All posts by dreamboy

মহান আল্লাহর পরিচয়

 

গোলাম রেযা হায়দারী আবহুরী
অনুবাদ : আব্দুল কুদ্দুস বাদশা

আল্লাহর রহমত লাভ

‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে স্বীয় রহমতে অন্তর্ভুক্ত করবেন।’
(সূরা জাছিয়া, আয়াত নং ৩০)

কিভাবে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়?
দয়াময় আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন : ‘আমার রহমত সর্বত্র বিস্তৃত হয়েছে।’
আল্লাহর রহমত গোটা দুনিয়াকে ভরিয়ে তুলেছে। বিশ্বের সকল সৃষ্টিই আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভে ধন্য হয়। আল্লাহ কাউকেই স্বীয় রহমত থেকে বঞ্চিত করেন নি। এমনকি কাফেরদেরকেও তিনি অনেক নেয়ামত দান করেছেন।
পৃথিবীতে এই যে অসংখ্য প্রকার জীবজন্তু রয়েছে আল্লাহ প্রত্যেক দিনই তাদের আহার যুগিয়ে থাকেন এবং তাদের জীবনকে মিষ্টি ও উপভোগ্য করে তোলেন। তুমি যে প্রাণিকেই দেখ না কেন আল্লাহ তাকে কোনো না কোনো একটা উপায় দান করেছেন যেন তারা জীবন নির্বাহ করতে সাহায্য করে। আল্লাহ জিরাফকে দীর্ঘ গলা দিয়েছেন যার সাহায্যে সে উঁচু গাছের পাতা ছিড়ে খেতে পারে। হাতিকে লম্বা শুঁড় দিয়েছেন যার সাহায্যে সে মাটি থেকে খাবার ও পানি তুলে খেতে পারে। মাছকে পাখনা ও লেজ দিয়েছেন যাতে সে ঐগুলোর সাহায্যে পানিতে সাঁতার কেটে বেড়াতে ও তার খাবার খুঁজে নিতে পারে। পাখিকে ডানা দিয়েছেন যার সাহায্যে সে উড়ে গিয়ে তার পছন্দের আহার সংগ্রহ করতে পারে।
সুতরাং আমরা আল্লাহর রহমত লাভের জন্য চেষ্টা চালানোর আগেই তাঁর রহমত পেয়ে গেছি। আল্লাহর রহমত সমস্ত দুনিয়ায় ভরে রয়েছে। আমরা মানুষরাও তাঁর রহমত থেকে উপকার লাভ করে থাকি।
অবশ্য আল্লাহর বিশেষ এক ধরনের রহমতও রয়েছে, যা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হয়। তোমার উপরিউক্ত প্রশ্নটিও নিশ্চয় সেই বিশেষ ধরনের রহমত সম্পর্কেই করেছ। পবিত্র কুরআন এ সম্পর্কে বলে : ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে স্বীয় রহমতে অন্তর্ভুক্ত করবেন।’ সুতরাং আল্লাহর ঐ বিশেষ রহমত লাভ করতে হলে দুটি শর্ত রয়েছে : একটি হলো ঈমান রাখা এবং দ্বিতীয়টি হলো ভালো কাজ করা।
ঈমানের অর্থ হলো এটা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ হলেন এক ও অদ্বিতীয়, তিনি ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদত করা যায় না। আর ভালো কাজ বলতে সেই কাজগুলো বুঝায়, যেগুলো পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে করতে বলেছেন। তদ্রƒপ মহানবী (সা.) ও পবিত্র ইমামগণও আমাদেরকে যেসব কাজ করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
মাতাপিতাকে শ্রদ্ধা করা, পবিত্র কুরআন পাঠ করা, অন্যদেরকে সাহায্য করা, অসুস্থ লোকদের দেখতে যাওয়া, শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জন করা, রোযা রাখা, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাসপাতাল নির্মাণ করা ইত্যাদি কাজগুলো হলো কিছু ভালো কাজের উদাহরণ, যার মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করা যেতে পারে।
সুতরাং আল্লাহর অধিক রহমত লাভ করতে হলে তাঁর প্রতি ঈমান রাখতে হবে এবং তাঁর কথা মেনে চলতে হবে। তা হলেই তাঁর বিশেষ রহমত লাভ করতে পারব, যে রহমত আমাদেরকে আল্লাহর প্রিয় হতে এবং আমাদের অন্তরের প্রশান্তি অর্জনে ও বেহেশতে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে।

প্রিয় নবী

ইয়াকুব আলী রনি

সবার প্রিয় নবী তিনি
আছেন হৃদয় জুড়ে
দুরূদ সালাম জানাই আমি
যাই না যত দূরে।

তাঁর দেখানো পথে চললে
পাবে তুমি শান্তি,
ঐ নামেতে মধু আছে
লাগে না তো ক্লান্তি।

মহানবীর অনুসারী
আমরা উম্মত
ইচ্ছা আছে করতে যাবো
মদীনা যিয়ারত।

ওগো খোদা নবীর জন্য
করছি মুনাজাত,
রোজ হাশরে নবী মোদের
করবেন সাফাআত

বিজয় এলো দেশে
নজমুল হক চৌধুরী

বিজয় সে তো সবার কাছেই মধুর চেয়ে প্রিয়
বিজয় দিবস কেমনে পেলাম সবাই জেনে নিও।

দীর্ঘ ন’মাস যুদ্ধ করে বিজয় এলো ঘরে
লাখো মানুষ জীবন দিলো এই বিজয়ের তরে।

একাত্তরের মার্চে যখন পাক-বাহিনী এসে
হঠাৎ করে ছুঁড়লো গুলি সারা বাংলাদেশে

গর্জে উঠে তখন সবাই রুখতে তাদের গুলি
সেখান থেকেই আমরা নিলাম অস্ত্র হাতে তুলি।

ডিসেম্বরের ষোল তারিখ পাক-বাহিনী শেষে
সমর্পিত হলো সবাই, বিজয় এলো দেশে।

বিজয় আমার বর্ণমালা
বশিরুজ্জামান বশির

বিজয় আমার সবুজ বাংলা
কদম-কেয়া ফুলÑ
প্রজাপতির রঙিন ডানা
হয় না তার তুল।

বিজয় আমার দেশের মাটি
পাখপাখালির হাট
ধানের শীষে স্বপ্ন ভাসে
শ্যামল-সবুজ মাঠ।

বিজয় আমার বর্ণমালা
লাল সবুজের ছবি
বিজয় কাব্য গান লিখেন
দেশের হাজার কবি।

ফাঁদ
মিতুল সাইফ

কয় সে খোকাÑ আমি মিলন
মাজার রোডে থাকি,
পয়সা দিয়ে কিনে এনে
পুষেছিলাম পাখি।

খাঁচার ভিতর দুধ কলা দিই
তাও করে না গান,
হয় তো পাখির আমার উপর
ভীষণ অভিমান।

তাই উড়িয়ে দিলাম তারে
গান ফেরে তার ঠোঁটে
খাঁচার পাখি নীল আকাশে
মুক্ত হাওয়ায় ছোটে।

নিজের খুশির জন্যে কাউকে
কেউ ফেলো না ফাঁদে,
কষ্ট পেলে তোমার মতই
সবারই মন কাঁদে।

তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানবিক বিদ্যার গুরুত্ব

ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত

বর্তমানে যেসব উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় বিশ্বের চিন্তাশীল মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছে তা দূর করতে আমার কিছু দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, এই পৃথিবী ও মহাবিশ্বের অন্যান্য সৃষ্টিজগৎÑ যে সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছুই এখনও অজানা, এসবকিছুরই প্রকৌশলী (পরিকল্পনাকারী ও সৃষ্টিকর্তা) হলেন মহান আল্লাহ। আমরা মানুষেরা যদি প্রকৌশলবিদ্যা বিষয়ে পড়ালেখা করি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর অধ্যয়নের পরেই নামের সাথে ‘প্রকৌশলী’ উপাধি জুড়িয়ে দেই। এটি সঠিক নয়। কেননা, আমাদের প্রকৌশলীরা প্রকৃত ইঞ্জিনিয়ারিং করেন না। তাঁরা যা করেন তা হচ্ছে রি-ইঞ্জিনিয়ারিং। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডানায় ভর করে পাখির উড্ডয়ন অনুকরণ করে উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে নাকি উড়োজাহাজের উড্ডয়ন দেখে পাখি তৈরি হয়েছে? অথবা হোভারক্র্যাফ্টÑ যা জলে ও স্থলে দুটিতেই চলাচল করতে পারে, এমন সামরিক যানের নকশা ও নির্মাণ কাজ ঐসব প্রাণীÑ যা জলে ও স্থলে চলাচল করতে পারে তার অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে নাকি উল্টো এসব সামরিক যানের অনুকরণে উভচর প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে? এমন হাজারটা নয়, বরং লক্ষ লক্ষ উদাহরণ রয়েছে যা প্রমাণ করে মানুষ প্রকৃতির অনুপ্রেরণায় রি-ইঞ্জিনিয়ারিং করে থাকেÑ ইঞ্জিনিয়ারিং নয়। কেননা, এই বিশ্বজগতে যাকিছু আছে এসবকিছু যিনি অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিমাপের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে তৈরি করেছেন সেই ইঞ্জিনিয়ার একমাত্র আল্লাহ।
পবিত্র কুরআনের সূরা আরাফের ৫৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ইন্না রাব্বাকুমুল্লাযী খালাকাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা ফি সিত্তাতি আইয়্যামিন সুম্মাসতাওয়া ‘আলাল ‘আরশ।’ এই আয়াত থেকে এমন প্রশ্নই উঠে আসে যে, মানব প্রকৌশলীদের দেহ-কাঠামো ও চিন্তাশক্তিকে কে ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন? আমরা যদি একটু নেতিবাচক প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে চাই, এখন পর্যন্ত যাকিছুর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তৈরি করা হয়েছে তা ধ্বংস করব তাহলে অন্য প্রকৌশলীর সৃষ্টিগুলোকে ধ্বংস করার শক্তি কোন্ প্রকৌশলীর বেশি?
যদি মহান আল্লাহ একটি ঝড় বা ভূমিকম্পের মাধ্যমে চোখের পলকে দুনিয়ার প্রকৌশলীদের নির্মাণসমূহকে উলটপালট বা ধ্বংস করে দিতে চান তাহলে এই দুনিয়ার এই প্রকৌশলীরা কি এই ঝড়, আগ্নেয়গিরি ও ভূমিকম্পকে চোখের পলকে সরিয়ে দিতে পারবেন?
অতএব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা যেসব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা শিখছি তা মূলত রি-ইঞ্জিনিয়ারিং, ইঞ্জিনিয়ারিং নয়। এটি মানুষের বৈষয়িক স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধির একটি চেষ্টা। তাদের মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তির জন্য নয়।
কিন্তু সংস্কৃতি ও মানবিক বিদ্যা এবং সাহিত্য কেমন বিষয়? আল্লাহ তা‘আলা যখন মানুষের জন্য নবী ও রাসূল নির্বাচন করেছেন তখন তাঁদের কাছে কী চেয়েছেন? তাঁদের কাছে চেয়েছেন নৈতিকতার পরিপূর্ণতাÑ প্রকৌশলবিদ্যায় পারদর্শিতা নয়। তাঁদের কাছে কি চেয়েছেন যে, তাঁরা মানুষের শারীরিক চিকিৎসক হবেন নাকি তাঁরা মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি ঘটাবেন?
কেন ‘এগ্রিকালচার’ ও ‘কালচার’ শব্দ দুটির উৎস একই। এর অর্থ কি এটি নয় যে, সংস্কৃতিবানরা মানুষ ও মানবমনের সাথে যে কাজটি করে, কৃষি-প্রকৌশলীরা মাটির সাথে একই কাজ করে? সংস্কৃতির অনেক সংজ্ঞা রয়েছে এবং সম্ভবত তা পাঁচশ’তে পৌঁছতে পারে। তবে ১৯৭২ সালে ইউনেস্কোর সম্মেলনে সংস্কৃতির যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাতে বলা হযেছে, ‘সংস্কৃতি হলো চিন্তা, আবেগ-অনুভূতি, বৈষয়িক, আধ্যাত্মিক ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের একটি সামষ্টিক রূপ যা একটি দল বা সমাজকে চিহ্নিত করে। সংস্কৃতি কেবল কোনো সমাজের শিল্পকলা ও লিখিত রচনা নয়, বরং জীবনযাত্রার ধরণ, ব্যক্তির মৌলিক অধিকার, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য ও সেই সমাজের বিশ্বাসকেও অন্তর্ভুক্ত করে। এটিই সংস্কৃতি যা মানুষকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেয়। এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদেরকে মানবজীবন সম্পর্কে সচেতন করে এবং আমাদের বৃদ্ধিবৃত্তিক জীবন, গুরুত্বপূর্ণ বিচার-বিশ্লেষণ ও নৈতিক প্রতিশ্রুতির অনুভূতি তৈরি করে।’
সংস্কৃতির মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে, নিজের সচেতনতায় পৌঁছায়, নিজের দুর্বলতাগুলোকে গ্রহণ করে ও পুনঃপ্রকৌশলের মাধ্যমে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিকবিজ্ঞান বিভাগÑ যেখানে সংস্কৃতি ও সংস্কৃতির ব্যবস্থাপনা শিক্ষা দেয়া হয় তা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়Ñ যেখানে কেবল পণ্যের রি-ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষা দেয়া হয় তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সংস্কৃতি হলো সমুদ্রের পানিতে মাছ ধরার জালের মতো। যা জালের ভিতরের মাছকে সমুদ্রের বাইরের মাছ থেকে আলাদা করে। সংস্কৃতি হলো সমাজের আঠার মতো। সংস্কৃতি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস, আমাদের জীবনের সফ্্টওয়্যার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও মানবিক বিদ্যা বিভাগ সাংস্কৃতিক বিনির্মাণ ও সাংস্কৃতিক মানুষ গড়ার দায়িত্ব পালন করে। অতএব, আমরা যদিও আধুনিক দুনিয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা, সংস্কৃতিবিহীন মানুষ ত্রুটিúূর্ণ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে পণ্যটিই তৈরি হয় তার পেছনে একটি সংস্কৃতি রয়েছে। এজন্যই একটি দেশের হস্তশিল্প অন্যদেশের হস্তশিল্পের চেয়ে ভিন্ন। সুতরাং সংস্কৃতির ভূমিকা সমস্ত মানব আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ভিত্তি। অপর দিকে প্রতিটি দেশের সাহিত্যও ঐদেশের সংস্কৃতির মধ্যেই গড়ে ওঠে। কেননা, সাহিত্য সংস্কৃতিরই অংশ এবং যেকোনোভাবে সংস্কৃতিকেই সমৃদ্ধ করে।

স্মরণীয় দিবস

 

১ অক্টোবর : বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ.)-এর মৃত্যুবার্ষিকী।
৫ অক্টোবর : হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) ইরাক থেকে ফ্রান্সে হিজরত করেন (১৯৭৮)।
১২ অক্টোবর : বিশ্ববিখ্যাত কবি হাফিজ স্মরণে দিবস।
১৫ অক্টোবর : বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস (অন্ধদের কল্যাণে)।
১৭ অক্টোবর : বাংলাদেশের মরমি বাউল সংগীতের জনক লালন শাহের মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯ অক্টোবর : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ফররুখ আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী।
২০ অক্টোবর : ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের চল্লিশতম দিবস (আরবাইন)।
২৪ অক্টোবর : উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, সাহিত্যিক, সাংবাদিক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মৃত্যুবার্ষিকী।
২৬ অক্টোবর : অবিভক্ত বাংলার নেতা প্রজাতিহৈষী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মবার্ষিকী।
২৮ অক্টোবর : সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওফাত দিবস।
*আহলে বাইতের ধারার দ্বিতীয় ইমাম ও বেহেশতের যুবকদের নেতৃদ্বয়ের প্রথম ব্যক্তিত্ব ইমাম হাসান (আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী।
২৯ অক্টোবর : আহলে বাইতের ধারার অস্টম ইমাম আলী ইবনে মূসা আর-রেযা (আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী।
*কবি বেনজীর আহমদের জন্মবার্ষিকী। *কবি তালিম হোসেনের জন্মবার্ষিকী।
*কিশোর (১৩ বছর) মুহাম্মাদ হুসাইন ফাহমিদেহ এর শাহাদাত দিবস। ইরানে এটি কিশোর স্বেচ্ছাসেবী দিবস হিসেবে পালিত হয়।
৬ নভেম্বর : ইমাম আল-হাসান আল-আসকারী (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলীর মৃত্যুবার্ষিকী।
১০ নভেম্বর : মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিবস (আহলে সুন্নাতের রেওয়ায়েত অনুযায়ী) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহের শুরু (১২-১৭ রবিউল আউয়াল)।
১১ নভেম্বর : ইতিহাসখ্যাত সাহিত্যিক ‘বিষাদ সিন্ধু’র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের জন্মদিবস।
১৪ নভেম্বর : বিশ্ব ডায়াবেটিক রোগীদের সহায়তা দিবস।
১৫ নভেম্বর : মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিবস (আহলে বাইতের ধারায় বর্ণনা অনুযায়ী) ও আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদেক (আ.)-এর জন্মদিবস।
*বিশ্ব পুস্তক ও পুস্তক পাঠ দিবস, বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস।
১৭ নভেম্বর : বাংলাদেশের মযলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯ নভেম্বর : অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীরের শাহাদাত বার্ষিকী।
* আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস।
২০ নভেম্বর : বাংলাদেশের প্রখ্যাত মহিলা কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী।
৩০ নভেম্বর : শেখ মুফিদ (র.) স্মরণে দিবস।
১ ডিসেম্বর : বিশ্ব এইডস প্রতিরোধ দিবস।
২ ডিসেম্বর : শিল্পী কামরুল হাসানের জন্মদিন।
৩ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের কচিকাঁচার আসরের প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী।
*বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস।
৫ ডিসেম্বর : ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর জন্মদিবস।
* অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী।
১৬ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর এই দিনে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।
* বিশ্ব গবেষণা দিবস।
১৮ ডিসেম্বর : ড. মুহাম্মাদ মুফাত্তেহর শাহাদাত দিবস। এ দিবসটি ইরানে ‘ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (হাওযা) ও বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে ঐক্য দিবস’ হিসাবে পালিত হয়।
২১ ডিসেম্বর : ইরানে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম রাত (শাবে ইয়ালদা)
২৫ ডিসেম্বর : হযরত ঈসা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস।
২৭ ডিসেম্বর : প্রলয়ংকরী সুনামীর বার্ষিকী। এ দিনে ভয়াবহ সুনামীতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর কয়েক লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে।

তিন আন্তর্জাতিক উৎসবে ‘বিলাভ্ড’-এর অ্যাওয়ার্ড জয়

আন্তর্জাতিক তিনটি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে অ্যাওয়ার্ড জিতেছে নির্মাতা ইয়াসের তালেবি পরিচালিত ইরানি ডকুমেন্টারি ‘বিলাভ্্ড’। ছবিটি ¯েপন, ফ্রান্স ও চীনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এসব অ্যাওয়ার্ড ঘরে তোলে।
স্পেনের টোরেল্লো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অব মাউন্টেইন অ্যান্ড অ্যাডভেনচার ফিল্মে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে ‘বিলাভ্ড’। পর্বত সংস্কৃতিকে দারুণভাবে তুলে ধরায় এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় ছবিটিকে।
‘বিলাভ্্ড’ চায়না ইন্টারন্যাশনাল গ্রিন ফিল্ম উইকে রিমার্কেবল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। অন্যদিকে ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেইন ফিল্ম ফেস্টিভাল অব অটরান্সে লাভ করে সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্র্যান্ড প্রিক্স।
সফল ইরানি ডকুমেন্টারিটি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ১৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেবে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের অন্যতম সফল ইরানি ডকুমেন্টারি ‘বিলাভ্্ড’। গেল বছর হট ডকস, আইডিএফএ ও বারলিনের মতো বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র উৎসবে লড়াই করে
ছবিটি।

সালমান ফারসি (রা.)-কে নিয়ে ধারাবাহিকের শুটিং শুরু
ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা দাভুদ মিরবাঘেরি তাঁর নতুন ধারাবাহিক ‘সালমান ফারসি’ এর শুটিং শুরু করেছেন। গত ৫ জানুয়ারি ২০২০ ইরানের কেরমান প্রদেশের মরুভূমিতে দৃশ্যগ্রহণের কাজ শুরু করেন তিনি।
চলচ্চিত্রকার মিরবাঘেরি ‘মোখতারনামাহ’ ও ‘ইমাম আলী (আ.)’ এর মতো ইসলামের ইতিহাসের প্রাথমিক যুগের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তৈরি করা কয়েকটি ধারাবাহিকের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর ইরানি সাহাবি সালমান ফারসি (রা.)-এর কাহিনী নিয়ে ধারাবাহিকটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
অভিনেতা আলিরেজা শোজানুর সালমান চরিত্রে মধ্য ও বৃদ্ধ বয়সীর অভিনয় করবেন। অভিনয়ে আরও সহযোগিতা করবেন অভিনেতা ফারহাদ আসলানি, মোহাম্মাদরেজা হেদাইয়াতি ও মোহাম্মাদ ফেইলি।
চিত্রায়নের কাজ অব্যাহত রাখতে শিগগিরই দক্ষিণ ইরানের কেশম দ্বীপে যাবেন ধারাবাহিকটিতে কাজ করা শিল্পীরা। প্রকল্পটি প্রযোজনা করছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআইবি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মিরবাঘেরির ধারাবাহিকটির গল্প সাজানো হয়েছে প্রাচীন ইরান থেকে শুরু করে বাইজানটাইন সাম্রাজ্য ও সর্বশেষ ইসলামের প্রাথমিক যুগ নিয়ে। এটির নির্মাণ কাজ স¤পন্ন করতে ৫ বছর সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

সেরা কাহিনীচিত্রের অ্যাওয়ার্ড জিতল ইরানি ছবি ‘লোটাস’
চলচ্চিত্রকার মোহাম্মাদরেজা ভাতানদুস্ত পরিচালিত ইরানি কাহিনীচিত্র ‘লোটাস’ সেরা কাহিনীচিত্র অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় শারজাহ ফিল্ম প্লাটফর্মের (এসএফপি) কাহিনীচিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগে সেরার মুকুট লাভ করে চলচ্চিত্রটি। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবটির আয়োজন করে শারজাহ আর্ট ফাউন্ডেশন।
ইভেন্ট আয়োজকরা জানান, ভাতানদুস্তের স্বল্পদৈর্ঘ্যটি সিনেমাটোগ্রাফি ও কাব্যিক আখ্যানের অসাধারণ সমন্বয়ের কারণে সেরা কাহিনিচিত্র পুরস্কার জিততে সক্ষম হয়েছে।
২০১০ সালের এপ্রিলে লাফুর বাঁধ নির্মাণের পর লাফুরাকসহ কয়েকটি গ্রাম আশি মিটার পানির নিচে প্লাবিত হয়। ‘লোটাস’ ছবিটিতে লাফুরাক গ্রামের এক বৃদ্ধার গল্প তুলে ধরা হয়েছে যিনি বাঁধটি পাড়ি দিয়ে একটি দ্বীপে যাওয়ার জন্য ১২ বছর ধরে অনুমতির অপেক্ষা আছেন। অন্যদিকে দ্বীপটিতে তাঁর যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে লাফুরাকের শেষ বাসিন্দা।
নির্মাতা ভাতানদুস্তের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য ও শারজার শাসক শেখ সুলতান বিন মোহাম্মাদ আল কাসিমি।
১৪ থেকে ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সপ্তাহব্যাপী শারজাহ ফিল্ম প্লাটফর্মের এবারের দ্বিতীয় আসরে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ৫০টির অধিক স্বল্পদের্ঘ্য ও ফিচার চলচ্চিত্র দেখানো হয়। ন্যারেটিভ, ডকুমেন্টারি ও এক্সপেরিমেন্টালÑ এই তিন বিভাগে ছবিগুলো দেখানো হয়।

সংবাদ

তিন আন্তর্জাতিক উৎসবে ‘বিলাভ্ড’-এর অ্যাওয়ার্ড জয়
আন্তর্জাতিক তিনটি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে অ্যাওয়ার্ড জিতেছে নির্মাতা ইয়াসের তালেবি পরিচালিত ইরানি ডকুমেন্টারি ‘বিলাভ্্ড’। ছবিটি ¯েপন, ফ্রান্স ও চীনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এসব অ্যাওয়ার্ড ঘরে তোলে।
স্পেনের টোরেল্লো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অব মাউন্টেইন অ্যান্ড অ্যাডভেনচার ফিল্মে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে ‘বিলাভ্ড’। পর্বত সংস্কৃতিকে দারুণভাবে তুলে ধরায় এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় ছবিটিকে।
‘বিলাভ্্ড’ চায়না ইন্টারন্যাশনাল গ্রিন ফিল্ম উইকে রিমার্কেবল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। অন্যদিকে ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেইন ফিল্ম ফেস্টিভাল অব অটরান্সে লাভ করে সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্র্যান্ড প্রিক্স।
সফল ইরানি ডকুমেন্টারিটি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ১৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেবে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের অন্যতম সফল ইরানি ডকুমেন্টারি ‘বিলাভ্্ড’। গেল বছর হট ডকস, আইডিএফএ ও বারলিনের মতো বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র উৎসবে লড়াই করে
ছবিটি।

সালমান ফারসি (রা.)-কে নিয়ে ধারাবাহিকের শুটিং শুরু
ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা দাভুদ মিরবাঘেরি তাঁর নতুন ধারাবাহিক ‘সালমান ফারসি’ এর শুটিং শুরু করেছেন। গত ৫ জানুয়ারি ২০২০ ইরানের কেরমান প্রদেশের মরুভূমিতে দৃশ্যগ্রহণের কাজ শুরু করেন তিনি।
চলচ্চিত্রকার মিরবাঘেরি ‘মোখতারনামাহ’ ও ‘ইমাম আলী (আ.)’ এর মতো ইসলামের ইতিহাসের প্রাথমিক যুগের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তৈরি করা কয়েকটি ধারাবাহিকের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর ইরানি সাহাবি সালমান ফারসি (রা.)-এর কাহিনী নিয়ে ধারাবাহিকটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
অভিনেতা আলিরেজা শোজানুর সালমান চরিত্রে মধ্য ও বৃদ্ধ বয়সীর অভিনয় করবেন। অভিনয়ে আরও সহযোগিতা করবেন অভিনেতা ফারহাদ আসলানি, মোহাম্মাদরেজা হেদাইয়াতি ও মোহাম্মাদ ফেইলি।
চিত্রায়নের কাজ অব্যাহত রাখতে শিগগিরই দক্ষিণ ইরানের কেশম দ্বীপে যাবেন ধারাবাহিকটিতে কাজ করা শিল্পীরা। প্রকল্পটি প্রযোজনা করছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআইবি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মিরবাঘেরির ধারাবাহিকটির গল্প সাজানো হয়েছে প্রাচীন ইরান থেকে শুরু করে বাইজানটাইন সাম্রাজ্য ও সর্বশেষ ইসলামের প্রাথমিক যুগ নিয়ে। এটির নির্মাণ কাজ স¤পন্ন করতে ৫ বছর সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

সেরা কাহিনীচিত্রের অ্যাওয়ার্ড জিতল ইরানি ছবি ‘লোটাস’
চলচ্চিত্রকার মোহাম্মাদরেজা ভাতানদুস্ত পরিচালিত ইরানি কাহিনীচিত্র ‘লোটাস’ সেরা কাহিনীচিত্র অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় শারজাহ ফিল্ম প্লাটফর্মের (এসএফপি) কাহিনীচিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগে সেরার মুকুট লাভ করে চলচ্চিত্রটি। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবটির আয়োজন করে শারজাহ আর্ট ফাউন্ডেশন।
ইভেন্ট আয়োজকরা জানান, ভাতানদুস্তের স্বল্পদৈর্ঘ্যটি সিনেমাটোগ্রাফি ও কাব্যিক আখ্যানের অসাধারণ সমন্বয়ের কারণে সেরা কাহিনিচিত্র পুরস্কার জিততে সক্ষম হয়েছে।
২০১০ সালের এপ্রিলে লাফুর বাঁধ নির্মাণের পর লাফুরাকসহ কয়েকটি গ্রাম আশি মিটার পানির নিচে প্লাবিত হয়। ‘লোটাস’ ছবিটিতে লাফুরাক গ্রামের এক বৃদ্ধার গল্প তুলে ধরা হয়েছে যিনি বাঁধটি পাড়ি দিয়ে একটি দ্বীপে যাওয়ার জন্য ১২ বছর ধরে অনুমতির অপেক্ষা আছেন। অন্যদিকে দ্বীপটিতে তাঁর যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে লাফুরাকের শেষ বাসিন্দা।
নির্মাতা ভাতানদুস্তের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য ও শারজার শাসক শেখ সুলতান বিন মোহাম্মাদ আল কাসিমি।
১৪ থেকে ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সপ্তাহব্যাপী শারজাহ ফিল্ম প্লাটফর্মের এবারের দ্বিতীয় আসরে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ৫০টির অধিক স্বল্পদের্ঘ্য ও ফিচার চলচ্চিত্র দেখানো হয়। ন্যারেটিভ, ডকুমেন্টারি ও এক্সপেরিমেন্টালÑ এই তিন বিভাগে ছবিগুলো দেখানো হয়।

বাংলা রূপ ফারসি রূপ আধুনিক ফারসি উচ্চারণ

কাফী کافی ক-ফী
কামেল کامل ক-মেল
কাহিল کاهل ক-হেল
কায়েনাত کائنات ক-এনাত
কাবাব کباب কা-বব
কবুতর کبوتر কাবূতার
কবীরা کبیره কাবীরে
কেতাব کتاب কে-তব
কেতাবখানা کتابخانه কে-তব খনে
কাতান کتان কা-তন
কসরত کثرت কেস্রাত
কদু کدو কাদূ
কারামাত کرامات কা-র-মাত
কারামতী کرامتی কা-র-মাতী
কুর্নিশ کرنش কোরনেশ
কসর کسر কাস্্র
কিস্তি کشتی কাশ্তী
কুস্তি کشتی কোশ্তী
গোলাপ گلاب গো-লব
গোলাপী گلابی গো-লবী
গোলাপদান گلاب دان গো-লব দন
গুলিস্তান گلستان গোলেস্তন
গুলশান گلشن গোলশান
গলাবন্দ گلوبند গেলূবান্দ
গুম گم গোম
গোমস্তা گماشته গো-মশ্তে
গোমরাহ گمراه গোম্রহ্
মর্সিয়া مرثيه র্মাসিয়ে
মরহুম مرحوم মারহুম
মর্দ مرد মার্দ
মর্দে খোদা مردخدا মার্দে খোদা
মোর্দা مرده মোর্দে
মোর্দা দিল مدره دل মোর্দে দেল
মুরশিদ مرشد মোরশেদ
মর্জি مرضی মার্জি
মোরগ مرغ মোর্গ
মারকায مرکز মারকায
মেরামত مرمّت মারাম্মাত
মর্মর مرمر মার্মার

ইরানি প্রবাদ

سید علی را بپا
উচ্চারণ : সাইয়্যেদ আলী রা’ বেপা’
অর্থ : সাইয়্যেদ আলীর ব্যাপারে সজাগ হও
মর্মার্থ : এই লোকটি সম্পর্কে সাবধান থাক, তোমার কাছ থেকে কিছু চুরি করে না নিয়ে যায়। লোকটি দারুণ প্রতারক। তোমার কোনো কিছু বুঝার সুযোগ তাকে দিও না।
سیر تا پیازش را گفتن
উচ্চারণ : সীর তা’ পিয়া’যাশ রা’ গোফতান
অর্থ : তাকে রসুন থেকে পিয়াজ সব বলে দেয়া।
মর্মার্থ : এ কাজের পেছনে রহস্য আছে, নিশ্চয়ই ভেতরে কোনো চক্রান্ত আছেÑ এ কথা বোঝানোর জন্য এ প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
سیری شما رو سفیدی ماست
উচ্চারণ : সীরীয়ে শোমা’ রো সাফীদিয়ে মা’স্ত
অর্থ : আপনার তুষ্টি আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে।
মর্মার্থ : কোনো কিছুর অনুগত বা প্রভাবাধীন থাকা, কারো আজ্ঞাবহ হওয়া।
سیلی روزگار خورده است
উচ্চারণ : সীলীয়ে রূযেগা’র খোর্দে আস্ত
অর্থ: দিনকালের চপেটাঘাত খেয়েছে।
মর্মার্থ : বহু দুঃখ-কষ্ট সয়ে নানা পরীক্ষা দিয়ে জীবনে এতদূর এসেছে বুঝাতে এই প্রবাদ প্রচলিত।
سیلی نقد به از حلوای نسیه
উচ্চারণ : সীলীয়ে নাক্দ বে আয হালওয়া নেসীয়ে
অর্থ: নগদে চড় বাকি মিষ্টান্ন থেকে উত্তম
মর্মার্থ : নগদে চড় খাওয়া বাকিতে মিষ্টান্ন খাওয়ার চেয়ে উত্তম।
سینه سپر کردن
উচ্চারণ : সীনা সেপার কার্দান
অর্থ: বুকটা পেতে দেয়া
মর্মার্থ : কারো প্রতি সমর্থন বা কারো পক্ষ অবলম্বন বুঝাতে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।

অনুবাদ : আবু আব্দুল্লাহ

বাংলা রূপ ফারসি রূপ আধুনিক ফারসি উচ্চারণ
কাফী کافی কা-ফী
কামেল کامل কা-মেল
কাহিল کاهل কা-হেল
কায়েনাত کائنات কা-এনাত
কাবাব کباب কাবা-ব
কবুতর کبوتر কাবূতার
কবীরা کبیره কাবীরে
কেতাব کتاب কেতা-ব
কেতাবখানা کتابخانه কেতা-বখা-নে
কাতান کتان কাতা-ন
কসরত کثرت কাসরাত
কদু کدو কাদূ
কারামাত کرامات কারা-মা-ত
কারামতী کرامتی কারা-মাতী
কুর্নিশ کرنش কোরনেশ
কসর کسر কাস্্র
کشتی
কুস্তি کشتی কোশতী
গোলাপ گلاب গোলা-ব
গোলাপী گلابی গোলা-বী
গোলাপদান گلاب دان গোলা-বদা-ন
গুলিস্তান گلستان গোলেস্তা-ন
গুলশান گلشن গোলশান
গলাবন্দ گلوبند গালূবান্দ
গুম گم গোম
গোমস্তা گماشته গোমা-শতে
গোমরাহ گمراه গোমরা-
মর্সিয়া مرثيه র্মাসিয়ে
মরহুম مرحوم মার-হুম
মর্দ مرد র্মাদ্
মর্দে খোদা مردخدا মারদেখোদা-
মোর্দা مرده মোর্দে
মোর্দা দিল مدره دل মোর্দেদেল
মুরশিদ مرشد মোরশেদ
মর্জি مرضی মার্জি
মোরগ مرغ মোর্গ
মারকায مرکز মারকায
মেরামত مرمّت মারামমাতী
মর্মর مرمر মার্মার

বই পরিচিতি

দীনেশের কালোরাত
রচনা : আহমদ বাসির
প্রকাশক : ইকবাল হোসাইন
ইনভেলাপ পাবলিকেশন্স
কক্ষ নং-২৭, ৬ষ্ঠ তলা, খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্স
জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, ঢাকা-১০০০।
ফোন : ০১৬৮৬৮৫০২৬৬
প্রচ্ছদ : সাইফ আলী
স্বত্ব : লেখক
প্রকাশকাল : একুশে বইমেলা-২০১৮
মূল্য : ১২০ টাকা।

আবৃত্তিশিল্পী ও কবি আহমদ বাসিরের রয়েছে গদ্যেও নিজস্ব অবস্থান। তেমনি শিশু-কিশোর সাহিত্যেও গড়ে তুলেছেন তিনি স্বকীয় বলয়। তাঁর কিশোর সাহিত্য সাবলিল ও আদর্শিক চেতনায় উদ্দীপ্ত। সেখানে থাকে অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতার প্রয়াস, দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আলো, সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে সোচ্চারের আগুন, ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের ছায়াচিত্র, বাস্তবতার নিরিখে অব্যক্ত বেদনার কথাশৈল্পিক প্রকাশ।
আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতি সবাই ভাষাভিক্তিক ও সীমানাভিত্তিক দেশ-পরিচয়ে বাংলাদেশী ও বাঙালি হিসেবে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়েই হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। এখানে ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির কোনো কমতি ছিল না এবং আজো নেই। দেশপ্রেম, ধর্মবাণী, নীতিবাক্য সহ নানাবিধ মানবিক মূল্যবোধ এখানে সাদরে সমাদৃত হয়েছে। এদেশে ইসলাম সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়েছে অলি আওলিয়া, সূফি দরবেশদের মাধ্যমে কেবল ইসলামের উদারনৈতিক, শ্রেণিভেদ-বিদ্বেষহীন সর্বমানবিক নীতিনৈতিকতার উজ্জ্বল আলোর কারণেই। সেকারণেই একদিকে দেখা গেছে ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে, আবার ইসলাম গ্রহণ না করেও ইসলামের সাথেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করেছে মুসলমান অমুসলমান মিলে মিশে মানবিক পরিচয়ে, সামাজিক মূল্যবোধে তাড়িত হয়ে। একে অপরের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভাবের আদান-প্রদানের কমতি ঘটে নি কোনোদিন। ইসলাম তার স্বাভাবিক সৌন্দর্যের কারণেই বিকশিত হয়েছে জাত-পাত ভেদ বিদ্বেষের মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক অবকাঠামো ভেঙে দিয়েই। সে কারণে স্বামী বিবেকানন্দ বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘ইসলাম ভারতের পদদলিত বিরাট সমাজের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ এসেছিল।’ ইসলাম এসেছে স্বাভাবিক গতিতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ও বিভিন্ন বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক ন্যয়বিচারের বাণী নিয়ে। কোথাও বলপ্রয়োগে ইসলাম প্রচার হয় নি এবং এর নির্দেশও নেই। নেই জঙ্গিবাজি ও বোমাবাজির সুযোগ। এখানে নেই কোনো সাম্প্রদায়িক ভেদবিদ্বেষ উস্কে দিয়ে সংঘাত বাধানোর সুযোগ। কিন্তু সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে যেমন ভালো ও মহান মানুষ আছে, তেমনি অসৎ, লোভী, দুনিয়াবি, স্বার্থপূজারি দুর্বৃত্ত মানুষও রয়েছে। হিন্দু মুসলমান সবার মধ্যেই তা আছে। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সমাজে সাম্য, শান্তি ও সামাজিক ন্যয়বিচারের বাণী গ্রহণেচ্ছু জনসাধারণ কায়েমী স্বার্থবাদী লোকদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয় নি এমন নয়। বরং সারা বিশ্বে এখনো হচ্ছে। এসব দুর্বৃত্তের অসদুদ্দেশ্যেই নানা রকম সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব বৃদ্বির প্রয়াস হয়েছে, কিন্তু সফলকাম হতে পারে নি। শাশ্বত মূল্যবোধ বিকাশের ধারাকে ব্যাহত করা সম্ভব হয় নি।
আহমদ বাসির রচিত আলোচ্য কিশোর উপন্যাসের মৌল কিশোর চরিত্র হিন্দু দীনেশ এবং মুসলমান আবির ও আসলের বন্ধুত্ব, তাদের ও তাদের পরিবারের জীবনের কথকতা, সুখ-দুঃখ, ঘটনা-দুর্ঘটনা, সংকট উত্তরণের চেষ্টা ইত্যদির ভেতর দিয়ে এইসব বাস্তবতাই ফুটে উঠেছে যা কেবল কিশোর মনেই ভাবনা জাগায় না, বড়দেরকেও উদ্দীপ্ত করে। কবির বড় ভাই নাসির আহমেদ বাবলুকে উৎসর্গীকৃত বইটির প্রচ্ছদেই নামের তাৎপর্য বহন করে।
আমরা বইটির পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি।
আমিন আল ্আসাদ

মওলানা জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ রূমী রহ.

 

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী –
নাম ও বংশ পরিচয়
মওলানা রূমীর আসল নাম জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ। তাঁর পিতার নাম সুলতানুল ওলামা বাহাউদ্দীন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হুসাইন খতীবী (হিজরি ৫৪৩-৬২৮)। তিনি হিজরি ৬০৪ সালের ৬ই রবিউল আউয়াল বাল্্খে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্খ বর্তমান আফগানিস্তানের একটি প্রদেশ। তাঁর পিতা ‘বাহা ওয়ালাদ’ নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত মরমি সাধক ও বাগ্মী খতীব এবং মহান বুযর্গ শেখ নাজমুদ্দীন কুবরার মুরীদ।
দেশভ্রমণ
৬১০ হিজরিতে জালাল উদ্দীনের বয়স যখন মাত্র ৬ বছর, তখন পিতা বাহা ওয়ালাদ ইমাম ফখরুদ্দীন রাযির সাথে বিরোধ ও খারেযামশাহ এর সাথে মনোমালিন্যের কারণে পরিবার পরিজন ও কতক সহচরকে সঙ্গে নিয়ে বাল্্খ ত্যাগ করেন এবং পশ্চিম ইরান অভিমুখে রওয়ানা হন। আফলাকী ‘মান্নাকেবুল আরেফীন’ গ্রন্থে বাহা ওয়ালাদের দেশত্যাগের কারণ হিসেবে বিখ্যাত আলেম ও কালামশাস্ত্রবিদ ইমাম ফখরুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে ওমর ইবনে হুসাইন রাযির (৫৪৪-৬০৬ হিজরি) সাথে মওলানা রুমীর পিতার মতবিরোধের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে বিষয়টি ঐতিহাসিক হিসাব নিকাশের সাথে মিল খায় না। কারণ, ফখরুদ্দীন রাযির ইন্তিকাল হয়েছে ৬০৬ হিজরিতে। অথচ বাহা ওয়ালাদ দেশত্যাগ করেন ৬১০ হিজরিতে। যাইহোক তিনি প্রথমে নিশাপুর গমন করেন। বর্ণিত আছে যে, নিশাপুরে বাহা ওয়ালাদের সাথে বিখ্যাত আরেফ শেখ ফরীদ উদ্দীন আত্তারের দেখা হয়। আত্তার তাঁর দ্বিপদী কাব্য ‘আসরারনামা’টি জালাল উদ্দীনকে উপহার দেন। নিশাপুর হতে বাগদাদ হয়ে মক্কায় উপনীত হন। সেখান থেকে সিরিয়া গমন করেন। এরপর তিনি এশিয়া মাইনরের উদ্দেশে রওয়ানা হন। কিছুদিন আরযাঞ্জানে অবস্থান করেন। এরপর যান সিরিয়ার ‘মালাতিয়া’ শহরে। সেখানে চার বছরকাল বসবাসের পর লারেন্দা শহরে গমন করেন। আরযাঞ্জান, মালাতিয়া ও লারান্দা এই শহর তিনটি বর্তমানে তুরস্কে অবস্থিত। লারেন্দায় তিনি ৭ বছরকাল বসবাস করেন।
দাম্পত্য জীবন
সিরিয়ার লারেন্দা শহরেই জালাল উদ্দীনের বয়স যখন ১৮ বছর তখন পিতা সুলতানুল ওলামা, খাজা লালায়ে সমরকান্দীর মেয়ে গওহার খাতুনের সাথে তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এই দাম্পত্যের ফসল ছিল বাহা উদ্দীন মুহাম্মদ ওরফে সুলতান ওয়ালাদ ও আলা উদ্দীন মুহাম্মদ নামক দুই পুত্রসন্তান। মওলানার জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন সুলতান ওয়ালাদ। তিনি প্রগাঢ় পা-িত্যের অধিকারী ছিলেন। মওলানার অপর সন্তান আলা উদ্দীন মুহাম্মদÑ যে শামসে তাব্রেযীকে হত্যার ঘটনায়ও জড়িত ছিল, পিতা তাকে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। মওলানার অপর দুই সন্তান মুযাফফর উদ্দীন আমীর আলম ও মালেকা খাতুন এর মা ছিলেন গারা খাতুন কুনাভী।
তুরস্কের কুনিয়ায়
এ সময়টিতে এশিয়া মাইনরে তাকওয়া, পরহেযগারী ও জ্ঞান গরিমায় বিরাট খ্যাতির অধিকারী সুলতানুল ওলামা বাহা ওয়ালাদ সুলতান আলা উদ্দীন কায়কোবাদ সালজুকীর (৬১৬-৬৩৪) আমন্ত্রণে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনিয়ায় গমন করেন এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। সেখানে তিনি ওয়ায ও বাহাস (জ্ঞানের তার্কিক আলোচনা) এর মজলিস চালু করেন। সেখানে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক জ্ঞানান্বেষী ফয়েয আহরণের জন্য আগমন করতেন।
কুনিয়া ছিল রোমের সালজুকী শাসকদের রাজধানী এবং জ্ঞানী মনীষী ও সুফিদের মিলনকেন্দ্র। ফখরুদ্দীন ইরাকী, সদরুদ্দীন কুনাভী, শরফ উদ্দীন মূসেলী, নাজমুদ্দীন রাযি প্রমুখ বুযুর্গ আলেমগণ সে শহরে বাস করতেন।
পিতার খেলাফত লাভ
কুনিয়ায় কিছুকাল অবস্থানকালে সুলতানুল ওলামা ওয়ায-নসিহত, দীক্ষা দান এবং সুন্দর কাব্যময় গদ্য ‘মাআরেফে বাহা ওয়ালাদ’ রচনার পর ৬২৮ সালে ইন্তিকাল করেন। এ সময় মওলানার বয়স ছিল ২৪ বছর। সুলতানুল ওলামার অসিয়ত অথবা সুলতান আলা উদ্দীন কায়কোবাদের আহ্বানে কিংবা মুরীদদের অনুরোধে বুরহান উদ্দীন মুহাক্কেক তিরমিযীর আগমন পর্যন্ত প্রায় এক বছরকাল পিতার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মওলানা রূমী ওয়ায-নসিহত ও শিক্ষা দীক্ষার কাজে অতিবাহিত করেন। তখনো পর্যন্ত মওলানা তরীকতে প্রবেশ করেন নি; বরং শুধু ফতোয়া ও ওয়ায-নসিহতের কাজ করতেন।
বুরহান উদ্দীন মুহাক্কেক তিরমিযী ছিলেন হুসাইনী বংশধারার সৈয়দ ও তিরমিয নিবাসী। তিনি সুলতানুল ওলামা বাহা ওয়ালাদের মুরীদ ও খলিফা ছিলেন। বাহা ওয়ালাদ যখন বাল্্খ ত্যাগ করেন তখন বুরহান উদ্দীন মুহাক্কেক বাল্্খে ছিলেন না। তিনি সুলতানুল ওলামার (বাহা ওয়ালাদ) এর সন্ধানে রোম (পূর্বে রোম বা বর্তমান তুরস্ক) এর উদ্দেশে রওয়ানা হন। তিনি যে সময় সেখানে পৌঁছেন তখন তাঁর পীর ও ওস্তাদের ইন্তিকালের পর এক বছরকাল অতিবাহিত হচ্ছিল (৬২৯)।
উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যাত্রা
‘মানাকেবুল আরেফীন’ এর বর্ণনা অনুযায়ী সৈয়দ বুরহান উদ্দীন মওলানার কাছ থেকে বিভিন্ন জ্ঞানে পরীক্ষা নেন এবং সাথে সাথে তিনি তাঁকে দীক্ষা দানে ব্রতী হন। তিনি সাহিত্য ও শরীয়ত বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের জন্য মওলানাকে হালাব সফর করার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। মওলানা হালাব শহরে প্রসিদ্ধ ফকীহ কামাল উদ্দীন ইবনুল আদীম এর কাছে হানাফী ফিকাহ্শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এরপর উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য দামেস্কে অবস্থান করেন। মনে হয় সেখানেই তিনি মুহিউদ্দীন আল আরাবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন। ‘জাওয়াহেরুল আসরার’ গ্রন্থের প্রণেতা কামাল উদ্দীন হুসাইন খারাযমী লিখেছেন যে, হযরত খোদাবান্দাগার (মওলানার উপাধি) যখন দামেস্কের মাহরুসায় ছিলেন, তখন কিছুদিন মালেকুল আরেফীন শেখ মুহিউদ্দীন আরাবীর সাহচর্য লাভ করেন এবং এমন সব হাকিকত ও রহস্যজ্ঞান পরস্পরের সাথে আলোচনা করেন যার বর্ণনা অনেক দীর্ঘ হবে।
পুনরায় কুনিয়ায় আগমন
সাত বছর ধরে সাহিত্য ও শরীয়ত বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের পর মওলানা পুনরায় কুনিয়ায় ফিরে আসেন। ওলামায়ে কেরাম ও মুরীদগণ তাঁকে ব্যাপক সম্বর্ধনা প্রদান করেন (৬৩৭ হিজরি)। এরপর সাইয়্যেদ বুরহান উদ্দীনের ইশারা অনুযায়ী তিনি কিছুকাল কৃচ্ছ্রসাধনায় কাটান। কিছুদিন না যেতেই সাইয়্যেদ বুরহান উদ্দীন মওলানাকে দেখতে পান যে, তিনি সম্পূর্ণ নিখাদ ও অকৃত্রিম। তাঁর কোনো কৃচ্ছ্রতা বা মুজাহেদার প্রয়োজন নেই। তিনি কৃতজ্ঞতায় সিজদায় পড়ে যান এবং হযরত মওলানাকে কাছে টেনে নেন। তাঁর মোবারক চেহারায় চুমোর পর চুমো দেন আর বলেন : ‘সকল বুদ্ধিবৃত্তিক, বর্ণনামূলক, কাশ্ফ(উদ্ভাসন) ও সাধনালব্ধ জ্ঞানে জগতের আলেমদের মধ্যে নজিরবিহীন হয়েছ…।’ আহমদ দাদা, সাইয়্যেদ বুরহান উদ্দীন এর তত্ত্বাবধানে মওলানার কৃচ্ছ্রসাধনা বা রেয়াযতের সমষ্টি এক হাজার একদিন বলে উল্লেখ করেছেন।১০০১ দিনের কৃচ্ছ্রতার সংখ্যাটি আবজাদের হিসাবে ‘রেযা’ এর সমান। এটি মওলভীপন্থী বা মওলানা রূমীর অনুসারীদের অনুসৃত নিয়ম ছিল।
মওলানার আধ্যাত্মিক সিলসিলা
এই বর্ণনা অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, মওলানার শিক্ষা ও দীক্ষা গ্রহণের সিলসিলাটি সাইয়্যেদ বুরহান উদ্দীন মুহাক্কেক তিরমিযীর সূত্রে সুলতানুল ওলামা বাহা ওয়ালাদ এবং তাঁর মাধ্যমে কুবরাবিয়া (শেখ নাজমুদ্দীন কুবরার সিলসিলার) মাশায়েখদের সঙ্গে যুক্ত। আফলাকী মওলানার খির্কা (আলখাল্লা) লাভের সূত্রটি শেখ পর্যন্ত মারুফ কারখির সঙ্গে যুক্ত করেন। তিনি লিখেছেন যে, মওলানা নয় বছরকাল বুরহান মুহাক্কেক সাহচর্যের সময়কালে আধ্যাত্মিক পূর্ণতার মার্গে উপনীত হন এবং বিভিন্ন দীক্ষা লাভ করেন।
সাধনার এই অধ্যায়টি ৬৩৮ হিজরি তথা সাইয়্যেদ বুরহান বুরহান উদ্দীন মুহাক্কেক তিরমিযীর ইন্তিকালের সময় পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তখন মওলানার বয়স ছিল ৩৪ বছর। এ সময় তিনি পুনরায় ওয়ায-নসিহতের দায়িত্বপান এবং শাম্সেতাবরিযীর সঙ্গে সাক্ষাতের বছর পর্যন্ত (৬৪২ হিজরি) ৫ বছর তাঁর পিতৃপুরুষের ধারায় ফিকাহ্ ও শরীয়তের জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত থাকেন।অসাধারণ জ্ঞান ও পরহেযগারীর কারণে জনসাধারণের পক্ষ হতে তিনি দীনের শিরোমণি ও আহমদী শরীয়তের স্তম্ভ হিসেবে আখ্যায়িত হন। মওলানার ছেলে সুলতান ওয়ালাদের বক্তব্য অনুযায়ী তাঁর মুরীদানের সংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পায়।
শাম্সের সাক্ষাতে আধ্যাত্মিক বিপ্লব
৬৪২ হিজরি ছিল কুনিয়ায় শাম্সেতাবরিযীর আগমন ও মওলানার সাথে তাঁর সাক্ষাতের বছর। এর ফলে মওলানার জীবন ও চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। আফলাকী মানাকেবুল আরেফীন এবং জামী নাফাহাতুল উন্্স্ কিতাবে আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত এই ভবঘুরে আরেফের নাম শাম্সউদ্দীন মুহাম্মদ ইবন মালেকদাদ তাবরিযী বলে উল্লেখ করেছেন।
শুরুতে শাম্সছিলেন শেখ আবু বকর যাম্বীলবাফ তাবফরযীর মুরীদ। কামালিয়াত অর্জনের পর তিনি দেশ ভ্রমণের পথ অবলম্বন করেন। তিনি এ শহর হতে ও শহরে গমন করতেন, তরীকতপন্থীদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের জন্য সবখানে ঘুরে বেড়াতেন। তবে লোকদেখানো তাপস ও ছদ্মবেশী দীনদারদের থেকে মুখ ফিরিয়ে তিনি হাকিকত (পরম সত্যকে) লাভ করার জন্য আকাশের দিগন্ত ও আত্মার জগতে পরিভ্রমণ করতেন। প্রথম প্রথম কালো পশমি বস্ত্র পরিধান আর সফরে যাবার সময় সওদাগরের বেশ ধারণ করতেন। অথচ ঘরের মধ্যে জীর্ণশীর্ণ কম্বল আর ভাঙ্গা কলসি ছাড়া আর কিছু থাকত না।
শাম্সেতাবরিযীর সাথে মওলানা রূমীর সাক্ষাতের অধ্যায়টি রহস্যঘেরা। এ নিয়ে বহু মুখরোচক ঘটনা বর্ণনা করেছেন মওলানার জীবনীকাররা। এ সম্পর্কিত প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা হচ্ছে,
যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মওলানা রূমী একদিন তুরস্কের কুনিয়ায় ছাত্রদের নিয়ে দারসের মজলিসে মশগুল ছিলেন। হঠাৎ শ্রেণিকক্ষে এক দরবেশের আগমন হলো। মওলানা রূমী অনেকটা বিরক্তির সুরে জানতে চাইলেন:‘কী চাও?’ দরবেশ উল্টা প্রশ্ন করলেন : ‘ইন চীস্ত?’Ñ এগুলো কী? মওলানার সহজ উত্তর: ‘ইন এলমীস্ত কে তো নমী দা’নী’Ñ এ হলো জ্ঞানচর্চা, যা তুমি জান না।’ দরবেশ অন্যমনস্ক হয়ে চলে গেলেন। মাঝখানে ক্লাসের বিরতি হলো। বিরতির পর এসে মওলানা রূমি দেখলেন, দারস দানের একমাত্র কিতাবটি উধাও। শুরু হলো তল্লাশি। ভবঘুরে দরবেশ ছাড়া কেউ তো এদিকে আসে নি। হাজির করা হলো দরবেশকে। দরবেশ অবজ্ঞার সুরে বললেন : ‘এতো হৈ চৈ কেন, এই নেন আপনার কিতাব।’ এ কথা বলে পাশের পানির হাউজ থেকে হাত দিয়ে তুলে আনলেন ঝরঝরে শুকনো কিতাবটি। একটি হাঁস যেন পুকুরে ডিগবাজি খেয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে এল। মওলানা হতবাক। বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলেন :‘ইন চীস্ত?’Ñ এটা কী? দরবেশ জবাব দেন: ‘ইন সিররীস্ত কে তো নেমী দা’নী’Ñ এ হচ্ছে রহস্যজ্ঞান, যা আপনার অজানা।’ মওলানা বুঝতে পারলেন, জীবনের পরম আরাধ্য রহস্যজ্ঞানের ধনভা-ার এখন হাতের নাগালে। তখন মাদ্রাসার দারস, মসজিদের ইমামতি, ওয়াযের মজলিস ছেড়ে পাগল হয়ে গেলেন দরবেশের জন্য। তারপর থেকে ঝরনার মতো অনর্গল ধারায় জারি হতে লাগল কবিতা, মসনবী ও দিওয়ানে শাম্সেগযলের ঊর্মিমালা। সেই মহাজ্ঞানী দরবেশ ছিলেন হযরত শাম্সে তাবরিযী (রহ)।
বস্তুত শাম্্সের সাথে সাক্ষাতের পর জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ সম্পূর্ণ পাল্টে যান। র্দাস, ক্লাস, ওয়ায ও দীক্ষা দানের মজলিস এক পাশে ফেলে রাখেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, শাম্সের আত্মিক প্রেরণা ও তাঁর অগ্নিঝরা মুখনিঃসৃত বাণীর আকর্ষণে ও তাঁর প্রাণ-উদ্দীপক সান্নিধ্যের উষ্ণতায় হাকিকী কামালিয়াত ও বাস্তব তত্ত্বজ্ঞানের ঝরনা উৎসে পৌঁছার পথ পেয়ে গেছেন। তিনি শাম্সের আঁচল জড়িয়ে ধরেন। অন্যদের দেখা সাক্ষাৎ হতে চোখ বন্ধ করে নেন। ইবাদত ও পরহেযগারীর প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করেন। সামা ও নৃত্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। প্রেম ও আধ্যাত্মিকতা আর ভক্তিমূলক গান কবিতা রচনায়ব্রতী হন। মোটকথা, তিনি অন্য এক অবস্থা লাভ করেন, যা না তিনি চিনতেন আর না তার মুরীদান বন্ধু ও ভক্তরা চিনতেন ও বুঝতেন।
শাম্সে তাবরিযীর অন্তর্ধান
এর ফলশ্রুতি দাঁড়ায়, মওলানার সাহচর্যের প্রত্যাশী ও দীক্ষা লাভে আগ্রহীরা তাঁর ব্যাপারে আশা ছেড়ে দেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে মুরীদরা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। চারদিকে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। তিরস্কারের তীক্ষèবাণ নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, শাম্সেতাবরিযী ৬৪৩ সালের ২১ শাওয়াল মওলানার বন্ধুমহল ও মুরীদানের অত্যাচার ও অন্যদের অসন্তুষ্টির কারণে মওলানার সঙ্গে ষোল মাসের সাহচর্যের পর কুনিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দামেস্ক চলে যান। মওলানা হঠাৎ শাম্সেরপ্রাণ উজ্জীবনী জ্যোতির পরশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তিনি পেরেশান, দিশেহারা হয়ে চারদিকে লোক পাঠান। শেষ পর্যন্ত শাম্সকেদামেস্কে খুঁজে পান। মওলানার ছেলে সুলতান ওয়ালাদের অনুরোধেÑযিনি শাম্সেরখোঁজে দামেস্কে গিয়েছিলেনÑশাম্সপুনরায় কুনিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং জালাল উদ্দীনকে অন্তজর্¦ালা ও বিরহের হাহুতাশ হতে মুক্তি দেন। শাম্্সেতাবরিযীর প্রত্যাবর্তন পুনরায় কুনিয়ার জনগণ ও মওলানার মুরীদগণের মাঝে ক্রোধের আগুন প্রজ্বলিত করে। তারা সবাই শাম্সকে ‘যাদুকর’ আখ্যায়িত করে, তাঁকে নিপীড়ন করতে উদ্যত হয়।
এই হট্টগোলে অজ্ঞ লোকেরাও ফিতনার সৃষ্টি করে, গালমন্দ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অজ্ঞতা ও হিংসার শিকার হয়ে মওলানার একদল হিংসুক মুরীদ ও সাধারণ লোকের হাতে শাম্সেতাবরিযী গোপনে নিহত হন। বলা হয় যে, মওলানার ছেলে আলাউদ্দীনও এদের দলে শামিল ছিলেন।
আফলাকী এবং জামীও এই ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন যে, জনসাধারণের হট্টগোলের কারণে সাধারণ লোকেরা শাম্সে তাবরিযীকেমওলানার ঘরের বাইরে হত্যা করে (৬৪৫ হিজরি)। এ সময় মওলানার বয়স ছিল ৪১ বছর।
‘আল-জাওয়াহেরুল মুদিয়া’ গ্রন্থের লেখক কুনিয়ার জনগণ ও মওলানার মুরীদদের হাতে শাম্সেতাবরিযী নিহত হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, শাম্সনিজে নিরুদ্দেশ হয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন। তবে এর মধ্যে ওয়ালাদনামার বর্ণনাটি অধিকতর সঠিক বলে মনে হয়। তিনি বলেন, মুরীদরা যখন শাম্সেতাবরিযীকে জ্বালাতন করতে উদ্যত হয় তখন তিনি ভীষণ মনঃক্ষুণœ হন ও গোপনে কুনিয়া ছেড়ে চলে যান এবং সিদ্ধান্ত নেন যে, আর কোনো দিন কুনিয়া ফিরে আসবেন না।
শাম্্সকে হারিয়ে বেহাল বেকারার
মওলানা রুমী এ ঘটনায় আবারো ব্যথিত হয়ে পড়েন।শামসের খোঁজে দুই বছরকাল এদিক সেদিক লোক পাঠান। তিনি নিজেও দামেস্কে যান। শেষ পর্যন্ত শামসুদ্দীনকে ফিরে পাবার আশা ত্যাগ করেন। কাজেই শাম্্সে তাবরিযী গোপনে কুনিয়া ছেড়ে চলে যাবার বর্ণনাটি অন্য সকল বর্ণনা হতে সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়। এ বিষয়টি ওয়ালাদনামার বর্ণনাকে সত্যায়িত করে। কেননা, শামসুদ্দীন নিহত হবার বিষয়টি যদি মওলানার কাছে নিশ্চিত হত, তাহলে শামসের খোঁজ খবর নেয়া এবং নিজে দামেস্ক সফরে যাবার প্রয়োজন হতো না।
‘মানাকেবুল আরেফীন’ গ্রন্থে আফলাকীর বক্তব্য অনুযায়ী শাম্্সেরঅন্তর্ধান বা দেশত্যাগের পর মওলানা দারুণভাবে অস্থির বেকারার হয়ে যান। তিনি সারাক্ষণ বেদনাভরা মনে বেকারার হয়ে হা হুতাশ করতেন। হৃদয়-মথিত বেদনা নিয়ে তিনি কখনো ছাদে, কখনো মাদ্রাসার আঙ্গিনায় পায়চারি করতেনআর দারুণ অন্তজর্¦ালা নিয়ে কবিতা পড়তেন।
সবসময় পথের পানে চেয়ে থাকতেন। যে কোনো লোক দেখলেই শাম্্সে তাবরিযীর কথা জিজ্ঞাসা করতেন। বলতেন :
لحظه ای قصه کنان قصۀ تبریز کنید
لحظه ای قصۀ آن غمزۀ خونریز کنید.
‘গল্পকাররা একটু থামো তাবরিযেরই গল্প কর
হৃদয়হরি প্রেমাস্পদের একটুখানি গল্প বল।’
হিংসুকদের আচরণে, মানসিক আঘাতে মওলানার অন্তরে বিশাল দুঃখভার চেপে বসেছিল। তিনি ছিলেন বেহাল পেরেশান আত্ম-নিয়ন্ত্রণহারা। শাম্্সের সন্ধান হতে তিনি শান্ত হচ্ছিলেন না। শাম্্সের পুন সাক্ষাৎ পাবার আশায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলেন। কিছুদিন নির্জনতায় চলে যেতেন। আবার প্রেমাস্পদ শাম্্সকে পাবেনÑসে প্রেরণায় নির্জনতা ভঙ্গ করতেন। অবশেষে একাত্মা এক হৃদয় কতক বন্ধুর সঙ্গ পেয়ে যান। যেমন সালাহ উদ্দীন ফরীদুন যারকূব (মৃত্যু ৬৫৭ হিজরি) ও এরপর হুসসাম উদ্দীন হাসান ইবনে মুহাম্মদ চালাবী (মৃত্যু৬৮৩ হিজরি)। তাঁদের পেয়ে মওলানা শান্ত হয়ে যান। এরপরেই হুসসাম উদ্দীন চালাবীর অনুপ্রেরণায় ও অনুরোধে তিনি ‘মসনবী’ রচনায়ব্রতীহন। তখন থেকে তাঁর কাব্য জীবনের সূচনা হয়।
কবিত্বের সূচনা
মওলানার প্রেম-উন্মাদনা ও কবিত্বের অধ্যায় শুরু হয় মূলত ৬৪২ হিজরি থেকে, যে বছর কুনিয়ায় শাম্্সে তাবরিযীর আগমন ঘটেছিল। এ সময় তিনি পিতার কাছ থেকে পাওয়া দীক্ষা, দীর্ঘদিনের পড়াশোনা, শাম্স এর সাহচর্য ও বুরহান উদ্দীন মুহাক্কেক তিরমিযীর দিকনির্দেশনা প্রভৃতির মাধ্যমে ইনসানে কামেল (পূর্ণ মানব) ও আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত আরেফ-এ পরিণত হয়েছিলেন। তাই তিনি জীবনের বাকি অংশ উৎসর্গ করেন তরীকতের সাধকদের পথনিদের্শনা ও দীক্ষা দানের কাজে। খানকায় বসে তিনি মুরীদদের তালিম দিতে থাকেন। এর মাধ্যমে একটি তরীকা গড়ে তোলেন, যা ‘মওলাভিয়া তরীকা’ নামে প্রসিদ্ধ হয়।
‘মসনবী’ রচনা
বেশি দিন না যেতেই মানবজীবন ও বিশ্বজগৎ নিয়ে দীর্ঘ জীবনের ভাবনার ফলশ্রুতিতে তাঁর মধ্যে যে অসাধারণ প্রতিভা, প্রেরণা ও প্রাণস্পর্শী শিক্ষার সঞ্চার হয়েছিল তার সুবাদে সমগ্র রোমে নজিরবিহীন খ্যাতির অধিকারী হন। চারদিক থেকে অসংখ্য জ্ঞানপিয়াসী তাঁর সাহচর্যে আসতে থাকে। এমনকি বাদশাহ-আমীরগণও তাঁর কাছে রক্ষিত জ্ঞান ও পা-িত্যের ভা-ার হতে রতœ কুড়ানোর উদ্দেশ্যে তাঁর দরবারে আসতে থাকেন।
এদিকে অনুমানিক ৬৫৭ হিজরি হতে হুসাসাম উদ্দীন চালাবী’র প্রেরণায় ‘মসনবী’ রচনার ধারাও অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। তিনি ‘মসনবী’র কবিতা অনর্গল বলে যেতেন, আর হুসসাম উদ্দীন চালাবী তা লিখে নিতেন। লেখা শেষ হলে মওলানাকে পুনরায় পড়ে শোনাতেন। সাহিত্য ও আধ্যাত্মিকতা এবং প্রেরণা-উদ্দীপনার এই মজলিশে বহু আশেক, মুরীদ, মওলানা ও ‘মসনবী’র ভক্তরা উপস্থিত হতেন। কোনো কোনো সময় কাব্য রচনা ভোর পর্যন্ত চলতে থাকত। তখন ঘুম, খাওয়া-দাওয়ার খবর পর্যন্ত থাকত না কারো কাছে।
কবিতা, সাহিত্য ও আধ্যাত্মিকতার এসব মজলিশ মওলানার আধ্যাত্মিক ও উচ্চতর মানবীয় চিন্তাধারার ফল্গুধারা নিয়ে হুসসাম উদ্দীনের নিষ্ঠা, ভক্তি ও ঐকান্তিকতার উষ্ণতায় মিশে জাদুময় প্রাণ-সঞ্চারি কবিতার মোহনীয়তার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পনের বছর অব্যাহত থাকে। শেষ পর্যন্ত তাঁর অস্তিত্বের প্রাণসঞ্জিবনী সূর্যের অস্তগমনের সময় উপস্থিত হয়।
চির প্রশান্তির কোলে আশ্রয়
৬৭২ হিজরির ৫ই জামাদিউল আখের রোববার ইসলামি জাহানের এই মুক্তমনের মহান চিন্তানায়ক আলেমে রব্বানী লাগাতার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৬৮ বছর বয়সে এই ক্ষণস্থায়ী জগৎ ছেড়ে চলে যান।
মওলানার ইন্তিকাল গোটা রোমে এক বিরাট দুর্ঘটনা বলে গণ্য হয়। কুনিয়ার লোকেরা দীর্ঘ চল্লিশ দিন শোকে মূহ্যমান থাকে। কবিরা তাঁর শোকে ও মাহাত্ম্য গেয়ে কবিতা রচনা করেন। তাঁর বন্ধু, ভক্ত ও অনুসারীদের মাঝে কান্না আহাজারির করুণ রোল ওঠে। তাঁর জানাযায় কুনিয়ার বেশিরভাগ লোক, এমনকি ইহুদি ও খ্রিস্টানরাও যোগদান করে। তারা সবাই বেদনায় কাতরভাবে কাঁদে, অশ্রুপাত করে। হিজরি ৭ম শতকের বিখ্যাত আলেম শেখ সদরুদ্দীন কুনাভী মওলানার জানাযার নামাযে ইমামতি করেন।পিতা সুলতানুল ওলামা বাহা ওয়ালাদ এর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। কুনিয়া শহরের গণ্যমান্য লোকেরা ৮০ হাজার দিরহাম অর্থ সংগ্রহ করে তাঁর পবিত্র কবরের ওপর একটি সমাধি নির্মাণ করেন, যা ‘কুব্বাতুল খাযরা’ (সবুজ গম্বুজ) নামে খ্যাতি লাভ করে।
মওলানার জীবনের শেষ গযল
মওলানার ইন্তিকালের রাতে আফলাকীর বর্ণনা অনুযায়ী মওলানার ছেলে হযরত সুলতান ওয়ালাদ অসম্ভব রকমের খেদমত, বিনিদ্রা ও ভগ্ন হৃদয়ের কারণে অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। ফলে মাঝে মধ্যে চিৎকার দিচ্ছিলেনআর কান্নাকাটি করছিলেন, একটুও বিশ্রাম নিচ্ছিলেন না। সেই রাতে হযরত মওলানা বললেন :‘বাহা উদ্দীন! আমি ভালো আছি, তুমি যাও, শুয়ে পড়, একটু আরাম কর।’ হযরত ওয়ালাদ যখন চলে গেলেন ও শুয়ে পড়লেন, তখন মওলানা এই গযল এরশাদ করেন। হযরত চালাবী হুসসাম উদ্দীন তা লিপিবদ্ধ করেন আর রক্তমাখা অশ্রুপাত করেন। এটিই ছিল তাঁর জীবনের সর্বশেষ গযল।
رو سر بنه ببالین تنها مرا رها کن
ترک من خراب شبگرد مبتلا کن.
যাও শুয়ে পড় শিয়রে গিয়ে আমায় তোমরা একলা ছাড়
রাত্রিবেলার ভবঘুরে আমি নষ্ট দুর্ভাগাকে ত্যাজ্য কর।
ماییم و موج سودا، شب تا به روز تنها
خواهی بیا ببخشا، خواهی برو جفا کن.
আমরা আছি, আছে মত্ততার তরঙ্গ ঢেউ রাত্রদিন সমানে,
চাও তো এসো মাফ করে দাও, নয় তো ত্যাজি যাও চলে ।
بر شاه خـوبرویان، واجـب وفـا نبـاشـد
ای زرد روی عاشق تو صبر کن، وفا کن.
যিনি সুন্দরের অধিশ্বর, ওয়াফাদারীতে বাধ্য নন তিনি,
হে ব্যথিত প্রেমিক! তুমিই ধৈর্য ধর, প্রেমের দাবি রক্ষা কর।
خیره کشی است ما را، دارد دلی چو خارا
بکشد، کسش نگـوید تدبیر خونبها کن.
চাহনীর তেজে প্রাণ কাড়ে এমন প্রেমাস্পদ পাষাণ হৃদয়,
খুন করলে কেউ বলবে না তাকে, রক্তমূল্য দাও সমুদয়।
دردیست غیر مردن کآن را دوا نباشد
پس من چگونه گویم کاین درد را دوا کن.
আমান এ ব্যথাÑ মৃত্যু ছাড়া যার নাই কোনো চিকিৎসা,
কাজেই কী করে বলব যে, এই অসুখের চিকিৎসা কর।
در خواب، دوش، پیری در کوی عشق دیدم
با دست اشارتم کرد که عزم، سوی ما کن.
গেল রাতে স্বপ্নে প্রেমের গলিতে দেখলাম এক বৃদ্ধকে,
হাত ইশরায় বলল, চলে এসো তুমি আমার কাছে।
گر اژدها است در ره، عشق است چون زمرد
از برق آن زمـرد، هیـن دفـع اژدهــا کن.
পথে যদিও আছে আযদাহা, প্রেম তো আছে পান্না সম,
সে পান্নারই ঝলক দিয়ে সে আযদাহা দমন কর।
মওলানার খলিফারা
মাযহাবী দিক থেকে মওলানা রূমী (র) ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী। তাঁর ইন্তিকালের পর চালাবী হুসসাম উদ্দীন (মৃত্যু ৬৮৩ হিজরি) তাঁর খলিফা ও স্থলাভিষিক্ত হন। তারপরে মওলানার ছেলে সুলতান ওয়ালাদ (মৃত্যু ৭১২ হিজরি) খেলাফত লাভ করেন।
মওলানা রূমীর ইন্তিকালের পর তাঁর জীবনচরিত নিয়ে, বিশেষ করে শাম্্সেতাবরিযীর প্রতি তাঁর প্রেমাসক্তি নিয়ে বহু রূপকথার জন্ম হয় ও তা লিপিবদ্ধ করা হয়। গবেষকদের মতে এসব রূপকথার মধ্যে অধিকাংশই বানোয়াট ও অনির্ভরযোগ্য। মওলানার জীবনচরিত সম্বন্ধে সবচেয়ে উত্তম ও নির্ভরযোগ্য বিবরণ হচ্ছে, তাঁর ছেলে সুলতান ওয়ালাদ রচিত ‘ওয়ালাদনামা’, যা পদ্যে রচিত। এর পরে রয়েছে শামসুদ্দীন আহমদ আফলাকী রচিত ‘মানাকেবুল আরেফীন’। মওলানার জীবনী সম্পর্কে আরো উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে, দওলতশাহ সমরকন্দী রচিত ‘তাযকিরা’ আর মওলানা আবদুর রহমান জামী রচিত ‘নাফাহাতুল উন্্স’ গ্রন্থে মওলানা রূমী সম্পর্কিত বর্ণনা। আরো কিছু কিতাব ভারতবর্ষে রচিত হয়েছে।
মওলানার সমসাময়িক বুযুুর্গ ও আলেম
যেসব বুজুর্গ আলেম ও আরেফ মওলানার সমসাময়িক ছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রখ্যাত আরেফ সদর উদ্দীন কুনাভী (মৃত্য ৬৭৩), নাজমুদ্দীন রাযি (মৃত্যু ৬৫৪), সালজুকী রাজকবি কানেয়ী তূসী, আল্লামা কুতুব উদ্দীন শিরাযী (মৃত্যু ৭১০), কাজী সীওয়াস, কাজী সিরাজ উদ্দীন উরমাভী (মৃত্যু ৬৮২), হিজরি সপ্তম শতকের বিশিষ্ট আলেম ফখরুদ্দীন ইবরাহীম ইরাকী (মৃত্যু ৬৮৮ হিজরি) ও প্রখ্যাত আরেফ কবি শেখ সাদী (মৃত্যু ৬৯৪)। মওলানা ও শেখ সা’দীর মাঝে দু’বার সাক্ষাৎ হয়েছিল।
সমকালীন রাজা-বাদশাহ
তাঁর সমকালীন বাদশাহগণ ছিলেন গিয়াস উদ্দীন কায়খসরু দ্বিতীয় (৬৩৪-৬৪৩), ইযযুদ্দীন কায়কাউস দ্বিতীয় (৬৪৩-৬৫৫), রুকন উদ্দীন কালাজ আরসালান চতুর্থ (৬৫৫-৬৬৬) ও অন্যরা। তাঁরা সবাই মওলানার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন এবং তাঁর মুরীদ ছিলেন। তবে যিনি ‘খোদাবান্দগার’ অর্থাৎ মওলানার দরবারে ভক্তি ও শ্রদ্ধায় বিনীত ও একান্ত নিবেদিত ছিলেন তিনি হলেন এশিয়া মাইনরে ইলখানী মোঘলদের গভর্নর মুঈন উদ্দীন পরওয়ানা (মৃত্যু ৬৭৫)
রচনাবলি
১. মসনবী মা’নাবী مثـنوی معـنوی
‘মসনবী’ হচ্ছে ইরান তথা বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বিরল কাব্যকীর্তি, মানব জাতির চিন্তা ও চেতনার বিস্ময়কর প্রতিফলন-সংকলন। এই ‘মসনবী’ ইরানের সর্বত্র আধ্যাত্মিক কাব্য সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে সমাদৃত। মওলানার একনিষ্ঠ ভক্ত, নিষ্কলুষ মুরীদ হুসসাম উদ্দীন চালাবীর অনুরোধ ও অনুপ্রেরণায় এ অমর ও জাদুময় কাব্যের সৃষ্টিকর্ম সম্পন্ন হয়েছে। হুসসাম উদ্দীনই মওলানার কাছে দরখাস্ত করেছিলেন মওলানা যেন আধ্যাত্মিক, শিক্ষা-দীক্ষা ও দাশর্নিক বিষয়াবলির সমন্বিত একটি গ্রন্থ সানায়ী গযনভীর ‘হাদীকাতুল হাকীকা’ ও শেখ ফরিদ উদ্দীন আত্তারের ‘মানাতিকুত তায়র’ এর আদলে কবিতার আঙ্গিকে রচনা করেন। মওলানা তাঁর দরদিপ্রাণ সাথির প্রত্যাশা পূরণ করেন ও ‘মসনবী’ রচনা আরম্ভ করেন। ‘মসনবী’র প্রথম দফতরটি রচনা করেন ৬৫৭ ও ৬৬০ হিজরির মাঝামাঝি সময়ে। দুই বছর পর দ্বিতীয় দফতরের রচনা শুরু হয় ৬৬২ হিজরির পর। বাকি চারটি দফতর লাগাতারভাবে রচনা করেন। এভাবেই ইরানের আধ্যাত্মিক ও সাহিত্য বিষয়ক রচনাবলির আঙ্গিনায় এক বিশাল কীর্তিগাথা রচিত হয়। আফলাকীর বর্ণনা অনুযায়ী মওলানা কেবল ১৮টি বয়েত স্বহস্তে লিখেন। প্রথম বয়েতটি ছিল মসনবীর সূচনা বয়েত বা প্রথম কলি:
بشنو از نی چون حکایت می کند
وز جـدایـیـهـا شـکـایـت می کـنـد.
‘বাঁশরির কাছে শোনো কী কথা সে বলছে,
সে যে বিরহের করুণ ব্যথার অনুযোগ করেছে।’
শেষ আঠারতম বয়েতটি হলো :
در نیابد حال پخته هیچ خام
پس سخن کوتاه باید والسلام.
বুঝবে না পাকাদের অবস্থা কোনো কাঁচা লোক,
তাই কথা সংক্ষেপ করা চাই, বলি ওয়াস্্সালাম।
‘মসনবী’র বাদবাকি অংশ লিপিবদ্ধ করেন হুসসাম উদ্দীন চালাবী ও তাঁর অপরাপর মুরীদরা, তাঁরা মওলানাকে পড়ে শোনানোর পর সংশোধন করা হতো।
২. ‘মসনবী’ লিপিবদ্ধ হয় ছয় দফতরে। এর বয়েতের সংখ্যা ভিন্নভিন্ন পা-ুলিপি অনুসারে ২৬,০০০ থেকে ২৭,০০০ এর মধ্যে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৩২,০০০ বয়েতেও পৌঁছে যায়। বর্ধিত বয়েতগুলো সংযুক্ত বা আরোপিত বলে গবেষকদের ধারণা।
‘মসনবী’র মরমি, দার্শনিক, তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সূক্ষ্ম বিষয়গুলো যেহেতু বেশ জটিল, সেহেতু প্রথম থেকেই এই অনন্যসাধারণ গ্রন্থটির বহু ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচিত হয়েছে।
৩. দীওয়ানে শামসدیـوان شمس
মওলানা রূমীর অপর শ্রেষ্ঠ রচনা হচ্ছে তাঁর গযল সংকলন। এই গ্রন্থটি ‘দিওয়ানে কবীর’ বা ‘গাযালিয়াতে শাম্্স’কিংবা ‘দীওয়ানে শাম্্স’নামে প্রসিদ্ধ। মওলানা তাঁর প্রিয় মুর্শিদ শাম্সেতাবরিযীর নামে এর নামকরণ করেন। এর সর্বোত্তম ও সুন্দর মুদ্রণটি প্রকাশিত হয়েছে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে মরহুম বদিয়ুয যামান ফরুযানফর এর সম্পাদনায়। কিতাবটিতে বয়েতের সংখ্যা ৩৬,৩৬০টি।
৪. রুবাইয়াত رباعیات
দিওয়ানের বাইরে রয়েছে স্বতন্ত্র ‘রুবাইয়াত’ বা চতুষ্পদী। ‘রুবাইয়াত’ এর সংখ্যা ১,৯৮৩টি। মওলানার প্রাণ-উচ্ছল গযলকাব্য ও আধ্যাত্মিক রুবাইয়াত, যা অবিরাম-নির্ঝর ঝরনার মত, তাঁর আগাগোড়াই মহান আল্লাহর প্রতি অফুরন্ত প্রেম উন্মাদনায় ভরপুর।
৫. ফীহে মা ফীহে, فیه ما فیه এ কিতাবটি আধ্যাত্মিক রহস্যজ্ঞান সম্পর্কিত।
৬. মাকাতীব مکاتیب -এটি মওলানার চিঠিপত্র সংকলন এবং
৭. মাজালীসে সাবআ مجالس سبعه -এই কিতাবটি মওলানার বক্তৃতা সংকলন।