রপ্তানি বাণিজ্যে ইরানের সাফল্য
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
সাইদুল ইসলাম :
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো রপ্তানি খাত। এই খাতে যে দেশ যত বেশি শক্তিশালী সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত বেশি সমৃদ্ধ। আর এক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান উদীয়মান অর্থনীতির সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির ইতিবাচক গতিধারায়।
তেলের ওপর নির্ভরতাই ছিল এক সময় দেশটির অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু সেই তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে দেশটি। ইসলামি বিপ্লবের পর বিগত ৩৮ বছরে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোও পাল্টে যাচ্ছে। ক্রমশ শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতের বিকাশ ঘটছে। এর ফলে দেশটির অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো অনেকটাই বদলে যাচ্ছে।
বিগত বছরের তুলনায় ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ফারসি বছরে ইরানের আর্থিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। ১৮ জুন ২০১৭ ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (সিবিআই) প্রকাশিত তথ্যে এ চিত্র জানা গেছে।
মূলত ইরানের ক্রমবর্ধমান তেল উৎপাদন দেশটির এমন শক্তিশালী প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। ইরানের সরকারি তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের শেষ নাগাদ প্রতিদিন দেশটিতে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ব্যারেল। যেখানে আগের বছর প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হয়। বর্তমানে ইরান প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখ ব্যারেল বা ৬ কোটি ৪০ লাখ লিটার তেল রপ্তানি করছে।
২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী ৪৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য জাহাজযোগে রপ্তানি করেছে ইরান। যা ২০১৫ সালের চেয়ে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ইরানের রপ্তানি হওয়া শীর্ষ দশটি ক্যাটাগরির পণ্য সামগ্রী থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের বেশিরভাগ এসেছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী জাহাজযোগে যে মূল্যের পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করা হয়েছে তার ৯৬ দশমিক ২ শতাংশই এসেছে এই দশ শ্রেণির পণ্যসামগ্রী থেকে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক ডাটাবেজের পরিসংখ্যান মতে, এ বছরের এপ্রিলে ইরানের মোট দেশীয় উৎপাদন (জিডিপি) দাঁড়ায় ১ দশমিক ৫৩৫ ট্রিলিয়ন ডলারে। ৮ কোটি ২৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইরান ২০১৬ সালে মোট ৪৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। দেশটির জনগণের মাথাপিছু রপ্তানি দাঁড়ায় ৫৫০ মার্কিন ডলার।
ইরানের শীর্ষ দশ শ্রেণির রপ্তানি পণ্যসামগ্রীর তালিকায় প্রথমেই রয়েছে তেলসহ খনিজ জ্বালানি। গত বছর এ শ্রেণির পণ্য রপ্তানি করে ৩৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি। অর্থাৎ মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫ ভাগই এসেছে এই শ্রেণির পণ্যসামগ্রী রপ্তানি থেকে।
দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। গত বছর ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের এসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা মোট রপ্তানির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, জৈব রাসায়নিক পণ্যসামগ্রী। এসব পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে দেশটি আয় করেছে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আকরিকসহ ধাতব দ্রব্যসমূহ। ২০১৬ সালে আকরিকসহ ধাতব দ্রব্য রপ্তানি থেকে ইরানের আয় হয়েছে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। যা দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের সাড়ে তিন শতাংশ।
ইরানের রপ্তানি পণ্যের এই তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ফলমূল ও বাদাম। এসব পণ্যসামগ্রী থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে ইরান। যা দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের ২ দশমিক ২ শতাংশ।
তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে আয়রন ও স্টিল। এসব পণ্যসামগ্রী রপ্তানি থেকে ইরান আয় করেছে ৯৬০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। যা রপ্তানি আয়ের ২ দশমিক ১ শতাংশ।
রপ্তানির তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে কপার। এটি রপ্তানি করে ইরান আয় করেছে ৪৩৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের দশমিক ৯ শতাংশ।
তালিকায় অষ্টম অবস্থানে রয়েছে সার। ইরান সার রপ্তানি থেকে আয় করেছে ৪২৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের দশমিক ৯ শতাংশ।
ইরানের শীর্ষ দশ শ্রেণির রপ্তানি পণ্যসামগ্রীর তালিকায় নবম অবস্থানে রয়েছে লবণ, সালফার, পাথর ও সিমেন্ট। এসব পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে দেশটি আয় করেছে ৪০৮ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। যা দেশের রপ্তানি আয়ের দশমিক ৯ শতাংশ।
তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে অজৈব রাসায়নিক দ্রব্য। এসব দ্রব্য রপ্তানি থেকে ইরান আয় করেছে ২৭২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। যা রপ্তানি আয়ের দশমিক ৬ শতাংশ।
ইরানের শীর্ষ দশ শ্রেণির রপ্তানি পণ্যসামগ্রীর মধ্যে সার রপ্তানি সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে শুরু করে এ সময় পর্যন্ত ছয় বছরে সার রপ্তানি বেড়েছে ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ। রপ্তানি বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আয়রন ও স্টিল। যা বেড়েছে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যেরে দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি বেড়েছে তামা, ক্রোমিয়াম, সীসা, জিংক ও আকরিকের। এসব দ্রব্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
গত ইরানি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) ১২৯ দশমিক ৬৪৮ মিলিয়ন টন তেলবহির্ভূত পণ্যদ্রব্য রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির মোট আয় হয়েছে ৪৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ইরানের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ইরানের শুল্ক প্রশাসন ও বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে এই চিত্র উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, ফারসি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ইরানি বছর ১৯ মার্চ শুরু হয়ে পরের বছর ২০ মার্চে শেষ হয়। তেলবহির্ভূত যেসব পণ্য ইরান রপ্তানি করে থাকে তার মধ্যে রেয়েছে পেট্রোকেমিক্যাল, কৃষিপণ্য, খাদ্যপণ্য, খনিজ ও ওষধি পণ্য ইত্যাদি।
ইরানি পণ্যদ্রব্যের রপ্তানি গন্তব্যের শীর্ষে রয়েছে চীন। এশিয়ার এই দেশটি গত ইরানি অর্থবছরে ইরান থেকে ৮ দশমিক ১৭৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন মালামাল আমদানি করেছে। আগের বছরের তুলনায় যা ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। আইআরসিএর তথ্য মতে, গত ইরানি বছর দক্ষিণ কোরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি থেকে আমদানি রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। এ বছরে দেশটি আমদানি বৃদ্ধি করে ২২৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, গত বছর আফ্রিকার দেশগুলোতে ইরানের রপ্তানি বেড়েছে শতভাগ। আফ্রিকায় রপ্তানি হওয়া পণ্যদ্রব্যের মধ্যে প্যাস্ট্রি, চকলেট, শিল্প তেল, পেট্রোকেমিক্যালস, পিচ এবং ভবন নির্মাণ সামগ্রী উল্লেখ্যযোগ্য।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ইরান থেকে ইউরোপে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। ইরানের শুল্ক প্রশাসনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য দাঁড়ায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে। আগের বছরের তুলনায় বাণিজ্য বড়েছে ১৭১ শতাংশ। গত বছর ইউরোপে ইরানি পণ্যের রপ্তানির শীর্ষে ছিল লোহা ও ইস্পাত। এসব পণ্য রপ্তানি থেকে ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি।
ইরানের তেলবহির্ভূত রপ্তানি পণ্যদ্রব্যের বৃহত্তম অংশই পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য। এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল গ্যাস কনডেনসেট। গত বছর গ্যাস রপ্তানি থেকে ইরানের আয় হয়েছে ৭ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
ইরানের অ্যাগ্রো বা কৃষি পণ্য রপ্তানি
গত বছরে ইরান ৪ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন টন কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছে। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৭৯৫ মিলিয়ন ডলার। আইআরসিএর তথ্যমতে, এ সময়ে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ ১ শতাংশ কমলেও রপ্তানি থেকে মোট আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
খনিজ, ওষুধি পণ্য ও অটো শিল্পের রপ্তানি
গত বছর ইরান ৭ বিলিয়ন ডলারের অধিক মূল্যের খনিজ দ্রব্য রপ্তানি করেছ। আগের বছরের তুলনায় এ খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এ সময়ে দেশটির অটো শিল্পের মোট রপ্তানি পৌঁছায় ২১৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারে। আগের বছরের তুলনায় যা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে ইরানের অটো নির্মাতারা ৩৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের গাড়ি রপ্তানি করেছেন। এসব পণ্যের রপ্তানি গন্তব্যের শীর্ষে ছিল ইরাক, আলজেরিয়া, লেবানন, তুর্কমেনিস্তান ও সিরিয়া। এছাড়া গত অর্থবছরে ইরান ২১০ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ এবং মেডিকেল ও ল্যাবোরেটরি সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
ইরানের শিল্প পার্কের রপ্তানি
ইরানের শিল্প পার্ক থেকে রপ্তানি ছাড়িয়ে গেছে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ৯ মাসে এ রপ্তানি হয়েছে। দেশটির শিল্প উপমন্ত্রী আলী ইয়াজদানি এ তথ্য জানিয়েছেন। ইরানের শিল্প পার্কে ৯৫০টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এতে কর্মসংস্থান রয়েছে ৮ লাখ মানুষের।
খাদ্যপণ্য রপ্তানি
গত অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ মাসে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্য রপ্তানি করেছে ইরান। এই খাতে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হয়েছে ৫৫৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। এ ১১ মাসে ৭৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের প্রায় ৬২ হাজার টন মুরগি, ৬৮৩ মিলিয়ন ডলারের ৭ লাখ ৫০ হাজার টন দুধ ও ৫৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের ৮ লাখ টন ডিম রপ্তানি করেছে দেশটি। এছাড়া এ সময়ে ইরান ৮ লাখ ১৫ হাজার টন গোশত, সাড়ে ৯ মিলিয়ন টনের অধিক দুধ, ২ মিলিয়ন টন মুরগি, ৯ লাখ ৪০ হাজার টন ডিম ও ৮১ হাজার ৫০০ টন মধু উৎপাদন করেছে। ইরান থেকে রপ্তানি হয় এমন উল্লেখযোগ্য আরো কিছু পণ্যের বিবরণ নিচে দেয়া হলো।
গত ৮ মাসে ইরান ৭৮ টন জাফরান রপ্তানি করেছে। ইরান অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বাকি জাফরান রপ্তানি করে থাকে। ইরানের জাতীয় জাফরান পরিষদের উপ প্রধান রেজা মিরি বলেছেন, ইরানে চলতি বছরে জাফরান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ৩১০ থেকে ৩৬০ টন।
ইরানের জাতীয় জাফরান পরিষদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা মেহের নিউজ জানায়, গত বছর ইরানে জাফরান উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫০ টন অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১৩০ টন। এবছর ইরানে জাফরান রপ্তানির পরিমাণ ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্বে সর্বোচ্চ জাফরান উৎপাদনকারী দেশ ইরান। বিশ্বের উৎপাদিত জাফরানের ৯৩ ভাগ উৎপাদিত হয়ে থাকে ইরানে।
আপেল রপ্তানি
ইরান গত ফারসি বছরের শেষ ১১ মাসে ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আপেল রপ্তানি করেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরানের আপেল রপ্তানির মোট পরিমাণ হচ্ছে ৮৭ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার। ইরানের শুল্ক বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরান যেসব দেশে আপেল রপ্তানি করে সেগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আজারবাইজান, জর্জিয়া, ইরাক, তুর্কেমেনিস্তান, রাশিয়া, ওমান, কিরঘিজিস্তান, কাজাখস্তান, কুয়েত, ভারত, কাতার, বাহরাইন, সুদান ও তুরস্ক।
গোলাপ জল রপ্তানি
ইরানের কাশানে বছরে যে ২ হাজার টন গোলাপ জল ও তেল উৎপাদন হয় তা রপ্তানি করে আয় হয় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ গোলাপ জল ও তেল পারস্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও ইউরোপে রপ্তানি হয়। গত মে মাসে ফিন্যান্সিয়াল ট্রিবিউনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মে মাসের শুরু থেকে জুনের মাঝামাঝি। মধ্য ইরানের কাশান এবং এর আশেপাশের শহর ও গ্রামগুলো যেন সাজে অপরূপ প্রাকৃতিক রূপে। সাদা, লাল আর গোলাপি গোলাপের পাশাপাশি নানা প্রজাতির ফুল তৈরি করে নয়নাভিরাম দৃশ্য। সেখানে পা ফেলতেই যেন চার দিক থেকে বাতাসে ভেসে আসে সুমিষ্ট ঘ্রাণ। মুহূর্তেই জুড়িয়ে যায় মন। উৎসব হোক বা শোক, সব জায়গাতেই পবিত্রতার প্রতীক গোলাপজল। এমনকি খাবার, ওষুধ এবং রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হয় এই উপকরণটি। আর গোলাপজল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। এর মনমাতানো সৌরভ শুধু ইরানেই নয় ছড়িয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী।
মধু রপ্তানি
ইরানের আযারবাইজান প্রদেশ থেকে ৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৫শ’ টন মধু রপ্তানি করা হয়েছে। তুরস্ক, ইরাক, আযারবাইজান রিপাবলিক, চীন, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এ মধু রপ্তানি করা হয়। ইরানের পশ্চিম আযারবাইজান এলাকায় অন্তত দশ লাখ মধু চাষী রয়েছেন যাঁরা বছরে ১৮ হাজার টন মধু উৎপাদন করেন। আর এ উৎপাদিত মধুর পরিমাণ ইরানে উৎপাদিত মধুর ২৭ শতাংশ।
ইরানের উপ কৃষিমন্ত্রী হাসান রোকনি জানিয়েছেন, গত ফারসি অর্থবছরে ইরান জুড়ে ৮১ হাজার ৫০০ টন মধু উৎপাদন হয়েছে।
টমেটো রপ্তানি
ইরানের চলতি ফারসি বছরের প্রথম মাসে (২১ মার্চ থেকে শুরু) ৪৩ হাজার ৬শ’ টন টমেটো রপ্তানি করে দেশটি আয় করেছে সাড়ে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইরানের কাস্টমস প্রশাসন এ তথ্য দিয়েছে।
ইরান টমেটো রপ্তানি করে এমন প্রধান দেশগুলো হচ্ছে, আফগানিস্তান, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান, পাকিস্তান, ইউক্রেন ও কাজাখস্তান। ইরানের ইয়ং জার্নালিস্ট ক্লাব এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে।
গম রপ্তানি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বেশ কয়েক বছর পর এবার নতুন করে গম রপ্তানি শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ৩৫ হাজার টনের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বন্ধুপ্রতিম দেশ ওমানে।
ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর পরামর্শ অনুসারে প্রতিরোধমূলক অর্থনীতির ফরমুলা অনুসরণ করার কারণে এ সফলতা অর্জন সহজ হয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যার মূল লক্ষ্য হবে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা তৈরি এবং তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো যাতে করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা করা সহজ হয়।
ইরানের ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মাদ রেজা মুরতাজাভি জানিয়েছেন, ওমানে গম রপ্তানির প্রথম চালান পাঠানো হয়েছে এবং আরো বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হবে। তিনি জানান, আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে ইরান ২০ লাখ টন গম রপ্তানি করতে পারবে।
খেজুর রপ্তানি
খেজুর রপ্তানি থেকে ইরানের বছরে আয় হয় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত জুন মাসে ফিন্যান্সিয়াল ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, খেজুর উৎপাদনে বিশ্বে ইরানের অবস্থান দ্বিতীয় এবং বিশ্বের বৃহত্তম খেজুর রপ্তানিকারক দেশ ইরান। গত ইরানি বছরে দেশে খেজুর উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ লাখ টন।
উৎপাদনের ২০ ভাগ খেজুর ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ফার ইস্ট ও রাশিয়ায় রপ্তানি করা হয়।
সীফুড রপ্তানি
গত চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে ইরান ১১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সীফুড রপ্তানি করেছে। ইরানের ফিশারিজ অর্গানাইজেশনের প্রধান হাসান সালেহি জানান, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ৩০ ভাগ। সালেহি জানান, কৃষির পাশাপাশি সীফুড থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বেড়েই চলেছে। গত কয়েক বছরে এখাতে রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত বছর সীফুড উৎপাদন হয়েছে এক মিলিয়ন টন। এর মধ্যে ৮২ হাজার টন সীফুড রপ্তানি হয়েছে। এ বছর শেষে মৎস্য খাতে প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আখরোট রপ্তানি
বছরে ৫ হাজার টন আখরোট রপ্তানি করে ইরান। প্রতি কিলো আখরোটের দাম পড়ে ৬ থেকে ৮ মার্কিন ডলার। ইরানের কেরমান, হামেদান, লোরেস্তান, কোহগিলোইয়ে-বোয়েররাহমাদ এবং কেরমানশাহ প্রদেশে আখরোট চাষ হয়ে থাকে।
আখরোট উৎপাদনে দেশটির অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই ইরানের অবস্থান। এরপর রয়েছে তুরস্ক, মেক্সিকো, ভারত, চিলি, সার্বিয়া, ইউক্রেন ও স্পেনের অবস্থান।
মিষ্টান্ন রপ্তানি
চলতি ইরানি বছরের প্রথম চার মাসে চল্লিশটির অধিক দেশে মিষ্টি ও চকলেটসহ প্রায় ২৫ হাজার টন মিষ্টান্ন সামগ্রী রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির আয় হয়েছে ৭৬ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইরানের মিষ্টান্ন সামগ্রী রপ্তানির প্রধান গন্তব্য ছিল ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আযারবাইজান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড এবং নরওয়ে।
মাছ রপ্তানি
গত ফারসি বছরে ৪১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাছ রপ্তানি করেছে ইরান। ইরানের মৎস্য সংস্থার প্রধান হাসান সালেহি এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, বিশ্বে দামি মাছ ট্রাউট ও স্টারজিওন উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও মৎস্য সংস্থার প্রধান হাসান সালেহি জানিয়েছেন, গত বছর ইরান ১১ লাখ টন জলজ প্রজাতির প্রাণী তথা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয় এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে সামনে রেখে ওই বছর মৎস্য খাতে বড় বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের ফলে বিরল প্রজাতির মাছ চাষে বিশ্বে শীর্ষে উঠে এসেছে ইরান।
কৃষি উপমন্ত্রী জানান, ইরানে মৎস্য খাতের বিভিন্ন সেক্টরে বর্তমানে ৪ শতাধিক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র সক্রিয় রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত বছর ইরানে ১ লাখ ৬০ হাজার টন ট্রাউট উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১০ হাজার টন। অন্যদিকে, চলতি বছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টন।
পেস্তাবাদাম রপ্তানি
চলতি ফারসি বছরের প্রথম চার মাসে প্রায় ১৬ হাজার ৬৬০ টন পেস্তাবাদাম রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ১৭৩.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইরান থেকে এসব পেস্তাবাদাম যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, বাহরাইন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, কানাডা, কাতার, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, নেদারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, জাপান, রোমানিয়া ও হংকংয়ে রপ্তানি করা হয়েছে।
ইরানের শিল্প, খনি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মোজতাবা খোসরোতাজ বলেন, বিশ্ব পেস্তাবাদাম বাজারের অর্ধেকের বেশি পরিমাণ রপ্তানি করে কেবল ইরান।
দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি
চলতি অর্থবছরে (মার্চ ২০১৭-১৮) বিলিয়ন ডলারের দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ইরান। দেশটির কৃষি মন্ত্রী মাহমুদ হোজ্জাতি বলেছেন, ‘অতীতে আমরা দুগ্ধজাত পণ্য, মুরগি ও গম আমদানি করতাম। কিন্তু আজ আমরা শুধু দেশীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম হই নি, আমরা এসব পণ্যের রপ্তানিকারক হিসেবেও পরিগণিত হয়েছি।’
এগ্রিকালচারাল কমিশন অব তেহরান চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইনস অ্যান্ড এগ্রিকালচার-এর চেয়ারম্যান কাভেহ জারগারানের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে (মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত) দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করে ইরান আয় করেছে ৭৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি তালিকার শীর্ষে রয়েছে দই। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ২১৮ মিলিয়ন ডলার। পনির রপ্তানি হয়েছে ১২৯ মিলিয়ন ডলারের এবং ক্রিম ও আইসক্রিম রপ্তানি হয়েছে ১২০ মিলিয়ন ডলারের।
চেরি ফল রপ্তানি
ইরানে বছরে প্রায় তিন লাখ টন চেরি ফল উৎপাদন হয়। বিশ্বব্যাপী মোট উৎপাদিত এই ফলের প্রায় ২ শতাংশই ইরানে উৎপাদিত হচ্ছে।
তেহরান এগ্রিকালচারাল জিহাদ অর্গানাইজেশনের বাণিজ্য বিষয়ক দফতরের উন্নয়ন ব্যবস্থাপক হামিদ রেজা খলিলি বলেন, শুধু তেহরান প্রদেশেই বছরে প্রায় ৮৪ হাজার টন চেরি উৎপাদন হয়, যার মূল্য ১১০ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন রিয়েল)।
সাবান রপ্তানি
ইরান গত ৬ মাসে অন্তত বিশটি দেশে সাবান রপ্তানি করেছে। ৭ হাজার ৩শ’ ৫০ টন সাবান রপ্তানি বাবদ দেশটি আয় করেছে ৭.২ মিলিয়ন ডলার। আফগানিস্তান সিংহভাগ সাবান আমদানি করেছে ইরান থেকে। দেশটিতে ইরান সাবান রপ্তানি করেছে সাড়ে ৪ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়া ইরাক, আযারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, কিরঘিজিস্তান, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও জর্জিয়ায় ইরান সাবান রপ্তানি করছে।
লেটুস রপ্তানি
চলতি ইরানি বছরের (ফারসি ক্যালেন্ডার) প্রথম পাঁচ মাসে ৪২ হাজার ১শ’ টনের অধিক লেটুস পাতা রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইরানের শুল্ক প্রশাসন প্রকাশিত তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ইয়ং জার্নালিস্ট ক্লাবের তথ্যমতে, বিগত পাঁচ মাসে ইরানের লেটুস রপ্তানির মূল গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, আযারবাইজান, আর্মেনিয়া, রুশ ফেডারেশন, বাহরাইন, ওমান, কাতার ও আফগানিস্তান।
কিসমিস রপ্তানি
চলতি ইরানি বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে ২৩ হাজার ৬৫০ টনের অধিক কিসমিস রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি। এসব কিসমিস রপ্তানি করা হয়েছে বিশ্বের ৫৪টি দেশে। ইরানের শুল্ক প্রশাসন এই তথ্য জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, ইরানের সবচেয়ে বড় কিসমিস ক্রেতা দেশ ইরাক। উক্ত সময়ে ইরান থেকে ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের কিসমিস আমদানি করেছে দেশটি।
ইরানি কিসমিসের অন্যান্য বৃহৎ ক্রেতা দেশের মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, স্পেন, ইউক্রেন, নেদারল্যান্ড, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং পোল্যান্ড। বিশ্বে বর্তমানে তৃতীয় বৃহত্তম কিসমিস রপ্তানিকারক দেশ ইরান।
ন্যানো পণ্য রপ্তানি
বর্তমানে বিশ্বের ২১টি দেশে ন্যানো পণ্য রপ্তানি করে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় ৩০০ বিলিয়ন তুমান (ইরানি মুদ্রা) ছাড়িয়েছে। ইরানের ন্যানো প্রযুক্তি উন্নয়ন দপ্তরের শিল্প উন্নয়ন গ্রুপের পরিচালক আলী তাহারি এই তথ্য জানিয়েছেন।
হারবাল ওষুধ রপ্তানি
ইরান থেকে বছরে বুটি গোলাপ, জাফরান, সুগন্ধি লতাবিশেষ ও বিভিন্ন ধরনের হারবাল ওষুধ রপ্তানি হয় সাড়ে তিনশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের হারবাল ওষুধ দপ্তরের পরিচালক পেইমান ইউসেফি আজার এই তথ্য জানান।
ইরানে চলমান পানি সঙ্কটের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় হারবাল ওষুধ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে বলে উল্লেখ করেন ইউসেফি আজার। তিনি বলেন, ওষুধি গাছের জন্য পানি সম্পদ কম প্রয়োজন হয়। ওষুধি গাছ চাষাবাদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা। আজার জানান, ওষুধি গাছের চাষাবাদ বিশ্বে একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ। দ্রুত অগ্রগতির কারণে নিকট ভবিষ্যতে কৃষি ক্ষেত্রে ওষুধি গাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গালিচা রপ্তানি
চলতি ইরানি বছরের প্রথম তিন মাসে ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মেশিনে বোনা গালিচা রপ্তানি করেছে ইরান। এসব গালিচা রপ্তানি করা হয়েছে মধ্য এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে। গত ফারসি বছরে প্রায় ৫৫ হাজার ৫শ’ টন মেশিনে বোনা কার্পেট রপ্তানি করে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ৩০৬ মিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় গত বছর ওজনের দিক দিয়ে কার্পেট রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যে ২০১৬ সালে ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের রেকর্ড করেছে ইরান। গত বছর দেশটির মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এর মধ্যে ইরান মোট রপ্তানি বাণিজ্য করেছে ৬৯ বিলিয়ন ডলারের এবং আমদানি করেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের।
জাতিসংঘের অধীনস্থ বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড নেশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট তথা ইউএনসিটিএডি (আঙ্কটাড) প্রকাশিত ‘২০১৭ হ্যান্ডবুক অব স্ট্যাটিস্টিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার তাসনিম সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, গত বছর ইরান প্রায় ১০ দশমিক ২০২ বিলিয়ন ডলারের সেবা রপ্তানি করেছে। এ সময়ে বিশ্বের সঙ্গে ইরানের সর্বমোট আনুমানিক ২৪ দশমিক ৮৯৬ বিলিয়ন ডলারের সেবা বাণিজ্য হয়েছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন মতে, ২০১৬ সালে বৈশ্বিকভাবে সর্বমোট বাণিজ্য হয়েছে ৩২ দশমিক ১৩৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের। যার দশমিক ৩৪ শতাংশ অবদান ইরানের।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালে ইরানের প্রকৃত মোট দেশীয় উৎপাদন তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। যা বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে ২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
২০১৬ সালে ইরানের অর্থনীতিতে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। জানানো হয়, এ বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে আনুমানিক ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে দশমিক ৪ শতাংশ। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ইরানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার পর দেশটির তেল উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ আয়, ভোগ ও বিনিয়োগেএর প্রভাব পড়েছে।
২০১৬ সালে বিশ্বের সেরা বাণিজ্য সম্পাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় ইরানকে ৪৪তম স্থান দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের অর্থনৈতিক অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং দেশটির ওপর থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে খুব শিগগিরই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হবে।
সূত্র: ফিনান্সিয়াল ট্রিবিউন, তেহরান টাইমস, মেহর নিউজ, ইউএনসিটিএডি, সিবিআই, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক।