সৎ বন্ধু : অমূল্য উপহার
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ২৫, ২০১৯
অনুবাদ : সরকার ওয়াসি আহম্মেদ
প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও বুদ্ধি-বিবেচনার অধিকারী ব্যক্তি এটি স্বীকার করেন যে, ধর্মীয় শিক্ষা হলো সবচেয়ে মূল্যবান উপহার যা আমরা একে অপরকে দিতে পারি এবং দেয়া উচিত, বিশেষ করে বন্ধুরা। কারণ, বন্ধুদের কল্যাণ এবং সুখের জন্য এটিই বেশি প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমান বিশে^ কিছু কিছু ব্যক্তি মনে করে যে, বস্তুগত কল্যাণ, যেমন : দামী খাবার খাওয়া, ফ্যাশনেবল পোশাক পরিধান করা এবং বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রিই শুধু তাদের প্রয়োজন। এরূপ ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে তারা যুবকদের আত্মিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন তা প্রদানের দায়িত্বকে উপেক্ষা করে।
বন্ধু হলো তারাই যারা একে অপরের সঙ্গ কামনা করে; যারা অপরের ভালো করতে চায় এ বিশ^াস থেকে যে, অপর পক্ষও সদুদ্দেশ্য নিয়ে একই রকম মনোভাব পোষণ করবে।
ইসলামে বন্ধু শব্দটির জন্য যে মূলগত অর্থ ব্যবহৃত হয় তা বন্ধুত্বের জন্য কতিপয় প্রয়োজনীয় গুণকে নির্দেশ করে- যেমন : সাদিক (সত্যবাদিতা বা সততা), খালিল (সহযোগিতা বা সম্পর্কযুক্ততা), ওয়ালি (রক্ষাকর্তা বা তত্ত্বাবধায়ক), রফিক (দয়ালু বা যত্নশীল)। একজন প্রকৃত বন্ধু কথাবার্তা ও দেখা-সাক্ষাতের সময় তোমাকে উদ্দীপ্ত করে, তার গোপন বিষয়গুলোতে তোমাকে বিশ^াস করে, তার দোয়ায় তোমাকে স্মরণ করে, তোমার চাওয়ার আগেই তোমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, প্রয়োজনের সময় তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা দেয়, তোমার আনন্দকে দ্বিগুণ করে ও তোমার দুঃখ-কষ্টে শরিক হয়।
এ জন্যই প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পাওয়া কঠিন, তাকে ছেড়ে যাওয়াও কঠিন আর তাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব।
এখানে আমরা পৃথিবীর যুবসমাজ- যাদেরকে আমরা মানব সমাজের সংগঠক মনে করি, তাদের উদ্দেশে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু উপহার দিতে চাই।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি একজন মুসলমানকে তার প্রয়োজন মতো খাওয়ায় দোযখের আগুন তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে।’
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন : ‘ তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বশ্রেষ্ঠ যে সর্বোত্তম মেজাজের অধিকারী।’
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র খাতিরে একজন ধার্মিক ব্যক্তিকে তার বন্ধু ও ধর্মের ভাই হিসেবে নির্বাচন করে সে আল্লাহ কর্তৃক জান্নাতে এমন একটি মর্যাদা পাবে যা তার অন্য কোন উত্তম কর্মের বিনিময়ে পায় নি।’
এ প্রসঙ্গে এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বন্ধু নির্বাচনে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং একজন ভালো মেজাজসম্পন্ন, জ্ঞানী এবং ধার্মিক ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার চেষ্টা করা উচিত। আর অসৎ কর্মশীল ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা পরিহার করতে হবে। ইমাম আস সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “মিথ্যাবাদী, মূর্খ, কৃপণ, ভীতু এবং অপকর্মকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকবে; (কারণ) মিথ্যাবাদী তোমাকে মিথ্যা ও অসত্যে জড়িয়ে ফেলে, মূর্খ ব্যক্তি এমনকি তোমার উপকার করতে গিয়েও তোমার ক্ষতি করে ফেলবে, কৃপণ ব্যক্তি তোমার প্রয়োজনের সময় তোমাকে অসহায় অবস্থায় ত্যাগ করবে, ভীতু ব্যক্তি যখন তোমার প্রতিরক্ষা ও সাহায্যের প্রয়োজন তখন তোমার পাশে দাঁড়াবে না এবং অপকর্মকারী সামান্য কিছুর বিনিময়েও তোমার সাথে বিশ^াসঘাতকতা করতে পারে।”
এভাবে আমাদের ধর্মীয় শিক্ষকগণ আমাদেরকে যাদের ধার্মিকতা ও সদগুণাবলি নেই তাদের সঙ্গ পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ, মূর্খ ও অপকর্মকারীদের সাথে বন্ধুত্ব কোন উপকারে তো আসেই না, বরং এ রকম বন্ধুত্ব নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিকর হতে পারে। যেহেতু যাদের জ্ঞানগত দীনতা রয়েছে এবং সৎ চারিত্রিক গুণাবলির অভাব রয়েছে, অন্যের অধিকারের প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধা নেই, এমনকি যেসব হতভাগা ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের অধিকারের প্রতিও তাদের শ্রদ্ধাবোধ নেই।
বন্ধুর অধিকার সম্পর্কে মহান ব্যক্তিবর্গ থেকে অন্তর প্রদ্দীপ্তকারী অনেক বাণী রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এখানে কয়েকটি বাণী উল্লেখ করা হলো :
মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘এক মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ব্যক্তির দর্পণ বা আয়নাস্বরূপ।’
এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ঐশী শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আমরা যা জানি, তা আমাদের বন্ধুদেরকে শিক্ষাদান করা উচিত এবং তাদের যেসব ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে সেসব শোধরানো ও তাদের অনাকাক্সিক্ষত অভ্যাস দূরীকরণে সাহায্য করা উচিত, যার মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করতে পারে। আমরা জানি, একটি আয়না আমাদেরকে দেখতে ভাল লাগছে নাকি খারাপ লাগছে, আমরা কি পরিচ্ছন্ন আছি, নাকি অপরিচ্ছন্ন- ইত্যাদি সম্পর্কে জানানোর ব্যাপারে বিশ^স্ত, সত্যিকারের বন্ধুও এমনই। একজন প্রকৃত বন্ধু হিসাবে আমাদেরও উচিত, তাদেরকে সেসব বিষয় অবহিত করা, যাতে তারা নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম কর্মটি সম্পাদন করতে পারে ও মানব জাতির জন্য তাদের দায়িত্ব পূর্ণরূপে পালন করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ভালো বন্ধু হলো এরূপ যে, যখন সে জানতে পারে তুমি তোমার পিতা-মাতার সাথে রুক্ষ বা অভদ্র আচরণ করছ, তখন সে তোমাকে এটি স্মরণ করিয়ে দেবে যে, তুমি তোমার পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনে অবহেলা করায় গুনাহ করছ এবং মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে অভিভাবকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাঁদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপভাবে একজন ভালো বন্ধু যখন জানতে পারবে যে, তুমি কারো নিন্দা করছ বা কথা বলার সময় অকথ্য ভাষা ব্যবহার করছ তখন তোমাকে উপযোগী বা মানানসই পন্থায় শোধরানোর চেষ্টা করবে।
এমন আরো অনেক উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে। একজনকে তার নিজের ও অপরের উপকারের জন্য ভালো বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করা উচিত। আর এ কথাটিও মনে রাখা উচিত যে, ইমাম আলী (আ.) আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন : ‘তোমার নিজের জন্যই একজন বিশ^স্ত ও সৎ বন্ধু খোঁজার চেষ্টা কর, তা না হলে তোমাকে অসৎ ও অধার্মিক ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে।’