বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ভ্রমণ : বৌলাই বাড়ি- এক কবির জন্মস্থান

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ৬, ২০১৬ 

আমিন আল আসাদ

বৌলাই বাড়ি। বাংলা সাহিত্যের এক খ্যাতনামা কবির জন্মস্থান। বৌলাই বাড়ি কিশোরগঞ্জের একটি সুন্দর স্থান। ঐতিহাসিক শোলাকিয়া বা সোয়ালাখিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরেই এর অবস্থান। আসলে বৌলাই বাড়িকেতো পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা নয়। স্বনামেই পরিচিত হবার কথা এ স্থান। কারণ বাংলা সাহিত্যের এক অসামান্য কবির জন্ম হয়েছিলো এখানে যিনি ফারসী ভাষারএক অসামান্য গ্রন্থের অনুবাদ করেছিলেন। যা ছিলো বাংলা ভাষায় এক বড় রকমের কাজ। সে গ্রন্থটি হচ্ছে ইরানের বিখ্যাত কবি এবং জাতীয় কবি মহাকবি ফেরদৌসী রচিত অমর মহাকাব্য শাহানামা। এই শাহনামা মহাকাব্যের মতো মহাকবি ফেরদৌসীও যেমন বিখ্যাত তেমনি বাংলা ভাষায় এর পূর্ণাঙ্গ অনুবাদক কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফও তাঁর সফল অনুবাদ কর্মের জন্যে বিখ্যাত। আসলে যত বড় যার কাজ তত বড় তাঁর সুনাম। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে আমরা আমাদের বিখ্যাত ব্যক্তি ও সম্মানী মানুষদের কোন খোজখবরই রাখিনা। বহুভাষাবিদ ও পন্ডিত ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেছিলেন যে দেশে গুণের কদর নেই সে দেশে গুণী জন্মাতে পারেনা। যাগ্গে সেসব কথা। কি বলতে এসেছি আর কি বলতে শুরু করেছি। বলছিলাম কবিতীর্থ বৌলাই বাড়ির কথা। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শাহনামার অনুবাদক কবি মনিরউদ্দিন ইউসুফ। আমরা গিয়েছিলাম একবার সে গ্রামে। কবির ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবি পরিবার ও কিশোরগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ-এর যৌথ উদ্যেগে জমজমাটভাবে উৎযাপিত হয়েছিলো কবির জন্মোৎসব। আমরা ঢাকা থেকে ৪০ জন কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, শিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, সম্পাদক, লেখক, সাহিত্য প্রেমিক, সাহিত্য সেবী, জ্ঞানী-গুণী, আলেম, আইনজীবি সহ আটটি মাইক্রো ও ৩ টি প্রাইভেট কার যোগে যেনো মিছিল করতে করতে যোগ দিয়েছিলাম সে জন্মোৎসবে। সে আনন্দময় দিনটির কথা এখনো আমার মনে আছে। জলজল করছে চোখের সামনে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি বহর যখন যাচ্ছিলো, পথচারিরা ভাবছিলো আমরা বোধহয় বনভোজনে যাচ্ছি অথবা আমরা কোন বিয়ের বরযাত্রি। আসলে আমরা এর চেয়েও আনন্দঘন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের বৌলাইবাড়ি যাওয়া আসার এ ব্যাবস্থাও করেছিলো কবি পরিবার। আমাদের সহযাত্রি ছিলেন কবি বেলাল চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী, ইতিহাস গবেষক ও নৃতত্ত্ববিদ এবং কিশোরগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, কবি আবদুল হাই শিকদার, অধ্যাপক সিরাজুল হক, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত নিউজলেটারের সম্পাদক ড. জহিরউদ্দিন মাহমুদ, অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, জনাব ফজলে রাব্বী, হুজ্জাতুল ইসলাম আবদুল কুদ্দুস বাদশা, কবি শামিমা চৌধুরী, গবেষক আবদুল হাই, কবি ও আবৃত্তিকার রহিমা আক্তার কল্পনা, লেখক গবেষক আবুল কালাম মো ইলিয়াস প্রমূখ। ঢাকা থেকে ও কিশোরগঞ্জ থেকে আরো যোগ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আবদুল লাতিফ এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক খান রতন, নাসিরউদ্দিন ফারুকী, শামিম জামানভি, সাবির আলী সাবির, কবি মুহিবুর রহিম। আরো ছিলেন উর্দু কবি জালাল আজিমাবাদী, শিয়াবউদ্দিন আহমদ, কবি জাহিদুল হক, শোয়েব সিদ্দিকী, উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস, আয়ুব হোসেন, শামিম সিদ্দিকী, আনোয়ার জেবুন্নাহার, এহতেশাম আহমেদ পারভেজ, কবি ইকবাল আজীজ, কবি জাহাঙ্গির ফিরোজ, মাহিউল বিদাদ চৌধুরী, শিহাব সিদ্কিী প্রমূখ। ২০০৭ সালের ২২ র্ফেরুয়ারী খুব ভোরে বাসা থেকে বেড়িয়ে আমি চলে আসি শেকড় সন্ধানী কবি, নজরুল গবেষক ও ইতিহাস চিন্তক কবি আবদুল হাই শিকদার ভাইয়ের বাসায়। সেখান থেকে উনার গাড়িতে চড়ে চলে আসি ধানমন্ডির যে স্থান থেকে আমরা যাত্রা শুরু করবো সেখানে। সকাল সাতটার ভেতরে আমরা জড়ো হলাম এবং আটটায় যাত্রা শুরু করলাম বিসমিল্লাহ বলে কবির জন্মভুমি সেই ঐতিহাসিক বোৗলাই বাড়ির উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে এই যাত্রা বা অভিযানের আগাগোড়া তদারকি করলেন কবিপুত্র সাঈদ আহমেদ আনিস।
আমরা ছুটে চলেছি কিাশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে, সকালের সুশীতল বাতাসের সিহরণ অনুভব করে করে। আমি যে মাইক্রোটিতে ছিলাম সেখানে আমার সাথে ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল হক, ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ, ড. কে এম স্ইাফুল ইসলাম খান, গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম আবদুল কুদ্দুস বাদশা, লেখক আবুল কালাম মুহাম্মদ ইলিয়াস, গবেষক আবদুল হাই এবং জনৈক এ্যাডভোকেট।
ঢাকার যানজট সেদিন আমাদের বাধা হয়ে দাড়াঁয়নি। সহজেই আমরা প্রবেশ করলাম কিশোরগঞ্জের প্রবেশ দ্বারে। পথিমধ্যে অধ্যাপক সিরাজুল হক ও ড, কে এম সাইফুল ইসলামের খোশগল্প শুনতে শুনতে নানাবিধ টক ঝাল, স্বাদ-বিস্বাদ অনুভর করছিলাম। কিশোর গঞ্জের লোকজন, প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে শহর ও গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে আমরা উপস্থিত হলাম বৌলাই বাড়ি। তখন বাজে সকাল সারে এগারোটা।
বৌলাই বাড়ি ঐতিহাসিকভাবে এক বনেদী পরিবারের বাড়ি। এর ঠাট-মান, শান-শওকত এখনো এর প্রাচীন ইমারত ও শানবাধানো দিঘিতে জড়িয়ে আছে। বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্মিক নিদর্শণ। আর কবি মনিরউদ্দীন ইঊসুফের কারণে এটি হয়েছে আরো মহিমান্বিত ও উজ্জল।
আমরা পৌছতেই সকালের নাস্তা দেয়া হলো। পিঠা পায়েস, ফল-ফলাদি সহ নানা আয়োজন। এরপর শুরু হলো প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন কিশোরগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইতিহাস ও প্রাচীনকীর্তি গবেষক, নৃতত্ত্ববিদ আশরাফুল ইসলাম ও কবি, আবৃত্তিকার রহিমা আক্তার কল্পণা। পবিত্র কালামে পাক থেকে তেলাওযাতের মাধ্যমে মুল অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে ব্যান্ড পার্টি যোগে ব্যান্ডের তালে তালে কিশোরগঞ্জের বৌলাই বাড়ির ঐতিহ্যবাহি লাঠিখেলা প্রদর্শিত হলো। যেটি ছিলো অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষন।
আরেকটি প্রধান আকর্ষন ছিলো কিশোরগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সাহেবের ৮৯ বছর বয়স্কা, অশিথিপর বৃদ্ধা মাতার দীর্ঘ ২৭ মিনিটের বক্তৃতা। অনর্গল তিনি ফার্সী, উর্দু ও নাগরী বলে যাচ্ছিলেন। এবং বৌলাই বাড়ীর কৃতি সন্তান কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ-এর পূর্বপুরুষ ও উত্তর পুরুষদের নাম ধরে ধরে বৌলাই বাড়ির ইতিহাস তিনি বর্ণনা করছিলেন যে সে এক অসাধারণ ব্যাপার। কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবিরা বৃদ্ধার ফার্সী, উর্দু, নাগরী কবিতা ও কথাবার্তা তন্ময় হয়ে উপভোগ করছিলেন যেনো বৌলাই বাড়ির প্রাচীন কীর্তির মতো এক জীবন্ত কিংবদন্তির সন্ধান পেয়ে গেছে সবাই॥
উক্ত বৃদ্ধার কন্ঠে ফার্সী বয়ানই প্রমাণ করে আমাদের ঐতিহ্যের সাথে ইরানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সম্পর্ক কতটা নিবিঢ়। বিষয়টি সেদিন রেডিও তেহরানেও প্রচারিত হয়েছিলো।
ঐ অনুষ্ঠানের আরেকটি আকর্ষণ ছিলো কবি বেলাল চৌধুরীকে মনিরউদ্দীন পদক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছিলো। উম্মুক্তভাবে চলছিলো আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, গান ও স্মৃতিচারণ। দিনটি শুক্রবার হওয়ায় জুমার নামাজ ও মধ্যান্যভোজের বিরতি দেয়া হলো। আমরা বৌলাইবাড়ির জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করলাম। নামাজের পর জহির ভাই, আমি, অধ্যাপক সিরাজুল হক, ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান ও হুজ্জাতুল ইসলাম আবদুল কুদ্দুস বাদশা ভাই কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ-এর পূর্বপুুরুষ জনৈক মহান ব্যাক্তির কবরের পাশে ফার্সী ভাষায় লেখা প্রাচীন শিলালিপি দেখছিলাম। কুদ্দুস বাদশা ভাই এবং কে এম সাইফুল ইসলাম ভাই সেই শিলালিপিটির পাঠোদ্ধার করছিলেন এবং আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু একটা অংশ অস্পষ্ট থাকায় বোঝাঁ যাচ্ছিলো না। ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান সেটি মোটামুটি ধরতে পেরেছেন এবং এর ভাবার্থ আমাদের কাছে পেশ করছিলেন। আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলো যা ছিলো আরো জমজমাট আয়োজনের। যা ছিলো অধিক উপাদেয়্। সেটি ছিলো বনেদী পরিবারের বনেদী মধ্যাহ্নভোজ। এর কৃতিত্ত্ব পুরোটাই কবি পরিবারের। গরু বা মুরগীর গোস্তের চেয়ে আমার কাছে আকর্ষনীয় মনে হয়েছিলো রুই মাছের বড় বড় খন্ডগুলো। আসলে ভোজনের চেয়ে পরিবেশষনের সৌন্দর্যটাই উপভোগ্য ছিলো বেশী। সত্যিই তা ছিলো রাজকীয় ব্যাপার। বৌলাই জমিদার বাড়ির ঠাট মান যেনো আবারো আমরা অনুভব করেছিলাম।
আসলে কবি মনির উদ্দীন ইউসুফ-এর পূর্বপুরুষরা ছিলেন মোঘল ও পাঠান উভয় ধারার সাথে সংযুক্ত। ইশা খান, সোনারগাও কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির গবেষণার ভেতর দিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের পরিচয় বেড়িয়ে আসে। আর সেকারণেই ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যের সাথে ছিলো তাদের পারিবারিক যোগাযোগ।
মধ্যাণ্য ভোজের পর দ্বিতীয়ার্ধের অনুষ্ঠান শুরু হলো। শুরু হলো আলোচনা, পর্যালোচনা, স্মৃতিচারণ, কবির কবিতা থেকে পাঠ, কবিকে নিবেদিত স্বরচিত কবিতা পাঠ। কখন যে দুপুর-বিকেল গড়িয়ে সন্ধা ছুই ছুই করছিলো টের পাইনি আমরা। পশ্চিমাকাশ তখন ডুবন্ত সূর্যেও লাল আভায় রক্তিম হয়ে ওঠেছিলো।
অনুষ্ঠানটা আরো উপভোগ্য হয়েছিলো এ কারণে যে, অনুষ্ঠানটি হয়েছিলো বৌলাই রাজবাড়ির সামনের খোলা প্র্রাঙ্গণে। বৌলাই বাড়িটি একটি প্রাচীন কীর্তি। যদিও তা রাজার আবাস ছিলোনা। কিন্তু প্রাচীন ইমারতকে আমাদের দেশে বিশেষ করে জমিদার বাড়িকে রাজবাড়িই বলা হয়ে থাকে।
চা বিরতির পর আবার অনুষ্ঠান চললো। শুরু হলো পালা পরিবেশন ও বৃন্দ আবৃত্তি। ্এর পর মাগবেবের নামাজের বিরতি। মাগরেবের নামাজের পর অনুষ্ঠান আরো অনেকদূর গড়িয়েছিলো। অনুষ্ঠান শেষে আমরা ক’জন অর্থাৎ আমি, জহির ভাই, কুদ্দুস ভাই, সাইফুল ভাই, গবেষক আবদুল হাই ভাই, আবুল কালাম মোহাম্মদ ইলিয়াস অধ্যাপক সিরাজুল হক সাহেব আমাদের নির্দিষ্ট মাইক্রোতে এসে ঢাকার উদ্দেশ্যে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের যেতে হবে অনেকদূর। আমাদের সাথে এবার অতিরিক্তিভাবে যুক্ত হয়েছেন কবি বন্ধু মুহিবুর রহিম। তিনি অবশ্য ব্শ্বিরোডের মাথায় বি-বাড়িয়ার পখে নেমে গেছেন। তিনি বি-বাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক।
আমরা কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে জ্যাম আমাদের বাধা হয়ে না দাড়ালেও ঢাকার কাচপুরে এসে যে ভয়াবঞ ও দূর্বিসহ জ্যামের মূখে পড়েছিলাম তা আমার জীবনের অনেকগুলো দূঃসহ অভিজ্ঞতার অন্যতম ছিলো। কিশোরগঞ্জ থেকে কাঁচপুওে আসতে সময় লাগলো তিন ঘন্টা আর কাঁচপুর থেকে শাহবাগ আসতে সময় লেগেছিলো সাড়ে চার ঘন্টা একেবারে দূর্বিসহ অবস্থা। কিন্তুু আমাদের কাছে তার কিছুটা কষ্ট কমিয়ে দিয়েছিলো অধ্যাপক সিরাজুল হক সাহেবের নানা কৌতুকময় অভিজ্ঞতার আলাপচারিতা শুনতে শুনতে। তার পরও বলবো ‘কবিতীর্থ বৌলাই বাড়িতে সেদিনের সেই উৎসব আর এ উপলক্ষে মজাদার ভ্রমণটি ভ’লবার নয়।কারণ সেটি ছিলো আমার জীবনে প্রথম কোন কবির জন্মভুমি দর্শন। প্রার্থনা শুধু এই যে আল্লাহপাক কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফকে জান্নাতে রাখুন শান্তিতে কেবল একারণে যে তিনি ছিলেন আমাদের জাতীয় সাহিত্যের এক বড় খাদেম।