পুনরায় আক্রান্ত হলে ইরানের প্রতিক্রিয়া হবে আরও মারাত্মক-আশ্চর্যজনক
পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ২৪, ২০২৫

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, দেশটির কাছে এখন পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল পুনরায় কোনও আগ্রাসন চালালে জবাবে নতুন এসব ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে।
মেহর নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার তেহরানে বসবাসকারী বিদেশি সামরিক অ্যাটাশেদের একটি দল ২২ আগস্ট জাতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প দিবস উপলক্ষে প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনীর লজিস্টিকস মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদের সাথে দেখা করেছেন।
বৈঠকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিরজাদে ইরানের উপর ১২ দিনের ইসরায়েলি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের শহীদদের, বিশেষ করে কমান্ডার, বিজ্ঞানী, নারী, পুরুষ এবং শিশুদের স্মৃতি স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকারি ক্যালেন্ডারে ২২ আগস্টকে জাতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প দিবস হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। দেশীয়ভাবে এই শিল্পটি গড়ে উঠেছে যা আজ স্বয়ংসম্পূর্ণতা, অধ্যবসায় এবং ইসলামী-ইরানী শিক্ষার উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইসলামী বিপ্লবের নেতার বিজ্ঞ নির্দেশনায় জাতীয় নিরাপত্তা ও ক্ষমতার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছে শিল্পটি।
প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনীর লজিস্টিকস মন্ত্রী ইরানের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া ১২ দিনের যুদ্ধের মূল বিষয়, দিক এবং লুকানো ও স্পষ্ট উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের শুরু থেকেই ইহুদিবাদী সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাপক রাজনৈতিক, গোয়েন্দা, কর্মক্ষম এবং সামরিক সহায়তা উপভোগ করেছে এবং শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই আক্রমণাত্মক অভিযানে অংশগ্রহণ করে।
‘‘আমরা সম্পূর্ণরূপে অবগত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও কিছু পশ্চিমা এবং আঞ্চলিক দেশ ইহুদিবাদী সরকারের হস্তক্ষেপ এবং প্রতিরক্ষা অভিযানে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। অন্যদিকে, আমরা অবৈধ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে কেবল আমাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার উপর নির্ভর করছিলাম’’ বলেন তিনি।
নাসিরজাদে আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে, যখন আমরা আমেরিকান পক্ষের সাথে আলোচনা করছিলাম এবং এই আলোচনার ষষ্ঠ দফা মাস্কাটে অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত হয়েছিলাম, ঠিক সেই সময়েই ইহুদিবাদী সরকার মার্কিন সহায়তায় ১৩ জুন ভোরে সামরিক ও সন্ত্রাসী অভিযানের সমন্বয়ে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে। আমাদের বেশ কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানীকে শহীদ করা হয়েছে, যারা তাদের পরিবারের সাথে বিশ্রামে ছিলেন। সিরিয়া এবং ইরাকের নিয়ন্ত্রণকে কাজে লাগিয়ে ইসরাইলি আক্রমণের প্রথম ধাপটি দূরবর্তীভাবে পরিচালিত হয়েছিল। ইরানের অভ্যন্তরে ইহুদিবাদী সরকারের এজেন্টদেরও এই সন্ত্রাসী অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ইরানের প্রতিশোধমূলক অভিযান ধীরে ধীরে আরও ব্যাপক এবং সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালিত হয়। যুদ্ধের শুরুতে আমাদের নিক্ষেপিত প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ইহুদিবাদী সরকার এবং তার সমর্থকদের প্রতিরক্ষা স্তর ভেদ করলেও যুদ্ধের শেষ ঘন্টাগুলিতে এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, যা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তার কিছু ক্ষেপণাস্ত্র যেমন ফাত্তাহ, সেজ্জিল এবং খেইবার শেকান ব্যবহার করেছে, যা ধীরে ধীরে ইরানের পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রের সমীকরণ পাল্টে দেয়। ‘‘আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য প্রায় ১৫০টি লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার সবকটিতেই আঘাত করা হয়েছে। কাপুরুষোচিত ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা সামরিক কমান্ডার, বিজ্ঞানী, নিরীহ নারী ও শিশু, বেসামরিক অবকাঠামো ও শিল্প কেন্দ্র, আবাসিক বাড়ি, চিকিৎসা কেন্দ্র, ত্রাণ বাহিনী, কারাগার এবং জাতীয় গণমাধ্যমকে লক্ষ্যবস্তু করে। বিপরীতে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে দখলকৃত অঞ্চলে সামরিক কেন্দ্রগুলির মধ্যে থেকে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তু বেছে নেয় – বিশেষ করে ইসরাইলের বিমান ঘাঁটি, গোয়েন্দা কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র যার মধ্যে রয়েছে ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট, বি’র শেভায় কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, মোসাদ সদর দপ্তর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।’’
ইরানের প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনীর এই মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর এই অর্জন বাস্তবায়িত হয়েছে যখন এই সংঘাতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিপক্ষ কেবল ইহুদিবাদী সরকারই ছিল না বরং দেশটির সমর্থকরা, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ ইরানের বিরুদ্ধে যোগ দেয়। অন্যদিকে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞার পরেও পুরোপুরি দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতার উপর নির্ভর করেছে।
‘‘প্রকৃতপক্ষে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এই অঞ্চলে সংকট ও যুদ্ধের বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে ইহুদিবাদী সরকার এবং তার সমর্থক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলার উপর আমাদের কোনও আস্থা নেই। যদি অন্য পক্ষ তার দুঃসাহসিকতা এবং শত্রুতা অব্যাহত রাখে, তাহলে শত্রুর যে দুর্বলতা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান রয়েছে তার ভিত্তিতে এবার ইরানের প্রতিক্রিয়া হবে আরও মারাত্মক, আশ্চর্যজনক, বেদনাদায়ক এবং হিসাবের বাইরে।’’
তিনি আরও বলেন, ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্প এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি একটি নির্ণায়ক ভূমিকায় রয়েছে এবং কার্যকর প্রতিরোধ কৌশলের কাঠামোর মধ্যে থেকে পরিচালিত হয়। প্রতিরক্ষা শিল্প শত্রুদের লোভ ও হুমকির বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। একই সাথে এটি এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বার্তাবাহক। সূত্র: মেহর নিউজ