শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

হায় হোসেন ওভা আলমাস

পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৫, ২০১৮ 

 

এসেছে মুহররম
কাঁদাতে এ জাহান
সকরুণ মাতম আজ
হায় হোসেন, হায় হোসেন।
সত্যের দিশা দিতে
নিজের জীবন দিয়ে
দেখালেন পৃথিবীকে
সত্যের জয় নিশান্
হৃদয়ের অতলে তোলপাড় আজো
বুক ভেঙে যায়
কোন অজানা ব্যথায়
সত্য-মিথ্যার অসম দামামায়
হোসেনের মাথা ঐ সীমারের বর্শায়!
রক্ত স্নানে তুমি হে প্রিয় ধরণী
নুইয়েছো মাথা আজ
ব্যথাভরা লজ্জায়?
কারবালা প্রান্তরে হত্যাযজ্ঞে
এজিদের চক্রান্ত নস্যাত করে দিয়ে
ইসলাম জেগে আছে রবে কেয়ামত পর্যন্ত।
ভাস্বর মুহররম ত্যাগের মহিমায়
চারদিকে আজো আহাজারি
মর্সিয়া তাজিয়ায়
সকরুণ সুরে গাই
হায় হোসেন, হায় হোসেন!

জীবনের দাম
শেখ হিজারুল ইসলাম

তোমরা কি ভুলে গেছো, ইমাম হুসাইনের নাম?
জীবনের চেয়ে বেশি কিছু দিয়ে দিলেন জীবনের দাম।
মনে নেই শহীদ আলী আসগরের কথা?
ছয় মাসের ছোট্ট মাসুম ছেলে, চলে গেছে নিয়ে ব্যথা।
বোঝে না আঘাত বোঝে না সংঘাত।
তবু তার কচি বুক, বিদীর্ণ করে পাষাণ তীরের আঘাত!
পিতার কোল ভিজে ওঠে প্রিয় সন্তানের খুনে!
এমন পিতার ত্যাগের গৌরব ছড়াক প্রতিটি প্রাণে।

ভুলে কি গেছো সেদিনের সব কথা
বাহাত্তর জন মযলুম শু’হাদার নিষ্পাপ চেহারা
বাঁচতে দেয়নি যাঁদের কাউকে,
পাপিষ্ঠ ইয়াযিদ সেনা।

আজো আছে সেই যিন্দানখানা শুষ্ক মরুর চর।
রক্তের দাগ বুকে আজো কাঁদে কারবালা প্রান্তর।

সেদিন, শান্তি রক্ষায় কুফার পথে ইমাম বীর
চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো ফোরাত নদীর তীর।

শর্ত দিয়েছে,
যুদ্ধ কিংবা বাই‘আত হতে হবে ইয়াযীদের হাতে।
আচ্ছা তোমরাই বলো!
নারী, শিশু, পরিবার নিয়ে কেউ কি আসে লড়াইয়ের ময়দানে?
হযরত বললেন,
স্বৈরাচারের কাছে বাই‘আত নয়।
বরং ফিরে যাই মদীনায়
নয় তো ইয়াযীদের কাছে নিয়ে চলো আমাকে
কথা হোক চোখে চোখ রেখে।
শোনেনি সে কথা যালিমরা,
তাই তো শুরু হলো এ যুদ্ধ।

ত্রিশ হাজার সৈন্যকে রুখে দাঁড়াল ইমামের তরবারী
জীবন দিয়েও সত্যকে তিনি করলেন বিজয়ী।
অসম যুদ্ধে লাল হলো অবরুদ্ধ দরিয়ার তীর।
অন্যায়ের কাছে নত হবেন না অনন্য সাহসী বীর।
জীবন দিলেন সবাই প্রায় কাফেলায় ছিলেন যাঁরা।
প্রাণ দিয়েছেন, মিথ্যার কাছে পরাজিত নন তারা।

তোমরা কী ভেবেছো?
ভেবেছো, যুদ্ধ থেমে গেছে, শহীদরা দিলেন শির।
চেয়ে দেখো, যুগে যুগে আরো ইয়াযীদ সীমারের ভীড়।

ভেবেছো,
হুসাইন চলে গেছেন, ফিরবেন না আর ঘরে
শহীদরা ‘জীবিত’, ফিরে আসেন বারে বারে।
জাগরূক থাকেন মুমিনের হৃদিভরে
চেয়ে দেখো ইমাম হুসাইন, বেঁচে আছেন মানুষের অন্তরে।

শহীদ ইমাম ও নব্য এজিদী
মামুন সারওয়ার

কি পড়ব কথার মালা
অশ্রুমাখা চোখে?
ভাবছি বসে একলা একা
সেই আশুরার শোকে।

কারবালায় শহীদ ইমাম
হৃদয়ে রক্ত ঝরে
মুসলমান হও বলীয়ান
কুরআনী অক্ষরে।

নব্য এজিদ অং সুচি আজ
খুনে মত্ত তারা
বিরান হলো সেই আরাকান
কাঁদছে রোহিঙ্গারা।

সত্য ন্যায়ের প্রতীক হয়ে
ইমাম হাসান হোসেন
তাঁদের নামে মযলুমান
অশ্রু কেবল মোছেন।

প্রেরণার সেই বাতিঘরের
আলো জ্বলে মনে
মুসলমান আজ ঐক্য গড়ো
এই আশুরার খণে।

নব্য এজিদ সব দিকে আজ,
কে দেবে পাহারা ?
বিশ্ব জুড়ে মরছে স্বজন
কাঁদছে রোহিঙ্গারা।

হায় হোসেন! হায় হোসেন!
পৃথিবীতে সবচে করুণ আহাজারি
ক্ষণে ক্ষণে বাতাসও হয় মহাভারি
হৃদয়টাতে মহা বিক্ষোভ নিত্য পোষেন
হায় হোসেন! হায় হোসেন!

সীমার এজিদ কারবালাতে রাঙায় হাত
রাঙায় আরো এই আশুরার সেই প্রভাত
সেই ঘটনায় বিশ্ববাসী আজও ফোঁসেন
হায় হোসেন! হায় হোসেন!

মুসলমানের মনটা আজও ডুকরে কাঁদে
অস্থির হয় কারবালার সে আর্তনাদে
বিক্ষুব্ধ তারা দারুণ রোষে ফুঁসে
হায় হোসেন! হায় হোসেন!

হায় হোসেন! হায় হেসেন!
আবু সালেহ

পৃথিবীতে সবচে’ করুণ আহাজারী
ক্ষণে ক্ষণে বাতাসও হয় মহাভারী
হৃদয়টাতে মহা বিক্ষোভ নিত্য পোষেন
হায় হোসেন! হায় হোসেন!

সীমার এজিদ কারবালাতে রাঙায় হাত
রাঙায় আরো এই আশুরার সেই প্রভাত
সেই ঘটনায় বিশ্ববাসী আজও ফোঁসেন
হায় হোসেন! হায় হোসেন!

মুসলমানের মনটা আজও দারুণ কাঁদে
অস্থির হয় কারবালার সেই আর্তনাদে
বিক্ষুব্ধ হয়ে তারা দারুণ রোষে রোষেণ
হায় হোসেন! হায় হোসেন!

কারবালার রক্তকথা
এডভোকেট শামীমা আক্তার শিউলী

মোহররমের মাতম শুনি চারদিকে আজ
দুখের স্মৃতি জেগে উঠার চোখের জলের সাজ
হায় হোসেন প্রায় হায় হোসেন বলি হৃদয় সুরে
আজকে প্রলয়স্মৃতির হৃদয় কারবালাতে ঘুরে।

কারবালারই মাটির বুকে রক্তঝরা পাঠ
কষ্টের বাণী সুর তুলেছে দু:খে গড়া হাট
হাজার বছর পার হয়েছে আরো কত হবে
কারবালারই রক্তকথা স্মৃতির দুখে রবে।

ইমাম হোসেন ইমান হোসেন গীতি গাঁথি মনে
ভুলবো না তো সেই শাহাদত কারবালার রণে
কারবালারই রক্তকথা পেয়ে রাখি কবি
জীবন মাঝে চির আলোর চিরকালের ছবি।

জগলুল হায়দার
দুটি ছড়া

১. শোকের শোণিতে হোসেন লিখেছি
পিপাসার বুকে জল,
আশুরা এসেছে ন্যায়ের নামতা
পাঠ করি ফের চল।

২. এযিদ মরে বারে বারে
হোসেন মরেও মরে না,
ইতিহাসে বিপ্লবীদের
রক্ত বৃথা ঝরে না।

হৃদয়ে মাতম
আমির সোহেল

হৃদয়ে মাতম উঠে।
করুণতর প্রিয়জন বিয়োগে।
ইতিহাসের রক্তক্ষরা দিনে ফোরাতের নীল জলে
লাল স্রোত বয়!
এ কী বেদনা, এ কী লেলিহান বিষাদ!
মুনাফিকের হিংস্র কর্মে
শহীদি লোহুতে ভরে যায় কারবালার শুষ্ক প্রান্তর!

প্রিয় নবীজির আদরের দৌহিত্র ও স্বজনদের উপর
জঘন্য আক্রমণ আর নৃশংসতার সাথে হত্যা…..
ভাবতেই হৃদয় মোচড় দিয়ে উঠে!

কী করে মানুষ হন্তা হয়?
কী পাষাণ সীমার কোমল গলায় ছুরি চালায়,
খন্ডিত করে ইমামের শির!

ওরে বেহুশ, ওরে হায়েনা, এ কী করলি!
হৃদয়ে মাতম উঠে বারেবার,
অশ্রুসিক্ত হয় আঁখিপল্লব,
ভাবনার গতি স্তব্ধ হয়ে পড়ে,
মাতমের তীব্র শব্দে আকাশ ভারি হয়ে উঠে…
বেহেশতের যুবকদের সর্দার ইমাম হুসাইনকে করলি শহীদ
হায় এজিদ, হায় সীমার, হায় মুনাফিকের দল,
বেদনায় নীল ইতিহাস ভাসে
অন্তরে জ্বলে উঠে অনল!

আজও রক্তের নিশান ওড়ে কারবালায়
আহমেদ উল্লাহ

আজও রক্তের নিশান ওড়েÑ মরু-কারবালায়
আকাশে-বাতাসে গোধুলির গগন কিনারায়!
তৃষ্ণার হাহাকার ফোরাতের সফেদ ফেনিলে
যালেমের নিন্দিত জিঘাংসার ঝড় বহে অনিলে

দুরন্ত লু হাওয়ায় ভেসে ওঠে আজওÑ
কান্নাভেজা হায় হোসেন হায় হোসেন ধ্বনি
চারধারে আজও যেন বাজে শুনি ওইÑ
এজিদ-সীমারের নৃশংস হুঙ্কার কাপাঁনো অবনি

হোসেনের খণ্ডিত মস্তক কাঁদিয়েছে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল
অনন্ত-বেদনা দিয়ে গেছে দান এজিদ পিশাচের পাল
কেঁদেছিল তলোয়ার, কেঁদেছিল জগতের যত মুসলমান
কাঁদেনি তো ক্ষণিকের তরে নির্বোধ অসুর সীমারের প্রাণ
আজও গুমরে কেঁদে ওঠেÑ উষাÑনিশি মরুর কুয়াশা
কেঁদে ওঠে ফোরাতের জল, অশ্রুসিক্ত বাষ্প ধোঁয়াশা

ঝরেছিল জীবন যতই মোহাম্মদী গোলামের প্রাণ
গৌরবে ওড়েছিল সেদিন ইসলামের বিজয় নিশান
চিরতরে পরাভূত মুখোশধারী যালেম-বেঈমান যত
অনন্ত-গৌরবে ইসলামের তরী মহাবেগবান অবিরত

মুহরম এলে পরে লেলিহান শিখা জ্বলে রক্তের প্লাবনে
অনন্ত আঁখিজল মন জুড়ে টলমল ঝরে আজ সঘনে
শোকের ক্রন্দনরোল উন্মাতাল বুক জুড়ে বাজে অনুখন
দিশেহারা মন মগ্ন রোদনে খুঁজে-স্বর্গবাসী রসূল-নন্দন!

শোকাবহ কারবালা
সালাম তাসির

১০ই মহররম
বিষাদ ছুঁয়েছে মন
রৌদ্রে ঝলমল এই তো সকাল হঠাৎ অগ্নিদহন
কারবালার আকাশে সূর্য দহন নিভে যায় আলোর জ্যোতি
কে জানে কখন ফোরাত নদীতে বইবে উজান স্রোত
বাতাসের বিষণœ মন, দুঃখের মেঘ থমকে দাঁড়ায় সত্যের পাহাড় চূড়ায়,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়, অসত্যের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠার অসম যুদ্ধ,
ইমাম হোসেনের দৃঢ় প্রত্যয়, সাহসী সম্মুখযুদ্ধ কারবালায়
শ্রেষ্ঠ মানব ইমাম হোসেন সত্য প্রতিষ্ঠায়
নিজেকে উৎসর্গ করার দৃঢ় প্রত্যয় মনে ধারণ
পরাধীনতার শিকলে বন্দী নয়; বরং মৃত্যুই শ্রেয়।

যুদ্ধে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও অন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ নয়,
আত্মোৎস্বর্গ খোদার কাছে
হযরত ইমাম হোসেন ইসলাম রক্ষায় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর
চেতনায় নিজেকে প্রস্তুত করেন দ্বিধাহীন চিত্তে।

কারবালার পবিত্র মাটিতে অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হন
শক্রসেনার গোত্রতন্ত্র আর কায়েমী স্বার্থ রুখে দিতে,
এদিন অবরুদ্ধ শিবির, অবরুদ্ধ ফোরাত নদীর তীর,
পানিশূন্য শিবির তৃষ্ণার্ত হোসেন পরিবার,
শিশুর ওষ্ঠাগত প্রাণ
অথচ শত্রুসেনার পাষাণ হৃদয় জুড়ে মানবতার দুর্ভিক্ষ।

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ইমাম হুসাইন
দিগন্তে যুদ্ধের দামামা
এযিদী সেনার আক্রমণে ভ্রাতুষ্পুত্র শহীদ হন
শিবিরে তৃষ্ণার্ত পুত্রের আর্ত চিৎকার
পুত্রকে কোলে নিয়ে ইমাম হোসেন ছুটলেন
ফোরাত নদীর তীরে
শত্রুসেনার তীরের আঘাতে শিশুপুত্র শহীদ বাহুবন্ধনে পিতার।

শিবিরে ফেরার পথে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর
আদরের দৌহিত্র ইমাম হুসাইন তীরবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন
কারবালা প্রান্তরে দ্বীনের আলো নিভু নিভু প্রায়
দীন রক্ষায় ইমাম হুসাইন শহীদ হলেন,
বাতাসে ধ্বনিত হলো হায় হোসেন! হায় হোসেন!

কে ডাকে ঐ প্রান্তরে
রওশন রুবী

কে ডাকে ঐ কে ডাকে ঐ কারবালারই প্রান্তরে
কার ডকে ঐ ফোরাত হৃদয় কাঁপে ঢেউ যে মন্থরে
কাদের চোখে জলের ধারা বিষাদ বিছায় অন্তরে।
কে ডাকে ঐ কে ডাকে ঐ কারবালারই প্রান্তরে।

রক্তনদীর স্রোতের মাতম আরব বুকে আর্তনাদ
জলের ছলা জলের কলা ভাঙবে সবই সীমার ফাঁদ।
জিহ্বা চুষে তিয়াস মিটে, সীমার করে জুলুমবাদ।
রক্তনদীর স্রোতের মাতম কারবালাতে আর্তনাদ।

রাসূল পাকের পাগড়ি পরে কে ছুটেন ঐ কারবালার ?
কার হাতে ঐ শোভা পেল শেরে আলীর জুলফিকার?
কার চোখেতে চুমুর পরশ নবীকরীম একাকার?
রাসূল পাকের পাগড়ি পরে কে ছুটেন ঐ কারবালার?

মা ফাতেমার চোখের মনির জখম শরীর মোবারক
ছিন্ন মাথা লুটিয়ে কাঁদে, জান্নাতে মা লুটান Ñশোক,
হাসান হোসেন ডেকে কাঁদে তপ্তধুলি বিশ্বলোক
মা ফাতেমার চোখের মনির জখম শরীর মোবারক।

কে ডাকে ঐ আজো দেখ জুলুমকারীর ভাঙতে স্বর
ঘোড়ার খুরে উড়ছে ধূলো রক্ত ফুটে দেহের ’পর
ছড়িয়ে পড়ে রক্ত তারই ধূলি এবং জলের ’পর।
সে ডাকে ঐ সুদূর থেকে জুলুমকারীর ভাঙতে স্বর?

শোকার্ত মুহররম
নূরে জান্নাত নাছরিন

এসেছে মুহররম বছর ঘুরে
কর রে বরণ হে মুসলমান!
কারবারলার স্মৃতি ভারাক্রান্ত হৃদয়
হোসাইনি রক্তে রঞ্জিত কারবালার ময়দান।

ক্ষমতার লোভে হিংসার বশে
এজিদ ক্ষেপেছিল সেদিন,
কলা-কৌশলে দাওয়াত দিয়ে
বাজালো মরণ বীণ।

কাঁদেনি তো বুক তিল পরিমাণ
সীমার ছুরিতে রক্তাক্ত ময়দান,
মুখে সবার আহাজারি
ইয়া হোসাইন ইয়া হোসাইন।

নবী নন্দিনী খোদা-বান্দির
হোসাইন জানের জান,
দ্বীনের তরে অকাতরে
জীবন করেন দান।

মা ফাতেমার করুণ ক্রন্দন
সেদিন শুনেনি কেউ
কেঁদেছে আকাশ কেঁদেছে ধরণী
হোসাইনী শোকে ঢেউ।

এজিদ বাহিনী করেছে দখল
ফোরাত নদীর পার,
তৃষ্ণা-কাতর হোসাইনি দল
তস্ত মরুর হাহাকার।

এক ফোঁটা পানি দিতে সেদিন
হয়নি তাদের মায়া,
কেমন নিষ্ঠুর জালিম পশু
নরাধমের কায়া।

কারবালার করুণ কাহিনী
ভুলতে পারি না কভু!
হোসাইনি শোকে শোকার্ত মুহররম
কবুল কর প্রভু।

মুহররম
অধ্যাপক ডা. হাসিনা বানু

কোথা থেকে আওয়াজ শোনা যায়
পিপাসা পিপাসা
মাগো পানি দাও কলিজা ফেটে যায়।
কাঁদে আকাশ কাঁদে বাতাস
ভেসে বেড়ায় করুণ আওয়াজ
হায় হসেইন, হায় হুসেইন।
রাসূলের (সা) কলিজার টুকরা
এক ফোঁটা পানি তুলে দিতে মুখে
ছুটে যান শিশুপুত্র আসগর (রা) নিয়ে
ফোরাত নদীর দিকে
কিন্তু কী কঠিন হৃদয় ইয়াযীদ সৈন্যের
তীরের আঘাতে বক্ষ বিদীর্ণ করে শিশু আসগরের!
পানির অভাবে প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত সবাই এক সাথ
তবু ছাড়ে নাই তারা আল্লাহর নির্দেশিত পথ।
হায় হুসাইন হায় হুসেইন
করে আল্লার বান্দা
ইয়া মুহাম্মদ ইয়া মুহাম্মদ (সা)
বাতাসে ভাসে ক্রন্দনরত শ্বাস
উত্তাল করে আকাশ বাতাস।
পিপাসার্ত শিশু, মা, আরো অনেকের
পিপাসা বেড়ে যায়
যখন সেজদারত অবস্থায় তৃষ্ণার্ত ইমাম হুসাইনের
শির গর্দান থেকে গড়িয়ে পড়ে মাটিতে
সীমারের তরবারির আঘাতে
আর সওয়ার বিহীন দুলদুল ছুটে যায় পাগলপারা
সেই তখন থেকে আজও জমিন সাগর আকাশ বাতাস
ক্রন্দনরত একটু পানির জন্য
তাদের জন্য
যেখানে রসূলের (সা) বংশধর
শহীদ হয়েছেন ইয়াযীদের নিষ্ঠুরতায়
পিপাসায় কাতর হয়ে পানি পানি করে।

এখনো কাঁদছে ফোরাত
এম. এ. হাশেম আকাশ

থামবে না আর রোনাজারি
মানবের এই ধরাতে,
উঠল যে শোকের মাতম
কারবালা আর ফোরাতে।

ক্ষমতালোভী প্রতারকদের
কু-চক্রান্তের ফন্দিতে,
এজিদ, সিমার যা ঘটাল
ভাষা নেই তার নিন্দিতে।
কেয়ামত তক জ্বিন ও মানব
থাকবে সবাই কান্দিতে।

কৌশলে করে দখল
ফোরাত নদীর জল,
নায়ের পথের সংগ্রামীদের
ভাঙতে মনোবল
মৃত্যুতেও মানে না ভাই
সত্যাশ্রয়ীর দল।

চোখ মুদিলে ঐ দেখা যায়
আলীযাদা যান ছুটে,
সত্য ন্যায়ের অসি হাতে
শপথে দৃপ্ত পথে
অপরাধীর ভীরু হৃদয়
কাঁপে তার হুংকারেতে।

বীরযাদা বীর হোসেন
শিশু কাঁধে ঘোষেন
শুন রে ওরে বলি,
এ যে মানবকলি,
ওষ্ঠাগত প্রাণের মুখে
দাও, ক’ফোঁটা জল ঢালি।

মানব রূপের দানবরা সব
মানবতা ভুলি
তীরের বৃষ্টি দিয়ে শিশুর
বুকটা করে ফালি।
কচি শিশুর রক্তে লেখা
সেই কলঙ্কের কালি।

সুযোগ সন্ধানী কুফার
বিশ্বাসঘাতক সীমার
খঞ্জর হাতে হাসে
পুরস্কারের উল্লাসে
বীররাহু হোসেনের
ছিন্ন মস্তক হাতে ছোটে সোল্লাসে।

মস্তক নয়, ছিন্ন মানবতা
মন্দ মলয়ে মিশে তপোবনে,
এখানো কাঁদছে ফোরাত
বুকে জ্বালা হতাশনে,
বুকভরা তৃষ্ণা তার
শহীদি খুনের তপ্ত প্রস্রবনে।

থামবে না তার রোনাজারি
মানবের এ ধরাতে
এদিন যে শোকের মাতম
কারবালা আর ফোরাতে

ঘুরে দাঁড়াও ওহে মানব
হোসেনের সেই অসি হাতে
ফিরিয়ে এনে দৃপ্ত শপথ
তৃপ্ত মনের জনস্রোতে।
বুকে জ্বালা আগুন করো সব ছারখার
নিপাত থাক, ধ্বংস হোক বিশ্বের সকল সীমার।