মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

ইলাম প্রদেশ পারস্য উপসাগরীয় বাজারে হস্তশিল্প রপ্তানি সম্প্রসারণ করছে

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫ 

news-image

তেহরান – ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় ইলাম প্রদেশ পারস্য উপসাগরীয় উপকূলবর্তী দেশগুলোতে তাদের হস্তশিল্প রপ্তানি শুরু করেছে। এর মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের প্রচেষ্টায় নতুন একটি অধ্যায় শুরু হলো বলে রোববার এক প্রাদেশিক কর্মকর্তা জানান।

ইলাম প্রদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, পর্যটন ও হস্তশিল্প বিভাগের মহাপরিচালক ফারজাদ শরিফি বলেন, পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে হস্তশিল্প রপ্তানি একটি “আশাব্যঞ্জক নতুন পর্যায়ে” প্রবেশ করেছে। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্প্রতি স্থানীয় পণ্য পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, আবদানান কাউন্টির এক কারুশিল্পীর তৈরি প্রায় ২০০টি ঐতিহ্যবাহী বোনা হস্তশিল্পের পণ্য দুবাইয়ে রপ্তানি করা হয়েছে। এটি আঞ্চলিক বাজারে ইলাম-এর ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতার প্রমাণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শরিফি বলেন, “দেশীয় পণ্য রপ্তানি শুধু ইলাম-এর কারুশিল্পীদের দক্ষতাই তুলে ধরে না, বরং প্রদেশটির অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও অবদান রাখে।”

তিনি আরও বলেন, এই চালান স্থানীয় কারুশিল্পীদের পণ্যের গুণগত মান, স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতার প্রমাণ এবং ইলাম-এর হস্তশিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে টেকসই অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম।

শরিফির মতে, হস্তশিল্পকে শুধু সাংস্কৃতিক পণ্য হিসেবে নয়, বরং অর্থনৈতিক সুযোগ হিসেবেও দেখতে হবে, যা নারীর ক্ষমতায়ন ও স্থানীয় উন্নয়নে সহায়ক। তিনি জানান, উৎপাদন, প্যাকেজিং ও রপ্তানিতে সহায়তা বাড়ানো প্রাদেশিক প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার।

ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ইলাম প্রদেশের সঙ্গে ইরাকের ৪২৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে এবং এটি কেরমানশাহ, লোরেস্তান ও খুজেস্তান প্রদেশের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রদেশটির নামকরণ হয়েছে প্রাচীন এলাম সভ্যতার নামে, যা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৭০০ থেকে ৫৩৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানে বিকশিত হয়েছিল।

জাতীয় পর্যায়ে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের ২০ মার্চ শেষ হওয়া ইরানি বর্ষপঞ্জি বছরে ইরান প্রায় ২২৩ মিলিয়ন ডলারের হস্তশিল্প রপ্তানি করেছে। এছাড়া ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে প্রায় একই পরিমাণ পণ্য অনানুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

সংস্কৃতিক ঐতিহ্য, পর্যটন ও হস্তশিল্প মন্ত্রণালয়ের বিপণন ও বাণিজ্যিকীকরণ দপ্তরের মহাপরিচালক ফারজাদ ওজানি বলেন, ইরানে প্রায় ৭,০০০টি হস্তশিল্পের দোকান রয়েছে, পাশাপাশি স্থায়ী ও মৌসুমি বাজারও আছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ক্রমশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রয় মাধ্যম হয়ে উঠছে বলেও তিনি জানান।

ওজানি আরও বলেন, ১৮টি ক্যাটাগরিতে ২৯৯টি স্বীকৃত হস্তশিল্প শাখা নিয়ে ইরান বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এবং হস্তশিল্পের জন্য ১৪টি শহর ও তিনটি গ্রাম আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধিত। পরিবারভিত্তিক উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি এবং উচ্চ মূল্য সংযোজন ইরানি হস্তশিল্পকে বৈশ্বিক বাজারে শক্ত প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

“ইরান থেকে রপ্তানি হওয়া হস্তশিল্প বিদেশে ভালো সাড়া পাচ্ছে এবং এর অনেক ক্রেতা রয়েছে,” বলেন ওজানি। “সঠিক পরিকল্পনা এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে আরও দৃঢ় সহযোগিতা থাকলে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব।”

তথ্যসূত্র: তেহরান টাইমস