বুধবার, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

মুসলমানদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ইরান ভূমিকা রাখছে: মুজতাহিদ ফারুকী

পোস্ট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯ 

news-image

ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪০ বছর পরও সেই বিপ্লবের শক্তি দেশটির জনগণকে আরও বেশি উদ্বেলিত করছে। বিপ্লব বার্ষিকীর দিনে কোটি কোটি জনতার পদযাত্রা সেটাই প্রমাণ করে। রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন বাংলাদেশের সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার মুজতাহিদ ফারুকী। তিনি বলেন, ইরান বিশ্বের মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।

রেডিও তেহরান:  ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপিত হলো। এই যে বিপ্লব সফল হয়েছে- এর প্রধান অর্জনগুলো কী?

আজাদি স্কয়ার, তেহরান।

মুজতাহিদ ফারুকী: দেখুন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সবধরনের (যেমন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক) প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া। ইরানের ওপর যে শোষণের খড়গ ও বেড়ি ছিল সেটাকে ভেঙে ফেলা। সে ব্যাপারে ইরান সফল হয়েছে। ইরান এখন সব বিষয়ে নিজেরাই স্বাধীনভাবে তাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নিজেদের ভালো-মন্দ দেখভাল করা সারা বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নত করা এবং শক্তিমত্তার জায়গাটাতে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ইরান এখন নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বড় অর্জন বলে আমি মনে করি।

আর এবার ইরানের ৪০ তম বিপ্লব বার্ষিকীর দিনে সারা ইরানের আবহাওয়া ছিল বেশ প্রতিকূল। কোনো কোনো প্রদেশে বরফ পড়েছে। তেহরানে ছিল বৃষ্টি এবং কনকনে শীত। আবহাওয়ার এ বৈরী অবস্থাকে উপেক্ষা করে কোটি কোটি মানুষ বিপ্লব বার্ষিকীর পদযাত্রায় অংশ নিয়েছে, মিছিল করেছে, সমাবেশ করেছে। এ বিষয়টি প্রমাণ করে ইরানের ইসলামি বিপ্লব যে লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল এবং সফল হয়েছিল বিপ্লবের ৪০ বছর পর সেটি আরও অনেক বেশি উদবেলিত করে। ইরানের জনগণ বিপ্লবের পক্ষে স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নামে। এটি একটি বিশাল অর্জন বলে আমি মনে করি।

তুষারপাত উপেক্ষা করে রাজপথে জনতার ঢল

রেডিও তেহরান: আপনি কী মনে করেন ইসলামি বিপ্লব তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

মুজতাহিদ ফারুকী: জ্বি অবশ্যই ইসলামি বিপ্লব তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আগেও বললাম যে লক্ষ্য নিয়ে ইসলামি বিপ্লব শুরু হয়েছিল তা সাধিত হয়েছে এবং গত চল্লিশ বছরে তা আরও জোরদার হয়েছে। আমার মনে হয় ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রাথমিক লক্ষ্য ছাড়াও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল-লক্ষ্য থাকেই। ইসলামি বিপ্লবের সেই লক্ষ্য ছিল গোটা বিশ্বে ইসলামি ঐক্য সৃষ্টি করা, শক্তিশালী ও বিজয়ী শক্তি হিসেবে দাঁড় করানো; প্রতিষ্ঠা করানো। আমার বিশ্বাস মুসলমানদের সেই আকাঙ্ক্ষাকে চূড়ান্ত এবং বাস্তব রূপ দেয়ার লক্ষ্যে সুনিশ্চিতভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

রেডিও তেহরান:  ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইরান কী এখন সেই অবস্থানে টিকে আছে বলে আপনি মনে করেন?

মুজতাহিদ ফারুকী: আপনি খুব চমৎকার একটি প্রশ্ন করেছেন। ইরানের ইসলামি বিপ্লব শুরু হয়েছে বাইরের শক্তির প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্য। ব্রিটিশদের সঙ্গে শাহের যে অসম তেল চুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তির সময় থেকেই ইরানে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। আর সেটাই কালক্রমে ধীরে ধীরে একসময় ইসলামি বিপ্লবের চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। আর এ থেকে বোঝা যায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রভাবমুক্ত হওয়া, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা ও শোষণমুক্ত ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা।

তবে একটা কথা বলতে চাই, যখন আপনি রাষ্ট্র পরিচালনায় যাবেন তখন নানারকম বোঝাপড়ার বিষয় থাকে, পারস্পরিক লেনদেনের বিষয় থাকে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করার বিষয় থাকে।

বিপ্লব বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ

আর ইরানের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর চাপ এবং ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনও শেষ হয়ে যায়নি। গত চল্লিশ বছর ধরেই ইরানের ওপর আমেরিকা এবং তাদের সহায়ক শক্তির কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ চলছে। তবে এক্ষেত্রে ইরানের জন্য খুব বড় একটা বিষয় হচ্ছে কূটনীতি। আর কূটনৈতিকভাবে ইরান তার বিরুদ্ধে অবরোধসহ নানা বিষয়ে অপশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। আমার মনে হয় যে ইরানের নেতৃত্ব সঠিক অবস্থানে রয়েছে এবং যথাযথভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই ধারা যদি তারা অব্যাহত রাখে তাহলে ইরানের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল হবে বলে আমার বিশ্বাস।

ইরান তাদের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের পাঁচস্থায়ী সদস্য ও জার্মাানি বা পাঁচ যোগ একগোষ্ঠীর সঙ্গে যে পরমাণু সমঝোতা (চুক্তি) করেছে সেটি তাদের অভাবিত কূটনৈতিক সাফল্য।

রেডিও তেহরান: মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরান যে ভূমিকা পালন করছে তাকে অনেকে ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত অবস্থান থেকে দেখে থাকেন। আপনি কী বলবেন?

মুজতাহিদ ফারুকী: দেখুন, এটি একটি জটিল বিষয়। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী প্রায় সব শক্তিই সক্রিয়। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন কিংবা ইয়েমেন পরিস্থিতির কথাই ধরুন না কেন; এসব জায়গায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের থাবা বসিয়েছে। সেটা যেমন তেল বিষয়ক অর্থনৈতিক কারণে একইসাথে রাজনৈতিক কারণে। তাদের আরেকটা লক্ষ্যও আছে সেটি হচ্ছে ইসলামের যাতে পুনরুত্থান কোনোভাবেই না ঘটতে পারে। তারা ইসলাম পুনরুত্থানের সম্ভাবনাকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার চেষ্টা তাদের মধ্যে আছে বলে আমার ধারনা। যেমন ফিলিস্তিনীদের অধিকার তারা হরণ করেছে। গত ৭০ বছর ধরে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়নি, মানুষের মর্যাদাও দেয়া হয়নি। আবার এও দেখবেন মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে স্বৈরতান্ত্রিক একটা রাজতন্ত্র তারা টিকিয়ে রেখেছে তাদের স্বার্থ যাতে অক্ষুন্ন থাকে। সেদিক থেকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে সোচ্চার। ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি জায়গায় ইরানের ভূমিকা খুবই ইতিবাচক। ফিলিস্তিনীদের অধিকার আদায়ে ইরানের ভূমিকা খুবই জোরালো। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা মরহুম ইমাম খোমেনী ঘোষিত আল কুদস দিবস সারা বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনীদের নিয়ে ইরানের এ ভূমিকা অনবদ্য। মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ইরানের ভূমিকা খুবই ইতিবাচক।

তবে হ্যাঁ ইরানের এইসব প্রয়াসকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ইঙ্গিতেই কেউ কেউ ধর্মীয় এবং সম্প্রদায়গত অবস্থান থেকে দেখে থাকেন। আমার মনে হয় ইরান যদি সত্যিকারার্থে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হয় তাহলে ওইসব ধারনার অবসান ঘটবে বলে আমি মনে করি। অনেকের মধ্যে এমন ধারনা আছে ইরান বোধহয় শিয়া মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। সেঠা টিক নয়। আবারও বলছি ইরান শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হলে এসব ধারনা মানুষের মধ্যে থাকবে না।

রেডিও তেহরান: জ্বি জনাব ফারুকী, তারমানে অনেক মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরান যে ভূমিকা পালন করছে তাকে যে ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত অবস্থান থেকে দেখছেন-তাদের ধারনা সঠিক নয় বলে আপনি মনে করছেন..তাইতো

মুজতাহিদ ফারুকী: জ্বি অবশ্যই। যারা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইরানের ভূমিকাকে ধর্মীয় ও সাম্প্রদাগত অবস্থান থেকে দেখছেন তাদের ধারনা ঠিক নয়। আমি মনে করি যে প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার যে কাজ ইরান সেটিই করছে। ইরান কোথাও তাদের শিয়া মতবাদ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে এরকমটি আমার মনে হয় না। সূত্র: পার্সটুডে।