রবিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

নেতা: শত্রু সফলতার একমাত্র পথ হিসেবে ইরানিদের মানসিকতা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫ 

news-image

তেহরান – ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি বৃহস্পতিবার তেহরানে বিপুল সংখ্যক মারসিয়া পাঠক ও নওহা পাঠকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে।

আয়াতুল্লাহ খামেনি হযরত সিদ্দিকা তাহেরা (সা.)-এর জন্মবার্ষিকীতে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর গুণাবলি ও মর্যাদা মানবীয় বোধগম্যতার ঊর্ধ্বে। তিনি আরও বলেন, জীবনের সব ক্ষেত্রে—ইবাদত-বন্দেগি, ন্যায়বিচারের সাধনা, তাবলিগ ও ব্যাখ্যার জিহাদ (জিহাদে তাবইন), উত্তম জীবনসঙ্গী হওয়া, সন্তান প্রতিপালনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে—ফাতেমি আদর্শ অনুসরণ করার জন্য সবাইকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

এরপর আয়াতুল্লাহ খামেনি জাতীয় প্রতিরোধের সংজ্ঞা দিয়ে বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর আরোপিত নানা চাপের মুখে দৃঢ়তা ও অবিচলতা বজায় রাখাই জাতীয় প্রতিরোধ। তিনি বলেন, কখনো এসব চাপ সামরিক রূপে আসে, আবার কখনো তা অর্থনৈতিক, গণমাধ্যমভিত্তিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক রূপ ধারণ করে।

তিনি পশ্চিমা গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক-সামরিক কর্মকর্তাদের হৈচৈ ও উত্তেজনা সৃষ্টিকে শত্রুর প্রচারণামূলক চাপের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব চাপের লক্ষ্য কখনো ভূখণ্ড সম্প্রসারণ—যেমনটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় করছে। আবার কখনো লক্ষ্য হয় ভূগর্ভস্থ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। কিছু ক্ষেত্রে জীবনধারা পরিবর্তন করাই উদ্দেশ্য, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো পরিচয় পরিবর্তন, যা তিনি আধিপত্যবাদী চাপের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিশ্বশক্তিগুলো ইরানি জাতির ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় পরিবর্তনের চেষ্টা করে আসছে। তিনি বলেন, ইসলামী বিপ্লব এসব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ইরানি জনগণ তাদের দৃঢ়তা ও আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতির মাধ্যমে শত্রুদের ব্যাপক চাপ প্রতিহত করে আসছে।

নেতা বলেন, ইরান থেকে শুরু করে আঞ্চলিক দেশগুলো এমনকি এর বাইরেও প্রতিরোধের ধারণা ও ভাষার বিস্তার একটি অস্বীকারযোগ্য বাস্তবতা। তিনি বলেন, শত্রু ইরান ও তার জনগণের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেগুলো অন্য কোনো জাতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে পারত।

শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ ও প্রতিরোধের ধারণা শক্তিশালী করতে জয়নাবি অনুপ্রেরণায় পরিচালিত মারসিয়ার গভীর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষের বাইরেও আজ দেশটি একটি বৃহৎ প্রচারণা ও গণমাধ্যম যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, যা শত্রুপক্ষের বিস্তৃত জোট পরিচালনা করছে। তিনি যোগ করেন, শত্রু বুঝে গেছে যে এই ঐশী ও আধ্যাত্মিক ভূমিকে সামরিক চাপের মাধ্যমে দমন বা দখল করা সম্ভব নয়।

নেতা আরও বলেন, কেউ কেউ বারবার নতুন করে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনার কথা তোলে এবং কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের আলোচনা উসকে দেয়, যাতে জনগণ উদ্বিগ্ন ও অস্থির থাকে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ইনশাআল্লাহ তারা সফল হবে না।

আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, শত্রুর কৌশলগত ও মূল লক্ষ্য হলো ইসলামী বিপ্লবের প্রতীক, লক্ষ্য ও নীতিগুলো মুছে ফেলা এবং ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর উত্তরাধিকারকে ধীরে ধীরে বিস্মৃত করা। তিনি বলেন, এই বিস্তৃত ও সক্রিয় ফ্রন্টের কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তার চারপাশে কিছু ইউরোপীয় দেশ, আর প্রান্তে রয়েছে ইউরোপে অবস্থানরত ভাড়াটে, বিশ্বাসঘাতক ও শেকড়হীন কিছু ব্যক্তি, যারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কাজ করছে। তিনি শত্রুর লক্ষ্য ও তাদের কার্যকরী কাঠামো বোঝার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, যেমনভাবে সামরিক ময়দানে নিজস্ব বিন্যাস গড়ে তুলতে হয়, তেমনি এই গণমাধ্যম ও প্রচারণা যুদ্ধেও শত্রুর কাঠামো ও লক্ষ্য অনুযায়ী দেশের নিজস্ব বিন্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং শত্রু যে বিষয়গুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে—ইসলামী, শিয়া ও বিপ্লবী শিক্ষার ওপর—সেগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, পশ্চিমা প্রচারণা ও গণমাধ্যম যুদ্ধের মুখে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হলেও সম্পূর্ণভাবে সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মারসিয়া পাঠকদের উচিত ধর্মীয় সমাবেশগুলোকে (হেইয়াত) বিপ্লবী মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্যের কেন্দ্রে পরিণত করা। প্রতিরোধের ভাষার বিকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে আজ মারসিয়া ও এসব সমাবেশ এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করছে।

শেষে নেতা মারসিয়া পাঠকদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ দেন। এর মধ্যে ছিল—সব ইমাম (আ.)-এর জীবনভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা ও সংগ্রামের শিক্ষা ব্যাখ্যা করা, শত্রুর দুর্বল দিকগুলোতে আঘাত হানা এবং তারা যে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা, পাশাপাশি ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে এবং শত্রুর মোকাবিলায় কুরআনিক ধারণাগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা।

তথ্যসূত্র: তেহরান টাইমস