অন্য দেশে হস্তক্ষেপের পরিবর্তে নিজ দেশে লাখো জনতার ক্ষোভ প্রশমন করুন: আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২১, ২০২৫

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহিল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গর্ব করে বলছেন তারা ইরানের পরমাণু শিল্পে বোমা হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দিয়েছেন। খুব ভালো, সেই ধারণা নিয়েই থাকো!
বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডগুলোতে পদকজয়ীরা আজ (সোমবার) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরানের পদকজয়ীরা- হোক তা ক্রীড়া অঙ্গনে বা বিজ্ঞান ক্ষেত্রে- জনগণকে আনন্দিত করেছেন। এটা অনেক বেশি মূল্যবান।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেন, আমরা এখন এক সফট ওয়ার বা নরম যুদ্ধের মধ্যে আছি। এই যুদ্ধে শত্রুর প্রচেষ্টা হলো জাতিকে হতাশ করা এবং নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি নিরাশ করে দেওয়া। কিন্তু তোমরা ক্রীড়া অঙ্গন ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রের পদকজয়ীরা শত্রুর বিপরীতমুখী পথে অগ্রসর হতে পেরেছ।
তিনি বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইহুদিবাদী ইসরায়েলে গিয়ে একগাদা ফাঁকা বুলি আর হাস্যকর আচরণের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত জায়নিস্টদের আশাবাদী করতে চেয়েছেন। আমার বিশ্লেষণ হলো—এই সফরের উদ্দেশ্যই ছিল তাদের মনোবল ফিরিয়ে দেওয়া।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ১২ দিনের যুদ্ধে জায়নিস্টরা এমনভাবে চপেটাঘাত খেয়েছে যা তারা কল্পনাও করেনি, প্রত্যাশাও করেনি—তারা হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইহুদিবাদী ইসরায়েলে গিয়ে তাদেরকে সেই হতাশা থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছেন।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জায়নিস্টরা কখনো ভাবেনি ইরানি তরুণদের বানানো ক্ষেপণাস্ত্র তাদের নিজেদের আগুন ও শিখায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের কিছু সংবেদনশীল গবেষণা কেন্দ্রের গভীরে পৌঁছে সেগুলোকে ছাই করে দিতে পারবে—কিন্তু সেটাই ঘটেছে।
গাজা যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাজার যুদ্ধে অপরাধের প্রধান অংশীদার আমেরিকা- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সরঞ্জাম দখলদার ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছে, যাতে তা গাজার নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। আমেরিকা এই অপরাধের অংশীদার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দাবি করছেন, তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। গাজায় তাদের হামলায় বিশ হাজারের বেশি শিশু ও নবজাতক শহীদ হয়েছে—ওরা কি সন্ত্রাসী ছিল? চার-পাঁচ বছরের শিশু, নবজাতক—এরকম বিশ হাজার শিশুকে তোমরা হত্যা করেছ! এরা কি সন্ত্রাসী ছিল? না, আপনারাই সন্ত্রাসী!
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, আপনারা আমরিকাই প্রকৃত সন্ত্রাসী, আপনারাই আইএস (দায়েশ) সৃষ্টি করেছেন এবং তা পশ্চিম এশিয়ার ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন, এখনো তাদেরকে নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন যাতে যেকোনো সময় নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেন। এখনও আইএস’র কিছু সদস্য আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; তাদের কোথাও রেখে দিয়েছে যাতে প্রয়োজনে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়।
তিনি বলেন, আপনারা অন্য দেশের পারমাণবিক শিল্প নিয়ে হস্তক্ষেপ করার কে? কোন দেশের কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়, সেটা বলার আপনারা কে? ইরানের পরমাণু সক্ষমতা বা শিল্প আছে কি নেই তার সঙ্গে আপনাদের কী সম্পর্ক?
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, সন্ত্রাসবাদের আসল নিদর্শন হলো আমেরিকা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি ইরানিদের বন্ধু। মিথ্যা কথা! আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাগুলো কাদের বিরুদ্ধে? ইরানের জনগণের বিরুদ্ধেই তো! আপনারা ইরানের শত্রু, বন্ধু নন।
আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী আরও বলেছেন- আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলছেন, পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ চলছে। কিন্তু যুদ্ধের সূত্রপাত তো আপনারাই ঘটান! আমেরিকাই যুদ্ধ বাঁধায়, হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি যুদ্ধ উসকে দেয়। এত সব সামরিক ঘাঁটি কীসের জন্য? পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এত সামরিক ঘাঁটি আমেরিকা কেন স্থাপন করেছে? এখানে আপনাদের কী কাজ? আপনাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের কী সম্পর্ক? বলদর্পিতা কিছু জাতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে ইরানি জাতির ওপর কখনোই তা প্রভাব ফেলবে না।
তিনি আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও শহরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৭০ লাখ মানুষের বিক্ষোভের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “আপনার যদি সত্যিই ক্ষমতা থাকে তাহলে অপপ্রচার এবং অন্য দেশের কাজে হস্তক্ষেপ ও অন্য দেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের মতো কাজ বাদ দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে শান্ত করুন এবং তাদেরকে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠান।#
পার্সটুডে