ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শাবে ইয়ালদা উদযাপন!
পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫
গত ২১ ডিসেম্বর সবচেয়ে বড় রাত শাবে ইয়ালদা উপলক্ষ্যে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের মাননীয় রাষ্ট্রদূত জনাব জালিল রাহিমি জাহানাবাদি, দূতাবাসের অন্য কর্মকর্তাগণ, ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ রেজা মীরমোহাম্মদী, আল-মুস্তাফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জনাব শাহাবুদ্দিন মাশায়েখী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, বিভাগের সভাপতি ড. মুমিত আল রশিদ, এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী বিশিষ্ট ইরানি ব্যক্তিবর্গ।

শাবে ইয়ালদা ইরানের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব, যার ইতিহাস কয়েক হাজার বছর পুরোনো। এটি প্রতি বছর ২১ ডিসেম্বর, অর্থাৎ বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ রাতে পালিত হয়। এই রাতটি শীতকালীন অয়নান্তের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং পরের দিন থেকে রাত ধীরে ধীরে ছোট হতে শুরু করে। তাই শাবে ইয়ালদা অন্ধকারের পর আলোর বিজয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই বিশেষ রাতে ইরানের মানুষ পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে একত্রিত হয়। সবাই মিলে রাত জেগে গল্প করে, হাসি-আনন্দ করে এবং পারিবারিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। বড়রা ছোটদের জীবনের গল্প, উপদেশ ও ঐতিহ্যের কথা শোনান, যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে সংস্কৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

শাবে ইয়ালদার অন্যতম আকর্ষণ হলো ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই রাতে বিশেষভাবে ডালিম, তরমুজ, শুকনো ফল ও বাদাম খাওয়া হয়। ডালিম ভালোবাসা, জীবন ও উর্বরতার প্রতীক, আর তরমুজ স্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবনের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই ফলগুলো খেলে শীতকালে মানুষ সুস্থ থাকে।

এই উৎসবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সাহিত্যচর্চা। অনেক পরিবার ইরানের বিখ্যাত কবি হাফেজের কবিতা (দিওয়ানে হাফেজ) পাঠ করে এবং সেখান থেকে জীবনের জন্য আশাবাদী বার্তা খোঁজে। এটি শাবে ইয়ালদাকে শুধু উৎসব নয়, বরং জ্ঞান ও চিন্তার একটি সুন্দর উপলক্ষে পরিণত করে।

শাবে ইয়ালদা কেবল ইরানেই নয়, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান এবং অন্যান্য পারস্য সংস্কৃতির প্রভাবিত অঞ্চলেও পালিত হয়। এই উৎসব মানুষকে শেখায় যে অন্ধকার যত দীর্ঘই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত আলো আসবেই। তাই শাবে ইয়ালদা আশা, ঐক্য, ভালোবাসা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক।
ইরানি সংস্কৃতিতে শাবে ইয়ালদা শুধু দীর্ঘ রাত নয়, বরং অন্ধকার পেরিয়ে আলোর আগমনের আশা। পরিবার একসঙ্গে বসে কবিতা পড়ে, হাফেজের দিওয়ান খোলে, আর বিশ্বাস করে—কষ্ট, দুঃখ বা অন্ধকার যত বড়ই হোক, শেষ পর্যন্ত আলো আসবেই।