All posts by dreamboy

সংবাদ বিচিত্রা

শত্রুদের কবল থেকে চূড়ান্তভাবে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, শত্রুদের কবল থেকে চূড়ান্তভাবে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে এবং বাস্তবতা পাল্টে দেয়ার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়তুল মুকাদ্দাস হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে গত ১৭ মে ২০১৮ রাজধানী তেহরানে ক্বারীদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি একথা বলেন। সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমেরিকা এবং অন্য শত্রুদের কবল থেকে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ এবং এসব ভাঁড় নিশ্চিত ঐশী ব্যবস্থার মুখে টিকতে পারবে না।
গত ১৪ মে ২০১৮ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইল যে গণহত্যা চালিয়েছে তার কঠোর নিন্দা করেন সর্বোচ্চ নেতা। সেদিনের বর্বর হামলায় অন্তত ৬০ ফিলিস্তিনি শহীদ ও ৩,০০০ আহত হন। রক্তাক্ত ঘটনাবলির মধ্য দিয়েই ওই দিনেই পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে মার্কিন সরকার তাদের দূতাবাস উদ্বোধন করে।
এসম্পর্কে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, অনেকে অভিযোগ করেন, এমন ঘটনার পরও কেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় না আমেরিকা। তার কারণ হচ্ছে, আমেরিকা ও বহু পশ্চিমা দেশ এই অপরাধযজ্ঞে সহযোগিতা করে থাকে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের মুখে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহ ও মুসলিম সরকারগুলো কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য। তিনি বলেন, পবিত্র কুরআন আমাদেরকে বলছে ধর্মের বিষয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে এবং নিজেদের মধ্যে দয়ামায়া প্রতিষ্ঠা করতে, কিন্তু বর্তমানে কুরআন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে আমরা মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অনৈক্য দেখছি এবং কাফেরদের কাছে নতি স্বীকার করতে দেখছি।

মুসলমানদের অর্জন কাজে লাগিয়ে পাশ্চাত্য আজকের অবস্থায় এসেছে : সর্বোচ্চ নেতা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, মুসলিম বিশ্বকে আবারও জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকে শক্তিশালী হতে হবে যাতে শত্রুরা বিশেষ করে আমেরিকা মুসলিম দেশগুলোর করণীয় ঠিক করে দেয়ার সুযোগ না পায়। গত ১২ মে ২০১৮ ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিত্বরা সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাহলো ঐক্য ও সংহতি এবং বিজ্ঞানের সব অঙ্গনে সাফল্য ও অগ্রগতি। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে এবং পাশ্চাত্যের বিরোধিতা সত্ত্বেও এ জাগরণ ইসলাম ধর্মের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি ও সুন্দর ভবিষ্যতের ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কারণেই মুসলিম বিশ্বের ওপর অন্যরা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছে। তিনি বলেন, পাশ্চাত্য শত শত বছর ধরে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা মুসলমানদের বৈজ্ঞানিক সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে অর্থ-সম্পদ এবং বৈজ্ঞানিক, সামরিক, রাজনৈতিক ও প্রচারণাগত ক্ষেত্রে শক্তি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এভাবেই পাশ্চাত্য ঔপনিবেশিক তৎপরতার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বকে বর্তমান খারাপ অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মাধ্যমে বর্তমান এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে এবং মুসলিম বিশ্বকে আবারও মানব সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করতে হবে। তিনি বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইরান আদর্শ সৃষ্টি করেছে এবং ইরানের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর বিপরীতে ইসলামি ইরান নিজের বৈজ্ঞানিক সাফল্য ও অর্জন অন্য মুসলিম দেশগুলোকে দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে সর্বোচ্চ নেতা জানান।

 বইয়ের অভাব অন্য কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয় : সর্বোচ্চ নেতা
তেহরানের ইমাম খোমেইনী (র.) মুসাল্লায় দেশি-বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণে ৩১তম আন্তর্জাতিক বই মেলা ২ মে শুরু হয়ে ১২ মে শেষ হয়। এতে আড়াই হাজারের বেশি ইরানি প্রকাশনা সংস্থা ও ১২৩টি বিদেশি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয়। বই মেলায় প্রায় পাঁচ লাখ দেশি-বিদেশি বই ছিল। এর মধ্যে আরবি বইয়ের সংখ্যা ৩৭ হাজার এবং ইংরেজি বইয়ের সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার। এ বছর তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলার স্লোগান ছিল ‘বই না পড়াকে না বলুন’।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গত ৫ মে ২০১৮ তেহরানের ৩১তম আন্তর্জাতিক বইমেলা পরিদর্শন করেন। বইমেলায় তিনি প্রায় ৫০টি স্টল ঘুরে দেখেন এবং এসব স্টলের প্রকাশক ও বই বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি চলতি বইমেলায় প্রকাশিত নতুন নতুন বইয়ের খোঁজখবর নেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামি দিকনির্দেশনামন্ত্রী সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি তরুণ সমাজকে বেশি বেশি বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মানবজীবনে বইয়ের চাহিদা অন্য কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে মানুষকে সেসব বই পড়তে হবে যেগুলো তাকে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং উন্নত মানবীয় মূল্যবোধের অধিকারী করবে।

 পরমাণু সমঝোতা বজায় রাখা প্রসঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি রাহবার
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তাঁর দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের গভীর শত্রুতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইরানের কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে আমেরিকার পরাজয় হবে অবশ্যম্ভাবী।
গত ২৩ মে ২০১৮ ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাঁদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্টের পরিণতি বুশ ও রিগ্যানের মতো পূর্বসূরিদের চেয়ে ভালো কিছু হবে না এবং তাদের মতোই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, পরমাণু আলোচনার শুরু থেকে ইরান যে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তা হলো আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসা তেহরানের সাজে না। কারণ, দেশটি কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না।
পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমেরিকা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে বলে উল্লেখ করেন আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেন, পরমাণু সমঝোতায় অটল থাকতে চাইলে ইউরোপীয় দেশগুলোকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আনতে হবে।
ইউরোপের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতা কয়েকটি শর্ত আরোপ করেন। তিনি বলেন, তিন ইউরোপীয় দেশের শীর্ষ নেতাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ও মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের উপস্থিতি নিয়ে কখনো কোনো অবস্থায় কথা বলবে না।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সাংঘর্ষিক সম্পর্ক নেই। তবে এসব দেশের প্রতি তেহরানের অবিশ্বাস আছে। ইউরোপীয়রা অতীতে ইরানকে দেয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে বলেই এ অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এ অবিশ্বাস ভাঙতে তিন ইউরোপীয় দেশকে (ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি) বাস্তব গ্যারান্টি দিতে হবে।
সর্বোচ্চ নেতা তার শর্তের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আরো বলেন, ইরানের তেল বিক্রি ও বৈদেশিক লেনদেন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য ইউরোপকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু তারা যদি এসব কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে পরমাণু কর্মসূচি আবার চালু করার অধিকার সংরক্ষণ করে তেহরান।
ইরানের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদেরকে তিনি এ ব্যাপারে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী হাজার হাজার শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীর এক সমাবেশে অপর এক বক্তৃতায় পরমাণু সমঝোতা এবং আমেরিকার আচরণের ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাল্কাবুদ্ধি ও বোকামিপূর্ণ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে দশটিরও বেশি মিথ্যা কথা বলা ছাড়াও ইরানের সরকার ও জনগণকে হুমকি দিয়েছেন। আমি ইরানি জাতির পক্ষ থেকে বলছি, মি. ট্রাম্প আপনি আমাদের কিছুই করতে পারবেন না।’
আমেরিকার আচরণ ও বেআইনি কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই হাল্কা করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমেরিকার টার্গেট কোনো একটি দল বা ব্যক্তিকে উৎখাত করা নয়; বরং ইরানের জনগণ ও দেশটির ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে ধ্বংস করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়, ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠা এবং এদেশে আমেরিকার প্রভাব খর্ব হওয়ার কারণে ওয়াশিংটন ক্ষুব্ধ ও হতাশ এবং এ কারণেই তাদের শত্রুতা অব্যাহত রয়েছে। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আরো বলেন, শত্রুরা চায় ইরানে ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাত করে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী ও ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ দেশটির ওপর ফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। আমেরিকা গত ৪০ বছর ধরে নানা উপায়ে ও ছলচাতুরীর মাধ্যমে ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থার পতন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ ব্যাপারে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর চিঠিতে কিংবা বিভিন্ন বক্তব্যে ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিতেন অথচ দাবি করতেন ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করা তাঁর লক্ষ্য নয়।
তিনি বলেন, ইউরোপ যদি ইরানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মার্কিন অন্যায় দাবি মেনে নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে তাহলে বুঝতে হবে তারা আমেরিকার অনুগত হয়ে কাজ করছে। অবশ্য ইউরোপ এখন পর্যন্ত নিজেদেরকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাদের মুখের কথা যথেষ্ট নয়। ইউরোপকে কাজেকর্মে এটা প্রমাণ করতে হবে আমেরিকার ইরানবিরোধী নীতিতে তারা শামিল হবে না।

পরমাণু নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন ট্রাম্প : বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত গত ৮ মে ২০১৮ ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার কথাও বলেছেন। এই সমঝোতার প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন রয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসলেও বাস্তবতা হচ্ছে পরমাণু ইস্যুতে আমেরিকা আরো বহু আগে থেকে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে আসছিল। অবশ্য পরমাণু সমঝোতা থেকে সরে গিয়ে ওয়াশিংটন শুধু যে ইরানকে টার্গেট করেছে তাই নয় একই সঙ্গে এ হঠকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সমাজকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ তারা সারা বিশ্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগেও আমেরিকা আন্তর্জাতিক আরো বেশ কিছু চুক্তি যেমন জলবায়ু ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনবিরোধী চুক্তির মতো বহু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের স্বেচ্ছাচারিতা ও অবিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছে। এমনকি এসব একতরফা আচরণের বিরুদ্ধে আমেরিকার মিত্র দেশগুলোও অসন্তুষ্টও ক্ষুব্ধ।
পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ব্যাপারে তাঁর অবস্থান ¯পষ্ট করলেন যা এতদিন ঝুলে ছিল। এখন থেকে এটি পাঁচ জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। বর্তমানে ইউরোপ পরমাণু সমঝোতা মেনে চলার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তারা এতে টিকে থাকবে নাকি আমেরিকার স্বেচ্ছাচারী নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করবে সেটাই দেখার বিষয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তার দেশের পরমাণু শক্তি সংস্থাকে বেশি মাত্রায় ইউরেনিয়াম
সমৃদ্ধকরণ শুরুর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, ইউরোপ পরমাণু সমঝোতার প্রতি অটল থাকবে। তিনি বলেন, ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে পরমাণু চুক্তি
এবং এর প্রতি সমগ্র বিশ্বের সমর্থন রয়েছে। পরমাণু সমঝোতার ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্যও তিনি ইরানের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনও ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার প্রতি অটল থাকার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই চুক্তির প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন রয়েছে এবং এটি টিকে থাকা ইউরোপের এই তিন দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেসও পরমাণু সমঝোতা থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা অনেক বড় একটি সাফল্য যা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ইরান তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র প্রতিবেদনেও স্বীকার করা হয়েছে।

ইরান সরকারের বিবৃতি : প্রয়োজনে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া হবে

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে মার্কিন সরকারের বেরিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইরান সরকারে মুখপাত্র মোহাম্মাদ বাকের নোবাখ্ত গত ১১ মে ২০১৮ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।
ইরান সরকারের এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুরু থেকেই আমেরিকা পরমাণু সমঝাতা লঙ্ঘন করে আসছিল এবং তারই ধারাবাহিকতায় দেশটি এটি থেকে বেরিয়ে গেছে। এ ছাড়া, ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ‘নোংরা’ বক্তব্য তাঁর মূর্খতা ও বোকামির পরিচয় বহন করছে। এ ধরনের বক্তব্য সেই দেশের সরকার প্রধানকেই মানায় যে দেশ মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন চালিয়ে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে।
ইরান সরকারের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে। সেইসঙ্গে বিশ্বের কোনো দেশ আর সেইসব দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তিতে সই করবে না যেখানে আমেরিকা স্বাক্ষর করেছে।
ট্রাম্পের ইরানবিরোধী হাস্যকর বক্তব্যের কারণে পরমাণু সমঝোতার কোনো ক্ষতি হবে না উল্লেখ করে ইরান সরকারের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আমেরিকা বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেও ইরান পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ ১১টি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে, ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তাবয়ন করেছে।
ইরান সরকারের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পার তেহরান এখন এ সমঝোতায় বর্ণিত ধারা অনুসারে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে যাবে। সেখানে ইরানের স্বার্থ রক্ষিত না হলে প্রয়োজনে তেহরানও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
সমঝোতা বাস্তবায়নে ‘পাল্টা পদক্ষেপ নীতি’ অনুসরণ করার জন্য ইরানের সংসদ সংসদ্যরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ওই নীতির তিন নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারের দায়িত্ব হলো প্রতিপক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে ইরানি জাতির অধিকার রক্ষায় পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, চুক্তির কোনো পক্ষ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করলে কিংবা বাতিলকৃত কোনো নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করলে সেই পক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইরানি সংসদ সদস্যরা আজ সংসদে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে গৃহীত এক বিবৃতিতে পরমাণু সমঝোতা থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেছেন। সমঝোতা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং তাদের কিছু আরব মিত্রসহ মোনাফেক গোষ্ঠী ইরানের বিরুদ্ধে একই ফ্রন্টভুক্ত।

ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ইরানের সর্বত্র বিক্ষোভ হয়েছে। গত ১৮ মে জুমার নামাজের পর লাখ লাখ মুসল্লি রাস্তায় নেমে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘ইসরাইল ধ্বংস হোক, আমেরিকা নিপাত যাক’ সহ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নানা স্লোগান লেখা ছিল।
বিক্ষোভকারীরা বায়তুল মুকাদ্দাসে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ও গাজায় গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন মুসলিম দেশের নীরবতার সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, ইরানিরা ফিলিস্তিনিদের পাশে রয়েছে এবং চূড়ান্তভাবে ফিলিস্তিনিরাই বিজয়ী হবে। ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানান ইরানি বিক্ষোভকারীরা।
গত ১৪ মে গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হওয়ার পর থেকেই ইরানিরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছেন। ১৮ মে ইরানের প্রতিটি শহরেই জুমার নামাজের খুতবায় ইসরাইল ও আমেরিকার সমালোচনা করার পাশাপাশি মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইরানের সাড়ে চারশ’ মিলিয়ন ডলারের জ্ঞানভিত্তিক পণ্য রপ্তানি

গত ইরানি বছরে সাড়ে চারশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ইরানের জ্ঞানভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরেনা সাত্তারি এই তথ্য জানিয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এবং ইরান এয়ারপোর্ট ও এয়ার নেভিগেশন কো¤পানির মধ্যকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ফাঁকে এই তথ্য জানান সুরেনা সাত্তারি।
ইরানি স্টার্টআপ বা উদ্যোগ তৈরি ও জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোক্তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জনগুলো তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ইরানের জ্ঞানভিত্তিক শিল্প অল্প কিছু দিন আগে শুরু করলেও রাশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ওষুধ রপ্তানিতে বৈশ্বিক মান অর্জন করেছে তাঁর দেশ।
সুরেনা সাত্তারি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত আন্তর্জাতিক মান অর্জনকে বিবেচনায় আনা এবং এই খাতে মহত ধারণাগুলোকে উৎসাহিত করা।
তেল রপ্তানি থেকে আসা অর্থের ওপর নির্ভরশীলতার সমালোচনা করে সাত্তারি মানব সম্পদ ও উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এ দুটি বিষয়কে তিনি দেশের মূল্যবান সম্পত্তি হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘তেলভিত্তিক অর্থ মানুষের ভেতরে এই ধারণা তৈরি করে যে, তারা টাকা দিয়ে সবকিছুই কিনতে পারে।’
শরিফ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ইরানি এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা উদ্যোক্তা ও বিজ্ঞানী কিনতে পারি না। তবে আমরা তাদের তৈরি করতে পারি।’

৯ তেহরানে জ্বালানি মেলায় ৪ হাজার কোম্পানির অংশগ্রহণ 

গত ৭ মে ২০১৮ তেহরানে অনুষ্ঠিত ২৩তম আন্তর্জাতিক জ্বালানি মেলায় ৩৮টি দেশের ৪ হাজার কো¤পানি অংশ নেয়। আযারবাইজান, অস্ট্রিয়া, স্পেন, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন, ইতালি, বেলজিয়াম, তুরস্ক, চেক রিপাবলিক, চীন, রাশিয়া, জাপান, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ক্রোশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ভারত, ফিনল্যান্ড, হংকং, বাহরাইন, কাজাখাস্তান, মোনাকো, কানাডা, লিচেনস্টেইন, ওমান, ডেনমার্ক, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সহ বিভিন্ন দেশ এ মেলায় অংশ নেয়।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান নামদর জানগানেহ, গ্যাস এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল ইয়ুরি সেনটিউরিন, ক্রোয়েশিয়ার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার মার্টিনা দালিক, ইরানি সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত সহ জালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১০ ইরান-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য বেড়েছে দেড়শ’ ভাগ

গত ইরানি বছরে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তেল-বহির্ভূত বাণিজ্য হয়েছে ইরানের। যা আগের বছরের তুলনায় ১৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে ইরানের বিশ্বের ১৪তম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য।
ইরানের শুল্ক প্রশাসনের তথ্য মতে, গত বছরে যুক্তরাজ্যে ১৭ হাজার ৯৫২ টন পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ৪৮ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের বছরের চেয়ে ওজনের দিক দিয়ে যা ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ ও মূল্যের দিক দিয়ে ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে, উল্লিখিত সময়ে ইরানে ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৩ দশমিক ০৪ মিলিয়ন টন মালামাল রপ্তানি করেছে যুক্তরাজ্য। যা ওজনের দিক দিয়ে আগের বছরের চেয়ে ২০০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি এবং মূল্যের দিক দিয়ে ১৬৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। ইরান যুক্তরাজ্য থেকে প্রধানত খইল, ক্ষেতের ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি করেছে।

১১ ইরান ও স্পেন পারস্পরিক শিক্ষা সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও স্পেন পারস্পরিক শিক্ষা সহযোগিতা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে গত ২২ মে তেহরানে ইরানের যান্জন্ ইউনিভার্সিটি ও স্পেনের জায়েন্ ইউনিভার্সিটির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এ সমঝোতা স্মারকের প্রধান বিষয় হচ্ছে দু’পক্ষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র বিনিময়। এছাড়া দু’পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক তৎপরতা বৃদ্ধির ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতার সুফলের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
উল্লেখ্য যে, স্পেনের দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত জায়েন ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি ও স্প্যানিশ্ ভাষায় বিভিন্ন ধরনের ৪০টি বিষয়ে ১৭ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা দেয়া হয়। অন্যদিকে ইরানের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত যান্জন্ ইউনিভার্সিটি দেশের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অন্যতম যেখানে ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করছে।
ইতিপূর্বে গত ফেব্রুয়ারি মাসে (২০১৮) তেহরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও স্পেনের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ যারীফ ও স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আল্ফন্সো মারিয়া দাস্তিস্ কুয়েসেদো উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরান ও স্পেনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা মূলক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রথম বার আমি ইরান সফর করছি, কিন্তু আমি আশা করছি যে, দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ভবিষ্যতে সম্ভব সর্বোত্তম পর্যায়ে শক্তিশালী হবে।
তিনি ইতিপূর্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প প্রশ্নে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ছয় বৃহৎ শক্তি এবং ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে প্রকাশিত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সদস্য দেশ হিসেবে স্পেন এ গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির প্রতি পুরোপুরি অঙ্গীকারাবদ্ধ।
এ অনুষ্ঠানে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে মত বিনিময় কালে উভয় পক্ষ দু’দেশের মধ্যে পর্যটন ও পরিবেশের ক্ষেত্রে এবং উন্নততর প্রযুক্তি, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

 ইরান ও নেদারল্যান্ড্স্-এর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও নেদারল্যান্ড্স্-এর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে দু’টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ২ থেকে ৫ মে (২০১৮) নেদারল্যান্ড্স্-এর হেগ্-এ অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ কৃষি কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ বৈঠকে ইরানি পক্ষে সভাপতিত্ব করেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কৃষি বিষয়ক গবেষণা ও শিক্ষা এবং কৃষি সম্প্রসারণ সংস্থা (এর্আইইও)-র প্রধান এস্কার্ন্দা যান্দ্, অন্যদিকে নের্দাল্যান্ড্স্ এর পক্ষে সভাপতিত্ব করেন দেশটির কৃষি উপমন্ত্রী ও ওয়াগেনিঙ্গেন্ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ-এর ডেপুটি রের্ক্ট।
বৈঠকে উভয় পক্ষ শিক্ষা, যৌথ বিনিয়োগ উদ্যোগ, কৃষিজাত দ্রব্যাদি বাজারজাত করণ এবং পানি ও মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে সমন্বিত চুক্তিতে উপনীত হয়।
বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত দু’টি সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে পশু পালন, উদ্ভিদ সংরক্ষণ, পানি ও মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা, লোনা ভূমির উন্নয়ন, গ্রীনহাউজ চাষাবাদ, আলু চাষ, জেনেটিক সম্পদ, মৎস্য চাষ, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, কারখানাজাত ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রীর ব্যবসায়, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও যৌথ গবেষণা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা।
উল্লেখ্য, দুই দেশের কৃষি মন্ত্রী কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক চুক্তির ভিত্তিতে ২০১৬ সালে কৃষি বিষয়ক ইরান-নের্দাল্যান্ড্স্ জয়েন্ট কমিটি গঠিত হয়।

১৩ ইরানের তেল পাইপ লাইন ও টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতির ৮০ ভাগেরও বেশি উৎপাদন সক্ষমতা

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তেল পাইপ লাইন ও টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি ও উপকরণের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত হচ্ছে। ইরানিয়ান অয়েল পাইপলাইন্স্ অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স্ কোম্পানি (আইওপিটিসি)-র চীফ এক্সিকিউটিভ আব্বাস আলী জাফারীনাসাব গত ১২ মে সাংবাদিকদের নিকট এ তথ্য প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকেই এ দু’টি খাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণাদি দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদনকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়। তিনি বলেন, এ কারণেই দেশ কখনোই, বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞার যুগে এ ব্যাপারে কোনো বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয় নি।
আব্বাস আলী জাফারীনাসাব বলেন, দেশের অভ্যন্তরে নাট্, বল্টু, ফ্ল্যাঞ্জেস্ ও ফিটিংস্ সহ ছোট ছোট পার্ট্স্ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন অভিমুখী এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্বয়ংসম্পূর্ণতার এ বিষয়টি মাথায় রেখে এরপর দেশের নিপুণ ও সুদক্ষ প্রকৌশলিগণ এ দুই খাতের জন্য প্রয়োজনীয় অধিকতর জটিল যন্ত্রপাতি ও উপকরণাদি-উদাহরণস্বরূপ, পাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লুইডের মেকানিক্স্-উৎপাদনের জন্য বিরাট বিরাট প্রকল্প হাতে নেন।
তিনি বলেন, তেল পাইপ লাইন ও টেলিযোগাযোগ সিস্টেম্সমূহের ক্ষেত্রে দেশ বর্তমানে এতই সাফল্য অর্জন করেছে যে, কতক ইরানি কোম্পানি বিশ্বের সর্বাধিক সুনামসম্পন্ন কোম্পানিসমূহকে সরবরাহের লক্ষ্যে উন্নততর মানের র্টাবাইন উৎপাদনের জন্য স্বীয় প্রস্তুতির কথার ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, উদাহরণ স্বরূপ, এ ব্যাপারে সর্বশেষ যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তা হচ্ছে ৩ মেগাওয়াট গ্যাস র্টাবাইন-তার জন্য প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ সহ-উৎপাদন সংক্রান্ত।
আব্বাস আলী জাফারীনাসাব বলেন, ইরানিয়ান অয়েল পাইপ্লাইন্স্ অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স্ কোম্পানি (আইওপিটিসি)-র কাছে বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানি কর্তৃক ১৬টি বিভিন্ন ধরনের মডেলের কাঠামোর আওতায় উৎপাদিত ১৬৫টি গ্যাস র্টাবাইন রয়েছে। এ কারণে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এখন থেকে ২০ বছর আগেই এগুলোর জন্য তখন থেকে পরবর্তীকালে প্রয়োজন হতে পারে এমন ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
ইরানিয়ান অয়েল পাইপ্লাইন্স্ অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স্ কোম্পানি (আইওপিটিসি)-র চীফ্ এক্সিকিউটিভ্ তাঁর বক্তব্যের উপসংহারে বলেন, যেহেতু ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী কর্তৃক (গত ২১ মার্চ ২০১৮ তারিখে সূচিত) চলতি ইরানি বছরকে ‘ইরানি পণ্যসমূহকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের বছর’ হিসেবে নামকরণ করেছেন সেহেতু আইওপিটিসি চলতি ইরানি বছরেই স্বীয় লক্ষ্যসমূহের সর্বাধিক অর্জনের জন্য সাধ্যানুযায়ী প্রচেষ্টা চালাবে।

ইরানি গবেষকদের উদ্ভাবিত মোবাইল অ্যাপ্. অভ্যন্তরীণ ন্যাভিগেশন সহজতর করেছে

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের গবেষকদের উদ্ভাবিত একটি মোবাইল অ্যাপ্. দেশের অভ্যন্তরে ন্যাভিগেশনকে সহজতর করেছে। সংশ্লিষ্ট স্টার্টআপ্-এর অন্যতম সদস্য র্ফাশীদ্ আব্দুল্লাহী গ৩ ১৩ মে বার্তা সংস্থা ইস্নাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, Indooria নামক এ মোবাইল অ্যাপ্.-টির সহায়তায় এটির ব্যবহারকারিগণ কোনোরূপ ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই দেশের অভ্যন্তরীণ স্পেস্ ব্যবহার করে ন্যাভিগেশন করতে এবং দেশের ভিতরকার যে কোনো জায়গাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম।
তিনি আরো জানান যে, Indooria ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই মোবাইলে এটির ব্যবহারকারীর রিয়াল-টাইম লোকেশন এবং সেখান থেকে তাঁর উদ্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে উপনীত হবার সংক্ষিপ্ততম পথ প্রদর্শন করে থাকে।
র্ফাশীদ্ আব্দুল্লাহী বলেন, গ্লোবাল্ পজিশনিং সিস্টেম্ (জিপিএস্) সাধারণত ইর্ন্ডো স্পেস্সমূহে কাজ করে না। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যখন প্রথম বারের মতো কোনো বড় সরকারি ভবনে বা বেসরকারি ভবনে, যেমন : শপিং সেন্টার, সিনেমা হল, স্টেডিয়াম্, বিশ^বিদ্যালয় ইত্যাদির কোনোটিতে কাজের প্রয়োজনে বা পরিদর্শনের জন্য যেতে মনস্থ করেন তখন তাঁর জন্য গাইডের প্রয়োজন হয়; সে ক্ষেত্রে এ অ্যাপ্.-টি খুব সহজেই তাঁকে তাঁর উদ্দিষ্ট স্থানে যেতে গাইড্ করতে পারে, এমনকি তাঁকে একটি বিরাট ভবনের বিভিন্ন অংশের ভিতর দিয়ে যথাস্থানে যেতেও গাইড করতে পারে। তিনি বলেন, তবে Indooria কেবল সেই সব ভবনের ভিতরে ন্যাভিগেশনে সহায়তা করে থাকে যেসব ভবনের ইর্ন্ডো ম্যাপ্ আগে থেকেই এ স্টার্ট্আপ্-এ দেয়া থাকে।
এ ধরনের একটি অ্যাপ্.-এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে র্ফাশীদ্ আব্দুল্লাহী বলেন, ইরানে Indooria হচ্ছে এ ধরনের প্রথম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। তিনি আরো বলেন যে, Indooria-এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এটি এর ব্যবহারকারীকে ব্যবহারের লোকেশনের ভিত্তিতে ডিস্কাউন্ট অফার দিতে পারে।
উল্লেখ্য, কাযভীন ইসলামিক ওপেন ইউনিভার্সিটির তরুণ ইরানি গ্রাজুয়েটদের সমন্বয়ে গঠিত এ স্টার্টআপ্ বর্তমানে একটি নলেজ্-বেস্ড্ কোম্পানি হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

ইরানে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ব্লাড-ব্যাগ উৎপাদন কোম্পানির উদ্বোধন

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আলবোর্জ প্রদেশের পায়াম স্পেশাল ইকোনোমিক যোনে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ব্লাড-ব্যাগ উৎপাদন কোম্পানির উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ১৪ মে (২০১৮) কোম্পানিটির উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান ক্বাযীযাদেহ্ হাশেমী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিরাট কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প প্রশ্নে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ছয় বৃহৎ শক্তি এবং ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে প্রকাশিত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ)-র সুফল সমূহের অন্যতম। তিনি অর্থনীতিকে স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার সমূহের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন এবং তিনি এ লক্ষ্যে পুঁজি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে অধিকতর শক্তিশালী সহযোগিতা প্রদানের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, ইরানে উৎপাদিত পণ্য সমূহ কেবল ইরানের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হবে এমনটা মনে করা পুরোপুরি ভুল; বরং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মান বৃদ্ধি করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পণ্য বিদেশে রফতানি করা ও সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানে উপনীত হওয়া।

ইতালি কর্তৃক ইরানের মাদকদ্রব্য চোরাচালানবিরোধী লড়াইয়ের প্রশংসা

ইতালি সরকারের মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশের প্রধান গিউসেপ্পে কোসিভেরা গত ১৩ মে (২০১৮) তেহরানে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় কালে মাদক দ্রব্য চোরাচালান বিরোধী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও এ পথে বহু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রশংসা করেছেন।
ইতালির মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশ প্রধান বলেন, মাদকদ্রব্যবিরোধী লড়াইয়ে আমাদের সকলের জন্যই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভৌগোলিক দিক থেকে ইরান আফগানিস্তান থেকে অন্যান্য দেশে আফিম চোরাচালানের পথের কেন্দ্রে অবস্থিত। তিনি ইরানকে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের বিরুদ্ধে একটি বিরাট বাঁধস্বরূপ বলে অভিহিত করেন এবং এ ব্যাপারে ইরানের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার জন্য তেহরানের সাথে সম্মিলিত ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধের জন্য যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কোসিভেরা সে জন্য ইরান সরকারের প্রশংসা করেন এবং মাদকদ্র্রব্যবিরোধী অভিযানে ইরানের যে বস্তুগত ক্ষতি হয়েছে সে জন্য এবং এতে ইরানের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের শহীদ হওয়ার কারণে ইরান সরকারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য উৎপাদিত হয় এবং এ দু’টি দেশ থেকে ঐ সব মাদকদ্রব্য মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ী হবার পর থেকেই ইরান সরকার মাদকদ্রব্য ব্যবহার ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে দমন অভিযান চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ইরান সরকারের মাদকদ্রব্যবিরোধী আইন প্রয়োগকারী পুলিশ গত ২০১০ সাল থেকে সুবিন্যস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশব্যাপী তার মাদকদ্রব্য চোরাচালানবিরোধী অভিযানের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করেছে।
ইরানের মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশ সব সময়ই মাদকদ্রব্য চোরাচালানী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি অভিযান চালিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে যে ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে তার ফলে এ ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য নিরোধ অভিযানবিষয়ক প্রতিবেদনে ইরানের মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশকে বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রগামী ও আত্মত্যাগী মাদকদ্রব্যবিরোধী বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইরানের মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশ সাত বছর আগে থেকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী দমন অভিযান চালিয়ে আসছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর আগ্রাসনের পর সেখানে মাদকদ্রব্যের উৎপাদন ৪০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি আফগানিস্তান ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের কর্মকর্তাগণও ১৬ বছরেরও বেশিকাল পূর্বে আফগানিস্তানে হামলা চালানোর পর থেকে দেশটির মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত সমস্যাটিকে উপেক্ষা করার জন্য ওয়াশিংটন ও ন্যাটোকে দোষারোপ করেছেন।

শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় রোবটের খেলাঘর তৈরি করলো ইরান

খেলনার ছলে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিতে রোবটের খেলনাঘর তৈরি করেছেন গবেষকরা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোবোকিড্স’। সম্প্রতি ইরানের আমির কবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (এইউটি) গবেষকরা রোবটের এই খেলনাঘর তৈরি করেছেন।
আমির মোগুয়েই নামে প্রকল্পটির এক ব্যবস্থাপক গত ৫ মে ২০১৮ সংবাদ সংস্থা মেহর নিউজ এজেন্সিকে জানান, সম্পূরণ দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে রোবটের খেলনাঘর ‘রোবোকিড্স’ নকশা ও নির্মাণ করা হয়েছে। এই খেলাঘরটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে হলো শিশুদের বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি রোবট প্রযুক্তি সম্পর্কে আকর্ষণীয় পন্থায় পরিচয় করিয়ে দেওয়া।  সম্পরকে
খেলনাঘরটি সম্পর্কে তিনি জানান, ‘রোবোকিড্স’ মূলত রোবটের একটি খেলনাঘর। যেখানে আমির কবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (এইউটি) গবেষকদের তৈরি দুটি রোবট রয়েছে। রোবট দুটির একটির নাম ‘আসরু’, অপরটির নাম ‘সাম্মি’। রোবটদ্বয় যাতে শিশুদের সঙ্গে মজাদার ও বিনোদনমূলক কথোপকথন করতে পারে সেভাবে সেগুলো তৈরি করা হয়েছে।
‘সাম্মি’ হলো এক ধরনের গোলগাল মোটা আকৃতির রোবট। এর রয়েছে বেশ কিছু সংখ্য খেলনা। অন্যদিকে ‘আসরু’ সাম্মির চেয়ে আকৃতিতে বড় এবং সাম্মির চেয়ে কিছুটা শক্তিশালী।
প্রকল্প ব্যবস্থাপকের তথ্য মতে, রোবটদ্বয় ফারসি ভাষায় কথা বলতে পারে, হাসতে পারে এবং অবাক করার মতো কিছু করতেও পারে। এমনকি দুঃখে কাঁদতেও পারে রোবটদ্বয়। এছাড়া রোবট দু’টি প্রতিটি গেমস একইসাথে পাঁচ জন শিশুর সঙ্গে খেলতে পারে।

১৮ ইরানি যাযাবরদের জীবনধারা নিয়ে ফটোপ্রদর্শনী

ইরানিয়ান আর্টিস্ট ফোরাম (আইএএফ) এর বাহার গ্যালারিতে ইরানের কোহকিলুয়েহ বোয়ার আহমাদ অঞ্চলে বসবাসরত যাযাবর সম্প্রদায়ের লোকদের প্রাত্যহিক জীবনধারা নিয়ে একটি ফটোপ্রদর্শনী গত ১৮ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ছয় দিনব্যাপী এই ফটো প্রদর্শনীতে যাযাবর সম্প্রদায়ের লোকদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা ছবি প্রদর্শিত হয়।
‘সামথিং লাইক লাইফ’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর যৌথভাবে আয়োজন করে রাদে নো আন্দিশ আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ইনস্টিটিউট ও ইরানের আর্ট ব্যুরোর য়াসুজ শাখা। কোহকিলুয়েহ বোয়ার আহমাদ অঞ্চলের যাযাবর পরিবারে বেড়ে ওঠা ইরানি ফটোগ্রাফার ইসহাক আকায়ির সংগৃহীত বিভিন্ন ছবি প্রদর্শনীতে দেখানো হবে।
প্রদর্শনীর ক্যাটালগে বলা হয়, কোহকিলুয়েহ বোয়ার আহমাদ ইরানের কেন্দ্রীয় জাগরোস অঞ্চলের একটি অংশ। এখানে রয়েছে ভিন্ন দুই ধরনের আবহাওয়া। যে কারণে ইতিহাসে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে সেখানকার যাযাবররা। প্রতি বছর শরৎ ও বসন্তের মাঝামাঝি যাযাবররা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাসস্থান পরিবর্তন করে থাকে। সমন্বিতভাবে এই বাসস্থান বদলের ঘটনা প্রতি বছর ঘটলেও বিগত কয়েক দশকে এর হার বিপুল হারে কমে গেছে। এই সম্প্রদায়ের প্রায় অর্ধেক তাদের যাযাবর জীবনধারা ত্যাগ করেছে।
ক্যাটালগের তথ্যমতে, বর্তমানে ইরানে যাযাবর সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ১২ লাখ। ধীরে ধীরে যাযাবর সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রাম ও শহরগুলোতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করছে। যে কারণে দিনদিনই কমছে যাযাবর জনগণের সংখ্যা।

অঙ্গদাতার কার্ড রয়েছে ৩০ লাখ ইরানির

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গদাতার কার্ড রয়েছে ৩০ লাখ নাগরিকের এবং অনলাইনে অঙ্গদানের সম্মতি জানিয়ে ফর্ম পূরণ করেছে দেশটির দশ শতাংশ জনগণ। ইরানের যক্ষা এবং ফুসফুস রোগবিষয়ক জাতীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট মাসিহ দানেশভারি হাসপাতালের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রক্রিয়াকরণ কর্মসূচির প্রধান ফারাহনাজ সাদেক বেইগি গত ২১ মে জাতীয় অঙ্গদান দিবসের অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান। ১৯৮৯ সালের এ দিনে ইরানের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গদানের বৈধতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করেন। সে থেকে দিনটির স্মরণে প্রতি বছর ২১ মে অঙ্গ দান দিবস পালন করে ইরান।
সাদেক বেইগি জানান, মস্তিষ্ক মৃতের মূল কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ময়না তদন্তে ৪ হাজার মস্কিষ্ক মৃতের ঘটনা পাওয়া গেলেও এদের মধ্যে অঙ্গদান করেছেন মাত্র ১ হাজার জন।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপক আলি আকবার বেলায়েতি জানান, তাঁর হাসপাতালে অঙ্গ সংযোজনের অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি।

শান্তির বার্তা নিয়ে ইরানের ১৫ শিল্পীর আঁকা ছবি প্রদর্শনী

ইরানের চিত্রশিল্পীরা ওয়ার্ল্ড রেড ক্রিসেন্ট ডে উপলক্ষে বিশাল এক ছবি এঁকেছেন। এটি প্রদর্শিত হয় তেহরানের আলী আকবার সানাতি জাদুঘরে। ১৫ জন প্রফেশনাল শিল্পী মানবতার আবেদন দিয়ে এ ছবি এঁকেছেন। মানুষের প্রতি দয়া ও শান্তি এ ছবিতে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে। ছবিটি ১০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার চওড়া।
ওয়ার্ল্ড রেড ক্রিসেন্ট ডে-র প্রতিপাদ্য সাতটি বিষয় হচ্ছে মানবতা, সাম্য, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছায় সেবা, একতা ও বিশ্বজনীনতা। প্রতি বছর ৬ থেকে ১২ মে আন্তর্জাতিক মানবতা আন্দোলনকারীরা বেশ ঘটা করেই দিবসটি পালন করেন।

সেরা ছবির পুরস্কার জিতলো ‘দ্য ডিস্টেন্স’

দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৫তম বুসান আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার ‘গ্রান্ড প্রিক্স’ জয় করে শর্ট ফিল্ম ‘দ্যা ডিস্টেন্স’। সেরা পিকচারের জন্য উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার লাভ করেছে চলচ্চিত্র নির্মাতা ইউসেফ কারগারের এই ছবিটি। গত ৩ মে ২০১৮ আয়োজকেরা উৎসবের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
বুসান ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালের আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ইরানি ছবিটি। দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৪ এপ্রিল উৎসব শুরু হয়ে চলে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি বোর্ড এক বিবৃতিতে বলে, ভালোবাসার যন্ত্রণা নিয়ে ছবিটিতে সাধারণ, আকর্ষণীয়, অন্তর্নিহিত কাহিনী ফুটে তোলা হয়েছে এবং কিছু সময় আমাদের ভালোবাসার মানুষটিকে সুরক্ষিত করতে সত্যকে যে অনিবার্যভাবে লুকিয়ে রাখি তা তুলে ধরা হয়েছে।
উৎসবে বেস্ট পিকচারের জন্য এক্সসিলেন্স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে ইকুয়েডরের ছবি ‘দ্য কিটম্যান’। ছবিটির পরিচালক অ্যান্দ্রেস কোরনেজো পিন্তোর হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিচারকরা।
জুরি পুরস্কার পেয়েছে চলচ্চিত্রকার চিয়া চি সামের নির্মিত মালয়েশীয় ছবি ‘হাইওয়ে’। এছাড়া ¯েপশাল মেনশন পেয়েছে রাশিয়ার ঝান্না বেকমামবেতোভার ‘ট্যুইট ট্যুইট’ চলচ্চিত্র।

ইরানের ইউ-২১ মহিলা কারাতে টীমের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ইউ-২১ মহিলা কারাতে টীম জাপানের ওকিনাওয়ায় অনুষ্ঠিত এশীয় কারাতে ফেডারেশন (একেএফ্) আয়োজিত কারাতে প্রতিযোগিতায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে। গত ১০ থেকে ১৩ মে (২০১৮) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত একেএফ আয়োজিত ১৭তম ক্যাডেট, জুনিয়র ও ইউ-২১ কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় ইরানের ইউ-২১ মহিলা কারাতে টীম বিস্ময়কর নৈপুণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে ২টি স্বর্ণপদক, একটি রৌপ্যপদক ও একটি ব্রোঞ্জপদক জয় করে এ বিরাট গৌরবময় সাফল্যের অধিকারী হয়েছে।
এ প্রতিযোগিতায় ইরানের ইউ-২১ মহিলা টীমের পক্ষে জি. ফাতেমাহ্ খোনার্ক্দা ও নেগিন্ আল্তুনী দু’টি স্বর্ণপদক জয় করেন এবং মুবীনাহ্ হায়দারী ও হাদীছাহ্ জামালী যথাক্রমে একটি রৌপ্যপদক ও একটি ব্রোঞ্জপদক জয় করেন।
অবশ্য এ প্রতিযোগিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ইউ-২১ পুরুষ টীম-ও অংশগ্রহণ করে, তবে কোনো শীর্ষ স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয় নি। ইরানের ইউ-২১ পুরুষ টীম দু’টি রৌপ্যপদক ও দু’টি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে।
এছাড়া এ প্রতিযোগিতায় ইরানের ক্যডেট টীম-ও এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে এবং ইরানি মেয়েদের টীম দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।

 তেহরানের আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় বাংলাদেশ বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ইরানের রাজধানী তেহরানের ৩১তম আন্তর্জাতিক বই মেলায় গত ৫ মে ২০১৮ যৌথভাবে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বই ‘শুরে কান্দে পারসি দার বাংলাদেশ’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণের ‘জাতীয় হলে’ যৌথভাবে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন সাদি ফাউন্ডেশনের প্রধান এবং ইরানের সাবেক স্পিকার ড. গোলাম আলী হাদ্দাদ আদেল এবং ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁঞা।
এ দিনটিকে ‘বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ দিবসকে কেন্দ্র করে মেলায় এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি প্রকাশ করেছে ইরানের সাদি ফাউন্ডেশন। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যাঁরা বক্তব্য রাখেন তাঁদের অন্যতম হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুস সবুর খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাহমিনা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমিত আল রশীদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাওলী মাহবুব। এ ছাড়া পুস্তকের লেখকদ্বয়ও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বইটি লিখেছেন ডক্টর ফারহাদ দারুদগারিয়ান এবং ডক্টর এলহাম হাদ্দাদি। বইতে বাংলাদেশে ফারসি ভাষার চর্চা এবং প্রভাব নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করা হয়েছে।

ঢাবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ডিন’স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদভুক্ত ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম সরকার, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ‘বাংলাদেশে ফারসি অনুবাদ সাহিত্য ১৯৭১-২০০৫’ রচনার জন্য সেরা গবেষণা গ্রন্থ ‘ডিন্স মেরিট অ্যাওয়ার্ড ফর টিচারস’ লাভ করেন।
এছাড়া ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের স্নাতক সম্মান এবং স্নাতককোত্তর পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ এই বিভাগের ৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ‘ডিন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। গত ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।
ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মহিউদ্দিন জাকারিয়া ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত এমএ পরীক্ষায় সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ পেয়ে ‘ডিন্স মেরিট লিস্ট অব এক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। উল্লেখ্য, তিনি বর্তমানে ইরানের তেহরানে অবস্থিত খা’রেজমি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত আছেন। এছাড়া ফাহাদ মুমিন ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত অনার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ‘ডিন্স মেরিট লিস্ট অব অনার’ এবং সাহিদা আক্তার সনি ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত মাস্টার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ‘ডিন্স মেরিট লিস্ট অব অনার’ ক্যাটাগরিতে ডিন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।

ইরানের ফজর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশ সন্ধ্যা

বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, শান্ত-স্নিগ্ধ হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। এর রয়েছে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, কিন্তু কিছুদিন হলো সে অন্যের ব্যথায় বিমর্ষ, কণ্ঠ নিস্তব্ধ। ভাষ্যকার খন্দকার মর্জিনা আখতার লাভলির কণ্ঠে বাংলা বিবরণী শুনে সারা শরীরের লোমগুলো শিহরিত হচ্ছিল! লালনের বিখ্যাত গান ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’ ব্যাকগ্রাউন্ড সুরে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিপন্ন জীবন নিয়ে চিত্রিত এই প্রামাণ্যচিত্রের নাম ‘শারমে বুদা’ (বাংলা নাম বিমর্ষ বুদ্ধ)।
৩৬তম ফজর আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালের (২০১৮) শেষ দিনে গত ২৮ এপ্রিল ইরানের রাজধানী তেহরানের তালারে ওহাদাত (ঐক্য হলে) ইরানি চিত্রনির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজমের ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত এই হৃদয়¯পর্শী প্রামাণ্যচিত্রটি দেখার জন্য উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। বাংলা, ফারসি, আরবি ও ইংরেজি ভাষায় প্রচারিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে উপস্থিত অসংখ্য দর্শক অশ্রুসিক্ত নয়নে বাড়ি ফিরেছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রচার সংস্থার বাণিজ্যিক বিপণন প্রধান হাকশেনাস বলেন, প্রামাণ্যচিত্রটির সংগীতের সুর শুনলেই কেমন যেন একধরনের অসহায়ত্ববোধ জেগে ওঠে! নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে লজ্জা লাগে!
ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁঞা বলেন, এখানে কেবল একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে। আরেকটি দিক হচ্ছে, এইসব শরণার্থীর আবাসন, খাদ্য, বস্ত্র সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে এবং দ্রুত এই শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিমর্ষ বুদ্ধ দেখার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত হাশেমি রাফশানজানির পুত্র বর্তমানে তেহরানের মেয়র মুহসেন রাফসানজানি বলেন, পৃথিবীতে গৌতম বুদ্ধের ধর্মকে বলা হয় অহিংস ধর্ম। কিন্তু কিছু সন্ত্রাসী বুদ্ধ বিশ্বের বুকে এই ধর্মের অহিংস বাণীর অপমান করে যাচ্ছে।
দর্শকের সারিতে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাওলি মাহবুব। তিনি বেশ আবেগঝরা কণ্ঠে বললেন, বিখ্যাত এই আন্তর্জাতিক ফজর ফিল্ম ফেস্টিভালের মাধ্যমে সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রকারদের নিকট রোহিঙ্গা সংকট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। চলচ্চিত্র যেহেতু মানুষের কথা বলে, তাই এটি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম বাংলাদেশের মানুষের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, প্রামাণ্য দলিলটি নির্মাণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখে চোখ দিয়ে বারবার অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে। বিপুল জনসংখ্যার একটি দেশে, মানুষ রাতদিন পরিশ্রম করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। আমার এই প্রামাণ্যচিত্রের গতিপথ বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করে দিয়েছে।
পুরো প্রামাণ্য দলিলটিতে তিনি বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। প্রামাণ্যচিত্রটি দেখতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মো. সবুর হোসেনসহ অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। এই সন্ধ্যাটি মূলত বাংলাদেশ সন্ধ্যা হিসেবেই এবারের ফজর ফিল্ম ফেস্টিভালে পরিচিত হয়।
উল্লেখ্য, লেখক প্রামাণ্যচিত্রটি মূল ফারসি ভাষা থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন। এটি বর্তমানে ফ্রান্স ফেস্টিভালে যাওয়ার পথে রয়েছে। এ ছাড়া, আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলে খুব শিগগিরই এটি প্রচার হবে বলে পরিচালক জানিয়েছেন। ইরানের বিখ্যাত পরিচালকেরা ইতালি, ফ্রান্স, ভারত, সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে মিলে যৌথ ছবি তৈরি করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় খুব শিগগিরই বাংলাদেশের সঙ্গেও যৌথ ছবির উদ্যোগ নেবেন বলে জানালেন মুর্তজা অতাশ জমজম।
উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও জার্মানি, ভারত, রোমানিয়া, ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক, মোনাকো, লেবানন, বসনিয়া, তাইওয়ান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, রাশিয়া, ইতালি, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, আযারবাইজান, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে ও কাজাখস্তানসহ অনেক দেশ অংশগ্রহণ করে। ইরানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা মীর কারিমির তত্ত্বাবধানে ২১ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই উৎসবে বিশ্ব বরেণ্য সব চিত্রনির্মাতা ও বিচারকেরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৮২ সাল থেকে এই উৎসবটি চালু রয়েছে।

নাট্যকলার মাধ্যমে ইরান-বাংলাদেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে

বাংলাদেশের নাট্য-ব্যক্তিত্ব সুদীপ চক্রবর্তী গত ১৩ মে ২০১৮ রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরান বাংলাদেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে নাটকের। ২১তম ইরান আন্তর্জাতিক নাট্যমেলায় অংশ নেয়ার জন্য সরাসরি লন্ডন থেকে তেহরানে আসেন তিনি।
ব্রিটেনের গোল্ডস্মিথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমনওয়েলথ স্কলারশিপের আওতায় পিএইচডি করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুদীপ চক্রবর্তী। নাট্যকলা বিষয়ে ভাষণ দেয়ার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে তেহরানে আসেন তিনি। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস বিভাগের সামিনে মোফাকখাম হলে নাট্যকলা বিষয়ক ভাষণ দেন তিনি।
ভাষণ শেষে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো তেহরানে আসলাম; আমি বিমুগ্ধ।’ ইরান স¤পর্কে দূর থেকে যে কথা বলা হয় এখানে এসে তা থেকে ভিন্ন এক ইরানের দেখা পান বলেও জানান তিনি। এ ভিন্নতার স্বরূপ তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের বরেণ্য এই নাট্য-ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘আমার কাছে যে ভিন্ন ইরান মনে হয় তা ইরানের সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতির আভিজাত্যে ভিন্নতার কারণে মনে হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদিও ইরানের মানুষের রং ভিন্ন, উচ্চতা ভিন্ন এবং ভাষাও ভিন্ন, তারপরও ইরানিদের দেখে অনেকটাই আপনজন বলে মনে হয়েছে। চিনি ওদেরকে অনেক দিন ধরে। ইরান ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐক্যের কারণেই এমনটি মনে হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, একেবারে ঠিক কথাই বলা হয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐক্যের গভীরতা এবং দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের স¤পর্কের ইতিহাস থাকায় হয়ত তার ভেতরের মানুষটাকে ইরান এ ভাবে উজ্জীবিত করেছে। নাট্যকলার ক্ষেত্রে ইরান-বাংলাদেশ অপরূপ সমন্বয় হওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইরানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে। দু’দেশের নাট্য-বিশেষজ্ঞদের আদান-প্রদানের বিষয়ের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবেই দু’দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে নাটকের ।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের নাট্যমেলায় ৮টি দেশ অংশ নেয়। এসব দেশের নাট্য-বিশেষজ্ঞরা এ মেলায় বক্তব্য রাখবেন।

ইমাম খোমেইনী (র.)-এর ওফাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর ভাষণ

ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী গত ৪ জুন ২০১৮ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম খোমেইনীর আধ্যাত্মিক জগতে ঊর্ধ্বগমন-মৃত্যুবরণের ২৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে ভক্তি ও কৃতজ্ঞতায় উদ্বেলিত অগণিত মানুষের এক প্রাণোচ্ছল, উদ্দীপনামুখর ও তাৎপর্যপূর্ণ সমাবেশে দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ পেশ করেন। এই ভাষণে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় বিরল বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যালোচনা করেন এবং এসব বিজয়ম-িত ও মর্যাদার প্রতীক বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে ইসলামি বিপ্লবের মরহুম নেতা ইমাম খোমেইনীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য ও মিলগুলোর ওপর আলোকপাত করেন। এ পর্যায়ে তিনি দুশমনের মোকাবিলা ও ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মহান নেতা ইমাম খোমেইনীর সাতটি আচরণগত আদর্শ ও প্রশাসনিক মূলনীতি তুলে ধরেন। রাহবার বলেন, ইমাম খোমেইনী চলে যাওয়ার পরও সেই পথ ও আদর্শকে তীক্ষ্ণ সচেতনতায় অব্যাহত রেখেছি এবং ভবিষ্যতেও রাখব। আল্লাহর মেহেরবানীতে ঈমান, অবিচলতার ওপর নির্ভরতা এবং জনগণ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতার আলোকে দুশমন বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপ, মনস্তাত্বিক চাপ ও কর্মগত চাপ প্রয়োগ এর যে নীল নকশা এঁকেছে তা ব্যর্থ করে দেব।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সামরিক অধিনায়কগণ, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলবর্গ এবং বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এই ভাষণে তিনি ইমাম খোমেইনীকে ‘বিপ্লবের প্রতীক’ নামে আখ্যায়িত করেন। তিনি ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনীর মৃত্যুবার্ষিকী এ বছর আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদত বরণ বার্ষিকীর একই সময় হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর নিষ্ঠাবান ও সত্যিকার এই অনুসারী মহান ইমাম আমীরুল মুমিনীনের সাথে যে সাদৃশ্য বহন করেন তা ইরানি জাতি এবং গোটা ইসলামি উম্মাহর জন্য গৌরবের বিষয়। এসব সাদৃশ্যের প্রতি মনোযোগ দিলে মরহুম ইমামের চলার পথের সঠিকতার চিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে এবং ইমামকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে চেনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী হবে।
আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী হযরত আলী (আ.)-এর সঙ্গে ইমাম খোমেইনীর সাদৃশ্যগুলোকে তিনটি প্রধান শিরোনামে বিন্যস্ত করেন এবং প্রথম শিরোনামটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর ব্যক্তিত্বে দু’টি দৃশ্যত পরস্পরবিরোধী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। একদিকে দৃঢ়তা, বলিষ্ঠতা, রুখে দাঁড়ানোর মনোবৃত্তি ও কঠোরতা, যা তিনি যে কোনো বাতিল তৎপরতা এবং জালিম ও অবাধ্যদের মোকাবিলায় গ্রহণ করতেন। আরেক দিক ছিল সূক্ষ্ণতা, নাজুকতা ও অন্তরের কাতরতা, যা তিনি মহান আল্লাহর দরবারে এবং মজলুম, বঞ্চিত ও মুস্তাজআফ মানুষের বেলায় গ্রহণ করতেন।
মাননীয় রাহবার আরো বলেন, অন্যদিকে আল্লাহর এই মহান অলী (ইমাম আলী) এতিম, অনাথ-অসহায় মানুষের বেলায় নিজ থেকে এত বেশি নম্রতা, সংবেদনশীলতা ও আন্তরের কাতরতা প্রদর্শন করতেন যে, মানুষ চিন্তা করলে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায়। রাহবার খামেনেয়ী বলেন, ইমাম খোমেইনীর জীবনেও এই দু’টি বৈশিষ্ট্য বলবৎ ছিল। ইমাম একদিকে তাগুতি ও অধঃপতিত পাহলভী সরকার, আমেরিকা ও আগ্রাসী সাদ্দামের মোকাবিলায়, এমনকি তাঁর পুরনো সঙ্গী ও ছাত্রের বেলায়-যিনি সত্যের পরিপন্থি আচরণের শিকার হয়েছিলেন, (ইমাম) মজবুত পাথর ও অটল পাহাড়ের মতো রুখে দাঁড়ান। কিন্তু একজন শহীদের মায়ের আত্মত্যাগী ও ভক্তিপূর্ণ বার্তা পড়ে এবং অধিকারহারা ও নাঙ্গা পা মানুষের অধিকার রক্ষার বেলায় অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়েন ও একান্ত কাতরতা প্রকাশ করেন। ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর বৈশিষ্ট্যসমূহের দ্বিতীয় অধ্যায়ে হযরত আলীর দৃশ্যত অসংগতিপূর্ণ তিনটি বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দেন। যেমন, একতেদার বা ক্ষমতাচর্চা। মাজলুমিয়াত বা মজলুম অবস্থাকে বরণ করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা।
হযরত আলী (আ.)-এর বিশাল রাষ্ট্রে তাঁর শক্তিমান প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ইস্পাতকঠিন ইচ্ছা, বীরত্ব, সামরিক কৌশল, শক্তিশালী বাচনভক্তি ও বলিষ্ঠ আকর্ষণীয় যুক্তিতর্ক আমীরুল মুমিনীনের ক্ষমতাচর্চার উজ্জ্বল নমুনা। মুত্তাকীদের সর্দার আমীরুল মুমিনীনের প্রতি দুশমন ও হিংসুকদের কাপুরুষোচিত অভিযোগসমূহ এবং দুনিয়ার প্রতি প্রলুব্ধ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আচরণকে হযরত আলীর মজলুম অবস্থার শিকার হওয়ার নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এসব কুল-কিনারাহীন চাপ ও গভীর মাজলুমিয়াত এত কঠিন ও সীমাহীন ছিল যে, সাগরের মতো উদার র্ধৈযের পরাকাষ্ঠা ইমামকে কুয়ার (পাড়ে বসে কুয়ার) সাথে মনের বেদনা ব্যক্ত করতে বাধ্য করত। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেন, এতসব সত্ত্বেও এই দীর্ঘ ও কঠিন লড়াইয়ে চূড়ান্ত বিজয় আমীরুল মুমিনীনই অর্জন করেছিলেন। কেননা, আজ তাঁর নাম, ব্যক্তিত্ব, খ্যাতি, চরিত্র, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি পৃথিবীর দিক দিগন্তে, মানব জাতির ইতিহাসে অত্যন্ত উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান। অথচ যারা তাঁর সাথে শক্রতা করেছিল পৃথিবীতে কেউ তাদেরকে স্মরণ করে না।
আমীরুল মুমিনীনের সত্যিকার অনুসারী তথা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতায় ইমাম খোমেইনী হযরত আমীরুল মুমিনীনের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের সাথে যে সাদৃশ্য রাখতেন তার বিবরণ দিয়ে হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ইমাম খোমেইনীও অসাধারণ ক্ষমতাচর্চার মাধ্যমে একটি তাগুতি, স্বৈরাচারী ও হাজার বছরের বংশানুক্রমিক শাসকের পতন ঘটান। আমেরিকাকে ব্যর্থ ও পরাজিত করেন এবং চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের পরিকল্পনাকারীদের লক্ষ্য অর্থাৎ ইসলামি বিপ্লব ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে মূলোৎপাটিত করার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা আরো বলেন, ইমাম খোমেইনী একই সময়ে তাঁর পূর্বসুরি অর্থাৎ আমীরুল মুমিনীনের মতো মজলুম ছিলেন। দুশমনদের ব্যাপক লাগাতার অবমাননাকর প্রচার-প্রপাগান্ডা এবং কতিপয় লোকের আচরণ, যা তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল না, ইসলামি বিপ্লবের মরহুম মহান নেতার মাজলুমিয়তের একেকটি নমুনা। ইমাম যে কত মনঃকষ্ট ভোগ করেছেন তার চিহ্ন তাঁর বলিষ্ঠ ও অবিচল বক্তব্যসমূহের মাঝ থেকে উপলব্ধি করা যায়।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেন, মরহুম ইমাম খোমেইনী হযরত আমীরুল মুমিনীন এর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ চূড়ান্ত বিজয়েরও অধিকারী ছিলেন। ঐ বিজয়কে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার মজবুতি, স্থায়িত্ব, বিকাশ, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির মধ্যে ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইমাম খোমেইনীর অনেকগুলো আশা তাঁর বরকতপূর্ণ জীবনকালে বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। আর তাঁর বহু আশা-প্রত্যাশা তাঁর ইন্তিকালের পরে বাস্তবায়িত হয়েছে। যেমন নিজের ওপর আস্থা, স্বনির্ভরতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি, এশিয়ার পশ্চিমে ও উত্তর আফ্রিকায় ইসলামি বিপ্লবের প্রভাববলয় বিস্তৃত হওয়া ও রাজনৈতিক অগ্রগতি এর অন্তর্ভুক্ত।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, আমাদের প্রিয় ইমামের অন্যান্য আশা-আকাক্সক্ষা ও লক্ষ্যসমূহও আল্লাহর ইচ্ছায় বাস্তবায়িত হবে। আর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দিনের পর দিন সুউচ্চ অবস্থান ও বলিষ্ঠতার অধিকারী হবে। তিনি বলেন, দুশমন যেসব তৎপরতা চালাচ্ছে তা তাদের শক্তিমত্তার কারণে নয়; বরং দিশেহারা ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়ার কারণে এসব আচরণ করছে। তিনি বলেন, ইরানের প্রিয় জাতির জেনে রাখা উচিত যে, এ জাতির অগ্রগতি, বলিষ্ঠতা ও রুখে দাঁড়ানোর কারণে দুশমনরা ক্ষীপ্ত ও দিশেহারা হয়েছে এবং তড়িঘড়ি কতক আচরণ করছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের পরবর্তী অংশে ইমাম খোমেইনীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর শত্রু ফ্রন্টের সাথে ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনীর শত্রুদের ফ্রন্টের মধ্যকার সাদৃশ্যসমূহের বিবরণ দেন।
তিনি বলেন, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারীদের শিরোমণি হযরত আলী তিনটি ফ্রন্টের মুখোমুখি ছিলেন। একটি ফ্রন্টের নাম ‘কাসেতীন’। অর্থাৎ তাঁর হুকুমতের প্রকৃত শত্রু ও বুনিয়াদি দুশমন গোষ্ঠী। দ্বিতীয় ফ্রন্ট হলো ‘নাকেসীন’। অর্থাৎ নড়বড়ে স্বভাবের সঙ্গী-সাথি। তৃতীয় ফ্রন্টে ছিল ‘মারেকীন’। অর্থাৎ যাদের চিন্তা ও বোধ ছিল বিকৃত এবং মূর্খতাপূর্ণ। যাদের নেতারা ছিল বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু নিজেরা কুরআনের অনুসরণ করছে-এমন ধারণা নিয়ে কুরআনের বাস্তব অবয়ব অর্থাৎ আমীরুল মুমিনীনের মোকাবিলা করেছিল।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেন, ইমাম খোমেইনীর দুশমন ও বিরোধীদের ফ্রন্টেও উপরোল্লিখিত তিনটি শ্রেণির বিন্যাস ছিল। ‘কাসেতীন’ অর্থাৎ আমেরিকা, যায়নবাদী সরকার এবং তাদের অভ্যন্তরীণ লেজুড়রা। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সাথে এদের মৌলিক শত্রুতা রয়েছে। আর ‘মারেকীন’- যারা পরিস্থিতি উপলব্ধি না করা এবং দুশমনদের মেরুকরণের চরিত্র অনুধাবন করতে না পারার কারণে ইমামের তৎপরতার সত্যতা ও বাস্তবতাকে নির্ণয় করতে পারে নি। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী মুনাফিকদেরকে ‘মারেকীন’ শ্রেণির একটি নমুনা বলে উল্লেখ করেন। যারা তাদের নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতা ও মূল কাঠামো সম্পর্কে অজ্ঞতা ও প্রতারিত হওয়ার কারণে ইমাম খোমেইনীর প্রতি ব্যর্থ শত্রুতা পোষণ করেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এই তিনটি ফ্রন্টের মোকাবিলায় ইমাম খোমেইনীর বিজয় লাভের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আজকের দিনেও এই তিনটি গোষ্ঠী ইমাম খোমেইনীর রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার অর্থাৎ ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে সারিবদ্ধ হয়েছে। এই জগাখিচুড়ি ফ্রন্ট অবশ্য দেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। দেশের এগিয়ে যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত, কঠিন বা শ্লথ করে দিচ্ছে। কিন্তু জাতির উন্নতি-অগ্রগতি ঠেকাতে তারা অক্ষম ও নেহায়েত দুর্বল।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের এ পর্যায়ে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ইমাম খোমেইনী যে আচরণ ও আদর্শ স্থাপন করেছেন, তার বর্ণনা দেন এবং তাঁর আচরণ ও আদর্শের সাতটি মূল সূচক চিহ্নিত করেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন ইমাম খোমেইনীর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল দুশমনের সাথে বীরত্বপূর্ণ ও সক্রিয় মোকাবিলা করা। এটি তাঁর চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, মরহুম ইমাম দুশমনের মোকাবিলা করতে গিয়ে কখনো বিচলিত হন নি। সব সময় তিনি তাদের মোকাবিলায় শক্তিশালী ও সক্রিয়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
‘বুদ্ধিমত্তাহীন আবেগতাড়িত উত্তেজনা থেকে বেঁচে থাকা’ ছিল ইমাম খোমেইনীর চরিত্রের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। রাহবার খামেনেয়ী তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ইমাম খোমেইনীর সিদ্ধান্তগুলো ছিল বীরত্বপূর্ণ এবং একই সময়ে বুদ্ধিবৃত্তিক হিসাব-নিকাশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইমাম খোমেইনীর আচরণগত তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইমাম খোমেইনী আন্দোলন ও সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে হোক বা ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পরবর্তী সময়ে হোক সব সময় অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রাখতেন এবং মূল বিষয়কে কেন্দ্র করেই তাঁর সিদ্ধান্ত আবর্তিত হতো। তিনি কখনো পাশর্^ বিষয়কে মূল কর্মধারায় অন্তর্ভুক্ত করতেন না।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী মরহুম ইমাম খোমেইনীর আচরণগত আরো দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো ছিল জনগণের, বিশেষ করে যুবসমাজের কর্মক্ষমতার ওপর আস্থা ও ইরানি জাতির প্রতি ভালো ধারণা পোষণ। একই সাথে দুশমনের প্রতি আস্থাহীনতা ও খারাপ ধারণা পোষণ করা। রাহবার আরো বলেন, ইমাম খোমেইনী দুশমন এবং তার প্রস্তাবসমূহের ওপর মুহূর্তের জন্যও আস্থা স্থাপন করেন নি; বরং শত্রুকে আক্ষরিক অর্থেই শত্রু জ্ঞান করতেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইরানি জাতির ঐক্য ও সংহতির প্রতি গুরুত্বারোপ এবং জনগণের মাঝে যে কোনো ধরনের বিভক্তি ও দ্বিমেরুকরণ সর্বতোভাবে প্রত্যাখ্যান করাকে ইমাম খোমেইনীর আরেকটি আচরণগত বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেন। রাহবার হযরত ইমামের অষ্টম আচরণগত বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইমাম খোমেইনী আল্লাহর ওয়াদা ও সাহায্য এর ব্যাপারে পুরোপুরি ঈমান রাখতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, কাজ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তাহলে তার কোনোরূপ ক্ষতি হবে না।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তাঁর আলোচনার উপসংহার টেনে বলেন, ইমাম চলে যাওয়ার পর আমরা তাঁর অনুসৃত পথকে ঠিক ঠিকভাবে অনুসরণ করেছি। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে এরপর থেকেও সেই পথ চলাই অব্যাহত রাখব। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার বদৌলতে আমরা বিচলিত হব না, দুর্বলতার শিকার হব না।
দুশমনদের অতি লোভ এবং ক্ষমতার দাপটের মোকাবিলায় রুখে দাঁড়াব। বিচলিত হয়ে বা আবেগতাড়িত অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব না। মূল বিষয় ছেড়ে পার্শ্ব বিষয় নিয়ে জড়াব না। আল্লাহর তাওফীক ও সামর্থ্য নিয়ে আমাদের অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয়গুলো নির্ণয় করব। জনগণ বিশেষ করে যুবসমাজের শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রতি আস্থাবান থাকব। তবে দুশমনের প্রতি মোটেও আস্থা রাখব না। আমাদের প্রিয় জনগণকে দ্বিধাবিভক্তি ও দ্বিমেরুকরণ হতে সর্তক রাখব। আল্লাহর সাহায্যের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। এ ব্যাপারে কোনোরূপ সন্দেহ করি না যে, ইরানি জাতি এই ঈমান ও চেতনা নিয়ে এই আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে অবশ্যই বিজয় অর্জন করবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বর্তমান পরিস্থিতিতে দুশমনের নীল নকশার বর্ণনা দেন। এ পর্যায়ে তিনি বলেন, দুশমনের নীল নকশাটি তিনটি বিষয়ে, যথা: অর্থনৈতিক চাপ, মনস্তাত্ত্বিক চাপ ও কর্মগত চাপ-এর ভিত্তিতে এবং দেশের ওপর আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে প্রণীত হয়েছে। তিনি বলেন, এই নীল নকশায় অর্থনৈতিক চাপটি প্রয়োগ করা হবে। অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ এবং ইরানের সাথে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে।
মহামান্য রাহবার স্মরণ করিয়ে দেন যে, তারা তাদের মিথ্যা প্রচার-প্রপাগান্ডার উল্টো কাজ করে থাকে। যে ক্ষেত্রে তারা বলছে যে, এই অবরোধের লক্ষ্য ইরানের সরকার। আসলে তারা ইরানের জনগণকে টার্গেট করেছে। যাতে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দাপটের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু দুশমনরা না ইরানি জাতিকে চিনেছে আর না ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থাকে। কেননা, আল্লাহর ফযল ও করমে এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় ও জনগণের উচ্চ মনোবলের বদৌলতে তারা তাদের নীল নকশার এই অংশটিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবে।
হযরত আলী খামেনেয়ী দুশমনের দ্বিতীয় নীল নকশা অর্থাৎ ‘মনস্তাত্ত্বিক চাপ’ প্রয়োগের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে বলেন, দুশমন তার এই নকশার মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শক্তিমত্তার দিক ও জাতীয় ক্ষমতার উপাদানগুলোকে দুর্বল দিক ও চ্যালেঞ্জিং পয়েন্ট হিসেবে পরিবর্তন করতে পারে, যাতে ইরানি জাতি নিজস্ব শক্তিমত্তার এই বিষয়গুলোর প্রতি সন্দিহান হয়ে পড়ে ও মনোবল হারায়।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা উদাহরণস্বরূপ পারমাণবিক অগ্রগতিকে একটি প্রধানতম শক্তিমত্তার দিক এবং দেশের জ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গৌরবজনক অর্জন বলে অভিহিত করেন। রাহবার বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বিশ পার্সেন্ট সমৃদ্ধ ইউরোনিয়াম উৎপাদনে দেশের তরুণ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সক্ষমতা অর্জন- যে পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষ চিকিৎসা খাতে ব্যবহার উপযোগী বিশ পার্সেন্ট সমৃদ্ধ ইউরোনিয়াম সরবরাহের ব্যাপারে নানারূপ শর্ত আরোপ ও সমস্যার সৃষ্টি করছিল, তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে শক্তিমত্তার একটি সূচক এবং জাতীয় জীবনে এক বিরাট শক্তিশালী অর্জন। যা দেশের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, দুশমন এখন চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে নানা মনস্তাত্ত্বিক কৌশল প্রয়োগ করে জাতীয় শক্তির এই সূচককে একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে রূপান্তরিত করতে পারে এবং জাতিকে এর প্রতি সন্দিহান করে তুলতে পারে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ‘ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা’-কে দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী এবং শক্তিমত্তার আরো একটি ধাপ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ চলাকালে যেহেতু আমাদের প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রে সক্ষমতা ছিল না সেহেতু সীমান্তবর্তী শহরগুলো থেকে নিয়ে তেহরান পর্যন্ত রাত দিন ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণের আওতায় ছিল। কিন্তু আজকে তরুণ বিশেষজ্ঞদের মনোবলের কারণে আমরা এতদঞ্চলের এক নম্বর ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছি। দুশমন জানে যে, আমাদের প্রতি একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে দশটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তার জবাব পাবে। ইসলামি বিপ্লবের নেতা আরো বলেন, দুশমন একটি মনস্তাত্ত্বিক অভিযান নিয়ে আমাদের শক্তিমত্তার এই সূচকটির ওপর কেন্দ্রীভূত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে দেশের ভেতরেও কতিপয় লোক দুশমনের সাথে সুর মিলিয়েছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ‘আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে ন্যায়-ইনসাফ’ এর পক্ষাবলম্বন ও মজলুম জাতিসমূহের প্রতি সমর্থন যোগানোকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আরো একটি শক্তিশালী দিক বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, যায়নবাদী সরকারের মোকাবিলায় ফিলিস্তিন ও প্রতিরোধ শক্তির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন এবং এতদঞ্চলের দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে; কিন্তু দুশমনের চেষ্টা হলো, এটিকে এতদঞ্চলে ইরানের দখলদারিত্ব হিসেবে প্রচার করে একে চ্যালেঞ্জিং পয়েন্টে রূপান্তরিত করা।
এ পর্যায়ে দেশের অভ্যন্তরের কতিপয় অনুচর দুশমনের সাথে সুর মিলানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই অনুচররাই বছর কয়েক আগে তেহরান ও কুদস দিবসের মিছিলে গাজা নয়, লেবানন নয় (গাজার বা লেবাননের জন্য ঝুঁকি নেয়া উচিত নয়) স্লোগান দিয়েছে। এরা হলো মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে দুশমনকে সাহায্যকারী কতিপয় তুচ্ছ জীব। এটা তাদের জন্য লাঞ্ছনা বয়ে আনবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা দুশমনের মনস্তাত্ত্বিক অভিযানের আরেকটি নমুনা উল্লেখ করে বলেন, বিজাতীয়রা এবং দেশের ভেতরের কতিপয় লোক তাদের প্রচার-প্রপাগান্ডায় এমনটি দেখতে চায় যে, ইরান যদি পারমাণবিক চুক্তির ত্রুটিপূর্ণ ধরনটি- যা তারা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, মেনে না নেয় তা হলে যুদ্ধ হবে না। এই কথা মিথ্যা।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইউরোপীয় নেতাদের কোনো কোনো কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মনে হচ্ছে এসব দেশ আশা করছে যে, ইরানি জাতি অবরোধগুলোও সহ্য করবে আর যে পারমাণবিক কার্যক্রম ইরানের ভবিষ্যতের জন্য একান্ত জরুরি, তা থেকেও হাত গুটিয়ে থাকবে। একই সাথে ইরানের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলোও তারা অব্যাহত রাখবে। কিন্তু তাদের জানা উচিত যে, তাদের এ দুঃস্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হবে না। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ইরানের সরকার ও জনগণ অবরোধও চলবে, আবার সীমাবদ্ধতা ও পারমাণবিক বন্দিত্বও চলবে- এ অবস্থা কখনো সহ্য করবে না।
মাননীয় রাহবার ইরানের আণবিক সংস্থার দায়িত্বশীলদের ১৯০০০০ সেন্ট্রিফিউজ অর্জনের জন্য (অবশ্য আপাতত পরমাণু চুক্তির আওতায়) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রেসিডেন্ট যেসব বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন সেসব বিষয় বাস্তবায়নের প্রস্তুতিপর্ব আগামীকালই শুরু করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা দুশমনের মনস্তাত্ত্বিক অভিযানের বিষয়গুলোর উপসংহার টানতে গিয়ে বলেন, তারা চেষ্টা করছে যাতে আমরা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের শিকার হয়ে আমাদের শক্তিমত্তার বিষয় ও জাতীয় কর্তৃত্বের উপাদানগুলো পরিত্যাগ করি। যাতে দুশমন খুব আরামে আমাদের দেশ ও জাতির ওপর এবং আমাদের ভবিষ্যৎ ভাগ্যের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কিন্তু ইরানি জাতি এই তৎপরতার মোকাবিলায় রুখে দাঁড়িয়েছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানের মহান জাতির মোকাবিলার জন্য দুশমনের চলতি নীল নকশার তৃতীয় দিক ‘কর্মগত চাপ’ প্রয়োগ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, দুশমনের নিশ্চিত পরিকল্পনা হলো, জনগণের দাবি ও চাহিদার অপব্যবহার করে দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু তাদের মাথা নিশ্চিতই পাথরে ঠেকবে।
এই প্রতারণামূলক নীল নকশার আরো ব্যাখ্যা দিয়ে রাহবার বলেন, হতে পারে কোনো অঞ্চলে বা কোনো শহরে শ্রমিকরা বা অন্য কোনো জনতা দাবি দাওয়া পেশ করবে। তখন দুশমন এসব ক্ষেত্রে গুটি কতক অনুপ্রবেশকারী ও দুষ্ট প্রকৃতির গুণ্ডাশ্রেণির লোক ঢুকিয়ে দিয়ে চেষ্টা করবে, যাতে জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে নিরাপত্তাবিরোধী ও গোলযোগ সৃষ্টিকারী তৎপরতায় রূপান্তরিত করতে পারে আর রাষ্ট্রব্যবস্থা ও গোটা জাতির জন্য দুর্নাম বয়ে আনতে পারে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী দুশমনের এই নীল নকশার ব্যাপারে পূর্ণ সর্তক থাকার জন্য জনগণের প্রতি জোর তাগিদ দেন। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, দুশমনরা এবারও মস্তবড় ভুল করেছে। আমাদের জনগণ পূর্ণশক্তি ও বিচক্ষণতা নিয়ে এই নীল নকশা ও চক্রান্তকে রুখে দাঁড়াবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মাননীয় রাহবার মাঠে-ময়দানে জনগণের উপস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন এবং রমযানের শেষ দশকের চলতি সপ্তাহের শুক্রবার বিশ্বকুদস দিবস উদ্যাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও ফযল করমে এবং জনগণের উদ্দীপনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ বছর কুদস দিবস আগের বছরগুলোর চাইতে অধিকতর প্রাণবন্ত রূপে উদ্যাপিত হবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা তাঁর ভাষণের শেষ ভাগে আরবি ভাষায় এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন আরব তরুণদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আজকের দিনটি হলো আপনাদের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তব ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার দিন। অবশ্যই আপনারা আপনাদের দেশের অগ্রগতি, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হবেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আমেরিকার সামনে কতিপয় আরব রাষ্ট্রের নতজানু অবস্থা ও অপমানজনক আচরণ এবং যায়নবাদী দুশমনের মোকাবিলায় বলিষ্ঠ নীতি অবস্থান গ্রহণ না করার কথা উল্লেখ করে বলেন, কতিপয় আরব সরকার এখন তাদের জাতির দুশমনে পরিণত হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আত্মমর্যাদাশীল আরব যুবকদের দ্বায়িত্ব হলো এই বাতিল ভারসাম্য তছনছ করে দেয়া।
রাহবার বলেন, ভবিষ্যৎ যুবকদের জন্যই অপেক্ষা করছে। তাদের উচিত বাস্তব পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে আগামীর জন্য প্রস্তুত করা। যদি আগামীকে ঠিকভাবে নির্মাণ করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই মুসলিম ও আরব জাতিসমূহ বিশেষ করে এসব দেশের তরুণরা তার দ্বারা লাভবান হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইসলামি দেশগুলোর যুবকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, কুফরী শক্তির রণাঙ্গনের হম্বিতম্বিকে ভয় পাবেন না, আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্যের ওয়াদার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখবেন। হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী আসন্ন বিশ্বকুদস দিবস উপলক্ষে বলেন, এই মিছিলে আপনাদের উপস্থিতি এবং ফিলিস্তিনী মজলুম, মুজাহিদ ও লড়াকু জনগণের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন সত্যিকার অর্থে উন্নততর আগামী নির্বাচনের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা পরিশেষে ইসলামি দেশগুলোর যুব সমাজের শক্তি-সামর্থ্য ও প্রতিরোধের পথচলা অব্যাহত রাখার জন্য দোয়া করেন।

কুরআন মজীদের চর্চায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বহুমুখী তৎপরতা

ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয় লাভ করেছে ১৯৭৯ সালে। এই বিপ্লবের ফলে ইরানকে ইসলামের পথে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় বহু ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হচ্ছে কুরআন মজীদের হিফ্য ও কেরাআত এর উৎকর্ষতা এবং কুরআনী জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রচার-প্রসার।
কুরআনিক সাইন্সের উৎকর্ষতা ও বিস্তারে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের অর্জনগুলো সত্যিই অকল্পনীয়। বলতে গেলে ইসলামি বিপ্লব ইরানের সমাজে কুরআনকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। কুরআনের আলোকে জীবন ও সমাজ গড়ার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা মহান নেতা ইমাম খোমেইনীর সঠিক দিকনির্দেশনা এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত বর্তমান রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী মাদ্দাযিল্লাহুল আলীর দক্ষ নেতৃত্ব।
ইসলামি ইরানে এখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কারীর সংখ্যা অনেক। তারা বিভিন্ন উপলক্ষে বাংলাদেশও সফর করেছেন এবং কুরআন মজীদের বোদ্ধা শ্রোতাদের মাঝে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা ঈর্ষণীয়। এ ছাড়া ইরানের ভেতরে দেশীয় পর্যায়েও কারীর সংখ্যা অগুনতি। ইরানের সমাজে কুরআন মজীদ যাঁরা হিফ্য করেছেন- এক পারা থেকে নিয়ে পুরো ত্রিশ পারা পর্যন্ত, তাঁদের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। কুরআন চর্চার এই ব্যাপকতার পেছনে কাজ করছে দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মহল্লা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামরিক বাহিনী, অফিস-আদালত, শিল্প ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে গড়ে ওঠা কুরআন চর্চা কেন্দ্র। ইরানের কোনো মহল্লা বা গলিতে ঢুকলেই কোনো না কোনো কুরআন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেখা মেলে। কুরআনের ভাষা আরবি। এই ভাষা ইরানি জনগণের মুখের ভাষা নয়; এরপরও কুরআনের এত ব্যাপক চর্চার মূলে রয়েছে ওহীর ভাষার প্রতি জনগণের ভক্তি ও বিশ্বাসের প্রাবল্য। অবশ্য এটি ইরানের জন্য গর্বের বিষয় যে, কুরআনী সংস্কৃতির বিস্তারকে ইরান তার সাংস্কৃতিক পলিসির কেন্দ্রীয় ভূমিকায় স্থান দিয়েছে।
ইরান কুরআন মজীদের জ্ঞান ও চর্চার ক্ষেত্রে এই অগ্রগতিকে নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে নি; বরং সারা জাহানের দ্বীনি ও ঈমানী ভাইদেরকে তার অংশীদার করেছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতি বছর বহু কুরআন চর্চা দল বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত সফর করেন। তাঁরা বিভিন্ন দেশে কুরআন তেলাওয়াতের নূরানি ও রূহানি মাহফিলের আয়োজন করেন।
ইরান দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে কুরআন চর্চার ক্ষেত্রে যেসব খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে তার একটি পরিসংখ্যান পেশ করা হলে বিষয়টি সহজে বুঝা সম্ভব হবে।
১. এ ক্ষেত্রে ইরানের ৭০ হাজার মসজিদের প্রধান কার্যক্রম কুরআন চর্চা ও মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের জ্ঞান ও শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
২. তিনটি বড় প্রতিষ্ঠান এসব কার্যক্রমের পেছনে শক্তির যোগান দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো কুরআনী সংস্কৃতি সম্প্রসারণ পরিষদ, সর্বোচ্চ কুরআন চর্চা পরিষদ এবং ইসলামি সংস্কৃতি ও নির্দেশনা মন্ত্রণালয়ের অধীন কুরআন ও আহলে বাইত ফাউন্ডেশন। এসব প্রতিষ্ঠান কুরআন চর্চার তৎপরতাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন ও সহায়তা দান, প্রতিভা খুঁজে বের করা ও সমন্বয় সাধনের কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে।
৩. ৫০ হাজার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, দারুল কুরআন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুরআন মজীদের কেরাআত, হিফ্য, তরজমা ও তাফসীর প্রশিক্ষণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
৪. ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতি বছর একটি করে বড় আকারের আন্তর্জাতিক কেরাআত ও হিফ্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে অনেক হাফেয ও কারী এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের বাছাই পর্বের কাজটি আঞ্জাম দিয়ে থাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতিভাবান ছেলেরা বহুবার এই প্রতিযোগিতা হতে বিভিন্ন পর্যায়ে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছে। এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার পঁয়ত্রিশতম পর্বটি সম্পন্ন হয়েছে চলতি বছর।
৫. ইরানের চারটি ছাপাখানার প্রতিটি এক কোটি কপি ছাপার ক্ষমতা নিয়ে কুরআন মুদ্রণের কাজে নিয়োজিত আছে। কুরআন মজীদ ছাপার ব্যাপারে যে গুরু-দায়িত্ব ও স্পর্শকাতরতা রয়েছে তার আলোকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে যে কোনো সংস্থা বা প্রেসকে কুরআন মজীদ মুদ্রণের অনুমতি দেয়া হয় না। ইরানে মুদ্রিত এসব কুরআন ইরানের ভেতরে ও বাইরের দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়।
৬. টিভি ও বেতারের চারটি প্রচার-মাধ্যম দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা বিশ্বের বিখ্যাত কারীদের তেলাওয়াত প্রচারের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
৭. কয়েক ডজন সংবাদ মাধ্যম, ওয়েব সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কুরআনের জ্ঞান ও শিক্ষা সম্প্রসারণ ও বিস্তারের গুরু-দায়িত্ব পালন করে থাকে।
৮. ৫০টির অধিক ম্যাগাজিন ও ১০০ এর অধিক গবেষণা সাময়িকী কুরআনী জ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চার কাজ করে যাচ্ছে।
৯. ইরানের মাদ্রাসাগুলো ছাড়াও বিশটি উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুরআন প্রশিক্ষক ও উস্তাদদের প্রশিক্ষণ দানের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
১০. প্রতি বছর কুরআন হিফ্য কোরাস কণ্ঠে কুরআনের তেলাওয়াতকারী অগণিত গ্রুপ বিশ্বের আনাচে-কানাচে প্রেরিত হয়। তারা দুনিয়াবাসীর সামনে আল্লাহর মহিমান্বিত বাণী তেলাওয়াতের গুরু-দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
১১. বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোর সমাপনী বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা প্রতি বছর কুরআনিক সাইন্সের ওপর শত শত বই ও গবেষণাপত্র রচনা করেন এবং তা মুদ্রিত হয়।
১২. বিশ্বের সর্ববৃহৎ কুরআনিক আরকাইভটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রেডিও ও টিভি কেন্দ্রে অবস্থিত।

ইরানি প্রবাদ

سگ از مردم مردم آزار به
উচ্চারণ :সাগ্ আয মারদুমে মারদুম আ’যা’র বে
অর্থ : যে মানুষ মানুষকে কষ্ট দেয় তার চেয়ে কুকুর ভালো।
মর্মার্থ : এই প্রবাদটির মর্মার্থ কবিতার একটি ছত্রের মতো। সেই লোকের চেয়ে কুকুর অধিক মর্যাদাবান, যে লোক মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে বেড়ায়।
سگ بخورد پیشواز گرگ می رود
উচ্চারণ : সাগ্ বখোরদ পীশওয়া’যে গোর্গ মী রাওয়াদ
অর্থ : কুকুরে খেলে নেকড়ের আগে আগে যাবে।
মর্মার্থ : এ ধরনের খাবার হজম করা যার তার কাজ নয়। ভালো করে পাকানো হয় নি এমন খারাপ তরকারি বোঝাতে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
سگ پاچه صاحب خودش را نمی گیرد
উচ্চারণ : সাগ্ পাচেয়ে সা’হেবে খোদাশ রা’ নেমী গীরাদ
অর্থ : কুকুর তার নিজের মনিবের পায়ে কামড় দেয় না।
মর্মার্থ : এই প্রবাদের অনুরূপ আরেকটি প্রবাদ হচ্ছে, ছুরি তার বাঁটকে কাটে না। কৃতজ্ঞ ও বিশ্বাসভাজন বোঝাতে এই প্রবাদের ব্যবহার হয়। নিমকহারাম নয়, নিজের মনিবের প্রতি কৃতজ্ঞ বোঝানোর ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ব্যাপক।
سگ در خانۀ صاحبش شیر است
উচ্চারণ : সাগ্ দার খা’নেয়ে সা’হেবাশ শীর আস্ত
অর্থ : কুকুর তার মনিবের বাড়িতে সিংহ
মর্মার্থ : প্রত্যেকে মনের শান্তি ও উৎসাহ-উদ্দীপনা তার দেশেই লাভ করে। এ রকম আরেকটি প্রবাদ হচ্ছে ‘নিজের শহরে প্রত্যেকে রাজা।’
سگ دو زدن
উচ্চারণ : সাগ্ দো যাদান
অর্থ : কুকুরের দৌড় দেয়া।
মর্মার্থ : সামান্য রুটিরুজির জন্য অহর্নিশ দৌড়ানো বোঝাতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
سگ زرد برادر شغال است
উচ্চারণ : সাগে যার্দ বারা’দারে শোগা’ল আস্ত
অর্থ : হলুদ কুকুর শিয়ালের ভাই। বাংলায় আমরা বলি, লাল কুত্তা শিয়ালের ভাই।
মর্মার্থ : দুষ্টামিতে এক সমান বুঝাতে এর ব্যবহার ব্যাপক। কেউ কারো চেয়ে কম নয়- এ কথা বুঝানোর জন্য এই প্রবাদ প্রচলিত।
سگش به از خودش است
উচ্চারণ : সাগ্ বেহ আয খোদেশ্ আস্ত
অর্থ : তার কুকুর তার চেয়ে ভালো।
মর্মার্থ : এর দ্বারা বুঝানো হয় যে, তার কাজের মধ্যে সমস্যা আছে। বলা হয়, এমনিতে লোকটি ভালো। কিন্তু তার মধ্যে কিছু সমস্যা আছে।
سگ صاحبش را نمی شناخت
উচ্চারণ : সাগ্ সা’হেবাশ রা’ নেমী শেনা’খ্ত
অর্থ : কুকুর তার মালিককে চিনছিল না।
মর্মার্থ : প্রচ- ভীড় ও গোলযোগ বুঝাতে এই প্রবাদ প্রচলিত। যেমন বলা হয়, সুঁই রাখার জায়গা ছিল না।
سگ هارم نگرفته است
উচ্চারণ : সাগ্ হা’রেম নাগেরেফতে আস্ত
মর্মার্থ : এই প্রবাদ দ্বারা এ কথা বুঝানো হয় যে, অকারণে আমি ক্রদ্ধ হই নি। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে, যার জন্যে আমি বেসামাল হয়ে গেছি।
سگی به بامی جسته گردش به او نشسته
উচ্চারণ : সাগী বে বা’মী জাস্তে গেরদাশ্ বে উ নেশাস্তে
অর্থ : একটি কুকুর ছাদে লাফ দিয়েছে আর তার ধুলোবালি তার উপর বসে আছে।
মর্মার্থ : ঐসব লোককে বুঝাতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়, যারা কোনো নামী-দামি পরিবারের সাথে পরিচয়ের সূত্রে গর্ব করে বেড়ায়। সবার চোখে ধুলো দিতে চায়।
سلام روستائی بی طمع نیست
উচ্চারণ : সালা’মে রুস্তা’য়ী বী তামা‘ নীস্ত
অর্থ : গ্রাম্য লোকের সালাম কোনো লোভ ছাড়া নয়।
মর্মার্থ : কেউ যখন নিজেকে খুব ছোট ও অনুগত হিসেবে উপস্থাপন করে তখন বুঝতে হবে যে, এর পেছনে কোনো স্বার্থ বা মতলব আছে।
سلانه سلانه راه رفتن
উচ্চারণ : সেলানে সেলানে রাহ রাফতান
অর্থ : ঠমকে ঠমকে পথ চলা।
মর্মার্থ : ঠমকে ভারিক্কি চালে পথচলা বোঝাতে এর ব্যবহার। হেলে দুলে পথ চলা, ঠমক দেখানো।
سماق مکیدن
উচ্চারণ : সোমা’ক মাকীদান
অর্থ : সোমাক চূষতে থাকা। সোমাক টকজাতীয় ফলবিশেষ।
মর্মার্থ : এই প্রবাদের মর্মার্থ হলো অপেক্ষায় বেসে থাকা। অলীক কল্পনা মাথায় নিয়ে চলা। কোনো কিছু নিয়ে মনখোশ করে বসে থাকা।
অনুবাদ : আবু আব্দুল্লাহ

কাঙ্ক্ষিত সেই নাবিক এলেই

আমিন আল আসাদ

[কবি ফররুখ আহমদ মানবতার মুক্তির জন্য একজন সঠিক নেতা তালাশ করে গেছেন আজীবন। তিনি তাঁর বিভিন্ন কবিতায় কখনো সিন্দাবাদ, পাঞ্জেরী, নাবিক, মাঝি, হাতেম তাঈ ইত্যাদি রূপকার্থে যেসব মুক্তিদাতা নেতা অন্বেষণ করে গেছেন ইসলাম ও মানবতার মুক্তির জন্য ও সত্যিকার ইনসাফ ও ন্যয়ের সুবাতাস বইয়ে দেয়ার জন্য, তিনি ইমাম মাহদী (আ.) ছাড়া আর কেউ নন। কারণ, গোটা দুনিয়া এখন একজন ত্রাণকর্তার জন্য অপেক্ষায় আছে। আর কে না জানে একমাত্র ইমাম মাহদী (আ.) ছাড়া বিরাজমান পৃথিবীতে সম্পূর্ণ শান্তি-শৃঙ্খলা আর কেউ ফিরিয়ে আনতে পারবে না। একমাত্র তাঁর সুশাসনই পৃথিবী দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলা সাহিত্যে কবি ফররুখ আহমদকে বলা হয় ‘ইসলামি রেনেসাঁর কবি’। তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের জন্য নিম্নের কবিতাটি পেশ করা হলো। ]

দুয়ারে সাপের গর্জন থামে নি তো
আঁধার সাগরে ডুবছে আলোর রেখা
ম্লান পাণ্ডুর হয়ে গেছে সব সম্ভাবনার রঙ
মুখ থুবড়ে পরে আজো পচা বিবেকের লাশ
মতভেদের সীমান্তে মরে মাঝি-মাল্লার দল
রাত্রি গভীরে শত্রুরা বোনে যত ভেজালের বীজ
চোরা পাহাড়ে চৌচির হয় আস্থার পাটাতন
স্বজাতির সব নাবিক আজ ভুল পথে ধরে হাল
দিব্যি আয়েশে শ্রান্তির ঘুমে ছাড়ে সুখ-নিঃশ্বাস
জেহাদের মাঝে খোঁজে না তো ওরা পরম জিন্দেগানী
নিশ্ছিদ্র সীসার প্রাচীর আজ ক্ষতবিক্ষত
সোনালি যুগের নাবিকের মতো হয় না আত্মীয়তা
কমে না তো ঋণ উচ্ছৃঙ্খল রাত্রির, বাড়ে দেনা
আদর্শ স্রােতে ধৌত করেও রক্তধারার পাপ-
ঘোচে না এবং সরে না আঁধার মনের পঙ্কিলতা
চায়ের টেবিলে বেড়ে গেছে আজ স্বার্থের সংলাপ
সার্বিয় রোদ ইহুদি দাপট গ্রাস করে মরুভূমি
তবুও আমরা স্বপ্ন দেখছি, দেখছি হেরার রাজতোরণ
তবুও আমরা বসে আছি সেই নাবিকের পথ চেয়ে
কাঙ্ক্ষিত সেই নাবিক এলেই দূর হবে সব ক্লেদ
উঠবে জেগে হাসনাহেনা গোলাপের সংবেদ।।

সম্পাদকীয়

ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ওফাত বার্ষিকী
৪ঠা জুন ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ২৯তম ওফাত বার্ষিকী। ১৯৮৯ সালের এ দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাই এ দিনটি সাধারণভাবে সারা বিশ্বের ইসলামি পুনর্জাগরণকামী ও নিপীড়িত-বঞ্চিত জনগণের জন্য এবং বিশেষভাবে ইরানি জাতির জন্য একটি গভীর শোকাবহ দিন।
হযরত ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইরানি জনগণের দ্বারা ইসলামি বিপ্লব বিজয়ী হয়- যা ইরানি জাতিকে রাজতান্ত্রিক জাহেলিয়াতের নাগপাশ থেকে ও বিজাতীয় বলদর্পী শক্তির তাঁবেদারি থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ইসলামি জীবন যাপনের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর থেকেই ইসলামি ইরান আধিপত্যবাদী বলদর্পী শক্তির রক্তচক্ষু ও কঠিন চাপকে উপেক্ষা করে বলয়মুক্ত প্রকৃত স্বাধীন পথে চলার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে- যা বিশ্বের মুসলিম ও মুস্তায্‘আফ্ জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্তে পরিণত হয় এবং তাদের জন্য বিরাট আশাবাদ সৃষ্টি করে। শুধু তা-ই নয়, খাঁটি মুহাম্মাদী ইসলামের পতাকাবাহী দূরদর্শী মুজতাহিদ নেতা এবং ঐশী আধ্যাত্মিকতার আলোকে আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) এ বিষয়ে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেন তা ইতিমধ্যেই বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে বিশ্বের পর্যবেক্ষক মহলকে বিস্মিত করেছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে, আগামী দিনের বিশ্ব হবে ইসলামের বিশ্ব এবং এর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানান, আর তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি মুসলমানদেরকে ঐক্যের প্রতি আহ্বান জানান এবং ইসলামের দুশমন শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদেরকে সতর্ক করে দেন। মুসলিম উম্মাহ্ এ আহ্বানে আশাব্যঞ্জকভাবে সাড়া দেয়, ফলে ইসলামের দুশমনদের অনেক ষড়যন্ত্রই নস্যাৎ হয়ে যায়। এছাড়া হযরত ইমাম কর্তৃক ঘোষিত ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ (১২ থেকে ১৭ রবিউল আউয়াল) ও মাহে রমযানের শেষ শুক্রবার কুদ্স্ দিবস উম্মাহ্র ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিরাট অবদান রেখেছে। তিনি শিয়া-সুন্নি বিভক্তি সৃষ্টি যে ইসলামের দুশমনদের ষড়যন্ত্র তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেন। ফলে ইসলামের দুশমনদের এ ষড়যন্ত্র তাদেরকে তাদের আশানুরূপ ফল দিতে সক্ষম হয় নি।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ফিলিস্তিন সমস্যাকে মুসলিম উম্মাহ্র এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং এর একমাত্র সমাধান নির্দেশ করেন অবৈধ যায়নবাদী ইসরাঈলকে উৎখাত করে সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখণ্ড জুড়ে অখ- ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা- যেখানে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইয়াহূদী নির্বিশেষে ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভূত সকল জনগণ সমান অধিকার লাভ করবে। প্রথমে অনেকেই এটাকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও ইসরাঈলকে এক অপরাজেয় শক্তি মনে করলেও হযরত ইমামের প্রেরণায় গড়ে ওঠা হিযবুল্লাহ্ ও হামাস প্রমাণ করেছে যে হযরত ইমামের এ স্বপ্ন বাস্তবসস্মত; ইতিমধ্যেই এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে মেরুকরণ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী ও যায়নবাদী চক্র অবৈধ ইসরাঈলকে রক্ষা ও ফিলিস্তিন মুক্তির পথকে রুদ্ধ করার লক্ষ্যে আইএস নামে যে ফিত্না তৈরি করেছিল তা-ও ইতিমধ্যেই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণশক্তির বদৌলতে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেন কমিউনিজমের বিলুপ্তি সহ তার অনেকগুলোই ইতিমধ্যেই বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করেছে। তিনি মুসলিম জাহানের একনায়কতান্ত্রিক ও রাজতান্ত্রিক সরকারগুলোর পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন; এর মধ্যে বেশ কয়েকটির পতন ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
আমরা হযরত ইমাম খোমেইনীর (রহ্.) ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে ইরানি জনগণ ও নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণ সহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ ও বিশ্বের নিপীড়িত-বঞ্চিত জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাঁর বিদেহী আত্মার সমুন্নত মর্যাদার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে দো‘আ করছি।
ঈদুল ফিত্রের অভিনন্দন
পবিত্র ঈদুল ফিত্র্ উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশের জনগণ সহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে এবং বিশেষভাবে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাদেরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে আবেদন, ঈদুল ফিত্র্ উপলক্ষে মুসলিম উম্মাহ্ ও বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের ওপর থেকে সকল অপশক্তির অপচ্ছায়া বিদূরিত করে দিন এবং ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক সকলের মন-প্রাণ-গৃহ-পরিবেশ।

সৃষ্টিশীল কবি নজরুল

আফতাব চৌধুরী

কবি নজরুল তাঁর সতেজ কণ্ঠস্বর ও রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে সংগীতের জগতে প্রবেশ করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রচিত হতে থাকে তাঁর নিজস্ব সংগীত জগৎ। মূলত গানের মাধ্যমে তাঁর কলকাতা জীবনের শুভারম্ভ হয়েছিল। সেই গানের ক্ষেত্রেই কবি নজরুল বিপুল প্রতিষ্ঠা ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তিনি মর্মস্পর্শী আবেগে স্বরচিত কবিতা পাঠ করতেন যা সহজেই মানুষকে মাতিয়ে তুলত। কবি নজরুলের সৃষ্ট বিভিন্ন আঙ্গিকের গান মানুষের মাঝে বিশেষ প্রতিষ্ঠা ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যা কারও অজানা নয়।
এ প্রসঙ্গে কবি নজরুলের সংগীতের বিশাল ভাণ্ডার থেকে স্বল্প পরিসরে তাঁর কিছু জনপ্রিয় গানের নমুনা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
দেশাত্মবোধক গান
তথ্য সংগ্রহে যতটুকু জানা যায়, উদ্দীপনায়ময় দেশাত্মবোধক গান দিয়ে কবি নজরুলের সংগীত যাত্রা শুরু হয়েছিল। আর শুরুতেই এই গান সৃষ্টির ক্ষেত্রে কবি নজরুল জনতার কাছ থেকে যে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনন্দন ও প্রশংসা লাভ করেছিলেন সংগীতের ইতিহাসে তা এক বিরল ঘটনা। তাঁর এই ধরনের জনপ্রিয় গানে গর্জে উঠেছিল পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের দুর্বার উৎসাহ। কবির দেশাত্মবোধক গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘এই শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল’, ‘কারার ওই লৌহ কপাট ভেঙে ফেল কররে লোপাট’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার’ ইত্যাদি।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু নজরুলের এই উদ্দীপনামূলক গান সম্পর্কে লিখেছেন- ‘তাঁর লেখার প্রভাব অসাধারণ। তাঁর গান পড়ে আমার মতো বেরসিক লোকের জেলে বসে গান গাইবার ইচ্ছে হতো। নজরুলকে যে বিদ্রোহী কবি বলা হয় এটা সত্য কথা। তাঁর অন্তরটা যে বিদ্রোহী, তা স্পষ্ট বোঝা যায়। আমরা যখন যুদ্ধে যাব তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে, আমরা যখন কারাগারে যাব, তখনও তাঁর গান গাইবো।’
আমি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সর্বদাই ঘুরে বেড়াই, বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় জাতীয় সংগীত শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু নজরুলের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’-র মতো প্রাণমাতানো গান কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না।
গজল
দেশাত্মবোধক গান রচনার পাশাপাশি সময়েই নজরুল সবাইকে চমকে দেন গজল গান রচনা করে। তাঁর জনপ্রিয় গজল গানের মধ্যে আমরা দেখতে পাই- ‘কে বিদেশী মন উদাসী’, ‘মুসাফির মোছরে আখি জল’, ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’ ইত্যাদি। গজল মূলত পারস্যের গান। কবি তাঁর গজল রচনার ক্ষেত্রে ভাষার প্রয়োগ, সুর সংযোগের সৌন্দর্য, গায়ন শৈলী বিশ্লেষণ করে শায়েরির ব্যবহারের জন্য প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। ‘কে বিদেশী মন উদাসী’ গজল গানটি শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত জনসাধারণের মুখে মুখে জনপ্রিয় হয়েছিল। নজরুল প্রচুর জনপ্রিয় গজল গান রচনা করে গেছেন। নজরুলের গজল গানের জনপ্রিয়তা কোন সময়ই হ্রাস পাবে বলে মনে হয় না।
ইসলামি গান
বাংলায় ইসলামি গান রচনার ক্ষেত্রেও কবি প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। কবি নজরুল হাম্দ ও নাত শ্রেণির গান ছাড়াও ঈদ, মুহররম, আজান, নামাজ প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক গান রচনা করেছেন। বর্তমানেও এ ধরনের গানের জনপ্রিয়তা কমে নি। এই ধরনের গানের রচনার মতো সুরের বৈচিত্র্য যথেষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর গানে। কবি নজরুলের জনপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’, ‘এ কোন মধুর সারাব দিলে’ প্রভৃতির মতো অনেক জনপ্রিয় গান।
কাব্যগীতি
জনপ্রিয়তার দিক থেকে গজলের পরই আসে নজরুলের কাব্যগীতি। এর মধ্যে আছে আধুনিক ও প্রেম সম্পর্কিত গান। তাঁর রচিত এই ধরনের প্রচুর গান বিপুলভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আছে- ‘মোর প্রিয়া হবে এস রাণী’, ‘নয়ন ভরা জল গো তোমার’, ‘আমায় নহে গো ভালবাস’, ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়’- এই ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গান। কাজী নজরুল ইসলাম এই ধরনের গান সৃষ্টির ক্ষেত্রে কথা ও সুরের অপূর্ব সমন্বয় গড়ে তুলেছিলেন যা আজও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। সংগীতশাস্ত্রের বিভিন্ন রাগের স্পর্শে এই ধরনের গান জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
শ্যামা সংগীত
নজরুলের শ্যামা সংগীত তাঁর রচনা ও সুর সংযোজনার মাধ্যমে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। জানা যায়, আধুনিক কালের বাংলা গানের শ্রেষ্ঠ রচয়িতাদের কেউই এই প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ধারার গান রচনায় এগিয়ে আসছিলেন না। কিন্তু কবি নজরুল ছিলেন ব্যতিক্রম। তাঁর রচিত শ্যামাসংগীতগুলো বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। যেমন- ‘বলরে জবা বল’, ‘আমরা কালো মেয়ের পায়ের তলায়’, ‘আর লুকাবি কোথা মা কালী’ ইত্যাদি।
রাগ প্রধান
কবি নজরুলের বহু রাগপ্রধান গান আজও জনপ্রিয়। রাগ সংগীতের মূলস্রোতের সঙ্গে মিশিয়ে কবি নজরুল অনেক জনপ্রিয় রাগপ্রধান গান রচনা করেন গেছেন। যার মধ্যে ছিল দক্ষিণ ভারতীয় রাগের ওপরও অনেক জনপ্রিয় গান। কবি নজরুলকে তাঁর জীবনে জমিরুদ্দিন খাঁ সাহেবের মতো অনেক ওস্তাদের কাছে তালিম নিতে হয়েছিল যা তাঁর রাগপ্রধান গান সৃষ্টি ও জনপ্রিয় করে তুলতে সাহায্য করেছিল। তাঁর সৃষ্ট রাগপ্রধান গানগুলোর মধ্যে আছে- ‘কাবেরি নদী জলে কে গো বালিকা’, ‘স্নিগ্ধ শ্যামবেণীবর্ণা এস মালবিকা’, ‘তরুণ কান্তি কে গো যোগী ভিখারী’, ‘কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া কুহরিল’ ইত্যাদি। ‘কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া কুহরিল’ গানটি খাম্বাজ রাগে ‘ন মানুঙ্গী ন মানুঙ্গী ন মানুঙ্গী’ নামক হিন্দি খেয়ালের অনুসরণে রচিত। আজ পর্যন্ত এমনি অনেক গান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যা কবির সৃষ্টির জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।

মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণে ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী (রহ.)-এর চিন্তাধারার প্রভাব

মোস্তফা কামাল মজুমদার : ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মহান ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনীর ২৯তম ওফাত বার্ষিকীতে একটা কথাই বারবার মনে ভেসে আসে। পশ্চিমা বিশ্বের এতো বিরোধিতা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ সত্বেও ইরান মাথা উঁচু করে উন্নয়নের পথে দৃপ্ত পদে এগিয়ে যাচ্ছে। এবছর ইরান-বিপ্লবের ৩৯তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব এখন ইরানকে হিসেব করে চলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সাথে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে গেলেও জাতিসংঘের বাকি চার ভেটো প্রদানের ক্ষমতাধর নিরাপত্তা পরিষদ সদস্য এবং জার্মানি তা রক্ষা করা এবং মেনে চলার ব্যাপারে আগের চেয়ে আরো বেশি আগ্রহী। সাধারণের মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, ইতিহাসে বর্ণিত প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের ভীত হিসেবে খ্যাত ইরানের এই স্থিতাবস্থা এবং শক্তির উৎস কি?
আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনীর চিন্তাধারার প্রভাবের ব্যাপারে আলোচনা করতে হলে তাঁর সময়, পরিপার্শ্বিকতা ও প্রেক্ষিতকে বিবেচনায় আনতে হবে। দুনিয়ার এই প্রাচীন সভ্যতার দেশ ইরানে রয়েছে হাজার বছরের ইসলামি ঐতিহ্য।
শেখ সাদী ও জালালুদ্দিন রুমীর মতো কবি দার্শনিক মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব ইউরোপ এবং দক্ষিণ এশিয়াকে আলোকিত করে রেখেছেন শতশত বছর ধরে। ইরানেই তৈরি হয়েছে হাফেজ সিরাজী, ফেরদৌসী, ওমর খৈয়ামের মতো মহাকবি-চিন্তাবিদ। সারা দুনিয়া তাঁদের আধুনিক এবং মানবীয় চিন্তাধারার মূল্যায়ন করছে নতুন করে। ইরানের সাংস্কৃতিক প্রভাব এই বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশে এতই প্রবল যে, ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা লেখা হয়েছিল ফারসিতে। ভারতে কোর্টের ভাষা হিসেবে ফারসিকে ইংরেজরা তাদের সুবিধার জন্য পরবর্তীকালে বাদ দেয়। কিন্তু এই উপমহাদেশের আলেম সমাজ এখনো বিখ্যাত ইরানি কবিদের উদ্ধৃতি তাদের বয়ানে ব্যবহার করেন। ইমাম খোমেইনী সেই ঐতিহ্যের ধারক।
ইমাম খোমেইনী তাঁর আন্দোলনের প্রথম দিকে রেযা শাহ পাহলভির শাসনামলে ইরানকে পশ্চিমা শক্তির নির্দেশে পরিচালনার বিরোধিতা করেন। রাজনীতিতে আদর্শবাদিতা প্রবর্তনের জন্য সামাজিক বিভিন্ন পর্যায়ে যখন ইরানের ধর্মীয় নেতারা কাজ করছিলেন ঠিক তখনি ইরানের শাহ তাঁদের আন্দোলনকে শাণিত করার মতো জনমত তৈরির সুযোগ এনে দেন। ১৯৬২ সালে শাহের সরকার কর্তৃক পাশ করা জেলা পরিষদ আইনে নির্বাচনে প্রার্থিতা এবং নির্বাচিতদের শপথের বিষয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তার ফলে প্রার্থীদের মুসলমান হতে হবে এবং কোরানের শপথ নিতে হবে, এই বিধানগুলো বাদ পড়ে। উল্লিখিত বিধানের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আলেমদের আন্দোলনে তিন মাসের মাথায় রেযা পাহলভি এই আইন বাতিল করতে বাধ্য হন।
ইমাম খোমেইনী ধর্মীয় পণ্ডিতদের নিয়ে কোম শহরে নিয়মিত পর্যালোচনা বৈঠন শুরু করেন। খোমেইনীর নেতৃত্বের নতুন বৈশিষ্ট্য ছিল, প্রচলিত সরকারের বিরূদ্ধে সমালোচনাকে তিনি রেযা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে সমালোচনায় পরিণত করেন। তার সাত বছর পর ১৯৬৯ সাল থেকে ইমাম খোমেইনী ইরাকের নাজাফে নির্বাসিত জীবন অতিবাহিত করার সময় ইসলামি সরকার গঠনের ধারণা ‘বেলায়াত-ই-ফাকিহ’ সম্পর্কিত বক্তৃতামালা উপস্থাপন করেন। তার মূল কথা ছিল ইসলামি আইনজ্ঞদের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার, ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা এবং আদর্শকে ধর্মকর্মের মতো গুরুত্ব দেয়া। তিনি চিন্তাবিদ ও বিষেশজ্ঞদের এই ধারণার ওপর বিষদ বিচার-বিশ্লেষণের আহ্বান জানান এবং তা ইরান এবং ইসলামি দেশসমূহে প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সমালোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।
তাঁর এই নতুন চিন্তাধারা ইরানের অন্যান্য ধর্মীয় নেতার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্য সম্প্রসারিত হয়। তা নিয়ে ছাত্র-জনতার মধ্য গড়ে ওঠে এক ধর্মীয় পুনর্জাগরণ, যা ১৯৭৯ সালে সংঘটিত বিপ্লবকে অনিবার্য করে তোলে। ১৯৬২ সালে রেযা পাহলভির নিরাপত্তা বাহিনী ইমাম খোমেইনীকে তাঁর শাহবিরোধী বক্তব্যের অজুহাতে গ্রেফতার করে এবং দুই বছর পর তাঁকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। প্রথমে তুরস্ক, পরে ইরাক এবং সর্বশেষ ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন যাপনের সময় তিনি ইরানে শাহকে উৎখাত করার জন্য তাঁর অনুসারীদের আহ্বান জানান। নির্বাসনের পর ইমাম খোমেইনীর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় এবং তাঁকে জনগণ জাতীয় বীর হিসেবে গণ্য করতে শুরু করে। শাহবিরোধী আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হয় এবং ১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী শাপুর বখতিয়ারকে ক্ষমতায় রেখে শাহ তাঁর পরিবারবর্গ নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান।
ইমান খোমেইনী বীরের বেশে ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন। ফেরার পর ১৯০৬ সালে প্রণীত সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষজ্ঞদের আ্যসেম্বলি ডাকেন। তাঁর দেয়া দিক-নির্দেশনার ভিত্তিতে সংবিধানের বেশ কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন এনে তা ১৯৭৯-এর জুলাই মাসে নির্বাচনের মাধ্যমে চালু করা হয়। সে বছরের ডিসেম্বরে এক গণভোটে বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ইমাম খোমেইনী ইরানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন, যা ছিল দুনিয়ার প্রথম ইসলামি প্রজাতন্ত্র। তাঁকে আজীবন ইরানের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু টানা আড়াই হাজার বছরের স্বাধীন সভ্যতা এবং ঐতিহ্যের ধারক ইরানের এই নেতা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার কথা ভোলেন নি। নিজে ক্ষমতা কুক্ষিগত না করে বাস্তবভিত্তিক চিন্তার ফসল হিসেবে ইমাম খোমেইনী নির্বাচিত পার্লামেন্ট এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। তাঁর উত্তরসূরি এবং রাহবার হিসেবে খ্যাত আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী এখন তাঁর আসন অলংকৃত করে পথপ্রদর্শক হিসেবে সফল নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এখানে বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ মনে করেন তদানীন্তন পাকিস্তানে ১৯৫৬ সালে প্রচলিত সংবিধান ছিল বিশ্বের প্রথম আধুনিক ইসলামিক সংবিধান। তাতে উল্লেখ ছিল, কোন আইন বা বিধান ইসলামি শরিয়তবিরোধী হলে তা বাতিলযোগ্য হবে। অবশ্য দুই বছর পরেই ঐ সংবিধান পাকিস্তানের সামরিক জান্তা বাতিল করে দেয়। মুসলমানদের জন্য সৃষ্ট আলাদা এই রাষ্ট্রের সংবিধানে ইসলামি শরিয়তবিরোধী আইন না করার বিধান ছিল আবেগপ্রসূত, কোনো ধারাবাহিক আন্দোলন বা চিন্তাধারার প্রতিফলন নয়। ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্র সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ধারাবাহিক ইসলামি সংস্কৃতি এবং সচেতনভাবে গড়ে তোলা আন্দোলন। ইমাম খোমেইনী ছিলেন তার সুদক্ষ নির্মাতা।
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পরের বছরই শাত-ইল আরব নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে ইরাকের সাথে যুদ্ধ বেধে যায়। আট বছরের এই যুদ্ধে ইরাকের তখনকার প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন প্রবল পরাক্রমশালী পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় বলিয়ান হয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেও ইরানের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থ হন। এই যুদ্ধে বিদেশী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের আত্মক্ষার শক্তি এবং ইরানি জনগণের ঐক্য প্রতিফলিত হয়। সেই ঐক্য বজায় রাখার কৃতিত্ব ছিল আয়াতুল্লাহ খোমেইনীর। কারণ, তাঁর নেতৃত্বে ইরানের জনগণ ছিল ঐক্যবদ্ধ।
আদর্শ-বিচ্যুত বিশ্বে এখন চলছে চিন্তার নৈরাজ্য। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নতুন সমীকরণ। নগদ প্রাপ্তির এবং ভোগের যে আধুনিকতা-পরবর্তী ধ্যান-ধারণা প্রচলিত আছে তাতে কোনো কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যাচ্ছে না। বর্তমান প্রজন্মের মানুষেরা এক অর্থে ভাগ্যবান। বিশ্বসভ্যতার এক ক্রান্তিকালে তাঁরা বসবাস করছেন। আন্তর্জাতিকভাবে অতীতের সব চিন্তা-ভাবনা একের পর এক চুরমার হয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। সনাতন চিন্তা এবং তার ধারকরা এত দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে যে, কারো কোন কথার ওপর শেষ ভরসা করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। এখন বিশ্বে একক বা দুই মেরুর নির্দিষ্ট নেতৃত্ব নেই। অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে অগ্রগতির মাধ্যমে ক্ষমতাধর আরো একাধিক দেশ বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্যে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এবং আগ্রহী। সবকিছু নতুন ভাবে আবির্ভূত হচ্ছে। কাজেই এখনকার প্রজন্ম কোনো গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকছে না। সবকিছু নিজের করে দেখার এবং ভাবার সুযোগ পাচ্ছে।
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে, সারা দুনিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বস্তুবাদের চিন্তাধারায় এক বিরাট পরিবর্তন আসে। তার ঢেউ বাংলাদেশেও এসে লাগে। বহুদিনের গড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিধাবিভক্ত হয়। এমনকি পার্টির অফিসও দুইভাগে বিভক্ত করে নেন ভিন্ন মতাবলম্বীরা। গণচীন বা ভিয়েতনামে এখন আগের ধাঁচের সমাজতন্ত্র নেই। উভয় দেশে কমিউনিস্ট পার্টির একক শাসন বজায় রেখে ব্যক্তি মালিকানা এবং ব্যক্তি পুঁজির পথ খুলে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পুঁজিবাদী বিশ্বে পুজিঁবাদী বস্তুবাদের পতন পরিলক্ষিত হয় ২০০৮ সালে যখন আমেরিকার কংগ্রেস ৭০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়ে সেদেশের পতনোন্মুখ ব্যাংক, লিজিং কো¤পানিগুলোকে রক্ষা করে। ব্যাংক এবং হাউজিং ফিনান্স কোম্পানিগুলোর ওপর আস্থা হারিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে মানুষ গড়ে তোলে ওয়াল স্ট্রীট দখল আন্দোলন। বেশি মুনাফা লাভের জন্য স্পেকুলেশন এবং স্পেকুলেটিভ মুনাফার ওপর সুযোগ সুবিধা ভোগের কারণে প্রধানত দেউলিয়া হয়ে পড়া ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিগুলো বল্গাহীন পুঁজিবাদের দুর্বলতা ফুটিয়ে তোলে। পুঁজিবাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে নব্য-উদারনৈতিক চিন্তাধারার উত্থান লক্ষণীয়। কিন্তু টেকসই কোনো দর্শন বা সমাজব্যবস্থা তার ওপর এখনো গড়ে ওঠে নি।
বিগত দুই বছর ধরে দেখা গেছে বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে খোদ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া বেশ কিছু পদক্ষেপ। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নেয়া অবস্থান, বর্ণবাদী শাসনের আবহ সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক দায়-দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া তার অন্যতম। পুঁজিবাদি বিশ্বের এতদিনের নেতা এবং বিশ্বায়নের প্রধান প্রবক্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা আন্তর্জাতিক সকল কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। মুক্তবাজার, মুক্তবাণিজ্য এবং উন্নত দেশের বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর দাপট বিশ্বের স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো বঞ্চিত করে রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেও অভ্যন্তরীণ সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং গণচীন যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠেছে। খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদগণ এই পরিস্থিতির জন্য সামাজিক দায়-দায়িত্বহীন একতরফা মুনাফাভিত্তিক পুঁজিবাদকে দায়ী করেছেন।
ইরানে আদর্শভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার ৩৯ বছরের অব্যাহত অগ্রগতি বিশ্ব পরিস্থিতির নিরিখে বিচার করলে অবশ্যই ব্যতিক্রমধর্মী মনে হবে। ৯/১১ পরবর্তী বিগত দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রচারণা হয়েছে, তাতে এ কথা মনে করা কি বেঠিক হবে যে, শক্তিধররা ইসলামি যেকোন কিছুকেই খারাপ বলতে চেষ্টা করছে। তারা স্বীয় দেশ থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনীদের মুক্তি সংগ্রামকে সন্ত্রাসী কর্মকা- বলছে। এখন চরমপন্থী কার্যকলাপের জন্যও এককভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের দায়ী করছে। ইমান খোমেইনী ইরানে একটা আদর্শ রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছেন। ইসলামি আইনজ্ঞদের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের যে ধারণা তিনি শুরু থেকে দিয়েছেন, তাকে গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র-চিন্তার সাথে তুলনা করা যায়। প্লেটো বলেছেন, দেশ চালাবেন দার্শনিক রাজা।
ইমাম খোমেইনী ইসলামি আইনজ্ঞদের অভিভাবকত্বে তথা নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার সৃষ্টি করে জনগণের নির্বাচনে গঠিত সরকার-ব্যবস্থা চালু করেছেন। ইরানের সংবিধানে অভিভাবক পরিষদ এবং সুপ্রিম নেতার ব্যবস্থা থাকলেও নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির সরকার পরিচালনায় প্রচুর স্বাধীনতা রয়েছে। একইভাবে নির্বাচিত পার্লামেন্ট আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিম-লে কাজ করে। কোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট ও অভিভাবক পরিষদের মধ্যে মতপার্থক্য হলে তা দূর করার জন্য রয়েছে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। কাজেই সুপ্রিম নেতা হিসেবে ইমাম খোমেইনী বা বর্তমানের রাহবার ইমাম আলী খামেনেয়ী এককভাবে ইরান শাসন করছেন এ কথা কেউ বলতে পারবেন না। সাথে সাথে ইরানে মানুষের সৃজনশীলতাকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। শত অবরোধ সত্ত্বেও ইরানের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা, পরমাণুবিজ্ঞান ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং সামরিক ক্ষেত্রে স্বয়ম্ভরতা মানুষের সৃজনশীলতারই বহিঃপ্রকাশ।
ইমাম খোমেইনী বিশ্বাস করতেন ইসলামি বিপ্লব মানব কল্যাণে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। তিনি শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যে বিশ্বাস করতেন এবং বলে গেছেন, ঐক্যের মাধ্যমে মুসলমানরা দুনিয়ায় ক্ষমতার ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী পশ্চিমা শক্তির মোকাবেলা করবে। ইমাম খোমেইনী বিশ্বব্যাপী ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে তাঁর বিপ্লবের লক্ষ্য হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন ইসলাম এসেছে শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, জগতের সকল মানবগোষ্ঠীর মঙ্গল ও মুক্তির জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের সময়কে (১২-১৭ রবিউল আউয়াল) ঐক্যের সপ্তাহ এবং রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে তিনি আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস ঘোষণা করেন।
পরিতাপের বিষয়, মুসলমান দেশসমূহকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত ও দুর্বল করে তাদের হাজার বছরে অর্জিত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে তাদের সম্পদ লুণ্ঠনের যে প্রক্রিয়া উপনিবেশ আমলে শুরু হয়েছিল তা এখনো অব্যাহত আছে। ইসলামি আদর্শবিচ্যুত উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও অর্থসহ মদদ দিয়ে ইসলামি জাগরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে। সচেতন মুসলিম চিন্তাবিদদের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হলেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত নেতারা অনেকেই তা অনুধাবন করতে পারছেন না। সাধারণ উম্মাহর একান্ত ইচ্ছা উল্লিখিত বাধা অতিক্রিম করে মুসলিম দেশগুলো জাগরণ ও ঐক্যের পথে এগিয়ে আসবে।
যাঁরা ইমাম খোমেইনীর আদর্শকে খাটো করে দেখতে চেষ্টা করেন, তাঁরা আরো খতিয়ে দেখতে পারেন। তাঁর জ্ঞানের বিশালতা, বিচারবুদ্ধির তীক্ষ্ণতা এবং প্রখরতা প্রতিটি কাজে ফুটে ওঠে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার মসনদে না বসা, ইরানে একটা গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা তার অন্যতম। ক্ষুদ্র চিন্তার কোন নেতা মুসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্রতম মসজিদ বায়তুল মোকাদ্দাসকে মুক্ত করার জন্য প্রতি রমজানের শেষ শুক্রবার আল-কুদস দিবস পালনের ডাক দিতে পারেন না। এই দিবস এখন সকল মুসলিম দেশে পালিত হয়। ইরানের আদর্শে অনুপ্রাণিত লেবাননের হিজবুল্লাহ ইসরাইলি বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করে তাদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করে প্রমাণ করেছে, আদর্শভিত্তিক ঐক্যের মাধ্যমে পার্থিব সবকিছুই অর্জন সম্ভব। অনেক অপপ্রচার সত্ত্বেও পশ্চিমা কট্টর সমালোচকরা ইরানের শাসনব্যবস্থাকে ধর্ম ও গণতন্ত্রের মিশ্রণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আমার বিশ্বাস ইরান স¤পর্কে ভ্রান্ত প্রচারণার দিন শেষ হয়ে আসছে। আদর্শে, জ্ঞানে ও বিজ্ঞানে ইরান তার অতীত স্বর্ণযুগের মতো মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
*অনলাইন দৈনিক গ্রীনওয়াচ ঢাকা পত্রিকার সম্পাদক
এবং ইংরেজি দৈনিক এশিয়ান এজ পত্রিকায় পরামর্শক সম্পাদক

মোস্তফা চামরান

কামাল মাহমুদ
মোস্তফা চামরান ইরানের এক মহান বিজ্ঞানী ও সংগ্রামী যোদ্ধা। যিনি একাধারে পদার্থবিজ্ঞানী, রাজনীতিবীদ, গেরিলা কমান্ডার। বিপ্লব-পরবর্তী ইরানে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইরানের পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় তিনি ইরানি পার্লামেন্টারি ফোরামের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি একজন আদর্শ সংগ্রামী। যিনি অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার তথা আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার মর্যাদাপূর্ণ বিজ্ঞানীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবীদের সহায়তার জন্য প্যালেস্টাইন, লেবানন, মিশরে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে ছুটে গিয়েছেন। ঠিক একইভাবে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের ক্ষেত্রেও তিনি দায়িত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করেছেন। বলা হয়ে থাকে ইরানের বীর পুরুষদের বিষয়ে কোনো কিছু লিখলে যদি শহীদ মোস্তফা চামারানের বিষয় না লেখা হয় তাহলে এটি অন্যায় করা হবে। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ৩৮ বছর আগে, কিন্তু আজো তিনি ইরানের মানুষের মনে জাতীয় বীর হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত আছেন। তিনি তাঁর কাজে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, ন্যায়নিষ্ঠ, বন্ধুবৎসল এবং অনুজদের প্রতি স্নেহশীল। যে কাজ করতেন সেজন্য মরণপণ চেষ্টা করতেন। তাইতো তিনি পাভে প্রান্তরে ইরাকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে নিজ জীবনকে উৎসর্গ করে জায়গা করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। এমন একজন সাচ্চা মুসলিমকে স্মরণ করবে অনাগত শত কোটি মুসলিম। যারা নিজের জীবনের চাইতে ইসলাম ও দেশের মর্যাদাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তার বিখ্যাত বাণী ‘কাপুরুষ মৃত্যুর পূর্বেই বহুবার মরে, কিন্তু সাহসী বীরেরা শুধু একবারই মরে।’
কৈশোর ও শিক্ষাজীবন
চামরান ১৯৩২ সালের ৮ মার্চ তেহরানের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা তাঁর জন্মের পর ফুটফুটে চেহারা দেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেছিলেন। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। ছয় ভাই, মা-বাবা, দাদি ও ফুফু এই নয়জন ছিল তাঁর পরিবারের সদস্য। তাঁদের নিজেদের কোনো ঘর ছিল না। একটি ভাড়া ঘরে বসবাস করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। কিন্তু তাঁর ঘরে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না। কখনো কখনো বাড়ির ছাদে গিয়ে পড়াশোনা করতেন। অথচ ক্লাসের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো তিনি অনায়াসে সম্পাদন করে শিক্ষকদের চমকে দিতেন। তিনি আয়াতুল্লাহ তালেকানী ও আয়াতুল্লাহ মোরতাজা মোতাহ্হারীর নিকট ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীকালে আলবোর্জ হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। তেহরান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইলেক্ট্রো ম্যাকানিক্স’ বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। উচ্চ শিক্ষার্থে আমেরিকায় যান। তিনি টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস ডিগ্রি লাভ করেন। এরপরে ১৯৬৩ সালে ইরান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ব্রেকলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘প্লাজমা ফিজিক্স’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ‘বেল ল্যাবরেটরীজ’ এবং নাসার ‘জেট প্রোপালশান ল্যাবরেটরীজ’-এ স্টাফ সাইনটিস্ট হিসেবে চাকরি করেন।
রাজনৈতিক কার্যক্রম
মোস্তফা চামরান মেহেদী বাজারগানের নেতৃত্বে মুক্তি আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। গ্রাজুয়েশনের পরে তিনি কিউবাতে মিলিটারি প্রশিক্ষণের জন্য যান। তিনি মিশরের জামাল আবদুল নাসেরের হাতে দুই বছর গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সেরা নির্বাচিত হন। তিনি শাহ এর বিরুদ্ধে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। শাহ সরকার তাঁর শিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করে দেয়। ১৯৬৫ সালে তিনি আমেরিকায় চলে যাওয়ার পর ১৯৬৮ সালে মুসলিম ছাত্রদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরি করেন। যার নাম ‘মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ (এমএসএ) যার নেতৃত্বে ছিলেন ইবরাহীম ইয়ায্দী। পরবর্তীকালে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সেও এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালে তিনি লেবানেনে যান এবং ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’ এ যোগদান করেন এবং ‘প্যালেস্টাইন আমল মুভমেন্ট’-এও কাজ করেন। তিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য রেভুলেশনারি মুভমেন্ট’ এর সদস্য ছিলেন। সেখানে তিনি মূসা সাদরকে সহায়তা করেন। তিনি মূসা আল সাদর এর ‘ডানহাত’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। লেবাননে ‘হিজবুল্লাহ’ গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য তাঁর হাতেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইন চিফ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ড. চামারানের ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করেন।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব আরম্ভ হলে ২১ বছর পর চামরান ইরানে প্রত্যাবর্তন করেন। বিপ্লবের পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারে মাহদী বাজারগানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি কুর্দিস্তানের বিদ্রোহীদের দমনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সময়কালে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে তেহরান থেকে ইরানের পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হন। তিনি সুপ্রিম কাউন্সিল অব ন্যাশনাল ডিফেন্স এর উপদেষ্টা মনোনীত হন।
ব্যক্তিগত জীবন
চামরান আমেরিকান মুসলিম তামসেন হেইমানকে ১৯৬১ সালে বিয়ে করেন। তাঁদের রৌশান নামে ১টি মেয়ে ও আলী, জামাল ও রহিম নামে তিনটি ছেলে রয়েছে। ১৯৭৩ সালে তামসেন চামরানকে ছেড়ে চলে যান। এরপর চামরান এক লেবাননী নারীকে বিয়ে করেন যাঁর নাম ‘গ্বাদে জাবের’।
শাহাদাত
চামরান ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় পাভে প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁকে ‘বেহেশতে যাহরা’ কবরস্থানে দাফন করা হয়। যুদ্ধের সময় তাঁর বাম পায়ে মর্টারের গোলা লাগে, তবুও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে যান নি। ১৯৮১ সালের ২১ জুন তিনি এ নশ্বর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে মহান আল্লাহর সাথে মিলনের মনোবাসনা পূর্ণ করার সুযোগ লাভ করেন।
ড. মোস্তফা চামরান ইরানের বিখ্যাত ও গর্বিত কমান্ডার । ইরান ও লেবাননে বিভিন্ন রাস্তা ও ভবন তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে তাঁর নামে একটি পতঙ্গের* নাম রাখা হয়। নিক রবীনসন ‘নট এ নিউ লাইফস্টাইল ফর দোস হু থার্স্ট ফর হিউম্যানিটি’ নামে জীবনী গ্রন্থসহ অন্য লেখকরা তাঁর বায়োগ্রাফি লিখেছেন। ২০১৪ সালে তাঁর জীবনী নিয়ে একটি ফিল্ম প্রচারিত হয় যার নাম ‘চে’।

ক্স প্রজাপতি জাতীয় এই পতঙ্গ ২০১২ সালে রাজাভী খোরাসান প্রদেশের বিনোলুদ পাহাড়ে পাওয়া গিয়েছিল।

শৃঙ্খলিত ঈদ : মুক্তি অন্বেষা

শৃঙ্খলিত ঈদ : মুক্তি অন্বেষা
আবদুল মুকীত চৌধুরী
১.
ঈদের স্বপ্ন দেখে দেখে কাল পেরিয়ে জীবনভর
দর্শন সে মেলেনি তার, পাইনি আজো তার খবর।
বুকে বুকে সুখ বিলানোর সুবর্ণ এ সময়কাল–
এখনো তো পোহায় নি রাত, নড়েনি সে হাওয়ায় পাল।
সারা বিশ্বে কোলাকুলির দৃশ্য মোহন অবশ্যই;
কিন্তু কবি, তোমার বুকে আগুন জ্বালা–ফুটছে খই!
অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-স্বাস্থ্য এবং নেই যে বাসস্থান,
তাদের জন্য কতোটুকুন হলো বলো সে সংস্থান ?
ভাসছে দেশ এবং বিদেশ–দেশে দেশে বুলির রোল!
কপচে যে পার বেলা সবার, এ বঞ্চনার হিসাব খোল্।
ঈদের রাতে নিঁদ নামেনি নিত্ উপবাস অশ্রুময়,
তাদের জন্য এলো ক’জন? ভালবাসার সেই অভয়।
ঈদের খুশি সবার হবে জনকয়েকে বন্দী না,
কোন কালে ভুলে-ভালে এ অসাম্যে সন্ধি না।
২.
বুক মিলানো, সুখ বিলানো, আরো কথা আছে এই
বিশ্ব জুড়ে মাথা খুঁড়ে বিপন্নরা, খবর নেই।
দেশে দেশে শৃঙ্খলিত, নিপীড়িত মানুষ জন
আল্লাহ্ নামের মাশুল দিতে বিভীষিকায় কাল যাপন!
ঈদের কোন রাত সেখানে আনেনি সে খুশির বান,
ঈদের খুশি বিসর্জনেও পায় না রেহাই জান ও মান!
আমরা কিন্তু কী নির্বিকার! চামড়া পুরু, আছি বেশ।
আক্রান্ত, নিপীড়িত, নেই তো তাদের চিন্তা লেশ!
শয়ে শয়ে বোমার ঘায়ে লক্ষ কোটির জীবন যায়,
অজ্ঞ মুসলমানকে দেখে একবিংশের হাসি পায়,
বিশ্ব হাসে, ভিরমি খায়!
রক্ত এবং অশ্রুতে আজ বন্যা দেখো অনেক দেশ,
ঈদের রাতের আনন্দ কই ? মুক্তিই তো নিরুদ্দেশ!
ঈদ আসে না সে আঙিনায়, তাদের মানা খুশির গান,
তাদের চোখে অশ্রুমালা–নামলো বুকে দুখের বান।
লক্ষ কোটি আঁকড়ে মাটি ঈদের রাতে কাল কাটায়,
তাদের আপন লক্ষ স্বজন নিহত আহত হায়!
মানুষ নামের পশুর ভয়ে ঈদ আনন্দ কুঁকড়ে হায়
দেখো কেমন ঝুলে আছে খাঁচার পাখি বারান্দায়!
কোলাকুলি দূরের কথা, আতঙ্কে রাত সারা হয়,
আরাকানের বিষণ্ণ রাত শৃঙ্খলে সে কারা হয়।
৩.
বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষ কাঁদে, ঈদ কোথায় ?
ভিন্ন দৃশ্য দেশে দেশে–ঈদের খুশি উপচে যায়!
বঞ্চনা ও নিপীড়নে গোটা বিশ্ব অশ্রুময়;
এ দুই পশুর হনন ঈদের পূর্বশর্ত গায় সময়।
দেখো দেখো দৃশ্য করুণ–বিশ্বে স্বজন হনন কাল;
কিন্তু খুশির নেই হেরফের, আনন্দ সে কী উত্তাল!
জিজ্ঞাসাটা : আমরা কি সেই স্বর্ণযুগের সুসন্তান ?
যাদের কন্ঠে মানব জাতির কল্যাণী সে অভয় গান
মুক্ত করতে অতলান্তিক ঊর্মিমালা পেরিয়ে, সেই
মুসলমানের দেখা পাবার স্বপ্ন মরে অঙ্কুরেই ?
অন্তরে সে বার্তাবিহীন, নেই ভাবান্তর, কাল কাটাই
আমরা নাকি এ বিশ্বটার পাল্টেছিলাম চেহারাটাই!
এখন ফতুর এবং আতুর চিন্তা-মনন ভ্রষ্টকাল,
যেমন খুশি সাজার আপোষ-গা বাঁচানোর হাওয়ায় পাল!
ভিন্ন গোষ্ঠী সদস্যরা মুখ টিপে আর অবাক হয়,
ফেটে পড়ে জিজ্ঞাসে কেউ : এরা কি সেই তারা নয় ?
আগ্রাসী মুখ টিপে হাসে, এমন জাতি নেই কোথাও ;
সুতরাং সব পশু বেরোও, এক এক করে এদের খাও।
প্রতিরোধের ধার ধারে না–সেঁকে কাবাব বানাও তাই,
কী সুবর্ণ সুযোগ, দেখো, ঈপ্সিত সংহতি নাই।
৪.
আয় তো মুক্তিকামী তরুণ, শোন্ বিশ্বে কান্না রোল,
রক্তাশ্রুর বিভীষিকায় কোথায় বিশ্বে সে নজরুল ?
শপথ হবে : ঈদের খুশী ছড়িয়ে দিতে জান কবুল,
বঞ্চিত ও নিপীড়িতের মুক্তিভোরের শ্লোগান তোল্।
অস্তিত্বের এ সংগ্রামে নিবেদিত তরুণ চাই,
শৃঙ্খলিতের মুক্তি দেয়ার বিকল্প যে কিচ্ছু নাই।

কাক্সিক্ষত সেই নাবিক এলেই
আমিন আল আসাদ

[কবি ফররুখ আহমদ মানবতার মুক্তির জন্য একজন সঠিক নেতা তালাশ করে গেছেন আজীবন। তিনি তাঁর বিভিন্ন কবিতায় কখনো সিন্দাবাদ, পাঞ্জেরী, নাবিক, মাঝি, হাতেম তাঈ ইত্যাদি রূপকার্থে যেসব মুক্তিদাতা নেতা অন্বেষণ করে গেছেন ইসলাম ও মানবতার মুক্তির জন্য ও সত্যিকার ইনসাফ ও ন্যয়ের সুবাতাস বইয়ে দেয়ার জন্য, তিনি ইমাম মাহদী (আ.) ছাড়া আর কেউ নন। কারণ, গোটা দুনিয়া এখন একজন ত্রাণকর্তার জন্য অপেক্ষায় আছে। আর কে না জানে একমাত্র ইমাম মাহদী (আ.) ছাড়া বিরাজমান পৃথিবীতে সম্পূর্ণ শান্তি-শৃঙ্খলা আর কেউ ফিরিয়ে আনতে পারবে না। একমাত্র তাঁর সুশাসনই পৃথিবী দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলা সাহিত্যে কবি ফররুখ আহমদকে বলা হয় ‘ইসলামি রেনেসাঁর কবি’। তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের জন্য নিম্নের কবিতাটি পেশ করা হলো। ]

দুয়ারে সাপের গর্জন থামে নি তো
আঁধার সাগরে ডুবছে আলোর রেখা
ম্লান পাণ্ডুর হয়ে গেছে সব সম্ভাবনার রঙ
মুখ থুবড়ে পরে আজো পচা বিবেকের লাশ
মতভেদের সীমান্তে মরে মাঝি-মাল্লার দল
রাত্রি গভীরে শত্রুরা বোনে যত ভেজালের বীজ
চোরা পাহাড়ে চৌচির হয় আস্থার পাটাতন
স্বজাতির সব নাবিক আজ ভুল পথে ধরে হাল
দিব্যি আয়েশে শ্রান্তির ঘুমে ছাড়ে সুখ-নিঃশ্বাস
জেহাদের মাঝে খোঁজে না তো ওরা পরম জিন্দেগানী
নিশ্ছিদ্র সীসার প্রাচীর আজ ক্ষতবিক্ষত
সোনালি যুগের নাবিকের মতো হয় না আত্মীয়তা
কমে না তো ঋণ উচ্ছৃঙ্খল রাত্রির, বাড়ে দেনা
আদর্শ স্রােতে ধৌত করেও রক্তধারার পাপ-
ঘোচে না এবং সরে না আঁধার মনের পঙ্কিলতা
চায়ের টেবিলে বেড়ে গেছে আজ স্বার্থের সংলাপ
সার্বিয় রোদ ইহুদি দাপট গ্রাস করে মরুভূমি
তবুও আমরা স্বপ্ন দেখছি, দেখছি হেরার রাজতোরণ
তবুও আমরা বসে আছি সেই নাবিকের পথ চেয়ে
কাঙ্ক্ষিত সেই নাবিক এলেই দূর হবে সব ক্লেদ
উঠবে জেগে হাসনাহেনা গোলাপের সংবেদ।।