All posts by dreamboy

সংবাদ বিচিত্রা

১ পবিত্র কুরআন বলদর্পীদের ভয় না পাওয়ার শিক্ষা দিয়েছে : সর্বোচ্চ নেতা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আমেরিকাসহ অন্যান্য বলদর্পী শক্তিগুলোকে ভয় না পেতে তাঁর দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পবিত্র কুরআন আমাদেরকে বলদর্পী শক্তিগুলোকে ভয় না পাওয়ার শিক্ষা দিয়েছে।
সর্বোচ্চ নেতা গত ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে প্রথম রমজানের ইফতারের আগে একটি কুরআন তেলাওয়াতের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এ আহ্বান জানান। প্রতি বছর এ ধরনের অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকলেও এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি সশরীরে উপস্থিত হননি।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ‘আমেরিকাকে ভয় পেলে তার ফলাফল তিক্ত হয়। বিগত বছরগুলোতে কোনো কোনো মুসলিম দেশের নেতা আমেরিকাকে ভয় পাওয়ার কারণে কঠিন ও জটিল সমস্যার মধ্যে পড়েছেন এবং চরমভাবে অপমানিত হয়েছেন।’ তিনি আমেরিকার মতো দাম্ভিক শক্তির বিরুদ্ধে সাহস ও দৃঢ়তা প্রদর্শনের জন্য ইরানি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে গোটা মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, একমাত্র কুরআনের শিক্ষায় মানবতার জন্য মুক্তি ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তিনি বলেন, নিপীড়ন, বৈষম্য, যুদ্ধ, নিরাপত্তাহীনতা ও হতাশাকে দূরে ঠেলে শান্তি, নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য অর্জন করতে হলে পবিত্র কুরআনের আশ্রয় নিতে হবে।এই মহাগ্রন্থ দাম্ভিক শক্তিগুলোকে বিশ্বাস না করার যে আহ্বান জানিয়েছে তা পালন করার জন্য তিনি মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানান।

২ ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন প্রেসিডেন্ট রুহানি
করোনাভাইরাস মোকাবিলার কাজে ব্যবহারের জন্য দেশের জাতীয় উন্নয়ন তহবিল থেকে ১০০ কোটি ইউরো তোলার অনুমতি দেয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। একইসঙ্গে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ বাকের নোবাখতকে এই অর্থ স্বাস্থ্যখাতে খরচ করার এবং যতটা সম্ভব অভ্যন্তরীণ কো¤পানিগুলোর কাছ থেকে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার কাজে ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য সরকারকে পার্লামেন্ট বা সর্বোচ্চ নেতার অনুমতি নিতে হয়। করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে পার্লামেন্টের অধিবেশন বন্ধ থাকায় সর্বোচ্চ নেতা গত ৬ এপ্রিল সরকারকে এ অনুমতি প্রদান করেন।
ইরানে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পরও দেশটির ওপর আরোপিত অবৈধ ও একতরফা নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে আমেরিকা। এর ফলে ইরানের পক্ষে দেশের বাইরে থেকে নিজের পাওনা অর্থ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে তা সত্ত্বেও ইরানে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, সাধারণ মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, গণহারে স্ক্রিনিংসহ এ সংক্রান্ত সব কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে তেহরান।

৩ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের প্রতি সমবেদনা জানালেন পোপ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন একতরফা অবৈধ নিষেধাজ্ঞা আরোপের সমালোচনা করেছেন রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। তিনি করোনা ভাইরাসের মহামারির মধ্যেও ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার জন্য ইরানি জনগণের প্রতি সমবেদনা জানান।
ইরানের ধর্ম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সংস্থার প্রধান আলী রেজা আরাফি রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এরপর ভ্যাটিকানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ডিনাল পিত্র প্যারোলিন মার্কিন সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
আরাফির চিঠিতে করোনা ভাইরাসের মহামারিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন মারা যাওয়ায় তাদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সব ধর্মের লোকজনের মধ্যে সহযোগিতার কথা বলেন।
আরাফির এই চিঠির পর ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, চিঠির সামগ্রিক বক্তব্য জানার পর পোপ ফ্রান্সিস ইরানের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
আরাফি তাঁর চিঠিতে ইরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভূমিকা রাখার জন্য ভ্যাটিকানের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেলি ক্রাফটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়।

৪ ৪২ বছরে পা দিল ইরানের ইসলামি বিপ্লব
ইরানে ইসলামি বিপ্লবের ৪১তম বিজয়-বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় দেশটির সর্বস্তরের কোটি কোটি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আবারও এ মহান বিপ্লবের প্রতি ইরানিদের সমর্থন এবং অবিচল আনুগত্য ও অঙ্গীকারবদ্ধতাকে তুলে ধরে।
১৯৭৯ সালের এই দিনে তথা ১১ ফেব্রুয়ারি মার্কিন মদদপুষ্ট স্বৈরতান্ত্রিক শাহ সরকারের চূড়ান্ত পতনের মধ্য দিয়ে ইরানে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন রাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে এবং ইসলাম ধর্মভিত্তিক জনগণের শাসন-ব্যবস্থা চালু হয়। সেই থেকে প্রতি বছরই ‘ইয়াওমুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর দিবস’ হিসেবে ঘোষিত এই দিবস পালন করে আসছে ইরানি জাতি। প্রতি বছরের মত এ বছরও ইরানিদের এ দিবসের শোভাযাত্রার প্রধান সেøাগান ছিল ‘ধ্বংস হোক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ ও ‘ধ্বংস হোক ইসরাইল’ এবং ইসলামই বিজয়ী।
ইরানে ইসলামি বিপ্লব প্রথম থেকেই ছিল গণভিত্তিক এবং ৪০ বছর পরও এই ভিত্তি অটুট থাকায় তা এই রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় জনগণের অসাধারণ ভূমিকা ও গুরুত্বকে তুলে ধরছে। ইরানি জনগণ সব সময়ই বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহে ও ¯পর্শকাতর সময়ে ময়দানে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থেকেছে। আর এ বিষয়টি এ বিপ্লবের নানা অভাবনীয় সাফল্যের অন্যতম প্রধান রহস্য। বিশ্বের অন্য বিপ্লবগুলোতে জনগণ এভাবে এত ব্যাপক মাত্রায় ও এত দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রাখেনি।
ইরানের ইসলামি বিপ্লব ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি ইরানিদের বেশিরভাগ জনগণের অব্যাহত আনুগত্য এবং সমর্থন মার্কিন সরকারগুলোকে আরও বিচলিত ও ক্রুদ্ধ করেছে। ফলে তারা ইরানি জনগণকে সর্বোচ্চ মাত্রায় কষ্ট দিতে ওষুধ ও ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের অমানবিক নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েই তুলেছে। কিন্তু ইরানি জনগণ মার্কিন সরকারের নানা ষড়যন্ত্র ও নজিরবিহীন সর্বোচ্চ চাপ আর নিষেধাজ্ঞাগুলোকেও ব্যর্থ করে দিচ্ছে ইসলামি সরকার ও নেতৃত্বের প্রতি আরও বেশি সংহতি দেখানোর মাধ্যমে। ইরানিদের এই ঐক্যবদ্ধ জাতীয় শক্তির মূল উৎস হল খাঁটি ইসলামি আদর্শ। ফলে ইসলামের এ বিজয় বজায় থাকবে ও তা ইসলামি বিপ্লবের অগ্রযাত্রাকে অদম্য ও দুর্বার করবে বলে নানা লক্ষণ থেকেই ¯পষ্ট।
প্রায় ৪০ দিন আগে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদ্স ব্রিগেডের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি মার্কিন সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হলে ইরান ও ইরাকসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করে। মার্কিন ওই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে সোলাইমানির সঙ্গে শহীদ হয়েছিলেন ইরাকের জনপ্রিয় কমান্ডার আবু মাহদি। সেই থেকে গোটা পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সরকারের প্রতি জনগণের ঘৃণা কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে ¯পষ্ট হল যে মার্কিন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও ইরানি সরকার ও জনগণের ঐক্যকে দুর্বল করতে এবং ইরানের আঞ্চলিক প্রভাবকে দুর্বল করতে ব্যর্থ। তাই পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল থেকে পাততাড়ি গোটানো ছাড়া মার্কিনিদের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই।

৫ ইরানের ৪১তম বিপ্লব বার্ষিকীতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অভিনন্দন
ইরানের ৪১তম বিপ্লব বার্ষিকীতে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বার্তায় ইরানের সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এসব দেশের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ইতালি, বেলজিয়াম, ¯েপন, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, কাজাখস্তান, কিরঘিজিস্তান, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, আফগানিস্তান, লেবানন, ইরাক, থাইল্যান্ড, কাতার, আযারবাইজান প্রজাতন্ত্র, তাজিকিস্তানসহ আরো বহু দেশ।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের একচল্লিশতম মহান বিজয়-বার্ষিকীতে এসব দেশ প্রেসিডেন্ট রুহানিসহ ইরানের সরকার এবং জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লবের একচল্লিশতম বার্ষিকী ১১ ফেব্রুয়ারি সমগ্র ইরানব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
লক্ষ লক্ষ জনতা ইরানের বিভিন্ন এলাকায় বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। তারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব আধিপত্যবাদীদের বিচিত্র ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোসহ প্রতিরোধ চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সেøাগান দেয়।

৬ ইরানের বিপ্লব বার্ষিকীতে দেশজুড়ে ৫৬ রেলপ্রকল্পের উদ্বোধন
ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের ৪১তম বিজয়-বার্ষিকী উদযাপন ‘টেন-ডে ডন’ উপলক্ষে দেশজুড়ে ৫৬টি রেলপথ অবকাঠামো ও সেবা প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করা হয় বলে জানান ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান রেলওয়ের (যা আরএআই নামে পরিচিত) প্রধান সাইদ রাসুলি।
তেহরানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, উল্লিখিত প্রকল্পগুলো দেশের রেলপথ পরিবহনের নিরাপত্তা ও গতি বাড়ানোর লক্ষে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এই কর্মকর্তার তথ্যমতে, প্রকল্পগুলোতে মোট ব্যয় হয়েছে ছয় ট্রিলিয়ন রিয়াল (১৪২ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার)। যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক সিগনাল, ডাবল ট্রাকিংয়ের ব্যবস্থায় করা, সেই সাথে সাব-লাইন তৈরি এবং কিছু ব্লকের পুরনো রেললাইনের পুনর্নির্মাণ ও মেরামতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পকে ইরান সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিকল্পনাগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটির ষষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিকী জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় (২০১৬ থেকে ২০২১) রেলপথে কার্গো পরিবহনের অন্তত ৩০ শতাংশ ও যাত্রী পরিবহনের ২০ শতাংশ সক্ষমতা লাভের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

৭ ইরানি সেনাবাহিনী উন্মোচন করল দু’টি কৌশলগত দূরপাল্লার রাডার
ইরানের সেনাবাহিনী কৌশলগত দূরপাল্লার দু’টি রাডার উন্মোচন করেছে। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এ দুই রাডার উন্মোচনের মধ্য দিয়ে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও বাড়ল।
ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল আবদুলরহিম মুসাভির উপস্থিতিতে গত ২০ এপ্রিল ‘খালিজে ফার্স’ (পারস্য উপসাগর) এবং ‘মুরাকিব’ (অতন্দ্র) নামের এ দুই রাডার উন্মোচন করা হয়।
দীর্ঘপাল্লার রাডার খালিজে ফার্সের তৎপরতা পরিসীমা ৮০০ কিলোমিটারেরও বেশি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ত্রিমাত্রিক ফেজড-অ্যারের এ রাডারে প্রচলিত সব লক্ষ্যবস্তুই ধরা পড়বে। এ ছাড়া, রাডার ফাঁকি দেয়ার সক্ষমতা আছে এমন লক্ষ্যবস্তুসহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও এতে ধরা পড়বে।
মুরাকিব (অতন্দ্র)ও ত্রিমাত্রিক অত্যাধুনিক ফেজড-অ্যারে রাডার এবং এর পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার। নিচু এবং মধ্যাকাশ দিয়ে উড়ে আসা নানা ধরণের ক্ষুদ্র লক্ষ্যবস্তু এতে ধরা পড়বে। এ ছাড়া, রাডার ফাঁকি দেয়ার সক্ষমতা আছে এমন লক্ষ্যবস্তুসহ চালকহীন বিমানকেও ধরতে পারবে এ রাডার।
ইরানি সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা দেশটির জ্ঞানভিত্তিক কো¤পানিগুলোর সহযোগিতায় এই দুই রাডার ব্যবস্থার নকশা প্রণয়ন এবং তৈরি করেছেন।
এ ছাড়া, ইরান অত্যাধুনিক একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্মোচন করেছে। এ ব্যবস্থারও নকশা প্রণয়ন এবং নির্মাণ করেছেন ইরানি বিশেষজ্ঞরা।

৮ কক্ষপথে গেল ইরানের প্রথম সামরিক স্যাটেলাইট
কক্ষপথে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসির প্রথম সামরিক স্যাটেলাইট। গত ২২ এপ্রিল সকালে নূর-১ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেণ করা হয়। কক্ষপথে ৪২৫ কিলোমিটার উচ্চতায় এটি স্থাপন করা হয়।
নূর-১ কক্ষপথে পাঠানো ইরানের প্রথম কোনো সামরিক স্যাটেলাইট। দেশীয়ভাবে তৈরি কাসাদ (বার্তা বাহক) লাঞ্চার দিয়ে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। আইআরজিসির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হলো।

৯ রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম ডুবোজাহাজ যোগ দিল ইরানি নৌবহরে
রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম গাদির শ্রেণির ডুবোজাহাজ যোগ দিয়েছে ইরানের নৌবহরে। এর আগে গাদি-শ্রেণির ডুবোজাহাজের পুরোপুরি সংস্কার এবং মানোন্নয়ন করা হয়।
ইরানি নৌবাহিনীর কারখানার কমান্ডার ফ্লোটিলা অ্যাডমিরাল আব্বাস ফজলে-নিয়া গত ৮ এপ্রিল ২০২০ জানান, গত কয়েক বছর ধরেই গাদির-শ্রেণির ডুবোজাহাজ তৈরি করছে ইরান। তিনি জানান, বিভিন্ন শ্রেণির ডুবোজাহাজ তৈরির প্রযুক্তির অধিকারী বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের অন্যতম ইরান।
বিশ্বে ডুবোজাহাজকে ভারী, আধা-ভারী এবং হালকা এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ডুবোজাহাজ হালকা শ্রেণিভুক্ত বলেও জানান তিনি।
গাদির-শ্রেণির ডুবোজাহাজের সুবিধার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি জানান, আকারে ছোট হওয়ায় গাদিরকে চিহ্নিত করা বা একে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। শত্রুর জন্য কেনও আকারে ছোট ডুবোজাহাজ মারাÍক হুমকি হয়ে দেখা দেবে তারও ব্যাখ্যা দেন অ্যাডমিরাল আব্বাস ফজলে-নিয়া। তিনি জানান, গাদিরে রয়েছে চৌকস টর্পেডো বা ডুবোবোমা। এ দিয়ে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট ভাবে হামলা করা ও তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব বলেও জানান তিনি।
ইরানের নৌবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পুরোপুরি নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ডুবোজাহাজ গাদির বানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এটি সামরিক মহড়ায় নামার কর্মসূচি রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ডুবোজাহাজ বানানোর জন্য বিজ্ঞানে অত্যাধুনিক অগ্রসর এবং দক্ষ হতে হয়। কোনও দেশ ডুবোজাহাজ নির্মাণে সক্ষম হলে দেশটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হস্তগত করেছে স্বাভাবিক ভাবেই তা ধরে নিতে হবে।
২০১৮ সালে ইরানের নৌবাহিনীতে প্রথম গাদির-শ্রেণির দুটি ডুবোজাহাজ যোগ দেয়। এই দুই ডুবোজাহাজের সাগর থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ, ডুবোবোমা বা টর্পেডো ছোঁড়া এবং মাইন বসানোর সক্ষমতা রয়েছে।

১০ সামরিক বিমান উৎপাদনে স্বয়ংস¤পূর্ণ ইরান
ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্প দেশের অভ্যন্তরে সামরিক বিমানের প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ উৎপাদনে সক্ষম বলে জানিয়েছেন দেশটির বিমান বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ জাতীয় টিভিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি একথা জানান।
নাসিরজাদেহ বলন, বর্তমানে আমেরিকা সহ বিশ্বের বড় বড় যুদ্ধবিমান নির্মাতা কো¤পানিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ ও আনুষাঙ্গিক উপকরণগুলো উৎপাদন করে না। এক্ষেত্রে কয়েকটি দেশ তাদের উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে থাকে। তবে আমরা যুদ্ধবিমানের সমস্ত উপকরণ দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন করে থাকি।
বিমান বাহিনীর কমান্ডার বলেন, আমরা সামরিক জেট নির্মাণের প্রযুক্তি ও জ্ঞান অর্জন করেছি। বিমানবাহিনীর যে কোনো চাহিদা পূরণে সক্ষম প্রতিরক্ষা শিল্প। আমরা কিয়াম ও ইসফাহান সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং হালনাগাদ জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত অন্য বিমানঘাঁটিগুলোতে পাইলট প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বয়ংস¤পূর্ণ।
যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন উৎপাদনকে খুবই জটিল প্রযুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবছর আমরা একটি ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন করেছি এবং এটি কাওছার জেটে স্থাপন করা হয়েছে। ইঞ্জিনটির চক্কর দেয়ার ক্ষমতা মার্কিন তৈরি এফ-৫ যুদ্ধবিমানের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির সেই প্রযুক্তি অর্জন করেছি।

১১ করোনাভাইরাস গবেষণা প্রকল্পে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে ইরান
বিশ্বে করোনাভাইরাসের ওপর পরিচালিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির গবেষকরা এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট ১ হাজার ২শ’র অধিক প্রকল্প পরিচালনা করেছে। শুক্রবার ইরানের উপসস্বাস্থ্যমন্ত্রী রেজা মালেকজাদেহ গত ৪ মে ২০২০ এই তথ্য জানান।
সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ মন্ত্রীর বরাতে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় দেশের সব গবেষক হাতে হাত রেখে কাজ করেছেন। যার ফলে গত দেড় মাসে ১২শ’ গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের ওপর গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক পরিম-লে আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে দারুণ সব বৈজ্ঞানিক পণ্য তুলে ধরেছি। বর্তমানে দেশে পরিচালিত করোনাভাইরাস গবেষণার অধিকাংশই ইন্টারভেনশনাল স্কিমের আওতায়। এর মধ্যে ৩৫টি স্কিম কোভিড-১৯ এর কার্যকর চিকিৎসা উদ্ভাবন করছে বলে জানান ইরানি এই মন্ত্রী।

১২ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাড়ছে করোনা শনাক্তকরণে ইরানি কিটের চাহিদা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান জার্মানি ও তুরস্কসহ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট রপ্তানি শুরু করার পর দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশটির কিটের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে ইরান আরো কয়েকটি দেশে নিজেদের তৈরি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিটের নমুনা পাঠিয়েছে। পণ্যটি এসব দেশে অনুমোদন পেলে রপ্তানি শুরু করবে তেহরান। ১২ মে ২০২০ ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্সির আন্তর্জাতিক ইন্টার‌্যাকশন সেন্টারের প্রধান মাহদি কালেনয় এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নভেল করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের ফলশ্রুতিতে ইরানের জানভিত্তিক কো¤পানিগুলো তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা প্রমাণে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট উৎপাদন শুরু করেছে। ভাইরাসটি মোকাবেলায় দেশটি এখন মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও দেশীয় তৈরি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট রপ্তানি করছে।
কালেনয় বলেন, দেশীয়ভাবে তৈরি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিটের নমুনা অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়েছে। সমন্বয় করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এসব কিটের বাজার তৈরি করা হবে। যেসব দেশে দেশীয় তৈরি কিট রপ্তানির টার্গেট রয়েছে তার মধ্যে কাতার, ভারত, পাকিস্তান,ফিলিপাইন অন্যতম বলে জানান তিনি।

১৩ পরিবেশবান্ধব জীবাণুনাশক উৎপাদন করছে ইরান
পরিবেশ ও মানুষের কোনো ক্ষতি করে নাÑ এমন ধরনের একটি জীবাণুনাশক উৎপাদন করার কারিগরি জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন ইরানের আমিরকবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গবেষকরা। বর্তমানে দেশটির একটি জ্ঞানভিত্তিক কো¤পানি মাল্টি অক্সিডেন্ট দ্রবণটির গণউৎপাদন করছে। যা দিয়ে মুখ ও হাত উভয় পরিষ্কার করা যাবে।
কো¤পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান একচেটিয়াভে পণ্যটি উৎপাদন প্রক্রিয়া স¤পন্ন করছে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোনো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে না। সুতরাং পণ্যটি পরিবেশবান্ধব।
তিনি বলেন, জীবাণুনাশকটি ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি কোনো ঝুঁকি নেই। প্রকৃতগতভাবে এটি ক্ষারীয় ও অজ্বলনশীল।
উল্লেখ্য, ইরানের জ্ঞানভিত্তিক কো¤পানিগুলো করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বিপুল সংখ্যক সরঞ্জাম উৎপাদন করেছে। দেশটি এসব পণ্য এখন রপ্তানিতে সক্ষম। ইরানের তৈরি সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছেÑ আইসিইউ ও সিসিইউ সরঞ্জাম, সিটি-স্ক্যান মেশিন, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট ও জীবাণুনশক। এছাড়া দেশটির জ্ঞানভিত্তিক কো¤পানিগুলো দিনে ৬০ লাখ মাস্ক তৈরি করে।

১৪ করোনাভাইরাসের সর্বাপেক্ষা কার্যকর ওষুধ তৈরি করলো ইরান
ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী রেজা মালেকজাদেহ জানিয়েছেন, তাঁর দেশ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সর্বাপেক্ষা কার্যকর ওষুধ তৈরি করতে সফল হয়েছে। গত ১৪ মার্চ তিনি এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিষয়টি ঘোষণা দেন। তিনি জানান, রোগটির চিকিৎসা ও মোকাবেলায় ইরান কয়েকটি গবেষণা পরিচালনার পর এই সফলতা পেয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আক্রান্তদের কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনাসমূহ সংরক্ষণে রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য নিবন্ধন করা হয় এবং একটি বায়োলজিক্যাল ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা গবেষণা পরিচালনায় মূল বিষয় ছিল।
তিনি আরও জানান, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ইরানি ও চায়না ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তায় চীন এ পর্যন্ত ইরানে চারটি চালান পাঠিয়েছে।

১৫ আইআরজিসি’র নজিরবিহীন প্রযুক্তি : দূর থেকে ৫ সেকেন্ডে ধরা পড়বে করোনা
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি করোনা নির্ণয়ে নজিরবিহীন প্রযুক্তি বের করেছে। এ প্রযুক্তি দিয়ে ১০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যাবে।
তেহরানে আইআরজিসি’র প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামির উপস্থিতিতে গত ১৫ এপ্রিল ২০২০ এ প্রযুক্তির উদ্বোধন করা হয়। ইরানে করোনাবিরোধী লড়াইয়ের শুরু থেকেই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে চলেছে আইআরজিসি।
এ প্রযুক্তির সহায়তা করোনাভাইরাস রয়েছে এমন সব বস্তু শনাক্ত করা যাবে। পাশাপাশি মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে শনাক্ত হবেন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিও। ইরানের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাসিজে কর্মরত বিজ্ঞানীরা বের করেছেন এ প্রযুক্তি।
আইআরজিসির কমান্ডার এ উদ্ভাবনকে নজিরবিহীন এবং একক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন। আইআরজিসি’র এ প্রযুক্তির কর্ম পদ্ধতি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি এমন এক চৌম্বকীয় পরিম-ল তৈরি করে যা চারপাশ খতিয়ে দেখতে থাকে। একটি অ্যান্টেনার সাথে এ ব্যবস্থা লাগান আছে এবং করেনার উপস্থিতি খুঁজে বার করার সাথে সাথেই সেদিকে দিক নির্দেশনা দিতে থাকে।
এ প্রযুক্তির সুবিধার দিক গুলোও তুলে ধরেন তিনি। রক্ত পরীক্ষার ঝামেলায় যেতে হয়না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ দিয়ে দূর থেকেই কাজ করা যায়। এ সব সুবিধা থাকায় এটি দিয়ে গণভাবে করোনা নির্ণয় করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
ইরানের অনেক হাসপাতালে এ প্রযুক্তি সফল পরীক্ষা করা উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সফলতা লাভ করা গেছে। প্রযুক্তিটি সব ধরণের ভাইরাস নির্ণয়ের ভিত্তি তৈরি করতে পারে বলেও জানান তিনি।

১৬ মধ্যপ্রাচ্যে মাস্ক উৎপাদনের সবচেয়ে বড় কারখানা চালু করেছে ইরান
মধ্যপ্রাচ্য বা পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান মাস্ক তৈরি জন্য সবচেয়ে বড় কারখানা চালু করেছে। যখন ইরানসহ সারা বিশ্বে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ তা-ব চলছে তখন ইরান প্রতিরক্ষামূলক এই মাস্ক বানানোর জন্য কারখানা চালুর কথা জানালো।
ইরান সরকারের মুখপাত্র আলী রাবিয়ি বলেন, এ কারখানা রাজধানী তেহরানের কাছে আলবোর্জ প্রদেশের ইশতেহার্দ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে চালু হয়েছে। তিনি জানান, এই কারখানা প্রতিদিন ২০ লাখ মাস্ক তৈরি করতে পারবে যা দেশের চাহিদা পুরণ করতে সক্ষম হবে। আরেকজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, ইশতেহার্দ কারখানায় ২০ লাখের বেশি মাস্ক উৎপাদন হবে যা বর্তমানের দ্বিগুণ।
১৭ ইরানি ভেন্টিলেটরের বিদেশি চাহিদা বাড়ছে
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইরানের তৈরি ভেন্টিলেটর ক্রয়ে চাহিদা বাড়ছে বিশ্বের বেশ কিছু দেশ থেকে। রাশিয়া, ইতালি ও ¯েপনসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে বিক্রয়ের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইরানকে। ইরানের একটি জ্ঞানভিত্তিক কো¤পানির সিইও আহমাদ বেহফার-মোকাদ্দাম ইরানি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজকে গত ২১ এপ্রিল ২০২০ এই তথ্য জানান।
তিনি জানান, তাঁর কো¤পানি ইউরোপ থেকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স লাভ করেছে। মহামারির আগ থেকেই ইউরোপীয় ও অন্যান্য দেশে তাদের ভেন্টিলেটর রপ্তানি করা হয়।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির আগে আমরা ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাকু, আযারবাইজান, জর্জিয়া, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশে ভেন্টিলেটর রপ্তানি করেছি। মহামারির কারণে দেশীয় চাহিদা পূরণ করা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকারে রয়েছে। তবে রাশিয়া, ইতালি ও ¯েপন থেকে বিক্রয়ের জন্য নতুন অনুরোধ জানানো হয়েছে।

১৮ আমেরিকার জনগণের জন্য ওষুধ ও মানবিক ত্রাণ পাঠাল ইরানের ছাত্ররা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান একদিনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করছে অন্যদিকে মার্কিন সরকারের অর্থনৈতিক সন্ত্রাস এবং জরুরি ঔষধ আমদানির ওপর নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞাকে মোকাবেলা করছে।
ইরান পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী এবং ওষুধ সহজে কিনতে পারছে না। ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে জাতিসংঘ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দাবি সত্ত্বেও হোয়াইট হাউজ ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেছে এবং ওয়াশিংটন সম্প্রতি তেহরানের ওপর বেশ কয়েকটি নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ইরান করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইরান অনেক দেশের তুলনায় বেশ সাফল্য অর্জন করলেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে।
তবে ইরানের ওপর অবরোধ চাপিয়ে আমেরিকাও ভালো নেই। দেশটির স্বাস্থ্যখাত পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। পর্যাপ্ত টেস্ট কিট, পিপিই, হ্যান্ড সেনিটাইজার, এমনকি সাবানও নেই। ইতোমধ্যে নিউ জার্সি শহরের ডাক্তার ফ্রাঙ্ক গ্যাবরিন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিনা চিকিৎসায়।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দিক থেকে আমেরিকা বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। আমেরিকার এ সংকটজনক মুহূর্তে দেশটির জনগণের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইরানের ছাত্ররা।
ফার্স নিউজ এর খবরে বলা হয়েছে, গত ১ এপ্রিল ২০২০ ইরানের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজের ছাত্ররা তেহরানে আমেরিকার স্বার্থ দেখাশোনাকারী সুইস দূতাবাসে জরুরি ওষুধ ও মানবিক ত্রাণ পাঠিয়েছে। বিশ্ব মহামারী করোনার মধ্যেও ট্রা¤প প্রশাসন অবরোধ শিথিল না করায় প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে এবং প্রয়োজনে মার্কিন জনগণের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে তারা এক গাড়ি ওষুধ ও মানবিক ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে।
এর আগে একই দূতাবাসের মাধ্যমে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) পরিচালিত ‘বাকিতুল্লাহ মেডিকেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটি’ কর্তৃপক্ষ আমেরিকার জনগণের জন্য ইরানের তৈরি করোনা শনাক্তকরণ কিট উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে।
বাকিয়াতুল্লাহ মেডিক্যাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিভাগের প্রধান বলেন, আমেরিকার সরকার আমাদের শত্রু, জনগণ নয়। তাই এই দুঃসময়ে জনগণের চিকিৎসার লক্ষ্যে কিটগুলো সুইজারল্যান্ড দূতাবাসে জমা দেয়া হয়েছে।

১৯ ইরানের জ্ঞানভিত্তিক ফার্মগুলোর ৫শ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি
গত ফারসি বছরে (২১ মার্চ ২০১৯ থেকে ২০ মার্চ ২০২০) ইরানের জ্ঞানভিত্তিক ফার্মগুলো ৬শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করেছে। গত ১৩ এপ্রিল এই তথ্য জানিয়েছেন ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্সির আন্তর্জাতিক ব্যবসা উন্নয়ন দপ্তরের মহাপরিচালক রুহুল্লাহ ইসতিরি।
রপ্তানি খাতে ইরানের জ্ঞানভিত্তিক কো¤পানিগুলোর কার্যক্রম স¤পর্কে আলোকপাত করেন তিনি। ইসতিরি বলেন, তার দপ্তর অন্যতম মূল লক্ষ্য হিসেবে জ্ঞানভিত্তিক কো¤পানিগুলোর রপ্তানি বাড়ানোর ওপর নজর দিয়েছে। এলক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেশের আড়াই হাজার জ্ঞানভিত্তিক কো¤পানিকে অত্যন্ত উচ্চ মানসম্মত সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

২০ বিশ্বব্যাপী ৪৩ দেশে ইরানের ৯৫ স্কুল
বিশ্বব্যাপী ৪৩টি দেশে ৯৫টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে ইরান। ইরানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা গোলামরেজা কারিমি গত ৫ এপ্রিল এই তথ্য জানান।
ইরানি বার্তা সংস্থা আইএসএনএ তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, তুরস্ক, ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইউরোপে সাতটি অফিসের তত্ত্বাবধানে স্কুলগুলো পরিচালিত হচ্ছে। বিদেশি এসব স্কুলে বর্তমানে ১৪ হাজার ২৭ জন ইরানি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে বলে জানান তিনি।
কারিমি আরও জানান, ইরানে বিদেশি নাগরিকদের জন্য ১৪টি স্কুল, আফগান নাগরিকদের জন্য ১১টি এবং ৪টি আন্তর্জাতিক স্কুল, ১১টি বেসরকারি স্কুল ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাস অধিভুক্ত ৯টি স্কুল চলমান রয়েছে।

২১ শরণার্থী শিক্ষার্থীদের পেছনে ইরানের বছরে ব্যয় ৪৭৭ মিলিয়ন ডলার
দেশে বসবাসরত বিদেশি শরণার্থী শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় প্রতি বছর প্রায় ২০ ট্রিলিয়ন রিয়াল (৪৭৭ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করে ইরান। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক দপ্তরের প্রধান গোলামরেজা কারিমি গত ১১ এপ্রিল ২০২০ এই তথ্য জানান। খবর আইএসএনএ এর।
তিনি বলেন, ইরানে ৫ লাখ ৫৮ হাজারেরও অধিক বিদেশি শিশু স¤পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করছে। এসব শিশুর ৪ লাখ ৭৪ হাজার জনই আফগান নাগরিক।
কারিমি বলেন, দেশে বর্তমানে কাগজপত্রহীন ১ লাখ ৩৭ হাজার আফগান শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিশুর বাবা-মায়ের বসবাসের জন্য বৈধ কাগজপত্র নেই। তবে আমরা তাদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিচ্ছি। ইরানি এই কর্মকর্তা আরও জানান, অসংখ্য আঞ্চলিক সংকট ও গৃহযুদ্ধের কারণে বিগত চার দশকে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ইরানে বিপুল সংখ্যক বিদেশি নাগরিক আশ্রয় নেয়।
উল্লেখ্য, ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনেয়ী ২০১৫ সালের মে মাসে এক আদেশ জারি করেন, যেখানে ইরানে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের স্কুলে যোগদানের অনুমতি দান করেন তিনি। এমনকি যেসব শিক্ষার্থীর কোনো পরিচয় নেই এবং যারা দেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদেরকেও লেখাপড়া করার অনুমতি দেওয়া হয়।

২২ গত বছরে ইরানে ১ লাখ ৫ হাজার বই প্রকাশ
গত ফারসি বছর ১৩৯৮ সালে (২০ মার্চ ২০১৯ থেকে ২০২০) ইরানে ১ লাখ ৫ হাজারের অধিক শিরোনামে বই প্রকাশিত হয়েছে। এসব বইয়ের দাম ১৩৯৭ সালের তুলনায় দ্বিগুন ছিল। ইরানের বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা ‘বুক হাউজ’ এই তথ্য প্রকাশ করে।
গত ২১ এপ্রিল ২০২০ এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর প্রকাশিত সব বইয়ের মধ্যে ইরানি লেখকরা রচনা করেছেন ৭৫ হাজার ৬৪৪টি। আর বাকি ২৯ হাজার ৯৪১টি হচ্ছে অনূদিত বই।
গত ফারসি বছর ১৯৮ সালে সর্বমোট ১৪ কোটি ৮৯ লাখ ৮১ হাজার ১২৬ কপি বই বিক্রি হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। গত বছর শিশুদের বই প্রকাশিত হয়েছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ১০ হাজার ২৪৭টি। যা আগের বছরগুলো থেকে সংখ্যায় সর্বোচ্চ। ১৩৯৮ সালে বইয়ের গড় মূল্য ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার রিয়াল (৮ ডলার)। যেখানে ১৩৯৭ সালে এই মূল্য ছিল ১লাখ ৮০ হাজার রিয়াল (৪ ডলার)।

২৩ ইরানের বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশের সংখ্যা বেড়েছে ৬০ গুণ
বিগত ২০ বছরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে ইরানের বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশের সংখ্যা বেড়েছে ৬০ গুণ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। ইসলামিক ওয়ার্ল্ড সায়েন্স সাইটেশন সেন্টারের (আইএসসি) প্রধান মোহাম্মাদ জাভাদ দেহগানি বলেন, ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন তথ্যসূত্র ডাটাবেজে ইরানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রায় এক হাজার বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ নিবন্ধিত হয়। গত বছর এই সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে।
বর্তমানে ইরানে ৭৫ হাজার অনুষদ এবং প্রায় চল্লিশ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে উল্লেখ করে আইএসসি প্রধান বলেন, ওয়েব অব সায়েন্সে ৪ লাখ ৬০ হাজার নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ নিবন্ধ তৈরি হয়েছে গত ছয় বছরে। যা ৬৫ শতাংশের সমান।

২৪ ইরানি নারী বিজ্ঞানি মির্জাখনিকে সম্মাননা জানালো জাতিসংঘ
বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখায় ইরানি নারী গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখনিসহ এবছর বিশ্বের সাতজন নারী বিজ্ঞানীকে সম্মাননা জানিয়েছে জাতিসংঘের মহিলা দপ্তর ইউএন ওম্যান। বিশ্ব পরিবর্তনকারী উদ্ভাবন ও পেশাগত নতুনত্বে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ মির্জাখনি এই সম্মাননা লাভ করেন।
১১ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক নারী ও বালিকা দিবস উপলক্ষে ইউএন ওম্যানের ওয়েবসাইটে সম্মাননা জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে লেখা হয়, এসব নারী বিজ্ঞানী জীবন রক্ষাকারী প্রতিকার, বিশ্ব-পরিবর্তনকারী উদ্ভাবন এবং সুদূরপ্রসারী গবেষণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তবুও অনেক ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত অগ্রসরতাকে ছোট করে দেখা হয়েছে অথবা অবহেলা করা হয়েছে।
গণিতে বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ইরানি বংশোদদ্ভূত প্রয়াত নারী গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখনি স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে তেহরানের শরিফ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে গণিতে বিএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি হারভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি স¤পন্ন করেন।
ইতিহাসের প্রথম নারী হিসেবে ২০১৪ সালে গণিতের নোবেল পুরস্কার ফিল্ডস পদক পাওয়া ইরানি গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

২৫ ইউরেশিয়ায় ইরানের রপ্তানি বেড়েছে ১০৫ শতাংশ
চলতি ইরানি বছরের প্রথম ১১ মাসে (২১ মার্চ ২০১৯ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০) ইউরেশিয়ার পাঁচ দেশে ইরানের রপ্তানি বেড়েছে ১০৫ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন (ইইইউ) সদস্য দেশগুলোতে দেশটির এই রপ্তানি বেড়েছে। গত ১০ মার্চ ২০২০ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শুল্ক প্রশাসন আইআরসিএ এর মুখপাত্র সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ লাতিফি এই তথ্য জানিয়েছেন।
পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্তানের সমন্বয়ে গঠিত ইইইউ। এসব দেশে উল্লিখিত সময়ে ইরান মোট ১ দশমিক ২৪৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করেছে।
তিনি বলেন, ওই সময়ে ইইউইউ এর সাথে ইরানের বাণিজ্য হয়েছে ২ দশমিক ৪৪৮ বিলিয়ন ডলারের। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৮৩৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বেশি হয়েছে। অর্থাৎ বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ।
লাতিফি বলেন, উল্লিখিত সময়ে ইরানি পণ্য সামগ্রীর বড় ক্রেতা রাষ্ট্র ছিল রাশিয়া, আর্মেনিয়া ও কাজাখস্তান। ইরান ১১ মাসে ইইউইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে ১ দশমিক ২০৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্যসামগ্রী আমদানি করে বলে জানান তিনি।

২৬ জৈব ওষুধ উৎপাদনে বছরে বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় ইরানের
ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্সির জৈবপ্রযুক্তি উন্নয়ন সদরদপ্তরের সেক্রেটারি মোস্তাফা ঘানেই জানিয়েছেন, ইরান ২২ ধরনের জৈবওষুধ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এতে দেশটির বছরে সাশ্রয় হয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত ১ মার্চ ২০২০ তিনি জানান, দেশে উৎপাদিত জৈব ওষুধের সংখ্যা ২২টি। এই অঞ্চলে এ ধরনের ওষুধ এককভাবে কেবল ইরানের রয়েছে। ঘানেই জানান, জৈব ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া,
ভারত ও চীনসহ এশীয় দেশগুলো। তিনি আরও জানান, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভোক্তা বাজারে ২৮টি নতুন জৈবওষুধ পাওয়া যাবে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানএশিয়ায় প্রথম অথবা দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসবে। যা দেশের মেডিকেল সোসাইটির জন্য সম্মান ও গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
ঘানেই জানান, বিশ্বে ১৪০ ধরনের জৈবওষুধ আছে। এর মধ্যে ৫০টি ওষুধ অনেক বেশি সেবন করা হয় এবং এগুলো কিছু দেশে অনেক দামি।

২৭ ইরানের গ্যাস রপ্তানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ
গত ইরানি বছরে ইরানের গ্যাস রপ্তানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গেল ইরানি বছরে (২১ মার্চ ২০২৯ থেকে ২০ মার্চ ২০২০) ইরান থেকে ১৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস রপ্তানি হয়েছে।
তথ্যমতে, গত বছরে দেশটিতে ক্রমসঞ্চিত মিষ্টি গ্যাস উৎপাদন হয় ২৬৭ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। এই গ্যাসের মধ্যে ১১২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক খাতে খরচ হয়েছে। অন্যদিকে দেশের বড় বড় শিল্প কারখানাগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪২ দশমিক ৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার।
গত বছর ইরানে উৎপাদিত মোট গ্যাসের মধ্যে ৬০ দশমিক ৬ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস উৎপাদন করে দেশীয় পাওয়ার প্লান্টগুলো। বর্তমানে দেশটিতে ৮০টি পাওয়ার প্লান্ট জাতীয় গ্যাস নেটওয়ার্কে যুক্ত রয়েছে।

২৮ ইরানের হ্যান্ডিক্রাফ্্ট রপ্তানিতে আয় ৪২৭ মিলিয়ন ডলার
গত ফারসি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (২১ মার্চ ২০১৯ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০) ইরানের হ্যান্ডিক্রাফ্্ট রপ্তানি থেকে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হ্যান্ডির্ক্যাফট ও পর্যটন উপমন্ত্রী পুয়া মাহমুদিয়ান এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে হ্যান্ডিক্রাফ্্ট রপ্তানি থেকে তাঁর দেশের আয় হয়েছে ২৩৭ মিলিয়ন ডলার। আর বাকি ১৯০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে স্যুটকেস বাণিজ্যের (খুচরা বিক্রি) মাধ্যমে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মূল্যের দিক দিয়ে পণ্যটির রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর পরিমাণের দিক দিয়ে বেড়েছে ৮ শতাংশ।
মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছর ইরানের ৪৪০ মিলিয়ন ডলারের হ্যান্ডিক্রাফ্্ট রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ১১ মাসের রপ্তানি চিত্র থেকে দেশটি ৯৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

২৯ ইরানের ই¯পাত উৎপাদনে ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
গত ইরানি বছরের প্রথম ১১ মাসে (২১ মার্চ ২০১৯ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০) ইরানের অপরিশোধিত ই¯পাত উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ১৬ লাখ ৭৯ হাজার টন। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। উল্লিখিত সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অ্যালুমিনিয়াম বারের উৎপাদন কমেছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে দেশটিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ওই সময়ে সিমেন্ট উৎপাদন বেড়েছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইরানে বছরের প্রথম ১১ মাসে ই¯পাতপণ্য উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৬৪ হাজার টন। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেশি। দেশটিতে উল্লিখিত ১১ মাসে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার টন সিমেন্ট উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ।

৩০ ইরানের ¯পঞ্জ লোহা রপ্তানি বেড়েছে ৭৭ শতাংশ
গত ফারসি বছর (২১ মার্চ ২০১৯ থেকে ২০ মার্চ ২০২০) ইরান ৯ লাখ ৪২ হাজার টন ডিরেক্ট রিডাকশন আয়রন (ডিআরআই) তথা ¯পঞ্জ লোহা রপ্তানি করেছে। আগের বছরের তুলনায় যা ৭৭ শতাংশ বেশি।
ইরানের ই¯পাত উৎপাদক সমিতির (আইএসপিএ) পরিসংখ্যান মতে, আগের বছর (২১ মার্চ ২০১৮ থেকে ২০ মার্চ ২০১৯) দেশটি থেকে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন ডিআরআই রপ্তানি হয়েছে।
আইএসপিএ জানায়, গত বছর ইরানে ২ কোটি ৭৯ লাখ ৭ হাজার টন ডিআরআই উৎপাদন হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ছয় শতাংশ। আগের বছর (২১ মার্চ ২০১৮ থেকে ২০ মার্চ ২০১৯) দেশটিতে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৫৯ হাজার টন ¯পঞ্জ লোহা উৎপাদন হয়েছিল।
ভারতের পর ইরানকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ¯পঞ্জ লোহা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে জানায় আইএসপিএ।

৩১ দেশীয় শিল্পের বিকাশে ইরানের ৭ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়
দেশীয় শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বিগত ৫ বছরে সাত বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে ইরানের। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে খাতাম-আল আম্বিয়া কনস্ট্রাকশন সদরদপ্তরের হাত ধরে। তেল ও গ্যাস সহ বেশ কিছু শিল্পে দেশীয়ভাবে সরঞ্জাম উৎপাদনের মধ্য দিয়ে ওই সাত বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে।
গত ১৪ মার্চ ২০২০ ইরানের প্রযুক্তিগত এবং প্রকৌশল ক্ষমতার প্রদর্শনী আয়োজন উপলক্ষে খাতাম-আল আম্বিয়া কনস্ট্রাকশন সদরদপ্তরের কমান্ডার সাইয়িদ মোহাম্মাদ এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ সত্বেও সক্ষম দেশীয় কো¤পানিগুলো বিশেষত তেল ও গ্যাস খাতে বিদেশি কো¤পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে সক্ষম হয়েছে।
তেল ও গ্যাসে খাতে খাতাম-আল আম্বিয়া কনস্ট্রাকশন সদরদপ্তরের কার্যক্রম স¤পর্কে তিনি বলেন, অবরোধকালীন বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় সদরদপ্তর ই¯পাত ও কপার সহ বড় বড় শিল্পের ৭০ শতাংশের অধিক সরঞ্জাম দেশীয়ভাবে তৈরি করতে সফল হয়েছে।
প্রদর্শনীর ফাঁকে খাতাম-আল আম্বিয়া কনস্ট্রাকশন সদরদপ্তর ও ইসফাহান স্টিল কো¤পানির (ইএসসি) মধ্যে জাতীয় রেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

৩২ উত্তরপূর্ব ইরানের ১২৪টি ঐতিহাসিক নিদর্শন পুনরুদ্ধার
গত ফারসি বছর ১৩৯৮ সালে (২১ মার্চ ২০১৯ থেকে ২০ মার্চ ২০২০) উত্তরপূর্ব ইরানের খোরাসান রাজাভি প্রদেশে ১২৪টির মতো ঐতিহাসিক ভবন ও কাঠামো পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
পুনরূদ্ধার করা এসব ঐতিহাসিক নির্দশনের মধ্যে রয়েছে ফেরদৌসী মাজার, টাস টাওয়ার, অ্যানসেইন্ট উইন্ডমিলস অব নাশতিফান, ঘিয়াসিহ স্কুল এবং রিবাত-ই শরাফ। সোমবার প্রাদেশিক পর্যটন প্রধান আবোলফাজি মোকাররামিফার এই তথ্য জানান। খবর ইরানি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ এর।
তিনি আরও জানান, এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে কিছু নিদর্শনের জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিদর্শনগুলো বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এগুলোর সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও শক্তিশালী করার জন্য এসব পুনরুদ্ধার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।

৩৩ ইরানে বিশ্বখ্যাত কবি শেখ সাদী দিবস উদ্যাপন
বিশ্বখ্যাত ইরানি কবি শেখ সাদীর স্মরণে বরাবরের মতো এবারও জাতীয় স্মৃতি দিবস উদযাপন করলো ইরান। ফারসি সাহিত্যে নীতিশাস্ত্র বা নীতিসাহিত্য রচনার এই উজ্জ্বল নক্ষত্র ১২০০ সালের দিকে শিরাজে জন্ম গ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন ১২৯২ সালে।
শেখ সাদী ছিলেন একজন সু¯পষ্টভাষী যার পুরো নাম আবু-মুহাম্মাদ মুছলেহ উদ্দিন আব্দুল্লাহ সাদী শিরাজি। তিনি ছিলেন মধ্যযুগে ইরানের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের অন্যতম, যিনি ফেরদৌসির পর ফারসি সাহিত্যের সুন্দর আকাশকে নিজ আলো দ্বারা উজ্জ্বলতর করেছেন এবং যিনি শুধু ইরানেরই নন; বরং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখকদের অন্যতম।
শেখ সাদী ফারসি সাহিত্যের ইতিহাসে একজন মরমী এবং রূপকবিজ্ঞানী হিসেবে সমাদৃত। অসাধারণ মানসম্মত লেখনীর জন্য বিশ্বব্যাপী পেয়েছেন অসংখ্য স্বীকৃতি। মানবতার কবি শেখ সাদীর সামাজিক ও নৈতিক চিন্তার গভীরতা বিস্মিত করেছে সবাইকে।
প্রাচীন এই প-িত ফারসি ভাষাভাষী দেশগুলোর গ-ি পেরিয়ে পশ্চিমা সমাজসহ বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বব্যাপী বহু লেখনীতে উদ্ধৃত করা হয় তাঁর পঙ্্ক্তিকে।

৩৪ দার্শনিক নাসির আদ-দিন তুসিকে নিয়ে আইআরআইবির ধারাবাহিক
পারস্য দার্শনিক, চিকিৎসক ও জ্যোতির্বিদ আবু জাফর মোহাম্মাদ তুসিকে (যিনি নাসির আদ-দিন তুসি নামে সর্বাধিক পরিচিত) নিয়ে একটি টিভি ধারাবাহিক বানানোর পরিকল্পনা করছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআইবি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ আইআরআইবির জনসংযোগ দপ্তর এই ঘোষণা দিয়েছে।
নাসির আদ-দিন তুসির (১২০১ থেকে ১২৭৪) বহু বিষয়ে দখল ছিল। তিনি বিজ্ঞান ও দর্শনে উৎসাহিত হন। তুসি গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, মুসলিম দার্শনিক ইবনে সিনার দর্শন এবং ওষুধ বিষয়ে লেখাপড়া করেন। তিনি ১২৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জ্যোতির্বিদ্যাগত অবজারভেটরি ‘মারাগেহ’ এর প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়া তিনি একটি লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা যেখানে জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষ সংশ্লিষ্ট সাহিত্যের ৪ লক্ষাধিক খ- একসাথে রয়েছে। তাঁর জন্মদিবস ইরানে প্রতি বছর প্রকৌশলী দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। এবছর তাঁর জন্ম তারিখ পড়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি।

৩৫ ইরানে আন্তর্জাতিক করোনাভাইরাস কার্টুন প্রতিযোগিতায় ৪শ শিল্পকর্ম জমা
ইরানের ‘উই ডিফিট করোনাভাইরাস’ আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রতিযোগিতায় জমা পড়েছে ৪ হাজার ২শটি ব্যাঙ্গচিত্র। এসব শিল্পকর্ম দাখিল করেছেন বিশ্বের ৮৮টি দেশের কার্টুনিস্টরা।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য পাঠানো শিল্পকর্মগুলো থেকে প্রায় ২ হাজার কার্টুন ইরানকার্টুন ডটআইআর এ ২৮ দিন যাবত দেখানো হয়। আন্তর্জাতিক কার্টুনিস্টদের পাঠানো এসব শিল্পকর্ম দেখেছেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ইরান আর্টস ব্যুরোর ভিজুয়াল আর্টস অফিসের পরিচালক মাসুদ শোজায়েই-তাবাতাবাই গত ১৪ এপ্রিল ২০২০ এই তথ্য জানান।
এছাড়া কার্টুনগুলো ইন্সটিটিউট অব কন্টেমপোরারি ভিজুয়াল আর্টস এর ওয়েবসাইটে দেখানো হয়।
আন্তর্জাতিক এই কার্টুন প্রতিযোগিতায় ইরান থেকে সর্বোচ্চ ৪৩৬ জন কার্টুনিস্ট অংশ নেন। এরপরে তুরস্ক থেকে ৮২ জন, ভারত থেকে ৭৫ জন, ইন্দোনেশিয়া থেকে ৭০ জন, ব্রাজিল থেকে ৪৮ জন ও রাশিয়া থেকে ৩০ জন কার্টুনিস্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
ইরান আর্টস ব্যুরেরা আয়োজনে অনুষ্ঠিত কার্টুন প্রতিযোগিতায় সহযোগিতায় ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

৩৬ করোনাভাইরাসের ওপর চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করবে ইরান
করোনা ভাইরাস মহামারির ওপর আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে তেহরানে। ইভেন্টটির একজন আয়োজক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ওয়ান মিনিট কোয়ারিন্টাইন’ ¯ে¬াগানে আন্তর্জাতিক উৎসবটি আয়োজন করা হবে।
চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্দেশ্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোয়ারেন্টাইন থাকা অবস্থায় বিশ্বের মানুষ যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তা ভাগাভাগি করা।
গত ১২ মে ২০২০ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ২ লাখ ৮০ হাজারের অধিক মানুষ মারা গেছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৪০ লক্ষাধিক এবং সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ মানুষ।

৩৭ ফরাসি চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবি ‘এক্সাম’
ফ্রান্সের ক্রেটেইল ইন্টারন্যাশনাল নারী চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির খেতাব কুড়িয়েছে চলচ্চিত্রকার সোনিয়া হাদ্দাদ পরিচালিত ইরানি স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘এক্সাম’। ছবিটি চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের ৪২তম আসরের আন্তর্জাতিক বিভাগ থেকে সেরা ছবির অ্যাওয়ার্ড জিতেছে।
‘এক্সাম’ ছবিটিতে এক কিশোরীর গল্প তুলে ধরা হয়েছে। সে একজন বায়ারের কাছে অবৈধ মাদকদ্রব্যের একটি প্যাকেট সরবরাহ করার প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এতে সে এক অদ্ভুত ঘটনাচক্রে আটকে যায়।
স্বল্পদৈর্ঘ্যটি ৪২তম ক্রেটেইল ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অংশ গ্রহণের জন্য মনোনীত হয়। প্রতি বছর ফ্রান্সের প্যারিসে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। মেধাবী নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ছবি প্রদর্শনের জন্য জ্যাকি বুয়েট ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্র উৎসবটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ক্রেটেইল ইন্টারন্যাশনাল নারী চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের ৪২তম আসর ১৩ থেকে ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়।

৩৮ অস্কারে লড়ার যোগ্যতা অর্জন করলো ইরানের ‘সং ¯প্যারো’
অস্কার ২০২১ এ লড়ার যোগ্যতা অর্জন করলো ইরান ও ডেনমার্কের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘সং ¯প্যারো’। চলচ্চিত্রকার ফারজানেহ অমিদভারনিয়া পরিচালিত চলচ্চিত্রটি চিলির ২০তম লেবু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন ছবির পুরস্কার লাভ করে। উৎসবটির সেরা ছবির খেতাব কুড়িয়ে অস্কারে অংশ নেওয়ার এই যোগ্যতা অর্জন করে চলচ্চিত্রটি।
অ্যানিমেশনটিতে একদল শরণার্থীর কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। যারা ভালো জীবন যাপনের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার জন্য তারা একজন চোরাচালানীকে অর্থ পরিশোধ করেন। হিমায়িত একটি গোস্তের ট্রাকের পেছনে করে তাঁরা নিরাপদ একটি দেশে পাড়ি দেন। ‘সং স্প্যারো’-তে পতুল অ্যানিমেশন ব্যবহার করে পুরো গল্প তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৫ সালের অস্ট্রিয়ায় সংঘটিত একটি বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছবিটি নির্মিত হয়েছে।

৩৯ সিল্ক রোড চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মালাকুত’-র অ্যাওয়ার্ড জয়
গত ৪ ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অনুষ্ঠিত সিল্ক রোড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে (এসআরআইএফএফ) সম্মানজনক ডিপ্লোমা লাভ করেছে ইরানি চলচ্চিত্র ‘মালাকুত’। স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশনটি পরিচালনা করেছেন চলচ্চিত্রকার ফারনুশ আবেদি।
অ্যানিমেশনটি তৈরি করা হয়েছে এক পিয়ানো বাদকের গল্প নিয়ে। সে তার স্ত্রীর জীবন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে সে তার ভেতরের শয়তানকে জাগিয়ে তোলে।
উৎসবের আয়োজকরা জানান, ২০১২ সালে সিল্ক রোড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের (এসআরআইএফএফ) যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি আন্তর্জাতিক প্রশংসিত চলচ্চিত্র উৎসবে পরিণত হয়। প্রতি বছর আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে আন্তর্জাতিক এই চলচ্চিত্র উৎসবের আসর বসে। উৎসবে সিল্ক রোডের বাণিজ্যিক রুটের আওতাভুক্ত দেশগুলোর চলচ্চিত্রের জন্য বিশেষ বিভাগ রয়েছে।

৪০ মার্কিন উৎসবে সেরা ফিচার ছবির অ্যাওয়ার্ড জিতলো ‘আনটাইমলি’
সম্প্রতি আমেরিকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ডালাস ভিয়োফেস্ট অলটারনেটিভ ফিকশনে সেরা ফিচার ছবির অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ইরানি ফিচার ‘আনটাইমলি’। চলচ্চিত্রকার পুয়া ইশতেহারদি পরিচালিত ছবিটি উৎসবের এবারের আসরে ‘বেস্ট ফার্স্ট ফিচার’ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে।
‘আনটাইমলি’ চলচ্চিত্রটিতে হামিন নামে ইরানি এক তরুণ সেনা সদস্যের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। যিনি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তরেখায় একটি ওয়াচটাওয়ারে সামরিক দায়িত্ব পালন করেন।
ওয়াচটাওয়ারের ওপর থেকে হামিন বিগত বছরগুলো পর্যালোচনা করে দেখেন। শৈশবকালে তাঁর ও তাঁর বোনের সাথে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে কল্পনা করেন।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ইমান আফশার, শায়ান আফশার, আইয়ুব আফশার, মাহসা নরুয়ি, আভা আজারপিরা ও মোল্লাবাখশ রায়েসি প্রমুখ অভিনেতা।
এর আগে ইরানি ফিচারটি আমেরিকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কানসাস সিটি ফাইল চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ওয়ার্ল্ড সিনেমা ফিচার’ অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
এছাড়াও ইরানি ফিচারটি আমেরিকায় অনুষ্ঠিতব্য ৬৮তম কলাম্বাস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম অ্যান্ড অ্যানিমেশন ফেস্টিভালে দেখানো হবে। চলচ্চিত্রটি এরআগে পঞ্চম টোকিও স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক ও সেরা সিনেমাটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।

৪১ মার্কিন উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র ইরানি ছবি ‘লিমিট’
আমেরিকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে সেরা চলচ্চিত্রের খেতাব কুড়ালো ইরানি শর্ট ফিল্ম ‘লিমিট’। উডবুরি চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের দ্বিতীয় আসরে ছবিটি সেরা ছবির অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ইরানি নির্মাতা জাভাদ দারায়ি।
৮ মিনিটের ছবি ‘লিমিট’ স্থানীয় এক ব্যক্তির জীবন নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। লোকটি একটি শান্ত গ্রামে বসবাস করতো। একদিন কোনো এক প্রয়োজনে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তিনি সাহায্য চান। এসময় হঠাৎ করে কেউ একজন তার কক্ষে প্রবেশ করেন।
আমেরিকার উটাহ অঙ্গরাজ্যের সল্ট লেক সিটিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় উডবুরি ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘লিমিট’ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় ৬ থেকে ৮ মার্চ।
জাভাদ দারায়ির ছবিটি এর আগে কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে। ছবিটি ফ্রান্সের দশম ইন্টার-২ মারচেস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে জুরি র্গ্যান্ড প্রিক্স অ্যাওয়ার্ড ও আমেরিকার নিউ ইয়র্কে ২০১৯ গ্লোবাল শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা পরিচালকের পুরস্কার লাভ করে।

৪২ চেন্নাই উৎসবে সেরা শর্ট ফিল্ম ইরানের ‘দ্যা পাস্ট কন্টিনিয়াস’
গত এপ্রিলে ভারতের চেন্নাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (সিআইএফএফ) সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ইরানি ছবি ‘দ্যা পাস্ট কন্টিনিয়াস’। চলচ্চিত্রকার শিভা তাহেরির স্বল্পদৈর্ঘ্যটি উৎসবের এবারের ১৭তম আসর থেকে সেরা ছবির খেতাব কুড়ালো।
সেরা শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ‘দ্যা পাস্ট কন্টিনিয়াস’ এর স্ক্রিপ্ট লিখেছেন কারিম আমিনি, আমিন তাহমাসেবি ও আলি বাতেনি। ভারতের চেন্নাই শহরে চলচ্চিত্র সমিতি ইন্দো সিনে-অ্যাপ্রিসিয়েশন ফাউন্ডেশন (আইসিএএফ) এর উদ্যোগে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ‘দ্যা পাস্ট কন্টিনিয়াস’ আমেরিকার ১৩তম টাওস শর্টজ ফিল্ম ফেস্টিভাল, ইতালির ভ্যারিস ফিল্ম ফেস্টিভাল ও ইন্দোনেশিয়ার ১৬তম মিনিকিনো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নেয়।

৪৩ দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার ইরানি তরুণ দাবাড়– গোলামি
২০২০ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত দাবার সর্বোচ্চ বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল চেস ফেডারেশনের (এফআইডিই) শিরোপা জিতে ইরানের তরুণ দাবাড়– আরিয়ান গোলামি। এফআইডিই এর অনূর্ধ্ব ১৮ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ পদক গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সে।
এর আগে গোলামি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ২০১৯ শাঙহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশন চেজ ইন্টারন্যাশনালের রাউন্ড-৯ এর শিরোপা লাভ করে।
১৮ বছর বয়সী এই তরুণ দাবাড়– ঘায়েমশাহরে জন্মগ্রহণ করে। মাত্র আট বছর বয়সে সে ইরানের সবচেয়ে তরুণ এফআইডিই-র‌্যাঙ্কিং দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

৪৪ অলি¤িপকে টিকিট নিশ্চিত করলো ইরানি মুষ্টিযোদ্ধা শাহবাখশ
টোকিও অলি¤িপকস ২০২০ এ টিকিট নিশ্চিত করলেন অত্যন্ত হালকা ওজনের ইরানি মুষ্টিযোদ্ধা দানিয়াল শাহবাখশ। গত ১২ মার্চ ২০২০ হংকংয়ের প্রতিপক্ষ ইয়ু সিং তিসোকে পরাজিত করে অলি¤িপকে নিজের অবস্থান নিরাপদ করেন তিনি।
অলি¤িপক বক্সিং কোয়ালিফিকেশন ইভেন্টটি জর্দানের আম্মানে অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য ৮ জন মুষ্টিযোদ্ধাকে পাঠিয়েছে ইরান।
প্রতিযোগিতার ২২ পেইড ফাইটে অপরাজিত থাকা তিসোকে মুষ্টির আঘাতে জর্জরিত করেন ১৯ বছর বয়সী শাহবাখশ। দারুণ পারফরমেন্স করে টানা তিন রাউন্ডের সবগুলোতে জয় লাভ করেন তিনি।
আলিরেজা ইস্তাকির নেতৃত্বাধীন ইরানি বক্সিং দলের অন্য সদস্যরা হলেন- আশকান রেজায়ি (৬৩ কেজি), শাহিন মুসাভি (৭৫ কেজি), অমিদ আহমাদি সাফা (৫২ কেজি), সাজাদ কাজেমজাদেহ (৬৯ কেজি), ইহসান রুজবাহানি (৮১ কেজি), তুফান শারিফি (৯১ কেজি) ও ইমান রামেজানপুর (+৯১কেজি)।
অলি¤িপক বক্সিং কোয়ালিফিকেশন টুর্নামেন্টে ৩৫টি দেশের ১৫১ জন মুষ্টিযোদ্ধা অংশ নেন। ইভেন্ট শেষ হয় ১১ মার্চ।

৪৫ এশিয়া ওয়ার্ল্ড কাপ হিরো ইরানের বেইরাভান্দ
এ বছর এএফসির এশিয়ান ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ হিরো নির্বাচিত হয়েছেন ইরানের আন্তর্জাতিক গোলরক্ষক আলিরেজা বেইরভান্দ। এএফসি মনোনীত পাঁচজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে তিনি এশিয়ান হিরো নির্বাচিত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন।
দ্যা-এএফসি ডটকম ওয়েবসাইটে পরিচালিত জরিপে সর্বোচ্চ ৬৮ শতাংশ ভোট পান ইরানি এই গোলরক্ষক। বেইরাভান্দ জাপানি কিংবদন্তি মিডফিল্ডার কেইসুকে হোন্দাকে পরাজিত করে সেরা নির্বাচিত হন। জরিপে হোন্দা পেয়েছেন মাত্র ২৪ শতাংশ ভোট।
এশিয়া হিরোর সংক্ষিপ্ত মনোনয়ন তালিকায় বেইরাভান্দের সাথে আরও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার টিম কাহিলি, সৌদি আরবের সামি আল জাবের ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের পার্ক জি-সাং।
গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল।

৪৬ ইরানি বিস্ময় শিশু আরাতের প্রশংসায় মেসি
ফুটবলের বিস্ময় শিশু আরাত হোসেইনি। মাত্র ছয় বছর বয়সে যেন ফুটবলের জাদুকর বনে গেছে সে। সম্প্রতি বারসেলনার টি-শার্ট পরে ফুটবল পায়ে দারুণ নৈপুণ্যতা দেখায় ইরানি এই শিশু। যা দেখে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পারলেন না ফুটবলের জাদুকর লিওনেল মেসি। তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে আর্জেন্টিনা তারকা আরাতের প্রশংসা করেছেন। সে যে অসাধারণ নৈপুণ্যতা দেখিয়েছে তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
মেসি লিখেছেন, ‘থ্যাংকস আরাত!! আই সি এ লট অব ক্লাস দেয়ার, ইমপ্রেসিভ! হাগ!!’
ছয় বছর বয়সী আরাত ইরানের উত্তরাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করে। তবে এখন সে লিভারপুলে বসবাস করে। ধারাবাহিক কিছু ভিডিওতে অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যতা দেখিয়ে ইন্টারনেটে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় সে।
ইনস্টাগ্রামে আরাতের ফলোয়ার সংখ্যা ২৭ লাখ। বিশ্বের নামিদামি ক্রীড়া তারকারাও তার ফলোয়ারের তালিকায় রয়েছে। এদের মধ্যে বক্সার অ্যান্থনি জশুয়া, সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার রিও ফারদিনান্দ ও লিভারপুল চ্যা¤িপয়ন লিগ বিজয়ী লুইস গারসিয়ারাও রয়েছেন।
বিস্ময় শিশু আরাতের প্রিয় খেলা ফুটবল। তবে জিমনেস্টিক, বাস্কেটবল ও তাইকোয়ান্দোর মতো খেলাগুলোতেও বেশ ভালো সে।

বাংলা রূপ ফারসি রূপ আধুনিক ফারসি উচ্চারণ

কাফী کافی ক-ফী
কামিয়াব کامیاب কমইয়ব
কাহিল کاهل ক-হেল
কায়েনাত کائنت কয়েনত্্
কাবাব کباب কা-বব
কবুতর کبوتر কাবূতার
গোনাহ گناه গো-নহ্্
গোনাহগার گناه کار গো-নহ্্গার
গম্বুজ گنبد গোম্বাদ
গন্ধ گنده গানদে
গোশ্ত گوشت গূশ্ত
গুল گول গূল
গোলা گوله গূলে
মুরীদ مرید মোরীদ
মেজাজ مزاج মে-যজ
মাযার مزار মা-যর
মজদুর مزدور মাযদূর
মজদুরী مزدوری মাযদূরী
মজা مزه মাজ্জে
মোসাফির مسافر মো-সফের
মোসাফিরাত مسافرت মো-সফেরাত
মোসাফিরখানা مسافرخانه মো-সফের খনে
না-ইনসাফ نا انصاف ন-এনসফ
নাবালেগ نا بالغ ন-বলেগ
নাপাক ناپاک ন-পক
না-পছন্দ ناپسند ন-পাছান্দ
না-জায়েয ناجائز ন-জয়েয
নাচার ناچار ন-চর
নাচীয ناچیز ন-চীজ
না-হক ناحق ন-হাক্ব
নাখোশ ناخوش ন-খোশ
নাদান نادان ন-দন
নারায ناراض ন-রয
নারাজী ناراضی ন-রযী
নারকেল نارگیل নরগীল
নাযুক نازک নযোক
নাযনীন نازنین নযেনীন

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদ

 

ড. সাইয়্যেদ মাহদী হোসেইনী ফায়েক –

খ্রিস্টপূর্ব ৭০ সালে উরশেলিম (জেরুসালেম)-এর উপসানালয় ধ্বংস হওয়ার পর খাখামীয় ইহুদিবাদ শান্তির নীতি অবস্থান গ্রহণ করে। এই নীতির মূল লক্ষ্য ছিল ইহুদি সম্প্রদায়ের মুক্তির ব্যবস্থা করা। তারা বিশ^াস করত যে, ইহুদিদের নির্বাসিত জীবন ঈশ^রের ইচ্ছারই প্রতিফলন এবং বনি ইসরাইলের পাপের প্রায়শ্চিত্যস্বরূপ এটি তাদের উপর আরোপিত হয়েছে। এই নীতিভঙ্গি এবং ইহুদি জাতির নির্বাসিত ও ছন্নছাড়া জীবন ঐশ^রিক শাস্তি বলে মনে নেয়ার নীতিকে সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয় যে, ইহুদি জাতির মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে, একজন পরিত্রাতা ও মুক্তিদাতা ত্রাণকর্তার আবির্ভাব। তার মাধ্যমেই ঈশ^র ইহুদি জাতিকে তাদের প্রতিশ্রুত ভূখ-ে পুনর্বাসিত করবেন। আর পুরো ব্যাপারটি ঈশ^রের ইচ্ছাতেই সম্পন্ন হবে। ঈশ^রের নির্ধারিত এই নিয়তির উপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ এবং পরিত্রাতার আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা পাপ বলে গণ্য হবে। কাজেই ইহুদিদেরকে ধৈর্যের সাথে সেই দিনের আগমনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। যাতে ঈশ^র পরিত্রাতার মাধ্যমে তাদেরকে সে অবস্থা থেকে মুক্তি দান করেন, তাদের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটান এবং উপসানলায়টি পুনঃনির্মিত হয়।
এই সময়টিতেই ইহুদি জাতির কাছে বাদশাহী ফেরত দেয়া হবে। এবং তাদের জীবনের সাফল্য অর্জিত হবে। বস্তুত এই প্রক্রিয়ার উপর মানুষের কোনো হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচিত। এবং তাদের সকল জাতীয় ও রাজনৈতিক আশা-ভরসা পরিত্রাতার আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। নির্বাসিত জীবনে ইহুদিদের দায়িত্ব হচ্ছে রাজনীতি থেকে দূরে এবং আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে ব্যস্ত থাকা। নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ও সামরিক উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা ঈশ^রের ইচ্ছায় হস্তক্ষেপ বলে গণ্য হবে।
এমন পরিস্থিতিতে ঈশ^রের ইচ্ছা হল, ইহুদি জাতিকে অ-ইহুদিদের শাসনাধীন থাকতে হবে। তাদের প্রতি ঐশী আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদেরকে অ-ইহুদি আইন-কানুনের, এমনকি তা ইহুদি ধর্মীয় বিধানের পরিপন্থী হলেও তার আনুগত্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু তিনটি ব্যতিক্রম আছে। একটি হল ইশ^রকে অস্বীকার করা, মূর্তিপূজা ও যৌন অনাচার। (এগুলোতে অন্যদের আনুগত্য করা বৈধ নয়।)
উল্লিখিত পরিস্থিতিতে ইহুদিদেরকে তাওরাত পাঠ, তাওরাতের বিধান পরিপালন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। অ-ইহুদিদের থেকে বেঁচে থেকে, বিজাতীয় ও বিভ্রান্ত সংস্কৃতি বর্জন করে আপন কওমের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। খাখামীয় তাওরাতের ব্যাখ্যা সূত্রে ইহুদিদের জন্য উপরোক্ত বাধ্যবাধকতা ছাড়াও নির্বাসিত জীবনে আরো তিনটি মৌলিকনীতি মেনে চলতে হবে।
১. ইহুদিরা অ-ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারবে না।
২. ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের আগে পবিত্র ভূমিতে ইহুদিদের প্রত্যাবর্তন করা নিষেধ।
৩. ইহুদিরা নির্ধারিত সময়ের আগে ত্রাণকর্তার আবির্ভাব ত্বরান্বিত করার জন্য প্রার্থনায় বাড়াবাড়ি করতে পারবে না।
ইহুদি মৌলবাদীদের এই সম্প্রদায়টি এই প্রাচীন নীতিকে আধুনিক ইহুদি জীবনের বৈধতা নির্ণয়ের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। তারা এই মানদ- থেকে যে কোনো ধরনের বিচ্যুতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই যায়নবাদী মতবাদ এবং ইসরাঈল রাষ্ট্র তাদের কাছে বিভ্রান্তি হিসেবে বিবেচিত।
নির্বাসিত জীবনে প্রতিশ্রুত ভূখ- ও উপাসনালয় সম্পর্কিত অনেক বিধান কার্যকর করা সম্ভব নয়। ধর্মীয় পুরোধারা ভবিষ্যৎ বাদশাহি সংক্রান্ত থিওরি নির্ধারণ করতে পারবেন। কিন্তু এসব আইন-কানুন নির্বাসিত জীবন চলাকালীন সময়ে যখন ইহুদিরা সংখ্যালঘু হবে, তখন অবশ্য পালনীয় নয়। কাজেই ইহুদি রাজত্ব সম্পর্কিত যাবতীয় হালখায়ী (ইহুদি ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয়) আইন-কানুনের বাস্তবায়ন মসীহ এর আগমন না হওয়া পর্যন্ত জমিনের বুকে স্থগিত থাকবে। (সূত্র : তবুফধহ, ২০০৬: ২২৫-২২৮)
বস্তুত ইহুদি সূত্রসমূহ থেকে পাওয়া তথ্যগুলোতে দেখা যায় যে, ইহুদিরাও তাদের ধর্মীয় ও বিশ^াসগত শিক্ষার মূলনীতির ভিত্তিতে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে ভুল পদক্ষেপ ও অবৈধ বলে গণ্য করে। মোটকথা যায়নবাদী সরকার শুধু মুসলমানদের দৃষ্টিতে নয়, বরং ইহুদিদের দৃষ্টিতেও জবরদখলকারী ও অবৈধ সরকার।
লেখক : ডেপুটি কালচারাল কাউন্সেলর
ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা

‘জেনারেল কাসেম সোলায়মানি ছিলেন ইহুদি-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী অকুতোভয় সিপাহসালার’

কবি আবদুল হাই শিকদার

আমেরিকার কাপুরেুষোচিত হামলায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানির শাহাদাত এবং মুসলিম বিশে^ ইহুদি-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী প্রতিবাদী কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, জেনারেল কাসেম সোলায়মানি ছিলেন ইহুদি-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী অকুতোভয় সিপাহসালার।’
গত ১১ জানুয়ারি ২০২০ মিরপুর লালকুঠি দরবার শরীফ পাঠাগার মিলনায়তনে লালকুঠি সাহিত্য পরিষদ-এর উদ্যোগে পরিষদ সভাপতি, ঢাকা বিশ^াবিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও লালকুঠি দরবার শরীফের পীর আহসানুল হাদীর সভাপতিত্বে আমেরিকার কাপুরুষোচিত ড্রোন হামলায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আল-কুদস ব্রিগেড-এর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলায়মানির শাহাদাত এবং মুসলিম বিশে^ ইহুদি-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল গবেষক কবি আবদুল হাই শিকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. কাজেম কাহদূয়ী, আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল জনাব মোস্তফা তারেকুল হাসান, নজরুল-ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লেখক, গবেষক এমদাদুল হক চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন কবি ও আবৃত্তিশিল্পী আহমদ বাসির, ছড়াশিল্পী কবি আতিক হেলাল, কবি আমিন আল আসাদ, মাওলানা আসাদুজ্জামান, ক্বারী আলমগীর হোসেন মোল্লা।
ইহুদি-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী কবিতা পাঠ করেন যথাক্রমে কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি আতিক হেলাল, কবি আমিন আল আসাদ, কবি আহমদ বাসির, কবি রবিউল মাশরাফি, কবি ইবনে আবদুর রহমান, কবি জাকারিয়া খান সৌরভ, কবি শাহনওয়াজ তাবীব, কবি মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা কবি রফিক মিয়া, কবি মুহাম্মদ ইসমাইল, কবি নাসিমা আক্তার নিঝুম, কবি মৌ মাহমুদা, কবি আলমগীর হোসেন জোয়ার্দার, কবি জয়নাল আবেদিন, কবি হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
ক্বারী হাবিবুর রহমানের কণ্ঠে পবিত্র কালামের ‘আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয়েছে তাদের মৃত বলো না’ এই আয়াতাংশ সহ তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, শহীদ জেনারেল কাসেম সোলায়মানিকে নিয়ে আমরা গর্বিত। কারণ, তিনি মারা যাননি। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী অকুতোভয় সিপাহসালার হিসেবে অমরত্ব লাভ করেছেন। কাসেম সোলায়মানি এক ক্ষণজন্ম বুদ্ধিদীপ্ত সমরবিদ ছিলেন যিনি মধ্যপ্রাচ্যে সা¤্রাজ্যবাদের বিষ দাঁত সমূলে উপড়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে বিশে^র মানুষ এতদিন চে গুয়েভারার কথা শুনে এসেছে। নিঃসন্দেহে চে গুয়েভারা সংগ্রামী। কিন্ত কাসেম সোলায়মানি চে গুয়োভারার চেয়েও বড় বিপ্লবী এবং ইতিহাস সৃষ্টিকারী। একথা আমার নয়। স্বয়ং বাংলাদেশের সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ বদর উদ্দিন ওমর স্বীকার করেছেন।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, আদর্শের জন্য কীভাবে জীবন দিতে হয় তা জাতি হিসেবে ইসলামি ইরান আমাদেরকে অর্ধ শতাব্দী কাল জুড়ে দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। যে জাতি জীবন দিতে শেখে সে জাতির মৃত্যু বা ধ্বংস নাই। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বহু প্রাণ আর রক্ত দিয়ে তারা অজেয় হয়েছে। মার্কিন আধিপত্যবাদ আর আরবের ভোগবাদী রাজাবাদশাদের সীমাহীন ষড়যন্ত্র সহ দুনিয়ার তাবৎ অশুভ শক্তির সম্মিলিত আক্রমণ প্রতিরোধ করে ইরান এগিয়ে এসেছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ইতিহাস বিশ^বাসী জানে। ইরাকের সাদ্দামের মাধ্যমে আট বছরব্যাপী এক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়। ইরানের কেবিনেটে বোমা হামলা করে প্রেসিডেন্ট প্রধনমন্ত্রী সহ শতাধিক সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় বিপ্লবের বুদ্বিবৃত্তিক অগ্রনায়ক ইরানি বুদ্ধিজীবীদের। ড. আয়াতুল্লাহ বেহেশতী, শহীদ আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহহারী সহ অনেককে শহীদ করা হয়। বিগত কয়েক বছরে ইরানের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীকেও হত্যা করা হয়েছে।
ইরান কারবালার জাতি। তারা কারবালা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি একথা জানে না যে, তাদেরকে পরাস্ত করা যাবে না। কারণ, ইরান সঠিক পথে আছেÑ যে পথ আল্লাহর পথ।
তিনি বলেন, ইরানের সমৃদ্ধ সাহিত্য সম্পর্কে আমরা ওয়াকেফহাল। যে দেশে জন্ম নিয়েছিলেন ইমাম খোমেইনী (র)-এর মতো ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। জন্মেছিলেন আলী শরিয়তির মতো বিংশ শতকের শক্তিমান চিন্তাবিদ। ফেরদৌসী, শেখ সাদী, রুমী, হাফিজ, ওমর খৈয়াম, ফরিদুদ্দিন আত্তার, আল ফারাবী, আল কিন্দি, ইমাম গাজ্জালী প্রমুখ তো আছেনই।
তিনি বলেন, আমরা ইরানের সাথে আছি এবং থাকব। কারণ, আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে ইরানি ঐতিহ্য। আমরা ইসলাম পেয়েছি ইরানের ভেতর দিয়ে। এদেশে আগত সুফিদের থেকে। বাংলা ভাষায় সাত হাজার শব্দ আছে ফারসিÑ যা সরাসরি প্রবেশ করেছে।
ইরানে যেমন ইসলামের বৈপ্লবিক উত্থান ঘটেছে এবং বিশ^ব্যাপী এর আলো ছড়িয়েছে এর আগে ইরানের সভ্যতার আরো দার্শনিক বিপ্লব বিশ^কে প্রভাবিত করেছে। এই প্রভাবকে কখনো বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। ইরানের জনগণ যে নবীবংশ বা আহলে বাইতকে অনুসরণ করে ও ভালোবাসে আমরাও সেই আহলে বাইতকে ভালবাসি। বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝে হাজারো আলী, হাসান, হোসাইন, ফাতেমা রয়েছেন। তাদের নামের সাথে যুক্ত রয়েছে এই পবিত্র নামগুলো। কাজেই কোনো চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রই আমাদেরকে ইরান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। ইরানি জাতির আত্মার স্পন্দনের সাথে আমাদের আত্মার স্পন্দন অবিচ্ছেদ্য থাকবে।
তিনি বলেন, ইরানের অপরাধ ইরান নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে; নিজস্ব বোধ, বিশ^াস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জন করেছে। পরাশক্তি আমেরিকার প্রভুত্ব ইরান মেনে নেয় নি। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ইসরাইলের স্বার্থে বাধা সৃষ্টি করেছে। কাসেম সোলায়মানি তো সে কারণেই শাহাদাত বরণ করেছেন।
তিনি বলেন, ইরান মজলুম। ইরান নিজে কোনো দেশকে আক্রমণ করেনি। ইরান নিজে আক্রান্ত হয়েছে। ইয়েমেনে কে আক্রমণ করেছে? সিরিয়া, ইরাকসহ মধ্য এশিয়াকে কে অস্থির করেছে? ইসরাইলের সাথে কে বন্ধুত্ব করেছে?
আমরা ইরানি জেনারেল সোলায়মানি এবং ইরাকি বাহিনীর জেনারেল আবু মাহদী আল মুহাদ্দিসসহ যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের হত্যার নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব আহসানুল হাদী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরানি জাতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ঈমান যদি আকাশের সুরাইয়া তারকাতেও ঝুলে থাকে তবে সালমান ফারসি (রা)-এর জাতি তা পাবে। কাজেই ইরান হকের পথে আছে এবং ইরান হকের পথেই থাকবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন ইরানি জাতি আশুরা উপলক্ষে একটি স্লোগান দেয়Ñ ‘মুহররম তরবারির ওপর রক্তের বিজয়ের মাস’। এছাড়া ইরান বিপ্লব চলাকালীন একটি স্লোগান দিতÑ ‘হার রুয আশুরা, হার যামিন কারবালা’ অর্থাৎ প্রতিটি দিন আশুরা, প্রতিটি যমিন কারবালা। এই সেøাগান ও চেতনাই তাদের আত্মবিশ^াস। তারা দশকের পর দশক যাবত রক্ত দিয়ে আগ্রাসী অস্ত্রকে পরাভূত করে চলেছে। ইনশাআল্লাহ ইরান অজেয় থাকবে মাহদী (আ.)-এর আগমন পর্যন্ত।
প্রফেসর ড. কাজেম কাহদূয়ী বলেন, পবিত্র কোরআনে রয়েছে, আল্লাহর পথে যারা শহীদ তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত।’ তিনি হাদিসে কুদসী থেকে পাঠ করে বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে এগিয়ে যায় আল্লাহও তার দিকে এগিয়ে আসেন। যে আল্লাহকে ভালোবাসে আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। যে আল্লাহর পথে এক পা অগ্রসর হয়, আল্লাহ তার দিকে দুই পা অগ্রসর হন। যারা আল্লাহর পথে হেঁটে যায় আল্লাহ তার দিকে দৌড়ে আসেন। যে আল্লার হয়ে যায়, আল্লাহও তার হয়ে যান। যে আল্লাহর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে আল্লাহ তাকে তাঁর নিকটে তুলে নেন।’ জেনারেল কাসেম সোলায়মানি আল্লার রাহে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা এত ছিল যে, তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে বলায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তো শহীদ হতে চাই।’ আল্লাহ তাঁর মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
জনাব মোস্তফা তারেকুল হাসান বলেন, আপনারা কারবালার ইতিহাস জানেন। শহীদে কারবালা ইমাম হোসাইন (আ.) সম্পর্কে বিখ্যাত উর্দু কবি শওকত আলী জওহর লিখেছেন, ‘ক্বাতলে হোসাইন আসল যে মারগে ইয়াযীদ হায়/ ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হার কারবালা কি বাদ’ অর্থাৎ ‘হোসাইনের শাহাদাত সেতো ইয়াযীদের মৃত্যু/ ইসলাম কারবালার মাধ্যয়ে বিজয় লাভ করেছে।’ খ্বুই তাৎপর্যপূণ একটি কথা। ইমাম হোসাইন মুমিন হৃদয়ে ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। কারবালার ইতিহাস কালবালার তাৎপর্য দিনে দিনে বিকশিত হচ্ছে, উজ্জ্বল হচ্ছে, আলোকিত হচ্ছে, আলোচিত হচ্ছে যুগের পর যুগ। আর ইয়াযীদ ঘৃণিত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে যেমন পলাশীর যুদ্ধের খলনায়ক মীরজাফর, জগৎ শেঠ প্রমুখ ঘৃণিত ও বর্জিত নাম তেমনি ইয়াযীদ একটি ঘৃণিত নাম। হোসাইন এক আলোকিত নাম। তেমনি আজ কাসেম সোলায়মানি এক আলোকিত নাম। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।
এই হত্যাকা-ের পর ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংগঠন এর নিন্দা করেছে। মুসলিম বিশে^ কাসেম সোলায়মানির নাম জানা লোক ছিল খুবই কম। কিন্তু তাঁর শাহাদাতের ঘটনার পর সারা দুুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর নাম। কাসেম সোলায়মানি মুসলিম ইতিহসের একবিংশ শতকের হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কাসেম সোলায়মানি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন মুসলমানদের কাছে তা তাঁর শাহাদাতের পর পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে। ইরাকের বাগদাদে লক্ষ লক্ষ লোক নেমে আসে তাঁর কফিনের পাশে। ইরানে তাঁর জানাজায় ৭০ লক্ষ লোক জড়ো হয়েছে। ইমাম খোমেইনী (র.)-এর জানাজার পর কারো জানাজায় এতো বিশাল জলপ্লাবন দেখেনি বিশ^। সোলায়মানির কন্যা যে অগ্নিঝরা ভাষণ দিয়েছেন এতে মুক্তিকামী মুসলমানরা আরো উদ্দীপ্ত হয়েছে। ট্রাম্প পরাজিত হয়েছেন। ইরাকের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে ইরাকে মার্কিন সেনা উপস্থিতিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরাকের মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে। ৮০ জন মার্কিন সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। তিন শতাধিক আহত হয়েছে। ইসরাইলের পত্রিকা বলেছে, ইসরাইলের হাসপাতালে আড়াই শ মার্কিন সেনার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মিসাইলগুলো আঘাত করেছে মাকির্নি গোয়েন্দা রাডারকে ফাঁকি দিয়ে। এভাবেই কারবালায় ইমাম হোসাইনের শাহাদাত যেমন মুসলমানদের বিজয় এনে দিয়েছে তেমনি সোলায়মানির শাহাদাত মুসলমানদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। সত্যের জয় হবেই ইনশাআল্লাহ্। কারণ, জেতা শুধু জেতা নয়, হারা নয় হারা; সময় বলে দেয় বিজয়ী কারা।
আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল গর্বের সাথে বলেন যে, সোলায়মানি কুদস ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন। আমরাও আল কুদস কমিটির সৈনিক। আমি মনে করি যে, আমার নেতা শহীদ হয়েছেন। মহান আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু মাকাম দান করেন।
জনাব এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, সা¤্রাজ্যবাদীরা মুসলমানদেরকে বিভক্ত করে, ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে দিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে শোষণ করে খাচ্ছে। শিয়া ও সুন্নি দুই ভাই। সবাই মুসলমান। আমাদের আল্লাহ এক, রাসূল এক, কালেমা এক, কিতাব এক, কিবলা এক, আমরা পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, ৩০ দিন রোজা রাখি; মাসলা মাসায়েলগত, মাজহাবি ভিন্নতা তো থাকতেই পারে। তাহলে কি জন্য আমরা কাউকে অমুসলিম কাফের মনে করব? একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ করব। ইহুদি-মার্কিন বাতিল শক্তিগুলো আমাদেরকে এক হতে দিচ্ছে না বলেই আজকে এতো সমস্যা তৈরি হয়েছে মুসলিম বিশে^।
কবি ও আবৃত্তি শিল্পী আহমদ বাসির বলেন, আমি শিয়াও নই, সুন্নিও নই, আমি মুসলমান। আমাদের বিভিন্ন পরিচয় থাকতেই পারে এবং থাকবে। কিন্তু পরিচয়কে পরিচয়ের জায়গায় রেখে ইতিহাসকে ইতিহাসের জায়গায় রেখে আমরা আদর্শের প্রশ্নে এক থাকব সা¤্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। জেনারেল কাসেম সোলায়মানি ছিলেন ঐক্যের প্রতীক। তিনি সুন্নি হামাস ও শিয়া হিজবুলœাহ উভয়ের সামরিক প্রশিক্ষক ছিলেন। তাঁর শাহাদাতের পর হামাস ও হিজবুল্লাহ একই সাথে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। হামাস নেতা গিয়েছেন ইরানে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে।
কবি আতিক হেলাল বলেন, মুসলমাদেরকে এখনি ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার যাতে আমরা আর কোনো কাসেম সোলায়মানিকে না হারাই। তিনি বলেন, যত মতপার্থক্যই থাকুক সেগুলোকে না বাড়িয়ে মৌলিক শর্তে সবাইকে এক হতে হবে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কবি আমিন আল আসাদ তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ফররুখ আহমদ বলেছেন, ‘জীবনের চেয়ে দীপ্ত মৃত্যু তখনি জানি/ শহিদী রক্তে হেসে উঠে যবে জিন্দেগান’ এমনি এক দীপ্ত জীবন পেয়েছেন সোলায়মানি। শহীদে কারবালা ইমাম হোসাইনকে যেমন শহীদ করে নিঃশেষ করা যায়নি তেমনি কাসেম সোলায়মানিদেরকেও শহীদ করে শেষ করে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের কবিরা সব সময় অন্যায়, আধিপত্যবাদ ও সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দিন, রফিক আজাদ, হেলাল হাফিজ, আবিদ আজাদ সহ অনেকেই সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছেন। কাজেই আমরা কবিতার সৈনিক, শব্দই হচ্ছে আমাদের হাতিয়ার। জেনারেল কাসেম সোলায়মানির শাহাদাত সহ সকল অন্যায়, অত্যাচার, আধিপত্যবাদ, সা¤্রাজ্যাবাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। আর ঐক্য চাচ্ছি মনুষ্যত্ব ও মানবতার। ঐক্য চাচ্ছি বিবেকের ও নৈতিকতার। সুবিচারের জন্য। শান্তিময় পৃথিবীর জন্য। নিপীড়িত-নির্যাতিত, অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকারের জন্য আজকে আমাদের এই অবস্থান।
মাওলানা আসাদুজ্জামান বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক আমাদেরকে যেখানে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আঁকড়ে থাকো, কখানো বিচ্ছিন্ন হয়ো না’, কিন্তু আমরা আল্লাহর আদেশ মানছি না আর সঠিক রজ্জু চিনতে পারছি না বলেই আমরা বিভক্তি-রেখা বাড়িয়ে তুলছি। বাড়াচ্ছি আমাদের দুর্যোগ।
ক্বারী আলমগীর হোসেন মোল্লাহ বলেন, কাসেম সোলায়মানির শাহাদাতের জাগতিক মূল্য ও মোজেজা তো আমরা সপ্তাহ না ঘুরতেই দেখলাম। কিন্তু এর আধ্যাত্মিক মূল্য আরো গভীর ও সুদূরপ্রসারী।
Ñআখলাকুল আম্বিয়া

ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বই প্রকাশনা উৎসব ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠান

ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গত ২০ জানুয়ারি ‘ফারসি শিক্ষার প্রথম পদক্ষেপ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং ফারসি ভাষা, ফটোগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফি কোর্সের সনদ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার”কলা অনুষদের শিক্ষক ড. আব্দুস সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. কাজেম কাহদূয়ী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ হাসান সেহাত সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যেকোন সামাজিক কর্মকা- মানুষের অন্তর, বিবেক ও ভাষার উপর নির্ভরশীল। আজ যে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হবে তার নাম হলো ‘ফারসি শিক্ষার প্রথম পদক্ষেপ’। বইটি ফারসি ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি ইরানি জাতির সাহিত্য ও সভ্যতা স¤পর্কে জানতে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। বাংলদেশে ফারসি ভাষা চর্চার জন্য এমন একটি গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি থেকেই আমি বইটি ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমি চাই ভাষা ও সাহিত্যের ভালো যা আছে তা সকলের কাছে ছড়িয়ে দিতে। মূল বইটি প্রকাশ করেছে ইরানের সাদী ফাউন্ডেশন। আর এটি অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার। আমি তাঁকে এজন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রফেসর ড. কাযেম কাহদূয়ী বলেন, যে কোনো শিক্ষা-প্রশিক্ষণের বিষয় বই ছাড়া সম্ভব নয়। বই থাকতে হবে এবং ক্লাসে
লিখতে হবে। ফারসি শিক্ষার জন্য যেমন পাঠ্যবই প্রকাশ করতে হবে তেমনি সকল শিক্ষার্থীকে বই কিনতে হবে। তবেই যথাযথ শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
বইটির অনুবাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম সরকার বলেন, ইরানের বুনিয়াদে সাদী ‘গামে আউয়াল’ বা ‘ফারসি শিক্ষার প্রথম পদক্ষেপ’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। তবে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সহযোগিতা না করলে বাংলাদেশে এ গ্রন্থটি ছাপানো সম্ভব হতো না। সেজন্য তিনি কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ হাসান সেহাতকে ধন্যবাদ জানান। তিনি একই সাথে বইটি প্রকাশের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খান ও ড. আবুল বাশারকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ড. আবুল কালাম সরকার বইটি অনুবাদে যথেষ্ট কষ্ট করেছেন। আর তাঁর সাথে
ড. আবদুস সবুর খান ও ড. আবুল বাশারও অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি বইটি প্রকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে ফারসি চর্চার পেছনে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অতুলনীয় অবদান রয়েছে। আর ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে ইরানে বিপ্লব সাধিত না হলে বাংলদেশে ফারসি চর্চার ক্ষেত্রও প্রস্তুত হতো না। বিপ্লবের পর এদেশে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ফারসি ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু করে। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ভাষার কয়েকজন মাত্র শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ভাষা শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তিনি ফারসি ভাষা শিক্ষার অন্যান্য পাঠ্যবইগুলো অনুবাদের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
ড. আব্দুস সাত্তার বলেন, এরকম একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি। শুরুতেই বলতে চাই যে, জেনারেল সোলাইমানির শাহাদাতের ঘটনায় কষ্ট অনুভব করছি। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার মানুষের মধ্যে মানবিকতার বিষয়গুলোর বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে আন্তরিকতা দেখা যায় না। তিনি বলেন, শিল্পকলার ইতিহাসের আলোচনা ইরানকে বাদ দিয়ে হয় না। ইরান শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যে ক্যালিগ্রাফি কোর্স চালু করেছে তা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। আমি আশা করছি এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আলোচনা শেষে ‘ফারসি শিক্ষার প্রথম পদক্ষেপ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং ফারসি ভাষা, ফটোগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফি কোর্সের সনদ প্রদান করা হয়।

স্মরণীয় দিবস

 

১ জানুয়ারি : ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) ১৯৮৯ সালের এ দিনে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের কাছে এক ঐতিহাসিক চিঠি প্রদান করেন।
* হযরত ফাতেমা ও আলী (আ.)-এর কন্যা হযরত যায়নাব সালামুল্লাহ আলাইহার জন্মবার্ষিকী।
৯ জানুয়ারি : নবীকন্যা হযরত ফাতেমা (আ.) এর ওফাত বার্ষিকী (একটি রেওয়ায়াত অনুযায়ী)
১০ জানুয়ারি : মীর্যা তাকী খান আমীর কাবীর এর শাহাদাত বার্ষিকী।
১২ জানুয়ারি : ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নির্দেশে ইসলামি বিপ্লবী পরিষদ গঠন দিবস এর বার্ষিকী।
১৬ জানুয়ারি : ১৯৭৯ সালের এ দিনে ইরান থেকে রেযা শাহ পাহলভী পলায়ন করেন।
* নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী।
২৬ জানুয়ারি : বাংলা ভাষার সনেট কাব্যের জনক ও ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্যের রচয়িতা মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী।
২৯ জানুয়ারি : আততায়ীর গুলিতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী নিহত হন।
* নবীকন্যা হযরত ফাতেমা (আ.) এর ওফাত বার্ষিকী (একটি রেওয়ায়াত অনুযায়ী)
১ ফেব্রুয়ারি : দীর্ঘ ১৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের প্রাক্কালে এ দিনে বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
৩ ফেব্রুয়ারি : ইরানে বিমান বাহিনী দিবস।
১১ ফেব্রুয়ারি : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিপ্লবের বিজয়বার্ষিকী। ইরানে আড়াই হাজার বছরের রাজতন্ত্রের পতন।
১৪ ফেব্রুয়ারি : মহানবী (সা.), অন্যান্য নবী (আ.) এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থ স¤পর্কে অবমাননাকর উক্তি করার দায়ে ১৯৮৯ সালের এ দিনে ইমাম খোমেইনী সালমান রুশদীর মৃত্যুদ-ের ফতোয়া প্রদান করেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি : নবীকন্যা হযরত ফাতেমা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস। বিশ্ব নারী ও মা দিবস।
* হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর জন্মদিবস।
২১ ফেব্রুয়ারি : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এ দিনে বাংলা ভাষা আন্দোলনে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বার, শফিকসহ বেশ কয়েকজন বাঙালি তরুণ।
২৪ ফেব্রুয়ারি : খাজা নাসিরউদ্দিন তূসী স্মরণে দিবস। এটি ইরানে প্রকৌশল দিবস হিসেবেও উদযাপিত হয়।
২৭ ফেব্রুয়ারি : নবীবংশের ১০ম ইমাম আলী নাকী (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
৬ মার্চ : নবীবংশের নবম ইমাম তাকী (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস।
৯ মার্চ : আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস।
*বিশ্বনন্দিত ইসলামি ব্যক্তিত্ব জামালুদ্দিন আফগানী (আসাদাবাদী) স্মরণে দিবস।
১০ মার্চ : মহানবী (সা.)-এর নাতনী হযরত যায়নাব (আ.)-এর ওফাতবার্ষিকী।
১২ মার্চ : ইরানে ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনীর নির্দেশে এই দিনে শহীদ-পরিবারের কল্যাণে শহীদকল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়।
১৫ মার্চ : ইরানের সমকালীন বিখ্যাত কবি পারভীন এহতেসামী স্মরণে দিবস।
২০ মার্চ : নওরোয। ইরানি বর্ষ ১৩৯৬ এর শুরু।
২১ মার্চ : নবীবংশের সপ্তম ইমাম মূসা কাযিম (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
২২ মার্চ : বিশ্ব পানি দিবস।
২৩ মার্চ : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিবস।
*বিশ্ব আবহাওয়া দিবস।
৩০ মার্চ : নবীবংশের চতুর্থ ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস।
১ এপ্রিল : ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস। এ দিনে ৯৮ শতাংশ জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
২ এপ্রিল : বিশ্ব প্রকৃতি বা পরিবেশ দিবস।
৭ এপ্রিল : বিশ্ব স্বাস্থ্য সচেতনতা দিবস।
৯ এপ্রিল : পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনে ইরানের জাতীয় দিবস।
১৪ এপ্রিল : মরমি কবি ও দার্শনিক আত্তার নিশাবুরী স্মরণে দিবস।
* পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ।
১৮ এপ্রিল : ইরানের সশস্ত্রবাহিনী ও সেনাবাহিনী দিবস।
২১ এপ্রিল : বিশ্ববিখ্যাত কবি শেখ সাদী স্মরণে দিবস।
২২ এপ্রিল : ইসলামি বিপ্লবের পর সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘোষণা দিবস।
২৩ এপ্রিল : নবীবংশের সপ্তম ইমাম মূসা কাযেম (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
*বিখ্যাত কালামশাস্ত্রবিদ শেখ বাহায়ী স্মরণে দিবস।
*ইরানে বিপ্লবী গার্ডবাহিনী প্রতিষ্ঠ দিবস।
২৩-২৭ এপ্রিল : আন্তর্জাতিক সবার জন্য শিক্ষা সপ্তাহ।
২৫ এপ্রিল : ১লা রমযান।
*১৯৮০ সালের এই দিনে ইরানের তাবাস মরুভূমিতে আমেরিকার কমান্ডো বাহিনী অনুপ্রবেশ করে, কিন্তু আল্লাহর অসীম কুদরতে বিমানগুলো মরুঝড়ে বিধ্বস্ত হয়।
৩০ এপ্রিল : * পারস্যোপসাগর দিবস।
১ মে : মে দিবস।
৪ মে : নবীপতœী হযরত খাদীজা (সা.আ.)-এর ওফাত দিবস।
৯ মে : মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান (আ.)-এর পবিত্র জন্ম দিবস।
১৩ মে : ইমাম আলী (আ.)-এর আঘাত প্রাপ্তির দিন। এদিনে আলী (আ.) অভিশপ্ত ইবনে মুলজিম কর্তৃক মাথায় তরবারির আঘাতপ্রাপ্ত হন।
১৫ মে : ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
১৭ মে : লাইলাতুল কদর (আহলে বাইতের সূত্র অনুযায়ী)।
২১ মে : লাইলাতুল কদর (আহলে সুন্নাতের সূত্র অনুযায়ী)।
২২ মে : জুমআতুল বিদা। বিশ^ আল-কুদ্স দিবস।
২৫ মে : ঈদুল ফিত্্র।

সমকালীন ফারসি সাহিত্য

 

ইরানে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সংঘটিত সাংবিধানিক বিপ্লবের পর ফারসি সাহিত্যের সমকালীন যুগের সূচনা। এ বিপ্লব ইরানিদের চিন্তা-চেতনায় এবং এর ফলশ্রুতিতে সাহিত্যশৈলীর মধ্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিল। এভাবেই বিষয়বস্তু ও গঠনের দিক বিবেচনায় ফারসি সাহিত্যকে ক্লাসিক ও আধুনিক এ দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। এ যুগেই ফারসি সাহিত্য প্রথম বারের মতো সাধারণ মানুষের সাহিত্যে পরিণত হয়।
আধুনিক ফারসি কবিতার পাঠকরা হচ্ছেন সাধারণ জনগণ এবং বেশিরভাগ কবিই ব্যক্তিজীবনের সমস্যাবলি এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। আধুনিক ফারসি কবিতার ভাষা জনগণের কাছাকাছি ভাষায় পরিণত হয়। আজকের ফার্সী ভাষার গঠন এবং শব্দাবলি এতে ব্যাবহার করা হয় এবং দুর্বোধ্য শব্দসমূহ বাদ দেয়া হয়। এ যুগের কবিগণ সাহিত্য অলঙ্কারের দিকে তেমন একটা দৃষ্টিপাত করেন নি।
এ যুগের ফার্সী কবিতাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয় :
আধুনিক কবিতা (নিমায়ী)
ফারসি ভাষায় এ ধরনের কবিতার শৈলী প্রথম বারের মতো আবু এসফান্দিয়ারী আবৃত করেন যিনি ‘নিমা ইউশিজ’ নামে বিখ্যাত। নিমা তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য ‘আধুনিক’ বিশেষণ ব্যবহার করেন। এ জাতীয় কবিতায় সমজাতীয় শ্লোক বিদ্যমান ছিল না। অনুরূপভাবে, শ্লোকগুলো কখনও ছোট আবার কখনও ছিল বড়। এ ধরনের কবিতা সাহিত্যের শিক্ষকদের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এর ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। সমকালীন কবি ও সমালোচকরা নিমা ইউশিজের কবিতার ধাঁচকে মডেল হিসেবে গণ্য করেন এবং তাঁকে পৃথিবীর খ্যাতিমান অনুসরণীয় কবিদের দলভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন। এ ধরনের শৈলী যে সব কবি ব্যবহার করেন তাঁদের মধ্যে নিমা ইউশিজ, মাহদী এখওয়ানুস সালেস, সোহরাব সেপেহ্রি এবং কায়সার আমিনপুর অন্যতম।
সেপিদ বা গদ্য কবিতা
এ ধরনের কবিতা সংক্ষিপ্তÑ যা গদ্যের আকারে লিখা হয়; এতে অন্ত্যমিল থাকে না, তবে কাব্যিক উপাদান থাকে। হুশাঙ্গ ইরানি এমন একজন কবি যিনি প্রথম এ ধরনের কাব্যশৈলীতে ব্যবহার করেন। কিন্তু সেপিদ কবিতার সার্থকতা পায় বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আহমদ শামলুর মাধ্যমে। এজন্য তাঁকে সেপিদ কবিতার উদ্ভাবক বলা হয়।
আধুনিক প্রবহমান কবিতা
এ ধরনের কবিতা প্রথম বারের মতো বিযান এলাহী এবং আহমদ রেযা আহমাদী শুরু করেন। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নিমায়ী পদ্ধতির কবিদের একটি দল একটি বিশেষ ধরনের কবিতা রচনার প্রক্রিয়া শুরু করেনÑ যা পরবর্তীকালে আধুনিক প্রবহমান কবিতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। আধুনিক প্রবহমান কবিতায় অতিরঞ্জন প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। এ প্রবাহের উদ্দেশ্য ছিল সকল বাহ্যিক নিয়মনীতির পরিবর্তন ও বিবর্তন এবং প্রচলিত কবিতার অর্থগত ও গঠনগত দিকের, এমনকি আধুনিক কবিতার আঙ্গিকে পরিবর্তন সাধন করা।
অনুবাদ : বাদল মিয়া

বিশ্ব কুদস দিবস : মুসলমানদের দায়িত্ব সচেতন হয়ে ওঠার দিন

মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম –
ভূমিকা
শুধু নিজ দেশ বা জাতি নয় বরং গোটা বিশ্বকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যাঁরা সঠিক পথের দিশা দিতে পারেন তাঁরাই বিশ্ব নেতা। আজ কিংবা আগামী দু-চার-পাঁচদিনের ঘটনাবলি স¤পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করে সেজন্য জাতিকে প্রস্তুত করার মতো নেতার অভাব পৃথিবীতে নেই। কিন্তু আগামী অর্ধশতাব্দী বা একশ’ বছর পর কী হতে পারে সেজন্য গোটা জাতি বা মুসলিম উম্মাহকে প্রস্তুত করে যেতে পারেন এমন নেতা সত্যিই বিরল। বিংশ শতাব্দীর এমন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন ইমাম খোমেইনী (রহ.)।
কুদস দিবস পালনের ঘোষণা
শুরুতে ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্টা একজন বিশ্বনেতার কথা বলেছি। তিনি যেন এখন থেকে অর্ধশতাব্দী আগে আজকের এই প্রেক্ষাপটকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কালজয়ী ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানের মাটি থেকে আড়াই হাজার বছরের রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করেন ইমাম খোমেইনী (রহ.)। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ওই বিপ্লব বিজয়ের পর এই মহান নেতা নিজ দেশের গ-ি পেরিয়ে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় মনোনিবেশ করেন।
তিনি সঠিকভাবে উপলব্ধি করেন, মানবতার শত্রু ইসরাইল নামক বিষফোঁড়াকে ঘৃণা করতে শেখাতে হবে মুসলিম উম্মাহকে। যতদিন না এই বিষফোঁড়া উপড়ে ফেলা হচ্ছে ততদিন যাতে মুসলমানরা তাদের আসল শত্রুর কথা ভুলে না যায় সেজন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থপতি ঘোষণা করেন, প্রতি বছর রমজানের শেষ শুক্রবার পালিত হবে ‘বিশ্ব কুদস দিবস’। মুসলমানদের প্রথম কিবলাকে ইসরাইলি দখল থেকে মুক্ত করার জন্য এ দিবসের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এ দিবসে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক গণ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে যেতে হবে।
ইমাম খোমেইনী (রহ.) ১৩৯৯ হিজরির ১৩ রমজান (১৯৭৯ সালের ৭ আগস্ট) অর্থাৎ ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের ছয় মাস পর বিশ্ব কুদস দিবস পালনের কথা প্রথম ঘোষণা করেন। কুদস দিবসের ঘোষণায় তিনি বলেন : ‘আমি বিশ্বের সকল মুসলমান এবং মুসলিম দেশগুলোর সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দখলদার ইসরাইল এবং তাদের মদদদাতাদের ওপর থেকে সহায়তার হাত গুটিয়ে নিন। সেই সাথে পবিত্র রমজান মাসের কদরের মর্যাদাময় দিনগুলোর অন্তর্ভুক্ত সর্বশেষ শুক্রবারকে কুদস দিবস হিসেবে মনোনীত করে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করুন। এই আনুষ্ঠানিকতা ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণে সহায়তা করবে।’
ইসরাইল কেন মুসলমানদের এক নম্বর শত্রু
ইহুদিবাদী ইসরাইল কেন মুসলমানদের প্রধান শত্রু সেকথা বিশ্ব মুসলিম যেন ভুলতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে তো বিষয়টি একেবারেই আনকোরা। ইতিহাসের নানা পরিক্রমায় নানা ঘটনা প্রবাহের জের ধরে ফিলিস্তিনের মূল অধিবাসীদের বিতাড়িত করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে জায়নিস্ট বা ইহুদিবাদীরা সেখানে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল কায়েম করে। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে।
ইহুদিবাদীরা জেরুসালেম হিসেবে খ্যাত ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ শহরে অবস্থিত মসজিদুল আকসা জবরদখল করে নেয় ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময়। এর অর্থ হচ্ছে, মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলার শহর আল-কুদসসহ ইসরাইল নামক যে রাষ্ট্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বুকে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে যাচ্ছে সেটি আসলে কোনো বৈধ রাষ্ট্র নয়। এখন থেকে ৭২ বছর আগেও এই নামের কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব পৃথিবীর মানচিত্রে ছিল না। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী স¤পদ ফিলিস্তিন জবরদখল করে ব্রিটেন ও আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই কৃত্রিম ও অবৈধ রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া হয়।
আরব-ইসরাইল সংঘাত ও ক্যা¤প ডেভিড চুক্তি
ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের মাতৃভূমির ওপর ইহুদিবাদীদের এই অবৈধ দখলদারিত্ব মেনে নেননি। তাঁরা এর প্রতিবাদ জানান। কয়েকটি আরব দেশ ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ায়। ফলে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিনের বেশ কিছু ভূমি আরবদের হাতছাড়া হয়ে যায় যার মধ্যে বায়তুল মুকাদ্দাস বা আল-কুদস শহর ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ইহুদিবাদীরা তাদের অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ছল-বল-কৌশল তিনটিরই আশ্রয় নিয়েছিল। প্রথমে তারা আপোষে ফিলিস্তিনিদের ভূমি ক্রয় করে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। সেখানে সারাবিশ্ব থেকে ইহুদিদের ধরে এনে বসবাসের সুযোগ করে দেয়Ñ যে প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তীকালে তারা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করে এবং জীবিতদের বিতাড়িত করে। এরও পরে তারা মুসলমানদেরকে দলে ভেড়ানোর জন্য কৌশল ও প্রলোভনের আশ্রয় নেয়।
১৯৬৭ সালের ইসরাইলবিরোধী যুদ্ধে আরব বিশ্বের অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী মিশরকে মাত্র এক দশকের মধ্যে কব্জা করে ফেলে তেল আবিব। ১৯৭৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার অবকাশযাপন কেন্দ্র ক্যা¤প ডেভিডে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কথিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে মিশর। তৎকালীন মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী মোনাচেম বেগিন ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের উপস্থিতিতে ১২ দিনের গোপন বৈঠকের পর তাঁরা ওই চুক্তি সই করেন। আরব বিশ্বকে না জানিয়ে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করার কারণে ১৯৭৯ সালে মিশরকে আরবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু বাকি আরব নেতাদেরও বাগে আনতে সময় নেয়নি ইহুদিবাদীরা। ১০ বছর পর ১৯৮৯ সালে মিশরকে আরব লীগের সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়।
আল-কুদসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
‘কুদস’-এর শাব্দিক অর্থ পবিত্র। তবে এটি অধিকৃত জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের একটি ঐতিহাসিক শহরের নাম যা বর্তমানে জেরুসালেম নামে সবার কাছে পরিচিত। মুসলমানরা এই শহরকে ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ নামে চেনেন এবং এই পবিত্র ভূমিতে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক মসজিদুল আকসা বা আল-আকসা মসজিদ। মুসলিম ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অসংখ্য নবী-রাসূলের (আ.) পদধূলিতে ধন্য এই নগরী। হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর
নির্মাণের ৪০ বছর পর তাঁর ছেলে হজরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের আল-কুদস শহরে ‘আল আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর তাঁর ছেলে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)-এর সন্তান হজরত সুলায়মান (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজ রজনীতে মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফ থেকে মসজিদুল আকসা সফর করেন। সূরা বনী ইসরাইলের প্রথম আয়াতেই এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রিয় নবীজী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এই মসজিদেই অতীতের সব নবীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নামাজের ইমামতি করেন। অসংখ্য নবী-রাসূলের দাওয়াতি মিশন পরিচালিত হয়েছে এই মসজিদকে কেন্দ্র করে।
আদিতে ‘কাবা শরীফ’ মুসলমানদের কিবলা থাকলেও মসজিদুল আকসা স্থাপনের পর এটি কিবলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ওহি লাভ ও নবুওয়াত প্রকাশের সময় আল-আকসাই কিবলা ছিল। মদিনায় হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই কিবলা পরিবর্তন হয়ে পুনরায় কাবা কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। হাদিসে এসেছে : কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করলে এক লক্ষ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে অবস্থিত মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করলে পঞ্চাশ হাজার গুণ সওয়াব এবং মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় করলে পঁচিশ হাজার গুণ সওয়াব। মানবতার শত্রু
ইসরাইলি দখলদারের কব্জায় থাকার কারণে মুসলিম উম্মাহ আজ মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একমাত্র জোরালো ভূমিকা পালন করছে যে দেশ
ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর আজও বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম দেশ এই অবৈধ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশের স¤পর্ক বা কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। তবে ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্যে কূটনৈতিক স¤পর্ক ও সব ধরনের সহযোগিতা বজায় রেখেছে মিশর, জর্দান ও তুরস্ক নামের তিন দেশ। বাকি মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের পাশবিক অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে একটু/আধটু প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান।
ইরানের যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ইরানসহ আরব বিশ্বে এই আন্দোলন ‘প্রতিরোধ আন্দোলন’ নামে বেশি পরিচিত।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী সু¯পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রামে সমর্থন ও সহযোগিতা করা থেকে তেহরান কখনো বিন্দুমাত্র পিছপা হবে না; বরং এ সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
পশ্চিমা গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, তাঁর দেশ কোনো স্থানে চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত নয়। ঘোষণা না দিয়ে কারো বিরুদ্ধ প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য যুদ্ধ ইরান করে না। তবে হ্যাঁ। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ইরানের ঘোষিত নীতি এবং এখান থেকে এক চুলও পিছ ুহটবে না তাঁর দেশ।
ইসলামি জিহাদ আন্দোলন ও হামাসসহ গাজা উপত্যকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ইরানের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এসব প্রতিরোধ সংগঠন ইহুদিবাদী ইসরাইলের আরামের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে তাদের গোপন স¤পর্ক প্রকাশ করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে হামাস। ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পলিটব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে স¤পর্ক প্রতিষ্ঠা করলে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ও মহাপাপ হিসেবে গণ্য হবে। তিনি সম্প্রতি গাজায় আরও বলেছেন, যারা ইসরাইলের সঙ্গে স¤পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় তারা আসলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অপরাধ চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে। মাত্র ৪৫ বর্গকিলোমিটার ভূখ-ের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে থেকে এভাবে জোর গলায় প্রতিরোধ নেতাদের কথা বলার নেপথ্য শক্তি যে ইরান তা বলা বাহুল্য।
কথিত ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার লক্ষ্যে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রমূলক চুক্তির রূপরেখা প্রকাশ করেছেন যার নাম ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বা শতাব্দীর কথিত সেরা চুক্তি। এতদিন আমেরিকা ফিলিস্তিন সংকটের দুই-জাতিভিত্তিক সমাধানের কথা বলে এলেও এবার সাম্রাজ্যবাদী দেশটির আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’তে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। গাজা উপত্যকা, জিহুদিয়া পার্বত্য অঞ্চল ও পশ্চিম তীরের সামারিয়া অঞ্চল নিউ প্যালেস্টাইন নামে পরিচিত হবে। আর বাকি সব অঞ্চল, এমনকি এসব এলাকার ইহুদি বসতিগুলো সব স্বাধীন রাষ্ট্র ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আল-কুদস বা জেরুসালেম ইসরাইল ও নিউ প্যালেস্টাইনের যৌথ রাজধানী হবে। আরবরা নিউ প্যালেস্টাইন এবং ইহুদিরা ইসরাইলের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে। নিউ প্যালেস্টাইনের কোনো সেনাবাহিনী থাকবে না। হালকা অস্ত্রধারী পুলিশ থাকবে। বহিঃশত্রু থেকে তাদের রক্ষার দায়িত্বে থাকবে ইসরাইল। অর্থাৎ সেনাবাহিনী অস্ত্রভা-ার সবই থাকবে ইহুদিদের ও ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে। জেরুসালেমের নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরাইলি পৌরসভার হাতে।
ভয়ঙ্কর এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরে নিয়ন্ত্রণকারী মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন পিএলও, গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করে এর বাস্তবায়ন করা হবে। পিএলও যদি চুক্তিতে রাজি না হয়, তাহলে তাদের সব সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হবে। অন্যদিকে হামাস যদি রাজি না হয়, তাহলে সরাসরি যুদ্ধ করে হামাসকে নির্মূল করে দেয়া হবে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে এ চুক্তির পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছে।
এ বছরের কুদস দিবসের করণীয়
শুরুতে বলেছিলাম, মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলার শহর তথা আল-কুদসকে ঘিরে একবিংশ শতাব্দীর এই নানামুখী ষড়যন্ত্র আগাম উপলব্ধি করেছিলেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)। তাঁর পক্ষ থেকে ঘোষিত বিশ্ব আল-কুদস দিবস পালনের গুরুত্ব এই মুহূর্তে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে গেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতি রমজানের শেষ শুক্রবার জুমার নামাজের আগে বা পরে ইসরাইলের ধ্বংস কামনা ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল বা শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই কুদস দিবসের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ইরানে। রাজধানী তেহরানসহ সারা দেশের কয়েকশ’ শহরে এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ফেব্রুয়ারির বিপ্লব বিজয় বার্ষিকীর শোভাযাত্রার পর কুদস দিবসের শোভাযাত্রায় সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও গত চার দশক ধরে এই দিবসের শোভাযাত্রা এবং সেমিনার ও অন্যান্য সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাস, কালচারাল সেন্টার এবং আল-কুদস কমিটি এসব আয়োজনের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে। এ বছর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষাপটে হয়তো ভিন্ন আঙ্গিনে পালিত হবে কুদস দিবস। আমরা যে যার অবস্থানে থেকে সে দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করব অথবা নিদেনপক্ষে অন্তরের অন্তস্তল থেকে এ দিবসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করবÑ এই হোক এ বছরের বিশ্ব কুদস দিবসের প্রত্যাশা।

ইরানি প্রবাদ

شاخ به شاخ شدن با کسی
উচ্চারণ : শা’খ বেশা’খ শোদান বা’ কেসী
অর্থ : কারো সাথে শিং-এ শিং-এ মুখোমুখি হওয়া।
মর্মার্থ : কারো সাথে ঝগড়া ঝাটিতে জড়িয়ে পড়া বা কারো সাথে তর্ক-বিতর্ক ও মারামারিতে লিপ্ত হওয়া বোঝাতে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
شاخ توی جیب کسی گذاردن
উচ্চারণ : শা’খ তূয়ে জীবে কেসী গোযা’রদান
অর্থ : কারো পকেটের মধ্যে শিং রাখা
মর্মার্থ : কাউকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা বোঝাতে এই প্রবাদটির ব্যবহার ব্যাপক।
شاخ شانه کشیدن
উচ্চারণ : শা’খ শা’নে কেশীদান
অর্থ : শিং কাঁধ পর্যন্ত লম্বা হওয়া
মর্মার্থ : কাউকে হুমকি দেওয়া বা ক্ষমতার দাপট দেখানো অর্থে এই প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়।
شاخ کسی را شکستن
উচ্চারণ : শা’খে কেসী রা’ শেকাস্তান
অর্থ : কারো শিং ভেঙে দেয়া
মর্মার্থ : কারো দম্ভ-অহংকার খর্ব করা, কাউকে দমিয়ে দেয়া বুঝাতে এই প্রবাদটির ব্যবহার ব্যাপক।
شاخ و دم داشتن
উচ্চারণ : শা’খো দোম দা’শতান
অর্থ : শিং ও লেজ থাকা
মর্মার্থ : অস্বাভাবিক অবস্থার অধিকারী হওয়া। কিম্ভূতকিমাকার ধরনের হওয়া বোঝাতে এই প্রবাদ প্রচলিত।
شانه بالا انداختن
উচ্চারণ : শা’নে বা’লা’ আন্দা’খতান
অর্থ : কাঁধ উপরের দিকে ফেলে দেয়া।
মর্মার্থ : কারো কোনো কথায় কর্ণপাত না করা, কারো কথা নাকচ করে দেয়া অর্থে এই প্রবচন ব্যবহৃত হয়।
شانه خالی کردن
উচ্চারণ : শা’নে খা’লী কারদান
অর্থ : কাঁধ খালি করা
মর্মার্থ : কোনো দায়িত্ব পালন না করা বা কোনো কাজের দায়িত্বভার প্রত্যাখ্যান করা অর্থে এই প্রবাদটি প্রচলিত।
شاه می بخشد شیخ علی خان نمی بخشد
উচ্চারণ : শা’হ মী বাখশাদ শেখ আলী খা’ন নেমী বাখশাদ
অর্থ : শাহ মাফ করে দেন আর শেখ আলী খান মাফ করেন না।
মর্মার্থ : প্রত্যেকে নিজের মর্জি মতো নিয়ম কানুন ঠিক করে নিয়েছে, কোনো আইন কানুনের ধার ধারে না। কোনো ব্যাপারে কোনো ধরনের হিসাব কিতাব নাই। দৃষ্টির সংকীর্ণতার উপরে মনগড়া কাজ করে। এসব ভাবধারা প্রকাশ করতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
شاهنامه آخرش خوش است
উচ্চারণ : শা’হনা’মে আ’খেরাশ খোশ আস্ত
অর্থ : শাহনামার শেষটা ভালো
মর্মার্থ : এই প্রবাদ দ্বারা এই ভাবধারা প্রকাশ করা হয় যে, যে কাজটি দৃশ্যত সঠিক বলে মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তার ফলাফল কী দাঁড়ায় দেখা যাক।
شب دراز است و قلندر بیکار
উচ্চারণ : শব দেরায আস্ত ও কালান্দার বীকার
অর্থ : রাত দীর্ঘ আর কলন্দর বেকার।
মর্মার্থ : তাড়াহুড়ার কোনো দরকার নেই । সবকাজ ঠিকমত আছে। হাতে অনেক সময় ও সুযোগ আছে বুঝানোর জন্য এই প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়।
شبهای چهار شنبه غش می کند
উচ্চারণ : শাবহা’ চাহার শাম্বে গেশ মী কুনাদ
অর্থ : বুধবার রাত এলে হুঁশ হারিয়ে ফেলে।
মর্মার্থ : ঠাট্টার ছলে তার শুধু এই দোষটাই নেই, এ ছাড়া দোষ দুর্বলতা অনেক আছে বুঝাতে এই প্রবাদের ব্যবহার ব্যাপক।
شتر در خواب می بیند پنبه دانه
উচ্চারণ : শোতর দর খাব মী বীনাদ পাম্বে দা’নে
অর্থ : উট স্বপ্নের মধ্যে তুলা দেখে।
মর্মার্থ : ক্ষুধার্ত মানুষ তরতাজা রুটির স্বপ্ন দেখে। প্রত্যেকে নিজের কাঙ্কিত বস্তুর জন্য লালায়িত থাকে বুঝাতে ফারসিতে এই প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়।
অনুবাদ : আবু আব্দুল্লাহ

রেডিও তেহরান

 

আইআরআইবি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, ইরান।

Website: parstoday.com/bn Email: [email protected] Tel: +98-21-22013764

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার (আইআরআইবি) বিশ্ব কার্যক্রমের অধীনে বাংলা অনুষ্ঠানের সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৮২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে। আর রেডিও তেহরানের অনলাইন সংস্করণ পার্সটুডে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে মূলধারার গণমাধ্যম হিসেবে কাজ শুরু করেছে।

 

 

অধিবেশনের শুরুতে বাংলা অনুবাদসহ কুরআন তেলাওয়াত। এরপর বিশ্বের সর্বশেষ খবরাখবর নিয়ে পরিবেশিত হয় বিশ্বসংবাদ। এতে থাকে ঢাকা ও কোলকাতা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট। এরপর সংবাদভাষ্যের অনুষ্ঠান দৃষ্টিপাতে দুটি প্রতিবেদন প্রচার হয়। দৃষ্টিপাতের পর নিচের তালিকা অনুযায়ী অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়।

শনিবার ইরান ভ্রমণ কথা-বার্তা ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাস
রোববার পারস্যের প্রতিভা বিশ্বের গর্ব কথা-বার্তা প্রাচ্যবিদদের চোখে মহানবী (সা.)
সোমবার চিঠিপত্রের আসর প্রিয়জন কথা-বার্তা জীবনশৈলী
মঙ্গলবার দর্পন কথা-বার্তা ইরানি পণ্য-সামগ্রী
বুধবার স্বাস্থ্যকথা কথা-বার্তা কুরআনের আলো
বৃহস্পতিবার রংধনু আসর কথা-বার্তা  
শুক্রবার চিঠিপত্রের আসর প্রিয়জন কথা-বার্তা আলাপন (সাক্ষাৎকার)

* বিশেষ দিবস উপলক্ষে নিয়মিত অনুষ্ঠানের পরিবর্তে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।​

 
   

 

 

  

সান্ধ্য অধিবেশন ৩১ মিটার ব্যান্ডে ৯৮১০ কিলোহার্টসে (বাংলাদেশ ও ভারতে)
সান্ধ্য অধিবেশন ৩১ মিটার ব্যান্ডে ৯৪৬৫ কিলোহার্টসে (সৌদি আরবে)
নৈশ অধিবেশন ৪১ মিটার ব্যান্ডে ৭৩০৫ কিলোহার্টসে (বাংলাদেশ ও ভারতে)

 

 

 

 

 

 

ইউটিসি সময় সান্ধ্য অধিবেশন 14:20-15:20 নৈশ অধিবেশন 16:20-16:50
বাংলাদেশ সময় সান্ধ্য অধিবেশন 20:23-21:23   নৈশ অধিবেশন 22:23-22:53
ভারত সময় সান্ধ্য অধিবেশন 19:53-20:53 নৈশ অধিবেশন 21:53-22:23
সৌদি আরব সময় সান্ধ্য অধিবেশন 17:23-18:23 পুনঃপ্রচার 03:50-4-50

 

*আমাদের অনুষ্ঠান ইরান স্যাট বা বাদ্‌র-৫ স্যাটেলাইটেও প্রচারিত হয়।

 
   

 

 

 

www.facebook.com/groups/radiotehran www.facebook.com/RadioTehranBN
  twitter.com/RadioTehranBN

 

 
   

 

 

 

ভারত বাংলাদেশ ইরান
Bangla Program

Radio Tehran

Post Box no : 4222

New Delhi :110048, India

বাংলা অনুষ্ঠান

রেডিও তেহরান

জি. পি. ও বক্স নম্বর : ৪০০২

ঢাকা- ১০০০, বাংলাদেশ

Bangla Program

Radio Tehran

Post Box No- 6767-19395

Tehran, Iran

 

 

 

ইরানের সমকালীন কবি পারভীন এ’তেসামী ও তাঁর কাব্যে মানবতা

অধ্যাপক ড. মো. নূরুল হুদা –

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইরানে যে সকল কবি ও সাহিত্যিক ফারসি ভাষা ও সাহিত্যকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁদের অন্যতম মহিলা কবি ছিলেন পাভীন এ’তেসামী। তাঁর কবিতায় মানব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে মানুষের জীবন যাত্রা ও সামাজিক ব্যবস্থার সূক্ষ্ম পর্যালোচনা করে বঞ্চিত, অভাবী, মেহনতী ও দুঃখী মানুষের হৃদয়ের ব্যথাগুলোকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পারভীন এমন এক সমাজ চেয়েছিলেন যে সমাজে থাকবে না কোনো দারিদ্র, বঞ্চনা, জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্য, মিথ্যা ও প্রতারণা। তিনি সমাজের নারী-পুরুষের মর্যাদা ও অধিকার নিয়েও কথা বলেছেন।
পারভীন এ’তেসামী ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই মার্চ ইরানের তাবরিয শহরে এক বিত্তবান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইউসুফ এ’তেসামী সমসাময়িক কালের একজন বিখ্যাত পণ্ডিত লোক ছিলেন। তিনি ‘বাহার’ নামক ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন এবং এক সময় ইরানের কালচারাল কমিশনের সদস্য ছিলেন। শৈশব কালেই মাতা বানু আখতার মৃত্যুবরণ করলে পিতা নিজ হাতে তাঁকে গড়ে তোলেন এবং জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের অলংকারে সজ্জিত করেন। মাত্র আট বছর বয়সে পারভীন কবিতা রচনা শুরু করেছিলেন। আধুনিক শিক্ষা লাভের জন্য পারভীন তেহরানে অবস্থিত American Girl’s School and College -এ ভর্তি হন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে একই কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন। মাত্র আঠারো বছর বয়সে পারভীন কলেজ জীবন সমাপ্ত করেন। 
পারভীন কলেজ জীবন থেকে বিদায় উপলক্ষে نهال آرزو” ” নামে একটি সুন্দর কবিতা লিখেন এবং বিদায় অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন, যা সকলের প্রশংসা কুড়ায়। কবিতাটির প্রথম পঙক্তি ছিল এরূপ-  
ای نهال آرزو خوش زی که بار آورده ای
غنچۀ بی باد صبا، گل بی بهار آورده ی .
ওহে আশার চারগাছ সুখী হও; কেননা, তুমি সুফল এনেছ বয়ে,
সমীরণ ছাড়াই কিশলয় আর বিনা বসন্তে এনেছ ফুলের সওগাত।
পারভীন গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভের পর American Girl’s School and College  – এ শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি যৌবন কাল থেকেই কবিতা লিখতেন এবং সাহিত্য আসরে স্বরচিত কবিতা পাঠ করতেন। কিন্তু অধিকাংশ লোকের ধারণা ছিল যে, এসব কবিতা পারভীনের লেখা নয়। পত্র-পত্রিকায় যারা পারভীনের কবিতা পাঠ করতেন তাঁরাও পারভীনকে পুরুষ বলে ধারণা করতেন। পারভীন নিজেই এর প্রতিবাদ করে বলেছেন-
مرد پندارند پروین را ، چه برخی زاهل فضل
این معمّا گفته نیکوتر، که پروین مرد نیست .
জ্ঞানীদের একটি দল কি করে পারভীনকে পুরুষ ভাবে,
এ রহস্যের জট খোলাই উত্তম যে পারভীন পুরুষ নয়।
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পারভীন আপন চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তাঁদের দাম্পত্য জীবন তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে পিতার কাছে তেহরানে ফিরে আসেন এবং কবিতা রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর এক কবিতায় পারভীন লিখেছেন-
ای گل، تو ز جمعیت گلزار ، چه دیدی
جز سرزنش و بد سری خار، چه دیدی
رفتی به چمن، لیک قفس گشت نصیبت
غیر از قفس، ای مرغ گرفتار، چه دیدی .
হে ফুল তুমি ফুলের আসরে কি দেখেছ?
কাঁটার রুক্ষতা আর ভর্ৎসনা ছাড়া কি দেখেছ?
বাগানে গিয়েছিলে কিন্তু ভাগ্যে জুটেছে খাঁচা
ওহে বন্দিনী পাখি! ফুলবনে গিয়ে খাঁচা ছাড়া কি দেখেছ?
দিওয়ানে পারভীন
মানবতার কবি পারভীনের একমাত্র স্মৃতির স্মারক হিসেবে একটি ‘দিওয়ান’ কাব্য পাওয়া যায়। তাঁর এ দিওয়ান কব্যে কাছিদা, মাসনাবি, কেতয়া ও গজল কবিতা রয়েছে। পারভীনের দিওয়ান কাব্যে ৫০ হাজারের বেশি বয়েত বা দ্বিপদী শ্লোক রয়েছে। পারভীন আধুনিক কবি হওয়া সত্ত্বেও ইরানের পুরাতন কবিদের ন্যায় কবিতা রচনা করেছেন। তবে বিষয়বস্তু হিসেবে আধুনিক কবিদের অনুসরণ করেছেন। তাঁর কবিতার রচনা-পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে ঔধহ জুঢ়শধ বলেছেন- ঝযব পড়সঢ়ড়ংবফ ধপপড়ৎফরহম ঃড় ঃযব ৎঁষবং ড়ভ পষধংংরপধষ ঢ়ড়বঃৎু-ধষনবরঃ রহ ংরসঢ়ষব খধহমঁধমব ড়ভঃবহ পড়হংপরড়ঁংষু রসরঃধঃরহম ঃযব অৎঃ ড়ভ ঃযব অহপরবহঃং.’
পারভীনের কবিতায় মানব সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা রয়েছে। তাঁর কবিতায় রয়েছে নৈতিক শিক্ষার উপদেশ ও সৎকর্মের অনুপ্রেরণার সমাহার। তিনি মানুষের দুঃখ-বেদনার কথা কাব্যাকারে ব্যক্ত করেছেন। সমাজে অভাবী, নির্যাতিত, অত্যাচারিত ও বঞ্চিত মানুষের কথা চিন্তা করতেন এবং তাদের সহযোগিতার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাতেন এ জন্য তাঁকে ‘মানবতার কবি’ বলা হয়।
সমাজের ইয়াতীম-দুঃখীর অবস্থা বর্ণনা
মানব সমাজে ইয়াতীম, বঞ্চিত ও গরীবদের যে দুরাবস্থা তা অত্যন্ত দরদের সাথে তুলে ধরেছেন। আমরা তাঁর কবিতায় এমন একটি ইয়াতীম শিশুর দুঃখের কাহিনী দেখতে পাই, যে শিশু দু’মুঠো খাবারের জন্য কাতর ছিল এবং তার পিতার দারিদ্রতার কারণে ঔষধ ও চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল। অথচ সমাজের অভিজাত ও বিত্তবানরা তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেনি। পারভীন এমনি এক অবস্থা তুলে ধরে ‘ بی پدر বা পিতৃহীনতা কবিতা রচনা করেন। পারভীনের ভাষায়-
به سر خاک پدر ، دخترکی
صورت و سینه به ناخن میخست
که نه پیوند و نه مادر دارم
کاش روحم به پدر می پیوست
گریه ام بهرپدر نیست که او
مرد از رنج تهیدستی رست
زان کنم گریه که اندریم بخت
دام بر هر طرف انداخت گسست
شصت سال آفت این دریا دید
هیچ ماهیش نیفتاد به شست
پدرم مرد ز بی داروئی
اندرین کوی، سه داروگر هست
دل مسکینم از این غم بگداخت
که طبیبیش ببالین ننشست
سوی همسایه پی نان رفتم
تا مرا دید، در خانه بست
همه دیدند که افتاده ز پای
لیک روزی نگرفتندش دست
آب دادم بپدر چون نان خواست
دیشب از دیده من آتش جست
هم قبا داشت ثریا هم کفش
دل من بود که ایام شکست
این همه بخل چرا کرد، مگر
من چه می خواستم از گیتی پست ؟
سیم و زار بود ، خدائی گربود
آه از این آدمی دیو پرست.

পিতার কবরের পাশে এক ছোট্ট বালিকা
নখের আঁচড়ে বুক আর মুখ বিক্ষত করছিল।
নাই কোনো আত্মীয়, নাই আমার মা,
হায় আমার প্রাণ যদি বাবার কাছে উড়ে যেত!
আমার কান্না বাবার জন্য নয়, কারণ, তিনি তো
মরে বেঁচে গেছেন অভাবের যন্ত্রণা হতে।
কাঁদছি- কারণ, ভাগ্যের বিশাল সাগরে
যতদিন জাল ফেলেছি ছিঁড়ে গেছে বারে বারে।
তিনি (পিতা) ষাট বছর এই ভাগ্যের সাগরের দুর্বিপাক দেখেছেন,
এর (সাগরের) কোনো মাছই ধরা পড়েনি বড়শিতে।
বাবা আমার মারা গেছেন বিনা ঔষধে, বিনা চিকিৎসায়,
অথচ তিনজন চিকিৎসক আমাদের পাড়ায় ছিল বিদ্যমান,
জানেন কি? আমার হতভাগা হৃদয় কাঁদছে কেন?
অসুস্থ বাবার শিয়রে আসেনি ডাক্তার কোনো।
পড়শির কাছে গিয়েছিলাম আমি রুটির খোঁজে
আমাকে দেখে দুয়ার আটকে দিল অবজ্ঞা করে,
সবাই দেখেছে, তিনি পড়ে আছেন, অসহায় নিরুপায়,
আসেনি কেউ দু’হাত বাড়িয়ে, হয়নি তার সহায়।
রুটি চেয়েছিলেন বাবা, আমি দিয়েছিলাম পানি,
গত রাত ভর জ্বলেছে সেই দুঃখের অগ্নি।
সুরাইয়ার তো জামাও ছিল, তার পায়ে জুতাও ছিল
এই জগতে বঞ্চিত কেবল আমিই, আমার কপাল মন্দ ছিল।
এই সকল কার্পণ্য কেন করল? তবে
আমি হীন ধরণীর কাছে কি চেয়েছি?
খোদার কর্ম যদি করতোÑ স্বর্ণ-রৌপ্যের তো কমতি নাই,
হায়! যদি এই দৈত্য স্বভাবের মানুষ হতে রেহাই পেতাম।

পারভীন এ’তেসামী এমনি ভাবে সমাজের ইয়াতীম শিশুদের বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, কোনো এক ইয়াতীম শিশু তার মায়ের আঁচলে মুখ গুঁজে কেঁদে কেঁদে বলছে কেউ তার প্রতি মনোযোগ দেয় না, তাকে পাড়ার ছেলেরা খেলার সাথি করতে রাজি হয় না। তার ক্লাসের পড়া আর বাড়ির কাজ দেখে না স্কুলের শিক্ষক। কেবল তাকেই ‘রাজা’ বানায় যার গায়ে নতুন জামা থাকে। তার জামার সেলাই দেখে আত্মীয়রা ঠাট্টা করে। তার অশ্রুজল দেখার মত কেউ থাকে না। পারভীন এমনি এক শিশুর মর্মবেদনার করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন এ ভাবেÑ

دی کودکی به دامن مادر گریست زار
کز کودکان کوی، به من کس نظر نداشت
طفلی مرا ز پهلوی خود، بی گناه راند
آن تیر طعنه، زخم، کم از نیشتر نداشت
اطفال را به صحبت من، از چه میل نیست؟
کودک مگر نبود ، کسی کو پدر نداشت؟

গত রাতে এক ছেলে মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে
কেঁদে কেঁদে নালিশ করল, মা!
পাড়ার ছেলেরা আমার দিকে তাকায়নি কেউ
আমাকে করেনি তাদের খেলার সাথি।
সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাকে একটি ছেলে তাড়িয়ে দিয়েছে তার পাশ থেকে।
তার ভর্ৎসনা তীর বর্ষার চেয়েও তীক্ষè বিষাক্ত ছিল।
ছেলেরা আমার সাথে কথা বলতে চায় না কেন মা?
তা হলে কি যার বাবা বেঁেচ নাই, ছেলে হিসেবে
গণ্য হওয়ার অধিকার তার নাই?

সমাজে নারীর ভূমিকা
মানব সমাজে মাতৃত্বের দায়িত্ব পালনকারী নারীর ভূমিকা ও মর্যাদা সম্পর্কে পারভীন তাঁর কবিতার মধ্যে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি নারীদের মর্যাদা সম্পর্কে সর্র্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। তিনি ছিলেন ইরানে নারী জাগরণের অগ্রদূত। সমাজে নারীর ভূমিকা ও মর্যাদা সম্পর্কে তিনি বহু কবিতা লিখেছেন। তবে তাঁর একটি সুন্দর ও মনোজ্ঞ কবিতার নাম হলো- فرشتۀ انس বা ‘মায়ার ফেরেশতা। এ কবিতায় পারভীন নারীকে এমন এক ফেরেশতা হিসেবে কল্পনা করেছেন, যাকে জড়িয়ে আছে সংসারের সকল মায়া-মমতা। যাদের কোলে লালিত পালিত হয়েছেন ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় সকল পয়গাম্বর, মনীষী, আলেম ও মহামানব। পারিবারিক জীবনে মায়ের ভূমিকা মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি নারীকে কল্পনা করেন এক জাহাজ রূপে, যার কাপ্তান পুরুষ। সংসার সমুদ্রে জাহাজ যখন মজবুত এবং কাপ্তান বিজ্ঞ হয় তখন কোনো ঝড়-ঝাপটা ও দুর্বিপাকের ভয় থাকে না। পারভীনের ভাষায়Ñ

در آن سرای که زن نیست، انس و شفقت نیست
در آن وجود که دل مرد، مرده است روان
به هیچ مبحث و دیباچه ای، قضا ننوشت
برای مرد کمال و برای زن نقصان
اگر فلاطون و سقراط، بوده اند بزرگ
بزرگ بوده پرستار خردی ایشان
به گاهواره ی مادر، به کودکی بس خفت
سپس به مکتب حکمت، حکیم شد لقمان
وظیفه ی زن و مرد ، ای حکیم، دانی چیست؟
یکیست کشتی و آن دیگریست کشتیبان
چو ناخداست خردمند و کشتیش محکم
دگر چه باک به ز امواج و ورطه و طوفان

যে ঘরে নারী নাই, সেখানে প্রেম-মায়ার চিহ্ন নাই ‎
যে দেহে মনের মৃত্যু হয়েছে, সে তো নিসাড় নিষ্প্রাণ।
কোথাও, কোনো ভূমিকায় ভাগ্যলিপি এমন কথা লিখেনি।
পুরুষের জন্য সকল পূর্ণতা আর নারীর ভাগে ত্রুটি ও অপূর্ণতা।
প্লেটো-সক্রেটিস যদি মহান ছিলেন, শৈশবে তাঁদের
লালন পালন করেছে যে সেইতো মহান নির্দ্ধিধায়।
মায়ের দোলনায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটি শিশু
জ্ঞান মনীষার পাঠশালায় পড়ে হয়েছেন লোকমান হেকীম।
ওহে জ্ঞানী! জান কি নারী পুরুষের দায়িত্ব কী?
একজন হলো জাহাজ আর একজন কাপ্তান।
কাপ্তান যদি বিজ্ঞ হয় আর জাহাজ মজবুত
তুফান, তরঙ্গের শংকা কিসের? তুমি নির্ভয়।

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার গুরুত্ব আরোপ
পারভীনের সমসাময়িক কালে ইরানে নারীরা ছিল অবহেলিত। তাদের শিক্ষা-দীক্ষার কোনো উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজমান ছিল না। এমনকি সামাজিকভাবে তাদের কোনো স্বীকৃতি পর্যন্ত ছিল না। পারভীন সামাজিক ভাবে নারীদেরকে পুরুষের পাশাপাশি সম্মানজনক অংশগ্রহণে বিশ্বাসী ছিলেন। কেননা, সমাজের অর্ধেক জনশক্তি নারী জাতিকে উপেক্ষা করে সুশৃঙ্খল ও সুখী সমাজ তৈরি করা সম্ভব নয়। এ সত্যকে তিনি লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। পারভীন তৎকালীন নারীদের অবস্থা তুলে ধরেন এ ভাবেÑ

زن در ایران، پیش از این گویی که ایرانی نبود
پیشه اش،جز تیره روزی و پریشانی نبود
زندگی ومرگش اندر کنج عزلت می گذشت
زن چه بود آن روزها، گر ز آنکه زندانی نبود

ইতঃপূর্বে ইরানের নারী ছিল না ইরানি
অন্ধকার জীবন আর পেরেশানি ছাড়া কিছুই ছিল না তাদের।
তাদের জীবন ও মৃত্যু জনবিচ্ছিন্ন নিবাসে অতিবাহিত হতো
বন্দিশালায় না থেকেও তারা স্বাধীন ছিল না।
পারভীন নারীদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য তাঁর কবিতায় বিশেষ ভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি নারীদেরকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিতও করেছেন। এ সম্পর্কে পারভীন বলেছেনÑ

پستی نسوان ایران، جمله از بی دانشی است
مرد یا زن ، برتری و رتبت از دانستان است
به که هر دختر بداند قدر علم آموختن
تا نگوید کس، پسر هشیار و دختر کودن است

ইরানের নারীদের হীনমন্যতা, সম্পূর্ণ জ্ঞানহীনতার কারণ
পুরুষ অথবা নারীর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা জ্ঞানেরই অবদান
যদি প্রতিটি মেয়ে জ্ঞান শিক্ষার মর্যাদা জানত
তবে কেউ বলত না যে, পুরুষ বুদ্ধিমান ও নারী বোকা।

পারভীনের কবিতায় সত্যের আহ্বান
পারভীন ছিলেন একজন সত্য ও ন্যায়পরায়ণ কবি। সমাজে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর কবিতায় সত্যের আহ্বান এবং মিথ্যা পরিহারের উপদেশ বাণী রয়েছে। তিনি সত্য কথাই নির্ভয়ে তুলে ধরেছেন। কেননা, মহানবী (সা.) বলেছেন- قولوا الحق ولوکانا مرا অর্থাৎ তোমরা সত্য কথা বলে যাও, যদিও তা তিক্ত।’ পারভীনও মহানবির হাদিসের অনুসরণ করে বলেছেনÑ
حقیقت گوئی شو پروین چه ترسی
نشاید بهر باطل حق نهفتن
সত্যভাষী হও পারভীন, কিসের ভয়? মিথ্যার কারণে সত্য গোপন করা উচিত নয়।
পারভীনের ভাষায় সত্যবাদী মানুষকে সাহসী হতে হবে এবং সময় মতই কথা বলতে হবে। কেননা, কথার তরবারি কিছুতেই খাপবদ্ধ করতে নেই। পারভীনের ভাষায়Ñ
وقت سخن مترس و بگو آنچه گفتنی است
شمشیر روز معرکه زشت است در نیام

কথার সময় ভয় পেও না, যা বলার বলে যাও,
যুদ্ধের দিনে তরবারি খাপে আবদ্ধ থাকবে, এটাতো খুবই ঘৃণ্য।

পারভীনের কবিতায় নৈতিক শিক্ষা
পারভীন তাঁর কাব্য-চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করতে গিয়ে বিধবা, দরিদ্র, ইয়াতীম, শ্রমিক প্রভৃতি চরিত্র ছাড়াও বস্তুজগৎ ও জীবজগতের বিভিন্ন দৃশ্যেরও চিত্র অংকন করেছেন। কবিতার আঙ্গিকে যা তাঁর চিন্তাশক্তি ও প্রতিভার প্রখরতার পরিচয় বহন করে। এসব রূপকল্পের আদলেই তিনি মানব জীবনের জন্য অবশ্যকীয় নৈতিক ও সাহিত্যিক বিষয়াদি চয়ন করেছেন। পারভীন নেকড়ে ও কুকুরের সংলাপের মাধ্যমে যে দৃশ্যের চিত্রপট এঁেকছেন তাতে নেকড়ে মেষপালের রক্ষক কুকুরের কাছে একটি মেষ দানের ফরমায়েশ দেয়। কুকুর সে আদেশ তামিল করতে রাজি হয় না। কুকুরের ভাষ্য, আমি আমার মনিবের স্বার্থের হেফাজতকারী, রক্ষক ও জিম্মাদার। কুকুর কিছুৃতেই মনিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। পারভীনের ভাষায়-
پیام داد ساگ گله را، شب گرگی
که صبحم برّه بفرست، میهمان دارم
مرا بخشم میاور، که گرگ بدخشم است
درون تیره و دندان خون فشان دارم
جواب داد مرا باتو آشنایی نیست
که رهزنی تو و من نام پاسبان دارم

এক রাতে এক নেকড়ে ফরমায়েশ পাঠালো, মেষ পালের কুকুরের কাছে;
প্রত্যুষেই একটি ছাগ পাঠিয়ে দিবে আমার ঘরে, মেহমান আছে।
আমার রাগ জাগাবে না, জান যে, নেকড়ে ভীষণ রাগী।
কলিজাটা নিরেট কালো, রক্ত চোষা দ- নখরে দাগী
জবাব দিল (কুকুর), তোমার সাথে আমার কোনো পরিচয় নাই,
তুমিতো ডাকাত, আর আমার পরিচয় ‘রক্ষক’ তাই।

গরীব-দুঃখীদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন
পারভীন সমাজের গরীব, দুঃখী, অত্যাচারিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। মোমবাতি নিজে দগ্ধ হয়ে অপরকে যেমন আলো দান করে, তেমনি গরীব-দুঃখীর উপকারের জন্য সমাজের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পারভীনের ভাষায়Ñ
سوختن بگداختن چون شمع و بزم افروختن
تن بیاد روی جانان اندر آذر داشتن

মোমবাতির ন্যায় দগ্ধ হয়ে গলে গিয়ে সভাকে আলোকিত কর
শরীর থেকে অন্তরের কষ্ট বের করে দাও।

অর্থ-সম্পদে দাম্ভিক ও সত্যবিমুখ লোকদের প্রতি হুঁশিয়ারি
সমকালীন কবি পারভীন এ’তেসামী পার্থিব ধন-সম্পদ ও ভোগবিলাসের প্রতি বিন্দুমাত্র আকৃষ্ট ছিলেন না। এমনকি অর্থের মোহে কোনো রাজা-বাদশাহর প্রশংসায় কোনো কবিতা বা কাছিদা রচনা করেন নি। বরং তিনি সমাজের বিত্তবান ও সত্যবিমুখ লোকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, মুত্যুর পর কবরে পার্থিব ধন-সম্পদ কোনো কাজে আসবে না। সেখানে সকলেই দরিদ্র-মিসকীন। পারভীনের রচিত একটি গজল কবিতা তাঁর কবরে খোদাই করে লিখে দেওয়া হয়েছে, তাতে অর্থ-সম্পদে দাম্ভিক ও সত্যবিমুখ লোকদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে নিজের জীবনের তিক্ততার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। পারভীন বলেছেনÑ
این که خاک سیهش بالین است
اختر چرخ ادب پروین است
گرچه جز تلخی از ایام ندید
هرچه خواهی سخنش شیرین است
صاحب آن همه گفتار امروز
سائل فاتحه و یاسین است

এই কালো মৃত্তিকা আজ যার বিছানা-ঠিকানা
সাহিত্যাকাশের নক্ষত্র, সে সপ্তর্ষি।
ভাগ্যে যদিও জোটেনি সংসারের তিক্ততা ছাড়া তার
যতই দেখবে তার কথায় পাবে মধু অপার।
এত সব কথার শিল্পী যিনি, তিনি তো আজ
সূরা ফাতেহা ও ইয়াসীনের বড় কাঙ্গাল।

জ্ঞান অর্জন এবং বিপদে শক্ত থাকার উপদেশ
আদর্শ মানুষ গঠনের জন্য পারভীন প্রথমেই জ্ঞান অন্বেষণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং বিপদের সময় যেন মনোবল হারিয়ে না ফেলে সে সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে বলেছেনÑ
در دهّ ویران دل، اقلیم دانش ساختن
در ره سیل قضا ، بنیاد و بنیان داشتن

অন্তরের ধ্বংস পুরীতে, জ্ঞানের মহাদেশ তৈরি কর
অপ্রত্যাশিত বন্যার (বিপদের) পথে, ভিত্তি ও কাঠামোকে শক্ত রাখ।

অপর এক কবিতায় পারভীন বলেছেনÑ
روشنی دادن دل تاریک را با نور علم
در دل شب ، پرتو خورشید رخشان داشتن
অন্ধকার অন্তর জ্ঞানের আলো দ্বারা আলোকিত কর
অন্ধকার অন্তরকে সূর্যের কিরণ দ্বারা উজ্জ্বল রাখ।

মানুষের জীবন কর্মময় করার জন্য পিপীলিকা ও মাছির থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপদেশ
পারভীন মানুষের জীবন কর্মময় করার জন্য সামান্য পিপীলিকা ও মাছির থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপদেশ দিয়েছেন।
পিপীলিকা সর্বদা পরিশ্রম করে নিজের খাদ্য যোগাড় করে আর মাছি খাদ্যের খোঁজে মাথায় হাত রেখে সারা জীবন ঘুরে বেড়ায়। আর্থাৎ তারা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যায়, মানুষকেও অনুরূপ পরিশ্রমী ও কর্মময় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পারভীনের ভাষায়Ñ
همچو مور اندر ره همت همی پا کوفتن
چون مگس همواره دست شوق بر سر داشتن
যেমনটি পিপীলিকা প্রচেষ্টার পথে নিজের পাকে গুড়িয়ে দেয়
অনুরূপ মাছি সর্বদা বাসনার হাত মাথায় রেখে উড়ে বেড়ায়।

পার্থিব সমাজে সম্মান পেতে হলে নিজেকে ছোট ভাবার উপদেশ
সমাজে সম্মান ও উচ্চ মর্যাদা লাভের জন্য পারভীন উপদেশ প্রদান করে বলেছেন, যদি সম্মান লাভ করতে হয় তবে নিজেকে ছোট হতে হবে। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে’, কবি পারভীন একথারই প্রতিধ্বনি করে বলেছেনÑ
سربلندی خواستن در عین پستی ، ذرّه وار
آرزوی صحبت خورشید رخشان داشتن

যদি হীন মন্য চোখে সম্মান চাও তবে ছোট হও
সূর্যের সাহচর্যের আশায় বা আকাক্সক্ষায় উজ্জ্বল থাক।

এই মানবতার কবি পারভীন এ’তেসামী মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জীবন কাটিয়েছেন। তাই তিনি আমাদের জন্য উপদেশ বাণী রেখে গেছেনÑ
از تکلّف دور گشتن، ساده و خوش زیستن
দুঃখ-কষ্টকে দূরে রাখ, সাধারণ ও খুশি মনে বেঁচে থাক।

সমকালীন দার্শনিক, নৈতিক ও মানবতার কবি পারভীন এ’তেসামীর এই অমূল্য বাণী আমাদের জীবনে পাথেয় হয়ে থাকবে। ইরানের এই মহান মহিলা কবি পারভীনসহ সা’দী, রুমী, হাফিজ, খৈয়াম ও আত্তারের কাব্যদর্শন, আধ্যাত্মিক দর্শন, জীবনদর্শন, নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ যদি মানব সমাজে উপস্থাপন করা যায়, তবেই মানব সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসতে পারে। আর তাই ইরানের কবি আব্বাস ইয়ামীনী শরীফের সঙ্গে একাত্ম বলতে চাইÑ
دست در دست هم دهیم به مهر
باغ فارسی را کنیم آباد
یار و غمخوار یکدیگر باشیم
تا بمانیم در این جهان خرّم و شاد

আমরা যদি বন্ধুত্বের সাথে হাতে হাত রাখি,
আর যদি ফারসির এই বাগানকে (ফারসি সাহিত্যকে) আবাদ করি,
একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথি হই,
তবেই এই পৃথিবীতে শান্তিতে থাকতে পারব।

লেখক : অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
রাজশাহী শ্বিবিদ্যালয়।
তথ্য নির্দেশ