে প্রেরণা নিয়ে চালিত হবে।
সভ্যতার উত্থান-পতন মূলত তিনটি উপাদানের নিরিখে বিবেচনা করা হয়। নিজস্ব সত্তা বা পরিচয় হারিয়ে ফেলা সভ্যতার পতনের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উপাদান। সভ্যতার পতন ঘটানো যায় কোন সমাজের নিজের শিকড়কে ভুলিয়ে দিয়ে এবং তা থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে। বর্তমান প্রজন্ম নিজেদের পরিচয়, ইতিহাস না জেনেই বিশ্বায়নের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তারা কখনও নিজেদের মৌল সত্তা এবং ইতিহাসকে জানার জন্য তাদের চিন্তা-ভাবনাকে পুনঃমূল্যায়ন করতে সক্ষম হচ্ছে না।
বিশ্বায়নের প্রভাবে প্রথম যে জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হয়েছে তারা হলো নারী সমাজ। নারীরা তাদের নিজস্ব সত্তা ও দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে নারী তার স্বভাবসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছে। আর এ কারণে মানবসভ্যতা মোটা দাগে তিনটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে :
১. নারীর অমর্যাদাপূর্ণ পরিচয়
২. নারীর পরিচয় বিস্মৃতি
৩. নারীর পরিচয় সংকট।
নারীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে চলনে, বলনে পুরামাত্রায় পুরুষের মতো হওয়ার। এক্ষেত্রে কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে : নারী এবং পুরুষের ফ্লুইড আইডেনটিটি তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? তাহলে নারী অথবা পুরুষের আসল পরিচয় কিভাবে নির্ধারিত হবে? এই দৃষ্টিভঙ্গির বা ধারণার মূল্যায়ন হবে কিভাবে?
এটা সেই একই ধারা, যা বর্হিবিশ্ব বা পাশ্চাত্য নারীর পরিচয়কে নির্ধারণ করে। Fluid-identity অনুযায়ী নারীকে তার পরিচয় হিসেবে যা দেওয়া হবে তা সে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে অহরহ এ পরিচয়ের পরিবর্তনও ঘটতে পারে। যদি আমরা আমাদের আসল পরিচয়ে ফিরে আসি এবং সেই সত্তাকে জিজ্ঞেস করি নারীর বর্তমান সত্তাকে সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপারে; তবেই আমরা নিজেদের পরিচয়কে সুরক্ষিত করতে পারব। নিজেদের পরিচয় নিরূপণ করার জন্য অবশ্যই আমাদের নিজেদের ধর্ম, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের কাছে ফিরে যেতে হবে।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সর্বোত্তম সংজ্ঞা বলে, নারীকে কখনও যৌনসর্বস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা উচিত নয়। সে একজন নারী এবং তার মনোদৈহিক গঠনের জন্য তাকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা হয়। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথ নয়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের দৃষ্টিকোণ থেকে (যেহেতু ইসলামে এ ব্যাপারে জোর দেওয়া আছে), কোরআন, ইতিহাস, জাতীয়তা সবদিক থেকে বিবেচনা করলে নারীর যে পরিচয় পাওয়া যায় তা হলো সে একটি মানবসত্তা। জন্ম থেকেই নারী ও পুরুষের মাঝে সত্তাগতভাবে কোন পার্থক্য নেই। আসল কথা হলো, তারা উভয়েই মানুষ। সৃষ্টিকর্তার তৈরি একটি মানবসত্তা হলো নারী। সে তার বিশেষ অধিকারের পাশাপাশি সত্তাগত ও জ্ঞানার্জনের অধিকারও পাবে।
আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দিক থেকে, ১৪০০ বছর আগে ইসলামের আবির্ভাবের সময় থেকে অথবা ইসলাম-পূর্ব সময় থেকেই প্রাচীন পারস্যে নারী জাতি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা পেয়ে এসেছে। ইরানের সমাজ কখনও নারীকে বস্তু হিসেবে ব্যবহার করে নি।
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে যে, ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি সবখানেই নারীকে সুন্দর, সুষমাম-িত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। নারীর পরিচয় বিবেচনা করার জন্য বহির্বিশ্ব থেকে আমদানি করা সংজ্ঞায় নারীকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন নেই। আধুনিক বিশ্বে বিশ্বায়নের কারণে তার নিজস্ব স্বকীয়তার বিলুপ্তি ঘটনো হয়েছে। সে যন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে এবং যন্ত্রের কোন বিবেক বোধ নেই।
ধরা যাক, আমাদের কাছে একটা রেঞ্জ আছে। তার অর্থ এই নয় যে, তা নিজে নিজেই ক্রিয়াশীল হবে। কারণ, সেটাতো একটা যন্ত্রবিশেষ- সেটাকে চালিত করতে হবে। বর্তমান যুগে নারীর প্রতি যন্ত্রের ন্যায় মনোভাব পোষণ করা হয় এবং তাদেরকে কখনই স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় না। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে একজন নারী তার সমাজের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পর্কিত থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, ব্যবহারযোগ্য থাকবে। আমাদের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারী একজন মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসত্তা, কোনক্রমেই যন্ত্র নয়। এমনকি সে যদি এ সমাজ-সংস্কৃতির সংস্পর্শে নাও থাকে তবুও তাকে একইভাবে গণ্য করা হবে। যখন মনোভাবই যান্ত্রিক হয়, তার অস্থিত্বের জন্য ব্যবহৃত না হওয়া পর্যন্ত কোন যন্ত্রকেই পরিচয় দেয়া যাবে না।
নারীর অস্তিত্বের বিষয়ে অর্থহীন দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বায়ন এবং আধুনিকতারই ফসল। ডারউইনের বিবর্তন মতবাদের পরপরই নারী সম্পর্কিত এসব সংজ্ঞা পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আর আধুনিক মানুষ তাঁর মতবাদের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি।
ডারউইনের তত্ত্ব ঈশ্বর, প্রকৃতি এবং পুরুষের জন্য নতুন ধারণার জন্ম দেয়, যেখানে নারীর কোন অবস্থান ছিল না। নারীর প্রতি এহেন মনোভাবের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনই ‘ফেমিনিজ্ম’। নারীকে উপেক্ষা করার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা বিশ্বে এ আন্দোলন গড়ে ওঠে। এটাকে ‘স্বতন্ত্র পরিচয়’ হিসেবেও আলোচনা করা হয়।
অপরদিকে মুসলমানদের ইতিহাসে কখনই নারীর পরিচয়কে অস্পষ্ট রাখা হয় নি এবং যার কারণে নারী সংক্রান্ত বিষয়ে পাশ্চাত্যের মতো সমস্যাও তৈরি হয় নি। তথাপি, নারীবাদ (ফেমিনিজ্ম) এমন এক সমাজের প্রতিবাদ যেখানে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা উপেক্ষিত ছিল।
বিশ্বায়ন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় নারীরা তাদের একক ও পৃথক ব্যক্তিত্বের অবস্থান হারাচ্ছে। বিশ্বে নারীবাদ ধারণার প্রারম্ভ থেকে এমনটা দেখা যায় যে, একজন নারী স্ত্রী, বোন, মা কিংবা এমন একজন নাগরিক হতে বাধ্য না- যাকে প্রথাগত সমাজ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর পরিবর্তে তারা স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে নিজেদের মূল্যায়ন করতে চায় বা মর্যাদা চায়। এই মনোভাবের ফলে কবিতা, সাহিত্য, সিনেমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীবাদকে আদতে মেয়েলি (womanize) করে তুলেছে। কালের পরিক্রমায় অপমানজনক এই পরিস্থিতি ‘ফেমিনিজ্ম’ এর আখ্যা পায় এবং আধুনিকতার প্রয়াসে নারীরা তাদের হাজার হাজার বছর ধরে অক্ষুণ্ন রাখা স্বতন্ত্র মর্যাদা হারিয়ে ফেলে।
ইরানের মুসলিম নারীদের কখনই এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় নি। ইতিহাসের পাতা থেকে দেখা যায়, ইরানে মুসলিম নারীদের স্বতন্ত্র পরিচয় পূর্বেও ছিল, এখনও আছে।
নারীদের অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.), হযরত যায়নাব (সা.আ.), রোকাইয়া বা সাবার রাণী কিংবা ইরানের ইতিহাস থেকে তাহমিনা, রৌদাবা ও সৌদাবার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বর্তমান নারিগণ আদর্শ হিসেবে তাঁদের গ্রহণ করলে স্বতন্ত্র, পারিবারিক ও সামাজিক পরিচয়ে আশাতীত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন।
নারীর ওপর পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেওয়া (fluid) এবং (plural) আইডেনটিটির (identity) কোন সুফলদায়ক প্রভাব তাদের ওপর নেই; বরং আধুনিকতার এ প্রভাব নারীদেরকে ধাঁধার মধ্যে ফেলে এবং এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যেখানে নারী তার নিজ সত্তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে ‘আমি কে’।
আজকের দিনে নারী চায় সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে। জ্ঞানার্জন করতে। ছেলেদের থেকে পিছিয়ে না থেকে পরিবার এবং সন্তানকে লালন-পালন করতে। নারীসুলভ আচরণ রক্ষা করে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে চায় সে। নারীকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়টি উপলব্ধি করানোর জন্য Fluid Identity অথবা Plural Identity কখনই উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে না। কারণ, এই দৃষ্টিভঙ্গি তার পরিচয়, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পরিবার ব্যতীত তাকে বিবেচনা করেছে।
William D. Gairdner কর্তৃক রচিত বই ‘The War against the Family’-তে তিনি পরিবার ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেছেন। এই গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে বিশ্বায়ন এবং আধুনিকতার পশ্চিমা বিশ্ব পরিবার প্রথাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, সামাজিক দায়ভার রক্ষার পাশাপাশি পরিবার লালন-পালন করলে শেষমেষ কি তার জন্য কোন পরিবারের অস্তিত্ব থাকবে? অবশ্যই নারীর মাঝে কোন উপকারিতা থাকবে না, যদি তারা তথাকথিত আধুনিকতার -স্রোতে গা ভাসিয়ে Fluid ও Plural Identity গ্রহণ করে নেয়।
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত Women’s Youth Olympic-এ ইরানি দল হিজাবসহ অংশগ্রহণ করতে চায়। বিশ্বায়ন এই ঐতিহ্যের পুরোপুরি বিরুদ্ধে। আর বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় এই ঐতিহ্য তার স্বকীয়তাসহ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সুযোগ পায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, FIFA ইরানি টীমের জন্য ইসলামিক হিজাবকে নিষিদ্ধ করে। তাদের যুক্তি হলো- ইরানি দলকে হিজাবসহ অংশগ্রহণ করতে দিলে পরবর্তী অলিম্পিকে হিজাবধারী অংশগ্রহণকারীদের আধিক্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে এবং হিজাবের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে না। বিশ্বায়নের ধারণায়, নারীর হিজাব করে চলা তাদের আদর্শের পরিপন্থি। বিশ্বায়ন তাদের অবকাঠামো নির্ধারণ করে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দ্বারা, যেখানে কারো নিজস্ব পরিচয়, ইতিহাস বা জাতীয়তাবোধের জায়গা নেই।
তাই বিশ্বায়ন আমাদের জন্য ঠিক ততক্ষণ পর্যন্তই গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ পর্যন্ত তা অন্যের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে সম্মান করে এবং তাদেরকে নিজেদের রীতিনীতির সাথে সংযুক্ত থাকতে দেয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বিশ্বায়ন মানুষকে তার আসল পরিচয় ভুলিয়ে নতুন পরিচয় গ্রহণ করতে শেখায় বা বাধ্য করে। আমাদের নারীদের কোন পরিবার বা কোন দায়িত্ব থাকবে না যদি তারা Fluid কিংবা Plural Identity গ্রহণ করে নেয়।
বিশ্বায়ন ব্যবস্থা কি নারীদের এরকম অবস্থা মেনে নেবে? সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য আয়োজক কর্তৃপক্ষ কি আমাদের প্রতিযোগীদের হিজাবসহ অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে? বিশ্বায়নের এই প্রক্রিয়া কি জনতার মৌলিক সত্তা গ্রহণ করবে?
Fluid Identity এবং Plural Identity সাথে relativism এর নতুন সম্পর্ক দেখা যায়। এই ধরনের পরিচয় সবকিছুকে আপেক্ষিক বিবেচনা করে এবং কোন কিছুকেই পরম মনে করে না। উদাহরণ হিসেবে ইসলামিক হিজাবকে বিবেচনা করা যায়। বর্তমানে পরিবার ও সমাজে আমাদের হিজাব বা ইসলামিক পর্দার সংজ্ঞা ফ্লুইড এবং দ্বৈত সত্তার। আদতে ইসলামিক হিজাব কী, এ প্রশ্নের জবাব একজন পূর্ণ হিজাবধারী এবং একজন আংশিক হিজাবধারী উভয়ই একই রকম দেবেন। তবে পর্দার ব্যাপারে Fluid Identity কিংবা Plural Identity-এর ধারকেরা হিজাব সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে সক্ষম নয়।
উপরিউক্ত উদাহরণগুলো থেকে দেখা যায় যে, সবাই নারীকে ইসলামিক হিজাব অনুধাবনের বিষয়ে উল্লেখ করে এবং দাবি করে যে, তারা হিজাবকে প্রতিপালন করে। তবে সত্যটা আদতে কী? Fluid Identity এবং Plural Identity অনুযায়ী সবকিছু আপেক্ষিক এবং যেকোন ধরনের পর্দা বা আবরণকেই হিজাব হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। এটাই আধুনিকতা এবং বিশ্বায়ন চর্চার মূল বার্তা, যা পরম সবকিছু দূরে ঠেলে দিয়ে সবকিছুকে আপেক্ষিক বিবেচনা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।
অনুবাদক : সেলিনা পারভীন

সংবাদ বিচিত্রা (বিদেশী সংবাদ)

নওরোজ উপলক্ষে প্রতিবেশী দেশ সমূহের জনগণের প্রতি প্রেসিডেন্ট রুহানির অভিনন্দন
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. হাসান রুহানি ইরানি বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন নওরোজ উপলক্ষে ইরানি জনগণ এবং আফগানিস্তান, আযারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তিান, কাজাকিস্তান, তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও আর্মেনিয়ার ফারসিভাষী জাতি সমূহের প্রতি এবং সেই সাথে ভারতের ফারসিভাষী জনগণের প্রতিও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি ফারসিভাষী দেশ সমূহের প্রেসিডেন্টগণের উদ্দেশে প্রেরিত এক বাণীতে শান্তি ও ঐক্যকে নওরোজ উদ্যাপনকারী জনগণের সুদৃঢ় লক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর এ বাণীতে বলেন, অন্য দেশ সমূহকে সংঘাতের পরিবর্তে আন্তঃক্রিয়ার জন্য আহ্বান জানানোর লক্ষ্যে আজকের দিনে ইতিপূর্বেকার অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের জন্য প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা ও আন্তরিকতার আলোকে আশাবাদের প্রয়োজন অনেক বেশি।
তিনি আরো বলেন, পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ার আলোকে আশা, শান্তি ও ঐক্যের আশ্রয় নিয়ে জাতিসমূহের পক্ষে আজ গোষ্ঠীবাদী চরমপন্থা থেকে উৎসারিত সন্ত্রাসবাদকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর বাণীতে নওরোজ উৎসব উদ্যাপনকারী জাতি সমূহের জন্য নবসূচিত ইরানি বছরটি সুখ, সমৃদ্ধি ও আনন্দে পরিপূর্ণ একটি বছর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আন্তর্জাতিক দিবস নওরোজ উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিবের অভিনন্দন
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস্ ইরানি নতুন বছরের প্রথম দিন আন্তর্জাতিক দিবস নওরোজ উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বিশ্ববাসীর প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি তাঁর বাণীতে নওরোযকে বিশ্ববাসীর অভিন্ন বিষয়াদির অন্যতম হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি নওরোজ উৎসব উদ্যাপনের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে প্রদত্ত এ বাণীতে বলেন, যে এক ডজন দেশ নওরোজ উদ্যাপন করছে এখানে আমাদেরকে একত্রিত করার জন্য সেসব দেশের রাষ্ট্রদূতগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূতগণের উদ্দেশে বলেন, স্মরণাতীত কাল থেকে চলে আসা এ উদ্যাপনীতে জাতিসংঘকে অংশীদার হবার সুযোগ দানের জন্য আমি আপনাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মি. আন্তোনিও গুতেরেস্ আরো বলেন, নওরোজ হচ্ছে একটি নতুন সূচনা। এটি হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের একটি সুযোগ। আর জাতিসংঘ পরিবার এ কারণে নওরোজ উৎসব উদ্যাপন করে যে, এ ছুটির দিনটিতে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। নওরোজ আমাদেরকে এটাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, একদিকে যেমন আমাদের সকলের মধ্যে অভিন্ন বিষয়াদি রয়েছে তেমনি আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে সমৃদ্ধি রয়েছে।
স্মর্তব্য, হিজরি সৌরবর্ষ ইরানি নতুন বছরের প্রথম দিন নওরোজ একই সাথে বসন্ত ঋতুর প্রথম দিনও বটে। এ দিনটি প্রধানত ইরান, আফগানিস্তান, আযারবাইজান, ভারত, কিরগিজিস্তিান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, তুরস্ক ও উযবেকিস্তানে ব্যাপক ধুমধামের সাথে উদ্যাপিত হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ২১শে মার্চ আন্তর্জাতিক দিবস নওরোজকে ইউনেস্কো কর্তৃক মানবজাতির অবিস্মরণীয় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে ইরান-রাশিয়া : রুহানি
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় রাশিয়া এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। ক্রেমলিনে গত ২৮ মার্চ ২০১৭ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ¬াদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ইরান ও রাশিয়ার স¤পর্কের লক্ষ্য আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। দুই দেশের প্রধান লক্ষ্য আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বলেও জানান তিনি।
তেহরান-মস্কো সম্পর্ক কখনোই তৃতীয় কোনো দেশের স্বার্থবিরোধী নয় বলেও জানান তিনি। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর ইরান গুরুত্বারোপ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার¯পরিক স¤পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নয়নের জন্য দুই দেশই গত সাড়ে তিন বছর ধরে পদক্ষেপ নিয়েছে।
পার¯পারিক সম্পর্ক নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, নতুন এ পর্যায়ে ইরান এবং রাশিয়া টেকসই এবং দীর্ঘমেয়াদি স¤পর্কের বিষয়ে কথা বলতে পারে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইরান সুপ্রতিবেশী এবং রাশিয়ার আস্থাভাজন অংশীদার। মস্কো এবং তেহরান বেশ কার্যকর ভাবে সব ক্ষেত্রে কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে বৈশ্বিক ইস্যু এবং খুবই মারাত্মক আন্তর্জাতিক সমস্যা নিরসনের বিষয়ও রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে সাফল্য অর্জন করেছে তা তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে ২০১৬ সালে বাণিজ্যের পরিমাণ পূর্বের বছরের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে ইরান এবং রাশিয়া সহযোগিতা বিষয়ক ১৪ দলিল সই করেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বৈচারিক, আইনি, বৈজ্ঞানিক এবং সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর এ সব দলিল সই করা হয়।

ক্রীড়ার ওপর প্রেসিডেন্ট রুহানির গুরুত্ব আরোপ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড হাসান রুহানি ক্রীড়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি ক্রীড়ার প্রশংসা করে বলেন, ক্রীড়ায়, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সমূহে অংশগ্রহণ হচ্ছে জাতীয় গৌরবের মানদ- সমূহের অন্যতম।
প্রেসিডেন্ট রুহানি ২০১৬ রিও অলিম্পিকস ও প্যারালিম্পিকস্-এ অংশগ্রহণকারীদের সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, ক্রীড়া কোনো ব্যক্তি, গোত্র বা ধর্ম বিশেষের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়, বরং এ ক্ষেত্রে ইরানিদের বিজয়ের দ্বারা সকল ইরানিই প্রভাবিত হন। তিনি বলেন যে, তাঁর সরকার ক্রীড়াকে একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি জোর দিয়ে বলেন, একটি জাতির জন্য অগ্রগতির পথে অভিযাত্রার ও এক গুচ্ছ আশা-আকাক্সক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। আর আপনাদের শিল্পকলা, চলচ্চিত্র, যন্ত্রসংগীত ও ক্রীড়া যখন বৈশ্বিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে তখন তা এ আশা-আকাক্সক্ষাগুচ্ছেরই অংশ বৈ নয়।
তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানি নারীদের অগ্রগতি এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে সাফল্যের অধিকারী হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইরানি নারিগণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ক্রীড়া ইভেন্টে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের অধিকারী হয়েছেন অর্থাৎ নারীদের ক্রীড়া অধিকতর সাফল্যের অধিকারী হওয়ার লক্ষ্যে সঠিক পথের সন্ধান লাভ করেছে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি জোর দিয়ে বলেন যে, ইরানি সংস্কৃতিতে নারী অ্যাথলেটগণ অতীত কাল থেকেই একই সাথে ক্রীড়া উদ্যোক্তা হিসেবে এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে শক্তি ও সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন।
তিনি আরো বলেন, ক্রীড়ার সাথে ঐক্যও অর্জিত হয় এবং এটি আমাদের জন্য জাতীয় গৌরবের ও জাতীয় ঐক্যের একটি উৎস বটে। তিনি বলেন, ক্রীড়া আমাদের জন্য ক্রীড়া পর্যটন নিয়ে আসে এবং তা ইরান-ভীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম, সেই সাথে তা বিশ্বের সাথে সংলাপ ও আন্তঃক্রিয়া তৈরি করে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. রুহানি নারীদেরকে ক্রীড়ায় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে বলেন, নারীদের গৃহকোণে আবদ্ধ হয়ে থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আমাদের মেয়েরা অলিম্পিকসে ও অন্যান্য ইভেন্টে চমৎকার কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে এবং স্বীয় ইসলামি পরিচিতি ও সংস্কৃতিকে সমুন্নত রেখেই পদক নিয়ে আসছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ভবিষ্যতে দেশের জনগণের জন্য প্রশংসা অর্জনকারী নারী অ্যাথলেটদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং তারা ক্রীড়া ক্ষেত্রে যথাযথ মনোযোগ ও স্বীকৃতির অধিকারী হবে।

তিনটি পরমাণু প্রকল্প উন্মোচন করল ইরান
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা বা এইওআই’র প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেন, ৯ এপ্রিল ইরানের তিন পরমাণু প্রকল্প উন্মোচন করা হয়েছে। পরমাণু ক্ষেত্রে ইরান ৫০ শতাংশ বেশি সফলতা অর্জন করেছে বলেও জানান তিনি।
এ তিন প্রকল্প উন্মোচনের অনুষ্ঠান ইরানের গাজভিন, আলবোর্জ এবং ইয়াজদ প্রদেশে অনুষ্ঠিত হয়। ৯ এপ্রিল পরমাণু প্রযুক্তি দিবস পালন করে ইরান এবং এ উপলক্ষে এ তিন প্রকল্প উন্মোচন করা হয়। মার্চে শেষ হওয়া গত ফারসি বছরে পরমাণু ক্ষেত্রে ইরানের সফলতা তুলে ধরে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
তিনি আরো জানান, পূর্বেকার বছরের তুলনায় গত বছর ইরান পরমাণু ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বেশি সফলতা অর্জন করেছে।

সিরিয়ায় ইরানের ভূমিকাকে স্বাগত জানাল জি-সেভেন
গম ১০ ও ১১ এপ্রিল ২০১৭ শিল্পোন্নত সাত জাতিগোষ্ঠী বা ‘জি-সেভেন’-এর সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য ইরান যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইতালির লুক্কা শহরে জি-সেভেনের সম্মেলন থেকে ইরানের পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চলমান সংকট সমাধানে ইরানের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়।
সেই সঙ্গে ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং এসব দেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিরোধী যুদ্ধে ইরানের আরো সহযোগিতা কামনা করা হয়।
এদিকে লুক্কা শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে রাশিয়ার ওপর আরো কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ব্রিটেনের দেয়া প্রস্তাব জি-সেভেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নাকচ করে দিয়েছেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কাছ থেকে রাশিয়াকে দূরে সরিয়ে নেয়ার কৌশল হিসেবে ব্রিটেন এই প্রস্তাব দিয়েছিল।
কিন্তু শিল্পোন্নত সাত জাতিগোষ্ঠীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাশিয়াকে কোণঠাসা করার পরিবর্তে দেশটির সঙ্গে সংলাপের ওপরেই বেশি জোর দিয়েছেন।

ইরান ও পাকিস্তান ব্যাংকিং লেনদেন চুক্তি
ইরান ও পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে রাজি হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং লেনদেন সহজ করতে দুটি দেশ গত ১৪ এপ্রিল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পরমাণু চুক্তির পর ইরানের ওপর আরোপিত পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিনের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও এখনও দেশটির সঙ্গে অনেক দেশের ব্যাংকিং লেনদেন সহজ হয়ে ওঠে নি। বিষয়টি সহজ করতেই দুটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এধরনের চুক্তি করল।
চুক্তির ফলে ইরান ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুটি দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে লেনদেনকে সহজ করে তুলতে তদারকি ও সহায়তা করবে। এরফলে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে তেহরান ও ইসলামাবাদ। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দুটি দেশ নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। দুটি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছেন।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উৎপাদনের জন্য ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি সম্পাদন
চিকিৎসাসেবা প্রদানের উপযোগী হেলিকপ্টার (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) উৎপাদনের জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও রুশ ফেডারেশনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইরানিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপ্মেন্ট অ্যান্ড্ রিনোভেশন অর্গানাইজেশন (এইচডিআরও) এবং রাশিয়ান হেলিকর্প্টাস্ কোম্পানি (র্আএইচ্সি)-এর মধ্যকার এ চুক্তিতে এইচডিআরও-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানসূর মোয়াযযামী ও র্আএইচ্সি-র প্রধান আন্দ্রে বোগিন্স্কি স্বাক্ষর করেন।
গত ২৭ মার্চ (২০১৭) ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিতে দু’দেশের মধ্যে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি উৎপাদন সংক্রান্ত সহযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া একই দিনে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে রেল র্কা উৎপাদন সংক্রান্ত চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অন্যদিকে রশিয়ায় নিয়োজিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত জনাব মেহ্দী সানায়ী জানিয়েছেন যে, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য বিনিময়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, ২০১৬ সালে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় শতকরা ৮০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইরান ও হাঙ্গেরীর কৃষি ক্ষেত্রে কারিগরি সহযোগিতা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট সোরেনা সাত্তারী বলেছেন, ইরান ও হাঙ্গেরীর মধ্যে কৃষি কারিগরিসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। তিনি হাঙ্গেরীর ন্যাশনাল রিসার্চ, ডেভেলপন্টে অ্যান্ড্ ইনোভেশন অফিস-এর প্রেসিডেন্ট জোযেফ্ পলিঙ্কাস্-এর সাথে আলোচনাকালে এ কথা বলেন।
সোরেনা সাত্তারী উল্লেখ করেন যে, ইরান ও হাঙ্গেরীর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিরাট সম্ভাবনা নিহিত রয়েছেÑ যা দুদেশের মধ্যে কারিগরি ক্ষেত্রে বিরাট সমন্বয় ও সহযোগিতা গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে।
সোরেনা সাত্তারী আরো জানান যে, ইরান ও হাঙ্গেরীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিরাট ক্ষেত্র রয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রের মধ্যে পানি, মরু, কৃষি উৎপাদন ও মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কতগুলো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা ইরানের সাথে পর্যটন সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে
দক্ষিণ আফ্রিকা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাথে পর্যটন সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে। দেশটির পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রী ডেরেক হ্যানেকম্ বলেন যে, তাঁর দেশ ইরানে আরো বেশি পর্যটক প্রেরণের পরিকল্পনা করেছে। তিনি সম্প্রতি ১০ম তেহরান আন্তর্জাতিক পর্যটন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকালে সাংবাদিকদের নিকট এ কথা বলেন।
তিনি বলেন যে, ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অন্যতম প্রধান দিক হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইরানের মধ্যে শিল্প ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পর্যটনের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তোলা।
মি. ডেরেক হ্যানেকম্ জোর দিয়ে বলেন যে, তাঁর দেশ ইরানে আরো বেশি সংখ্যক পর্যটক প্রেরণ করতে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আগ্রহী ইরানি পর্যটকদের স্বাগত জানাতে ইচ্ছুক।
দক্ষিণ আফ্রিকার পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রী আরো বলেন যে, তেহরান ও কেপ্ টাউনের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু করার জন্য পুরেপুারি ক্ষেত্র প্রস্তুত রয়েছে।

তেহরানে ৩৪তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশসহ ৮৩টি দেশের অংশগ্রহণে ইরানের রাজধানী তেহরানে ১৯ এপ্রিল ২০১৭ থেকে শুরু হয়েছে ৩৪তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা। ইরানের স্টেট এনডোমেন্ট অ্যান্ড চ্যারিটি অ্যাফেয়ার্স অর্গানাইজেশন পরিচালক হোজ্জাতুল ইসলাম আলি মোহাম্মদী গত ১৬ এপ্রিল এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, তেহরানের ইমাম খোমেইনী মোসাল্লায় আয়োজিত এ কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৮৩টি দেশের ২৭৬ জন ক্বারী অংশ নিয়েছেন।
এছাড়া ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমে ২৩ এপ্রিল থেকে আরেকটি কোরআন তেলাওয়াত সম্মেলন শুরু হয় যেখানে ৫৩ জন আলেম অংশ নেন। ২৪ এপ্রিল কোরআনের বিষয়বস্তু নিয়ে কোমে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার জুরি প্যানেলে ছিলেন ২৪ জন ইরানি ও ১৬ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ আলেম।

ভারতে ৭শ’ বছরের পুরোনো দিওয়ান ই হাফিজের পা-ুলিপি
ভারতের কোলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির এক দল গবেষক ইরানের বিখ্যাত কবি হাফিজের ৭শ’ বছরের পুরোনো ‘দিওয়ান-ই হাফিজ’-এর একটি পা-ুলিপি খুঁজে পেয়েছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়েছে, উদ্ধারকৃত পা-ুলিপিটি পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলের, যিনি ১৬২৮ থেকে ১৬৫৮ সাল পর্যন্ত ভারত শাসন করেছিলেন। পা-ুলিপিতে কবি হাফিজের একটি অপ্রকাশিত গজল রয়েছে। সম্রাট শাহজাহানের স্বাক্ষর রয়েছে এতে। রয়েছে স্বর্ণের কারুকাজ।
ভারতের গবেষকরা বলছেন, ইরানের কবি হাফিজ মুঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলের অনেক আগেই বিখ্যাত ছিলেন এবং তাঁর কবিতার পা-ুলিপি মুঘল সম্রাটের আমলেও যে ভারতে সমাদৃত ছিল, উদ্ধারকৃত পা-ুলিপিটি তারই স্বাক্ষর বহন করছে। অপ্রকাশিত গজলের একটি লাইনে ফারসি ভাষায় বলা হয়েছে, ‘বেহাম দেল্লাহ কে বজাম দিদানে রুয়াত মোয়াসসের শোদ’ অর্থাৎ ‘আবারো তোমার চেহারা মোবারকের দর্শনে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি, খোদা তোমায় ধন্যবাদ।’
কোলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির যাদুঘরে উদ্ধারকৃত কবি হাফিজের স্বহস্তে লিখিত এ পা-ুলিপিটি অনেকে দেখতে আসছেন। এধরনের একটি পা-ুলিপি ভারতের পাটনায় খোদাবখশ লাইব্রেরিতে রক্ষিত রয়েছে বলে জওহারলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ আখতার হুসেন জানান।
এশিয়াটিক সোসাইটির ইতিহাসবিদ রামকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমাদের ফারসি প-িতরা এ পা-ুলিপিটি দেখে মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়ে পড়েন। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি অধ্যাপক আহমাদ কারিমিহাককাক বলেন, কবি হাফিজের স্বহস্তে লেখা পা-ুলিপিতে সম্রাট শাহজাহানের স্বাক্ষর পা-ুলিপিটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। কবি হাফিজ তার জীবদ্দশায় অন্তত ৫শ’ গজল নিজের হাতে লিখে গেছেন। সর্বশেষ উদ্ধারকৃত পা-ুলিপিতে তাঁর হাতে লেখা গজলের গুরুত্ব অপরিসীম।

ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তানে পর্যটকদের ঢল
ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তানে পর্যটক বেড়ে গেছে। এপ্রিলের প্রথম দুই সপ্তাহে সেখানে ৬ লাখ ৯৩ হাজার পর্যটক প্লেন ও ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। বন্দর শহর চবাহার,মাটির আগ্নেগিরি, ঐতিহাসিক প্রাসাদ, বাগান সব মিলিয়ে সিস্তান-বালুচিস্তান ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে টানে। এজন্যই দেশি ও বিদেশি পর্যটক মিলে তাদের ভ্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ ভাগেরও বেশি। হিসেবে ২ লাখ পর্যটক সেখানে গেলে তাতে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ১ শতাংশ।
পর্যটকদের বাড়তি চাহিদা মেটাতে সড়কের ধারে বিশ্রামাগারের সংখ্যঅ বৃদ্ধি করা হয়েছে ১১টি থেকে ২৫টিতে। ১৯টি
মোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে। চারটি বিমান বন্দর থাকলেও তৈরি হচ্ছে আরেকটি বিমান বন্দর। ওমান সাগরের উপকূলে চবাহারের ভৌগোলিক অবস্থান অসাধারণ। রয়েছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। ফ্লামিঙ্গো, সারস ও নানা সামুদ্রিক পাখ-পাখালির ঝাঁক সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

জাতিসংঘ দপ্তরে ইরানের চার মনীষীর ভাস্কর্য স্থাপন
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জাতিসংঘ দফতরের সামনে ইরানের চার জন কবি ও মনীষীর ভাস্কর্য প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
ওই চার জন হচ্ছেন, আবু আলী সিনা, ওমর খৈয়াম, আবু রেইহান বিরুনি এবং যাকারিয়া রাজি। জাতিসংঘ অনেক আগে থেকেই ইরানের কবি, সাহিত্যিক ও মনীষীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আসছে। অনেক আগে থেকেই ইরানের বিখ্যাত কবি শেখ সাদী শিরাযির কবিতা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ দপ্তরের সদর দরজায় শোভা পাচ্ছে।

প্যারিস চিত্র প্রদর্শনীতে ইরানের যাযাবর
প্যারিসে চিত্র প্রদর্শনীতে ইরানের যাযাবরদের জীবনযাত্রা নিয়ে বিভিন্ন ছবি প্রদর্শনী দর্শকদের নজর কেড়েছে। চারদিনের এ চিত্রপ্রদর্শনী যাযাবরদের জীবন, সভ্যতা ছাড়াও বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়।
প্রদর্শনীটি শুরু হয় ২৮ মার্চ। প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘আশায়ের’, যেখানে যাযাবরদের জীবনযাত্রার থিম নিয়েই আয়োজন করা হয়।
প্রদর্শনী ছাড়াও এ আয়োজনে সম্মেলন, বিতর্ক, তথ্যচিত্র উপস্থাপনা, শৈল্পিক প্রদর্শনী ও জীবন্ত উপস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড সিভিলাইজেশন।

ফনিক্স্ উৎসবে ইরানি চলচ্চিত্র ‘মার্যা শরীফ’-এর সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ
সম্প্রতি মেল্বোর্নে অনুষ্ঠিত ফনিক্স্ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করে ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসান র্বাযিদেহ্র ‘মার্যা শরীফ্’ চলচ্চিত্র সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পুরস্কৃৃত হয়েছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ (২০১৭) পর্যন্ত এ চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য ইরানি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছিল অ১৫৭, ঊহঃৎ’ধপঃব, ঐড়সব এবং খরশব ধ ইধষষড়ড়হ.
‘মাযার শরীফ’ চলচ্চিত্রে ইতিপূর্বে আফগানিস্তানের মাযার শরীফ শহরস্থ ইরানি কনস্যুলেটে কর্মরত যে দশ জন ইরানি কূটনীতিক ও একজন সাংবাদিক তালেবানের হাতে নিহত হন তাঁদের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মেল্বোর্নের ফনিক্স্ চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ফিচার ফিল্ম ও তার নির্মাতাদেরকে সম্মানিত করা হয়। এ উৎসবের লক্ষ্য হচ্ছে সান্ড্যান্স, কান্ ও অন্যান্য প্রধান চলচ্চিত্র উৎসবের সম মানে একটি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কাহিনী লেখকদেরকে উৎসাহিত করা। এ উৎসবে বিশ্বের যে কোনো দেশে নির্মিত ফিচার ফিল্ম ও শর্ট ফিল্ম প্রদর্শন করা হয়ে থাকে।

ডব্লিউআইএনডি উৎসবে আলী আত্শানী সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পুরস্কৃত
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলিউডে অনুষ্ঠিত ডব্লিউআইএনডি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক জনাব আলী আত্শানী সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি তাঁর পরিচালিত ‘উইশ্বোন্’ চলচ্চিত্রের জন্য এ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ‘উইশ্বোন্’ চলচ্চিত্র এ উৎসবের সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী, সেরা সম্পাদনা, সেরা সহকারী অভিনেতা ও সেরা সিনেমাটোগ্রাফি পুরস্কারের জন্যও নির্বাচিত হয়।
‘উইশ্বোন্’ চলচ্চিত্রের গল্পে একজন বহিষ্কৃত কোচ- যাঁর ইতিপূর্বে বেশ কয়েক বছর আগে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল তাঁর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ এবং এ ক্ষেত্রে তিনি যে চড়াই-উৎরাই-এর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তা তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইরানি চলচ্চিত্র ‘উইশ্বোন্’ ইতিপূর্বে আরো অনেকগুলো পুরস্কার লাভ করে; এ সব পুরস্কারের মধ্যে তৃতীয় লন্ডন ইন্ডিপেন্ডেন্ট্ ফিল্মমের্কাস্ অ্যাসোসিয়েশন ফেস্টিভ্যাল্-এ অংশগ্রহণ করে বেস্ট্ সিনেম্যাটিক ফিল্ম হিসেবে প্রাপ্ত পুরস্কার এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে অনুষ্ঠিত ৩৫তম ফাজ্র্ চলচ্চিত্র ইৎসবের র্পাস্পেক্টিভ্ সেক্শনে প্রাপ্ত পুরস্কার অন্যতম।
উল্লেখ্য, ডব্লিউআইএনডি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব গত ২১ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি (২০১৭) অনুষ্ঠিত হয়।

এশিয়ান বিচ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হলো ইরান
এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের বিচ সকারে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান চ্যা¤িপয়ন হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৭-২ গোলে পরাজিত করে ইরান এ গৌরব অর্জন করে। মালয়েশিয়ার উত্তর-পূর্বে বাটু বুরুক বিচে গত ১১ মার্চ ২০১৭ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
ম্যাচের শুরুতেই আরব আমিরাতের খেলোয়াড়েরা বেশ চাপ সৃষ্টি করেন এবং ইরানি গোলপোস্টে একের পর এক হামলা চালান। তবে ইরানের গোলরক্ষক সাইয়্যেদ পেইমান হোসেইনি তা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেন। এর পরেই ইরানি খেলোয়াড়রা ঘুরে দাঁড়ান এবং খেলায় নেতৃত্ব নিয়ে নেন। শুরুটা হয় মোসলেম মেসিগারের মাধ্যমে। তিনি প্রথম গোল করে ইরানি দলকে এগিয়ে নেন।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে হোসেইনি আবারো গোল করে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান।
এর কিছুক্ষণ পর ইরানি দলের অধিনায়ক তীব্র একটি শর্ট নেন তবে তা সামান্যর জন্য লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হয়। অবশ্য, ইরানের খেলোয়াড়রা এখানেই থেমে থাকেন নি। আরব আমিরাত দলের বিরুদ্ধে পাওয়া একটি পেনাল্টি থেকে আরো একটি গোল করেন ইরানের মোহাম্মাদ আলী মোখতারি।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলার শুরুতে আমিরাতের কামাল আলী সুলায়মানি গোল করার চেষ্টা করেন কিন্তু তা সফল হয় নি বরং অল্প সময়ের ব্যবধানে ইরানি খেলোয়াড়রা চতুর্থ গোল করে ব্যবধান আরো বাড়ান।
পরে ইরান আরো তিনটি গোল করে। এর জবাবে আরব আমিরাতের খেলোয়াড়রা মাত্র দুটি গোল সক্ষম হন।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্কি টুর্নামেন্টে ইরানি অ্যাথলেটদের ৬টি পদক লাভ
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ গ্যাংওন্ প্রেভিন্সিয়াল্ গভর্নর কাপ কোরিয়া স্কি মাউন্টেনীয়ারিং চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্কি মাউন্টেনীয়ারগণ একটি স্বর্ণপদক সহ মোট ছয়টি পদক জয় করেছেন।
ইরানি প্রতিযোগী আবদুর রহমান ক্বায্যাক্ দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়-পর্ববতময় ও বন-জঙ্গলপূর্ণ গ্যাংওন্ এলাকায় পুরুষদের জুনিয়র গ্রুপে একক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তার প্রতিযোগীদেরকে পরাজিত করে স্বর্ণপদক জয় করে।
এছাড়া পুরুষদের একক রেস্ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইরানি প্রতিযোগী আবূল ফায্ল্ সভেহী একটি ব্রোঞ্জপদক লাভ করেন। অন্যদিকে নারীদের একক রেস্ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইরানি প্রতিযোগী তারানা রেযায়ী তাঁর দেশের জন্য আরো একটি ব্রোঞ্জপদক জয় করেন।
এ টুর্নামেন্টে ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত ভার্টিক্যাল্ রেস্ প্রতিযোগিতায় ইরানি টীমের সদস্যরা একটি রৌপ্যপদক ও দু’টি ব্রোঞ্জপদক জয় করেন।
দু’দিনব্যাপী চতুর্থ গ্যাংওন্ প্রোভিন্সিয়াল্ গভর্নর কাপ কোরিয়া স্কি মাউন্টেনীয়ারিং চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা গত ১১ মার্চ (২০১৭) শুরু হয় এবং ১২ মার্চ সমাপ্ত হয়। এতে স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাথলেটগণ ছাড়াও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান, চীন, জাপান, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিযোগিগণ অংশগ্রহণ করেন।

২০১৭ এশিয়া কাপ তীরন্দায প্রতিযোগিতায় ইরানের পুরুষ টীম রানার্স-আপ্
সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত ২০১৭ এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড্ র‌্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট, স্টেজ-২ এবং ওয়ার্লড্ গেম্স্ ২০১৭ ওরোক্লো আর্চারী কোয়ালিফিকেশন প্রতিযোগিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্মিলিত পুরুষ তীরন্দায টীম রানার্স্-আপ্ হয়েছে।
ইরানের সম্মিলিত পুরুষ তীরন্দায টীম্ ফাইন্যাল রাউন্ডে মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে ভারতের কাছে হেরে যায়। প্রতিযোগিতায় ভারতীয় টীম পেয়েছে ২৩১ পয়েন্ট এবং ইরানি টীম পেয়েছে ২৩০ পয়েন্ট।
এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ইরানের সম্মিলিত পুরুষ তীরন্দায টীমের সদস্যগণ ছিলেন মাজীদ গে¦ইদী, ইসমাঈল ‘আবেদী ও ওমিদ্ ত্বাহেরী। ইরানি টীম মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুরের টীমকে হারিয়ে ভারতের সাথে প্রতিযোগিতার জন্য ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় এবং ফাইনাল প্রতিযোগিতায় রানার্স-আপ্ হয়।
অন্যদিকে এ প্রতিযোগিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মহিলা তীরন্দায টীম চতুর্থ স্থানের অধিকারী হয়।
২০১৭ এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড্ র‌্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট, স্টেজ-২ এবং ওয়ার্লড্ গেম্স্ ২০১৭ ওরোক্লো আর্চারী কোয়ালিফিকেশন প্রতিযোগিতা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে গত ১৯ মার্চ (২০১৭) শুরু হয় এবং ২৬ মার্চ সমাপ্ত হয়।

বিশ্বে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সারিতে ইরানের রয়েছে ১৩টি; বিদেশি শিক্ষার্থী ৫২ হাজার
ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনা করছেন ৫২ হাজার বিদেশি ছাত্র। ইসলামি এই দেশটির বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপমন্ত্রী হুসাইন স’লার অমোলি এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ৫২ হাজার বিদেশি ছাত্রের মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ছাত্র ইরানের বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের আওতায় রয়েছেন; আর অবশিষ্ট বিদেশি ছাত্ররা আল মুস্তাফা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়াশুনা করছেন।
হুসাইন স’লার অমোলি আরও জানিয়েছেন, রয়টার্সের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী ইরানের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়। অথচ আন্তর্জাতিক জরিপ অনুযায়ী ২০১৩ সালে ইরানের কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চমানের বা উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ধরা হতো। গত বছরে অর্থাৎ ২০১৬ সালে ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথভাবে প্রায় ২৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।
কয়েকদিন আগে ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী মুহাম্মাদ ফারহাদি বলেছিলেন, স্কুপাস ও আইএসআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিজ্ঞান গবেষণার দিক থেকে ইরানের অবস্থান বিশ্বে ১৬তম এবং এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে ও মুসলিম বিশ্বে ইরানের অবস্থান প্রথম।

স্থানীয়ভাবে তৈরি বহুমুখী নতুন হেলিকপ্টার উন্মোচন করল ইরান
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান স্থানীয়ভাবে তৈরি নতুন একটি হেলিকপ্টার উন্মোচন করেছে। সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই এ হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যাবে।
গত ৭ মার্চ ২০১৭ ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন দেহকানের উপস্থিতিতে সাবা-২৪৮ হেলিকপ্টার আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। ইরান’স হেলিকপ্টার রেনোভেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস কো¤পানি বা (পিএএনএইচএ)-এর সহযোগিতায় দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ হেলিকপ্টারের নকশা তৈরি এবং নির্মাণ করেছে।
দেহকান মাঝারি ওজনের দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট আট যাত্রী বহনে সক্ষম নতুন এ হেলিকপ্টার সকলের কাছে উন্মুক্ত করেন। তিনি বলেন, এটি মালামাল ও যাত্রী পরিবহন এবং কল্পিত শত্রুর অবস্থান পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ কাজে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া, সাবা-২৪৮ হেলিকপ্টার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বা জরুরি উদ্ধার এবং ত্রাণ কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
দেহকান আরো বলেন, হেলিকপ্টারের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে এটিতে আধুনিক নেভিগেশন প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, এটি মাত্র একটি ইঞ্জিনের ওপর ভিত্তি করে কার্যক্ষমতা চালাতে পারবে, মসৃণ অ্যারোডায়নামিক নকসা ব্যবহার করার কারণে এটি উচ্চ নিরাপত্তা এবং গতিস¤পন্ন, কম শব্দ ও ক¤পনবিশিষ্ট এবং সর্বোচ্চ ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য-ক্ষমতাস¤পন্ন।
আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে এ হেলিকপ্টার অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বিক্রি করা হবে বলেও জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেহকান।

বিগত ইরানি বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে
গত ২১ মার্চ (২০১৭) সমাপ্ত বিগত ১৩৯৫ ইরানি বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ পূর্ববর্তী ইরানি বছরের তুলনায় শতকরা ৪ দশমিক ৩৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৩৯৫ ইরানি বছরে ইরানের বৈদেশিক বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৭৬১ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার। এর মধ্যে রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলার এবং আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৬৮ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার। ফলে ঐ বছরে দেশের বাণিজ্যিক উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার।
উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী ১৩৯৪ ইরানি বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৩৯৬ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার। অর্থাৎ ১৩৯৫ ইরানি বছরে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বৈদেশিক বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ৩৪৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার বৃদ্ধি পায়।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তেল-বহির্ভূত পণ্য রফতানির পরিমাণ উপর্যুপরি বিগত দুই বছরে আমদানির তুলনায় বেশি হয়েছে।
গত ইরানি বছরে (১৩৯৫) ইরানি পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ ছিল চীন; চীন ঐ বছর ইরান থেকে ৮৩৭ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে। এর পরে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমীরাত (ইউএই); এ দেশটি গত ইরানি বছরে মোট ৭৪৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার মূল্যের ইরানি পণ্য আমদানি করে। গত ইরানি বছরে ইরানি পণ্যের অন্যান্য বড় আমদানিকারক ছিল : ইরাক (৬১১ কোটি ১০ লক্ষ ডলার), তুরস্ক (৩২৪ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার) ও দক্ষিণ কোরিয়া (২৮৭ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার)। ঐ বছর চীন, সংযুক্ত আরব আমীরাত (ইউএই), ইরাক ও দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃক ইরানের তেল-বহির্ভূত পণ্য আমদানির পরিমাণ পূর্ববর্তী ইরানি বছরের তুলনায় যথাক্রমে শতকরা ৯ ভাগ, ৩ ভাগ, ২ ভাগ ও ৩.৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে গত ইরানি বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে সেসব দেশের মধ্যে সর্বপ্রধান দেশও ছিল চীন; চীন ঐ বছর ইরানে এক হাজার ৭৫ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করে। এর পরবর্তী অবস্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমীরাত (ইউএই); এ দেশটি গত ইরানি বছরে ইরানে ৬৪০ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করে। এর পরবর্তী অবস্থানের দেশগুলো ছিল যথাক্রমে : দক্ষিণ কোরিয়া (৩৪৬ কোটি ডলার), তুরস্ক (২৭৩ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার) এবং জার্মানি (২৫৩ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার)। ঐ বছরে চীন, সংযুক্ত আরব আমীরাত (ইউএই), দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও জার্মানি থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ শতকরা হারের বিচারে যথাক্রমে ২.৬ ভাগ, ১৭.৫ ভাগ, ৬ ভাগ, ৮.৩ ভাগ ও ২৯.২ ভাগ বৃদ্ধি পায়।

ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি
বিগত ১৩৯৫ ইরানি বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য সমূহের উৎপাদন পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ন্যাশন্যাল্ ইরানিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি (এনআইপিসি)-এর ডিরেক্টর জনাব আলী মোহাম্মাদ বোসাক্ব্যাদে জানান, ঐ বছরে দেশে পেট্রোক্যোমিক্যাল পণ্য সামগ্রীর মোট উৎপাদন ছিল পাঁচ কোটি টন- যা ওজনের বিচারে এ যাবতকালের মধ্যে দেশে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য সামগ্রীর সর্বোচ্চ পরিমাণ উৎপাদন এবং তা পূর্ববর্তী ইরানি বছরের তুলনায় শতকরা ৮ ভাগ বৃদ্ধি নির্দেশ করছে। তিনি আরো জানান যে, একই বছরে দেশে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যসামগ্রীর অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পরিমাণ পূর্ববর্তী ইরানি বছরের তুলনায় শতকরা ১০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ন্যাশন্যাল্ ইরানিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি (এনআইপিসি)-র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) র্মাযিয়াহ্ শাহ্-দায়ী বলেন যে, বিগত ইরানি বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য সামগ্রীর উৎপাদন সূক্ষ্মভাবে হিসাব করলে এর প্রকৃত পরিমাণ পাঁচ কোটি দশ লক্ষ টনে দাঁড়াবে। তিনি আরো জানান যে, ইরানি বছর ১৩৯৫ শেষ হবার এক সপ্তাহ আগে গত মার্চ মাসের (২০১৭) মাঝামাঝি সময়ের হিসাব অনুযায়ী ঐ বছরে ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য সামগ্রী রফতানির পরিমাণ পাঁচ কোটি ২০ লাখ টনে দাঁড়াবার কথা যার মূল্য হচ্ছে ৮৫০ কোটি ডলার।

ইরানি গবেষকগণের অ্যান্টি-ক্যার্ন্সা ড্রাগ উৎপাদন
ইরানি গবেষকগণ ল্যাবরেটরি সিন্থেসিস্-কে উচ্চতর মাত্রায় অপটিমাইজেশন ও অ্যাকটিভ্ ইনগ্রেডিয়েন্ট দ্বারা শিল্পোৎপাদন মাত্রায় অ্যান্টি-ক্যান্সার ড্রাগ উৎপাদনে সফলতার অধিকারী হয়েছেন।
এতদসংক্রান্ত গবেষণার প্রকল্প নির্বাহী ৩০তম আন্তর্জাতিক খারিয্মী পুরস্কার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী ড. খাশিয়ার কারীমীয়ান্ বার্তা সংস্থা মেহ্র্ নিউজ্কে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ইন্টারন্যাশন্যাল্ কমিশন্ অব্ হারমোনাইযেশন্ (আইসিএইচ) অনুযায়ী ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাকটিভ্ ইনগ্রেডিয়েন্টস্ উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত মান বজায় রেখে ‘সিন্থেসিস্ অব্ অ্যান্টি-ক্যান্সার ফার্মাসিউটিক্যাল্ অ্যাকটিভ্ ইনগ্রেডিয়েন্টস্’ প্রকল্পের কাজ আঞ্জাম দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও আমরা স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী তিনটি ভ্যালিডেশন প্যাকেজ উৎপাদন করেছি এবং আইসিএইচ-এর বিধিমালার সাথে সঙ্গতি রেখে এ তিনটি পণ্যের প্রতিটির জন্য মেডিক্যাল রেকর্ড (ড্রাগ্ মাস্টার ফাইল্ -ডিএমএফ্) সংরক্ষণ করেছি।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা ভারতে অ্যান্টি-ক্যার্ন্সা ফার্মাসিউটিক্যাল্ অ্যাকটিভ্ ইন্গ্রেডিয়েন্টস্ রফতানির জন্য ঐ দেশটির সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।

কৌশলগত নয়া ড্রোন ও প্রশিক্ষণ বিমান প্রদর্শন
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৫ এপ্রিল নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি নতুন প্রশিক্ষণ বিমান ‘কাওসার’ এবং কৌশলগত ড্রোন ‘মোহাজের-৬’ এই প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করেছে। ইরানের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সাফল্য সংক্রান্ত একটি প্রদর্শনীতে এটি তুলে ধরা হয়। এ ছাড়াও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি খাতে ইরানের আরও কিছু সাফল্যও এ প্রদর্শনীতে শোভা পায়।
তেহরানে ইরানিয়ান হেলিকপ্টার সাপোর্ট অ্যান্ড রিনিউয়াল বা আইএইচএসআরসি এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি এ প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।
এতে ‘মোহাজের-৬’ নামের কৌশলগত ড্রোন, ‘নাসির’ নামের জাহাজবিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান থেকে বিমানে নিক্ষেপযোগ্য ‘ফাকুর’ ক্ষেপণাস্ত্রও এই প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা হয়েছে।
প্রদর্শনীতে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন দেহ্কান বলেন, ‘কাওসার’ এবং ‘কাহ্হার এফ-৩১৩’ জঙ্গি বিমান তৈরির মাধ্যমে ইরান ভারী বিমান তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, নিজস্ব প্রযুক্তিতে জেট বিমানের ইঞ্জিন তৈরির পরিকল্পনাও ঘোষণা করেন তিনি।

ইরানের খারাজে টিউলিপ উৎসব
ইরানের খারাজের চামরান পার্কে চলছে টিউলিপ উৎসব। ১৫ এপ্রিল এ উৎসব শুরুর পর শত শত মানুষকে তা বিমোহিত করছে। ৩৮টি ভিন্ন রংয়ের ৩ লাখ ২০ হাজার টিউলিপ প্রস্ফুটিত হয়ে আছে এ উৎসবে। এবার এধরনের উৎসব ৫ম বারের মতো আয়োজন করা হয়েছে। ২১ এপ্রিল স্থায়ী ছিল এ উৎসব।

ইরানে ধূলিঝড়ে প্রাচীন শহরের উন্মোচন
ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কেরমান প্রদেশের ফারাজে শক্তিশালী এক ধূলিঝড়ে প্রাচীন এক শহরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। প্রবল ধূলিঝড়ে বালু উড়ে যাওয়ার পর মাটির নিচে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে। অন্তত ৫ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে সেখানে ঐতিহাসিক স্থাপনার অস্তিত্ব মিলেছে।
গত ৫ এপ্রিল খবর অনলাইন ফারাজের গভর্নর গোলামরেজা নেজাত-খালেকির বরাত দিয়ে জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকাটি ঘিরে রেখেছে। প্রতœতত্ত্ববিদরা সেখানে গিয়ে মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর ফলে তাঁরা জানতে পারবেন মাটির নিচে লুপ্ত ওই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর বয়স কত।
এমনিতেই ইরানের কেরমান প্রদেশে অনেক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের স্থান হিসেবে এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রাচীন বাজার, মসজিদ, শহর, সরাইখানা দেখতে কেরমানে পর্যটকরা সারাবছরই গমন করে থাকেন।

ইরানের কৌতুক অভিনেতা আরেফ লোরেস্তানি আর নেই
ইরানের কৌতুক অভিনেতা আরেফ লোরেস্তানি মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান। গত দুই দশক ধরে তিনি তার অভিনয়ের জন্যে দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।
১৯৯৮ সালে লোরেস্তানি ‘মিসসেলেনিয়া ৭৭’ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। ওই নাটকে একজন দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশ কর্মকর্তার অভিনয় করে দর্শকদের মাঝে তিনি ব্যাপক সাড়া ফেলেন। এরপর ‘বিটার কফি’ নাটকে অভিনয় করে তিনি নন্দিত হন। এরপর ‘দি ম্যারেজ সাপার’, ‘ইকুয়েশন’, ‘সিলেকশন’ ও ‘মানি অ্যান্ড নেদা’ নাটকে অভিনয় তাকে দ্রুত সফলতা এনে দেয়।

নওরোজ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির বাণী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং দরূদ রাসূলুল্লাহ (সা.), তাঁর বংশধর ও তাঁর সাহাবিগণের প্রতি।
আনন্দঘন নওরোজ উপলক্ষে মহান ইরানি জাতি, দেশের বাইরে অবস্থানরত ইরানি নাগরিক এবং এতদঞ্চলের সেসব জাতি, যাঁরা নওরোজ পালন করেন, শহীদদের পরিবারবর্গ, যুদ্ধাহত, আত্মত্যাগী, যুদ্ধফেরত ও মুক্তিপ্রাপ্ত! আপনাদের সবার প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা, মোবারকবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিশেষ করে যাঁরা এ মুহূর্তে জনগণ ও সমাজের খেদমতে, সীমান্ত প্রহরায়, চিকিৎসা সেবায় ও ত্রাণ তৎপরতা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকার কারণে যে মুহূর্তে আপন আপন পরিবার ও প্রিয়জনদের কাছে থাকার কথা, সে মুহূর্তে দেশ ও জাতির খেদমতে নিয়োজিত, সেসব প্রিয়জনদের প্রতি ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।

এ বছরের ঈদে নওরোজ বিশেষ বরকতপূর্ণ। কারণ, এ বছর পূত-পবিত্রা হযরত ফাতেমা আতহার (আলাইহাস সালাম) এর পবিত্র জন্মদিন একই সময়ে হওয়ায় তার সাথে আসমানি রহমত ও খোদায়ী বরকতের সংযোগ হয়েছে। ইনশাআল্লাহ বছরের শেষ পর্যন্ত সহমর্মিতা, একতা, একাত্মতার বন্ধনে, চেষ্টা ও কর্মতৎপরতার ছায়াতলে আমাদের প্রিয় দেশকে উন্নতশির রাখার পথে আমাদের পদযাত্রা অব্যাহত রাখব।

আমাদের কাছে নওরোজের বার্তা হলো, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করার বার্তা। নওরোজের বার্তা আমাদের জন্য বিকশিত হওয়া ও প্রাণ উচ্ছ্বলতার বার্তা। এই বছরটিতে, যে বছর বীরত্বের বছর, নির্বাচনের বছর; এ বছর অতীতের বছরগুলোর চেয়ে অধিক হারে নওরোজ ও প্রকৃতি থেকে প্রাণ উচ্ছ্বলতা, সহমর্মিতা ও বিকশিত হওয়ার শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করতে হবে।

১৩৯৫ (ফারসি) সাল ছিল ‘প্রতিরোধ, পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অর্থনীতির বছর। একইভাবে তা পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়নের বছর। এই দু’টি উপলক্ষ একে অপরের পাশাপাশি আমাদের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে।

আমি এখানে প্রিয় কৃষক ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো কর্তব্য মনে করছি, যাঁরা কৃষি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবং গম উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে আমাদের গর্বিত করেছেন এবং সমগ্র জাতিকে আনন্দিত করেছেন। আর নিজেদের খাবার দস্তরখানের জন্যও অধিক বরকত বয়ে এনেছেন। আপনাদের চেষ্টার কারণে, গমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য বিক্রি করার কারণে সরকার গম ক্রয় খাতে ১৫ হাজার বিলিয়ন তুমান (ইরানি মুদ্রা) প্রিয় কৃষকদের কাছ থেকে আদায় করেছে।

প্রিয় শ্রমিক, শিল্প নির্মাতাগণ, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, আমাদের শিল্প উৎপাদনে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। কোনো কোনো পণ্যে আমরা গেল বছরের চেয়ে দ্বিগুণ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। ব্যাংকসমূহের প্রচেষ্টায় ২৪ হাজার অর্ধ সমাপ্ত শিল্প ইউনিট অথবা চালু ছিল না এমন অনেক ইউনিট আলহামদু লিল্লাহ সচল হয়েছে। আর এটি প্রতিরোধের অর্থনীতির বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রমাণ বহন করে।

আমি তেল শিল্পের ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, তাঁদের বিস্ময়কর চেষ্টা ও উদ্যোগের মাধ্যমে তাঁরা তেল ও তরল গ্যাস উৎপাদন দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

আমরা তেল কূটনীতির মাধ্যমে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের প্রচেষ্টায় তেল ও তরল গ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমাদের অধিকার আদায় করার শামিল।

এসব প্রচেষ্টার পাশাপাশি মহামান্য রাহবরের পক্ষ হতে ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিশ বছরের অর্থনৈতিক লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে যে নির্দেশনামা দেয়া হয়েছিল, ১১ বছর পর গেল বছর আমরা সেই ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রায় উপনীত হতে সক্ষম হয়েছি।

আমি এখানে চিকিৎসক সমাজ ও নার্সদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, আপনারা চিকিৎসা সেবাকে শহরের বাইরেও নিয়ে গেছেন। আমাদের জনগণ বর্তমানে খুব অল্প খরচে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছে।

শিক্ষক সমাজ, বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দ ও জ্ঞানীগুণি মহল, যাঁরা আমাদের গর্বের প্রতীক, আপনাদের প্রচেষ্টায় আমরা সকল দেশের মধ্যে প্রাগ্রসর হয়ে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে উন্নত সকল দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। আমি আপনাদের প্রতি প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি।

আপনারা যাঁরা শরীরচর্চার অঙ্গনে আছেন এবং যাঁরা শিল্পী, আপনারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও দেশের অভ্যন্তরে নিজ নিজ প্রচেষ্টায় জাতীয় জীবনে যে গৌরব বয়ে এনেছেন, তার জন্য আপনাদের প্রতি আমি মোবারকবাদ জানাচ্ছি। নারীর প্রতিও, একজন নারী যিনি অলিম্পিকে পদক অর্জন করেছেন তার জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এসবকিছুই ছিল ১৩৯৫ সালে (ফারসি সাল) আমাদের জনগণের জন্য আনন্দের উপলক্ষ।

অবশ্য ১৩৯৫ সালে আমাদের অপূর্ণতা, তিক্ততা ও সমস্যা অনেক ছিল। ট্রেন দুর্ঘটনা, প্লাস্কো ভবনে অগ্নিকা-, কোনো কোনো প্রদেশে ধূলিঝড়, বন্যা এবং কয়েকটি অঞ্চলের প্রিয় জনগণকে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে আর বিপ্লবের দীর্ঘদিনের বন্ধু আয়াতুল্লাহ হাশেমি রাফসানজানির ইন্তেকাল প্রভৃতি এর মধ্যে শামিল। তবে আপনারা জনগণ তার ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছেন। আপনারা সর্বত্র আপনাদের উপস্থিতির স্বাক্ষর রেখেছেন। আপনাদের সহমর্মিতা ও একাত্মতা এবং জানাযা অনুষ্ঠানসমূহে আপনাদের বীরত্বপূর্ণ উপস্থিতির মাধ্যমে আপনারা দুঃখ ও বেদনা দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদেরকে একে অপরের দুঃখের সাথি হতে হবে। একে অপরের পাশে থাকতে হবে, যাতে উন্নতশির ইরানকে চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হই।

নতুন বছর হবে আমাদের প্রিয় জাতির জন্য অধিকতর অগ্রগতির বছর। আগামী বছর হবে আমাদের যুবকদের জন্য অধিকতর কর্মসংস্থানের বছর। আমাদেরকে আরো বেশি চেষ্টা চালাতে হবে। আমাদের অপূর্ণতাগুলো পুষিয়ে নিতে হবে।

গেল বছর মুদ্রাস্ফীতি রোধ করার জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে যাকিছু আমরা অর্জন করেছি, তা গত ২৫ বছরে নজিরবিহীন ছিল। আমাদেরকে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্বারা তা অব্যাহত রাখতে হবে।

আমরা গেল তিন বছরে ১১তম সরকারের আমলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বেতন ভাতা বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে বেশি হারে নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। এর অর্থ এই যে, মানুষ অধিকতর শান্তি ও সুখী জীবন উপভোগ করতে পারবেন।

১৩৯৫ সালে যেমন তেমনি ১৩৯৪ সালেও আমাদের তেল-বহির্ভূত রফতানির পরিমাণ আমাদের আমদানির চেয়ে বেশি ছিল। এখানে আমাদের সকল উদ্যোক্তা ও সকল রফতানিকারকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত মনে করছি। কারণ, তাঁরা আমাদের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন, এখনো আনছেন। আমাদেরকে এই পথচলা অব্যাহত রাখতে হবে।

আগামী বছর আমাদের জনগণ সাইবার স্পেসকে জ্ঞানচর্চা, তথ্য সরবরাহ, আয় উপার্জন ও কর্মসংস্থান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আরো বেশি কাজে লাগাতে পারবেন। এটি ছিল ১১তম সরকারের উদাহরণ দেয়ার মতো একটি প্রচেষ্টা। আমরা এই পথচলা অব্যাহত রাখব।

যেভাবে ওয়াদা করা হয়েছিল সেভাবে গত বছর নাগরিক অধিকারের সনদ প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর আপনাদের সহযোগিতায় সে সনদ কার্যকর ও বাস্তবে পরিণত করতে হবে। মানুষের সম্মানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। মানবমর্যাদার প্রতি সবাই যেন যত্নবান হই সে দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

নতুন বছর হবে পরিবহনের উন্নয়নের বছর। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রেও। আমরা পাঁচটি প্রদেশকে রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসব। আকাশ পথে পরিবহন ও নৌপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও। আর বিভিন্ন দেশের সাথে ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রেও।

নতুন বছরে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন আমাদের সামনে রয়েছে। তাতে আমাদের উপস্থিতি অর্থবহ করার জন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা চালাতে হবে। আমরা সবাই যেন সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ, সুস্থ প্রতিযোগিতা ও আইনসঙ্গত নির্বাচনের বিষয়টিকে সামনে রেখে কাজ করে যাই।

আশা করি, আমাদের প্রিয় দেশ এই নতুন বছরে এবং আগামী বছরগুলোতে বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। ইরানের প্রিয় ও উন্নতশির জনগণ অধিকতর ঐক্য, সংহতির মাধ্যমে এবং আরো অধিক অর্থনৈতিক উৎকর্ষ নিয়ে তাঁদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে পারবে।

জাতির সেবকগণ আরো অধিকহারে জনগণের খেদমত আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবেন।

ওয়াস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
[সংক্ষেপিত]

নওরোজ উপলক্ষে রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর বাণী

بسم‌الله‌الرّحمن‌الرّحیم
বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম

یا مقلّب القلوب و الابصار، یا مدبّر اللّیل و النّهار، یا محوّل الحول و الاحوال، حوّل حالنا الی احسن الحال.
হে অন্তরসমূহ ও চক্ষুসমূহের পরিবর্তনকারী! হে রাত ও দিনের আবর্তনকারী! হে পরিস্থিতি ও অবস্থাসমূহের পটপরিবর্তনকারী! আমাদের অবস্থাকে সুন্দর অবস্থায় পরিবর্তন করে দাও।

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلی فاطِمَةَ وَ اَبیها وَ بَعلِها وَ بَنیها.
‘হে আল্লাহ! হযরত ফাতেমা, তাঁর পিতা, তাঁর স্বামী ও তাঁর সন্তানদের ওপর রহমত নাযিল কর।’ (আওয়ালেমুল উলুম, ১১ খণ্ড, পৃ. ১৪)

হযরত ফাতেমা যাহরা সিদ্দিকায়ে কুবরা (তাঁর ওপর আল্লাহর পক্ষ হতে শান্তি বর্ষিত হোক) এর বরকতময় জন্মদিন এবং নওরোজ উপলক্ষে আপনারা, সকল সম্মানিত স্বদেশবাসীর প্রতি মোবারকবাদ জানাচ্ছি। হে প্রিয় দেশবাসী! মহান ইরানি জাতি! প্রিয় তরুণ সমাজ! হে সর্বস্তরের জনগণ! আপনাদের সবার ঈদ মোবারক হোক। বিশেষ করে শহীদগণ, যুদ্ধাহত পঙ্গু ও আত্মত্যাগীদের প্রতি এবং ঐ সকল জাতির প্রতি, যাঁরা নওরোজের ঈদের সাথে পরিচিত আছেন এবং তা পালন করেন, আপনাদের সবার প্রতি ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।

এই সুযোগ দানের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাচ্ছি যে, তিনি প্রিয় জাতির উদ্দেশে নওরোজের শুভেচ্ছা জানানোর আরো একবার সুযোগ দিয়েছেন। আশা করি, সুন্দর, বরকতপূর্ণ, মোবারক ও জনগণের জন্য কল্যাণ ও নিরাপত্তাসমৃদ্ধ একটি বছর ইরানি জাতির সামনে অপেক্ষায় আছে। নতুন ১৩৯৬ বর্ষ ইনশাআল্লাহ ইরানি জাতি ও দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য একটি আনন্দের বছর হবে। সকল ইরানি পরিবার, প্রিয় জনগণ এই বছরটিতে, এই মুহূর্তে যার সূচনা হয়েছে, আশা করি সবাই আল্লাহর রহমত ও বরকতের মধ্যে শামিল হবেন।
যে বছরটি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিল, অর্থাৎ ১৩৯৫ সাল, যদি তার একটি মূল্যায়ন করতে চাই, তা হলে বলতে হবে যে, অন্যান্য বছরের মতো এই বছরটিতেও আনন্দের উপলক্ষ আছে, দুঃখ-বেদনারও অভিজ্ঞতা আছে। আনন্দ ও বেদনা বলতে জাতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ই বিবেচ্য, ব্যক্তি পর্র্যায়ের কোনো বিষয় এখানে উদ্দেশ্য নয়। গেল বছরে আমাদের আনন্দের বিষয় যেমন ছিল, তেমনি দুঃখ-বেদনাও ছিল। আমাদের আনন্দ ছিল জাতির সম্মান ও মর্যাদার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আনন্দ। এগুলো হলো, জাতীয় নিরাপত্তা, ইরানি জাতির মধ্যে তারুণ্যদীপ্ত মনোবল, দেশের সর্বত্র সর্বব্যাপী ঈমানদারসুলভ তৎপরতা।

ইরান ও আমাদের প্রিয় জাতির মর্যাদা ও সম্মান বিগত ৯৫ সালে বছরের শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত বলবৎ ও দৃশ্যমান ছিল। আমাদের শত্রুরা দুনিয়ার সর্বত্র ইরানি জাতির শক্তিমত্তার কথা, ইরানি জাতির ভাবমূর্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছে। ইরানি জাতি এ বছরে সর্বক্ষেত্রে ও সকল অঙ্গনে নিজের স্বরূপ প্রমাণিত করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পক্ষ হতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি যে একবার অসম্মান দেখানো হলো, তাতে আত্মমর্যাদায় বলিয়ান, প্রাণ উচ্ছ্বল ও সাহসী মনোবলে উজ্জীবিত জনগণ ২২ বাহমানের দিন (অর্থাৎ বিপ্লব বিজয়ের বার্ষিকীর দিনে) তার জবাব দিয়েছে। রমযানুল মোবারক মাসে, কুদ্স দিবসের দিনে, জনগণের বিশাল সমাবেশ এই দেশের স্বরূপ ও লক্ষ্যসমূহ সমগ্র দুনিয়ার সামনে সপ্রমাণিত করেছে।

এতদঞ্চলে তথা আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিরাজমান তরঙ্গবিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে দেশের নিরাপত্তা ছিল ইরানি জাতির জন্য এক বিরাট ও উল্লেখযোগ্য সূচক। আজকের দিনে আমাদের আশেপাশে, যেসব দেশ আমাদের প্রতিবেশী, পূর্ব থেকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের দেশ এবং উত্তর-পশ্চিমের দেশগুলো, সবখানে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। এতদঞ্চল নিরাপত্তাহীনতার শিকার। কিন্তু ইরানি জাতি আল্লাহর শোকর যে, সারা বছরব্যাপী একটি স্থায়ী নিরাপত্তার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

তারুণ্যদীপ্ত মনোবল, যার দিকে আমি ইঙ্গিত করেছি, তা সারা দেশে হাজার হাজার তরুণ দলের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে আহরিত তথ্য ও সরেজমিনে পরিদর্শনের ভিত্তিতে আমি অর্জন করেছি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা থেকে নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তৎপরতা, শরীরচর্চা ও ক্রীড়াঙ্গনে উপস্থিতি, উৎপাদন ও উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার চাকায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের তরুণরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নতুন নতুন কাজ ও আবিষ্কার উদ্ভাবনী যোগ্যতা উপস্থাপন করছে এবং তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় হিসেবে গড়ে তুলছে।

তাদের ঈমানদারসুলভ যে তৎপরতার দিকে আমি ইঙ্গিত করেছি, তাতে আমি যা বোঝাতে চেয়েছি তা হলো, ধর্মীয় সভা সমাবেশ ও অনুষ্ঠানগুলোতে অত্যন্ত উদ্দীপনার সাথে তাদের সক্রিয় ও প্রাণবন্ত উপস্থিতি। পবিত্র ইমামগণ (আ.) সম্পর্কিত বিষয়াদি, ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষসমূহ, ইবাদত-বন্দেগি, এতেকাফসমূহ এবং পবিত্র রমযান মাসের সিয়াম সাধনা, আশুরার চল্লিশা উপলক্ষে দীর্ঘ পদযাত্রা, আশুরা তথা দশই মুহররমের শোকানুষ্ঠানসমূহে উপস্থিতি, এগুলো ছিল আমাদের দেশ ও জাতির জন্য আনন্দের ও অনুপ্রেরণাদায়ক বিষয়।

আমি গেল বছর- যে বছরটিকে আমরা ‘উদ্যোগ ও বাস্তব পদক্ষেপের বছর’ বলে নামকরণ করেছিলাম, (সেই বছরে) সম্মানিত রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, উদ্যোগ ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি সংস্থা গঠন করুন। তাঁরা তা গঠন করেছেন। সৌভাগ্যবশত তাঁরা বেশ ভালো কাজ করেছেন। তার রিপোর্টও আমাদেরকে দিয়েছেন।
প্রতিরোধের অর্থনীতি একটি প্রকল্পসমষ্টি ছিল। এই প্রকল্পসমষ্টিকে যদি নিছক অর্থনীতির নামে গ্রহণ করা হয়, তাতে হয়ত কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে না। আমি এর প্রতিষেধক এর মধ্যেই দেখি যে, এই প্রকল্পসমষ্টিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ‘কী পয়েন্টে’ ভাগ করতে হবে। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ‘কী পয়েন্ট’ এর জন্য একটি সময়সীমা বরাদ্দ করতে হবে। তারপর দায়িত্বশীল কর্মকতা, উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের জনগণের কাছে আবেদন জানাতে হবে, ‘আসুন আমরা আমাদের সমস্ত মনোযোগ ঐ নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ ‘কী পয়েন্ট’ এর ওপর নিবদ্ধ করি।’ আমার মতে এই গুরুত্বপূর্ণ ‘কী পয়েন্ট’ বলতে বুঝায় উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, কর্মসংস্থান, বিশেষ করে যুবক শ্রেণির কর্মসংস্থান। এগুলোই হচ্ছে মূল ‘কী পয়েন্ট’। আমরা যদি এই দুটি ‘কী পয়েন্ট’ এর ওপর (উৎপাদন ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান তথা যুব শ্রেণির কর্মসংস্থান) আমাদের চিন্তা ও তৎপরতাকে কেন্দ্রীভূত করতে পারি, আর এর ভিত্তিতে কাজগুলোকে শ্রেণিবিন্যস্ত করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করি, তাহলে অনুমান করা যায় যে, কাজগুলো বিরাট পরিমাণে সম্মুখে অগ্রসর হবে এবং উল্লেখযোগ্য ও অনুভবনীয় সাফল্য অর্জিত হবে।

আমি আমার বক্তব্যে ইনশাআল্লাহ এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ও ‘কী পয়েন্ট’ এর যে যে বৈশিষ্ট্য হতে পারে সে সম্পর্কে পরবর্তীকালে ব্যাখ্যা দেব। কাজেই আমি এই বছরের স্লোগান হিসেবে ‘প্রতিরোধের অর্থনীতি, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান’ নির্ধারণ করতে চাই। অর্থাৎ প্রতিরোধের অর্থনীতি হচ্ছে সামগ্রিক শিরোনাম। এরপর উৎপাদন ও কর্মসংস্থান। এই সামষ্টিক বিষয়টির প্রতি আমাদের সবার মনোযোগ নিবদ্ধ করা উচিত। দেশের সম্মানিত ও প্রিয় দায়িত্বশীলবর্গের কাছে আমার ও জনগণের দাবি হচ্ছে, এই দুটি বিষয়ের ওপর তাঁরা কেন্দ্রীভূত হোন। কাজগুলো তাঁরা পূর্ব পরিকল্পনার ভিত্তিতে আঞ্জাম দিন। ইনশাআল্লাহ তাঁরা বছর শেষে কাজের ফলাফল সম্পর্কে জনগণের কাছে রিপোর্ট দেবেন।
আমি আশা করি, আপনারা সবার জন্য হযরত বাকিয়াতুল্লাহ ইমাম মাহদী (তাঁর জন্য আমাদের প্রাণ উৎসর্গিত) এর দয়াদৃষ্টি ও শহীদানের পবিত্র রূহ ও মহান ইমামের রূহানি দোয়ার বরকতে সামনের বছরটি হবে আনন্দময়, নিরাপত্তা ও জনকল্যাণসমৃদ্ধ। একান্ত আশা, আমরা আগামী বছরটিকে সেভাবেই অতিক্রম করতে পারব।
ওয়াস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
[সংক্ষেপিত]