ইসলামী বিপ্লবের বিজয় বার্র্ষিকীতে প্রেসিডেন্ট রুহানির ভাষণ
পোস্ট হয়েছে: মার্চ ২৫, ২০১৬
ইরানে ইসলামী বিপ্লবের ৩৭তম বিজয় বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ১১ই ফেব্রুয়ারী তেহরানের বিশাল জনসমাবেশে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন ড. হাসান রুহানি তাঁর দেয়া ভাষণে সব রকমের মতবিরোধকে জাতীয় স্বার্থ ও কল্যাণের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, বিভিন্ন দল-উপদলে দ্বন্দ্ব সংঘাতের সময় এখন নয়; বরং আজকের দিন ঐক্য ও সংহতির দিন। আমাদের সবার উচিত পরস্পর হাতে হাত মিলিয়ে ইসলামী ইরানকে সাজানো।
প্রেসিডেন্ট রুহানি দীর্ঘমেয়াদি পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ইরানের সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, দুনিয়া এখন বুঝতে পেরেছে যে, ইরানী জাতিকে অবরোধ ও তাচ্ছিল্য করার যুগ শেষ হয়ে গেছে। আর ইরানী জাতির সাথে সম্মানবোধ ও মর্র্যাদার সাথে কথা বলতে হবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, ইরানের ১১তম সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও উন্নত ইরান গঠন করা। তিনি এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং জনগণের অবস্থার উন্নয়নে গৃহীত ব্যাপক কর্মসূচির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ইরানের মহান জাতি কোন চাপ বা হুমকির সম্মুখে নত হয় নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। আর আজকে এ কথাটি সব শক্তিই বুঝতে পেরেছে যে, ইরানী জাতির মহানত্বের সম্মুখে সবাইকে নতশির হতে হবে।
প্রেসিডেন্ট গুরুত্ব আরোপ করে বলেন যে, সরকার তার সর্বশক্তি দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ও সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন সাধনের জন্য জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর আগামী বছর হবে ইরানের উন্নতি ও বিকাশের বছর।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান তাঁর ভাষণে ইরানের বিরুদ্ধে যুলুমপূর্ণ অবরোধ ব্যর্থ হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আজ সেদিন এসেছে যেদিন যারা যারা বিদ্বেষের কারণে ও জনগণের বিপ্লবী তৎপরতা সম্বন্ধে ভুল ধারণার বশে কিংবা ক্ষতি সাধনের চিন্তা থেকে ইরানের জনগণের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তারা সবাই ইরানী জনগণের মাহাত্ম্যের কাছে মাথা নত করেছে। তারা তাদের অতীতের পদক্ষেপসমূহের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে।
ড. রুহানি আরো বলেন, পারমাণবিক সমঝোতার ব্যাপারে ইরানের মহান জনগণের বিজয়ের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বাবাসী বুঝতে পেরেছে যে, এই মহান জাতি শুধু যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষার ময়দানে নয়; বরং বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর মোকাবিলায় রুখে দাঁড়াতে এবং তাদেরকে পরাজিত ও দিশেহারা করে দিতে পারে; বরং কূটনীতি, যুক্তি ও বিতর্কের ময়দানেও বিশ্ববাসীর মোকাবিলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের শক্তি রাখে। অনুরূপভাবে সে আপন জাতির অধিকার ও দাবি দাওয়া আদায় করে নিতে সক্ষম। আইনগত ও রাজনৈতিক যুক্তিপ্রমাণ, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি এবং রাহবারের দিক-নির্দেশনার ছায়াতলে ইরানী জাতির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদ ও শাসক পরিষদের সকল অন্যায় প্রস্তাবাবলিকে ইরান ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে এবং বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ করেছে যে, ইরান এতদঞ্চলের দেশগুলোর উপর হুমকি সৃষ্টি করতে চায় মর্মে ইরানের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা রয়েছে আর ইরান পারমাণবিক অস্ত্র হস্তগত করতে চায় মর্মে যে অপপ্রচার রয়েছে তা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি এ কথার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যে, ইরানের জনগণ হচ্ছে শান্তিপ্রিয় জনগণ, যারা এতদকল ও বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা জনগণের সহযোগিতা এবং বিপ্লবের দূরদর্শী মহান নেতার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছি। আর দুনিয়াকে এ কথা বুঝিয়ে দিতে পেরেছি যে, ইরানের জনগণ হচ্ছে যুক্তিবাদী ও এতদ অঞ্চলের সকল বন্ধুপ্রতীম দেশের পাশাপাশি শান্তিপ্রিয় জীবন যাপনে বিশ্বাসী একটি জাতি।
ইরানের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভাপতি ড. রুহানি তাঁর ভাষণে আরো বলেন, আমরা প্রতিরোধমূলক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইরানকে গঠন করব। আজকে আমরা আট কোটি জনশক্তি নিয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, আত্মমর্যাদাবোধে উদ্বুদ্ধ যুবশক্তি, দেশের অভ্যন্তরের অত্যন্ত শক্তিশালী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণকারী তরুণ প্রজন্মের অধিকারী এবং আমাদের এই সামর্থ্য রয়েছে যে, অর্থনৈতিক ও শিল্পের দিক থেকে সারা দুনিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারব। আজকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও ইরানী জনগণের সাথে অংশীদারিত্ব ও এক সাথে কাজ করা ও নানামুখি তৎপরতা চালানোর জন্য সম্পূর্র্ণ প্রস্তুত। আর আমরা এ পথটি অব্যাহত রাখব।
প্রেসিডেন্ট আরো গুরুত্ব আরোপ করেন যে, আমরা সামগ্রিক জাতীয় পদক্ষেপ কর্মসূচির (বারজামে-২) দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের সবার উচিত ইরানকে গঠন করার জন্য এই সম্মিলিত পদক্ষেপে অংশ নেয়া। ইরানী জাতির শক্তি ও সামর্থ্য, আমাদের যুবকদের শিক্ষা-দীক্ষা, দেশের নিজস্ব বস্তুগত ও প্রাকৃতিক সুযোগ সুবিধাসমূহের সমন্বয় আমাদেরকে খুব সুন্দরভাবে বস্তুগত ও নৈতিক জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতির শিখরে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
ড. রুহানি ষষ্ঠ উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেশের অর্থনীতি শতকরা ৮ ভাগ প্রবৃদ্ধির জন্য ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা যে তাকাদা দিয়েছেন তার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই লক্ষে পৌঁছার জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ সকল সম্পদকে সক্রিয় এবং তার পাশাপাশি বার্ষিক ৩০ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক পুঁজি আকৃষ্ট করতে হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভাপতি বলেন, গত দুই বছরে আমরা এনার্জি ক্ষেত্রে ঘর-বাড়ি ও শিল্প কারখানায় ব্যবহারের জন্য গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ দৈনিক ১৯০ মিলিয়ন ঘনমিটার বৃদ্ধি করে দক্ষিণ পার্স এর ৭ম ফেজকে উৎপাদনের গতিধারায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আর সম্মিলিত তেলক্ষেত্রগুলোতে, যার সামষ্টিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল দৈনিক ৬৯ হাজার ব্যারেল, তাতে দৈনিক উৎপাদনের পরিমাণ ১১০ হাজার ব্যারেলে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আর এ বছরের শেষ নাগাদ তা দৈনিক ২৩০ হাজার ব্যারেল এবং বর্তমান সরকারের শেষ মেয়াদ পর্যন্ত ৩৫০ হাজার ব্যারেলে উন্নীত করতে সক্ষম হব।
প্রেসিডেন্ট বলেন, পেট্রো কেমিক্যাল সেক্টরে অতীতে এবং ২০১০ সালের মূল্যমানের ভিত্তিতে বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলার। সেই পরিমাণটি এখন বর্তমান বাজার দর অনুসারে বার্র্ষিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আগামী বছর এবং বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়া নাগাদ তা ২৪ বিলিয়ন ডলারে উপনীত হবে। আর এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের দেশ এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে।
ড. রুহানি এ পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এতদঞ্চলে ইরানের প্রথম স্থান অধিকার করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ৫ হাজার মেগাওয়াট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬৯ হাজার মেগাওয়াট থেকে ৭৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ৪০০টি বাঁধ নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং সারা দেশের বাঁধে পানি সংরক্ষণের পরিমাণ ১ মিলিয়ন ও ৯০ লাখ ঘনমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ড. রুহানি আধুনিক সেচ পদ্ধতিতে কৃষি জমিগুলো প্রস্তুত করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গত আড়াই বছরে দেশের ২৭০ হাজার হেক্টর জমি আধুনিক সেচ ব্যবস্থার আওতায় এনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে, যা বিপ্লবের শুরু থেকে এ ক্ষেত্রে সম্পাদিত কাজের শতকরা ২০% ভাগের সমান। খাদ্যজাত পণ্য উৎপাদন ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক গড় ছিল মাইনাস ৮.১%। ফলে ঘাটতি পূরণের জন্য বাইরে থেকে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতাম। আর এখন মাইনাস ৮.১% সংখ্যাটি গত বছর মাইনাস ৫.৪ এ পৌঁছেছে। এটা প্রমাণ করে যে, খাদ্যজাত পণ্য আমদানিতে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় এবং খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য আমদানি পরিমাণগত দিক থেকে ৩০% হ্রাস পেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, গত দুই বছরে আমরা ১১ মিলিয়ন লোককে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। আগামী বছর অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে যাদের বেতন ১.৫ মিলিয়ন তুমানের চেয়ে কম তারা উল্লেখযোগ্য সুযোগ সুবিধার লাভ করতে পারবে। অনুরূপভাবে আগামী বছর শিক্ষা ও সংস্কৃতিসেবীদেরও বিশেষ ভাতা প্রদান করা হবে। আর সরকার সর্বপ্রকার শক্তি নিয়ে জটিলতাসমূহ সমাধান করতে সক্ষম হবে। এভাবে আগামী বছর হবে ইরানের বিকাশ ও উৎকর্ষের বছর।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর ভাষণের অপর অংশে ২৬ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বিষয়টির দিকে ঈঙ্গিত করেন এবং বলেন, আমাদের বিপ্লব হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়ের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের সামনে সুযোগ ও সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়ার বিপ্লব। ইমাম আমাদের জন্য এই রাস্তাটি নির্ণয় করে গেছেন। আর বিপ্লবের মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণে এবং ইসলামী চরিত্র বজায় রাখার ক্ষেত্রে জনগণের স্বাধীনতা, মতামত এবং আইনের শাসনের প্রাধান্য।
ড. রুহানি এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যে, বিপ্লব হচ্ছে সকল জনগণের বিপ্লব। এ বিপ্লব কোন বিশেষ দল বা গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। তিনি বলেন, ইরানের বিপ্লবের পরিচয় দিতে হলে ইরান, ইসলাম, চরিত্র ও জাতীয় ঐক্য প্রভৃতি পরিভাষার আওতায় তা ব্যাখ্যা করতে হবে। বিপ্লবের মহামূল্যবান উত্তরাধিকার কোন বিশেষ গোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়; বরং তা ইরানের মহান জাতি এবং বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামী মানুষের বিপ্লব।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসলামী বিপ্লব বলতে বুঝায় নৈতিকতা, সভ্যতা ও নাগরিকত্বের চেতনায় প্রত্যাবর্তন। তিনি বলেন, আমাদেরকে ইসলামী বিপ্লবের ৩৮তম বসন্তে সে কথাটি দ্বিতীয়বার পাঠ করতে হবে এবং দেখতে হবে যে, কীভাবে আমরা বিগত ৩৮ বছর পর্যন্ত সব ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হলাম। আসলে আমরা যেহেতু ইরানী ও ইসলামী আত্মপরিচয়ে প্রত্যাবর্তন করেছি সেহেতু অটল অবিচলভাবে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি।
ড. রুহানি আরো বলেন, আমাদের বিপ্লব ঐক্য ও সংহতির ছায়াতলেই সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে সকল ইরানীর এবং যারাই এদেশে বসবাস করে তাদের সবার আশ্রয়। যদি কেউ মুসলমান না হন তিনিও অনুভব করেন যে, ইসলাম হচ্ছে তাঁর আশ্রয়। আজকের দিনে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হচ্ছে এই মহান বিপ্লব এবং তার কালজয়ী আশা-আকাক্সক্ষাগুলোর ভালোভাবে হেফাযত করা।
ইসলামী ইরানের প্রেসিডেন্ট এ কথার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন যে, বিপ্লব ও ভারসাম্য, বিপ্লব ও নীতিবাদ এবং বিপ্লব ও ইসলামের মধ্যে কোন তফাৎ নেই। তিনি বলেন, নীতিবাদী, সংস্কারবাদী ও সত্যিকার ভারসাম্যবাদী সবাই হচ্ছেন বিপ্লবী। বিপ্লবের আওয়াজকেই আমাদের জোরদার করতে হবে। আমরা হলাম আলোচনা, সংলাপ, যুক্তি, আলোচনা ও সমঝোতাপন্থী। আমাদের যুগে বিপ্লবী মানে হচ্ছে, বিপ্লবী চেতনা, অন্যের সাথে মানিয়ে চলা ও প্রতিরোধে অংশীদারিত্বপন্থী হওয়া। অর্থাৎ এই চেতনা লালন করা যে, আমার দেশের পণ্য অন্য দেশের বাজারে প্রতিযোগিতা করার যোগ্যতা থাকতে হবে। আর তার মানে হচ্ছে আশাবাদী হওয়া, প্রাণচাঞ্চল্য থাকা ও গঠনমূলক চিন্তায় চালিত হওয়া।
ড. রুহানি আরো বলেন, আজকের দিনের যিনি বিপ্লবী তিনি চান যে, ইরানকে গঠন করবেন এবং ইরানকে অধিকতর মর্যাদার আসনে উন্নীত করবেন। তিনি বলেন, আজকের যিনি বিপ্লবী তিনি চান, যাতে দুনিয়ার সামনে ইসলামের দয়ার্দ্রতা ও মানবিক পরিচয় ফুটে ওঠে। তিনি দুনিয়াকে এ কথা বলতে চান যে, যারা আজ এতদঞ্চলে মিথ্যামিথ্যি ইসলামের দোহাই দেয় এবং মানুষ হত্যা করে তারা মুসলমানও নয়, বিপ্লবীও নয়। আজকে যে কেউ দেশ থেকে কোন বিপদাশংকা দূর করবেন এবং ঐক্য ও দেশের উন্নতির জন্য উদ্যোগ নেবেন ও চেষ্টা করবেন তিনিই হলেন বিপ্লবী।
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, আজ আমাদেরকে একটি সমন্বিত তৎপরতা, জাতীয় ঐক্য ও সহমর্মিতার জন্য জাতীয় প্রত্যয় ও মহান নেতার দিকনির্দেশনার আলোকে সম্মুখে এগিয়ে যেতে হবে। ড. রুহানি ব্যাখ্যা করেন যে, সামনে যে নির্বাচন আসছে সেটিই এই জাতীয় সংলাপের প্রতিপাদ্য। আমাদের বিপ্লব ভোটবাক্সের কাছেই উদ্ভাসিত হবে এবং মরহুম ইমাম ১৯৯৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি (যেদিন ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল হয়েছিল)-এর ২২ দিন পর আমাদেরকে নির্বাচনে ভোটবাক্সে আহ্বান করেছিলেন। তখন আমরা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছিলাম। কাজেই আমাদের প্রতিরোধ ও শক্তিমত্তার উৎস হচ্ছে আমাদের অংশগ্রহণ। কেউ যেন ভোটের বাক্সের সাথে রাগ না করেন (ভোট দানে বিরত না থাকেন।)
প্রেসিডেন্ট রুহানি ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিপ্লবের মহান নেতা যেভাবে বলেছেন, ধরে নিন, যদি কারো সরকার বা প্রশাসনের প্রতি সমালোচনাও থাকে তাদেরও উচিত নয় ভোটের বাক্সের সাথে রাগ করা। এই ভোটবাক্স হচ্ছে মানুষের অধিকার। সবার উচিত এই ভোটবাক্সের প্রতি সম্মান দেখানো। আমাদের সামাজিক সম্পদ ও পুঁজি রয়েছে এই ভোটের বাক্সের গোড়ায়।
ড. রুহানি আরো বলেন, মনে করুন, আজ যদি কারো কোন অনুযোগ থাকে। কোন নাগরিক বা কোন রাজনৈতিক মহল কোন অপ্রীতিকর কিছু দেখে থাকেন, তাঁদেরও সক্রিয়ভাবে ভোট দিতে যাওয়া উচিত। নিঃসন্দেহে জাতির রায়ই শেষ কথা বলে দেবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি আপনাদের রায় সন্দেহাতীতভাবেই ভবিষ্যতের আশাবাদ, যৌক্তিকতা, আইন ও প্রতিরক্ষার পক্ষে জাতীয় অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
প্রেসিডেন্ট বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারির রায় হবে সংলাপ ও আস্থার ভিত্তিমূলে প্রিয় ইরানকে গঠন করার রায়। আমাদের রায় সেসব লোকের প্রতি নয়, যারা আইনকে অশ্রদ্ধা করতে চায়। ঐসব লোকের প্রতিও এই রায় নয়, যারা ঝগড়া বাধায় এবং বাড়াবাড়ির পক্ষে। আমাদের রায় হবে আশার দিকে, আবাদ ও মুক্ত স্বাধীন ইরানের পক্ষে। আমরা ইরানকে গঠন করব। আমরা জাতীয় ঐক্য, সংহতি ও সহযোগিতার মাধ্যমে এই দেশ ও জাতির মর্যাদাকে কাক্সিক্ষত চূড়ায় অবশ্যই পৌঁছাব।
গণমিছিল শুরুর প্রাক্কালেও ড. রুহানি তাঁর ভাষণে অত্যাচারী শাহের শাসন আমলে ইরানী জনগণের ভাগ্যের উপর বিদেশী শক্তিগুলোর, বিশেষ করে আমেরিকার কয়েক বছরের আধিপত্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইরানের জনগণ তিনটি সেøাগানের আওতায় ৩৭ বছর পূর্বে বিদেশী আধিপত্যের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়। আর ইসলামের কাঠামো, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা ও সমীহের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন শাসনব্যবস্থা বলবৎ করতে সক্ষম হয়।
প্রেসিডেন্ট রুহানি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইমাম খোমেইনী (র) বলেছিলেন যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র। এর মধ্যে এক শব্দ বেশিও নয়, এক শব্দ কমও নয়। তিনি বলেন, জনগণ কয়েক দশক ধরে ইমাম ও রাহবারের এই বাণীর মধ্যে নিজেদের ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হিসেবে দেখেছে। আর বিশ্ববাসী গৌরবদীপ্ত, মহান ও জননন্দিত বিপ্লবের সম্মুখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছে। তারা ভাবছে যে, কীভাবে একজন আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় নেতা সমকালীন বিশ্বে মানুষের মাঝে এতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
ড. রুহানি আরো বলেন যে, ইসলামী বিপ্লব যদিও রাজনীতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে; কিন্তু এটি নিছক অর্থে একটি রাজনৈতিক বিপ্লব নয়। এই বিপ্লবে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে নৈতিকতা। সবসময়ই নৈতিকতা রাজনীতির উপর অগ্রগামী ছিল। ইমাম ইসলামী নৈতিকতার সমন্বয়ে বিপ্লবকে অত্যন্ত বিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার সাথে ঘৃণা ও প্রতিশোধ স্পৃহাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে নিতে পেরেছেন। যদি ইমামের এই শৈল্পিক কর্মটি না হতো, তাহলে বছরের পর বছর দেশ গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত হয়ে থাকত। এই জনগণই ইমামের নেতৃত্ব ও ইসলামী চরিত্র দিয়ে বন্দুকের নলের মাথায় ফুল গেঁথে দিয়েছিল এবং দেখিয়ে দিয়েছিল যে, বিপ্লবের আকর্ষণ শক্তি কত বেশি, যা সবাইকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আকর্ষণ করে নিতে পারে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লব হলো নৈতিক ও শান্তিপ্রিয় বিপ্লব, যেখানে কোনরূপ চরিত্রহীনতা নেই। নেই কোন প্রকার সহিংসতা। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম সবার জন্য ইনসাফ, ভারসাম্য, দয়া, সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্বের বার্তাবাহক।