মঙ্গলবার, ১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

ইরানের পানি সংকট নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমের বয়ান কতটা সঠিক?

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ১১, ২০২৫ 

news-image

ইরানে পানি সমস্যা তথা খরা ইস্যুটি সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে, তারা বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে, যদিও এই পরিস্থিতির মূল কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান খরার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার পর থেকেই এটি বিদেশি গণমাধ্যম বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে, মাঝে মধ্যেই তা নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে খবর প্রকাশ করছে। মজার বিষয় হলো এসব মিডিয়া এই সমস্যাটিকে সহানুভূতির জায়গা থেকে ব্যাখ্যা না করে উল্টো ইরানে অস্থিরতা সৃষ্টি ও দেশটির ভাবমর্যাদা নষ্টের উদ্দেশ্যে প্রচার করছে।

এ ক্ষেত্রে ফ্রান্স ২৪, দ্য টাইমস অব ইসরায়েল, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এবং ফোর্বস–এর মতো গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করা যায়। এসব গণমাধ্যম একযোগে এমন এক বর্ণনা তৈরি করেছে যাতে মনে হয় ইরানের পানি সংকটের মূল কারণ হলো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অদক্ষতা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ইরান আসলে কেন পানিসংকটে পড়েছে? এটি কি শুধুই ইরানের সমস্যা, নাকি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাবের অংশ? ইরানের নামটি কি বার বার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সামনে আনা হচ্ছে এবং বড় করে তুলে ধরা হচ্ছে?

এই বিষয়ে ইরানের আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থার মহাপরিচালক সাদেক জিয়ায়িয়ান’র সঙ্গে সংবাদমাধ্যম তাবনাক কথা বলেছে। জিয়ায়িয়ান জানিয়েছেন, ইরানে চলমান খরার মূল কারণ হলো “উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের” তীব্রতা ও স্থায়িত্ব; আবহাওয়ার এই অবস্থাটা সাধারণত গ্রীষ্মে সক্রিয় থাকে, কিন্তু এবার তা শরৎকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে, ফলে বৃষ্টিবাহী মেঘ ইরানে প্রবেশ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, এই বৃষ্টির ঘাটতি কেবল ইরানে নয়- ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কেও দেখা গেছে। সার্বিকভাবে এটি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, যার তীব্রতা ইরানে বিশেষভাবে অনুভূত হচ্ছে।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক অঞ্চলে রেকর্ডভাঙা ও ধ্বংসাত্মক খরা দেখা দিচ্ছে, যা ২০২৩ সালের পর থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর লাগাতার চাপের কারণে আরও তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ড. মার্ক সভোবোডা বলেছেন, “এটি কেবল একটি সাময়িক খরা নয়; বরং একটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়া বৈশ্বিক বিপর্যয়- আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়। এই রিপোর্টে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, আমাদের জীবন, জীবিকা এবং পরিবেশব্যবস্থার ওপর খরার প্রভাব সম্পর্কে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।”

প্রায় এক দশক আগে নাসা’র বিজ্ঞানীরাও এই বলে সতর্ক করেছিলেন যে, বিশ্বের কিছু অঞ্চলে তিন দশক দীর্ঘ খরার যুগ শুরু হতে পারে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- “আগামী ৩০ বছরে পশ্চিম এশিয়া ও বিশ্বের কিছু অংশে খরা তীব্র আকার ধারণ করবে, আর এই ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫ দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান চতুর্থ।”

জিয়ায়িয়ান আরও বলেন, ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান যেহেতু মূলত শুষ্ক ও অর্ধ-শুষ্ক অঞ্চলে, তাই দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। যেখানে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, সেখানে ইরানের তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি।
তার ভাষায়, “খরা ও বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ইরানে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রভাব। এর ফলে পানির উৎস হ্রাস পাচ্ছে, কৃষির ক্ষতি হচ্ছে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে।”

তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, “যদিও ইরানের জলবায়ু স্বভাবতই শুষ্ক, তবুও আমরা এই সংকটের মোকাবিলা করতে পারি। এর জন্য কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। কেবল বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা ও জাতীয় সহযোগিতার মাধ্যমেই জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব কমানো সম্ভব।”#

পার্সটুডে