সোমবার, ১লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের স্বনির্ভরতার চালিকা শক্তি

পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫ 

news-image

ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া তথা “স্ন্যাপব্যাক” সক্রিয় করার তিন ইউরোপীয় দেশের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এক্স তথা সাবেক টুইটার নেটওয়ার্কের ইরানি ব্যবহারকারীরা জোর দিয়ে বলেছেন যে অতীতের মতো এই নিষেধাজ্ঞাগুলোও ইরানকে অগ্রগতি এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে পরিচালিত করবে।

ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা বা জেসিপিওএ-তে স্বাক্ষর-করা তিন ইউরোপীয় দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি বৃহস্পতিবার ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি “বিবৃতি” পাঠিয়েছে।

JCPOA ইস্যুতে ইউরোপীয় জোটের ভূমিকার মূল্যায়ন করলে দেখা যায় যে, এ জোট ইরানের অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কেবল তার আইনি প্রতিশ্রুতি পূরণেই ব্যর্থ হয়নি, একইসঙ্গে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো পুরোপুরি মেনে চলার মাধ্যমে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলোকে এড়িয়ে চলার বা অকার্যকর করার জন্য কথিত প্রক্রিয়া তথা INSTEX-কেও একটি অকার্যকর এবং প্রদর্শনীমূলক হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

পার্স টুডে-র রিপোর্টে জানা গেছে, “এক্স” নেটওয়ার্কের ইরানি ব্যবহারকারীরা জোর দিয়ে বলেছেন যে ইরানের বিরুদ্ধে ট্রোইকার পদক্ষেপগুলি কেবল জাতীয় ইচ্ছার উপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে না, বরং অতীতের মতো ইরানের অগ্রগতি এবং বৃহত্তর স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য একটি ইঞ্জিন হিসেবেও কাজ করবে।

এই প্রসঙ্গে, “ইরানিয়ান গার্ল” নামের একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন: “ইউরোপ কেবল মৌখিক কথার ক্ষেত্রে JCPOA-তে রয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপ অক্ষরে অক্ষরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে এবং এর দুই বছর আগেও কোনও স্ন্যাপব্যাক বা অন্য কোনও আইনি ভিত্তি ছাড়াই অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছিল ও তা প্রত্যাহার করেনি । ইউরোপের আইনি অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি ছাগলের নাকের পানির চেয়েও মূল্যহীন।”

আরেকজন এক্স ব্যবহারকারী জাভেদ জাঙ্গানেহ লিখেছেন: “বছরের পর বছর ধরে, ইরানের শত্রুরা নিষেধাজ্ঞা, হুমকি এবং চাপের মাধ্যমে ইরানিদের নতজানু করার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু তারা জানে না যে এই জাতি প্রতিবারই আরও বেশি বিজয়ী হয়ে কষ্ট থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই জয়ের রহস্য ঐক্য ও সংহতি ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন আমরা ইরানের জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে দাঁড়াব তখন কোনও শক্তিই আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না।”

জাহরা জারে নামের এক ইরানি ইউজার বলেছেন: “নিষেধাজ্ঞা এবং আত্মসমর্পণ হল দুটি পথ যা পশ্চিমারা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়, কিন্তু ইরানকে অবশ্যই তৃতীয় একটি পথ বেছে নিতে হয়েছে, এবং তা হল বাস্তব স্বাধীনতা ও অগ্রগতি।”

“রেহানা” নামের একজন ব্যবহারকারী উল্লেখ করেছেন যে স্ন্যাপব্যাক মানে অতীতের একই নিষেধাজ্ঞাগুলোতে ফিরে যাওয়া। তিনি লিখেছেন: “কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ছায়ায় আমরা কি পারমাণবিক বিজ্ঞান, ন্যানো প্রযুক্তি, জটিল ওষুধ এবং নির্ভুলভালে আঘাত-হানতে-সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের প্রযুক্তি অর্জন করতে পারিনি? ইরানের জন্য নিষেধাজ্ঞার অর্থ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের একটি বাধ্যতামূলক বিশ্ববিদ্যালয়।”

“মোতাহরেহ ফারখারি” ইরানের পারমাণবিক জ্ঞান ও সক্ষমতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে লিখেছেন: “ইরানের শত্রুরা আমাদের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে, কিন্তু ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শিল্প টিকে আছে। এর অর্থ হল ইরানি জাতির শক্তি হত্যা ও নিষেধাজ্ঞার চেয়েও উচ্চতর।”

মোহাম্মদ সাদেগ শাহবাজি তার এ বিশ্বাস তুলে ধরে লিখেছেন: “ইরানিরা এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে যে কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের দিকে তাকানোর পরিবর্তে তাদেরকে ভেতর থেকেই শক্তিশালী হয়ে ওঠা উচিত এবং নিষেধাজ্ঞাগুলোকে অকার্যকর করার ও দুর্বলতাগুলি দূর করার চেষ্টা করা উচিত।”

X-এর আরেক ইরানি ব্যবহারকারী ফাতেমেহ রওশানদেল বলেছেন: “পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ও হুমকি পর-নির্ভরতা ভেঙে ক্ষমতা ও স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ। একটি শক্তিশালী ইরান মানে নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং স্থানীয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি; আর এমন জাতির বিরুদ্ধে যারাই দাঁড়াবে তারাই হেরে যাবে।”

নাদের নামদার” লিখেছেন যে পশ্চিমা দেশগুলোর শক্তির ভিত্তি হল নিষেধাজ্ঞা, তাই তারা ক্রমাগত ইরানের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলে না।

“মোস্তফা” ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক আরোপিত ১২ দিনের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলেছেন: “১২ দিনের যুদ্ধ দেখিয়েছে যে ইরান এই অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় সামরিক শক্তি। পশ্চিমাদের এইসব নিষেধাজ্ঞার অধীনেই ইরানি তরুণরা সামরিক সাফল্য অর্জন করেছে।”

পার্স টুডে/