বুধবার, ১৩ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সহজ করতে ড. রুহানির গুরুত্বারোপ

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ৭, ২০১৬ 

news-image

 

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি সকল ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণকে সহজ করে দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, সকল ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য সহজ পথ খুলে দেয়া এবং সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যকার ব্যবধানকে হ্রাস করে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা তৈরি করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব। তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি তেহরানে অনুষ্ঠিত ‘নারী, ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশনে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে থাকা একটি দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই যেখানে নারী সেখানে তাদের ভূমিকাকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, নারীদের সামর্থ্য ও মেধা-প্রতিভার বিকাশ এবং নারী ও পুরুষের মধ্যকার সুযোগ-সুবিধার ব্যবধান কমিয়ে আনা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। তিনি বলেন, একে অবশ্যই মধ্যম অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, ভারসাম্য সৃষ্টি কেবল একটি মানসিকতার ব্যাপার নয়, বরং এ হচ্ছে এমন একটি আবেদন ও বক্তব্য যার মূল চিন্তা-চেতনার মধ্যে নিহিত রয়েছে এবং আজ এটির পুনরুজ্জীবন একটি অপরিহার্য প্রয়োজন।

ইরানী নারী সমাজ ১৯৭৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ইসলামি বিপ্লবে যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, ঐ সময় ইসলামি বিপ্লবের নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ইরানী নারী সমাজের প্রতি বিপ্লবে অংশগ্রহণের জন্য যে উদাত্ত আহ্বান জানান তাতে সাড়া দিয়ে তাঁরা এ বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তিনি বলেন, সব রকমের অসুবিধা সত্ত্বেও ইরানী নারী সমাজ সকল ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বীয় সাফল্য প্রমাণ করেছেন এবং আরো বিশেষভাবে তাঁরা গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁদের মর্যাদামণ্ডিত অবস্থান প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁরা এখন ইরানী পুরুষদের সাথে সমান হারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ও গবেষণা কেন্দ্রসমূহে অংশগ্রহণ করছেন।

প্রেসিডেন্ট রুহানি পুনরায় জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহেও ইরানী নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি সকলের প্রতি তাঁদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার প্রমাণ দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।

প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইরানী নারীদের অংশগ্রহণ এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উপনীত হয় নি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও সহযোগিতা সহকারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এর আগে প্রেসিডেন্ট রুহানি তেহরানের ইসলামি শীর্ষ সম্মেলন মিলনায়তনে ‘নারী, ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, ‘নারী, ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনের লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন পন্থায় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজের অধিকতর অংশগ্রহণের প্রত্যাশায় তাঁদের গতিশীল সাড়া প্রদানের বিষয়টিকে বাস্তব রূপায়নের লক্ষ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার তত্ত্ব, আবেদন ও ধারণা সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধান চালানো।

উল্লেখ্য, এ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট রুহানি ছাড়াও নারী ও পরিবার বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহীন্দোখ্ত্ মোলার্ভেদী, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় গ্রন্থাগারের চেয়ারম্যান সাইয়েদ রেযা সালেহী এবং আরো অনেক সরকারি কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।

এ সম্মেলনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে ভূমিকা পালনকারী হিসেবে নারীদের সামাজিক অবস্থানকে অধিকতর শক্তিশালী করার পন্থা হিসেবে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, এ সম্মেলনে যেসব প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় সেগুলোর শতকরা ৭৫ ভাগই মহিলাদের লিখিত – যা নারী সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে চিন্তাধারা ও তাত্ত্বিক চিন্তার ক্ষেত্রে নারীদের ব্যাপক ও শক্তিশালী উপস্থিতিই প্রমাণ করে। প্রবন্ধগুলো চার খণ্ডের একটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করা হয় এবং প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।

সূত্র : মেহের সংবাদ সংস্থা