সম্পাদকীয়
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি উম্মাহ্র ঐক্যের অপরিহার্যতা
সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্ম ছিল মানব জাতির ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনের সূচনা। তাই তাঁর জন্মবার্ষিকী ঈদে মিলাদুন্নবী সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ ও মুস্তায্‘আফ্ জনগণের আনন্দ-উৎসবের শ্রেষ্ঠতম উপলক্ষ।
রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে মানব জাতির উদ্দেশে তাদের মুক্তির জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা পরিপূর্ণ পথপ্রদর্শক গ্রন্থ কোরআন মজীদ পৌঁছে দিয়েছেন এবং একে যে কোনো ধরনের হ্রাস-বৃদ্ধি থেকে সংরক্ষিত রেখেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ছিলেন কোরআন মজীদের মূর্ত প্রতীক; তিনি স্বীয় চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআনের শিক্ষা ও পথনির্দেশের বাস্তব প্রদর্শনী করেছেন- যা প্রমাণ করে যে, এ গ্রন্থ মানুষের জন্য পুরোপুরি অনুসরণ ও বাস্তবায়নযোগ্য। এ জীবনাদর্শ স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে এসেছে বিধায় তা সম্পূর্ণরূপে ভারসাম্যপূর্ণ। তাই এ দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে যেমন কোনোরূপ জোর-জবরদস্তির অবকাশ নেই, তেমনি এর বিস্তারের পন্থা সুস্থ বিচারবুদ্ধির কাছে আবেদন এবং এর প্রতিষ্ঠার পথ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দ্বীনের সাথে লোকদের সঠিক পরিচিতির অভাবের সুযোগ নিয়ে ইসলামের দুশমনরা তাদের অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এ দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাই এ দ্বীন তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষার সাথে সঠিকভাবে পরিচিত হওয়া এবং তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়া মুসলমানদের অপরিহার্য দায়িত্ব।
ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য মানবতার ঐক্য এবং এ লক্ষ্যে কোরআন মজীদে ইসলামি উম্মাহ্র ঐক্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কোরআন মজীদে ন্যূনতম অভিন্ন সূত্র তাওহীদ ও আখেরাতে ঈমান এবং র্শিক্ বর্জনের ভিত্তিতে আহ্লে কিতাবের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। এমতাবস্থায় মুসলমানদের ঐক্য ফরয হওয়া সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহও থাকতে পারে না। কিন্তু ইসলামের দুশমনদের ও মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রের ফলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য ও হানাহানি চলে আসছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নায়ক হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে ইসলামি ঐক্য গড়ে তোলার চালিকাশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে মুসলমানদের কাছে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জন্মতারিখ হিসেবে পরিগণিত দু’টি তারিখকে সমন্বিত করে ১২ থেকে ১৭ই রাবিউল্ আউয়ালকে ‘ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং যথাযথ মর্যাদায় এ সপ্তাহ উদ্যাপনের জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি আহ্বান জানান। তখন থেকে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ, বিশেষ করে ইরানি মুসলমানগণ প্রতি বছর যথাযথ মর্যাদা সহকারে এ সপ্তাহটি উদ্যাপন করে আসছে।
দুর্ভাগ্যজনক যে, বিগত কয়েক দশক যাবত ইসলাম ও মানবতার দুশমন বলদর্পী শক্তিবর্গের সামরিক, রাজনৈতিক, প্রচার, ষড়যন্ত্র ও কৌশলগত সহযোগিতায় ইসলামের নামে গড়ে ওঠা কতগুলো তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভ্রান্তিকর প্রচার ও সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে ইসলামের ওপর সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের কলঙ্ক লেপনের পাশাপাশি মুসলমানদের হত্যার কাজে মেতে ওঠে। সৌভাগ্যক্রমে সিরিয়া ও ইরাকে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া সম্ভব হয়েছে এবং আশা করা যায় যে, অন্যান্য এলাকায়ও অচিরেই এদের সন্ত্রাসী তৎপরতার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।
সিরিয়া ও ইরাকে বলদর্পী শক্তির এজেন্ট সন্ত্রাসী শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইসলামি ভূখ- ফিলিস্তিনের বুকে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ যায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের মোকাবিলাকারী এতদঞ্চলের মুক্তিকামীদের সাথে ফিলিস্তিন ইস্যুতে শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে পরিকল্পিত বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠা নিশ্চিতকরণ। এ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষক বলদর্পী আমেরিকা দিশাহারা হয়ে পড়েছে এবং অতি সম্প্রতি ইসরাইলস্থ স্বীয় দূতাবাস তেল্ আভীভ্ থেকে জেরুজালেমে (বায়তুল মুকাদ্দাসে) স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য যায়নবাদী ইসরাইল অনেক বছর আগেই স্বীয় রাজধানী জেরুজালেমে স্থানান্তরিত করে, কিন্তু আমেরিকা সহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই স্বীয় দূতাবাস সেখানে স্থানান্তরিত করে নি, ফলে ইসরাইলি পদক্ষেপ খুব বেশি গুরুত্ব লাভ করে নি। আমেরিকা কর্তৃক স্বীয় দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণার ফলে আরেক বার প্রমাণিত হলো যে, যারা ইসরাইলের অস্তিত্ব মেনে নিয়ে বৃহৎ শক্তির সহায়তায় ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের আশা করছিলেন তাঁরা এতদিন বিরাট ভুলের মধ্যে ছিলেন; বরং অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের বিলুপ্তি ও সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখ- জুড়ে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে এ সমস্যার একমাত্র সমাধান এবং সে লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ অপরিহার্য।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে ও বিশ্বের মুস্তায্‘আফ্ জনগণকে, বিশেষ করে নিউজ লেটারের পাঠক-পাঠিকাগণকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের বিজয় দিবস
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে আমরা নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণসহ বাংলাদেশের সকল জনগণের প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি।