All posts by dreamboy

স্মরণীয় বাণী

হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) এরশাদ করেন : ‘হয় আলেম হও, নয়তো ‘ইল্ম্ অর্জনে রত হও; কিন্তু স্বীয় সময়কে অযথা কাজে ও ভোগ-আনন্দে ব্যয় করো না।’
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এরশাদ করেন : হে ইব্নে মাস্উ‘দ্! তুমি যখনি কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নেবে তখন তা জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনার ভিত্তিতে করো। চিন্তা-ভাবনা ও জ্ঞান ব্যতিরেকে কাজ আঞ্জাম দেয়া পরিহার করো। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন : ‘(তোমরা তোমাদের শপথের ক্ষেত্রে) ঐ নারীর ন্যায় হয়ো না যে তার বয়নকৃত জিনিস (বস্ত্র)-কে মজবুত করে বয়নের পর আবার তা খুলে ফেলে এবং তার সুতাগুলোকে আলাদা করে ফেলে।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন : ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাঁতার শিক্ষা দাও।’
ইমাম আলী (আ.) বলেন : ‘জেনে রেখ, কোরআনের তেলাওয়াতে যদি চিন্তা-ভাবনা ও পর্যালোচনা না থাকে তাহলে তাতে কোনোই লাভ নেই।’
আমীরুল্ মু‘মিনীন (আ.) তাঁর পুত্র হযরত ইমাম হাসান (আ.)-কে সম্বোধন করে এরশাদ করেন : ‘তুমি কি চাও যে, তোমাকে চারটি স্বভাব সম্পর্কে শিক্ষা দেই যার ফলে তুমি চিকিৎসা থেকে অমুখাপেক্ষী হতে পারবে?’ তিনি বললেন : ‘জ্বী।’ আমীরুল্ মু‘মিনীন্ এরশাদ করলেন : ‘ক্ষুধার্ত না হওয়া পর্যন্ত খেতে বসো না, ক্ষুধা থাকা অবস্থায় খাওয়া বন্ধ করো না, খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাও এবং ঘুমাতে যাবার আগে শৌচাগারে যাও। তুমি যদি এগুলো মেনে চল তাহলে চিকিৎসা থেকে অমুখাপেক্ষী হবে।’
হযরত ইমাম বাকের (আ.) এরশাদ করেন : ‘যে ব্যক্তি ‘ইল্ম্ শিক্ষাদান করে তার পুরস্কার ‘ইল্ম্ অর্জনকারীর পুরস্কারের অনুরূপ, তবে সে ‘ইল্ম্ শিক্ষাকারীর তুলনায় অধিকতর মর্যাদার অধিকারী। অতএব, তোমরা ‘ইল্মের অধিকারীদের কাছ থেকে ‘ইল্ম্ হাসিল্ করো এবং আলেমগণ যেভাবে তোমাদেরকে তা শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই তোমাদের ভাইদেরকে তা শিক্ষা দাও।’
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এরশাদ করেন : ‘যখনি (হঠাৎ করে) তোমার কাছে মেহমান এসে হাযির হয় তখন তোমার কাছে যা আছে তা-ই তার কাছে এনে হাযির করো। কিন্তু তুমি যখন দাও‘আত্ করো তখন (তোমার সাধ্য অনুযায়ী) নিজেকে কষ্ট দাও।’
তিনি আরো এরশাদ করেন : ‘মু‘মিন ব্যক্তি তার বন্ধুদের জন্য নিজেকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয় না।’
হাসান্ বিন আলী আবী হাম্যাহ্ তাঁর পিতার কাছ থেকে উদ্ধৃত করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি হযরত ইমাম মূসা কাযেম্ (আ.)-কে দেখলাম যে, তাঁর যমীনে কাজ করছেন এবং তাঁর পা দু’টি ঘামে ভিজে গেছে। আমি বললাম, ‘আপনার জন্য উৎসর্গ হই; শ্রমিকরা কোথায়?’ তিনি এরশাদ করেন : ‘হে আলী! এমন লোকেরা নিজেদের যমীনে নিজের হাতে কাজ করেছেন যাঁরা আমার ও আমার পিতার চেয়ে উত্তম ছিলেন।’ আমি বললাম : ‘তাঁরা কা’রা?’ তিনি এরশাদ করলেন : ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা.), আমীরুল্ মু‘মিনীন্ (আ.) এবং আমার সমস্ত পূর্বপুরুষ নিজের হাতে কাজ করতেন, আর এটাই হচ্ছে নবিগণ, রাসূলগণ ও ছালেহীনের সীরাত।’

(মাফাতীহুল্ হায়াত্ গ্রন্থ থেকে সংকলিত)
অনুবাদ : নূর হোসেন মজিদী

ওমর খৈয়ামের কবিতায় প্রফুল্লতা ও উপস্থিত মুহূর্তের মূল্যায়ন

ড. মুহাম্মদ কাজেম কাহদূয়ী:  প্রফুল্লতা সন্ধান কর, কারণ, এই মুহূর্তই জীবনের সারবস্তু
মাটির কণায় কণায় কায়কোবাদ ও জামশীদের স্মৃতি অঙ্কিত।
জগতের গতিপ্রকৃতি আর যাপিত জীবনের ভিত্তিমূল
সবই স্বপ্ন, কল্পনা, ধোঁকা-প্রতারণা ও মুহূর্তের উপভোগ।
ওমর খাইয়াম নিশাপুরির পুরো নাম গিয়াস উদ্দীন আবুল ফাতাহ ওমর ইবনে খাইয়াম নিশাপুরি। তাকে খাইয়ামী, খাইয়াম নিশাপুরি ও খাইয়ামী নিশাপুরি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। তিনি ৪২৭ ইরানি সালের ২৮ উর্দিবেহেশত (১৭ মে ১০৪৮ খ্রি.) ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
হাকীম উমর খৈয়াম বিশ^বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ হিসেবে ইরানের ভেতরের ও বহির্বিশে^র অনেক জ্ঞানী মনীষীর কাছে অনুকরণীয় অনুসরণীয়। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি সর্বমহলে বরণীয় স্মরণীয়।
ওমর খাইয়ামকে নিয়ে যেসব গবেষণা পরিচালিত হয়েছে, তাতে দেখা যায় ১৩০০ সৌরবর্ষ থেকে নিয়ে ১৩৮০ সৌরবর্ষের মধ্যবর্তী সময়ে (১৯২১ শতকে) ওমর খাইয়ামকে নিয়ে ইরানে ৪২৫টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রবন্ধ খৈয়ামের জীবন, ব্যক্তিত্ব ও তাঁর কবিতা সংক্রান্ত। প্রবন্ধের সংখ্যা ১৬৬টি। এ ছাড়া কবিতার নান্দনিকতা বিষয়ে ১১টি, পা-ুলিপি পরিচিত সম্পর্কিত ৮টি, খৈয়ামের কালামশাস্ত্রীয় ও দার্শনিক রচনাবলি সম্পর্কে ১৮টি প্রবন্ধ রচিত হয়েছে। উল্লিখিত সময়কালের মধ্যে ইরানে রচিত খৈয়াম সংক্রান্ত গ্রন্থের সংখ্যা ৭০টি।
দুঃখজনক সত্য হলো, ওমর খৈয়ামের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ আমাদের সঠিক জানা নেই। লেখক গবেষকগণ যত মত প্রকাশ করেছেন সবই কল্পনাভিত্তিক ও অনুমাননির্ভর। এর মধ্যে অধিকাংশ ইউরোপীয়ান লেখক বলেছেন, খৈয়ামের মৃত্যুসাল ৫১৭ (১১৩৮ খ্রি.)। ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব অৎধনরপ ডৎরঃঃবহ ঞৎধফরঃরড়হ এ ইৎড়পশবষসধহহ লিখেছেন, এই তারিখ হলো ৫১৫ (১১৩৬) সাল। তবে কেউই খৈয়ামের মৃত্যুসাল সম্পর্কে প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করতে পারেন নি। গবেষকদের কেউ কেউ বলেছেন, ইউরোপীয় লেখকদের মধ্যে যাঁরা খৈয়ামের মৃত্যুসাল ৫১৭ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁদের সনদসূত্র সম্ভবত রেযাকুলী খান হেদায়াতের ‘মাজমাউল ফুসাহা’ নামক কিতাব। কিতাবটিতে খৈয়ামের মৃত্যুসাল ৫১৭ হিজরি বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে যে বিষয়টি অধিকতর সঠিক বলে প্রতীয়মান হয় তা হচ্ছে খৈয়ামের মৃত্যুসাল ৫২০ হিজরির পরবর্তীকাল।
উপনাম : খৈয়াম এর উপনাম বা কুনিয়াত কারো মতে আবু হাফ্স, কারো মতে আবুল ফাতাহ। উস্তাদ জামাল উদ্দীন হুমায়ী লিখেছেন, হাকীম আবু হাফ্স বা আবুল ফাতাহ গিয়াস উদ্দীন ওমর ইবনে ইবরাহীম খাইয়ামী নীশাবুরি। তবে খৈয়ামের উপনাম আবু হাফ্স ছিল বলেই প্রতীয়মান হয়। অভিধানে আবু হাফ্স শব্দের অর্থ বাঘ।
ইরানের সালজুকী আমলের বিখ্যাত জ্যোতিঃশাস্ত্রবিদ, গাণিতিক ও কবি ছিলেন। তিনি মধ্যবয়সে ইমাম মুয়াফফাক নিশাপুরির কাছে ফিকাহশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এ সময়ে তিনি হাদীস, তাফসীর, দর্শন, হিকমত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, হাকীম উমর খৈয়াম দর্শনশাস্ত্র সরাসরি গ্রিক ভাষা থেকে আয়ত্ত করেন।
বর্ণিত আছে যে, উমর খৈয়ামের শিক্ষকতা বা পুস্তক রচনার প্রতি মোটেও আগ্রহ ছিল না। এর কারণ সম্ভবত এটাই ছিল যে, তাঁর কাছে পাঠে বসার মতো বিচক্ষণ ছাত্র তিনি খুঁজে পান নি। এর কারণ এটাও হতে পারে যে, তাঁর সময়কালটি ছিল সালজুকী বংশের রাজত্বকাল। সালজুকীরা দর্শনের প্রচ- বিরোধী ছিল এবং ফকীহ ও যাহেরপন্থীদের ফিকাহর মাসয়ালা নিয়ে ঝগড়া ও তর্ক-বিতর্কের বাজার ছিল সরগরম। কাজেই তিনি সময়টিকে তাঁর মুক্ত ও সমুন্নত চিন্তাধারার প্রকাশের জন্য উপযোগী মনে করেন নি। এরপরও তাঁর কিছুসংখ্যক রচনা পাওয়া যায় যেগুলো মধ্যযুগে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং ইউরোপীয়দের মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। খৈয়ামের রচনাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মীযানুল হিকমত, লাওয়াযেমুল আমকানাত, নওরোযনামা, জাবার ও মোকাবিলা (অ্যালজেব্রা), রেসালা ফী শারহে মা আশকালা মিন মুসাদেরাতে ইকলিদুস, রিসালা মুশকিলাতুল হিসাব ইত্যাদি।
অ্যালজেব্রা সম্পর্কে তাঁর রেসালা এবং আরো কিছু পুস্তিকায় তিনি জ্যামিতির নানা জটিল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। এই রচনাটি তাঁর বিখ্যাত গাণিতিক রচনার একটি।
মেরাজের ধরন সম্পর্কেও তিনি একটি পুস্তিকা লিখেন। প্রকৃতিবিজ্ঞানের ওপরও তাঁর প্রচুর লেখালেখি আছে। সুদীর্ঘ জীবনে তিনি আরবি ও ফারসি ভাষায় এসব রচনা লিপিবদ্ধ করেন।
উমর খৈয়ামের বলে কথিত ফারসি ভাষার একটি রচনা হচ্ছে নওরোজনামা। এই পুস্তকে খুবই প্রাঞ্জল ও সরল ভাষায় নওরোজ আনুষ্ঠানিকতার উৎপত্তি, সাসানি রাজাদের দরবারে নওরোজ পালনের নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে। তিনি মনের উদ্দীপনা নিয়ে আগেকার রাজা-বাদশাহদের শাসনপদ্ধতি এবং তাঁরা যেসব জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহী ছিলেন তার বর্ণনা দেন। প্রাচীন যুগের কয়েকজন রাজা-বাদশাহর জীবনচিত্র ও ইতিহাস তিনি তুলে ধরেন।
খৈয়াম ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ইরানের আজকের যে বর্ষপঞ্জি, তার নির্ঘণ্ট তৈরি করেন তিনি এবং তাঁকে সহায়তা করেন আরো কয়েকজন বিজ্ঞানী। এই ঘটনাটি ছিল জালাল উদ্দীন মালিকশাহ সালজুকির আমলে। ইরানি বর্ষপঞ্জিকে যে ‘তাকবিমে জালালী’ বা ‘জালালী সাল’ বলা হয় তা এই বাদশাহর নামানুসারেই বলা হয়। খৈয়াম জ্যেতিঃশাস্ত্রীয় গণনার ক্ষেত্রে নিজেও একটি পুস্তিকা রচনা করেন। গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান ছাড়াও দর্শন, বিশ^-ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব ও ফিকাহশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। তিনি গ্রিক দর্শন ও বিজ্ঞানের ওপর শিক্ষকতা করতেন। ছাত্রদেরকে তিনি শরীরচর্চা ও মননচর্চায় উৎসাহিত করতেন বলে জানা যায়। এসব কারণে তাঁর সময়কার সূফি ও সাধকদের অনেকেই তাঁকে আপন বলে মনে করতেন।
ওমর খৈয়ামের কবিতার বৈশিষ্ট্য
খৈয়ামের কবিতা ছিল চতুষ্পদী, ছোট কবিতা। একেবারে সাদাসিধা, নিজের নামযশ প্রকাশ করার মতো অলংকার হতে মুক্ত। তবে একই সময়ে বিশাল সৃষ্টিজগতের অনন্ত রহস্য সম্পর্কে চিন্তাশীলতা ও গভীর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সমৃদ্ধ ছিল। বলা হয়েছে যে, খৈয়ামের প্রকৃত রূবাইর সংখ্যা ছিল ৭০টি। অথচ তাঁর রূবাইর সংখ্যা এক লক্ষের বেশি হবে বলে দাবি করা হয়। (মুহাম্মদ মসউদ সিদ্দিকী, ১৭ বাহমান ১৩৯৭ ইরানি সাল)
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
ওমর খৈয়ামের আমলে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়। যেমন আলে বুইয়া শাসকগোষ্ঠীর পতন, সালজুকীদের উত্থান, ক্রুসেড যুদ্ধ, বাতেনীপন্থী ইসমাঈলী সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ, খৈয়ামের প্রথম জীবনের সঙ্গীমহল, ইসমাঈলী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধবাদী গোষ্ঠী- যারা ইসমাঈলীদের কাফের আখ্যায়িত করত, তারপরে হিজরি তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি কারামাতিদের উত্থান- এ সবকিছু মিলে সমাজের সর্বত্র চরম ঘোলাটে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
ওমর খৈয়ামের যৌবনকালের যখন শুরু তখন ইবনে সীনা ও আবু রায়হান বীরুনীর বার্ধক্যকাল। দেখা যায়, প্রখ্যাত সাহিত্যবিশারদ নিজামী আরুজী সামারকান্দী ওমর খৈয়ামকে ‘হুজ্জাতুল হক’ সত্যের বা আল্লাহর পক্ষে দলিল এবং আবুল ফযল বায়হাকী ‘সমকালীন ইমাম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ওমর খৈয়ামকে ইবনে সীনার উত্তরসূরি ছাড়াও প্রাকৃতিক দর্শন, গণিত, যুক্তিশাস্ত্র ও মেটাফিজিক্স এর বরণীয় শিক্ষক হিসেবে স্মরণ করা হয়।
‘যা হওয়ার হোক’
ওমর খৈয়ামের জীবন দর্শনের অন্যতম কথা হচ্ছে ‘যা হওয়ার হোক না কেন’। তাঁর রূবাইয়াতের প্রধান অংশ জুড়ে রয়েছে নানা সমস্যার মোকাবিলায় নির্বিকার থাকা ও জীবনকে উপভোগ করার আহ্বান। শরাব, মদ্যপান ও সময়-সুযোগকে উপভোগ করা সম্পর্কিত তাঁর বাচনিক অভিব্যক্তিকে অনেকে আক্ষরিক অর্থে বিবেচনা করেছেন। ফলে অনেকের মনে খৈয়াম একজন বল্গাহীন, মদ্যপ, আনন্দ-ভোগের পূজারি বলে একটি বিকৃত চিত্র ফুটে উঠে। অথচ প্রকৃত অবস্থা এর চেয়ে ভিন্নতর।
‘মেয়’ বা মদ ফারসি সাহিত্যে এক বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং ফারসি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ শিল্পীরা রূপক অর্থে মেয়-এর ব্যবহার করেছেন ব্যাপকভাবে। পূর্ববর্তী কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় মেয় অর্থ মদ নয়; বরং এটি এক বিমূর্ত ভাবধারা, যা কবিতার ভাষায় সৌন্দর্য আরোপ ও নান্দনিকতার বলয় তৈরির জন্য তাঁরা ব্যবহার করেন। কবি নিজামী গাঞ্জাবী তাঁর শরফনামা (ইসকান্দারনামার প্রথমার্ধ্ব) কাব্যে বলেন,
হে খিজির! মনে করো না আমার উচ্চারণে
মেয় (মদ) বলতে আমার উদ্দেশ্য শরাব বুঝানো
মেয় বলতে আমি আত্মহারা অবস্থা বুঝাতে চাই
সেই আত্মহারা অবস্থা দিয়ে জলশা আসর সাজাই।
আমার মদিরা পরিবেশক তো খোদায়ী প্রতিশ্রুতি
মদিরার নষ্টামির চুমুক তো আত্মহারা মত্ততা,
নচেত খোদার কসম যতদিন থেকে বেঁচে আছি
কখনোই মদিরায় কলুষিত করি নি আমার ঠোঁট দুটি।
যদি মদের চুমুকে রসনা কখনো কলুষিত করি
আল্লাহর যত হালাল, হারাম হবে আমার ওপর।

সৃষ্টিরহস্য অজ্ঞাত
খৈয়ামের জীবনদর্শনের অন্যতম মূলকথা, সৃষ্টি রহস্যের কেউ কূল-কিনারা করতে পারে না। তিনি বলেন,
আমার আসাতে লাভ হয় নি দিকচক্রবালের
আমার চলে যাওয়ায় বাড়ে নি তার প্রতিপত্তি
কারো কাছ থেকেই আমার এই দু’কান শোনে নি
আমার এই আসা এই যাওয়া কিসের জন্য ছিল।

জীবনের ব্যথা
খৈয়ামের জীবনদর্শনের অন্যতম মূল আবেদন- এই জীবন ব্যথায় ভরা। তিনি লিখেছেন :
আমার আসা যদি আমার ইচ্ছায় হতো, আসতাম না
আমার যাওয়া যদি আমার ইচ্ছায় হতো, যেতাম না।
এই নষ্ট জগতে যদি এর চেয়ে উত্তম না হতো তাহলে
আমি আসতাম না, চলে যেতাম না, থাকতামও না।

আদিকাল হতে লেখা নিয়তি
খৈয়াম মনে করেন, নিয়তিতে আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ লেখা। কাজেই জীবনে পাওয়া, না-পাওয়ার কারণে দুশ্চিন্তা অনর্থক।
যদিও আমার আছে গায়ের রঙ সুন্দর আনন
টিউলিপের মতো চেহারা দেবদারুর গড়ন
জানলাম না মাটির এই আনন্দ চিত্রশালায়
আদি চিত্রকর কেন অঙ্কিত করল আমায়।
খৈয়াম তাঁর রূবাইর একাংশে জীবনের তুচ্ছতা ও লক্ষ্যহীনতার দর্শনটি নিজস্ব চিন্তার আলোকে উপস্থাপন করতে প্রয়াস পেয়েছেন। তাঁর ব্যথা সম্পূর্ণ দার্শনিকসুলভ ব্যথা। তিনি তাঁর অনুভবের পটভূমি থেকে সৃষ্টির উৎসের কাছে অনুযোগ করেন। তা বেদনার দর্শন ও প্রত্যক্ষণ থেকেই তাঁর এই অনুভব জাগ্রত হয়।
মুহূর্তকে কাজে লাগাই
খৈয়ামের জীবনদর্শনের মূল কথা- ‘এখন এই মুহূর্তকে কাজে লাগাই। উপস্থিত সময়ের সদ্ব্যবহার কর।’
জীবনের এই কাফেলা বিস্ময়কর গতিতে চলে যায়
এই মুহূর্তকে কাজে লাগাও, যা উচ্ছ্বলতায় বয়ে যায়।
সাকী! প্রতিপক্ষের আগামীকালের দুশ্চিন্তা করে লাভ কি
আনো জামবাটি দাও এই রাত যে দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
খৈয়ামের চিন্তা ও চেতনা সেই চিন্তাধারার ধারাবাহিকতা, যা মানুষ প্রাচীনকাল থেকে লালন করে এসেছে। মানুষ কোত্থেকে এসেছে, কোথায় যাবে, কেন এসেছে, জীবন কীভাবে পরিচালনা করতে হবে, জীবনের সময় ও মেয়াদের কতটুকু তার অধিকারের আওতায় আছে, তা নিয়ে মানবমন সর্বদা চিন্তামগ্ন ছিল এবং নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে আসছে। এসব চিন্তা খৈয়ামকে অভীভূত ও হতবাক করেছে। সেই চিন্তাধারা নিয়ে তিনি জগৎ-সংসারের দিকে তাকান এবং নিজের দিশেহারা চিন্তাগুলোকে ছোট ছোট বাক্যে গুঞ্জরিত করেন।
যে বলয়ে আমাদের আসা, আমাদের যাওয়া
তার কোনো আদি নাই, নাই অন্ত কারো জানা
বলে নি কেউ কখনো এই বিষয়ে সঠিক কথা
এই যে আসা আর চলে যাওয়া, কোত্থেকে তা।
খৈয়ামের আগেও ফেরদৌসি এই চিন্তাধারাটির পুনরাবৃত্তি করেছেন শাহনামায় বহুবার। রুদাকী এবং সামানি আমলের কবিদের চিন্তায়ও এ ধরনের ভাবধারা ছিল। তবে এই চিন্তাধারাটি খৈয়ামের রচনায় সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে, আর যাঁরা তাঁর অনুকরণ করেছেন তাঁদের সংখ্যাও অনেক। সত্যিই পরবর্তী কবিদের ওপর খৈয়ামের চিন্তাধারার প্রভাব বিস্ময়কর।
ওমর খৈয়াম তাঁর কবিতার প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুড়ে মনের প্রফুল্লতা আর জীবন উপভোগের মাধ্যমে উপস্থিত মুহূর্তকে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন। যদিও এই চিন্তাধার খৈয়ামের নিজস্ব নয় এবং ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই এর উৎপত্তি হয়েছে। তবে এই চিন্তাধারাকে কবিতার আদলে ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব খৈয়ামকে দিতেই হবে। সমকালীন ইরানের সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক ড. আবদুল হুসাইন যাররীনকূব বলেন, ‘যদিও এ কথা সঠিক যে, আমাদের অনেক বিশ^াস ও বিনোদনচিন্তা যুক্তিবুদ্ধির পরিপন্থী, কিন্তু এরপরও মনের সাক্ষ্য হচ্ছে, এসব ধারণা-কল্পনার মধ্যে প্রফুল্ল থাকার চিন্তাটি মনে সুখ দেয়। আর এই সুখের অনুভূতিই জীবনের দুঃখ-দুর্দশার পুরস্কার। জীবনে যদি আনন্দ ও প্রফুল্লতার অবকাশ না থাকত তাহলে জীবন হতো কবরের মতো শীতল, নীরব এবং বেঁচে থাকার কষ্টের সাথে তুলনা হওয়ার অযোগ্য।’
হ্যাঁ, খৈয়ামের দর্শনের সারকথা হচ্ছে মনের প্রফুল্লতা এবং উপস্থিত মুহূর্তকে কাজে লাগানো। অবশ্যই খৈয়াম অনর্থক আনন্দ প্রফুল্লতার কথা বলেন নি। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে আমাদের প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য জানতে হবে। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, এই জগৎ ছেড়ে চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের সময়-সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যাবে।
খৈয়াম বিশ^াস করতেন, আমাদের জীবন গতানুগতিক হলে চলবে না। যেহেতু মৃত্যুর সময়টি কারো জানা নেই, কাজেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। মৃত্যুচিন্তা সর্বদা খৈয়ামের সাথি ছিল। কখনো তিনি জীবনকে নিয়ে হতাশায় ভোগেন নি। জীবনকে তিনি পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন।
এসো হে বন্ধু কালকের চিন্তায় বসে না থাকি
জীবনের এই একটি মুহূর্তকে মূল্যবান ভাবি
আগামীকাল চলে যাব জীর্ণ শুঁড়িখানা ছেড়ে
সাত হাজার বছরীদের সাথে থাকব মিলেমিশে।
খৈয়াম বিশ^াস করেন, যে মুহূর্তগুলো আমরা অতিক্রান্ত করছি সেগুলোই আমাদের নিজস্ব। একদিন পর বা এক মিনিট পরের যে সময় তা আমাদের এখতেয়ারে নেই। কাজেই আগামীকালের এবং যে মুহূর্তটি আসবে কি আসবে না জানা নেই তা নিয়ে চিন্তা অনর্থক।
কতকাল তার চিন্তা করব, জানি না যা আছে কি নেই
এ জীবন আনন্দে কাটাতে পারব, নাকি না, জানা নেই।
ভরে দাও এই জামবাটি, কারণ, আমি তো জানি না
এই নিশ^াস যে নিচ্ছি তা নির্গত হবে, নাকি হবে না?
সৎ ও সরল জীবনের প্রত্যয়
আমরা নিজেদের সাথে ও অন্যদের বেলায় সৎ ও সরল থাকব। লোকদেখানো ভ-ামি থাকবে না আমাদের জীবনে ও আচরণে। যখনই কোনো প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হব, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে নিজের জীবনের মাহফিলে হারানো আনন্দকে ফিরে আসার আহ্বান জানাব।
খৈয়াম তাঁর কবিতায় ইঙ্গিত করেন যে, সাধকগণ আল্লাহর ইবাদত করেন এজন্য যে, তাঁকে ইবাদতের যোগ্য মনে করেন। তাঁরা বেহেশতের লোভে বা দোযখের ভয়ে ইবাদত করেন না। ভয় ও লোভ হচ্ছে নাফ্সের বন্ধন, যেমন মাটি, পানি আগুন ও বাতাস দেহের বাঁধন। সাধক যখন সিদ্ধিলাভের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে তার দেহও দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সৃষ্টিলোকের উপাদান চতুষ্টয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন :
আমরা আর মদিরা, বাদক ও এই বিরান ভা-ার
মন-প্রাণ, জামবাটি ও জামা মদিরার কাছে বন্ধক
রহমতের আশা ও আযাবের ভয় থেকে মুক্ত
মাটি, পানি, আগুন ও বাতাস হতে বিমুক্ত।
আদিকাল হলো সূচনাহীন কাল। আদিকাল বলতে যা বুঝায় তা সময় বা কালের সমগোত্রীয় নয়। আদি মানে এমন একটি বিষয় যার কাল বা সময় জানা নেই। কোনো কালের গ-িতে আবদ্ধ হয় না আযাল বা আদিকাল। আদি সময়ের ঊর্ধ্বে, সময়ের গ-ির বাইরে। তার সূচনার শেষ নেই। সময়ের সূচক নিয়ে যতই চিন্তা করেন, যেখানে গিয়ে আপনার চিন্তা ক্লান্ত-বিষন্ন হয়ে যাবে সেখানেই আদিকাল। মোটকথা মানুষের চিন্তা ও মন না আদি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে আর না অন্ত। এখানেই মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে আর বলে, আদির স্বরূপ আমি চিন্তা করব না, নিজের মন ও চিন্তার আওতায় তা আসে না। অন্ত বলতে যা বুঝায় তাও আমার চিন্তা ও কল্পনার আওতায় আসে না। কাজেই এটুকুই জানি যে, আদিকাল বলতে একটা কিছু আছে। অনুরূপ অন্ত বা অনন্তকাল বলতেও একটা বিষয় আছে। তবে আদি ও অন্তের স্বরূপ বা চিত্র কী তা বুঝাতে পারব না। আদির জগৎ বলতে যা বুঝায় তা ‘আলাস্তু বিরাব্বিকুম’ এর সাথে একাকার। ‘আলাস্তু বি রাব্বিকুম’ (অর্থাৎ আমি কী তোমাদের প্রতিপালক নই?)- এই পরিভাষা আমরা এ জন্য ব্যবহার করি যে, তা কুরআন মজিদে উল্লেখ আছে।
কাযা মানে আল্লাহর সামগ্রিক নির্র্দেশনা। অন্যকথায় শাশ^ত বিধান। কদর মানে পরিমাণ। এর প্রতিপাদ্য আয়াত লক্ষ করুন।
‘কোনো জিনিস এমন নেই যার উৎস ও ভা-ার আমার কাছে নেই। তবে আমি তা থেকে (হেকমত অনুযায়ী) নির্দিষ্ট পরিমাণে অবতীর্ণ করে থাকি।’ (সূরা হিজ্র, আয়াত-২১)
খৈয়াম এই মূলনীতি বিশ^াস করেন। সৃষ্টির সূচনা ও আদিকাল সম্পর্কে বিশ^াসী। আমরা এখানে রূবাই উল্লেখ করছি। এই রূবাই এর প্রথম দুই লাইনে খৈয়াম বলতে চেয়েছেন- আমাকে কোনো কিছুর জন্য দায়ী মনে করো না। কেননা, সবকিছুই স্রষ্টার ফায়সালা ও নিয়তির অমোঘ নিয়মে হচ্ছে। আমার ওপর খামোখা মন খারাপ করো না। কালের চক্রের আবর্তন যদি আমার নিয়ন্ত্রণে থাকত তাহলে আমি নিজেকে দিশেহারা অবস্থা থেকে মুক্তি দিতাম। দ্বিতীয় পঙ্ক্তিতে তিনি বলেন, আকাশম-ল বলছে, আমিও আমার ভাগ্যের হাতে দিশেহারা ঘুরছি।
আমার মনের কানে বলেছে আকাশ সংগোপনে
নিয়তির ফায়সালা জান যে তা আমার আদেশ।
আমার ঘূর্ণন চক্রের ওপর যদি আমার হাত থাকত
তাহলে নিজেকে রক্ষা করতাম দিশেহারা অবস্থা হতে।
খৈয়াম আদিকালের চিত্রকর-এ বিশ^াসী। কুরআন মজীদে আছে : ‘তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতীত অন্য ইলাহ নেই; তিনিই প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৯)
তিনিই তো আদিকাল থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
যদিও আছে রূপ ও গন্ধ সুন্দর আমার
টিউলিপের মতো চেহারা দেবদারুর গড়ন
জানা গেল না মাটির এই রঙ্গমঞ্চে কেন
কী জন্য আদি চিত্রকর সাজালেন আমাকে।
আদির রহস্যাবলি, সৃষ্টির গুঢ়তত্ত্ব, পরকাল, কিয়ামত কারো জানার আওতায় নেই। আল্লাহ ছাড়া তা কেউ জানে না। খৈয়ামও তাই বলেন,
আদির রহস্য না তুমি জান আর না আমি জানি
এই ধাঁধাঁর বাক্য না আমি পড়েছি আর না তুমি।
আমার তোমার কথাগুলো লুক্কায়িত পর্দার আড়ালে
পর্দা যখন উঠে যাবে, না তুমি থাকবে আর না আমি।
অনুরূপভাবে খৈয়াম অন্যত্র আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ^াসের এই চিন্তাধারার বিস্তার ঘটান। তিনি বলেন, এই জগৎ, আকাশ প্রকৃতি আল্লাহর কুদরতের আজ্ঞাবহ। এর মধ্যে হস্তক্ষেপ করার অধিকার ও সাধ্য কারো নেই। তিনি বলেন,
যদি খোদার মতো আসমানের ওপর আমার হাত থাকত
এই আকাশ আমি সরিয়ে নিতাম মাথার ওপর থেকে
একটি নতুন আকাশ আমি নির্মাণ করতাম
স্বাধীনচেতারা সহজে পূরণ করত মনস্কাম।
শেষের ছত্রে খৈয়াম নামপুরুষ ব্যবহার করে বলেন, আমার যদি আল্লাহর মতো ক্ষমতা চলত আকাশের ওপর, তাহলে আমি এমন একটি আকাশ নির্মাণ করতাম, যার সাহায্যে প্রত্যেক স্বাধীনচেতা মানুষ তার মনস্কাম পূর্ণ করতে পারত। এখানে খৈয়ামের সমুন্নত চিন্তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। খৈয়ামের দৃষ্টিতে কেবল স্বাধীনচেতা মানুষদেরই মনস্কামনা পূরণ হওয়া চাই। এই শ্রেণির লোকেরাই তাদের মনস্কাম পূর্ণ করতে পারে। তাদের সহায়তায় এগিয়ে যাওয়া খৈয়ামের জীবনের স্বপ্ন বটে।

*ইরানিয়ান ভিজিটিং প্রফেসর
অনুবাদ : ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

সৎ বন্ধু : অমূল্য উপহার

অনুবাদ : সরকার ওয়াসি আহম্মেদ

প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও বুদ্ধি-বিবেচনার অধিকারী ব্যক্তি এটি স্বীকার করেন যে, ধর্মীয় শিক্ষা হলো সবচেয়ে মূল্যবান উপহার যা আমরা একে অপরকে দিতে পারি এবং দেয়া উচিত, বিশেষ করে বন্ধুরা। কারণ, বন্ধুদের কল্যাণ এবং সুখের জন্য এটিই বেশি প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমান বিশে^ কিছু কিছু ব্যক্তি মনে করে যে, বস্তুগত কল্যাণ, যেমন : দামী খাবার খাওয়া, ফ্যাশনেবল পোশাক পরিধান করা এবং বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রিই শুধু তাদের প্রয়োজন। এরূপ ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে তারা যুবকদের আত্মিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন তা প্রদানের দায়িত্বকে উপেক্ষা করে।
বন্ধু হলো তারাই যারা একে অপরের সঙ্গ কামনা করে; যারা অপরের ভালো করতে চায় এ বিশ^াস থেকে যে, অপর পক্ষও সদুদ্দেশ্য নিয়ে একই রকম মনোভাব পোষণ করবে।
ইসলামে বন্ধু শব্দটির জন্য যে মূলগত অর্থ ব্যবহৃত হয় তা বন্ধুত্বের জন্য কতিপয় প্রয়োজনীয় গুণকে নির্দেশ করে- যেমন : সাদিক (সত্যবাদিতা বা সততা), খালিল (সহযোগিতা বা সম্পর্কযুক্ততা), ওয়ালি (রক্ষাকর্তা বা তত্ত্বাবধায়ক), রফিক (দয়ালু বা যত্নশীল)। একজন প্রকৃত বন্ধু কথাবার্তা ও দেখা-সাক্ষাতের সময় তোমাকে উদ্দীপ্ত করে, তার গোপন বিষয়গুলোতে তোমাকে বিশ^াস করে, তার দোয়ায় তোমাকে স্মরণ করে, তোমার চাওয়ার আগেই তোমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, প্রয়োজনের সময় তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা দেয়, তোমার আনন্দকে দ্বিগুণ করে ও তোমার দুঃখ-কষ্টে শরিক হয়।
এ জন্যই প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পাওয়া কঠিন, তাকে ছেড়ে যাওয়াও কঠিন আর তাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব।
এখানে আমরা পৃথিবীর যুবসমাজ- যাদেরকে আমরা মানব সমাজের সংগঠক মনে করি, তাদের উদ্দেশে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু উপহার দিতে চাই।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি একজন মুসলমানকে তার প্রয়োজন মতো খাওয়ায় দোযখের আগুন তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে।’
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন : ‘ তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বশ্রেষ্ঠ যে সর্বোত্তম মেজাজের অধিকারী।’
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র খাতিরে একজন ধার্মিক ব্যক্তিকে তার বন্ধু ও ধর্মের ভাই হিসেবে নির্বাচন করে সে আল্লাহ কর্তৃক জান্নাতে এমন একটি মর্যাদা পাবে যা তার অন্য কোন উত্তম কর্মের বিনিময়ে পায় নি।’
এ প্রসঙ্গে এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বন্ধু নির্বাচনে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং একজন ভালো মেজাজসম্পন্ন, জ্ঞানী এবং ধার্মিক ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার চেষ্টা করা উচিত। আর অসৎ কর্মশীল ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা পরিহার করতে হবে। ইমাম আস সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “মিথ্যাবাদী, মূর্খ, কৃপণ, ভীতু এবং অপকর্মকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকবে; (কারণ) মিথ্যাবাদী তোমাকে মিথ্যা ও অসত্যে জড়িয়ে ফেলে, মূর্খ ব্যক্তি এমনকি তোমার উপকার করতে গিয়েও তোমার ক্ষতি করে ফেলবে, কৃপণ ব্যক্তি তোমার প্রয়োজনের সময় তোমাকে অসহায় অবস্থায় ত্যাগ করবে, ভীতু ব্যক্তি যখন তোমার প্রতিরক্ষা ও সাহায্যের প্রয়োজন তখন তোমার পাশে দাঁড়াবে না এবং অপকর্মকারী সামান্য কিছুর বিনিময়েও তোমার সাথে বিশ^াসঘাতকতা করতে পারে।”
এভাবে আমাদের ধর্মীয় শিক্ষকগণ আমাদেরকে যাদের ধার্মিকতা ও সদগুণাবলি নেই তাদের সঙ্গ পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ, মূর্খ ও অপকর্মকারীদের সাথে বন্ধুত্ব কোন উপকারে তো আসেই না, বরং এ রকম বন্ধুত্ব নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিকর হতে পারে। যেহেতু যাদের জ্ঞানগত দীনতা রয়েছে এবং সৎ চারিত্রিক গুণাবলির অভাব রয়েছে, অন্যের অধিকারের প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধা নেই, এমনকি যেসব হতভাগা ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের অধিকারের প্রতিও তাদের শ্রদ্ধাবোধ নেই।
বন্ধুর অধিকার সম্পর্কে মহান ব্যক্তিবর্গ থেকে অন্তর প্রদ্দীপ্তকারী অনেক বাণী রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এখানে কয়েকটি বাণী উল্লেখ করা হলো :
মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘এক মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ব্যক্তির দর্পণ বা আয়নাস্বরূপ।’
এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ঐশী শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আমরা যা জানি, তা আমাদের বন্ধুদেরকে শিক্ষাদান করা উচিত এবং তাদের যেসব ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে সেসব শোধরানো ও তাদের অনাকাক্সিক্ষত অভ্যাস দূরীকরণে সাহায্য করা উচিত, যার মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করতে পারে। আমরা জানি, একটি আয়না আমাদেরকে দেখতে ভাল লাগছে নাকি খারাপ লাগছে, আমরা কি পরিচ্ছন্ন আছি, নাকি অপরিচ্ছন্ন- ইত্যাদি সম্পর্কে জানানোর ব্যাপারে বিশ^স্ত, সত্যিকারের বন্ধুও এমনই। একজন প্রকৃত বন্ধু হিসাবে আমাদেরও উচিত, তাদেরকে সেসব বিষয় অবহিত করা, যাতে তারা নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম কর্মটি সম্পাদন করতে পারে ও মানব জাতির জন্য তাদের দায়িত্ব পূর্ণরূপে পালন করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ভালো বন্ধু হলো এরূপ যে, যখন সে জানতে পারে তুমি তোমার পিতা-মাতার সাথে রুক্ষ বা অভদ্র আচরণ করছ, তখন সে তোমাকে এটি স্মরণ করিয়ে দেবে যে, তুমি তোমার পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনে অবহেলা করায় গুনাহ করছ এবং মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে অভিভাবকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাঁদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপভাবে একজন ভালো বন্ধু যখন জানতে পারবে যে, তুমি কারো নিন্দা করছ বা কথা বলার সময় অকথ্য ভাষা ব্যবহার করছ তখন তোমাকে উপযোগী বা মানানসই পন্থায় শোধরানোর চেষ্টা করবে।
এমন আরো অনেক উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে। একজনকে তার নিজের ও অপরের উপকারের জন্য ভালো বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করা উচিত। আর এ কথাটিও মনে রাখা উচিত যে, ইমাম আলী (আ.) আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন : ‘তোমার নিজের জন্যই একজন বিশ^স্ত ও সৎ বন্ধু খোঁজার চেষ্টা কর, তা না হলে তোমাকে অসৎ ও অধার্মিক ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে।’

বুদ্ধিমান প্রেমিক

অনুবাদ ঃ কামাল মাহমুদ

সে অনেকদিন আগের কথা। এক দেশে এক রাজা ছিলো আর তার ছিলো এক অতিব সুন্দরী কন্যা। এই রাজকন্যাকে অনেকেই বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলো।
কখনো কখনো রাজার এক বন্ধু এ বিষয়টি নানাভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করতো এবং বক্তব্যের উদ্দেশ্য বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে শেষ করতো। এমন কারো নাম উল্লেখ করতো যে যুবক যথাযথভাবে রাজকন্যার যোগ্য বলতো তার এই যোগ্যতা আছে ঐ যোগ্যতা আছে এবং সে রাজকন্যার মতো এমন মেয়েকেই বিয়ে করতে চায়। কিন্তু আবার ভয় পেতো সত্যি সত্যি যদি রাজার মেয়েকে সে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে সে হয়তো সেটা ভালোভাবে নাও নিতে পরে, হয়তো এর জবাবে কটু কথা শুনতে হতে পারে। সকলে রাজার কথায় অংশগ্রহণ করে এবং তার কথাবার্তায় সম্মতি জানায়। মনে হয় যেন প্রত্যেকেই জামাই নির্বাচন করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিয়েছে।
রাজা নিজেও বিষয়টি বুঝতো। এ কারণেই সে কারো কথার জবাবে তেমন কোন কথা বলতো না। মেয়েটিও বলতো: ‘আমি এমন স্বামী চাই যে আমাকে মনে প্রাণে চায়, শুধু রাজার জামাই হতে চায় এমন ছেলে আমি চাইনা।’
এভাবে চলতে থাকলো; এক ঈদের দিনে সকল সভাসদ, বন্ধু-বান্ধব ও নিকাটত্মীয়রা রাজার কাছে জমায়েত হলেন। এরপরে কথাবার্তার এক পর্যায়ে আবার এ বিষয়টি আসলো। রাজা বললেন: এ পর্যন্ত এ বিষয়ে অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু যে কোন কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দরকার। এখন আমি এবং আমার কন্যা এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তুত। আমার মেয়ের প্রেমিকদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচণ করবো, এ বিষয়ে আর বেশি কথা বলতে চাইনা’। আমি আমার কণ্যাকে আগামীকাল বউ সাজিয়ে এবং কারো হাতে তার হাত রাখার ব্যবস্থা করবো যে তাকে আমার কন্যাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। এজন্য যারা আমার কন্যাকে বিয়ে করতে চায় তারা যেন আগামীকাল এখানে উপস্থিত হয়। আমি তাদেরকে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য শর্তগুলো বর্ণনা করবো, আমার মেয়ে তার জীবন সঙ্গী দেখবে এবং আগামীকালই বিয়ের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে।’
সকলে ঐ দিনের মতো চলে গেলো এবং যে সকল প্রেমিক রাজকন্যাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের কাছে খবর পৌঁছে দেয়া হলো এবং বলা হলো: ‘যারা রাজার মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তারা যেন আগামীকাল উপস্থিত থাকে যাতে আমরা রাজার জামাইকে দেখতে পারি। কিন্তু রাজার মনে কি খেয়াল তা কে জানে? আমরা এরকম জামাই নির্বাচনের প্রতিযোগিতা ইতোঃপূর্বে আর দেখিনি।’
পরের দিন রাজার বাড়ীর সামনে মাত্র তিনজনকে দেখা গেলো। প্রেমিকরা ভয় পাচ্ছিলো না জানি রাজা তাদেরকে অপমান করেন? তারা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিলো। রাজা ঐ তিনজন প্রেমিককে অভ্যর্থনা জানালেন। তাদের পরিচিতি জানার পরে মেয়েকে তাদের সামনে হাজির করে বললেন: ‘আমার মনে হয় তোমরা তিনজনই আমার মেয়ের সত্যিকারের প্রেমিক’। এই আমার মেয়ে, একে ভালভাবে দেখো, আমার মেয়ে রাজী হলে আজকেই বিয়ের আয়োজন করবো। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে আমি রাজা, আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে কিছু শর্তাদি পালন করতে হবে। আমি শর্তাবলী বলার পরে তোমাদেরকে আধা ঘন্টা সময় দেবো, এরপর তোমরা তোমাদের মতামত কাগজে উপর লিখে দেবে এরপর আমি এবং আমার কন্যা সিদ্ধান্ত নেবো এরপর যা ভালো মনে হয় করবো । আমার শর্ত হলো: ‘আমার মেয়ের প্রেমিকদেরকে একটিই পিলারের সাথে বেধে ইচ্ছেমতো আঘাত করবো এরপর যদি বেঁচে থাকে, তারপর আমরা যাকে মনে করবো যে তার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো। তাকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করা হবে এই শর্তে যে- সে কোনদিন এই বাড়ীতে পা রাখতে পারবেনা। সে জীবনে আমার নামে কোন অভিযোগ করতে পারবেনা। কোন কাজের জন্য আমার কাছে আসতে পারবেনা। সে আমার কাছে কোন কিছু চাইতে পারবেনা। আমার মেয়ে যদি তার সাথে খারাপ আচরণও করে এমনকি যদি তার শরীর থেকে চামড়া তুলে নেয় তবুও। যদি এ রকম কোন অবস্থা তৈরী হয়, যদি কেউ এ শর্ত মেনে নিজেকে প্রস্তুত করতে রাজী না হয় তাহলে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এ শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে আর কোনদিন এ শহরে পা রাখতে পারবেনা। সে আমার এবং আমার কন্যার নাম মুখে নিতে পারবেনা। আর যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে আমি জানিনা যে আমি তার সাথে কি আচরণ করবো’।
‘এই নাও তিনটুকরো কাগজ। হাতে সময় আধা ঘন্টা, এই কাগজের উপর তোমাদের মতামত লিখে সই করবো যাতে আমি বুঝতে পারি কার কাছে আমার মেয়েকে সমর্পন করবো’।
এই বলে রাজা তিনজনের কাছে তিনটুকরো কাগজ দিয়ে তিনজনকে আলাদা আলাদা রুমে রাখলেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন।
আধা ঘন্টা পরে রাজা, তার মেয়ে, কাজী, মৌলভী এবং বিবাহের রেজিস্টার নিয়ে আসলেন এবং ঐ কাগজগুলো আনার নির্দেশ দিলেন। তাদের মধ্যে একজন যুবক তার লেখা রাজার হাতে দিলেন। রাজা সেটি হাতে নিয়ে বললেন-এতো একটি, পরের জন তার লেখা দিলো রাজা সেটি হাতে নিয়ে বললেন- এতো দুইটি। তৃতীয় লেখাটি নিয়ে বললেন-‘এবার তোমাদের একে একে পরীক্ষা করবো’।
প্রথম যুবক লিখেছে-‘এটা খুবই কঠিন যে, আমি আমার ভালোবাসা ভুলে যাবো, কিন্তু যেহেতু রাজার হুকুম তাই চেষ্টা করবো যাতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে শহর ছেড়ে যেতে পারি। আশা করি রাজা এবং তার আত্মীয় স্বজনরা আমার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করবেন না। কেননা আমি তার একমাত্র প্রেমিক ছিলাম এবং এর মধ্যে কোন পাপ ছিলোনা’।
রাজা এবং তার মেয়ে ঐ লেখা দেখে মুচকি হাসলেন। রাজা বললেন-বেশ ভালো! এটা বোঝা গেল যে, সে প্রকৃত প্রেমিক নয়। সে তো ধূর্ত, দুর্বল ও পলায়মান। সে মেয়েকে বিয়ে করে রাজার সান্নিধ্যে আসতে চেয়েছিলো। ভালোবাসার ব্যাপারে তার কোন মাথাব্যথা ছিলোনা। এ ব্যক্তি জানেনা যে, কোন কিছু অর্জন করতে অনেক মসিবত অতিক্রম করতে হয়। সে তার সমস্ত জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে চেষ্টা করে কিছু হাসিল করতে না পারলে মাঝপথে পলায়ন করে। এই যুবক ভীতু এবং বুদ্ধিহীন কেননা সে চিন্তা করে কোন পথ বের করার কোন চিন্তাই করেনি। সব সময় মানুষ নিজেকে সবচেয়ে ভালো চেনে এবং এই পলাতক প্রেমিকে আমাদের কোন কাজ নেই বরং তার চলে যাওয়াই ভালো। সে যেন পিছনের দিকে ফিরে না চায়। আমরা তাকে ভুলে যাবো যাতে সে তার মতো করে ভালো থাকতে পারে’। পলায়নপর প্রেমিককে মুক্ত করে দেওয়া হলো। এবার দ্বিতীয় জনের পালা।
দ্বিতীয় জন লিখেছে- আমি রাজা এবং তার কন্যার সকল শর্ত গ্রহণে রাজি এবং তা বাস্তবায়ন করতেও প্রস্তুত। যদি আমি মারধরের পরে জীবিত থাকি তাহলে আমি আমার লক্ষ্যে পৌছুতে পারবো আর যদি জীবিত না থাকি তাহলে পরজগতে তার জন্য কাঁদবো কেননা আমার জীবনে আমি আর কিছু চাইনা হয় মৃত্যু অথবা এই রাজকন্যা।
রাজা এ লেখা পড়ার পরে কন্যাকে বললেন- এর ব্যাপারে তোমার মতামত কি?
রাজকন্যা বললো- আমি পাগল স্বামী চাইনা।
রাজা বললেন- মাশাআল্লাহ মা, তুমি ঠিকই বলেছো। এই যুবক পিলারের সাথে বাঁধা অবস্থায় মার খেতে রাজি এরপর আমার একজন আদেশের গোলাম হতে চায় এবং সে আমার থেকে দূরে থাকতে চায় সে আমাকে ভয় করে কেননা যদি শেষ পর্যন্ত রাজার তরবারি তার মাথাকে শরীর থেকে আলাদা করে দেয় সেজন্যও সে প্রস্তুত। কিন্তু আমার মেয়ে অন্যান্য মেয়েদের থেকে কত আলাদা? সে প্রেমের বিনিময়ে এই দুই জনের দূর্ভাগ্য কিনতে চায়নি। আমিও এটা বিশ^াস করতে পারছিনা যে, এই লোক এক সময় সুস্থ জ্ঞানবান হবে। এই যুবককে পাগলা গারদে বা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো উচিত যাতে সে নিজের চিকিৎসা করতে পারে। আর সে যেন দ্বিতীয়বার আমার মেয়ের নাম নিতে না পারে। এই যুবক প্রেমিক নয়, সে পাগল। পাগল জামাই দিয়ে আমার কাজ নেই। সে খুব দ্রুতই আমাদেরকে ভুলে যাবে তাই আমাদেরও উচিত তাকে ভুলে যাওয়া, যাতে সে শান্তিতে থাকতে পারে।
তৃতীয় যুবকের লেখা পড়বার পালা। সে লিখেছে- আমার একটি চাচাতো বোন আছে যার কোন দোষ আমার চোখে ধরা পড়েনি। তবুও আমি রাজার মেয়েকে অধিক ভালোবাসি এবং স্বপ্ন দেখি যে, আমরা অধিকতর সুখী হবো। আমি শহর থেকে বাইরে যাবোনা, যদি আমাকে বাধ্য করা হয় তাহলে তা হবে আমার উপর জুলুম। কেননা আমি একজন নিরীহ মানুষ। কিন্তু রাজ কন্যাকে বিবাহের জন্য চাবুক খাওয়ার শর্ত এবং পরবর্তীতে বেচে থাকা জীবনে নিপীড়ন সেটাও আমি পছন্দ করিনা, কেননা এতে স্বয়ং রাজকন্যার জীবনেও শান্তি এনে দিবেনা, আমি এমন প্রেমিক ও আগ্রহি যাতে রাজকন্যাও আমাকে পছন্দ করে এবং রাজাও তার শর্ত শিথীল করেন। আর তা যদি না হয় তাহলে আমার চাচাতো বোন কি দোষ করেছে? আমি মনে করি সকল সমস্যা সমাধানের তৃতীয় কোন পথ আছে। আশা করি রাজা আমার এ লেখাকে অক্ষমতা হিসেবে বিবেচনা করবেন না। কেননা আমার কারো সাথে কোন বিবাদ নেই। কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাই এবং ভালোভাবে জীবন যাপন করতে চাই এবং সব সময় রাজকন্যাকে খুশী দেখতে চাই।
রাজা কন্যাকে জিজ্ঞেস করলেন- এর ব্যাপারে তোমার কী মতামত?
রাজকন্যা বললো: আপনার যা মর্জি। আর তো কেউ অবশিষ্ট নাই।
রাজা মুচকি হেসে বললেন- ‘খুব ভালো! এই যুবক বুদ্ধিমান। সে জানে যে, তার চাচাতো বোনের সাথে আমার মেয়ের কোন পার্থক্য নাই। কিন্তু আমার মেয়েকে বেশি ভালোবাসে এবং চিন্তা করে যে তোমার জীবন সুন্দর হোক। এই যুবক বুদ্ধিমান এজন্য যে, সে শহর থেকে বের হওয়ার ভয় করেনা এবং সময়ের কাছে সে আত্মসমর্পণ করেনা এবং সে তৃতীয় কোন পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। আমার শর্তাবলী ছিলো শুধু পরীক্ষার জন্য। আমারও কারো সাথে কোন বিবাদ নেই। আমিও আমার মেয়ের কল্যাণ ও সুখ চাই। এখন এই যুবকের অধিকার আছে আমার মেয়েকে বিয়ে করার। যদি সে রাজি থাকে তবে শর্তহীনভাবে আজকেই বিয়ের অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করবো। আর যদি সে রাজি না থাকে তবে বুঝবো সে তার চাচাতো বোনের সাথেই ভালো থাকবে। আমরাও তার বিবাহ অনুষ্ঠানে যাবো এবং তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাবো। হে যুবক! এখন তোমার শেষ কথা বলো’।
যুবক বললো- ‘আমি এ মেয়ের সাথে বিবাহের জন্যই অধিকতর আগ্রহি’।
রাজকন্যা বললো- ‘আমিও….’
রাজা বললেন- ‘আমিও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাই এবং সৌভাগ্য কামনা করি, আশা করি তোমরা সুখী হবে।’

কীভাবে তোমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করবে : হিংসা

সংকলন : আফসানেহ আরযমান্দ
মানবীয় অনুভূতিসমূহের মধ্য থেকে এমন একটি অনুভূতি যা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে খুবই ক্ষতিকর এবং পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে তা হলো হিংসা। কিন্তু হিংসা কী এবং কীভাবে আমরা এটি দমন করব ও একে আমাদের কল্যাণে ব্যবহার করব ?
হিংসার সংজ্ঞা
হিংসাকে অনেক ভাবেই সংজ্ঞায়িত করা যায় এবং কীভাবে একজন ব্যক্তি এই আবেগকে পরিচালিত করতে পারে সে সম্পর্কে প্রত্যেক বিশেষজ্ঞেরই নিজস্ব মতামত রয়েছে। যদি তুমি একবার একে নিয়ন্ত্রণে আনতে পার, তা হলে তুমি সুখী জীবন যাপন করতে পারবে।
হ্যারল্ড কফিনের অভিমত অনুযায়ী হিংসা হলো ‘যে শিল্পের মাধ্যমে নিজের কল্যাণসমূহের পরিবর্তে অন্যের কল্যাণসমূহ গণনা করা হয়।’
অপরদিকে হিংসা ইতিবাচকও হতে পারে এবং তোমার জীবনে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রেরণাদায়ক হতে পারে। এটি হিংসা সম্পর্কে আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে যার মাধ্যমে তুমি সাফল্য, ব্যক্তিত্ব, শক্তিমত্তা এবং অন্যান্য ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তিদের মতো হওয়ার ইচ্ছা পোষণ কর।
এটি তোমাকে তাদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী করে তোলে এবং তোমার নিজের সুপ্ত গুণাবলি খুঁজে পেতে এবং জীবনে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। যখন আমরা অন্যদের সুখে সুখী হতে পারব তখন আমরা নিজেদেরকে অধিকতর সুখী অনুভব করব এবং একই সময়ে আমরা তাদের পথে চলার চেষ্টা করব- যদি আমরা বিশ^াস করি যে, তারা নিজেদের নেয়ামতকে গণণা করেই কোন না কোনভাবে সফল হয়েছে বা জীবনে অগ্রসর হয়েছে।
আমাদের যা নেই, তা নিয়ে বিলাপ করার চেয়ে আমাদের যা আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাটাই আমাদেরকে অধিকতর সুখকর জীবনের দিকে পরিচালিত করে। হিংসা তোমার কাঁধে একটি ছোট শয়তানের ন্যায় হতে পারে যা তোমার কানে ফিসফিস করে, তোমার অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং তোমার জীবনকে এমন কিছুতে পরিণত করে যা প্রায়শই ভোগান্তি এবং অধিক মাত্রায় নেতিবাচকতায় পূর্ণ। অথবা হিংসা এমন কিছু হতে পারে যা তোমাকে মাঝে মাঝে ভীষণ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
হিংসা থেকে পরিত্রাণের উপায়
১. যদি হিংসার কারণ হয় তুলনা করা, তবে নিজের প্রতি দৃষ্টি দাও
আসলে সবসময় কেউ না কেউ থাকে যার অবস্থান তোমার থেকে উত্তম- সেটা ক্লাসেই হোক কিংবা বাড়িতে আর তুমি যদি এখানে হিংসার মনোভাব পোষণ কর তবে এটি নিশ্চিত যে, তোমার জন্য এটি সর্বদা তিক্ত অনুভূতি হয়ে থাকবে। এজন্য তোমার নিজের প্রতিভা ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যর প্রতি দৃষ্টি দাও এবং সচেতন হও যে, ‘অপর পাশের ঘাসগুলো সর্বদাই বেশি সতেজ হয়।’
তোমার যা আছে সেটির দিকে দৃষ্টি দাও এবং নিরর্থক তুলনার মাধ্যমে নিজেকে কষ্ট দিও না যা তোমাকে প্রকৃত অর্থে কোন অবস্থানে নিয়ে যাবে না।
২. নিজের যা আছে তা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাক
এই বিষয়টিকে দৈনন্দিন চর্চার বিষয়ে পরিণত কর, এমনকি অল্প সময়ের জন্য হলেও। দীর্ঘ সময় পর তুমি একটি বিশাল পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবে। এই সময়ে উত্তম হবে যে, দিনের একটি ঘণ্টা তুমি নির্দিষ্ট করবে তোমাকে প্রদত্ত সকল নেয়ামতের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার জন্য; এসকল নেয়ামতের একটি তালিকা তৈরি কর- এটি যত বড় কিংবা ছোট নেয়ামতই হোক না কেন। তাহলে তুমি কৃতজ্ঞ ও আশ্বস্ত হবে এবং সত্যিসত্যিই আশ্চর্যান্বিত হবে।
৩. অভাব-অনটনকে বা কোনো কিছু হারানোকে ভয় পাবে না
যদি তুমি চিন্তা কর যে, অন্য কেউ তোমার স্থান নিয়ে নিয়েছে অথবা তুমি প্রতিনিয়ত কোনো কিছু হারানোর ভয় কর, তাহলে তুমি অন্যের প্রতি তীব্র হিংসাপরায়ণ হয়ে উঠবে। বৃহৎ পরিসরে চিন্তা কর এবং জীবনে নিজের স্থান নিয়ে কখনও চিন্তা করো না। কারণ, শীঘ্রই কিংবা পরবর্তীকালে তুমি তোমার পরিকল্পনা, সততা ও কঠোর কর্মের মাধ্যমে তোমার প্রাপ্য স্থান পেয়ে যাবে। এ ছাড়া তুমি এখনই কেন এসব বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করছ?
৪. স্বাভাবিক জীবন যাপন কর
কোনো কিছু না করে বসে থেক না। কারণ, এ ক্ষেত্রে তোমার নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রচ-ভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং এত দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। জীবনকে উপভোগ কর এবং তোমার মধ্যে যে সকল ঘাটতি রয়েছে সেগুলো নিয়ে অধিক সময় ধরে প্রচেষ্টা চালাও।
৫. লোভী হয়ো না
তুমি বুঝে ওঠার আগেই তুমি লোভী হয়ে উঠতে পার এবং তখন হিংসা তার ভয়ানক ছায়ার মাধ্যমে তোমার পশ্চাদ্ধাবন করবে। তুমি ভাল হওয়ার প্রতিযোগিতাকে একটি উপকারী উচ্চাকাক্সক্ষী কারণ হিসেবেও গ্রহণ করতে পার এবং জীবনে কিছু করতে পার। কিন্তু এটি যেন তোমাকে ধ্বংস না করে। আর অনুসরণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ব্যক্তি হলো তারা যারা কাউকে হিংসা করে না; কারণ, তাদের মধ্যে আসলেই বিশেষ কিছু রয়েছে। বরং তাদের প্রতি হিংসা নয়,আমরা তাদেরকে অনুসরণ করতে পারি এবং কীভাবে অন্য ব্যক্তির সাথে নিজেদেরকে তুলনা করেও স্থির ও আরামে থাকা যায় তার শিক্ষা লাভ করতে পারি।
অনুবাদ : সরকার ওয়াসি আহম্মেদ

প্রকৃতিতে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন

 

এই পৃথিবী যেখানে আমরা মানবজাতি সহ আরও বিভিন্ন প্রাণী বসবাস করি তা নিঃসন্দেহে খুবই চমকপ্রদ। কারণ, আমরা আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে নানা ধরনের সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখতে পাই। একজন ঈমানদার ব্যক্তির কাছে এগুলো মহান আল্লাহর নিদর্শন বলে গণ্য এবং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এসব বিষয়ে কী শিক্ষা দিয়েছেন তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত। সকলের উপকারিতার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রকৃতি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের কয়েকখানা আয়াত এখানে তুলে ধরব যার মাধ্যমে তোমরা মহান আল্লাহ্র পরিচয় সম্পর্কে অবগত হতে পার-
‘এবং তিনি সেই সত্তা যিনি ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে অটল পাহাড় ও নদ-নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক ফল জোড়া-জোড়া সৃষ্টি করেছেন; তিনি রাতের আবরণে দিনকে আবৃত করেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন আছে।’-সূরা রা‘দ : ৩
‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এটিও একটি যে, তিনি তোমাদের শংকা ও আশার উদ্রেক করার জন্য বিজলী প্রদর্শন করেন এবং আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন; পরে এর দ্বারা ভূমিকে এর মৃত্যুর পর সজীব করেন; নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’-সূরা রূম : ২৪
‘এর (পানি) দ্বারা তিনি তোমাদের জন্য শস্য, যায়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সর্ব প্রকার ফল উৎপন্ন করেন; নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’-সূরা নাহল : ১১
‘তিনিই রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং নক্ষত্রপুঞ্জও তাঁরই আদেশে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত; নিশ্চয় এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। এবং তিনি ভূমিতে তোমাদের জন্য যেসব রং-বেরঙের বস্তু উৎপন্ন করেছেন তাতেও উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’-সূরা নাহল : ১২-১৩
‘অতঃপর সর্বপ্রকার ফল হতে (কিছু কিছু) খাও এবং তোমার প্রতিপালকের পথে বিনয়ের সাথে চলতে থাক; তার (মক্ষিকার) পেট থেকে বিবিধ বর্ণের পানীয় নির্গত হয় এবং তাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য; নিশ্চয় চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’-সূরা নাহল : ৬৯
‘আমরা যদি এই কুরআন কোন পর্বতের ওপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি প্রত্যক্ষ করতে তা আল্লাহ্র ভয়ে অবনত ও বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছে। এই দৃষ্টান্তসমূহ- যা আমরা মানুষের জন্য বিবৃত করি যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।’-সূরা হাশ্র : ২১

ইলশে গল্প

সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্ –

টুম্পাদের বাড়িতে আজ যেন উৎসব লেগেছে। আশপাশের সবাই আসছে তাদের বাড়ি। কারণ, একটাই। লন্ডন থেকে টুম্পার ভাইয়া ভাবি এসেছে। আবার তাদের সাথে ছোট্ট একটা মিষ্টি বাবুও এসেছে। পাশের বাড়ির চাচি, চাচাতো ভাই-বোন সবাই এসে বাবুটাকে দেখে যাচ্ছে! আর এদিকে আনন্দে ও গর্বে টুম্পার মুখের হাসিটা কান পর্যন্ত লম্বা হয়ে আছে। তার ছোট্ট ভাগ্নিটাকে তো সে হাতছাড়াই করে না। বাড়ি জুড়ে আনন্দই আনন্দ।
ভাগ্নিটার নাম এলিনা। এলিনাকে ঘিরে সবাই খেতে বসল। টুম্পার মা খুব সখ করে এলিনার পাতে এক টুকরো মাছ দিলেন। সাথে সাথে এলিনা বলে উঠল, ‘এটা কী মাছ? ’টুম্পা বলল, ‘ইলিশ। খাও, খুব মজা। আমাদের খুব প্রিয় মাছ এটি।’
‘এটা তোমাদের প্রিয় কেন?’
এলিনার এই প্রশ্নে হেসে ফেলল সবাই। টুম্পার বাবা এলিনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘এটা খেলেই বুঝতে পারবে, কেন সবার প্রিয়।’
এলিনা খুব যত্ন করে মাছের কাঁটাগুলো বেছে মাছটা খেলো। তারপর সে হাতের আঙুল চুষতে চুষতে বলল, ‘আরো খাবো।’
তার পাতে আরেক টুকরো মাছ দেওয়া হলো। সে খেয়ে বলল, ‘আমি এত মজার মাছ আর খাই নি।’
টুম্পার বাবা গর্ব করে বললেন, ‘এবার বুঝেছ এটা কেন সবার এত প্রিয় ? এর স্বাদ, গন্ধই আলাদা। আর এটাই হলো আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ!’
এলিনা টুম্পার মার দিকে চোখ রাখল। সে বায়না ধরে ডানে-বামে শরীর ঝাঁকিয়ে বলল, ‘এবার ফিরে যাওয়ার সময় আমরা ইলিশ মাছ নিয়ে যাব কিন্তু!’
আনন্দে সবার মুখ চিকচিক করে উঠলো।

নাসা স্পেস অ্যাপস লোকাল লিড অ্যাওয়ার্ডে দিদারুল আলমকে আন্তর্জাতিক সম্মাননা প্রদান

বৈশ্বিক উদ্ভাবনের অন্যতম বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম NASA International Space Apps Challenge-এর পক্ষ থেকে দিদারুল আলম-কে NASA Space Apps Local Lead Award প্রদান করা হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্ব ও মহাকাশ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তার অসাধারণ নেতৃত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
২২-২৩ জুলাই, ২০১৯ তারিখে আয়োজিত এই সম্মাননাটি বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ সফলভাবে সংগঠনের জন্য তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেয়।
নাসার Earth Science Division উদ্যোগের অংশ হিসেবে আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ একটি বৈশ্বিক হ্যাকাথন, যেখানে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি শহরের হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগীরা নাসার উন্মুক্ত ডেটা ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত সংকট, মহাকাশ গবেষণা সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমাধান খোঁজেন।

দিদারুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশে তরুণ বিজ্ঞানী, প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, প্রকৌশলী এবং উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে একটি সৃজনশীল এবং সহনির্মাণমূলক পরিবেশ তৈরি হয়। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাধারা ও প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়।
এই সম্মাননাপত্রটি NASA সদর দপ্তরের Earth Science Division-এর অ্যাক্টিং ডেপুটি ডিরেক্টর পাউলা বন্টেম্পি স্বাক্ষর করেন, যা দিদারুল আলমের বৈশ্বিক নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের তরুণদের বিজ্ঞানমুখী করে তোলার প্রচেষ্টার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত।

তার এই অর্জন শুধু ব্যক্তিগত সম্মান নয়, বরং এটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জগতে একটি গর্বের মুহূর্ত যা নতুন প্রজন্মকে বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করবে।

প্রকৃতিতে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন

 

এই পৃথিবী যেখানে আমরা মানবজাতি সহ আরও বিভিন্ন প্রাণী বসবাস করি তা নিঃসন্দেহে খুবই চমকপ্রদ। কারণ, আমরা আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে নানা ধরনের সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখতে পাই। একজন ঈমানদার ব্যক্তির কাছে এগুলো মহান আল্লাহর নিদর্শন বলে গণ্য এবং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এসব বিষয়ে কী শিক্ষা দিয়েছেন তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত। সকলের উপকারিতার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রকৃতি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের কয়েকখানা আয়াত এখানে তুলে ধরব যার মাধ্যমে তোমরা মহান আল্লাহ্র পরিচয় সম্পর্কে অবগত হতে পার-
‘এবং তিনি সেই সত্তা যিনি ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে অটল পাহাড় ও নদ-নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক ফল জোড়া-জোড়া সৃষ্টি করেছেন; তিনি রাতের আবরণে দিনকে আবৃত করেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন আছে।’-সূরা রা‘দ : ৩
‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে এটিও একটি যে, তিনি তোমাদের শংকা ও আশার উদ্রেক করার জন্য বিজলী প্রদর্শন করেন এবং আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন; পরে এর দ্বারা ভূমিকে এর মৃত্যুর পর সজীব করেন; নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’-সূরা রূম : ২৪
‘এর (পানি) দ্বারা তিনি তোমাদের জন্য শস্য, যায়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সর্ব প্রকার ফল উৎপন্ন করেন; নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’-সূরা নাহল : ১১
‘তিনিই রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং নক্ষত্রপুঞ্জও তাঁরই আদেশে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত; নিশ্চয় এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। এবং তিনি ভূমিতে তোমাদের জন্য যেসব রং-বেরঙের বস্তু উৎপন্ন করেছেন তাতেও উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’-সূরা নাহল : ১২-১৩
‘অতঃপর সর্বপ্রকার ফল হতে (কিছু কিছু) খাও এবং তোমার প্রতিপালকের পথে বিনয়ের সাথে চলতে থাক; তার (মক্ষিকার) পেট থেকে বিবিধ বর্ণের পানীয় নির্গত হয় এবং তাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য; নিশ্চয় চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’-সূরা নাহল : ৬৯
‘আমরা যদি এই কুরআন কোন পর্বতের ওপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি প্রত্যক্ষ করতে তা আল্লাহ্র ভয়ে অবনত ও বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছে। এই দৃষ্টান্তসমূহ- যা আমরা মানুষের জন্য বিবৃত করি যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।’-সূরা হাশ্র : ২১

সৎ বন্ধু : অমূল্য উপহার

অনুবাদ : সরকার ওয়াসি আহম্মেদ

প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও বুদ্ধি-বিবেচনার অধিকারী ব্যক্তি এটি স্বীকার করেন যে, ধর্মীয় শিক্ষা হলো সবচেয়ে মূল্যবান উপহার যা আমরা একে অপরকে দিতে পারি এবং দেয়া উচিত, বিশেষ করে বন্ধুরা। কারণ, বন্ধুদের কল্যাণ এবং সুখের জন্য এটিই বেশি প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমান বিশে^ কিছু কিছু ব্যক্তি মনে করে যে, বস্তুগত কল্যাণ, যেমন : দামী খাবার খাওয়া, ফ্যাশনেবল পোশাক পরিধান করা এবং বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রিই শুধু তাদের প্রয়োজন। এরূপ ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে তারা যুবকদের আত্মিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন তা প্রদানের দায়িত্বকে উপেক্ষা করে।
বন্ধু হলো তারাই যারা একে অপরের সঙ্গ কামনা করে; যারা অপরের ভালো করতে চায় এ বিশ^াস থেকে যে, অপর পক্ষও সদুদ্দেশ্য নিয়ে একই রকম মনোভাব পোষণ করবে।
ইসলামে বন্ধু শব্দটির জন্য যে মূলগত অর্থ ব্যবহৃত হয় তা বন্ধুত্বের জন্য কতিপয় প্রয়োজনীয় গুণকে নির্দেশ করে- যেমন : সাদিক (সত্যবাদিতা বা সততা), খালিল (সহযোগিতা বা সম্পর্কযুক্ততা), ওয়ালি (রক্ষাকর্তা বা তত্ত্বাবধায়ক), রফিক (দয়ালু বা যত্নশীল)। একজন প্রকৃত বন্ধু কথাবার্তা ও দেখা-সাক্ষাতের সময় তোমাকে উদ্দীপ্ত করে, তার গোপন বিষয়গুলোতে তোমাকে বিশ^াস করে, তার দোয়ায় তোমাকে স্মরণ করে, তোমার চাওয়ার আগেই তোমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, প্রয়োজনের সময় তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা দেয়, তোমার আনন্দকে দ্বিগুণ করে ও তোমার দুঃখ-কষ্টে শরিক হয়।
এ জন্যই প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পাওয়া কঠিন, তাকে ছেড়ে যাওয়াও কঠিন আর তাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব।
এখানে আমরা পৃথিবীর যুবসমাজ- যাদেরকে আমরা মানব সমাজের সংগঠক মনে করি, তাদের উদ্দেশে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু উপহার দিতে চাই।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি একজন মুসলমানকে তার প্রয়োজন মতো খাওয়ায় দোযখের আগুন তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে।’
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন : ‘ তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বশ্রেষ্ঠ যে সর্বোত্তম মেজাজের অধিকারী।’
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র খাতিরে একজন ধার্মিক ব্যক্তিকে তার বন্ধু ও ধর্মের ভাই হিসেবে নির্বাচন করে সে আল্লাহ কর্তৃক জান্নাতে এমন একটি মর্যাদা পাবে যা তার অন্য কোন উত্তম কর্মের বিনিময়ে পায় নি।’
এ প্রসঙ্গে এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বন্ধু নির্বাচনে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং একজন ভালো মেজাজসম্পন্ন, জ্ঞানী এবং ধার্মিক ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার চেষ্টা করা উচিত। আর অসৎ কর্মশীল ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা পরিহার করতে হবে। ইমাম আস সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “মিথ্যাবাদী, মূর্খ, কৃপণ, ভীতু এবং অপকর্মকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকবে; (কারণ) মিথ্যাবাদী তোমাকে মিথ্যা ও অসত্যে জড়িয়ে ফেলে, মূর্খ ব্যক্তি এমনকি তোমার উপকার করতে গিয়েও তোমার ক্ষতি করে ফেলবে, কৃপণ ব্যক্তি তোমার প্রয়োজনের সময় তোমাকে অসহায় অবস্থায় ত্যাগ করবে, ভীতু ব্যক্তি যখন তোমার প্রতিরক্ষা ও সাহায্যের প্রয়োজন তখন তোমার পাশে দাঁড়াবে না এবং অপকর্মকারী সামান্য কিছুর বিনিময়েও তোমার সাথে বিশ^াসঘাতকতা করতে পারে।”
এভাবে আমাদের ধর্মীয় শিক্ষকগণ আমাদেরকে যাদের ধার্মিকতা ও সদগুণাবলি নেই তাদের সঙ্গ পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ, মূর্খ ও অপকর্মকারীদের সাথে বন্ধুত্ব কোন উপকারে তো আসেই না, বরং এ রকম বন্ধুত্ব নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিকর হতে পারে। যেহেতু যাদের জ্ঞানগত দীনতা রয়েছে এবং সৎ চারিত্রিক গুণাবলির অভাব রয়েছে, অন্যের অধিকারের প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধা নেই, এমনকি যেসব হতভাগা ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের অধিকারের প্রতিও তাদের শ্রদ্ধাবোধ নেই।
বন্ধুর অধিকার সম্পর্কে মহান ব্যক্তিবর্গ থেকে অন্তর প্রদ্দীপ্তকারী অনেক বাণী রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এখানে কয়েকটি বাণী উল্লেখ করা হলো :
মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘এক মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ব্যক্তির দর্পণ বা আয়নাস্বরূপ।’
এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ঐশী শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আমরা যা জানি, তা আমাদের বন্ধুদেরকে শিক্ষাদান করা উচিত এবং তাদের যেসব ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে সেসব শোধরানো ও তাদের অনাকাক্সিক্ষত অভ্যাস দূরীকরণে সাহায্য করা উচিত, যার মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করতে পারে। আমরা জানি, একটি আয়না আমাদেরকে দেখতে ভাল লাগছে নাকি খারাপ লাগছে, আমরা কি পরিচ্ছন্ন আছি, নাকি অপরিচ্ছন্ন- ইত্যাদি সম্পর্কে জানানোর ব্যাপারে বিশ^স্ত, সত্যিকারের বন্ধুও এমনই। একজন প্রকৃত বন্ধু হিসাবে আমাদেরও উচিত, তাদেরকে সেসব বিষয় অবহিত করা, যাতে তারা নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম কর্মটি সম্পাদন করতে পারে ও মানব জাতির জন্য তাদের দায়িত্ব পূর্ণরূপে পালন করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ভালো বন্ধু হলো এরূপ যে, যখন সে জানতে পারে তুমি তোমার পিতা-মাতার সাথে রুক্ষ বা অভদ্র আচরণ করছ, তখন সে তোমাকে এটি স্মরণ করিয়ে দেবে যে, তুমি তোমার পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনে অবহেলা করায় গুনাহ করছ এবং মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে অভিভাবকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাঁদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপভাবে একজন ভালো বন্ধু যখন জানতে পারবে যে, তুমি কারো নিন্দা করছ বা কথা বলার সময় অকথ্য ভাষা ব্যবহার করছ তখন তোমাকে উপযোগী বা মানানসই পন্থায় শোধরানোর চেষ্টা করবে।
এমন আরো অনেক উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে। একজনকে তার নিজের ও অপরের উপকারের জন্য ভালো বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করা উচিত। আর এ কথাটিও মনে রাখা উচিত যে, ইমাম আলী (আ.) আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন : ‘তোমার নিজের জন্যই একজন বিশ^স্ত ও সৎ বন্ধু খোঁজার চেষ্টা কর, তা না হলে তোমাকে অসৎ ও অধার্মিক ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে।’