সম্পাদকীয়
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২২, ২০১৯
ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল আশুরা ও আমাদের করণীয়
দশই মহররম ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল শোকাবহ আশুরা; হিজরি ৬১ সালের এ দিনে সাইয়্যেদুশ্ শুহাদা বেহেশতে যুবকদের নেতা হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) কারবালায় তাঁর স্বজন ও সহচরগণ সহ ইয়াযীদী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। এ ঘটনা মানব জাতির ইতিহাসের করুণতম ঘটনা।
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পরে হযরত ইমাম হাসান (আ.) খেলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্কে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সম্ভাব্য রোমান হামলা থেকে রক্ষার লক্ষ্যে তিনি তাঁর বৈধ খেলাফতকে মু‘আবিয়ার হাতে ছেড়ে দেন। মুআবিয়া হযরত ইমাম হাসান (আ.)-এর সাথে কৃত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে মৃত্যুকালে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর হাতে খেলাফতের দায়িত্ব হস্তান্তরের পরিবর্তে স্বীয় চরিত্রহীন পাপাচারী পুত্র ইয়াযীদকে খেলাফতে অধিষ্ঠিত করে গেলে ইয়াযীদ হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছ থেকে শক্তিপ্রয়োগে বাই‘আত আদায়ের জন্য মদীনার প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। কিন্তু ইমাম হোসাইনের ন্যায় ব্যক্তি ইসলামের সমস্ত সীমারেখা অমান্যকারী ইয়াযীদের আনুগত্য করলে যে কারো জন্য তা ইসলামি মূল্যবোধ বিসর্জনের সপক্ষে দলিল হিসেবে গণ্য হতো। এ কারণে তিনি ইয়াযীদের অনুকূলে বাই‘আত করা থেকে বিরত থাকেন এবং রক্তপাত এড়াবার লক্ষ্যে মদীনা ত্যাগ করে মক্কায় চলে যান।
মক্কায় তিনি লোকদের মধ্যে মুসলমানদের হুকূমাতের অবস্থা সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু ইয়াযীদ সেখানে তাঁকে হজ্বের ভীড়ে হত্যার জন্য গুপ্তঘাতক পাঠালে হযরত ইমাম (আ.) পবিত্র স্থানে রক্তপাত এড়াবার লক্ষ্যে মক্কা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং কূফার জনগণের দাও‘আতে সাড়া দিয়ে সেখানে পৌঁছার উদ্দেশ্যে কারবালায় উপনীত হন। সেখানে তিনি পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথিসহ ইয়াযীদী বাহিনী দ্বারা অবরুদ্ধ হন। ইয়াযীদের নির্দেশে তার বাহিনী ইমামের ওপরে ইয়াযীদের অনুকূলে বাই‘আত করার জন্য কঠোরভাবে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) কোনো অবস্থায়ই ফাসেক ইয়াযীদের অনুকূলে বাই‘আত করাকে জায়েয গণ্য করেন নি বিধায় তাদের এ চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। এমতাবস্থায় ইয়াযীদী বাহিনী তাঁকে তাঁর সকল পুরুষ স্বজন ও সহচর সহ, এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশুকেও, নির্মমভাবে হত্যা করে; কেবল আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ ইচ্ছায় হযরত ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ঐ সময় মরণাপন্ন অসুস্থ থাকায় এ হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পান।
হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আত্মত্যাগের এ ঘটনা মুসলমানদের জন্য বাতিলকে সহ্য করার সীমারেখাকে সুস্পষ্ট করে দেয়। এভাবে কারবালার ঘটনা যুগ যুগান্তর ধরে প্রকৃত ইসলামের অনুসারীদের জন্য প্রেরণার উৎসে পরিণত হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, ইতিহাসের সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের বিপরীতে কতক লোক কারবালার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ইয়াযীদকে নির্দোষ প্রমাণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা দাবি করছে যে, ইয়াযীদের অনুমতি ছাড়াই কারবালার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। আমরা এ ব্যাপারে কোনো দীর্ঘ আলোচনা ও মন্তব্য না করে কেবল মুক্তবিবেক মানুষদের কাছে প্রশ্ন করব : যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে যারা এ জন্য দায়ী ইয়াযীদ তাদেরকে শাস্তি দেয় নি কেন, বরং কেন তাদেরকে পুরষ্কৃত করেছিল এবং হযরত ইমামের পরিবারের সদস্যদেরকে কারারুদ্ধ করে রেখেছিল?
এটা আজ অনস্বীকার্য যে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের মধ্য দিয়ে ইসলামের বিজয় ও ইসলামি ঐক্য অভিমুখে মুসলিম উম্মাহ্র নবযাত্রা শুরু হয়েছে। তাই ইসলামের দুশমনদের পক্ষ থেকে একদিকে যেমন ইসলামের বিরুদ্ধে বহুমুখী হামলা চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে আশুরাসহ ইসলামের ইতিহাসের বিতর্কাতীত বিষয়গুলোকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামের দুশমনদের এ ষড়যন্ত্র ও হামলাকে জ্ঞানের অস্ত্র দ্বারা শক্তভাবে মোকাবিলা করা এবং ইসলামের অভিন্ন মৌলিক বিষয়গুলোর ভিত্তিতে উম্মাহ্র মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো অপরিহার্য ।
আমরা আশুরা উপলক্ষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি, বিশেষ করে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
ঈদুল আয্হার মোবারকবাদ
ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল পবিত্র ঈদুল আয্হা উপলক্ষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি, বিশেষ করে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণসহ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ও বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের প্রতি মোবারকবাদ। ঈদের আনন্দে প্রতিদিনই ভরে উঠুক ইসলামি উম্মাহ্র প্রতিটি পরিবারের গৃহ।