All posts by dreamboy

কবি হোসাইন শাহরিয়ার ও তাঁর কাব্য ভাবনা

 

কবি হোসাইন শাহরিয়ার ও তাঁর কাব্য ভাবনা
তারিক সিরাজী*

আমরা জানি যে, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইরানে নাগরিক স্বাধীনতার দাবি মূর্ত হয়ে ওঠে। সে সময় দেশে এক প্রচণ্ড সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়। দীর্ঘস্থায়ী এ আন্দোলন ও দাবি অবশেষে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুজাফ্ফর উদ্দীন শাহ কাজার মেনে নেন। সাংবিধানিক আন্দোলন জয়ী হওয়ার পর ইরানে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরই ফলে সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন সূচিত হয়। সাথে সাথে জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমের ভাবধারাও উচ্চকিত হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি ইরানের কবি-সাহিতত্যিকরা জাতীয়তাবাদের নতুন ভাবধারায় উজ্জীবিত হন।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে ইরানে ইনকিলাবে মাশরুতিয়াত১(সাংবিধানিক বিপ্লব)-এর প্রাক্কালে স্বাধীন লেখক ও কবিদের মধ্যে একটি নতুন চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে। এ চিন্তাধারাটি ছিল স্বাধীনতা ও সর্বজনীনতার ভাবধারায় পরিপুষ্ট অর্থাৎ তাঁরা স্বাধীন ভাবধারা, সর্বজনীনতা ও স্বকীয়তার আদর্শকে তাঁদের কাব্য ও সাহিত্যের উপজীব্য বিষয় হিসাবে গ্রহণ করতে সচেষ্ট ছিলেন। সমকালীন যুগে এসেও তাঁরা এ চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাতে থাকেন। কিন্তু এ সকল কবি-সাহিত্যিক অন্যসব মানুষের মতোই সমাজে বিরাজমান নানাবিধ সমস্যার জালে বন্দী হয়ে পড়েন। এ বন্দিদশা থেকে নিজেদের ও জনগণের মুক্তির জন্য তাঁরা লেখনী ধারণ করেন।
এক শ্রেণির কবি-সাহিত্যিক তাঁদের সমাজ সংস্কারমূলক চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটাতে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁরা তাঁদের সাহিত্যকর্মে শ্রম ও শ্রমজীবী মানুষের কথা একটি ভিন্ন বিশ্বাস ও ভিন্ন আঙ্গিকে নানাভাবে তুলে ধরেন। আবার এ সময়ই এক শ্রেণির তোষামোদে কবি-সাহিত্যিকেরও আবির্ভাব ঘটেছিল, যাঁরা ছিলেন মূলত রাজতন্ত্রপন্থী। তাঁদের হীন তৎপরতার কারণেও শিল্প-সাহিত্যে ও সমাজে এক অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছিলÑ যে কারণে স্বাধীনতার জন্য এ সময় কবি-সাহিত্যিকগণ মরিয়া হয়ে ওঠেন। এমনি এক যুগ সন্ধিক্ষণে তাঁরা চিন্তার স্বাধীনতার আন্দোলনে শরীক হন।
ফারসি সমকালীন সাহিত্য বলতে মূলত এই নবধারার সাহিত্যকেই বুঝিয়ে থাকে। কাজার যুগের শাসন ব্যবস্থার সমাপ্তি এবং মাশরুতে তথা সাংবিধানিক আন্দোলনের ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে যে সাহিত্যের পুনরুত্থান ঘটেছে তা-ই সমকালীন সাহিত্য। সামাজিক বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অবস্থা তথা আইন, স্বাধীনতা, উন্নয়ন, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্পচর্চা এবং উপনিবেশবাদ ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই, দেশপ্রেম, অসহায় ও বঞ্চিতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা ইত্যাকার বিষয় ফারসি সমকালীন সাহিত্যে বিপুলভাবে পরিলক্ষিত হয়। লেখক, সাহিত্যিক ও কবিগণ সমকালীন বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি নতুন সাহিত্য ধারা প্রবর্তনে প্রয়াসী হন।
ফারসি সাহিত্যে সমকালীন যুগের বৈচিত্র্যময় তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে ফারসি কাব্যচর্চার ধারাবাহিকতা চলে এসেছে। সমকালীন যুগে বহু খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক তাঁদের কাব্যচর্চার মাধ্যমে সমাজের নানাবিধ বিষয়কে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছেন, যার ফলে জনগণ ও সমাজের মাঝে নব নব চিন্তা-চেতনা, কৃষ্টি-কালচার, মানবতাবোধ ও সাংবিধানিক শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠেছিল। পাশাপাশি এ সময় পুরানো ধাঁচের চিন্তা-চেতনা তথা শাহী দরবারকেন্দ্রিক কাব্যচর্চারও বহুলাংশে বিলোপ ঘটেছিল। অপরদিকে কাব্য কলায় সৌকর্য বৃদ্ধি ও সাবলীলতা আনয়নের জন্য কাব্যরীতিতে নতুন আঙ্গিকেরও উৎপত্তি এ যুগেই দেখতে পাওয়া যায়। আর এসব কবিতায় যে সকল ব্যতিক্রমী বিষয় ও ভাবধারা সন্নিবেশিত হয়েছিল তা হলো মুক্তিকামিতা, সামাজিক জাগরণ ও জাতীয় চেতনাবোধের বিকাশ।
ইরানের এ সমাকালীন ধারার একজন সুবিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক হলেন সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হোসাইন শাহরিয়ার তাবরিযি (১৯০৬-১৯৮৮ খ্রি.)। তিনি ইরানের পূর্ব আযারবাইজানের প্রাদেশিক শহর তাবরিযের খোশগোনাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শাহরিয়ার ছিলেন ইরানের আযারবাইজান প্রদেশের অধিবাসী। অসুস্থতার কারণে তাঁর শৈশবকাল কাটে পূর্ব আযারবাইজানের বোস্তানাবাদ পৈত্রিক গ্রামের বাড়িতেই। তাঁর পিতা মির্যা আগা খোশগোনাবি, যাঁর পূর্ব নাম ছিল সাইয়্যেদ ইসমাইল মুসাভি,তাবরিযের একজন নামকরা আইনজীবী ছিলেন। শাহরিয়ার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা তাবরিযের মোতাহারি বিদ্যালয়ে(পূর্বনাম মানসুর উচ্চবিদ্যালয়) সমাপ্ত করেন এবং পরবর্তীকালে তেহরানের দারুল ফনুন স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপণ করেন। এরপর চিকিৎসা বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন এবং অধ্যয়নের শেষ পর্যায়ে এসে তথা ছয় মাস পূর্বে তা ছেড়ে দেন। শাহরিয়ার নিজ ও পরিবারের জীবন ধারণের জন্য ১৯৩১ সালের দিকে সরকারি দলিল রেজিস্ট্রি তথা তফসিল অফিসে চাকুরিতে যোগদান করেন। প্রথম দিকে নিশাপুরে পরে মাশহাদে চার বছর চাকুরি জীবন অতিবাহিত করেন। নিশাপুরে থাকাকালীন তাঁর পিতা মারা যান।এরপর১৯৩৫ সালেরদিকে তিনি তেহরানে ফিরে আসেন এবং পৌরসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিদর্শক পদে বেশ কিছুদিন চাকুরি করেন। এরপর ইরানের কৃষি ব্যাংকে কাজ শুরু করেন।
তেহরান থাকাকালীন তিনি সে সময়ের বিখ্যাত কবি মালেকুশ শুয়ারা বাহার, আরিফ কাযভিনি, ফররুখি ইয়াযদি, মিরযাদে এশকি প্রমুখের সাথে সাক্ষাত করেন। তাঁদের বিভিন্ন কবিতার আসর ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের সাহচর্যের ফলে তাঁর মাঝে কাব্যপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। কবিতাচর্চার শুরুর দিকে শাহরিয়ার তাঁর কাব্যনাম ‘বেহজাত’ লিখতেন। কিন্তু হাফিযের গজল-কাব্য থেকে ভাগ্য গণনার (ফারসি পরিভাষায় ‘ফা’ল’ বলা হয়) মাধ্যমে পরবর্তীকালে‘শাহরিয়ার’ ভণিতা ধারণ করেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হলো রুহে পারভা’নে (প্রজাপতির আত্মা)। এটি মাসনাভি (দ্বিপদী) আঙ্গিকের কবিতা সংকলনÑ যা তৎকালীন কাব্যজগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।এর ভূমিকা অংশটি বিখ্যাত কবি মালেকুশ শুয়ারা বাহার ও সাইদ নাফিসি লিখে দিয়েছেন। এটি প্রকাশিত হয়েছিল১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্তকবি শাহরিয়ার তাবরিয বিশ^বিদ্যালয়ের সাহিত্য অনুষদে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। এ সময় তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হেইদার বা’বা’য়েঅথবা হেইদার বা’বা’য়ে সালা’মপ্রকাশিত হয়। এটি কবির অনবদ্য রচনা। তুর্কি-আযারি সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত তাঁর হেইদার বা’বা’য়েশীর্ষক কাব্য সংকলন গ্রন্থটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।এটি ফারসির ন্যায় তুর্কি-আযারি ভাষায় তাঁর সমান দক্ষতার প্রমাণ বহন করে।‘হেইদার বা’বা’ পূর্ব আযারবাইজানের একটি পর্বতের নাম। এ পর্বতের পাদদেশেই কবির শৈশবকাল অতিবাহিত হয়েছে। এ কবিতায়তিনি অত্যন্ত নিপুণভাবে তাঁর নৈসর্গিক পল্লি জীবন ওস্মৃতি বিজড়িতশৈশবের কাহিনী বর্ণনা করেছেন।ফারসি সাহিত্য সমালোচকদের মতে তাঁর এই অপূর্ব সৃষ্টি তুলনা রহিত।কবিতাটি ত্রিশটিরও অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
শাহরিয়ার ক্ষমতাধর কাব্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর সমগ্র কাব্যে মনস্তাত্ত্বিকতা, সংবেদশীলতা ও কবিসুলভ মনোভাব অনুরণিত হয়েছে। যেখানে তিনি কল্পনার ডানায় চড়ে সৃষ্টিশীল ও অনুসন্ধানী হয়ে উড়ে বেড়ান। তাঁর কবিতা যেকোনো বিষয়ের হোক না কেনো এতে আধুনিকতা ও নব ধারার ঝোঁকপ্রবণতার বৈশিষ্ট্যগুলো অনুভূত হয়ে থাকে। তিনি যেসকল কবিতা নিমার জন্য এবং তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে রচনা করেছেন এবং বিশেষ আকৃতি বা গঠনে রচিত তাঁর কবিতাসমূহ যেমনি বিশ্লেষণধর্মী তেমনি কল্পচিত্রের দিক থেকে সনাতনী ধারার পরিবর্তন প্রকাশের নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছে। কবি মালেকুশ শুয়ারা বাহার সেদা’য়ে খোদা’ নামক একটি কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় এই বলে কবি শাহরিয়ারের প্রশংসা করেছেন যে, ‘শাহরিয়ার কেবল ইরানেরই গৌরব নয়, বরং তিনি প্রাচ্যেরও গৌরব বটে।’
শাহরিয়ারের দিভান তথা কাব্যসমগ্রের মূল অংশ জুড়ে রয়েছে গজল বা গীতি কবিতা। তাঁর কাব্যসমগ্রে তুর্কি ভাষার কবিতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পনের হাজার শ্লোক সম্বলিত তাঁর এ কাব্যসমগ্রটি প্রথমে তিন খ-েএবং পরে দুই খণ্ডে তাবরিযে প্রকাশিত হয়।পরবর্তীকালে এ কাব্যসমগ্রটির একাধিক সংস্করণ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। গজল ছাড়াও তাঁর এ কাব্যসমগ্রে কাসিদা (স্তুতিমূলক কাব্য), মাসনাভি (দ্বিপদী), কেতয়া (খণ্ড কবিতা), রুবায়ি (চতুষ্পদী) ও নিমাই রীতির কিছু কবিতাসহঅন্যান্য ধারার কবিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হযরত আলী (আ.)-কে নিয়ে তাঁর বেশ কয়েকটি কবিতা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হযরত আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে লেখা দুই আঙ্গিকেরদুইটি কবিতা তথা আলী এই হোমায়ে রাহমাত (আলীওহে রহমতের হুমা পাখি)শীর্ষক গজল ও শাব ও আলীশীর্ষককাসিদা।ইসলামি বিপ্লব ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে ঘিরেও তাঁর বেশকিছু কাসিদা আঙ্গিকের (স্তুতিমূলক)কবিতা রয়েছে।
কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল ও হৃদয়বিদারক ঘটনাÑযা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর মনে বেদনা ও দহন সৃষ্টি করে। আহলে বাইতের প্রতি এহেন ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞও পৈশাচিক আচরণের কথা মনে হলে সকল খোদাভীরু মুসলমানের হৃদয় রক্ত¯œাত হয় এবং তা কোনোভাবেই তাঁরা মেনে নিতে পারেন না। কবি শাহরিয়ার কারবালার সে বিয়োগান্তক ও শোকাবহ ঘটনার কথা স্মরণে হামাসেয়ে হোসাইনি (হোসাইনের বীরত্বগাথা) শিরোনামে একটি কবিতা রচনা করেছেনÑ যার শব্দ, ভাব-ভাষা আমাদেরকে সে ঘটনার গভীরে নিয়ে যায়। এখানে তাঁর সে কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি তুলে ধরা হলো:
محرّم آمد و آفاق مات و محزون شد
غبار محنت ایّام تاب گردون شد
به جامه های سیه کودکان چون دیدم
دلم به یاد اسیران کربلا خون شد
به یاد تشنه لبان کنار نهر فرات
کنار چشم من از گریه رود کارون شد
به خاندان رسالت ببین چه ظلمی کرد
فلک که زینب کبری ز پرده بیرون شد
ولی حسین علمدار عشق و آزادی
لقب گرفت و شهنشاه رُبعِ¬مَسکون شد
মোর্হারম এলো যেন দিগন্তজুড়ে শোক আর দুঃখের অন্ধকার নেমে এলো,
দুঃখ-কষ্টের দিনগুলোসম ধূলিকণা আকাশে পুঞ্জিভূত হলো।
কালো পোশাক পরিহিত শিশুদের যে-ই না দেখলাম
কারবালার বন্দিদের স্মরণে আমার হৃদয় রক্ত¯œাত হলো।
ফোরাত নদীর তীরের তৃষ্ণার্ত অধরগুলো স্মরণে
আমার নেত্র-কোণের অশ্রুধারা যেনো কারুন নদীতে২ পরিণত হলো।
দেখ নবী পরিবারের প্রতি কি জুলুমই না করা হলো
আর স্বর্গীয় যায়নাবে কোবরা (বাধ্য হয়ে) পর্দা থেকে বেরিয়ে এলেন।
কিন্তু হোসাইন, প্রেম আর স্বাধীনতার পতাকা-বাহকের উপাধি নিয়ে
হয়ে গেলেন জগতবাসীর শাহানশাহ (নেতা)।
ভাষার অনাড়ম্বরতা, সর্বজনীনতা ও বিশ্লেষণধর্মী হওয়ার কারণে শাহরিয়ারের কবিতা ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করে। শাহরিয়ার তাঁর হৃদয়ানুভূতি ও কাব্য প্রতিভার দ্বারা নিজের কল্পনাগুলো ও চিন্তাধারাকে সাধারণ্যের ভাষায় তুলে ধরেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর কবিতা সকলের জন্য বোধগম্য ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। নব বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্য ও গাছগাছালি, ঝোপঝাড় আর ফুলে ফুলে চিত্রিত প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলিকে ঘিরে তিনি তাঁর আরুসে বাহা’র কবিতায় যে বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।এ কবিতার শব্দ চয়ন, ভাব মাধুর্য যেন আমাদেরকে এক আনন্দ-ভাবনার গভীরে নিয়ে যায়। এ কবিতায় তিনি বলেন:
عروس باغ و بهارم به خواب دوش آمد
که بانگ بلبلم از نیمه شب به گوش آمد
سحر به بوی گلم دیده باز شد کز در
به عشوه دختر خندان گلفروش آمد
به شادباش بهارم شکوفه بر سر ریخت
کز این شکفتن گل نیش رفت و نوش آمد
به نقش پیرهن پرنیان بشارت داد
که کوه و بیشه و صحرا پرند پوش آمد
গত রাতে আমার স্বপ্ন কাননের বসন্ত-বধু ঘুমঘোরে আমায় ধরা দিলো
আধোরাতে আমার প্রিয়া বুলবুলির কুহ ধ্বনি কর্ণকুহরে বেজে উঠলো
প্রত্যুষে বসন্তের ফুলের ঘ্রাণে আমর নয়নযুগল উন্মেলিত হলো
প্রভাত যেনো হাস্যোজ্জ্বল ফুল বিক্রেতা বালিকার ন্যায়আনন্দ নিয়ে দুয়ারে এসেছে।
আমার এ বসন্তের প্রতি শুভেচ্ছা যার ফোটা কলিগুলো আমার ওপর ছিটিয়ে দিয়েছে
প্রস্ফুটিত ফুলের কাঁটার আঘাত অপসারিত হয়ে এলো সুমিষ্ট পানীয় (মধু)।
ফুলে উৎকীর্ণ নকশি জামা আমাদের এই বলে জানিয়ে দেয় যে,
পর্বত, ঝোপঝাড় আর মরুভূমির পাখিকুল নতুন পোশাকে সেজেছে।
শাহরিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা বৈচিত্র্যের কবিতা রচনা করেছেন। তাঁর যে কবিতাগুলো দেশ, সমাজ, ইতিহাস, ধর্ম-দর্শন ও কালের ঘটনা প্রবাহের ওপর রচিত সেগুলোর পরিমাণও কম নয়। বিশেষ করে কল্পনা, বিশ্লেষণ এমনকি তাঁর কবিতার কাঠামোর নতুনত্ব অন্যান্য সমকালীন কবি থেকে তাঁকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছে।
কবি শাহরিয়ার ইরানের গজল স¤্রাট ওঅধ্যাত্মবাদের কবি হাফিজের গজল-কবিতা দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে ছিলেন। ফারসি সাহিত্যের অন্যান্য স্বনামধন্য কবি তথা ফেরদৌসি, নিজামি, সানায়ি, রুমি, সাদি-এর প্রভাও তাঁর কবিতায় কমবেশি পরিদৃষ্ট হয়; তবে তিনি হাফিজকেই সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করেছেন। তিনি হাফিজের এতটাই অনুরক্ত ছিলেন যে, তাঁর ভণিতা বা কাব্য নামটিও হাফিযের গজল-কাব্য থেকে ভাগ্য গণনার মাধ্যমে গ্রহণ করেছিলেন।তিনি তাঁর পিতা মির আগা খোশগোনাবির নিকটশৈশবেই অন্যান্য বিষয়ের ন্যায়প্রাথমিক পাঠ হিসাবে দিভা’নে হাফেয-এর পাঠ গ্রহণ করেছিলেন। ফলে, তাঁর কবিতায় ব্যাপকভাবে হাফিজের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। হাফিজের ন্যায় তাঁর কবিতায়ও প্রেম-বিরহ, উচ্ছ্বাস, আকুতি, আনন্দ-বেদনা ও সন্ধিগ্ধতা ফুটে উঠেছে।কবি শাহরিয়ারের মতে, হাফিজের কাব্যে কবিতার রীতিনীতি তথা অলংকারশাস্ত্রীয় বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসৃত হয়েছে।
কথিত আছে যে, কবি শাহরিয়ার ছাত্রজীবনের কোনো এক পর্যায় এক রমণীর প্রেমে পড়েছিলেন।শাহরিয়ারের একজন শিক্ষার্থীরভাষ্য মতে শাহরিয়ার যখন মেডিকেলে পড়ার জন্য তেহরানে এসেছিলেন তখন তাঁর মা ছেলেকে নিয়ে তেহরানেরনাসের খসরু সড়কে একটি ছোট্ট বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। সে বাসায় থাকাকালীন বাড়ির মালিকের মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন শাহরিয়ার। শাহরিয়ারের মা ও মেয়ের পরিবারের সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, শাহরিয়ারের ইন্টার্নি শেষ হলে তাঁরা উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। এ সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি কেরে তাঁদের বাগদানও সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে মেয়ের বাবা মেয়েকে এক কর্নেলের কাছে বিয়ে দেন। শাহরিয়ার এ ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত ও ব্যথিত হলেন। এ ঘটনা তাঁর শিক্ষা জীবনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে তিনি মেডিকেলে পড়া ছেড়ে দেন। জীবনের কোনো এক সময়ে সে পুরানো স্মৃতিকথা নিয়ে তিনি একটি গজল কবিতা লিখেছিলেনÑ যা সেইরমণীর দিকেই ইঙ্গিত বহন করে। তাঁর সে কবিতার নিদর্শন হিসাবে কয়েকটি শ্লোক এখানে তুলে ধরা হলো।
آمدی جانم به قربانت ولی حالا چرا؟
بی‌وفا حالا که من افتاده‌ام از پا چرا؟
نوشدارویی و بعد از مرگ سهراب آمدی
سنگدل این زودتر می‌خواستی، حالا چرا؟
نازنینا ما به ناز تو جوانی داده‌ایم
دیگر اکنون با جوانان ناز کن با ما چرا؟
عمر ما را مهلت امروز و فردای تو نیست
من که یک امروز مهمان توام فردا چرا؟
شهریارا بی‌حبیب خود نمی‌کردی سفر
این سفر راه قیامت می‌روی تنها چرا؟
এসেছো, তোমার তরে আমার প্রাণ উৎসর্গিত হোক, তবে এখন কেনো?
হে অবিশ্বস্ত! এখনতো আমি নিশ্চল হয়ে পড়ে আছি, তবে কেনো?
সর্বব্যাধিহর ঔষধ (তুমি), সেই তো এলে তবে সোহরাবের মৃত্যুর পরে,
হে পাষাণ হৃদয়! এতটাই দ্রুত চেয়েছিলে, এখন কেনো?
হে প্রেয়সী! তোমার প্রেমাবেগে আমার গোটা যৌবন বিলিয়ে দিয়েছি
এখন তরুণদের সাথে প্রেমানুরাগে মত্ত হও, আমার সাথে কেনো?
তোমার তরে আজ ও কালের অবকাশ আমার জীবনে অবশিষ্ট নেই
আমি তোমার আজকের অতিথি, তবে আগামীকালের জন্য কেনো?
হে শাহরিয়ার! তুমিতো বন্ধুবিহীন ভ্রমণ করতে না
এই প্রলয়ের পথের ভ্রমণে যাচ্ছ তুমি,তবে একা কেনো?
সুস্থ, সুন্দর ও আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে শাহরিয়ারের যে ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে তা তাঁর কবিতার মাধ্যমে সহজেই অনুমান করা যায়। প্রেমময়ী কাব্য রচনা ছাড়াও শাহরিয়ারের সমাজ সচেতনতাবোধ ব্যাপকভাবে তাঁর কাব্যে প্রতিভাত হয়েছে। সমাজের নানাবিধ বিষয় যেমন যুদ্ধ ও সন্ধি, আধুনিক চিন্তাচেতনার বিকাশ, সামাজিক বিপর্যয়, নগর সভ্যতা, বৈশি^ক ভাবনা, সমাজবদ্ধ মানুষের স্বাদেশিক চেতনাবোধ, পৃথিবীর তাবৎ জাতিগোষ্ঠীর মর্মবেদনা ইত্যাদি তাঁর কবিতায় বিপুলভাবে আলোড়িত হয়েছে।
শাহরিয়ারের কাব্যের প্রতি যদি গভীরভাবে দৃষ্টি দেয়া হয় তবে দেখা যাবে যে, তিনি কেবল ইরানের সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেননি, বরং গোটা বিশে^র মানব সভ্যতার সমস্যাগুলো নিয়ে দারুণ উৎকণ্ঠিত ছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষের কবি ছিলেন; তাই তিনি সমাজের সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষকে একই কাতারের ভাবতেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও এটাই দাবি করে যে, তিনি স্বয়ং নিজেই সমাজের ব্যথা-বেদনাগুলো নিয়ে এমনিভাবে কাজ করেছেন মনে হয় যেনতিনি একজন অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানীর ন্যায় সমাজের মানসিক যাতনা ও ব্যাথা-বেদনাগুলোকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করেছেন। শাহরিয়ার কাব্য রচনার ক্ষেত্রে এসব বিষয়কে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রেখেছেন। কবি হিসাবে এবং সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে সমাজের নানাবিধ বাস্তব ঘটনাসমূহ তাঁর কবিতা ও গানে স্থান দিয়েছেন। ফলে তিনি সমাজ সচেতন কবিদের সারিতে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এ ভাবনাগুলোকে ভাবনার মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং তা বহুলাংশে কাজেও পরিণত করেছেন। যদিও শাহরিয়ারকে তাঁর গজলের কারণে একজন প্রেমবন্ধনার কবি হিসাবে অনেকে জানেন; কিন্তু তাঁর চিন্তাধারার ভিত্তিমূল ছিল জবধষরংস বা বাস্তববাদ। সমাজেবিরাজমান নানা অসংগতিগুলো তাঁর মন-মানসকে এ বাস্তবতার পথে প্রলুব্ধ করেছে। বর্তমান সমাজের প্রতি আক্ষেপ করে তিনি তাঁর এক কবিতায় বলেন:
خود نشناسیم و خدا نیز هم
ورده که جمعیم و جدا نیز هم
شرط اخوت نه ستم¬کاری است
حق برادر همه غم¬خواری است
شرط بود با همه یک¬رو شدن
درد بشر دیدن و دارو شدن
گر کسی از تنگی نان، جان سپرد
قاتل او، جامعه باید شمرد
نوع بشر یک سره مسئول اوست
ذمّۀ مردم همه مشغول اوست
ای که نگیری ز دل افتاده دست
گر بشری، نقص وجودیت هست
নিজেকেতো চিনিই না, এমনকি খোদাকেও নয়,
নয়তো কী করে যে সমাজে থাকি তা থেকে আমি পৃথক হয়ে গেছি।
ভ্রাতৃত্বের শর্ত অত্যাচারের মধ্যে নিহিত নেই,
ভাইয়ের অধিকারতো নিহিত রয়েছে সমবেদনা আর সহানুভূতির মাঝে।
কথা ছিল(চিন্তার জগতে) সবারসমশ্রেণিভুক্ত হবার,
মানবের ব্যথায় উপশমকারীআর সমব্যথীহবার।
যদি কেউ রুটির (খাদ্য) অভাবে মারা যায়,
তবে সে সমাজ পরিগণিত হয় তার হত্যাকারী হিসাবে।
তার (হত্যার) পুরোপুরি দায়ী হয় গোটা মানব সমাজ,
তার ব্যাপারে মানুষের দায়বদ্ধতা রয়েছে অপরিসীম।
ওহে! যদি তুমি ব্যথিতের হাত সহায়তার জন্য নাই বা ধর,
যদিও তুমি মানুষ, তবে তোমার অস্তিত্বের মাঝে ত্রুটি রয়েছে।
শাহরিয়ার বর্তমান নৈতিকতা-বিবর্জিত ও আধ্যাত্মিকতাশূন্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির ব্যাপারে অত্যধিক উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ, আত্মিক প্রেরণা ও নৈতিকতা অধুনাসভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। তিনি এই নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা-বিবর্জিত সভ্যতা ও সংস্কৃতির কারণে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা অপনোদনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন :‘নৈতিকতাবিহীন জ্ঞান ও সভ্যতা হলো অজ্ঞতারই নামান্তর। ’শাহরিয়ারবর্তমান সভ্যতাকে জাতির হত্যাযজ্ঞ আর লুণ্ঠন ছাড়া কিছুই মনে করেন না। কারণ, তাঁর যৌবনে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দু’টি ধ্বংসাত্মক বিশ^যুদ্ধ তাঁকে এ বিষয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কবির ভাষায়:
آدمی تا عرش اعلی پر زدی زین بال علم
گر تمدن متکی بر پایۀ اخلاق بود
সভ্যতা-সংস্কৃতি যদি নৈতিকতার ওপর ভিত্তিশীল হতো
তবে মানুষ জ্ঞানের ডানায় চড়ে আরশের সুউচ্চ আসনে সমাসীন হতো।
তিনি অন্যত্র বলেন:
کو معنویتی که جهانی رها کند
از دست معرفت کم و صنعت زیادها
কোথায় সে আধ্যাত্মিকতা ও আত্মিক প্রেরণা যা বিশ^কে মুক্তি দেয়
মারেফাতের সংকট আর শিল্পের আধিক্য থেকে।
শাহরিয়ার একজন প্রতিশ্রুতিশীল ও স্বদেশপ্রেমী কবি ছিলেন।তিনি দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদের চেতনা লালন করতেন। জনগণের মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারেও তাঁর কবিতা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর তুর্কি ও ফারসি ভাষায় রচিত কবিতায় মানবাধিকার ও নিজ দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল তা মূর্ত হয়ে ওঠেছে। তাঁর এ প্রতিবাদ ছিল রাষ্ট্রের সেই সব প্রভু ও কর্ণধারের বিরুদ্ধে যাদের কারণে দেশের সাধারণ জনগণ নানা দুঃখ-কষ্ট ও যাতনার মধ্যে দিনাতিপাত করছিল এবং যাদের কারণে সমাজের সর্বস্তরেঅপকর্ম ও বিপর্যয় বিস্তার লাভ করেছিল।
তিনি বলেন :
این عبادت ها به عادت می کنی
خدمت ار کردی، عبادت می کنی
……………………….
کیمیاخانه بگو مجلس شورا، که وکیل
مس و تس می رود آن جا و طلا می آید
حزب هم دایر و کابینۀ تشریفاتی
گه ্রعلیগ্ধ می رود و گاه ্রعلاগ্ধ می آید
من به حیرت که خدا یا شب و باران رحیل
کی خرِ ما به در از این گِل ولا می آید
এই সেই এবাদতসমূহ যা তুমি অভ্যাসে পরিণত করেছ
সেবার মাঝে লিপ্ত হও, তা-ও তোমার এবাদত হিসাবে গণ্য।
———–
পরশমণির৩ধারক তুমি মাজলিসে শুরাকে বল, হে ওয়াকিল
সেখানে তো তামা যায় আর তদস্থলেফিরে আসে স্বর্ণ।
গঠিত হয় দল আর কেবিনেট হয় আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ
কখনো সেখানে আলী (ব্যক্তির নাম) যায়,ফিরে আসে সে আলা হয়ে।৪
হে খোদা! আমি ভীত ও বিস্মিত,রাতে বৃষ্টি আসবে, কাফেলাও চলে যাবে
কিন্তু আমাদের অবস্থার পরিবর্তন কবে হবে…?
এছাড়া ইরানের গৌরব উজ্জ্বল প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস তাঁর মন-প্রাণকে সব সময়ই আন্দোলিত করত। দেশাত্মবোধের চেতনায় তিনি যেমনি নিজে উজ্জীবিত ছিলেন তেমনিপরবর্তী প্রজন্মকেও সে চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ইরানের বহু উচ্চমার্গীয় মনীষীর জগৎজোড়া কীর্তিগাথার কথা তাঁর কবিতায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন :
سال ‌ها مشعل‌ ما پیشرو دنیا بود
چشم‌ دنیا همه‌ روشن‌ به‌ چراغ‌ ما بود
درج‌ دارو همه‌ در حكم‌ حكیم‌ ্রرازی‌্র
برج‌ حكمت‌ همه‌ با্রبوعلی‌ سیناগ্ধبود
قرن‌ها مكتب‌ ্রقانون‌গ্ধ و ্রشفاগ্ধی‌ ্রسیناগ্ধ
با حكیمان‌ جهان‌ مشق‌ خطی‌ خوانا بود
عطر عرفان‌ همه‌ با نسخه‌ی‌ شعر্রعطارগ্ধ
اوج‌ فكرت‌ همه‌ با ্রمثنوی‌ ملاগ্ধ بود
داستان‌های‌ حماسی‌ به‌ سرود و به ‌سزا
خاص‌ ্রفردوسی‌গ্ধ و آن‌ همت‌ بی‌همتا بود
پند ্রسعدی‌গ্ধ كلمات‌ ملك‌العرش‌ علا
غزل‌ ্রخواجه‌গ্ধ سرود ملاء اعلا بود
বহুকাল ধরে আমাদের আলোকবর্তিকা বিশ^ নেতৃত্বে প্রজ¦লিত হয়েছিল,
আমাদের প্রদীপের আলোতেই জগৎ আলোকিত হয়েছিল একদিন।
হাকিম ‘রাযি’র আবিষ্কৃত ঔষধ চিকিৎসা পদ্ধতিতে সন্নিবেশিত হয়েছিল,
‘বুআলি সিনা’র সর্বপ্রজ্ঞা ছিলসুউচ্চ মিনারসম।
যুগ যুগ ধরে ‘সিনা’রদর্শনশাস্ত্রীয় শাফা ও চিকিৎসাশাস্ত্রীয়কানুন গ্রন্থ
জগতের মনীষিগণের চর্চার প্রতিপাদ্য বিষয়ে পরিগণিত হয়েছিল।
‘আত্তার’ অধ্যাত্মবাদের সুবাস ছড়িয়ে দিয়ে ছিলেন তাঁর কাব্যের মাধ্যমে,
চিন্তা জগতেরচরম পরাকাষ্ঠা প্রকাশ পেয়েছিল‘মোল্লা’র মাসনাভির মাধ্যমে।
বিশেষভাবে বীরত্বের কাহিনীগুলো যথাযথ গেয়েছিলেন ‘ফেরদৌসি’
যা ছিল তাঁর বিরলউদ্যম ও প্রচেষ্টারই ফসল।
‘সাদি’র উপদেশ বাণী ছিলসুউচ্চ আরশের কথা তুল্য
আর ‘খাজা’র গজল ছিলউচ্চমার্গীয় ও সর্বজনীন গীতিময় কবিতা।
কবি হোসাইন শাহরিয়ার বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো তেহরানের মেহের হাসপাতালে কাটান এবং ১৯৮৮ সালে ৮৩ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী তাঁকে তাবরিযের ‘মাকবারাতুশ শোয়ারা’ তথা কবিদের কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী আজিজে আব্দে খালেকি এবং শাহারযাদ ও মারইয়াম নামে দুই কন্যা ও হাদি নামে এক ছেলে সন্তান রেখে গেছেন।
ফারসি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে তাবরিয বিশ^বিদ্যালয়ের কলা ও সাহিত্য অনুষদের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এই শক্তিধর সাহিত্য-মহীরুহর স্মরণে প্রতি বছর ২৮ মেহের (সৌরবর্ষ) ‘কবিতা ও ফারসি সাহিত্য দিবস’ হিসাবে দিবসটি ইরানের সর্বত্র পালিত হয়।
পরিশেষষে বলা যায় যে, সমকালীন যুগে এসে হোসাইন শাহরিয়ার এমন কিছু স্বতন্ত্র ধারায় কবিতা রচনা করে সাহিত্যামোদীদের মনে এমনি জায়গা সৃষ্টি করেছেন যা যুগ যুগ ধরে দেদীপ্যমান থাকবে। তাঁর সাহিত্যকর্মগুলো অমর কীর্তি হিসাবে প্রজন্ম পরম্পরায় বেঁচে থাকুক এই প্রত্যাশাই রইল।

টীকা-টিপ্পনী
১ ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ইরানে শাহ ছিলেন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি বিধিবিধানের ঊর্ধ্বে থেকে দেশ ও জনগণের মালিক হতেন। এর বিপরীতে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে এ দেশের শাসনকার্য কতিপয় বিধিবিধানের আওতায় নিয়ে আসা এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্লামেন্ট গঠনের নিমিত্ত এক ধরনের বিপ্লব সংঘটিত হয় যার নাম দেয়া হয় ‘ইনকিলাবে মাশরুতিয়াত’। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এই ইনকিলাবে মাশরুতিয়াত তথা সাংবিধানিক বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে সর্ব প্রথম স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থার আন্দোলন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্য ছিলশাহের ক্ষমতা হ্রাস এবং গণভিত্তিক ও সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সাংবিধানিক বিপ্লব যখন সাফল্যমণ্ডিত হয় তখন ইরানে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বহুলাংশে রহিত হয়।
২ কারুন ইরানের দীর্ঘ ও প্রশস্ত নদীগুলোর অন্যতম। এটি ৯৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ নদীটি ইরানের অন্যতম নৌপথ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটির উৎপত্তিস্থল হলো বাখতিয়ারি জেলার র্যাদকুহ পর্বতমালাÑ যা শাতিল আরব নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পারস্য উপসাগরে এসে মিলিত হয়েছে। এ নদীর পানি সুপেয় ও কৃষি কাজের জন্য উপযোগী হিসাবে বিবেচিত।
৩ শাব্দিক অর্থে কিমিয়া খা’নে তথা পরশমণি বা রসায়নের ভা-ার; যে স্থানে কাল্পনিক প্রস্তর বা তা¤্রবিশেষের স্পর্শে লোহাদি স্বর্ণে রূপান্তরিত করা হয়। এখানে শব্দটি বিদ্রƒপাত্মক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। পার্লামেন্ট বা সংসদ (মজলিসে শুরা) মনে হয় যেনো পরশমণির ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। এর প্রতিনিধিগণ হলেন তামার ন্যায়, যখন তাঁরা সেখানে যান স্বর্ণের ন্যায় ফিরে আসেন অর্থাৎ মজলিসে শুরা বা পার্লামেন্টতাঁদেরকে স্বর্ণে পরিণত করে। এখানে যৌগিক শব্দটি (কিমিয়া খা’নে ) রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে অর্থাৎ তাঁরাপ্রতিনিধি হওয়ার মাধ্যমে দরিদ্র থেকে ধনীতে পরিণত হচ্ছে।
৪ এখানে কবি ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করে বলেছেন যে, ‘আলী’ নামের সাধারণ ব্যক্তি পার্লামেন্টে (মজলিসে শুরা) যেয়ে ‘আলা’ তথা মন্ত্রী রূপে ফিরে আসে।
তথ্যসূত্র
১. আহমাদ তামীমদারী ফার্সী সাহিত্যের ইতিহাস(অনূদিত গ্রন্থ), আলহুদা আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা, ইরান, ২০০৭ খ্রি.।
২. ইসমাইল হাকেমি, আদাবিয়্যা’তে মোয়া’সেরে ইরা’ন (ইরানের সমকালীন সাহিত্য), আসাতির প্রকাশনী, তেহরান, ইরান।
৩. পারভিন শাকিবা, শেরে ফারসি আয অ’গায তা ইমরুয (ফারসি কবিতার সূচনা থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত), হেইরান্দ প্রকাশনী, তেহরান, ইরান।
৪. মানজের ইমাম, আদাবিয়্যা’তে জাদিদে ইরা’ন (ইরানের আধুনিক সাহিত্য), মোজাফ্ফারপুর, ভারত।
৫. মুহাম্মদ জাফর ইয়াহাকি, চুন সাবুয়ে তেশনেয়ে আদাবিয়্যা’তে মোয়া’সের (সমকালীন ফারসি সাহিত্যের পর্যালোচনামূলক গ্রন্থ), জামী প্রকাশনী ইরান।
৬. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের বারকায়েই, সুখানভারা’ন না’মেয়ে মোয়া’সেরে ইরা’ন (ইরানের সমকালীন কথা শিল্পীগণ), খুররম প্রকাশনী, ইরান, ১৩৭৩ (সৌরবর্ষ)।
৭. সাফার দার অ’ইনে (সমকালীন সাহিত্য সমালোচনা ও পর্যালোচনা শীর্ষক প্রবন্ধ সংকলন; সংকলন ও সম্পাদনায়: আব্বাস আলী ওফায়ী), সোখান প্রকাশনী, তেহরান, ইরান, ১৩৮৭ সৌরবর্ষ
৮. নিউজ লেটার, ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মুখপত্র, ১৯৯৬ সনের ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে ও ১৯৯৯ সালের মার্চ-এপ্রিল সংখ্যা।
*লেখক: অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়

‘আশূরা- কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণ বার্ষিকী

সম্পাদকীয়
‘আশূরা- কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণ বার্ষিকী
দশই মহররম শোকাবহ ‘আশূরা; হিজরি ৬১ সালের এ দিনে সাইয়্যেদুশ্ শুহাদা বেহেশতে যুবকদের নেতা হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালায় তাঁর স্বজন ও সহচরগণ সহ ইয়াযীদী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। এ ঘটনা মানব জাতির ইতিহাসের করুণতম ঘটনা- প্রেক্ষাপট সহ যে ঘটনা ইতিহাসের বিতর্কাতীত বিষয়াবলির অন্যতম।
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পরে হযরত ইমাম হাসান (আ.) খেলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্কে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সম্ভাব্য রোমান হামলা থেকে রক্ষার লক্ষ্যে তিনি তাঁর বৈধ খেলাফতকে মুআবিয়ার হাতে ছেড়ে দেন। মুআবিয়া হযরত ইমাম হাসান (আ.)-এর সাথে কৃত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে মৃত্যুকালে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হাতে খেলাফতের দায়িত্ব হস্তান্তরের পরিবর্তে স্বীয় চরিত্রহীন পাপাচারী পুত্র ইয়াযীদকে খেলাফতে অধিষ্ঠিত করে গেলে ইয়াযীদ হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কাছ থেকে শক্তিপ্রয়োগে বাই‘আত্ আদায়ের জন্য মদীনার প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। কিন্তু হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ন্যায় ব্যক্তি ইসলামের সমস্ত সীমারেখা অমান্যকারী ইয়াযীদের আনুগত্য করলে যে কারো জন্য তা ইসলামি মূল্যবোধ বিসর্জনের সপক্ষে দলিল হিসেবে গণ্য হতো। এ কারণে তিনি ইয়াযীদের অনুকূলে বাই‘আত্ করা থেকে বিরত থাকেন এবং রক্তপাত এড়াবার লক্ষ্যে রাতের বেলা মদীনা ত্যাগ করে মক্কায় চলে যান।
মক্কায় যাবার পথে এবং সেখানে উপনীত হবার পরেও তিনি জনগণকে তৎকালীন হুকূমাতের অবস্থা সম্বন্ধে সচেতন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইয়াযীদ সেখানে তাঁকে হজ্বের ভীড়ে হত্যার জন্য গুপ্তঘাতক পাঠালে হযরত ইমাম (আ.) পবিত্র স্থানে রক্তপাত এড়াবার লক্ষ্যে মক্কা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং কূফার জনগণের দাওআতে সাড়া দিয়ে সেখানে পৌঁছার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে কারবালায় উপনীত হন। সেখানে ইয়াযীদী বাহিনী দ্বারা সপরিবারে অবরুদ্ধ অবস্থায় ও শত্রুশিবিরেরর দলনেতাদের এবং সবশেষে সবসাধারণের উদ্দেশে চেতনা জাগ্রতকারী ভাষণ ও নসিহতের মাধ্যমে রক্তপাত এড়াবার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও ইয়াযীদের নির্দেশে হযরত ইমামের (আ.) ওপরে ইয়াযীদের অনুকূলে বাই‘আত্ করার জন্য কঠোরভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু হযরত ইমাম (আ.) কোনো অবস্থায়ই ফাসেক্ব ইয়াযীদের অনুকূলে বাই‘আত্ করাকে জায়েয গণ্য করেন নি বিধায় এ চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। এমতাবস্থায় ইয়াযীদী বাহিনী তাঁকে তাঁর সকল পুরুষ স্বজন ও সহচর সহ, এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশুকেও নির্মমভাবে হত্যা করে; কেবল আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ ইচ্ছায় হযরত ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ঐ সময় ভীষণ অসুস্থ থাকায় এ হত্যাকা- থেকে রেহাই পান।
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আত্মত্যাগের এ ঘটনা মুসলমানদের জন্য বাতিলকে সহ্য করার সীমারেখাকে সুস্পষ্ট করে দেয়। এভাবে কারবালার ঘটনা যুগ যুগান্তর ধরে প্রকৃত ইসলামের অনুসারীদের জন্য প্রেরণার উৎসে পরিণত হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, কারবালার ঘটনা সম্পর্কে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা মতৈক্যের বরখেলাফে ইদানিং কিছু লোক একদিকে কারবালার ঘটনার গুরুত্ব হ্রাস করার লক্ষ্যে অতীতের অনেক ইতিবাচক ঘটনা আশূরার দিনে ঘটেছিল বলে দাবি করছে-যার সপক্ষে কোনো অকাট্য দলিল নেই-এবং এর ভিত্তিতে আশূরার এ শোকের দিনকে, এমনকি আনন্দের দিন বলে অভিহিত করার মতো জঘন্য মানসিকতার প্রদর্শন করতেও দ্বিধা করছে না। অন্যদিকে তারা কারবালার ঘটনাকে ইসলামের সাথে সম্পর্কহীন রাজনৈতিক সংঘাত ও হযরত ইমাম হুসাইনকে বৈধ (?!) খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী ক্ষমতালোভী হিসেবে চিত্রিত করার এবং স্বৈরাচারী ও চরিত্রহীন ইয়াযীদকে নির্দোষ প্রমাণের ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা দাবি করছে যে, ইয়াযীদের অনুমতি ছাড়াই কারবালার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। আমরা এ ব্যাপারে কোনো দীর্ঘ আলোচনা ও মন্তব্য না করে কেবল মুক্ত বিবেক মানুষদের কাছে প্রশ্ন করব : যদি তা-ই হয়ে থাকে তো যারা এ জন্য দায়ী ইয়াযীদ তাদেরকে শাস্তি দেয় নি কেন, বরং কেন তাদেরকে পুরষ্কৃত করেছিল এবং হযরত ইমামের পরিবারের সদস্যদেরকে কারারুদ্ধ করে রেখেছিল?
এটা আজ অনস্বীকার্য যে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের মধ্য দিয়ে ইসলামের বিজয় ও ইসলামি ঐক্য অভিমুখে মুসলিম উম্মাহ্র নবযাত্রা শুরু হয়েছে। তাই ইসলামকে ছিন্নভিন্ন ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ইসলামের দুশমনদের পক্ষ থেকে বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বহুমুখী হামলা শুরু হয়েছে এবং ‘আশূরা সহ ইসলামের বিতর্কাতীত বিষয়গুলোকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা এ ষড়যন্ত্রমূলক হামলার প্রধান কর্মসূচি। এমতাবস্থায় সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামের দুশমনদের এ ষড়যন্ত্র ও হামলাকে অকাট্য জ্ঞানের অস্ত্র দ্বারা শক্তভাবে মোকাবিলা করা অপরিহার্য।
আমরা ‘আশূরা উপলক্ষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি, বিশেষ করে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি এবং মহান আল্লাহ্র কাছে দো‘আ করছি যাতে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মহান আত্মত্যাগ আমাদের সকলের জন্য বাতিলের মোকাবিলায় সত্যের ওপরে আমৃত্যু অটল ও আপোসহীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকার প্রেরণা বয়ে নিয়ে আসে।

বই পরিচিতি

মাফাতিহুল্ হায়াত্
(ইহ ও পরকালীন জীবনে সাফল্যের চাবিকাঠি)
হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী অমোলী
অনুবাদ : নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক : সাঈদ বারী
সূচীপত্র, ৩৮/২ ক বাংলাবাজার, ঢাকা
প্রচ্ছদ : আরিফুর রহমান
প্রকাশকাল : আগস্ট ২০১৮
মূল্য : ১০০০ টাকা

বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি ইরানের স্বনামখ্যাত ও শীর্ষস্থানীয় মুজতাহিদ আলেম হযরত আয়াতুল্লাহ্ আব্দুল্লাহ্ জাওয়াদী অমোলী কর্তৃক ফারসি ভাষায় প্রণীত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মাফাতিহুল্ হায়াত্’ এর অনুবাদ।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ জাওয়াদী অমোলী ইরানের সমকালীন মফাস্সিরীনে কোরআন, দার্শনিক ও ইসলামি চিন্তাবিদগণের অন্যতম- যিনি কোরআন মজীদের বিষয়ভিত্তিক তাফসীরসহ বহু জ্ঞানগর্ভ ইসলামি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। তবে তাঁর একটি বিশেষ পরিচয় হচ্ছে এই যে, তিনি একজন শীর্ষস্থানীয় ‘আরেফ্ বা আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বও; ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের টেলিভিশন থেকে সরাসরি প্রচারিত তাঁর র্দাসে কোরআন যে মিলিয়ন মিলিয়ন সংখ্যক দর্শকের হৃদয়কে আপ্লুত করেছে তাঁরা তাঁর আধ্যাত্মিকতার প্রভা প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করেছেন। তাঁর এই বহুমুখী দ্বীনী বৈশিষ্ট্যের কারণেই ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নায়ক ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তৎকালীন রাহ্বার হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) যখন অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন ফার্স্ট সেক্রেটারি মিখাইল গর্বাচেভকে ইসলামের দাও‘আত্ দিয়ে তাঁর নিকট পত্র প্রেরণ করেন তখন সে পত্র বহনকারী তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে হযরত আয়াতুল্লাহ্ জাওয়াদী অমোলীকে মনোনীত করেছিলেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ জাওয়াদী অমোলী প্রণীত বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ মাফাতীহুল্ হায়াত্ এমন একটি গ্রন্থ যাতে মানব জীবনের ইহকালীন ও পরকালীন সর্বাত্মক কল্যাণের লক্ষ্যে পবিত্র কোরআনের নির্দেশিকা ও মহানবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের উক্তির আলোকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে জ্ঞানার্জন থেকে শুরু করে নাফ্সের হেফাযত, স্বাস্থ্যরক্ষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিল্পকর্ম, বিনোদন, সামাজিক সম্পর্ক ও দায়িত্ব-কর্তব্য, জৈব পরিবেশ, আবহাওয়া, ইসলামি হুকূমাত, রাস্তাঘাট, শহর ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিপুল সংখ্যক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এমনকি এতে বস্তুবিজ্ঞানের বহু বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। হযরত রাসূলে আকরাম (ছ¡াঃ) ও তাঁর আহ্লে বাইত্ (‘আঃ) এখন থেকে চৌদ্দ শতাব্দীকাল পূর্ব হতে শুরু করে এগারো শতাব্দী কালেরও বেশী পূর্ব পর্যন্ত সময়ে এ সব বিষয়ে যা কিছু বলে গিয়েছেন আজ সুদীর্ঘ কাল পরেও তার প্রাসঙ্গিকতা সামান্য পরিমাণেও হ্রাস পায় নি – যার কারণ এই যে, এ সব দিকনির্দেশনা ঐশী ওয়াহী ও ইল্হাম থেকে উৎসারিত। অন্যদিকে পাঠক-পাঠিকাগণ এই ভেবে বিস্মিত হতে বাধ্য যে, কতোখনি পা-িত্যের ও অধ্যবসায়ের অধিকারী হলে একজন মনীষীর পক্ষে এতো সব বিচিত্র জ্ঞানের একত্র সমাহার ঘটানো সম্ভবপর হতে পারে।
পরিশেষে বলতে চাই, স্থান-কাল-পাত্রভেদে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যায়ের সার্বিক বিষয়াদি সম্বলিত গ্রন্থটিকে নিত্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা তথা একটি সার্বিক কর্মপঞ্জিকা হিসেবে গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি ও সাফল্য পেতে পারি। প্রতিটি পরিবারের এ গ্রন্থটি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, নিত্য পাঠ ও আমলের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে সে সাফল্য নিশ্চিত হবে।
গ্রন্থটি শাহবাগের পাঠকসমাবেশ সহ সারা দেশের অভিজাত বই বিক্রয় কেন্দ্রে ও অনলাইন পরিবেশকদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে।

Development of Muslim Art and Architecture in Bangladesh

রচনা : মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ও মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার
সম্পাদনা : ড সৈয়দ মাহমুদুল হাসান
পর্যালোচনা : অধ্যাপক ড কে এম মোহসিন (অব), ইতিহাস বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
: অধ্যাপক ড. মোশারফ হোসেন ভুইয়া, ইতিহাস বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশক : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি)
বাড়ি নং- ৪, রোড- ২, সেক্টর- ০৯, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা
প্রকাশকাল : জানুয়ারি ২০১৪
মূল্য : ৩৫০ টাকা

বিশিষ্ট ইতিহাস-গবেষক মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ও মোঃ নুরুল ইসলম মজুমদার-এর যৌথ প্রচেষ্টায় রচিত আলোচ্য গ্রন্থটি মুসলিম শিল্পকলা, চিত্রকলা, লিপিকলা (ক্যালিগ্রাফি), ঐতিহাসিক ও পুরাকীর্তি বা প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং স্থাপত্যশিল্পের ওপর ইংরেজিতে লেখা একটি সমৃদ্ধ তাত্ত্বিক গবেষণা গ্রন্থ। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে। রয়েছে ধর্মবিশ্বাস ও জাতীয় বোধ। সেইসব বোধ-বিশ্বাসের ছাপ ফুটে ওঠে একদিকে তাদের সাহিত্যে, সংগীতে, তেমনি ফুটে ওঠে তাদের চিত্রকলায় ও নানারকম শিল্পের মাধ্যমে। ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি বা প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন ও স্থাপত্য শিল্পে সেই সব বোধ-বিশ্বাসের ছাপ বিরাজমান থাকে। এসব নিদর্শন হচ্ছে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের সম্পদ। পৃথিবীর মানবসভ্যতার অমূল্য সম্পদÑ যা অতীত ইতিহাসের তত্ত্ব-উপাত্ত বহন করে চলে। সেটি হতে পারে পুরোনো বাড়ি-ঘর, প্রাসাদ, সৌধ, নানা রকম বস্তুসামগ্রী, শিল্পনিদর্শন, মসজিদ, মন্দির, মাযার, সমাধি, গির্জা, প্যাগোডা, মনুমেন্ট, এপিটাফ, মূর্তি, ভাস্কর্য, মুদ্রা, তৈজসপত্র, শিলালিপি, খোদাইকার্য, ক্যালিগ্রাফি ইত্যাদি নানা নিদর্শন সংরক্ষণ করা হচ্ছে সভ্য জাতির পরিচায়ক। কোন সভ্য জাতি এসব নিদর্শন তার পূর্ব ধর্মবিশ্বাসের হলেও সেগুলো ধ্বংস করে না। কারণ, এসব নিদর্শন ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে রক্ষা করে। কোন ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের দিক যদি আমরা বিবেচনায় নাও আনি তবু নিরেট ইতিহাস-গবেষণার জন্য হলেও এসব নিদর্শন মহামূল্যবান। কোন জাতি, দল, গোষ্ঠী যদি খোঁড়া যুক্তি দিয়ে, নিজস্ব সীমাবদ্ধ চিন্তা-চেতনায় আবদ্ধ থেকে ধর্মের নিজস্ব ব্যাখ্যা তৈরি করে অথবা বাদ-মতবাদের ও দলান্ধ শত্রুতায় আচ্ছন্ন হয়ে প্রতিপক্ষের বোধ-বিশ্বাসের এসব নিদর্শন ধুলায় মিশিয়ে দেয় তবে তারা গ-মূর্খ, অসভ্য ছাড়া আর কি?
বইটি আলোচনা করতে গিয়ে উপরিউক্ত কথাগুলো অনায়াসে বলতে হলো। কারণ, তা বলা জরুরি। আলোচ্য গ্রন্থটিতে মোঘল, পাঠান ও সুলতানি আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের মুসলিম শিল্পকলা, চিত্রকলা, লিপিকলা, স্থাপত্য শিল্পের বিকাশের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে এসব শিল্পের বৈশিষ্টসমূহ। বাংলাদেশে মোঘল আমলের মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শনসমূহে রয়েছে পারস্য বা ইরানি স্থাপত্যরীতি ও আরব স্থাপত্য রীতির মিশ্রণ। অথবা কোথাও সরাসরি পারস্য স্থাপত্যরীতিই প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ, এদেশে ইসলাম এসেছে আরব থেকে ইরানের ভেতর দিয়ে সূফি, দরবেশ, অলি-আওলিয়াদের মাধ্যমে।
বইটিতে প্রাসঙ্গিক ও আনুষঙ্গিক নানা বিষয়ের সংযোজন ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশের মুসলিম শিল্পকলা ও স্থাপত্যের প্রসঙ্গে বিভিন্ন দেশের মুসলিম স্থাপনাগুলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটি ইতিহাসপ্রেমিক পাঠক, গবেষক, পর্যটক, প্রতœবিদ, শিল্পী সবার কাছেই সমাদৃত হয়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্বের ছাত্রছাত্রীদের রেফারেন্স বই হিসেবেও এই বই সমাদৃত হবে বলে আশা রাখি। বইটিকে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রেরণ করা হবে বলেও বইটির লেখক সূত্রে জানা গেছে।

□ আমিন আল আসাদ

Development of Muslim Art and Architecture in Bangladesh

বই পরিচিতি

Development of Muslim Art and Architecture in Bangladesh

রচনা : মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ও মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার
সম্পাদনা : ড সৈয়দ মাহমুদুল হাসান
পর্যালোচনা : অধ্যাপক ড কে এম মোহসিন (অব), ইতিহাস বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
: অধ্যাপক ড. মোশারফ হোসেন ভুইয়া, ইতিহাস বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশক : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি)
বাড়ি নং- ৪, রোড- ২, সেক্টর- ০৯, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা
প্রকাশকাল : জানুয়ারি ২০১৪
মূল্য : ৩৫০ টাকা

বিশিষ্ট ইতিহাস-গবেষক মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ও মোঃ নুরুল ইসলম মজুমদার-এর যৌথ প্রচেষ্টায় রচিত আলোচ্য গ্রন্থটি মুসলিম শিল্পকলা, চিত্রকলা, লিপিকলা (ক্যালিগ্রাফি), ঐতিহাসিক ও পুরাকীর্তি বা প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং স্থাপত্যশিল্পের ওপর ইংরেজিতে লেখা একটি সমৃদ্ধ তাত্ত্বিক গবেষণা গ্রন্থ। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে। রয়েছে ধর্মবিশ্বাস ও জাতীয় বোধ। সেইসব বোধ-বিশ্বাসের ছাপ ফুটে ওঠে একদিকে তাদের সাহিত্যে, সংগীতে, তেমনি ফুটে ওঠে তাদের চিত্রকলায় ও নানারকম শিল্পের মাধ্যমে। ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি বা প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন ও স্থাপত্য শিল্পে সেই সব বোধ-বিশ্বাসের ছাপ বিরাজমান থাকে। এসব নিদর্শন হচ্ছে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের সম্পদ। পৃথিবীর মানবসভ্যতার অমূল্য সম্পদÑ যা অতীত ইতিহাসের তত্ত্ব-উপাত্ত বহন করে চলে। সেটি হতে পারে পুরোনো বাড়ি-ঘর, প্রাসাদ, সৌধ, নানা রকম বস্তুসামগ্রী, শিল্পনিদর্শন, মসজিদ, মন্দির, মাযার, সমাধি, গির্জা, প্যাগোডা, মনুমেন্ট, এপিটাফ, মূর্তি, ভাস্কর্য, মুদ্রা, তৈজসপত্র, শিলালিপি, খোদাইকার্য, ক্যালিগ্রাফি ইত্যাদি নানা নিদর্শন সংরক্ষণ করা হচ্ছে সভ্য জাতির পরিচায়ক। কোন সভ্য জাতি এসব নিদর্শন তার পূর্ব ধর্মবিশ্বাসের হলেও সেগুলো ধ্বংস করে না। কারণ, এসব নিদর্শন ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে রক্ষা করে। কোন ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের দিক যদি আমরা বিবেচনায় নাও আনি তবু নিরেট ইতিহাস-গবেষণার জন্য হলেও এসব নিদর্শন মহামূল্যবান। কোন জাতি, দল, গোষ্ঠী যদি খোঁড়া যুক্তি দিয়ে, নিজস্ব সীমাবদ্ধ চিন্তা-চেতনায় আবদ্ধ থেকে ধর্মের নিজস্ব ব্যাখ্যা তৈরি করে অথবা বাদ-মতবাদের ও দলান্ধ শত্রুতায় আচ্ছন্ন হয়ে প্রতিপক্ষের বোধ-বিশ্বাসের এসব নিদর্শন ধুলায় মিশিয়ে দেয় তবে তারা গ-মূর্খ, অসভ্য ছাড়া আর কি?
বইটি আলোচনা করতে গিয়ে উপরিউক্ত কথাগুলো অনায়াসে বলতে হলো। কারণ, তা বলা জরুরি। আলোচ্য গ্রন্থটিতে মোঘল, পাঠান ও সুলতানি আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের মুসলিম শিল্পকলা, চিত্রকলা, লিপিকলা, স্থাপত্য শিল্পের বিকাশের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে এসব শিল্পের বৈশিষ্টসমূহ। বাংলাদেশে মোঘল আমলের মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শনসমূহে রয়েছে পারস্য বা ইরানি স্থাপত্যরীতি ও আরব স্থাপত্য রীতির মিশ্রণ। অথবা কোথাও সরাসরি পারস্য স্থাপত্যরীতিই প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ, এদেশে ইসলাম এসেছে আরব থেকে ইরানের ভেতর দিয়ে সূফি, দরবেশ, অলি-আওলিয়াদের মাধ্যমে।
বইটিতে প্রাসঙ্গিক ও আনুষঙ্গিক নানা বিষয়ের সংযোজন ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশের মুসলিম শিল্পকলা ও স্থাপত্যের প্রসঙ্গে বিভিন্ন দেশের মুসলিম স্থাপনাগুলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটি ইতিহাসপ্রেমিক পাঠক, গবেষক, পর্যটক, প্রতœবিদ, শিল্পী সবার কাছেই সমাদৃত হয়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্বের ছাত্রছাত্রীদের রেফারেন্স বই হিসেবেও এই বই সমাদৃত হবে বলে আশা রাখি। বইটিকে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রেরণ করা হবে বলেও বইটির লেখক সূত্রে জানা গেছে।

□ আমিন আল ্আসাদ

কৃষিখাতে ইরানের সাফল্য

সাইদুল ইসলাম –

সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছে মূলত কৃষি তথা চাষাবাদ ও পশুপালনের মাধ্যমে। সেজন্য কৃষিই হলো মানব সভ্যতার প্রাচীনতম পেশা। সভ্যতার বিবর্তনে শিল্পসহ অন্যান্য খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও কৃষির গুরুত্ব আজও কমে নি। বর্তমান সময়ে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রতিকূল জলবায়ুর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কৃষির ওপর আলাদা করে গুরুত্বারোপের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিশে^র মানুষের আগামী দিনের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিখাতের উন্নয়ের বিকল্প নেই। তাছাড়া একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে এই কৃষিখাত। এই খাতে যে দেশ যত বেশি শক্তিশালী, স্বনির্ভরতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেই দেশ ততটাই এগিয়ে। তাই একটি সম্ভাবনাময় উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কৃষিক্ষেত্রে পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির ইতিবাচক গতিধারায়।
এক সময় তেল রফতানি ছিল ইরানের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু সেই তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে দেশটি। ইসলামি বিপ্লবের পর বিগত ৩৯ বছরে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোও পাল্টে যাচ্ছে। ক্রমশ শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতের বিকাশ ঘটছে। বিশেষ করে কৃষিখাতে দেশটির উন্নয়নের চিত্র দেখলে যে কেউ রীতিমত বিস্মিত হবেন। ২০১৭ সালে ইরানি অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর অন্যতম কৃষি প্রবৃদ্ধি ছিল উল্লেখ করার মতো। গেল বছর বিশ্বে কৃষি পণ্যের বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি। এছাড়া ইরানের তুলনামূলক রফতানি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে দেশটির কৃষি খাত। ইরানের বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা (টিপিও) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
টিপিও’র তথ্যমতে, ইরানের কৃষি খাতের যেসব পণ্য রফতানি সম্ভাবনার শীর্ষে রয়েছে তার মধ্যে কৃষি ও উদ্যানজাত পণ্য, হাঁস-মুরগি, পশুপালন ও মাৎস্য পণ্য অন্যতম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও’র তথ্য মতে, ভিন্ন ভিন্ন ৬৬টি পণ্যের সমন্বয়ে বিশ্ব কৃষি পণ্যের মৌলিক কাঠামো গঠিত। এর মধ্যে বিশ্বে সর্বোচ্চ ১৫ ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় সেরা দশে রয়েছে ইরান।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বা ফাও’র তথ্য মতে, ইরান হচ্ছে বিশ্বের প্রধান পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি যে দেশটি কমলা, মাল্টা ও লেবুজাতীয় ফল উৎপাদনে সেরা অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া শশা, ক্ষীরা, খেজুর, বেগুন, ডুমুর, পেস্তা, নাশপাতি, আখরোট ও তরমুজ উৎপাদনে বিশ্বের সেরা পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে ইরান। নানা জাতের আপেল, আঙুর, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ছোলা, গম, নানা ধরনের শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের কৃষিপণ্য এখানে উৎপাদিত হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ইরান দুগ্ধজাত সব ধরনের পণ্য, ডিম ও মুরগি বিদেশে রফতানি করে। ইরানের কৃষি গবেষণা সংস্থার প্রধান এস্কান্দারযান্দ জানিয়েছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কৃষি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এই পাঁচটি খাত হলো : গম, বার্লি, তুলা, ভুট্টা ও ধান উৎপাদন। গত বছর ইরান ৪ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন টন কৃষিপণ্য রফতানি করেছে। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটি কৃষির যেসব দিকে উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে তার কিছু দিক নিচে তুলে ধরা হলো :
ইরানের লাল স্বর্ণ খ্যাত ‘জাফরান’
পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান কৃষিপণ্যের একটি জাফরান। যাকে ইরানের ‘লাল স্বর্ণ’ বলা হয়ে থাকে। কারণ, বিশ্বের মোট উৎপাদিত জাফরানের প্রায় ৯০ শতাংশই উৎপাদিত হয় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে। পৃথিবীব্যাপী ইরানি জাফরানের একক আধিপত্যের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য বা বিশ্ব বাজারে এখনও দুটি নাম পরস্পরের সমার্থক হয়ে আছে- ‘জাফরান’ এবং ‘ইরান’। তবে এই জাফরান চাষ সহজ কাজ নয়। আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য, উর্বর মাটি এবং কষ্টসহিষ্ণু পরিশ্রমী মানুষের কাজ জাফরান চাষ। আর ইরানের পরিশ্রমী কৃষকদের কল্যাণে এ দেশের মাটি হয়ে উঠেছে আল্লাহর নিয়ামতে পরিপূর্ণ। বিচিত্র উদ্ভিদের জন্য অনুকূল হিসেবে ইরানের মাটি বিশ্বখ্যাত। খ্রিস্টপূর্ব কাল থেকেই তাই ইরান ভূখ-ে চাষ হয়ে আসছে বিচিত্র উদ্ভিদের। বলা হয়ে থাকে যে, ইরানিরাই সর্বপ্রথম জাতি যারা এইসব মূল্যবান উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে এবং দীর্ঘকাল থেকে এর চাষ করে এসেছে ।
ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কেরমানশাহ এবং হামেদানের আলভান্দ পাহাড়ের পাদদেশে এইসব উদ্ভিদের চাষ করা হতো। এই এলাকাটিকেই জাফরান নামক মূল্যবান উদ্ভিদ চাষের মূল কেন্দ্র হিসেবে মনে করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৯ থেকে ৭২৮ সালের মধ্যে মাদদের শাসনামলে এখানে এই উদ্ভিদের চাষ হতো। সময়ের পরিক্রমায় জাফরান চাষাবাদের কাজ এখন ইরানের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে, এমনকি দেশটির মূল্যবান এই কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও রফতানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ফারসি বছরের প্রথম ৫ মাসে ইরানে জাফরান রফতানি ৩৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ফারসি বছরের একই সময়ে ইরানে জাফরান রফতানির পরিমাণ ছিল ৬৯ টন যার আর্থিক মূল্য ছিল ৯২ মিলিয়ন ডলার। আর চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে জাফরান রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্পেন, আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, ব্রিটেন, হংকং, পাকিস্তান,অস্ট্রেলিয়া, ইরাক, ওমান, বাহরাইন, অস্ট্রিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, জাপান, নিউজিল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, কাতার ও কুয়েতসহ বিশ্বের ৫০টি দেশে ইরান জাফরান রফতানি করে। আর ইরানে উৎপাদিত জাফরানের ৯৫ ভাগই চাষ হয় দেশটির দুই প্রদেশ- দক্ষিণ খোরাসান ও খোরাসান রাজাভিতে। জাফরানসহ বছরে ৫০ হাজার টন মসলা উৎপাদন করে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার ক্যাভিয়ার বা ‘কৃষ্ণ সোনা’
ক্যাভিয়ার উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার হওয়ায় অনেকে ক্যাভিয়ারকে ‘কৃষ্ণ সোনা’ হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। এটি এক ধরনের সামুদ্রিক মাছের ডিম। যার নাম স্টার্জন। ইরানে ওই মাছটির নামও ক্যাভিয়ার। এটি অ্যানার্জিপূর্ণ একটি খাবার। যেমন সুস্বাদু তেমনি সুঘ্রাণময়। কাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগর, আরাল ও আজভ সাগরসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিক্ষিপ্ত কিছু এলাকায় ক্যাভিয়ার পাওয়া যায়। তবে স্টার্জন বা ক্যাভিয়ার মাছের নিরাপদ স্থান হলো ইরানের কাস্পিয়ান সাগর।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিশ্বের শতকরা ৯৩ ভাগ ক্যাভিয়ার রয়েছে এই কাস্পিয়ান সাগরে এবং বলা হয়ে থাকে উপযুক্ত পরিবেশের কারণে বিশ্বের শতকরা নব্বই ভাগ ক্যাভিয়ার এই কাস্পিয়ানেই শিকার করা হয়। ইরান বছরে প্রায় ২০ টন ক্যাভিয়ার উৎপাদন করে থাকে এবং দেশটিতে এর উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ইরান আগামীতে বছরে একশ’ টন ক্যাভিয়ার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। প্রতি কেজি ক্যাভিয়ারের দাম ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার। ইউরোপের দেশগুলো ছাড়াও চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত, আমিরাত, আযারবাইজান, আর্মেনিয়া ও লেবাননে ইরান ক্যাভিয়ার রফতানি করে থাকে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বছরে ১১ লাখ টন জলজ প্রজাতির প্রাণী তথা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে সামনে রেখে ওই বছর মৎস্য খাতে বড় বড় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এসব পদক্ষেপের ফলে বিরল প্রজাতির মাছ চাষে বিশেষ করে দামী মাছ উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে উঠে এসেছে দেশটি। মৎস্য সংস্থার প্রধান হাসান সালেহি জানিয়েছেন, মোট উৎপাদিত এসব মাছের মধ্যে ৫৪ শতাংশ সমুদ্র ও খোলা পানিতে চাষ হয়েছে। অন্যদিকে বাকি ৪৬ শতাংশ মাছ উৎপাদিত হয়েছে মৎস্য খামারে।
উটপাখির মাংস উৎপাদনে ইরান বিশ্বে দ্বিতীয়
প্রতি বছর অন্তত ৬০ হাজার উটপাখি পালন করা হয়ে থাকে ইরানে। এসব পাখি থেকে মাংস উৎপাদন হয় ৩০ লাখ টনেরও বেশি। বিশ্বে উটপাখির মাংস উৎপাদনে ইরান দ্বিতীয়। আর এদিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইরানের অস্ট্রিচ প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বেহরুজ রেজায়ি বলেন, শুধু মাংস নয়, এই মূল্যবান পাখির চামড়া, পালক, তেল, ডিম ও ডিমের খোসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক। এবং এসব পণ্য আর্থিকভাবে বেশ মূল্যবান। তিনি আরো জানান, ইরানে উটপাখি শিল্প পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১৪ বছর আগে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে অভিজ্ঞতা না থাকায় খামারিদের লোকসানের মুখে পড়তে হলেও এখন তারা তা সামাল দিয়ে এটিকে একটি লাভজনক খাতে পরিণত করেছেন।
ডিম উৎপাদনে বিশ্বে ১২তম ইরান
বৈশ্বিকভাবে ডিম উৎপাদনের র‌্যাংঙ্কিংয়ে ১২তম অবস্থানে রয়েছে ইরান। দেশটির কৃষি উপমন্ত্রী মোরতেজা রেজায়ি এই তথ্য জানিয়ে ডিম রফতানি প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। রেজায়ির তথ্যমতে, চলতি ইরানি বছরের শেষ নাগাদ ৫ লাখ টন ডিম উৎপাদন হবে। ৮ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে মাথাপিছু ডিম উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬.২৫ কেজি।
‘প্রত্যেক ইরানি বছরে ১৮৫ থেকে ১৯৮টি ডিম ভোগ করে থাকে। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ইরানে মাথাপিছু ডিম ভোগের পরিমাণটা বেশি। তারপরও অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ডিম রফতানির জন্য উদ্বৃত্ত থাকছে’’, যোগ করেন রেজায়ি।
দেশীয় বাজারে থাকা উদ্বৃত্ত ডিম রফতানি জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই কর্মকর্তা। এজন্য তিনি ডিমের সর্বোত্তম মান নিশ্চিত ও মুরগির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের মতো পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেন। আন্তর্জাতিক বাজারের বড় অংশ দখল করতে হলে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেজায়ি আরও জানান, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে শীর্ষ ডিম সরবরাহকারী দেশগুলোর অন্যতম। অনেক দেশ ইরানি ডিম পছন্দ করেন বলে জানান তিনি।
মধু উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম ইরান
ইরানের উপ কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর দেশে বছরে ৮০ হাজার টনের অধিক মধু উৎপাদন হয় এবং উৎপাদিত মধুর মাত্র দুই শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করা হয়। জৈব মৌমাছি পালন ও মৌচাষের ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগের ওপর অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান। সম্মেলনে মৌচাষের মূল উদ্দেশ্য, বেশি বেশি মধু উৎপাদন এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পরাগমিলন সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ইরানের উপ কৃষিমন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে ৫৭ লাখ মৌচাক রয়েছে। এ থেকে ৮০ হাজার টন মধু উৎপাদিত হয়। মৌচাকের সংখ্যায় বিশ্বে ইরানের অবস্থান চতুর্থ এবং মধু উৎপাদনে অষ্টম।
তিনি আরও জানান, ইরানের মোট উৎপাদিত মধুর দুই শতাংশ অর্থাৎ ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টন মধু বিদেশে রফতানি করা হয়। তুরস্ক, ইরাক, আযারবাইজান রিপাবলিক, চীন, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এ মধু রফতানি করা হয়।
গম রফতানি
ইরানের পণ্য বিনিময় সংস্থা ইরান মারকেন্টাইল এক্সচেঞ্জ (আইএমই)-এর মাধ্যমে গত ফারসি অর্থবছরে ১২ লাখ টনের অধিক গম বাণিজ্য হয়েছে। এর আগের বছর যে পরিমাণের গম বাণিজ্য হয়েছে গত বছর তার চেয়ে বেশি হয়েছে ১৮৬ শতাংশ। আইএমই এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হামেদ সোলতানি নেজাদ এই তথ্য জানান।
ইরানি এই কর্মকর্তা বলেন, গত বছর আইএমই এর মাধ্যমে দ্বিগুণের অধিক অর্থাৎ ৬৫ হাজার ৭৫০ টন গম রফতানি করেছে ইরান। ফিনানসিয়াল ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, গত ইরানি বছরে দেশীয়ভাবে রেকর্ড পরিমাণ বেশি ১ কোটি ৪০ লাখ টন গম উৎপাদন হয়। ইরানের গম রফতানির প্রধান গন্তব্য হলো আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরাক, ওমান, কুয়েত এবং নেদারল্যান্ডস।
বিশ্বের বৃহত্তম খেজুর রফতানিকারক দেশ ইরান
খেজুর রফতানি থেকে ইরানের বছরে আয় হয় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফিন্যান্সিয়াল ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, খেজুর উৎপাদনে বিশ্বে ইরানের অবস্থান দ্বিতীয় এবং বিশ্বের বৃহত্তম খেজুর রফতানিকারক দেশ ইরান। গত ইরানি বছরে দেশে খেজুর উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ লাখ টন। উৎপাদনের ২০ ভাগ খেজুর ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দূর প্রাচ্য ও রাশিয়ায় রফতানি করা হয়।
কিসমিস রফতানিতে ইরান বিশ্বে তৃতীয়
গত ইরানি বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে ২৩ হাজার ৬৫০ টনের অধিক কিসমিস রফতানি করেছে ইরান। এ থেকে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি। এসব কিসমিস রফতানি করা হয়েছে বিশ্বের ৫৪টি দেশে। ইরানের শুল্ক প্রশাসন জানিয়েছে, ইরানের সবচেয়ে বড় কিসমিস ক্রেতা দেশ ইরাক। উক্ত সময়ে ইরান থেকে ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের কিসমিস আমদানি করেছে দেশটি। ইরানি কিসমিসের অন্যান্য বৃহৎ ক্রেতা দেশের মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, স্পেন, ইউক্রেন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং পোল্যান্ড। বিশ্বে বর্তমানে তৃতীয় বৃহত্তম কিসমিস রফতানিকারক দেশ ইরান।
আঙ্গুর উৎপাদনে বিশ্বে ৮ম ইরান
বছরে প্রায় ৩২ লাখ টন আঙ্গুর উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ আঙ্গুর উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় ৮ম স্থান অধিকার করেছে ইরান। দেশটির কৃষি উপমন্ত্রী এ তথ্য জানান। ইতালি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সর্বাধিক আঙ্গুর উৎপাদনকারী দেশ। কৃষি উপমন্ত্রী আরো জানান, ইরানে ২ লাখ ৯৪ হাজার হেক্টর জমিতে আঙ্গুর চাষ করা হয়। ইরানের কুর্দিস্তান, কাজভিন, উত্তর খোরাসান, পূর্ব ও পশ্চিম আযারবাইজানে আঙ্গুর চাষ হয়ে থাকে।
পেস্তাবাদাম রফতানি
পৃথিবীতে যত দামী ফল বিশেষ করে বাদামজাতীয় ফল রয়েছে তার মধ্যে পেস্তা অন্যতম। এই ফলটির নাম আসলেই যে দেশটির কথা সবার আগে উচ্চারিত হয় তার নাম ইরান। কারণ, বিশ্বে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের পেস্তার সরবরাহ হয়ে থাকে এই দেশটি থেকেই। গত ফারসি বছরের প্রথম চার মাসে প্রায় ১৬ হাজার ৬৬০ টন পেস্তাবাদাম রফতানি করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ১৭৩.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইরান থেকে এসব পেস্তাবাদাম যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, বাহরাইন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, কানাডা, কাতার, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, নেদারল্যান্ডস, থাইল্যান্ড, জাপান, রোমানিয়া ও হংকংয়ে রফতানি করা হয়েছে। ইরানের শিল্প, খনি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মোজতাবা খোসরোতাজ বলেন, বিশ্ব পেস্তাবাদাম বাজারের অর্ধেকের বেশি পরিমাণ রফতানি করে কেবল ইরান।
আখরোট উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় ইরান
আখরোট উৎপাদনে ইরান বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই ইরানের অবস্থান। এরপর রয়েছে তুরস্ক, মেক্সিকো, ভারত, চিলি, সার্বিয়া, ইউক্রেন ও স্পেনের অবস্থান। বিশ্বে ১২ লাখ হেক্টর জমিতে আখরোট চাষ হয়ে থাকে। মোট আখরোট উৎপাদনের পরিমাণ ৩৪ লাখ টন।
তিনি আরো জানান, আখরোটের গড় উৎপাদনেও এগিয়ে রয়েছে ইরান। দেশটিতে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার টন আখরোট উৎপাদন হচ্ছে। যার মূল্য ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। দেশটির এক লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে আখরোট উৎপাদন হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশে একই জমিতে যেখানে আধা কিলোগ্রাম আখরোট উৎপাদন হয়, ইরানে এর পরিমাণ ৩ কিলোগ্রাম। বছরে ৫ হাজার টন আখরোট রফতানি করে ইরান। প্রতি কিলোগ্রাম আখরোটের দাম পড়ে ৬ থেকে ৮ মার্কিন ডলার। ইরানের কেরমান, হামেদান, লরেস্তান, কোহগিলোইয়ে-বোয়েরাহমাদ এবং কেরমানশাহ প্রদেশে ব্যাপকভাবে আখরোট চাষ হয়ে থাকে। উল্লেখ্য বিশ্বের শীর্ষ ফল উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় সেরা দশে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি।
বিশ্বের চতুর্থ ডুমুর উৎপাদক দেশ ইরান
বিশ্বে ডুমুর উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের ট্রপিকাল এবং সাবট্রোপিকাল ফ্রুটস ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক মাসুদ লাতিফিয়ান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইরান বছরে ৮০ হাজার টন ডুমুর ফল উৎপাদন করে থাকে এবং এই ফল উৎপাদনে বিশ্বে তার দেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ইরানি এই কর্মকর্তা আরও জানান, বছরে ২ লাখ ৫৫ হাজার টন ডুমুর উৎপাদনের মধ্য দিয়ে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তুরস্ক। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১০ লাখ টন ডুমুর চাষ হয় বলে জানান তিনি। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস ওয়েবসাইটের গত পহেলা জুনের প্রতিবেদন মতে, বিশ্বে ডুমুর উৎপাদনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মিশর ও মরোক্কো। তালিকায় ইরানের পরের অবস্থানে রয়েছে আলজেরিয়া, গ্রীস, সিরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেন।
বছরে তিন লাখ টন চেরি ফল উৎপাদন হয় ইরানে
ইরানে বছরে প্রায় তিন লাখ টন চেরি ফল উৎপাদন হয়। বিশ্বব্যাপী মোট উৎপাদিত এই ফলের প্রায় ২ শতাংশই ইরানে উৎপাদিত হচ্ছে। তেহরান এগ্রিকালচারাল জিহাদ অর্গানাইজেশনের বাণিজ্য বিষয়ক দফতরের উন্নয়ন ব্যবস্থাপক হামিদ রেজা খলিলি এই তথ্য জানিয়েছেন। হামিদ রেজা বলেন, তেহরান প্রদেশে এককভাবে বছরে প্রায় ৮৪ হাজার টন চেরি উৎপাদন হয়, যার মূল্য ১১০ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।


আপেল রফতানি
ইরান ২০১৭-১৮ শস্য বছরে ৭ লাখ টন আপেল রফতানি করেছে। যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। দেশটি বছরে প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন টন আপেল উৎপাদন করে যার এক পঞ্চমাংশ বিদেশে রফতানি হয়ে থাকে। ইরান যেসব দেশে আপেল রফতানি করে সেগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আযারবাইজান, জর্জিয়া, ইরাক, তুর্কমেনিস্তান, রাশিয়া, ওমান, কিরগিজিস্তান, কাজাখস্তান, কুয়েত, ভারত, কাতার, বাহরাইন, সুদান ও তুরস্ক।
তরমুজ রফতানি
ফারসি বছরের প্রথম তিন মাসেই ইরান ৫ লাখ ১৯ হাজার ৭৯০ টন তরমুজ রফতানি করেছে। এতে আয় হয়েছে ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইরাক, আমিরাত, আফগানিস্তান, তুরস্ক, রাশিয়া, কাতার ও ওমান ইরানের প্রধান তরমুজ আমদানিকারক দেশ।
টমেটো রফতানি
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে টমেটো রফতানি করে ১১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। এই পাঁচ মাসে দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩ লাখ ৬ হাজার ৬৫৫ টন টমেটো রফতানি করে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শুল্ক প্রশাসন আইআরআইসিএ প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এই চিত্র দেখা গেছে। ইরাক, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমেরাত, আফগানিস্তান ও কাতারে ইরান টমেটো রফতানি করে থাকে।
ইরানের লেটুস রফতানি
গত ইরানি বছরের (ফারসি ক্যালেন্ডার) প্রথম পাঁচ মাসে ৪২ হাজার ১শ’ টনের অধিক লেটুস সবজি রফতানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইরানের শুল্ক প্রশাসন প্রকাশিত তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, আযারবাইজান, আর্মেনিয়া, রুশ ফেডারেশন, বাহরাইন, ওমান, কাতার ও আফগানিস্তানে ইরান লেটুস রফতানি করে থাকে। উল্লেখ্য, শাক-সবজি উৎপাদনে ইরানের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। দেশটি বছরে প্রায় ২৮ মিলিয়ন টন সবজি উৎপাদন করে থাকে।
হারবাল ওষুধ রফতানি
ইরান থেকে বছরে বুটি গোলাপ, জাফরান, সুগন্ধি লতাবিশেষ ও বিভিন্ন ধরনের হারবাল ওষুধ রফতানি হয় সাড়ে তিনশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের হারবাল ওষুধ দপ্তরের পরিচালক পেইমান ইউসেফি আযার এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ওষুধি গাছের চাষাবাদ বিশ্বে একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ। দ্রুত অগ্রগতির কারণে নিকট ভবিষ্যতে কৃষি ক্ষেত্রে ওষুধি গাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সীফুড রফতানি
গত অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে ইরান ১১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সীফুড রফতানি করেছে। ইরানের ফিশারিজ অর্গানাইজেশনের প্রধান হাসান সালেহি জানান, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে দেশটির রফতানির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ৩০ ভাগ। সালেহি জানান, কৃষির পাশাপাশি সীফুড থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বেড়েই চলেছে। গত কয়েক বছরে এখাতে রফতানি দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি আরো জানান, গত বছর সীফুড উৎপাদন হয়েছে এক মিলিয়ন টন। এর মধ্যে ৮২ হাজার টন সীফুড রফতানি হয়েছে।
দুগ্ধজাত পণ্য রফতানি
চলতি অর্থবছরে বিলিয়ন ডলারের দুগ্ধজাত পণ্য রফতানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ইরান। দেশটির কৃষিমন্ত্রী মাহমুদ হোজ্জাতি এই তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা ইরনার খবরে বলা হয়, তিনি বলেছেন, ‘অতীতে আমরা দুগ্ধজাত পণ্য, মুরগি ও গম আমদানি করতাম। কিন্তু আজ আমরা শুধু দেশীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম হই নি, আমরা এসব পণ্যের রফতানিকারক হিসেবেও পরিগণিত হয়েছি।’ এগ্রিকালচারাল কমিশন অব তেহরান চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইনস অ্যান্ড এগ্রিকালচার এর চেয়ারম্যান কাভেহ জারগারানের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে দুগ্ধজাত পণ্য রফতানি করে ইরান আয় করেছে ৭৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানিতে ইরানের আয় ২.৭ বিলিয়ন ডলার
ফেডারেশন অব ইরানিয়ান ফুড অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব মতে দেশটি বছরে প্রক্রিয়াজত খাবার রফতানি করে ১.৩৭ মিলিয়ন টন। এ খাতে গত ফারসি বছরের প্রথম ৯ মাসে আয় করেছে ২.৭ বিলিয়ন ডলার। পরিমাণের দিক থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানি বেড়েছে ১৩ ভাগ এবং মূল্যমানে বেড়েছে ০.৫ ভাগ।
ইরানে বাহারি রঙিন মাছ উৎপাদন
ইরানে গত ফারসি বছরে এর আগের বছরের তুলনায় বাহারি রঙিন মাছ রফতানি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এধরনের বাহারি মাছ উৎপাদন হয়। এসব মাছ দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয়ে থাকে। সৌখিন মাছ হিসেবে এধরনের বাহারি মাছ অ্যাকুরিয়ামে শোভা পায়। ইরান থেকে রঙিন মাছ রফতানি হয় তুরস্ক, আযারবাইজান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরাকে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও ইরান বাহারি মাছ রফতানি করে বলে জানান ইরানের উপ কৃষিমন্ত্রী হাসান সালেহি।
রেশম পোকা চাষে বিশ্বে অষ্টম ইরান
রেশম সুতা উৎপাদনের লক্ষ্যে রেশমপোকা প্রতিপালনকে রেশম চাষ বলা হয়। বিশ্বে রেশম পোকা চাষে অষ্টম স্থানে রয়েছে ইরান। দেশটির রেশম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রেজা সৌরাতি জাঞ্জানি এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, চীনে চার হাজার বছর আগে রেশম পোকা চাষ শুরু হয়। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, চীন সাধারণত সাদা গুটির চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। অন্যদিকে, ইরানে হলুদ গুটির চাষ বেশি হয়।
ইরানের রেশম পোকা চাষ শিল্পের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে জাঞ্জানি বলেন, বর্তমানে খাতটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশে এর পুরনো ইতিহাস রয়েছে। বর্তমানে পঞ্চাশের অধিক দেশে উষ্ণতার জন্য রেশম ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। আর রেশমের ৯৫ ভাগ কাঁচামাল এশীয় দেশগুলো থেকে আসে।
বিশ্বব্যাপী সৌরভ ছড়াচ্ছে ইরানি গোলাপ
মে মাসের শুরু থেকে জুনের মাঝামাঝি। মধ্য ইরানের কাশান এবং এর আশপাশের শহর ও গ্রামগুলো যেন সাজে অপরূপ প্রাকৃতিক রূপে। সাদা, লাল আর গোলাপি গোলাপের পাশাপাশি নানা প্রজাতির ফুল তৈরি করেছে নয়নাভিরাম দৃশ্য। সেখানে পা ফেলতেই যেন চার দিক থেকে বাতাশে ভেসে আসে ম-ম সুমিষ্ট ঘ্রাণ। মুহূর্তেই জুড়ে যায় মন। উৎসব হোক বা শোক, সব জায়গাতেই পবিত্রতার প্রতীক গোলাপজল। এমনকি খাবার, ওষুধ এবং রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হয় এই উপকরণটি। আর গোলাপ জল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। এর মন মাতানো সৌরভ শুধু ইরানেই নয়, ছড়িয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী।
কথিত আছে গোলাপের তেল ও গোলাপ জলের অনেক চিকিৎসাগত উপকার আছে। গোলাপের তেল মানুষের মনে বয়ে আনে স্বস্তি। দূর করে বিষন্নতা, দুঃখ, স্নায়ুবিক চাপ ও উত্তেজনা। পাশাপাশি ঠা-া নিরাময় ও ত্বক্বের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। গোলাপ জল ছাড়াও গোলাপ তেল ব্যবহৃত হয় সুগন্ধি এবং ওষুধ তৈরিতে। যার বেশির ভাগই রফতানি হয় ফ্রান্সে। আর এর এক বোতল কিনতে খরচ হবে ৮ থেকে ১০ হাজার ডলার।
সম্প্রতি কাশান শহরের গভর্নর হামিদ রেজা মোমেনিয়ান জানান, কাশানে বছরে ২ হাজার টন গোলাপ জল ও তেল উৎপাদন হয়। তা রফতানি করে আয় হয় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ গোলাপ জল ও তেল পারস্য উপসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও ইউরোপে রফতানি হয়।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বর্তমান সরকার দেশটিতে কৃষিক্ষেত্রে আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি দেশজুড়ে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৩ হাজার ৬৫০টি নতুন কৃষি প্রকল্প চালু করেছে । কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ পরিচালক শাহরোখ রামেযান নেজাদ জানান, এসব প্রকল্পের আওতায় রয়েছে পানি, মাটি ও অবকাঠামো, পশুসম্পদ এবং হাঁস-মুরগি, সম্পূরক শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ, উদ্যানচাষ ও গ্রামীণ সমবায়সহ বিভিন্ন খাত।
বিশ্ব বাজারে ইরানের শোভাবর্ধক গাছের কদর
আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে চলেছে ইরানের ফুল ও শোভাবর্ধক গাছের চাহিদা। বিগত ফারসি বছরে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যের চিত্র তেমনটাই বলছে। গত বছর ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ আমদানি-রফতানিতে দেশটির ইতিবাচক বাণিজ্যিক ভারসাম্য দেখা গেছে। এক্ষেত্রে ইরানের বাণিজ্যিক ভারসাম্যের পরিমাণ ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের গ্রিনহাউস, মেডিসিনাল প্লান্টস অ্যান্ড ইডিবল মাশরুম অ্যাফেয়ারস ব্যুরোর প্রধান গোলামরেজা তাকাভি জানান, গত বছর তাঁর দেশ ২৫ মিলিয়ন ডলারের ফুল গাছ, বীজজাত চারা ও বাতি রফতানি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষিখাতে উন্নয়নের রোল মডেল হতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। কৃষিতে এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যে তো বটেই, সারাবিশ্বে এনে দিয়েছে আলাদা মর্যাদা।

সভা সমাবেশ

‘ইন দি স্ট্রিট্স অব প্যারিস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

সম্প্রতি ট্রাভেল ম্যাগাজিন ‘ভ্রমণ’ এর সম্পাদক আবু সুফিয়ান রচিত ‘ইন দি স্ট্রিট্স অব প্যারিস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। গত ১৩ জুলাই ২০১৮ রাজধানী ঢাকার ফ্রান্স সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অলিয়াস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক প্রফেসর ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সহযোগী স¤পাদক আনিসুল হক, বিশিষ্ট টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার উপদেষ্টা নওয়াজিশ আলী খান, ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ট্যুরিজ্ম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অলিয়াস ফ্রঁসেজ এর পরিচালক জনাব ব্রুনো প্লাজে। ২০০৩ সালে বইটির বাংলা ভার্সন ‘প্যারিসের পথে পথে’ এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এর আগে ধারাবাহিকভাবে এটি দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়।

মনিরউদ্দীন ইউসুফের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভা

মননশীল সাহিত্যিক মনিরউদ্দীন ইউসুফের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই ২০১৮ ঢাকাস্থ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে তাঁর অনুবাদকৃত পাঁচটি কাব্যগ্রন্থের ওপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসত্তার কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা। অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী।
‘ইকবালের কাব্য সঞ্চায়ন’ সম্পর্কিত আলোচনা উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ড. সেলু বাসিত, ‘দিওয়ান ই গালিব’ নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও সাংবাদিক জনাব হাসান হাফিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইসরাফিল, ‘কালামে রাগিব’ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন, ‘হাফেজের গজল’ সম্পর্কিত আলোচনা রাখেন গবেষক ও অনুবাদক ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী ও কবি শামীমা চৌধুরী, ফেরদৌসির ‘শাহনামা’ নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খান, বিদ্যাসাগর সোসাইটি-র সাধারণ সম্পাদক ড. মুহম্মদ আবদুল হাই এবং বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান।

স্মরণীয় বাণী

১১ যিলকদ মহানবী (সা.)-এর পবিত্র আহলুল বাইতের বারো ইমামের অষ্টম ইমাম হযরত আলী ইবনে মূসা আর রেযা (আ.)-এর শুভ জন্মদিন। তিনি ১৪৮ হিজরির এই দিনে (১১ যিলকদ) জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সপ্তম ইমাম হযরত মূসা ইবনে জাফার আল কাযিম (আ.)। তাঁর কুনিয়াহ আবুল হাসান এবং তাঁর উপাধি রেযা। তিনি পিতা ইমাম কাযিম (আ.)-এর শাহাদাতের পর ১৮৩ হিজরি সালে ৩৫ বছর বয়সে ইমামতের মাকামে অধিষ্ঠিত হন। এ মহান ইমামের শুভ জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর কিছু অমিয় বাণী নিচে দেয়া হলো :
সর্বোত্তম ও সবচেয়ে সম্মানজনক গুণ হচ্ছে সৎকর্ম সম্পাদন, দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য এবং আশাকারীর (অভাবীর) আশা (অভাব) পূরণ করা। (বিহারুল আনওয়ার , খ. ৭৮, পৃ. ৩৫৫)
বিশ্বস্ত ব্যক্তি তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি বা করেনা। কিন্তু তুমি বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বস্ত মনে করেছিলে (বামনে কর)। (বিহারুল আনওয়ার, খ. ৭৮,পৃ. ৩৩৫)
৪. সর্বোত্তম বুদ্ধি বৃত্তি (প্রজ্ঞা) হচ্ছে নিজ সত্তা সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান ও পরিচিতি। (বিহারুল আনওয়ার, খ. ৭৮, পৃ. ৩৫২ )
যে ব্যক্তি পারলৌকিক প্রতিদানের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস করে তার উচিত (বেশি বেশি) দান করা। (উয়ূনু আখবারির রিযা (আ.), খ. ২, পৃ. ৫৪)
দান-সাদকা করার চেয়েও উত্তম হচ্ছে দুর্বলকে তোমার সাহায্য করা। (তুহাফুল উকূল, পৃ. ৫২৫)
ইবাদত কেবল বেশি বেশি নামায পড়া ও রোযা রাখা নয়; বরং ইবাদত হচ্ছে মহান আল্লাহর ব্যাপারে (গভীর) চিন্তা করা। (উসূলুলকাফী, খ. ২, পৃ. ৫৫)
যে ব্যক্তি চায় যে তার মৃত্যু কাল বিলম্বিত হোক এবং তার জীবিকা (রিযিক) বৃদ্ধি পাকতার উচিত আত্মীয় তার সম্পর্ক রক্ষা করা। (উয়ূনু আখবারিররিযা (আ.), খ. ২, পৃ. ৪৪)
তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে জনগণকে কখনোই সন্তুষ্ট করতে পারবেনা। তাই তোমরা মিষ্টি মুখে এবং সদাচরণ দিয়ে তাদেরকে সন্তুষ্ট করবে। (মুসনাদুল ইমামির রিযা (আ.), খ. ১, পৃ. ২৯২)
গৃহ স্বামীর উচিত নিজ পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সচ্ছলতার জন্য চেষ্টা ও ব্যয় করা যাতে তারা (পরিবার-পরিজন) তার মৃত্যু কামনা না করে। (মানলাইয়াহদুরুহুল ফাকীহ, খ. ২, পৃ. ৬৮)
যে উপকারীর শুকর (তারপ্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ) করেনা সে মহান আল্লাহরও শুকর করেনা। (উয়ূনু আখবারির রিযা (আ.), খ. ২, পৃ. ২৪)
যে ব্যক্তি নিজ নাফ্সের (প্রবৃত্তি) হিসাব-নিকাশ (ও বিচার) করে সে লাভবান হয় এবং যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির ব্যাপারে উদাসীন থাকে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।(বিহারুল আনওয়ার, খ. ৭৮, পৃ. ৩৫৫)
১৬. যে ব্যক্তি বিচক্ষণতার সাথে নিজ কর্ম সম্পাদন করেনা সে হচ্ছে ভুল পথে ভ্রমণকারী পথিকের ন্যায় যার সফরের (ভ্রমণের) গতি যত বাড়বে ততই সে সঠিক পথ (আসল লক্ষ্য) থেকে ভ্রষ্ট হবে ও দূরে চলে যাবে। (ফিক্হুর রিযা (আ.), পৃ. ৩৮১)
যে ব্যক্তি সবার কাছে প্রিয় হতে চায় তার উচিত গোপনে ও প্রকাশ্যে (সর্বাবস্থায়) মহান আল্লাহকে ভয় করা। (ফিক্হুর রিযা (আ.), পৃ. ৩৮১)
চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে আয়না স্বরূপ যা তোমাকে তোমার দোষ-ত্রুটি ও গুণগুলো দেখিয়ে দেয়। (ফিক্হুর রিযা (আ.), পৃ. ৩৮০)
উপহার-উপঢৌকন অন্তরগুলো থেকে ঘৃণা দূর করে। (উয়ূনু আখবারির রিযা (আ.), খ. ২, পৃ. ৭৪)
ভর্ৎসনা ও নিন্দা বিহীন ক্ষমাই হচ্ছে সুন্দর ক্ষমা। (চেহেল হাদিস, পৃ. ১২০)
যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিষয়াদি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ছাড়াই দিন শুরু করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় (অর্থাৎ সে মুসলমান নয়)। (ফিক্হুর রিযা, পৃ. ৩৬৯)
মন্দ, অসৎ ও দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের সঙ্গ দান সৎ ও ভালো ব্যক্তিদের ব্যাপারে কু-ধারণার উদ্রেক করে (অর্থাৎ সৎ ও ভালো লোক যদি অসৎ ও মন্দ লোকের সাথে ওঠা-বসা করে ও তার সঙ্গী হয় তাহলে তার ব্যাপারে লোকেরা সন্দেহ ও মন্দ ধারণা পোষণ করবেই)। (উয়ূনু আখবারির রিয়া (আ.), খ. ২, পৃ. ৫২)
মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে ইমাম রেযা (আ.)-এর এসব অমিয় বাণী ও শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দিন।
সংগ্রহ ও অনুবাদ : মোহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান

স্মরণীয় দিবস

 

১ জুলাই : ইরানে খেলাধুলা ও পাহলোয়ানি (যুরখানেহ) সংস্কৃতি দিবস।
৩ জুলাই : ১৯৮৮ সালের এ দিনে পারস্য উপসাগরে মার্কিন রণতরী থেকে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানি এয়ারবাসের তিন শতাধিক যাত্রী শহীদ হন।
৫ জুলাই : বিশ্ব কলম দিবস।
৯ জুলাই : আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
* ইরানে শিশু-কিশোর সাহিত্য দিবস হিসেবে পালিত হয়।
১২ জুলাই : ইরানে হিযাব ও সতীত্ব দিবস।
* বিশ্ব হস্তশিল্প দিবস।
১৫ জুলাই : হযরত মাসুমা (আ.)-এর জন্মদিবস। ইরানে কন্যাদিবস হিসেবে পালিত হয়।
২৫ জুলাই : আহলে বাইতের অষ্টম ইমাম রেযা (আ.)-এর জন্মদিবস।
৩১ জুলাই : বিশ্ব স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস।
৫ আগস্ট : ইসলামি মানবাধিকার ও মানবতা দিবস।
৬ আগস্ট : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী।
৮ আগস্ট : ইরানে সাংবাদিক দিবস।
১২ আগস্ট : আহলে বাইতের নবম ইমাম তাকী (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
১৩ আগস্ট : আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.) ও নবীকন্যা হযরত ফাতেমা (আ.)-এর বিবাহের দিবস।
১৭ আগস্ট : আহলে বাইতের পঞ্চম ইমাম বাকের (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
২১ আগস্ট : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কর্তৃক ঘোষিত বিশ্ব মসজিদ দিবস।
* ৯ জিলহজ্ব আরাফাত দিবস অর্থাৎ হজ্ব।
২২ আগস্ট : ঈদ-উল- আযহা
২৩ আগস্ট : বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বু-আলী সীনা স্মরণে দিবস; ইরানে এ দিনটি চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
২৬ আগস্ট : বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী যাকারিয়া রাযী স্মরণে দিবস; ইরানে এ দিনটি ওষুধ শিল্প দিবস হিসেবে পালিত হয়।
২৭ আগস্ট : আহলে বাইতের দশম ইমাম নাকী (আ.) এর জন্মদিবস
* বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী।
৩০ আগস্ট : ঐতিহাসিক গাদীরে খুম দিবস। বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে ১৮ জিলহজ্ব মহানবী (সা.) গাদীরে খুম নামক স্থানে লক্ষাধিক হাজীর সমাবেশে হযরত আলী (আ.)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা দেন।
* ১৯৮১ সালের ৩০ আগস্ট প্রেসিডেন্ট ভবনে গুপ্তঘাতকের পাতা বোমা বিস্ফোরণে শহীদ হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ আলী রাজাই ও প্রধানমন্ত্রী হুজ্জাতুল ইসলাম ড. জাভাদ বাহোনার। দিবসটি সন্ত্রাসবিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হয়।

সংবাদ বিচিত্রা

আমেরিকা ইসলামি বিপ্লবের আগের ইরানকে চায় : সর্বোচ্চ নেতা

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইসলামি বিপ্লবের আগে ইরানের শাহ সরকার আমেরিকার সঙ্গে যে নতজানু আচরণ করত ওয়াশিংটন এখনও সেইরকম ইরানকে চায়। এর ব্যতিক্রম আমেরিকার পছন্দ নয়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একদল কর্মকর্তা, বিদেশে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত ও চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সদের একটি দল গত ২১ জুলাই ২০১৮ তেহরানে সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ইরানের পরমাণু সক্ষমতা, উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা এবং আঞ্চলিক দেশগুলোতে ইরানের সেনা উপস্থিতির ব্যাপারে আমেরিকার বিরোধিতা প্রমাণ করে ইসলামি শাসনব্যবস্থার শক্তিমত্তার প্রতি ওয়াশিংটনের গভীর বিদ্বেষ রয়েছে।
তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইরানি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদেরকে নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য ও যোগ্যতা উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ দিতে গিয়ে সাবেক উপনিবেশগুলোতে ইউরোপীয় দেশগুলোর অপরাধযজ্ঞ, পাশ্চাত্যে গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা, আমেরিকায় বড় দুই রাজনৈতিক দলের স্বৈরাচারী আচরণ এবং ইয়েমেনে সৌদি সরকারের চলমান গণহত্যার প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার কথা উল্লেখ করেন।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, পশ্চিমারা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করে গেলেও তারা নির্লজ্জভাবে এ ব্যাপারে ইরানকে দোষারোপ করছে।
আমেরিকাকে বিশ্বাস করা যায় না বলে ইরানের কর্মকর্তারা এখন যে বক্তব্য দিচ্ছেন সেকথা উল্লেখ করে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমি অনেক আগে থেকে একথা বলে এসেছি যে, মার্কিনীদের কথায়, এমনকি তাদের স্বাক্ষরিত চুক্তিতেও আস্থা রাখা যায় না। কাজেই আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করে কোনো ফল আসবে না।

ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না : সর্বোচ্চ নেতা

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে ট্রাম্প শয়তানি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং তা কখনই বাস্তবায়িত হবে না। গত ১৬ জুলাই ইরানের হজ বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, মার্কিনিরা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিষয়ে যে শয়তানি পরিকল্পনা নিয়েছে সেটাকে ‘ডিল অব সেঞ্চুরি’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের জেনে রাখা উচিত আল্লাহর রহমতে এই শয়তানি পরিকল্পনা কখনই বাস্তবায়িত হবে না। মার্কিন ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ফিলিস্তিন ইস্যু মানুষের মন থেকে মুছে যাবে না এবং বায়তুল মুকাদ্দাসই ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে থাকবে।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ফিলিস্তিনি জাতি মার্কিন ষড়যন্ত্র রুখে দেবে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি মুসলমানদের সমর্থন থাকবে। তিনি বলেন, কোনো কোনো মুসলিম নামধারী সরকার যারা বাস্তবে ইসলাম ধর্ম মানে না তারা নিজেদের মূর্খতা, অজ্ঞতা ও লোভের কারণে আমেরিকার জন্য বলিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় মুসলিম উম্মাহ ও ফিলিস্তিনি জাতিই বিজয় লাভ করবে। একদিন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে অবৈধ ইহুদিবাদী সরকারের শেকড় উপড়ে যাবে।
ইসরাইলের গোয়েন্দা ওয়েব সাইট দেবকাফাইল জানিয়েছে, ট্রাম্প যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তাতে পশ্চিম তীরের অর্ধেক ভূমি এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হবে সীমিত পর্যায়ের। এছাড়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ফিরে আসা বা অধিকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিগুলোকে আর কখনই গুরুত্ব দেওয়া হবে না।

প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া সফর

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্টদের আমন্ত্রণে গত ২ জুলাই ওই দুই ইউরোপীয় দেশ সফরে যান। প্রেসিডেন্ট রুহানি প্রথমে দু’দিনের সফরে বার্ন যান। সফরে তাঁর ছিলেন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল।
সুইজারল্যান্ড সফরে প্রেসিডেন্ট রুহানি দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রবাসী ইরানি নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেইসঙ্গে এ সফরে ইউরোপীয় দেশটির সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
সুইজারল্যান্ড সফর শেষে অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রেসিডেন্ট রুহানি ভিয়েনা যান। সেখানে অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ করেন। দেশটির সঙ্গে ইরানের বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বার্নে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ রেজা জাব্বারি বলেন, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির দু’টি ইউরোপীয় দেশ সফর প্রমাণ করে, বিশ্বব্যাপী তেহরানকে কোণঠাসা করার যে নীতি মার্কিন সরকার নিয়েছে তা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরান অতীতের মতোই নিজের সগৌরব উপস্থিতি বজায় রেখেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সম্পর্ক রক্ষা করতে চায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে পুতিনের গুরুত্বারোপ

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিনিয়র উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়েতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকে গঠনমূলক উল্লেখ করে বলেন, আঞ্চলিক নানা বিষয়ে ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রেসিডেন্ট পুতিন একমত হয়েছেন। গত ১৪ জুলাই ২০১৮ তিনি রাশিয়া সফর শেষে তেহরানে ফিরে একথা জানান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিরিয়াসহ আঞ্চলিক নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে রুশ প্রেসিডেন্টের আগ্রহ প্রকাশ ইরান-রাশিয়া সুসম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষ করে সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ইরান ও রাশিয়ার সাফল্য এ সহযোগিতার গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সা ফল্যের কারণেই সিরিয়া ও এর আশেপাশে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়েতি ১২ জুলাই মস্কো সফরকালে দু’দেশের সহযোগিতার নানা দিক তুলে ধরেন। সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে সেদেশে ইরান ও রাশিয়ার উপস্থিতি জরুরি এ কথা উল্লেখ করে আলী আকবর বেলায়েতি বলেন, এই দুই দেশ যদি সিরিয়া থেকে সরে আসে তাহলে সন্ত্রাসীরা আবারো ওই দেশটি দখল করে নেবে।
তেহরান ও মস্কো এ অঞ্চলে আমেরিকা, ন্যাটো কিংবা বাইরের অন্য কোনো পক্ষের উপস্থিতির ঘোর বিরোধী। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত নভেম্বরে তেহরানে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানকে রাশিয়ার কৌশলগত মিত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমে অভিন্ন স্বার্থ রক্ষার সুযোগ রয়েছে।
এ অঞ্চলে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ প্রসংগে, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বিরাজমান হুমকি বিশেষ করে এ অঞ্চলে পাশ্চাত্যের সামরিক হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় ইরান ও রাশিয়ার সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা যায়। সিরিয়ায় উপস্থিতির ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিনিয়র উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়েতি বলেছেন, ‘ইরাক ও সিরিয়া সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ইরান সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে এবং সেসব দেশে ইরানের উপস্থিতি বৈধ।’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকা ও ইসরাইলের হুমকি সত্ত্বেও ইরান সিরিয়া ত্যাগ করবে না।’
ইসরাইল ও পাশ্চাত্য মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোকে খণ্ড-বিখণ্ড করার যে চেষ্টা চালাচ্ছে ইরান তার তীব্র বিরোধিতা করার পাশাপাশি এ অঞ্চলে বিরাজমান নানা সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তেহরান মনে করে, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংহতি ও সহযোগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদসহ যেকোনো অভিন্ন হুমকি মোকাবেলা করা সম্ভব। মার্কিন সাময়িকী ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট গত নভেম্বর এক প্রতিবেদনে তেহরানের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের বিদ্বেষী নীতির সমালোচনা করে লেখে, ইরানের অংশগ্রহণ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মার্কিন নীতি নির্ধারকদের মধ্যে দূরদৃষ্টির অভাব রয়েছে।
যাইহোক, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে ইরান ও রাশিয়ার সম্পর্কের গুরুত্ব আগের চেয়ে বেড়েছে। এই দুই দেশ প্রমাণ করেছে, এ অঞ্চলে মার্কিন হুমকির মুখে পিছিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

ইরানের তেল খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে রাশিয়া : বেলায়েতি

রাশিয়া ইরানের তেল খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতার সিনিয়র উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়েতি। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ীর বার্তা নিয়ে গত ১৪ জুলাই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন। ইরানের সরকারি টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বেলায়েতি তাঁর দেশের তেল খাতে রাশিয়ার বিনিয়োগের কথা জানান।
এদিকে রাশিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিনিয়র উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়েতি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও অন্যান্য ইস্যু নিয়ে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। এ বৈঠককে বেলায়েতি খুবই গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এ বছরের প্রথম চার মাসে রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ইরান থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিলেও এসব বিনিয়োগের সুযোগ চীন ও রাশিয়া নিচেছ বলে মন্তব্য করেন বেলায়েতি।
এদিকে জ্বালানি খাত ছাড়াও রেল খাত ও চবাহার বন্দর উন্নয়নে রাশিয়া ইরানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়া।

ইসরাইলি সংসদে পাস হওয়া আইনের তীব্র নিন্দা জানাল ইরান

ইহুদিবাদী ইসরাইলকে ‘ইহুদি জাতির রাষ্ট্র’ ঘোষণা দিয়ে ইসরাইলি সংসদ যে আইন পাস করেছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। তেহরান বলেছে, ফিলিস্তিনি জাতির প্রতিরোধ আন্দোলন ও প্রচেষ্টায় একদিন তাদের মাতৃভূমির ওপর ইহুদিবাদীদের দখলদারিত্বের অবসান হবে।
দখলদার ইসরাইলের সংসদ ‘নেসেট’ গত ১৯ জুলাই, ২০১৮ গোটা অধিকৃত ফিলিস্তিনকে ‘ইহুদি জাতির রাষ্ট্র’ ঘোষণা দিয়ে এ ঘোষণাকে আইন হিসেবে অনুমোদন করে। চরম বর্ণবাদী এ আইন অনুযায়ী গোটা ফিলিস্তিন কেবল ইহুদিবাদীদের দেশ হওয়ায় সেখানে ফিলিস্তিনিদের কোনো নাগরিক ও মানবিক অধিকার থাকবে না। এ ছাড়া হিব্রু ভাষাই হবে সেখানকার একমাত্র রাষ্ট্র-ভাষা।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি নেসেটের এই বর্ণবাদী আইনের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ফিলিস্তিনি জাতির ওপর গণহত্যা চালিয়ে এবং তাদেরকে তাদের মাতৃভূমি থেকে বহিষ্কার করে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি যে একটি দখলদার ও বর্ণবাদী রাষ্ট্র তা নেসেটে এই আইন পাসের মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে।
কাসেমি বলেন, ইহুদিবাদী সরকারের সব অন্যায় ও অপরাধের প্রতি মার্কিন সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার লক্ষ্যে কিছু আরব দেশের প্রচেষ্টা এই দখলদার শক্তিকে আগের চেয়ে বেশি উদ্ধত ও ধৃষ্ট করে তুলেছে। এর ফলে ইসরাইল এখন আগের চেয়ে আরো বেশি নৃশংসভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর সাহস পাবে যা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে।
ইসরাইলি পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইনে মুসলমানদের প্রথম কিবলার শহর বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদীদের জন্য নতুন নতুন অবৈধ বসতি গড়ে তোলাকে ‘জাতীয় মূল্যবোধ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আইনে পুরনো অবৈধ ইসরাইলি-বসতিগুলোর বিস্তার ও উন্নয়নের পাশাপাশি কথিত নতুন ‘ইহুদি-বসতি’ গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরাইলের এই নতুন বর্ণবাদী তা-ব ও উপনিবেশবাদী দাম্ভিকতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসব সংস্থা ইসরাইলের এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।

ইউরোপীয়রা ভালো রাজনৈতিক সংকল্প দেখিয়েছে : ইরান

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি চীন ও রাশিয়া ইরানকে পরমাণু সমঝোতায় ধরে রাখার জন্য ব্যাপক রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়েছে।
গত ৬ জুলাই পরমাণু সমঝোতার অবশিষ্ট পাঁচ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমেরিকা ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর এটির অবশিষ্ট পক্ষগুলো তেহরানকে এ সমঝোতা অক্ষুণ্ণ রাখার আশ্বাস দেয়। সে আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সমঝোতার আওতায় ইউরোপীয় দেশগুলো তেহরানকে কতটুকু সুবিধা দিতে পারবে তা জানার জন্য শুক্রবার ভিয়েনায় ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি অংশগ্রহণ করেন।

বাহরাম কাসেমি গত ১০ জুলাই আইআরআইবি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভিয়েনা বৈঠককে পরমাণু সমঝোতা ধরে রাখার প্রচেষ্টায় ‘একধাপ অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ওই বৈঠকের সমাপনী ইশতেহারে পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলো তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে ইরান আন্তর্জাতিক সমাজকে দেয়া প্রতিশ্রুতি মেনে চলায় সন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি তেহরানকে এ সমঝোতায় থেকে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
কাসেমি আরো বলেন, আমেরিকাকে ছাড়াই পরমাণু সমঝোতা থেকে ইরান যাতে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারে সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সমঝোতার বাকি পাঁচ দেশ। কী প্রক্রিয়ায় এ সুবিধা ইরানকে দেয়া যাবে তা নিয়ে ওই পাঁচ দেশের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

মার্কিন আমদানি বন্ধ করে ইরান থেকে তেল নিচ্ছে চীন

আমেরিকা থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে তা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান থেকে নেয়া শুরু করছে চীনের স্বতন্ত্র রিফাইনারি কোম্পানি ডঙমিঙ পেট্রোক্যামিক্যাল গ্রুপ। কো¤পানিটির একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গত ১১ জুলাই গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, চীনা রিফাইনারি কোম্পানিটি তাদের অপরিশোধিত তেলের অন্যতম উৎস হিসেবে ইরানকে গ্রহণ করেছে।
সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি চীনের ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রীর ওপর সর্বশেষ আরেক ধাপ শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এর প্রতিবাদে আমেরিকার ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ৫৪৫টি পণ্যসামগ্রীর ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে বিইজিং। পাশাপাশি আমেরিকা থেকে তেল না কিনে ইরানসহ পশ্চিম আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা শুরু করেছে দেশটি। ইতোমধ্যে চীন জানিয়ে দিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা তারা মেনে চলবে না। বর্তমানে একমাত্র রাষ্ট্র চীন, যে দেশটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিল।
জ্বালানি বিশ্লেষকদের এখন ধারণা, অপরিশোধিত তেল আমদানিতে রদবদল এনে এশিয়ার দিকে ঝুঁকবে চীন। আর অপরিশোধিত তেলের জন্য দেশটি ইরানের দিকে ঝুঁকলে এশিয়ার আরেক শীর্ষস্থানীয় তেল আমদানিকারক দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় বিপুল পরিমাণ তেল রপ্তানির দিকে নজর দেবে আমেরিকা।
কোরিয়া এনার্জি ইকোনোমিক ইনস্টিটিউট এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়, চীন আমেরিকার অপরিশোধিত তেলের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে ওয়াশিংটন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার তেল আমদানির পরিমাণ বাড়বে। কেননা, আমেরিকার প্রয়োজন হবে এমন একটি মার্কেট যেখানে তারা ওই পরিশোধিত তেল রপ্তানি করতে পারবে।
এদিকে, আমেরিকার চাপের কারণে দক্ষিণ কোরিয়া ইরান থেকে তেল ক্রয় স্থগিত করে দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে চলতি সপ্তাহে তা প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরানে অবস্থিত কোরীয় দূতাবাস। এশিয়ায় ইরানি অপরিশোধিত তেলের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রেতা রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ইরান থেকে দৈনিক ৩ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করে দেশটি।

ভারতে ‘পাসারগাদ’ ব্যাংকের শাখা খুলবে ইরান

ভারত সরকার দেশটিতে ইরানের একটি ব্যাংকের শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গত ১৫ জুলাই এ খবর জানায়।
খবরে বলা হয়েছে, ভারতের অর্থমন্ত্রী পিযুষ গয়াল তাঁর দেশে ইরানের একটি ব্যাংকের শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছেন। এর ফলে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগেই ভারতের মুম্বাই শহরে ইরানের ‘পাসারগাদ’ ব্যাংকের শাখা খোলা হবে।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কিছুদিন আগে জানিয়েছিল, তারা ইরানের তিনটি ব্যাংকের কাছ থেকে শাখা খোলার আবেদন পেয়েছেন। এসব ব্যাংক হচ্ছে- পাসারগাদ, পারসিয়ান ও সামান ব্যাংক।
ভারতে ইরানি ব্যাংকের শাখা খোলার ফলে দু’দেশের আর্থিক লেনদেন সহজতর হবে। ভারত ও ইরানের মধ্যে ব্যাংকিং লেনদেনের ব্যবস্থা না থাকায় গত কয়েক বছরে কাক্সিক্ষত মাত্রায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিনিময় করা সম্ভব হয় নি। ভারত ইরানের বৃহত্তম তেল ক্রেতা। পরমাণু সমঝোতা সই হওয়ার আগে ইরানকে তেলের বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্য দিয়েছে নয়াদিল্লি। ব্যাংকিং লেনদেনের সুবিধা থাকলে ভারত থেকে ইরানে সরাসরি অর্থ আনা সম্ভব হবে।

চীন ও ইতালি ইরানে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করবে

চীন ও ইতালি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ ইয়ায্দ্-এ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। এ লক্ষ্যে গত ৮ জুলাই (২০১৮) তারিখে ইরান ও ঐ দু’টি দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
উক্ত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চীনের সিনোস্টীল্ কর্পোরেশন ও ইতালির ডেনিকোন্ কোম্পানি ইরানের ইয়ায্দে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করবে- যার মধ্যে প্রতিটি ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২০ হাজার ক্ষুদ্রায়তন গার্হস্থ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট ও একটি সোলার প্যানেল উৎপাদন কারখানা অন্তর্ভূুক্ত থাকবে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে তেহরানে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও ফ্রান্সের মধ্যে অনুরূপ একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। গত মার্চ মাসে স্বাক্ষরিত উক্ত চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স তেহরানে মোট ১৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি নতুন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজে সহযোগিতা করেছে। তেহরান পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রধান হাজী রেযা তেইমুরী জানান, উক্ত কোম্পানি ও একটি ফরাসি কোম্পানির মধ্যে সহযোগিতার ফলে তেহরানের শাম্সাবাদে ১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এবং দামাভান্দে ৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। তিনি জানান যে, অচিরেই ইরান সরকারের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উক্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টির উৎপাদন কার্য উদ্বোধন করা হবে।
এছাড়া, এর আগে গত জানুয়ারি মাসে পশ্চিম ইরানের হামেদান্ প্রদেশের অর্থনৈতিক বিভাগের মহাপরিচালক নাসের মাহ্মূদী জানান যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করার লক্ষ্যে জার্মানির এটিইউএস্ কোম্পানি হামেদান প্রদেশে পাঁচটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। এগুলোর মধ্যে চারটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে এবং পঞ্চম কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। তিনি আরো জানান যে, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্মাণের ব্যয় নির্বাহের জন্য বিভিন্ন বিদেশী বিনিয়োগকারী পূঁজি বিনিয়োগ করেছে।
উল্লেখ্য, জার্মানির এটিইউএস্ কোম্পানি হচ্ছে বিশ্বের সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম নির্মাণকারী ও সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম।

চা-এর সাহায্যে ইরানকে তেলের বকেয়া পাওনা পরিশোধে প্রস্তুত শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে চা রফতানি করে ইরান থেকে ইতিপূর্বে তার আমদানিকৃত তেলের বকেয়া মূল্য পরিশোধে স্বীয় প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছে। শ্রীলঙ্কা টী বোর্ডের চেয়ারম্যান লুসিলে ভিজেওয়ার্দেনা গত ২২ জুলাই (২০১৮) এ কথা ঘোষণা করেন।
লুসিলে ভিজেওয়ার্দেনা উল্লেখ করেন যে, ইতিপূর্বে সিলোন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিপিসি) ইরান থেকে যে তেল আমদানি করেছিল তার মূল্যের ২৫ কোটি ডলার বকেয়া রয়েছে; ইরানে সমমূল্যের চা রফতানি করে এক বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, সিপিসি যদি টী বোর্ডকে উক্ত মূল্য পরিশোধ করে দেয় তাহলে এক বছর চা রফতানির মাধ্যমে টী বোর্ড ইরানকে সে মূল্য পরিশোধ করতে পারে।
মি. দিস্সানায়াকে বলেন, ইরান আমাদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে চা ক্রয় করে থাকে; আমেরিকানরা তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এর মানে এ নয় যে, কেবল এ কারণেই তারা আমাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। তিনি বলেন, ঠিক এ মুহূর্তেও আমাদের চা ইরানে যাচ্ছে; সমস্যাটা কেবল মূল্য পরিশোধের প্রক্রিয়া ও শর্তাবলি নির্ধারণ নিয়ে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা ২০১৭ সালে ইরানে ২ কোটি ৭৪ লক্ষ কিলোগ্রাম শ্রীলঙ্কান চা (সিলোন্ টী) রফতানি করেছিল। উল্লেখ্য, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান হচ্ছে সিলোন্ টী-র চতুর্থ বৃহত্তম বাজার। শ্রীলঙ্কার মোট চা রফতানির শতকরা ৯.৫ ভাগ ইরানে রফতানি করা হয়।

ওআইসির পুরস্কার পেল ইরানের পর্যটন

ইসলামি পর্যটন বিকাশের জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে আর্থিক পুরস্কার দিয়েছে ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধীন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি (সিওএমসিইসি)। পুরস্কার হিসেবে দেশটিকে ৯৭ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছে। ‘টেকসই মুসলিম বান্ধব পর্যটনে স্থানীয় সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্তিকরণ’ শীর্ষক পর্যটন প্রকল্পের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করল মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ জোট ওআইসি। গত ১৫ জুলাই বার্তা সংস্থা সিএইচটিএনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কিমটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে ইরান, তুরস্ক ও কিরগিজিস্তানে বাস্তবায়ন করা হবে। পরবর্তীকালে তা অন্য মুসলিম দেশগুলোতে বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পটি জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বাস্তবায়ন করা হবে।
পর্যটন বিষয়ক প্রকল্পটির কৌশলগত যেসব লক্ষ্য উদ্দেশ্য রয়েছে তার মধ্যে কর্মসংস্থান তৈরি করা, পল্লি অর্থনীতির পুনর্নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম।
প্রসঙ্গত, সিওএমসিইসি প্রকল্পের আওতায় সেরা পর্যটনের স্বীকৃতি লাভের উদ্দেশ্যে ওআইসির সদস্য দেশগুলোর প্রস্তাবিত শীর্ষ পর্যটন প্রকল্পগুলোতে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।
ইরান গত জানুয়ারিতে হস্তনির্মিত শিল্প সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থান, ইকোট্যুরিজম ও আতিথিয়েতা শিল্প সংশ্লিষ্ট পল্লি অঞ্চল ও ছোট্ট শহরগুলোর ক্ষমতায়নে ২৪ ট্রিলিয়ন রিয়াল (৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ দেয়।
উল্লেখ্য, ইরানের রয়েছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ পর্যটন। বিশ্বের প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আহ্বান জানিয়ে থাকে দেশটি। ইরানগামী এসব পর্যটকের জন্য রয়েছে দেশটির যাযাবর বা পল্লি পরিবারের সঙ্গে বসবাসের সুযোগ। গ্রাম্য কার্যক্রম, ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও সংস্কৃতি স¤পর্কে জানতে এসব পল্লি পরিবারের সাথে স্বাধীনভাবে অবস্থান করার সুযোগ পাবেন ভ্রমণপিপাসুরা।

ইরানের তেলবহির্ভূত রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ

ইরানের শিল্প, খনি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মতে, চলতি ইরানি বছরের প্রথম দুই মাসে (২১ মার্চ থেকে ২১ মে) ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তেল-বহির্ভূত পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করেছে দেশটি। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ওজনের দিক দিয়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও মূল্যের দিক দিয়ে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রি পরিষদের সবশেষ বৈঠকে গত ৪ জুলাই শিল্প, খনি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তুলনামূলক রপ্তানি চিত্রের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। এতে চলতি ফারসি বছরের (১৩৯৭) প্রথম দুই মাসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নেয়া পদক্ষেপগুলো ও বাণিজ্য সূচক তুলে ধরা হয়।
যেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির তেল-বহির্ভূত রপ্তানি বৃদ্ধির এই চিত্র।
মেহর নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ইরানের ব্যাংক, আর্থিক ও ঋণদান প্রতিষ্ঠানগুলোর শিল্প ও খনি খাতে লেনদেনের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার বিলিয়ন রিয়াল ছাড়িয়েছে। আগের বছরের তুলনায় যা ১৩ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় পর্যায়েই মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও কার্গো পরিবহনের দিক দিয়ে অবকাঠামোর র‌্যাঙ্কিংয়ে উচ্চ অবস্থানে রয়েছে ইরান।

উদ্ভাবনী সূচকে ১০ ধাপ আগাল ইরান

জুলাই ২০১৮ ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন এর সর্বশেষ উদ্ভাবনী সূচকে ইরান আরো ১০ ধাপ এগিয়ে এ বছর ৬৫তম স্থানে উঠে এসেছে। ২০১৫ সালে এ সূচকে ইরানের অবস্থান ছিল ১০৬ তম স্থানে। প্রতিবছর এ সূচক প্রকাশ করা হয়। জ্ঞাননির্ভর প্রযুক্তি ও অর্থনীতির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে এধরনের সূচক তৈরি করা হয়।
বিভিন্ন দেশের উদ্ভাবনী পরিবেশ, উদ্যোক্তা বিকাশের ধরন, আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় লক্ষ্য রেখেই এধরনের সূচক নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে ইরান বিশ্বের ৩৪টি উচ্চ মধ্যবিত্ত দেশের মধ্যে ১৬তম স্থানে অবস্থান করছে।

ইস্তান্বুলে ইরান-তুরস্ক যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও তুরস্কের শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে ইস্তাম্বুলে যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইস্তাম্বুলের আদাহান হোটেলের আর্ট গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। ইংরেজিতে প্রদর্শনীর নাম দেয়া হয় ‘ইমমোরালিটি’। ২ জুলাই ডেইলি সাবাহ এই খবর দেয়।
ইরানি শিল্পী ও কিউরেটর তিমা জামের প্রচেষ্টা এবং টার্কিশ কনটেমপোরারি অ্যান্ড মডার্ন আর্ট ও ব্রুরিনো আর্ট এর সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তিমা জাম ডেইলি সাবাহকে জানান, তিনি ও অন্যান্য ইরানি শিল্পী ও তাদের তুর্কি পক্ষরা সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং সংহতি প্রকাশ করতে এই যৌথ প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।
জামের তথ্যমতে, প্রদর্শনীতে ১১ তুর্কি ও ১১ ইরানি শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। তিনি আরও জানান, প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ইরানি শিল্পীদের ১০ জন ইরানে তাঁদের শিল্পকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। অন্যদিকে ১১ জনের মধ্যে মাত্র একজন বাস করেন তুরস্কে।
যৌথ প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু ‘ইমমোরালিটি’ উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রদর্শনীর বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে শিল্পকর্মগুলো বাছাই করা হয়েছে। কিছু শিল্পী কেবল এই প্রদর্শনীর জন্য নতুন শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন বলে জানান তিমা।

ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগারের গ্রীন লাইব্রেরি অ্যাওয়ার্ড লাভ

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগার আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রীন লাইব্রেরি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন্স অ্যান্ড ইন্স্টিটিউশন্স (আইএফ্এল্এ) কর্তৃক প্রদত্ত ২০১৮ সালের গ্রীন অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারের জন্য ইরানি জাতীয় গ্রন্থাগার বিশ্বের অপর চারটি গ্রন্থাগারের সাথে যৌথভাবে রানার্স আপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। গত ২১ জুলাই (২০১৮) এ পুরস্কার বিজয়ী গ্রন্থাগারগুলোর নাম ঘোষণা করা হয়।
আইএফ্এল্এ-র অঙ্গ সংগঠন এন্ভায়রন্মেন্ট্যাল সাস্টেইনাবিলিটি অ্যান্ড লাইব্রেরিস স্পেশাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ (ইএন্এস্ইউএল্আইবি) কর্তৃক ২০১৬ সালে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। এ পুরস্কার প্রবর্তনের পিছনে দু’টি উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে : পরিবেশগত স্থিতিশীলতা বিধানের লক্ষ্যে প্রদত্ত স্বীয় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালানো গ্রন্থাগারকে গ্রীন লাইব্রেরি পুরস্কার প্রদান এবং পরিবেশগত শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার সমূহের সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ও নেতৃত্ব গড়ে তোলা।
এবারের গ্রীন লাইব্রেরি অ্যাওয়ার্ডের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩২টি গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে সাবমিশন পাঠানো হয়। প্রতিযোগিতার আয়োজকদের পক্ষ থেকে এসব গ্রন্থাগারের মধ্য হতে চীনের ফোশান গ্রন্থাগারকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং পাঁচটি গ্রন্থাগারকে রানার্স আপ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ পাঁচটি গ্রন্থাগার হচ্ছে : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যান্ড আর্কাইভ্স্, হাঙ্গেরীর যোসেফ্ আত্তিলা কাউন্টি অ্যান্ড সিটি লাইব্রেরি, রোমানিয়ার বিব্লিওতেকা কমিউনালা র্সিনা, ক্রোয়াশিয়ার ন্যাশনাল অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি এবং কেনিয়ার ইউএস্আইইউ-আফ্রিকা লাইব্রেরি।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন্স অ্যান্ড ইন্স্টিটিউশন্স্ তার ওয়েবসাইটে মন্তব্য করেছে, তেহরানস্থ ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যান্ড আর্কাইভ্স্ অব ইরান সমস্ত গ্রন্থাগারের জন্য ব্যবহার্য একটি নতুন জিনিস তৈরি করেছে; তা হচ্ছে একটি গ্রীন লাইব্রেরিকে মূল্যায়নের জন্য চেক্লিস্ট্। আইএফ্এল্এ তার মন্তব্যে বলে, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সেবা ও কাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে এই যে, প্রকল্পটি একাধিক ভবনে সাধারণ দিকনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করছে। এতে নির্দেশক (ইন্ডিকেটর)-এর ব্যবস্থা আছে, ফলে অধ্যয়ন ও গবেষণা করার সময় এর সাহায্যে বিরাজমান অবস্থা ও প্রধান প্রধান সাফল্যসমূহ তুলে ধরা ও ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছে। এটা গ্রন্থাগার সমূহকে গ্রীন লাইব্রেরিতে পরিণত হওয়ার পথে একটি রোড্ম্যাপ্ হিসেবে সেবা প্রদান করতে সক্ষম।

ফার্মাসিউটিক্যাল্ ক্ষেত্রে ইরানের ১৩টি নতুন প্রযুক্তি উৎপাদন

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ওষুধবিজ্ঞান (ফার্মাসিউটিক্যাল্) ক্ষেত্রে ১৩টি নতুন প্রযুক্তি উৎপাদনের কাজ শুরু করেছে। ইরানের বায়োটেকনোলজি উদ্ভাবন হেডকোয়ার্র্টাস-এর সেক্রেটারি জনাব মোস্তাফা ক্বানে‘ঈ গত ২৪ জুলাই (২০১৮) সাংবাদিকদের নিকট এ তথ্য প্রকাশ করেন।
জনাব ক্বানে‘ঈ বলেন যে, ওষুধ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দেশের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে এ ক্ষেত্রে কর্মরত বিশেষজ্ঞগণ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন এবং তাঁরা গত এক বছরেরও কম সময়ে ১৩টি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন- যা এ ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নির্দেশ করছে।
তিনি জানান যে, বর্তমানে ৪০ জনেরও বেশি পিএইচডি ডিগ্রিধারী ফার্মাসিউটিক্যাল ক্ষেত্রে কর্মরত রয়েছেন এবং তাঁরা এ অঙ্গনে অনেকগুলো সাফল্যের অধিকারী হয়েছেন।
বায়োটেক মেডিসিন ও ড্রাগ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের দিকনির্দেশকের ভূমিকা পালনের কথা উল্লেখ করে তিনি এ ক্ষেত্রে অধিকতর অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনটি ইরানি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে কিউব্স্যাট্ তৈরি করছে
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি কিউবস্যাট্ তৈরির জন্য যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইরানিয়ান স্পেস এজেন্সী (আইএস্এ)-এর ডিরেক্টর র্মোতাযা বারারী গত ২৪ জুলাই (২০১৮) এ তথ্য প্রকাশ করেন।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ও মহাশূন্য বিষয়ক শিল্পের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্কে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন যে, গত তিন মাসে ইরানিয়ান স্পেস এজেন্সী (আইএস্এ) তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্য এসিয়া-প্যাসিফিক স্পেস কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এপিএস্সিও)-এর সহযোগিতায় একটি স্মল স্টুডেন্ট্ স্যাটেলাইট (এস্এস্এস) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া আইএস্এ একটি কিউব্স্যাট্ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দেশের তিনটি বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে।
জনাব র্মোতাযা বারারী আরো বলেন, আইএস্এ কর্তৃক উৎপাদিত মহাশূন্য বিষয়ক সামগ্রী বাজারজাতকরণ ও এতদসংক্রান্ত ব্যবসায়ের লক্ষ্যে আইএস্এ-র উদ্যোগে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ^বিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সম্মেলন ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আবহাওয়া বিষয়ক গবেষণা ও রাডার স্যাটেলাইটসমূহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হবে সেগুলো অবশ্যই দেশের অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তিগত সামর্থ্যরে ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে এবং তাতে দেশ যেসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে সেগুলোর সমাধানের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

এনহ্যানস্ড অয়েল্ রিকভারী (ইওআর) ল্যাবরেটরি যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ইরানের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এনহ্যানস্ড অয়েল্ রিকভারী (ইওআর) ল্যাবরেটরী ইকুইপ্মেন্ট্ উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অধিকারী হয়েছে। তেহরানের শারীফ্ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি-র অধিভুক্ত শারীফ আপস্ট্রিম পেট্রোলিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এস্ইউপিআরআই)-এর প্রধান সাইয়্যেদ শাহাবুদ্দীন আয়াতুল্লাহী গত ৮ জুলাই (২০১৮) এ তথ্য প্রকাশ করেন।
জনাব আয়াতুল্লাহী বলেন, আমরা ইওআর ল্যাবরেটরী ইকুইপ্মেন্ট্ এবং কতক রাসায়নিক উপাদান উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি যেগুলো তেল রিজার্ভগুলোতে ইন্জেক্ট করে তেল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে; সেই সাথে আমরা এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সফ্ট্ওয়্যার উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি।
উল্লেখ্য, এন্হ্যান্স্ড্ অয়েল্ রিকভারী হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ভূগর্ভস্থ কোনো তেল রিজার্ভ থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ তেল উৎপাদন করা যেতে পারে। এতে সাধারণত বিরাজমান তেলকূপগুলোতে এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিক উপাদান ইন্জেক্ট্ করা হয়Ñ যা তাতে চাপের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং তার ঘনত্ব ও আঠালো অবস্থা হ্রাস করে।

ইরানি বিজ্ঞানিগণের ইঁদুরের মেরুরজ্জুর ক্ষত চিকিৎসায় সফলতা

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজ্ঞানিগণ স্টেম সেল টেকনোলজি ব্যবহার করে ইঁদুরের মেরুরজ্জুর ক্ষত চিকিৎসায় সফল হয়েছেন। স্টেম সেল বায়োলজি ও টেকনোলজি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রায়ান ইনস্টিটিউটে কর্মরত বিজ্ঞানীদের অন্যতম ড. সাহার কিয়ানী গত ৭ জুলাই (২০১৮) এ তথ্য প্রকাশ করেন।
ড. সার্হা কিয়ানী বলেন, ট্রমা থেকে মেরুরজ্জুতে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় রায়ান ইনস্টিটিউটের এ গবেষণা প্রকল্পের প্রথম স্তরে স্টেম সেলের সাহায্যে তার চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ ইঁদুরের মেরুরজ্জুর ক্ষত নিরাময় করে এ প্রকল্পে পুরোপুরি সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বানরের ওপরে গবেষণা ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে এবং এতে বাঞ্ছিত ফলাফল পাওয়া গেলে তা চিকিৎসালয়ে মানুষের ওপরে পরীক্ষার পথ উন্মুক্ত করে দেবে।
ড. সার্হা কিয়ানী ধারণা প্রকাশ করেন যে, আগামী এক বছরের মধ্যে মানুষের ওপরে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ওষুধবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বড় বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা উপকরণ বিভাগের মহাপরিচালক রেযা মাসাএলী সম্প্রতি জানান যে, বর্তমানে ইরানে কিডনি রোগীদের জন্য ব্যবহার্য ডায়ালাইসিস মেশিন ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ইরানের অভ্যন্তরে উৎপাদিত ডায়ালাইসিস মেশিন এ ক্ষেত্রে কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনই পূরণ করবে না, বরং দেশের প্রয়োজন পূরণের পর তা বিদেশে রফতানি করাও সম্ভবপর হবে।

ড্রোন-এর যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ইরানের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিভিন্ন ধরনের পাইলটবিহীন বিমান (ড্রোন) তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত যন্ত্রাংশ উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। গত ১৮ জুলাই (২০১৮) ইরান সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্টের দফতরের অধীনস্থ ডেভেলপমেন্ট অব নলেজ-বেইস্ড্ অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড এয়ারোনটিক্স্ টেকনোলজি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র হেডকোয়ার্র্টাস্-এর প্রধান মানুচেহ্র্ মান্তেক্বী এ তথ্য প্রকাশ করেন।
জনাব মান্ত্বেক্বী বলেন, বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে যেসব ড্রোন ব্যবহার করতে হয় সেগুলোর ডিজাইনিং ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ উৎপাদনের কাজ বর্তমানে পুরোপুরিভাবে ইরানের বিজ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিগুলো কর্তৃক দেশের অভ্যন্তরেই তাদের শিল্প-কারখানাগুলোতে আঞ্জাম দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের ভিতরে ড্রোনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাংশ উৎপাদন নিঃসন্দেহে দেশের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি বিরাট সাফল্য।
জনাব মান্ত্বেক্বী উল্লেখ করেন যে, বিশে^র যেসব দেশ ড্রোন উৎপাদন করে থাকে সেসব দেশের অনেকগুলোই প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন করতে সক্ষম নয় এবং এ কারণে তারা বৈদেশিক সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়।
উল্লেখ্য, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি হামেদ সা‘ঈদী গত বছর ঘোষণা করেন যে, ইরান বিশে^র মধ্যে ব্যাপকভাবে ড্রোন উৎপাদনকারী শীর্ষ দশটি দেশের অন্যতম। তিনি বলেন যে, বিভিন্ন ধরনের ড্রোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরান দ্রুত অগ্রগতি সাধন করেছে এবং এ ক্ষেত্রে ইরান ভবিষ্যতে আরো উন্নততর অবস্থানের অধিকারী হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ট্রাক ও কার্গো এক্স্-রে স্ক্যানিং সিস্টেম তৈরি করেছে

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ট্রাক ও কার্গোতে বোঝাইকৃত মালামাল স্ক্যানিং-এর কাজে ব্যবহার্য দেশের প্রথম ড্রাইভ্-থ্রো এক্স-রে সিস্টেম তৈরি করেছে। গত ২৪ জুলাই (২০১৮) এ সিস্টেমের উদ্বোধন করা হয়। এদিন বাযারগান সীমান্তবর্তী এলাকায় দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাগণ স্ক্যানিং-এর কাজে এ সিস্টেমটি ব্যবহার করেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেযা মোযাফ্ফারীনীয়া বলেন, এ নতুন স্ক্যানিং সিস্টেমটি যে কোনো বোঝাকে এক মিনিটের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখতে সক্ষম। এ সিস্টেমের এক্স-রে রশ্মি মালের কোনো ক্ষতি সাধন না করেই তার ভিতর দিয়ে অতিক্রম করে এবং খুব সহজেই বোঝার ভিতরকার মালামালের ইমেজের খুবই উচ্চ মানের প্রক্রিয়াজাত করণের কাজ আঞ্জাম দেয়।
উল্লেখ্য, এ এক্স্-রে সিস্টেমের ব্যবহার করে বোঝা স্ক্যানিং করে বাইরে থেকে দেশের ভিতরে নিষিদ্ধ দ্রব্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটানো রোধ করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, ইরানের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিভিন্ন ধরনের নেশাকর দ্রব্য উৎপাদন করা হয় এবং চোরাচালানীরা এসব দ্রব্য মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের দেশসমূহে এবং ঐ সব দেশ হয়ে অন্যান্য অঞ্চলে নিয়ে যায়, আর এ ক্ষেত্রে তারা ইরানের ভূখণ্ডকে চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে। তাই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহের মাদকদ্রব্য নিরোধ স্কোয়াডসমূহ শুরু থেকেই মাদক দ্রব্য চোরাচালানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে, বিশেষ করে ২০১০ সাল থেকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশব্যাপী সিস্টেম্যাটিক অভিযান তীব্রতর করেছে। তবে উন্নততর ও সিস্টেমেটিক তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তিশীল সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন, বিশেষ করে জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য নিরোধ অভিযানের রিপোর্ট মোতাবেক, ইরানের মাদকদ্রব্য নিরোধক পুলিশ বিশে^র সবচেয়ে অগ্রসর, নিষ্ঠাবান ও আত্মত্যাগী যারা বিশেষ করে গত পাঁচ বছর মাদকদ্রব্য চোরাচালানী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কঠোর দমনাভিযান চালিয়ে আসছে।

ইরানে দুধ, মুরগি ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি

গত এক দশকে ইরানে দুধ, মুরগি ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময়ে দুধ ২৫, মুরগি ৫২ ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ শতাংশ। তবে একই সময়ে লাল মাংসের উৎপাদন কমেছে ১ ভাগ মাত্র। ইরানের পরিসংখ্যান বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের নাগরিকদের মধ্যে মাথাপিছু দুধ ১১০, মুরগি ১৯, ডিম ১০ কেজি থেকে গত এক দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ১২১, ২৬ ও ১২ কেজিতে। তবে এসময় মাংসের উৎপাদন মাথাপিছু কমেছে ২ কেজি।

তেহরানে প্রাচীন পান্থশালা উন্মুক্ত

জনসাধারণের জন্য তেহরানে প্রাচীন এক পান্থশালা খুলে দেওয়া হয়েছে। এ পান্থশালা বিদেশি পর্যটকদের জন্যে বিশেষ আকর্ষণীয়। ইরানের খারাজে আলবোর্জ প্রদেশে পান্থশালাটি ঐতিহাসিক শাহ আব্বাসি পান্থশালা হিসেবে সুপরিচিত। ইরান সরকার পর্যটন খাতে যে বিশেষ নজর দিয়েছে তারই অংশ হিসেবে এ প্রাচীন পান্থশালাটি খুলে দেওয়া হয়। সেখানে একটি পর্যটক ও অটোমোবাইল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে ব্যয় করা হয়েছে ৩০ বিলিয়ন ইরানি রিয়াল।
পর্যটন কর্মকর্তা রামিন আফসারি গত ১৮ জুলাই ২০১৮ এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রাচীন এ পান্থশালাটি পর্যটন হাব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। শতাধিক লোক এখানে কাজের সুযোগ পাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণিত প্রতিযোগিতায় ইরানি শিক্ষার্থীদের সাফল্য

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক গণিত প্রতিযোগিতায় বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছে। তারা গত ১২ জুলাই (২০১৮) দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে সমাপ্ত ২০১৮ সালের ওয়ার্ল্ড ম্যাথ্মেটিক্স্ ইন্ভাইটেশনাল্ (ডব্লিউএম্আই)-এ অংশগ্রহণ করে ৪০টি পদক লাভ করেছে এবং সামগ্রিকভাবে এ প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয়েছে।
এ প্রতিযোগিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান থেকে মোট ৫৪ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে এবং তারা ৮টি স্বর্ণপদক, ১৮টি রৌপ্যপদক ও ১৭টি ব্রোঞ্জপদক জয় করে। এছাড়া তারা ১৪টি সম্মান সূচক ডিপ্লোমাও লাভ করে। বিশে^র ২০টি দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
ডব্লিউএম্আই-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়, বিশ^ব্যাপী যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা গণিত শাস্ত্রের উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করছে ডব্লিউএম্আই সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে পরস্পরের সাথে পরিচিত করানোর লক্ষ্যে চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি বছর অংশগ্রহণকারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের তাদের বিশ^দৃষ্টিকে সম্প্রসারিত করতে ও বিভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ম্যাথ্মেটিক্স্ ইন্ভাইটেশনাল্ (ডব্লিউএম্আই) হচ্ছে একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক প্রতিযোগিতা যাতে কিন্ডারগার্টেন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে থাকে।

ইরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ জয় করেছে বাংলাদেশ
ইরানে অনুষ্ঠিত ২৯তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বা আইবিও ২০১৮ এবারে একটি ব্রোঞ্চ জয় করেছে বাংলাদেশের প্রতিযোগী অদ্বিতীয় নাগ।
এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের আর যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁরা হলেন বায়োজিদ মিয়া, তামজিদ হোসাইন তানিম, প্রকৃতি প্রজুতি তুষ্টি। এবারে অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী প্রতিযোগীদের মধ্যে বয়সের দিক থেকে সর্বকনিষ্ঠ অদ্বিতীয়। তেহরানের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২২ জুলাই অলিম্পিয়াডের ফলাফল ঘোষণা এবং পদক বিতরণ করা হয়।
আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে এই প্রথমবারের মতো কোনো পদক পেলো বাংলাদেশ।
এদিকে, ইরানে এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশসহ ৭১টি দেশ অংশগ্রহণ করে। প্রতি দেশ থেকে চার জন প্রতিযোগী এবং দুইজন লিডার অংশ নিয়েছেন। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো থেকে কয়েকজন জুরিও অংশগ্রহণ করেন। আইবিও’র ৭৮ সদস্য দেশের মধ্যে ৭১ জন প্রতিযোগী ১৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সাত দিনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
ওয়াশিংটনের সৃষ্ট সমস্যার কারণে ইরানের চলমান আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বা আইবিও ২০১৮ এ অংশ নিতে পারে নি আমেরিকার প্রতিযোগিতারা। তেহরানের শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড-এর নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ আগা মিরি রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান।

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ইরানের স্বর্ণসহ ৫ পদক ও বাংলাদেশের ১টি স্বর্ণপদকসহ ৪ পদক জয়
রোমানিয়ার ক্লুজ-নাপোকা শহরে অনুষ্ঠিত ৫৯তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণসহ পাঁচটি পদক ও একটি অনারেবল মেনশন পেয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান।
ইরানের পক্ষে স্বর্ণপদকটি জিতেছেন মোহাম্মদ শারিফি কিয়াসারি। এছাড়া, ইরানি দল তিনটি রৌপ্য, একটি ব্রোঞ্জপদক ও একটি অনারেবল মেনশন পেয়েছে। রৌপ্যপদক প্রাপ্তরা হলেন, ইরফান মঈনি, আহমদ রামজানপুর এবং মোহাম্মদ শাহভেরদি কোনদোরি। ব্রোঞ্জ পেয়েছেন মোহাম্মদ আমিন শারিফি চারুরি। আর অনারেবল মেনশন পান আবুলফাজল শিরমাহাল্লেহেই।
স্বর্ণপদক পাওয়া ১৮ বছর বয়সী কিয়াসারি ৪২ নম্বরের মধ্যে ৩২ নম্বর পান। আর দলগতভাবে ১৫০ নম্বর পেয়ে ১০৭টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৯তম। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান তৃতীয়, প্রথম স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, দ্বিতীয় স্থানে কাজাখস্তান।
ইরান ২০১৭ সালের অলিম্পিয়াডে দুটি স্বর্ণ, তিনটি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জ জিতে সারাবিশ্বে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিল।
বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণপদক জয়
এদিকে, এবারের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য প্রথম সোনার পদকটি জিতেছেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহমাদ জাওয়াদ চৌধুরী।
এ ছাড়া বাংলাদেশ দল তিনটি ব্রোঞ্জ পদক ও দুটি অনারেবল মেনশন পেয়েছে। ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া তিনজনই নটরডেম কলেজের ছাত্র। তারা হলেন জয়দীপ সাহা, তামজিদ মোর্শেদ রুবাব ও তাহনিক নূর সামিন। আর অনারেবল মেনশন পান ঢাকা কলেজের রাহুল সাহা ও ফরিদপুর পুলিশ লাইনস হাইস্কুলের সৌমিত্র দাস।

ইরানি টীমের প্যারা-ভলি সিটিং ভলিবল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পুরুষদের জাতীয় সিটিং ভলিবল টীম ২০১৮ সালের ওয়ার্ল্ড প্যারা-ভলি সিটিং ভলিবল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে। গত ১৫ থেকে ২২ জুলাই (২০১৮) নেদারল্যান্ড্সে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং ইরানি টীম বসনিয়া ও হার্যেগোভিনার টীমকে পরাজিত করে এ শিরোপা জয় করে।
ইরানি টীম উপর্যুপরি তিনটি স্ট্রেইট সেট-এর এ প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে ২৫-১৮, ২৫-১৩ ও ২৫-২০ ব্যবধানে জয়লাভ করে এবং সপ্তম বারের মতো এ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়নশিপের মর্যাদা ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের প্যারালিম্পিক চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতাসমূহে ইরানি টীম রাশিয়া, জার্মানি ও জাপানের টীমের সাথে এ প্রতিযোগিতার পুল্ ‘বি’তে স্থানলাভ করেছিল যাতে তারা তাদের সকল প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। এভাবে তারা পরবর্তী রাউন্ডের দিকে এগিয়ে যায় এবং এবারে কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী মিসরকে ৩-১ (২৫-১৯, ২৫-২২, ২২-২৫ ও ২৫-১৫) ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ের অধিকারী হয়। এরপর ইরানি টীম সেমি-ফাইনালে ইউক্রেনের টীমের বিরুদ্ধে ৩-০ (২৫-১৩, ২৫-১৯ ও ২৫-১৩) ব্যবধানে জয়লাভ করে আগামী ২০২০ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য প্যারালিম্পিক্স্-এ অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করল।
উল্লেখ্য, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নারীদের ন্যাশনাল সিটিং ভলিবল টীম-ও ২০১৮ সালের ওয়ার্ল্ড প্যারা-ভলি সিটিং ভলিবল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং ৯ম স্থান অধিকার করে।

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি পাওয়ার লিফ্টিং প্রতিযোগিতায় ইরানি প্রতিযোগীর নতুন রেকর্ড

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পাওয়ার লির্ফ্টা মোহাম্মাদ রাঈসী ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি পাওয়ার লিফ্টিং কাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ৮৪ কেজি গ্রুপে দুইটি স্বর্ণপদক ও একটি রৌপ্যপদক জয়ের মাধ্যমে ইতিপূর্বেকার রেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন রেকর্ড গড়েছে। চেক প্রজাতন্ত্রের পিল্সেন্-এ গত ৮ থেকে ১৪ জুলাই (২০১৮) এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মাদ রাঈসী তার স্কোয়াট্ অ্যাটেম্প্ট্-এ ২২৭.৫ কেজি ওজন উত্তোলন করে এ ক্যাটেগরিতে স্বর্ণপদক জয় করে এবং রাশিয়া ও পোল্যান্ডের প্রতিযোগীদ্বয় তার পরবর্তী র‌্যাঙ্কে স্থান লাভ করেন। অন্যদিকে ডেড্লিফ্ট্ ক্যাটেগরিতে ২৯২.৫ কেজি ওজন উত্তোলন করে রাঈসী রৌপ্যপদক লাভ করে। অবশ্য রাঈসী প্রেস্ বেঞ্চ্-এ ১৪৭.৫ কেজি ওজন উত্তোলন করে, কিন্তু তা একটি পদক পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এ ক্যাটেগরিতে স্বাগতিক দেশস্থ তার প্রতিযোগী স্বর্ণপদক লাভ করে। তবে মোহাম্মাদ রাঈসী মোট ৭১৭.৫ কেজি ভরোত্তোলন করে সামগ্রিকভাবে ওয়ার্ল্ড স্টুডেন্ট্স্ রেকর্ড ভঙ্গ করে স্বর্ণপদক জয় করে। রাঈসী ইতিপূর্বেকার ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তুলনায় ১৭.৫ কেজি ওজন বেশি উত্তোলন করে।
উল্লেখ্য, মোহাম্মাদ রাঈসী ছাড়াও আরেক জন ইরানি প্রতিযোগী নাভীদ্ আয়ায্দানী এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে একটি রৌপ্যপদক জয় করেছে।

ক্যাডেট রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল ইরান
ক্রোয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ ক্যাডেট রেসলিং ওয়ার্ল্ডচ্যাম্পিয়ননশিপের শিরোপা জিতেছে ইরানের ফ্রিস্টাইল কুস্তি দল। টুর্নামেন্টে সর্বমোট ১৫২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে টিম র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার শীর্ষ স্থান দখল করে দলটি। ঘরে তোলে ২০১৮ সালের ক্যাডেট বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা।
বুধবার রাতে টুর্নামেন্টের পুরুষদের ফ্রিস্টাইল প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচে শিরোপা নিশ্চিত করে ইরান। এর আগে ৩ জুলাই ২০১৮ ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কুস্তি প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী ম্যাচে ১১০ কেজি ওজন শ্রেণিতে অংশ নেয় ইরানের আমির হোসেইন জেইর। তিনি আমেরিকান প্রতিপক্ষ ড্যানিয়েল কারকভিলিয়েতের মুখোমুখি হন। ৭-৪ পয়েন্টের ব্যবধানে পরাজিত করে ঘরে তোলেন সোনার মেডেল।
অন্যদিকে, ৮০ কেজি ওজন শ্রেণিতে অংশ নিয়ে রুশ প্রতিপক্ষ দিমিত্রি এলকানোভের মুখোমুখি হন ইরানের মোহাম্মাদ রেজা গিয়াসি। প্রতিপক্ষের কাছে কাছে ৬-৯ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে রুপা জেতেন তিনি। এছাড়া ৬৫ কেজি ওজন শ্রেণিতে আর্মেনিয়ার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ১০-৫ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে ব্রোঞ্জ মেডেল জেতেন মোহাম্মাদ কারিমিসেইফাবাদ। এই বিভাগে রুপা জেতেন আর্মেনিয়ার নারেক হারৌতুনিয়ান।
বুধবার ক্রোয়েশিয়ার ইভেন্টে ইরানি স্কোয়াড থেকে দ্বিতীয় সোনার মেডেল জিতেন রহমান মুসা আমুজাদ। এ পদক জয়ের মধ্য দিয়ে ইরানের জন্য ২০১৮ ক্যাডেট রেসলিং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা নিশ্চিত করেন তিনি।
২ জুলাই ক্যাডেট কুস্তি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়ে চলে ৮ জুলাই। টুর্নামেন্টের দলীয় প্রতিযোগিতায় ১৩২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে আমেরিকা। দেশটি ইভেন্টের ৫১ কেজি ওজন শ্রেণিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। অন্যদিকে, ১১৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে রাশিয়া।