All posts by dreamboy

ফাতেমা (সা) এর ব্যক্তিত্ব এবং নারীর মর্যাদা বিষয়ক হাদিস

১) বেহেশ্‌ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে।
২) প্রত্যেকেরই দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যের গোড়াপত্তন ঘটে মায়ের গর্ভে।
৩) মা-ই হলেন তার সন্তানের ইহকালীন এবং পরকালীন সৌভাগ্য নিশ্চিত করার  প্রশিক্ষক।
৪) যখনি বেহেশতের ঘ্রাণ নেওয়ার ইচ্ছে জাগে তখনি ফাতেমাকে শুঁকি।
৫) আমার মেয়ের নাম রাখা হয়েছে ফাতেমা, কেননা আল্লাহ তাকে এবং তার
ভক্তদেরকে দোযখের আগুন থেকে দূরে রেখেছেন।
৬) আমি হলাম বৃক্ষ, ফাতেমা সেই বৃক্ষের শাখা, আলী সেই বৃক্ষের সার, হাসান এবং  হোসাইন সেই বৃক্ষের ফল এবং আহলে বাইতের অনুরাগীরা হলেন বেহেশ্‌তি সেই  বৃক্ষের পাতা।
৭) যে ফাতেমাকে তার উপযুক্ত মর্যাদাসহ চিনতে পেরেছে, সে শবে-কদরকে উপলব্ধি করতে পেরেছে। আর তাঁর ফাতেমা নামকরণের কারণ হলো কোনো সৃষ্টিই তাঁর অন্তর্দৃষ্টির পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না।
৮) যে-ই তাকে বিরক্ত করবে,সে যেন আমাকেই বিরক্ত করলো,আর যে আমাকে  জ্বালাতন করলো সে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হলো।
৯) ফাতেমা আমার দেহের অঙ্গ,আমার চোখের মণি এবং আমার হৃদয়ের ফল।
১০) ফাতেমা (সা)’র অন্তর থেকে শুরু করে সকল অস্থি-মাংস এককথায় শরীরের
সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহ ঈমান ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন,যেভাবে
পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে তিনি আল্লাহর আনুগত্যে নিমজ্জিত থাকেন।
১১) উত্তম নারীর জেহাদ হচ্ছে স্বামী সেবা।
১২) নফল নামায পড়া অবস্থায় যদি পিতা তোমাকে ডাকে তাহলে নামায ছাড়া যাবে  না, কিন্তু যদি তোমার মা তোমাকে ডাকে তাহলে নামায ছেড়ে দাও।
১৩) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের প্রতি অধিকতর দয়াশীল।
১৪) কিয়ামতের দিন সে-ই আমার বেশি নিকটবর্তী হবে যে তার স্বামী বা স্ত্রীর সাথে
সবোর্ত্তম মানবিক আচরণ করবে।
১৫) মুমিন ব্যক্তি তার স্ত্রীর পছন্দের খাবার খায় আর মোনাফেকের স্ত্রী তার স্বামীর
পছন্দের খাবার খায়।

সংগ্রহ: রেডিও তেহরান

হাদিসে রাসূল (সা.)

১) রাসূলে খোদা (সা) বলেছেনঃ বেহেশ্‌ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৫৪৩৯, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )

২) ইমাম সাদেক (আ) বলেছেনঃ এক লোক রাসূলের খেদমাতে এসে আরজ করলো-হে রাসুল! খেদমত করবো কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর? রাসূল বললেন-তোমার মায়ের। লোকটি আবারো জিজ্ঞেস করলো তারপর কার? নবীজী বললেন-তোমার বাবার। ( আল-কাফিঃ ৯/১৫৯/২,মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )

৩) রাসূলে কারিম (সা) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর,আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪ )

সংগ্রহ: রেডিও তেহরান

কোরআনের ব্যাখ্যা-১

সূরা আল আ’রাফের ১৯৭ ও ১৯৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلَا أَنْفُسَهُمْ يَنْصُرُونَ (197) وَإِنْ تَدْعُوهُمْ إِلَى الْهُدَى لَا يَسْمَعُوا وَتَرَاهُمْ يَنْظُرُونَ إِلَيْكَ وَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ (198)

“আর তোমরা তাঁকে ( তথা আল্লাহকে) বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাক তারা না তোমাদের কোন সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে, না নিজেদের সাহায্য করতে পারে।” (৭:১৯৭)

“আর (হে নবী!), তুমি যদি তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) সুপথে আহবান কর, তবে তারা তা কিছুই শুনবে না। আর তুমি তো তাদের দেখছ যেন তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, অথচ তারা (প্রকৃতপক্ষে) কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।” (৭:১৯৮)

আগের কয়েকটি আয়াতে মুশিরকদের ও তাদের উপাস্যগুলোর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার পর এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, মুশরিকরা আল্লাহ ছাড়া অন্য যেসব মনগড়া খোদার উপাসনা করছে- তা মূর্তি বা মানুষ যা-ই হোক না কেন তাদের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেই। ফলে তারা কাউকে কোনো বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম নয়। বরং তারা নিজেরাই সব সময় নানা বিপদ-আপদের শিকার হচ্ছে। তাই কেন মুশরিকরা তাদের খোদা মনে করছে ও আসল খোদা তথা আল্লাহকে ভুলে আছে?  এরপর আল্লাহ রাসূল (সা.)-কে বলছেন, তুমি তোমার দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে বিভ্রান্তদের সতর্ক করছ ও সত্যের বাণী তাদের কানে পৌছে দিচ্ছ। কিন্তু তাদের সবাই তোমার এইসব আহ্বানে সাড়া দেবে বলে আশা কর না। তাদের বেশিরভাগই নিজ নিজ মনগড়া কাঠ ও পাথরের খোদাদের মতই শুনতে ও দেখতে পায় না এবং সত্যের দাওয়াত শুনে নির্বিকার বা উদাসীন চিত্তে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের এই দৃষ্টি বোধ ও উপলব্ধিহীন। তারা তোমার কথা শুনলেও বাস্তব অবস্থা হচ্ছে বধিরের মত এবং তারা তোমাকে দেখতে পেলেও বাস্তবে তারা অন্ধ।

 এ দুই আয়াতের দু’টি শিক্ষা হল:

এক. যিনি খোদা বা উপাস্য অন্যকে সাহায্য করার মত ক্ষমতা তার থাকতে হবে যাতে অন্যরা তার কাছে আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু আল্লাহ ছাড়া মনগড়া খোদাগুলো নিজেরাই নিজেদের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম নয়।

দুই. চোখ ও কান থাকা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। অনেক মানুষ অন্ধ ও বধির হওয়া সত্ত্বেও সত্যকে গ্রহণ করেন। আবার বহু মানুষ সচল চোখ ও কান থাকা সত্ত্বেও সত্যকে অস্বীকার করেন।

 

সূরা আল আ’রাফের ১৯৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ (199)

“(হে রাসূল! জনগণের সঙ্গে মেলা-মেশার ক্ষেত্রে) তুমি ক্ষমার পথ ও মধ্য-পন্থা অবলম্বন কর ( তথা তাদের ওজরগুলো গ্রহণ কর ও তাদের জন্য কঠোর হয়ো না) এবং সৎকাজের নির্দেশ দাও। আর  অজ্ঞ বা জাহেলদের উপেক্ষা কর।” (৭:১৯৯)

এ আয়াতে রাসূল (সা.)-কে ও তাঁর অনুসারীদের  সম্বোধন করে মহান আল্লাহ শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সব ধরনের  মানুষের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান উল্লেখ করেছেন।  তিনি বলছেন, তোমাদের সঙ্গে যারা খারাপ আচরণ করেছে তাদের ক্ষমা কর, প্রতিশোধ নিও না। সব সময়ই মানুষকে ভাল কাজের দিকে আহ্বান কর। আর যারা অজ্ঞতাপূর্ণ ও সংকীর্ণমনা আচরণ করে তোমার সঙ্গে তাদেরকেও মহানুভতা দেখিয়ে ক্ষমা কর।

অবশ্য এই নীতি ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, জনগণের অধিকার ক্ষমা করে দেয়ার এখতিয়ার সমাজের নেতাকেও দেয়া হয়নি। ইসলামী রাষ্ট্রের শত্রুদের মোকাবেলায়  তাকে কঠোর আচরণ করতে হবে যাতে জনগণের সম্পদ ও মর্যাদা শত্রুদের লালসার শিকার না হয়।

 

এ আয়াতের দু’টি শিক্ষা হল:

এক. কেউ নিজে সত বা ভালো মানুষ হওয়াই যথেষ্ট নয়। সমাজেও মানুষের মধ্যে ভালো গুণের বিস্তার ঘটাতে হবে ও অন্যদেরকে ভাল কাজ করার আহ্বান জানাতে হবে।

দুই.  যারা অক্ষর-জ্ঞানহীন তারাই অজ্ঞ নয়। যারা অযৌক্তিক ও অদূরদর্শী আচরণ করে তারাই অজ্ঞ।

 সূরা আল আ’রাফের ২০০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (200)

“আর (হে নবী!) যদি শয়তানের (সামান্যতম) প্ররোচনাও তোমাকে প্রলুব্ধ করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই তিনিই সর্বশ্রোত, সর্বজ্ঞ।” (৭:২০০)

এ আয়াতে রাসূল (সা.)-কে সম্বোধন করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় শয়তান আল্লাহর রাসূল (সা.)-কেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা কখনও ত্যাগ করেনি, যদিও মহান আল্লাহ তাঁকে সব ধরনের বিচ্যুতি ও ভুল-ত্রুটি থেকে রক্ষা করেছেন। এ আয়াত থেকে বোঝা যায় শয়তান সব সময়ই ক্রোধের আগুন প্রজ্জ্বলিত করে মানুষকে পরস্পরের প্রতি ক্ষমাশীল হতে বাধা দেয় এবং প্রতিহিংসা বা জিঘাংসার আগুন ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তাই এ আয়াতে আল্লাহ বলছেন: কখনও শয়তানের উস্কানী বা প্ররোচনাকে গ্রাহ্য করবে না, বরং ক্রোধের আগুন নিভিয়ে ফেলবে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে তাঁর ওপর ভরসা করবে। আর তাহলেই শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিরাপদ থাকবে।

 এ আয়াতের দু’টি শিক্ষা হল:

এক-শয়তানের কুমন্ত্রণা স্থায়ী ও অবশ্যম্ভাবী। তাই আল্লাহ এ ব্যাপারে বার বার মানুষকে সতর্ক করেছেন।

দুই- শয়তানের ফাঁদ থেকে আত্মরক্ষার জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা এবং তাঁর স্মরণ  বা জিকিরের আশ্রয় নেয়া জরুরি।

 

সূরা আল আ’রাফের ২০১ ও ২০২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ (201) وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ (202)

“যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে,  শয়তানের কুমন্ত্রণা সাথে সাথেই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তখনই তাদের চোখ খুলে যায়।” (৭:২০১)

“পক্ষান্তরে যারা ( আল্লাহকে ভয় করে না তথা) শয়তানের ভাই, তাদেরকে সে ক্রমাগত পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায় অতঃপর তাতে কোন শিথিলতা দেখায় না।” (৭:২০২)

রাসূল (সা.)-কে সম্বোধন-করা আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এ আয়াতে মুমিনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শয়তানের কুমন্ত্রণা সব সময়ই তাদেরকে ঘিরে রেখেছে, যাতে  যে কোনো এক পথে মুমিনকে কাবু করা যায়। কিন্তু মুমিন বা খোদাভীরু ব্যক্তিরা  শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করা মাত্রই আল্লাহকে স্মরণ করেন এবং আল্লাহ যে তাদের কাজ-কর্ম দেখছেন ও কথাবার্তা শুনছেন তাও তাদের মনে পড়ে। ফলে তারা পাপ এড়িয়ে চলেন। কিন্তু যারা খোদাভীরু নয় শয়তান তাদের সঙ্গে প্রতারক ভাইয়ের মত মিশে যায় এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেজে ক্রমেই তাদেরকে পাপাচার ও নোংরা কাজে জড়িয়ে ফেলতে থাকে। আর এ কাজে কোনো শৈথিল্য দেখায় না শয়তান।

 এ আয়াতের কয়েকটি শিক্ষা হল:

এক. মানুষ ও জিন শয়তানরা সব সময়ই অন্যদের বিভ্রান্ত করার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই আমাদেরকে সদা সতর্ক থাকতে হবে।

দুই. মুখে আল্লাহর নাম উচ্চারণ ও মনে মনে তাঁকে স্মরণ করলে মানুষ শয়তানের অনেক কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পায়।

তিন. মানুষের মধ্যে যদি খোদাভীতি না থাকে তাহলে শয়তান তাদের ভাই হয়ে যায় এবং তাদের সর্বনাশ করার লক্ষ্যে পথভ্রষ্ট করতেই থাকে। #

সংগ্রহ: রেডিও তেহরান

কোরআনের ব্যাখ্যা-2

সূরা আনফালের ৭৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ (73)

“যারা অবিশ্বাস ও কুফরি করেছে তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। যদি তোমরা তা না কর অর্থাত কাফেরদের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে আল্লাহর আদেশ মেনে না চল তাহলে দেশে অধর্ম ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।” (৮:৭৩)

পবিত্র কুরআন মানবজাতির প্রত্যেকটি বিষয়ের প্রতি দিক নির্দেশনা দিয়েছে। মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত। অবিশ্বাসী কাফেরদের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মুসলমানরা কি নীতিমালা গ্রহণ করবে-তার সবই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে। আগের কয়েকটি পর্বে আমরা এ দিকগুলো নিয়ে  আলোচনা করেছি। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ যদি তোমরা মেনে না চল তাহলে তোমাদেরকে বড় ধরনের সহিংসতা ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। কারণ অবিশ্বাসী কাফেররা ঐক্যবদ্ধ এবং তারা একে অপরের সহযোগী। আগের কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে, মুসলমানরা যেন কাফেরদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করাকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজেদের মধ্যকার সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক শক্তিশালী করার ওপর বেশি জোর দেয়।

এ আয়াত থেকে তাহলে আমরা এটা বুঝে নিতে পারি যে, কাফেরদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক এবং ঐক্যবদ্ধ। তাই মুসলমানরা নিজেরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে তাদেরকে মহা বিপর্যয় ও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এ ছাড়া মুসলমানদেরকে সব সময়ই এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে কাফেররা মুসলিম দেশ বা জাতির ওপর হামলা করার কোনো অজুহাত খুঁজে না পায়।

এই সূরার ৭৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَوَوْا وَنَصَرُوا أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ (74)

“যারা ঈমান এনেছে বা বিশ্বাস করেছে, ধর্মের জন্য হিজরত  করেছে, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে এবং যারা আশ্রয় দান করেছে তারাই প্রকৃত বিশ্বাসী, তাদের জন্য ক্ষমা ও মহান জীবিকা রয়েছে।” (৮:৭৪)

এই আয়াতটিতে একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুণরায় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, একজন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করতে এবং প্রয়োজন হলে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। আর তা না হলে তারা যেন অন্তত মুহাজিরদেরকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামরত মুজাহিদদেরকে সহায়তা করে। তবে এখানে এটা বলে রাখা দরকার যে, হিজরত এবং জিহাদ শুধু শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা সংগ্রাম করা নয়। ইসলাম ধর্ম জ্ঞান অর্জন বা জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রয়োজন হলে হিজরত করতে উতসাহ দিয়েছে। বঞ্চিত ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সাহায্যের জন্য হিজরত করাও জিহাদের অংশ। এসবই ঈমানের নিদর্শন বহন করে। তবে এটা অনস্বীকার্য যে, জিহাদ বা হিজরত করার শক্তি-সামর্থ সব মুসলমানের সমান নয়। কিন্তু মুহাজির ও মুজাহিদদেরকে অর্থ দিয়ে বা অন্যভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা প্রত্যেকের সমান দায়িত্ব।

এ ছাড়া, ইসলামের প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব সকল মুসলমানের ওপরই সমানভাবে ন্যস্ত। সামাজিকভাবে এসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালিত হলে সেই সমাজে আল্লাহর বিশেষ রহমত নেমে আসে।

এই আয়াত থেকে আমরা এই শিক্ষা নিতে পারি যে, যে কোনো ভালো কাজই হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। তা না হলে সে ভালো কাজের কোনো মূল্য নেই।

 

এই সূরার ৭৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَالَّذِينَ آَمَنُوا مِنْ بَعْدُ وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا مَعَكُمْ فَأُولَئِكَ مِنْكُمْ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ (75)

“যারা পরে ঈমান এনেছে, ধর্মের জন্য গৃহত্যাগ করেছে ও তোমাদের সঙ্গে থেকে সংগ্রাম করেছে তারাও তোমাদের অন্তর্ভূক্ত এবং আত্মীয়গণ আল্লাহর বিধানে একে অন্য অপেক্ষা অধিক হকদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত।” (৮:৭৫)

আগের আয়াতে জিহাদ, হিজরত এবং মুহাজির ও মুজাহিদদেরকে সাহায্য সহযোগিতার তাতপর্য ও গুরুত্ব বর্ণনার পর এই আয়াতে বলা হচ্ছে, এটা মনে করার অবকাশ নেই যে, এই নির্দেশ এবং মূল্যবোধ শুধুমাত্র ইসলামের প্রাথমিক যুগের জন্য প্রযোজ্য। বরং ইসলামের এই বিধান ও মূল্যবোধ চিরন্তন এবং তা সব সময়ের জন্যই। যখনই কেউ ইসলামের ডাকে সাড়া দিয়ে সত্য দ্বীনকে গ্রহণ করবে তখনই সে ইসলামের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবে।

ইসলামের প্রথম যুগের মুজাহিদরা মুসলমানদের কাছে এবং আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে সম্মানিত ও মর্যাদাবান। কারণ আল্লাহর নবী যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন তখন নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও এই মুজাহিদরাই তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপরও মর্যাদার বিষয়টিকে ইসলাম কারো জন্য সীমাবদ্ধ করে রাখেনি। তাই কাফের বা মুশরিক অবস্থা থেকে কেউ ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথেই সে অন্যান্য মুসলমানের সমান মর্যাদায় ভূষিত হবেন। #

সংগ্রহ: রেডিও তেহরান

মস্তিষ্কে ক্যান্সারের সঙ্গে মোবাইল ফোনের যোগসূত্র আছে : ইতালির আদালত

 ইতালির সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, “মস্তিষ্কে টিউমার সৃষ্টির সঙ্গে মোবাইল ফোন ব্যবহারের একটি যোগসূত্র রয়েছে।” নজির সৃষ্টিকারী এ রায়ের পথ ধরে আরো হাজার হাজার মামলা শুরু হতে পারে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

৬০ বছর বয়সী সাবেক ব্যবসায়ী ইননোসেন্টে মার্কোলিনি ওই মামলাটি দায়ের করেন। মামলঅর আর্জিতে তিনি বলেন, “অতিমাত্রায় অর্থাত দিনে প্রায় ছয় ঘণ্টা করে ১২ বছর ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে তার মস্তিষ্কে টিউমার হয়েছে। ফলে তার মুখ-মণ্ডল আংশিকভাবে অবশ হয়ে গেছে।”

শুনানির পর ইতালির আদালত তার রায়ে বলেছে, “মস্তিষ্কে ক্যান্সারের সঙ্গে মোবাইল ফোন ব্যবহারের একটি সম্পর্ক আছে।” ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যানজিনো জিনো লেভিস আদালতে এ মামলার পক্ষে সাক্ষ্যে দিয়েছেন। তিনি এ রায়কে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “বিদ্যুত-চৌম্বকীয় তরঙ্গমালা ও টিউমার হওয়ার মধ্যে সম্পর্কের কথা এ রায়ের মাধ্যমে মেনে নেয়া হলো।”

মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে নানাভাবে এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে আসছে এবং তাদের বক্তব্য প্রমাণ করার জন্য অনেক গবেষণায় তহবিলের যোগানও দিয়েছে বলে জানান তিনি। ওই অধ্যাপক আরো বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারে মস্তিষ্কে টিউমার হওয়ার আশংকা যে বাড়িয়ে দেয়, এ রায়ের মাধ্যমে সে কথাই প্রমাণিত হলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’ এর আগে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের তালিকায় মোবাইল ফোনের নাম লিপিবদ্ধ করেছে। অবশ্য এ তালিকায়,কফি এবং  কীটনাশকেরও নাম আছে। সূত্র: আইআরআইবি