সভ্যতার দোলনা ইরানের ঐতিহাসিক সুসা
পোস্ট হয়েছে: মে ১৫, ২০২২
দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের কারখে এবং দেজ নদীর মধ্যে অবস্থিত ঐতিহাসিক সুসা নগরী। একসময় প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং দৃষ্টিনন্দন শহর ছিল এটি।
সুসা নগরীতে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের বসবাস রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম সহস্রাব্দের শেষের দিক থেকে ১৩শ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এলাকাটিতে বহুস্তরের নগরবসতি গড়ে ওঠে। প্রাচীন শহরটি ছিল এলামের রাজধানী (সুসিয়ানা)। এছাড়া ৫২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে আচেমেনিয়ান রাজা দারিউস প্রথম এবং তার উত্তরসূরিদের প্রশাসনিক রাজধানী ছিল ঐতিহাসিক স্থানটি। ঐতিহাসিকভাবে বলতে গেলে, সুসা একসময় ব্যাবিলন এবং প্রাচীন পারস্যের মধ্যে অবস্থিত এলাম ঐতিহাসিক রাজ্যের অংশ ছিল। কারণ পারস্যের নিম্ন জাগ্রোস পর্বতমালা মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে গিয়ে ঠেকেছিল। রোববার দ্যা ট্র্যাভেল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, ইস্টারের বইতে পারস্য সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে শহরটির নাম উল্লেখ থাকায় মানুষজনের কাছে স্থানটি বেশ সুপরিচিত। সেই বিবরণ অনুযায়ী, এখানেই ইস্টার শক্তিশালী পারস্য সম্রাটের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সাহসের সাথে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হন নিজের হিব্রু জনগণকে। সুসা দীর্ঘকাল তার এই মহিমা ধরে রেখেছিল। ফলে পার্থিয়ান এবং সাসানি যুগে একটি কৌশলগত কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানে সুসা তিনটি প্রত্নতাত্ত্বিক ঢিবি নিয়ে গঠিত এবং প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এটি বিস্তৃত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটির উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আধুনিক ইরানি শহর শুশ। কেউ হয়তো খনন করা ঢিবিগুলো ঘুরে দেখতে পারেন আর কল্পনায় একনজরে দেখে নিতে পারেন, তখনকার বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে গৌরবের দিনগুলোতে শহরটি আসলে কেমন ছিল। দর্শনার্থীরা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির আরদেশির প্রাসাদ, বিভিন্ন খননকৃত প্রশাসনিক, আবাসিক এবং অন্যান্য স্মৃতিস্তম্ভ দেখে খুব সহজেই অতীতে ডানা মেলতে পারেন। সুসার প্রাচীন স্থানের খুব কাছাকাছি রয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা-সংরক্ষিত জিগুরাট। এছাড়াও ইরানে সিল্ক জিগুরাট রয়েছে যা খ্রিস্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দের প্রথম দিকের প্রাচীনতম পরিচিত জিগুরাটগুলোর অন্যতম। এই মেসোপটেমিয়ান পিরামিডগুলোর বেশিরভাগই বর্তমান ইরাকে অবস্থিত। তবে কিছু ইরানেও রয়েছে। সব মিলিয়ে সুসা এমন একটি অঞ্চলের অংশ যাকে প্রায়শই সভ্যতার দোলনা বলা হয়। শহরটির নাম প্রাচীনতম সুমেরীয় নথিতে দেখা যায়। এছাড়া এটি মানব ইতিহাসের প্রথম নথিভুক্ত শহরগুলোর অন্যতম। সূত্র: তেহরান টাইমস।