শুক্রবার, ১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

ইরানের শুশতারের ঐতিহাসিক সেচব্যবস্থা যে কারণে বিদেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করে

পোস্ট হয়েছে: জুন ১১, ২০২৫ 

news-image

‘শুশতার হাইড্রোলিক সিস্টেম’ হলো প্রাচীনকালের একটি জটিল ও বিস্ময়কর সেচ প্রণালী, যা ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের শুশতার শহরে অবস্থিত। ঐতিহাসিক এই সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে শুশতার শহর এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে পানি সরবরাহ করা হতো। এই সেচব্যবস্থা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

ইউনেস্কো শুশতার সেচ প্রণালীকে প্রতিভা ও সৃজনশীলতার একটি অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই কাঠামো নিয়ে অসংখ্য গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচিত হয়েছে এবং প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভ্রমণ করেন। ইউরোপের অনেক পর্যটক দল কেবল এই কাঠামো দেখার জন্যই ইরান সফর করে।

 শুশতারের ঐতিহাসিক সেচব্যবস্থা

শিল্প বিপ্লবের আগে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিল্প কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত এই স্থাপনাকে ইউনেস্কো “শুশতারের জল কাঠামো: প্রতিভা ও সৃজনশীলতার অসাধারণ নিদর্শন” বলে অভিহিত করেছে।

শুশতারের জলাধার

সাসানীয় যুগে নির্মিত এই জল কাঠামোগুলো পানির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিল্পকলের চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই বিশাল কমপ্লেক্সে রয়েছে আটার মিল, কৃত্রিম জলপ্রপাত, পানি নিয়ন্ত্রণের সুড়ঙ্গ ও নালা এবং সিকা নামের বিশ্রাম ও বিনোদনের স্থান।

 শুশতারের ঐতিহাসিক সেচব্যবস্থা

প্রখ্যাত ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক মাদাম জেন ডিউলাফোয়া তাঁর ভ্রমণকাহিনীতে এই স্থানকে ‘শিল্প বিপ্লব-পূর্ব বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প কমপ্লেক্স’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই কমপ্লেক্সের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ‘সিকা’ নামের স্থানে একটি অষ্টভুজাকার জলাধার রয়েছে, যার পানি দেওয়ালের একটি ছোট নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুশতারের ঐতিহাসিক স্থাপনার পাশে অবস্থিত এই জল কাঠামো শিল্পক্ষেত্রের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়দের পানির চাহিদাও মেটাত।

 শুশতারের ঐতিহাসিক সেচব্যবস্থা

শুশতার জল কাঠামোর ত্রি-সুরঙ্গের আকর্ষণীয় আকর্ষণ

এই কমপ্লেক্সের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বৈশিষ্ট্য হলো এর কৃত্রিম জলপ্রপাত, যা পানি প্রবাহের মাধ্যমে একটি সুন্দর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এখানে তিনটি বিখ্যাত সুড়ঙ্গ—”সেহ কোরে”, “দাহানে শাহর” এবং “বলিতি”—পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হতো।

শুশতারের ঐতিহাসিক সেচব্যবস্থা

গারগার বাঁধের পিছনে অবস্থিত এই সুড়ঙ্গগুলো আটার মিলের চাকাগুলো চালানোর জন্য পানি সরবরাহ করত।

শুশতার মিলস অ্যান্ড ওয়াটারফলস কমপ্লেক্স নির্মাণের সময় বিবেচনা করলে এটি বিশ্বের অন্যতম কারিগরি ও প্রকৌশলগত শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ১৯৯৮ সালে এটি ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় (নিবন্ধন নম্বর ২১৮১) অন্তর্ভুক্ত হয়।  পার্সটুডে/