মঙ্গলবার, ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

নতুন দিগন্তে ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক: বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২৮, ২০২৫ 

news-image

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে।

পার্সটুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেহরানে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ মুদাসসির টিপু গত ১৯ অক্টোবর জানান, পাকিস্তান সরকার দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও ব্যবসায়ী সমাজের উদ্বেগসমূহ পর্যালোচনা শেষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে যৌথ পণ্যবিনিময় (বার্টার) বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি নতুন কার্যকর নির্দেশনা জারি করেছে।

টিপু এক্স (পূর্বের টুইটার)-এর নিজের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে লেখেন, “পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে পণ্যবিনিময় বাণিজ্য উৎসাহিত করার জন্য নতুন একটি কার্যনির্বাহী নির্দেশনা  (এসআরও) জারি করেছে।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন- এই নির্দেশনা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বাণিজ্যের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে এবং এর ভিত্তি আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে।

পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় ২ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত খসড়ার অনুমোদন দেয়, যা ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পণ্যবিনিময় চুক্তি পুনর্বিবেচনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে। কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ-এর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানায়।

ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে, ২৪ অক্টোবর ইসলামাবাদে ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফারজানে সাদেক এবং পাকিস্তানের ফেডারেল সমুদ্র-বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ জুনায়েদ আনোয়ার চৌধুরী এক বৈঠকে নৌপরিবহনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

দুই দেশ বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও লজিস্টিক রুটের মানোন্নয়নে একমত হন এবং সরাসরি সমুদ্রপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের লাইন চালুর প্রস্তাব দেন, যা বাণিজ্য, পর্যটন ও আঞ্চলিক যোগাযোগকে প্রাণবন্ত করতে পারে।

উভয় মন্ত্রী আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিকে বিনিয়োগ আকর্ষণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বন্দর ও নৌপরিবহন উন্নয়ন, সমন্বিত নেটওয়ার্ক নির্মাণ এবং সমুদ্র, স্থল ও রেলপথে দেশ দুটিকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করার বিষয়ে নানা উদ্যোগ পর্যালোচনা করেন।

পাকিস্তানের নৌমন্ত্রী বলেন, “ইরান–পাকিস্তান সরাসরি জাহাজ চলাচল লাইন কেবল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যই বাড়াবে না, বরং এটি ইরান ও ইরাকগামী জিয়ারতকারীদের জন্যও সাশ্রয়ী ও কার্যকর ভ্রমণ-বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।”

ইরানের সড়কমন্ত্রী এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দুই দেশের বন্দরগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদ, যা আঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হতে পারে। তিনি যোগ করেন, উন্নত সমুদ্র ও পরিবহন যোগাযোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

ইরান-পাকিস্তান বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধি উভয় দেশের জন্য ব্যাপক সুফল বয়ে আনতে পারে। সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক মিলসম্পন্ন এই দুই প্রতিবেশী যথাযথভাবে সক্ষমতাগুলো কাজে লাগাতে পারলে টেকসই আঞ্চলিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ইরান তার বিশাল জ্বালানি-সম্পদ ও কৌশলগত অবস্থান ব্যবহার করে পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদা নির্ভরযোগ্যভাবে পূরণ করতে পারে। অপরদিকে, পাকিস্তানের তরুণ জনগোষ্ঠী ও বৃহৎ ভোক্তা বাজার ইরানি পণ্যের জন্য সম্ভাবনাময় বাজার তৈরি করে। রেল ও সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে সহজতর করবে এবং লেনদেন-ব্যয় কমাবে।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের পারস্পরিক বোঝাপড়া গভীর করা সম্ভব। শিক্ষার্থী বিনিময়, যৌথ প্রদর্শনী আয়োজন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একাডেমিক সহযোগিতা সেই পথে সহায়ক হতে পারে।

একইভাবে, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে নিরাপত্তা ও সীমান্ত সহযোগিতা পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার মতো সাধারণ হুমকি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা তথ্য বিনিময়ের জন্য যৌথ প্রক্রিয়া তৈরি করা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সবমিলিয়ে, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা কেবল অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লাভই নয়, বরং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে।#

পার্সটুডে