সংবাদ বিচিত্রা
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
১ ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে পুতিনের বৈঠক
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, সিরিয়া ইস্যুতে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার সহযোগিতার ফলাফল একথাই প্রমাণ দিচ্ছে যে, চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও তেহরান এবং মস্কো নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
গত ২ নভেম্বর ২০১৭ তেহরান সফররত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেয়া সাক্ষাতে এ কথা বলেছেন তিনি। এ সময় রুশ প্রেসিডেন্ট তেহরানের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে মস্কোর স¤পর্ক আরো গভীর করার বিষয়ে প্রস্তাব দিলে সর্বোচ্চ নেতা তাঁকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের কার্যকর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের অভিজ্ঞতাকে সম্পর্ক আরো গভীর করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, সিরিয়াতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট উগ্র সন্ত্রাসীদেরকে সমর্থন দিয়েছে এবং তারা সেখানে পরাজিত হয়েছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই, কিন্তু তারপরও তারা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ইরান-রাশিয়ার সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন সর্বোচ্চ নেতা। সিরিয়া ইস্যুতে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে যে সহযোগিতামূলক স¤পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা অব্যাহত রাখার কথা বলেন সর্বোচ্চ নেতা।
এ সময় তিনি পরিষ্কার করে বলেন, সিরিয়ার জনগণই সে দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে; অন্য কেউ নয়। কিংবা সিরিয়া সরকারকে চাপ দিয়ে বিদেশী কোনো শক্তি কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করাতে পারবে না।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরান ও রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করতে পারে। দু দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানের চেয়ে আরো অনেক বেশি বাড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ইরানকে কৌশলগত মিত্র ও মহান প্রতিবেশী বলে বলে উল্লেখ করেন। তিনি সু¯পষ্টভাবে বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো ক্ষেত্রে সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টিকে তিনি স্বাগত জানাবেন।
পুতিন বলেন, ইরান ও রাশিয়া জ্বালানি, আধুনিক প্রযুক্তি, কৃষি এবং যৌথ তেল-গ্যাস ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করতে পারে।
সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ফলাফলের প্রশংসা করে পুতিন দেশটির জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও মানানসই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিবেচনার আহ্বান জানান। সিরিয়া বিষয়ে যৌথ লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতার অবস্থানের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, এটা যেমন ছিল জ্ঞানদীপ্ত সিদ্ধান্ত তেমনি খুবই ফলপ্রসূ। তিনি আরো বলেন, ‘সিরিয়া ইস্যুতে আমরা বিশ্বের সামনে একথা প্রমাণ করেছি যে, বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই আঞ্চলিক সমস্যা আমরা নিজেরা সমাধান করতে পারি।
ইরানের পরমাণু সমঝোতা স¤পর্কে পুতিন বলেন, একতরফাভাবে এ সমঝোতায় কোনো রকমের পরিবর্তন আনার বিরোধী মস্কো। পাশাপাশি তাঁর দেশ ইরানের প্রতিরক্ষাসহ অন্য কোনো ইস্যুর সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি যুক্ত করার পক্ষপাতি নয়।
২ পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে : রুহানি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা রক্ষার ক্ষেত্রে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। রাজধানী তেহরানে ১ নভেম্বর ২০১৭ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রুহানি এসব কথা বলেন।
তিনি বহুপক্ষীয় পরমাণু সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ সমঝোতা রক্ষা করা সম্ভব হলে আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে তা অবদান রাখবে। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তেহরান ও মস্কো উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
সন্ত্রাসবাদবিরোধী চূড়ান্ত লড়াইয়ে দু’দেশের মধ্যকার পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বরোপ করেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, সিরিয়া সংকটসহ যেকোনো উত্তেজনা কমাতে তেহরান ও মস্কোর মধ্যে সহযোগিতামূলক স¤পর্ক থাকাটা জরুরি। তিনি রাশিয়াকে কৌশলগত ও সৎ প্রতিবেশী মিত্র বলে উল্লেখ করেছেন।
বৈঠকে পুতিন বলেন, ইরান ও রাশিয়া জ্বালানি, অর্থনীতি, শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি এবং পরিবহন যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক সুস¤পর্ক রেখে চলেছে। পুতিন জোর দিয়ে বলেন, কোনো একপক্ষ পরমাণু সমঝোতা বানচাল করতে পারবে না।
৩ জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি’র সুদৃঢ় অবস্থান চাইলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ বলেছেন, জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির প্রেক্ষাপটে একটি সমন্বিত জবাবের সিদ্ধান্ত নিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মুসলিম দেশগুলোর বৃহত্তম সংগঠন ওআইসির একটি জরুরি সম্মেলনে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-র এ ৬ষ্ঠ বিশেষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই বৈরী পদক্ষেপে ওআইসি দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। আমাদের অবশ্যই আল কুদস (জেরুজালেম) বিষয়ে এ পর্যন্ত গৃহীত ওআইসির বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তসমূহ নিয়ে নিবিষ্টভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন যে, এই জরুরি সম্মেলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই জোরালো বার্তা পৌঁছে দেবে যে, আমরা ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের লড়াইয়ে তাদের পেছনে ই¯পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ এবং আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও শক্তি যোগাব।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ও এর জনগণ জেরুজালেমকে ইসরাইলের কথিত রাজধানী হিসেবে মার্কিন ঘোষণার বিপক্ষে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল এবং ন্যায় ও সুবিচারের প্রহসনের সম্মুখীন ফিলিস্তিনিদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকার গঠনমূলক ও আশাব্যাঞ্জক ভূমিকা পালনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে সামিল হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে তার অটল অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং এ সংকট সমাধানে একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের আওতায় একটি গঠনমূলক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর মার্কিন ঘোষণা এবং তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর প্রক্রিয়া মুসলিম অনুভূতিকে আহত করেছে এবং ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এছাড়া এটি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার জন্যও বিরাট হুমকির সৃষ্টি করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এই সিদ্ধান্ত আরব-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ার সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মার্কিন প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস করেছে। রাষ্ট্রপতি একই সাথে ইসরাইলের গৃহীত নীতি-কৌশল ও পদক্ষেপসমূহ বাতিলের জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশেষ করে ওআইসির তাৎক্ষণিক ও সক্রিয় স¤পৃক্ততা কামনা করেন।
ফিলিস্তিনের ভাই ও বোনদের অধিকার হরণ করে তাদের মনের ভেতর আরেক দফা নির্দয় আঘাত করার প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করে ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মলেনের আয়োজন করায় তুর্কি নেতাকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘোষণায় মুসলমানদের পবিত্র শহর আল কুদস-এর ওপর ইসরাইল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। তাতে ওই শহরের ঐতিহাসিক ও আইনি পরিচয়,অধিবাসীদের জাতীয়তার ধরন এবং এর আরব-ইসলামিক চরিত্র বদলে যাবে। তিনি বলেন, এখানে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান ও প্রথম কেবলা হলো ‘হারাম আল-শরিফ’। তাই মুসলিম বিশ্ব তা কখনোই মেনে নেবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ৪৬৭ নম্বর প্রস্তাবে জেরুজালেমের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবে ইসরাইলকে ওই ভূখ-ে বসতি স্থাপন বন্ধ করে জেরুজালেমের আইনি পরিচয় এবং জনমিতিক বৈশিষ্ট্য বদলে দেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি প্রধান ও তার সদস্যদের জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থন প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং দেশহারানো রোহিঙ্গাদের পক্ষে সম্প্রতি অস্টানা সায়েন্স সামিটে ঘোষিত প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে জীবন বাঁচাতে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদে, সুরক্ষিত এবং সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর স্থায়ী চাপের প্রয়োগের আহ্বান জানান।
৩-১ জেরুজালেম মুসলমানদের কাছে মক্কা-মদীনার মতো পবিত্র : আল-আজহার
মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্ড মুফতি আহমেদ আত-তাইয়্যেব বলেছেন, আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর (সা.) মতো পবিত্র স্থান।
তিনি আরো বলেন, জেরুজালেম শহরের একটি পাথরের টুকরার মালিকানাও ইহুদিদের নেই। সেখানকার ইট-কাঠ-পাথর সব মুসলমানদের স¤পদ। কাজেই তারা জেরুজালেমে তাদের উপাসনালয় থাকার যে দাবি করে ভিত্তিহীন।
আল-আজহারের গ্রান্ড মুফতি গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ কায়রোয় এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে কেন পবিত্র স্থান তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি কুরআনের আয়াত ও হাদিসের বাণী তুলে ধরেন। আহমেদ আত-তাইয়্যেব বলেন, ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বেও জেরুজালেম শহরে আরবরা বসবাস করত। তিনি বলেন, ওল্ড টেস্টামেন্টকে (তাওরাত) উদ্ধৃত করে ইহুদিরা আল-আকসা মসজিদকে তাদের সম্পদ বলে যে দাবি করে তার কোনো ভিত্তি নেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেম শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় তার নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদসমৃদ্ধ শহর জেরুজালেম ১৯৬৭ সালে ইহুদিবাদী ইসরাইল দখল করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিন জবরদখল করে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইলকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিলেও জেরুজালেম শহরের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয় নি এই বিশ্বসংস্থা। অথচ সেই শহরটিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন ট্রা¤প। তাঁর এই ঘোষণার বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
৪ পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করল ওআইসি
পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করেছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি। পাশাপাশি আমেরিকার পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মুসলিম দেশগুলোর নেতারা এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে ওআইসি-র পদক্ষেপ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার এক সপ্তাহ পর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে বুধবার ওআইসি-র বিশেষ জরুরি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং মুসলিম নেতারা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ ও পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসকে তার রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্মেলন শেষে কড়া যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন ওআইসি-র নেতারা। এতে তারা বলেছেন, ‘৫৭ জাতির এ জোট দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়ে ন্যায্য ও পূর্ণাঙ্গ শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।’
এছাড়া, ফিলিস্তিনের ওপর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর জন্য এ বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ড্রোনাল্ড ট্রাম্প যদি তার অবৈধ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসেন তাহলে সমস্ত পরিণতির জন্য তাকে দায়ী থাকতে হবে সতর্ক করা হয়েছে।
ওআইসি-র নেতারা কঠোর নিন্দা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি এটা বিপজ্জনক এক ঘোষণা যার লক্ষ্য হচ্ছে বায়তুল মুকাদ্দাসের আইনগত মর্যাদা পাল্টে দেয়া; ট্রাম্পের এ ঘোষণা বাতিল করা হলো এবং এর কোনো বৈধতা নেই।’
৫ সর্বোচ্চ নেতার ভূমিক¤প কবলিত এলাকা পরিদর্শন
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের লক্ষ্যে গত ২০ নভেম্বর ২০১৭ কেরমানশাহ প্রদেশ সফর করেন।
জনগণের উদ্দেশে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘খুব ইচ্ছে ছিল দুঃখ-দুর্দশাহীন আনন্দঘন সময়ে আপনাদের কাছে আসব, এই কঠিন বিপদে বিষণ্ন, নিরানন্দ, শোকাচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে নয়।’
সর্বোচ্চ নেতা পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধে কেরমানশাহবাসীর বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের এই শহর ইরাকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময়ও আক্রান্ত হয়েছিল। তখনও আপনারা বীরত্ব, সাহসিকতা এবং ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, এবারও সেরকম ধৈর্যের পরিচয় দেবেন বলে আমি আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘ভূমিক¤প একটা বড় রকমের মুসিবত, সবকিছু ধূলিস্মাৎ করে দেয়। কিন্তু সেদিন আপনারা যেভাবে আগ্রাসীদের পরাস্ত করেছেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগও সেভাবে মোকাবেলা করে বিপদকে নিয়ামতে পরিণত করে তুলতে হবে। এই দুর্যোগে সমগ্র জাতি মর্মাহত, সবার সহানুভূতিশীল মন আপনাদের এই কেরমানশাহে পড়ে আছে। দেশের মানুষ দায়িত্বশীলতার সাথে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৭.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অন্তত ৪৩৭ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানি হয়। এ ছাড়া, এ ভূমিকম্পের ফলে আহত হন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
৬ তেহরানে ইসলামি ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজধানী তেহরানে ৫-৭ ডিসেম্বর ২০১৭ তিন দিনব্যাপী ইসলামি ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি, মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব অংশ নেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব ফায়েজ আহমেদ ভুইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ও বাংলাদেশ আল কুদ্স কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো ‘ইসলামি ঐক্য ও নতুন ইসলামি সভ্যতা’।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর ইরান ১২ রবিউল আউয়াল থেকে ১৭ রবিউল আউয়াল পর্যন্ত ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ পালন করে। ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (র.) এই ঐক্য সপ্তাহের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যকার নানা সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য এ সম্মলনের আয়োজন করা হয়।
৩১তম আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে স¤পর্ক রাখার বিষয়ে কয়েকটি আরব ও মুসলিম দেশের নির্লজ্জ স্বীকারোক্তির তীব্র সমালোচনা করেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি।
সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট রুহানি ইরাক ও সিরিয়ায় উগ্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশ দুটির সামরিক বাহিনীর নানা সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠানের সময় সিরিয়ার আলেপ্পো শহর মুক্ত হয় এবং ঘটনাক্রমে এবার ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশের চূড়ান্ত পতন হয়েছে। আন্তর্জাতিক বলদর্পী শক্তিগুলো ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে, আমেরিকা ও ইসরাইলসহ বলদর্পী শক্তিগুলো দায়েশকে সৃষ্টি করেছে এবং আঞ্চলিক দেশগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দিয়েছে। তারাই মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি এবং অন্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।
৭ তাকফিরি মতবাদ মোকাবিলার উপায় নিয়ে তেহরানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
উগ্র তাকফিরি মতবাদ মোবাবিলার উপায় নিয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানে দু’দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিশ্বের ৯০টি দেশের অন্তত ৫০০ শিয়া ও সুন্নি আলেম ও চিন্তাবিদ অংশগ্রহণ করেন।
মুসলিম দেশগুলোর ভেতরে ও বাইরে থেকে ইসলামি বিশ্বকে বিভক্ত করে ফেলার লক্ষ্যে তাকফিরি মতবাদ ছড়িয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টা চলছে তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
যে মতবাদে বিশ্বাসীরা অন্যান্য মতবাদ ও মাজহাবে বিশ্বাসীদের ‘কাফের’ বলে আখ্যায়িত করে তাকে তাকফিরি মতবাদ বলা হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিনিয়র উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর বেলায়েতির পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ২২ নভেম্বর তেহরানে এই সম্মেলন শুরু হয়। ইসলামি জাগরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক অ্যাসেম্বলির চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করছেন ড. বেলায়েতি।
তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ইসলামের শত্রুরা মুসলিম দেশগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে এসব দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। এ ছাড়া তাকফিরি মতবাদ ছড়িয়ে দেয়াসহ নানা উপায়ে শত্রুরা মুসলিম দেশগুলোর স¤পদ লুট করার পাঁয়তারা করছে।
বেলায়েতি বলেন, সাত বছর আগে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে সৃষ্ট ইসলামি গণজাগরণের জের ধরে স্বৈরশাসকদের পতনের পর তাকফিরি মতবাদ সৃষ্টি হয়েছে। এই মতবাদ সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ওয়াহাবি মতবাদ এবং পর্দার অন্তরালে কাজ করছে ইসলামের শত্রুরা।
তিনি বলেন, মানবতার মুক্তির ধর্ম ইসলামকে কলঙ্কিত করাই এই মতবাদ সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য। পুরুষদের ওপর গণহত্যা চালানো, শিশুদের গলা কেটে হত্যা করা এবং নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানোর মতো ইসলামপূর্ব যুগের বর্বরতা আবার চালু করার উদ্দেশ্যে তাকফিরি মতবাদ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা বলেন, আশার কথা হচ্ছে, তাকফিরি মতবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব জেগে উঠেছে এবং এই মতবাদে বিশ্বাসী জঙ্গিরা পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তিনি এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ইরাক ও সিরিয়ায় উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের পতনকে তুলে ধরেন।
৮ ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ
ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর জুমআ নামাযের পর এসব বিক্ষোভ মিছিল হয়।
এ সময় তারা আমেরিকা ও ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করে নানা স্লোগান দেন। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি নিজেদের সংহতি ও সমর্থন প্রকাশ করেন।
ইরানের পবিত্র শহর কোম ও মাশহাদেও ইসরাইল এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এছাড়া, তেহরানের জুমআর নামাযের খুতবায় আয়াতুল্লাহ আহমাদ খাতামি বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণা প্রমাণ করেছে ইন্তিফাদা আন্দোলন ছাড়া ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।
৯ ইরান-রুশ সহযোগিতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদার করবে : রুহানি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, তেহরান-মস্কো সহযোগিতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদার করবে। তিনি বলেন, মস্কোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে কূটনৈতিক উপায়ে বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জ নিরসন করা সম্ভব হবে। এজন্য তিনি ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সবক্ষেত্রে সর্বাত্মক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
রাশিয়ার সোচি শহরে অনুষ্ঠিত ২২ নভেম্বর ২০১৭ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের অবকাশে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক সাক্ষাতে এসব কথা বলেন প্রেসিডেন্ট রুহানি। ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়ার অংশগ্রহণে ওই বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য তিনি রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সোচি বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার ওপরেও প্রেসিডেন্ট রুহানি গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময় যেসব চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে স¤পর্ক জোরদার হলে তাতে দু দেশ লাভবান হবে এবং কোনো দেশের জন্য তা ক্ষতির কারণ হবে না। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রুহানি পরমাণু সমঝোতা স¤পর্কে বলেন, ইরান কখনো আগে সমঝোতা লঙ্ঘন করবে না তবে কেউ তা লঙ্ঘন করলে নীরব থাকবে না।
ইয়েমেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট রুহানি উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সমস্যা সমাধান ও দারির্দ্যপীড়িত দেশটিতে গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পুতিনও তেহরান-মস্কো সম্পর্ক জোরদারের কথা বলেন। তিনি জানান, সবক্ষেত্রে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার স¤পর্ক উন্নত হবে। সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পাশাপাশি ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে স¤পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে বলেও পুতিন উল্লেখ করেন। পরমাণু সমঝোতা স¤পর্কে পুতিন বলেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং কেউ তা লঙ্ঘন করলে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
১০ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর উদ্বোধন করল ইরান
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি চবাহার সমুদ্রবন্দরের উদ্বোধন করেন। এ বন্দর উদ্বোধনের পর আশা করা হচ্ছে, ভারত থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত নতুন বাণিজ্য রুট চালু হবে।
ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহারে শহীদ বেহেশতি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। চারটি পর্যায়ে বন্দরের সামগ্রিক নির্মাণ কাজ শেষ হবে। প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শেষে গত ৩ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করা হয় এবং অনুষ্ঠানে ১৭টি দেশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, এ বন্দরের উদ্বোধন ইরানের জনগণ বিশেষ করে চবাহারের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, চবাহার বন্দর ইরানের ভেতর দিয়ে বেশকিছু বাণিজ্য করিডরকে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এছাড়া, এ বন্দর ইরানকে তার পূর্ব ও উত্তরের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং পরবর্তীকালে ইউরোপীয় দেশগুলোকে সংযুক্ত করবে।
২০০৭ সালে শহীদ বেহেশতি বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এরই মধ্যে ১০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। এটা হচ্ছে ইরানের একমাত্র মহাসাগরীয় বন্দর এবং এক লাখ টন ধারণক্ষমতার জাহাজও ভিড়তে পারবে এখানে। বন্দরের চার পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে বার্ষিক কার্গো ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ৮ কোটি ২০ লাখ টনে পৌঁছবে। এ বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে পণ্য পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ইরান। কিছুদিন আগে ভারত, আফগানিস্তান ও ইরান একটি চুক্তি সই করেছে যার আওতায় ভারতকে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয়া হবে। বিনিময়ে ভারত এ বন্দর নির্মাণের কাজে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
১১ পারমাণবিক ব্যাটারি তৈরির প্রযুক্তি অর্জন করেছে ইরান
চিকিৎসা ও শিল্প খাতে ব্যবহার উপযোগী পারমাণবিক ব্যাটারি তৈরির প্রযুক্তি অর্জন করেছে ইরান। এ খবর দিয়েছেন ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধানের উপদেষ্টা আসকার জারেয়ান।
তিনি গত ৪ ডিসেম্বর তেহরানে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পর বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে পারমাণবিক ব্যাটারি তৈরির প্রযুক্ত রপ্ত করল ইরান। তিনি আরো বলেন, কার্ডিয়াক পেসমেকার ও ল্যাপটপ তৈরির কাছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া, এর সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করে এটিকে তেল খাত ও কৃত্রিম উপগ্রহ স্থানান্তরের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব।
আসকার জারেয়ান বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেশীয় কো¤পানির সহযোগিতা শক্তিশালী করার মাধ্যমে এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণ করার পদক্ষেপ নেবে তেহরান। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রে ইরানের সামনে সম্ভাবনার নতুন অনেক দিগন্ত খুলে গেছে বলেও তিনি জানান।
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধানের উপদেষ্টা আরো বলেন, অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় আলবোর্জ প্রদেশে দেশের প্রথম আয়ন থেরাপি সেন্টার স্থাপন করা হবে।
জারেয়ান বলেন, আয়ন থেরাপি প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক দিয়ে ইরান হবে বিশ্বের ষষ্ঠ দেশ। ক্যান্সারসহ আরো কিছু দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় আয়ন থেরাপি ব্যবহৃত হয়।
১২ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরান সফর
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন গত ৯ ডিসেম্বর দু দিনের সফরে ইরানে এসেছিলেন। সফরের প্রথম দিনেই তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যু এবং তেহরানের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যাংকিং স¤পর্কের বিষয়টি নিয়ে বরিস জনসন আলোচনা করেন।
এ সফরে বরিস জনসন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি, জাতীয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি এবং ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি এবং ইরানের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. আলী লারিজানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
গত ৯ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে তেহরানে এক বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের নীতির সমালোচনা করে কোনো কোনো পশ্চিমা দেশ যেসব বক্তব্য দেয় তা নাকচ করে দিয়ে শামখানি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে তেহরান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি বলেছেন, তাঁর দেশ হস্তক্ষেপ না করলে উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশ এতদিনে গোটা ইরাক ও সিরিয়া দখল করে ইউরোপের সীমান্তে পৌঁছে যেত।
ইরানের এই শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ইরাক ও সিরিয়া সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে দেশ দুটিতে সামরিক উপদেষ্টার কাজ করেছে তেহরান। দায়েশ নির্মূলে ইরানের এই ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে তিনি জানান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জেরুজালেম শহরকে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারেও তিনি বলেন, জেরুজালেম ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি মুসলমানদের স¤পদ। ট্রাম্পের অজ্ঞতাপূর্ণ ঘোষণা ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি জোরদার করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাক্ষাতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, তাঁর দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুজালেম সংক্রান্ত ঘোষণার বিরোধিতা করেছে। তেল আবিব থেকে দূতাবাস জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা ব্রিটেনের নেই বলেও তিনি জানান।
১৩ সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী ইরান ও বাংলাদেশ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও বাংলাদেশ পরস্পরের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আব্বাস ভায়েজী দেহনাভি ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এই আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা এ খবর জানায়।
গত ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ঢাকায় আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ড. ভায়েজী বলেন, জাতিগুলোর মধ্যে মৈত্রির একটি শক্তিশালী বন্ধন হচ্ছে শিল্প। এ ছাড়া, পার¯পরিক সহাবস্থানের স্লোগান প্রচার ও পর¯পরের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সর্বোত্তম মাধ্যমও হচ্ছে শিল্প।
সিনেমা ও থিয়েটার শিল্পে ইরানের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে দেশটির রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তেহরানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক স¤পর্ক শক্তিশালী করতে ঢাকার আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেন।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসবে ইরান, নরওয়ে, মিশর ও চীন অংশগ্রহণ করে।
১৪ ইরান-রাশিয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সহযোগিতা চুক্তি সই
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রক্ষণাবেক্ষণ ও গবেষণায় পার¯পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে ইরান ও রাশিয়া। ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পর্যটন সংস্থা সিএইচটিও এবং রুশ স্টেট হারমিটেজ মিউজিয়াম কর্মকর্তাদের মাঝে এই সমঝোতা সই হয়।
ষষ্ঠ সেন্ট পিটাসবার্গ ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ফোরামের অংশগ্রহণকালে গত ১৯ নভেম্বর ২০১৭ সমঝোতাটি সই করেন দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে ইরানের পক্ষে সই করেন দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পর্যটন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান মোহাম্মাদ বেহেশতি এবং রাশিয়ার পক্ষে সই করেন স্টেট হারমিটেজ মিউজিয়ামের মহাপরিচালক মাইকেল পেটরোভস্কি। হারমিটেজ হচ্ছে সেন্ট পিটাসবার্গের একটি শিল্প ও সংস্কৃতি জাদুঘর।
রাশিয়ায় ইরানের সাংস্কৃতিক অ্যাটাচি রেজা মালেকি জানান, পেটরোভস্কি তার মিউজিয়াম ও সিএইচটিও এর সহযোগিতাবিষয়ক নথিপত্রে সই করার ক্ষেত্রে ইরানি অংশের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সমঝোতাটিকে একটি উদ্যোগ হিসেবে আশা করা হলেও সংস্কৃতি বিনিময়, অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান এবং গবেষণা ও অধ্যয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে, বেহেশতি আশা করেন সমঝোতাটি দুপক্ষের মধ্যে বিস্তর বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি প্রস্তাবনা হিসেবে কাজ করবে।
প্রতœতত্ত্বে কার্যকর সহযোগিতা, প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ এবং ঐতিহাসিক স্থানের মেরামত ও পুনর্নির্মাণ, ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভের গবেষণা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রয়োজনীয় পরিবেশ প্রস্তুত করার লক্ষ্যেই সমঝোতাটি সই করা হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় ইরান ও রাশিয়া প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত বিষয়ে গবেষণায় যৌথ প্রকল্প পরিচালনা করবে।
১৫ চলতি বছরে ইরান-ইইউ’র মধ্যে এক হাজার কোটি ইউরোর চুক্তি স্বাক্ষর
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ’র মধ্যে চলতি বছর যেসব চুক্তি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য এক হাজার কোটি ইউরো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন বিষয়ক কমিশনার ফিল হোগান এ কথা জানান।
ইরান সফররত হোগান রাজধানী তেহরানে গত ১ নভেম্বর ২০১৭ সাংবদিকদের বলেন, বর্তমানে ইইউ এবং ইরানের মধ্যে যে যোগাযোগ রয়েছে তাতে দু’দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আশা করে মার্কিন কংগ্রেস ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে এবং এটাই হবে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ।
ফিল হোগান বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা গভীর করতে চাই। ইরানের ভেতরের পরিবেশ চমৎকার এবং সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে আমরা সম্পর্কের অগ্রযাত্রা দেখতে আগ্রহী।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯টি দেশের ৭০ জন প্রতিনিধি নিয়ে ফিল হোগান ইরান সফর করেন এবং তাঁর সফরের মূল লক্ষ্য ছিল তেহরানের সঙ্গে ইইউ’র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করা।
১৬ গ্যাস রপ্তানি প্রকল্পে ইরান-ওমান চুক্তি সই
আন্তর্জাতিক বাজারে যৌথভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিতে ওমানের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে ইরান। দু’দেশের তেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়েছে। ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান জাঙ্গানেহ এই তথ্য জানিয়েছেন।
এ চুক্তির ফলে উভয় দেশ যৌথভাবে এলএনজি রপ্তানির একটি উচ্চাভিলাসী প্রকল্পে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করে দক্ষিণ ইরান থেকে ওমানে গ্যাস সরবরাহ করা হবে এবং সেখানে এসব গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তর করে আন্তর্জাতিক বাজারে তা জাহাজযোগে পাঠানো হবে।
দু’দেশের মধ্যে একটি উপসামুদ্রিক পাইপলাইন স্থাপনের এই প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে টোটাল ও শেল সহ কয়েকটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক জ্বালানি কো¤পানি। এই প্রকল্পে নির্মিতব্য পাইপলাইনের আনুমানিক দৈর্ঘ্য ৪শ’ কিলোমিটারের অধিক। পাইপলাইনের উপকূলঘেঁষা অংশ ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় আসসালুয়েহ গ্যাস জোন থেকে গিয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হরমুজগানের কুহমোবারাকে গিয়ে ঠেকবে, যার দৈর্ঘ্য ২০০ কিলোমিটার। অন্যদিকে পাইপলাইনের সামুদ্রিক অংশের দৈর্ঘ্য হবে ২০০ কিলোমিটার, যা ইরানকে প্রতিবেশী ওমানের সোহার বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
১৭ ডলারবহির্ভূত মুদ্রায় বাণিজ্যে সম্মত ইরান-অস্ট্রিয়া
ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক লেনদেন ডলারবহির্ভূত মুদ্রায় স¤পাদন করতে সম্মত হয়েছে ইরান ও অস্ট্রিয়ার কর্মকর্তারা। গত ১৬ নভেম্বর ভিয়েনায় তেহরান চেম্বার অব কমার্সের সদস্যরা ও অস্ট্রিয়ার কোনট্রোলব্যাংক (ওইকেবি) কর্মকর্তারা এই সম্মতিতে পৌঁছেন।
এদিন কোনট্রোল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নতুন নিষেধাজ্ঞায় আমাদের বণিক ও ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠী উদ্বিগ্ন। তাঁদের এই উদ্বেগ প্রশমনে আমরা ডলারবহির্ভূত মুদ্রায় লেনদেন সেবা চালু করার প্রস্তাব করছি।
তেহরান চেম্বার অব কমার্স সদস্য ও ভিয়েনার কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন, কোনট্রোল ব্যাংক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এটি একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র।
রাজনৈতিক ঝুঁকির বিরুদ্ধে ইরানি অংশীদারদের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনায় ইচ্ছুক সব ইউরোপীয় আবেদনকারীর জন্য ব্যাংকটি বিনিয়োগ বিমার প্রস্তাব দিয়েছে।
২০১৬ সালের শুরুতে পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়নের পর অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় ও ওইকেবি ইরানের সঙ্গে লেনদেনকে ঘিরে কতিপয় শর্ত ঠিক করে এবং তখন থেকেই বিনিয়োগ পরিচালনা, গ্যারান্টি দিয়ে আসছে। পরবর্তীকালে লেনদেনকে ঘিরে দেয়া এই প্রস্তাব নবায়নও করা হয়েছে।
১৮ ইরানের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছে জাপান
ইরানে বিনিয়োগের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি ঋণপত্র বা লাইন অব ক্রেডিট (এলসি) খুলেছে জাপান সরকার। ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ জ্বালানি কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
গত ৬ নভেম্বর সোমবার ইরানের জ্বালানি উপমন্ত্রী হোশাঙ ফালাহাতিয়ান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, তেহরানে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইরানে বিনিয়োগ করতে বা যৌথভাবে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে তার সরকার আগ্রহী কো¤পানিগুলির জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র অনুমোদন দিয়েছে।
এসময় ইরানের ১৭তম আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ প্রদর্শনীর ফাঁকে তেহরান-টোকিও সহযোগিতার ওপর অনুষ্ঠিত একটি সেমিনার প্রসঙ্গে কথা বলেন ফালাহাতিয়ান। তিনি জানান, যৌথ ওই অনুষ্ঠানে জাপানি ফার্মগুলো ইরানি প্রতিপক্ষদের কাছে তাদের সক্ষমতাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। সেই সাথে তারা ইরানের বিদ্যুৎ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য জায়গা খুঁজে বের করারও চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে গত মাচের্র শেষের দিকে তেহরানে অবস্থিত জাপানি দূতাবাস একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এতে তেহরান-টোকিও চুক্তির সক্রিয়তাকে ইরান ও জাপানে বিনিয়োগে পার¯পরিক সহায়ক বলে উল্লেখ করা হয়।
জাপানি দূতাবাস ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাপান ২৭ মার্চ ইরানের একটি নোটিশ পাওয়ার পর ইরান-জাপান চুক্তি চূড়ান্ত করেছে এবং ইরান ও জাপানে বিনিয়োগে পার¯পরিকভাবে উৎসাহ ও সহায়তা দিতে দেশটি এই চুক্তির অনুশীলন শুরু করেছে।
এতে আরও বলা হয়, ইরান ও জাপানে বিনিয়োগ উৎসাহিত ও এতে সহায়তার ক্ষেত্রে চুক্তিতে পূর্ণ ও জটিল সব ইস্যু রয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই চুক্তির বাস্তবায়নে দু’দেশে বেশি বেশি বিনিয়োগ হবে এবং দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক স¤পর্ক জোরদার হবে।
ইরান-জাপান বিনিয়োগে সহায়তার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে ইরানের পার্লামেন্টে একটি বিল পাস হয়। এ বিলটির ফলশ্রুতিতে চুক্তিটি সামনে নিয়ে আসা হয় এবং এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। পরে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সম্মতিতে এটি আইনে পরিণত হয়।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাপান সরকার দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স¤পর্ক আরও সম্প্রসারিত করতে ইরানে পাঁচটি প্রকল্পে বিনিয়োগে ৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তেহরানে অবস্থিত জাপানি দূতাবাস জানায়, ২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া পরবর্তী চার বছরের জন্য টোকিও বছরে ৪০ বিলিয়নের বেশি জাপানি ইয়েন সহায়তা অব্যাহত রাখতে যাচ্ছে।
দূতাবাস আরও উল্লেখ করে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তান বিষয়ে ব্রাসেলস কনফারেন্সে এই সহায়তা বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংগঠন ও জাতিসংঘ সংস্থাসমূহের মাধ্যমে এই সহায়তা সম্প্রসারিত করা হবে।
১৯ ইরান-কাতার বাণিজ্য বেড়েছে ১২০ শতাংশ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন গত সাত মাসে ১২০ শতাংশ বেড়েছে। গত ২৫ নভেম্বর ইরান সফরে আসা কাতারের অর্থমন্ত্রী আহমাদ বিন জাসেম বিন মোহাম্মাদ আলে সানি’র সাথে বৈঠকের সময় ইরানের শিল্প, খনিজ ও বাণিজ্য মন্ত্রী মোহাম্মাদ শারিয়াতমাদারি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কাতার দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ পাঁচশ’ কোটি ডলার করার প্রস্তাব দিয়েছে। গত সাত মাসে ইরান প্রায় ১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে প্রকৌশল ও কারিগরি সেবা প্রদানের মাধ্যমে আয় হয়েছে প্রায় একশ’ কোটি ডলার।
২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। ওই আয়োজনকে সামনে রেখে কাতার ইরান থেকে বিপুল অংকের পণ্য আমদানি করবে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেন ইরানের বাণিজ্যমন্ত্রী।
২০ পরমাণু চুক্তি পরবর্তী ইরান-হাঙ্গেরি বাণিজ্য বেড়েছে দ্বিগুণ
ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা বা জেসিপিওএ বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকে ইরান ও হাঙ্গেরির মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১৫ সালে জেসিপিওএ সই হয় এবং এটি কার্যকর শুরু হয় ২০১৬ সাল থেকে। এরপর থেকেই ক্রমেই বাড়ছে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য।
গত ৩ ডিসেম্বর তেহরানে ইরান চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইন্স অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারের চেয়ারম্যান গোলাম রেজা শাফেয়ির সঙ্গে বৈঠকে হাঙ্গেরির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মিহালি ভারগা এই তথ্য জানান।
সংবাদ সংস্থা ইরনার খবরে বলা হয়, বৈঠকে ইরান ও হাঙ্গেরির ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এর মধ্যে হাঙ্গেরির এনেক্সিও কো¤পানি এবং ইরানের বেহিন সামান কো¤পানি ও থারমাল পাওয়ার প্লান্টস হোল্ডিং কো¤পানির মধ্যে হাইব্রিড কুলিং সিস্টেম উৎপাদনে প্রথম চুক্তিটি সই হয়েছে। পরের চুক্তিটি সই করেছে হাঙ্গেরির ইঞ্জিনিয়ারিং কো¤পানি ইভোপোরো। ইরানের গিজিন কো¤পানির সঙ্গে যৌথভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে এ সমঝোতাটি সই করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইভোপোরো ইরানি কো¤পানি পিশরো দিয়েসেলের সঙ্গে বৈদ্যুতিক রেলের সারঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরেকটি চুক্তি সই করেছে। চতুর্থ চুক্তিটি ১ হাজার বাস তৈরি করতে সই করা হয়েছে। হাঙ্গেরির ইকারুস ও ইরানের শাহার ব্যাংকের ভর্তুকি প্রতিষ্ঠান সিটি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড মাইনস ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের মধ্যে এ চুক্তিটি সই হয়েছে।
২১ ইরানের নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাল বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক পানিসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ইরানের নৌবাহিনীর প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। গত ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে বলে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলপথগুলোকে নিরাপদ রাখতে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে এবং জলদস্যুদের মোকাবিলায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।
নৌবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জলদস্যুদের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইরানের নৌবাহিনী তাদের অভিযানের ব্যাপ্তি এডেন উপসাগর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। সম্প্রতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ৪৯তম নৌবহর প্রায় তিন হাজার ৮০৪ নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ায় অংশ নেয়। এই নৌবহরে ‘সাবালান’ ডেস্ট্রয়ার এবং লজিস্টিক যুদ্ধজাহাজ ‘বান্দার আব্বাস’ ছিল।
ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর নৌবাহিনী নিয়ে গঠিত ফোরাম ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম বা আইওএনএস’র এ মহড়ায় ৩২টি দেশ অংশ নেয়।
২২ ইরানের ‘জামি আত তাওয়ারিখ’ ঐতিহাসিক দলিল : ইউনেস্কো
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২, ২০১৭
ইরানের ‘জামি আত তাওয়ারিখ’ গ্রন্থকে বিশ্বের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় সোমবার সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) ইরিনা বোকোভা এই ঘোষণা দেন। গত ২৪-২৭ অক্টোবর পর্যন্ত বৈঠক করে বিশ্বের ৭৮টি নতুন বিষয় ও ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি (আইএসি)।
আইএসির এই কমিটিতে ছিলেন ১৫ জন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে নতুন করে প্রস্তাব করা ঐতিহাসিক দলিল পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করেন। দুই বছরের প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬-১৭ সালের জন্য দলিলগুলোকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ তালিকায় ৪৩ নম্বরে পারস্যে মোঙ্গল ইলখানাতে লিখিত সাহিত্য ও ইতিহাস গ্রন্থ ‘জামি আত তাওয়ারিখ’কে স্থান দেওয়া হয়েছে। গ্রন্থটির লেখক রশিদউদ্দিন হামাদানি (১২৪৭-১৩১৮) ১৪ শতাব্দীর শুরুতে এটি রচনা করেন।
ব্যাপ্তির কারণে একে ‘প্রথম বিশ্ব ইতিহাস’ বলা হয়। গ্রন্থটির তিনটি খ- ছিল। এর ফারসি, আরবি ও মোঙ্গল সংস্করণ রয়েছে। এতে রয়েছে ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির বিবরণ।
গ্রন্থের জাঁকজমকপূর্ণ চিত্রাঙ্কন ও হস্তলিপিতে কয়েকশ’ লিপিকার ও শিল্পীর প্রয়োজন ছিল। প্রায় ২০টি চিত্রায়িত কপি রশিদউদ্দিনের জীবদ্দশায় প্রস্তুত করা হয়েছিল। এটির একটি কপি বর্তমানে ইরানের গোলেস্তান প্রাসাদের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। দুই বছর আগে এ সংক্রান্ত দলিলাদি ইউনেস্কোর আইএসি কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়। ওই কমিটি কারিগরি দিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে গ্রন্থটিকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এ নিয়ে ফেরদৌসির ‘শাহনামা’সহ ইরানের ১০টি গ্রন্থ ও ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো।
‘জামি আত তাওয়ারিখ’ গ্রন্থের একটি কপি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রয়েছে। ইস্তাম্বুলের তোপকাপি প্রাসাদের গ্রন্থাগারে প্রথম যুগের দুটি ফারসি পা-ুলিপি রয়েছে।
২৩ ‘মুস্তাফা প্রাইজ’ পেলেন তুরস্ক ও ইরানের দুই ক¤িপউটার বিজ্ঞানী
মুসলিম বিশ্বের দুই ক¤িপউটার বিজ্ঞানীকে দ্বিবার্ষিক মুস্তাফা প্রাইজ দিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই বিজ্ঞানী হলেন তুর্কি প্রফেসর সামি এরল গেলেনবি ও ইরানের মোহাম্মাদ আমিন শোকরোল্লাহি। ক¤িপউটার বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কারস্বরূপ গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ তাঁদেরকে ৫ লাখ মার্কিন ডলার করে প্রদান করা হয়।এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক এই পুরস্কার দিল দেশটি। দুই বছর পরপর মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে মুস্তাফা প্রাইজ দেয়া হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে অথবা অন্যত্র বসবাসরত সংশ্লিষ্ট মুসলিম ও বিজ্ঞানীদেরকে মুস্তাফা প্রাইজ দেয়া হয়। সেই সাথে মুসলিম দেশে বসবাসরত অমুসলিম বিজ্ঞানীদেরও এই পুরস্কার দেয়া হয়।
গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ এক বিবৃতিতে ইরানের বিজ্ঞান বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরেনা সাত্তারি বলেন, প্রফেসর গেলেনবি ও শোকরোল্লাহিকে মডেল তৈরি এবং ক¤িপউটার কোডিং সিস্টেমের মূল্যায়নে কৃতিত্বের জন্য এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের নাগরিকত্ব প্রাপ্ত ৭২ বছরের গেলেনবি তুর্কি অ্যাকাডেমি অব সাইনসের (টিইউবিএ) একজন সদস্য। শিক্ষকতা জীবনে তিনি বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজে ডেনিশ গ্যাবর চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন।
তেহরানে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে মেডেল ও সার্টিফিকেট সহ তাঁদের হাতে ৫ লাখ ডলার করে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেয়া হয়। এতে ৩০ দেশের ৯০ জন বিজ্ঞানী যোগ দেন। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার দেয়া হয়।
২৪ ইরানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকায় বাড়ছে বিদেশি পর্যটক
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ১৩, ২০১৭
ইরানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকায় বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চলতি ইরানি বছরের প্রথম সাত মাসে (২২ অক্টোবর পর্যন্ত) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটির মুক্ত বাণিজ্য এলাকাগুলোতে বিদেশি পর্যটক বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।
ফিনানসিয়াল ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, বছরের প্রথম সাত মাসে ইরানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকায় ২৮ হাজারের অধিক বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। তাঁরা সেখানে অন্তত একরাত হলেও কাটিয়েছেন। যদিও ইরান সরকার বিগত সাত মাসে ২৩ হাজার বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। ফ্রি ট্রেড জোন ও ¯েপশাল ইকোনমিক জোনের হাই কাউন্সিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই চিত্র জানা গেছে।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থ বছরে ইরানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকাগুলো ৩৯ হাজার বিদেশি পর্যটক গ্রহণ করেছে। এসব এলাকায় ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ৪৩ হাজার বিদেশি পর্যটক আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইরানে মোট সাতটি মুক্ত বাণিজ্য এলাকা (এফটিজেড) রয়েছে। এগুলো হলো : দক্ষিণাঞ্চলীয় হরমোজগান প্রদেশের কিশ দ্বীপ ও কেশম দ্বীপ, সিস্তান-বালুচিস্তানের চাবাহার বন্দর, খুজেস্তান প্রদেশের আরভান্দ, উত্তরাঞ্চলীয় গিলান প্রদেশের আঞ্জালি বন্দর, পশ্চিম আযারবাইজানের মাকু ও পূর্ব আযারবাইজানের আরাস।
এ প্রতিবেদনে কোন এলাকায় কতজন বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয় নি। তবে কিশ ও কেশম দ্বীপে অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, গত ছয় মাসে চাবাহার ও আঞ্জালিতে বিদেশি পর্যটক বেড়েছে যথাক্রমে ২৩ শতাংশ ও ১১ শতাংশ।
২৫ মহাকাশ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে তৃতীয় ইরান
জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞানের (আইওএএ) ১১তম আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে ইরান। এতে ইরানের ছাত্ররা ১টি সোনা, ৩টি রুপা ও ১টি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। থাইল্যান্ডের ফুখেতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই অলি¤িপয়াড। ১২ নভেম্বর অলিম্পিয়াড শুরু হয়ে শেষ হয় ২১ নভেম্বর।
বিশ্বের ৪৫টি দেশের কৃতী ছাত্রদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে থাইল্যান্ড এবং দ্বিতীয় হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড অন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা আইওএএ-র বার্ষিক প্রতিযোগিতায় বিশ্বের হাই স্কুল পর্যায়ের ছাত্ররা জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ-পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে তাত্ত্বিক, বিশ্লেষণমূলক ও পর্যবেক্ষণমূলক নানা সমস্যা সমাধানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে।
২০০৬ সালে থাইল্যান্ডে আইওএএ প্রতিষ্ঠা হয়। পাঁচ দেশ থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, চীন ও পোল্যান্ডের উদ্যোগে এই অলিম্পিয়াডের যাত্রা শুরু হয়।
হাই স্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের মাঝে জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ-পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শীদের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তরুণ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে বন্ধুত্ব জোরদারের লক্ষ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।২০০৯ সালে তৃতীয় আইওএএ ইরানে অনুষ্ঠিত হয়।
২৬ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের তালিকায় ৭ ইরানি
বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বৈজ্ঞানিক গবেষকদের তালিকায় নাম রয়েছে ইরানের সাত বিজ্ঞানীর। ‘২০১৭ হাইলি সাইটেড রিসারচার্স’ শীর্ষক তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন এসব ইরানি বিজ্ঞানী।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক ও অ্যাকাডেমিক গবেষণাবিষয়ক কোম্পানি ক্লারিভেট অ্যানালিটিক্স প্রকাশিত তালিকায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
ক্লারিভেট অ্যানালিটিক্স উদ্ভাবনের গতি তরান্বিত করেছেন এমন বিজ্ঞানীদের তথ্যসূত্র বিশ্লেষণ করে এই তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রতি বছর হাইলি সাইটেড রিসারচারস তথা সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির এ বছরের তালিকায় সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের মধ্যে ইরানের রয়েছে সাত জন।
সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের এই তালিকায় তাদেরকে স্থান দেয়া হয়েছে যারা ধারাবাহিকভাবে সমকক্ষ আন্তর্জাতিক গবেষকদের স্বীকৃতি লাভ করেছেন। এসব বিজ্ঞানীকে শনাক্তে তাদের তথ্যসূত্র বা তাদের সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত উদ্ধৃতিসমূহ বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এ বছর বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের ২১টি ক্ষেত্রে হাইলি সাইটেড রিসারচারস তথা যাদের তথ্যসূত্র সর্বাপেক্ষা উদ্ধৃত করা হয়েছে তাদের ৩ হাজার ৩শ জনের অধিককে বাছাই করা হয়। একই সঙ্গে তাদের ১ লাখ ৩০ হাজার পেপারস সংযুক্ত করা হয়।
২০১৭ সালের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের তালিকায় নাম থাকা ইরানি সাত বিজ্ঞানী হলেন- আলি কাভেহ (ক¤িপউটার সাইন্স), মেহেদি দেহগান (গণিত), দাভুদ গাঞ্জি (প্রকৌশল), মোহশেন শেকহোলেসলামি (প্রকৌশল),তাহের নিকনাম (প্রকৌশল), মফিদ গোরজি-বান্দপায় (প্রকৌশল) ও শাহরাম রেজাপুর (গণিত)।
২০১৬ সালের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের তালিকায় ইরানের ছয়জন বিজ্ঞানী ও গবেষক স্থান পেয়েছিল।
এবারের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সংখ্যক লেখক ও গবেষক জায়গা পেয়েছেন। এরপরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও চীন।
২৭ ইরানে পাথরের কাগজে ছাপানো হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ম্যাগাজিন
‘গিলগামেশ ম্যাগাজিন’ ইরানের একটি পরিবেশবান্ধব ত্রৈমাসিক প্রকাশনা। যেটি স্টোন পেপার তথা পাথরের তৈরি কাগজে ছাপানো হচ্ছে আর বিতরণ করা হচ্ছে বাই সাইকেলে চড়ে। এসবই করা হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে।
পত্রপত্রিকা সবসময়ই যে খ্যাতি ভোগ করছে তা নয়। বাস্তবিক পক্ষে সাধারণ কাগজে যেসব পত্রপত্রিকা ছাপা হচ্ছে সেসব কাগজ কঠিন বর্জের বৃহত্তম উপাদান থেকে তৈরি। এসব কাগজ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় বিপুল পরিমাণ গাছপালা। তাই কাগজ তৈরিতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
এ অবস্থায় পরিবেশ সংরক্ষণের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে কিছু কোম্পানি তাদের চলমান প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করছে। পাথরের কাগজ ব্যবহারের মাধ্যমে কিছুটা পরিবর্তন আনছে তারা। স্টোন পেপার শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও এটি মিশ্র সারে রূপান্তরযোগ্য। পাশাপাশি পাথরের কাগজ আবর্জনার স্তূপে থাকা টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা কমিয়ে আনে। এই পেপার উৎপাদনে গাছ ও পানির প্রয়োজন হয় না।
অন্যদিকে, সাধারণ কাগজের তুলনায় এক টন পাথরের কাগজ তৈরি করতে অর্ধেক কম জ্বালানি প্রয়োজন হয়।এদিকে, গত ৭ নভেম্বর ইরানে ৯৮তম মোটরকারমুক্ত সপ্তাহ পালিত হয়েছে। সপ্তাহে এদিন মানুষজনকে গাড়ি ব্যবহার না করতে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রচারণা চালানো হয়, গাড়ির পরিবর্তে বাই সাইকেল বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে উৎসাহিত করা হয়। তাই দিনটির সঙ্গে মিল রেখে মঙ্গলবার বাইকে চড়ে বিতরণ করা হয় পরিবাশবান্ধব ‘গিলগামেশ ম্যাগাজিন’।
২৮ তেহরানে বাইসাইকেল পুলিশ
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২, ২০১৭
ইরানের রাজধানী তেহরানে যানজট নিয়ন্ত্রণে বাইসাইকেলে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। প্রবল ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরটিতে সাইকেলে ট্রাফিক পুলিশ শহরতলীর আনাচে কানাচে যানজট কীভাবে দূর করা যায় সে দায়িত্ব পালন করছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিম বলছে, বাইসাইকেলে পুলিশের এধরনের কার্যক্রম যানজট নিরসনে তাদের উদ্যোগ দ্রুততর ও পুলিশকে দক্ষ করে তুলবে।
সাইকেলগুলোতে পুলিশের লোগো সজ্জিত ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। যানজট ছাড়াও কম অপরাধপ্রবণ এলাকায় সাইকেল পুলিশকে অধিকতর সহজে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এধরনের কর্মতৎপরতায় আদতেই গতি আসছে কি না তা পরখ করতে পুলিশ কর্মকর্তারাও বাইসাইকেল ব্যবহার করে নজরদারি করতে পারবেন।
২৯ অঙ্গদাতা হিসেবে নাম লেখালেন ৪০ লক্ষাধিক ইরানি
শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে চান ইরানের চল্লিশ লক্ষাধিক মানুষ। ইতোমধ্যে তারা অঙ্গদাতা হিসেবে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছেন। গত ১ ডিসেম্বর ২০১৭ ইরানি আইন প্রণেতা আলি নোবাখত এই তথ্য জানান। এ ধরনের জনহিতকর কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে বেশি বেশি জনসচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ‘জশনে নাফ্স’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এই তথ্য জানান। এসময় মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য যেসব ‘ব্রেন ডেড’ রোগী তাঁদের অঙ্গ দান করেছেন তাঁদের তিনি স্মরণ করেন।
শরীর বেঁচে রয়েছে, কিন্তু মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে এমন রোগীদের ‘ব্রেন ডেড’ রোগী বলা হয়। ইরানি পার্লামেন্ট ‘মজলিস’ এর স্বাস্থ্য কমিটির প্রধান নোবাখত বলেন, কিছু দেশে প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনগণ তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার জন্য আবেদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্কদের প্রায় ৪৫ শতাংশ অঙ্গদাতা হিসেবে নিবন্ধন করেছে। সুতরাং বেশি বেশি জীবন রক্ষায় ইরানে সক্রিয়ভাবে অঙ্গ দানে উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান কাজিজাদেহ হাশেমি জানান, বছরে ব্রেন ডেড রোগীদের প্রতি চার হাজারের মধ্যে মাত্র ৯শ’ জন তাঁদের অঙ্গদান করেন।
বর্তমানে ইরানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ২৬ সহস্রাধিক রোগী রয়েছে। একজন ব্রেন ডেড রোগী ৮টি জীবন বাঁচাতে পারেন। আবার একই ডোনার টিস্যু ও চোখ দান করে পঞ্চাশের অধিক জীবনকে রক্ষা বা বিকশিত করতে সাহায্য করতে পারেন।
৩০ সার্বিয়ায় ফটো প্রতিযোগিতায় ইরানি শিল্পীদের অ্যাওয়ার্ড জয়
সার্বিয়ার ক্রাগুজেভাকে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফটো প্রতিযোগিতায় অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন ইরানের আট আলোকচিত্র শিল্পী। ‘থ্রো দ্য ভিউফাইন্ডার’ শীর্ষক এই ফটো প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে এসব অ্যাওয়ার্ড জয় করেন তাঁরা। প্রতিযোগিতার ফটোজার্নালিজম বিভাগে আহমাদ খাতিরি এফআইএপি গোল্ড মেডেল জয় করেছেন। তিনি তাঁর একক ফটো ‘প্রেয়ার অ্যান্ড মোরনিং ফর দ্য র্মাটারডম অব দেয়ার ফার্দাস ইন ওয়ার জোন্স’ এর জন্য এই পুরস্কার পান।
এই বিভাগে সাইয়্যেদ ওমিদ আলাভি তাঁর ‘ওয়ার ছবির জন্য স্যালন গোল্ড মেডেল লাভ করেন। অন্যদিকে, সাইদ আরবজাদেহ তার ‘সরো’ ছবির জন্য মাস্টার অব লাইট ফটোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশন (এমওএল) ব্রোঞ্জ মেডেল লাভ করেন এবং মোস্তফা মিরতালেব তাঁর ‘বেটিং’ এর জন্য ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব আমেরিকা তথা পিএসএ ব্রোঞ্জ মেডেল পান।
এছাড়াও মিরতালেব তাঁর ‘কাস্পিয়ান সী’ ছবির জন্য ওপেন মনোক্রোম বিভাগে স্যালোন মেডেল ও ন্যাচার বিভাগে তাঁর ‘¯েœায়ি মাউন্টেইন’ এর জন্য এফআইএপি ব্লু রিবন পুরস্কার পেয়েছেন।
আরাবজাদেহ তাঁর ‘ঘাজালেহ’ ছবির জন্য ন্যাচার বিভাগে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব আর্ট ফটোগ্রাফার্স (আইএএপি) গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।
এছাড়া আব্দুল মোইদ মারুফি, দাভুদ আমেরি ও রেজা ফাথি মোকাদাম সম্মানজনক অবস্থান লাভ করেছেন। পুরস্কার বিজয়ী এসব ছবি ক্রাগুজেভাকের লুমিয়ের বিম গ্যালারিতে ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রদর্শন করা হয়। এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ক্রাগুজেভাক ফটো ক্লাব।
৩১ ব্রুকলিন আর্ট ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীর বিজয়ীদের মধ্যে ১২ ইরানি
ব্রুকলিন ২০১৭ আন্তর্জাতিক আর্ট ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীর বিজয়ীদের মধ্যে ইরানের ১২ জন আলোকচিত্রী রয়েছেন। চিত্র প্রদর্শনীর ওয়েবসাইটে ২৫ নভেম্বর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে আর্ট ব্যুরো নিউ ইয়র্ক সিটি ও লুমিরের বিম ফোটো এজেন্সি। আর্ট ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীটি সবার জন্য উম্মুক্ত ছিল। এতে মিউজিক, স্ট্রিট, চাইল্ড, ন্যাচার, ওপেন
(কালার) ও ওপেন (মনোক্রোম) বিভাগ সহ প্রতিটি বিভাগে চারটি ছবির অধিক জমা দেয়ার সুযোগ ছিল না।
প্রতি বিভাগে চার ধাপের বিচারের মাধ্যমে ছবিগুলো বিভক্ত করা হয়। মিউজিক ফটোগ্রাফি সেকশনে ইরানি শিল্পীরা দুটি অ্যাওয়ার্ড জয় করেন। এর মধ্যে মেহদি রুহির ফটো ‘থ্রিল’ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব আমেরিকার (পিএসএ) ব্রোঞ্জ মেডেল জিতেছেন এবং এহসান মোরতাজাভির ফটো ‘কনফ্লিক্ট ১’ পিএসএ-র সম্মানজক উপাধি লাভ করেছেন।
স্ট্রিট ফটোগ্রাফি বিভাগে ইরানের ইয়াসের ফাত্তাহির ‘শ্যাডোজ’ সোনার মেডেল, নেগার আঘা-আলি-তারির ‘লুক’ পিএসএ-র সম্মানজনক উপাধি, মোজতাবা সাফারির ‘স্যাটিসফেকশন’ (ডিপ্লোমা) ও দারিউশ কানবারনাসাবের ‘কনফ্লিক্ট’ (ডিপ্লোমা) অ্যাওয়ার্ড জিতেছে।
এছাড়া চাইল্ড ফটোগ্রাফি বিভাগে ইরানিরা দুটি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে। ওপেন (কালার) ফটোগ্রাফি বিভাগ থেকে ইরান তিনটি অ্যাওয়ার্ড ঘরে তুলেছে। অন্যদিকে, ন্যাচার ফটোগ্রাফি বিভাগে একজন মাত্র ইরানি পুরস্কার জিতেছেন।
ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীর বিজয়ী শিল্পকর্মগুলি ১৫ থেকে ২৫ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের জ্যালোপি থিয়েটার এবং ৩১৫ কলামবিয়া স্ট্রিটের স্কুল অব মিউজিকে প্রদর্শিত হবে।
৩২ বিশ্ব কারাতে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে ৫ ইরানি
কারাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশন (ডাব্লিউকেএফ) র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেছেন ইরানি অ্যাথলেট সাজাদ গাঞ্জজাদেহ। ডাব্লিউকেএফের সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে তিনি শীর্ষ স্থান দখল করেন। সাজাদ ছাড়াও আরও চার ইরানি কারাতে অ্যাথলেট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন।
কারাতে-১ প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডের খেলা শেষে ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশন তাদের সর্বশেষ এই র্যাঙ্কিং ঘোষণা করে। ওই টুর্নামেন্টে ৩৯৭০ পয়েন্ট অর্জন করে ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে অব্যাহত ভাবে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছেন সাজাদ গাঞ্জজাদেহ (+৮৪কেজি)। এছাড়া বাকি চার ইরানি কারাতে অ্যাথলেট নিজ নিজ বিভাগের শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন।
কুমিতি বিভাগের শীর্ষ দশে জায়গা পাওয়া বাকি চার ইরানি কারাতে হলেন- নবম স্থান দখলকারী ফাতেমি চালাকি (-৫৫ কেজি), দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী আমির মেহদি জাদেহ (-৬০ কেজি), নবম স্থান দখলকারী বাহমান আসগারি (-৭৫ কেজি) ও ষষ্ঠ স্থান দখলকারী জাবিহোল্লাহ পুরশাব (-৮৪ কেজি)।
এছাড়া কারাতের কাতা সেকশনের নারী বিভাগে নেগিন বাঘেরি ৩০ তম ও পুরুষ বিভাগে আবোলফাজি শাহরজারদি ৫২তম স্থান দখল করেছেন।
৩৩ আমেরিকায় ভারোত্তোলন চ্যা¤িপয়নশিপের শিরোপা ইরানের
আমেরিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ভারোত্তোলন চ্যা¤িপয়নশিপের শিরোপা জিতেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান।
ইরানের ভারোত্তোলন দল চারটি স্বর্ণ, তিনটি রৌপ্য ও ছয়টি ব্রোঞ্জ জিতে প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান দখল করে। এতে ইরানের অর্জিত পয়েন্ট ৫০৯। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় গত ২৮ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
ইরানের আটজন ক্রীড়াবিদ এবারের চ্যা¤িপয়নশিপে অংশ নেন। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সোহরাব মোরাদি। তিনি ৯৪ কেজি ওজন ক্যাটাগরিতে দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে এ ক্যাটাগরির তিনটি স্বর্ণই জিতে নেন। এর আগে ২০১১ ও ২০১৩ সালের বিশ্ব ভারোত্তোলন চ্যা¤িপয়নশিপে ইরানি দল তৃতীয় হয়েছিল।
আমেরিকার মাটিতে ভারোত্তোলন দলের এ অর্জনে ইরানি জনগণ অত্যন্ত খুশি। দেশটির সর্বস্তরের মানুষ ভারোত্তোলন দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী, প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ও সংসদ ¯িপকার আলী লারিজানি আলাদাভাবে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন।
৩৪ বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্রুপ পর্বে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বীরা
২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রুপ পর্বের খেলায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় দল ‘বি’ গ্রুপে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এই গ্রুপে ইরানকে খেলতে হবে পর্তুগাল, ¯েপন ও মরক্কোর সঙ্গে।
আগামী বছরের জুন ও জুলাই মাসে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রেমলিন স্টেট প্যালেসে গ্রুপ নির্ধারণের জন্য লটারি অনুষ্ঠিত হয়।
‘এ’ গ্রুপে স্বাগতিক রাশিয়া খেলবে সৌদি আরব, মিশর ও উরুগুয়ের সঙ্গে। গ্রুপ ‘সি’তে খেলবে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পেরু ও ডেনমার্ক। ‘ডি’ গ্রুপে খেলেবে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া। ‘ই’ গ্রুপে খেলবে ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ চ্যা¤িপয়ন জার্মানি খেলবে মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গ্রুপ ‘এফ’-এ। ‘জি’ গ্রুপে থাকবে বেলজিয়াম, পানামা, তিউনিশিয়া ও ইংল্যান্ড। এছাড়া, ‘এইচ’ গ্রুপে থাকবে পোল্যান্ড, সেনেগাল, কলম্বিয়া ও জাপান।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে ১৪ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। আসরের উদ্বোধনী খেলায় স্বাগতিক রাশিয়া খেলবে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। চূড়ান্ত পর্বের এ আসরে রাশিয়ার ১১টি শহরের ১২টি ভেন্যুতে মোট ৬৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ফিফা বিশ্বকাপে আইসল্যান্ড ও পানামা এবারই প্রথমবারের মতো খেলবে।
৩৫ মিনস্ক চলচ্চিত্র উৎসবে দুই অ্যাওয়ার্ড জিতল ‘ব্রেদ’
আমেরিকান মোশন পিকচার অ্যাকাডেমি পুরস্কার বা অস্কারের জন্য পাঠানো ইরানি চলচ্চিত্র ‘ব্রেদ’ দুটি অ্যাওয়ার্ড জয়লাভ করেছে। বেলারুসে অনুষ্ঠিত মিনস্ক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের ২৪তম আসরে এ দুই পুরস্কার জয়লাভ করে যুদ্ধবিরোধী ড্রামাটি।
আয়োজকেরা ছবিটিকে সেরা পরিচালক ও সেরা অভিনেত্রীর অ্যাওয়ার্ড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি পরিচালনা করেছেন ইরানের নারী চলচ্চিত্রকার নারজেস আবিয়ার।
‘ব্রেদ’ ছবির জন্য নারজেস সেরা পরিচালক হিসেবে শিশু-কিশোর চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এছাড়া ছবিটিতে ভালো ভূমিকা রাখার জন্য সেরা তরুণী অভিনেত্রীর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সারেহ নুর-মুসাভি।
ড্রামাটিতে চারটি শিশুর কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, যাদের মা কয়েক বছর আগে মারা যায়। ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে ইরাকের হামলার প্রেক্ষাপটকে ঘিরে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর তাদের বাবা যুদ্ধে নিয়োজিত ইরানি স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
‘সত্যতা, ভালোবাসা ও সুন্দর’ ¯ে¬াগান নিয়ে বেলারুসের রাজধানী মিনস্কে ২৪তম মিনস্ক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ‘লিস্টাপ্যাড’ ৩ নভেম্বর শুরু হয়ে চলে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। উৎসবের পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৭ নভেম্বর।
এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে এস্তোনিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০তম ব্লাক নাইট্স চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ব্রেদ’ ছবিটির জন্য সেরা পরিচালকের অ্যাওয়ার্ড পান পরিচালক নারজেস।
আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য ৯০তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড তথা অস্কারের লড়াইয়ে জন্য যুদ্ধ-বিরোধী ড্রামাটিকে পাঠিয়েছে ইরান। উৎসবের বিদেশি ভাষা বিভাগে ‘সেরা ছবি’র দৌড়ে অংশ নেবে ছবিটি।
৩৬ ঢাকার মঞ্চ মাতালো ইরানের লোকসংগীত দল রাস্তাক
গত ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের শেষ দিনে মঞ্চ মাতালো ইরানের লোকসংগীত দল ‘রাস্তাক’। এদিন পরিবেশনায় ছিল দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় সব লোকসংগীতের দল। তবে সব ছাড়িয়ে স্টেডিয়াম জুড়ে ইরানি লোকসংগীত দল রাস্তাকের প্রশংসা ছিল সবচেয়ে বেশি। ভাষা না বুঝলেও যে গান মানুষের হৃদয় জয় করতে পারে তা বোধ হয় রাস্তাকের পরিবেশনা না দেখলে এত সহজ ও সুন্দরভাবে বুঝা যেত না।
যাঁরা গান শুনতে গিয়ে কখনো মন থেকে হাততালি দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি তাঁরাও রাস্তাকের পরিবেশনার সময় হাততালি দিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। বাংলা চলচ্চিত্রে যাঁরা সাপের বাঁশি শুনেছেন তাঁরা খুব সহজেই এই গান আত্মস্থ করতে সক্ষম হবেন। তাঁদের চমৎকার পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন বাসুদেব বাউল। পশ্চিমবঙ্গের এই শিল্পী প্রথমেই গেয়েছেন ‘ছেড়ে দিলে মনের মানুষ আর তো পাব না’, শেষ করেছেন ‘পিরিতি কাঁঠালের আঠা’ গানটি গেয়ে। উৎসবের শেষ পরিবেশনা নিয়ে আসে আফ্রিকার তিনারিওয়েন।
হৃদয়গহিনে লোকসংগীত যে ধরনের অনুভূতির পরিস্ফুরণ ঘটায় তা কেবল সংগীতপাগল মানুষেরাই ভালো জানে। সুরের উচ্ছ্বাস ও তাল, লয়ের অনবদ্য শৈল্পিকতা হৃদয়ের গহিনে কী ধরনের অনুরণন ঘটায় তা কেবল সুরপিয়াসীরাই বোঝে।
নন্দনতত্ত্বের এই একটি মাধ্যমের দ্বারাই সারা বিশ্বের সব ভাষাভাষীর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া যায়। ভাষা যতই অপরিচিত হোক, কিন্তু মেলোডি আর সুরের উত্তাপ সুরের কাঙালদের মনমন্দিরে ভালোলাগা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেই। মুহুর্মুহু করতালি, উচ্ছ্বাস, নাচের উদ্দামতা আর ওয়ান মোর ধ্বনিতে আফ্রিকার মালির গানের দল তিনারিওয়েন ও দলটির প্রধান ভোকাল ইবরাহিম আগ আলহাবিবকে অভিনন্দিত করেছে প্রায় অর্ধলক্ষ সুরপিয়াসী। তিন রাতের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব ২০১৭’। আফ্রিকার মালির সংগীতের একটি বিশেষত্ব হলো আফ্রিকান ভাষার সাথে আরবি ভাষার সংমিশ্রণের ব্যতিক্রমী ফিউশন। আর এই ফিউশনের কারণেই আফ্রিকার দেশ মালির সংগীত সারা বিশ্বের সংগীত সমঝদারদের কাছে ব্যাপক সমাদর অর্জন করেছে। ইনস্ট্রুমেন্টাল আর মেলোডির ভিন্ন রকমের দ্যোতনা তৈরি করে মালির শিল্পীরা তাঁদের লোকসংগীতকে অনন্য এক উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। এবারের আসরে বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ১৪০ জন শিল্পী অংশ নেন।
বাউল সাধক শাহ আলম সরকার এবং পালাগানের শিল্পী আলেয়া বেগমের পালাগানের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় শেষ রাতের সুরের আসর। পালাগানের এই লড়াইয়ে শাহ আলম সরকার শরিয়তের ভূমিকায় আর আলেয়া বেগম ছিলেন মারফতির ভূমিকায়। দুজনই গানে গানে প্রশ্ন উত্তর, কখনোবা প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্নের মাধ্যমে পালা উপহার দেন। শাহ আলম সরকার গেয়ে শোনান ‘আকাশটা কাঁপছিল কেন’, ‘মায়ের কান্দন যাবত জীবন’, ‘বান্ধিলাম পীরিতের ঘর’, ‘খড়কুটার এক বাসা বাঁধলাম’সহ বেশ কিছু গান। এর জবাবে মারফতির ভূমিকায় থাকা আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মানুষও রতন, করো তারে যতন’। এভাবে একটার পর একটা গানের মধ্য দিয়ে শরিয়ত ও মারফতি তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন পালাগানের এই দুই শিল্পী। প্রায় ৪৫ মিনিটের এই পরিবেশনা লোকসংগীতের অনুরাগীদের মুগ্ধ করে রাখে। এরপর মঞ্চে আসেন দেশের লোকগানের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা শাহনাজ বেলী। লালনের দেহতত্ত্বনির্ভর গান ‘স্বভাব না হলে চাতক’ দিয়ে শুরু করে একে একে তিনি পরিবেশন করেন শাহ আবদুল করিমের ‘আইলা না আইলারে বন্ধু’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে’, ‘তুমি যাইও না যাইও কান্দাইয়া’ এবং সবশেষে হাছন রাজার গানের মধ্য দিয়ে মঞ্চ থেকে নামেন এই শিল্পী।
এরপর সুইডিস গিটার প্লেয়ার কাম গায়ক মিকাল হেমনিটি উইনথার গিটারের ধুন আর অসাধারণ গায়কীতে মুগ্ধতা ছড়ান সমগ্র স্টেডিয়ামে। এই পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন ভারতের বাসুদেব দাস বাউল। ‘তোমার হৃদমাজারে রাখব’ দিয়ে শুরু করে সোঁদামাটির গন্ধ মিশ্রিত সুরের উষ্ণতায় স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক শ্রোতাদের হৃদয়ে নিজের ঠাঁই করে নেন ভারতের এই বাউল। শেষ রাতের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ইরানের গানের দল ‘রাস্তাক’। ফারসি সংগীতের সাথে গিটার, বেজ গিটার, বাঁশি ও ঢোলের অপূর্ব সমন্বয়ে লোকসংগীতের ফিউশনে সংগীতের অনুরাগীদের হারিয়ে নিয়ে যান সংগীতের দ্যোতনায়।
ইরানের বিভিন্ন প্রদেশের সংগীত ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার ঢাকায় আসে দলটি। বিশ্বব্যাপী সংগীতের শ্রোতাদের কাছে ফারসি লোকসংগীত, ভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে অনবদ্য অবদান এই দলের। ১৯৯৭ সালে তেহরানে যাত্রা শুরু করে এই ফারসি লোকসংগীত দল।মূলধারার সংগীতের সঙ্গে ফারসি লোকসংগীতকে মিশিয়ে পরিবেশন করেন তাঁরা। এছাড়া ফারসি লোকসংগীত নিয়ে গবেষণাও করে দলটি। বিশ্বের সংগীতপ্রেমীদের কাছে ফারসি লোকসংগীতের নতুন দূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে রাস্তাক। রাস্তাকের দলনেতা সিয়ামক সেপেহরি মনে করেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে সংগীতের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাঁদের প্রাথমিক ভাবনা ছিল ইরানের ঐতিহ্যবাহী সংগীতকে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করা। এ জন্যই তাঁদের দেশের বিভিন্ন প্রদেশের সংগীতকে মিলিয়ে-মিশিয়ে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন তাঁরা।