All posts by dreamboy

‘মহাবিশ্ব অস্থিতিশীল: হাজার কোটি বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে’

শীর্ষস্থানীয় এক বিজ্ঞানী বলেছেন,আমরা যে মহাবিশ্বে বসবাস করি তার আয়ু সীমিত এবং আজ থেকে এক হাজার কোটি বছর পরে তা হয়ত তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

 আমেরিকার ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের বাটাভিয়ার ফার্মি জাতীয় ত্বরণ গবেষণাগার বা ন্যাশনাল অ্যাক্সেলেটর ল্যাবরেটিসের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ জোসেফ লিককেন এ কথা বলেছেন।

 মার্কিন বিজ্ঞান উন্নয়ন বিষয়ক এক সম্মেলনে এ সংক্রান্ত  নিজ পেপার উপস্থাপনের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় এ কথা জানান তিনি। বিশ্বের সর্ববৃহত এবং সবচেয়ে শক্তিশালী কণা ত্বরণ যন্ত্র ইউরোপের লার্জ হার্ডন কলাইডর নিয়ে যে বিজ্ঞানী দলটি কাজ করছেন সে দলে অন্যতম সদস্য জোসেফ লিককেন।

 গত বছর হিগস বোসন কণা আবিষ্কারের পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে বিস্তারিত ভাবে কাজ করতে যেয়ে মহাবিশ্ব ধ্বংসের এ তত্ত্ব বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। মনে করা হয়ে বস্তুর ভর নির্ধারণ করে হিগস বোসন কণিকারাজি।

 জোফেস লিখখেন বলেন, আমরা পদার্থবিদ্যার যতোটুকু জেনেছি তার ভিত্তিতে যদি সরাসরি হিসাব-নিকাষ করি তবে  একটি দুঃসংবাদই স্পষ্ট হয়ে ওঠে; আর সেটি হলো যে মহাবিশ্বে আমরা বসবাস করছি তা মারাত্মক ভাবে অস্থিতিশীল। আজ থেকে হাজার কোটি বছরের মধ্যে এ মহাবিশ্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

 তিনি আরো জানান, মহাবিশ্বের কোথা ক্ষুদ্র বুদ্বুদ আকারে বিকল্প একটি ‘বিশ্বের’ উদয় হবে এবং তাই সম্প্রসারিত হয়ে আমাদের মহাবিশ্বকে ধ্বংস করে দেবে।

 এ হিসাব বের করার জন্য হিগস বোসনের ভর এক শতাংশ হলেও সঠিক ভাবে জানার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অব-আণবিক কণিকারাজির ভরও জানতে হবে।

 অবশ্য হিগস বোসন কণিকারাজি মহাবিশ্বে প্রলয় শুরুর অনেক আগেই পৃথিবী নামের আমাদের এই পরিচিত সুনীল গ্রহটি ধ্বংস হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন,  আমাদের এই সৌরমণ্ডলীকে নির্ভর করতে হয় সূর্যের ওপর এবং আজ থেকে সাড়ে পাঁচশ কোটি বছরের মধ্যে দানবাকৃতি লোহিত নক্ষত্রে রূপান্তরিত হয়ে নিজ মণ্ডলীসহ চারপাশের সব ধ্বংস করে দেবে সূর্য ।

রেডিও তেহরান

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান বিশ্ববাসীর বিস্ময় সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে : বিবিসি

ইরানের ‘কাভোশগার’ বা অনুসন্ধানী নামক রকেটযোগে মহাকাশে বানর পাঠানোর খবর  বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

জার্মান টেলিভিশন ডয়েচেভেলে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরানের বিজ্ঞানীরা বানরবাহী এই রকেটটিকে ‘অত্যন্ত সফলভাবে’ ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচুতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।

বিবিসি টেলিভিশনও বলেছে, ইরানের বিজ্ঞানীরা এর আগেও বিস্ময় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ,   ইরান ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ‘উমিদ’ বা ‘আশা’  নামক উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছিল।  ইসলামী ইরানের কর্মকর্তারা ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে  মহাকাশে মানুষ পাঠানোর আশা করছেন – এ কথা উল্লেখ করে বিবিসি আরো বলেছে,  পাশ্চাত্যের  ব্যাপক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তেহরান বিশ্ববাসীর বিস্ময় সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে।

রাশিয়া টুডে টেলিভিশনও এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরানের বিজ্ঞানীরা বানরবাহী রকেটটিকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচুতে অত্যন্ত সফলভাবে পাঠিয়ে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে  আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। আর এই রকেটটিতে থাকা বানরটি জীবিত অবস্থায় আবারও ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসায় ইরান সহজেই মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতির পথ সুগম করতে পারবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সও তেহরান থেকে পাঠানো এক রিপোর্টে বলেছে, মহাকাশ গবেষণায় ইরানের রকেট উতক্ষেপণের এই অসাধারণ সাফল্য  অন্যান্য ক্ষেত্রেও   দেশটির সক্ষমতা বা সাফল্য তুলে ধরছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থাও তেহরান থেকে পাঠানো এক রিপোর্টে বলেছে, ইরানের বিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২০ কিলোমিটার উঁচুতে বানরবাহী  রকেট পাঠিয়েছে ও তা জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে।  আর এরফলে ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশটি বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করল।  ইরান এর আগেও মহাকাশে জীবিত প্রাণী পাঠানোর প্রকল্পে সফল হয়েছিল, একথা উল্লেখ করে  ফরাসি বার্তা সংস্থা আরো বলেছে, এই সাফল্য মহাকাশকে করায়ত্ত করার ক্ষেত্রে ইরানের প্রথম পদক্ষেপ এবং ‌ দেশটির অন্যান্য পরীক্ষার জন্যও পথ দেখিয়ে দিল এই সাফল্য। একই ধরনের মন্তব্য করেছে রুশ টেলিভিশন।

  উল্লেখ্য, মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি হিসেবে পিশগাম বা অভিযাত্রী নামের বায়ো-ক্যাপসুলে করে গতকাল (সোমবার) মহাকাশে বানর পাঠিয়েছে ইরান।  বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র জন্মদিন ও ইসলামী বিপ্লবের ৩৪ তম বিজয়-বার্ষিকীর প্রাক্কালে এ সাফল্য অর্জন করল ইরান। এর মাধ্যমে ইরান মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে সাফল্যের আরেকটি চূড়া অতিক্রম করল। বিশ্বের হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশ মহাকাশে জীবন্ত প্রাণী পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে ইরানের সর্বশেষ এই সাফল্যের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে  দেশটির চিরশত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইল। ইরান মহাকাশ প্রযুক্তিকে  পরমাণু অস্ত্র বহনের মত সামরিক কাজে ব্যবহার করতে পারে বলে মার্কিন ও ইহুদিবাদী কর্মকর্তারা দাবি করে আসছেন। কিন্তু ইসলামী ইরান এসব দাবি নাকচ করে দিয়ে বলছে, তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটিতে স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়াও দেশটি মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৫৯ সালে ২৪ টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ কমিটি।

সংগ্রহ: রেডিও তেহরান

ইরানের আবহাওয়া

 যদিও ইরান বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী এবং এখানকার মরুদ্যানসমূহ ও পাহাড়-পর্বতের পাদদেশসমূহ মনোলোভা রং-বৈচিত্রের অধিকারী, তা সত্ত্বেও দেশের উত্তর ও পশ্চিম এলাকায় সুউচ্চ পর্বতমালার অবস্থানের কারণে কাম্পিয়ান সাগর, ভূ-মধ্যসাগর ও পারস্য উপসাগরের আর্দ্র হাওয়া পর্বতমালা ঘেরা ইরানের মধ্যবর্তী বিশাল এলাকায় কোনোই প্রভাব বিস্তার করে না। এর ফলে ইরানের বিভিন্ন এলাকার আবহাওয়া বিভিন্ন ও বিচিত্র ধরনের। এ কারণেই এসব পর্বতমালার বাইরের পাদদেশের আবহাওয়া আর্দ্র, আর ভিতরের পাদদেশ শুষ্ক। কাম্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ তীরবর্তী ইরানী এলাকার আবহাওয়া সমভাবাপন্ন এবং এখানে বিশেষ করে কম্পিয়ানের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত গীলান প্রদেশে বৃষ্টির পরিমাণ দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। এখানে বার্ষিক গড়পরতা তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পশ্চিম ইরানের আবহাওয়া ভূমধ্যসাগরীয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া আধা মরু ধরনের যার ওপরে গরমের প্রভাব রয়েছে। এ অঞ্চলের উপত্যাকাসমূহে গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম পড়ে। কিন্তু একই সময় সেখানকার পার্বত্য এলাকার আবহাওয়া ভারসাম্যপূর্ণ। আর শীতকালে ঐসব উপত্যকার আবহাওয়া ভারসাম্যপূর্ণ এবং পার্বত্য এলাকায় তখন প্রচণ্ড শীত পড়ে।

দেশের দক্ষিণ এলাকার সর্বত্র আবহাওয়া আর্দ্র। তা সত্ত্বেও এখানে প্রচন্ড গরম। দেশের সর্বাধিক উষ্ণ এলাকা খুযেস্তান প্রদেশের তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত উঠে থাকে। এ এলাকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে গ্রীষ্মকালে খুবই গরম আর শীত কাল সমভাবাপন্ন। এখানে বিভিন্ন মওসুমের তাপমাত্রার মধ্যে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য অনেক। দেশের উত্তরে আলবোর্য পর্বতমালা ও পশ্চিমাঞ্চলে যগরোস পর্বতমালার অবস্থানের কারণে মধ্য ইরানের বিশাল অঞ্চলের আবহাওয়া শুষ্ক এবং এখানে বিরাট বিরাট মরুভূমি রয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে বলা যেতে পারে যে, ইরানে তিন ধরনের আবহাওয়া রয়েছে :

১. মরুময় ও আধা-মরুময় আবহাওয়া;

২. পার্বত্য এলাকার সমভাবাপন্ন আবহাওয়া;

৩. কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী সমভাবাপন্ন আবহাওয়া।

 সূত্র : ড. মোহাম্মাদ মাহ্দী তাওয়াসসোলী প্রণীত আজকের ইরান, জনাব নূর হোসেন মজিদী কর্তৃক অনূদিত।

ইরানের ভৌগোলিক পরিচিতি

 আজকের ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ইতিহাসের বৃহত্তর ইরানের অংশবিশেষ মাত্র। শুধু তা-ই নয় ভৌগোলিকভাবে যা ইরান মালভূমি তারও মাত্র শতকরা ৬৩.৪ ভাগ নিয়ে বর্তমান ইরান গঠিত যার আয়তন ১৬ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৯৫ বর্গ কিলোমিটার। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আয়তন এশিয়া মহাদেশের আয়তনের ২৭ ভাগের এক ভাগ এবং বিশ্বের স্থলভাগের ৯০ ভাগের একভাগ। ইরানের অবস্থান উত্তর গোলার্ধে-২৫ থেকে ৪০ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৪৪ থেকে সাড়ে ৬৩ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। এ থেকে সুস্পষ্ট যে, ভূপৃষ্ঠে ইরানের অবস্থান নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। উচ্চতর অক্ষাংশে সাধারণত সারা বছর শীতল আবহওয়া থাকলেও ইরান মালভূমি হওয়া সত্ত্বেও ইরানের আবহওয়া তদ্রূপ নয়। আবশ্যই ইরানের কতক এলাকায় শীতকাল খুবই ঠাণ্ডা, তবে তা যতটা না সংশ্লি­ষ্ট অক্ষাংশ অবস্থানের কারণে, তার চেয়ে অনেক বেশি একারণে যে, ঐ সব জায়গা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক বেশি উঁচু। ইরানের উত্তর ও দক্ষিণ দুই দিকে সমুদ্রের অবস্থান। ইরানের উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর যা আসলে এক বিশালায়তন হ্রদ; ইরানীদের নিকট এটি দারইআয়ে খাযার (খাযার সাগর) এবং দারইয়ায়ে মাযান্দারান (মাযান্দারান্ সাগর) নামে পরিচিত। আর ইরানের দক্ষিণে রয়েছে পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগর (আরব সাগর)। এভাবে ইরান উত্তরে ও দক্ষিণে বিশাল উপকূল ও পানিসীমার অধিকারী। ইরানের প্রতিবেশী দেশসমূহ হচ্ছে পশ্চিমে ইরাক ও তুরস্ক, উত্তরে আযারবাইজান ও তুর্কমেনিস্তান এবং পূর্বে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান।

ইরান হচ্ছে এমন একটি দেশ যা মানব জাতির সুপ্রাচীন ও প্রাগৌতিহাসিক সভ্যতার অধিকারী এবং অপর কতক সুপ্রাচীন ও প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার মাঝখানে অবস্থিত। ইরানের এক দিকে অদূরেই চীন ও সিন্ধু সভ্যতার অবস্থান, অন্য দিকে বাইনান্নাহরাইন (দুই নদীর মধ্যবর্তী দেশ মেসোপটেমিয়া বা ইরাক) এবং নীল নদ কেন্দ্রিক (মিশরীয়) সভ্যতার অবস্থান। একারণে মানব সভ্যতা গঠন ও বিকাশ বিস্তারের ইতিহাসে ইরান সব সময়ই একটি উন্নততর ও সুবিধাজনক অবস্থানের অধিকারী ছিল। তেমনি পূর্বের দুই সভ্যতা ও পশ্চিমের দুই সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগ ও পারস্পারিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার কাজটিও সব সময়ই ইরানের মধ্য দিয়েই হয়েছে যা ইরানের ভূমিকা, মর্যাদা ও অবস্থানের গুরুত্ব অধিকতর বৃদ্ধি করেছে। তৈল আবিষ্কার ও উত্তোলন শুরু হবার পর ইরানের সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে নতুন অর্থনৈতিক অবস্থানও যুক্ত হয়েছে, যা ইরানের গুরুত্বকে আরো বৃদ্ধি করেছে এবং ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশের তুলনায় অধিকতর গুরুত্বের অধিকারী করেছে।

ইরানের সর্বোত্তর জায়গা হচ্ছে অরারাত পর্বতের পাদদেশ এবং সর্ব দক্ষিণ জায়গা হচ্ছে গাভাতার, সর্ব পশ্চিমের জায়গা তুরস্ক সীমান্তবর্তী বযারগান এবং সর্ব পূর্বের জায়গা পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কুহাক। ইরানের সর্বপশ্চিম ও সর্বপূর্ব স্থানদ্বয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান এক ঘণ্টা আঠারো মিনিট।

 

সূত্র : ড. মোহাম্মাদ মাহ্দী তাওয়াসসোলী প্রণীত আজকের ইরান, জনাব নূর হোসেন মজিদী কর্তৃক অনূদিত।

ইরানের বন্ধুর ভূমি

 ইরান হচ্ছে আল্লাহ তাআলার দেয়া অগাধ সম্পদ ও অপরিসীম সৌন্দর্যের আধারসমৃদ্ধ একটি দেশ। তবে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত যে কেবল সবুজ শ্যামলিমা ও হরেক রঙের ফুল দ্বারা শোভিত চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে, তা নয়; বরং রঙিন মাটি ও পাহাড়-পর্বত ইরানের যেকোন প্রান্তকেই রঙিন করে রেখেছে।

এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে, ইরান কোনো সমভূমি নয়; বরং একটি বন্ধুর ভূমি। ইরানের পাহাড়-পর্বতগুলো দক্ষিণ ইউরোপ ও এশিয়ার পাহাড়-পর্বতগুলো সৃষ্টি হওয়ার সম-সময়ে সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশি­ষ্ট বিজ্ঞানিগণের অনুমান। অর্থাৎ এখন থেকে ৫৭ কোটি বছর আগে তৃতীয় ভূতাত্ত্বিক যুগের শেষ দিকে ভূগর্ভস্থ গাতিশীলতা ও প্রকম্পনের ফলে এ সব পাহাড়-পর্বত তৈরি হয়েছে। তখন পাললিক শিলার ফাঁকে ফাঁকে গ্রানাইট পাথর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। বফাক, যানজন ও গোলপায়গানে এবং তাবাস ও ইয়ায্দের পথে সাদা ও গোলাপি গ্রানাইট পাথর এখনো মাথা উঁচু করে আছে।

ভূমির বন্ধুরতার দৃষ্টান্ত ইরানের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। অনেক জায়গাই দেখা যাবে বিশাল এলাকা জুড়ে সুউচ্চ পর্বতমালা, ঢালু পাদদেশ এবং সঙ্কীর্ণ উপত্যকা ও গিরিপথ, আবার অদূরেই সমভূমি ও মরুময় অঞ্চল। প্রকৃতপক্ষে ইরান ভূখণ্ডের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা পাহাড়-পর্বতে ঢেকে আছে। শত শত কিলোমিটার জুড়ে আলবোর্য পর্বতমালার অবস্থান যেন ইরানের উত্তরাংশে একটি সুউচ্চ দেয়াল তৈরি করে দিয়েছে। কেবল সুউচ্চ ও দুর্গম গিরিপথ হয়ে তা অতিক্রম করা যেতে পারে। তেমনি যগ্রোস্ পর্বতমালায় রয়েছে বহু উঁচু ও সমান্তরাল পাহাড়- যার মাঝে রয়েছে অত্যন্ত নিচু ও খাদসঙ্কুল উপত্যকা ও ঢালু পাদদেশ। এভাবে যগরোস্ পর্বতমালা ইরানের ভিতরকার এলাকাগুলোকে পারস্য উপসাগরের উপকূল থেকে আলাদা করে রেখেছে। কেবল আঁকাবাঁকা উপত্যকাসমূহ এবং লক্ষ লক্ষ বছরে সৃষ্ট পার্বত্য নদীসমূহের মধ্য দিয়েই এসব পাহাড়-পবর্ত অতিক্রম করা যেতে পারে।

দ্বিতীয় ভূতাত্ত্বিক যুগে ইরানের বিশাল অংশই বিশাল বিস্তৃত বনজঙ্গল, হ্রদ ও জলাভূমিতে আবৃত ছিল। এ বৃক্ষরাজির আচ্ছাদনের পরিণতিতেই বিশাল বিশাল কয়লার খনি তৈরি হয়েছে। আলবোর্যের যীর্অব্, তাম্শাক্ ও এলিকা এলাকা এবং কেরমানের হেজ্দাক পব্দনা ও কদামু এলাকায় এখনো তা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। তেমনি একই ভূতাত্ত্বিক যুগে ভূপৃষ্ঠে ফাটল সৃষ্টির মাধ্যমে আল্পাই পর্বতমালা সৃষ্টি হয় এবং গ্রানাইট পাথর ওপরে উঠে আসে। ইয়ায্দেহ শীরকুহ্ পর্বত এবং হামেদানের আল্ভান্দ পর্বত এধরনের গ্রানাইট পাথরে গড়া।

উক্ত ভূতাত্ত্বিক যুগের শেষে কেন্দ্রীয় ইরানের অনেক জায়গা, আলবোর্য পর্বতমালার অনেক পর্বত পানির নিচে চলে যায় এবং ইরানের কেন্দ্রীয় এলাকায় বহু বিশালায়তনের ফাটল ও ভঙ্গিল অবস্থা সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় ভূতাত্ত্বিক যুগে সেডিমেন্টের সাথে সালফেট পাথর মিশ্রিত হয়ে যায় এবং একটি রঙিন মিশ্রণের সৃষ্টি করে যা অর্থনৈতিক বিচারে খুবই গুরুত্বের অধিকারী। তৃতীয় ভূতাত্ত্বিক যুগের মাঝামাঝি সময়ে যগ্রোস্ পর্বতমালার সেডিমেন্টেশন থেকে ইরানে তামা ও দস্তার খনি তৈরি হয়। ইরানে অগ্নিগিরির লাভার এখনো যে মওজুদ রয়েছে তা থেকে জানা যায় যে, চতুর্থ ভূতাত্ত্বিক যুগে ইরানে অনেকগুলো অগ্নিগিরি ছিল।

 ইরানের বন্ধুরতার বিভাগ

            উচ্চতা এবং অঞ্চল ও পরিবেশের বিশেষ অবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে ইরানের বন্ধুর ভূমিকে নিম্নোক্ত কয়েকভাগে ভাগ করা যেতে পারে :

১. উত্তরের পর্বতমালা : এতে আলবোর্য পর্বতমালা, আযারবাইজানের পর্বতমালা এবং খোরাসানের পর্বতমালা অন্তর্ভুক্ত।

২. পশ্চিম ও দক্ষিণে পর্বতমালা। এতে যগরোস পর্বতমালা এবং উপকূলবর্তী এলাকার কম উচ্চতাবিশিষ্ট পাহাড়-পর্বত অন্তর্ভুক্ত।

৩. পূর্বাঞ্চলের পাহাড়-পর্বত।

৪. কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পর্বত।

৫. উপকূলীয় সমভূমিসমূহ।

৬. ভূখণ্ডের ভিতরকার নিচু জায়গাসমূহ (হ্রদ ও জলাভূমিসমূহ)।

         ইরানের পাহাড়-পর্বতসমূহ বিস্ময়কর ধরনের উঁচু। ইরানকে সাধারণত একটি মালভূমি বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু ইরানে মালভূমির ধারণা মালভূমি সম্বন্ধে ইউরোপীয় ধারণা থেকে স্বতন্ত্র।

            তেহরানের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১২০০ হতে ১৭০০ মিটার পর্যন্ত। হামেদানের উচ্চতা ১৮২০ মিটার, কেরমান শাহ্র উচ্চতা ১৬৩০ মিটার, শীরাযের উচ্চতা ১৬০০ মিটার এবং ইসফাহানের উচ্চতা ১৪৩০ মিটার। যাহেদান্ ও তাবরীয্ এবং আরো দশটি শহরের উচ্চতা ১৪০০ মিটার। এ দৃষ্টিকোণ থেকে, ভূগোলবিদগণ যে ইরানকে একটি উচুঁ মালভূমি বলে অভিহিত করেছেন তা সঠিক বলে মনে হয় না। কারণ, ইরানের মালভূমি একটি সমতল মালভূমি নয়। ইরানের দিগন্তে যে পাহাড়-পর্বত মাথা উঁচু করে আছে তা এক বিস্ময়কর ধরনের চমৎকার দৃশ্যের অবতারণা করেছে। এখানে এবড়ো থেবড়ো ও ভগ্ন গিরিশৃঙ্গ ফাটল ধরা সুউচ্চ পাহাড়, ধারালো পাথরের ফলা এবং ক্ষয়ে যাওয়া গম্বুজসদৃশ চূড়া প্রচুর সংখ্যায় চোখে পড়ে।

            উত্তর ইরানে আল্বোর্য পর্বতমালা কাস্পিয়ান সাগরের তীরে সুউচ্চ দেয়াল তৈরি করেছে। কেবল তিনটি গিরিপথ দিয়ে কোন মতে এ পর্বতমালা অতিক্রম করা চলে। আলবোর্য পর্বতমালার সর্বোচ্চ স্থান হচ্ছে দামাভান্দ। দামাভান্দ হচ্ছে একটি মৃত অগ্নিগিরি। এর বরফাবৃত চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৬৭১ মিটার উঁচু। আলবোর্য পর্বতমালায় আরো বেশ কয়েকটি চার হাজার মিটার উঁচু চূড়া রয়েছে। তেহরানের নিকটবর্তী কুহে তুচল্ (তুচল পর্বত) প্রায় এ পরিমাণেই উঁচু। আলবোর্য পর্বতমালার পর্বতসমূহ দেশের উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে এগিয়ে গিয়েছে এবং অরারাত পর্বতের মাধ্যমে আযারবাইজানের পর্বতসমূহের সাথে যুক্ত হয়েছে। অরারাত পর্বতের উচ্চতা সমূদ্র পৃষ্ঠ থেকে পাঁচ হাজার মিটার। বলা হয় যে, হযরত নূহ (আ.)-এর কিস্তি এ পর্বতের উপরেই স্থির হয় ও পানি নেমে যাওয়ার পর এর ওপরই আটকে যায়। আলবোর্য পর্বতমালা পূর্বদিকে খোরাসান পর্বতমালার সাথে মিলিত হয়েছে। খোরাসান পর্বতমালার উচ্চতা অপেক্ষাকৃত কম এবং এতে আরোহণ করা সহজতর। যগরোস্ পর্বতমালা পশ্চিম ইরানে অবস্থিত; এর উচ্চতা আলবোর্য পর্বতমালার তুলনায় কম। যগরোস্ পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গসমূহের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে চার থেকে সাড়ে চার হাজার মিটার।

            যগরোস্ পর্বতমালার পর্বতগুলোর অবস্থান এমন যে, এগুলোর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা খুবই কঠিন কাজ। এ পর্বতমালার দুই পাশে অবস্থিত আরাক ও শীরায শহরের মধ্যে  যাতায়াতের জন্য কোনো সরাসরি ও সোজা পথ নেই। এ কারণে এ দুই পাহাড়ের মধ্যকার ৫৫০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য হয় বিমানযোগে যাতায়াত করতে হবে, নয়তো ইসফাহান হয়ে আসা-যাওয়া করতে হবে।

            পারস্য উপ-সাগর ও ওমান সাগরের তীরবর্তী পর্বতগুলো সমান্তরাল এবং ক্রমান্বয়ে ঢালু হয়ে এক বিরাট উচ্চ মরুভূমির প্রান্তে এসে মিশেছে।

            বিমান থেকে দেখলে দেখা যাবে ইরানের দৃশ্য খুবই সুন্দর ও মনোলোভা, কিন্তু তা সত্ত্বেও ইতিহাসের সুদীর্ঘকালে সব সময়ই ইরানের ভিতরকার পথসমূহ অত্যন্ত দুর্গম ও দুরতিক্রম্য ছিল। সুখের বিষয় বর্তমানে ইরানের অভ্যন্তরে বহু নতুন সুপ্রশস্ত মহাসড়ক তৈরি করা হয়েছে। ফলে ইরানের সকল এলাকায়ই খুব সহজেই যাতায়াত করা যেতে পারে।

            ইরানের মাঝ বরাবর আরেকটি পর্বতমালা রয়েছে যা আলবোর্য পর্বতমালার সমান্তরাল। এ পর্বতমালাটি ‘কুহ্হয়ে মারকাযী’ (কেন্দ্রীয় পর্বতমালা) নামে সুপরিচিত। এ পর্বতমালার দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার কিলোমিটার যা যান্জান্ থেকে শুরু করে কেরমান্ পর্যন্ত বিলম্বিত। এ পর্বতমালায় অগ্নিগিরিসৃষ্ট বহু পর্বত রয়েছে। এসব পর্বতের গঠনপ্রকৃতি অপেক্ষাকৃত জটিলতর। এসব পর্বতের বেশির ভাগেরই উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে চার হাজার মিটার।

            উক্ত পর্বতমালার মাঝে একটি বিশালায়তন খোলা জায়গা রয়েছে। এর উত্তরাংশকে দাশ্তে কাভীর্ (মরুপ্রান্তর বা লবণ মরু) বলা হয়।  আগে এ জায়গাটি লোনা পানিপূর্ণ জলাভূমি ছিল। এটি হচ্ছে পাথর, বালি ও লবণে পরিপূর্ণ একটি মরুপ্রান্তর। এর দক্ষিণ অংশের নাম দাশ্তে লূত’ (লূত মরুভূমি)। এটিকে বালির মহাসমুদ্র বললে অত্যুক্তি হবে না।

            ইরানের অভ্যন্তরস্থ মরুভূমিসমূহের মোট আয়তন ৩ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার যা ইরানের মোট আয়তনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এ মরুপ্রান্তরসমূহ আলবোর্য পর্বতমালা, খোরাসান পর্বতমালা, কেন্দ্রীয় পর্বতমালা ও পূর্বাঞ্চলীয় পর্বতমালার মাঝখানে অবস্থিত।

            লূত মরুভূমিতে যেসব তৃণ, আগাছা ও উদ্ভিদ জন্মে তা খুবই পরিবর্তনশীল এবং এর বেশির ভাগ অংশেই কোনোরূপ উদ্ভিদ জন্মে না।

            লবণ মরু (কাভীরে নামাক) বালি ও পাথরে পরিপূর্ণ। এটি হচ্ছে ইরানের সর্বাধিক শুষ্ক অঞ্চল।

বছরের বিভিন্ন সময়ে ও দিনে-রাতে ইরানের বিভিন্ন অংশের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক। ইরানের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সত্তর ডিগ্রী ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রীর বহু নিচে।

 দামাভান্দ : ইরানের রূপকথার পর্বত

উত্তর ইরানের আলবোর্য পর্বতমালার সর্বাধিক সুন্দর ও মনোহর গিরিশৃঙ্গ দামাভান্দ। দামাভান্দ হচ্ছে এমন একটি পর্বত যা সর্বদাই তুষারে আবৃত থাকে এবং সারা বছরই সেখানে শীতকালের অবস্থা বিরাজ করে। বনু ইরানী রূপকথায় এবং মানব জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম বীরত্ব কাহিনী সম্বলিত মহাকাব্য ‘শাহ্নামা’য় (ফারসি উচ্চারণ ‘শাহ্নমে’) দামাভান্দ পর্বত বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ঢালূ হয়ে ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠে যাওয়া, অনেকটা গোলাকার ধরনের ও সুবিন্যস্ত পর্বত দামাভান্দের উচ্চতা সমুদ্রপ্রষ্ঠ থেকে ৫৭৭১ মিটার। গোটা ইতিহাসে দামাভান্দ ইরানীদের দৃঢ়তা ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসাবে গণ্য করেছে। ফারসি সাহিত্যে এ পর্বতের রয়েছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান।

            আকাশে যখন মেঘ না থাকে তখন দামাভান্দকে অনেক দূর থেকে দেখা যায়। ইমামযাদা হাশেম নামক পাহাড়সমষ্টির যেখানে পানি জমে আছে তার পানিসীমা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে দামাভান্দের প্রধান অগ্নিগিরির মুখ। দামাভান্দের মধ্যকার সবচেয়ে বড় গিরিপথ পোলভার নোওতল রেখা বরাবর চলে গেছে যার দৈর্ঘ্য ২৮ কিলোমিটার। দামাভান্দের সবগুলো গিরিপথের মোট আয়তন ৪০০ বর্গ কিলোমিটার।

            আকাশে যখন মেঘ না থাকে তখন দামাভান্দ চূড়াকে ঘিরে এক অনবদ্য দৃশ্যের অবতারণা হয়। দামাভান্দের চূড়া থেকে মোটামুটি পাঁচ-ছয়’শ মিটার নিচে গিরিশৃঙ্গকে ঘিরে একটি জলীয় বাষ্পের বলয় তৈরি হয় যা পরিষ্কার আকাশে বহুদূর থেকে চোখ পড়ে। এ জলীয় বাষ্প দেখতে অনেকটা মেঘের মতো মনে হয়। এছাড়া দামাভান্দ শৃঙ্গের চতুর্দিকে হলুদ রং দেখা যায়। এ হলুদ রঙের কারণ দামাভান্দ পর্বতের গঠনে গন্ধক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

            দামাভান্দের চতুষ্পার্শ হতে বেশ কয়েকটি খনিজ পানির ফোয়ারা বেরিয়ে ঝরনার আকারে প্রবাহিত হয়েছে। এসব খনিজ পানির ঝরনার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে লরিজন, গ্বালিআতুরা, মোহাম্মাদাবাদ, এমারাত্ ও আসাক্ এর ঝরনাসমূহ। এসব ঝরনার পানিতে সালফার ও ম্যাগনেসিয়াম মিশ্রিত রয়েছে, যে কারণে এ পানিতে গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, বিশেষ করে চর্মরোগে উপকারী।

 এক নজরে প্রকৃতি

            পাহাড়-পর্বত ও মরুভূমি ছাড়াও এক নজরে ইরানের প্রাকৃতিক দৃশ্য হচ্ছে রঙিন, আকর্ষণীয় ও মনোহারী। ইরান সফরকারীদের জন্য সম্ভবত সর্বাধিক আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চভূমি ও টিলার মধ্য দিয়ে গমনাগমন। উঁচু-নিচু অসমান ভূমি এবং বিভিন্ন রঙের মরুভূমি ও পাহাড়-পর্বতের মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে, বিশেষ করে চলার পথে কিছুক্ষণ পর পরই রঙের পরিবর্তন ক্লান্তিকে পর্যটকের কাছে ঘেঁষতেই দেয় না।

            উপত্যকার ঢাল বেয়ে নামতে গিয়ে পর্যটক তার চোখের সামনে বিভিন্ন রঙের মাটি ও বিভিন্ন রঙের মিশ্রণযুক্ত মাটি দেখতে পান। তার চোখের সামনে দিগন্তে ভেসে ওঠে একের পর এক সবুজ ও লাল পাহাড় অথবা লালাভ সবুজের সমারোহ। সহসাই এসবের মধ্য থেকে সফেদ ফেননিভ তুষারের সমুদ্র বেরিয়ে পড়ে অথবা আকাশ ফুড়ে কালো রঙের গিরিশৃঙ্গ বেরিয়ে আসে। পর্যটকের চোখের সামনে এমন সব রং ভেসে ওঠে যা থেকে মনে হতে পারে যে, এ হয়তো স্বপ্ন, এ রং হয়তো কাল্পনিক; মোলায়েম ক্রীম রং দেখে তার কাছে মনে হতে পারে যে, তার সামনে হয়তো কেউ একটি বিশালায়তন হরিণের চামড়া বিছিয়ে রেখেছে। এসব রং এবং মাটির উপাদানের সমন্বয়ের মধ্যে পাস্পারিক সম্পর্ক রয়েছে। যেসব পাহাড়ে চূড়া নেই বা পাথর নেই সেগুলো দেখতে সাধারণত মখমলের ন্যায়, যেমন- লোরেস্তানের পাহাড়সমূহ। এসব পাহাড়ের বাইরের দিকে রয়েছে বালু; কোনো কোনোটি মোটা বালুতে এবং কোনো কোনোটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম নরম বালুতে আবৃত। পাহাড়ের বক্র পিঠে আলো পড়ে তা প্রতিফলিত হয়ে ঝলমল করতে থাকে। এ চোখ ধাঁধানো আলোক প্রতিফলনের এক অনবদ্য ফলশ্রুতি এই যে, এসব জায়গায় কোনো কিছুর ছায়া পড়ে না। বায়ু প্রবাহিত হলে পাহাড় গাত্রের প্রচুর বালি বাতাসের সাথে ওপরে উঠে যায় এবং আকাশে ধূলিকণা মেঘের মত তৈরি হয়, অতঃপর নিচে বালির রঙের পল্লি এলাকার ওপর ছড়িয়ে পড়ে। এসব পাহাড় যথেষ্ট উঁচু একারণে এসব পাহাড়ের গায়ে গাছপালা খুব কমই দেখা যায় এবং এসব পাহাড়ের তীব্র শীতে খুব কমসংখ্যক উদ্ভিদ প্রজাতির পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব।

            ইরানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে কোথাও কোথাও সেফিদর (হোয়াইট পপ্লার) গাছের সমারোহ। এসব গাছ দেখতে খুবই সুন্দর; এর গা রূপালি এবং পাতা আলো ঝলমলে। এসব গাছ সাধারণত ছোট ঘন বন আকারে দেখা যায় অথবা বাগানের চারদিকে বেড়া আকারে লাগানো হয়। সেফিদর গাছ সংশ্লিষ্ট সুউচ্চ পার্বত্য পল্লিসমূহকে বিশেষ ধরনের সজীবতা প্রদান করেছে। এ গাছের কাঠও বেশ দামী। মাটি ও খড়পাতা দিয়ে তৈরি গৃহে খুঁটি ও আড়া হিসেবে সেফিদর গাছ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের হাতল কৃষি উপকরণ ও ঘোড়া বা গরুর গাড়ি তৈরিতে এ কাঠ ব্যবহৃত হয়। পতাকা স্ট্যান্ড হিসেবেও সেফিদর গাছের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। দামী সেফিদর গাছের কাঠ কখনোই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। ইরানের ছোট ছোট পল্লি এবং ছোট ছোট জলাভূমির চারদিক সাধারণত সেফিদর গাছের দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছে। ইরানের ‘বীশেয় সেফিদরের’ (ঝোঁপ বা মরুদ্যান) কথাটি ব্যপকভাবে প্রচলিত আছে; পর্যটকদের কাছে এটা অদ্ভুত মনে হলেও এ পরিভাষাটির ব্যাপক ব্যবহার একান্তই যুক্তিযুক্ত। এ কথাটির ব্যবহারিক অর্থ হচ্ছে ছায়াময় গাছের দ্বারা ঘেরাও করা সবুজ গাছপালার দ্বীপ। প্রকৃতপক্ষে মরু এলাকায় এবং আরবের মরুদ্যানসমূহে খেজুর গাছের যে অবস্থা ইরানে সেফিদর গাছের অবস্থান প্রায় তদ্রূপ। আরবি ভাষায় এ দু’ধরনের গাছের ঝোঁপ বা মরুদ্যানকেই ‘ওয়াহাহ্’ বলা হয় যার মানে মরুভূমির মধ্যস্থ ছোট আবাদী। এ ধরনের আবাদী হচ্ছে রুক্ষ প্রকৃতির মোকাবিলায় বহুসংখ্যক গাছের একত্র সমাবেশের দৃষ্টান্ত। মানুষ প্রকৃতির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে এসব মরুদ্যানে বসতি স্থাপন করেছে।

 সূত্র : ড. মোহাম্মাদ মাহ্দী তাওয়াসসোলী প্রণীত আজকের ইরান, জনাব নূর হোসেন মজিদী কর্তৃক অনূদিত।

রসিকতার ইসলামী সীমারেখা

রসিকতার ইসলামী সীমারেখা

পাঠক! এখানে আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি যে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই হয়তো ততোটা ভাবেন না। বিষয়টি হলো রসিকতা। রসিকতা যে খারাপ জিনিস তা কিন্তু নয়, কেননা টেনশন, হতাশা, বিষাদগ্রস্ততা দূর করার জন্যে হাঁসি-রসিকতা একটি ভালো উপাদান। মানসিক প্রফুল্লতার জন্যেও হাস্যরসের যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রসিকতার সীমা মেনে চলা। সীমা লঙ্ঘন হয়ে গেলে অনেকের মনেই আঘাত লাগতে পারে। তাই সীমারেখাটি আগে জানতে হবে এবং পরে তা মানতে হবে।

 মানসিক স্বস্তি ও সতেজতা আল্লাহর একটি অনুগ্রহ। যার ভেতরে এই সতেজতা বিদ্যমান সে নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। সতেজ মানুষেরা আনন্দ ও প্রশান্তিময়য জীবন যাপন করে। তাঁরা আল্লাহ এবং তাঁর রহমতের ব্যাপারে আশাবাদী। তাঁরা তাঁদের দুঃখ-কষ্টগুলোকে সৌভাগ্যের সোপান বলে মনে করে। শ্রোতাবন্ধুরা! এ মুহূর্তে আপনারা যারা এ অনুষ্ঠান শুনছেন আশা করি আপনারাও তেমনি ভাগ্যবান এবং আশাবাদী মনের মানুষ। তাই আপনারাও নিশ্চয়ই ইতিবাচক মনের প্রশান্তি ভোগ করে আনন্দময় জীবনযাপন করছেন। এরকম মনে করার কারণ হলো যারা ইতিবাচক চিন্তার মানুষ, জীবনের ব্যাপারে যাদের দৃষ্টি আশাবাদী, তারা এই আশাবাদী মনের সাহায্যে অন্তর থেকে সকল দুশ্চিন্তা দূর করে দেয়।

 ইসলামের মতো একটি মুক্তিদাতা দ্বীন আনন্দময় ও আশাবাদী মনের ব্যাপারে উৎসাহিত করে। রাসূলে খোদা (সা) এর পুরো জীবনটাই ছিল চমৎকার এইসব গুণাবলিতে সমৃদ্ধ। ইসলাম স্বল্প-ধৈর্য, অলসতা, বিমর্ষতা, বিষন্নতাপূর্ণ মানুষ বিশেষ করে আশাহীন ব্যক্তিকে পছন্দ করে না। পক্ষান্তরে সক্রিয়, সচেষ্ট, আশাবাদী এবং হাঁসিখুশিময় লোকজনকে পছন্দ করে। ইসলাম সুন্দর এবং হাঁসিখুশি আচরণকে স্বাগত জানায় যাতে মুসলমানদের মাঝে আত্মিক প্রশান্তি বিরাজ করে। অপরদিকে বিষাদ-বিষন্নতা এবং হতাশার মতো বাজে বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মাঝ থেকে দূরে সরে যায়। সুন্দর আচার ব্যবহারের একটি প্রকাশ হলো রসিকতা বা কৌতুক প্রবণতা। তবে সেই রসিকতা বা কৌতুক করতে হবে অবশ্যই সীমারেখা মেনে। কোনোভাবেই অপরকে উত্যক্ত করা বা খোঁচা দেওয়ার জন্যে কৌতুক করা যাবে না।

 ইমাম সাদেক (আ) এর একটি বর্ণনার উদ্ধৃতি দেওয়া যায়। তিনি একবার ইউনূস শিবাণীকে জিজ্ঞোসা করেছিলেনঃ ‘লোকজনের সাথে কী পরিমাণ কৌতুক মজা করো? ঐ লোক জবাবে বলেছিলঃ কম। ইমাম সাদেক (আ) তখন তিরস্কারের সুরে বলেছিলেনঃ কেন লোকজনের সাথে হাসি-মজা করো না? হাঁসি-কৌতুক সুন্দর আচার-ব্যবহার আর সচ্চরিত্রের অংশ।’ ইসলামের দৃষ্টিতে মুমিনদের একটি দায়িত্ব হলো দ্বীনী ভাইদেরকে আনন্দ দেওয়া। হযরত আলী (আ) বলেছেনঃ রাসূল (সা) যখনই তাঁর কোনো সহচরকে বিষন্ন বা মনমরা অবস্থায় দেখতেন, তখনই কৌতুক মজা করে তাকে প্রফুল্ল করে তুলতেন এবং বলতেনঃ নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম আমল হলো মুমিনদের অন্তরকে প্রফুল্ল করা। অবশ্য এমনভাবে হতে হবে যেন তাতে গুনাহের লেশমাত্র না থাকে।

 অনেকেই মনে করেন যে হাস্য-রসিকতা ছাড়া জীবন একেবারেই অসহ্য,এটা এক ধরনের নিরাময় শক্তি। স্ট্রেস নিরাময়ে বা টেনশন দূর করার ক্ষেত্রে হাষ্য-রসিকতার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে বলে মনোবিজ্ঞানীগণও মনে করেন। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে হাঁসি আনন্দ ব্যক্তির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং জীবনমান উন্নয়ন আর সমস্যা হ্রাস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। অ্যালেন ক্লেইন ‘কৌতুকের নিরাময় শক্তি’ নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘হাঁসি-আনন্দ-রসিকতা বিষাদগ্রস্ততা, অবসাদ, টেনশন ইত্যাদি থেকে মানুষকে মুক্ত রেখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে, আরো সাহায্য করে নিজের অবস্থা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হতে। কেননা রসিকতা এমন একটি অস্ত্র যা মানসিক চাপ সৃষ্টির কারণগুলোকে অকার্যকর করে দেয় এবং পরিবেশের ওপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।’

হাস্য রসিকতা বা কৌতুক পরস্পরকে ঘনিষ্ট করে তোলে। এ কারণে পরিপূর্ণ জীবন বিধান ইসলামে কৌতুককে বিশেষ করে মুমিনদের জন্যে জরুরি একটি বিষয় বলে মনে করা হয়। অপরদিকে ইসলাম রসিকতার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করাকে ভীষণভাবে নিষেধ করেছে। ইসলাম কাজ, বিশ্রাম, ইবাদাত ইত্যাদির ব্যাপারে যেমন ভারসাম্য রক্ষায় বিশ্বাস করে তেমনি সর্বক্ষেত্রেই চরমপন্থাকে নিষিদ্ধ করে। ইমাম হাসান (আ.) কে ইমাম আলী (আ) এক উপদেশ বাণীতে বলেছেনঃ হে সন্তান আমার! সে-ই ইমানদার যে তার দিনরাতের সময়গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়। একটি অংশকে কাজে লাগায় আধ্যাত্মিকতার চর্চা এবং আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করার মধ্য দিয়ে। অপর একটি অংশকে কাজে লাগায় পার্থিব জগতের প্রয়োজনীয়তা ও জীবন জীবিকার চাহিদা মেটাতে। আর তৃতীয় অংশটিকে নির্দিষ্ট করে বৈধ এবং হালাল বিনোদন উপভোগ করার জন্যে।

 ইসলামের মনীষীগণ উৎফুল্ল হৃদয়ের হওয়া সত্ত্বেও চাতুর্যপূর্ণ রঙ্গ-রসিকতার মাঝে ডুবে গিয়ে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে কখনোই বিসর্জন দেন নি। হাঁসি আনন্দ করার ক্ষেত্রে কখনোই তাঁরা ভারসাম্য রেখা অতিক্রম করে হারাম বা গুনাহের কাজের দিকে অগ্রসর হন নি। রাসূল কিন্তু কখনোই নিজে রসিকতাপূর্ণ কথাবার্তা শুরু করতেন না, তবে তিনি তাঁর সঙ্গী সাথীদের জন্যে হাঁসি-আনন্দের পটভূমি তৈরিতে সহযোগিতা করতেন। সাহাবিগণও রাসূলে আকরাম (সা) এর অনুসরণে অপছন্দনীয় রসিকতা পরিহার করে চলতেন। কিন্তু পছন্দনীয় মজা-কৌতুক প্রত্যাখ্যান করতেন না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এক যাযাবর আরব রাসূলে খোদার কাছে আসতেন এবং নবীজীকে উপহার উপঢৌকন দিতেন। কিছুক্ষণ যাবার পর যাযাবর আরব লোকটি বলতোঃ ‘এবার উপহার উপঢৌকনের টাকাটা দিন’। তখন রাসূলে খোদা (সা) নিজেও হাঁসতেন। ঐ ঘটনার পর রাসূলে খোদা (সা) যখনই বিষন্নতা বোধ করতেন তখনই বলতেনঃ ঐ যাযাবর আরব লোকটি কোথায়? ও আসতো যদি…।’

 রাসূলে খোদা (সা) এবং আমিরুল মুমেনিন আলী (আ) এর খুরমা খাওয়া নিয়েও চমৎকার একটি কৌতুক আছে। কৌতুকটি হলো একদিন এই দুই মহান মনীষী একসাথে বসে খুরমা খাচ্ছিলেন। রাসূলে খোদা (সা) খুরমা খেয়ে বিচিগুলো আলী (আ) এর সামনে রাখতেন। খাওয়া শেষে রাসূল বললেনঃ যার সামনে বীচি বেশি সে অতিভোজী। আমিরুল মুমেনিন দেখলেন রাসূলের সামনে কোনো বীচিই নেই, তাই জবাব দিলেনঃ যে বীচিশুদ্ধ খুরমা খেয়েছে সে-ই বেশি পেটুক।

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, একবার আব্দুল মোত্তালেবের মেয়ে রাসূলে খোদার বৃদ্ধা ফুফু সফিইয়্যাহ্ নবীজীর কাছে এলেন। রাসূলকে তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার জন্যে একটু দোয়া করো যেন বেহেশ্‌তবাসী হতে পারি।‘ নবীজী একথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে মজা করে বললেনঃ ‘বৃদ্ধ মহিলারা বেহেশতে যাবে না।’ সফিইয়্যাহ্ ভীষণ বিষন্ন হয়ে পড়লেন এবং ফিরে গেলেন। নবীজী তখন মুচকি হেঁসে বললেনঃ সফিইয়্যাকে বলো বৃদ্ধ মহিলারা আগে তরুণী হবে তারপর বেহেশতে যাবে।

 যাই হোক। এই ছিল রাসূলে খোদার কৌতুকের নমুনা। আমরা আমাদের মানসিক প্রশান্তির স্বার্থে অবশ্যই মজা করবো, কৌতুক করবো, কিন্তু কখনোই অপরকে ঘায়েল করার জন্যে নয়। তা করা হলে সীমালঙ্ঘন করা হবে। আর সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। আমরা যেন কেউ আল্লাহর অপছন্দনীয় বলে গণ্য না হই-সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

সংগ্রহ : রেডিও তেহরান