All posts by dreamboy

স্মরণীয় দিবস

 

৬ নভেম্বর : বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলীর মৃত্যুবার্ষিকী।
৯ নভেম্বর : ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের চল্লিশতম দিবস (আরবাইন)।
১১ নভেম্বর : ইতিহাসখ্যাত সাহিত্যিক ‘বিষাদ সিন্ধু’র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের জন্মদিবস।
১৪ নভেম্বর : বিশ্ব ডায়াবেটিক রোগীদের সহায়তা দিবস।
১৫ নভেম্বর : বিশ্ব পুস্তক ও পুস্তক পাঠ দিবস, বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস।
১৭ নভেম্বর : সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওফাত দিবস।
*আহলে বাইতের ধারার দ্বিতীয় ইমাম ও বেহেশতের যুবকদের নেতৃদ্বয়ের প্রথম ব্যক্তিত্ব ইমাম হাসান (আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী।
* বাংলাদেশের মযলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯ নভেম্বর : আহলে বাইতের ধারার অস্টম ইমাম আলী ইবনে মূসা আর-রেযা (আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী।
* অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীরের শাহাদাত বার্ষিকী।
* আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস।
২০ নভেম্বর : মহানবী (সা.) এর মদীনায় হিযরতের বার্ষিকী।
*বাংলাদেশের প্রখ্যাত মহিলা কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী।
২৭ নভেম্বর : ইমাম আল-হাসান আল-আসকারী (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
১ ডিসেম্বর : বিশ্ব এইড্স প্রতিরোধ দিবস।
২ ডিসেম্বর : * মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিবস (আহলে সুন্নাতের রেওয়ায়েত অনুযায়ী) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহের শুরু (১২-১৭ রবিউল আউয়াল)।
* শিল্পী কামরুল হাসানের জন্মদিন।
৩ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের কচিকাঁচার আসরের প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী।
*বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস।
৫ ডিসেম্বর : অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী।
৬ ডিসেম্বর : মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিবস (আহলে বাইতের ধারায় বর্ণনা অনুযায়ী) ও আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদেক (আ.)-এর জন্মদিবস।
১৬ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর এই দিনে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।
* বিশ্ব গবেষণা দিবস।
১৮ ডিসেম্বর : ড. মুহাম্মাদ মুফাত্তেহ্র শাহাদাত দিবস। এ দিবসটি ইরানে ‘ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (হাওযা) ও বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে ঐক্য দিবস’ হিসাবে পালিত হয়।
২১ ডিসেম্বর : ইরানে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম রাত (শাবে ইয়ালদা)
২৫ ডিসেম্বর : হযরত ঈসা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস।
২৭ ডিসেম্বর : প্রলয়ংকরী সুনামীর বার্ষিকী। এ দিনে ভয়াবহ সুনামীতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর কয়েক লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে।

স্মরণীয় বাণী

 

মহানবী (সা.) বলেন : জ্ঞানকে জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যায় না, কিন্তু যতক্ষণ অবধি জ্ঞানীরা থাকে ততক্ষণ জ্ঞানীদের অপহরণ করা হয়। ফলে আর কোনো জ্ঞানী অবশিষ্ট থাকে না আর তখন জনগণ মূর্খদেরকেই নেতা হিসেবে গ্রহণ করে; (তাদের কাছে) ফতোয়া চাওয়া হয় আর তারা না জেনে ফতোয়া প্রদান করে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট থাকে আর অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করে।
মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো : মানুষের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন? উত্তরে তিনি বললেন : নবীগণ, অতঃপর সত্যপথে তাঁদের অনুরূপ ও সদৃশতমগণ। আর মুমিন তার ঈমানের মাত্রা অনুযায়ী এবং সৎকর্মের পরিমাণ অনুযায়ী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। যখন তার ঈমান সঠিক এবং কর্ম সৎ হবে তখন তার পরীক্ষাও কঠিনতর হবে। আর যার ঈমান নিকৃষ্ট আর কর্ম দুর্বল হবে তার পরীক্ষাও কম হবে।
মহানবী (সা.) বলেন : জ্ঞানীদের কাছে প্রশ্ন কর আর হাকিমদের (প্রজ্ঞাবানদের) সাথে সংলাপ কর আর দরিদ্রদের সাথে ওঠাবসা কর।
মহানবী (সা.) বলেন : আল্লাহ্ ঐ বান্দাকে অনুগ্রহ করেন যে হয় উত্তম কথা বলে এবং লাভবান হয়, অথবা মন্দ (কথা বলা) থেকে নীরব থাকে, ফলে নিরাপদ থাকে।
মহানবী (সা.) বলেন : ধীরতা আল্লাহ্র থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের থেকে।
মহানবী (সা.) বলেন : নামাযের অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা নামাযের বাইরে কোরআন তেলাওয়াতের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্র যিক্র সাদাকার চেয়ে উত্তম। আর সাদাকা রোযার চেয়ে উত্তম। আর রোযা হলো ভালো কাজ। অতঃপর তিনি বলেন : কাজ ব্যতীত কোনো কথা নেই। আর কোনো কথা ও কাজ নেই নিয়্যত ছাড়া। আর কোনো কথা, কাজ এবং নিয়্যতই নেই সঠিক পন্থা (দীন বিধান মোতাবেক) ছাড়া।
ইমাম আলী (আ.) বলেন : … দুর্বলেরা যখন তোমার কাছে এমন কিছুর প্রত্যাশা করে যা তাকে দেবার মতো অবস্থা ও ক্ষমতা তোমার না থাকে, তবে এক্ষেত্রে (অন্যদের কাছে) তোমার সম্মান ও মর্যাদাকে তার অভাব পূরণে কাজে লাগাও। এভাবে তাদেরকে টিকে থাকতে সাহায্য কর। আর যা কিছু তোমার থেকে গোপন রয়েছে তা বেশি অনুসন্ধান করতে যেও না। কারণ, তাতে তোমার থেকে আরো বেশি গোপন ও অজ্ঞাত হয়ে পড়বে। নিজেকে মিথ্যা থেকে দূরে রাখবে। কেননা, এটা হলো চরিত্রের নিকৃষ্টতম স্তর এবং এক প্রকার গালি এবং এক ধরনের নীচতা। আর মূল্যহীন ও তুচ্ছ বিষয়ে নাকগলানো থেকে বিরত থেকে নিজেকে সম্মানিত কর।
ইমাম আলী (আ.) বলেন : নিশ্চুপ থাকা প্রজ্ঞার পরিচায়ক। নীরবতাই নিরাপত্তা আর গোপনীয়তা রক্ষা করা সৌভাগ্যের একাংশ।
ইমাম আলী (আ.) বলেন : আল্লাহ্্র বান্দা কখনোই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে না যতক্ষণ না মিথ্যাকে ঠাট্টার বশে হোক আর সত্যি সত্যিই হোক পরিত্যাগ করবে।
ইমাম আলী (আ.) বলেন : …হে লোকসকল! তোমরা যদি দুনিয়াকে পরকালের ওপরে প্রাধান্য দান কর তাহলে নিকৃষ্ট পণ্যের প্রতি তড়িঘড়ি সাড়া দিয়েছ এবং আশার পাগলা ঘোড়াকে অসীমের দিকে বেপরোয়া চালিয়েছ। পরিণামে তা তোমাদের জন্য অনুশোচনা বয়ে আনবে এবং অতীতের উম্মতসমূহ ও বিগত শতাব্দীসমূহে যেসব অবস্থার পরিবর্তন ও শিক্ষণীয় ঘটনাবলির উদ্ভব ঘটেছে তা তোমাদেরকে আস্বাদন করাবে।
ইমাম আলী ইবনুল হোসাইন যায়নুল আবেদীন (আ.) বলেন : সৎকর্মপরায়ণদের সাথে ওঠাবসা ভালো কাজের আহ্বায়ক। আর শিষ্টাচার জ্ঞানীদের বুদ্ধি বাড়িয়ে দেয়। আর ওয়ালীয়ে আম্র (বৈধ কর্তৃত্বশীল)-এর আনুগত্য করা পূর্ণ সম্মানের কারণ। আর (সমাজের কল্যাণে) সম্পদের বৃদ্ধি সাধন হলো পৌরুষের পূর্ণতা। আর পরামর্শ প্রার্থীকে নির্দেশনা প্রদান হলো নেয়ামতের হক আদায় করা। আর কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা হলো পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা। এর মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের দৈহিক স্বস্তি।

(তুহাফুল উকূল থেকে সংকলিত)
অনুবাদ : আব্দুল কুদ্দুস বাদশা

সংবাদ বিচিত্রা

১ ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে পুতিনের বৈঠক
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, সিরিয়া ইস্যুতে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার সহযোগিতার ফলাফল একথাই প্রমাণ দিচ্ছে যে, চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও তেহরান এবং মস্কো নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
গত ২ নভেম্বর ২০১৭ তেহরান সফররত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট  ভ্লাদিমির পুতিনকে দেয়া সাক্ষাতে এ কথা বলেছেন তিনি। এ সময় রুশ প্রেসিডেন্ট তেহরানের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে মস্কোর স¤পর্ক আরো গভীর করার বিষয়ে প্রস্তাব দিলে সর্বোচ্চ নেতা তাঁকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের কার্যকর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের অভিজ্ঞতাকে সম্পর্ক আরো গভীর করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, সিরিয়াতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট উগ্র সন্ত্রাসীদেরকে সমর্থন দিয়েছে এবং তারা সেখানে পরাজিত হয়েছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই, কিন্তু তারপরও তারা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ইরান-রাশিয়ার সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন সর্বোচ্চ নেতা। সিরিয়া ইস্যুতে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে যে সহযোগিতামূলক স¤পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা অব্যাহত রাখার কথা বলেন সর্বোচ্চ নেতা।
এ সময় তিনি পরিষ্কার করে বলেন, সিরিয়ার জনগণই সে দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে; অন্য কেউ নয়। কিংবা সিরিয়া সরকারকে চাপ দিয়ে বিদেশী কোনো শক্তি কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করাতে পারবে না।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরান ও রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করতে পারে। দু দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানের চেয়ে আরো অনেক বেশি বাড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ইরানকে কৌশলগত মিত্র ও মহান প্রতিবেশী বলে বলে উল্লেখ করেন। তিনি সু¯পষ্টভাবে বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো ক্ষেত্রে সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টিকে তিনি স্বাগত জানাবেন।
পুতিন বলেন, ইরান ও রাশিয়া জ্বালানি, আধুনিক প্রযুক্তি, কৃষি এবং যৌথ তেল-গ্যাস ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করতে পারে।
সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ফলাফলের প্রশংসা করে পুতিন দেশটির জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও মানানসই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিবেচনার আহ্বান জানান। সিরিয়া বিষয়ে যৌথ লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতার অবস্থানের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, এটা যেমন ছিল জ্ঞানদীপ্ত সিদ্ধান্ত তেমনি খুবই ফলপ্রসূ। তিনি আরো বলেন, ‘সিরিয়া ইস্যুতে আমরা বিশ্বের সামনে একথা প্রমাণ করেছি যে, বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই আঞ্চলিক সমস্যা আমরা নিজেরা সমাধান করতে পারি।
ইরানের পরমাণু সমঝোতা স¤পর্কে পুতিন বলেন, একতরফাভাবে এ সমঝোতায় কোনো রকমের পরিবর্তন আনার বিরোধী মস্কো। পাশাপাশি তাঁর দেশ ইরানের প্রতিরক্ষাসহ অন্য কোনো ইস্যুর সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি যুক্ত করার পক্ষপাতি নয়।
২ পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে : রুহানি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা রক্ষার ক্ষেত্রে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। রাজধানী তেহরানে ১ নভেম্বর ২০১৭ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রুহানি এসব কথা বলেন।
তিনি বহুপক্ষীয় পরমাণু সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ সমঝোতা রক্ষা করা সম্ভব হলে আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে তা অবদান রাখবে। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তেহরান ও মস্কো উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
সন্ত্রাসবাদবিরোধী চূড়ান্ত লড়াইয়ে দু’দেশের মধ্যকার পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বরোপ করেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, সিরিয়া সংকটসহ যেকোনো উত্তেজনা কমাতে তেহরান ও মস্কোর মধ্যে সহযোগিতামূলক স¤পর্ক থাকাটা জরুরি। তিনি রাশিয়াকে কৌশলগত ও সৎ প্রতিবেশী মিত্র বলে উল্লেখ করেছেন।
বৈঠকে পুতিন বলেন, ইরান ও রাশিয়া জ্বালানি, অর্থনীতি, শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি এবং পরিবহন যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক সুস¤পর্ক রেখে চলেছে। পুতিন জোর দিয়ে বলেন, কোনো একপক্ষ পরমাণু সমঝোতা বানচাল করতে পারবে না।

৩ জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি’র সুদৃঢ় অবস্থান চাইলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ বলেছেন, জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির প্রেক্ষাপটে একটি সমন্বিত জবাবের সিদ্ধান্ত নিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মুসলিম দেশগুলোর বৃহত্তম সংগঠন ওআইসির একটি জরুরি সম্মেলনে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-র এ ৬ষ্ঠ বিশেষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই বৈরী পদক্ষেপে ওআইসি দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। আমাদের অবশ্যই আল কুদস (জেরুজালেম) বিষয়ে এ পর্যন্ত গৃহীত ওআইসির বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তসমূহ নিয়ে নিবিষ্টভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন যে, এই জরুরি সম্মেলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই জোরালো বার্তা পৌঁছে দেবে যে, আমরা ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের লড়াইয়ে তাদের পেছনে ই¯পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ এবং আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও শক্তি যোগাব।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ও এর জনগণ জেরুজালেমকে ইসরাইলের কথিত রাজধানী হিসেবে মার্কিন ঘোষণার বিপক্ষে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল এবং ন্যায় ও সুবিচারের প্রহসনের সম্মুখীন ফিলিস্তিনিদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকার গঠনমূলক ও আশাব্যাঞ্জক ভূমিকা পালনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে সামিল হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে তার অটল অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং এ সংকট সমাধানে একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের আওতায় একটি গঠনমূলক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর মার্কিন ঘোষণা এবং তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর প্রক্রিয়া মুসলিম অনুভূতিকে আহত করেছে এবং ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এছাড়া এটি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার জন্যও বিরাট হুমকির সৃষ্টি করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এই সিদ্ধান্ত আরব-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ার সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মার্কিন প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস করেছে। রাষ্ট্রপতি একই সাথে ইসরাইলের গৃহীত নীতি-কৌশল ও পদক্ষেপসমূহ বাতিলের জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশেষ করে ওআইসির তাৎক্ষণিক ও সক্রিয় স¤পৃক্ততা কামনা করেন।
ফিলিস্তিনের ভাই ও বোনদের অধিকার হরণ করে তাদের মনের ভেতর আরেক দফা নির্দয় আঘাত করার প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করে ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মলেনের আয়োজন করায় তুর্কি নেতাকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘোষণায় মুসলমানদের পবিত্র শহর আল কুদস-এর ওপর ইসরাইল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। তাতে ওই শহরের ঐতিহাসিক ও আইনি পরিচয়,অধিবাসীদের জাতীয়তার ধরন এবং এর আরব-ইসলামিক চরিত্র বদলে যাবে। তিনি বলেন, এখানে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান ও প্রথম কেবলা হলো ‘হারাম আল-শরিফ’। তাই মুসলিম বিশ্ব তা কখনোই মেনে নেবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ৪৬৭ নম্বর প্রস্তাবে জেরুজালেমের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবে ইসরাইলকে ওই ভূখ-ে বসতি স্থাপন বন্ধ করে জেরুজালেমের আইনি পরিচয় এবং জনমিতিক বৈশিষ্ট্য বদলে দেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি প্রধান ও তার সদস্যদের জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থন প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং দেশহারানো রোহিঙ্গাদের পক্ষে সম্প্রতি অস্টানা সায়েন্স সামিটে ঘোষিত প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে জীবন বাঁচাতে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদে, সুরক্ষিত এবং সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর স্থায়ী চাপের প্রয়োগের আহ্বান জানান।

৩-১ জেরুজালেম মুসলমানদের কাছে মক্কা-মদীনার মতো পবিত্র : আল-আজহার
মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্ড মুফতি আহমেদ আত-তাইয়্যেব বলেছেন, আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর (সা.) মতো পবিত্র স্থান।
তিনি আরো বলেন, জেরুজালেম শহরের একটি পাথরের টুকরার মালিকানাও ইহুদিদের নেই। সেখানকার ইট-কাঠ-পাথর সব মুসলমানদের স¤পদ। কাজেই তারা জেরুজালেমে তাদের উপাসনালয় থাকার যে দাবি করে ভিত্তিহীন।
আল-আজহারের গ্রান্ড মুফতি গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ কায়রোয় এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে কেন পবিত্র স্থান তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি কুরআনের আয়াত ও হাদিসের বাণী তুলে ধরেন। আহমেদ আত-তাইয়্যেব বলেন, ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বেও জেরুজালেম শহরে আরবরা বসবাস করত। তিনি বলেন, ওল্ড টেস্টামেন্টকে (তাওরাত) উদ্ধৃত করে ইহুদিরা আল-আকসা মসজিদকে তাদের সম্পদ বলে যে দাবি করে তার কোনো ভিত্তি নেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেম শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় তার নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদসমৃদ্ধ শহর জেরুজালেম ১৯৬৭ সালে ইহুদিবাদী ইসরাইল দখল করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিন জবরদখল করে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইলকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিলেও জেরুজালেম শহরের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয় নি এই বিশ্বসংস্থা। অথচ সেই শহরটিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন ট্রা¤প। তাঁর এই ঘোষণার বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

৪ পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করল ওআইসি
পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করেছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি। পাশাপাশি আমেরিকার পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মুসলিম দেশগুলোর নেতারা এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে ওআইসি-র পদক্ষেপ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার এক সপ্তাহ পর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে বুধবার ওআইসি-র বিশেষ জরুরি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং মুসলিম নেতারা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ ও পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসকে তার রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্মেলন শেষে কড়া যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন ওআইসি-র নেতারা। এতে তারা বলেছেন, ‘৫৭ জাতির এ জোট দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়ে ন্যায্য ও পূর্ণাঙ্গ শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।’
এছাড়া, ফিলিস্তিনের ওপর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর জন্য এ বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ড্রোনাল্ড ট্রাম্প যদি তার অবৈধ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসেন তাহলে সমস্ত পরিণতির জন্য তাকে দায়ী থাকতে হবে সতর্ক করা হয়েছে।
ওআইসি-র নেতারা কঠোর নিন্দা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি এটা বিপজ্জনক এক ঘোষণা যার লক্ষ্য হচ্ছে বায়তুল মুকাদ্দাসের আইনগত মর্যাদা পাল্টে দেয়া;  ট্রাম্পের এ ঘোষণা বাতিল করা হলো এবং এর কোনো বৈধতা নেই।’

৫ সর্বোচ্চ নেতার ভূমিক¤প কবলিত এলাকা পরিদর্শন
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের লক্ষ্যে গত ২০ নভেম্বর ২০১৭ কেরমানশাহ প্রদেশ সফর করেন।
জনগণের উদ্দেশে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘খুব ইচ্ছে ছিল দুঃখ-দুর্দশাহীন আনন্দঘন সময়ে আপনাদের কাছে আসব, এই কঠিন বিপদে বিষণ্ন, নিরানন্দ, শোকাচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে নয়।’
সর্বোচ্চ নেতা পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধে কেরমানশাহবাসীর বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের এই শহর ইরাকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময়ও আক্রান্ত হয়েছিল। তখনও আপনারা বীরত্ব, সাহসিকতা এবং ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, এবারও সেরকম ধৈর্যের পরিচয় দেবেন বলে আমি আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘ভূমিক¤প একটা বড় রকমের মুসিবত, সবকিছু ধূলিস্মাৎ করে দেয়। কিন্তু সেদিন আপনারা যেভাবে আগ্রাসীদের পরাস্ত করেছেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগও সেভাবে মোকাবেলা করে বিপদকে নিয়ামতে পরিণত করে তুলতে হবে। এই দুর্যোগে সমগ্র জাতি মর্মাহত, সবার সহানুভূতিশীল মন আপনাদের এই কেরমানশাহে পড়ে আছে। দেশের মানুষ দায়িত্বশীলতার সাথে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৭.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অন্তত ৪৩৭ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানি হয়। এ ছাড়া, এ ভূমিকম্পের ফলে আহত হন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

৬ তেহরানে ইসলামি ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজধানী তেহরানে ৫-৭ ডিসেম্বর ২০১৭ তিন দিনব্যাপী ইসলামি ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি, মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব অংশ নেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব ফায়েজ আহমেদ ভুইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ও বাংলাদেশ আল কুদ্স কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো ‘ইসলামি ঐক্য ও নতুন ইসলামি সভ্যতা’।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর ইরান ১২ রবিউল আউয়াল থেকে ১৭ রবিউল আউয়াল পর্যন্ত ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ পালন করে। ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (র.) এই ঐক্য সপ্তাহের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যকার নানা সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য এ সম্মলনের আয়োজন করা হয়।
৩১তম আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে স¤পর্ক রাখার বিষয়ে কয়েকটি আরব ও মুসলিম দেশের নির্লজ্জ স্বীকারোক্তির তীব্র সমালোচনা করেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি।
সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট রুহানি ইরাক ও সিরিয়ায় উগ্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশ দুটির সামরিক বাহিনীর নানা সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠানের সময় সিরিয়ার আলেপ্পো শহর মুক্ত হয় এবং ঘটনাক্রমে এবার ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশের চূড়ান্ত পতন হয়েছে। আন্তর্জাতিক বলদর্পী শক্তিগুলো ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে, আমেরিকা ও ইসরাইলসহ বলদর্পী শক্তিগুলো দায়েশকে সৃষ্টি করেছে এবং আঞ্চলিক দেশগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দিয়েছে। তারাই মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি এবং অন্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।

৭ তাকফিরি মতবাদ মোকাবিলার উপায় নিয়ে তেহরানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
উগ্র তাকফিরি মতবাদ মোবাবিলার উপায় নিয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানে দু’দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিশ্বের ৯০টি দেশের অন্তত ৫০০ শিয়া ও সুন্নি আলেম ও চিন্তাবিদ অংশগ্রহণ করেন।
মুসলিম দেশগুলোর ভেতরে ও বাইরে থেকে ইসলামি বিশ্বকে বিভক্ত করে ফেলার লক্ষ্যে তাকফিরি মতবাদ ছড়িয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টা চলছে তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
যে মতবাদে বিশ্বাসীরা অন্যান্য মতবাদ ও মাজহাবে বিশ্বাসীদের ‘কাফের’ বলে আখ্যায়িত করে তাকে তাকফিরি মতবাদ বলা হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিনিয়র উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর বেলায়েতির পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ২২ নভেম্বর তেহরানে এই সম্মেলন শুরু হয়। ইসলামি জাগরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক অ্যাসেম্বলির চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করছেন ড. বেলায়েতি।
তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ইসলামের শত্রুরা মুসলিম দেশগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে এসব দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। এ ছাড়া তাকফিরি মতবাদ ছড়িয়ে দেয়াসহ নানা উপায়ে শত্রুরা মুসলিম দেশগুলোর স¤পদ লুট করার পাঁয়তারা করছে।
বেলায়েতি বলেন, সাত বছর আগে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে সৃষ্ট ইসলামি গণজাগরণের জের ধরে স্বৈরশাসকদের পতনের পর তাকফিরি মতবাদ সৃষ্টি হয়েছে। এই মতবাদ সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ওয়াহাবি মতবাদ এবং পর্দার অন্তরালে কাজ করছে ইসলামের শত্রুরা।
তিনি বলেন, মানবতার মুক্তির ধর্ম ইসলামকে কলঙ্কিত করাই এই মতবাদ সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য। পুরুষদের ওপর গণহত্যা চালানো, শিশুদের গলা কেটে হত্যা করা এবং নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানোর মতো ইসলামপূর্ব যুগের বর্বরতা আবার চালু করার উদ্দেশ্যে তাকফিরি মতবাদ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা বলেন, আশার কথা হচ্ছে, তাকফিরি মতবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব জেগে উঠেছে এবং এই মতবাদে বিশ্বাসী জঙ্গিরা পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তিনি এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ইরাক ও সিরিয়ায় উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের পতনকে তুলে ধরেন।

৮  ট্রাম্পের ঘোষণার  বিরুদ্ধে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ

ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর জুমআ নামাযের পর এসব বিক্ষোভ মিছিল হয়।
এ সময় তারা আমেরিকা ও ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করে নানা স্লোগান দেন। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি নিজেদের সংহতি ও সমর্থন প্রকাশ করেন।
ইরানের পবিত্র শহর কোম ও মাশহাদেও ইসরাইল এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এছাড়া, তেহরানের জুমআর নামাযের খুতবায় আয়াতুল্লাহ আহমাদ খাতামি বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণা প্রমাণ করেছে ইন্তিফাদা আন্দোলন ছাড়া ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।

৯ ইরান-রুশ সহযোগিতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদার করবে : রুহানি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, তেহরান-মস্কো সহযোগিতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদার করবে। তিনি বলেন, মস্কোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে কূটনৈতিক উপায়ে বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জ নিরসন করা সম্ভব হবে। এজন্য তিনি ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সবক্ষেত্রে সর্বাত্মক  সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
রাশিয়ার সোচি শহরে অনুষ্ঠিত ২২ নভেম্বর ২০১৭ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের অবকাশে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক সাক্ষাতে এসব কথা বলেন প্রেসিডেন্ট রুহানি। ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়ার অংশগ্রহণে ওই বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য তিনি রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সোচি বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার ওপরেও প্রেসিডেন্ট রুহানি গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময় যেসব চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে স¤পর্ক জোরদার হলে তাতে দু দেশ লাভবান হবে এবং কোনো দেশের জন্য তা ক্ষতির কারণ হবে না। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রুহানি পরমাণু সমঝোতা স¤পর্কে বলেন, ইরান কখনো আগে সমঝোতা লঙ্ঘন করবে না তবে কেউ তা লঙ্ঘন করলে নীরব থাকবে না।
ইয়েমেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট রুহানি উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সমস্যা সমাধান ও দারির্দ্যপীড়িত দেশটিতে গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পুতিনও তেহরান-মস্কো সম্পর্ক জোরদারের কথা বলেন। তিনি জানান, সবক্ষেত্রে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার স¤পর্ক উন্নত হবে। সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পাশাপাশি ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে স¤পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে বলেও পুতিন উল্লেখ করেন। পরমাণু সমঝোতা স¤পর্কে পুতিন বলেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং কেউ তা লঙ্ঘন করলে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

১০ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর উদ্বোধন করল ইরান
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি চবাহার সমুদ্রবন্দরের উদ্বোধন করেন। এ বন্দর উদ্বোধনের পর আশা করা হচ্ছে, ভারত থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত নতুন বাণিজ্য রুট চালু হবে।
ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহারে শহীদ বেহেশতি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। চারটি পর্যায়ে বন্দরের সামগ্রিক নির্মাণ কাজ শেষ হবে। প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শেষে গত ৩ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করা হয় এবং অনুষ্ঠানে ১৭টি দেশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, এ বন্দরের উদ্বোধন ইরানের জনগণ বিশেষ করে চবাহারের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, চবাহার বন্দর ইরানের ভেতর দিয়ে বেশকিছু বাণিজ্য করিডরকে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এছাড়া, এ বন্দর ইরানকে তার পূর্ব ও উত্তরের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং পরবর্তীকালে ইউরোপীয় দেশগুলোকে সংযুক্ত করবে।
২০০৭ সালে শহীদ বেহেশতি বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এরই মধ্যে ১০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। এটা হচ্ছে ইরানের একমাত্র মহাসাগরীয় বন্দর এবং এক লাখ টন ধারণক্ষমতার জাহাজও ভিড়তে পারবে এখানে। বন্দরের চার পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে বার্ষিক কার্গো ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ৮ কোটি ২০ লাখ টনে পৌঁছবে। এ বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে পণ্য পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ইরান। কিছুদিন আগে ভারত, আফগানিস্তান ও ইরান একটি চুক্তি সই করেছে যার আওতায় ভারতকে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয়া হবে। বিনিময়ে ভারত এ বন্দর নির্মাণের কাজে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।

১১ পারমাণবিক ব্যাটারি তৈরির প্রযুক্তি অর্জন করেছে ইরান
চিকিৎসা ও শিল্প খাতে ব্যবহার উপযোগী পারমাণবিক ব্যাটারি তৈরির প্রযুক্তি অর্জন করেছে ইরান। এ খবর দিয়েছেন ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধানের উপদেষ্টা আসকার জারেয়ান।
তিনি গত ৪ ডিসেম্বর তেহরানে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পর বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে পারমাণবিক ব্যাটারি তৈরির প্রযুক্ত রপ্ত করল ইরান। তিনি আরো বলেন, কার্ডিয়াক পেসমেকার ও ল্যাপটপ তৈরির কাছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া, এর সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করে এটিকে তেল খাত ও কৃত্রিম উপগ্রহ স্থানান্তরের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব।
আসকার জারেয়ান বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেশীয় কো¤পানির সহযোগিতা শক্তিশালী করার মাধ্যমে এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণ করার পদক্ষেপ নেবে তেহরান। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রে ইরানের সামনে সম্ভাবনার নতুন অনেক দিগন্ত খুলে গেছে বলেও তিনি জানান।
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধানের উপদেষ্টা আরো বলেন, অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় আলবোর্জ প্রদেশে দেশের প্রথম আয়ন থেরাপি সেন্টার স্থাপন করা হবে।
জারেয়ান বলেন, আয়ন থেরাপি প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক দিয়ে ইরান হবে বিশ্বের ষষ্ঠ দেশ। ক্যান্সারসহ আরো কিছু দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় আয়ন থেরাপি ব্যবহৃত হয়।

১২ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরান সফর
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন গত ৯ ডিসেম্বর দু দিনের সফরে ইরানে এসেছিলেন। সফরের প্রথম দিনেই তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যু এবং তেহরানের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যাংকিং স¤পর্কের বিষয়টি নিয়ে বরিস জনসন আলোচনা করেন।
এ সফরে বরিস জনসন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি, জাতীয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি এবং ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি এবং ইরানের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. আলী লারিজানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
গত ৯ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে তেহরানে এক বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের নীতির সমালোচনা করে কোনো কোনো পশ্চিমা দেশ যেসব বক্তব্য দেয় তা নাকচ করে দিয়ে শামখানি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে তেহরান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি বলেছেন, তাঁর দেশ হস্তক্ষেপ না করলে উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশ এতদিনে গোটা ইরাক ও সিরিয়া দখল করে ইউরোপের সীমান্তে পৌঁছে যেত।
ইরানের এই শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ইরাক ও সিরিয়া সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে দেশ দুটিতে সামরিক উপদেষ্টার কাজ করেছে তেহরান। দায়েশ নির্মূলে ইরানের এই ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে তিনি জানান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জেরুজালেম শহরকে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারেও তিনি বলেন, জেরুজালেম ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি মুসলমানদের স¤পদ। ট্রাম্পের অজ্ঞতাপূর্ণ ঘোষণা ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি জোরদার করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাক্ষাতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, তাঁর দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুজালেম সংক্রান্ত ঘোষণার বিরোধিতা করেছে। তেল আবিব থেকে দূতাবাস জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা ব্রিটেনের নেই বলেও তিনি জানান।

১৩ সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী ইরান ও বাংলাদেশ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও বাংলাদেশ পরস্পরের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আব্বাস ভায়েজী দেহনাভি ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এই আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা এ খবর জানায়।
গত ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ঢাকায় আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ড. ভায়েজী বলেন, জাতিগুলোর মধ্যে মৈত্রির একটি শক্তিশালী বন্ধন হচ্ছে শিল্প। এ ছাড়া, পার¯পরিক সহাবস্থানের স্লোগান প্রচার ও পর¯পরের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সর্বোত্তম মাধ্যমও হচ্ছে শিল্প।
সিনেমা ও থিয়েটার শিল্পে ইরানের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে দেশটির রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তেহরানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক স¤পর্ক শক্তিশালী করতে ঢাকার আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেন।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসবে ইরান, নরওয়ে, মিশর ও চীন অংশগ্রহণ করে।

১৪ ইরান-রাশিয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সহযোগিতা চুক্তি সই

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রক্ষণাবেক্ষণ ও গবেষণায় পার¯পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে ইরান ও রাশিয়া। ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পর্যটন সংস্থা সিএইচটিও এবং রুশ স্টেট হারমিটেজ মিউজিয়াম কর্মকর্তাদের মাঝে এই সমঝোতা সই হয়।
ষষ্ঠ সেন্ট পিটাসবার্গ ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ফোরামের অংশগ্রহণকালে গত ১৯ নভেম্বর ২০১৭ সমঝোতাটি সই করেন দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে ইরানের পক্ষে সই করেন দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পর্যটন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান মোহাম্মাদ বেহেশতি এবং রাশিয়ার পক্ষে সই করেন স্টেট হারমিটেজ মিউজিয়ামের মহাপরিচালক মাইকেল পেটরোভস্কি। হারমিটেজ হচ্ছে সেন্ট পিটাসবার্গের একটি শিল্প ও সংস্কৃতি জাদুঘর।
রাশিয়ায় ইরানের সাংস্কৃতিক অ্যাটাচি রেজা মালেকি জানান, পেটরোভস্কি তার মিউজিয়াম ও সিএইচটিও এর সহযোগিতাবিষয়ক নথিপত্রে সই করার ক্ষেত্রে ইরানি অংশের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সমঝোতাটিকে একটি উদ্যোগ হিসেবে আশা করা হলেও সংস্কৃতি বিনিময়, অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান এবং গবেষণা ও অধ্যয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে, বেহেশতি আশা করেন সমঝোতাটি দুপক্ষের মধ্যে বিস্তর বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি প্রস্তাবনা হিসেবে কাজ করবে।
প্রতœতত্ত্বে কার্যকর সহযোগিতা, প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ এবং ঐতিহাসিক স্থানের মেরামত ও পুনর্নির্মাণ, ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভের গবেষণা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রয়োজনীয় পরিবেশ প্রস্তুত করার লক্ষ্যেই সমঝোতাটি সই করা হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় ইরান ও রাশিয়া প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত বিষয়ে গবেষণায় যৌথ প্রকল্প পরিচালনা করবে।

১৫ চলতি বছরে ইরান-ইইউ’র মধ্যে এক হাজার কোটি ইউরোর চুক্তি স্বাক্ষর
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ’র মধ্যে চলতি বছর যেসব চুক্তি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য এক হাজার কোটি ইউরো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন বিষয়ক কমিশনার ফিল হোগান এ কথা জানান।
ইরান সফররত হোগান রাজধানী তেহরানে গত ১ নভেম্বর ২০১৭ সাংবদিকদের বলেন, বর্তমানে ইইউ এবং ইরানের মধ্যে যে যোগাযোগ রয়েছে তাতে দু’দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক  আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আশা করে মার্কিন কংগ্রেস ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে এবং এটাই হবে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ।
ফিল হোগান বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা গভীর করতে চাই। ইরানের ভেতরের পরিবেশ চমৎকার এবং সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে আমরা সম্পর্কের  অগ্রযাত্রা দেখতে আগ্রহী।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯টি দেশের ৭০ জন প্রতিনিধি নিয়ে ফিল হোগান ইরান সফর করেন এবং তাঁর সফরের মূল লক্ষ্য ছিল তেহরানের সঙ্গে ইইউ’র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করা।

১৬ গ্যাস রপ্তানি প্রকল্পে ইরান-ওমান চুক্তি সই
আন্তর্জাতিক বাজারে যৌথভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিতে ওমানের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে ইরান। দু’দেশের তেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়েছে। ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান জাঙ্গানেহ এই তথ্য জানিয়েছেন।
এ চুক্তির ফলে উভয় দেশ যৌথভাবে এলএনজি রপ্তানির একটি উচ্চাভিলাসী প্রকল্পে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করে দক্ষিণ ইরান থেকে ওমানে গ্যাস সরবরাহ করা হবে এবং সেখানে এসব গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তর করে আন্তর্জাতিক বাজারে তা জাহাজযোগে পাঠানো হবে।
দু’দেশের মধ্যে একটি উপসামুদ্রিক পাইপলাইন স্থাপনের এই প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে টোটাল ও শেল সহ কয়েকটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক জ্বালানি কো¤পানি। এই প্রকল্পে নির্মিতব্য পাইপলাইনের আনুমানিক দৈর্ঘ্য ৪শ’ কিলোমিটারের অধিক। পাইপলাইনের উপকূলঘেঁষা অংশ ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় আসসালুয়েহ গ্যাস জোন থেকে গিয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হরমুজগানের কুহমোবারাকে গিয়ে ঠেকবে, যার দৈর্ঘ্য ২০০ কিলোমিটার। অন্যদিকে পাইপলাইনের সামুদ্রিক অংশের দৈর্ঘ্য হবে ২০০ কিলোমিটার, যা ইরানকে প্রতিবেশী ওমানের সোহার বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

১৭ ডলারবহির্ভূত মুদ্রায় বাণিজ্যে সম্মত ইরান-অস্ট্রিয়া
ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক লেনদেন ডলারবহির্ভূত মুদ্রায় স¤পাদন করতে সম্মত হয়েছে ইরান ও অস্ট্রিয়ার কর্মকর্তারা। গত ১৬ নভেম্বর ভিয়েনায় তেহরান চেম্বার অব কমার্সের সদস্যরা ও অস্ট্রিয়ার কোনট্রোলব্যাংক (ওইকেবি) কর্মকর্তারা এই সম্মতিতে পৌঁছেন।
এদিন কোনট্রোল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নতুন নিষেধাজ্ঞায় আমাদের বণিক ও ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠী উদ্বিগ্ন। তাঁদের এই উদ্বেগ প্রশমনে আমরা ডলারবহির্ভূত মুদ্রায় লেনদেন সেবা চালু করার প্রস্তাব করছি।
তেহরান চেম্বার অব কমার্স সদস্য ও ভিয়েনার কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন, কোনট্রোল ব্যাংক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এটি একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র।
রাজনৈতিক ঝুঁকির বিরুদ্ধে ইরানি অংশীদারদের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনায় ইচ্ছুক সব ইউরোপীয় আবেদনকারীর জন্য ব্যাংকটি বিনিয়োগ বিমার প্রস্তাব দিয়েছে।
২০১৬ সালের শুরুতে পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়নের পর অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় ও ওইকেবি ইরানের সঙ্গে লেনদেনকে ঘিরে কতিপয় শর্ত ঠিক করে এবং তখন থেকেই বিনিয়োগ পরিচালনা, গ্যারান্টি দিয়ে আসছে। পরবর্তীকালে লেনদেনকে ঘিরে দেয়া এই প্রস্তাব নবায়নও করা হয়েছে।

১৮ ইরানের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছে জাপান
ইরানে বিনিয়োগের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি ঋণপত্র বা লাইন অব ক্রেডিট (এলসি) খুলেছে জাপান সরকার। ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ জ্বালানি কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
গত ৬ নভেম্বর সোমবার ইরানের জ্বালানি উপমন্ত্রী হোশাঙ ফালাহাতিয়ান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, তেহরানে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইরানে বিনিয়োগ করতে বা যৌথভাবে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে তার সরকার আগ্রহী কো¤পানিগুলির জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র অনুমোদন দিয়েছে।
এসময় ইরানের ১৭তম আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ প্রদর্শনীর ফাঁকে তেহরান-টোকিও সহযোগিতার ওপর অনুষ্ঠিত একটি সেমিনার প্রসঙ্গে কথা বলেন ফালাহাতিয়ান। তিনি জানান, যৌথ ওই অনুষ্ঠানে জাপানি ফার্মগুলো ইরানি প্রতিপক্ষদের কাছে তাদের সক্ষমতাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। সেই সাথে তারা ইরানের বিদ্যুৎ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য জায়গা খুঁজে বের করারও চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে গত মাচের্র শেষের দিকে তেহরানে অবস্থিত জাপানি দূতাবাস একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এতে তেহরান-টোকিও চুক্তির সক্রিয়তাকে ইরান ও জাপানে বিনিয়োগে পার¯পরিক সহায়ক বলে উল্লেখ করা হয়।
জাপানি দূতাবাস ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাপান ২৭ মার্চ ইরানের একটি নোটিশ পাওয়ার পর ইরান-জাপান চুক্তি চূড়ান্ত করেছে এবং ইরান ও জাপানে বিনিয়োগে পার¯পরিকভাবে উৎসাহ ও সহায়তা দিতে দেশটি এই চুক্তির অনুশীলন শুরু করেছে।
এতে আরও বলা হয়, ইরান ও জাপানে বিনিয়োগ উৎসাহিত ও এতে সহায়তার ক্ষেত্রে চুক্তিতে পূর্ণ ও জটিল সব ইস্যু রয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই চুক্তির বাস্তবায়নে দু’দেশে বেশি বেশি বিনিয়োগ হবে এবং দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক স¤পর্ক জোরদার হবে।
ইরান-জাপান বিনিয়োগে সহায়তার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে ইরানের পার্লামেন্টে একটি বিল পাস হয়। এ বিলটির ফলশ্রুতিতে চুক্তিটি সামনে নিয়ে আসা হয় এবং এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। পরে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সম্মতিতে এটি আইনে পরিণত হয়।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাপান সরকার দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স¤পর্ক আরও সম্প্রসারিত করতে ইরানে পাঁচটি প্রকল্পে বিনিয়োগে ৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তেহরানে অবস্থিত জাপানি দূতাবাস জানায়, ২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া পরবর্তী চার বছরের জন্য টোকিও বছরে ৪০ বিলিয়নের বেশি জাপানি ইয়েন সহায়তা অব্যাহত রাখতে যাচ্ছে।
দূতাবাস আরও উল্লেখ করে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তান বিষয়ে ব্রাসেলস কনফারেন্সে এই সহায়তা বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংগঠন ও জাতিসংঘ সংস্থাসমূহের মাধ্যমে এই সহায়তা সম্প্রসারিত করা হবে।
১৯ ইরান-কাতার বাণিজ্য বেড়েছে ১২০ শতাংশ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন গত সাত মাসে ১২০ শতাংশ বেড়েছে। গত ২৫ নভেম্বর ইরান সফরে আসা কাতারের অর্থমন্ত্রী আহমাদ বিন জাসেম বিন মোহাম্মাদ আলে সানি’র সাথে বৈঠকের সময় ইরানের শিল্প, খনিজ ও বাণিজ্য মন্ত্রী মোহাম্মাদ শারিয়াতমাদারি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কাতার দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ পাঁচশ’ কোটি ডলার করার প্রস্তাব দিয়েছে। গত সাত মাসে ইরান প্রায় ১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে প্রকৌশল ও কারিগরি সেবা প্রদানের মাধ্যমে আয় হয়েছে প্রায় একশ’ কোটি ডলার।
২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। ওই আয়োজনকে সামনে রেখে কাতার ইরান থেকে বিপুল অংকের পণ্য আমদানি করবে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেন ইরানের বাণিজ্যমন্ত্রী।
২০ পরমাণু চুক্তি পরবর্তী ইরান-হাঙ্গেরি বাণিজ্য বেড়েছে দ্বিগুণ
ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা বা জেসিপিওএ বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকে ইরান ও হাঙ্গেরির মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১৫ সালে জেসিপিওএ সই হয় এবং এটি কার্যকর শুরু হয় ২০১৬ সাল থেকে। এরপর থেকেই ক্রমেই বাড়ছে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য।
গত ৩ ডিসেম্বর তেহরানে ইরান চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইন্স অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারের চেয়ারম্যান গোলাম রেজা শাফেয়ির সঙ্গে বৈঠকে হাঙ্গেরির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মিহালি ভারগা এই তথ্য জানান।
সংবাদ সংস্থা ইরনার খবরে বলা হয়, বৈঠকে ইরান ও হাঙ্গেরির ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এর মধ্যে হাঙ্গেরির এনেক্সিও কো¤পানি এবং ইরানের বেহিন সামান কো¤পানি ও থারমাল পাওয়ার প্লান্টস হোল্ডিং কো¤পানির মধ্যে হাইব্রিড কুলিং সিস্টেম উৎপাদনে প্রথম চুক্তিটি সই হয়েছে। পরের চুক্তিটি সই করেছে হাঙ্গেরির ইঞ্জিনিয়ারিং কো¤পানি ইভোপোরো। ইরানের গিজিন কো¤পানির সঙ্গে যৌথভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে এ সমঝোতাটি সই করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইভোপোরো ইরানি কো¤পানি পিশরো দিয়েসেলের সঙ্গে বৈদ্যুতিক রেলের সারঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরেকটি চুক্তি সই করেছে। চতুর্থ চুক্তিটি ১ হাজার বাস তৈরি করতে সই করা হয়েছে। হাঙ্গেরির ইকারুস ও ইরানের শাহার ব্যাংকের ভর্তুকি প্রতিষ্ঠান সিটি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড মাইনস ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের মধ্যে এ চুক্তিটি সই হয়েছে।

২১ ইরানের নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাল বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক পানিসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ইরানের নৌবাহিনীর প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। গত ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে বলে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলপথগুলোকে নিরাপদ রাখতে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে এবং জলদস্যুদের মোকাবিলায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।
নৌবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জলদস্যুদের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইরানের নৌবাহিনী তাদের অভিযানের ব্যাপ্তি এডেন উপসাগর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। সম্প্রতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ৪৯তম নৌবহর প্রায় তিন হাজার ৮০৪ নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ায় অংশ নেয়। এই নৌবহরে ‘সাবালান’ ডেস্ট্রয়ার এবং লজিস্টিক যুদ্ধজাহাজ ‘বান্দার আব্বাস’ ছিল।
ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর নৌবাহিনী নিয়ে গঠিত ফোরাম ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম  বা আইওএনএস’র এ মহড়ায় ৩২টি দেশ অংশ নেয়।

২২ ইরানের ‘জামি আত তাওয়ারিখ’ ঐতিহাসিক দলিল : ইউনেস্কো
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২, ২০১৭
ইরানের ‘জামি আত তাওয়ারিখ’ গ্রন্থকে বিশ্বের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় সোমবার সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) ইরিনা বোকোভা এই ঘোষণা দেন। গত ২৪-২৭ অক্টোবর পর্যন্ত বৈঠক করে বিশ্বের ৭৮টি নতুন বিষয় ও ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি (আইএসি)।
আইএসির এই কমিটিতে ছিলেন ১৫ জন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে নতুন করে প্রস্তাব করা ঐতিহাসিক দলিল পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করেন। দুই বছরের প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬-১৭ সালের জন্য দলিলগুলোকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ তালিকায় ৪৩ নম্বরে পারস্যে মোঙ্গল ইলখানাতে লিখিত সাহিত্য ও ইতিহাস গ্রন্থ ‘জামি আত তাওয়ারিখ’কে স্থান দেওয়া হয়েছে। গ্রন্থটির লেখক রশিদউদ্দিন হামাদানি (১২৪৭-১৩১৮) ১৪ শতাব্দীর শুরুতে এটি রচনা করেন।
ব্যাপ্তির কারণে একে ‘প্রথম বিশ্ব ইতিহাস’ বলা হয়। গ্রন্থটির তিনটি খ- ছিল। এর ফারসি, আরবি ও মোঙ্গল সংস্করণ রয়েছে। এতে রয়েছে ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির বিবরণ।
গ্রন্থের জাঁকজমকপূর্ণ চিত্রাঙ্কন ও হস্তলিপিতে কয়েকশ’ লিপিকার ও শিল্পীর প্রয়োজন ছিল। প্রায় ২০টি চিত্রায়িত কপি রশিদউদ্দিনের জীবদ্দশায় প্রস্তুত করা হয়েছিল। এটির একটি কপি বর্তমানে ইরানের গোলেস্তান প্রাসাদের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। দুই বছর আগে এ সংক্রান্ত দলিলাদি ইউনেস্কোর আইএসি কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়। ওই কমিটি কারিগরি দিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে গ্রন্থটিকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এ নিয়ে ফেরদৌসির ‘শাহনামা’সহ ইরানের ১০টি গ্রন্থ ও ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো।
‘জামি আত তাওয়ারিখ’ গ্রন্থের একটি কপি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রয়েছে। ইস্তাম্বুলের তোপকাপি প্রাসাদের গ্রন্থাগারে প্রথম যুগের দুটি ফারসি পা-ুলিপি রয়েছে।

২৩ ‘মুস্তাফা প্রাইজ’ পেলেন তুরস্ক ও ইরানের দুই ক¤িপউটার বিজ্ঞানী
মুসলিম বিশ্বের দুই ক¤িপউটার বিজ্ঞানীকে দ্বিবার্ষিক মুস্তাফা প্রাইজ দিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই বিজ্ঞানী হলেন তুর্কি প্রফেসর সামি এরল গেলেনবি ও ইরানের মোহাম্মাদ আমিন শোকরোল্লাহি। ক¤িপউটার বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কারস্বরূপ গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ তাঁদেরকে ৫ লাখ মার্কিন ডলার করে প্রদান করা হয়।এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক এই পুরস্কার দিল দেশটি। দুই বছর পরপর মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে মুস্তাফা প্রাইজ দেয়া হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে অথবা অন্যত্র বসবাসরত সংশ্লিষ্ট মুসলিম ও বিজ্ঞানীদেরকে মুস্তাফা প্রাইজ দেয়া হয়। সেই সাথে মুসলিম দেশে বসবাসরত অমুসলিম বিজ্ঞানীদেরও এই পুরস্কার দেয়া হয়।
গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ এক বিবৃতিতে ইরানের বিজ্ঞান বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরেনা সাত্তারি বলেন, প্রফেসর গেলেনবি ও শোকরোল্লাহিকে মডেল তৈরি এবং ক¤িপউটার কোডিং সিস্টেমের মূল্যায়নে কৃতিত্বের জন্য এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের নাগরিকত্ব প্রাপ্ত ৭২ বছরের গেলেনবি তুর্কি অ্যাকাডেমি অব সাইনসের (টিইউবিএ) একজন সদস্য। শিক্ষকতা জীবনে তিনি বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজে ডেনিশ গ্যাবর চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন।
তেহরানে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে মেডেল ও সার্টিফিকেট সহ তাঁদের হাতে ৫ লাখ ডলার করে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেয়া হয়। এতে ৩০ দেশের ৯০ জন বিজ্ঞানী যোগ দেন। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার দেয়া হয়।

২৪ ইরানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকায় বাড়ছে বিদেশি পর্যটক
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ১৩, ২০১৭
ইরানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকায় বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চলতি ইরানি বছরের প্রথম সাত মাসে (২২ অক্টোবর পর্যন্ত) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটির মুক্ত বাণিজ্য এলাকাগুলোতে বিদেশি পর্যটক বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।
ফিনানসিয়াল ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, বছরের প্রথম সাত মাসে ইরানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকায় ২৮ হাজারের অধিক বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। তাঁরা সেখানে অন্তত একরাত হলেও কাটিয়েছেন। যদিও ইরান সরকার বিগত সাত মাসে ২৩ হাজার বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। ফ্রি ট্রেড জোন ও ¯েপশাল ইকোনমিক জোনের হাই কাউন্সিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই চিত্র জানা গেছে।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থ বছরে ইরানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকাগুলো ৩৯ হাজার বিদেশি পর্যটক গ্রহণ করেছে। এসব এলাকায় ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ৪৩ হাজার বিদেশি পর্যটক আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইরানে মোট সাতটি মুক্ত বাণিজ্য এলাকা (এফটিজেড) রয়েছে। এগুলো হলো : দক্ষিণাঞ্চলীয় হরমোজগান প্রদেশের কিশ দ্বীপ ও কেশম দ্বীপ, সিস্তান-বালুচিস্তানের চাবাহার বন্দর, খুজেস্তান প্রদেশের আরভান্দ, উত্তরাঞ্চলীয় গিলান প্রদেশের আঞ্জালি বন্দর, পশ্চিম আযারবাইজানের মাকু ও পূর্ব আযারবাইজানের আরাস।
এ প্রতিবেদনে কোন এলাকায় কতজন বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয় নি। তবে কিশ ও কেশম দ্বীপে অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, গত ছয় মাসে চাবাহার ও আঞ্জালিতে বিদেশি পর্যটক বেড়েছে যথাক্রমে ২৩ শতাংশ ও ১১ শতাংশ।

২৫ মহাকাশ বিজ্ঞান  অলিম্পিয়াডে তৃতীয় ইরান
জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞানের (আইওএএ) ১১তম আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে ইরান। এতে ইরানের ছাত্ররা ১টি সোনা, ৩টি রুপা ও ১টি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। থাইল্যান্ডের ফুখেতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই অলি¤িপয়াড। ১২ নভেম্বর অলিম্পিয়াড শুরু হয়ে শেষ হয় ২১ নভেম্বর।
বিশ্বের ৪৫টি দেশের কৃতী ছাত্রদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে থাইল্যান্ড এবং দ্বিতীয় হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড অন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা আইওএএ-র বার্ষিক প্রতিযোগিতায় বিশ্বের হাই স্কুল পর্যায়ের ছাত্ররা জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ-পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে তাত্ত্বিক, বিশ্লেষণমূলক ও পর্যবেক্ষণমূলক নানা সমস্যা সমাধানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে।
২০০৬ সালে থাইল্যান্ডে আইওএএ প্রতিষ্ঠা হয়। পাঁচ দেশ থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, চীন ও পোল্যান্ডের উদ্যোগে এই অলিম্পিয়াডের যাত্রা শুরু হয়।
হাই স্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের মাঝে জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ-পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শীদের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তরুণ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে বন্ধুত্ব জোরদারের লক্ষ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।২০০৯ সালে তৃতীয় আইওএএ ইরানে অনুষ্ঠিত হয়।

২৬ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের তালিকায় ৭ ইরানি
বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বৈজ্ঞানিক গবেষকদের তালিকায় নাম রয়েছে ইরানের সাত বিজ্ঞানীর। ‘২০১৭ হাইলি সাইটেড রিসারচার্স’ শীর্ষক তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন এসব ইরানি বিজ্ঞানী।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক ও অ্যাকাডেমিক গবেষণাবিষয়ক কোম্পানি ক্লারিভেট অ্যানালিটিক্স প্রকাশিত তালিকায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
ক্লারিভেট অ্যানালিটিক্স উদ্ভাবনের গতি তরান্বিত করেছেন এমন বিজ্ঞানীদের তথ্যসূত্র বিশ্লেষণ করে এই তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রতি বছর হাইলি সাইটেড রিসারচারস তথা সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির এ বছরের তালিকায় সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের মধ্যে ইরানের রয়েছে সাত জন।
সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের এই তালিকায় তাদেরকে স্থান দেয়া হয়েছে যারা ধারাবাহিকভাবে সমকক্ষ আন্তর্জাতিক গবেষকদের স্বীকৃতি লাভ করেছেন। এসব বিজ্ঞানীকে শনাক্তে তাদের তথ্যসূত্র বা তাদের সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত উদ্ধৃতিসমূহ বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এ বছর বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের ২১টি ক্ষেত্রে হাইলি সাইটেড রিসারচারস তথা যাদের তথ্যসূত্র সর্বাপেক্ষা উদ্ধৃত করা হয়েছে তাদের ৩ হাজার ৩শ জনের অধিককে বাছাই করা হয়। একই সঙ্গে তাদের ১ লাখ ৩০ হাজার পেপারস সংযুক্ত করা হয়।
২০১৭ সালের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের তালিকায় নাম থাকা ইরানি সাত বিজ্ঞানী হলেন- আলি কাভেহ (ক¤িপউটার সাইন্স), মেহেদি দেহগান (গণিত), দাভুদ গাঞ্জি (প্রকৌশল), মোহশেন শেকহোলেসলামি (প্রকৌশল),তাহের নিকনাম (প্রকৌশল), মফিদ গোরজি-বান্দপায় (প্রকৌশল) ও শাহরাম রেজাপুর (গণিত)।
২০১৬ সালের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের তালিকায় ইরানের ছয়জন বিজ্ঞানী ও গবেষক স্থান পেয়েছিল।
এবারের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সংখ্যক লেখক ও গবেষক জায়গা পেয়েছেন। এরপরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও চীন।

২৭ ইরানে পাথরের কাগজে ছাপানো হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ম্যাগাজিন
‘গিলগামেশ ম্যাগাজিন’ ইরানের একটি পরিবেশবান্ধব ত্রৈমাসিক প্রকাশনা। যেটি স্টোন পেপার তথা পাথরের তৈরি কাগজে ছাপানো হচ্ছে আর বিতরণ করা হচ্ছে বাই সাইকেলে চড়ে। এসবই করা হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে।
পত্রপত্রিকা সবসময়ই যে খ্যাতি ভোগ করছে তা নয়। বাস্তবিক পক্ষে সাধারণ কাগজে যেসব পত্রপত্রিকা ছাপা হচ্ছে সেসব কাগজ কঠিন বর্জের বৃহত্তম উপাদান থেকে তৈরি। এসব কাগজ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় বিপুল পরিমাণ গাছপালা। তাই কাগজ তৈরিতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
এ অবস্থায় পরিবেশ সংরক্ষণের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে কিছু  কোম্পানি তাদের চলমান প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করছে। পাথরের কাগজ ব্যবহারের মাধ্যমে কিছুটা পরিবর্তন আনছে তারা। স্টোন পেপার শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও এটি মিশ্র সারে রূপান্তরযোগ্য। পাশাপাশি পাথরের কাগজ আবর্জনার স্তূপে থাকা টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা কমিয়ে আনে। এই পেপার উৎপাদনে গাছ ও পানির প্রয়োজন হয় না।
অন্যদিকে, সাধারণ কাগজের তুলনায় এক টন পাথরের কাগজ তৈরি করতে অর্ধেক কম জ্বালানি প্রয়োজন হয়।এদিকে, গত ৭ নভেম্বর ইরানে ৯৮তম মোটরকারমুক্ত সপ্তাহ পালিত হয়েছে। সপ্তাহে এদিন মানুষজনকে গাড়ি ব্যবহার না করতে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রচারণা চালানো হয়, গাড়ির পরিবর্তে বাই সাইকেল বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে উৎসাহিত করা হয়। তাই দিনটির সঙ্গে মিল রেখে মঙ্গলবার বাইকে চড়ে বিতরণ করা হয় পরিবাশবান্ধব ‘গিলগামেশ ম্যাগাজিন’।

২৮ তেহরানে বাইসাইকেল পুলিশ
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২, ২০১৭
ইরানের রাজধানী তেহরানে যানজট নিয়ন্ত্রণে বাইসাইকেলে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। প্রবল ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরটিতে সাইকেলে ট্রাফিক পুলিশ শহরতলীর আনাচে কানাচে যানজট কীভাবে দূর করা যায় সে দায়িত্ব পালন করছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিম বলছে, বাইসাইকেলে পুলিশের এধরনের কার্যক্রম যানজট নিরসনে তাদের উদ্যোগ দ্রুততর ও পুলিশকে দক্ষ করে তুলবে।
সাইকেলগুলোতে পুলিশের লোগো সজ্জিত ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। যানজট ছাড়াও কম অপরাধপ্রবণ এলাকায় সাইকেল পুলিশকে অধিকতর সহজে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এধরনের কর্মতৎপরতায় আদতেই গতি আসছে কি না তা পরখ করতে পুলিশ কর্মকর্তারাও বাইসাইকেল ব্যবহার করে নজরদারি করতে পারবেন।
২৯ অঙ্গদাতা হিসেবে নাম লেখালেন ৪০ লক্ষাধিক ইরানি
শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে চান ইরানের চল্লিশ লক্ষাধিক মানুষ। ইতোমধ্যে তারা অঙ্গদাতা হিসেবে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছেন। গত ১ ডিসেম্বর ২০১৭ ইরানি আইন প্রণেতা আলি নোবাখত এই তথ্য জানান। এ ধরনের জনহিতকর কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে  বেশি বেশি জনসচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ‘জশনে নাফ্স’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এই তথ্য জানান। এসময় মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য যেসব ‘ব্রেন ডেড’ রোগী তাঁদের অঙ্গ দান করেছেন তাঁদের তিনি স্মরণ করেন।
শরীর বেঁচে রয়েছে, কিন্তু মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে এমন রোগীদের ‘ব্রেন ডেড’ রোগী বলা হয়। ইরানি পার্লামেন্ট ‘মজলিস’ এর স্বাস্থ্য কমিটির প্রধান নোবাখত বলেন, কিছু দেশে প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনগণ তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার জন্য আবেদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্কদের প্রায় ৪৫ শতাংশ অঙ্গদাতা হিসেবে নিবন্ধন করেছে। সুতরাং বেশি বেশি জীবন রক্ষায় ইরানে সক্রিয়ভাবে অঙ্গ দানে উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান কাজিজাদেহ হাশেমি জানান, বছরে ব্রেন ডেড রোগীদের প্রতি চার হাজারের মধ্যে মাত্র ৯শ’ জন তাঁদের অঙ্গদান করেন।
বর্তমানে ইরানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ২৬ সহস্রাধিক রোগী রয়েছে। একজন ব্রেন ডেড রোগী ৮টি জীবন বাঁচাতে পারেন। আবার একই ডোনার টিস্যু ও চোখ দান করে পঞ্চাশের অধিক জীবনকে রক্ষা বা বিকশিত করতে সাহায্য করতে পারেন।

৩০ সার্বিয়ায় ফটো প্রতিযোগিতায় ইরানি শিল্পীদের অ্যাওয়ার্ড জয়
সার্বিয়ার ক্রাগুজেভাকে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফটো প্রতিযোগিতায় অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন ইরানের আট আলোকচিত্র শিল্পী। ‘থ্রো দ্য ভিউফাইন্ডার’ শীর্ষক এই ফটো প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে এসব অ্যাওয়ার্ড জয় করেন তাঁরা। প্রতিযোগিতার ফটোজার্নালিজম বিভাগে আহমাদ খাতিরি এফআইএপি গোল্ড মেডেল জয় করেছেন। তিনি তাঁর একক ফটো ‘প্রেয়ার অ্যান্ড মোরনিং ফর দ্য র্মাটারডম অব দেয়ার ফার্দাস ইন ওয়ার জোন্স’ এর জন্য এই পুরস্কার পান।
এই বিভাগে সাইয়্যেদ ওমিদ আলাভি তাঁর ‘ওয়ার ছবির জন্য স্যালন গোল্ড মেডেল লাভ করেন। অন্যদিকে, সাইদ আরবজাদেহ তার ‘সরো’ ছবির জন্য মাস্টার অব লাইট ফটোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশন (এমওএল) ব্রোঞ্জ মেডেল লাভ করেন এবং মোস্তফা মিরতালেব তাঁর ‘বেটিং’ এর জন্য ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব আমেরিকা তথা পিএসএ ব্রোঞ্জ মেডেল পান।
এছাড়াও মিরতালেব তাঁর ‘কাস্পিয়ান সী’ ছবির জন্য ওপেন মনোক্রোম বিভাগে স্যালোন মেডেল ও ন্যাচার বিভাগে তাঁর ‘¯েœায়ি মাউন্টেইন’ এর জন্য এফআইএপি ব্লু রিবন পুরস্কার পেয়েছেন।
আরাবজাদেহ তাঁর ‘ঘাজালেহ’ ছবির জন্য ন্যাচার বিভাগে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব আর্ট ফটোগ্রাফার্স (আইএএপি) গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।
এছাড়া আব্দুল মোইদ মারুফি, দাভুদ আমেরি ও রেজা ফাথি মোকাদাম সম্মানজনক অবস্থান লাভ করেছেন। পুরস্কার বিজয়ী এসব ছবি ক্রাগুজেভাকের লুমিয়ের বিম গ্যালারিতে ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রদর্শন করা হয়। এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ক্রাগুজেভাক ফটো ক্লাব।

৩১ ব্রুকলিন আর্ট ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীর বিজয়ীদের মধ্যে ১২ ইরানি
ব্রুকলিন ২০১৭ আন্তর্জাতিক আর্ট ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীর বিজয়ীদের মধ্যে ইরানের ১২ জন আলোকচিত্রী রয়েছেন। চিত্র প্রদর্শনীর ওয়েবসাইটে ২৫ নভেম্বর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে আর্ট ব্যুরো নিউ ইয়র্ক সিটি ও লুমিরের বিম ফোটো এজেন্সি। আর্ট ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীটি সবার জন্য উম্মুক্ত ছিল। এতে মিউজিক, স্ট্রিট, চাইল্ড, ন্যাচার, ওপেন
(কালার) ও ওপেন (মনোক্রোম) বিভাগ সহ প্রতিটি বিভাগে চারটি ছবির অধিক জমা দেয়ার সুযোগ ছিল না।
প্রতি বিভাগে চার ধাপের বিচারের মাধ্যমে ছবিগুলো বিভক্ত করা হয়। মিউজিক ফটোগ্রাফি সেকশনে ইরানি শিল্পীরা দুটি অ্যাওয়ার্ড জয় করেন। এর মধ্যে মেহদি রুহির ফটো ‘থ্রিল’ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব আমেরিকার (পিএসএ) ব্রোঞ্জ মেডেল জিতেছেন এবং এহসান মোরতাজাভির ফটো ‘কনফ্লিক্ট ১’ পিএসএ-র সম্মানজক উপাধি লাভ করেছেন।
স্ট্রিট ফটোগ্রাফি বিভাগে ইরানের ইয়াসের ফাত্তাহির ‘শ্যাডোজ’ সোনার মেডেল, নেগার আঘা-আলি-তারির ‘লুক’ পিএসএ-র সম্মানজনক উপাধি, মোজতাবা সাফারির ‘স্যাটিসফেকশন’ (ডিপ্লোমা) ও দারিউশ কানবারনাসাবের ‘কনফ্লিক্ট’ (ডিপ্লোমা) অ্যাওয়ার্ড জিতেছে।
এছাড়া চাইল্ড ফটোগ্রাফি বিভাগে ইরানিরা দুটি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে। ওপেন (কালার) ফটোগ্রাফি বিভাগ থেকে ইরান তিনটি অ্যাওয়ার্ড ঘরে তুলেছে। অন্যদিকে, ন্যাচার ফটোগ্রাফি বিভাগে একজন মাত্র ইরানি পুরস্কার জিতেছেন।
ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীর বিজয়ী শিল্পকর্মগুলি ১৫ থেকে ২৫ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের জ্যালোপি থিয়েটার এবং ৩১৫ কলামবিয়া স্ট্রিটের স্কুল অব মিউজিকে প্রদর্শিত হবে।

৩২ বিশ্ব কারাতে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে ৫ ইরানি
কারাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশন (ডাব্লিউকেএফ) র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেছেন ইরানি অ্যাথলেট সাজাদ গাঞ্জজাদেহ। ডাব্লিউকেএফের সর্বশেষ প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে তিনি শীর্ষ স্থান দখল করেন। সাজাদ ছাড়াও আরও চার ইরানি কারাতে অ্যাথলেট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন।
কারাতে-১ প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডের খেলা শেষে ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশন তাদের সর্বশেষ এই র‌্যাঙ্কিং ঘোষণা করে। ওই টুর্নামেন্টে ৩৯৭০ পয়েন্ট অর্জন করে ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিংয়ে অব্যাহত ভাবে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছেন সাজাদ গাঞ্জজাদেহ (+৮৪কেজি)। এছাড়া বাকি চার ইরানি কারাতে অ্যাথলেট নিজ নিজ বিভাগের শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন।
কুমিতি বিভাগের শীর্ষ দশে জায়গা পাওয়া বাকি চার ইরানি কারাতে হলেন- নবম স্থান দখলকারী ফাতেমি চালাকি (-৫৫ কেজি), দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী আমির মেহদি জাদেহ (-৬০ কেজি), নবম স্থান দখলকারী বাহমান আসগারি (-৭৫ কেজি) ও ষষ্ঠ স্থান দখলকারী জাবিহোল্লাহ পুরশাব (-৮৪ কেজি)।
এছাড়া কারাতের কাতা সেকশনের নারী বিভাগে নেগিন বাঘেরি ৩০ তম ও পুরুষ বিভাগে আবোলফাজি শাহরজারদি ৫২তম স্থান দখল করেছেন।

৩৩ আমেরিকায় ভারোত্তোলন চ্যা¤িপয়নশিপের শিরোপা ইরানের
আমেরিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ভারোত্তোলন চ্যা¤িপয়নশিপের শিরোপা জিতেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান।
ইরানের ভারোত্তোলন দল চারটি স্বর্ণ, তিনটি রৌপ্য ও ছয়টি ব্রোঞ্জ জিতে প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান দখল করে। এতে ইরানের অর্জিত পয়েন্ট ৫০৯। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় গত ২৮ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
ইরানের আটজন ক্রীড়াবিদ এবারের চ্যা¤িপয়নশিপে অংশ নেন। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সোহরাব মোরাদি। তিনি ৯৪ কেজি ওজন ক্যাটাগরিতে দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে এ ক্যাটাগরির তিনটি স্বর্ণই জিতে নেন। এর আগে ২০১১ ও ২০১৩ সালের বিশ্ব ভারোত্তোলন চ্যা¤িপয়নশিপে ইরানি দল তৃতীয় হয়েছিল।
আমেরিকার মাটিতে ভারোত্তোলন দলের এ অর্জনে ইরানি জনগণ অত্যন্ত খুশি। দেশটির সর্বস্তরের মানুষ ভারোত্তোলন দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী, প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ও সংসদ ¯িপকার আলী লারিজানি আলাদাভাবে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন।

৩৪ বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্রুপ পর্বে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বীরা
২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রুপ পর্বের খেলায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় দল ‘বি’ গ্রুপে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এই গ্রুপে ইরানকে খেলতে হবে পর্তুগাল, ¯েপন ও মরক্কোর সঙ্গে।
আগামী বছরের জুন ও জুলাই মাসে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রেমলিন স্টেট প্যালেসে গ্রুপ নির্ধারণের জন্য লটারি অনুষ্ঠিত হয়।
‘এ’ গ্রুপে স্বাগতিক রাশিয়া খেলবে সৌদি আরব, মিশর ও উরুগুয়ের সঙ্গে। গ্রুপ ‘সি’তে খেলবে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পেরু ও ডেনমার্ক। ‘ডি’ গ্রুপে খেলেবে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া। ‘ই’ গ্রুপে খেলবে ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ চ্যা¤িপয়ন জার্মানি খেলবে মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গ্রুপ ‘এফ’-এ। ‘জি’ গ্রুপে থাকবে বেলজিয়াম, পানামা, তিউনিশিয়া ও ইংল্যান্ড। এছাড়া, ‘এইচ’ গ্রুপে থাকবে পোল্যান্ড, সেনেগাল, কলম্বিয়া ও জাপান।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে ১৪ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। আসরের উদ্বোধনী খেলায় স্বাগতিক রাশিয়া খেলবে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। চূড়ান্ত পর্বের এ আসরে রাশিয়ার ১১টি শহরের ১২টি ভেন্যুতে মোট ৬৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ফিফা বিশ্বকাপে আইসল্যান্ড ও পানামা এবারই প্রথমবারের মতো খেলবে।

৩৫ মিনস্ক চলচ্চিত্র উৎসবে দুই অ্যাওয়ার্ড জিতল ‘ব্রেদ’
আমেরিকান মোশন পিকচার অ্যাকাডেমি পুরস্কার বা অস্কারের জন্য পাঠানো ইরানি চলচ্চিত্র ‘ব্রেদ’ দুটি অ্যাওয়ার্ড জয়লাভ করেছে। বেলারুসে অনুষ্ঠিত মিনস্ক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের ২৪তম আসরে এ দুই পুরস্কার জয়লাভ করে যুদ্ধবিরোধী ড্রামাটি।
আয়োজকেরা ছবিটিকে সেরা পরিচালক ও সেরা অভিনেত্রীর অ্যাওয়ার্ড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি পরিচালনা করেছেন ইরানের নারী চলচ্চিত্রকার নারজেস আবিয়ার।
‘ব্রেদ’ ছবির জন্য নারজেস সেরা পরিচালক হিসেবে শিশু-কিশোর চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এছাড়া ছবিটিতে ভালো ভূমিকা রাখার জন্য সেরা তরুণী অভিনেত্রীর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সারেহ নুর-মুসাভি।
ড্রামাটিতে চারটি শিশুর কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, যাদের মা কয়েক বছর আগে মারা যায়। ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে ইরাকের হামলার প্রেক্ষাপটকে ঘিরে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর তাদের বাবা যুদ্ধে নিয়োজিত ইরানি স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
‘সত্যতা, ভালোবাসা ও সুন্দর’ ¯ে¬াগান নিয়ে বেলারুসের রাজধানী মিনস্কে ২৪তম মিনস্ক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ‘লিস্টাপ্যাড’ ৩ নভেম্বর শুরু হয়ে চলে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। উৎসবের পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৭ নভেম্বর।
এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে এস্তোনিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০তম ব্লাক নাইট্স চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ব্রেদ’ ছবিটির জন্য সেরা পরিচালকের অ্যাওয়ার্ড পান পরিচালক নারজেস।
আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য ৯০তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড তথা অস্কারের লড়াইয়ে জন্য যুদ্ধ-বিরোধী ড্রামাটিকে পাঠিয়েছে ইরান। উৎসবের বিদেশি ভাষা বিভাগে ‘সেরা ছবি’র দৌড়ে অংশ নেবে ছবিটি।

৩৬ ঢাকার মঞ্চ মাতালো ইরানের লোকসংগীত দল রাস্তাক
গত ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের শেষ দিনে মঞ্চ মাতালো ইরানের লোকসংগীত দল ‘রাস্তাক’। এদিন পরিবেশনায় ছিল দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় সব লোকসংগীতের দল। তবে সব ছাড়িয়ে স্টেডিয়াম জুড়ে ইরানি লোকসংগীত দল রাস্তাকের প্রশংসা ছিল সবচেয়ে বেশি। ভাষা না বুঝলেও যে গান মানুষের হৃদয় জয় করতে পারে তা বোধ হয় রাস্তাকের পরিবেশনা না দেখলে এত সহজ ও সুন্দরভাবে বুঝা যেত না।
যাঁরা গান শুনতে গিয়ে কখনো মন থেকে হাততালি দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি তাঁরাও রাস্তাকের পরিবেশনার সময় হাততালি দিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। বাংলা চলচ্চিত্রে যাঁরা সাপের বাঁশি শুনেছেন তাঁরা খুব সহজেই এই গান আত্মস্থ করতে সক্ষম হবেন। তাঁদের চমৎকার পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন বাসুদেব বাউল। পশ্চিমবঙ্গের এই শিল্পী প্রথমেই গেয়েছেন ‘ছেড়ে দিলে মনের মানুষ আর তো পাব না’, শেষ করেছেন ‘পিরিতি কাঁঠালের আঠা’ গানটি গেয়ে। উৎসবের শেষ পরিবেশনা নিয়ে আসে আফ্রিকার তিনারিওয়েন।
হৃদয়গহিনে লোকসংগীত যে ধরনের অনুভূতির পরিস্ফুরণ ঘটায় তা কেবল সংগীতপাগল মানুষেরাই ভালো জানে। সুরের উচ্ছ্বাস ও তাল, লয়ের অনবদ্য শৈল্পিকতা হৃদয়ের গহিনে কী ধরনের অনুরণন ঘটায় তা কেবল সুরপিয়াসীরাই বোঝে।
নন্দনতত্ত্বের এই একটি মাধ্যমের দ্বারাই সারা বিশ্বের সব ভাষাভাষীর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া যায়। ভাষা যতই অপরিচিত হোক, কিন্তু মেলোডি আর সুরের উত্তাপ সুরের কাঙালদের মনমন্দিরে ভালোলাগা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেই। মুহুর্মুহু করতালি, উচ্ছ্বাস, নাচের উদ্দামতা আর ওয়ান মোর ধ্বনিতে আফ্রিকার মালির গানের দল তিনারিওয়েন ও দলটির প্রধান ভোকাল ইবরাহিম আগ আলহাবিবকে অভিনন্দিত করেছে প্রায় অর্ধলক্ষ সুরপিয়াসী। তিন রাতের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব ২০১৭’। আফ্রিকার মালির সংগীতের একটি বিশেষত্ব হলো আফ্রিকান ভাষার সাথে আরবি ভাষার সংমিশ্রণের ব্যতিক্রমী ফিউশন। আর এই ফিউশনের কারণেই আফ্রিকার দেশ মালির সংগীত সারা বিশ্বের সংগীত সমঝদারদের কাছে ব্যাপক সমাদর অর্জন করেছে। ইনস্ট্রুমেন্টাল আর মেলোডির ভিন্ন রকমের দ্যোতনা তৈরি করে মালির শিল্পীরা তাঁদের লোকসংগীতকে অনন্য এক উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। এবারের আসরে বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ১৪০ জন শিল্পী অংশ নেন।
বাউল সাধক শাহ আলম সরকার এবং পালাগানের শিল্পী আলেয়া বেগমের পালাগানের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় শেষ রাতের সুরের আসর। পালাগানের এই লড়াইয়ে শাহ আলম সরকার শরিয়তের ভূমিকায় আর আলেয়া বেগম ছিলেন মারফতির ভূমিকায়। দুজনই গানে গানে প্রশ্ন উত্তর, কখনোবা প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্নের মাধ্যমে পালা উপহার দেন। শাহ আলম সরকার গেয়ে শোনান ‘আকাশটা কাঁপছিল কেন’, ‘মায়ের কান্দন যাবত জীবন’, ‘বান্ধিলাম পীরিতের ঘর’, ‘খড়কুটার এক বাসা বাঁধলাম’সহ বেশ কিছু গান। এর জবাবে মারফতির ভূমিকায় থাকা আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মানুষও রতন, করো তারে যতন’। এভাবে একটার পর একটা গানের মধ্য দিয়ে শরিয়ত ও মারফতি তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন পালাগানের এই দুই শিল্পী। প্রায় ৪৫ মিনিটের এই পরিবেশনা লোকসংগীতের অনুরাগীদের মুগ্ধ করে রাখে। এরপর মঞ্চে আসেন দেশের লোকগানের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা শাহনাজ বেলী। লালনের দেহতত্ত্বনির্ভর গান ‘স্বভাব না হলে চাতক’ দিয়ে শুরু করে একে একে তিনি পরিবেশন করেন শাহ আবদুল করিমের ‘আইলা না আইলারে বন্ধু’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে’, ‘তুমি যাইও না যাইও কান্দাইয়া’ এবং সবশেষে হাছন রাজার গানের মধ্য দিয়ে মঞ্চ থেকে নামেন এই শিল্পী।
এরপর সুইডিস গিটার প্লেয়ার কাম গায়ক মিকাল হেমনিটি উইনথার গিটারের ধুন আর অসাধারণ গায়কীতে মুগ্ধতা ছড়ান সমগ্র স্টেডিয়ামে। এই পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন ভারতের বাসুদেব দাস বাউল। ‘তোমার হৃদমাজারে রাখব’ দিয়ে শুরু করে সোঁদামাটির গন্ধ মিশ্রিত সুরের উষ্ণতায় স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক শ্রোতাদের হৃদয়ে নিজের ঠাঁই করে নেন ভারতের এই বাউল। শেষ রাতের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ইরানের গানের দল ‘রাস্তাক’। ফারসি সংগীতের সাথে গিটার, বেজ গিটার, বাঁশি ও ঢোলের অপূর্ব সমন্বয়ে লোকসংগীতের ফিউশনে সংগীতের অনুরাগীদের হারিয়ে নিয়ে যান সংগীতের দ্যোতনায়।
ইরানের বিভিন্ন প্রদেশের সংগীত ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার ঢাকায় আসে দলটি। বিশ্বব্যাপী সংগীতের শ্রোতাদের কাছে ফারসি লোকসংগীত, ভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে অনবদ্য অবদান এই দলের। ১৯৯৭ সালে তেহরানে যাত্রা শুরু করে এই ফারসি লোকসংগীত দল।মূলধারার সংগীতের সঙ্গে ফারসি লোকসংগীতকে মিশিয়ে পরিবেশন করেন তাঁরা। এছাড়া ফারসি লোকসংগীত নিয়ে গবেষণাও করে দলটি। বিশ্বের সংগীতপ্রেমীদের কাছে ফারসি লোকসংগীতের নতুন দূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে রাস্তাক। রাস্তাকের দলনেতা সিয়ামক সেপেহরি মনে করেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে সংগীতের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাঁদের প্রাথমিক ভাবনা ছিল ইরানের ঐতিহ্যবাহী সংগীতকে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করা। এ জন্যই তাঁদের দেশের বিভিন্ন প্রদেশের সংগীতকে মিলিয়ে-মিশিয়ে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন তাঁরা।

ইরানীপ্রবাদ

سرمار به دست دشمن بکوب.
উচ্চারণ : সারে মা’র বে দাস্তে দোশমান বেকূব
অর্থ : সাপের মাথায় দুশমনের হাত দিয়ে আঘাত কর।
মর্মার্থ : এই প্রবাদের অর্থ, তোমার অসুবিধাগুলো অন্যের মাধ্যমে দূর কর।
سرم را بشکن حرفم را نشکن.
উচ্চারণ : সারাম রা’ বেশেকান হারফাম রা’ নাশেকান।
অর্থ : আমার মাথা ভাঙ, আমার কথা ভেঙ না।
মর্মার্থ : এই প্রবাদের মর্মার্থ, আমার কথায় নড়চড় করো না। যেমন বলা হয়, মানুষ বলতে এক কথার ওপর থাকতে হয়, আমি এক কথার মানুষ।
سرم را می شکنی نخودچی کشمش درجیبم می ریزی.
উচ্চারণ : সারাম রা’ মী শেকানী নোখোদচী কিশমিশ দার জীবাম মী রীযী।
মর্মার্থ : আমার মাথাটা ভেঙেছ আর দু-চারটা কিশমিশ আমার পকেটে দিচ্ছ।
মর্মার্থ : এই প্রবাদের মাধ্যমে বুঝানো হয়, আমার এত এত ক্ষতি করেছ আর এখন মুখরোচক কথা বলে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছ।
سر مرد می رود قولش نمی رود.
উচ্চারণ : সারে মার্র্দ মী রাওয়াদ কাওলাশ নামী রাওয়াদ।
অর্থ : মানুষের মাথা যায় তবুও তার কথা যায় না।
মর্মার্থ : মানুষ মরে যেতে পারে; কিন্তু তার কথায় হেরফের হতে পারবে না। যেমন বলা হয়, বিশ্বাস রক্ষার জন্য প্রয়োজনে জান দিয়ে দাও।
سرنا را از سر گشادش زدن.
উচ্চারণ : সুরনা’ রা’ আযসারে গোশা’দাশ যাদান।
অর্থ : সানাইকে তার বড় মুখ দিয়ে বাজানো।
মর্মার্থ : কোনো কাজ তার স্বাভাবিক নিয়মের উল্টা আঞ্জাম দেয়া। কোনো অনুচিত কাজ করা বুঝাতে এই প্রবাদের প্রচলন রয়েছে।
سرنخ را به دست آوردن.
উচ্চারণ : সারে নাখ রা’ বেদাস্ত আওয়ার্দান।
অর্থ : সুতার মাথা হাতে পাওয়া।
মর্মার্থ : কোনো কিছুর ক্লু বের করতে পারা বুঝাতে এই প্রবাদের প্রচলন অত্যন্ত ব্যাপক।
سروته یک کرباس بودن (کرباسند).
উচ্চারণ : সারো তা য়্যক কেরবা’স বূদান (কেরবা’সান্দ)
অর্থ : মাথা ও তলা এক কাপড় হওয়া।
মর্মার্থ : উভয়ে বা দুটিই একই ধরনের বা মাঝে কোনো পার্থক্য নেই বুঝাতে এই প্রবাদটি প্রচলিত।
অনুবাদ : আবু আব্দুল্লাহ

মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা ঈমানের শর্ত

ড. আহমাদ শাফাআত :
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা একজন ঈমানদারের ঈমান তথা বিশ্বাস এবং অন্তরের দৃঢ় প্রত্যয়ের পরিমাপক। আমাদের ঈমান শুধু তখনই সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ হবে যখন নবীর প্রতি আমাদের ভালোবাসা এ দুনিয়ার সকল কিছু, এমনকি আমাদের নিজ জীবন অপেক্ষা অধিক হবে। পবিত্র কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী, ঈমানদারদের নিকট মহানবী (সা.) এমনকি তাদের নিজ জীবন অপেক্ষাও অধিক অগ্রগণ্য হবেন। (সূরা আহযাব : ৬)
এটি সংজ্ঞায়িতকরণ স¤পর্কিত একটি বাক্য, যা আমাদেরকে বাতলে দিচ্ছে ঈমানদার হওয়ার মানে কী অর্থাৎ মহানবী (সা.)-কে গুরুত্ব প্রদান করা, এমনকি নিজের জীবন অপেক্ষা। এটা নিশ্চিতকরণে উল্লেখ্য যে, নবী করীম (সা.) এক হাদিসে বলেন : ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তার কাছে আমি নিজ সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা, এমনকি সমগ্র মানবজাতি অপেক্ষা প্রিয়তর হব।’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য রেওয়ায়াতে আরো বর্ণিত আছে : ‘তার জীবন, তার সম্পত্তি এবং তার পরিবার (অপেক্ষা)।’
মুমিনদের মধ্যে যারা উত্তম সেই সকল সাহাবি, বিশেষত যাঁরা ছিলেন শ্রেষ্ঠতমদের অন্তর্ভুক্ত, তাঁরা নবীজীর প্রতি এ রকমেরই ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন। মদিনার জনগণের পক্ষ হতে নবী করীম (সা.) সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁরা বলেন : ‘মহানবী (সা.) আমাদের নিকট আমাদের সহায়-স¤পত্তি, সন্তানাদি, পিতামাতা, পূর্বপুরুষ এবং প্রচ- পিপাসার্ত অবস্থায় ঠাণ্ডা পানি অপেক্ষা প্রিয়তর।’
নবী (সা.)-এর প্রতি এরূপ ভালোবাসার অর্থ
কোনো কোনো অবস্থায় এটা বেশ ¯পষ্টভাবেই বুঝতে হবে যে, মুমিনরা নবীজীকে এভাবেই ভালোবাসবে : কারণ, তিনি তো তাদের শিক্ষক, পথপ্রদর্শক এবং নেতা, আর তাঁর পক্ষে শিক্ষা দেওয়া, পথপ্রদর্শন করা এবং তাদেরকে নেতৃত্ব দেয়া অসম্ভব যদি তারা তাঁকে ভালো না বাসে। তবে ঈমান-এর জন্য নবীর প্রতি ভালোবাসা অতীব প্রয়োজনীয়- এই নীতির আরও গভীর অর্থ আছে।
মহানবীর প্রতি ভালোবাসার অর্থ হলো চরিত্রের সকল সৌন্দর্য ও মহত্ত্ব, সত্যবাদিতা, ন্যায়বিচার, নম্রতা এবং অন্তঃশক্তি থাকা, যা মানুষ অর্জন করতে পারে এবং পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে যা নবী করিম (সা.)-এর ছিল উচ্চতম মাত্রায়। মহানবীর প্রতি ভালোবাসা মানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের ভিতরে যে সকল কল্যাণ ও মহত্ত্ব সৃষ্টি করেছেন সে সবকিছু গ্রহণ এবং লালন করা ও সেগুলোর মহিমা প্রকাশ ও প্রচার করা।
এর আরও অর্থ হলো এই যে, মানবতাকে ভালোবাসা। শুধু এজন্য নয় যে, মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণতার সম্ভাবনা রয়েছে; বরং এই সম্ভাবনার বিষয়টি উপলব্ধিতে মানুষের যে সাধারণ অক্ষমতা রয়েছে এবং তার নিজের আর যেসব ত্রুটি ও দুর্বলতা আছে সেগুলো সত্ত্বেও তাঁকে ভালোবাসা। কেননা, নবী করীম (সা.) শুধু পরিপূর্ণ ও নিখুঁত মানুষ ছিলেন তা নয়, তিনি হাশরের দিনে আল্লাহর সামনে মানবজাতির প্রতিনিধিত্বও করবেন এবং তাদের পক্ষে সুপারিশও করবেন তাদের অপূর্ণতা ও দুর্বলতার জন্য।
এভাবে মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা আমাদেরকে মনে-প্রানে পূর্ণতার আকাক্সক্ষা লালনের মাধ্যমে পূর্ণতা অর্জনের পথে নিয়ে যায়, অন্যদিকে এটি আমাদের অপূর্ণতাকে মেনে নেয়ার এবং আল্লাহ্র অনুতপ্ত বান্দা হিসেবে তাঁর করুণা লাভে আশান্বিত হয়ে নিজের মধ্যে শান্তিতে থাকার প্রেরণা যোগায়। এ কারণেই নবীর প্রতি ভালোবাসা ঈমানেরই শর্তবিশেষ। কেননা, ঈমান তাহলে কী, যদি না তা আমাদেরকে আমাদের অসম্পূর্ণতা আর দুর্বলতাগুলোকে স্বীকার করে নিয়ে সেগুলোর জন্য অনুশোচনা করতে এবং অর্জন-অযোগ্য মনে হলেও পূর্ণতা অর্জনে উৎসাহিত করে? আর পূর্ণতা একেবারেই অর্জনাতীত কিছু নয়; বরং মানুষের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা পূর্ণতা অর্জনের যোগ্যতা দিয়েই রেখেছেন।
ঈমানের দুটি ঘনিষ্ঠভাবে আন্তঃসংযুক্ত দিক রয়েছে : একটি হচ্ছে ঐশী দিক যাতে আল্লাহকে স্বীকার করে নেয়া হয় এবং তাঁর সাথে একটা বোঝাপড়ার সম্পর্ক বজায় রাখা হয়। অপরটি হলো : নিজেকে বা নিজের পরিচয়কে চেনা বা জানা এবং নিজের সাথে একটা বোঝাপড়ার সম্পর্ক বজায় রাখা। এ দুটি দিক যেন একই মুদ্রার দুই পিঠ; একটিকে ছাড়া আরেকটি টিকতে পারে না। আল-কোরআন এবং হাদিসের বেশ কিছু বর্ণনায় এ দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ : মহানবী (সা.) এক হাদিসে বলেন : ‘যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে, সে তার প্রভুকেও চিনেছে।’ বিষয়টি আরেক দিক থেকে বিবেচনা করে আল-কোরআনে বলা হয়েছে : ‘…যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন।’ (সূরা হাশর: ১৯)
ইসলাম শব্দের অর্থ হলো : আল্লাহ্র সাথে বোঝাপড়ার সম্পর্ক যাকে কোরআনে সেই আত্মার সাথে তুলনা করা হয়েছে যে নিজের সাথে শান্তি স্থাপন করে চলে।
মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ঈমানের মানবিক দিক প্রতিফলিত হয়। মানুষ হিসেবে মহানবী (সা.) একজন ঈমানদারের সত্যিকারের পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। নবীর প্রতি তার ভালোবাসার অর্থ সে তার সত্যিকারের নিজ সত্তাকে চিনতে পেরেছে এবং সে তার নিজের সাথে শান্তিতেই আছে।
এর মানে হলো যে সে তার প্রভুকে চিনতে পেরেছে যার নিকট আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সে তাঁর সাথে শান্তিতেই আছে।
নবী করীমও (সা.) আমাদেরকে ভালোবাসতেন
ঈমানদারগণ যদি মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসেন তবে এই ভালোবাসার ক্ষেত্রে তারা কিন্তু প্রথম নয়। নবী করীমই সর্বপ্রথম ঈমানদারদেরকে ভালোবাসেন। আল-কোরআনই এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছে এভাবে : ‘(নবী) তোমাদের ক্ষতিতে অত্যন্ত মর্মাহত; তিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য যার পর নাই উদ্বিগ্ন। ঈমানদারদের জন্য তিনি অত্যন্ত দয়ার্দ্র আর রহমদিল।’ (সূরা তাওবা : ১২৮)।
মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসা শুধু যে ঈমানদারদের মধ্যে সীমিত ছিল তা নয়, আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টিকেই তিনি ভালোবাসতেন। আল্লাহ তা‘আলা আল-কোরআনে বলেন : ‘আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি (হে নবী) সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য রহমতস্বরূপ।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)
একথা ঠিক যে, মহানবী (সা.)-কে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছিল যারা নিজেদের ওপর জুলুম করার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। তাদেরকে তিনি দোজখের তিক্ত বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। তবে এটাও ছিল তাদের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা থেকে, শত্রুতা কিংবা ঘৃণা থেকে নয়। যে সকল লোক নিজেদের ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়, তাদেরকে তাদের মর্জির ওপর ছেড়ে দেয়া সব সময়ই একটি সহজ কাজ বটে। পক্ষান্তরে তাদেরকে ধ্বংসের সেই পথ থেকে সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন প্রচ- ভালোবাসা আর সৎসাহস। আর ঠিক এ কাজটাই করার চেষ্টা করে গেছেন মহানবী (সা.)। তিনি এ কাজে সফলও হয়েছিলেন জীবনের শেষ দিকে। এমনকি তাঁর শত্রুদের ক্ষেত্রেও তিনি যে রহমতের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সেটা সহজেই বুঝা যায় যখন মক্কা বিজয়কালে তিনি তাদের সকলকেই কত সহজেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন!
মহানবী (সা.) মানবতার জন্য কীভাবে কষ্ট ভোগ করেছিলেন
মানবজাতির জন্য মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার একটি নিদর্শন হলো এই যে, তিনি তাঁর বিরোধীদের হাতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের স্বীকার হয়েও তাদেরকে তাঁর বিজয়ের পর অবলীলায় ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
মহানবী (সা.) যখন তাঁর নবুওয়াতি মিশনের কাজ শুরু করেন, তখন তাঁর শহরের প্রায় সকল লোকই তাঁর বিরোধিতা করে যদিও তারা তাঁর জীবনের শুরু থেকেই তাঁকে একজন ব্যতিক্রমী সৎ এবং বুদ্ধিমান লোক হিসেবেই জানত। প্রথমদিকে তারা মৌখিকভাবে তাঁকে আক্রমণ এবং তিরস্কার ও অপমান করতে থাকে। পরে তারা মৌখিক আক্রমণের সাথে দৈহিক আগ্রাসনও যুক্ত করে দেয়। তারা তাঁর পথের ওপর কাঁটা ছড়িয়ে দিত, তাঁর গায়ে ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করত। একবার তিনি যখন ঘরে ফিরলেন তখনও তাঁর মাথায় ধুলোমাটি লেগেই ছিল। তাঁর মেয়ে অশ্রুসজল নেত্রে সেই ধুলোবালি মুছে দিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) তাঁর সমাজের মানুষেরা তাঁর সাথে যে আচরণ করেছে সেজন্য যতটা না কষ্ট পেয়েছিলেন তার চেয়ে অধিক কষ্ট পেয়েছিলেন নিজ কন্যার চোখে অশ্রু দেখে। তিনি এই বলে কন্যাকে সান্ত¡না দেন : ‘কেঁদো না, মা আমার! আল্লাহই তোমার বাবার সহায় হবেন।’
একবার তাঁর শহরের লোকজন নবী করীম (সা.)-এর ওপর ভিন্ন এক ধরনের আঘাত হানার চেষ্টা করল। একদিন নবীজী (সা.) কাজের লোক খুঁজতে বের হলেন। একটা লোকও তাঁর দিকে তাকালো না, কিংবা কথাও বলল না বা তাঁকে তিরস্কার বা অপমানও করল না। বাকহীন ভাষায় তারা নবীজীকে বুঝাতে চাইল : ‘তুমি আমাদের কেউ নও, কারণ, তুমি আমাদের ঐতিহ্যগত প্রথার বিরুদ্ধে কথা বল।’ আগে থেকে তিনি যেসব তিরস্কার ও অপমান সয়ে অভ্যস্ত ছিলেন এই ব্যাপারটাতে তিনি তার চেয়েও বেশি আহত হলেন।
মহানবী (সা.) যখন অনুভব করলেন যে, তিনি মক্কাবাসীদের সাথে পেরে উঠছেন না, তখন তিনি হজ উপলক্ষে মক্কায় আসা বাইরের লোকদের দিকে অধিকহারে নজর দিতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু আবু লাহাবের মতো লোকদের কারণে মক্কায় আগত তীর্থ যাত্রীদের মধ্যে তাঁর তৎপরতা বিফল হতে লাগল। আবু লাহাব নবীজীর পিছনে পিছনে যেত আর চিৎকার করে বলত : ‘এই লোককে বিশ্বাস করো না, সে মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক।’ একদিন নবীজী বিশেষভবে দুঃখভারাক্রান্ত হলেন। কিন্তু তিনি কিছুই করলেন না, শুধু ওপরের দিকে তাকিয়ে বললেন : ‘হে প্রভু! আপনি না চাইলে এমন হতে পারত না!’
৬২০ খ্রিস্টাব্দে নবীজী (সা.) সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি মক্কার বাইরে গিয়ে তাঁর বাণী প্রচার করবেন যাতে মক্কার বাসিন্দারা তাঁকে অনুসরণ করতে না পারে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি তায়েফকেই তাঁর প্রথম পছন্দ হিসেবে নির্বাচন করে। মক্কা থেকে ৬০ মাইল পূর্বে অবস্থিত এই তায়েফ ছিল নিকটতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। তায়েফের পথে ভ্রমণে যায়েদ ছিল তাঁর একমাত্র সঙ্গী। উঁচু-নিচু, পাহাড়-পর্বতসহ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে নবীজী (সা.) এক ক্লান্তিকর ভ্রমণে বের হলেন। তায়েফে তিনি ১০ দিন থাকলেন। গোত্রপ্রধান এবং সাধারণ মানুষের নিকট তাঁর বাণী পৌঁছালেন। কিন্তু তারা সবাই এ বলে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করল যে, নতুন এক ধর্মের জন্য তারা মক্কাবাসীদের সাথে স¤পর্ক নষ্ট করতে চায় না। যতই দিন যেতে লাগলো তায়েফবাসী ততই তাঁর ওপর চড়াও হতে থাকল। অবশেষে ১০ম দিনে তারা তাঁকে পথে পথে তাড়া করতে আর তাঁর ওপর প্রস্তর নিক্ষেপ করতে লাগল। এমনকি তিনি যখন শহর ছেড়ে চলে আসছিলেন, উত্তেজিত জনতা তাঁর পিছু নিল এবং তাঁকে তপ্ত মরু-বালুর মধ্য দিয়ে তাড়া করে মাইল তিনেক দূরে পাহাড়ের পাদদেশে না পৌঁছা পর্যন্ত ধাওয়া করতে থাকল। তখন তাঁর দুই পা থেকে রক্ত ঝরছিল। ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় রক্তমাখা পায়ে তিনি একটা বাগানে আশ্রয় নিলেন। যায়েদ নবীজীর প্রতি নিক্ষিপ্ত পাথর থেকে নবীজীকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে করতে অবশেষে নিজেই মাথায় পাথরের আঘাতে আহত হলেন।
কয়েক বছর পর নবীজী আরবের অন্যতম শহর মদিনায় যথেষ্ট সমর্থন লাভে সক্ষম হলেন। তিনি সেখানে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললেন। কিন্তু মক্কাস্থ তাঁর শত্রুরা তাঁকে মদিনায় হিজরতের আগেই জানে মারার ষড়যন্ত্র করল, যা সফলতার দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এমনকি শত্রুতাপূর্ণ মক্কা থেকে তুলনামূলক বন্ধুভাবাপন্ন মদিনায় হিজরতের পরও মহানবীর দুর্ভোগ চলতেই থাকল। কুরাইশ বংশ এবং তাদের প্রভাবাধীন অন্যান্য আরব গোত্র তাঁর ও
তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই যুদ্ধ বাধাতে থাকল। মদিনাতেও ইহুদিরা তাঁর ওপর ক্ষেপে গেল এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লাগল, এমনকি এক সময় নবীজীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার উদ্যোগ নিতেও কুণ্ঠিত হলো না। মুনাফিকরা ছিল নবীজীর গোপন শত্রু; তারা মুসলমান হওয়ার ভান করত মাত্র। তারাও ষড়যন্ত্র এবং নবীজীর বিরুদ্ধে কানাকানি শুরু করে দিল। এসবের একটি নোংরা উদাহরণ হলো তারা নবীজীর স্ত্রী হযরত আয়েশার বিরুদ্ধে চরিত্রগত অভিযোগ তুলল, যা নবীজীর জন্য যেমন বেদনাদায়ক ছিল তেমনি ছিল হযরত আয়েশার জন্যও। কখনো কখনো মুমিনগণও অনিচ্ছাসত্ত্বেও নবীজীর জন্য কষ্টের কারণ ঘটাত। দৃষ্টান্তস্বরূপ, তারা কখনো কখনো অভদ্রজনোচিতভাবে নবীজিকে একা ফেলে রেখে তাঁর কাছ থেকে চলে যেত আর তিনি একা একা দাঁড়িয়ে থাকতেন। আল-কোরআনের নি¤েœাক্ত আয়াতই এ কথার সাক্ষ্য বহন করে:
‘তারা যখন কোন ব্যবসাবাণিজ্য কিংবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে, তখন আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে যায়…’ (সূরা জুমআ : ১১)
অনেক বছর ধরেই মহানবী (সা.) এই সকল এবং এ রকম আরও বহু দুর্ভোগের স্বীকার হয়েছেন। নবুওয়াতি মিশন শুরুর আগে মানুষ সাধারণভাবে যা আশা করতে পারে এমন সবকিছুই তাঁর ছিল। সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধ ব্যবসা, সুন্দরী স্ত্রী, সুন্দর সুন্দর সন্তানাদি, বিশ্বস্ত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এবং সে সাথে ছিল নিজ এলাকাবাসীর আস্থা ও শ্রদ্ধা। চাইলেই তিনি মক্কায় অন্য যে কারো মতো আরামদায়ক জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কষ্ট আর দুর্ভোগের রাস্তাই বেছে নিয়েছিলেন। আর তিনি তা করেছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য এবং তাদের জন্য যারা অজ্ঞতাবশত তাঁকে নির্যাতন-নিপীড়নের স্বীকার বানিয়েছিল।

মহানবী (সা.)-এর কষ্ট-দুর্ভোগের অর্থ

মহানবীর জীবনের অন্য সকল দিকের মতো তাঁর কষ্ট-দুর্ভোগের মধ্যেও আমাদের জন্য শিক্ষণীয় আছে। এর মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হলো যে, এই দুনিয়া হচ্ছে ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা এবং সুবিচার-অবিচারের মধ্যে একটি যুদ্ধক্ষেত্র; যদিও আল্লাহ চান, পরিণতিতে ভালো বা শুভ, সত্য ও সুবিচারেরই জয় হবে। তিনি এও চান যে, এই বিজয় অতটা সহজ হবে না।
মহানবীর দুর্ভোগের মধ্যে এই মর্মে আমাদের জন্য রয়েছে ¯পষ্ট স্মরণিকা যে, মানুষের মধ্যে যেমন আছে প্রচণ্ড শুভ ও কল্যাণময়তা, তেমনি আছে বিশাল অশুভ ও খারাপের সম্ভাবনাও। মানুষের মধ্যে শুভ ও কল্যাণের যে উচ্চতম সম্ভাবনা রয়েছে মহানবী (সা.) ছিলেন সেই সম্ভাবনার প্রতীক। অপর দিকে, তাঁর বিরোধীরা ছিল ঠিক বিপরীত, অর্থাৎ সকল অকল্যাণ আর খারাপের প্রতীক। মহানবী (সা.) অবশ্য তাঁর আদর্শের বিরোধীদের এবং তাদের অশুভ তৎপরতাকে নিজ ভালোবাসা আর প্রজ্ঞার মাধ্যমে জয় করেছিলেন। তবে যারা মহানবীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল তাদেরকে নিন্দা করা আমাদের উচিত হবে না। কেননা, যে অজ্ঞতা আর গোয়ার্তুমীপূর্ণ লোকেরা মহানবীর দুর্ভোগের কারণ ছিল তা আমাদের সবার মধ্যেও আছে। কে জানে, আমাদের মধ্যকার কেউ মহানবীর জামানায় মক্কায় থাকলে সেই নবীজীর ওপর ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ কিংবা তাঁকে নির্যাতন করত না? না, মহানবী (সা.) এজন্য কষ্ট ভোগ করেন নি যে, আমরা কাউকে নিন্দা করব। তিনি ভুক্তভোগী হয়েছিলেন এ জন্য যে, আমরা যেন আশাবাদী আর বিনয়ী হই। তিনি দুর্ভোগ সয়েছিলেন এ জন্য যে, আমরা যেন আমাদের ভিতরে শুভ ও কল্যাণ কতখানি আছে তা খুঁজে নিতে পারি এবং একইভাবে খুঁজে বের করি সকল পাপের মূল কারণ অজ্ঞতা আর একরোখা ভাব কতখানি আছে। আমাদের ভিতরকার এ দুটি জিনিসেরই সম্ভাবনা আমাদেরকে দেখে নিতে হবে। প্রথমটি আমাদেরকে আমাদের এবং সাধারণভাবে মানুষের ভাগ্যে আশা যোগায় আর দ্বিতীয়টি আমাদেরকে বিনয়ী করে তোলে। আর সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো বিনয় এবং আশা।
এভাবে দেখা যাচ্ছে যে, ====== মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার কারণে আমাদের চিন্তা করা উচিত যে আমাদের সকলের ভিতরেই অশুভ-অকল্যাণের সম্ভাবনা আছে এবং সেই সাথে ঐ অকল্যাণকে আমাদের দমনও করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। পাপচিন্তাকে দমন করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে মহানবীকে ভালোবাসা। কেননা, আমরা যত বেশি তাঁকে ভালোবাসব তত বেশি আমরা আমাদের ভিতরকার নেকচিন্তাকে শক্তিশালী করব এবং ঠিক ততই আমরা পাপচিন্তাকে দমন করতে সক্ষম হব। =====

মহানবী (সা.)-কে মহিমান্বিত করা

মহানবী (সা.)-এর প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করা যেতে পারে তাঁকে মহিমান্বিত করা ও তাঁর ওপর দরুদ ও সালামের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে সালাত আলান্নাবী এর মতো একটিমাত্র পরিভাষার সাহায্যে তিনটি দিক তুলে ধরা হয়েছে। আরবি সালাত আলা তিনটি অর্থ প্রকাশ করে থাকে :
১. ভালোবাসা ও অনুরাগের সাথে কারো প্রতি মনোযোগী হওয়া
২. কাউকে মহিমান্বিত করা বা তাঁর প্রশংসা করা
৩. কাউকে আশীর্বাদ বা অনুগ্রহ করা।
উপরিউক্ত আয়াতে সবগুলো অর্থ একসাথে মিলিয়ে আয়াতটির অনুবাদ করা যায় এভাবে :
‘নিঃসন্দেহে, আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর ভালোবাসা, মহিমা এবং আশীর্বাদ প্রেরণ করে; হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার ওপর ভালোবাসা, মহিমা এবং আশীর্বাদ প্রেরণ কর আর তাকে যথাযোগ্য সম্মানে সালাম করো।’ (সূরা আহযাব : ৫৬)
আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ কীভাবে নবীর ওপর ভালোবাসা, মহিমা এবং আশীর্বাদ প্রেরণ করেন আর আমরাই বা কীভাবে তা করি?
ন্যূনতম যেভাবে আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসেন তা হলো এই যে, যে-ই তাঁকে অনুসরণ করবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন। আল-কোরআন বলছে :
‘বলুন (মানবজাতিকে, হে মুহাম্মাদ!) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন…” (সূরা আলে ইমরান : ৩১)
আল্লাহ তা‘আলা আর কীভাবে নবী করিমকে ভালোবাসেন তা শুধু তিনিই জানেন।
আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে নবীকে মহিমান্বিত করেন সেগুলো নি¤œরূপ :
১. তিনি তাঁর নাম দিয়েছেন আহমাদ আর মুহাম্মাদ যার অর্থ মহিমান্বিত, প্রশংসিত।
২. তিনি অন্যান্য নবীর মাধ্যমে তাঁর আগমনের সুসংবাদ মানবজাতিকে দিয়ে এসেছেন। (সূরা আলে ইমরান : ৮১, সূরা আরাফ : ১৫৭, সূরা আনআম : ৬১)
৩. তিনি আসমান ও জমিনের বাসিন্দাদের মধ্যে তাঁর নাম ঘোষণা করে থাকেন : ‘আমরা আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।’ (সূরা ইনশিরাহ : ৪)
আল্লাহ নবী (সা.)-কে আশীর্বাদ করে থাকেন মাঝেমাঝেই তাঁর মর্যাদা উন্নয়নের মাধ্যমে। মহানবীর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার ন্যূনতম আশীর্বাদ হলো : তিনি তাঁকে সমগ্র মানবজাতির নেতা ও প্রতিনিধি বানিয়েছেন।
ফেরেশতাগণ মহানবীকে ঠিক সেভাবেই ভালোবাসেন যেভাবে একজন রাজার পরিপূর্ণ বিশ্বস্ত চাকর রাজার প্রিয়ভাজনকে ভালোবেসে থাকে। তাঁরা জান্নাতে তাঁর নামের প্রশংসা করার মাধ্যমে নবীজীর মহিমা প্রকাশ করে থাকেন। আল্লাহকে বেশি বেশি নবী করীমের ওপর দরুদ পাঠ করতে বলার মাধ্যমে মহানবীর ওপর আশীর্বাদ প্রেরণ করে থাকেন।
মুমিনগণ ন্যূনপক্ষে যেভাবে মহানবীকে ভালোবাসতে পারে তা হলো তাঁকে সেইভাবে ভালোবাসা যেভাবে মানুষ তাদের নেতাকে ভালোবাসে। আর যে রকম উত্তমভাবে তাঁকে ভালোবাসা যায় তা হলো তাঁর নামে নিজের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকা।
মুমিনগণ যেভাবে নবীজীর মহিমা প্রকাশ করতে পারে তা হলো কাব্যিক ভাষা ও গদ্যে তাঁর প্রশংসা করা, লেখনী ও কথার মাধ্যমে, রেডিও ও টেলিভিশনে, (আজকাল ইন্টারনেটে), মুসলমান ও অমুসলমানদের সমাবেশে ইত্যাদি।
মুমিনগণ যেভাবে নবীজীকে আশীর্বাদ করতে পারে সেটা হলো যে প্রচলিত যেসব বিভিন্ন রকমের দরুদ আছে সেগুলো পাঠ করা এবং আল্লাহর কাছে দোআ করা যেন তিনি নবীজীকে বেশি বেশি আশীর্বাদ করেন।
(কিছু কিছু ফকিহ বা মুসলিম আইনবিদের মতে, আলোচ্য আয়াতটির মর্ম অনুযায়ী জীবনে অন্তত একবার মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়লে তাঁর ওপর দরুদ পড়ার ক্ষেত্রে মুমিনদের দায়িত্ব পালন হয়ে যায়। অন্যদের মতে, যত বার নবীজীর নাম উচ্চারিত হবে তত বারই দরুদ পড়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ ধরনের শুষ্ক আইনি ব্যাখ্যায় আয়াতটির প্রতি সুবিচার করা হয় বলে আমার মনে হয় না। ঈমানের দাবিই যদি হয় মহানবীকে আমাদের জীবনের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে এবং তাঁকে ভালোবাসতে হবে আমাদের সন্তানাদি, পিতা-মাতা এবং সমগ্র মানবজাতি অপেক্ষা, তাহলে প্রথাগত একটা গৎবাঁধা ফর্মুলাকে ফরজ মনে করে কেন আওড়াতে হবে?)
দরুদ পাঠ : আয়াতটিতে মুমিনদেরকে যথাযথ সম্মানের সাথে নবীজীর ওপর দরুদ পড়তে বলা হয়েছে। দরুদ পড়ার মাধ্যমে আমরা নবীজীর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারি। কেননা, সব ধরনের দরুদের মধ্যেই নবীজীর প্রতি প্রশংসাজ্ঞাপক ভাব আছে। এটা অবশ্য নবীজীকে সম্মান করার ন্যূনতম পন্থা। উত্তম পন্থা হলো নবীজীকে মনেপ্রাণে আমাদের নেতা হিসেবে এবং শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক হিসেবে মেনে নেয়া আর তাঁকে আন্তরিক চেতনার সাথে মান্য করা।
মহানবী (সা.)-এর মহিমা প্রকাশে আমরা কতদূর অগ্রসর হতে পারি?
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্য সব প্রশংসাই উপযুক্ত যদি তা মহানবীকে একজন মানুষ এবং আল্লাহর সৃষ্টির পর্যায় থেকে ওপরে না উঠায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আমরা ঘোষণা করতে পারি যে, মহানবী (সা.) আল্লাহর সমস্ত নবী-রাসূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। তিনি সকল সৃষ্টির সেরা ও মধ্যমণি। এই ধরনের প্রশংসাবাক্য যে নবী করীম (সা.)-এর ব্যাপারে প্রযোজ্য তার প্রমাণ পাওয়া যায় আল-কোরআনের ভাষ্য থেকে। কেননা, পবিত্র কোরআন অনাগত ভবিষ্যতের জন্য মহানবীকে আল্লাহর রাসূল এবং সমগ্র মানবজাতির ওপর রহমত হিসেবে উপস্থাপন করে, যেখানে অন্যান্য নবী-রাসূলের মিশন ছিল নির্ধারিত সময়কাল ও অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইসলামি আক্বিদার মধ্যে এও ¯পষ্ট যে, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আগেকার নবিগণের মিশনকে পরিপূর্ণ করেছিলেন যারা মাত্র আংশিক বা অসম্পূর্ণ অহি প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হাদিস থেকেও এ কথার সমর্থন পাওয়া যায় যে, নবী মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন সর্বসেরা নবী (কাজেই সৃষ্টির সেরা, যেহেতু মানুষ আল্লাহর উত্তম সৃষ্টি এবং সর্বসেরা নবীই আল্লাহর সেরা সৃষ্টি)। এভাবে হাদিসের সকল গ্রন্থ থেকেই আমরা যে বর্ণনা পাই তাতে দেখা যায় : মহানবী (সা.)-কে মেরাজের উদ্দেশ্যে যখন মক্কা থেকে জেরুজালেমের মসজিদে নেয়া হয় তখন পূর্বেকার সকল নবীর সাথে তাঁর দেখা হয় এবং তিনি তাঁদের সাথে ইমাম হিসেবে জামাআতে নামায পড়ান। আবার, সহিহ মুসলিম শরীফে ‘সমগ্র সৃষ্টির ওপর মহানবীর শ্রেষ্ঠত্ব’ শিরোনামে একটি অধ্যায় আছে এবং এতে এ মর্মে একটি হাদিসও আছে :
আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম (সা.) বলেন : ‘বিচার দিবসে আমিই হব সকল আদম সন্তানের নেতা। আমার কবরকেই প্রথম উন্মোচিত করা হবে। আমিই প্রথম শাফাআতকারী হব আর আমার শাফাআতই সর্বপ্রথম গৃহীত হবে।’
কিছুসংখ্যক মুসলমান মহানবী (সা.)-কে সকল নবীর সেরা ঘোষণা করতে দ্বিধান্বিত হয়ে থাকে। কেননা, কোরআনে বলা হয়েছে : ‘তারা মুমিনগণ আল্লাহর নবিগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না’ (সূরা বাকারা : ২৮৫)
কিন্তু পবিত্র কোরআন এও বলছে : ‘এ সকল রাসূলের মধ্যে আমরা কাউকে কাউকে অন্যদের ওপরে প্রাধান্য দিয়েছি।’ (সূরা বাকারা : ২৫৩)
অন্যান্য আয়াতকে উপেক্ষা করে যদি আমরা প্রথম আয়াতটির ওপরেই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত না করি, তাহলে এটা ¯পষ্ট হয়ে যায় যে, পবিত্র কোরআন নবিগণের প্রকৃতি এবং তাঁদের অবস্থান বা মর্যাদার মধ্যে পার্থক্য করে থাকে। প্রথম আয়াতটি আমাদেরকে বলছে যে, প্রকৃতির দিক থেকে বিভিন্ন নবীর মধ্যে কোন তফাত নেই : তাঁরা সকলেই এক সত্যপ্রভু কর্তৃক প্রেরিত হয়েছিলেন, সকলেই আল্লাহর একই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন, সকলে মানুষ ছিলেন এবং এক খোদার নেক বান্দাদের একই ভ্রাতৃত্বের অংশ ছিলেন। দ্বিতীয় আয়াতটি বলছে যে, অবস্থান বা পদমর্যাদার দিক থেকে কোন কোন নবী-রাসূল অন্যদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
কাজেই, ==== এ মর্মে ঘোষণা দানের ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে সামান্যতম দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই যে, নবী মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন সকল নবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ; কাজেই তিনি ছিলেন মহত্তম মানুষ এবং আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টির মধ্যমণি ও গৌরব। ===
কিছুসংখ্যক মুসলমান নবী করীম (সা.)-এর প্রতি ভক্তি-ভালোবাসাকে নিরুৎসাহিত করেন দুটি কারণে : এক, অতিরিক্ত ভক্তি-ভালোবাসা নবীকে খোদার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, অর্থাৎ এতে র্শিক-এর আশঙ্কা আছে; দুই, ভক্তি-ভালোবাসা প্রকাশের কারণে নবীজীর বাণী এবং আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
দ্বিতীয় আশঙ্কাটি ভিত্তিহীন। কেননা, নবীজীর প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা প্রকাশ করা আল্লাহরই নির্দেশমাত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : ‘তাকে ভালোবাস, আশীর্বাদ করো আর তার প্রতি দরুদ পাঠ করো যথাযথ সম্মানের সাথে।’
মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসার প্রকাশ অবাধ্যতার দিকে নিয়ে যেতে পারে না। বস্তুত এটি বরং ঈমানের জন্যই প্রয়োজন। সত্যিকারের আনুগত্যের জন্যও এটি একান্ত প্রয়োজন।
প্রথম আশঙ্কাটির কিছুটা ভিত্তি আছে। সত্যি বলতে কি, নবীজী নিজেও আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে, বিশেষত যারা তাদের নবীদের প্রশংসায় অতিরঞ্জন দোষে দুষ্ট ছিল এবং নবিগণকে তারা খোদার আসনে বসিয়েছিল। এভাবে তারা শিরকে নিমজ্জিত হয়েছিল যা সবচেয়ে মারাত্মক গুনাহ। তবে, র্শিক বা অংশী পূজার সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে নবীর প্রতি আমাদের ভক্তি-ভালোবাসার আগুনে শীতল পানি ঢেলে দেয়াও ভুল হবে। কেননা, সেটা হবে ঈমান ধ্বংস করে র্শিক ধ্বংসের শামিল, যা নিঃসন্দেহে অবিজ্ঞজনোচিত কৌশল।
ঈদে মিলাদুন্নবী (নবী করীম সা.-এর জন্মদিন) সহ অন্য আরো উপলক্ষসমূহে আমরা তাহলে আন্তরিক ও উদারভাবে এবং কৃপণতা না করে নবী করীম (সা.)-এর প্রতি আমাদের সেই রকম ভক্তি-ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি যা স্বয়ং আল্লাহ বাদে অন্য কারো প্রতি করা যায়।
মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠের উপকারিতা
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরুদ প্রেরণ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করো উপযুক্ত সম্মানের সাথে।’ (সূরা আহযাব : ৫৬)
১. যে ব্যক্তি একবার নবীর ওপর দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশ বার আশীর্বাদ পাঠাবেন, তার দশটি গুনাহ মুছে দেবেন এবং তার মর্যাদা দশ গুণ বাড়িয়ে দেবেন। (মিশকাত)।
২. শেষ বিচারের দিনে ঐ ব্যক্তি আমার নিকটতম হবে যে এই নশ্বর দুনিয়ায় আমার ওপর সর্বাধিক দরুদ পাঠ করেছে। (তিরমিযি)
৩. (সত্যিই) ঐ ব্যক্তি কৃপণ যে আমার নাম উচ্চারিত হতে শুনেও আমার ওপর দরুদ পড়ে না। (মিশকাত)
৪. তোমরা তোমাদের সভাসমূহ অলংকৃত করো আমার ওপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে। কেননা, শেষ বিচারের দিনে এই দরুদই তোমাদের জন্য ঐশী আলোয় পরিণত হবে। (জামিউস সাহিহ)
৫. শুক্রবার বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা, শুক্রবার হচ্ছে ‘সাক্ষী হিসেবে ফেরেশতাদের উপস্থিতির দিন’। এইদিন ফেরেশতারা আমার দরবারে হাজিরা দেয়। এবং নিঃসন্দেহে তোমাদের যে কেউ দরুদ পাঠ করবে, দরুদ পাঠ শেষ হওয়ার আগেই তা আমার দরবারে পৌঁছে যায়। (জামিউস সাহিহ)
৬. শুক্রবারের মহিমান্বিত রাতে অর্থাৎ বৃহ¯পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাতে এবং শুক্রবার দিবসে তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়। কেননা, তোমাদের পাঠকৃত দরুদ ফেরেশতাদের মাধ্যমে আমার কাছে উপস্থাপিত হয়। (জামিউস সাহিহ)।
৭. শুক্রবার এবং শুক্রবার রাতে (বৃহ¯পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাত) তোমরা অধিক হারে দরুদ পাঠ করো। কেননা, যে-ই এমন করবে আমি তার সাক্ষী হব এবং শেষ বিচারের দিনে আমি তার পক্ষে কথা বলব। (জামিউস সাহিহ)
অনুবাদ : মিয়া আব্দুল আউয়াল

মুসলিম উম্মাহর বর্তমান সংকট এবং ইসলামি সংহতি

অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা :

বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ বর্তমানে এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি। বিশেষত তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলি এবং ইসরাইল সংলগ্ন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলো নানমুখী চক্রান্ত, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কলহের শিকার। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল অনেক আগে। মধ্যপ্রাচ্যে ‘ইসরাইল’ নামে একটি বিষফোঁড়া তৈরির পরিকল্পনা নিহিত ছিল ১৯১৭ সনের ২রা নভেম্বর তদানিন্তন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোর একটি ঘোষণায় যা বেলফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। এরই সূত্র ধরে ১৯৪৮ সনে কৃত্রিম রাষ্ট্র ইসরাইলের সৃষ্টি। ইসরাইলে বসবাসকারী ইহুদিরা সেখানকার ভূমিপুত্র নয়। বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে ইহুদিদের তুলে এনে ইসরাইলে আবাসন করা হয়। অন্যদিকে ফিলিস্তিনীরা হয়ে যায় নিজ দেশে পরবাসী। ইসরাইল তাদের ওপর নানারকম দলন, পীড়ন ও নির্যাতন শুরু করে। তারই জের ধরে ফিলিস্তিনীরা শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ। ইসরাইল রাষ্ট্র অসংখ্য ফিলিস্তিনীকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে। তারা পালিয়ে গিয়ে প্রথমে আশ্রয় নেয় জর্ডানে। সেখান থেকে বিতাড়িত হবার পর লেবাননে ঠাঁই নেয়। সেখানেও ইসরাইলি হানাদার বাহিনী ফিলিস্তিনী উদ্বাস্তুদের ওপর চড়াও হয় এবং তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ১৯৬৭ সনে আরব- ইসরাইল যুদ্ধে জায়নবাদী শক্তি জেরুজালেম দখল করে নেয়। জেরুজালেমে মুসলমানদের প্রথম কিবলা এবং তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-কুদ্স অবস্থিত যা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ নামেও খ্যাত। এ পবিত্র মসজিদে মুসলিম উম্মাহর গমনাগমন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। পবিত্র এ মসজিদে জায়নবাদীরা আগুন দিয়েছে এবং আগত মুসল্লিদের আহত করেছে। ১৯৬৭ সনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে সকল মুসলিম রাষ্ট্র মিলে ১৯৬৯ সনে গঠন করে অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স। পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে অরগানইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন করা হয়। আশি ও নব্বইয়ের দশকে ওআইসি দৃশ্যমান ভূমিকা পালন করে এবং ইরাক-ইরান যুদ্ধে মধ্যস্থতাসহ মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ১৯৭৩ সনে দ্বিতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইল মিশরের সিনাই উপত্যকা এবং সিরিয়ার গোলান উপত্যকা দখল করে নেয়। তারা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি জনপদে ভীতি জাগনিয়া পরিবেশে তৈরি করে এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনীকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৮০ সনে শুরু হয় ইরাক-ইরান যুদ্ধ যা দীর্ঘ কয়েক বছর অব্যাহত থাকে। এ যুদ্ধে ইরানকে ধ্বংস করার জন্য পাশ্চাত্য শক্তিরা ইরাককে সমরাস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করে ও ইরান আক্রমণে প্রলুব্ধ করে।
কিন্তু ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন যুদ্ধে জয়ী হতে পারেন নি; বরং দেশটির সামরিক শক্তি খর্ব হয় এবং অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়। পরবর্তীকালে সাদ্দাম হোসেন তার পৃষ্ঠপোষক পাশ্চাত্য শক্তির মিত্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কুয়েত আক্রমণ করে তা দখল করে নেন। এতে পাশ্চাত্য শিবিরের টনক নড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী ইরাক আক্রমণ করে সাদ্দামের পতন ঘটিয়ে কার্যত দেশটি দখল করে নেয়। তারপর ইরাকে শুরু হয় অন্তহীন ভাতৃঘাতী রক্তক্ষয় আর নজিরবিহীন ধ্বংসলীলা। মারা যায় হাজার হাজার ইরাকি নাগরিক এবং অনেকগুলি তেলক্ষেত্র পুড়ে ছাই ভষ্ম হয়। মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রগুলোর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। যদিও দীর্ঘ রক্তক্ষয় ও কয়েক দফা পট পরিবর্তনের পর ইরাকিরা একটি সরকার গঠনে সক্ষম হয় এবং বহুধাবিভক্ত ইরাককে একটি একক সরকার ব্যবস্থায় ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে আত্মঘাতী বিমান হামলায় নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত এবং পেন্টাগনসহ অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ঘটনার পরপরই আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন এবং বেপরোয়া বিমান হামলায় দেশটিকে বিরানভূমি করে ফেলেন। একদিন সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তারা যে তালেবান গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে তাদের হটিয়ে সেখানে শিখণ্ডি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি পাকিস্তনের পাখতুন প্রদেশের পাহাড়ি উপত্যকায় কথিত পলাতক তালেবানদের ওপর ড্রোন হামলা চালিয়ে দেশটির সার্বভৌমত্বে আঘাত হানছে। ইরাক এবং আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের ভদ্রোচিত নাম দেয়া হয়েছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। যদিও কার্যত তা ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। পাশ্চাত্য শক্তি সমাজতন্ত্রের পতনের পর ইসলামকেই সারাবিশ্বের জন্য পরবর্তী উদীয়মান শক্তি হিসেবে সনাক্ত করতে পেরেছিল। সেজন্য দেশে দেশে ইসলামি শক্তির উত্থান ঠেকানোর একটি নীল নকশা ছিল বুশ-ব্লেয়ারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তারা কখনও অত্যাচারী, নির্দয় এবং নিষ্ঠুর জায়নবাদী শক্তিকে সন্ত্রাসী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেনি। ইসরাইল তাদের চোখের সামনে ফিলিস্তিনীদের বসতি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। কিন্তু পাশ্চাত্য শক্তি কোন রা করে নি। পরবর্তীকালে ফ্রান্সের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী প্রধানত বিমান হামলার মাধ্যমে লিবিয়ায় মোয়াম্মার গাদ্দাফীকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং দেশটিকে বহুধাবিভক্ত করে ফেলে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য শক্তি ইসরাইলের কট্টর বিরোধী ইরানের শক্তি খর্ব করার জন্য নানারকম চেষ্টা অব্যাহত রাখে। তারা ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মিথ্যা অভিযোগ তুলে এবং নানা রকম অবরোধ আরোপ করে তাকে পদানত করার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু বারবার ইরানের পারমাণবিক চুল্লি পরিদর্শন করে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশন সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের কোন প্রমাণ পায় নি। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় পরাশক্তি এ বিষয়ে ইরানের সাথে চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য হয়। ইতঃপূর্বে জায়নবাদী শক্তি প্রথমে ১৯৮৫ সনে এবং পরে ২০০৬ সনে দক্ষিণ লেবাননে সামরিক আগ্রাসন চালায়। কিন্তু লেবাননী সেনাবাহিনী বিশেষত হিজবুল্লাহর দৃঢ় প্রতিরোধের মুখে হানাদার ইসরাইলি বাহিনী শোচনীয় পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করে। একইভাবে তারা গাজায় ২০১১ সনে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে হামাসের তীব্র প্রতিরোধের মুখে সরে যেতে বাধ্য হয়। মুসলিম বিশ্বের বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের এ জটিল সন্ধিক্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার রাজকীয় মিত্রের সহযোগিতায় সিরিয়া ও ইরাকের বড় একটি অংশ জুড়ে খেলাফত প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত ইসলামি স্টেট, সংক্ষেপে আইএসকে মদদ দেয়। আইএস সিরিয়ার রাকা ও ইরাকের মসুল শহরে মূল ঘাঁটি স্থাপন করে ইরাক ও সিরিয়ার এক বিশাল অংশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার বাতাবরণে তা-বলীলা শুরু করে। আইএসের আক্রমণের শিকার হয় ভাতৃপ্রতীম মুসলিম নারী-পুরুষ। এখন হীনবল আইএসকে তারা ত্যাগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দুর্বল করার জন্য সিরিয়ায় বাশার সরকারের পতন ঘটাতে চাইলেও সফলকাম হয়নি। অন্যদিকে সৌদি আরব প্রতিবেশী ইয়েমেনে নিরন্তর হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা এবং তাদের সহায়-সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করছে। মুক্তিকামী হাউছি বিদ্রোহীদের সমর্থন করায় দেশটি ইরানের ওপর ক্ষিপ্ত। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য জায়নবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার অভিযানের জন্য কাতার এবং আল জাজিরা এখন সৌদি আরবের চক্ষুশুল। এই দেশটির ওপর উপসাগরীয় দেশগুলির সংস্থা জিসিসি চাপিয়ে দিয়েছে নানারকম অবরোধ ও বিধিনিষেধ। হালে লেবাননের সুন্নি প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরীর সৌদি আরবে বসে পদত্যাগ পত্র প্রেরণ নিয়ে কম নাটক হয় নি। গোটা ভারতে গো-হত্যা ও গো-মাংস ভক্ষণের বিরদ্ধে বিজেপির মূলশক্তি আরএসএস মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে গো-হত্যা ও গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ করে আইন প্রণীত হয়েছে । শুধু গো-মাংস ভক্ষণ নয়, গো-মাংস বহনের জন্য ভারতীয় মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। ওআইসি কার্যকর না থাকায় বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোকাস পাচ্ছে না। আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমার অতিসম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংসতম জাতিগত নিধন, ধ্বংসলীলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। শুধু চলতি বছরের ২৫ অক্টোবরের পর সেখান থেকে ৬ লাখের অধিক নারী-পুরুষ পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার বিশ্ব জনমতকে থোড়াই কেয়ার করেছে। তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বললেও তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না কিংবা কবে তাদের ফেরৎ নিবে তার সুস্পষ্ট সময় সীমা উল্লেখ করছে না। বরং আন্তর্জাতিক ফোকাস সরিয়ে দিতে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক সম্পাদন করেছে। মিয়ানমারের অবস্থানকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চীন, রাশিয়া এবং ভারত। মুসলিম উম্মাহ আজ চতুর্মুখী আক্রমণের শিকার। একদিকে পাশ্চাত্য শক্তি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে মুসলিম উম্মাহর ওপর চড়াও হয়েছে। অন্যদিকে ভারত, চীন, রাশিয়ার মতো দেশের ভূমিকাও মুসলিম-বান্ধব নয়। আর এই দুই পক্ষের সাথে জায়নবাদী শক্তির সখ্য আছে। পরিস্থিতি দেখে সেই হাদিসের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আল কুফরু মিল্লাতু ওয়াহিদাতুন। এর মোকাবেলায় মুসলিম উ্ম্মাহ দ্বিধাবিভক্ত। মুসলিম বিশ্বের একাংশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত। ইসরাইল সরকারের একজন কর্মকর্তা এধরনের যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন। এর পরিণতি ভয়াবহ। ইসরাইলের শত্রুরা মুসলিম উম্মাহকে দ্বিধাবিভক্ত করে প্রথমে একপক্ষকে অবদমিত করতে চায়। তা যদি করতে পারে অন্য পক্ষেরও শেষ রক্ষা হবে না। কেননা, মাজহাবী বিরোধ উস্কে দিয়ে বিভাজন আরো গভীর করা হয়েছে। এর জের ধরে বিশ্বের মনযোগ হারাতে বসেছে আল-কুদ্স, ফিলিস্তিন, রোহিঙ্গা মুসলিম, কাশ্মীর, উইঘর যা প্রতিপক্ষ মনে-প্রাণে কামনা করে। মাজহাবী বিতর্ক ও বিরোধ নিতান্তই অর্থহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। শিয়া বা সুন্নি কেউই ইসলামের মৌলিক স্তম্ভের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে না। তাওহীদ, রিসালত, আখেরাতÑ এসব মৌলিক বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ নেই। ইমামত নাকি খেলাফত এই গৌণ ইস্যুতে শিয়া-সুন্নি বিভাজনের কোন মানে হয় না। কাজেই শত্রুপক্ষের প্ররোচনায় এসব মাজহাবী বিরোধ ও বিতণ্ডায় পা না দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই ঐক্য নিছক বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার্থে ইসলামি সংহতি অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে অগ্নিগর্ভ মধ্যপ্রাচ্য আরো বহুধা বিভাজিত হবে, আরো রক্তক্ষরণ হবে। আল-কুদ্সকে জায়নবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করা যাবে না। কাশ্মীরের মুসলমানরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে না, রোহিঙ্গারা নাগরিক স্বীকৃতি নিয়ে ফিরতে পারবে না স্বদেশে। এমনকি রাজতন্ত্রের অধীন মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে। এই অপয়া সময়ে আমীর, বাদশা, খলিফাদের দিকে না তাকিয়ে মুসলিম উম্মাহর আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলামি চিন্তাবিদ ও মুসলিম মনীষাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন বাঞ্ছনীয়।
লেখক : সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
[পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষে
ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে
বিএমএ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রবন্ধটি পঠিত হয়।]

সাক্ষাৎকার

 

গত ৫-৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজধানী তেহরানে ‘ইসলামি ঐক্য ও নতুন ইসলামি সভ্যতা’ শীর্ষক ৩১তম আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে ৫২০ জন বিদেশী অতিথি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ থেকে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জনাব ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ও বাংলাদেশ আল কুদস কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ। আমরা তাঁদের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি যা নিউজলেটারের পক্ষ থেকে পাঠকদের উদ্দেশে পত্রস্থ হল।
প্রশ্ন : মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিবসÑ ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন উপলক্ষে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ পালন ও আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলনের আয়োজনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
জনাব ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া : মহানবী (সা.)-এর জন্মদিবস পালন উপলক্ষে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ পালন ও আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলন আয়োজন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা । সারা পৃথিবী থেকে আগত সকল মুসলিম প্রতিনিধি নিয়ে এ ঐক্যের ডাক ইরানের জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সুন্নি সম্প্রদায় ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১২ই রবিউল আউয়াল পালন করে থাকলেও ইরান তা পালন করে থাকে ১২ই রবিউল আউয়াল থেকে সপ্তাহব্যাপী, যা মুসলিম উম্মার ঐক্যের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী বিপ্লবোত্তর এ প্রথাই চালু করেছেন। শিয়া- সুন্নির ঐক্যের জন্য এ সম্মেলন একটি মাইলফলক।
অধ্যাপক ড. শাহ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে কেন্দ্র করে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উদ্যাপন ও শিক্ষাবিদ ও ইসলামি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ ধরনের আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলনের আয়োজন নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐক্যের পক্ষে কার্যকরী উদ্যোগ। ইসলামি ঐক্যের পক্ষে এটি একটি সফল প্রয়াস বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন : তেহরানে আয়োজিত ৩১তম আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলনের আয়োজন, ব্যবস্থাপনা, অ্যাকাডেমিক ও আনুষ্ঠানিক সেসন সম্পর্কে কিছু বলুন।
জনাব ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া : তেহরানে আয়োজিত ৩১তম আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলন সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এর আয়োজন, ব্যবস্থাপনা, অ্যাকাডেমিক ও আনুষ্ঠানিক সেসনগুলো এক কথায় চমৎকার ছিল। বিশেষ করে তাঁদের আতিথেয়তা ভোলার মতো নয়। উচ্চমানের হোটলে অবস্থান, খাওয়া-দাওয়া ও যানবাহন ব্যবস্থাপনা ছিল চমৎকার।
আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো সুন্দর ও উন্নয়ন করা সম্ভব। বক্তৃতা ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো (মহামান্য প্রধান ধর্মীয় নেতা ও রাষ্ট্রপতি) ছাড়া অন্যান্য অ্যাকাডেমিক ও ঈড়সসরংংরড়হ এর যে ঝবংংরড়হ গুলো ছিল সেগুলোও বক্তৃতাধর্মী হয়েছে যা ডায়ালগধর্মী ও তথ্য বিনিময়ধর্মী হলে আরো ফলপ্রসূ হবে।
অধ্যাপক ড. শাহ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী : তেহরানে ৩১তম আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলনের আয়োজনে সুচারু ব্যবস্থাপনা ছিল লক্ষণীয়। অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় তেহরানের শীর্ষ গ্রান্ড আজাদী হোটেলে। তেহরানের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি। সম্মেলন স্থলে তিনি অতিথিদের সাথে খুব কাছে থেকে খোলামেলা কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল অত্যন্ত উন্নত, উদার ও গঠনমূলক, যা ইসলামি ঐক্যের পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক বলে মনে হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনার দৃষ্টিতে মুসলিম উম্মাহর বর্তমান প্রধান সমস্যাগুলো কী?
জনাব ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া : আমার দৃষ্টিতে মুসলিম উম্মাহর বর্তমান সমস্যা বহুবিধ। সমস্যাগুলো ধর্মীয় (নানা বিশ্বাসে বিশ্বাসী), ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাসর্বস্ব। শিয়া-সুন্নি এবং নানা মাযহাবে বর্তমানে ইসলামকে বিভক্ত করে দুর্বল করা হচ্ছে। মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর থেকেই ইসলামকে নানা দিকে প্রবাহিত করে ইসলামকে দুর্বল করা হয়েছে। দেশে দেশে রাজনীতি বা শাসনব্যবস্থা ভিন্ন। অতীতে মুসলমানদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল বর্তমান তা খান খান হয়ে ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে অনেক মুসলিম দেশ ইসরাইলকে সুবিধা দিয়ে থাকে। দেশীয়ভাবে ঐক্য হলেও আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্য একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
অধ্যাপক ড. শাহ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী : মুসলিম উম্মাহর প্রধান সমস্যা হলো পরস্পর সম্পর্কে অজ্ঞতা ও তথ্য বিনিময়ের অভাব। আর সেই বোঝাপড়ার অভাব ও অজ্ঞতাপ্রসূত বিদ্বেষ। দ্বিতীয়ত, ইসলামের অন্তর্নিহিত শিক্ষা-দর্শন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও স্থূল কর্মকৌশল অবলম্বন- যা পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, উম্মাহর সদস্যদের মাঝে কৌশলে ইসলামের শত্রু বিশেষ করে ইহুদিবাদী অনুপ্রবেশ বিরাট ক্ষতি ডেকে এনেছে। লক্ষণীয় যে, খ্রিস্টধর্মের অনুসারীদের মধ্যে অসংখ্য মত ও পথভিত্তিক দল থাকলেও তারা কেউ কারও বিরুদ্ধে কথা বলে না। অথচ মুসলমানদের মাঝে ঐক্যের অনেকগুলো অভিন্ন সূত্র থাকা সত্ত্বেও তারা পরস্পর বিভক্ত ও বিদ্বেষপুষ্ট যা আদৌ কাক্সিক্ষত নয়।
প্রশ্ন : সমস্যাগুলো উত্তরণের জন্য ইতিবাচক ও কার্যকরী কর্মসূচি সম্পর্কে আপনার মত সম্পর্কে কিছু বলুন।
জনাব ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া : সমস্যাগুলো উত্তরণের জন্য তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান অবলম্বন করা উচিত। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে যুগোপযোগী কৌশল অবলম্বনপূর্বক তা সমাধান করা যায়। মুসলমানদের দুর্গতি শুরু হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে। ঐ ঘোষণায় প্যালেস্টাইন ও ইসরাইলের জন্য দুটি রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল। সদ্য রাজ্যহারা (অটোম্যান সাম্রাজ্য) মুসলমানেরা তা গ্রহণ না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে লড়ে গেছে। আরব-ইসরাইল এর মধ্যে কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আবেগ বাদ দিয়ে যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে হবে । তা নিতে হলে কৌশলগত উৎকর্ষ প্রদর্শন করতে হবে। অর্থাৎ মারণাস্ত্রের সাথে তোলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করা যাবে না। সমস্যা সমাধান করতে হলে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এ ঐক্য হতে হবে মোটিভেশনের (গড়ঃরাধঃরড়হ) মাধ্যমে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. শাহ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী : ঐক্যের পক্ষে কার্যকর কর্মসূচি হলো পরস্পরের মাঝে মতবিনিময়, আলোচনা ও তথ্য বিনিময় বৃদ্ধি করাÑ যা মতপার্থক্য কমিয়ে আনবে এবং শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করবে, শত্রুতা কমিয়ে আনবে। ভিন্নতার মাঝেই ঐক্যের পথ রচনা হবে। ইসলাম ধর্মের সর্বজনীন শিক্ষা অবলম্বনে উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হবে।
প্রশ্ন : ইসলামি ঐক্যের ব্যাপারে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ও অন্য নেতৃবৃন্দের ভূমিকা এবং রাষ্ট্র হিসেবে ইরানের অবস্থান সম্পর্কে কিছু বলুন।
জনাব ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া : ১৯৭৯ সালে মহান বিপ্লবের পর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান নতুন চেতনায় বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এর আগে প্রায় সকল মুসলিম দেশই ছিল পশ্চিমা বিশ্বের ক্রীড়নক। বর্তমান ইরান তাত্ত্বিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে মুসলিম বিশ্বের একক ঐতিহ্য হয়ে অবস্থান নিয়েছে। ইরানের শাসনব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ভোগবাদী বিলাসিতা ছেড়ে ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করে ইরানের নেতারা সরল জীবন যাপন করা শুরু করেছেন। তাঁদের ধর্মীয় নেতা বা অন্যান্য নেতা যে সরল জীবন যাপন করেন তা ইসলামি মূল্যবোধে অনুসরণীয়। সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার আবাসস্থল পুরনো ঐতিহ্যে আপ্লুত একটি সাধারণ বাড়ি, এটি কোনো রাজ প্রাসাদ নয় । সম্ভবত ধনী কোনো নাগরিক এর চেয়ে আধুনিক বাড়িতে অবস্থান করে থাকতে পারেন। জনগণের অঢেল ভালোবাসা ধর্মীয় বা অন্য নেতাদের পাথেয়। রাষ্ট্র হিসেবে ইরান এখন বিশ্বে অনন্যসাধারণ। পশ্চিমা বিশ্বও এখন ইরানকে সমীহ করে।
অধ্যাপক ড. শাহ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী : সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী দেশী-বিদেশী অতিথিদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দেন তা ছিল উঁচু নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ। তাঁর বক্তব্য ছিল জাতিগত ও গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ও অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। তিনি বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিকে ইতিহাসের ফেরআউনী আমলের সাথে তুলনা করে একটি দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা পেশ করেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাহবার ও প্রেসিডেন্ট উভয়ের বক্তব্যই ছিল ঐকব্যদ্ধ মুসলিম উম্মাহকেন্দ্রিক যা আমাদেরকে অভিভূত করেছে।
প্রশ্ন : তেহরানের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো, নারী-পুরুষের বিচরণ সম্পর্কে আপনার সংক্ষিপ্ত সফরে লক্ষণীয় বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
জনাব ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া : যাওয়া-আসার মধ্যে যেটুকু দেখা গেছে ইরানের রাস্তাঘাট পরিষ্কার এবং সুন্দর। অবকাঠামোগতভাবে পশ্চিমা বিশ্বকে অন্ধভাবে অনুকরণ লক্ষ্য করা যায় নি। তিন দিনই সম্মেলনকেন্দ্রিক অব্যাহত প্রোগ্রামের কারণে সাধারণ মানুষের বিচরণ তেমন লক্ষ্য করতে পারি নি।
অধ্যাপক ড. শাহ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী : ইরানের রাস্তাঘাট ও সার্বিক পরিবেশ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, বাহুল্যবর্জিত অথচ নান্দনিক। এ অবস্থাটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তেহরান ও মাশহাদের সর্বত্র। নারী-পুরুষ সকলেই ইসলামি ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালা অনুসরণ করে গতিশীলভাবে বিচরণ করছে যা অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
প্রশ্ন : নিউজলেটারের পাঠক ও বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশে কিছু বলুন।
উত্তর : বাংলা মাধ্যমে প্রকাশিত নিউজলেটার পত্রিকাটি ভালো। সারা পৃথিবীতে মানুষ যে সমস্যাগুলো মোকাবেলা করে থাকে তা হলো ভাষা। ইরান ফারসি ভাষাভাষীর দেশ। বিশ্বে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মুসলমান আছে। তথ্যগুলো যত বেশি স্ব স্ব দেশের জনগণের মাতৃভাষায় আদান-প্রদান হবে বোধগম্যতা ততই বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের জনগণ নিউজলেটার পড়ে উপকৃত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
অধ্যাপক ড. শাহ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী : ইসলামের মানবীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা, অন্য ধর্মের জনগণের প্রতি সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি যা আমরা বাংলাদেশে অনুসরণ করছি তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। মহানবী (সা.)-এর আদর্শকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা, নবীজি (সা.), হযরত ফাতেমা ও আহলে বাইতকে জানা ও আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করলে আমরা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সাফল্য লাভ করব।

বাংলা ভাষায় ফারসি শব্দের ব্যবহার

বাংলা রূপ – ফারসি রূপ – আধুনিক ফারসি উচ্চারণ

সংকলন: ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ

সম্পাদনা: আব্দুল কুদ্দুস বাদশা

শীরীন (মেয়েদের নাম, মিষ্টি) شيرين শী-রীন্
সিসা
(ধাতববিশেষ) شيشه শীশে
জামিন ضامن য-মেন্
জামিনদার ضامندار য-মেন্দর্-
জব্দ ضبط যাবত্
জিদ ضد যেদ্
জেদী ضدّى যেদ্দী
জরুরত ضرورت যারুরাত্
জরুরি ضرورى যারুরী
জিলা ضلع যেলএ
জামানত ضمنات যাম-নাত্
যিয়াফত (খাওয়ার মেহমানী) مهمانى/ ضيافت যিয়-ফাত্/ মেহমনী
তাকত (শক্তি) طاقت তকাত্
তবলা طبل তাবল্
তবিয়ত (্অবস্থা) طبيعت তাবিয়াত্
বহাল তবিয়ত باهل طبيعت ব-হাল তাবিয়াত্
তরফ (পক্ষ) طرف তারাফ্
তরিকত (পথ) طريقت তারী-কাত্
তরিকা (পদ্ধতি) طريقه তারী-ক্বে
তশতরী
(গোলাকার পাত্র) طشت তাশ্ত্
তলব طلب তালাব্
তোতা طوطى তূতী
তুফান طوفان তূ-ফন্
জালিম ظالم য-লেম্
যাহেরী (প্রকাশ্য) ظاهرى য-হেরী
জুলুম ظلم যোলম্
জুলমাত (অন্ধকার) ظلمت যোলমাত্

রপ্তানি বাণিজ্যে ইরানের সাফল্য

সাইদুল ইসলাম :

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো রপ্তানি খাত। এই খাতে যে দেশ যত বেশি শক্তিশালী সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত বেশি সমৃদ্ধ। আর এক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান উদীয়মান অর্থনীতির সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির ইতিবাচক গতিধারায়।
তেলের ওপর নির্ভরতাই ছিল এক সময় দেশটির অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু সেই তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে দেশটি। ইসলামি বিপ্লবের পর বিগত ৩৮ বছরে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোও পাল্টে যাচ্ছে। ক্রমশ শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতের বিকাশ ঘটছে। এর ফলে দেশটির অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো অনেকটাই বদলে যাচ্ছে।
বিগত বছরের তুলনায় ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ফারসি বছরে ইরানের আর্থিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। ১৮ জুন ২০১৭ ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (সিবিআই) প্রকাশিত তথ্যে এ চিত্র জানা গেছে।
মূলত ইরানের ক্রমবর্ধমান তেল উৎপাদন দেশটির এমন শক্তিশালী প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। ইরানের সরকারি তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের শেষ নাগাদ প্রতিদিন দেশটিতে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ব্যারেল। যেখানে আগের বছর প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হয়। বর্তমানে ইরান প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখ ব্যারেল বা ৬ কোটি ৪০ লাখ লিটার তেল রপ্তানি করছে।
২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী ৪৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য জাহাজযোগে রপ্তানি করেছে ইরান। যা ২০১৫ সালের চেয়ে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।


ইরানের রপ্তানি হওয়া শীর্ষ দশটি ক্যাটাগরির পণ্য সামগ্রী থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের বেশিরভাগ এসেছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী জাহাজযোগে যে মূল্যের পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করা হয়েছে তার ৯৬ দশমিক ২ শতাংশই এসেছে এই দশ শ্রেণির পণ্যসামগ্রী থেকে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক ডাটাবেজের পরিসংখ্যান মতে, এ বছরের এপ্রিলে ইরানের মোট দেশীয় উৎপাদন (জিডিপি) দাঁড়ায় ১ দশমিক ৫৩৫ ট্রিলিয়ন ডলারে। ৮ কোটি ২৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইরান ২০১৬ সালে মোট ৪৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। দেশটির জনগণের মাথাপিছু রপ্তানি দাঁড়ায় ৫৫০ মার্কিন ডলার।
ইরানের শীর্ষ দশ শ্রেণির রপ্তানি পণ্যসামগ্রীর তালিকায় প্রথমেই রয়েছে তেলসহ খনিজ জ্বালানি। গত বছর এ শ্রেণির পণ্য রপ্তানি করে ৩৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি। অর্থাৎ মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫ ভাগই এসেছে এই শ্রেণির পণ্যসামগ্রী রপ্তানি থেকে।
দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। গত বছর ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের এসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা মোট রপ্তানির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, জৈব রাসায়নিক পণ্যসামগ্রী। এসব পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে দেশটি আয় করেছে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আকরিকসহ ধাতব দ্রব্যসমূহ। ২০১৬ সালে আকরিকসহ ধাতব দ্রব্য রপ্তানি থেকে ইরানের আয় হয়েছে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। যা দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের সাড়ে তিন শতাংশ।
ইরানের রপ্তানি পণ্যের এই তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ফলমূল ও বাদাম। এসব পণ্যসামগ্রী থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে ইরান। যা দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের ২ দশমিক ২ শতাংশ।
তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে আয়রন ও স্টিল। এসব পণ্যসামগ্রী রপ্তানি থেকে ইরান আয় করেছে ৯৬০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। যা রপ্তানি আয়ের ২ দশমিক ১ শতাংশ।
রপ্তানির তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে কপার। এটি রপ্তানি করে ইরান আয় করেছে ৪৩৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের দশমিক ৯ শতাংশ।
তালিকায় অষ্টম অবস্থানে রয়েছে সার। ইরান সার রপ্তানি থেকে আয় করেছে ৪২৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের দশমিক ৯ শতাংশ।
ইরানের শীর্ষ দশ শ্রেণির রপ্তানি পণ্যসামগ্রীর তালিকায় নবম অবস্থানে রয়েছে লবণ, সালফার, পাথর ও সিমেন্ট। এসব পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে দেশটি আয় করেছে ৪০৮ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। যা দেশের রপ্তানি আয়ের দশমিক ৯ শতাংশ।
তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে অজৈব রাসায়নিক দ্রব্য। এসব দ্রব্য রপ্তানি থেকে ইরান আয় করেছে ২৭২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। যা রপ্তানি আয়ের দশমিক ৬ শতাংশ।
ইরানের শীর্ষ দশ শ্রেণির রপ্তানি পণ্যসামগ্রীর মধ্যে সার রপ্তানি সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে শুরু করে এ সময় পর্যন্ত ছয় বছরে সার রপ্তানি বেড়েছে ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ। রপ্তানি বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আয়রন ও স্টিল। যা বেড়েছে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যেরে দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি বেড়েছে তামা, ক্রোমিয়াম, সীসা, জিংক ও আকরিকের। এসব দ্রব্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
গত ইরানি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) ১২৯ দশমিক ৬৪৮ মিলিয়ন টন তেলবহির্ভূত পণ্যদ্রব্য রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির মোট আয় হয়েছে ৪৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ইরানের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ইরানের শুল্ক প্রশাসন ও বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে এই চিত্র উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, ফারসি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ইরানি বছর ১৯ মার্চ শুরু হয়ে পরের বছর ২০ মার্চে শেষ হয়। তেলবহির্ভূত যেসব পণ্য ইরান রপ্তানি করে থাকে তার মধ্যে রেয়েছে পেট্রোকেমিক্যাল, কৃষিপণ্য, খাদ্যপণ্য, খনিজ ও ওষধি পণ্য ইত্যাদি।
ইরানি পণ্যদ্রব্যের রপ্তানি গন্তব্যের শীর্ষে রয়েছে চীন। এশিয়ার এই দেশটি গত ইরানি অর্থবছরে ইরান থেকে ৮ দশমিক ১৭৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন মালামাল আমদানি করেছে। আগের বছরের তুলনায় যা ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। আইআরসিএর তথ্য মতে, গত ইরানি বছর দক্ষিণ কোরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি থেকে আমদানি রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। এ বছরে দেশটি আমদানি বৃদ্ধি করে ২২৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, গত বছর আফ্রিকার দেশগুলোতে ইরানের রপ্তানি বেড়েছে শতভাগ। আফ্রিকায় রপ্তানি হওয়া পণ্যদ্রব্যের মধ্যে প্যাস্ট্রি, চকলেট, শিল্প তেল, পেট্রোকেমিক্যালস, পিচ এবং ভবন নির্মাণ সামগ্রী উল্লেখ্যযোগ্য।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ইরান থেকে ইউরোপে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। ইরানের শুল্ক প্রশাসনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য দাঁড়ায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে। আগের বছরের তুলনায় বাণিজ্য বড়েছে ১৭১ শতাংশ। গত বছর ইউরোপে ইরানি পণ্যের রপ্তানির শীর্ষে ছিল লোহা ও ইস্পাত। এসব পণ্য রপ্তানি থেকে ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি।
ইরানের তেলবহির্ভূত রপ্তানি পণ্যদ্রব্যের বৃহত্তম অংশই পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য। এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল গ্যাস কনডেনসেট। গত বছর গ্যাস রপ্তানি থেকে ইরানের আয় হয়েছে ৭ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
ইরানের অ্যাগ্রো বা কৃষি পণ্য রপ্তানি
গত বছরে ইরান ৪ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন টন কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছে। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৭৯৫ মিলিয়ন ডলার। আইআরসিএর তথ্যমতে, এ সময়ে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ ১ শতাংশ কমলেও রপ্তানি থেকে মোট আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
খনিজ, ওষুধি পণ্য ও অটো শিল্পের রপ্তানি
গত বছর ইরান ৭ বিলিয়ন ডলারের অধিক মূল্যের খনিজ দ্রব্য রপ্তানি করেছ। আগের বছরের তুলনায় এ খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এ সময়ে দেশটির অটো শিল্পের মোট রপ্তানি পৌঁছায় ২১৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারে। আগের বছরের তুলনায় যা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে ইরানের অটো নির্মাতারা ৩৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের গাড়ি রপ্তানি করেছেন। এসব পণ্যের রপ্তানি গন্তব্যের শীর্ষে ছিল ইরাক, আলজেরিয়া, লেবানন, তুর্কমেনিস্তান ও সিরিয়া। এছাড়া গত অর্থবছরে ইরান ২১০ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ এবং মেডিকেল ও ল্যাবোরেটরি সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
ইরানের শিল্প পার্কের রপ্তানি
ইরানের শিল্প পার্ক থেকে রপ্তানি ছাড়িয়ে গেছে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ৯ মাসে এ রপ্তানি হয়েছে। দেশটির শিল্প উপমন্ত্রী আলী ইয়াজদানি এ তথ্য জানিয়েছেন। ইরানের শিল্প পার্কে ৯৫০টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এতে কর্মসংস্থান রয়েছে ৮ লাখ মানুষের।

খাদ্যপণ্য রপ্তানি
গত অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ মাসে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্য রপ্তানি করেছে ইরান। এই খাতে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হয়েছে ৫৫৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। এ ১১ মাসে ৭৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের প্রায় ৬২ হাজার টন মুরগি, ৬৮৩ মিলিয়ন ডলারের ৭ লাখ ৫০ হাজার টন দুধ ও ৫৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের ৮ লাখ টন ডিম রপ্তানি করেছে দেশটি। এছাড়া এ সময়ে ইরান ৮ লাখ ১৫ হাজার টন গোশত, সাড়ে ৯ মিলিয়ন টনের অধিক দুধ, ২ মিলিয়ন টন মুরগি, ৯ লাখ ৪০ হাজার টন ডিম ও ৮১ হাজার ৫০০ টন মধু উৎপাদন করেছে। ইরান থেকে রপ্তানি হয় এমন উল্লেখযোগ্য আরো কিছু পণ্যের বিবরণ নিচে দেয়া হলো।


জাফরান রপ্তানি

গত ৮ মাসে ইরান ৭৮ টন জাফরান রপ্তানি করেছে। ইরান অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বাকি জাফরান রপ্তানি করে থাকে। ইরানের জাতীয় জাফরান পরিষদের উপ প্রধান রেজা মিরি বলেছেন, ইরানে চলতি বছরে জাফরান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ৩১০ থেকে ৩৬০ টন।
ইরানের জাতীয় জাফরান পরিষদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা মেহের নিউজ জানায়, গত বছর ইরানে জাফরান উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫০ টন অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১৩০ টন। এবছর ইরানে জাফরান রপ্তানির পরিমাণ ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্বে সর্বোচ্চ জাফরান উৎপাদনকারী দেশ ইরান। বিশ্বের উৎপাদিত জাফরানের ৯৩ ভাগ উৎপাদিত হয়ে থাকে ইরানে।
আপেল রপ্তানি
ইরান গত ফারসি বছরের শেষ ১১ মাসে ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আপেল রপ্তানি করেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরানের আপেল রপ্তানির মোট পরিমাণ হচ্ছে ৮৭ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার। ইরানের শুল্ক বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরান যেসব দেশে আপেল রপ্তানি করে সেগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আজারবাইজান, জর্জিয়া, ইরাক, তুর্কেমেনিস্তান, রাশিয়া, ওমান, কিরঘিজিস্তান, কাজাখস্তান, কুয়েত, ভারত, কাতার, বাহরাইন, সুদান ও তুরস্ক।

গোলাপ জল রপ্তানি


ইরানের কাশানে বছরে যে ২ হাজার টন গোলাপ জল ও তেল উৎপাদন হয় তা রপ্তানি করে আয় হয় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ গোলাপ জল ও তেল পারস্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও ইউরোপে রপ্তানি হয়। গত মে মাসে ফিন্যান্সিয়াল ট্রিবিউনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মে মাসের শুরু থেকে জুনের মাঝামাঝি। মধ্য ইরানের কাশান এবং এর আশেপাশের শহর ও গ্রামগুলো যেন সাজে অপরূপ প্রাকৃতিক রূপে। সাদা, লাল আর গোলাপি গোলাপের পাশাপাশি নানা প্রজাতির ফুল তৈরি করে নয়নাভিরাম দৃশ্য। সেখানে পা ফেলতেই যেন চার দিক থেকে বাতাসে ভেসে আসে সুমিষ্ট ঘ্রাণ। মুহূর্তেই জুড়িয়ে যায় মন। উৎসব হোক বা শোক, সব জায়গাতেই পবিত্রতার প্রতীক গোলাপজল। এমনকি খাবার, ওষুধ এবং রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হয় এই উপকরণটি। আর গোলাপজল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। এর মনমাতানো সৌরভ শুধু ইরানেই নয় ছড়িয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী।

মধু রপ্তানি

ইরানের আযারবাইজান প্রদেশ থেকে ৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৫শ’ টন মধু রপ্তানি করা হয়েছে। তুরস্ক, ইরাক, আযারবাইজান রিপাবলিক, চীন, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এ মধু রপ্তানি করা হয়। ইরানের পশ্চিম আযারবাইজান এলাকায় অন্তত দশ লাখ মধু চাষী রয়েছেন যাঁরা বছরে ১৮ হাজার টন মধু উৎপাদন করেন। আর এ উৎপাদিত মধুর পরিমাণ ইরানে উৎপাদিত মধুর ২৭ শতাংশ।
ইরানের উপ কৃষিমন্ত্রী হাসান রোকনি জানিয়েছেন, গত ফারসি অর্থবছরে ইরান জুড়ে ৮১ হাজার ৫০০ টন মধু উৎপাদন হয়েছে।

টমেটো রপ্তানি

ইরানের চলতি ফারসি বছরের প্রথম মাসে (২১ মার্চ থেকে শুরু) ৪৩ হাজার ৬শ’ টন টমেটো রপ্তানি করে দেশটি আয় করেছে সাড়ে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইরানের কাস্টমস প্রশাসন এ তথ্য দিয়েছে।
ইরান টমেটো রপ্তানি করে এমন প্রধান দেশগুলো হচ্ছে, আফগানিস্তান, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান, পাকিস্তান, ইউক্রেন ও কাজাখস্তান। ইরানের ইয়ং জার্নালিস্ট ক্লাব এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে।

গম রপ্তানি

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বেশ কয়েক বছর পর এবার নতুন করে গম রপ্তানি শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ৩৫ হাজার টনের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বন্ধুপ্রতিম দেশ ওমানে।
ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর পরামর্শ অনুসারে প্রতিরোধমূলক অর্থনীতির ফরমুলা অনুসরণ করার কারণে এ সফলতা অর্জন সহজ হয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যার মূল লক্ষ্য হবে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা তৈরি এবং তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো যাতে করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা করা সহজ হয়।
ইরানের ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মাদ রেজা মুরতাজাভি জানিয়েছেন, ওমানে গম রপ্তানির প্রথম চালান পাঠানো হয়েছে এবং আরো বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হবে। তিনি জানান, আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে ইরান ২০ লাখ টন গম রপ্তানি করতে পারবে।

খেজুর রপ্তানি


খেজুর রপ্তানি থেকে ইরানের বছরে আয় হয় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত জুন মাসে ফিন্যান্সিয়াল ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, খেজুর উৎপাদনে বিশ্বে ইরানের অবস্থান দ্বিতীয় এবং বিশ্বের বৃহত্তম খেজুর রপ্তানিকারক দেশ ইরান। গত ইরানি বছরে দেশে খেজুর উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ লাখ টন।
উৎপাদনের ২০ ভাগ খেজুর ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ফার ইস্ট ও রাশিয়ায় রপ্তানি করা হয়।

সীফুড রপ্তানি


গত চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে ইরান ১১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সীফুড রপ্তানি করেছে। ইরানের ফিশারিজ অর্গানাইজেশনের প্রধান হাসান সালেহি জানান, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ৩০ ভাগ। সালেহি জানান, কৃষির পাশাপাশি সীফুড থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বেড়েই চলেছে। গত কয়েক বছরে এখাতে রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত বছর সীফুড উৎপাদন হয়েছে এক মিলিয়ন টন। এর মধ্যে ৮২ হাজার টন সীফুড রপ্তানি হয়েছে। এ বছর শেষে মৎস্য খাতে প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আখরোট রপ্তানি


বছরে ৫ হাজার টন আখরোট রপ্তানি করে ইরান। প্রতি কিলো আখরোটের দাম পড়ে ৬ থেকে ৮ মার্কিন ডলার। ইরানের কেরমান, হামেদান, লোরেস্তান, কোহগিলোইয়ে-বোয়েররাহমাদ এবং কেরমানশাহ প্রদেশে আখরোট চাষ হয়ে থাকে।
আখরোট উৎপাদনে দেশটির অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই ইরানের অবস্থান। এরপর রয়েছে তুরস্ক, মেক্সিকো, ভারত, চিলি, সার্বিয়া, ইউক্রেন ও স্পেনের অবস্থান।

মিষ্টান্ন রপ্তানি


চলতি ইরানি বছরের প্রথম চার মাসে চল্লিশটির অধিক দেশে মিষ্টি ও চকলেটসহ প্রায় ২৫ হাজার টন মিষ্টান্ন সামগ্রী রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির আয় হয়েছে ৭৬ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইরানের মিষ্টান্ন সামগ্রী রপ্তানির প্রধান গন্তব্য ছিল ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আযারবাইজান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড এবং নরওয়ে।
মাছ রপ্তানি
গত ফারসি বছরে ৪১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাছ রপ্তানি করেছে ইরান। ইরানের মৎস্য সংস্থার প্রধান হাসান সালেহি এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, বিশ্বে দামি মাছ ট্রাউট ও স্টারজিওন উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও মৎস্য সংস্থার প্রধান হাসান সালেহি জানিয়েছেন, গত বছর ইরান ১১ লাখ টন জলজ প্রজাতির প্রাণী তথা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয় এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে সামনে রেখে ওই বছর মৎস্য খাতে বড় বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের ফলে বিরল প্রজাতির মাছ চাষে বিশ্বে শীর্ষে উঠে এসেছে ইরান।
কৃষি উপমন্ত্রী জানান, ইরানে মৎস্য খাতের বিভিন্ন সেক্টরে বর্তমানে ৪ শতাধিক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র সক্রিয় রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত বছর ইরানে ১ লাখ ৬০ হাজার টন ট্রাউট উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১০ হাজার টন। অন্যদিকে, চলতি বছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টন।

পেস্তাবাদাম রপ্তানি


চলতি ফারসি বছরের প্রথম চার মাসে প্রায় ১৬ হাজার ৬৬০ টন পেস্তাবাদাম রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ১৭৩.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইরান থেকে এসব পেস্তাবাদাম যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, বাহরাইন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, কানাডা, কাতার, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, নেদারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, জাপান, রোমানিয়া ও হংকংয়ে রপ্তানি করা হয়েছে।
ইরানের শিল্প, খনি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মোজতাবা খোসরোতাজ বলেন, বিশ্ব পেস্তাবাদাম বাজারের অর্ধেকের বেশি পরিমাণ রপ্তানি করে কেবল ইরান।

দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি


চলতি অর্থবছরে (মার্চ ২০১৭-১৮) বিলিয়ন ডলারের দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ইরান। দেশটির কৃষি মন্ত্রী মাহমুদ হোজ্জাতি বলেছেন, ‘অতীতে আমরা দুগ্ধজাত পণ্য, মুরগি ও গম আমদানি করতাম। কিন্তু আজ আমরা শুধু দেশীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম হই নি, আমরা এসব পণ্যের রপ্তানিকারক হিসেবেও পরিগণিত হয়েছি।’
এগ্রিকালচারাল কমিশন অব তেহরান চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইনস অ্যান্ড এগ্রিকালচার-এর চেয়ারম্যান কাভেহ জারগারানের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে (মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত) দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করে ইরান আয় করেছে ৭৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি তালিকার শীর্ষে রয়েছে দই। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ২১৮ মিলিয়ন ডলার। পনির রপ্তানি হয়েছে ১২৯ মিলিয়ন ডলারের এবং ক্রিম ও আইসক্রিম রপ্তানি হয়েছে ১২০ মিলিয়ন ডলারের।

চেরি ফল রপ্তানি

ইরানে বছরে প্রায় তিন লাখ টন চেরি ফল উৎপাদন হয়। বিশ্বব্যাপী মোট উৎপাদিত এই ফলের প্রায় ২ শতাংশই ইরানে উৎপাদিত হচ্ছে।
তেহরান এগ্রিকালচারাল জিহাদ অর্গানাইজেশনের বাণিজ্য বিষয়ক দফতরের উন্নয়ন ব্যবস্থাপক হামিদ রেজা খলিলি বলেন, শুধু তেহরান প্রদেশেই বছরে প্রায় ৮৪ হাজার টন চেরি উৎপাদন হয়, যার মূল্য ১১০ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন রিয়েল)।

সাবান রপ্তানি
ইরান গত ৬ মাসে অন্তত বিশটি দেশে সাবান রপ্তানি করেছে। ৭ হাজার ৩শ’ ৫০ টন সাবান রপ্তানি বাবদ দেশটি আয় করেছে ৭.২ মিলিয়ন ডলার। আফগানিস্তান সিংহভাগ সাবান আমদানি করেছে ইরান থেকে। দেশটিতে ইরান সাবান রপ্তানি করেছে সাড়ে ৪ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়া ইরাক, আযারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, কিরঘিজিস্তান, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও জর্জিয়ায় ইরান সাবান রপ্তানি করছে।

লেটুস রপ্তানি


চলতি ইরানি বছরের (ফারসি ক্যালেন্ডার) প্রথম পাঁচ মাসে ৪২ হাজার ১শ’ টনের অধিক লেটুস পাতা রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইরানের শুল্ক প্রশাসন প্রকাশিত তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ইয়ং জার্নালিস্ট ক্লাবের তথ্যমতে, বিগত পাঁচ মাসে ইরানের লেটুস রপ্তানির মূল গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, আযারবাইজান, আর্মেনিয়া, রুশ ফেডারেশন, বাহরাইন, ওমান, কাতার ও আফগানিস্তান।

কিসমিস রপ্তানি


চলতি ইরানি বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে ২৩ হাজার ৬৫০ টনের অধিক কিসমিস রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি। এসব কিসমিস রপ্তানি করা হয়েছে বিশ্বের ৫৪টি দেশে। ইরানের শুল্ক প্রশাসন এই তথ্য জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, ইরানের সবচেয়ে বড় কিসমিস ক্রেতা দেশ ইরাক। উক্ত সময়ে ইরান থেকে ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের কিসমিস আমদানি করেছে দেশটি।
ইরানি কিসমিসের অন্যান্য বৃহৎ ক্রেতা দেশের মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, স্পেন, ইউক্রেন, নেদারল্যান্ড, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং পোল্যান্ড। বিশ্বে বর্তমানে তৃতীয় বৃহত্তম কিসমিস রপ্তানিকারক দেশ ইরান।

ন্যানো পণ্য রপ্তানি
বর্তমানে বিশ্বের ২১টি দেশে ন্যানো পণ্য রপ্তানি করে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় ৩০০ বিলিয়ন তুমান (ইরানি মুদ্রা) ছাড়িয়েছে। ইরানের ন্যানো প্রযুক্তি উন্নয়ন দপ্তরের শিল্প উন্নয়ন গ্রুপের পরিচালক আলী তাহারি এই তথ্য জানিয়েছেন।
হারবাল ওষুধ রপ্তানি
ইরান থেকে বছরে বুটি গোলাপ, জাফরান, সুগন্ধি লতাবিশেষ ও বিভিন্ন ধরনের হারবাল ওষুধ রপ্তানি হয় সাড়ে তিনশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের হারবাল ওষুধ দপ্তরের পরিচালক পেইমান ইউসেফি আজার এই তথ্য জানান।
ইরানে চলমান পানি সঙ্কটের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় হারবাল ওষুধ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে বলে উল্লেখ করেন ইউসেফি আজার। তিনি বলেন, ওষুধি গাছের জন্য পানি সম্পদ কম প্রয়োজন হয়। ওষুধি গাছ চাষাবাদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা। আজার জানান, ওষুধি গাছের চাষাবাদ বিশ্বে একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ। দ্রুত অগ্রগতির কারণে নিকট ভবিষ্যতে কৃষি ক্ষেত্রে ওষুধি গাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

গালিচা রপ্তানি


চলতি ইরানি বছরের প্রথম তিন মাসে ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মেশিনে বোনা গালিচা রপ্তানি করেছে ইরান। এসব গালিচা রপ্তানি করা হয়েছে মধ্য এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে। গত ফারসি বছরে প্রায় ৫৫ হাজার ৫শ’ টন মেশিনে বোনা কার্পেট রপ্তানি করে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ৩০৬ মিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় গত বছর ওজনের দিক দিয়ে কার্পেট রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যে ২০১৬ সালে ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের রেকর্ড করেছে ইরান। গত বছর দেশটির মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এর মধ্যে ইরান মোট রপ্তানি বাণিজ্য করেছে ৬৯ বিলিয়ন ডলারের এবং আমদানি করেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের।
জাতিসংঘের অধীনস্থ বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড নেশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট তথা ইউএনসিটিএডি (আঙ্কটাড) প্রকাশিত ‘২০১৭ হ্যান্ডবুক অব স্ট্যাটিস্টিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার তাসনিম সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, গত বছর ইরান প্রায় ১০ দশমিক ২০২ বিলিয়ন ডলারের সেবা রপ্তানি করেছে। এ সময়ে বিশ্বের সঙ্গে ইরানের সর্বমোট আনুমানিক ২৪ দশমিক ৮৯৬ বিলিয়ন ডলারের সেবা বাণিজ্য হয়েছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন মতে, ২০১৬ সালে বৈশ্বিকভাবে সর্বমোট বাণিজ্য হয়েছে ৩২ দশমিক ১৩৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের। যার দশমিক ৩৪ শতাংশ অবদান ইরানের।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালে ইরানের প্রকৃত মোট দেশীয় উৎপাদন তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। যা বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে ২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
২০১৬ সালে ইরানের অর্থনীতিতে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। জানানো হয়, এ বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে আনুমানিক ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে দশমিক ৪ শতাংশ। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ইরানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার পর দেশটির তেল উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ আয়, ভোগ ও বিনিয়োগেএর প্রভাব পড়েছে।
২০১৬ সালে বিশ্বের সেরা বাণিজ্য সম্পাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় ইরানকে ৪৪তম স্থান দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের অর্থনৈতিক অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং দেশটির ওপর থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে খুব শিগগিরই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হবে।

সূত্র: ফিনান্সিয়াল ট্রিবিউন, তেহরান টাইমস, মেহর নিউজ, ইউএনসিটিএডি, সিবিআই, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক।

সম্পাদকীয়

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি উম্মাহ্র ঐক্যের অপরিহার্যতা
সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্ম ছিল মানব জাতির ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনের সূচনা। তাই তাঁর জন্মবার্ষিকী ঈদে মিলাদুন্নবী সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ ও মুস্তায্‘আফ্ জনগণের আনন্দ-উৎসবের শ্রেষ্ঠতম উপলক্ষ।
রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে মানব জাতির উদ্দেশে তাদের মুক্তির জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা পরিপূর্ণ পথপ্রদর্শক গ্রন্থ কোরআন মজীদ পৌঁছে দিয়েছেন এবং একে যে কোনো ধরনের হ্রাস-বৃদ্ধি থেকে সংরক্ষিত রেখেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ছিলেন কোরআন মজীদের মূর্ত প্রতীক; তিনি স্বীয় চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআনের শিক্ষা ও পথনির্দেশের বাস্তব প্রদর্শনী করেছেন- যা প্রমাণ করে যে, এ গ্রন্থ মানুষের জন্য পুরোপুরি অনুসরণ ও বাস্তবায়নযোগ্য। এ জীবনাদর্শ স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে এসেছে বিধায় তা সম্পূর্ণরূপে ভারসাম্যপূর্ণ। তাই এ দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে যেমন কোনোরূপ জোর-জবরদস্তির অবকাশ নেই, তেমনি এর বিস্তারের পন্থা সুস্থ বিচারবুদ্ধির কাছে আবেদন এবং এর প্রতিষ্ঠার পথ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দ্বীনের সাথে লোকদের সঠিক পরিচিতির অভাবের সুযোগ নিয়ে ইসলামের দুশমনরা তাদের অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এ দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাই এ দ্বীন তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষার সাথে সঠিকভাবে পরিচিত হওয়া এবং তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়া মুসলমানদের অপরিহার্য দায়িত্ব।
ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য মানবতার ঐক্য এবং এ লক্ষ্যে কোরআন মজীদে ইসলামি উম্মাহ্র ঐক্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কোরআন মজীদে ন্যূনতম অভিন্ন সূত্র তাওহীদ ও আখেরাতে ঈমান এবং র্শিক্ বর্জনের ভিত্তিতে আহ্লে কিতাবের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। এমতাবস্থায় মুসলমানদের ঐক্য ফরয হওয়া সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহও থাকতে পারে না। কিন্তু ইসলামের দুশমনদের ও মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রের ফলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য ও হানাহানি চলে আসছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নায়ক হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে ইসলামি ঐক্য গড়ে তোলার চালিকাশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে মুসলমানদের কাছে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জন্মতারিখ হিসেবে পরিগণিত দু’টি তারিখকে সমন্বিত করে ১২ থেকে ১৭ই রাবিউল্ আউয়ালকে ‘ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং যথাযথ মর্যাদায় এ সপ্তাহ উদ্যাপনের জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি আহ্বান জানান। তখন থেকে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ, বিশেষ করে ইরানি মুসলমানগণ প্রতি বছর যথাযথ মর্যাদা সহকারে এ সপ্তাহটি উদ্যাপন করে আসছে।
দুর্ভাগ্যজনক যে, বিগত কয়েক দশক যাবত ইসলাম ও মানবতার দুশমন বলদর্পী শক্তিবর্গের সামরিক, রাজনৈতিক, প্রচার, ষড়যন্ত্র ও কৌশলগত সহযোগিতায় ইসলামের নামে গড়ে ওঠা কতগুলো তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভ্রান্তিকর প্রচার ও সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে ইসলামের ওপর সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের কলঙ্ক লেপনের পাশাপাশি মুসলমানদের হত্যার কাজে মেতে ওঠে। সৌভাগ্যক্রমে সিরিয়া ও ইরাকে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া সম্ভব হয়েছে এবং আশা করা যায় যে, অন্যান্য এলাকায়ও অচিরেই এদের সন্ত্রাসী তৎপরতার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।
সিরিয়া ও ইরাকে বলদর্পী শক্তির এজেন্ট সন্ত্রাসী শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইসলামি ভূখ- ফিলিস্তিনের বুকে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ যায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের মোকাবিলাকারী এতদঞ্চলের মুক্তিকামীদের সাথে ফিলিস্তিন ইস্যুতে শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে পরিকল্পিত বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠা নিশ্চিতকরণ। এ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষক বলদর্পী আমেরিকা দিশাহারা হয়ে পড়েছে এবং অতি সম্প্রতি ইসরাইলস্থ স্বীয় দূতাবাস তেল্ আভীভ্ থেকে জেরুজালেমে (বায়তুল মুকাদ্দাসে) স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য যায়নবাদী ইসরাইল অনেক বছর আগেই স্বীয় রাজধানী জেরুজালেমে স্থানান্তরিত করে, কিন্তু আমেরিকা সহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই স্বীয় দূতাবাস সেখানে স্থানান্তরিত করে নি, ফলে ইসরাইলি পদক্ষেপ খুব বেশি গুরুত্ব লাভ করে নি। আমেরিকা কর্তৃক স্বীয় দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণার ফলে আরেক বার প্রমাণিত হলো যে, যারা ইসরাইলের অস্তিত্ব মেনে নিয়ে বৃহৎ শক্তির সহায়তায় ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের আশা করছিলেন তাঁরা এতদিন বিরাট ভুলের মধ্যে ছিলেন; বরং অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের বিলুপ্তি ও সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখ- জুড়ে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে এ সমস্যার একমাত্র সমাধান এবং সে লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ অপরিহার্য।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে ও বিশ্বের মুস্তায্‘আফ্ জনগণকে, বিশেষ করে নিউজ লেটারের পাঠক-পাঠিকাগণকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের বিজয় দিবস
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে আমরা নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণসহ বাংলাদেশের সকল জনগণের প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি।