সোমবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

‘১২ দিনের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আমেরিকা-ইসরাইল খালি হাতে ফিরে গেছে’

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ১, ২০২৫ 

news-image

১২ দিনের যুদ্ধে আমেরিকা-ইসরাইলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা ‘খালি হাতে ফিরে গেছে’—এমন মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী।

আজ (বৃহস্পতিবার) রাতে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণে তিনি একথা বলেন। ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের যুদ্ধের ২০ বছরের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা এমন একটি যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছিল যাতে তারা জনগণকে উত্তেজিত করে, জনগণকেও শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামাতে পারে। কিন্তু বিষয়টি উল্টো হয়ে যায় এবং তারা এমনভাবে ব্যর্থ হয় যে, এমনকি যারা ব্যবস্থার সাথে দ্বিমত পোষণ করে তারাও এই ব্যবস্থার পাশে দাঁড়ায় এবং দেশে একটি সর্বজনীন ঐক্যের সৃষ্টি হয়।”

১২-দিনের যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, “এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ সবচেয়ে উন্নত আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র ব্যবহার করেও তারা তাদের লক্ষ্য (ইরানি জাতিকে নিজেদের পক্ষে নেওয়া) অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে; বরং জাতির ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ব্যর্থ করেছে।”

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, “আমরাও কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি এবং যুদ্ধের স্বাভাবিক নিয়মে ইরানেও মূল্যবান জীবন হারিয়েছে, কিন্তু ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রমাণ করেছে যে, তারা দৃঢ় সংকল্প ও শক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম। শত্রুর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল অনেক বেশি।”

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গাজায় সংঘটিত ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞের কথা উল্লেখ করেন, যা এই অঞ্চলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডির একটি। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ইহুদিবাদী ইসরাইলে সম্মানহানি ও বদনাম হয়েছে। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দখলদার ইহুদিবাদীদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তারা নিজেরাও মারাত্মকভাবে সম্মানহানি ও কুখ্যাত হয়েছে। কারণ, বিশ্বের মানুষ জানে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া ইহুদিবাদী শক্তি এ ধরনের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম হতো না।”

তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তিত্ব ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সবচেয়ে নিন্দিত রাষ্ট্রব্যবস্থা হলো সেই দখলদার সত্তা এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র হওয়ায় একই ঘৃণার অংশীদার হয়েছে। তাদের দখলদার নীতি বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, ধ্বংস, অভিবাসন সংকট ও মানবিক বিপর্যয়ের কারণ।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের উসকানির আগুন’ বলে অভিহিত করে বলেন, যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন তিন দিনে যুদ্ধ শেষ করবেন, তিনি এখন উল্টো ২৮ দফা চাপিয়ে দিতে চাইছেন। লেবানন, সিরিয়া ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলা এবং গাজার পরিস্থিতিও যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধী সমর্থনের প্রমাণ।

জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণে তিনি আরও বলেন,ইরানে গড়ে ওঠা প্রতিরোধের সংস্কৃতি আজ বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে ফিলিস্তিন, গাজা, এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোতেও প্রভাব ফেলেছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, দেশ পরিচালনা একটি কঠিন দায়িত্ব এবং সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যার ফল জনগণ শিগগিরই দেখতে পাবে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ি তাঁর বক্তৃতায় ইরানের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজ-এর ধারাবাহিক শক্তিবৃদ্ধির ওপর জোর দেন।  বাসিজকে ‘ঐশী অনুপ্রেরণায় সজ্জিত, আত্মবিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক একটি মূল্যবান জাতীয় আন্দোলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “চতুর্থ প্রজন্মের বাসিজ, অর্থাৎ সারা দেশের প্রিয় কিশোর-কিশোরীরা কাজ ও প্রচেষ্টার জন্য প্রস্তুত। এই মূল্যবান ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাসিজ আন্দোলনকে অবশ্যই দেশে ধারাবাহিক প্রজন্মের পর প্রজন্মের মাঝে বিকশিত, অব্যাহত, পূর্ণতর ও শক্তিশালী হতে হবে।”

তিনি বলেন, প্রতিরোধ, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, শিল্প, গবেষণা, শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে যারা দেশকে সম্মানিত করছে—সংগঠনভুক্ত হোক বা না হোক—তারা সবাই বসিজের মূল ভাবনার ধারক।

বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে তিনি ইরানি জনগণের প্রতি চারটি নির্দেশনা দেন। এগুলো হলো-জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা, প্রেসিডেন্ট ও সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা,অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অপচয় পরিহার এবং দোয়া, তওবা ও আল্লাহর প্রতি আস্থা বৃদ্ধি।

তার মতে, অপচয় কমানো গেলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং কল্যাণমূলক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।#
পার্সটুডে